বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় সারাদেশে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে তিঁনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জুমার নামাজের পর মসজিদগুলোতে দলের পক্ষ থেকে এই দোয়ার আয়োজন করা হয়। দোয়া অনুষ্ঠানে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাসহ স্থানীয় জনসাধারণ অংশগ্রহণ করে।
একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করার জন্যও অনুরোধ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিএনপির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
নয়াপল্টনের মসজিদে আয়োজিত দোয়া মাহফিলের অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামীকাল কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছালে রোববার লন্ডনে নেওয়া হবে বেগম জিয়াকে। তবে তিঁনি ফ্লাই করতে পারবেন কি না সেটা চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম জিয়া গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। কারাগার থেকেই তার রোগের সূচনা। চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ হন তিনি।’
এ সময় তিনি বেগম জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
এদিকে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দেশে না পৌঁছানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার সময় পিছিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কারিগরি ত্রুটির কারণে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স শুক্রবার ঢাকায় আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পৌঁছাতে পারে।
দলটি পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, খালেদা জিয়ার শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিক্যাল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাকে লন্ডন নেওয়া হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। তার আগমনকে কেন্দ্র করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
জুবাইদা রহমান হাসপাতালের ইমার্জেন্সি লিফট দিয়ে খালেদা জিয়া যেখানে চিকিৎসাধীন, সেখানে যান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জুবাইদা রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি লন্ডন থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। শাশুড়িকে দেখতে সেখান থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তিনি। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটের দিকে জুবাইদা রহমান হাসপাতালটিতে পৌঁছান। তার আগমনকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
এরও আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় এবং লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হিথরো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩০২ ফ্লাইটে করে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় মা জুবাইদাকে বিদায় জানান মেয়ে জাইমা রহমান।
খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখার পর সেখান থেকে ধানমন্ডির পৈতৃক বাসভবনে পৌঁছান জুবাইদা রহমান। আড়াই ঘন্টার বেশি সময় এভারকেয়ারে ছিলেন তিনি। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনো স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেননি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ঢাকা-১৪ আসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে আমিনুল হক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দলমত নির্বিশেষে দেশের মানুষের কাছে একজন অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, শুধু ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী নয়, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মাতা’ হিসেবেও জাতি তাকে শ্রদ্ধা করে।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ৯০’এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে গত ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের দাবিতে তিনি লড়াই করে গেছেন এবং মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী হয়েছেন। গণতন্ত্রের জন্য তিনি কখনো স্বৈরাচারের সঙ্গে আপস করেননি।
অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, দেশের শান্তি সমৃদ্ধি, নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা ওবায়দুর রহমান। ঢাকা-১৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার সানজিদা ইসলাম তুলির সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ড. মাহদী আমিন, যুবদল-ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিনিধি, স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, খোদা না করুন- অনিবার্য কোনো পরিস্থিতি ছাড়া আমরা এই (নির্বাচন) প্রক্রিয়ার বাইরে যেতে চাই না। আমরা চাই যথাসময়ে নির্বাচন হোক। তফসিল ঘোষণা করার যে সময় নির্ধারণ করা আছে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধিদল এ কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাত্রার পরই আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নেত্রী খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে এবং সম্ভবত কাল (শুক্রবার) ভোরেই তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় থাকা এবং যথাসময়ে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে দলটি।
বৈঠকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য এবং কোনো ভোটার যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিএনপি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে এবার সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য দুটি ব্যালট থাকায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় পোলিং বুথে ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটের সময়কে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত করা যায় কিনা, তা বিবেচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতি বুথে ভোটারের সংখ্যা কমানো এবং মার্কিং প্লেসের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে ভোট দেওয়ার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হয়। এছাড়া প্রয়োজনে ব্যালট বাক্সের সংখ্যাও বাড়ানোর কথা বলেছে দলটি।
বিএনপির উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন এবং আগামী রোববারের মিটিংয়ে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশনও চাইছে সব ভোটার যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে।
তিনি জানান, বৈঠকে ভোটার আইডি তৈরির ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের বিকল্প হিসেবে পাসপোর্টকে ভ্যালিড ডকুমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করার জন্য জোরালো অনুরোধ জানানো হয়েছে।
যুক্তি হিসেবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনেক নাগরিকের, বিশেষ করে বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ন্যাশনাল আইডি নেই, কিন্তু তাদের সবারই পাসপোর্ট আছে। ন্যাশনাল আইডি ও পাসপোর্ট উভয়ই সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ভ্যালিড ডকুমেন্ট। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোট দিতে চাইলেও ন্যাশনাল আইডি না থাকায় পারছেন না। এ জন্য পোস্টাল ব্যালটের রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও পাসপোর্টকে বিবেচনা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যালট পেপার ছাপানোর ক্ষেত্রে কোনো বেসরকারি (প্রাইভেট) প্রেস ব্যবহার না করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অতীতে সরকারি প্রিন্টিং প্রেসেই ব্যালট ছাপা হয়েছে এবং দলটির আশঙ্কা, প্রাইভেট প্রেসে ছাপানো হলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচন কমিশন আশ্বস্ত করেছে যেকোনো প্রাইভেট প্রেসে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে না।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দলটির অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, তার সুচিকিৎসার জন্য চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারা আছেন এবং যথাসময়ে নির্বাচন হোক- এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক এবং ভোটার তালিকায় নাম না থাকার বিষয়টি বড় কোনো সংকট নয়, কারণ কমিশন চাইলে এখনো নাম অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দিতে পারে বলে জানান তিনি।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে ১ কোটি শিক্ষিত যুবকের চাকরি নিশ্চিত করে বেকারত্ব দুর করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত পথসভায় সালাহউদ্দিন আহমদ এই সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এদেশে কোন মানুষ বিনা চিকিৎসার মৃত্যু বরণ করবেনা। সকলের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। দরিদ্রদের জন্য ফ্যামিলি কার্ড প্রদান করা হবে। কৃষকদের জন্য ঋণ ও নানান সুবিধা সম্বলিত কৃষি কার্ড প্রদান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রচুর পরিমাণে লবনের উৎপাদন হলেও ন্যায্যমূল্য না থাকায় হতাশায় পড়েছে চাষীরা। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে লবনের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
পথসভায় বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্যের প্রতীক হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আর এই দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক হলো ধানের শীষ। তাই এই দেশ এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিতে হবে এবং ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষে ভোট চাইতে হবে।
একই দিনে তার নির্বাচনী এলাকা ও নিজ জন্মস্থান পেকুয়া উপজেলার পেকুয়া মগনামা এবং উজানটিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। সকালের তিনি বিএনপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম মাহমুদুল করিম চৌধুরীর কবর জেয়ারত করেন। পরে তিনি মগনামা ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তাদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ডা. আব্দুস সালাম, দিনাজপুর-৫ এ কে এম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ জাহিদুল ইসলাম ধলু, নাটোর-৩ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ সেলিম রেজা, যশোর-৫ এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আমির এজাজ খান, পটুয়াখালী-২ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম তালুকদার, বরিশাল-৩ জয়নাল আবেদীন, ঝালকাঠি-১ রফিকুল ইসলাম জামাল, টাঙ্গাইল-৫ সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ময়মনসিংহ-৪ মো. আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ মোহাম্মদ মাজরুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ শেখ মজিবর রহমান ইকবাল।
এ ছাড়া মানিকগঞ্জ-১ এস এ জিন্নাহ কবির, মুন্সিগঞ্জ-৩ মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা-৭ হামিদুর রহমান, ঢাকা-৯ হাবিবুর রশিদ, ঢাকা-১০ শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৮ এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ মো. মুজিবুর রহমান, রাজবাড়ি-২ মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, ফরিদপুর-১ খন্দোকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-১ নাদিরা আক্তার, মাদারীপুর-২ জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-২ নাসির হোসেন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ নুরুল ইসলাম।
সিলেট-৪ আরিফুর হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ রেজা কিবরিয়া, কুমিল্লা-২ মো. সেলিম ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ মোস্তফা কামাল পাশা, চট্টগ্রাম-৬ গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ নাজমুল মোস্তফা আমীন, কক্সবাজার-২ আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে তিঁনি সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পরামর্শ ও লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও চিকিৎসক জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি ঢাকায় পৌঁছে খালেদা জিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন এবং অবস্থা অনুকূল থাকলে তার সঙ্গেই লন্ডন যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে কাতার জানায়, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হলে তারা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে প্রস্তুত। চিকিৎসকদের সম্মতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরেই তা রওনা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ ১৪ জন তাঁর সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তার শারীরিক অবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসকরা অবস্থাকে ‘স্থিতিশীল’ বলছেন। তার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ রিচার্ড বিলসহ দেশি–বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে।
বুধবার (৩ আগস্ট) যুক্তরাজ্য এবং চীন থেকে বিশেষজ্ঞের নতুন দুটি দল এই বোর্ডে যুক্ত হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। ১ ডিসেম্বর তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্র জানায়।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণার পর হাসপাতাল এলাকাজুড়ে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যদের।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এয়ার ট্রান্সপোর্ট প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে হাসপাতালের নিকটস্থ উন্মুক্ত মাঠে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ করেছে কার্যালয়।
খালেদা জিয়া বহু বছর ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসজনিত জটিলতাসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিন অবস্থান শেষে মে মাসে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় আগামীকাল শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সারা দেশে মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে মহান দেশপ্রেমিক নেত্রী খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় আগামীকাল শুক্রবার প্রতিটি মসজিদে দোয়া মাহফিল, মন্দির এবং অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা হবে। মসজিদে মসজিদে দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত হবে।’
দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ওলামা দলের আহ্বায়ক কাজী মো. সেলিম রেজা, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার গুঞ্জন উঠেছে। যদিও সম্প্রতি এক পোস্টে তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তার ‘একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’ বলে দাবি করেছিলেন। এতকিছুর মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার অন্যতম কারণ নিরাপত্তাহীনতা।
অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর বিমানবন্দর থেকে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর নিরাপত্তাও পেতে পারেন। এ ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত সময়মতো নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিরা এই নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে তাকে এসএসএফের নিরাপত্তা দিয়েছে সরকার।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে নিরাপত্তা শঙ্কা নেই, তার ব্যক্তিগত কোনো নিরাপত্তা শঙ্কাও নেই। তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাবেন।
সূত্র জানিয়েছে, তারেকের দেশে ফেরার গুঞ্জন থাকলেও বুধবার (৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরার কোনো উদ্যোগ নেননি। বুধবার খালেদা জিয়ার কিছু মেডিকেল টেস্ট রয়েছে। টেস্টের রিপোর্ট রিপোর্টের উপর বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার সক্ষমতার বিষয়ে যাচাই-বাছাই হবে। যদি সেটি সম্ভব না হয়, তারেক রহমান তাৎক্ষণিক দেশে ফিরতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে সার্বিকভাবে তিনি ডিসেম্বরের ১১ তারিখের মধ্যে দেশে ফিরতে পারেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন উল্লেখ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করি।
এর মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’ এ বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠে, কী কারণে দেশে ফিরছেন না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান? রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সমালোচনায় বিএনপি নেতারা আভাস দিচ্ছেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ফিরছেন না তারেক রহমান। যদিও কোথায় কী ঝুঁকি রয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি কেউ।
এদিকে, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেননি লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। দেশে ফিরতে তাকে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। অথবা ট্রাভেল পাস নিতে হবে। সরকার আগেই জানিয়েছিল, তারেক রহমান চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাভেল পাস দেওয়া হবে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ট্রাভেল পাস চাননি। তিনি চাইলেই ইস্যু হবে।
অন্যদিকে, সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে কারও কোনো নিরাপত্তার শঙ্কা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও যদি বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, সেটি দেওয়ার জন্যও মন্ত্রণালয় প্রস্তুত রয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৩ ডিসেম্বর (বুধবার) বেলা ১১টায় কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ক্ষেতলাল সরকারি সাঈদ আলতাফুন্নেসা কলেজের মাঠ প্রাঙ্গণে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাবেক সচিব মো. আব্দুল বারী। এসময় জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান, সাধারণ সম্পাদক মো. আবু বক্কর সিদ্দীক, পৌর বিএনপির সভাপতি প্রভাষক আব্দুল আলিম, সাধারণ সম্পাদক রাফিউল হাদী মিঠু, কালাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মৌদুদ আলম, আক্কেলপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান কমল, সাধারণ সম্পাদক আরিফ ইফতেখার আহম্মেদ রানাসহ তিন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল বারী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলনে আপোষহীন সাহসী নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান জাতির ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। আজ তিনি অসুস্থ—আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন সুস্থ হয়ে আবারও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
পরিশেষে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় এবং দোয়া মাহফিল শেষে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিলি ঢাকায় এসেছেন।
৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
শায়রুল জানান, ঢাকায় এসেই ডা. রিচার্ড বিলি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। যেখানে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।
শায়রুল কবির আরও জানান, বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের অংশগ্রহণে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মেডিকেল রিপোর্ট ও সাম্প্রতিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করছেন।
২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য বিএনপির সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে, বর্তমান অবস্থা ও মেডিকেল বোর্ডের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। যুক্তরাজ্য থেকে তাঁকে (খালেদা জিয়া) দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসবেন।
ডা. জাহিদ হোসেন আরও জানান, যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক দেখার পর যদি মেডিকেল বোর্ড মনে করে, তখন খালেদা জিয়াকে যথাযথভাবে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক তাঁকে সেখানে ভর্তি করা হয়।
৩০ নভেম্বর (রোববার) ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও, তাঁর উন্নত ও সার্বিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং চলমান মেডিকেল ব্যবস্থাপনার আরও গভীর মূল্যায়নের জন্য হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড অতিরিক্ত বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
সেই প্রেক্ষিতেই যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে দুটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ভোট পেছাতে কয়েকটি দল ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তারা কারা—আপনারা জানেন। কিন্তু আপনারা কি সে সুযোগ দেবেন? বাংলাদেশের মানুষ কি সে সুযোগ দেবে? গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াবে, জনগণই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত পথসভায় সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথাগুলো বলেন। পাঁচ দিনের সফরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) আসেন।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কুতুবউদ্দিনের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম মোবারক আলী, চকরিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, বিএনপি নেতা এম আবদুর রহিম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাছিমা আকতার প্রমুখ।
২০০৮ সালের নির্বাচন ও ওয়ান–ইলেভেন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ওয়ান–ইলেভেনের সরকার কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনে। সেই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গণতন্ত্র ফিরে পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করতে হয়েছে—রক্ত দিতে হয়েছে, শহীদ হতে হয়েছে, গণ–অভ্যুত্থান করতে হয়েছে। এখন আমরা ভোটাধিকার ফেরত পেয়েছি, কিন্তু প্রয়োগ করতে পারিনি।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এ দেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। এ দেশের জনগণের ঐক্যের প্রতীক তিনি। আজ তিনি অসুস্থ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তার শরীরে স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে বিদেশে চিকিৎসায় যেতে দেওয়া হয়নি, দেশে চিকিৎসাও ঠিকমতো নিতে পারেননি। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে একাকিত্বে দিন কাটাতে হয়েছে। এত অত্যাচার সত্ত্বেও তিনি দুঃশাসনের সঙ্গে আপস করেননি, শেখ হাসিনার সঙ্গেও আপস করেননি। গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই–সংগ্রাম করে গেছেন।’
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন অমুক মার্কায় ভোট দিলে বেহেশতে যাবে—এটা কেমন কথা? ইসলাম কি ভোটে দাঁড়িয়েছে? দুনিয়ার স্বার্থে ধর্মকে বিক্রি করা নাজায়েজ। আমাদের মা–বোনদের বিভ্রান্ত করতে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। এটা সহ্য করা হবে না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘এখন যারা জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে, তারা নিজেরাই কোথায় যাবে আল্লাহ জানেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে—এমন বক্তব্য স্বাধীনতার নামে ছড়ানো যাবে না।’
সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে সালাহউদ্দিন আহমদ খুটাখালীতে পীর হাফেজ আবদুল হাইয়ের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর খুটাখালী ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধন, খুটাখালী ও ডুলাহাজারার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে ডুলাহাজারার পীর হাফেজ আবদুর রশিদের কবর জিয়ারত করেন তিনি।
গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রচিন্তা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং মানুষের অন্তর্নিহিত অধিকার রক্ষার সংগ্রামে এক অবিচল ও ঐতিহাসিক নাম। দুঃশাসন, প্রতিহিংসা ও মিথ্যা মামলার নিপীড়নের মধ্যেও তিনি যে দৃঢ়তা ও নৈতিক সাহস দেখিয়েছেন, তা এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি গভীর দায়বোধ থেকেই উৎসারিত।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রিয়জনদের হারিয়েও তিনি কখনো দমে যাননি, বরং দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর ভাবনা, তাঁর লড়াই এবং তাঁর ত্যাগ আজও জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। তিনি সেই নেত্রী, যিনি ক্ষমতাকে কখনো বিশেষাধিকার হিসেবে নয় বরং জনগণের আমানত হিসেবে দেখেছেন।
তাঁর জীবনগাথা শুধুই রাজনৈতিক উত্থানের ইতিহাস নয়, এটি এক নারীর অনলস যাত্রা। গৃহিণীর সীমাবদ্ধ পরিসর থেকে রাষ্ট্রনেতৃত্বের বিশাল প্রান্তরে পদচিহ্ন রাখার ইতিহাস। তিনি দেখিয়েছেন, একজন নারীর ক্ষমতার শক্তি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আদেশে আসে না; তা আসে চরিত্র, দৃঢ়তা, নৈতিকতা এবং মানুষের প্রতি অনুরাগ থেকে।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সেই মেরুদণ্ড, যার ওপর দাঁড়িয়ে আজও আমাদের ন্যায়, অধিকার ও মুক্ত ভবিষ্যতের আশা দৃঢ় থাকে। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের মনে করিয়ে দেয়- একজন সত্যিকারের নেত্রী শুধু দেশ পরিচালনা করেন না; তিনি জাতিকে ধৈর্য, সাহস ও নৈতিকতার পথে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেন। দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই মহান নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
বাংলাদেশের রাজনীতির এক মহীয়সী প্রতিমা
স্বাধীনতার মহান ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অকাল শাহাদত তাঁর জীবনের মোহময় শান্তিকে ভেঙে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক নিয়তির মুখোমুখি দাঁড় করায়। একদিকে ব্যক্তিগত শোক, অন্যদিকে জাতির ভবিষ্যৎ- এই দুই চরম বাস্তবতার সংঘর্ষ থেকে উঠে আসেন তিনি।
একটি নারীসত্তা- যে পরম মমতায় সংসার সামলাতেন হঠাৎ হয়ে ওঠেন গণতন্ত্রের রক্ষক, দলীয় নেতৃত্বের প্রতীক এবং কোটি কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল।
এই রূপান্তর ছিল সময়, দায়িত্ব ও ইতিহাসের ডাকে সাড়া দেওয়ার সৎ সাহস। সেই সাহসই তাঁকে পরিণত করেছে বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় নেতায়। যিনি শুধু নেতৃত্ব দেননি, একটি জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন।
মহান নেত্রী: শক্তি, সহনশীলতা ও মানবিকতার মিশ্রণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের পথচলা ছিল দীর্ঘকাল অনগ্রসর। সেই সামাজিক বাস্তবতার মাঝেও খালেদা জিয়া নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন এক উচ্চতায়, যা জাতির ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে।
তিনি রাজনীতিতে শক্তির প্রতীক হলেও নিপীড়নের মুহূর্তে ছিলেন ধৈর্যের অদম্য উদাহরণ। তিনি প্রতিহিংসার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন নীরব মর্যাদায়, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছিলেন দৃঢ় লৌহকঠিন মনোবলে।
একজন নারী, যিনি একই সাথে মা, স্ত্রী, নেত্রী এবং রাষ্ট্রনায়ক—তিনি দেখিয়েছেন, রাজনীতি কখনো শুধুই কৌশল নয়; এটি হৃদয়ের ভিতরকার মানবিকতার উৎসমূল দিয়ে পরিচালিত হয়।
মমতাময়ী মা থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান প্রতীক
প্রিয় তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর প্রতি তাঁর মমতা ছিল পৃথিবীর প্রতিটি মায়ের মতোই গভীর, নির্মল ও কোমল। কিন্তু যখন বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের প্রশ্ন সামনে এসেছে, তখন তিনি ব্যক্তিজীবনের মমতা অতিক্রম করে জাতির মায়ের ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তাঁর সন্তানদের ওপর অমানবিক অত্যাচার, তারেক রহমানের নির্বাসন, আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু, তাঁর পরিবারের ওপর গভীর ষড়যন্ত্র এবং তাঁর নিজের ওপর অব্যাহত দমন—এসবকিছুর মাঝেও তিনি মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই থামাননি।
একজন মা তাঁর সন্তানের জন্য যেমন সহ্য করেন অন্ধকার, ঠিক তেমনি তিনি দেশমাতৃকার জন্য সহ্য করেছেন অমানবিকতার নিষ্ঠুরতম রূপ। সেই সহনশীলতা তাঁকে পরিণত করেছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এক অবিনাশী প্রতীকে।
নেতৃত্বে তাঁর ভূমিকা ছিল দায়বদ্ধতার এক স্বচ্ছ নির্মাণশৈলী
আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নেতৃত্বের প্রশ্নটি খুব সহজ নয়। ক্ষমতা, প্রভাব, স্বার্থ—এই তিনটি উপাদান একজন নেতাকে কখনো কখনো নিজের স্বরূপ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এই ত্রিমাত্রিক প্রলোভনের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন দুটি মৌলিক দর্শন: গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অটল বিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার।
বেগম খালেদা জিয়া তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশকে দিয়েছেন রাজনৈতিক স্থিতি, অর্থনৈতিক গতি এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার পরিচ্ছন্ন কাঠামো। তিনি বুঝতেন- রাষ্ট্র পরিচালনা মানে বাহ্যিক আধুনিকতার প্রদর্শনী নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতি ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং জীবনমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা।
তিনি সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলেন, কিন্তু মানুষের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। তিনি প্রশাসনে স্বচ্ছতা, অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ এবং সমাজে ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন গভীর মমতা ও রাষ্ট্রদর্শনের সমন্বয়ে।
জননেতা তারেক রহমানের মুখে প্রায়ই শোনা যায়,
“দেশনেত্রীর সিদ্ধান্তগুলো ছিল সংকটময় সময়ের সঠিক দিকনির্দেশনা, আর তাঁর ধৈর্য ছিল আমাদের রাজনৈতিক নৈতিকতার ভিত্তি।”
এই মূল্যায়ন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি ইতিহাসসম্মত সত্য।
প্রতিহিংসার প্রতিকূলতা এবং দেশবাসীর পক্ষে তাঁর অটল অবস্থান
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসা প্রায়ই নীতিকে ছাপিয়ে চলে। কিন্তু খালেদা জিয়ার ওপর যেভাবে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন নেমে এসেছে তা শুধুমাত্র ব্যক্তি নয়, বরং গণতন্ত্রকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছিল।
তিনি মিথ্যা মামলা, বন্দিত্ব, চিকিৎসা বঞ্চনা সবই সহ্য করেছেন নীরব মর্যাদায়। তাঁর চোখে কখনো কোনো প্রতিশোধের ভাষা নেই। তাঁর ছিল শুধু মানুষের প্রতি ভালোবাসার অঙ্গীকার ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় সংকল্প। এই সংকল্পই তাঁকে ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী করে রেখেছে।
দেশনেত্রীর অসুস্থতা এবং জাতির অন্তর্গত যন্ত্রণা
বাংলাদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় এই নেত্রী আজ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতার প্রতিহিংসার ফলে চিকিৎসার জন্য তিনি যে স্বাভাবিক অধিকারটুকুও পাননি তা দেশের সাধারণ মানুষকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছিলো। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ায় অসামান্য অবদান রেখেছেন তাঁর প্রতি এই নিষ্ঠুর অবহেলা ও নির্যাতন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
তাঁর রোগশয্যা তাই কেবল একজন নেত্রীর অসুস্থতার প্রতীক নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতিবিম্ব।
জনগণের হৃদয়ে তাঁর দৃঢ় অবস্থান এবং প্রবহমান সম্মান
বাংলাদেশের জনগণের কাছে বেগম খালেদা জিয়া কেবল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম নয়, বরং তিনি এক সংগ্রামের নাম, এক মূল্যবোধের নাম, এক ইতিহাসের নাম।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজ যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তার ভিত্তিমূলেই রয়েছে দেশনেত্রীর অটল নৈতিক অবস্থান। তাঁর ত্যাগ, তাঁর ধৈর্য, তাঁর স্থিতধী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিএনপিকে শুধু সংগঠন নয় একটি নৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করেছে।
একজন নেত্রীর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা কখনো শুধুমাত্র তাঁর অর্জন দিয়ে মূল্যায়িত হয় না, মূল্যায়িত হয় তাঁর সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দিয়ে। আর এই জায়গাটিতেই বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক অমোচনীয় আবেগের প্রতীক।
সর্বোপরি-
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সেই বিরল নেত্রী, যাঁর জীবনী পাঠ করলে ক্ষমতার দম্ভ নয়, বরং মানুষের প্রতি গভীর অঙ্গীকারের দৃষ্টি চোখে পড়ে। তাঁর শারীরিক অবস্থা আজ নাজুক হলেও তাঁর আদর্শ, রাজনৈতিক বোধ, রাষ্ট্রদর্শন এবং গণতন্ত্রের প্রতি অটল অবস্থান বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের মনে চিরজাগ্রত।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রা যতদিন অব্যাহত থাকবে ততদিন বেগম খালেদা জিয়ার নাম দেশের মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার আসনে অটল থাকবে। তিনি একদিকে ইতিহাস, অন্যদিকে অনুপ্রেরণা আর সর্বোপরি গণতন্ত্রমনা একটি জাতির অপরিহার্য মানসিক ভরসা।
প্রিয় নেত্রীর এই সংকটময় সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি তাঁর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা কামনা করছি এবং দেশবাসীর কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করছি।