![]() উঁকি দিয়েই ব্যাকফুটে বিএনপি
আনোয়ার বারী পিন্টু :
|
![]() উঁকি দিয়েই ব্যাকফুটে বিএনপি এছাড়া দলটির তৃণমূলেও গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর নেতারা চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা ভোট উৎসব থেকে আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে বাসাবাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেখা গেছে, রাজনীতিতে বরাবরই কৌশলের কাছেই পরাস্ত হচ্ছে বিএনপি। উঁকি দিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বিএনপি। রাষ্ট্রীয় নীপিড়নের অভিযোগ তুললেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, রাজনীতিতে কৌশলের বদলে পাল্টা কৌশল ছুড়তে হয়। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে নামতে হয় সমানতালে। শুধু অভিযোগের রাজনীতি করলে অন্তত রাজনৈতিক দল চলে না। তবে বিএনপি নেতাদের বয়সও একটি বিষয়। দলটির কাউন্সিল করতে অনীহা থাকায় নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। ফলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধিদীপ্ত নেতার সমাগম হচ্ছে না । বিশ্লেষকদের কথা মতে, ঢাকায় নির্বাচন পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে বিএনপি সেই পুরনো অভিযোগ তোলার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বাস্তবেও দেখা যায়, বিএনপির বর্তমানে অভিযোগ তাদের অনেক নেতাকর্মীর বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। দুই ছাত্রদল নেতাকে গুম করা হয়েছে। বিএনপি কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দলের মধ্যে এক ধরনের নেতৃত্বশূন্যতা অনুভব করছেন। কয়েকজন নেতা পদত্যাগ ও আরও কয়েকজন নেতা দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্য করা থেকে বোঝা যায় দলে নেতৃত্বে সংকট তীব্র হয়েছে। যদিও বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, দল পরিচালনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারেক রহমানের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে স্থায়ী কমিটি এখন দল পরিচালনা করছে। অন্যদিকে বিএনপির মিত্র ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও টানাপড়েনের সম্পর্ক চলছে। ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি প্রায় এক যুগেও দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করতে গিয়ে মাঠের কোন্দল নতুন করে শুরু হয়েছে। নানা অভিযোগ আসছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে। বিএনপির আন্দোলন, সাংগঠনিক স্বক্ষমতা নিয়ে প্রায়ই কথা বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বও চন্দ্র রায়। তবে সবচেয়ে বিস্পোরক মন্তব্য করেছেন গত বছরের ১৫ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে সাদেক হোসেন খোকার স্মরণে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত সভা ও দোয়া মাহফিলে। এসময় বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আক্রমণাত্মক রাজনীতি করলে জয়ী হবার সম্ভাবনা থাকে, আত্মরক্ষামূলক রাজনীতি করে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিএনপির রাজনীতি এখন হয়ে উঠেছে আত্মরক্ষামূলক।’ বিএনপির বর্তমান কার্যকলাপ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বিএনপির আন্দোলন দুই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। একটি প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন এবং আরেকটি বিএনপি কার্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন।’ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিতির তালিকার মতো করে তাদের নাম বলতে হয়। পত্রিকায় তাদের নাম ও ছবি না আসলে ক্ষুব্ধ হন। পত্রিকার নাম না আসলে কি আন্দোলন হয় না? এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অনলাইন পত্রিকা, এত টেলিভিশন এবং ফেসবুক ছিল না। তাহলে সেই সময় কি আন্দোলন হয় নাই? তাই আমাদের পত্রিকায় নাম ও ছবি আসা, নিজেকে জাহির করার মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে মনোনিবেশ করতে হবে।’ গতকালও বিএনপি মহাসচিবের কথায় হতাশা এবং ক্ষোভ দুটিই প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার নিজেদের ব্যর্থতা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন আড়ালের উদ্দেশ্যে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সুপরিকল্পিতভাবে ঢাকায় গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে। এখন সেই ঘটনার দায়-দায়িত্ব বিএনপির ওপর জবরদস্তিমূলক চাপিয়ে দিতে ষড়যন্ত্রমূলক বানোয়াট মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের সহশ্রাধিক নেতাকর্মীকে হয়রানি ও গ্রেফতার করছে এবং গ্রেপ্তারের নামে বাসাবাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে অশালীন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে।’ তিনি রাজধানীতে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ীই যদি আসামি করা হয়ে থাকে তাহলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অসুস্থ, আহত, চিকিৎসাধীন কিংবা ঢাকার বাইরে ও বিদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের মামলায় আসামি করা হলো কিসের ভিত্তিতে?’ এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রয়েছে। দুই মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে দুই বছর সাজাও ভোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুই দফায় এক বছরের জন্য তার সাজা স্থগিত করা হয়। বর্তমানে তিনি বাসায় থাকলেও রাজনীতি করতে পারছেন না। বিএনপি বলছে, বেগম জিয়া এখন ‘গৃহবন্দি’। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও অর্ধশত মামলা রয়েছে। কয়েকটিতে তার সাজাও হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি রাজনৈতিক মামলায় জেলও খেটেছেন। দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে হাজার হাজার রাজনৈতিক মামলা। দলটির অভিযোগ, এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের পরদিন ১৩ নভেম্বর ফার্মগেটের খামারবাড়ী থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও পল্টন এলাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব জায়গায় খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটকের বিষয়টি স্বীকার করছে না। |