শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

‘আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের জনগণের কথা চিন্তা করতে হব’

রোববার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ২০২৪-২৫ এর খসড়া চূড়ান্তকরণ বিষয়ক কর্মশালায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: সংগৃহীত
বাসস
প্রকাশিত
বাসস
প্রকাশিত : ৫ মে, ২০২৪ ১৯:০৩

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবসময় দেশের জনগণের কথা চিন্তা করতে হবে এবং জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে।

আজ রোববার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ২০২৪-২৫ এর খসড়া চূড়ান্তকরণ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, বিশেষ কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কিংবা কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করে ভালো আইন তৈরি করা যায় না। তাই যে-যাই বলুক, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সবসময় দেশের জনগণের কথা চিন্তা করতে হবে এবং জনবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে। তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও উদ্দেশ্য উভয়ই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, লেজিসলেটিভ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি লেজিসলেটিভ ক্যাডার সার্ভিস গঠনের বিষয়েও কাজ করতে হবে।

আনিসুল হক বলেন, “লজ অব বাংলাদেশ’ লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের খুবই জনবান্ধব একটি কাজ। এর মাধ্যমে জনগণ মুহূর্তেই বাংলাদেশে প্রচলিত সকল আইন দেখে নিতে পারেন। এখন ‘লজ অব বাংলাদেশ’ এর আলোকে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে জারিকৃত সকল এসআরও এবং অন্যান্য বিধি-বিধানের সংকলনে অনলাইন ভিত্তিক ‘রুলস অব বাংলাদেশ’ তৈরি করা গেলে জনগণ খুবই উপকৃত হবে। এটি খুব তাড়াতাড়ি তৈরি করতে হবে।”

লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় আইন ও বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।

বিষয়:

কাঠগড়ায় কান্নার সময় শিলাস্তি বললেন, ‘আমি কিছু জানি না’!

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান। এর মধ্যে রিমান্ড শুনানির আগে আদালতের এজলাসে আসামিদের রাখার ডকে উঠেই অঝোরে কান্না করতে দেখা যায় তিন আসামির মধ্যে একজন শিলাস্তি রহমানকে। রিমান্ড শুনানির একপর্যায়ে একজন আইনজীবী ওকালতনামায় শিলাস্তি রহমানের স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি সেই আইনজীবীকে বলেন, ‘আমি কেন স্বাক্ষর করব? আমি কি আসামি নাকি? এসব বিষয়ে কিছু জানি না।’

আজ শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত আসামিদের রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ড শুনানিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম আদালতের কাছে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করা হয়। তবে আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) পুলিশের উপ-পরিদর্শক সেলিম রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এ সময় তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পরে, গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এর পরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

বিষয়:

এমপি আনার হত্যা: আট দিনের রিমান্ডে ৩ আসামি

এমপি আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামির ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। আসামিরা হলেন- শিমুল ভূইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ, তানভীর ভূইয়া ও শিলাস্তি রহমান।

আজ শুক্রবার তাদেরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত ৮ দিনের রিমান্ড আদেশ দেন।

এর আগে, আজ দুপুরে আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন জনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে চায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান বলেন, ‘এমপি আনার হত্যায় জড়িত গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। রিমান্ডে এনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভারতের কলকাতায় গিয়ে তার পূর্বপরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। ১৩ মে দুপুর ২টার দিকে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপালের বাসা থেকে বের হন। কিন্তু এরপর আজীম আর বাসায় না ফেরায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস।

গত বুধবার ২২ মে জানা যায়, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। তবে সেখানে তার মরদেহ মেলেনি।

বিষয়:

এমপি আনার হত্যা: গ্রেপ্তার তিনজনের ১০ দিনের রিমান্ড চায় ডিবি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চাইবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আজ শুক্রবার দুপুরের পর তাদের ঢাকার আদালতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আমানুল্লাহ ওরফের শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।

ডিবি ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান বলেন, ‘এমপি আনার হত্যায় জড়িত গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। রিমান্ডে এনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভারতের কলকাতায় গিয়ে তার পূর্বপরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। ১৩ মে দুপুর ২টার দিকে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপালের বাসা থেকে বের হন। কিন্তু এরপর আজীম আর বাসায় না ফেরায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস।

গত বুধবার ২২ মে জানা যায়, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। তবে সেখানে তার মরদেহ মেলেনি।

বিষয়:

এমপি আনার হত্যায় ভারতে এক কসাই আটক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে জিহাদ হাওলাদার নামে একজন কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সিআইডি।

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’ বলছে, জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং পেশায় তিনি কসাই। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করতেন তিনি। জিহাদকে বারাসত আদালতে তোলা হবে। হত্যাকাণ্ডের তথ্যের খোঁজে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিহাদকে হেফাজতে নেওয়ার চিন্তা করছেন তদন্তকারীরা।

এদিকে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এখনও তার মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, আশা করছি খুব শিগগিরই তারা (ভারতীয় পুলিশ) হত্যার শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধারে সক্ষম হবেন।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, গত ১২ মে ভারতে যান আনার। তার অন্তত ১০ দিন আগেই কলকাতায় অবস্থান করেন অভিযুক্তরা। ছিলেন ধর্মতলার কাছে সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে। ওই হোটেলের নথি অনুযায়ী, ২ মে থেকে সেখানে থাকছিলেন ফয়সাল এবং মুস্তাফিজুর নামে দুই ব্যক্তি। পরে মুস্তাফিজুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভারতীয় তদন্তকারীদের ধারণা, আনারকে হত্যা করার পরিকল্পনা অনেক পুরোনো। আর সেজন্য অনেকদিন আগেই কলকাতায় যান ফয়সাল এবং মুস্তাফিজুর। কাজ মিটে গেলে হোটেল ছেড়ে দেন তারা।

এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে কীভাবে ভারতে খুন করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোন কৌশলে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খুন করা হয়েছে এবং কীভাবে মরদেহ গুম করা হয়েছে এখন সেসব তথ্য বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে ভারতের কলকাতাভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, এমপি আনারকে হানি ট্র্যাপে ফেলে— অর্থাৎ তরুণীর মাধ্যমে লোভ দেখিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, এমপি আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজান। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন শিলাস্তি রহমান নামের এক তরুণীকে। যার প্রকৃত নাম সিনথিয়া রহমান।

বিষয়:

অপ্রতিরোধ্য শিমুল ভূঁইয়া এক অদৃশ্য গডফাদার

আপডেটেড ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০৫
আওয়াল শেখ, খুলনা ব্যুরো

খুলনা অঞ্চলের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম শিমুল ভূঁইয়া। তবে গত ১০ বছরেরও বেশি কেউ কোনো দিন তার দেখা পায়নি। তবুও ওই অঞ্চলের বিভিন্ন টেন্ডার ও হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে বারবার। এবার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে (আনার) খুনেও তার নাম জড়িয়েছে।

পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করেছেন। তবে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে আমানুল্লাহ নামে পরিচপত্র পাওয়া গেছে।

গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাকে ঢাকার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। পরে ওই দলের সদস্যরা তার গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামে অভিযান চালিয়ে স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা ও বড় ভাই লাকী ভূঁইয়া ও ছেলে তানভিরকে গ্রেপ্তার করে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে খুলনা অঞ্চলের চরমপন্থিদের একটি তালিকা তৈরি করেছিল পুলিশের বিশেষ শাখা। তাতে শিমুল ভূঁইয়া ও তার ছোট ভাই শিপলু ভূঁইয়াকে ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’র আঞ্চলিক নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

ভূঁইয়া পরিবারের সখ্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে

এই চরমপন্থিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে। শিপলু ভূঁইয়া ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর ফুলতলা উপজেলায় অনুষ্ঠিত যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী (বর্তমান ভূমিমন্ত্রী) নারায়ণ চন্দ্র চন্দের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে যুবলীগে যোগদান করেন। তাকে দলে ভেড়াতে সহযোগিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন।

শিপলু ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে দামোদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন এবং বিজয়ী হন। তাকে জেতানোর ক্ষেত্রে শেখ আকরাম হোসেন বড় ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ আছে। ২০২১ সালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে তিনি বিজয় লাভ করেন।

এ ছাড়াও শিমুল ভূঁইয়ার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা খুলনা জেলা পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য। সর্বশেষ নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে কেয়া খাতুন প্রার্থী হলেও শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। ফলে রিটার্নিং অফিসার একক প্রার্থী হিসেবে মুক্তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে মনোনীত করে বিজয়ী করেছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিমুল ভূঁইয়াকে কখনো দেখা না গেলেও পরিবারের সঙ্গে তার সবসময় নিবিড় যোগাযোগ ছিল।

বারবার হত্যাকাণ্ডে শিমুল ভূঁইয়ার নাম

ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার চতুর্থ ছেলে শিমুল ভূঁইয়া। যিনি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মনাম ধারণ করেন। পুলিশের তালিকায় ইতোপূর্বে তাকে ফজল ভূঁইয়া, শিহাব ও ফজল মোহাম্মদ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এবার গ্রেপ্তারের পর তার নতুন নাম পাওয়া গেছে সৈয়দ আমানুল্লাহ।

সর্বশেষ ২০২২ সালের মে মাসে আদালতে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু এবং তার দেহরক্ষী নওশের গাজী হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তাতে শিমুল ভূঁইয়াকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের ২৫ মে রাতে ফুলতলা উপজেলার নতুন হাট এলাকায় নিজ বাড়ির বিপরীতে নিজস্ব অফিসে মিঠু ও নওশেরকে হত্যা করা হয়।

১৯৯০ সালের দিকে খুলনার ডুমুরিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান ইমরানকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন শিমুল ভূঁইয়া। পরে গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।

তবে ১৯৯৮ সালে দামোদর ইউনিয়নের সরদার আবুল কাশেমকে হত্যায় তার নাম জড়ায়। পরে ২০০০ সালে যশোরের অভয়নগর এলাকায় একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে তিনি আবারও গ্রেপ্তার হন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই মামলায় জেল খাটেন শিমুল ভূঁইয়া। জেল থেকে বের হওয়ার পর থেকে তাকে কখনো কেউ দেখেনি। তবে বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডে তার নাম জড়িয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে থেকেও সে হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিত, ২০১০ সালে ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল খুনের ঘটনায়ও তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। বাদল হত্যা মামলাটির বিচার চলাকালে শিমুলের সেজো ভাই মুকুল ভূঁইয়া ওরফে হাতকাটা মুকুল পুলিশের কাছে ক্রসফায়ারে নিহত হন। এ ছাড়া পুলিশের তালিকায় তার বিরুদ্ধে ২৫টি মামলার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

যেভাবে উত্থান হয় শিমুল ভূঁইয়ার

শিমুল ভূঁইয়া ১৯৮৫ সালে দামোদর এমএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর খুলনার দৌলতপুরের দিবা-নৈশ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীতে থাকাকালীন শিমুলের যাতায়াত ছিল ঝিনাইদহে। সেখানে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) শীর্ষ নেতা আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে দাদা তপনের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।

একাধিকবার জেলখাটার কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে চরমপন্থি দলে যোগ দেন শিমুল। দায়িত্ব পান খুলনা অঞ্চলের। এরপর তিনি ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া।

২০১০ সালের আগ পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চরমপন্থিরা। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে, সেই সময় শিমুল ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। খুলনার শীর্ষ চরমপন্থি নেতা আব্দুর রশিদ তাপু, ডুমুরিয়ার মৃণাল, শৈলেন, দেবু সবাই ছিলেন শিমুলের অধীনে। শিমুল প্রকাশ্যে না এলেও তার নামেই চলত সবকিছু।

যেভাবে শিমুল থেকে আমানুল্লাহ হয়ে ওঠেন

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর শিমুল ভূঁইয়ার কাছ থেকে সৈয়দ আমানুল্লাহ নামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে ওই পাসপোর্টটি করা হয়েছিল। তবে কীভাবে তিনি এই জালিয়াতি করলেন তার স্পষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

তবে ওই সময়ে যেহেতু তার ছোট ভাই শিপলু ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি ভিন্ন নামের জন্মনিবন্ধন তৈরি করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট করতে সহায়তা করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

কলকাতার নিউ টাউনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে খুন করে ১৫ মে দেশে ফেরেন আমানুল্লাহ পরিচয় দেওয়া এই শিমুল ভূঁইয়া। পরে গুলশান থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন এমপি আনোয়ারুলকে তারা খুন করেছেন। এই খুনের জন্য আনোয়ারুলের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনের সঙ্গে তার চুক্তি হয়। আনোয়ারুলের সঙ্গে আক্তারুজ্জামানের সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পেয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিমকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে পরিচয় দানকারী এই শিমুল ভূঁইয়া।


এমপি আনার খুনে ‘হানিট্র্যাপ’ কে এই সিলিস্তি রহমান?

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে শুরু করেছে। এ ঘটনায় সামনে এসেছে সিলিস্তি রহমান নামে এক নারীর নাম।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিকে হত্যার জন্য কলকাতার নিউটাউনে অভিজাত ‘সঞ্জীবা গার্ডেন্সে’ যে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়, সেখানে অবস্থান করেছিলেন ওই নারী। হত্যা মিশন ঘটিয়ে মূল ঘাতক আমানউল্লাহ আমানের সঙ্গে তিনি গত ১৫ মে দেশে ফেরেন।

ওই নারীকে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাদের হেফাজতে নিয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, এমপি আনার খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী সিলিস্তি রহমান। তার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

কলকাতা পুলিশও ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ১৩ মে ওই ফ্ল্যাটে তিনজন একসঙ্গে প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। এক দিন ফ্ল্যাটে অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই সিলিস্তি। ১৩ মে তিনি আমানউল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র বলছে, তাদেরও ধারণা ওই নারীই সিলিস্তি। কারণ তিনি ১৫ মে বিমানযোগে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন মূল ঘাতক আমানউল্লাহ।

ধারণা করা হচ্ছে এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এ নারীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন। কারণ সব পরিকল্পনা করে শাহীন ১০ মে দেশে ফিরে এলেও সিলিস্তি থেকে যান কলকাতায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, হত্যার সময় সিলিস্তি তিনতলা ফ্ল্যাটের একটি তলায় অবস্থান করছিলেন। তবে সামনে ছিলেন না। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর তিনি নিচে নেমে আসেন। ওই নারী সিলিস্তি কি না, তদন্ত চলছে।

তদন্তসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন। তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাহীনের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। এ হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক বন্ধু ও চরমপন্থি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে।

কলকাতায় বসে হত্যার চূড়ান্ত ছক এঁকে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন। পরে আমানসহ ছয়জন মিলে এমপি আজীমকে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের একটি ফ্ল্যাটে ট্র্যাপে ফেলে ডেকে আনেন। এরপর তাকে জিম্মি করে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগে ভরে ফেলা হয় অজ্ঞাত স্থানে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কলকাতা পুলিশ ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমান ও তার সহযোগীদের ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আনারের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা যায়। এ ছাড়া সিলিস্তি রহমান নামে শাহীনের বান্ধবীর বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে।

এমপি আনারকে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। হত্যাকাণ্ডের আগে তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল হত্যার পর। তাদের মিশন সফল হওয়ার পর আনারের মরদেহের টুকরাগুলো গুম করতে সিয়াম ও জিহাদ নামের দুজনকে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আমান। ঢাকায় এসে দেখা করেন আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে। তবে শাহীন পরবর্তী সময়ে তাকে কত টাকা দিয়েছেন সেটা জানা যায়নি।

এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। তারা হলেন- হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল।

এদিকে আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৪২। গত বুধবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহার দায়ের করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি মু. আহাদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। সবাইকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।


৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার এ মামলার এজাহার আদালতে আসে।

সেই এজাহার নিয়ে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহবুবুল হক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সিএমএম আদালতে শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই জালাল উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ‘মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে থাকি। গত ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।’

অভিযোগে ডরিন বলেন, “১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি খুদেবার্তা আসে। এতে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। আমি পরে ফোন দেব।’ এ ছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। খুদেবার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।”

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে বাবার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।’


বেঞ্চ ও বারের সুসম্পর্কে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হতে পারে: প্রধান বিচারপতি

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নাসির উদ্দিন শাহ মিলন, নীলফামারী

বেঞ্চ এবং বারের সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

আজ বৃহস্পতিবার নীলফামারীতে জেলা জজ আদালতে আইনী সহায়তা নিতে আসা মানুষদের জন্য 'ন্যায় কুঞ্জ' নামে একটি বিশ্রামাগার শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের আইনজীবী যারা আছেন তাদেরকে বলবো, বেঞ্চ এবং বারের সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আমি বিজ্ঞ আইনজীবীদের বলবো আপনারা বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবেন। আমি বিচারকদেরকেও বলবো আপনারা বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মামলার জট কমানো একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা। মামলার জট কমাতে যে পরিমাণ বিচারকের প্রয়োজন তার চেয়ে বিচারকের সংকট রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের উর্দ্ধতন আদালত ও স্থানীয় আদালত নিদারুণ চেষ্টা করছে যাতে মামলার ডিসপোজাল বাড়ানো যায়। এজন্য আমরা একটি কমিশনও গঠন করেছি।'

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, 'বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। আমাদের স্থানীয় আদালত শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯ টায়। তাই আমি আইনজীবীদের অনুরোধ করবো তারা যেন সময় মেইনটেইন করে আদালতে উপস্থিত হয়। আর‌ আমিও বিচারকদের অনুরোধ করবো তারা যেনো নির্ধারিত সময়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। যাতে করে আমরা প্রতিদিন অন্তত ৪-৫টা মামলা নিষ্পত্তি করতে পারি।'

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল করিমের সভাপতিত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম সারোয়ার ও এ.বি.এম গোলম রসুল, জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, পুলিশ সুপার গোলাম সবুর পিপিএম, বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. মমতাজুল হক সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দরা।


আইনজীবী সহকারীরা নির্ধারিত পোষাক ও পরিচয়পত্র নিয়ে কোর্টে প্রবেশ করতে হবে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

আইনজীবীর সহকারীদের নির্ধারিত পোশাক এবং পরিচয়পত্র ছাড়া আদালত অঙ্গন ও বিভিন্ন শাখায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কেউ এ নির্দেশ অমান্য করলে আইনজীবী সহকারী লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোঃ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

আইনজীবী সহকারীর জন্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজবীবী সমিতি পোশাক নির্ধারণ করে দিয়েছে। রয়েছে তাদের জন্য পরিচয়পত্রও। কিন্তু আইনজীবীর সহকারীরা নির্ধারিত পোশাক পরিধান ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন করছে না। তাই প্রতারক ঠেকাতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র দৃশ্যমানভাবে বহন এবং নির্ধারিত পোশাক পরিধান করার জন্য বারবার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও অনেক আইনজীবীর সহকারী ওই নির্দেশ পালন করেন না। আইনজীবীর সহকারী না হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি যেন আইনজীবীর সহকারী পরিচয়ে আদালত অঙ্গন ও শাখায় প্রবেশ করতে না পারেন বা বিচারপ্রার্থী জনগণকে প্রতারিত করতে না পারেন বা আদালত ও শাখাসমূহের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিঘিœত করতে না পারেন, সে জন্য প্রধান বিচারপতি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখ থেকে পরিচয়পত্র দৃশ্যমানভাবে বহন ও নির্ধারিত পোশাক পরিধান ব্যতীত আইনজীবীর সহকারীদের কোর্ট অঙ্গনে বা শাখাসমূহে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কোর্ট অফিসার, কোর্ট কিপার ও সুপারিনটেনডেন্টদের এ নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছে। যদি কেউ পোশাক এবং পরিচয়পত্র ছাড়া প্রবেশ করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ‘আইনজীবী সহকারী লাইসেন্স’ বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।


প্রতারণার মামলায় খালাস পেলেন ইভ্যালির রাসেল-শামীমা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

প্রতারণার অভিযোগের মামলায় খালাস পেয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শেখ সাদি এই রায় ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের রনি বলেন, এ মামলায় দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। গত ২৪ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের জন্য আজ (২৩ মে) ধার্য করেন। সাজার ভয়ে আসামিপক্ষ আপোসের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি হন বাদী। তাকে রি-কল করা হয়। আজ আসামিপক্ষ বাদীকে আদালতের সামনে পাওনা টাকা ফেরত দেয়। পরে আদালত তাদের খালাস দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী আলী রেজা ফারুক ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর একটি বাইক কেনা বাবদ দুই লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৮ টাকা নগদ ও বিকাশে ইভ্যালিকে পরিশোধ করেন। নির্ধারিত সময় বাইক দিতে না পারায় আলী রেজা ফারুককে একটি চেক দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

পরে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে চেক ডিজঅনার হয়। বাদী পরে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান। তাদের লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হলেও তারা টাকা ফেরত দেননি। এরপর বাদী সংশ্লিষ্ট আদালতে দণ্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।


বাড্ডায় বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান

ঘিরে রেখেছে র‍্যাব
ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৩ মে, ২০২৪ ১১:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডা থানার পূর্ব-বাড্ডা টেকপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ হাতবোমা ও বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র‍্যাব। বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর বুধবার (২২ মে) রাতে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, পূর্ব-বাড্ডার টেকপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ হাতবোমা ও বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।

এ বিষয়ে অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক।

বিষয়:

'নিখোঁজ' আনার জীবিত নাকি মৃত ?

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৩ মে, ২০২৪ ০০:০২
শেখ শফিকুল বারী

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে খুন হয়েছেন না জীবিত আছেন সে বিষয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের কাছ থেকে তিনি নিখোঁজের তথ্য থাকলেও তার খুন হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভারতে গিয়ে ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর কলকাতার নিউ টাউনের বিলাসবহুল আবাসন সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে (বিইউ) ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এই এমপির হত্যার খবর পাওয়া গেল।

এদিকে কলকাতার নিউ টাউন থানায় হত্যার বিষয়ে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সংশ্লিষ্ট পুলিশ। তারা বলছে, মরদেহ পাওয়া যায়নি, কিন্তু রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ রক্ত কার? মরদেহ কোথায় গেল? এখন কী অবস্থায় আছেন এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার? তিনি জীবিত না মৃত?

এমপি আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় তার যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাস বুধবার সকালে জানিয়েছেন, তিনি পুলিশের কাছ থেকে এমপি আনার হত্যার খবর পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় পুলিশের ধারণা, এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। তবে তাকে কে বা কারা, কেন খুন করেছে; এ বিষয়ে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। এরই মধ্যে নিউ টাউন থানার পুলিশ ও বিধান নগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ এবং এইচডিএফ কর্মকর্তারা তদন্তে নেমেছেন। ওই আবাসিক এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তারা।

গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অফিসিয়ালি কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন জানিয়েছে, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে অফিশিয়ালি বা আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি। তদন্তকারী সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে এ বিষয়ে কাজ করছেন।

এদিকে, বুধবার আনোয়ারুল আজিম হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ধানমন্ডির নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে বাংলাদেশিরাই হত্যা করেছে। কারা তাকে খুন করেছে, খুনের মোটিভ কী? তা জানতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এ সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে কলকাতার একটি বাসায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।

আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরও কয়েকজনকে ধরার চেষ্টায় আছি। তাকে (আনোয়ারুল আজিম) হত্যা করা হয়েছে। এখানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরবে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভারতের কেউ এখানে জড়িত নন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে আমাদের দেশের মানুষই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে, তা তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছি না। তদন্ত শেষ হলে জানানো হবে, তিনি কেন খুন হয়েছেন, কে কে খুন করেছে, কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মরদেহ এখনো আসেনি। দুই দেশের পুলিশ তদন্ত করছে। ভারতের পুলিশ আমাদের জানিয়েছে যে, তিনি খুন হয়েছেন, এটা নিশ্চিত।

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তদন্ত চলছে। যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, আমরা পরে সেগুলো প্রকাশ করব।’

এদিকে, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নম্বর ৪২)। তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হকও মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এমপি আনোয়ারুল আজিম সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকেই তিনি ভারতে গেছেন। এ কারণে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন তার মেয়ে ডরিন।

অন্যদিকে বুধবার সকালে রাজধানীর বাড্ডায় এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি গণমাধ্যম সূত্রে। তবে ইন্ডিয়ান বা কলকাতা পুলিশ আমাদের এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি। তিনি জীবিত নাকি মৃত তা এখনো অফিশিয়ালি নিশ্চিত নই। আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। এ ঘটনায় বাংলাদেশের পুলিশ কলকাতার পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। তারা যোগাযোগ রাখছে। কোনো অগ্রগতি থাকলে জানানো হবে।

এমপি আনার চিকিৎসা করাতে গত ১২ মে দুপুরে দর্শনা-গেদে সীমান্ত হয়ে ভারতের কলকাতায় যান। প্রথম দুই দিন যোগাযোগ থাকলেও ১৪ মে থেকে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে আনোয়ারুলের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। পরে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কলকাতায় বাংলাদেশ উপ- হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর থেকে ওই সংসদ সদস্যের খোঁজে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সংস্থাটি জানায়, দিল্লি ও কলকাতা হাইকমিশনের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরই তার খোঁজে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ।

জানা গেছে, এমপি আনার কলকাতায় যাওয়ার পর শহরের অদূরে ব্যারাকপুর এলাকার বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে পৌঁছান তিনি। পরে ১৪ মে তিনি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত নিখোঁজ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস।

জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম বের হয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’ আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তার বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে (পিএস) পাঠানো হয়।

পরে ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতজনের ফোন করেন। কিন্তু তার কোনো সন্ধান মেলেনি।

এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার বিষয়ে জানতে নিবিড়ভাবে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নিহত এমপির মেয়ে ডরিন আমাদের কাছে এসেছেন। তার বাবা বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন, এরপর আর তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে কী ঘটেছে, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করার জন্য এসেছেন ডরিন। মামলা কীভাবে কোথায় করবেন। তার বাবা সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। আমরা তাকে বলেছি, শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করতে। মামলা করতে আমাদের কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করছেন। মামলাটি আজকের মধ্যেই হবে।’

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই ঘটনাটি মর্মান্তিক। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। আমরা নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যকে বাংলাদেশি অপরাধীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। বিচারের মুখোমুখি করব। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’

কী কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা জানা গেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আসলে এটা কী কারণে ঘটেছে জানতে আমাদের তদন্ত চলছে। এটা পারিবারিক নাকি আর্থিক, অথবা এলাকায় কোনো দুর্বৃত্ত দমন করার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, সবকিছু আমরা তদন্তের আওতায় আনব।’

আনোয়ারুল আজিম ভারতে গিয়ে নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটক হওয়া ওই দুই ব্যক্তি সম্প্রতি কলকাতা থেকে ফিরেছেন। দুইজনের মধ্যে একজনের নাম আমানুল্লাহ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের একটি দল কেরানীগঞ্জ থেকে শুরুতে আমানুল্লাহ নামের একজনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে জানালে তারা জানায়, আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন।’

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধার না হলেও তাকে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ জানিয়েছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ এখনো পায়নি পুলিশ। তবে কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত হাতে নিয়েছে বলে জানান এই সিআইডি কর্মকর্তা। এক প্রশ্নের জবাবে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে যে ওনাকে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পূর্ব কলকাতার নিউ টাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরের (এক্সাইজ) কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার রায়ের। তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি।

আখতারুজ্জামানই ওই ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিমের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তি এই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। কিন্তু তারা কবে বেরিয়ে গেলেন, সে বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলতে পারছি না। এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, ১৩ মে উনি এখানে এসেছিলেন।


এমপি আনার হত্যা: বাদী হয়ে মেয়ের মামলা দায়ের

শেরেবাংলা নগর থানায় বাবা আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২২ মে, ২০২৪ ২০:৪৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

আজ বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।

সন্ধ্যায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী। তিনি বলেন, ‘অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হকও মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এমপি আনার সংসদ ভবন এলাকায় থাকতেন। সেখান থেকে তিনি ভারতে গেছেন। তাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান (ডিবি) হারুন-অর-রশিদের পরামর্শে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন আনারকন্যা ডরিন।

এর আগে, আজ বুধবার কলকাতার গণমাধ্যম সূত্রে প্রথম জানা যায়, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার শিকার হয়েছেন। এরপর এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ভারতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি। তবে, ইন্ডিয়ান বা কলকাতা পুলিশ আমাদের এখনো কিছু নিশ্চিত করেনি। তিনি জীবিত নাকি মৃত তা এখনো অফিসিয়ালি নিশ্চিত নই। আমরা যৌথভাবে কাজ করছি।’

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন, ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।

চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিম তার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।

গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এমপি আনার বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।

১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

পরে আজ বুধবার ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরব হয়, কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। এনডিটিভি বলছে, ১২ মে কলকাতায় আসার পর নিখোঁজ হওয়া এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরুর পর বুধবার সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এনডিটিভির প্রতিবেদনে এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সেখানে মরদেহের খণ্ডিত অংশ পাওয়া গেছে।

পরবর্তী সময়ে এনডিটিভির ওই প্রতিবেদন থেকে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশি ওই এমপি খুন হয়েছেন বলে ধারণা করছে কলকাতা পুলিশ। তার মরদেহ কলকাতার নিউ টাউন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের সময় নিউটাউনের একটি ফ্লাটে রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছে পুলিশ।

এদিকে, কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া একজন ক্যাবচালক জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহের এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে এবং মরদেহ খণ্ড-বিখণ্ডিত করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও পরে বিবিসি বাংলাও ক্যাবচালকের স্বীকারোক্তির তথ্য তাদের প্রতিবেদন থেকে সরিয়ে ফেলে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যে ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে; সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশের সূত্র বলেছে, ওই ফ্ল্যাটে তিনজনকে ঢুকতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে একজন নারী। তবে ওই তিনজনকে সেখান থেকে বের হতে আর দেখা যায়নি।

এর আগে, ২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।

বিষয়:

banner close