বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হলে দক্ষতা অর্জন ও দক্ষতার উন্নয়ন অপরিহার্য।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং জটিল ও উন্নত মানের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য দক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীদের চাহিদা অনেক বেড়েছে।’
বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্নকারী বিভিন্ন পোশাক কারখানার মিড-লেভেল ম্যানেজারদের সার্টিফিকেট প্রদান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক হাসান বলেন, ‘যদিও অটোমেশন শিল্পে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তবে এটি একই সঙ্গে উৎপাদনশীলতা এবং প্রতিযোগী সক্ষমতাও বাড়াবে। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল আমাদের পেতে হবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘যেহেতু আমরা পরবর্তী প্রবৃদ্ধিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, তাই আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দক্ষ ও দ্রুততর করার জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যদিও বলা হয় যে অটোমেশনের ফলে কর্মসংস্থানহানি হবে, তবে প্রযুক্তি নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করার জন্য আমাদের যা প্রয়োজন, তা হলো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা প্রশিক্ষণ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি কোর্স সম্পন্নকারীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিইউএফটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. শফিউল ইসলাম, বিইউএফটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস এম মাহফুজুর রহমান, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার আইয়ুব নবী খান, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) সহযোগিতায় পোশাক কারখানার মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে।
সৌদি আরবের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রথমবারের মতো এক ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। দেশটির ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বারস (এফএসসি) জানিয়েছে, সৌদি আরব ৪ দশমিক ১৫ ট্রিলিয়ন রিয়াল (১ দশমিক ১১ ট্রিলিয়ন ডলার) জিডিপি অর্জন করেছে। এতে দেশটির ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। খবর আরব নিউজের।
সৌদি প্রেস এজেন্সি এফএসসি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সৌদি আরব ২০২২ সালে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা জি-২০ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সৌদির অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন রিয়াল বা জিডিপির ৪১ শতাংশ, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেলের বাইরে বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। কারণ দেশটি তাদের অর্থনীতিতে তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে ৯০৭.৫ বিলিয়ন রিয়াল, যার প্রবৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেসরকারি কর্মীর সংখ্যা ২০২১ সালের ৮ দশমিক ০৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৯ দশমিক ৪২ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি খাতে কর্মরত সৌদি নাগরিকের সংখ্যা ২০২১ সালের ১৯ লাখ ১০ হাজার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২১ লাখ ৯০ হাজার হয়েছে।
খুঁটিনাটি অনেক ব্যয় হচ্ছে, যার হিসাব অনেকেই রাখেন না। কিন্তু বছর শেষে সেই সব এটা-সেটা হিসাবের পরিমাণও দাঁড়ায় অনেক। আয়করদাতাদের সেই সব খুচরা হিসাবও এবার খুঁজছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর একটি হচ্ছে মুঠোফোনে ব্যয়ের খরচ। প্রতি অর্থবছর (জুলাই থেকে জুন) কত অর্থ একজন গ্রাহক রিচার্জ করে ব্যয় করছেন, এখন থেকে সেই হিসাবও করদাতাকে দিতে হবে আয়কর রিটার্নে। একইভাবে ইন্টারনেট প্যাকেজের পেছনে কত অর্থ খরচ করছেন জানাতে হবে। এ সব তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় উল্লেখ করতে হবে।
এতদিন মুঠোফোনে একজন করদাতা কত টাকা রিচার্জে ব্যয় করতেন, তার কোনো হিসাব থাকত না। সেই হিসাব আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এনবিআর মনে করছে, মুঠোফোনের সেই ব্যয়ে থাকাটা জরুরি। এ জন্য চলতি অর্থবছরে যুক্ত হয়েছে মুঠোফোনে রিচার্জ ব্যয়ের বিষয়টি। আবার ইন্টারনেট প্যাকেজের পেছনে একজন করদাতা কত অর্থ ব্যয় করছেন, সেই তথ্যও দিতে হবে আয়কর রিটার্নে।
এ ছাড়া দেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবার দেশে-বিদেশে ঘুরতে যায়। সেখানে অনেক টাকা খরচ করলেও এর হিসাব আগে আয়কর রিটার্নের নথিতে উল্লেখ করার সুযোগ কিংবা প্রয়োজন ছিল না। তবে নতুন ফরমে বিদেশ ভ্রমণের খরচের হিসাবও দিতে হবে আয়করদাতাদের।
নতুন আয়কর আইনানুযায়ী, আয়কর রিটার্ন জমার সময় জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণী দাখিলের এ সব তথ্য দিতে হবে। এ ছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলের তথ্য দিতে হবে এবার। আইটি ১১গ (২০২৩) ফরমে জীবনযাত্রার ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়াবলি দিতে হয়। অবশ্য বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই কেবল সম্পদের বিবরণীসহ জীবনযাত্রার হিসাব জমা দিতে হবে। এই সীমা অতিক্রম না করলেও চাইলে যেকোনো করদাতা তার জীবনযাত্রার বিবরণী জমা দিতে পারেন।
এ বিষয়ে আয়কর আইনজীবী ইমরান গাজী বলেন, মোবাইল রিচার্জের হিসাব রাখাটা জটিল বিষয়। ইন্টারনেট প্যাকেজের বেলায়ও একই অবস্থা। এতে করদাতার হয়রানিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেহেতু নতুন আইনে এ সব বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, তাই করদাতাকে মানতে হবে।
একই বিষয়ে কর আইনজীবী মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, একজন করদাতার পক্ষে সারা বছরের মুঠোফোনে কত টাকা রিচার্জ করলেন, তার হিসাব রাখা কঠিন। সাধারণত একসঙ্গে বেশি অর্থ রিচার্জ করেন না মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা। নতুন এই আইনের ফলে অনেক করদাতা ঝামেলায় পড়বে।
জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণীর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেখতে চায় আপনি টাকা আয় করেন, কত ব্যয় করেন। আপনার আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল রয়েছে কি না। আয়ের থেকে যদি ব্যয় বেশি হয়, তাহলে কোথা থেকে সেই অর্থ জোগাচ্ছেন। সেই অর্থ বৈধ কি না, সেই সব খুঁটিনাটি বিষয় দেখতে চান এনবিআর। এ ছাড়া করদাতাদের সন্তানরা কী ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে তাও জানতে চায় এনবিআর।
শিক্ষায় খরচের মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা বুঝতে চান, আপনার আয়ের সঙ্গে সন্তানের শিক্ষা খরচের সামঞ্জস্য আছে কি না। একইভাবে গাড়ি, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের খবরও জানতে চায় এনবিআর। রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় এ সব তথ্য জানা গেছে।
নতুন আইনানুযায়ী, জীবনযাত্রার বিবরণীতে ৯ ধরনের তথ্য দিতে হবে। এগুলো হলো- ব্যক্তিগত ও পরিবারের ভরণপোষণ খরচ, আবাসনসংক্রান্ত ব্যয়, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যয়, ইউটিলিটি সংক্রান্ত ব্যয় (গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানির, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি), শিক্ষা ব্যয়, নিজ খরচে দেশ ও বিদেশ ভ্রমণ ও অবকাশসংক্রান্ত তথ্য, উৎসব ও অন্যান্য বিশেষ ব্যয়, উৎসে কর্তিত/সংগৃহীত কর (সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর কর্তিত করসহ) ও বিগত বছরে রিটার্নের ভিত্তিতে প্রদত্ত আয়কর ও সারচার্জ, প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য উৎস থেকে গৃহীত ব্যক্তিগত ঋণের সুদ পরিশোধের তথ্য।
নতুন নিয়মে, নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে হলে ব্যক্তি করদাতাকে আয়করের ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। আবার নিজ নামে একাধিক গাড়ি বা ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি থাকলে ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। এ ছাড়া নিট সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে হলে প্রদত্ত করের ২০ শতাংশ, সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে করের ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে করের ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে দেশের পোশাক রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
একই সঙ্গে আকু পেমেন্টে কয়েকটি ব্যাংকে স্যাংশন দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো স্যাংশনই শঙ্কিত হওয়ার। এরপরও ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন, আকু পেমেন্ট অন্য কোনোভাবে করা যাবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ উদ্যোক্তারা।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি যে কারোর ওপর হতে পারে। আবার আমি গত ৩০ বছর ধরে ৫ বছর করে ভিসা পাই। এরপরও আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর আমাকে বলতে পারে তোমার ভিসা বাতিল করা হলো। এভাবেও কারও ভিসা বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কারও ভিসা বাতিল হলেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা করোনার সময় কোনো দেশে যেতে পারিনি। এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, ভিসা বাতিল হলেও বিকল্পভাবে ব্যবসা চালিয়ে নেয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপর স্যাংশন বিষয়ে তিনি বলেন, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। এর পেমেন্টে কয়েকটি ব্যাংকের ওপর স্যাংশন হয়েছে, তবে সেটা অন্য কোনোভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে।
চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৪৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের (জুলাই-আগস্ট) চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আহরণ ছিল ৪০ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
এনবিআরের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল, মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কারণে ভ্যাট আহরণ বেড়েছে। তাছাড়া এলটিইউ কোম্পানিগুলো থেকে ভ্যাট আদায় বেড়েছে।
দুই মাসে স্থানীয়পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) থেকে রাজস্ব আহরণ ১৭ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আহরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
আমদানি-রপ্তানিপর্যায়ে রাজস্ব আহরণ ১৬ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে দুই মাসে রাজস্ব আহরণ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয় ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সুশাসন নিশ্চিত করতে করপোরেট গভর্ন্যান্সের আওতায় আসছে দেশের বিমা খাত। বিমা কোম্পানিগুলোর পরিচালনায় প্রযোজ্য আইন ও প্রবিধানের পরিপালন এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে করপোরেট গভর্ন্যান্স নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে গতকাল সোমবার অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইতোমধ্যে করপোরেট গভর্ন্যান্স নির্দেশিকার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে জনসাধারণ ও বিমা খাতসংশ্লিষ্টদের মতামত চায় আইডিআরএ। মতামত প্রদানের জন্য রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বেশকিছু বিমা কোম্পানি লিখিত মতামত জানিয়েছে।
এ বিষয়ে আইডিআরএর মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, খসড়া প্রকাশ করে জনসাধারণ ও অংশীজনের মতামত চাওয়া হয়েছিল। কিছু বিমা কোম্পানি মতামতও দিয়েছে। তাদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে আলোচনাসাপেক্ষে নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা হবে।
করপোরেট গভর্ন্যান্সের মূল নীতি হলো জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, দায়িত্ববোধ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা। তবে দেশের বিমা খাত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নড়বড়ে অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এ করপোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালা কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দীন।
তিনি বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে আইডিআরএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা শক্তিশালী বা তাদের অভিপ্রায় ভালো না হলে শুধু নীতিমালা কোনো কাজে আসবে না।
তিনি আরও বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করা যায় যেসব কোম্পানি ভালো চলছে সেগুলোর ওপর। যেগুলো লোকসান ও অনিয়মের মধ্যে রয়েছে সেগুলোতে সম্ভব নয়। অনেক বেশি স্বাস্থ্যহীন বিমা কোম্পানি রয়েছে দেশে। এগুলোকে একীভূতকরণের মাধ্যমে বিমা কোম্পানির সংখ্যা একটা র্যাশনাল নম্বরে এনে যদি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা করানোর চেষ্টা করা যায় তাহলে কাজে আসবে করপোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালা।
খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, দুই নিরপেক্ষ পরিচালকসহ একটি বিমা কোম্পানির বোর্ডে পরিচালকের সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে ২০। এ ছাড়া পরিচালক নিয়োগ ও পুনঃনিয়োগের জন্য একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি থাকবে।
আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত বা বাংলাদেশে বা অন্য কোথাও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ খেলাপি বলে প্রমাণিত ব্যক্তি বিমা কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। এ ছাড়া ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত, জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিও পরিচালক হতে পারবেন না।
পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন কোম্পানির নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে, অবশিষ্ট সদস্যরা নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালকদের মধ্যে একজনকে চেয়ারপারসন হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। নির্দিষ্ট বোর্ড মিটিংয়ে চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতির কারণ অবশ্যই সঠিকভাবে নথিভুক্ত করতে হবে।
প্রত্যেক পরিচালককে তাদের নিয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে নিজের ও পরিবারের যে কোনো বিমা কোম্পানিতে থাকা শেয়ারের বিশদ বিবরণ আইডিআরএর কাছে জমা দিতে হবে। তিনি বা পরিবারের কেউ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পরিচালক বা সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে অধিষ্ঠিত হলে বিস্তারিত জানাতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জন, কার্যকর ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধান করা পরিচালনা পর্ষদের প্রাথমিক দায়িত্ব। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় নীতিমালা এবং করপোরেট গভর্ন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক বা মেকানিজম তৈরি করবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটির সুপারিশক্রমে বোর্ডের চেয়ারম্যান, বোর্ডের সদস্য এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সব কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করবেন। পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে একটি বিনিয়োগ উপকমিটি থাকবে, যা বিমা গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার এবং স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থে কোম্পানির সামগ্রিক বিনিয়োগ তদারকি করবে।
পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে একটি উপকমিটি বোর্ড কর্তৃক প্রণীত কৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্ভূত এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৫ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। শস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন খাতে বেশ ঋণ নিয়েছেন কৃষকরা। আলোচিত সময় কৃষকের ঋণ পরিশোধও সন্তোষজনক। এ সময় আগের নেয়া ঋণ কৃষক ফেরত দিয়েছেন ৫ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপ্রত্যাশিত ক্ষতি ছাড়া ঋণের কিস্তি কৃষকের বকেয়া থাকে না। যার কারণে এ খাতে বিতরণ করা ঋণের খেলাপির হার অনেক কম, কিছু ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। যেখানে বৃহৎ শিল্প গ্রুপের বড় ঋণে খেলাপির হার কয়েক গুণ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিতরণ করা মোট কৃষিঋণের স্থিতি ৫৩ হাজার ২৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বকেয়া। সার্বিকভাবে কৃষি খাতে ঋণখেলাপির হার ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৩ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। এই দুই মাসে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮৫৩ কোটি টাকা। এর পরই রয়েছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটি এ সময়ে বিতরণ করেছে ৪৮৮ কোটি টাকার ঋণ। এ ছাড়া বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৩৯৭ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক ৩৫৩ কোটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক ২২৩ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষিঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।
কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃষিঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষি কাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয়, তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) ও ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ ও প্রাণিসম্পদ খাতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কেন্দ্র করে গত রোববার পতন হলেও সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থানে ফিরেছে। এদিন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান বেশি হয়। উত্থানের পেছনে তিনটি খাত ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হলো- বিমা, আইটি ও খাদ্য আনুষঙ্গিক খাত। তবে এ দিন ডিএসইর লেনদেন আরও মন্দায় তলিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে গত রোববার সূচকসহ লেনদেনে পতন হয়েছে। তবে গতকাল ডিএসইএক্স বাড়লেও লেনদেন কমেছে।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে লেনদেন মন্দা। পরবর্তী সময়ে লেনদেন বাড়ে। এতে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। সেই লেনদেন ফের মন্দায় পড়ে। সোমবার লেনদেন অর্ধেকের (চার শ কোটি টাকা) নিচে নেমে এসেছে। লেনদেন মন্দার প্রধান কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। এটাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তারা আরও বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততোই যেন দেশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। এর পরই প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
লেনদেন মন্দা হলেও বিমার চাপে সূচক বেড়েছে জানিয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, টানা উত্থানের পর বিমা খাতে তিন দিন পতন স্বাভাবিক। এটা কালেকশন হিসেবে দেখছি। এই কালেকশনের পর ফের গতকাল বিমার বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপ রয়েছে। এসব পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ে।
ডিএসইতে অনেক দিন ধরেই বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরের উত্থান দাপটের পর গত তিন কার্যদিবস পতন ছিল। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। কিন্তু সোমবার বিমার অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থানে কিছুটা স্বস্তি পেল তারা। এ দিন বিমার সাথে আইটি ও খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতও ভালো করেছে। এই দুই খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
সোমবার ৪৪১ কোটি ২৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন হয়েছিল ৫০০ কোটি ৭৪ টাকার শেয়ার। ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮২ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। ডিএসইএক্স সূচক দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৫ দশমিক ৩০ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮২টির এবং কমেছে ৬২টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১৫৬টির। এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর বিডি কমের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, জেমিনি সী ফুডের ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, সোনালী পেপারের ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
আবারও ডলারের দর বাড়িয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো। এবার সব ক্ষেত্রেই ৫০ পয়সা করে বাড়ানো হয়েছে ডলারের দর। সোমবার থেকে নতুন এই বিনিময় হার কার্যকর হচ্ছে।
বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক সভায় ডলারের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত হয়।
সোমবার থেকে ব্যাংকগুলো ১১০ টাকায় ডলার কিনে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা, আর আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন হার অনুসারে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তিরা প্রতি ডলারে ১১০ টাকা পাবেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলারপ্রতি ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নেবে। ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বিল বেশি হওয়ায় দেশের রিজার্ভ কমে গেছে। তাই গত দেড় বছর ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েই চলছে। এর আগে গত ৩১ আগস্ট ডলারের দর বাড়ানো হয়। সেবার পণ্য বা সেবা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কেনায় ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা, আমদানির জন্য নির্ধারণ করা হয় ১১০ টাকা।
এদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটেও ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার এই বাজারে ১১৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকায় ডলার কেনাবেচা হচ্ছে।
গত রোববার দেশের পাঁচটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে গভর্নর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডলারের বাজার বা বিদেশি মুদ্রার বাজার সম্পর্কে নীতিগত কোনো পরিবর্তন আনবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন যেভাবে ডলার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। তবে সময়ে সময়ে ডলারের দামে যেভাবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সেই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। সেই বৈঠকের পর রোববার আবার ডলারের দর বাড়ানো হলো।
গত বছরের মার্চে দেশে মার্কিন ডলারের যে সংকট শুরু হয়েছিল, তা এখনো কাটেনি। অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পণ্য আমদানিতে তারা চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। কয়েক দিন আগে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। এছাড়া অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেবা দিয়ে যে আয় ও মুনাফা করেছে, তা-ও নিজ দেশে নিতে পারছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়।
পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন। তবে এবিবি ও বাফেদার এই সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই মানেনি ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক এই দুই সংগঠনের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। এজন্য কয়েক দফায় কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সিএমএসএমই (অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি) ও ভোক্তা ঋণে আরোপিত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ বা তদারকিবাবদ অর্থ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। একই সঙ্গে যে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব থেকে এই অর্থ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দোকান মালিকদের এই সংগঠন।
রাজধানীর মগবাজারে রোববার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ক্ষুদ্র মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ সংগঠনটির অন্য নেতারা।
হেলাল উদ্দিন বলেন, সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে সুদহারের অতিরিক্ত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ আদায় করা হচ্ছে। বছরে তা একবার আদায় করার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়নি। এমনকি আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ব্যাংক হিসাব থেকে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঋণখেলাপি বেড়ে যাবে, যা ব্যবসায়ীদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, ৭৫ কোটি টাকা ঋণসীমা পর্যন্ত সিএমএসএমই খাত ধরা হয়। কোনো ব্যবসায়ী যদি এই পরিমাণ টাকা ঋণ নেন, তাহলে ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ কর্তন করা হলে ৭৫ লাখ টাকা চলে যায়। করোনা মহামারি ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রায় চার বছর ধরে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্রোকারিজ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনির হোসেন। তিনি বলেন, ৫০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে তাঁর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মাশুল কেটে নেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
গত সাড়ে তিন বছরে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন, অনেক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়েছেন বলে জানান হেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়েছে। সুদের হার আরেক দফা বাড়ানো হবে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ অবস্থায় সুপারভিশন চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হেলাল উদ্দিনের দাবি, এর মধ্যে যাদের কাছ থেকে এই মাশুল নেয়া হয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে তা ফিরিয়ে দেয়া হোক। তা না হলে সিএমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীরা জীবন-জীবিকার স্বার্থে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, তদারকি সেই অর্থে কিছু করা হয় না। ফলে এই তদারকি মাশুল নেয়ার অর্থ হয় না। বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই মাশুল নেয়া হচ্ছে না, কিন্তু ছোটদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে।
দোকান মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাউস অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাইয়ুম তালুকদার, বাংলাদেশ ঘড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন, বাংলাদেশ বাইসাইকেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কেমিক্যাল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নেছার উদ্দিন মোল্লা, বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আজমল হোসেন, বাংলাদেশ গ্লাস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন আলমগীর, বাংলাদেশ টাইলস ডিলারস অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন, বাংলাদেশ জামদানি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার আগরওয়ালা, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো, বাংলাদেশ চশমাশিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আজাদ, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অন্যজন মজুমদার, বাংলাদেশ আয়রন স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নাসিরুল্লাহ, বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মাইনুর রহমান, বাংলাদেশ বুটিক হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি শরিকুন্নাহার, বাংলাদেশ পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি শাহীন খান ও বাংলাদেশ বিড়িশিল্প মালিক সমিতির প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম।
অবৈধ হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কম আসছে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে (১ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে এই ২২ দিনে এসেছে ১১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। প্রতিদিনে এসেছে ৫২৫ কোটি টাকা; কিন্তু হুন্ডিতে এক ডলারের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। ফলে দফায় দফায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ানোর পরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে না, উল্টো কমছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ৬৯৪ কোটি টাকা। চলতি মাসের ২২ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, মাসের বাকি ৮ দিনে সেই হারে এলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকবে। সে হিসাবে আগস্টের চেয়েও সেপ্টেম্বরে কম রেমিট্যান্স আসবে। আর সেটা হবে দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর বাড়ায় সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডি আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভয়-আতঙ্কে রোববার কার্ব মার্কেটে ডলার বেচাকেনা বন্ধই ছিল বলা যায়। খুবই গোপনে দু-একটি লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে, প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস ধরে খোলাবাজারে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ যা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তার চেয়েও ৫/৬ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সে কারণেই সবাই হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।
গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন (২২০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিট্যান্সপ্রবাহে ধসের কারণে রিজার্ভও কমছেই।
গত ৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমে আসে ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, রোববার আইএমএফের বিপিএম ৬ হিসাবে রিজার্ভ আরও কমে ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম ৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। সবশেষ গত জুলাই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানের ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে চার মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশসহ ৩১টি দেশের ব্যাংক ও ব্রোকারেজকে রাশিয়ার মুদ্রা বাজারে লেনদেনের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার; একই সঙ্গে লেনদেন করা যাবে ডেরিভেটিভস মার্কেটেও। ঢাকায় রুশ দূতাবাস এ সব দেশকে ‘বন্ধুপ্রতিম ও নিরপেক্ষ’ বলে উল্লেখ করেছে।
শনিবার ঢাকায় রুশ দূতাবাস দেশটির সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এবিষয়ক ঘোষণায় দেশগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাতার, চীন, কিউবা, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বৃহস্পতিবার এসংক্রান্ত নথিতে সই করেন। এর ফলে ৩১ দেশের ব্যাংক ও ব্রোকাররা রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে।
ডেরিভেটিভ এক ধরনের আর্থিক চুক্তি যা দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে হয়ে থাকে। কিছুটা জটিল ধরনের এ চুক্তি-ডেরিভেটিভ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট বাজারে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সম্পদ লেনদেন করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ডেরিভেটিভ হিসেবে প্রচলিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুদ্রা, স্টক, বন্ড, পণ্য, সুদের হার ও বাজার সূচক। ডেরিভেটিভ চুক্তির মান এ সব সম্পদের দামের পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। ডেরিভেটিভের রকমফের হিসেবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় এ চারটিকে- ফিউচার, ফরওয়ার্ড, সোয়াপ ও অপশন।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করার সব ধরনের উপায় বন্ধ দেশটির। এতে আর্থিকভাবে চাপে পড়েছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত ও চীনসহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালালেও মুদ্রা লেনদেনে জটিলতার মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে বেশ কয়েক বছর থেকে রুবল দিয়ে লেনদেনকে প্রাধান্য দিচ্ছে মস্কো, যা যুদ্ধের পর একমাত্র মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার উৎপাদিত তেল ও গ্যাস কিনতে রুবলে মূল্য পরিশোধের নিয়ম চালু করেন। এরপর থেকে রুবলে লেনদেন বাড়ছেও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন রুবল ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। মুদ্রা চাঙ্গা করতে দেশটি সুদের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতিও চাপে রয়েছে, দুর্বল হয়েছে দেশটির মুদ্রা রুবল।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কোনো ব্যাংক রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমতি দিতে পারে। তবে এখনো অন্য কোনো দেশে এমন কোনো ব্যবসা করছে না বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। আর দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করতে চাইলে রুবলে নস্ট্রো হিসাব খোলার অনুমতি নিতে হবে। এরপর কেস-টু–কেস ভিত্তিতে অনুমোদন নিতে হবে।
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি মার্কিন ডলারে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরো, পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও কানাডিয়ান ডলারে কিছু লেনদেন হয়ে থাকে। এর বাইরে ভারতের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় গত ১১ জুলাই থেকে টাকা-রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুপিতে রপ্তানি আয় থাকলেই কেবল রুপিতে আমদানি করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে রোববার বড় দরপতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এদিন লেনদেনেও মন্দাভাব ছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসইর লেনদেন কমে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে রয়েছে। এর প্রধান কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। এটাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তারা বলছেন, দেশে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন। এরপরই গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
বড় পতন প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। তবে এটা সাময়িক। ঠিক হয়ে যাবে।’
বিমা খাতের ধস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় আছে। সেই বিমাতেও গত কয়েক কার্যদিবস পতন চলছে। এটা আসলে পতন না, এটা কালেকশন। দর সমন্বয় হলে ফিরে আসবে বিমা খাত।’
বিমা খাতে মূল্য সংশোধন চলছে জানিয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, টানা উত্থানের পর এ ধরনের পতন স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপ রয়েছে। এসব পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ে।
ডিএসইতে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরের উত্থান দাপটের পর গত তিন কার্যদিবস ধরে টানা পতন চলছে। বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর গত তিন কার্যদিবস গড়ে প্রায় ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারর কমেছে। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
রোববার ৫০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৭৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮০ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৯ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৩৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে ও ১ হাজার ৩৫৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১২টি এবং কমেছে ১৪৮টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১৫০টির।
এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, বিডি কমের ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা, জেমিনি সি ফুডের ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রিপালিক ইন্স্যুরেন্সের ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সর ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অনিয়মিত বর্ষা, রপ্তানিতে ধাক্কাসহ নানা কারণ দেখিয়ে চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছেঁটেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এ বছরের জন্য ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশাতেই অনড়। গত শুক্রবার অর্থনীতি নিয়ে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত আগস্টের রিপোর্ট বলছে, ব্যাংকে ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি, করপোরেট সংস্থাগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতিতে গতি আনতে সাহায্য করবে। তবে চিন্তা বিষয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চড়া দাম ও বৃষ্টির ঘাটতি নিয়ে। তার ওপরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভূ-রাজনৈতিক দোলাচলের প্রভাব ও বিশ্ব বাজারে শেয়ারের দাম সংশোধন বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিনিয়োগে ধাক্কা দিতে পারে। যদিও ভারতে সে রকম প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত এপ্রিল থেকে জুনে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে ভারত। দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া, বিক্রি ও সংস্থাগুলোর লগ্নিই এর কারণ। তবে বিশ্ব বাজারে ফের মাথা তুলে অপরিশোধিত তেলের দাম পৌঁছেছে ব্যারেলে ৯৪ ডলারের কাছাকাছি, যা চিন্তায় রাখছে ভারতের মতো রপ্তানিনির্ভর দেশকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে, তার ওপরে বৃষ্টির ঘাটতি ফসলের জোগান কমিয়ে তার দাম বাড়াতে পারে। এমনিতেই গত মাসে যার প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্য এবং রবিশস্যের ওপরে। সেই দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এ ছাড়া শেয়ার বাজারের দোলাচলে চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাবে এ সপ্তাহে চার দিনই সূচক পড়েছে। তবে নির্মাণ শিল্পের মাথা তোলা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়া, সরকারের মূলধনী ব্যয়, জিডিপি এর সাপেক্ষে রপ্তানির অংশীদারি বৃদ্ধি কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে অর্থনীতিকে। সব মিলিয়ে তাই চলতি বছরে ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে ভারত।