কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সলপা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে পুঁটি ও পোয়া মাছের মাচাতে শুকানো ঐতিহ্যবাহী শিদল তৈরির প্রক্রিয়া। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই গ্রামে তৈরি হয় পুঁটি শিদল, পোয়া শিদল, বাঁশপাতা শিদলসহ নানা ধরনের সুস্বাদু শুঁটকি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব শিদল এখন রপ্তানি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে— আগরতলা ও সোনামুড়ার বাজারে।
সলপা গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার আজও ধরে রেখেছেন তাদের বাপ-দাদার এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। একসময় অর্ধশতাধিক পরিবার যুক্ত ছিল এই পেশায়, তবে এখন মাছের সংকট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেকেই পেশা বদলে নিয়েছেন।
স্থানীয় কারিগর রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাচায় শিদল শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। অমল সূত্রধর নামে এক শুঁটকি উৎপাদক বলেন, ‘আমরা দুই ধরনের শিদল তৈরি করি- পুঁটি ও পোয়া মাছের। পোয়া মাছ আসে চট্টগ্রাম থেকে, আর পুঁটি মাছ আসে মেঘনা ও সিলেট অঞ্চল থেকে। মাছের পেট কেটে তেল তোলা হয়, সেই তেল পরে শিদল তৈরির সময় ব্যবহৃত হয়।’
তিনি জানান, এ কাজে গ্রামের প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন মাছের পেট কাটার কাজে যুক্ত থাকেন। তাদের কাছ থেকে প্রতি কেজি তেল ১৫০ টাকা দরে কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরপর মাছগুলো এক মাস শুকিয়ে মাটির মটকায় সংরক্ষণ করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মন্টু চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আগে নদী-নালা, খাল-বিল উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। তখন শিদলের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এখন মাছের অভাব আর খরচ বৃদ্ধির কারণে একই শিদল বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিতে। নির্বাচিত ভালো মানের পুঁটি শিদল প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় বর্ষা মৌসুমে পূর্বহাটি, চলনহনিয়া, ফরদাবাদ, রুপসদী এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। অতিরিক্ত মাছ নষ্ট হয়ে যেত, সেগুলো দিয়েই তৈরি হতো শিদল। এখন মাছ আনতে হয় দূর-দূরান্তের বিল থেকে।’
মন্টু সরকার জানান, তাদের তৈরি শিদল দেশের বিভিন্ন বাজারে যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট, ফেনী ও কুমিল্লায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ভারতের আগরতলা ও সোনামুড়ার পাইকাররাও নিয়মিত এই শিদল কিনে নিয়ে যান।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এই ঐতিহ্যবাহী শিদল আরও বড় পরিসরে উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। এতে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, একসময় বর্ষা মৌসুমে এই এলাকায় প্রচুর পুঁটি মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ শেষে অতিরিক্ত মাছগুলো পচে নষ্ট হতো। এই পচে যাওয়া মাছগুলোকেই রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হতো সিদল। বর্তমানে মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না।
গাইবান্ধা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সরকারটারি। চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত আর পাখির ডাক। সেই শান্ত গ্রামের এক কোণে সারি সারি পাকা চৌবাচ্চা, তাতে ভেসে বেড়াচ্ছে ঝলমলে রঙিন মাছ। সূর্যের আলোয় চকচক করছে মলি, প্লাটি, গাপ্পি, কইকাপ, কমেট আর গোল্ডফিশ-এ যেন রঙের উৎসব!
এই রঙের জগৎ গড়ে তুলেছেন ওই গ্রামেরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়া-লেখা করা যুবক সাগর সরকার। তার হাত ধরেই রঙিন মাছের ব্যবসা এখন আলোচনায় শুধু গাইবান্ধায় নয়, দেশের নানা প্রান্তেও। তার মাসিক আয় গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে সারি সারি পাকা চৌবাচ্চা। তার পাশেই ৪৪ শতক আয়তনের বিশাল পুকুর। পুরো পুকুরের ওপরে জাল বিছানো। চৌবাচ্চা ও পুকুরে মাছের যত্ন নিচ্ছেন যুবক সাগর সরকার।
দেখা যায়, মাছের আকার ও স্বাস্থ্য দেখতে জেলের সাথে নিজেও জাল টেনে তুলছেন মাছ। পরম মমতায় মাছগুলো হাতে নিচ্ছেন আর খুশি মনে দেখছেন।
সাগরের খামারে এখন মলি, প্লাটি, সোর্ডটেল, গাপ্পি কমেট, জাপানি বাটারফ্লাই, কইকাপ, জেবরা দানিয়া, টাইগার বার্ব, গোরামি, এনজেল থাইটার, অটো ব্রিডিং ও গোল্ডফিশ প্রজাতির প্রায় দুই লক্ষাধিক রঙিন মাছ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পরিচর্যা, বাছাই ও বিক্রির ব্যস্ততা। স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে নিচ্ছেন নিয়মিতই।
সাগরের একেকটি রঙিন মাছের দাম সর্বনিম্ন ১৫ টাকা থেকে শুরু। আছে কয়েক হাজার টাকার দামি মাছও। বর্তমান আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলাতে সাগর করেছেন খামারের নামে আছে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, যা ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে তিনি ঘরে বসেই সারা দেশে রঙিন মাছ বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবেও বিক্রি করেন মাছ।
এসময় সাগর বলেন, ২০১৯ সালে শুরু করলেও আমি সফলতার মুখ দেখি ২০২২ সালে। তখন থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমার খামারে ২ লাখের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছ আছে। আমার সব বাদে প্রতিমাসে গড় আয় ৬০-৭০ হাজার টাকা।
তার এমন সাফল্যে গর্বিত স্থানীয়রা ও স্বজনরা। খামার দেখতে আসা স্থানীয়রাও মুগ্ধ—তাদের মতে, “এমন রঙিন মাছের রাজ্য আগে এ অঞ্চলে দেখা যায়নি।
মাছ দেখতে আসা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এরকম রঙিন মাছ চাষ হয় জানতাম কিন্তু বাস্তবে ইকিউরিয়াম ছাড়া পুকুরে দেখেনি। সাগরের এখানে এসে দেখলাম। ভালো লাগলো। সাগর আসলে আমাদের গ্রামের গর্ব।
সাগরের বাবা মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘সাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শেষ করে ছেলেটা চাকরি না করে এই কাজে লেগে পড়ে। প্রথম আমরা হতাশই ছিলাম। পরে সফলতা পেয়েছে, এখন ভালো আয় করছে । দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে তার খামার দেখতে, ভালো লাগে। আমিও বিভিন্ন কাজে সাধ্যমতে তাকে সহযোগিতা করে থাকি।
সাগরের আজকের এই সফলতার পিছনে আছে বড় একটি চ্যালেঞ্জের গল্প। শুরুটা ২০১৯ সালে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর অনেকে যেমন চাকরির খোঁজে রাজধানীর পথে ছুটে যান, সাগর বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পথ। তিন বন্ধু মিলে শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। তবে তারা তিন মাসের মাথায় লোকসানে এই পথ ছেড়ে দেন। কিন্তু দমে যাননি সাগর। কঠিন এই পথে যাত্রা শুরে করে অদম্য সাহস আর নিজের প্রতি বিশ্বাসের ওপর ভর করে। বাড়ির সামনে ৪৪ শতক জমির পুকুরে শুরু করেন নিজের কর্মক্ষেত্র।
তিনি বলেন, তার এই যাত্রায় পাশে ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের আরএমটিপি প্রকল্প। প্রতিষ্ঠানটি তাকে দিয়েছে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা।
এদিন, এসকেএস ফাউন্ডেশনের ভিসিএফ আরএমটিপি প্রকল্পের কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, “সাগরের মতো তরুণরা যদি উদ্যোগী হয়, তবে গ্রামেই তৈরি হবে কর্মসংস্থানের কেন্দ্র। সাগরকে আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। চৌবাচ্চা করার জন্য এককালীন অর্থ সহায়তাও দিয়েছি আমরা।’ গ্রামের তরুণদের জন্য সাগর সরকারের এই সাফল্য এখন অনুপ্রেরণা। তাঁর খামারে ইতিমধ্যেই কয়েকজন স্থানীয় যুবক অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে এই খামার হতে পারে এলাকার কর্মসংস্থানের কেন্দ্র।
সাগরের হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬০০ কোটি টাকার রঙিন মাছের চহিদা রয়েছে। বর্তমানে দেশের চাহিদা মেটাতেই ব্যস্ত তিনি, তবে তার স্বপ্ন আরও বড়।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই গাইবান্ধাকেই দেশের অন্যতম বড় রঙিন মাছের উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত করতে। ভবিষ্যতে বিদেশেও রপ্তানি করতে চাই,’ এসময় তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
পঞ্চগড় জেলায় কৃষকেরা এখন সল্পমূল্যে সহজেই পাচ্ছেন সেচের পানি। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) উদ্যোগে জেলার প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা সাশ্রয়ী খরচে জমিতে সেচ দিতে পারছেন, যা জেলার কৃষি উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বিএমডিএ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলায় বর্তমানে ৪৬০টি সেচযন্ত্র চালু রয়েছে। প্রতিটি সেচযন্ত্র থেকে ২৪ হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহ করা হয়। সেচ ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছে প্রিপেইড মিটার, যার মাধ্যমে কৃষকেরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি নিতে পারেন।
প্রিপেইড কার্ডে ১ টাকা থেকে ২৯০০ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যায়। প্রতি ঘণ্টায় পানির খরচ প্রায় ১৩০ টাকা এবং এই সময়ের মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার লিটার পানি সরবরাহ সম্ভব হয়। হিসাব অনুযায়ী, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০ লিটার পানি সরবরাহ করা হয় কৃষকদের জমিতে।
এ সেচব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি পৌঁছে দেওয়া হয়, ফলে পানির অপচয় একেবারেই হয় না। পুরো সিস্টেমই স্বয়ংক্রিয় এবং নিয়ন্ত্রিত, যার ফলে কৃষকরা চাহিদা অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য পানি পেয়ে থাকেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পঞ্চগড় জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম (ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং) জানান, ‘সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে সেচের পানি পাচ্ছেন। তবে যেহেতু এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই এখানে কোনো ভর্তুকি নেই। অপারেটরদের প্রতিঘণ্টায় ১৫ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। পানি সরবরাহে অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায় বা অন্যান্য অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে ২০০৪ সাল থেকে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এই সেচ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলায় এর সুফল পাচ্ছেন হাজারো কৃষক।
পঞ্চগড় সদরের স্থানীয় বাজারে এখন বরেন্দ্রর মাধ্যমে পানি সরবরাহের লোড দেন হাসান। সেচযন্ত্র পরিচালনা, মোটর, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাহারা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেচনালা মেরামতের দায়িত্বে আছেন স্থানীয় অপারেটররা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সঠিকভাবে এই ব্যবস্থাপনা চালু থাকলে জেলায় কৃষি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সেচ ব্যয়ে কৃষকেরা বড় ধরনের সাশ্রয় পাবেন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অসময়ে বৃষ্টির প্রভাবে ও ঝড়ো বাতাসে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের কাঁচা-আধাপাকা শত শত বিঘার ধান পড়ে গেছে। কিছু কিছু জমি পানিতে তলিয়ে গেছে পানিতে ভাসছে সেই সকল জমির ধান। কৃষকদের কষ্টার্জিত ফসল এভাবে নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছে কৃষকরা। এ বছর তুলনামূলক ভাল ফলন হয়েছিল। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস হওয়ার ফলে প্রায় ৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২০ হেক্টর জমির ধান মাটিতে পড়ে ও পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। ধানের পাশাপাশি মরিচ ৪০ হেক্টর, শাক-সবজি ২০ হেক্টর ও ৬ হেক্টর ভুট্টা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সবকটি ইউনিয়নের কৃষিজমিতে পানি জমা ও ধান মাটিতে পড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকার পড়ে যাওয়া ধানগাছগুলো পানির ওপরে ভাসতে দেখা গেছে। কাঁচা-অর্ধপাকা ধান পুরো পাকার মুহুর্তে হঠাৎ এই বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ধান গাছ পড়ে যাওয়ায় সময়মতো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা।
চর পোগলদিঘা গ্রামের কৃষক হাসান মিয়া বলেন, আমার দেড় বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ ধান লাগিয়েছি। এখন মাত্র ধানের থুর (শীষ) বের হয়েছে। এর মধ্যেই বাতাশের কারণে সবগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
গাছ বয়ড়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন নাজমুল, শাহ জালাল পরাণ বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কৃষি কাজ ও ফসল চাষ করেই সংসার চালাই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছিলাম। আমাদের পুরো বছরের পরিশ্রম ও লাভ একেবারেই শেষ হয়ে গেল।
উপজেলা কৃষি অফিসার অনুপ সিংহ বলেন, অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষক ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের পাশাপাশি নস্ট হয়েছে মরিচ, শীতকালীন শাক-সবজি ও ভুট্টা। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রনোদনার মাধ্যমে সহযোগীতা করার ব্যবস্থা করব।
একসময় কৃষিজমিতে জৈবসারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হতো রাউজান পৌরসভার শরীফ-পাড়া গ্রামের কৃষক ছগির আহমদকে। এখন সেই ছগির আহমদ নিজেই অন্য কৃষকদের জৈবসার সরবরাহ করছেন, আবার নিজের বাড়ির আঙিনায় তৈরি ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে। রাউজান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ছগির আহমদ আজ সফল একজন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদক। মাসে গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন তিনি। এতে নিজের সংসার এখন অনেকটাই স্বচ্ছল, আর এলাকার অন্য কৃষকেরাও উপকৃত হচ্ছেন। ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘অনাবাদি, পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন (ইফনাপ-১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিস তার জন্য কমিউনিটি বেইজড ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী স্থাপন করে দেয়। প্রকল্প থেকে রাউজানে ভার্মি কম্পোস্ট তিনি পেয়েছেন ভার্মি কম্পোস্ট পিট, ১০টি রিং, ৪টি হাব ও একটি মেকানিক্যাল সেপারেশন মেশিন। এরপর থেকেই শরীফপাড়ার বাড়ির পাশে পতিত জমিতে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন। উপজেলা কৃষি অফিসের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ৩৫০ কেজি কম্পোস্ট তৈরি করছেন। বছরে সাড়ে তিন টন সার বিক্রি করে পাচ্ছেন ভালো লাভ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শরীফপাড়া আইপিএম কৃষক গ্রুপের আরও ৪০ জন কৃষক সরাসরি উপকৃত হয়েছেন। ছগির আহমদ বলেন, ‘আগে রফসলের জন্য জৈব সার কিনতে অনেক খরচ হতো। এখন নিজেই সার তৈরি করি, নিজের ক্ষেতেও ব্যবহার করি, আবার অন্য কৃষকদের কাছেও কেজি ১৫ টাকায় বিক্রি করি। এতে সবাই উপকৃত হচ্ছে। ‘তিনি আরও জানান, ভার্মি কম্পোস্টের জন্য প্রয়োজনীয় গোবরের জোগান দিতে তিনি গরু পালন শুরু করেছেন। এতে সারের পাশাপাশি দুধ বিক্রি করেও বাড়তি আয় হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুম কবির বলেন, ‘আমরা কৃষকদের জৈবসার ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছি। ছগির আহমদ এই প্রকল্পে যুক্ত হয়ে যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা অন্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার উদাহরণ দেখে অনেকে এখন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’ তিনি জানান, রাউজানে ভার্মি কম্পোস্টের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। তাই আগ্রহী কৃষকদের আরও সম্পৃক্ত করতে কৃষি বিভাগ ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
চলতি বছর যশোরের কেশবপুর উপজেলায় চিংড়ি ও সাদা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এ বছর কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮ মৎস্যঘেরে মাছ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টন। যার বাজার মূল্য ৫৭৫ কোটি টাকা। এই উৎপাদিত মাছ কেশবপুরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এবং আমিষের চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক দশক ধরে যশোরের কেশবপুর উপজেলা মৎস্য উৎপাদানে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে ৷ কেশবপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেশবপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫৮টি মৎস্যঘের ও ৬ হাজার ১৪০টি পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এর মধ্যে সাধারণ ঘের রয়েছে ২ হাজার ৮৪২টি, যার আয়তন ৫ হাজার ৩১১ হেক্টর এবং বাণিজ্যিক ঘের রয়েছে ৫১৭টি, যার আয়তন ১ হাজার ২২৫ হেক্টর। এছাড়া পুকুর রয়েছে ৬ হাজার ৬৪০টি। যার আয়তন ৬৯৮ হেক্টর। অন্যদিকে গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ৬৬১টি, যার আয়তন ৫১৫ হেক্টর, বাগদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ৬৩৬টি, যার আয়তন ৩১৫ হেক্টর। এ বছর কেশবপুরে রই, কাতল ও পাবদাসহ সাদ্য মাছ উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ৫৭৫ টন। এই উৎপাদিত মাছের মূল্য ৫২০ কোটি টাকা। এছাড়া চিংড়ি মাছ উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টন এবং বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১৬৫ টন। যার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। এ বছর কেশবপুরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৭ হাজার ৭৫ টন। সেখানে ৫০০ টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে কেশবপুরে মাছের চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার টন। বাকি মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া গলদা, বাগদা চিংড়ি ও পাবদা মাছ ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয় বলে জানা গেছে। কেশবপুরের উৎপাদিত মাছ আমিষের চাহিদা পূরণসহ দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কেশবপুরে ৪ হাজার ৬০২টি মৎস্য ঘেরে মাছ চাষ করা হয়। এতে সাদা ও চিংড়ি মাছ উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ১২২ টন। মৎস্য চাষিদের দাবি এ খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রশিক্ষণের সহযোগিতা পেলে মাছ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। কেশবপুরের মৎস্যচাষি কাশেম মোড়ল ও লুৎফার রহমান বলেন, মাছ উৎপাদনে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে কেশবপুরে মাছ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। কেশবপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেশবপুরে ছোটবড় মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৬৫৮টি মৎস্যঘেরে চলতি বছর প্রায় ৩০ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৫৭৫ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, এলাকার মৎস্যচাষিদের বিভিন্ন সহযোগিতাসহ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে এ বছর চিংড়িসহ সাদা মাছ উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেশবপুরের মৎস্যখাত আরও প্রসারিত করতে আধুনিক হ্যাচারি, ঠান্ডা সংরক্ষণাগার ও পরিবহন সুবিধা বাড়াতে হবে। তা হলে এ অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আরও সমৃদ্ধ হবে।
নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের দিয়ে ‘মা ইলিশ’ শিকার করে প্রায় ১৬ কোটি টাকা আয় করেছেন ভোলার চরফ্যাশনের ৩ শতাধিক আড়তদার। তাদের এই অনিয়মের নিয়ন্ত্রণ কারো হাতেই ছিলো না। ‘মা ইলিশ’ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের নামমাত্র অভিযান আমজনতাকে দেখালেও এ দৃশ্যের পেছনে ছিলো ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন গভীর সাগরে ইলিশ শিকার করা সামরাজ মৎস্যঘাটের একাধিক জেলে।
ওই জেলেরা আরও জানিয়েছেন, তারা নিরুপায়, কারণ তারা আড়তদারদের দাদনভুক্ত। আড়তদারদের নির্দেশেই জেলেরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দীর্ঘ ২২দিন গভীর সাগরে অবস্থান করে ইলিশ শিকার করেছেন। যদিও মৎস্য বিভাগের দাবি তারা যথাযথ নিয়মে অভিযান পরিচালনা করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত শনিবার রাত ১২টায় ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরেই ইলিশ বোঝাই সাগরগামী শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার চরফ্যাশন উপজেলার কয়েকটি মৎস্যঘাটে ফিরে। পরের ৪ দিন- রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার দুপুর পর্যন্ত শত শত টন পচাঁ ইলিশ নিয়ে অর্ধশত ট্রলার মৎস্যঘাটে এসে নোঙর করেছে। এসব পঁচা ইলিশের ভাগাড় দেখে সাধারণ ক্রেতারা বিস্মিত হলেও আড়তদাররা ছিল আনন্দিত।
অনুসন্ধানে জানা যোয়, গত ৪ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে তার আগের রাত এবং নিষেধাজ্ঞার মধ্যেবর্তী সময়ে সামরাজ, নতুন স্লুইসগেট, খেজুরগাছিয়া, মাইনউদ্দি ঘাট, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া, কুকরি মুকরি ও পাতিলা মৎস্যঘাটের অসাধু আড়তদারদের দাদনভুক্ত জেলেরা বরফ, জ্বালানী তেল ও খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য গভীর সাগরে যায়। তারা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে ইলিশ শিকার করেছেন। ট্রলারে পর্যাপ্ত পরিমাণ বরফ না থাকায় দুই তৃতীয়াংশ ইলিশ মাছ পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, চরফ্যাশনের এসব মৎস্যঘাটগুলোতে কাকডাকা ভোর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এই অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে।
ইলিশ কিনতে আসা এক ক্রেতা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আড়তদাররা কমিশন বাণিজ্যের পাশাপাশি পঁচা ইলিশের দাম হাঁকিয়ে নানান অযুহাতে চড়া দামে বিক্রি করছেন।
এছাড়াও শতকরা সাত টাকা ইলিশে এবং পনেরো টাকা অন্যান্য প্রজাতির মাছে কমিশন বাণিজ্য করেন আড়তদাররা।
সামরাজ মৎস্যঘাটের আড়তদার অহিদ মাঝি বলেন, সামরাজ মৎস্যঘাটে ৯৮ জন মৎস্য আড়তদার রয়েছে। এসব আড়তদাররা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, ‘আমরা মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে গভীর সাগরে অভিযান পরিচালনা করেন কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন আড়তদারদের নির্দেশে জেলেরা সাগরে ইলিশ শিকার করেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই।’
ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষের ৪ দিন সাগরগামী শতাধিক ট্রলার পঁচা ইলিশ বোঝাই করে কোথা থেকে মৎস্যঘাটে এলো? এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন কাছ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ইলিশের প্রজনন রক্ষায় গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশের সব নদী ও সমুদ্রে ইলিশ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছিল সরকার।
লালমনিরহাটে টিএসপি, ডিএপি ও এমওপির মতো নন-ইউরিয়া সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলারদের কাছে সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক। সময়মতো জমিতে সার দিতে না পারায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে কৃষি বিভাগ এ সংকটকে ‘কৃত্রিম’ বলে দাবি করছে। তাদের মতে, জেলায় সারের কোনো ঘাটতি নেই। বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকলেও কিছু অসাধু ডিলার বেশি মুনাফার লোভে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে দাম বাড়াচ্ছেন।
জমিতে আলু ও ভুট্টা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু সার না পাওয়ায় জমি প্রস্তুতের কাজ আটকে আছে। কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন বলেন, ডিলারদের কাছে সারের জন্য গেলে তারা বলেন সার শেষ। কিন্তু সেই সারই খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে আমাদের প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে।
একই অভিযোগ করেন পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক আবু তালেব। তিনি বলেন, নন-ইউরিয়া সার ছাড়া জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। এখন সারের সবচাইতে বেশি দরকার। নভেম্বরে সারের চাহিদা আরও বাড়বে। সময়মতো সার না পেলে আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বিএডিসি লালমনিরহাট গুদামের সহকারী পরিচালক একরামুল হক জানান, জেলায় ১৪৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত দরে সার বিক্রি হয়। সরকার ডিলারদের কাছে প্রতি কেজি টিএসপি ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা ও এমওপি ১৮ টাকা দরে বিক্রি করে। ডিলাররা কেজিতে ২ টাকা লাভ রেখে কৃষকের কাছে বিক্রি করতে পারেন।
তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সব সার আমাদের গুদামে রয়েছে। ডিলাররা নিয়মমাফিক সার উত্তোলন ও বিক্রি করছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ সার কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের কোনো সংকট নেই। বিএডিসি গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিলাররা। হারাটি ইউনিয়নের সার ডিলার আবু তাহের বলেন, সরকার যে পরিমাণ সার বরাদ্দ দেয়, আমরা নির্ধারিত দরে সেটি কৃষকের কাছে বিক্রি করি। কেউ বেশি দরে বিক্রি করে না। ডিলারের সার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কীভাবে যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা কোথা থেকে সার পান, সেটা আমাদের জানা নেই।
লালমনিরহাট জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল হাকিম সংকটের জন্য বরাদ্দের স্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় এ সংকট তৈরি হয়। বিশেষ করে চরাঞ্চলে এখন প্রচুর জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে, ফলে সারের চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের সার নীতি ঠিক রেখে চাহিদামতো সার সরবরাহ করলে সংকট থাকবে না। তবে কোনো ডিলার যদি সত্যিই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন, তাহলে অবশ্য তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বগুড়া সারিয়াকান্দির মরিচের খ্যাতি বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে। এখানে হাইব্রিড জাতের মরিচের হারভেস্টিং শুরু হয়েছে। বীর অঞ্চলের পাশাপাশি চরাঞ্চলের কাঁচামরিচ বাজারে আসতে শুরু করায় বাজারে মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। বৃষ্টির জন্য আগাম কাঁচামরিচ বাজারে উঠতে দেরি হলেও, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মরিচগাছগুলোতে মরিচ ধরতে শুরু করেছে। আগাম কাঁচামরিচ বাজারজাত করে বাজারে ভালো দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
গত কয়েকদিন আগেও বগুড়া সারিয়াকান্দির বাজারে ৩০০ টাকা কেজিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে। তবে বাজারের জন্য সুসংবাদ বয়ে নিয়ে আসছে চরাঞ্চলের উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের কাঁচামরিচ। মরিচগুলো বাজারে উঠতে শুরু করেছে। উপজেলার চরাঞ্চলজুড়ে এখন বিভিন্ন জাতের সবুজ মরিচগাছ শোভা পাচ্ছে। এ বছর বন্যা না হওয়ায় কৃষকরা চরাঞ্চলের জমিতে আগামভাবে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড মরিচ জমিতে আবাদ করেছেন। শুরুতে বৈরী আবহাওয়ায় মরিচগাছ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচগাছগুলো তরতর করে বেড়ে উঠেছে। বেশিরভাগ মরিচ খেতে মরিচ ধরেছে এবং তা পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। যা কৃষকরা সবেমাত্র বাজারে তুলতে শুরু করেছেন। তাই বাজারে কাঁচামরিচের দামও কমতে শুরু করেছে। সারিয়াকান্দির বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে সেখানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, যা গত কয়েকদিন আগেও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছে। সদর ইউনিয়নের চরবাটিয়ার কৃষক মিঠু মিয়া গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে তিনি তার ১০ বিঘা জমিতে হাইব্রিড মরিচের চারা রোপণ করেছিলেন। গত কয়েকদিন আগে তিনি তার জমির মরিচের প্রথম তোলা দিয়েছেন। প্রথম তোলায় তিনি ৫ মণ মরিচ পেয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যেই তিনি দ্বিতীয় তোলা দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তিনি গত বছরও হাইব্রিড আগাম জাতের মরিচের চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন।
কৃষক মিঠু মিয়া বলেন, প্রথম একেবারেই কম মরিচ হয় গাছে। তার পরের তোলা থেকে প্রচুর পরিমাণে মরিচ জমি থেকে উত্তোলন করা যায়। এ বছর বন্যা না হওয়ায় আগামভাবে মরিচ উৎপাদন করতে পেরেছেন। যা বাজারে বিক্রি করে বেশ ভালো দাম পাচ্ছেন। তাদের চরের মরিচ বাজারে উঠতে শুরু করায় বাজারে মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুরুতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে মরিচগাছ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের চাষিরা হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। মরিচের ফলন ভালো হওয়ায় দাম একটু কম হলেও সন্তুষ্ট চাষিরা।
সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, গত বছর এ উপজেলায় সর্বমোট ৩২০০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩১০ হেক্টর। যা ২২৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যা এখনো চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড মরিচের আবাদ হয়েছে এবং ৬৭০ হেক্টর জমিতে দেশি উফশী জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের মরিচ উত্তোলন শুরু হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, যমুনা এবং বাঙালি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত সারিয়াকান্দির মাটি বেলে-দোঁআশ। তাই এ মাটি প্রাচীনকাল থেকেই মরিচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে মরিচ উৎপন্ন হয়। বগুড়া সারিয়াকান্দির মরিচের খ্যাতি বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই কৃষকরা আগাম জাতের কাঁচামরিচ উত্তোলন এবং তা বাজারজাত করতে শুরু করেছেন এবং ভালো দামে বিক্রি করছেন। সারিয়াকান্দির মরিচ বাজারে উঠতে শুরু করায় মরিচের বাজার স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।
নরসিংদী জেলার যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু আমনের খেত, এ যেন সবুজের সমারোহ। আর এই সবুজ ধান গাছে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সোনালি ধানের শীষ ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষক-কৃষাণির শূন্য গোলা। পাশাপাশি তাদের মুখে ফুটে উঠবে হাসির ঝিলিক।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখানে ৪১ হাজার ৬৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর বেশি। তার মধ্যে ৩৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৪ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৬ টন।
উপজেলাওয়ারী হিসেবে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬০ হেক্টর, শিবপুরে ৯ হাজার ৩৪৯ হেক্টর, পলাশে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, বেলাবতে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর, মনোহরদীতে ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং রায়পুরায় ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, নরসিংদী জেলার ৭ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মধ্যে প্রণোদনাস্বরূপ সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ ও রোগবালাই কীটনাশক ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি ধান খেতে ধানের শীষ উঁকি দিচ্ছে। কৃষকরা তাদের ধানের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আমিরগঞ্জ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল রশিদ জানান, এ বছর তিনি তার ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। এ সময় তিনি তার জমির সুস্থ-সবল সবুজ ধান গাছে হাত নাড়াচাড়া করছিলেন। এমন সুন্দর ধান খেত দেখে তার মন খুশিতে ভরে উঠেছে।
হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের লোকদের পরামর্শ নিয়ে আমরা উপকৃত।’ নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক দেলোয়ার হোসেন, করিমপুর গ্রামের কৃষক রাজু মিয়া, রসুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমন ধান গাছের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।
নরসিংদী সদর এবং রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকের নিচু জমিগুলো আমন ধানের ওপর নির্ভরশীল। চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় তারা হতাশ। তারা জানান, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, যে পরিশ্রম করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে অনেক চাষি তাদের জমিতে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। সরকারের কাছে তাদের দাবি, যেমন করে সার, বীজ ও কীটনাশকের ঘাটতি মেটানো হয়েছে, তেমনি করে তাদের উৎপাদিত ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা মুছে যাবে।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ইলিশ পচা গন্ধে বাতাস ভারী হয়েছে সামরাজ মৎস্যঘাটের। চিরচেনা এ মৎস্যঘাটে এমন ঘটনা হরহামেশাই না ঘটলেও ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ছয় ঘণ্টা পরেই ঘটেছে। এ মৎস্যঘাটের অবস্থান ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে ইলিশ বোঝাই সাগরগামী শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার মৎস্যঘাটে ফিরেছে। শত শত টন পচা ইলিশের ভাগাড় দেখে সাধারণ ক্রেতারা অবাক হলেও আড়তদার ও পাইকাররা ছিলো আনন্দমুখর। সূর্যের আলো উকি দেওয়ার সাথেই এসব সাগরগামী ট্রলার মৎস্যঘাটে এসে নোঙর করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ ২২ দিন গভীর সাগরে অবস্থান করে এসব ইলিশ মাছ শিকার করেছেন জেলেরা। যদিও এসব তথ্য অকপটে শিকার করেছেন সাগর থেকে ফেরা একাধিক জেলে।
সরেজমিনে রোববার সামরাজ মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর হতেই একে একে মৎস্যঘাটে ফিরেছে ইলিশ মাছ বোঝাই শতাধিক সাগরগামী ট্রলার। ওই সময় এফবি বিসমিল্লাহ, এফবি আয়েশা-১, এফবি হামিম-২ থেকে জেলেরা ঝুড়িভর্তি ইলিশ মাছ বিক্রির জন্য আড়তগুলোতে নিতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আড়তগুলোতেও মাছ বিক্রি শুরু হয়। কেউবা ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে ইলিশ সরবরাহ করতে গাড়ীতে তুলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাগর থেকে ফেরা এক জেলে জানান, ৪ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে তার আগের দিবাগত রাতে বরফ, তেল ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ইলিশ শিকারের জন্য গভীর সাগরে গিয়েছেন। তারা ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে ইলিশ শিকার করেছেন। দীর্ঘদিন ইলিশ মাছ বরফজাত করে রাখায় দুই-তৃতীয়াংশ মাছ পচে গেছে। এই জন্যই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি নুরমোহাম্মদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। তবে সামরাজ মৎস্য ঘাটের একতা ফিসের আড়তদার অহিদ বলেন, ‘আপনারাতো জানেনই এসব মাছ সাগরের। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেরা সাগরে মাছ শিকার করেছে। এই মৎস্যঘাটে ৯৮ জন মৎস্য আড়তদার রয়েছে। এসব আড়তদাররা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।’
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, চরফ্যাশনের বড় মৎস্যঘাটগুলোর মধ্যে সামরাজ, নতুন স্লুইসগেট, খেজুরগাছিয়া, মাইনউদ্দি ঘাট, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া ও কুকরি মুকরি অন্যতম। কাকডাকা ভোর থেকে প্রতিদিন ১৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় এসব ঘাটে। উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ২৮১জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে। এ অঞ্চলে প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, এমন তথ্য আমার জানা নেই।
৬ ঘণ্টার মধ্যে সাগরগামী ট্রলার ইলিশ বোঝাই করে মৎস্যঘাটে ফিরে আসা কি সম্ভব? এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আপনার কথায় যুক্তি আছে। আমার অফিসারের সাথে কথা বলে জানাব। এ বলেই তিনি কল কেটে দেন।’
গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কুমিল্লায় লোকসানে খামারিরা। গেল ৬ বছরে বন্ধ হয়ে গেয়ে আড়াইশ খামার। যেসব বাড়িতে সকালের ব্যস্ত শুরু হতো গরুর জন্য ঘাস কাটা, গরুর গোছল করানো ও দুধ দোহন। সেসব বাড়ি ও খামারে এখন সুনশান নীরবতা। দুধ উৎপাদনে লোকসান গুণতে হয় বলে গৃহস্থ ও খামারিরা এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে কুমিল্লা লালমাই উপজেলার দুধের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিলোনিয়া গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, অল্প কিছু বাড়িতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও গৃহস্থরা। অথচ বছর দশেক আগেও এটিসহ আশপাশের ১২টি গ্রামে ঘরে ঘরে এক সময় দুধ উৎপাদন হতো। গরু পালন, দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ছিলোনিয়া গ্রামে আড়াই শতাধিক পরিবার দুধ উৎপাদন করতেন। তবে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে লোকসানে পড়েন খামারিরা। এরপর অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু এ গ্রামেই ৬ বছরে আড়াইশ খামারের মধ্যে ২০০টি বন্ধ হয়ে গেছে। দুধের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিলোনিয়া এখন অনেকটা নীরব-নিস্তব্ধ। এর পাশের গজারিয়া, হাপানিয়া, উৎসব পদুয়া, মাতাইনকোট, দোসারি চৌ, জামমুড়া, শাসনমুড়া, আটিটি, বাটোরা গ্রামেও এখন আর তেমন দুধ সংগ্রহ ও বিক্রির উৎসব হয় না।
স্থানীয়রা জানান, ছিলোনিয়া গ্রামে আগের মতো উৎসবের আমেজ নেই, অনেক খামার খালি পড়ে আছে।
ছিলোনিয়া গ্রামের মো. হোসেন, আবুল মিয়াসহ অন্তত ১০ জন খামারি জানান, করোনার আগে পর্যন্ত ভালোই চলছিল তাদের খামার। তারপরেই গো-খাদ্যর দাম বাড়তে থাকে। তবে সে তুলনায় বাড়েনি দুধের দাম। গড়ে ১ কেজি দানাদার খাবারের দাম ৭০-৮০ টাকা হলে ১ কেজি দুধের দাম হয় ৬০-৭০ টাকা। লোকসান গুণতে গুণতে বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকার অন্তত দুইশ দুগ্ধ উৎপাদন খামার।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ জানান, ২০০৬ সালে ডেইরি ফার্ম শুরু হয় ছিলোনিয়া গ্রামে। ২০১৯ পর্যন্ত ভালো অবস্থা ছিল। ২০২০ সালে করোনার ধাক্কায় পিছিয়ে যায় দুগ্ধ উৎপাদন। গো-খাদ্যের চেয়ে দুধের দাম কম হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন খামারি ও গৃহস্থরা। ২৫০টি খামার থেকে এখন তা ৬০টিতে চলে এসেছে। সরকার দৃষ্টি না দিলে বাকি খামারিরাও হারিয়ে যাবেন।
কুমিল্লা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জেলা জানান, খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুধের উৎপাদন কমেছে কুমিল্লায়। কুমিল্লা জেলায় দুধের বার্ষিক চাহিদা ৫.৩৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন ৫.০৩ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদনে বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। খামারের বিদ্যুৎ বিল কৃষির আওতায় আনা এবং খাদ্যে ভর্তুকির বিষয়ে উপদেষ্টারা অবগত বলে জানান জেলা এই কর্মকর্তা।
মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মৎস্য শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। বঙ্গোপসাগরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মা-ইলিশ রক্ষায় সাগর ও নদীতে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত ২২ দিন। এ সময় সব ধরনের জাল ফেলা, মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে নৌকা তৈরি, নৌকা মেরামত, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক কাজ ঘুছিয়ে নিচ্ছেন উপকূলের হাজারও জেলেরা।
মৎস্য বন্দর আলিপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ইতোমধ্যে জেলেরা জাল মেরামত, ট্রলার মেরামতসহ সব রকমের কাজ প্রায় শেষ। চলছে একদম শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শনিবার রাত ১২টার পর সাগরে নেমেছে জেলেরা।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ২২ দিন অলস সময় কাটানোর পর সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে নামে জেলেরা। এ কারণে আনন্দ ফিরে আসছে জেলে পরিবারগুলোতে। তবে অভিযান সফল হওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ ও মৎস্যজীবীরা।
ট্রলার মালিক আ. জলিল বলেন, এবার মৌসুমে সাগরে জেলেদের জালে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। মালিকদের আসল পুঁজিও ওঠেনি। এর মধ্যে আবার পরাপর দুটি নিষেধাজ্ঞা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। তবে আমরা আশাবাদী নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে ভালো মাছ মিলবে। জেলেদের সাগরে পাঠানোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে আমাদের।
মহিপুরের জেলে ছগির বলেন, পুরো বছরটা চলে যায় সরকারি আর প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞায় বসে থাকতে থাকতে। এর ফাঁকে যে সময়টুকু আমরা সাগরে থাকি তাতেও মিলছে না পর্যাপ্ত মাছ। এই নিষেধাজ্ঞা শেষে যদি সাগরে পর্যাপ্ত মাছ পাই তাহলে পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে পারবে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ব্যতীত সঠিকভাবে পালন হয়েছে উপজেলায়। বর্তমানে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা করছি জেলেরা সাগর থেকে হাসিমুখেই ফিরে আসবে ঘাটে।
নবীন প্রজন্মকে কৃষির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’। গত বুধবার সকালে উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোস্তফা এমরান হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন, এবং সঞ্চালনা করেন সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জনাব শাহআলম মজুমদার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক ও জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
শহীদ কামরুল মিয়ার পিতা জনাব নান্নু মিয়া বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তরুণদের কৃষিতে সম্পৃক্ততা খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অন্যদিকে সাইফুল্লাহ বলেন, ‘তরুণদের কৃষিতে আগ্রহী করতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত ইতিবাচক। এই ধরনের সামাজিক উদ্যোগ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতেই এই বীজ বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও নবীন চিন্তাধারার সংযোজন ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
এ সময় প্রধান অতিথি ড. মোস্তফা এমরান হোসেন বলেন, ‘সরকার আধুনিক কৃষিতে তরুণ ও শিক্ষিত শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাণিজ্যিক কৃষিতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ মোট ২০ জনের মাঝে উন্নত মানের বীজ বিতরণ করা হয়।