দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেছেন, ‘যত সংকটই বিশ্ববাজারে থাকুক না কেন, আমাদের রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে, আমরা এগিয়ে যাব। যত চ্যালেঞ্জই আসুক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে চমকের পর চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। নভেম্বরের পর ডিসেম্বরেও পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। আগামী দিনগুলো কেমন যাবে?
চার-পাঁচ মাস আগে আমি বলেছিলাম, আমাদের অবস্থান অনেক শক্ত। আমরা বায়ারদের না বলার মতো একটা অবস্থা তৈরি করতে পেরেছিলাম। সেটা আমাদের জন্য প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো পরিস্থিতি ওলট-পালট করে দিল। যার কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিল। সেল কমে গেল বায়ারদের, অর্ডার কমে গেল। এই পরিস্থিতিতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দিকে আমাদের রপ্তানি গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) ভালো ছিল। প্রথম মাসে (জুলাই) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ শতাংশ। দ্বিতীয় মাসে ২৫ শতাংশ পজেটিভ গ্রোথ ছিল। কিন্তু তৃতীয় মাসে এসে এটা সাড়ে ৭ শতাংশ নেগেটিভ গ্রোথ হয়। চতুর্থ মাসেও প্রায় নেগেটিভ। তবে আশার কথা হচ্ছে, পঞ্চম মাসে (নভেম্বর) এসে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আরও ভালো হয়েছে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শতাংশ হিসাবে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই এসেছিল পোশাক খাত থেকে। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই ছয় মাসে মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি এসেছে পোশাক থেকে।
বিস্ময়কর হলো এই কঠিন বিশ্ব পরিস্থিতিতে শেষ দুই মাসে, অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাসেই ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। নভেম্বর মাসে এসেছে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। আর ডিসেম্বরে এসেছে আরও বেশি ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে এর আগে কখনোই কোনো একক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসেনি। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নানা বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিদায়ী ২০২২ সালে রপ্তানি ভালো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে। নভেম্বর মাসে আমাদের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়। ডিসেম্বর মাসে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়। গত বছর (২০২২ সাল) তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আগের বছর ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছে এক বছরে। এর কারণ আমরা করোনা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক কাজ করেছি; বিভিন্ন বাজারে গিয়েছি। আমাদের বড় বাজারগুলোতে গিয়েছি। এমার্জিং মার্কেটেও গিয়েছি।
রপ্তানি ধরে রাখতে পেরেছি, এর বড় কারণ হচ্ছে আমাদের কাঁচামালের দাম কিন্তু বেড়ে গেছে। তুলা, কাপড়, কেমিক্যাল সবকিছুর দাম বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেইট কস্ট বা কনটেইনার কস্ট কিন্তু অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের গার্মেন্টে ইউনিট প্রাইস অনেক বেড়েছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছ। এ ছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড অনেক প্রোডাক্টের অর্ডার নিতে পেরেছি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। ফলে বাংলাদেশ এখন দামি পণ্যের অর্ডারও পাচ্ছে। আগে বাংলাদেশে ১৫ ডলারের জ্যাকেট হতো। এখন বায়াররা আমাদের এখানে ৩০-৪০ ডলারের জ্যাকেট অর্ডার করছে। আমরা নতুন মার্কেটগুলোতে ঢুকতে পেরেছি; বেশি দামি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছি। আবার পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে। তবে বর্তমান অস্থির বিশ্ববাজারে রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে কি না- তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে গত নভেম্বের আমরা বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামের একটা সুন্দর অনুষ্ঠান ঢাকায় করেছি। একইসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক যে সম্মেলন, যেটা আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছি। এই দুই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে সক্ষমতা সেটা বায়ারদেরকে দেখানো হয়েছে।
আমরা সব সময় গর্বের সঙ্গে বলি বাংলাদেশ অনলি দ্য সেফেস্ট সোর্স অব ইনকাম। জাতিসংঘের ট্রেড সেন্টার থেকে এক মাসে এটা ঘোষণা দিয়েছে। তাদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশও করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে সেফেস্ট সোর্স ইনকাম, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির কারণে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং বায়াররাও জানে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিকল্প আর কোনো দেশ নেই। এই পরিস্থিতিতে আমরা খুব আশাবাদী। যদিও এখন বিশ্ব অর্থনীতির সংকটকাল, আমাদের অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে আমাদের পোশাকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। জানি না আগামী দিনগুলো কেমন যাবে।
ডলার সংকটের কারণে তৈরি পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় এলসি খোলার সুযোগ চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কেন এ সুবিধা চেয়েছিলেন?
ডলারসংকটের কারণে বিকেএমইএ দুই-আড়াই মাস আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর পক্ষ থেকে এই দাবি জানিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমরা অপেক্ষা করছি, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানাবে। ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকে ডলারসংকট পড়লে বাকিটা টাকায় বিল পরিশোধ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আমরা আবেদন করেছি। এই অনুরোধ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়, স্বল্প সময়ের জন্য যতদিন ডলারসংকট থাকবে ততদিন টাকায় ঋণপত্র খোলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে জানিয়েছিল কোনো ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক এলসি পরিশোধের দায় মেটাতে বিলম্ব করলে এডি লাইসেন্স বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তখন ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ ব্যাংকগুলো আগের ব্যাক টু ব্যাকের দায় পরিশোধ করতে বলছে। ব্যাংকের কাছে ডলারসংকট, আবার ঋণপত্রও খুলতে হবে। ফলে এর জন্য আমাদের আবেদন ছিল ডলারের পরিবর্তে টাকায় ঋণপত্র খোলার জন্য।
ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধে ডলারের চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের রপ্তানি খাত। নিট সেক্টরের শতকরা ৮০ শতাংশ কাঁচামাল দেশীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সুতরাং বর্তমান ডলারসংকট মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে ঋণপত্র খোলা এবং এর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলা হলে এ-সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। ঋণপত্র ক্রয় এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে, ডলার কনভার্সনের নীতিগত প্রক্রিয়ার কারণে আমাদের ডলার প্রতি ৭-৮ টাকার পার্থক্যের ফলে বিশাল অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে এসব বিষয় বিবেচনা করে ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় ঋণপত্র খোলা এবং মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিলে এ সংকটের সময় আমাদের খুব সুবিধা হতো। রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে পারতাম আমরা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের সুবিধা আছে কী?
অবশ্যই আছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ৫টা কারেন্সি অ্যাকসেপ্টেবল। ডলার, ইউরো, পাউন্ড, চায়না ইউয়ান-এগুলো গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের ভেতরে ব্যাংক টু ব্যাক যে এলসি করছি, সেটা কেন বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় করতে পারব না, সমস্যা কোথায়? আমি বুঝতে পারি না। এখন এক লাখ টাকা রপ্তানি আদেশের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক করতে হয় ৭৫ হাজার ডলারে। এটা যদি টাকায় করি, তাহলে ডলারের সংকট, ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে, সেই কেনার ঝামেলা থেকে ব্যাংকগুলো মুক্ত থাকবে। দুই নম্বর হলো- এই কেনাবেচার মধ্যে দামের পার্থক্য, যেমন আমার এক্সপোর্টের ডলার ব্যাংক ১০০ টাকা দিচ্ছে। আবার আমি যখন কোনো পেমেন্ট করি তখন ১০৫ বা ১০৬ টাকায় কিনে দিচ্ছে। এই পার্থক্যের কারণে আমার বড় লোকসান হচ্ছে। এই ক্ষতিটাও কিন্তু তখন হবে না। তখন সুন্দরভাবে ব্যাক টু ব্যাকের দায় শোধ করতে পারব। আমরা নিটওয়্যারের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশই লোকালি এলসি করি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান, বিকেএমইএর ৭০ শতাংশ ফ্যাক্টরি আছে, যাদের কোনো বন্ড লাইসেন্স নেই। তার মানে এই কোম্পানিগুলো ১০০ শতাংশই লোকালি করে। তাহলে তাদের এ সুবিধা দিতে অসুবিধা কোথায়? হ্যাঁ, একটা অসুবিধার কথা হয়তো বলবে, আমরা যাদের কাছ থেকে আনছি, তারা হয়তো বলবে, আপনারা যদি আমাকে বাংলা টাকা দেন, তাহলে আমাকে তো বিদেশ থেকে কাঁচামাল (র ম্যাটেরিয়াল) আনতে হবে ডলার দিয়ে। সেটা আমি পাব কোথায়?
আমাকে তো এখন ৭৫ হাজার ডলার কিনতে হচ্ছে। কিন্তু তার তখন হয়তো কিনতে হবে টোটাল ৩০ হাজার ডলার। স্পিনিং মিল, যারা আমার কাছে সুতা বিক্রি করছে, তিনি হয়তো এক লাখ ডলারের বিপরীতে ৪৫ বা ৫০ হাজার ডলারে সুতা দিচ্ছে। তো উনাকে হয়তো এই সুতার বিপরীতে ২০ থেকে ২৫ হাজার ডলারের কটন ইমপোর্ট করতে হচ্ছে। তাহলে তাকে এই কটন আনতে সর্বোচ্চ ২০ বা ২৫ ডলার কিনে পেমেন্ট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি তো টাইম পাবেন। কিন্তু আমাকে যদি টোটালটা কিনতে হয়, তাহলে এক লাখ ডলারের বিপরীতে একবারে ৭৫ হাজার ডলার কিনতে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো পারছে না, এটাও তো বুঝতে হবে। এখন কেমন পরিস্থিতি? আমার যে শিপমেন্টগুলো গিয়েছে, সেগুলোর পেমেন্ট বায়াররা দিচ্ছে না। যেমন আমার ব্যাংকের একটা ডকুমেন্টে দুই মাস আগে পেমেন্ট পাওয়ার কথা, আরও ১০-১৫ দিন আগে ইতালির কাস্টমার তার ব্যাংকের মাধ্যমে আমার ব্যাংকে মেসেজ পাঠিয়েছে, ৪-৫ মাস পরে দিতে চায়। এটা এক নম্বর যে, যেসব মাল গিয়েছে সেগুলোর পয়সা আমরা পাচ্ছি না। দুই নম্বর হচ্ছে, প্রচুর মাল আমাদের প্রত্যেকের ঘরে রেডি আছে, মাল শিপমেন্টে নিচ্ছে না। তিন নম্বর হচ্ছে- সামনে যে শিপমেন্ট যাওয়ার কথা, এগুলোর শিডিউল তারা পাঁচ থেকে ছয় মাস পিছিয়ে দিয়েছে। ফলে একটা সংকটের মধ্যে আমরা আছি। শিপমেন্ট যাচ্ছে কিন্তু পয়সা পাচ্ছি না। আবার শিপমেন্ট যাচ্ছে না। ফলে আমার দায় কিন্তু সময় মতো পরিশোধ করতে পারছি না। সারা বিশ্বেই কিন্তু এরকম একটা অ্যাবনর্মাল সিচুয়েশন চলছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একটা সার্কুলার আমাদের জন্য কিন্তু ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসছে। ব্যাংকগুলো এই সার্কুলার পাওয়ার পর বলছে যে, আগের ব্যাংক টু ব্যাংক পাওনা পরিশোধ করেন।
কিন্তু এখন তো রপ্তানির বিপরীতে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছেন। এক বছর আগে প্রতি ডলারের বিপরীতে পেতেন ৮৫ টাকা। এখন পাচ্ছেন ১০০ টাকার বেশি। এতে আমাদের কী ধরনের সুবিধা হচ্ছে?
হ্যাঁ, স্বীকার করছি যে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছি। কিন্তু এখানে একটি বিষয় গভীরভাবে সবাইকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। ব্যাক টু ব্যাক এলসির পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে আমাকে ১০৫-১০৬ টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। আমাকে যদি প্রতি মাসে ১০ লাখ ডলার ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়, এই যে ৫ টাকা বা ৬ টাকার ডিফারেন্স, এর ফলে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই প্রো-অ্যাকটিভলি আমাদের সাহায্য করে। সে জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ইদানীং দুই-তিনটা ঘটনার জন্য আমরা মর্মাহত। যেমন- অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স আমাদের রপ্তানির ডলারের যে মূল্য তা ৯৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল, সেটা গত সপ্তাহে ১০০ টাকা করেছে। আবার রেমিট্যান্সেরটা আগে ১০৮ টাকা করেছিল, সেটা এখন ১০৭ টাকা করেছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার প্রশ্ন ডলার কেন ৭ টাকা পার্থক্য হলো? কী কারণে? এটা তো অন্যায়। রীতিমতো রপ্তানিকারকদের ডলারের টাকা লুণ্ঠন করে ব্যাংকগুলো বড়লোক হচ্ছে এখানে। লাভবান হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এটা হতে দেয়া উচিত না।
বাংলাদেশ ব্যাংকই হবে একমাত্র ডলারের রেট নির্ধারণ করার অথোরিটি। কারণ, ওই ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন যদি করে তাহলে ফারুক হাসান বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট হিসেবে, আমি বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট হিসেবে বলতে পারি, আমাদের ডলারের রেট হবে ১১০ টাকা। তাহলে কি এটা বাংলাদেশ ব্যাংক মেনে নেবে? সে জন্য আমরা মনে করি, এটা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজার মনিটরিং করবে, কী রেট হওয়া উচিত তা করবে। সেটা টাইম টু টাইম চেঞ্জ হতে পারে। এ ছাড়া বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বাফেদা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করা যেতে পারে। এই ক্রাইসিস মুহূর্তে আমি মনে করি একটা সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সবাই মিলে এই সিদ্ধান্তগুলো হওয়া উচিত। যার যার মতো করে সিদ্ধান্ত দেবে, আর চাপিয়ে দেবে তা হবে না।
ব্যাংকাররা তো মনে করছেন, আমাদের হাত-পা তো বাঁধা। ব্যাংকের মাধ্যমেই এক্সপোর্ট করতে হবে। ডলার ব্যাংকের মাধ্যমেই আনতে হবে। এ ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। যেহেতু পা-হাত বেঁধে ফেলেছি, যা দেব তাই খেতে হবে, এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। ডলার তো কিনতে হচ্ছে যদি এলসি করতে হয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আপনি তো ডলারে এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট করেন। কিন্তু আমার ডলারটা আসতে তো দেরি হচ্ছে। ফলে এই মুহূর্তে আমি যেটা এক্সপোর্ট করি সেটা ব্যাংকে দিচ্ছি। ব্যাংক প্রথমে ডলারটাকে বাংলা টাকায় নিচ্ছে। এরপর এই টাকা থেকে ডলার কিনে আবার ব্যাক টু ব্যাক পরিশোধ করছে। ফলে আমার এখানে লস হচ্ছে।
কোনো অবস্থাতেই ডলারের ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এই অবস্থায় এক টাকার বেশি ডিফারেন্স হওয়া উচিত না। অতীতে ৬০ পয়সা ছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা ও দেশের ১৭ কোটি মানুষ। এতে লাভবান ব্যাংকাররা। আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে কেন ব্যাংকাররা লাভবান হবেন। এটা হওয়া উচিত না।
এই সংকটের সময়ে একটা ইতিবাচক দিক লক্ষ্ করা যাচ্ছে। চীন, ভিয়েতনাম, এমনকি মিয়ানমার থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমাদের প্রতি বায়ারদের দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই পজেটিভ। বাংলাদেশের ব্যাপারে নেগেটিভ কোনো কিছু নেই। তবে একটা ব্যাপারে তাদের নেগেটিভ দিক দেখি, সেটা হলো-একটা টি-শার্ট তারা চায়না থেকে কিনছে ২ ডলারে। কিন্তু যেই বাংলাদেশে আসে আমাকে বলা হয় এক ডলার বা ৮০ সেন্ট। কেন কম, এটার কোনো উত্তর নেই। দুই নম্বর দিক হচ্ছে- কমপ্লায়েন্স এবং সেফটির যতরকম ক্রাইটেরিয়া আছে, সব ফুলফিল করতে হচ্ছে। যত টাকা ইনভেস্ট লাগে করতে হচ্ছে। কোনো রকমের ছাড় দিচ্ছে না। যখনই প্রাইসের কথা আসে, তখনই বলে তোমরা সোর্সিং টিমের সঙ্গে কথা বল। আমরা হচ্ছি কমপ্লায়েন্স টিম। আমাদের সঙ্গে প্রাইস নিয়ে কোনো কথা নেই।
সোর্সিং টিমের সঙ্গে কথা বলি, তখন বলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এখানে প্রাইস নিয়ে তোমাদের দরকষাকষি করার সুযোগ নেই। মানে এই ধরনের ডবল স্ট্যান্ডার্ড আমরা বায়ারদের মধ্যে লক্ষ করেছি।
কিছুদিন আগে আপনারা এবং বিজিএমইএ নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর কম দামে পোশাক বিক্রি করবেন না। সেই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে?
সেই জায়গাতে আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। একটার পর একটা বিভিন্ন ঝামেলার কারণে হয়ে ওঠেনি। বিজিএমইএ-বিকেএমইএ জয়েন্টলি একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আমরা মিনিমাম একটা প্রাইস বেঁধে দেব। এর নিচে কেউ সেল করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তাকে ইউডি দেয়া হবে। এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশার কথা বলতে পারি, গত নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টসহ ফুল বোর্ড ঢাকাতে এসেছিলেন। বিভিন্ন বায়ার ও প্রতিনিধি এসেছিলেন। তাদের মনোভাব পজিটিভ ছিল। তারা বুঝতে পেরেছে যে, বাংলাদেশ একটা সেফ সোর্স কান্ট্রি। তারা বাংলাদেশ মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চায়। অর্থাৎ এখানে যা ছিল সেটা থেকে তারা বেশি নিতে চায়। এগুলো যা হচ্ছে তা সবই পজিটিভ। আমরা মনে করি, আগামী দিনে এটা ভালো কিছু হবে।
বিদ্যুতের পর গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। এতে কী ধরনের সমস্যা হবে আপনাদের?
আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। একদিকে বায়াররা আমাদের পোশাকের ন্যায্য দাম দিচ্ছে না; অন্যদিকে আমাদের খরচ বেড়ে গেল। উভয়সংকটে পড়লাম আমরা। গত পাঁচ মাসে আমরা প্রত্যেকেই ক্যাপাসিটি বাড়ানোর দিকে ছিলাম। হঠাৎ যখন গ্যাসসংকট হলো। আমরা থমকে গিয়েছিলাম। এখন দাম বাড়ানো হলো। এই মুহূর্তে বিশ্বমন্দার চ্যালেঞ্জের চেয়ে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে লোকাল সমস্যা। প্রথমত, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা। দ্বিতীয়ত, কাস্টমস ও এনবিআরের সমস্যা।
আমরা সরকারের কাছ থেকে পলিসিগত এই সাপোর্টগুলো যদি ঠিকমতো পাই, তাহলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও এগিয়ে যাব। দেখেন, বাংলাদেশের ডেনিম সারা বিশ্বকে বিট করে আমেরিকার মার্কেটে এক নম্বর চাহিদায় রয়েছে। টোটাল এক্সপোর্ট বিশ্বের দ্বিতীয়তম স্থানে রয়েছি আমরা। আমেরিকার মার্কেটে সাড়ে ১৬ শতাংশ ডিউটি দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছি। তার মানে হচ্ছে, যত সংকটই বিশ্ববাজারে থাকুক আমরা এগিয়ে যাব।
অতীতে আমরা সাপোর্ট পেয়েছি। তার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী, ব্যাংক, এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই পলিসিগত সাপোর্ট দিয়েছেন বলে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। কিন্তু পলিসির মধ্যে মাঝে মাঝে যখন ঘুণে ধরে বা সমস্যা তৈরি হয় সেটা সময়মতো অ্যাডজাস্ট হয় না। তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, অর্থমন্ত্রণালয়সহ সবাই যদি সহযোগিতা করে, যেমন এসএস কোড নিয়ে জটিলতা বা আদার্স কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা, সেগুলো না থাকলে এগিয়ে যাব।
তাহলে কী বলতে পারি যে, এই সংকটের সময়ে রপ্তানি বাড়বে; পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই কী ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ?
দেখেন, আমরা কিন্তু বাধাবিপত্তি চড়াই-উৎরাই পেরিয়েই এই জায়গায় এসেছি। পোশাক রপ্তানি নিয়ে গেছি ৪৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বিশ্বে এ পর্যন্ত যত সংকট তৈরি হয়েছে, বিশ্বমন্দা বা আর যাই হোক- সব কিছু মোকাবিলা করেই কিন্তু আমরা এগিয়ে চলেছি। ১৯৯৫ সালে প্রথমে আসল চাইল্ড লেবার ইস্যু, সেটা মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। ২০০৫ সালে কোটামুক্ত বিশ্বে সবাই বলেছে, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বলেছে যে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টর আর থাকবে না। আমরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম যে, না, বাংলাদেশে এর পরও থাকবে এবং আমাদের কথা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।
এরপর একটা বড় অর্থমন্দা গেল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে। এর পরও কিন্তু আমাদের গ্রোথ আরও ভালোভাবে এগিয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা, রানা প্লাজা ইনসিডেন্ট, তার আগে তাজরিন ইনসিডেন্ট। এত বড় ঘটনার পরও দেশ কিন্তু এগিয়েছে। এর পরে আমরা বলেছিলাম, এই দুই দুর্ঘটনা বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্পের জন্য হবে একটা টার্নিং পয়েন্ট এবং তাই হয়েছে। আমার মনে আছে, ২০১৫ সালে তোফায়েল ভাইয়ের (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) নেতৃত্বে ওয়াশিংটনে কনগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বসলাম। তারা শুরুতেই খুব আশ্চর্য হয়েছিল যে, এত বড় দুর্ঘটনার পরও বাংলাদেশের অ্যাপারেল সেক্টর এগিয়ে যাচ্ছে, এটা তাদের কাছে মিরাকল ছিল।
বাংলাদেশ সব সময় এ ধরনের মিরাকল করার জন্যই প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশের সাহসী উদ্যোক্তারা সব সময় এগিয়ে যায়। আমাদের সব সময়ই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। যত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসে তত শক্তি নিয়ে আমরা পরাহত করার চেষ্টা করি। তার ফলে আমরা রানা প্লাজার পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আজকে বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ডে হাইয়েস্ট গ্রিন ফ্যাক্টরির দেশ, প্লাটিনাম লিড সার্টিফাইড বাংলাদেশ, সেফেস্ট সোর্সেস কান্ট্রি বাংলাদেশ। এগুলো অ্যাচিভমেন্ট। আমরা গর্বের সঙ্গে বাইরে বলতে পারছি। সুতরাং এই ধরনের যত চ্যালেঞ্জই আসুক, আমরা এগিয়ে যাব।
পোশাকশিল্পে নতুন প্রজন্মের যারা যুক্ত হয়েছেন তারা কেমন করছেন। বিশেষ করে আপনাদের সন্তানরা কেমন করছেন?
প্রত্যেকটা সংকটকালে কিছু সমস্যা হয়। সেটা যদি যথাযথভাবে ফেস করতে কেউ ব্যর্থ হয়, তাদের হারিয়ে যেতে হয়। হারিয়ে যাওয়ার পরে যারা থাকে, তাদের মধ্যে নতুন প্রজন্মের যারা এখন ইনভলভ হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের নিয়ে আমরা আশাবাদী। টেকনোলজি যেভাবে সংযুক্ত হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের সেকেন্ড জেনারেশন আরও ভালো হবে। এই সেক্টরকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের কোয়ালিটি, স্কিল, লেখাপড়া আমাদের চেয়ে উন্নত। তারা বাইরে থেকে আধুনিক বিষয়গুলো দেখে আসছে, বাইরে লেখাপড়া করছে।
আর বাংলাদেশে অ্যাপারেল সেক্টর থাকবে, থাকতে হবে। কারণ চায়না, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া-এর সবাই কিন্তু বিপদে আছে। আমেরিকার সঙ্গে চীনের একটা বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। তো এর বেনিফিট তো কোথাও না কোথাও যাবে? তাহলে কোথায় যাবে? সেফেস্ট সোর্সিং কান্ট্রি তো বাংলাদেশ। বাংলাদেশেই আসবে। আমাদের রপ্তানি বাড়তেই থাকবে।
আরেকটা সুখবর হচ্ছে, দেড় শ কোটি মানুষের বিশাল বাজারের দেশ ভারতেও কিন্তু আমাদের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পাশের দেশটিতে আমাদের মোট রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। আমরা কিন্তু সেখানে ঢুকে গেছি। আমাদের বাজার কিন্তু আস্তে আস্তে বাড়ছে। এ জন্যই আমরা খুব আশাবাদী।
বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার।
‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম – সাবপ্রোগ্রাম ২’ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এই ঋণ বাজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
গতকাল সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং এআইআইবির পক্ষে রজত মিশ্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। রজত মিশ্র এআইআইবির পাবলিক সেক্টর (রিজিয়ন ১) ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফান্ডস (গ্লোবাল) ক্লায়েন্টস বিভাগের অ্যাক্টিং চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও পরিচালক।
এই ৪০ কোটি ডলারের ঋণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যয় করা হবে।
অর্থ বিভাগ পরিচালিত এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য তিনটি: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অভিযোজনমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা।
এ উদ্যোগ সরকারের জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নে জলবায়ু সংবেদনশীলতা সংযোজনের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঋণের মেয়াদ ৩৫ বছর, যার মধ্যে প্রথম ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। এ ঋণ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটভিত্তিক সুদ এবং একটি পরিবর্তনশীল স্প্রেডে নির্ধারিত, যেখানে ফ্রন্ট-এন্ড ফি ০.২৫ শতাংশ; যা এআইআইবির প্রচলিত শর্তানুসারে নির্ধারিত হয়েছে।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সচেতন নীতিগত সংস্কারের পথ সুগম হবে।
চলতি (জুন) মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এসময়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার।
এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। সদ্যবিদায়ী মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ‘বেসরকারি’ খাতের জন্য সংকোচন নীতি নেওয়া হলেও সরকারের জন্য তা দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
গতকাল শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বাজেট বিতর্ক: প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতিকে দমন করার জন্য সুদের হার বাড়ায়া দিছি। ভালো কথা। আমরা সংকুচিত রাজস্ব নীতি করতে গিয়ে বাজেটের আকার ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কী, যে এটা বেসরকারি খাতের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্যই শুধু সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং সংকুচিত রাজস্ব নীতি।
‘যেই মাত্র এটা সরকারের জন্য, সরকারের জন্য আসে তখন আর এটা ওদের (সরকারের) জন্য সংকুচিত না।’
উদাহারণ দিয়ে মিন্টু বলেন, ‘গত দেড় বছরে বাংলাদেশে মোট ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকে আমানত পাইছে। এর ভিতরে ২ লাখ ৭০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে সরকার। তো তাদের জন্য সংকুচিত রাজস্বনীতি তো আমি দেখতেছি না।’
এজন্য সরকারকে সকল দিক বিবেচনায় এনে ‘বিচার-বিশ্লেষণ’ করে নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন এ ব্যবসায়ী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হলেও বিএনপি নেতা মিন্টু মতে, তা দেখা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটেও অর্থনীতির চিহ্নিত সমস্যার সংস্কার দেখা না যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম, আরেক দিক থেকে মূল্যস্ফীতি বেশি। এই দুইটার সমন্বয়ের যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি আমাদের দেশে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু সংস্কার করা যেত এই বাজেটে। কিন্তু সেটা আসলে আমি দেখি নাই।’
গত ২ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেটের আকার ছোট করলেও তা হয়েছে উন্নয়ন বাজেটে, যার দ্বারা সরাসরি উপকৃত হয় দেশের নাগরিক।
অপরদিকে অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।
আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ অন্য উৎসের মধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিতে চায় ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়াও সঞ্চয়পত্রপত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ২১ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
‘দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য’ দেখছেন উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
‘অন্দরমহলের খবর দিতে চাই’- এ কথা বলে তিনি তার নয় মাসের উপদেষ্টা জীবনের তদবিরের গল্প তুলে ধরেন।
বলেন, ‘একটা জিনিসের ব্যাপারে আমি জাতীয় ঐক্যমত্য দেখতে পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য। সবাই দুর্নীতি করতে চান। কেউ কিন্তু বাদ নাই। রাজনীতিবিদ, আমলা, অধ্যাপক, কেউ বাদ নেই।’
উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনারা দেখবেন যে প্রথম আলোতে একটা সংবাদ এসেছে যে আমি যেগুলো দেখি (যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তার মধ্যে একটা হচ্ছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের তারা করেছেন কী, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পুনর্বাসনের জন্য কতগুলো ভবন করেছেন। তো ভবন করতে গিয়ে ওনারা আবিষ্কার করলেন যে কিছু জায়গা বেঁচে গেছে।
‘তো এখন কী করতে হবে? তো এটা সব সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হবে। অথচ সেতু বিভাগের ভবন বানানো কিংবা আবাসনের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ই আছে। যেটাকে আমরা পূর্ত মন্ত্রণালয় বলে থাকি। …এখানে অকল্পনীয় ছিল যে ক্যাবিনেট সচিবরা পর্যন্ত অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন।’
তদবির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে আমরা যে অফিসে আসি। আমার সঙ্গে এখন তো রাজনীতিবিদরাও দেখা করেন। কিন্তু কেউই কিন্তু চান না যে দুর্নীতির অবসান হোক। সবাই চান যে দুর্নীতি চলুক, তবে দুর্নীতিটা এবার আমাকে করার সুযোগ দিতে হবে।
‘সবাই বলেন, দেখেন ফ্যাসিস্ট আমলে জানেনই তো ব্যবসা করতে পারি নাই, এখন একটু খেয়াল রাখবেন। তো আমরা সে পথে যাচ্ছি না।’
এর বিপরীতে সরকারের চেষ্টা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যে অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। যেই ব্যবসা পাবেন, প্রতিযোগিতা হবে সেখানে। আমরা সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
আসছে জুলাই-আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলেও উপদেষ্টা আশার কথা শোনান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ।
দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।
ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।
ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।
তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।
পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ খুঁজে বের করতে, একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে এবং ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে শিগগিরই একটি যৌথ কমিটি গঠন করবে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধিরা থাকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
তারা বলেন, ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কমিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় দীর্ঘমেয়াদি মূলধন কীভাবে এবং কোনো প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে সে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং এর তারল্য বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়।
সবশেষে, এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনার ফারজানা লালারুখসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কোরবানি ঈদের পর বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। সবজির দামও আগের মতোই। তবে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগের তুলনায় বর্তমানে খুচরায় মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা প্রতি কেজিতে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা, মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী নিজাম জানান, ঈদের পর থেকে চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘মিল মালিকদের দাবি অনুযায়ী, ধানের দাম বৃদ্ধির ফলে চালের দাম বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে।’
অলিগলির ছোট মুদি দোকানগুলোতে চালের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে। বংশাল এলাকার মুদি দোকানদার মজিদ মিয়া বলেন, ‘এই ধরনের দোকানে বাকির পরিমাণ বেশি। আমাদের বেশি ইনভেস্ট করতে হয়, তাই কিছুটা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করি।’
চালের উচ্চমূল্য ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি করলেও মুরগি, ডিম ও সবজির দাম কিছুটা কমে ক্রেতাদের স্বস্তি দিয়েছে। মুদি পণ্যগুলোর দামেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়নি। পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। ডিমের দামও কমে প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম এবং চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দাম কমেছে।
বাজারে আগত বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানির ঈদের পর অনেক ঘরেই এখনো মাংস রয়েছে। ফলে ডিম ও মুরগির চাহিদা কম। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, কিছু দিন পর চাহিদা বাড়লে মুরগির দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে।
পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার ও নয়াবাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমেছে—বর্তমানে তা প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের বাজারে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি; বড় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম তুলনামূলক বেশি।
সবজির বাজারেও দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা। পুঁইশাক, বেগুন, পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গে ও মিষ্টি কুমড়ার মতো সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ছিল। বড় বাজারের তুলনায় ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে দাম আরও কিছুটা কম।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।
ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।
ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
সূত্র: বাসস
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নামে পাওনা রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ( প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে ) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ। এখনকার বিনিময় হার ধরলে যার পরিমাণ ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ। ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের দায় ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে দায়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, আমনাতকারীদের পাওনা এবং পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের নামে বিনিয়োগের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, যা বাণিজ্য কেন্দ্রিক অর্থ বলে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার করা সম্পদ হতে পারে বলে ধারণা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি।
সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের শ্রীলঙ্কায় তথ্য-প্রযুক্তি ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপ-অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান তারা। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি দেশটির পররাষ্ট্র ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি বৈঠকে অংশ নেয়।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতারা শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপঅর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমার সঙ্গে কলম্বোতে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে আরুন হেমাচন্দ্র বলেন, দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে এবং বাংলাদেশ সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে সরকার পূর্ণ সহায়তা দেবে।
তিনি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং এলক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানসমূহে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তবে প্রযুক্তি, পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং উদ্ভাবনের দিক থেকে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে দুদেশের বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ উভয় দেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যকার সংযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী এবং শ্রীলংকার উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রায় একই ধাঁচের যেখানে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবিক অর্থে ততটা কার্যকর হবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডিসিসিআই’র ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে শ্রীলংকার উপ-অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা বলেন, আমাদের একসাথে কাজ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা, ঔষধ, চা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা ও পর্যটন খাত যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময়।
তিনি জানান, শ্রীলংকা ইতোমধ্যেই একটি উচ্চাভিলাষী ডিজিটাল রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে এবং এই পরিকল্পনার অধীনে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং প্রতিটি সেবা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকায় অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের শ্রীলংকার ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। যাতে দেশটির স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্য আরও কঠোর করার পর মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে, যা যুদ্ধকে আরও সম্প্রসারণ করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেন এবং মার্কিন হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেন।
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক ০.৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪২,২১৫.৮০ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৮ শতাংশ কমে ৫,৯৮২.৭২ পয়েন্টে এবং প্রযুক্তি খাতভিত্তিক ন্যাশডাক কম্পোজিট ০.৯ শতাংশ কমে ১৯,৫২১.০৯ পয়েন্টে নেমে আসে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এখন বিনিয়োগকারীদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। একই সময়ে তারা ফেডারেল রিজার্ভের দিকে নজর রাখছে। যা বর্তমানে দুই দিনের আর্থিক নীতিমালা বৈঠকে রয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ আপাতত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারণ, তারা ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছে।
গতকাল বুধবার ফেড তাদের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করবে, যাতে থাকবে প্রবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা দুর্বল অর্থনৈতিক তথ্যের প্রভাবও মূল্যায়ন করছেন। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট খুচরা বিক্রি এপ্রিলের তুলনায় ০.৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭১৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এপ্রিলে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় যে ভোক্তারা আগেভাগে পণ্য কিনে নিয়েছিলেন, মে মাসে সেই কেনাকাটার গতি কমে গেছে।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ১১টি খাতের মধ্যে ১০টিতেই দরপতন হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জ্বালানি খাত, যা তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
প্রতিরক্ষা খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোও লাভ করেছে। লকহিড মার্টিন ২.৬ শতাংশ এবং নর্থরপ গ্রুমান ১.২ শতাংশ বেড়েছে।
আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় টেক ব্র্যান্ড রিয়েলমি কোম্পানির স্মার্টফোনের খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়ে সম্প্রতি ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে। রিয়েলমি সার্ভিস ডে উপলক্ষ্যে এই ক্যাম্পেইনের অফার চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত।
এ ক্যাম্পেইন চলাকালে ইউজাররা সকল অ্যাকসেসরিজ ও সেফগার্ড সার্ভিসে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট লুফে নিতে পারবেন। শুধুমাত্র দেশজুড়ে অবস্থিত রিয়েলমি’র অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে এই অফার পেতে পারবেন গ্রাহকরা।
এছাড়াও- স্মার্টফোনের ওয়ারেন্টি বিষয়ক সার্ভিস, ক্লিনিং ও মেইনটেন্যান্স, সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন, প্রটেক্টিভ পেপার ফিল্মস ও প্রটেক্টিভ ফোন কেসে থাকবে বিভিন্ন ছাড়।
এখানে উল্লেখ্য যে- ঘোষিত অফারটি শুধুমাত্র রিয়েলমি’র অফিসিয়াল স্মার্টফোনগুলোর জন্যই প্রযোজ্য।
এসব অফার ছাড়াও- রিয়েলমি অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে ডিভাইস পাঠানোর ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের রিয়েলমি অথরাইজড কালেকশন পয়েন্টস ব্যবহার করতে পারবেন।
অফার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইউজাররা ফেসবুকে রিয়েলমি’র অফিসিয়াল আফটার-সেল সার্ভিস পেজ "realme Service BD" ভিজিট করতে পারেন।
তাই ভিজিট করুন আপনার কাছেরই কোনো আউটলেট এবং ক্যাম্পেইন শেষের আগেই ডিসকাউন্ট উপভোগ করুন
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে, দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির।
সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৫৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৬ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ কোম্পানির মধ্যে ৩১৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৩৬ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২১৭ কোম্পানির মধ্যে ১৭৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬ কোম্পানির শেয়ারমূল্য।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৫ কোম্পানির ৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। লাভেলো সর্বোচ্চ ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
গতদিনের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সারাদিনে ৪১৭ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ২৬৩ কোটি টাকা।
৯.৮৬ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এবং সাড়ে ৩ শতাংশ দাম কমে তলানিতে শ্যামপুর সুগ্যার মিল।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো সূচক বেড়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই), সারাদিনের লেনদেনে সার্বিক সূচক বেড়েছে ৬০ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ১৮৪ কোম্পানির মধ্যে ১১৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৫৩ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা এর আগের সবশেষ কার্যদিবসে ছিল ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইসলামী ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।