![]() করোনায় জৈবিক মারণাস্ত্র
আনোয়ার বারী পিন্টু :
|
![]() করোনায় জৈবিক মারণাস্ত্র চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ে নানামুখী তত্ত্ব এবং ষড়যন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে। ভাইরাসটি নিয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ির কারণে এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষ হুঁশিয়ারি সতর্কবার্তা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের। বিশ্বব্যাপী ৩৪ হাজার ৮০০ জন ভাইরাসে আক্রান্তের খবর মিলেছে, যার বেশিরভাগই চীনে। চীনে এ পর্যন্ত ৭২৩ এবং ফিলিপাইনে একজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চীনে আক্রান্ত ৩৪,৫৯৮ জনের মধ্যে ২৫০০০ জনই উবেই প্রদেশের। এ প্রদেশটিতেই প্রথম সংক্রমণ শুরু হয়েছিল এবং এরপর থেকে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ডা. টেডরস আধানম ঘেব্রেয়সোস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুল তথ্য আমাদের সাহসী কর্মীদের কাজকে আরও কঠোর করে তুলছে। আমি সত্য তথ্য এবং এর গুরুত্ব নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলতে চাই। নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য মানুষের সঠিক তথ্য জানার সুযোগ থাকতে হবে। আমরা শুধু ভাইরাসের বিরুদ্ধেই লড়ছি না, বরং এ নিয়ে ট্রল বা ব্যঙ্গ এবং ষড়যন্ত্র তত্তে¡র বিরুদ্ধেও লড়ছি যা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে দিচ্ছে। দ্য গার্ডিয়ানের এক শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে ভুল তথ্যই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। সেখানে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম কুচারস্কি বলেন, অনলাইনে ভাইরাস নিয়ে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, সেগুলোকে বাস্তব জীবনে ভাইরাস হিসেবে গণ্য করা।’ ডব্লিউএইচওর ডা. টেডরস বলেন, ভাইরাসটি এখনো উবেইকেন্দ্রিক এবং গত চার দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যায় কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ একটি জায়গায় এসে স্থির হয়েছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। কারণ প্রাদুর্ভাব সাধারণত দ্বিতীয়বার ব্যাপকহারে শুরু হওয়ার আগে সংক্রমণ কিছুটা ধীর হয়। তবে ‘ধীর হওয়াটা’ ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার একটা সুযোগ তৈরি করে। গ্লোবাল টাইমস ‘ইজ সিম্প্যাথি টু মাচ টু আস্ক ফর ফ্রম দ্য ওয়েস্টার্ন মিডিয়া’ অর্থাৎ ‘পশ্চিমা গণমাধ্যমের কাছ থেকে সহানুভ‚তি আশা করা কী খুব বেশিকিছু?’ শিরোনামে তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, ‘যখন চীনের জনগণ তাদের দেশ এবং গোটা বিশ্বের জন্য এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন সহানুভ‚তি আর প্রশংসার পরিবর্তে পশ্চিমা গণমাধ্যমে চীনের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। পশ্চিমা অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ চওড়া হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বিস্ফোরক তথ্যটি প্রকাশ করেছে রুশ মিডিয়া। দেশটির প্রধান একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক চ্যানেল ওয়ান, ভ্রেমিয়া বা ‘সময়’ নামে সন্ধ্যায় তাদের মূল সংবাদ অনুষ্ঠানের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ষড়যন্ত্র তত্ত¡ প্রচারে একটি আলাদা সময় বরাদ্দ করেছে। তাদের প্রচারিত তথ্যে বলা হয়েছে, ‘ল্যাটিন এবং রাশিয়ান দুই ভাষাতেই করোনা শব্দের অর্থ মুকুট। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সাথে কোনোভাবে জড়িত। বলা হচ্ছে, তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেছেন এবং বিজয়ীদের হাতে মুকুট তুলে দিয়েছেন। মূলত বিজ্ঞানীরা ভাইরাসের এমন নামকরণ করেছেন এগুলোর মুকুটের মতো আকারের কারণে, কিন্তু ভ্রেমিয়ার উপস্থাপক ট্রাম্পের জড়িত থাকার সম্ভাবনা এখনই বাতিল করে দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বলা হয়, ‘জর্জিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরী¶াগার রয়েছে যেখানে মানুষের উপর জৈবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়। এরপর চ্যানেল ওয়ানের অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত¡ থেকে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন। যেখানে বলা হয়, নতুন করোনা ভাইরাস শুধু এশিয়ার মানুষদের আক্রান্ত করে এবং এটা এক ধরনের ‘জাতিগত বায়ো ওয়েপন বা জৈবিক মারণাস্ত্র’। বড় ওষুধ কোম্পানিগুলো করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করে বড় ধরনের মুনাফা হাতিয়ে নিতে চায়, আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, চীনের মতো ভ‚-রাজনৈতিক প্রতিযোগীকে দুর্বল করতে এর অর্থনীতিতে আঘাত হানতে চাইছে তারা। এদিকে চীনা গণমাধ্যমও বসে নেই। চীনা গ্লোবাল টাইমস করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চীনের এই যুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধের’ সঙ্গে তুলনা করেছে। ‘ফাইটিং করোনা ভাইরাস ইজ পিপলস ওয়ার’ নামে এক নিবন্ধে পত্রিকাটি লিখেছে, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণ যেভাবে শামিল হয়েছে, সেটি সার্সের সময়ও দেখা যায়নি। শিনহুয়া নেটে এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘‘উইমেন শাইন ইন চায়না’স এন্টি-এপিডেমিক ক্যাম্পেইন’-চীনে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নারীরাই সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল ভ‚মিকায়। এতে বলা হয়, ‘নারীরা যে রকম দৃঢ়প্রত্যয়ী, পেশাদারিত্ব এবং নিঃস্বার্থভাবে এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছে, তা সত্যিই তুলনাহীন। চীনের নানা প্রান্ত থেকে ৩ হাজার ৪৭৬ জন নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে উহানে পাঠানো হয়েছে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লিউ লু নামের এক নারী স্বাস্থ্যকর্মীর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যিনি তার কোমর ছাপানো চুল কেটে ফেলেছেন উহানে যাওয়ার আগে। লিউ লু বলেছেন, ‘এ রকম মুহূূর্তে নিজেকে সুন্দর দেখানো আর গুরুত্বপূর্ণ নয়, রোগীদের এবং আমার নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এ প্রতিবেদনের এক ছবিতে দেখা যায়, মুখে মাস্ক পরা এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী তার স্বামীকে বিদায়চুম্বন দিচ্ছেন, স্বামীর মুখেও মাস্ক পরা। চাও লিয়াও নামের এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী যাচ্ছেন উহানে। করোনা নিয়ন্ত্রণে চীন বাস্তবেই যুদ্ধময় ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নানা পদক্ষেপে তারা লড়াই অব্যাহত রেখেছেন। গত দুইদিন থেকে চীনের মূল ভ‚-খণ্ড থেকে আসা যে কাউকে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা বাধ্যতামূলক করে নতুন নিয়ম চালু করেছে হংকং। পর্যটকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের হোটেল কক্ষে নিজেদের আলাদা করে রাখতে কিংবা সরকার পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে থাকতে। আর বাসিন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাইরে বের না হয়ে তাদের বাড়িতেই অবস্থান করতে। জানা যায়, নতুন এই নিয়ম কেউ না মানলে তার জেল এবং জরিমানা হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, হংকংয়ে এখনো পর্যন্ত ২৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার উহানের জিনইনতান হাসপাতালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সী এক মার্কিন নাগরিক মারা গেছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের নাগরিক বা চীনা বংশোদ্ভূত নয় এমন কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। শনিবার, ফ্রান্স নিশ্চিত করেছে যে, তাদের উঁত-স্যাবোয়া এলাকায় নতুন করে পাঁচজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১। গত ৩১ ডিসেম্বর মধ্য চীনের উহান শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। উহান শহরে ‘করোনা’র উৎস ধরা হলেও এর উৎপত্তি নিয়ে খোদ চীন সরকারই অন্ধকারে রয়েছে। কখনো বলা হচ্ছে, উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারের কথা। আবার বলা হচ্ছে, শহরটির একটি বাজারে মুরগি, বাদুড়, খরগোশ এবং সাপ বিক্রি হতো। যারা ওই বাজারে গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। তবে ঠিক কীভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সম্ভবত প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনো মানুষের দেহে ঢুকেছে। এর আগে সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে আর মার্স ভাইরাস উট থেকে মানুষের দেহে প্রবেশের নজির দেখেই এমন ধারণা করা হচ্ছে। |