ডলার প্রতি নির্ধারিত ১০৭ টাকার অতিরিক্ত দর দিয়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সংগ্রহ না করতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
বাফেদা চেয়ারম্যান আফজাল করিম ও এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেনের সই করা এক চিঠির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
ব্যাংক সূত্র বলছে, গত ১৮ জানুয়ারি এবিবি ও বাফেদার সদস্যরা ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডলার প্রতি নির্ধারিত ১০৭ টাকার বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে ডলারের বাজার। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ রকম অভিযোগের পর সভায় ব্যাংকগুলোকে ডলারে এমন বাড়তি দর না দিতে সতর্ক করেছে বাফেদা ও এবিবি।
সভায় উপস্থিত একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দৈনিক বাংলাকে বলেন, কিছু ব্যাংক ডলার প্রতি ১০৭ টাকার চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সভায় এ বিষটি গুরুত্ব পেয়েছে। সভার পর এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওদের একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
১৯ জানুয়ারি পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, বাফেদা ও এবিবির বৈঠকে রেমিট্যান্স সংগ্রহে ডলার প্রতি ১০৭ টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী সব ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছিল। তবে দেখা গেছে, দেশের কয়েকটি ব্যাংক বাফেদা-এবিবি নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে অনুমোদন দেয়া হবে না বলে সতর্ক করা হয় চিঠিতে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হতে পারে, যার পরিমাণ ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। দুটো প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হতে পারে ১১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর এডিবি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া একই দিনে আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
উভয় ঋণ প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ অর্থ প্রাপ্তি বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে স্বস্তি আনবে। এর মাধ্যমে আমদানি বিল পরিশোধ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসার অর্থ পাঠাতে প্রয়োজনীয় ডলারের ঘাটতি মেটাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি যে দুটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, তা হলো রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বাস্তবতা আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি এবং যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বা পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বাংলাদেশেও বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন প্রতিটি ধাপে টের পেয়েছে নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আসার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিত প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। বর্তমানে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়ায় এর গুরুত্বও বেড়েছে বহুগুণ।
এমন পরিস্থিতিতে নিরাশ করছে না রেমিট্যান্স যোদ্ধাখ্যাত প্রবাসীরা। গত মাসে (নভেম্বর) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার, যা এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। এর আগের মাস অক্টোবরেও মোট প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৭ কোটি মার্কিন ডলার। দুই মাসের প্রায় চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স একদিকে ডলারের চাহিদা পূরণ করছে, অন্যদিকে চাপ কমিয়েছে রিজার্ভের ওপরেও।
বড় অঙ্কের এই প্রবাসী আয়ে কোন বিভাগের ভূমিকা কতটুকু, সে হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু বিভাগ হিসাবেই নয়, জেলাভিত্তিক হিসাবও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর- এই পাঁচ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮৮০ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। তবে এর মধ্যে বিভাগ কিংবা জেলা হিসাবে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বড় রকমের তারতম্য লক্ষ করা গেছে। হিসাবে দেখা যায়, বিভাগ হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে। মোট প্রবাসী আয়ের প্রায় অর্ধেকটাই এসেছে এই বিভাগের ১৩টি জেলায়। গেল পাঁচ মাসে এ বিভাগে প্রবাসী আয় এসেছে ৪২৩ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯৫ কোটি ডলার এসেছে শুধু ঢাকা জেলায়। সেই হিসাবে দেখা যায় পুরো দেশের এক-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স এসেছে শুধু ঢাকা জেলাতে। এর পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে নরসিংদী রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে, জেলাটিতে প্রবাসীরা পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে ১৫ কোটি ৬ লাখ, মুন্সীগঞ্জে ১৪ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে এই সময়ে।
বিভাগ হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে চট্টগ্রামে। যেখানে প্রবাসীরা পাঁচ মাসে মোট রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট বিভাগে উল্লেখিত সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১০০ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এই তিন বিভাগ ছাড়া অন্য পাঁচ বিভাগে বিভাগে উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স আসতে দেখা যায়নি।
বিভাগ হিসাবে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে রংপুর বিভাগে। গেল পাঁচ মাসের হিসাবে বিভাগটিতে মাত্র ১০ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বিভাগের মোট আট জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে লালমনিরহাটে। প্রবাসীরা পাঁচ মাসে ৭৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে জেলাটিতে। শুধু রংপুর বিভাগের হিসাবে নয়, পুরো দেশের জেলা হিসাবেও যা সবচেয়ে কম।
লালমনিরহাটের পরে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পাহাড়ি জেলা হিসাবে পরিচিত রাঙামাটি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে জেলাটিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছে ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া পিছিয়ে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম ইত্যাদি।
অন্যদিকে জেলা হিসাবে ঢাকার পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। জেলাটিতে মোট ৭৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ে এগিয়ে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবটি আগামী সপ্তাহে সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে।
বোর্ড সভার সময়সূচি অনুসারে, আগামী ১২ ডিসেম্বর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন বা ৬৮ দশমিক ১০ কোটি ডলার অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে সেগুলো হলো—অনুচ্ছেদ ৪ পরামর্শ ও বর্ধিত ঋণ সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব সুবিধার পর্যালোচনা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে আইএমএফ নির্ধারিত ছয়টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাংলাদেশ দুটি অর্জন করতে পারেনি।
গত অক্টোবরে আইএমএফ দল দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফর করে। এরপর তারা ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করে বোর্ডের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আশাবাদী যে আইএমএফ বোর্ড সভায় দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে। তারা আইএমএফকে ঋণের দুটি শর্ত পূরণে বাংলাদেশের অপারগতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব ইতোমধ্যে আইএমএফ বোর্ডে তোলা হয়েছে, তাই অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ যে ঋণ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তা দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিনের খরচ চালানো যাবে।
বাংলাদেশ যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি সেগুলোর একটি হলো গত জুন শেষে ন্যূনতম ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রাখা।
জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্যের দাম পরিশোধে সরকারকে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছিল বলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার কমেছে।
ন্যূনতম কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যায়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা কর-রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজন ছিল। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তিন লাখ ২৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা কম।
আইএমএফ রিভিউ টিমের সঙ্গে গত ১৯ অক্টোবর বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আইএমএফ দল বাংলাদেশের কাঠামোগত সংস্কারের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট। ঋণের জন্য আইএমএফ যে ছয়টি শর্ত বেঁধে দিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ চারটি পূরণ করতে পেরেছে। আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির জন্য আর কোনো শর্ত যোগ করছে না। হক বলেন, এ শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বাজারের ওপর ভিত্তি করে একক বিনিময় হার, মুদ্রানীতির আধুনিকীকরণ, ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আইএমএফ পদক্ষেপ ও এগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে উন্নীতকরণ এবং বাজার ভিত্তিক কর রাজস্ব ও সুদের হার সংগ্রহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রিজার্ভ ও রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি বর্ণনা করেছি। গৃহীত পদক্ষেপ এবং চলমান প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করেছি। তারা এর মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮শতাংশের নিচে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। বাকিগুলো আরও পাঁচ দফায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শীতের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সরবরাহ বাড়ায় প্রতি বছরের মতো এবারও কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। যদিও এখনো তা ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসেনি বলেই অভিযোগ অনেকের। সেই সঙ্গে বাজারে এখন আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গরুর মাংসের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ার বিষয়টি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রিয় এই মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংসের প্রভাবে কমেছে মাছ, মুরগি এমনকি ডিমের দামও। বাজারে এমন স্বস্তির মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসার খবর জানাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
সরকারি এই সংস্থার হিসাবে নভেম্বর মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ সদ্য শেষ হওয়া মাসে কোনো পণ্য কিনতে গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে ক্রেতাদের। এর আগের মাস অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে নেওয়া হয় নীতি সুদহার বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয় ডিসেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নভেম্বরের হিসাবে দেখা যায়, শুধু খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগের মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। হিসাবে খানিকটা কমলেও এখনো সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা বেশি। এ ছাড়া নভেম্বরে খাদ্যবর্হিভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গত মাসের হিসাবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের আয় শহরের তুলনায় কম হলেও মূল্যস্ফীতি কেন বেশি তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন রয়েছে। অক্টোবর মাসেও শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বেশি লক্ষ করা যায়। নভেম্বরে শুধু শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে যা ছিল ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বাড়তি দামে অনেক পণ্য কিনতে হচ্ছে। বিবিএসের হিসাবে আরও বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে শুধু খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা শহরে ছিল ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি শহর ও গ্রাম দুই জায়গাতেই ছিল অনেকটা সহনীয়।
সদ্যসমাপ্ত নভেম্বর মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজারেরও বেশি। এ সময়ে দেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। তবে এসব বিওর মধ্যে নতুন করে কতগুলো খোলা হয়েছে এবং কতগুলো বন্ধ হওয়া হিসাব চালু করা হয়েছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার-বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়া-কমা, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংখ্যা দিয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে নাকি কমবে এমন ভবিষ্যৎ বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে পুঁজিবাজারে যেসব বিও হিসাব বেড়েছে, সেগুলো নতুন করে খোলা হয়েছে, নাকি বন্ধ হওয়া হিসাবই পুনরায় চালু করা হয়েছে। যদি বন্ধ হওয়া হিসাব চালুর সংখ্যা বাড়েও, তাতে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, এসব হিসাব দিয়ে দীর্ঘদিন লেনদেন করা হয়নি বলেই বন্ধ করা হয়েছিল। তাই ফ্লোর প্রাইসের এ বাজারে তাদের হিসাব পুনরায় চালু হলেও লেনদেন বাড়বে, এমন প্রত্যাশা করাটা বাঞ্ছনীয় হবে না।
একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে না দেয়া পর্যন্ত লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা দেখছি না। তবে বর্তমান সংকটের মধ্যেও বিওর সংখ্যা বাড়াটা একটি ভালো দিক। বাজারের স্বার্থে অবিলম্বে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া উচিত। তাহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও লেনদেন উভয়ই বাড়বে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুসারে, অক্টোবর মাসের শেষ দিনে পুঁজিবাজারে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৬টি। নভেম্বর শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৪টিতে। অর্থাৎ নভেম্বর মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বা বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৫৭৮টি।
নভেম্বর মাসে দেশে অবস্থানকারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৩৯৪টি। আলোচিত মাসটি শেষে দেশি বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৫টিতে। অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭১টিতে। তবে নভেম্বর শেষে বিদেশে অবস্থানকারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১৬টি। অক্টোবর শেষে বিদেশি বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৫০৫টি। নভেম্বর শেষে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪৮৯টিতে।
নভেম্বর শেষে পুরুষ বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৮টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯টিতে। অক্টোবর শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৮০১টিতে। আর নভেম্বর মাসে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ৯৮০টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৪৫৫টিতে। অক্টোবর শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৫টিতে।
নভেম্বর মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ২০০টি। আলোচ্য মাসটি শেষে কোম্পানি বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯৭০টিতে। অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৬ হাজার ৭৭০টিতে।
থ্যাঙ্কসগিভিং ডে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও সাইবার মনডেসহ যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির মৌসুমে পোশাকের বিক্রি বাড়ে। কারণ, এ সময় ক্রেতারা বেশি কেনাকাটা করেন। ফলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রিটেইল ফেডারেশন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) বার্ষিক জিডিপিতে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখে। সংস্থাটি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরকে ছুটির মৌসুম হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।
দেশটিতে প্রতি বছরের ২৩ নভেম্বর থ্যাঙ্কসগিভিং ডে পালিত হয়, এ ছুটির পর প্রথম শুক্রবার ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং তার পরের সোমবার সাইবার মনডে পালিত হয়। আর ক্রিসমাস বা বড়দিন পালিত হয় ২৫ ডিসেম্বর।
এই ছুটির মৌসুমে পণ্য, বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্যের বিক্রি বাড়ে। কারণ এ সময় ত্রেতাদের জন্য বিরাট ছাড় দেয়া হয়, এতে তারা আকৃষ্ট হন।
পোশাক ব্যবসায়ীরা এ সময় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকেন, বিশেষ করে মাঝারি ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কেনাকাটায় উৎসাহী করতে এই ছাড় দেয়া হয়।
এনআরএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, এবার ছুটির ব্যয় রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ৩ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৯৫৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ৯৬৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
ফেডারেশনের সাম্প্রতিক বিক্রির রেকর্ড দিয়ে জানিয়েছে, সবচেয়ে বিক্রি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে পোশাক ও আনুষঙ্গিক ৪৯ শতাংশ, খেলনা ৩১ শতাংশ, উপহার কার্ড ২৫ শতাংশ, বই ও অন্যান্য মাধ্যম ২৩ শতাংশ এবং ২৩ শতাংশ ব্যক্তিগত পণ্য।
২৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে এনআরএফ জানিয়েছে, থ্যাঙ্কসগিভিং ডে থেকে সাইবার মনডে পর্যন্ত পাঁচ দিনের ছুটির সপ্তাহ শেষে রেকর্ড ২০০ দশমিক ৪ মিলিয়ন গ্রাহক কেনাকাটা করেছেন, যা গত বছরের ১৯৬ দশমিক ৭ মিলিয়নের রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
এই পরিসংখ্যান এনআরএফের ১৮২ মিলিয়ন ক্রেতার প্রাথমিক প্রত্যাশাকে ১৮ মিলিয়নেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে।
এনআরএফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ম্যাথিউ শাই বলেন, ‘থ্যাঙ্কসগিভিং ও সাইবার মনডের মধ্যে পাঁচ দিনের সময়টি বছরের ব্যস্ততম কেনাকাটার দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ সময় ভোক্তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রতিফলন ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক ক্রেতা আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। বড় ও ছোট খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা নিরাপদ, সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করতে প্রস্তুত ছিল।’
এভাবে বিক্রি বৃদ্ধির পর আশা করা হচ্ছে, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওয়ার্ক অর্ডারে বড় ধরনের উত্থান ঘটতে পারে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম পোশাক রপ্তানি গন্তব্য এবং চীন ও ভিয়েতনামের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে চাহিদা মন্দা, পুরোনো স্টক জমে যাওয়া ও মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মারাত্মক পরিণতির কারণে উদ্ভূত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি কমেছে।
গত বছর বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সেখানে ১০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছিল, যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিও ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলারে।
রপ্তানিকারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি এখনো ধীর গতিতে চলছে, কারণ ক্রেতাদের চাহিদা এখনো কম এবং আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চালান বাড়তে পারে।
তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সাধারণ নির্বাচনের আগে ক্রেতারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, আগামী বছরের শুরু থেকে দেশ থেকে রপ্তানিও বাড়বে।
দেশে অস্থির সোনার বাজার। দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। গত নভেম্বর মাসেই চার দফা দাম বেড়েছে মূল্যবান এই ধাতুটির। সোনার দাম হু হু করে বাড়ার পেছনে প্রধানত ৪টি কারণ চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদ, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও অকার্যকর আমদানি নীতির কারণে মূলত মূল্যবান ধাতুটির বাজারে অস্থিরতা চলছে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৫০ টাকা বেড়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা। দেশের বাজারে এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে সোনার মূল্যের বৃদ্ধি হয়েছে ৫৭ শতাংশেরও বেশি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দাম ছিল ৭০ হাজার টাকার কম। চলতি বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে দেশে প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা। জুলাইতে এসে এই দাম এক লাখ অতিক্রম করে এবং গতকাল রোববার হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। চলতি বছরের ১১ মাসে সোনার দাম ভরিতে ১৬ হাজার ৪৪৬ টাকা বা ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশেও বাড়ছে। এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সোনার দাম বাড়ার পেছনে আরও কয়েকটি কারণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ সুদহারের শিল্প কর্মকাণ্ড ব্যাপক কমেছে এবং কর্মসংস্থানেও ধীরগতি হয়েছে। এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ায় বিশ্ববাজারে সোনায় বিনিয়োগ বাড়ছে, এতে দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও দেশে দাম বেড়েছে।
সোনার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত করোনা মহামারির পর বিশ্বব্যাপী সোনার দামে অস্থিরতা দেখা দেয়। তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। করোনার পর সোনার দাম কিছুটা কমলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়ে। গত বছরের শেষ দিকে সোনার দাম কিছুটা কমে। চলতি বছর আবার দামি এই ধাতুর দাম বাড়তে থাকে। গত মে মাসে আবার আউন্সপ্রতি সোনার দাম ২ হাজার ৫০ ডলারে পৌঁছায়। তারপর দাম নিম্নমুখী থাকলেও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর আবার বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনা ২ হাজার ৭২ ডলারে বিক্রি হয়েছে। গত দুই মাসে মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়েছে ২৪৪ ডলার বা ১৩.৩৪ শতাংশ। গত ২ অক্টোবর প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৮২৮ ডলার।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যখন অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বেড়ে যায়, তখন স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়। আবার মুদ্রাস্ফীতি হলেও সোনার দাম বাড়ে। বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি চলছে। তাই সোনার দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। সোনা হচ্ছে একটি নিরাপদ ধাতু, এটা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। এ কারণে বিশ্বের বড় বড় ব্যাংকগুলো সোনা কেনা শুরু করেছে। আর্থিক নিরাপত্তার কারণে তারা সোনার মজুত বাড়াচ্ছে। এ জন্য সোনার একটা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে হু হু করে দাম বেড়ে গেছে। আর জ্বালানি তেলের কেনাবেচার সঙ্গেও সোনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সোনার দামও বেড়ে যায়। কারণ তখন অনেক দেশই সোনার বিনিময়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে। আর যেহেতু এখন ডলারের কারণে বিশ্বের মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে, ফলে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে সোনার চাহিদাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশে সোনা তৈরি হয় না। সোনা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর সঙ্গে ডলারের সম্পর্ক রয়েছে। তাই সোনার দাম বাড়ার একটি কারণ হলো ডলারের দাম বৃদ্ধি।’
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে সোনার দামের ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটেছে কিন্তু এই উল্লম্ফনের কোনো যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে দাম বাড়বে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এতটা বাড়বে কেন? এভাবে আকাশচুম্বী হচ্ছে দাম সোনার কার্যকর বাজারব্যবস্থা ও রেগুলেশন্স না থাকায়।
বাজুসের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া সোনার উৎপাদনকারী বড় দেশ এবং যুদ্ধের জের ধরে কয়েক বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার স্বর্ণ বাজারে আসছে না। হঠাৎ করে কাল যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে হয়তো দাম কমতে পারে। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হার, ক্রুড অয়েলের দামসহ আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় নিলে বলতে হয় দাম কমার আপাতত কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ডলার সংকটের সময়ে পরপর দুই মাসে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। যদিও তার পরের মাস অক্টোবরেই ইতিবাচক ধারায় ফিরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। সে মাসে প্রবাসীরা দেশে মোট রেমিট্যান্স পাঠায় প্রায় ১৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি। যদিও তখন নভেম্বর ঘিরে প্রত্যাশা ছিল রেমিট্যান্স ছাড়িয়ে যাবে ২ বিলিয়ন, অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলারের ঘর। শেষ পর্যন্ত তা না হলেও কাছাকাছি এসেছে বিদেশ থেকে পাঠানো প্রবাসী আয়।
উল্লেখ্য, দেশে রেমিট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে চলমান ডলার সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৯৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান ব্যাংক রেট হিসেবে যা প্রায় ২১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসেবে)। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সের পরিমাণকে সন্তোষজনক বলছেন ব্যাংকাররা। যদিও তা অক্টোবরের চেয়ে প্রায় ৫ কোটি ডলার কম, তবে বছর হিসেবে প্রবৃদ্ধির পরিমাণটা নিছক কম নয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯.৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে দফায় দফায় বাড়ছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের দাম। গত কয়েক মাসে ব্যাংকগুলোতে বেড়েই চলেছে ডলারের চাহিদা। রিজার্ভ থেকে কয়েক দফায় ডলার বিক্রি করেও যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। যদিও ডলার সংকট কাটাতে বসে নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে দেশের ব্যাংক খাতের অভিভাবকদের। গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি মেটাতে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ডলার সংকট কিছুটা কমে আসবে বলে এরই মধ্যে আশাবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ডলার সংকট কমানোর পাশাপাশি রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতেও বৈদিশিক রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। যদিও দেশের অভ্যন্তরে ডলারের বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে গত কয়েক মাসে রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ নেমে এসেছে ২৫ বিলিয়নে। অন্যদিকে বিপিএম-৬ মেথড হিসেবে রিজার্ভ নেমে এসেছে ১৯ বিলিয়নের ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে ডলার সংকট কমানো ও রিজার্ভ শক্তিশালী করতে নীতিনির্ধারকরা তাকিয়ে রয়েছেন বাড়তি রেমিট্যান্স আর রপ্তানি আয়ের দিকে। পরপর দুই মাসে প্রায় ৪ বিলিয়নের কাছাকাছি রেমিট্যান্স আসাতে স্বস্তি পাচ্ছেন তারাও।
এদিকে নভেম্বরে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে। হিসাবে দেখা যায়, মোট ১৯৩ কোটি ডলারের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এ ছাড়া ৫৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে। একক ব্যাংক হিসাবে এ মাসেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে এককভাবে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৭ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১৪ কোটি ডলার। এদিকে ক্রমেই কমে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ ছাড়া সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
জনশক্তি রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ চার হাজার কর্মী বিদেশে গেছে। গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার। জনশক্তি রপ্তানির এ সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
এ বছর শ্রম অভিবাসনের একটি ইতিবাচক দিক হলো মধ্যপ্রাচ্যের প্রচলিত বাজারগুলোর পরিবর্তে ইতালি এবং যুক্তরাজ্যের মতো অপ্রচলিত গন্তব্যে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী পাঠানো।
যদিও এ ক্ষেত্রে উদ্বেগ রয়েই গেছে। কারণ অসংখ্য কর্মী প্রধানত ওমান, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়ায় ভুয়া চাকরির প্রলোভনে পড়ে সঠিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
উদ্বেগের আরেকটি বিষয় হলো বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সত্ত্বেও সেই হারে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহ বাড়েনি। গত দুই অর্থবছর ধরে রেমিট্যান্স মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচেই স্থবির হয়ে আছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো চার বছর বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় খুলে দেয়া। দেশটি উৎপাদন, নির্মাণ, পরিষেবা, কৃষি, খনি ও গৃহস্থালীসহ বিভিন্ন খাতে এ বছর তিন লাখ ২৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে সৌদি আরবের পরেই এখন মালয়েশিয়ার অবস্থান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব।
এ ছাড়াও সৌদি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিক বা কর্মীদের জন্য কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করাও গত দুই বছর ধরে বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এ বছর বিশেষ করে কৃষি, আতিথেয়তা এবং উৎপাদন খাতে ১৬ হাজার ২৯৭ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। একক বছরের হিসাবে এটিই সর্বোচ্চ।
যুক্তরাজ্য সেবা, গৃহকর্মী ও আতিথেয়তা খাতে রেকর্ড ৯ হাজার ৪২৭ জন নিয়োগ দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরও এ বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানি খাতের এই সাফল্যের পেছনে ভুয়া চাকরির প্রলোভনের অভিযোগও নেহাত কম নয়।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনা পরবর্তীকালে বিদেশে গিয়েছিলেন, কিন্তু চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন শর্তাবলি পূরণ না করায় এক থেকে ১৬ মাসের মধ্যে ৩৫ শতাংশেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।
শ্রম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিক্রুটিং এজেন্সি ও বিদেশি নিয়োগদাতারা অনেক কর্মীকে মধ্যপ্রাচ্যে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে থাকে। যে কারণে এখন অন্য দেশগুলোতে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে।
খাত-সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ওমানের সম্প্রতি নতুন ভিসা স্থগিতাদেশে উদ্বেগ বেড়েছে। কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছে, মধ্যস্থতাকারীর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে এবং কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, আমরা একটি মাইলফলক অর্জন করেছি, কারণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ন্যায্য চাহিদার ভিত্তিতে কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকের সংখ্যাও বেড়েছে। মোট শ্রমিকের তুলনায় যারা কাজ পায় না তাদের সংখ্যা খুবই কম।
তিনি বলেন, যদি কেউ গন্তব্যের দেশে যাওয়ার পর কাজ না পায়, তবে এটি কিন্তু সংশ্লিষ্ট এজেন্সির দায় নয়। বরং এই চাহিদাপত্রগুলো বাংলাদেশ দূতাবাসসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই হয়। এর পরই এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠানোর অনুমতি পায়।
দেশের অর্থনীতি যেখানে নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আর্থিকভাবে বেশ ভালো পারফরম্যান্স করেছে বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টগুলো। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছর ও চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হোটেল ও রিসোর্ট কোম্পানিগুলোর ব্যবসার পরিধি বড় হয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানির আয় বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ পযর্ন্ত বেড়েছে। যদিও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে কয়েকটি কোম্পানির লোকসান গুনতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও বড় কোম্পানিগুলো বেশ ভালো মুনাফা লুফে নিয়েছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড ১৯-এর প্রকোপ বিলুপ্ত হওয়ায় গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটন খাতে মানুষের ভালো আগ্রহ দেখা গেছে। ফলে হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে যে মন্দাভাব ছিল, তা কেটে গেছে। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকরাও এখন বাংলাদেশে আসছেন। ব্যবসার কাজেও বাংলাদেশে বিদেশিদের আসা ও যাওয়া গত কয়েক বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে। আর বিদেশিরা থাকার জন্য পাঁচ তারকা মানের অভিজাত হোটলগুলো বেছে নিচ্ছে। ফলে রাজধানীসহ দেশের প্রধান বাণিজ্যিক শহরগুলোর তারকা হোটেল ও রিসোর্টগুলোর ব্যবসার পরিধি বাড়ছে।
দেশের পুঁজিবাজারে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের চারটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, দ্য পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেড ও বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড। এর মধ্যে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের মালিকানায় রয়েছে পাঁচ তারকা মানের রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেল, বনানীর শেরাটন হোটেল ও চার তারকা মানের উত্তরার হানসা সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টস। এর বাইরে কোম্পানিটি ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার ও সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন থেকে আয় করে থাকে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিসেসের মালিকানায় রয়েছে রাজধানীর রমনায় অবস্থিত পাঁচ তারকা মানের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল। এর বাইরে কোম্পানিটি বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার (বিআইসিসি) পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ থেকে আয় করে থাকে।
রাজধানীর স্বনামধন্য দুই পাঁচ তারকা ও একটি চার তারকা হোটেলের মালিকানায় থাকা ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস ২০২২-২৩ পূর্ণ হিসাব বছরে মোট পরিচালন আয় করেছে ২৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ১৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরের মোট আয়ের মধ্যে ওয়েস্টিন ঢাকা থেকে ২০২ কোটি ৯৯ লাখ, শেরাটন ঢাকা থেকে ৭১ কোটি ৫৫ লাখ এবং হানসা সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টস থেকে ১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আয় করেছে কোম্পানিটি। আগের হিসাব বছরে যেখানে ওয়েস্টিন ঢাকা থেকে ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ, শেরাটন ঢাকা থেকে ৪৩ কোটি ৬১ লাখ এবং হানসা সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টস থেকে ১১ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় করেছিল কোম্পানিটি।
২০২২-২৩ হিসাব বছরে ওয়েস্টিন ঢাকার মোট আয়ের মধ্যে ৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা রুম ভাড়া থেকে, ৯২ কোটি ৩ লাখ টাকা খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে এবং স্পেস ভাড়া, শপ ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা এসেছে। আগের হিসাব বছরে যেখানে হোটেলটির রুম ভাড়া থেকে ৫৫ কোটি ১৪ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ৬৯ কোটি ৬৯ লাখ ও স্পেস ভাড়া, শপ ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আয় হয়েছিল।
শেরাটন ঢাকা থেকে ২০২২-২৩ হিসাব বছরে অর্জিত মোট আয়ের মধ্যে খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং স্পেস ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা এসেছে। আগের হিসাব বছরে হোটেলটির খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ২১ কোটি ৩২ লাখ এবং স্পেস ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা আয় হয়েছিল ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের। কোম্পানিটির আলোচ্য হিসাব বছরে হানসা সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্টস থেকে অর্জিত মোট আয়ের মধ্যে রুম ভাড়া বাবদ ১২ কোটি ১৭ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি বাবদ ৫ কোটি ৫১ লাখ এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা এসেছে। আগের হিসাব বছরে হোটলটির রুম ভাড়া থেকে ৬ কোটি ৭১ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ৪ কোটি ৫ লাখ এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা আয় হয়েছিল।
২০২২-২৩ হিসাব বছরে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৮৯ কোটি টাকা। আগের হিসাব বছরে এ মুনাফা হয়েছিল ৯৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির মুনাফায় বড় উত্থান হয়েছে মূলত ইউনিক মেঘনাঘাটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া আয়ের বদৌলতে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির শেয়ার বিক্রি থেকে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটি আয় করেছে প্রায় ১১৩ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ১৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা কমেছে ২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের কোম্পানি সচিব মো. শরীফ হাসান বলেন, চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে আমাদের ব্যবসা বেড়েছে। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিচালন ব্যয়ও অনেকটা বেড়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ায় কোম্পানির খরচ বেড়েছে। এসব কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির মুনাফা কিছুটা কমেছে।
২০২২-২৩ হিসাব বছরে পাঁচ তারকা মানের সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের মোট আয় হয়েছে ১৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ৯২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির আয় বেড়েছে ১১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে যেখানে মুনাফা হয়েছিল মাত্র ১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে ৩৩৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
মুনাফা বাড়ার কারণ হিসেবে সি পার্ল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর থেকেই আমাদের ব্যবসা বাড়ছে। গত বছর আমাদের হোটেল গেস্ট রুমের সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যবহার হয়েছে। যাতে কোম্পানির আয় বেড়েছে। এর পাশাপাশি ওয়াটার পার্ক ও প্রমোদ তরীর ব্যবসা থেকেও আমাদের ভালো আয় এসেছে। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনারবিহীন রেস্টুরেন্ট ও সহযোগী কোম্পানির শেয়ার লভ্যাংশ থেকেও আলোচ্য সময়ে আমাদের আয় বেড়েছে। আর ভালো আয় হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে আমাদের মুনাফায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে কোম্পানিটি চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও ভালো আয় ও মুনাফা লুফে নিয়েছে। এ সময়ে কোম্পানির রিসোর্ট ও হোটেল ব্যবসা থেকে মোট আয় হয়েছে ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই প্রান্তিকে যেখানে আয় হয়েছিল ৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির আয় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ের মোট আয়ের মধ্যে রুম ভাড়া থেকে ৯ কোটি ৪০ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ২৫ কোটি ৩৯ লাখ এবং স্পেস ভাড়া, প্রমোদ তরী, ওয়াটার পার্ক ও অন্যান্য খাত থেকে এসেছে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে রুম ভাড়া থেকে ৬ কোটি ৬৯ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ১৪ কোটি ১৫ লাখ এবং স্পেস ভাড়া, প্রমোদ তরী, ওয়াটার পার্ক ও অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছিল ২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কোম্পানিটি নিট মুনাফা আলোচ্য সময়ে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ব্যবসা পরিচালনা করা পাঁচ তারকা মানের হোটেল পেনিনসুলা চিটাগং ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় অর্জন করেছে। আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় হয়েছিল ৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির আয় বেড়েছে ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আলোচ্য বছরে কোম্পানির মোট আয়ের মধ্যে রুম ভাড়া থেকে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ২০ কোটি ৪০ লাখ এবং স্পেস ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এসেছে। আগের হিসাব বছরে যেখানে রুম ভাড়া থেকে ১৩ কোটি ৯ লাখ, খাদ্য ও পানীয় থেকে ১৭ কোটি ৬৯ লাখ এবং স্পেস ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ৩৯ লাখ টাকা আয় এসেছিল। আয় বাড়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের ব্যয়ের চাপে সর্বশেষ হিসাব বছরটিতে কোম্পানিকে কর-পরবর্তী নিট লোকসান গুনতে হয়েছে ৪ কোটি ১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছবে যেখানে কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
লোকসান হওয়ার কারণ হিসেবে পেনিনসুলা চিটাগং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সময়ে তাদের কোম্পানির আর্থিক ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন-সংক্রান্ত কারণে হোটেলের পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি এবং কর্মীদের বেতন বাড়ানো অন্যতম। তবে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক আমানতে সুদ আয়ের হার কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক আয় কমেছে। এর বাইরে বছরটিতে অপরিচালন খাতে লোকসান গুনতে হয়েছে। যার ফলে পারিচালন খাত থেকে ভালো আয় হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানির লোকসান হয়েছে।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির মোট আয় হয়েছে ১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। আগের সময়ে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আয় বাড়ার পাশাপাশি আলোচ্য প্রান্তিকের কোম্পানির লোকসান কমেছে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ সময়ে নিট লোকসান হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে এ লোকসান হয়েছিল ৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা এবং বিআইসিসির মালিকানায় থাকা এ খাতের একমাত্র রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিসেস-এরও ২০২২-২৩ হিসাব বছরে হোটেল ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির হোটেল ব্যবসা থেকে মোট আয় হয়েছে ১৬৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে এ আয় হয়েছিল ১১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানির আয় বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আলোচ্য বছরে হোটেল ব্যবসা থেকে অর্জিত মোট আয়ের মধ্যে রুম ভাড়া থেকে ৯৭ কোটি ৮৩ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ৯২ কোটি ৩ লাখ এবং স্পেস ভাড়া, শপ ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা আয় করেছে কোম্পানিটি। আগের হিসাব বছরে যেখানে রুম ভাড়া থেকে ৫৫ কোটি ১৪ লাখ, খাদ্য ও পানীয় বিক্রি থেকে ৬৯ কোটি ৬৯ লাখ এবং স্পেস ভাড়া, শপ ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আয় হয়েছিল।
দীর্ঘ বছর ধরে লোকসানে থাকা বাংলাদেশ সার্ভিসেসের আলোচ্য হিসাব বছরের ভালো আয়ের ওপর ভর করে কোম্পানির লোকসান অনেকটা কমে এসেছে। এ বছরে নিট লোকসান হয়েছে ৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে যেখানে লোকসান হয়েছিল ১১০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির লোকসান কমেছে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকেও কোম্পানির আয়ে ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পাশাপাশি নিট লোকসান প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে এসেছে। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির মোট আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই প্রান্তিকে যা হয়েছিল ৩২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছে ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ লোকসান হয়েছিল ৩০ কোটি ২ লাখ টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর, স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক মিলে মোট রাজস্ব আয় করেছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। যা বিগত করবর্ষের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। গত করবর্ষের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্র জানায়, খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব হলো-চার মাসে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৬৮ কোটি, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে ৪০ হাজার ৪৮ কোটি ৬২ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৩১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় কিছুটা পিছিয়ে আছে। চার মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্যমতে, গত ২০২২-২৩ করবর্ষের প্রথম চার মাসে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। চলতি করবর্ষের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬৬১ কোটি। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ১২ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে আয়কর আহরণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত করবর্ষের চার মাসের ২৬ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার আয়কর রাজস্ব আয় এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। শুল্ক ও আয়করের মত ভ্যাট রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও ভাল প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত করবর্ষের চার মাসে ভ্যাট রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি করবর্ষে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর মহাসমাবেশ বানচাল হওয়ার এক দিন পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল দেয়া শুরু করেছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে ২০ দিনের হরতাল ও অবরোধের (২৯ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর) আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (প্রতিদিন ৬৫০০ কোটি টাকা)। হরতাল-অবরোধের কারণে দিনে ৬৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছি।’
হরতাল-অবরোধের প্রচার-প্রচারণা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে পুরোপুরি ব্যাহত করতে ব্যর্থ হলেও, এই অস্থিরতা পরিবহন খাতকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে এবং পণ্য পরিবহনকে ব্যাহত করেছে; যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধীরা রাস্তায় অবস্থানের আশ্রয় নিয়েছে।
পরিবহন মালিকরা জানান, এ খাতের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৬১ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০ দিনের হরতাল-অবরোধে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।
ক্ষতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধের ফলে আর্থিক ক্ষতি বহুমাত্রিক এবং আপনি এটি শুধু আর্থিক পরিসংখ্যানে হিসাব করতে পারবেন না।’
‘রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী দল ও বৈশ্বিক ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারপর তারা তাদের ক্রয়াদেশ এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো আরও সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল এলাকায় সরিয়ে নেয়।’
থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘যখন একটি বড় বৈশ্বিক ক্রেতা একটি দেশ থেকে অর্ডার স্থানান্তর করে, তখন ছোট ক্রেতারাও তাদের অনুসরণ করে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, একটি ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি সেক্টরে স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন। কারণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে আর্থিক লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই আর্থিক লাভের জন্য বিনিয়োগের জায়গা সন্ধান করে। তারা নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে।
বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পরিবহন খাতে। দূরপাল্লার আন্তজেলা বাসগুলো স্টেশনে অলস বসে আছে। অগ্নিসংযোগের ভয়ে সিটি বাসগুলোকে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এতে অনেক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী বেতনহীন হয়ে পড়েছেন।
মহাখালী আন্তনগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গাড়ি ছেড়ে যায়। হরতাল-অবরোধের কারণে তা এখন দিনে ১০০-তে নেমে এসেছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, সপ্তাহে মাত্র দুই দিন বাস চালানোর ফলে শ্রমিকদের মজুরি ও জ্বালানি খরচ মেটানো আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যবসার মালিকরা বাস পরিচালনার খরচ ও ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করে। মালিক ও শ্রমিকরা মিলে প্রতিদিন ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা আয় করেন, গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই আয় ৩২ দশমিক ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানীতে বাস চলাচলের জন্য দৈনিক ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
মাহবুবুর বলেন, সাধারণ পরিস্থিতিতে সারা দেশে প্রায় ২ লাখ দূরপাল্লার বাস ট্রিপে প্রত্যেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করে, যার ফলে দেশব্যাপী দৈনিক ২০০ কোটি টাকা আয় হতো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত সারা দেশে ২২৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা শুধু অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করে। ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার বলেন, একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘটনাস্থল থেকে বা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থেকে তথ্য পায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে অগ্নিসংযোগের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তবে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমকে সেগুলো জানানো হয়নি।
যেসব ঘটনার তথ্য জানানো হয় না, সে ক্ষেত্রে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলে। অর্থাৎ, পরিবহন কর্মচারীরা নিজেরাই বা যাত্রী ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপসহকারী পরিচালক বলেন, এ ক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
শাহজাহান সিকদার বলেন, গত এক মাসে ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ২১৭টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে সম্প্রতি গ্রুপ ও স্বাস্থ্য বিমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকার সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের গ্রুপ বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা সুবিধার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম মনিরুল আলম তপন এবং সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির, গ্রুপ বিমা বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম রানা এবং এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. কামরুল হাসান ও সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইনচার্জ (অবলিখন/পুনর্বিমা/দাবি) জহিরুল হক, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (হিসাব) এনামুল গণি চৌধুরী এবং কোম্পানির উপসচিব ফারুক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি