প্রতিকূলতার মাঝেও সুন্দরবনের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেদিকেও তিনি খেয়াল রাখতে বলেছেন।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব কথা জানান। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, সুন্দরবনের আগুন লাগার বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়টি আরও কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বনের আগুন নেভানোর পর সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করা যায় না। এ জন্য এখনও কয়েক দিন গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা লাগবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবহিত হওয়ার পর কার্যক্রমের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সুন্দরবনের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ৫৫জন কর্মী কাজ করেছেন। দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেছেন। দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূর থেকে পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে পানি এনে ব্যবহার করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, গভীর জঙ্গলে রাতে কাজ করা যায়নি। দিনে কাজ করতে হয়েছে। ঝুঁকিও ছিল। সব মিলিয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জিং কজি তারা সম্পন্ন করেছেন, এজন্য তারা (ফায়ার সার্ভিস) ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিববুর রহমান।
আজ সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা গত ৪-৫ দিন কাজ করে যাচ্ছি। অনেক প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। তারপরও আমরা ১০ জনকে হারিয়েছি। আমরা সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দুর্যোগ মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। যার ফলে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় দেশের উপকূলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় পানি ঢুকে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়েছে। বেশ কিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বেশ কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আজ সকাল থেকে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছি।’
‘প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট ১৯টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং যশোর। এছাড়া ১০৭টি উপজেলা এবং ৯১৪ ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩ বাড়ি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ ঘরবাড়ি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় মোট ৯ হাজার ৪২৪ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এলাকাগুলো পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক ইউনিটগুলো ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে যাবে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের যাওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।’
এ সময় ঘূর্ণিঝড়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি শোক এবং তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান ওবায়দুল কাদের।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে সহযোগিতার নামে ফটোসেশন করে বিএনপি। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হলেও তারা মানবিক কোনো কর্মসূচিতে মাঠে থাকে না। বিভিন্ন সময় সহায়তার নামে ফটোসেশনে ব্যস্ত থাকে। আমাদের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের যে বাস্তবতা জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এসব দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায়... বিএনপির কথা যদি আমি বলি, একটি বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে দায়িত্ব পালনে তারা বার বার ব্যর্থ হয়েছে। তারা সাহায্যের নামে ফটোশেসন করে।’
বিএনপি কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের কাজই হচ্ছে ফটোসেশন করা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রোজার মাসেও আমরা সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছি আর তারা ইফতার পার্টি করেছে। বিএনপির সঙ্গে আমাদের নীতিগতভাবেই অনেক পার্থক্য আছে।’
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ পেয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিনি আগামী ১১ জুন থেকে নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
বিমানবাহিনী বর্তমান প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নানের স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি।
রোববার (২৬ মে) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে প্রতিরক্ষা-বাহিনীসমূহের প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন, ২০১৮ অনুসারে ১১ জুন ২০২৪ তারিখ (অপরাহ্ণ) এয়ার মার্শাল পদবিতে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক উক্ত তারিখ (অপরাহ্ণ) থেকে তিন বছরের জন্য বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
বর্তমানে বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। ১১ জুন তিনি অবসরে যাবেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ২০ জুন ১৯৬৬ তারিখে ঢাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৫ জুন ১৯৮৬ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জিডি(পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। তিনি একজন ফাইটার পাইলট এবং ‘এ’ ক্যাটাগরির কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর। একজন পেশাদার সুদক্ষ বৈমানিক হিসেবে তিনি এসএফ২৫ সি, পিটি-৬, ফুগা, সিএম-১৭০, টি-৩৭, এফটি-৬, এটাক-৫, এফটি-৭বি, এফ-৭এমবি, মিগ-২৯ইউবি, মিগ-২৯বি, এফ/এ-১৮ডি, এফটি-৭বিজি, এফ-৭বিজি, এফটিসি-২০০০, এল-৩৯জেডএ, কে-৮ডব্লিউ এবং বেল-২০৬ বিমান উড্ডয়ন করেছেন। তিনি মিগ-২৯ ফাইটার স্কোয়াড্রনের অগ্রগামী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নটরডেমিয়ান এই কর্মকর্তা সামরিক বাহিনীর দীর্ঘ চাকরি জীবনে দেশে ও বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ মিরপুর এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টরস কোর্স, জুনিয়র কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কোর্স, ফিজিওলজিক্যাল ইনডক্ট্রিনেশন কোর্স, জাঙ্গাল সার্ভাইভাল কোর্স, ওয়াটারম্যান শিপ কোর্স, ফ্লাইট সেফটি কোর্স এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কোর্স, তুর্কি থেকে পিআইসি অ্যান্ড হাই জি টেস্ট, রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ ট্রেনিং, চীন থেকে স্টাফ কোর্স, মালয়েশিয়া থেকে মিগ-২৯ সিমুলেটর ট্রেনিং এবং পাকিস্তান থেকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ওয়্যার কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৮ স্কোয়াড্রন, ট্রেনিং উইং, বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর ফ্লাইং উইংয়ের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক, বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু এর এয়ার অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, বিমান সদরের বিমান পরিচালন পরিদপ্তর, গোয়েন্দা পরিদপ্তর ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের পরিচালক, প্রধান পরিদর্শক, বিমান বাহিনী একাডেমির ডেপুটি কমান্ড্যান্ট এবং চিফ ইন্সট্রাক্টর, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ মিরপুর এর ডেপুটি কমান্ড্যান্ট হিসেবে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) ও সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পেশাগত জীবনে কর্মদক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ‘বিমান বাহিনী পদক’, ‘গৌরবোজ্জ্বল উড্ডয়ন পদক’ ‘অসামান্য সেবা পদক’ এবং তিন বার বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন পেশাগত কারণে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইতালি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং সালেহা খান বিবাহিত জীবনে এক কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক-জননী। তিনি একজন জ্ঞানপিপাসু পাঠক এবং দক্ষ গলফার।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ খুলনার কয়রা থেকে উত্তরদিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। নিম্নচাপটি বর্তমানে যশোর ও তার আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে।
আজ সোমবার সকালে আবহাওয়ার ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে।’
বন্দরে সতর্কতামূলক সংকেত নিয়ে বলা হয়, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ বন্দর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বা অন্য কোনো কারণে বিচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক লাইন যাতে কেউ স্পর্শ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার দেখলে দ্রুত নিকটবর্তী বিদ্যুৎ অফিসকে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোলরুম খুলেছে বলেও জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে ১৬৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সেন্ট্রাল কন্ট্রোলরুমের নম্বর ০১৭৯২-৬২৩৪৬৭, ০২-৮৯০০৫৭৫, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বরিশাল অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১৮, খুলনা অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১১, পটুয়াখালী অঞ্চলের ০১৭১৩-৮৫০২১৯-এ নম্বরগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।
বঙ্গোবসাগরের গভীর নিম্নচাপ থেকে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ উত্তর দিকে ধীরগতিতে অগ্রসর হয়ে মোংলার দক্ষিণপশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম অব্যাহত রেখেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে আবহাওয়া অফিসের ১৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ২৬মে রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার পশ্চিম, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
রেমালের প্রভাবে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অন্যদিকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (১৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
শক্তিশালি ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এখন পর্যন্ত দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের অগ্রভাগ অতিক্রম করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে। কেন্দ্রটি অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড়ের শেষ ভাগটি ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।
‘সব উপকূল এলাকায় বর্তমানে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকাগুলো ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ভেতরে ঢুকেছে। এই মুহূর্তে উপকূলীয় এলাকার মানুষজন বিপদের মধ্যে আছেন। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষজন যেন সঠিকভাবে খাবার পায় সে বিষয়গুলো আমরা মনিটরিং করছি’- বললেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘জোয়ার ভাটার সম্ভাবনা আছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের আতঙ্ক কাটেনি, সামনে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার পরও সারা দেশে প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এটাও একটি দুর্যোগের মধ্যে পড়ে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এসব দুর্যোগকে লক্ষ্য করে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডসহ আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে মানুষের প্রয়োজনে ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নিহতের খবর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি এখন পর্যন্ত দুইজন মারা গেছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছে আমার পটুয়াখালি এলাকায়।
প্রবল শক্তি সৃষ্টি করে উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে সরে রাতেই উপকূল অতিক্রম করে আজ স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠার কথা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান গতকাল রাতে এক ব্রিফিংয়ে জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল ঢাকার আবহাওয়ায় তেমন প্রভাব পড়েনি।
গতকাল রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি আরও প্রবল হওয়ায় আগের দিনের ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের বদলে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর নির্দেশনা জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে দেওয়া ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে নতুন করে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে হবে। এর ফলে সারা দেশেই দিনভর বৃষ্টিপাত হয়েছে, আকাশ মেঘলা ছিল। রাজধানী ঢাকায় গতকাল বিকালে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে।
রেমাল আঘাত হানার আগেই গতকাল দুপুর থেকে দেশের উপকূল অঞ্চলসহ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে সেসব অঞ্চলগুলো। শুধু তাই নয়- দেশের এসব অঞ্চলের মানুষজন নিরাপদ আশ্রয় শেল্টারে অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।’
এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলা এবং দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। রোববার সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার পর প্রতিমন্ত্রী ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৮ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। বাকিদের আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে আপাতত স্কুল খোলা থাকবে, তবে ক্লাস বন্ধ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আগেই আমরা বলেছিলাম আজকে (গতকাল) ভোর থেকে এটা শুরু হতে পারে। ঝড়ের গতি কম ছিল বলে গতকাল ভোরে আসেনি। ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্লাবিত হতে পারে। যদি জোয়ার থাকে এটা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেমালের প্রভাবে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য আমরা সবাইকে নিয়ে আজ সভা করেছি। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রয়েছে। পেছনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়কে আরও শক্তভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমরা সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্ট্যান্ডিং অর্ডার অনুসারে, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি যে সমস্ত অবকাঠামো আছে সেগুলো ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেবেন। সেভাবে তারা সে সমস্ত ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় সে সময় অর্থাৎ দুর্যোগ চলাকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সে প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান কার্যক্রম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্দেশনায় হবে। অর্থাৎ সে সময় স্থগিত থাকবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত।’
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলার প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত। আমাদের প্রতিটি নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। কোস্টগার্ড গত তিন দিন ধরে উপকূলের ৫৭টি স্থানে মাইকিং করছে। একই সঙ্গে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বোটের সঙ্গে কিছু রিলিফও তারা জোগাড় করে রেখেছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও অদূরবর্তী দ্বীপ-চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
রেমালের কারণে দেশের সব সমুদ্র বন্দরে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পাশাপাশি সব ধরনের নৌযান বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও দেশের সব রুটে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ আছে। নৌপথ উত্তাল হওয়ায় রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি খেয়া নৌকাগুলোকেও নদী পারাপারে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা ছিল। ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া রেমালের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে রোববার সকাল পৌনে ১০টা থেকে সকল ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর আগেই লঞ্চ বন্ধ ঘোষণা করে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রোববার কক্সবাজারের সারা দিনের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। শনিবার এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম। তিনি জানান, রেমালের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৬ মে কক্সবাজারগামী সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া, আগামী ২৬ মে কলকাতাগামী বিজি-৩৯৫ ও ২৭ মে কলকাতাগামী বিজি-৩৯১ ফ্লাইটটিও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও বরিশাল বিমানবন্দরেও সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেখতে কক্সবাজারে পর্যটক-দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। বেলাভূমির লাবণী, সি-গাল, সুগন্ধা, ওশান বিচ ও কলাতলী পয়েন্টে শত-শত পর্যটক আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে উপচেপড়া ঢেউয়ের সাথে মিতালি গড়ে গোসলে নামছে। সমানে তাদের উপরে নিরাপদ স্থানে উঠে আসতে তাগাদা দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী ও সৈকতে কাজ করা লাইফগার্ড কর্মীরা।
এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের পানির ঝুঁকি থেকে বোন ও ফুফুকে বাঁচাতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার (২৬ মে) দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে। সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যান। পরে একঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে শরীফের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
অন্যদিকে রেমালের কারণে সুন্দরবন জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন কেন্দ্রের মো. আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এর আগে বিকেল থেকেই রেমালের অগ্রভাগ উপকূল তীরবর্তী অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এদিকে রেমালের প্রভাবে কাল সোমবার দুর্গত এলাকায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
রোববার রাত সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করা হয়েছে। তবে, কর্মচারী যারা আছেন, তাদের সার্বক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে করে আশ্রয়ের জন্য কোনও লোক আসলে তারা যেন সহযোগিতা পায়। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস আগামীকাল বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। পুরোপুরি অতিক্রম হতে রাত ১০টার পর হতে পারে। এরপর এর পেছনের অংশ অতিক্রম করবে। এর প্রভাবে তীব্র বাতাস, জলোচ্ছ্বাস, ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী ও অতিভারী বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাচন বাতিল করা হবে। রোববার দুপুরে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। ইসি সচিব বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রার ক্ষতির ওপর নির্ভর করবে ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। মাঠপর্যায়ে যোগাযোগ রাখছি। ঝড় এখনো আঘাত হানেনি। আঘাত হানার পর সিদ্ধান্ত হবে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন ঝড়টা মারাত্মক আঘাত না হানে।
এদিন সকালে শুনানি করে দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। মো. জাহাংগীর আলম বলেন, আজকে দুজন চেয়ারম্যানপ্রার্থীকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের চান্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যানপ্রার্থী আবু আহমেদ চৌধুরী (ঘোড়া প্রতীক) তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি অভিযোগের দফা অনুযায়ী জবাব দিয়েছেন। কমিশনও তা শুনেছে। শেষে তার প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। অন্যদিকে মো. এমদাদুল হক পাবনার ঈশ্বরদীর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তিনি প্রতীক বরাদ্দের দিন আচরণবিধি ভঙ্গ করেন। তার জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারও প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। উল্লেখ্য, আগামী বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রোগীরা যাতে বিদেশমুখী না হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মতো সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে উৎসাহী হয় সে লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রোববার দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. দীন মোহাম্মদ নুরুল হকের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিদেশমুখিতা কমাতে দেশের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসায় উৎসাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।’
পরে, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে জানান, সাক্ষাৎকালে উপাচার্য চিকিৎসাসহ বিএসএমএমইউর সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সাহাবুদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এখানে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ও সেবার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বিএসএমএমইউর সার্বিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রেস সচিব জানান, পরে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুর রশীদ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় উপাচার্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতে পারে; কারিকুলাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে সে বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে।
শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্য প্রযুক্তিসহ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এবং সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক ডকুমেন্টারি ‘কলকাতায় মুজিব’-এর খসড়া কপি অবলোকন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে গণভবনে তথ্যচিত্রটির খসড়া কপি অবলোকন করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে কলকাতা মহানগরীর বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই বিষয়টিকে উপজীব্য করেই ‘কলকাতায় মুজিব’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন জানান, প্রধানমন্ত্রী ‘কলকাতায় মুজিব’ তথ্যচিত্রটি অবলোকন করেন এবং এর নির্মাণ-সংশ্লিষ্টদের এ সম্পর্কে তার মতামত ও নির্দেশনা দেন।
বঙ্গবন্ধুর কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়া, বেকার হোস্টেলে থাকা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাত কাটানো, পার্ক সার্কাসে ঘুরে বেড়ানো, ব্রিগেডের ময়দানে তার আগুন ঝরানো ভাষণ-এমন আরও অনেক কিছু বঙ্গবন্ধুর প্রিয় এই শহরের অলিগলি থেকে তুলে এনে তথ্যচিত্রটিতে ক্যামেরাবন্দি করছেন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর চলমান সাফল্য ও সুনাম ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন, বিএসপি (বার), এনডিসি, পিএসি, জি, এম ফিল।
আজ রোববার সকালে অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে আয়োজিত দরবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি এই আহ্বান জানান। মহাপরিচালক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছর পূর্তির দিন এ দরবার অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের পরিচালকগণ, উপপরিচালকগণসহ বিভন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
সকলকে সঙ্গে নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক হিসেবে ২ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি বক্তব্যের শুরুতেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তিনি জাতির পিতাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
এসময় তিনি ১৫ আগস্ট শাহাদৎ বরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি; মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া ৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোনসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী শহিদ ফায়ারফাইটারদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
নতুন নতুন ফায়ার স্টেশন চালু করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন, বিশেষ করে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ এবং কর্মীদের আজীবন রেশন প্রদান করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবদের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা যেমন দেশের জন্য জীবন দিচ্ছেন, সরকার তেমনি আমাদের প্রত্যাশিত সকল ন্যায্য দাবি পূরণ করছে।’
একটি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলের উচিত হবে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করা।’
তিনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদেরকে ফায়ার সার্ভিসের অর্জিত সুনাম ও সাফল্য ধরে রাখতে হবে। এজন্য সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে যত্নবান থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমেই একটি প্রতিষ্ঠানে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
দরবারের একপর্যায়ে মহাপরিচালক মহোদয় উপস্থিত বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত শুনতে চান। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলোচনায় মহাপরিচালক মহোদয়ের ২ বছর সময়কালে বিভিন্ন সাফল্য অর্জনের তথ্য উঠে আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩ অর্জন, শহিদ ১৩ জন ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাব প্রদান, সকল কর্মীর জন্য আজীবন রেশন প্রদান, ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রীর আরও ২০ কোটি টাকার অনুদান, প্রথমবারের মতো তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের অংশগ্রহণ ইত্যাদি।