দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, ‘যত সংকটই বিশ্ববাজারে থাকুক না কেন, আমাদের রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে, আমরা এগিয়ে যাব। যত চ্যালেঞ্জই আসুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে চমকের পর চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। নভেম্বরের পর ডিসেম্বরেও পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। আগামী দিনগুলো কেমন যাবে?
চার-পাঁচ মাস আগে আমি বলেছিলাম, আমাদের অবস্থান অনেক শক্ত। আমরা বায়ারদের না বলার মতো একটা অবস্থা তৈরি করতে পেরেছিলাম। সেটা আমাদের জন্য প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো পরিস্থিতি ওলট-পালট করে দিল। যার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিল। সেল কমে গেল বায়ারদের, অর্ডার কমে গেল। এই পরিস্থিতিতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দিকে আমাদের রপ্তানি গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) ভালো ছিল। প্রথম মাসে (জুলাই) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ শতাংশ। দ্বিতীয় মাসে ২৫ শতাংশ পজেটিভ গ্রোথ ছিল। কিন্তু তৃতীয় মাসে এসে এটা সাড়ে ৭ শতাংশ নেগেটিভ গ্রোথ হয়। চতুর্থ মাসেও প্রায় নেগেটিভ। তবে আশার কথা হচ্ছে, পঞ্চম মাসে (নভেম্বর) এসে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আরও ভালো হয়েছে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শতাংশ হিসাবে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই এসেছিল পোশাক খাত থেকে। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই ছয় মাসে মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি এসেছে পোশাক থেকে।
বিস্ময়কর হলো এই কঠিন বিশ্ব পরিস্থিতিতে শেষ দুই মাসে, অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসেই ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বর মাসে এসেছে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। আর ডিসেম্বরে এসেছে আরও বেশি ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে এর আগে কখনোই কোনো একক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসেনি। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নানা বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিদায়ী ২০২২ সালে রপ্তানি ভালো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে। নভেম্বর মাসে আমাদের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়। ডিসেম্বর মাসে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়। গত বছর (২০২২ সাল) তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আগের বছর ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছে এক বছরে। এর কারণ আমরা করোনা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক কাজ করেছি; বিভিন্ন বাজারে গিয়েছি। আমাদের বড় বাজারগুলোতে গিয়েছি। এমার্জিং মার্কেটেও গিয়েছি।
রপ্তানি ধরে রাখতে পেরেছি, এর বড় কারণ হচ্ছে আমাদের কাঁচামালের দাম কিন্তু বেড়ে গেছে। তুলা, কাপড়, কেমিক্যাল সবকিছুর দাম বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেইট কস্ট বা কনটেইনার কস্ট কিন্তু অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের গার্মেন্টে ইউনিট প্রাইস অনেক বেড়েছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছ। এ ছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড অনেক প্রোডাক্টের অর্ডার নিতে পেরেছি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। ফলে বাংলাদেশ এখন দামি পণ্যের অর্ডারও পাচ্ছে। আগে বাংলাদেশে ১৫ ডলারের জ্যাকেট হতো। এখন বায়াররা আমাদের এখানে ৩০-৪০ ডলারের জ্যাকেট অর্ডার করছে। আমরা নতুন মার্কেটগুলোতে ঢুকতে পেরেছি; বেশি দামি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছি। আবার পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে। তবে বর্তমান অস্থির বিশ্ববাজারে রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে কি না- তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে গত নভেম্বের আমরা বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামের একটা সুন্দর অনুষ্ঠান ঢাকায় করেছি। একইসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক যে সম্মেলন, যেটা আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছি। এই দুই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে সক্ষমতা সেটা বায়ারদেরকে দেখানো হয়েছে।
আমরা সব সময় গর্বের সঙ্গে বলি বাংলাদেশ অনলি দ্য সেফেস্ট সোর্স অব ইনকাম। জাতিসংঘের ট্রেড সেন্টার থেকে এক মাসে এটা ঘোষণা দিয়েছে। তাদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশও করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে সেফেস্ট সোর্স ইনকাম, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির কারণে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং বায়াররাও জানে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিকল্প আর কোনো দেশ নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা খুব আশাবাদী। যদিও এখন বিশ্ব অর্থনীতির সংকটকাল, আমাদের অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে আমাদের পোশাকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। জানি না আগামী দিনগুলো কেমন যাবে।
ডলার সংকটের কারণে তৈরি পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় এলসি খোলার সুযোগ চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কেন এ সুবিধা চেয়েছিলেন?
ডলারসংকটের কারণে বিকেএমইএ দুই-আড়াই মাস আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এই দাবি জানিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমরা অপেক্ষা করছি, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানাবে। ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকে ডলারসংকট পড়লে বাকিটা টাকায় বিল পরিশোধ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা আবেদন করেছি। এই অনুরোধ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়, স্বল্প সময়ের জন্য যতদিন ডলারসংকট থাকবে ততদিন টাকায় ঋণপত্র খোলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে জানিয়েছিল কোনো ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক এলসি পরিশোধের দায় মেটাতে বিলম্ব করলে এডি লাইসেন্স বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তখন ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ ব্যাংকগুলো আগের ব্যাক টু ব্যাকের দায় পরিশোধ করতে বলছে। ব্যাংকের কাছে ডলারসংকট, আবার ঋণপত্রও খুলতে হবে। ফলে এর জন্য আমাদের আবেদন ছিল ডলারের পরিবর্তে টাকায় ঋণপত্র খোলার জন্য।
ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধে ডলারের চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের রপ্তানি খাত। নিট সেক্টরের শতকরা ৮০ শতাংশ কাঁচামাল দেশীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সুতরাং বর্তমান ডলারসংকট মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে ঋণপত্র খোলা এবং এর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলা হলে এ-সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। ঋণপত্র ক্রয় এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, ডলার কনভার্সনের নীতিগত প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের ডলার প্রতি ৭-৮ টাকার পার্থক্যের ফলে বিশাল অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে এসব বিষয় বিবেচনা করে ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিলে এ সংকটের সময় আমাদের খুব সুবিধা হতো। রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে পারতাম আমরা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের সুবিধা আছে কী?
অবশ্যই আছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ৫টা কারেন্সি অ্যাকসেপ্টেবল। ডলার, ইউরো, পাউন্ড, চায়না ইউয়ান-এগুলো গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের ভেতরে ব্যাংক টু ব্যাক যে এলসি করছি, সেটা কেন বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় করতে পারব না, সমস্যা কোথায়? আমি বুঝতে পারি না। এখন এক লাখ টাকা রপ্তানি আদেশের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক করতে হয় ৭৫ হাজার ডলারে। এটা যদি টাকায় করি, তাহলে ডলারের সংকট, ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে, সেই কেনার ঝামেলা থেকে ব্যাংকগুলো মুক্ত থাকবে। দুই নম্বর হলো- এই কেনাবেচার মধ্যে দামের পার্থক্য, যেমন আমার এক্সপোর্টের ডলার ব্যাংক ১০০ টাকা দিচ্ছে। আবার আমি যখন কোনো পেমেন্ট করি তখন ১০৫ বা ১০৬ টাকায় কিনে দিচ্ছে। এই পার্থক্যের কারণে আমার বড় লোকসান হচ্ছে। এই ক্ষতিটাও কিন্তু তখন হবে না। তখন সুন্দরভাবে ব্যাক টু ব্যাকের দায় শোধ করতে পারব। আমরা নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশই লোকালি এলসি করি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান, বিকেএমইএর ৭০ শতাংশ ফ্যাক্টরি আছে, যাদের কোনো বন্ড লাইসেন্স নেই। তার মানে এই কোম্পানিগুলো ১০০ শতাংশই লোকালি করে। তাহলে তাদের এ সুবিধা দিতে অসুবিধা কোথায়? হ্যাঁ, একটা অসুবিধার কথা হয়তো বলবে, আমরা যাদের কাছ থেকে আনছি, তারা হয়তো বলবে, আপনারা যদি আমাকে বাংলা টাকা দেন, তাহলে আমাকে তো বিদেশ থেকে কাঁচামাল (র ম্যাটেরিয়াল) আনতে হবে ডলার দিয়ে। সেটা আমি পাব কোথায়?
আমাকে তো এখন ৭৫ হাজার ডলার কিনতে হচ্ছে। কিন্তু তার তখন হয়তো কিনতে হবে টোটাল ৩০ হাজার ডলার। স্পিনিং মিল, যারা আমার কাছে সুতা বিক্রি করছে, তিনি হয়তো এক লাখ ডলারের বিপরীতে ৪৫ বা ৫০ হাজার ডলারে সুতা দিচ্ছে। তো উনাকে হয়তো এই সুতার বিপরীতে ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলারের কটন ইমপোর্ট করতে হচ্ছে। তাহলে তাকে এই কটন আনতে সর্বোচ্চ ২০ বা ২৫ ডলার কিনে পেমেন্ট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি তো টাইম পাবেন। কিন্তু আমাকে যদি টোটালটা কিনতে হয়, তাহলে এক লাখ ডলারের বিপরীতে একবারে ৭৫ হাজার ডলার কিনতে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো পারছে না, এটাও তো বুঝতে হবে। এখন কেমন পরিস্থিতি? আমার যে শিপমেন্টগুলো গিয়েছে, সেগুলোর পেমেন্ট বায়াররা দিচ্ছে না। যেমন আমার ব্যাংকের একটা ডকুমেন্টে দুই মাস আগে পেমেন্ট পাওয়ার কথা, আরও ১০-১৫ দিন আগে ইতালির কাস্টমার তার ব্যাংকের মাধ্যমে আমার ব্যাংকে মেসেজ পাঠিয়েছে, ৪-৫ মাস পরে দিতে চায়। এটা এক নম্বর যে, যেসব মাল গিয়েছে সেগুলোর পয়সা আমরা পাচ্ছি না। দুই নম্বর হচ্ছে, প্রচুর মাল আমাদের প্রত্যেকের ঘরে রেডি আছে, মাল শিপমেন্টে নিচ্ছে না। তিন নম্বর হচ্ছে- সামনে যে শিপমেন্ট যাওয়ার কথা, এগুলোর শিডিউল তারা পাঁচ থেকে ছয় মাস পিছিয়ে দিয়েছে। ফলে একটা সংকটের মধ্যে আমরা আছি। শিপমেন্ট যাচ্ছে কিন্তু পয়সা পাচ্ছি না। আবার শিপমেন্ট যাচ্ছে না। ফলে আমার দায় কিন্তু সময় মতো পরিশোধ করতে পারছি না। সারা বিশ্বেই কিন্তু এরকম একটা অ্যাবনর্মাল সিচুয়েশন চলছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একটা সার্কুলার আমাদের জন্য কিন্তু ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসছে। ব্যাংকগুলো এই সার্কুলার পাওয়ার পর বলছে যে, আগের ব্যাংক টু ব্যাংক পাওনা পরিশোধ করেন।
কিন্তু এখন তো রপ্তানির বিপরীতে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছেন। এক বছর আগে প্রতি ডলারের বিপরীতে পেতেন ৮৫ টাকা। এখন পাচ্ছেন ১০০ টাকার বেশি। এতে আমাদের কী ধরনের সুবিধা হচ্ছে?
হ্যাঁ, স্বীকার করছি যে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছি। কিন্তু এখানে একটি বিষয় গভীরভাবে সবাইকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। ব্যাক টু ব্যাক এলসির পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে আমাকে ১০৫-১০৬ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আমাকে যদি প্রতি মাসে ১০ লাখ ডলার ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়, এই যে ৫ টাকা বা ৬ টাকার ডিফারেন্স, এর ফলে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই প্রো-অ্যাকটিভলি আমাদের সাহায্য করে। সে জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ইদানীং দুই-তিনটা ঘটনার জন্য আমরা মর্মাহত। যেমন- অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স আমাদের রপ্তানির ডলারের যে মূল্য তা ৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল, সেটা গত সপ্তাহে ১০০ টাকা করেছে। আবার রেমিট্যান্সেরটা আগে ১০৮ টাকা করেছিল, সেটা এখন ১০৭ টাকা করেছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার প্রশ্ন ডলার কেন ৭ টাকা পার্থক্য হলো? কী কারণে? এটা তো অন্যায়। রীতিমতো রপ্তানিকারকদের ডলারের টাকা লুণ্ঠন করে ব্যাংকগুলো বড়লোক হচ্ছে এখানে। লাভবান হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এটা হতে দেয়া উচিত না।
বাংলাদেশ ব্যাংকই হবে একমাত্র ডলারের রেট নির্ধারণ করার অথোরিটি। কারণ, ওই ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন যদি করে তাহলে ফারুক হাসান বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট হিসেবে, আমি বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট হিসেবে বলতে পারি, আমাদের ডলারের রেট হবে ১১০ টাকা। তাহলে কি এটা বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নেবে? সে জন্য আমরা মনে করি, এটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজার মনিটরিং করবে, কী রেট হওয়া উচিত তা করবে। সেটা টাইম টু টাইম চেঞ্জ হতে পারে। এ ছাড়া বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বাফেদা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করা যেতে পারে। এই ক্রাইসিস মুহূর্তে আমি মনে করি একটা সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সবাই মিলে এই সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত। যার যার মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে, আর চাপিয়ে দেবে তা হবে না।
ব্যাংকাররা তো মনে করছেন, আমাদের হাত-পা তো বাঁধা। ব্যাংকের মাধ্যমেই এক্সপোর্ট করতে হবে। ডলার ব্যাংকের মাধ্যমেই আনতে হবে। এ ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। যেহেতু পা-হাত বেঁধে ফেলেছি, যা দেব তাই খেতে হবে, এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ডলার তো কিনতে হচ্ছে যদি এলসি করতে হয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আপনি তো ডলারে এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট করেন। কিন্তু আমার ডলারটা আসতে তো দেরি হচ্ছে। ফলে এই মুহূর্তে আমি যেটা এক্সপোর্ট করি সেটা ব্যাংকে দিচ্ছি। ব্যাংক প্রথমে ডলারটাকে বাংলা টাকায় নিচ্ছে। এরপর এই টাকা থেকে ডলার কিনে আবার ব্যাক টু ব্যাক পরিশোধ করছে। ফলে আমার এখানে লস হচ্ছে।
কোনো অবস্থাতেই ডলারের ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এই অবস্থায় এক টাকার বেশি ডিফারেন্স হওয়া উচিত না। অতীতে ৬০ পয়সা ছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা ও দেশের ১৭ কোটি মানুষ। এতে লাভবান ব্যাংকাররা। আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে কেন ব্যাংকাররা লাভবান হবেন। এটা হওয়া উচিত না।
এই সংকটের সময়ে একটা ইতিবাচক দিক লক্ষ্ করা যাচ্ছে। চীন, ভিয়েতনাম, এমনকি মিয়ানমার থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমাদের প্রতি বায়ারদের দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই পজেটিভ। বাংলাদেশের ব্যাপারে নেগেটিভ কোনো কিছু নেই। তবে একটা ব্যাপারে তাদের নেগেটিভ দিক দেখি, সেটা হলো-একটা টি-শার্ট তারা চায়না থেকে কিনছে ২ ডলারে। কিন্তু যেই বাংলাদেশে আসে আমাকে বলা হয় এক ডলার বা ৮০ সেন্ট। কেন কম, এটার কোনো উত্তর নেই। দুই নম্বর দিক হচ্ছে- কমপ্লায়েন্স এবং সেফটির যতরকম ক্রাইটেরিয়া আছে, সব ফুলফিল করতে হচ্ছে। যত টাকা ইনভেস্ট লাগে করতে হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দিচ্ছে না। যখনই প্রাইসের কথা আসে, তখনই বলে তোমরা সোর্সিং টিমের সঙ্গে কথা বল। আমরা হচ্ছি কমপ্লায়েন্স টিম। আমাদের সঙ্গে প্রাইস নিয়ে কোনো কথা নেই।
সোর্সিং টিমের সঙ্গে কথা বলি, তখন বলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এখানে প্রাইস নিয়ে তোমাদের দরকষাকষি করার সুযোগ নেই। মানে এই ধরনের ডবল স্ট্যান্ডার্ড আমরা বায়ারদের মধ্যে লক্ষ করেছি।
কিছুদিন আগে আপনারা এবং বিজিএমইএ নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর কম দামে পোশাক বিক্রি করবেন না। সেই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে?
সেই জায়গাতে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। একটার পর একটা বিভিন্ন ঝামেলার কারণে হয়ে ওঠেনি। বিজিএমইএ-বিকেএমইএ জয়েন্টলি একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আমরা মিনিমাম একটা প্রাইস বেঁধে দেব। এর নিচে কেউ সেল করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তাকে ইউডি দেয়া হবে। এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশার কথা বলতে পারি, গত নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টসহ ফুল বোর্ড ঢাকাতে এসেছিলেন। বিভিন্ন বায়ার ও প্রতিনিধি এসেছিলেন। তাদের মনোভাব পজিটিভ ছিল। তারা বুঝতে পেরেছে যে, বাংলাদেশ একটা সেফ সোর্স কান্ট্রি। তারা বাংলাদেশ মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চায়। অর্থাৎ এখানে যা ছিল সেটা থেকে তারা বেশি নিতে চায়। এগুলো যা হচ্ছে তা সবই পজিটিভ। আমরা মনে করি, আগামী দিনে এটা ভালো কিছু হবে।
বিদ্যুতের পর গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। এতে কী ধরনের সমস্যা হবে আপনাদের?
আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। একদিকে বায়াররা আমাদের পোশাকের ন্যায্য দাম দিচ্ছে না; অন্যদিকে আমাদের খরচ বেড়ে গেল। উভয়সংকটে পড়লাম আমরা। গত পাঁচ মাসে আমরা প্রত্যেকেই ক্যাপাসিটি বাড়ানোর দিকে ছিলাম। হঠাৎ যখন গ্যাসসংকট হলো। আমরা থমকে গিয়েছিলাম। এখন দাম বাড়ানো হলো। এই মুহূর্তে বিশ্বমন্দার চ্যালেঞ্জের চেয়ে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লোকাল সমস্যা। প্রথমত, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা। দ্বিতীয়ত, কাস্টমস ও এনবিআরের সমস্যা।
আমরা সরকারের কাছ থেকে পলিসিগত এই সাপোর্টগুলো যদি ঠিকমতো পাই, তাহলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও এগিয়ে যাব। দেখেন, বাংলাদেশের ডেনিম সারা বিশ্বকে বিট করে আমেরিকার মার্কেটে এক নম্বর চাহিদায় রয়েছে। টোটাল এক্সপোর্ট বিশ্বের দ্বিতীয়তম স্থানে রয়েছি আমরা। আমেরিকার মার্কেটে সাড়ে ১৬ শতাংশ ডিউটি দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছি। তার মানে হচ্ছে, যত সংকটই বিশ্ববাজারে থাকুক আমরা এগিয়ে যাব।
অতীতে আমরা সাপোর্ট পেয়েছি। তার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, ব্যাংক, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই পলিসিগত সাপোর্ট দিয়েছেন বলে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। কিন্তু পলিসির মধ্যে মাঝে মাঝে যখন ঘুণে ধরে বা সমস্যা তৈরি হয় সেটা সময়মতো অ্যাডজাস্ট হয় না। তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, অর্থমন্ত্রণালয়সহ সবাই যদি সহযোগিতা করে, যেমন এসএস কোড নিয়ে জটিলতা বা আদার্স কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা, সেগুলো না থাকলে এগিয়ে যাব।
তাহলে কী বলতে পারি যে, এই সংকটের সময়ে রপ্তানি বাড়বে; পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই কী ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ?
দেখেন, আমরা কিন্তু বাধাবিপত্তি চড়াই-উৎরাই পেরিয়েই এই জায়গায় এসেছি। পোশাক রপ্তানি নিয়ে গেছি ৪৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বিশ্বে এ পর্যন্ত যত সংকট তৈরি হয়েছে, বিশ্বমন্দা বা আর যাই হোক- সব কিছু মোকাবিলা করেই কিন্তু আমরা এগিয়ে চলেছি। ১৯৯৫ সালে প্রথমে আসল চাইল্ড লেবার ইস্যু, সেটা মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। ২০০৫ সালে কোটামুক্ত বিশ্বে সবাই বলেছে, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বলেছে যে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টর আর থাকবে না। আমরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে, না, বাংলাদেশে এর পরও থাকবে এবং আমাদের কথা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।
এরপর একটা বড় অর্থমন্দা গেল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে। এর পরও কিন্তু আমাদের গ্রোথ আরও ভালোভাবে এগিয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা, রানা প্লাজা ইনসিডেন্ট, তার আগে তাজরিন ইনসিডেন্ট। এত বড় ঘটনার পরও দেশ কিন্তু এগিয়েছে। এর পরে আমরা বলেছিলাম, এই দুই দুর্ঘটনা বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্পের জন্য হবে একটা টার্নিং পয়েন্ট এবং তাই হয়েছে। আমার মনে আছে, ২০১৫ সালে তোফায়েল ভাইয়ের (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) নেতৃত্বে ওয়াশিংটনে কনগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বসলাম। তারা শুরুতেই খুব আশ্চর্য হয়েছিল যে, এত বড় দুর্ঘটনার পরও বাংলাদেশের অ্যাপারেল সেক্টর এগিয়ে যাচ্ছে, এটা তাদের কাছে মিরাকল ছিল।
বাংলাদেশ সব সময় এ ধরনের মিরাকল করার জন্যই প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশের সাহসী উদ্যোক্তারা সব সময় এগিয়ে যায়। আমাদের সব সময়ই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। যত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসে তত শক্তি নিয়ে আমরা পরাহত করার চেষ্টা করি। তার ফলে আমরা রানা প্লাজার পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আজকে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ডে হাইয়েস্ট গ্রিন ফ্যাক্টরির দেশ, প্লাটিনাম লিড সার্টিফাইড বাংলাদেশ, সেফেস্ট সোর্সেস কান্ট্রি বাংলাদেশ। এগুলো অ্যাচিভমেন্ট। আমরা গর্বের সঙ্গে বাইরে বলতে পারছি। সুতরাং এই ধরনের যত চ্যালেঞ্জই আসুক, আমরা এগিয়ে যাব।
পোশাকশিল্পে নতুন প্রজন্মের যারা যুক্ত হয়েছেন তারা কেমন করছেন। বিশেষ করে আপনাদের সন্তানরা কেমন করছেন?
প্রত্যেকটা সংকটকালে কিছু সমস্যা হয়। সেটা যদি যথাযথভাবে ফেস করতে কেউ ব্যর্থ হয়, তাদের হারিয়ে যেতে হয়। হারিয়ে যাওয়ার পরে যারা থাকে, তাদের মধ্যে নতুন প্রজন্মের যারা এখন ইনভলভ হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের নিয়ে আমরা আশাবাদী। টেকনোলজি যেভাবে সংযুক্ত হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের সেকেন্ড জেনারেশন আরও ভালো হবে। এই সেক্টরকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের কোয়ালিটি, স্কিল, লেখাপড়া আমাদের চেয়ে উন্নত। তারা বাইরে থেকে আধুনিক বিষয়গুলো দেখে আসছে, বাইরে লেখাপড়া করছে।
আর বাংলাদেশে অ্যাপারেল সেক্টর থাকবে, থাকতে হবে। কারণ চায়না, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া-এর সবাই কিন্তু বিপদে আছে। আমেরিকার সঙ্গে চীনের একটা বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। তো এর বেনিফিট তো কোথাও না কোথাও যাবে? তাহলে কোথায় যাবে? সেফেস্ট সোর্সিং কান্ট্রি তো বাংলাদেশ। বাংলাদেশেই আসবে। আমাদের রপ্তানি বাড়তেই থাকবে।
আরেকটা সুখবর হচ্ছে, দেড় শ কোটি মানুষের বিশাল বাজারের দেশ ভারতেও কিন্তু আমাদের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পাশের দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। আমরা কিন্তু সেখানে ঢুকে গেছি। আমাদের বাজার কিন্তু আস্তে আস্তে বাড়ছে। এ জন্যই আমরা খুব আশাবাদী।
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে যাতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে পারি সেজন্য এ কমিশন করা হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষ খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে একমত হয়েছি। খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। কিছু কিছু মধ্যবর্তী পণ্য যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে পারলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আনারস রপ্তানির কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছি। তারা সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এন্টি-ডাম্পিং বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাহিরেও আমাদের পাকিস্তান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আমদানির ওপর এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করেছিল আমরা সেটা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। তারা এটা রাখবে আশা করি। আমরা পাকিস্তান বাজারে ডিউটি ফ্রি ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির কথা জানিয়েছি। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আরো তিনদিন থাকবেন, এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এরমধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠন, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি। এই ট্রেড কমিশন বন্ধ ছিল না। সেখানে কিছু আলোচনা হতো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন করতে চাই। আমাদের দুই দেশে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ালে ভারতের সঙ্গে আরো বৈরিতা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে বাণিজ্যে সক্ষমতা তৈরি করা। এ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করুন। এটা আমার কনসার্ন নয়। আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের স্বার্থে অন্য যে যে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ। দেশের স্বার্থে আমাদের যা যা করণীয় সেটা আমরা করব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যে পাওনা-দেনা ছিল সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাণিজ্যের কোনো বিষয় না। আর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ছিল না বললেই চলে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও বাণিজ্য বাড়াতে অসুবিধা দেখি না। আমাদের উভয় দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে এ বাণিজ্য বাড়ানো যায়। আমাদের উপদেষ্টা ধারণা দিয়েছেন পাকিস্থানে কি কি বিষয় রপ্তানি করতে পারে। আমরা পাকিস্তান থেকে বেশি আমদানি করি কিন্তু রপ্তানি করি কম। আমরা চাই এটা পরিবর্তন হোক। আমরাও যাতে বেশি রপ্তানি করতে পারি। এতে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি।, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।’
বাণিজ্যসচিব মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গত দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে সমস্যা নেই। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছি। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইম্পোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। গত অর্থবছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।’
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্থানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, বাংলাদেশে পাকিস্থানের হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর কামরান ধাংগাল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিনিধি জাইন আজিজ এবং বাণিজ্য সহকারী ওয়াকাস ইয়াসিন।
বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান আজ রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের দিক দিয়ে দুদেশের মানুষের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আর পাকিস্তানের টেক্সটাইল ও বিশেষ করে জুয়েলারি পণ্য এদেশের মানুষের মাঝে বেশ চাহিদা রয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য এদেশের বেসরকারি খাত সবসময়ই সরকারকে প্রস্তাব দিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান ও কার্গো যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোষাক এবং টেক্সটাইল খাতের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল। দুদেশেরই রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোসহ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত পোশাকের নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেখানে দুদেশের পোষাক খাতের উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশ করা আবশ্যক। যার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে দুদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া প্রভৃতি খাতে পাকিস্তান বেশ ভালো করছে এবং বাংলাদেশ চাইলে পাকিস্তান থেকে এ পণ্যগুলো আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি ঔষধ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা পাকিস্তানের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, দুদেশের কৃষি কাজ এবং পণ্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি করা গেলে এখাতে বৈশ্বিক বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
জাম কামাল খান জানান, পাকিস্তানের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে শিগগিরই বাংলাদেশে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন’-এর আয়োজন করা হবে। যার মাধ্যমে দুদেশের বেসরকারি খাতের সম্পর্ক আরও জোরাদারের সুযোগ তৈরি হবে।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর আগে গত ১৩ আগস্টের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ব্যাংকখাতের বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকজন পরিচালক নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদনের বিপক্ষে মত দেন।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একই সময়ে কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
তবে পরিকল্পনা থেমে নেই। আগ্রহীদের কাছ থেকে নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন চাওয়া হতে পারে শিগগির। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন আহ্বান করে। তখন ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিচালনা পর্ষদের সভায়।
এর মধ্যে নগদ ও কড়ি ছাড়াও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওএল) দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংককে পৃথক লাইসেন্স না দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদন বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগেরবার রাজনৈতিক বিবেচনায় যে প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও কঠোর মানদণ্ডে নতুন আবেদনগুলো যাচাই করা হবে।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’-এ এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ১ বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে আরও ওঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামী ব্যাংক।
মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।
তবে ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে ৩০ টনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের পক্ষ থেকে সংগঠনটির কার্যালয়ে জারুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। আমদানির অনুমতি অব্যাহত না রাখলে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘গত ১৪ আগস্ট পেঁয়াজের আইপি দেয় সরকার, ফলে ১৭ আগস্ট থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এতে দেশের বাজারে পণ্যটির সররবাহ বাড়ায় দাম কমে আসছিল। কিন্তু ১৯ আগস্ট থেকে আবারো হঠাৎ করে আইপি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
এখন আমদানিকারকরা আবেদন করলেও কোনো আইপি ইস্যু করা হচ্ছেনা। এতে করে আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। হঠাৎ করে আইপি বন্ধের কারণে সীমান্তের ওপারে শতাধিক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব আমদানিকারক ইতোমধ্যে আইপির জন্য আবেদন করেছেন ও ভারতে পেঁয়াজ কিনে ট্রাকে লোড করে রেখেছেন তাদের জন্য পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির দাবি জানানো হয়। আমদানি উন্মুক্ত থাকলে দেশের বাজারে দাম কমে আসবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সেসময় সেখানে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ও আমদানিকারক রিপন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টানা চার কার্যদিবস সূচকের উত্থানের পর বুধবার পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার; কমেছে সূচক, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও সার্বিক লেনদেন।
উত্থান দিয়ে লেনদেনে শুরু হলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতন হতে থাকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। লেনদেনে শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস কমেছে ১১ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ শেয়ার ডিএস-৩০ কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮ কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে বেশিরভাগের। ১২৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২২৩ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ৫১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়া এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ২১৯ কোম্পানির মধ্যে ৭২ কোম্পানির দরবৃদ্ধির পাশাপাশি দর কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ব্লক মার্কেটে ২৯ কোম্পানির ২৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এশিয়াটিক ল্যাবরেটারিজ সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
লেনদেন কমেছে ডিএসইতে; সারাদিনে ৯৫৩ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে, যা গতদিন ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক লিমিটেড এবং ৭ শতাংশের ওপর দাম কমে তলানিতে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতোই সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই), সার্বিক সূচক কমেছে ৭৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৮ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯০, কমেছে ১০৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
গতদিনের লেনদেন অর্ধেকে নেমে এসেছে সিএসইতে। সারাদিনে ৯ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ১৮ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, পোশাকশিল্পে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেক কারখানা তাদের পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। গ্যাস না থাকায় শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে রপ্তানি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বুধবার বিজিএমইএ সভাপতি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার সচিবালয়স্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন। পোশাক শিল্পের সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এ সময় বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও এ বি এম সামছুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে পোশাক শিল্পের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান গ্যাস পরিস্থিতি এবং গ্যাস সংকটের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যা তুলে ধরেন। এ সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
এগুলো হলো: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সুরক্ষার জন্য গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তিতাস গ্যাসের নতুন সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান, যাতে করে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে পারে, লোড বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, শুধু সরঞ্জাম পরিবর্তন, পরিমার্জন বা স্থানান্তরের জন্য আবেদনকারীদের একটি আলাদা তালিকা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান করার অনুরোধ জানানো হয়, কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়, যা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো দ্রুত উৎপাদনে যেতে সাহায্য করবে, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত ৩-৪ পিএসআই চাপ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিজিএমইএ সভাপতির কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত পোশাকশিল্পকে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে প্রবৃদ্ধির হার ইইউর মোট আমদানি বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হলেও চীন ও কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগীদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের এই সময়ে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ১০.২৯ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৮.৭৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৭.৯% বেশি। আর সামগ্রিকভাবে ইইউর পোশাক আমদানি ১২.৩% বেড়ে ৪৩.৩৯ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের ৩৮.৬৪ বিলিয়ন ইউরো থেকে বেশি।
এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ইইউর বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তবে, এই বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়িয়েছে এশিয়ার দেশ চীন ও কম্বোডিয়া। এ বছর ইইউর বাজারে চীন তার সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির রপ্তানি ২২.৩% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.২৬ বিলিয়ন ইউরোতে। অপরদিকে কম্বোডিয়া সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাদের রপ্তানি ৩০.৪% বৃদ্ধি পেয়ে ২.০৭ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
তবে বাংলাদেশ তার প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ইইউ বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। যেমন- ভারত এ সময়ে ২.৭০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের ২.৩৪ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৫.৪% বেশি। তবে প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা কম।
এছাড়া পাকিস্তান রপ্তানি করেছে ১.৮৬ বিলিয়ন ইউরো, যা ২০২৪ সালের ১.৫৯ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৬.৬% বৃদ্ধি। এতে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলেও রপ্তানির পরিমাণ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে ভিয়েতনামও তার প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। দেশটি ২.০২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা এক বছর আগে ১.৭৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৭.৩% বৃদ্ধি।
তবে তুরস্ক নেতিবাচক ধারা দেখিয়েছে। তাদের রপ্তানি ৭% কমে দাঁড়িয়েছে ৪.২৭ বিলিয়ন ইউরোতে, যা ইইউর বাজারে চাহিদা কমার প্রতিফলন।
সামগ্রিকভাবে তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৭.৯% প্রবৃদ্ধি ইইউর গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি এবং ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের চেয়ে শক্তিশালী। তবে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে চীন ও কম্বোডিয়ার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ, যা ইইউ বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আগামী ৪-১১ নভেম্বর রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা। এসএমই চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল বুধবার এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতের ৮৫০ জন উদ্যোক্তা আবেদন করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই নির্বাচিতদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও পর্ষদ সদস্য সামিম আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. নাজিম হাসান সাত্তার।
সভায় জানানো হয়, শতভাগ দেশীয় পণ্যের এ মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য তিন শতাধিক স্টলের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি সচিবালয়, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থাকবে।
মেলায় বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনারের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ পেতে ব্যাংকার-উদ্যোক্তা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আয়োজন করা হবে। দেশীয় উৎপাদনকারী অথবা সেবামূলক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাই মেলায় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পাবেন। বিদেশি বা আমদানি করা পণ্য মেলায় প্রদর্শন কিংবা বিক্রি করা যাবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জুলাইয়ে রেকর্ড পরিমাণে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট কমাতে এবং লেনদেন স্বাভাবিক করতেই এই সহায়তা দেওয়া হয়।
ওই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। এর বিপরীতে সুদের হার ছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে মোটা অঙ্কের টাকা ধার দিয়েছে।
গত জুন মাসে বিশেষ তারল্য সহায়তা বাবদ দেওয়া হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেওয়া বিশেষ তারল্য সহায়তার মধ্যে গত জুলাইয়ে দেওয়া সহায়তাই সর্বোচ্চ। গত সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতে লুটপাটের কারণে সৃষ্ট ক্ষত আরও প্রকট হচ্ছে। লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এখন ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান খারাপ হচ্ছে। এর বিপরীতে তারল্য সংকট বাড়ছে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো যেমন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তেমনই গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণও বিতরণ করতে পারছে না। আগে বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হওয়ায় এবং নতুন ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী উপকরণ ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয়। একদিন থেকে এক বছর মেয়াদি এসব সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি অনেক সুবিধার অর্থ ব্যাংকগুলো পরিশোধ করে দিয়েছে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সবচেয়ে বেশি তারল্য সুবিধা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোপোর মাধ্যমে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আগে কেনা ট্রেজারি বিল রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জুনে দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি এবং মে মাসে দেওয়া হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসে এক লাখ টাকার কম করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হয়েছে কলমানি মার্কেট থেকে। এ মার্কেট থেকে জুলাইয়ে ব্যাংকগুলো এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে মোট সহায়তা নিয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে নিয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা, মে মাসে নিয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ধার নেওয়া হয়েছে। বাকি সময়ে ধারের পরিমাণ প্রতিমাসে ১ লাখ কোটি টাকার কম ছিল।
আন্তঃব্যাংক রেপোর মাধ্যমেও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। কিন্তু এ খাতে লেনদেন কম হচ্ছে। গত জুলাইয়ে এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। জুনে আন্তঃব্যাংক রেপোতে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে এ খাতে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে তারল্য ব্যবস্থায় সমতা আনার জন্য ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জোর দিক। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আস্থাহীনতা (বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতি সবল ব্যাংকগুলোর) এমনভাবে বেড়েছে, এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পরিশোধ করতে পারছে না। এ খাতে দেওয়া ধারও খেলাপি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংক ব্যাংক এশিয়া থেকে ধার নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছে। এটি নিয়ে মামলাও হয়েছে। আরও কিছু ব্যাংকের ধারদেনা পরিশোধের ব্যর্থতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
দেশে ২০২৪-’২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা সমমূল্যের ৯১ হাজার মেট্রিক টন মাছ বা মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে ‘মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন এবং সর্বোত্তম ব্যবহার’ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনাস্থ বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় আরও জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশের ১৪ লাখ নারীসহ ২ কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ইলিশ আহরণে প্রথম, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে দ্বিতীয় ও তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে পঞ্চম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক বিপুল কুমার বসাক।
সভায় বক্তারা বলেন, বিদেশে মানসম্মত মৎস্যপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। তবে পণ্যের মান ধরে রাখতে না পারলে অথবা মাছে অপদ্রব্য মেশালে মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে হবে। তাই মাছের পোনা সংগ্রহ, চাষ, আহরণ, বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব পর্যায়ে আদর্শমান ঠিক আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা আবশ্যক।
তারা আরও বলেন, দেশের মোট রপ্তানি আয়ে মৎস্যখাত এক সময় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখত, এখন সেটা সপ্তম স্থানে নেমে এসেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। ভালো মানের পোনা সরবরাহ নিশ্চিতে মৎস্য বিভাগ আরও সক্রিয় হবে বলে আশা করা যায়। কার্প জাতীয় মাছ চাষের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।
খুলনা বিএফএফইএয়ের সাবেক সহ-সভাপতি এস হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান, মৎস্য অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানেজার মো. জাহিদুল হাসান এবং মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আবুল হাসান।
সভায় মৎস্য খাতে খুলনা অঞ্চলের অবদান, লাভজনক ও মানসম্মতভাবে মাছচাষ, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন-২০২০ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপ্টন সরদার।
খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় আয়োজিত সভায় মাছচাষি, মাছ ব্যবসায়ী ও রপ্তানি খাত-সংশ্লিষ্টরা অংশ গ্রহণ করেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ) চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এবং এক কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই সময়ে প্রায় ৯০০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরের জেটিতে নোঙর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমপিএ উপপরিচালক (মিডিয়া) মো. মাকরুজ্জামান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দর ১ কোটি ৪ লাখ টন পণ্য পরিবহন করে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে নতুন রেকর্ড গড়েছে। সে সময় বন্দরের মুনাফা দাঁড়ায় ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা নির্ধারিত ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকার তুলনায় ২০৩.৪৯ শতাংশ বেশি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সামুদ্রিক কেন্দ্র হিসেবে মোংলাকে গড়ে তুলতে বন্দরটিতে ব্যাপক রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে। শক্তিশালী আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও সম্প্রসারণ উদ্যোগের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪৮ দিনে (১৭ আগস্ট পর্যন্ত) মোংলায় ১০৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে এবং তারা প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য হ্যান্ডেল করেছে। এর মধ্যে আটটি জাহাজ ৫ হাজার ৩৩২ টিইইউ কনটেইনার পণ্য বহন করেছে। শুধু জুলাই মাসেই মোংলা বন্দর ৪ হাজার ৪৫৯ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে, ৫১৮টি পুরান গাড়ি আমদানি হয়েছে এবং ৬.৫ লাখ টন পণ্য প্রক্রিয়াকরণ করেছে।
মোংলা বন্দরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- চ্যানেল খনন, কনটেইনার টার্মিনাল সম্প্রসারণ এবং শুল্ক ও বন্দর কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন। এসব উদ্যোগ বন্দরটির কার্যক্রম আরও গতিশীল করছে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো ও ভুটানের জন্য নির্ধারিত পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে মোংলার ভূমিকা জোড়ালো হচ্ছে।
এমপিএ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বাসসকে বলেন, বন্দরের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগানো গেলে বছরে দেড় হাজার বিদেশি জাহাজ নোঙর করতে পারবে, এক লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেল, দুই কোটি টন সাধারণ পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ২০ হাজার পুরান গাড়ি ক্লিয়ার করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এই লক্ষ্যগুলো অর্জিত হলে জাতীয় বাণিজ্য সক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক লজিস্টিকস হাব হিসেবে মোংলার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো।
কৌশলগত অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান সক্ষমতার কারণে মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যা দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের জট কমিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নে সহায়তা করছে।
নির্বিঘ্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং এজেন্ট, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট, স্টিভেডরস এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বৈঠক করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দরে জাহাজ নোঙর বাড়ানো ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ইতোমধ্যে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।