বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখাকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি মুখপাত্র মেজবাউল হকের স্থলাভিষিক্ত হলেন। মেজবাউল হকের আগে মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন জি এম আবুল কালাম আজাদ।
নতুন মুখপাত্র হুসনে আরা শিখাকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য দুজন সহকারী মুখপাত্র নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা হলেন, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি-১) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী ও ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক সাঈদা খানম।
গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান হুসনে আরা শিখা। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। আইবিএ থেকে এমবিএ (ফাইন্যান্স) ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য রূপালী ব্যাংক পুরস্কার ও পেশাগত দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এমপ্লয়িজ রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড (গোল্ড মেডেল) পান হুসনে আরা শিখা। তিনি আইপিএফএফ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে পিপিপির আওতায় অর্থায়ন, বাংলাদেশে পিপিপি অফিস প্রতিষ্ঠা ও ধারণা বাস্তবায়ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি ব্যাংকিং খাতে ঋণমান নিয়ন্ত্রণে বহুল ব্যবহৃত আইসিআরআরএস প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের পরিচালক হিসেবে করোনা-পরবর্তী শতভাগ ঋণ বিতরণে নেতৃত্ব দেন হুসনে আরা শিখা।
নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখাকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে দুজনকে সহকারী মুখপাত্র করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
দুই সহকারী মুখপাত্র হলেন ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী এবং ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিকেশনসের পরিচালক সাঈদা খানম।
মেজবাউল হকের স্থলাভিষিক্ত হওয়া হুসনে আরা শিখা ১৯৯৬ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ দিয়ে শুরু করা শিখা বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে অর্থনীতির ওপর স্নাতকোত্তর করেছেন।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজার শাখা অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ব্যাংকটির ওই শাখার ব্যবস্থাপক ইউসুফ মিয়া সোমবার বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেছেন।
অভিযুক্ত দীপংকর ঘোষ ছেংগারচর বাজার শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত। তিনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামের বলাই ঘোষের ছেলে। তিনি ২০১৯ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মতলব উত্তর থানার ছেংগারচর বাজার শাখায় যোগদান করেন। তিনি উপজেলার ছেংগারচর এলাকায় ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের পাশে একটি ভাড়া বাসায় একাকি থাকতেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দীপংকর ঘোষ কর্মস্থলে না এলে তার মোবাইল ফোনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কল করেন। ফোনে দীপংকর ঘোষ বলেন, ‘বাবা অসুস্থ, আসতে দেরি হবে।’
এরপরও সেদিন তিনি না এলে ব্যাংক থেকে আবারও দীপংকর ঘোষের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে তার প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য দীপংকরের স্ত্রী আঁখি সাহার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী দুপুর ১২টার সময় অফিসের উদ্দেশে ঢাকার বাসা ত্যাগ করেছেন।’
তবে বিকেল হয়ে গেলেও দীপংকর ব্যাংকে না যাওয়ায় ব্যাংকের ভল্ট খোলা সম্ভব হয়নি। পরে তার কার্যকলাপে সন্দেহ মনে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক।
দীপংকর ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং ব্যাংকের ভল্টে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ যথাযথ আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ৩০ আগস্ট মতলব উত্তর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
১ সেপ্টেম্বর জিডির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দিয়ে ভল্ট খোলা হয়। পরে গণনা করে ভল্টে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা পাওয়া যায়। তবে ক্যাশে ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮ টাকা ৭১ পয়সা ছিল। অর্থাৎ গণনার সময় ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা কম পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা করেছি। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে অডিট করে গেছেন। থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সানোয়ার হোসেন জানান, ব্যাংকের ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ইউসুফ মিয়া ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানোয়ার হোসেন আরও জানান, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্যোগে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। বর্তমানে থানা ও ব্যাংকের উদ্যোগে ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যংকের ১৩তম গভর্নর হিসেবে আগামী চার বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠন ও বাজার বিভাগ তাকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তিনি পদত্যাগ করা বিদায়ী গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে ৯ আগস্ট বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ সচিব আফছানা বিলকিসের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এর ১০ (৫) অনুযায়ী পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর-কে অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে তাঁর যোগদানের তারিখ থেকে ৪ (চার) বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক-এর গভর্নর পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নর পদে থাকাকালীন সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংক হতে গ্রহণ করবেন।
বৈচিত্র্যময় কর্মজীবন ড. মনসুরের
ড. আহসান এইচ মনসুর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী। তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আর ১৯৮২ সালে ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।
ড. মনসুর ১৯৮১ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ফিসকাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগে কাজ করেছেন।
সালমান এফ রহমানকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চার কর্মকর্তা। আজ সোমবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন- ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও খুরশিদ আলম, পলিসি অ্যাডভাইজার আবু ফারাহ মো. নাসের ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে এই কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত ৪ আগস্ট ইডিএফের ত্রিশ মিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত, তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের পদত্যাগ করতে হবে। এই আলটিমেটামের পর এফআইডি সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন ওই চার কর্মকর্তা।
শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন অভিযোগ করেন, গত ৪ আগস্ট ইডিএফ তহবিল থেকে ত্রিশ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেন বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সহযোগীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে থাকলে রাষ্ট্রের টাকা আবার লুট হয়ে যাবে। টাকা পেলে তারা অস্ত্র কিনে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করবে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।’
দুই ডেপুটি গভর্নর ও বিএফআইইউ প্রধান এফআইডি সচিবের কাছে এবং পলিসি অ্যাডভাইজার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার। আজ রোববার (১১ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব আফসানা বিলকিসের সই করা এক অফিস আদেশে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের পদত্যাগজনিত কারণে ১১ আগস্ট থেকে নতুন গভর্নরের যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করবেন। ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার গভর্নরের দৈনিক ডাক দেখবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবেন।
২০২৩ সালের ২ জুলাই ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব নেন নূরুন নাহার। ডেপুটি গভর্নর পদে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন এবং ২০১৯ সালে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পান।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জোরপূর্বক নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর দ্বারা দখল হওয়া ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে বেশকিছু ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা পদত্যাগ করে ব্যাংক ছেড়ে যাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা এসআইবিএল (সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি)-এর নিয়ন্ত্রণ নেন আগের উদ্যোক্তা পরিচালকেরা। এ ছাড়া একই গ্রুপের অধীনে কয়েক মাস আগে নিয়ন্ত্রণে যাওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকে আবার মালিকানা বদলের তোড়জোড় চলছে।
বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং পরিচালকরা পালিয়ে রয়েছেন। সব মিলিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ বন্ধ রেখেছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে নিয়ন্ত্রণ হারানো বেসরকারি খাতের এসআইবিএল-এ গতকাল দলবল নিয়ে যান সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. রেজাউল হকসহ কয়েকজন পরিচালক। তারা দুই ডিএমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। আর এদিন এমডি উপস্থিত ছিলেন না।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরিবার ইউসিবির পর্ষদ থেকে পারটেক্স গ্রুপের সবাইকে সরিয়ে কর্তৃত্ব নেয়। জানা গেছে, বর্তমান পরিচালকদের আর ব্যাংকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শেয়ারহোল্ডার ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে তা পাচারে সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা, অবৈধ নিয়োগ বাতিল, জোর করে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে কিছু সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে সম্প্রতি বিক্ষোভ হয়েছে।
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন পুরোনো পরিচালকরা
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। তাদের নিয়োগ দেওয়া পরিচালক বা কর্মকর্তাদের আর ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এস আলম গ্রুপের নিয়োগ দেওয়া বড় পর্যায়ের কেউ গত মঙ্গলবার থেকে ব্যাংকটিতে আসছেন না। ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী গতকাল ব্যাংকে এলে তাদের বের করে দেওয়া হয়।
এদিকে জানা গেছে, ইউসিবির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পারটেক্স গ্রুপের এম এ হাসেম পরিবার মালিকানা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে গত বুধবার কয়েকজন শেয়ারহোল্ডারের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ব্যাংকের আর্থিক খারাপ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে মালিকানা বদল চাওয়া হয়। অন্যদিকে গতকাল ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডারদের ব্যানারে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অবৈধভাবে লন্ডনে ইউসিবি ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা পাচারকারী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও পরিবার থেকে ইউসিবি ব্যাংকের মুক্তি ও তাদের শাস্তি দাবি করা হয়।
২০১৭ সালে শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত এসআইবিএল-এর মালিকানা নেয় এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সব পরিচালককে তুলে নিয়ে এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার কাল ওই সময়কার চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. রেজাউল হক, তখনকার অন্যতম পরিচালক আনিসুল হকসহ কয়েকজন পরিচালক ব্যাংকে যান। তারা ব্যাংকে গিয়ে বোর্ডরুম ও চেয়ারম্যানের জন্য নির্ধারিত কক্ষে গিয়ে বসে পড়েন। এ সময় অনেক কর্মকর্তা সেখানে জড়ো হয়ে ব্যাংকটি ‘এস আলমমুক্ত’ করার দাবি তোলেন। উপস্থিত আন্দোলনকারীদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন এস আলম গ্রুপের আস্থাভাজন, ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল হান্নান খান ও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। অবশ্য পরিচালনা পর্ষদের সবাই পলাতক থাকায় তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে বিক্ষোভ
নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে তা পাচারে সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা, অবৈধ নিয়োগ বাতিল, জোর করে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে কিছু সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে সম্প্রতি বিক্ষোভ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে গত বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে বের করে দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার আবারও বিক্ষোভ হয় বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইএফআইসিসহ অর্ধ ডজন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দল দলে এসব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে সুযোগ-সুবিধা ও ইনসেনটিভের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করেন। ব্যাংক খাতের এ পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
নিরাপত্তার স্বার্থে আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক অ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন করা যাবে না। তবে, এ সিদ্ধান্ত শুধু আজকের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে ব্যাংকগুলোকে খুদেবার্তা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিদের এক জরুরি বার্তায় এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন গ্রাহক নগদ টাকা উত্তোলন করতে না পারলেও যেকোনো পরিমাণ নগদ টাকা স্থানান্তর ও ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ কিছুটা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আওয়ামীপন্থি রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী পরিবার থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের চাপ দেখা যায়। এসব অর্থ যাতে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা অবৈধ কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য নগদ টাকা উত্তোলন কিছুটা নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায় গত রাতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজকের জন্য প্রধান কার্যালয় থেকে শাখাগুলোতে টাকা দেওয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ উৎসাহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে কোনো সরকার নেই এবং আজ নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে। এই সময়ে কেউ যাতে নগদ টাকা নিয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ইতোমধ্যে নগদ টাকার চাপ তৈরি হয়েছে। ফলে এই চাপ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। তাছাড়া, এখন ব্যাংকগুলো এমনিতেই একটু তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অত্যন্ত খারাপ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শাখাগুলোতে ক্যাশ পরিবহন করার জন্য সুব্যবস্থা নেই। মানি ট্রান্সফার কোম্পানিগুলো ঠিকমতো সেবা দিতে পারছে না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডাকাতির খবর শোনা যাচ্ছে। তাই সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে, আশা করি নতুন সরকার গঠিত হলে পরিস্থিতি শান্ত হবে। একই সাথে ব্যাংকিং লেনদেনেও স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে।
আগামী তিন দিন (সোম-মঙ্গল-বুধবার) ব্যাংক বন্ধ থাকবে। আজ রোববার (৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে সারা দেশে তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় সব ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এদিন বিকেলে দেশে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন, আজ সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে। রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে কারফিউ।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ কর্মসূচি ঘিরে দুপুর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যা থেকে সার্বক্ষণিক কারফিউ জারি করা হলো।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ চলাকালে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুলাই (রবি, সোমবার ও মঙ্গলবার) নতুন সময়সূচিতে চলবে চেক ক্লিয়ারিং হাউজ। আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংম্পর্কিত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, আরটিজিএস-এর গ্রাহক লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। আন্তঃব্যাংক ট্রান্সফার ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) সেবা আগের নিয়মে চলবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস), স্বয়ংক্রিয় চেক নিকাশ ঘর (বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ-বিএসিএইচ বা ব্যাচ) এবং বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) এ তিন প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম নতুন সময়সূচি অনুযায়ী চলবে। এসব সেবার মাধ্যমে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বা অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে অর্থ পরিশোধ ও স্বয়ংক্রিয় চেক নিষ্পত্তি করে থাকে।
বিএসিএইচ-এর মাধ্যমে হাই ভ্যালু চেক (৫ লাখ টাকার বেশি) এবং রেগুলার ভ্যালু চেক (৫ লাখ টাকার কম) নিকাশ ব্যবস্থা নিষ্পত্তি করা হয়। হাই ভ্যালুর চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য বেলা ১২টার মধ্যে পাঠাতে হবে। এগুলো বেলা ২টা ১৫ মিনিটের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। আর যেকোনো রেগুলার ভ্যালুর চেক বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে ক্লিয়ারিং হাউজে পাঠাতে হবে। এসব চেক বেলা ২টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে।
আগামীকাল রোববার থেকে মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোর লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। লেনদেনের পরে অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা চলবে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। আজ শনিবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার পর কারফিউর মধ্যে বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংকের লেনদেনসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু হয়। এর আগে গত সপ্তাহে তিনদিন (রবি, সোম ও মঙ্গলবার) সাধারণ ছুটি থাকে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর দেশ জুড়ে উত্তপ্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। এখনো কারফিউ বলবত আছে।
এদিকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে।
কোটা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে কিছু দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত হামলায় স্থবির হয়ে পড়ে দেশ। বাধ্য হয়ে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করার মতন সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, সার্কভুক্ত দেশে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করলে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। সার্কভুক্ত দেশে স্থানীয় মুদ্রা বাণিজ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামে আজ শুক্রবার একটি হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন: সার্ক দেশগুলোর জন্য সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সার্ক ফাইন্যান্স সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, স্থানীয় মুদ্রা চালুর ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা, নীতি উদ্ভাবন এবং কৌশলগত চুক্তির মাধ্যমে আরও স্থিতিস্থাপক এবং সমন্বিত আঞ্চলিক অর্থনীতির পথ প্রশস্ত করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলার দীর্ঘসময় ধরে আধিপত্য করে আসছে। বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ লেনদেন এ মুদ্রার মাধ্যমে হয়ে আসছে, কিন্তু ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আলোকে এবং ভারসাম্যহীনতার ফলে অনেক দেশ একটি একক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প পথ খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করছে।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন করলে মার্কিন অর্থনীতির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমে আসবে। এতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়বে এবং বিনিময় ঝুঁকি ও লেনদেনের খরচ কমবে। নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করলে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারি। স্থানীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সহযোগিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রার স্থিতিশীলতা ও রূপান্তরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার চিফ জেনারেল ম্যানেজার আদিত্য গায়হা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর ড. মো. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক সায়েরা ইউনুস। সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) ব্যাংক হলিডে। এ উপলক্ষ্যে ওইদিন ব্যাংকের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। প্রতি বছরই ১ জুলাই ব্যাংক হলিডে হয়ে থাকে। কারন এদিন ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো হিসাব একত্রিত করে অর্ধ বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। যে কারণে এ দিনটিকে ‘ব্যাংক হলিডে’ হিসেবে ধরা হয়। এ দিন বন্ধ থাকবে শেয়ারবাজারের লেনদেনও। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ শাখা খোলা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ জুলাই ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংক গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন বা দাপ্তরিক কার্যক্রম করে না।
একইভাবে প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরও ব্যাংক হলিডে হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ওইদিন ব্যাংকগুলো পঞ্জিকা বছরের হিসাব শেষ করে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। যে কারণে এ দিনটিকেও ‘ব্যাংক হলিডে’ হিসেবে ধরা হয়।
আগামীকাল সোমবারের পরের দিন মঙ্গলবার যথারীতি সাধারণ নিয়মে খোলা থাকবে ব্যাংক খাত। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মত একই সূচিতে চলবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন মো. রজব আলী। পদোন্নতির আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-২-এর পরিচালক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১-এর আদেশে তাকে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মো. রজব আলী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মচারী সমবায় ঋণদান সমিতি লিমিটেড, ঢাকা’-এর টানা তিন মেয়াদের (৯ বছর ৩ মাস) নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন।
মো. রজব আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের হলুদ দলের চেয়ারম্যান। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ, এফএসএসএসপিডি, ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর করেছেন মো. রজব আলী।