শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

যেভাবেই হোক, ডলারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে

ইকবাল আহমেদ।
রাজিউল হাসান
প্রকাশিত
রাজিউল হাসান
প্রকাশিত : ১ অক্টোবর, ২০২২ ০৭:৪৯

বাংলাদেশের সিলেটের সন্তান ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ এখন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানিতে শীর্ষে তিনি। একসঙ্গে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে কাজ করে চলেছেন, অবদান রাখছেন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করায়। সম্প্রতি তিনি দৈনিক বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার সহকারী বার্তা সম্পাদক রাজিউল হাসান।

দৈনিক বাংলা: করোনা মহামারির ধাক্কার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুই ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে যোগ হয়েছিল রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ব্রেক্সিটের ধাক্কা তো আছেই। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন যাচ্ছে?

ইকবাল আহমেদ: যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য প্রথম ধাক্কা ব্রেক্সিট। আমরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরো অংশকে এক ভূখণ্ড ভাবতাম। আমরা যুক্তরাজ্য থেকে এসব দেশে পণ্য রপ্তানি না, সরবরাহ করতাম। শুল্কমুক্ত এই বাজারের ‍সুবিশালতার জন্য ইউরোপে অনেক ব্যবসাই সফল হয়েছে। কিন্তু ব্রেক্সিট ভয়াবহ ধাক্কা দিল। আমাদের পণ্যে আবগারি শুল্ক, মাশুল যোগ হলো। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে গেল। মুখ থুবড়ে পড়ল অনেক ব্যবসা।

এই ধাক্কার মধ্যেই এল করোনা মহামারি। সব বন্ধ হয়ে গেল। তবে এ সময়ে অনলাইন বাজারটা বড় হলো। করোনার ধাক্কা সামাল দিতে যুক্তরাজ্যের সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ব্যবসা সংকুচিত হচ্ছে।

দৈনিক বাংলা: অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শীত পর্যন্ত বা তার বেশি সময় দীর্ঘায়িত হবে। এতে বৈশ্বিক সংকট আরও ভয়াবহ হবে। এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে কোনো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কি? সরকার কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে?

ইকবাল আহমেদ: যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানির দাম বেড়ে যাচ্ছে, তার প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যে। কাজেই এই যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় তত বড় হবে। এই অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। অবশ্য যুক্তরাজ্যের সরকার ব্যবস্থাও নিচ্ছে। সম্প্রতি ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী, যাকে মিনিবাজেট বলা হচ্ছে। এই প্যাকেজে যুক্তরাজ্যের ব্যবসাগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দৈনিক বাংলা: আপনার প্রতিষ্ঠান সিমার্ক পিএলসি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজার থেকে মাছসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বাজারে সরবরাহ করে। কী ধরনের পণ্য আপনি আমদানি ও রপ্তানি করেন?

ইকবাল আহমেদ: চিংড়ি রপ্তানি করে আমরা স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদকসহ অনেক স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে আমরাই চিংড়ির সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। ইউরোপের বাজারে প্রক্রিয়াজাতকৃত চিংড়ি সরবরাহ করি। ইউরোপের ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনগুলো, এয়ারলাইন, রেস্তোরাঁসহ অনেকেই আমাদের গ্রাহক। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি ছাড়াও আমরা সবজিসহ আরও কিছু জিনিস রপ্তানি করি। ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের ৭০টি দেশে পণ্য রপ্তানি করি আমরা।

ইউরোপের বাজারে আমরা কেবল মাছ আর হিমায়িত সবজিই সরবরাহ করি না। আমরা শিঙাড়া, সমুচা, পরোটা, ড্রাইকেকসহ নানা ধরনের স্ন্যাকসও বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ করি। ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের পণ্যের গ্রাহক।

বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ। যেমন ব্রাজিল থেকে আমরা পোল্ট্রি আমদানি করে ইংল্যান্ডে নিজেদের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করি। এর বাইরে যুক্তরাজ্যে আমাদের আরও কিছু ব্যবসা রয়েছে। যেমন আবাসন ব্যবসা, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন ভাড়া ইত্যাদি। আমাদের হসপিটালিটি ডিভিশনের আওতায় হোটেল, রেস্তোরাঁ পরিচালিত হয়।

দৈনিক বাংলা: বিভিন্ন দেশ থেকে, বিশেষত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বৈশ্বিক চলমান অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়েছে কি?

ইকবাল আহমেদ: আমরা ডলারে পণ্য আমদানি করি। ডলারের বিপরীতে পাউন্ড দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে। এতে আমাদের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে। গ্রাহক বেশি দামে সে পণ্য কিনতে চাইছে না। ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খুব সহজ হিসাব এটা। এই অস্থিরতা যত দিন গড়াবে, তত বাড়বে। এভাবে চলতে থাকলে যুক্তরাজ্যেই অনেক ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে।

বাংলাদেশেও কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাতদৃশ্যে মনে হচ্ছে, রপ্তানিকারকরা ডলারের দাম বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারেও তো পণ্যের দাম বাড়ছে। আমদানিকারকরা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি।

দৈনিক বাংলা: তাহলে এই পরিস্থিতির সমাধান কী?

ইকবাল আহমেদ: আমি দুবাইয়ের উদাহরণ দিতে পারি। তারা আর যা-ই হোক, ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবনমন ঠেকিয়ে রেখেছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব তাদের ওখানে সেভাবে পড়েনি। কাজেই যেভাবেই হোক, ডলারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। তাহলে দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশকে আরও ব্যবসাবান্ধব করতে হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

ইকবাল আহমেদ: বাংলাদেশ থেকে আমি চিংড়িসহ কিছু পণ্য আমদানি করি। গুণগতমানের উন্নয়ন ঘটানো গেলে আরও অনেক কিছু আমদানি করা যেত। বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় গবেষণায় বিনিয়োগ কম। উৎপাদন কীভাবে হচ্ছে, সে ব্যাপারে নজরদারি কম। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে নজরদারি নেই। উদাহরণ দিই একটা। বাংলাদেশে কিন্তু প্রচুর আম হয়। কিন্তু সে আমের সিংহভাগ আমরা আমদানি করতে পারি না। আম কীভাবে উৎপাদন হচ্ছে, কীভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে, তার কিন্তু নজরদারি নেই। ফলে আমের মান কেমন, সেটা নিশ্চিত করতে পারে না কেউ। এভাবে তো আর আমদানি হয় না। কাজেই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের মানের দিকে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এখনো তৈরি পোশাকনির্ভর। এই খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসে। এভাবে একটা খাতের ওপর এতটা নির্ভরশীল থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে এই খাতে ধস নামলে বা আয় কমে গেলে বিপদ ঘটতে পারে। কাজেই অন্য খাতকেও রপ্তানিমুখী করতে হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। সরকারকেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরেকটা বিষয়। দেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ আনতে হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান যত বেশি দেশে আসবে, তত কর্মসংস্থান হবে, দেশে রপ্তানিবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আপনি। এ দেশে ব্যাংক করার পরিকল্পনা এল কী করে? উদ্যোক্তাদের একজোট করলেন কীভাবে?

ইকবাল আহমেদ: আমি বিদেশে থাকলেও মনটা সবসময় বাংলাদেশে থাকে। এ কারণে দেশের জন্য সবসময় কিছু না কিছু করতে চেয়েছি আমি। তারই অংশ হিসেবে একসময় ব্যাংকের কথা মাথায় এল। এতে বহুমাত্রিক লাভ। প্রথমত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন, দ্বিতীয়ত, দেশে কর্মসংস্থান হবে, তৃতীয়ত, এই ব্যাংক সফল হলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। এসব দিক বিবেচনায় আমি বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংক গড়ার পরিকল্পনা করি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। নিজের আগ্রহ ও তাদের উৎসাহে আমি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত ৪৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তাকে খুঁজে বের করি। এভাবেই আসলে শুরু।

আমি ব্যাংকটিকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক হিসেবে গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিস্থিতি ও সময়ের জন্য পারিনি।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে জড়িত থাকার কারণে আপনি এখানকার অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে দেশের ব্যাংক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো কী?

ইকবাল আহমেদ: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সম্ভাবনা প্রচুর। তবে নজরদারি বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও বেশি সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে। যেসব ব্যাংক ভালো করছে না, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একটা ব্যাংক কতটা ভালো করবে অথবা কতটা লোকসানি হবে, তা নির্ভর করে আসলে পরিচালনা পর্ষদের নীতির ওপর। এখন ধরা যাক, একটা খারাপ লোককে জেনেশুনে ঋণ দিয়ে দিল একটা ব্যাংক। সে ঋণখেলাপি হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে লোকসান তো গুনতেই হবে। শুধু তা-ই নয়, বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি এক সময় রাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও চাপ তৈরি করে।

কাজেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কারা বসছেন, তাদের নীতি কী, এসব বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ ব্যাংক খাত যত শক্তিশালী হবে, অর্থনীতি তত জোর পাবে।

দৈনিক বাংলা: ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ব্রিটিশ সরকার আপনাকে ওবিই ও ডিবিএ উপাধি দিয়েছে। এই উপাধিগুলো আসলে কী?

ইকবাল আহমেদ: ওবিই হচ্ছে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এই উপাধি দেয়া হয় যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক হয়েছি আমি। পাশাপাশি আমি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলাম। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার ওই উপাধি আমাকে দিয়েছে।

আর ডিবিএ হলো ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। শিক্ষা ও ব্যবসা খাতে অবদান রাখার জন্য এই ডিগ্রি দেয়া হয়।

আমি যে শুধু যুক্তরাজ্যে ব্যবসা খাতে অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত হয়েছি, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ সরকারও আমাকে বেশ কয়েকবার সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে।

দৈনিক বাংলা: অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন। বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আপনার পরিচয় রয়েছে। এমনকি চট্টগ্রামে আপনার কারখানা উদ্বোধন করতে প্রিন্সেস অ্যান এসেছিলেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

ইকবাল আহমেদ: ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয় বেশ আগে থেকে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। রানির গার্ডেন পার্টিতে আমি পাঁচবার গিয়েছি। বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আমার চারবার দেখা হয়েছে। আর প্রিন্সেস অ্যানের সঙ্গে তো অনেকবার হয়েছে। বর্তমান রাজার অর্গানাইজেশনের দুটি প্রকল্পে আমি সংশ্লিষ্ট। এর একটি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সহযোগিতা। এই প্রকল্পকে বলে মোজাইক। এতে আমি সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট।

দৈনিক বাংলা: আপনি বেশ কিছু দাতব্য কাজেও জড়িত। সে কাজগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন।

ইকবাল আহমেদ: আমি বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কাজ করি। সিলেটে আমি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ার পরিকল্পনা আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে রুরাল ইউনিভার্সিটি। প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েরা বিশ্বমানের পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে। ইংল্যান্ডে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে গৃহহীনদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার চেষ্টা করি আমি। বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের যেখানে সুযোগ পেয়েছি, সেখানেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।

দৈনিক বাংলা: এখন যারা উদ্যোক্তা হতে চান বা চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?

ইকবাল আহমেদ: প্রথম কথা, পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। আগে পড়ালেখা করতে হবে। তারপর কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে বেশি ভালো। বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে সবকিছু শেখা যায় না। একটা গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবদিকের সব কাজের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ করে তারপর ব্যবসা শুরু করতে হবে। আরেকটা কথা, ব্যবসার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল হতে হবে। বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।

দৈনিক বাংলা : সব উদ্যোক্তা প্রথম দফায়ই সফল হন না। বারবার চেষ্টার পরও বিফল হয়ে এক সময় হতাশ হয়ে পড়েন অনেকে। তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?

ইকবাল আহমেদ: অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। এর জন্য কিছু বিষয় অন্যতম দায়ী। অনেকে আছেন, এক ব্যবসায় ভালো করতে না পেরে অন্য ব্যবসায় চলে যান। এভাবে সুইচ করতে থাকলে আপনি কোনো ব্যবসায়ই ভালো করতে পারবেন না। একটার পেছনে লেগে থাকতে হবে। যত ব্যর্থ হবেন, তত অভিজ্ঞতা হবে। আরেকটা কথা, যখন দেখা যাবে, কিছুতেই একা সফল হওয়া যাচ্ছে না, তখন অংশীদার জোগাড় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হলো, আমার মধ্যে যে চিন্তা, যে সৃজনশীলতা নেই, তা আমার অংশীদারের মধ্যে থাকতে পারে। কাজেই সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন না পারলে, দুজন, দুজন না পারলে চারজনে মিলে উদ্যোগ নিতে হবে।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশে আরও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আর কী করতে হবে?

ইকবাল আহমেদ: সর্বপ্রথম তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসায় আগ্রহী করতে হবে। চাকরির ওপর ব্যবসাকে জোর দিতে হবে। সরকারের দিক থেকেই এই বার্তাটা আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স, ব্যাংক ঋণসহ সবকিছু আরও সহজ করতে হবে। ব্যাংক যদি আমাদের ঋণ না দিত, তাহলে আজ যতটুকুই এসেছি, তা কী আসতে পারতাম? কাজেই ব্যাংক খাতকে এখানে জোরালো অবস্থান নিতে হবে।

দৈনিক বাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

ইকবাল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।


ভারত থেকে আসবে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে এর সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।

তিনি জানান, ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল করপোরেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের কাছ থেকে এ পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। সরকারই প্রতিষ্ঠানটিকে ঠিক করে দিয়েছে।

এদিকে গত ২ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নারী উদ্যোক্তাদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আসবে। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

তিনি আরও জানান, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের সময় ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। সেখানে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ পাঠানোর বিষয়ে চিঠি ইস্যু করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।’

চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয়। ভারতের এ নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ওঠে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। অবশ্য বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাতেই ধারাবাহিকভাবে কমছে পেঁয়াজের দাম। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা ছিল এখন সেই পেঁয়াজ বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


ভারত থেকে ৪ চালানে ১০০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

রমজানে আলুর চাহিদা বাড়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আবারও ভারত থেকে আলু আমদানি করা হয়েছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৩ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৩২টি ট্রাকে ১ হাজার মেট্রিক টন আলু এসেছে।

আলুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন্টিগ্রেটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস। আলুর চালান বন্দর থেকে খালাস নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছেন ট্রান্সমেরিন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

বুধবার সকালে বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ১৩ মার্চ ২০০, ১৪ মার্চ ২০০, ১৯ মার্চ ৩০০ ও ২৪ মার্চ রাতে আরও ৩০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়।

ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেড সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, চারটি চালানে ভারতীয় ৩২টি ট্রাকে ১ হাজার মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে। যার প্রতি মেট্রিক টন আলুর আমদানি খরচ পড়ছে ১৯৪ মার্কিন ডলার। শেষ চালানের আলু আজ বুধবার খালাস হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আমদানি করা আলুর তিনটি চালানের ৭০০ মেট্রিক টন ইতোমধ্যে বন্দর থেকে ছাড়া হয়েছে। শেষ চালানের ৩০০ মেট্রিক টন বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমদানিকারক খালাসের অনুমতি চাইলে দ্রুত ছাড়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বিষয়:

রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৭ মার্চ, ২০২৪ ১০:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে ১০ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে আদায়ে এই ইতিবাচক ধারা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখনো উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি, যা বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানিমূল্য বৃদ্ধি ও কর আদায়ের প্রচেষ্টা বাড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে আদায়ে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তবে এ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ঘাটতি পূরণ হয়নি। প্রথমে নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানোর পরও এ আট মাসে এনবিআর এখন ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আয়কর থেকে, প্রায় ২০ শতাংশ। এ ছাড়া সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ।

এনবিআর সদস্য সৈয়দ মো. আবু দাউদ বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে মনিটরিং বাড়িয়েছি। এ ছাড়া ট্যাক্স ডিডাকশন এট সোর্স (টিডিএস), যারা অতীতে টিডিএস কার্যকর করত না, তা এখন বাধ্য হচ্ছে। প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন (পিএসআর) বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা আনা হয়েছে। এসব কারণে আয়কর আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এ ছাড়া রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানি বৃদ্ধির কারণে ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে আমদানিতে গত আট মাসে সম্মিলিতভাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও আমদানি কর আদায়ে প্রায় ১১ শতাংশ এবং ভ্যাট আদায়ে ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে সার্বিকভাবে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে ৪ শতাংশ। তা সত্ত্বেও আমদানি কর আদায়ে প্রবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, আমদানির মিথ্যা ঘোষণা ঠেকানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা আমদানি কর আদায়ে প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, ফাঁকি বন্ধ করতে মনিটরিং বাড়ানো এবং মামলায় আটকে থাকা রাজস্ব আদায়ে কর্মকর্তাদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছেন এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, রাজস্বের একটি বড় অংশ আসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন থেকে। সাধারণত বছরের শেষদিকে রাজস্ব আদায় অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি হয়; কিন্তু এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার খুবই কম, যার ফলে শেষদিকে রাজস্ব আদায়ও কম হবে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, বলেন তিনি।

চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিলে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গত বছরের আদায়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হতে হবে প্রায় ৩০ শতাংশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এত বেশি হারে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি কোনো বছরই হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। বাকি চার মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনবিআরের বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চাপ যাচ্ছে ভোক্তার ওপর, কারণ রাজস্বের বড় অংশই আসে পরোক্ষ কর থেকে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, রাজস্বের ৮০ শতাংশই আসে পরোক্ষ কর থেকে। এর অর্থ হলো, বেশি রাজস্ব আদায় হলে এর চাপ ভোক্তার ওপর পড়ছে। যাদের আয় নেই বা কম, তাদের ওপর বড় চাপ পড়ছে।

তিনি বলেন, এমনিতেই পণ্যের দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের কর এবং স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট যোগ হয়ে এই ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার ছাড়া সাধারণ মানুষের ওপর এই চাপ কমানো সম্ভব হবে না, বলেন তিনি।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেনও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে বাড়তি পরোক্ষ কর নেওয়া হচ্ছে, তা ব্যবসায়ী তার পকেট থেকে দেবেন না। ঘুরেফিরে তা ভোক্তার ওপরেই পড়ছে। এ জন্য আমাদের দাবি প্রত্যক্ষ কর বাড়িয়ে পরোক্ষ কর কমানোর জন্য। কিন্তু এনবিআর তা শুনছে না।

এ সময় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে খেজুর, ডাল, চিনি ও বিভিন্ন ধরনের ফলে দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য কারণের পাশাপাশি বিদ্যমান কর ব্যবস্থাকেও দায়ী করেন।


বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ১৪০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করছে সৌদি আরব। ইতোমধ্যে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে এ-সংক্রান্ত চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। সৌদির সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) বিশেষ প্রকল্প ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইটিএফসি) মাধ্যমে প্রদান করা হবে বিনিয়োগের অর্থ।

সম্প্রতি যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে সৌদি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইটিএফসি এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপনন বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদি। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হবে এই অর্থ।

এসপিএ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যকার মৈত্রী ও দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বের একটি সাক্ষ্য। আশা করা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি নামে পরিচিত একটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে।


ব্যাংকে নগদ ডলার বাড়ছে

২৪ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকে নগদ ডলারের পরিমাণ বেড়ে ৩৯.৩৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩২ মিলিয়ন এবং জানুয়ারিতে ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার।
প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলার সংকটের মধ্যে দেশের ব্যাংকগুলোতে ক্যাশ ডলার হোল্ডিং বাড়তে শুরু করেছে। মূলত বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট খোলা ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশিদের জন্য সুবিধাজনক রিটার্নের বিনিময়ে ডলার জমা রাখার সুবিধার্থে অফশোর ব্যাংকিং আইন প্রণয়নের ফলে ডলার হোল্ডিং ক্রমাগত বাড়ছে।

২৪ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ব্যাংকে নগদ ডলারের পরিমাণ বেড়ে ৩৯.৩৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৩২ মিলিয়ন এবং জানুয়ারিতে ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোববার এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সাম্প্রতিক অফশোর ব্যাংকিং আইন পাসের পর বিদেশি আমানতকারী এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ (বিআইডিএস) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘আনপ্যাকিং দ্য ইকোনমিক ম্যানিফেস্টো অব আওয়ামী লীগ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ফর টুমরো বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছি।’

এদিকে ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট) হিসাবে জমা দেওয়া ডলারের ওপর ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে শুরু করেছে। পাশাপাশি এই হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা হচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ১০,০০০ মার্কিন ডলার জমা রাখার অফার ঘোষণা করেছে একাধিক ব্যাংক। এসব কারণে এখন ব্যাংকের ক্যাশ ডলার বাড়ছে।

বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ইসলামীসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে ছাড় দেওয়ার কারণে ব্যাংকের ক্যাশ ডলার বাড়তে পারে। কারণ এখানে মানুষ এখন কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ শেষে ১০,০০০ হাজার ডলার পর্যন্ত রাখতে পারছে। একটা মুনাফাও পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকের দেওয়া ডলার রেটের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। কার্ব মার্কেটে ১১৭-১১৮ টাকা পেলেও ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৪-১১৫ টাকা করে দিচ্ছে। তাই যাদের কাছে ক্যাশ ডলার আছে, তারা ব্যাংকেই রাখছেন।

তবে ক্যাশ ডলার বাড়লেই যে ব্যাংক সেটা বিক্রি করতে পারবে তেমন নয়। কারণ অনেকে আছেন যারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, কয়েকদিন পর আবার প্রয়োজন হতে পারে, স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টে রাখতে পারে, চিকিৎসার আগে বিদেশ যাওয়ার জন্যও রাখতে পারে। তবে এগুলো নির্ধারিত সময় পর তারা নিয়ে যাবেন। এগুলো ব্যাংকের পক্ষে বিক্রয়যোগ্য না। তাই এগুলো কতটা টেকসই ডলার আগে সেটা দেখতে হবে, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই হিসাব খুলতে শুরু করে। বিদেশ থেকে এসেছেন, বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে– এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকে গিয়ে আরএফসিডি হিসাব খুলতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে কবে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, এটি মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো, বিদেশ গেছেন তার প্রমাণপত্র অর্থাৎ পাসপোর্ট ও ভিসার নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে। হিসাব খোলার জন্য আরও প্রয়োজন দুই কপি ছবি, নমিনি, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)।

এই হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কোনো চেক বই না দিয়ে ডেবিট কার্ড দেয়, যা থেকে খরচে কোনো অনুমোদন লাগে না।

একজন নাগরিক প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আরএফসিডি হিসাবে জমা রাখতে পারবেন। ফলে গত এক বছরে যদি কেউ ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন, তিনি চাইলে তার হিসাবে কোনো নথিপত্র ছাড়াই এক লাখ ডলার পর্যন্ত জমা দিতে পারবেন।

তবে প্রতিবার ভ্রমণের ক্ষেত্রে এর বেশি পরিমাণ ডলার জমা দিতে চাইলে তাকে বেশি ডলার দেশে আনার জন্য কাস্টমসের ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এখন এই হিসাবের বিপরীতে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, এই হিসাবে জমা অর্থের ওপর ব্যাংকগুলো বেঞ্চমার্ক রেটের সঙ্গে আরও অন্তত দেড় শতাংশ সুদ দেবে।

সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) এখন ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। সে অনুযায়ী আরএফসিডি হিসাবে সুদহার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

বিষয়:

বাংলাদেশে কী ঘটতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

২০২৩ - ঘটনাবহুল একটি বছর অতিবাহিত হলো। আগের বছরের বয়ে আনা অনিশ্চয়তার মধ্যে এলো নতুন বছর, তবে হাতছানি দিচ্ছে সম্ভাবনাও।

বিশ্ব আর মন্দাবস্থায় নেই। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ দেশে কমে আসছে মূল্যস্ফীতি, তবে দুটি জায়গায় যুদ্ধ, বিদ্যমান ও আসন্ন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা এবং অনিষ্পত্তিকৃত বাণিজ্যিক বিরোধ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।

শ্রমিক অধিকার, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আওয়াজ উচ্চকিত হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত চরমভাবাপন্ন ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের ৭০টি দেশের জন্য ২০২৪ নির্বাচনের বছর।

বিশ্বজুড়ে নতুন বছরে ক্ষমতায় আসা সরকারগুলোর সামনে অনেক বিষয়ই উঠে আসবে, যেগুলোর কোনো কোনোটি হয়তো তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে, তবে বেশির ভাগ সমস্যাকে মোকাবিলা কিংবা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে তারা।

ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স তথা ইআই ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কী ঘটতে যাচ্ছে, সে সংক্রান্ত কিছু বিষয়কে সামনে এনেছে।

ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে নতুন নতুন দক্ষতা: এটি স্থানীয় ও বৈশ্বিক উভয় চাকরির বাজারের ক্ষেত্রেই সত্য। চাকরির অনেক ক্ষেত্র হারিয়ে যাচ্ছে, নতুন নতুন ক্ষেত্রের আবির্ভাব হচ্ছে। পরিবর্তন এত দ্রুতগতিতে হচ্ছে যে, ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবচেয়ে দরকারি দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে মানবসম্পদের ওপর তাদের বিনিয়োগের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে।

কর্মক্ষেত্রে মানুষের জায়গা কতটা দখল করবে মেশিন, তা নিয়ে আলোচনা আছে। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ চাকরির জন্য কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে কতটা উন্নত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল শ্রমবাজারের জন্য বেসরকারি ও সরকারি পর্যায়ে নীতিগত ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে, তা নিয়েও চলছে আলাপ।
বৈশ্বিক জরিপের ভিত্তিতে আমাদের গবেষণা দল ২০২৩ থেকে ২০২৭ মেয়াদে বৈশ্বিক কর্মসংস্থান ও দক্ষতা সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়কে সামনে এনেছে।

পরবর্তী প্রসঙ্গ হলো বৈশ্বিক পোশাকের অর্থনীতিতে কী ঘটতে যাচ্ছে। পোশাক রপ্তানি বাজারে আমাদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বীরা কঠিন আগামীর জন্য কীভাবে নিজেদের তৈরি করছে, সেদিকে নজর দেওয়া যায়। তারা প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক চুক্তি সইয়ের পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন করছে। একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান গ্রিন ডিল নামের চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পরিবেশগত বিষয়ে নজর দিচ্ছে। আমরা মনে করি বিষয়গুলো আমাদের পোশাক শিল্পকে সজাগ করতে পারে, যেটি ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও ক্রয়াদেশ কমার মধ্যে শ্রমিক অধিকার ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে প্রচণ্ড চাপে আছে।

তৃতীয় প্রসঙ্গটি আমাদের সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়গুলোর একটি। এ পর্যায়ে কিছু পণ্য নিয়ে কথা বলা হবে, যেগুলোর প্রায় পুরো অংশই আমরা আমদানি করে থাকি। বৈশ্বিক পণ্যবাজারে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার অর্থ হলো সরবরাহে ঘাটতি এবং গম, পেট্রল কিংবা তুলার মতো পণ্যের দাম বৃদ্ধি, যেগুলো আমাদের বাসাবাড়ি ও শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বিশ্ববাজারে নৈরাজ্য তৈরির কারণগুলো সর্বত্র, যেগুলোর একটি চলে গেলে আরেকটি সামনে আসে। প্রথমে মহামারি, তারপর এলো যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা। আরও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।

বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের পূর্বাভাস প্রসঙ্গে আমাদের গবেষণা দল বৈশ্বিক পূর্বাভাস বিশ্লেষণের পাশাপাশি বাজারের প্রবণতা বোঝার চেষ্টা করেছে, যা আমাদের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সহায়ক হতে পারে।

আমাদের পরবর্তী প্রসঙ্গ বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ভোক্তা ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে আস্থা, যা আমাদের জন্য, বিশেষত আমাদের রপ্তানি শিল্পের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমাদের রপ্তানিপণ্যের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ যায় এসব গন্তব্যে।

ইউরোপ ও আমেরিকায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি শুধু তাদের জনগণের উদ্বেগের বিষয় নয়; এটি আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় বিষয়। কারণ ইউরোপ, আমেরিকাতে চাহিদা কমার অর্থ হলো আমাদের রপ্তানিকারকদের ব্যবসায়িক ক্ষতি, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থানের সম্ভাব্য কমতি।

আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারদের অবস্থা কেমন, তাও জানা দরকার। আমরা ‘পার্টনার ইকোনোমিজ আউটলুক’ অধ্যায়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের ছয়টি মূল অংশীদার নির্বাচন করেছি।

পরিশেষে ‘বাংলাদেশ ম্যাক্রোইকোনোমিক স্ন্যাপশট’ প্রসঙ্গে আমাদের পাঠকদের জন্য থাকছে সর্বশেষ পাওয়া ডেটার ভিত্তিতে আমাদের অর্থনীতি নিয়ে পর্যালোচনা।


২২ দি‌নে রেমিট্যান্স এল ১৪১ কোটি ডলার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানের শুরু থেকেই বে‌শি বে‌শি রেমিট্যান্স পাঠা‌চ্ছেন প্রবাসী বাংলা‌দে‌শিরা। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২২ দিনে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা (প্র‌তি ডলার ১১০ টাকা ধ‌রে)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতকাল রোববার প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে অর্থনীতির এই সূচক আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি মার্চের প্রথম ২২ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার (১৪১৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন)। তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারি মাসে তার চেয়েও বেশি ২১৬ কোটি ৬০ লাখ (২.১৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন, যা ছিল আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ৪ লাখ (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল প্রায় ২ বিলিয়ন (১৯৯ কোটি ১২ লাখ) ডলার। তার আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার, যা সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স।

ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। এ ছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা।


জমতে শুরু করেছে ঈদ কেনাকাটা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত শুক্রবার থেকে ঢাকার শপিংমলগুলোয় সব বয়সের ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।

ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, পান্থপথ, গুলিস্তানসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার শপিংমলে ক্রেতারা পোশাক কিনতে ভিড় করছেন।

গত শুক্রবার থেকে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা। ঈদের প্রায় ১৬ দিন বাকি থাকায় এখনো অনেক ক্রেতা কেনাকাটা শুরু করেননি বলেও মনে করছেন তারা।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের পোশাকের ব্র্যান্ড ‘লুবনান’র এক শাখার ব্যবস্থাপক রিয়াজ হোসেন রাজু বলেন, আশা করি, ২০ রোজা থেকে পুরোদমে কেনাকাটা শুরু হবে।

বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, মায়ের জন্য শাড়ি ও আমার জন্য প্যান্ট কিনেছি। এখন বাবার জন্য পাঞ্জাবি কেনার কথা ভাবছি।

ধানমন্ডির এআর প্লাজায় কাপড় ও জুতার দোকান ‘ম্যারুন্ড’র ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, এখন স্বল্প পরিসরে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, ঈদের ১০ দিন আগে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে।

অপুর মতো একই ভাবনা বসুন্ধরা সিটির 'রিচম্যান'র এক শাখার ইনচার্জ নুরুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘মাসের মাঝামাঝি হওয়ায় চাকরিজীবীরা এখনো বেতন পাননি। রমজানের শেষ ১২ দিনে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।’

‘সাধারণত শুক্রবার ক্রেতার সংখ্যা বেশি থাকে’ উল্লেখ করে ‘জেন্টেল পার্ক’র এক শোরুমের ব্যবস্থাপক আল আমিন খান জানিয়েছেন, গত দুই দিনে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে।

দর্জিবাড়ির শাখা ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এখনো আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি, সামনের দিনগুলোয় বিক্রি আরও বাড়বে।

ফ্যাশনওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প ও তাঁতপণ্যের খুচরা বিক্রেতা ‘কে ক্রাফট’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান বলেন, আগের সপ্তাহান্তে বিক্রি ভালো ছিল। এরপর তা কিছুটা কমে যায়।

এ বছর আরও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করে তিনি বলেন, ‘ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি। এখনো বেতন-বোনাস হয়নি। আগামী দিনগুলোয় বিক্রি আরও বাড়বে।’

নিউমার্কেট ও ফার্মগেটে ফুটপাতের বিক্রেতাদের বিক্রি ভালো। নিম্ন ও মধ্য আয়ের হাজারো ক্রেতা সেখানে ভিড় করছেন।

রিকশা-ভ্যান ও অস্থায়ী দোকানের বিক্রেতারা শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার ও শিশুদের পোশাক বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কুড়িগ্রামের সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম ঢাকার নিউমার্কেটের পাশে ফুটপাতের এক বিক্রেতার কাছ থেকে তার দুই মেয়ের জন্য কাপড় কেনেন। তিনি বলেন, ‘এখন কিনছি, কারণ ঈদের কাছাকাছি সময়ে দাম বেড়ে যেতে পারে।’

ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় পাঞ্জাবি বিক্রেতা করিম মিয়া বলেন, ‘আমার মতো বিক্রেতারা এখন অনেক ব্যস্ত। শপিংমলের তুলনায় আমাদের পণ্যের দাম কম হওয়ায় বিক্রি বেশি হয়।’


সপ্তাহের শেষে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় শেয়ারবাজার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখিতা প্রবণতায় ফিরেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণের। এতে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন সাত হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।

সপ্তহজুড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে টানা ছয় সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকল শেয়ারবাজার। ছয় সপ্তাহের এই পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৯টির। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।

আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। তার আগের চার সপ্তাহে কমে ১১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা, ১ হাজার ২৯১ কোটি টাকা, ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং ৬ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এতে ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমল ৭৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা।

এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তার আগের চার সপ্তাহে কমে ১৪১ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ১৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৩১ শতাংশ, ৬২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ৪৩১ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্য সূচক কমলেও বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

আর ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৬ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৬ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭০ শতাংশ।

প্রধান মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ৮০৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে গোল্ডেন সনের শেয়ার। দৈনিক গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং সিরামিকের শেয়ার দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।

এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বেস্ট হোল্ডিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ইনফিউশন, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, এস এস স্টিল ও লাভেলো আইসক্রিম।


প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ইতিহাসে বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে সামগ্রিক বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) এ ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এসব ঋণের ৭৯ শতাংশই নিয়েছে সরকার এবং বাকি ২১ শতাংশ ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৬৫২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৪১২ কোটি ডলার।

গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন অনুসারে ১৫ বছর আগে ২০০৮ সাল শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩৪২ শতাংশ।

উক্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৬৫৫ কোটি ডলার। তার মানে পরের তিন মাসে ৪ বিলিয়ন বা ৪০৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে। এই সময়ে সরকার ৪৪২ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ নিয়েছে। তার বিপরীতে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি কমেছে ৬৪ কোটি ডলারের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে তা দাঁড়ায় ৯৮ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ ৮ বছরে দেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ আরও বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালের পর বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ঋণের পরিমাণ ৯৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। আর গত বছর শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

বিদেশি এসব ঋণ এসেছে মূলত বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নির্মাণের জন্য। এসব প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রোরেল (লাইন-৬), হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ ইত্যাদি।

সরকার বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতো সংস্থা এবং জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মতো দেশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ নেয়। এসব ঋণ নেওয়া হয় মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও বাজেট সহায়তা হিসেবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) গত ডিসেম্বরের হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণদানে শীর্ষ দেশ ও সংস্থার মধ্যে ছিল বিশ্বব্যাংক, জাপান, এডিবি ও চীন। সাম্প্রতিককালে চীনা ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বিদেশি অর্থায়নে বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রোরেল (লাইন-৬), হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ ইত্যাদি।


উন্নয়ন কাজে বাংলাদেশের পাশে সব সময় আছে বিশ্বব্যাংক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার পর থেকে নানা উন্নয়ন কাজে বিশ্বব্যাংককে সব থেকে বেশি পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদেরই অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) বাংলাদেশকে কম সুদে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে।

আইডিএর সবচেয়ে বড় গ্রাহক বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে ১৮ দশমিক ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে আইডিএ। মোট বৈদেশিক ঋণের ৩৩ শতাংশ। যা সব থেকে বেশি।

আইডিএ ঋণের সার্ভিস চার্জ শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সুদহার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। দুটি মিলিয়ে ২ শতাংশ হয়। অ-উত্তোলিত অর্থায়ন স্থিতির ওপর বছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি অব্যাহতি ৫ বছর। আর পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪ হাজার কোটি ডলারের বেশি আইডিএ ঋণ নিয়েছে। বর্তমানে দেশের চলমান প্রকল্পগুলোতে আইডিএ তহবিল রয়েছে ১৬০০ কোটি ডলারের বেশি।

ইআরডি প্রকাশিত ‘ডেবট লায়াবিলিটিস টু মেজর ডেভেলপমেন্ট পার্টনার’ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিশ্বব্যাংকের পরই বাংলাদেশের কাছে বেশি ঋণ পাবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ১৩ দশমিক ২৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণ দেওয়ার দিক থেকে তিন নম্বরে জাপান, ৯ দশমিক ২১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে দেশটি।

এ ছাড়া রাশিয়া ৫, চীন ৪ দশমিক ৭৬, ভারত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ৭৪৩ মিলিয়ন এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ৬৬৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।


পুঁজিবাজারে বড় উত্থান

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার। বুধবারের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমা স্পর্শ করেছে হাফ ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।

গত বুধবার পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিলে। ৩০০ এর অধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। তবে, লেনদেন কমে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার নিচে চলে যায়। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কিছুটা ফিরে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এ সাত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ আসলেও বিক্রিয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, শাহিনপুকুর সিরামিক, পেপার প্রসেসিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স।

দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এ সাত প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি আরও প্রায় এক ডজনের প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমার কাছাকাছি চলে আসে। আর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং সিরামিক, মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, রবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ওরিয়ন ফার্মা।

অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।


ডলারের তেজ কমছে, টাকার মান বাড়ছে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত দুই বছর ধরে যে ডলার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ওলোটপালট করে দিয়েছে; সেই মুদ্রাটির তেজ কমতে শুরু করেছে। শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। কয়েক দিন আগেও ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিটেন্সের ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো; এখন কিনছে ১১৪ টাকায়। বুধবার আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে ডলারের দাম নেওয়া হয়েছে ১১৮ থেকে ১১৯ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা।

খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটেও ডলারের দরে বড় পতন হয়েছে। বুধবার এই বাজারে প্রতি ডলার ১১৮ টাকা ৪০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। মাস খানেক আগেও ১২৬/১২৭ টাকায় বিক্রি বিক্রি হতো। সব মিলিয়ে ডলারের বাজারে অস্বস্তি কমেছে। এই ধারা ধরে রাখতে পারলে ডলারের ‘অস্থির’ বাজার ‘সুস্থির’ হবে বলে আশা কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

তবে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর এখনো অনেক কম; ১১০ টাকা। অর্থাৎ এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক ১১০ টাকায় ডলার কিনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোর কাছে যে ডলার বিক্রি করছে, সোয়াপ কারেন্সির আওতায় টাকা-ডলার অদলবদল করছে সেটাও ১১০ টাকা নিচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি ব্যয় কমায় এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। সে কারণেই ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে। এই ধারা ধরে রাখতে পারলে দুই বছর ধরে চলা ডলারের অস্থির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। যার ইতিবাচক ধারা অর্থনীতিতেও পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় এক দশক দেশে মুদ্রার বিনিময় দর একটি স্থিতিশীল অবস্থানে ছিল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যার সুবিধা পেয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব সামষ্ট্রিক অর্থনীতিতেও পড়েছে।

কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে দ্রুত টাকার অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকে। ফলে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতি ডলারের দাম ৮৫/৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। রপ্তানিকারক, আমদানিকারক এবং রেমিটেন্স প্রেরকদের মতো বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক বিনিময় হার বাস্তবায়ন সত্ত্বেও ডলারের বিপরীতে টাকার পতন অব্যাহত থাকে।

২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশের মুদ্রাবাজারের বিনিময় দরে নজিরবিহীন অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পরে বাজারে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে, তখন সংশ্লিষ্টরাও কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। এখন সার্বিকভাবে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় অনেক ব্যাংকই আর চড়া দামে ডলার কিনছে না। দাম আরো বাড়বে এই আশায় প্রবাসী বাংলাদেশিসহ যারা ডলার সঞ্চয় করে রেখেছিলেন, টাকার মূল্য বাড়তে থাকায় তারাও সেসব ডলার বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন। চাহিদার তুলনায় দেশে ডলার আসছে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিনের শুরুতে ব্যাংকগুলোতে ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট পজিশন ছিল ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেটা বেড়ে বুধবার ৭৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এ সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত ডলার ছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ডলার সংকট কাটাতে বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেগুলোরই একটা প্রভাব এখন বাজারে পড়ছে। ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ বাড়ায় দামও কমছে।

বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, অনেকেরই ধারণা ছিল ডলারের দাম আরও বাড়বে; কিন্তু আমরা বলেছিলাম দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তার প্রতিফলন আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের চাহিদ-জোগানের গ্যাপ কমে আসার কারণে ইনফরমাল মার্কেটেও ডলারের রেট কমে এসেছে। আশা করছি সামনে আরও কমবে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গত কয়েক মাস টানা বাড়ছে প্রবাসী আয়। রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়ও কমে গেছে। এর প্রভাবে চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় রয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বিষয়:

banner close