ব্যাংকিং খাতে প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। বিশাল অঙ্কের এই ঋণ আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমছে না; উল্টো বেড়েই চলেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত মঙ্গলবার শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছেন, যা নিয়ে দেশে এখন বেশ আলোচনা হচ্ছে। এই খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার প্রতিবেদক বীর সাহাবী।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে? অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কেমন দেখছেন?
গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে তা এখনো বিদ্যমান এবং বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা যদি আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাব যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সরাসরি আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শিল্পসংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানি খরচ অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। পাশাপাশি, আমরা যেসব দেশে রপ্তানি করে থাকি সেসব দেশে যুদ্ধপরিস্থিতির প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়েছে।
আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি অনেকাংশে বেড়ে গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ গ্যাস ও ডিজেলের আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করছে, কিন্তু বেসরকারি খাত ও সরকার যৌথভাবে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যে হারে বেড়েছে, এতে ব্যবসায়ীরা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো সংকটে পড়বে কী?
আন্তর্জাতিক বাজারে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ার কারণে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিত তৈরি হয়েছে। সে কারণে নিরুপায় হয়ে সরকারকে ৬ মাস আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক সময়ে ২২ শতাংশ বিদ্যুতের এবং শিল্পপর্যায়ে ১৯ শতাংশ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করতে হয়েছে। যাতে করে বেশি মূল্য দিয়ে আমদানি করে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত করছিল। এতে শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। একই হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কটেজ, ক্ষুদ্র, মাঝারিদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে যেতে পারে। সে কারণে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি মূল্যের অস্থিরতার কারণে সরকারকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তবে স্থানীয় শিল্প এবং বেসরকারি খাতের ওপর যাতে বেশিমাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য যৌক্তিকভাবে সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারকে পরবর্তী সময়ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
যেহেতু এটা দৃশ্যমান যে, বাংলাদেশ সরকার প্রতি মাসেই জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করার পরিকল্পনা করছে এবং সে- সংক্রান্ত একটি কৌশল নির্ধারণের কাজ চলছে, তাই সরকার যেন বিদ্যুতের মূল্য সহনশীলভাবে এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে, যাতে করে, বেসরকারি খাত অপ্রত্যাশিত বর্ধিত ব্যয়ের বোঝা এড়াতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির হয়তো কোনো বিকল্প নেই, তবুও সরকারের একটি অনুমানযোগ্য মূল্য নির্ধারণ নীতিমালা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে করে এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট প্রভাব সম্পর্কে বেসরকারি খাত আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণসহ তাদের ব্যবসা পরিচালনায় কৌশলী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। যদিও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে চলমান পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে সরকার যেন ফের এই বর্ধিত মূল্য হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিষয়টি কোনোভাবেই একমুখী হওয়া উচিত হবে না। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, বর্তমানে অস্থির বিশ্বপরিস্থিতির কারণে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। আমরাও বুঝতে পারছি এ ছাড়া সরকারের অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তবে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমে আসবে, টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্বাভাবিক হবে, গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে আসবে, তখন যেন সরকার বর্ধিত মূল্য হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভর্তুকির অজুহাত দেখিয়ে শুধু দাম বাড়ানো হবে, পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে কমানো হবে না- এমনটা যেন না হয়।
বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব ছোট-বড় সব দেশেই পড়েছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। এই সংকটে থেকে উত্তরণের পথ কী?
আমার মনে হয়, বিশ্বের ধনী-গরিব সব রাষ্ট্রই চলমান সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক এ সমস্যায় কিছু দেশ সংকটে পড়েনি বিষয়টি তেমন নয়। সংকটের কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানির মতো দেশে মূল্যস্ফীতি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১২%, যুক্তরাজ্য ১০.১%, কানাডা ৮.১%, জার্মানি ৭.৯%। যে জাপানের মূল্যস্ফীতি সব সময় নেগেটিভ থাকত তাদের মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ৪.১%।
উন্নত বিশ্বের এ ধরনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের স্থানীয় অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করেছে। এতে তাদের কাজের সুযোগ কমেছে এবং দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। কেননা, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে সব থেকে বেশি রপ্তানি করে থাকে। তাদের ক্রমক্ষমতা কমে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে আমাদের রপ্তানিতে সরাসরি আঘাত। অথচ বাংলাদেশের সামগ্রিক জিডিপির ১৫ শতাংশ রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। একইভাবে আমাদের আমদানি খরচও বেড়েছে অত্যধিক হারে। কেননা, আমরা যেসব দেশ থেকে আমরা আমদানি করি তাদেরও উৎপাদন খরচ এবং সাপ্লাই চেইন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কাছে বেশি দামে বিভিন্ন নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল, মেশিনারি বিক্রি করছে। এর ফলে আমাদের রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমদানি খরচ বেড়ে গেছে এবং আমাদের অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে সে কারণে সংকটে পড়েছে রিজার্ভ। সর্বোপরি বাংলাদেশ যেহেতু বর্তমান বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, সেহেতু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সংকট বাংলাদেশ এড়াতে পারে না।
এই পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে এখন করণীয় কী? সরকার ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতি যেহেতু একটি ভূরাজনৈতিক ও শক্তিধর দেশের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রতিফলন এবং বাংলাদেশ তার ভুক্তভোগী, সেহেতু বাংলাদেশ এককভাবে সংকট দূর করতে পারবে না। বাংলাদেশ তেমন কোনো শক্তিধর নয় বা ধনী দেশগুলোর প্রতিনিধিও নয়। সে কারণে বাংলাদেশ সরাসরি সংকট বন্ধের জন্য জোরালো পদক্ষেপেরও অংশ হতে পারছে না। এ সংকট কাটাতো জি-৭ ভুক্ত ও অন্যান্য ধনী দেশগুলোর কার্যকর আলোচনা মূলত প্রধান উপায়। বিশ্বের সংকটজনক পরিস্থিতি উত্তরণে উন্নত বিশ্ব যত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে, বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বার্থের জন্য সেটা ততটাই মঙ্গলজনক হবে। তবে বাংলাদেশ যে নীরব হয়ে আছে তেমন কিন্তু নয়, বাংলাদেশ জাতিসংঘের মাধ্যমে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট কেটে গিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সে লক্ষ্যে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে আবারও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিত স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের বাণিজ্য প্রায় ১ শতাংশ কমে যাবে। যার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশ, চীনসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর পড়বে। সুতরাং শুধু যে বাংলাদেশ সংকটে রয়েছে অন্যরা তেমন সংকটে নেই এ কথাটি এমন নয়। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে সংকটময় এ পরিস্থিতি কেটে গিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আবারও একটি স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসবে।
বর্তমান সংকট উতরাতে সরকার আর কী কী করতে পারে?
চলমান বৈশ্বিক এ সংকটকে মোকাবিলা করার জন্য সরকারের তেমন কিছু করার নেই। কারণ, আমরা বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছি না। কিন্তু আমরা যেহেতু এ সংকটের কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, সে কারণে সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে জাতিসংঘ, ডব্লিউটিও ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ, সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক করা ও সংকট সমাধানের জন্য জোরালো আওয়াজ তুলতে পারি। অন্যদিকে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ব্যয় কমিয়ে ও সামগ্রিক আমদানি ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে পণ্য আমদানি না করে কৃচ্ছ্রসাধন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখতে পারি।
সরকার ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার প্রচেষ্টা চলমান রেখেছে এবং আর্থিক খাত স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে, ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ (নন পার্ফরমিং লোন বা এনপিএল) কমানোর মাধ্যমে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বেশি পরিমাণে তারল্য বাড়াতে সহায়তা করলে বেসরকারি খাত আরও উপকৃত হতে পারবে। আমার মনে হয়, এই সংকটকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের মতো একটি ছোট দেশে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাইট অফ বা অবলোপন এবং আদালতে মামলার কারণে আটকে থাকা খেলাপি ঋণ যোগ করলে প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। আর দেরি না করে, বিশাল অঙ্কের এই টাকাটা আদায়ের জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশেল এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। বর্তমানে বেসরকারি খাতের অবস্থা কেমন দেখছেন?
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমবে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বাস্তবতায় ব্যবসায়িক মুনাফা কমে যাবে এবং বিনিয়োগের গতি কমবে। অনেকে সংশয়ের মধ্যে থেকে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। মূল বিষয় হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়বে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়বে না বরং অনেক ক্ষেত্রে কমবে। এদিকে, জ্বালানি ও আর্থিক খাতে ভূরাজনৈতিক সংকটের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে এবং তা এক বছর আগে কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। এ কারণে নতুন বিনিয়োগ খুব কম মাত্রায় হবে। একই সঙ্গে সম্প্রতি ঘোষিত এমপিএস এ দেখা গেছে এ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণের টার্গেট ছিল ১৪.১ শতাংশ কিন্তু তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি, মাত্র ১২.৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। নতুন যে টার্গেট নেয়া হয়েছে তার বাস্তবায়নও যথেষ্ট অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি সরকারের ব্যয় লাগামহীন ভাবে বাড়তে থাকে। তবে সিএমএসএমইদের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ।
যদি বিশ্ব পরিস্থিতি এমনই থাকে তাহলে সরকার বাধ্য হয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করলে বেসরকারি খাতের ওপর তার প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া ও সাপ্লাই চেইন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতও বাধ্য হয়ে পণ্যের মূল্য বাড়াতে গিয়ে তাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারাতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবে।
এ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে কিসে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন?
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, তবে আমরা মনে করি বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অনেক বেশি কেয়ারফুল। বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছে তার ফলে অনেক সংকট আসার পরেও বাংলাদেশ এখনো বেশ ভালোভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সামনের দিনেও এভাবে চলতে পারলে আমরা হয়তো অত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব না যেমনটা ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ধরনের সহিংসতা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা হলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কারণে আমি সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ করছি। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের সবাইকে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় করতে সময় নিলেও শ্রীলঙ্কার ঋণের কিস্তি ছাড় করতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সংস্থাটির প্রাথমিক বা কর্মী পর্যায়ের চুক্তি হয়েছে।
ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ মূল্যায়ন শেষে আইএমএফ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করায় এই চুক্তি হয়েছে। এখন আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন হলে পঞ্চম কিস্তির ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে শ্রীলঙ্কা।
এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার কিস্তি পাওয়া নিয়ে দেশটির আইএমএফ মিশনপ্রধান ইভান পাপাজর্জিও একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার তা আইএমএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শেষ বা তৃতীয় কিস্তির অর্থ পেয়েছে ২০২৪ সালের জুন মাসে। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু তখন তা পাওয়া যায়নি। জুন মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একত্রে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে আইএমএফ বলেছে, কর্মসূচির অধীনে যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে শ্রীলঙ্কা সামগ্রিকভাবে ভালো করেছে। দেশটি জিডিপি সংকোচনের ধারা থেকে বেরিয়ে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। রাজস্ব আহরণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও কাঠামোগত সংস্কারের যে রূপরেখা করা হয়েছিল, সেগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। ঋণ পুনর্গঠন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কর্মসূচির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, শ্রীলঙ্কা সরকার তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
২০২২ সালে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সেই সংকটের জেরে দেশটিতে সরকারের পতন হয়। এরপর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। তার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে দেশটি। সেই চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত চার কিস্তিতে অর্থ পেয়েছে দেশটি। এখন তারা পঞ্চম কিস্তির অপেক্ষায়, যার প্রাথমিক অনুমোদন তারা পেয়ে গেল।
এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে আসে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। কিন্তু ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক চুক্তি করেনি আইএমএফ।
এরপর ৯ এপ্রিল ট্রাম্প তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেন। তারপর এই প্রাথমিক চুক্তি হলো। যদিও আইএমএফ বলছে, বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে।
ট্রাম্পের শুল্কের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হলে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ ও আইএমএফ পরিস্থিতি বুঝে কাজ করবে। অর্থাৎ শুল্কের কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিরূপণ করে নীতি প্রণয়ন করবে শ্রীলঙ্কা।
প্রাথমিক চুক্তিতে আইএমএফ আরও বলেছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, করছাড় হ্রাস ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সহায়তায় আরও শক্তিশালী কর্মসূচি নিতে হবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। তারা মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে শ্রীলঙ্কার পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেশটির প্রায় তিন লাখ মানুষ এই খাতে কাজ করে।
এদিকে গত শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। গত বছরের অক্টোবর মাসেও তারা একই পূর্বাভাস দিয়েছিল। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ শতাংশ।
ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে যোগ দেওয়া শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিদল ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিবৃতিতে বলেছেন, শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চলবে।
শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও আইএমএফের ঋণচুক্তি চলমান আছে। আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি।
সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। ঢাকা ছাড়ার আগে আইএমএফের মিশন ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে। সে বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে। সামগ্রিকভাবে এই ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে আছে বাংলাদেশ।
দুই প্রকল্পে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। চাকরি সৃষ্টি, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করার লক্ষ্যে এ ঋণ দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে একটি আর্থিক চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারও উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশকে দেওয়া আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে দুটি প্রধান প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘স্ট্রেন্থেনিং সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর ইম্প্রুভড রেজিলিয়েন্স, ইনক্লুশন, অ্যান্ড টার্গেটিং (এসএসপিআইআরআইটি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ সরাসরি নগদ অর্থ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবে। এই প্রকল্পে যুব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, ক্ষুদ্রঋণ এবং পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।
অপর প্রকল্পটি হলো- বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে ৬৫ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বে-টার্মিনাল গভীর সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে বন্দরের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা বাড়বে এবং পরিবহন খরচ ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই বন্দরের উন্নয়ন বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার করবে এবং প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। মাদার ভ্যাসেলের মতো বড় জাহাজ আসতে সুবিধা তৈরি হওয়ায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। এ ছাড়াও প্রকল্পটি নারী উদ্যোক্তা এবং বন্দর পরিচালনায় নারী কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল মার্টিন বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে থাকতে হলে বাংলাদেশকে তার জনসংখ্যার জন্য, বিশেষ করে প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশকারী প্রায় ২০ লাখ যুবকের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এই আর্থিক প্যাকেজটি বাণিজ্য ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সবচেয়ে দুর্বলদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উত্তরণে ও চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একটি গেম-চেঞ্জার হবে।
ইআরডি শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা অর্জনে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো দেশের জলবায়ু স্থিতিশীলতা এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে উপস্থিতি কমেছে শীতের সবজির। গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহও মন্দ নয়। তবে শীতের স্বস্তি গরমের শুরুতেই উবে গেছে বাজার থেকে। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে সব সবজির দাম ছিল গড়পড়তা ৬০ টাকার মধ্যে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে সবজির দাম। বাজারভেদে বেশ কিছু সবজিতে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তে দেখা গেছে গতকাল। গতকাল বিভিন্ন বাজারে মুরগির দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের পাল্লা গত সপ্তাহে দফায় দফায় বেড়ে ৩০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর গতকাল একটু নেমেছে। গতকাল পেঁয়াজের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকার আশপাশে দেখা গেছে। আলুর দাম আগের মতোই। কোথাও কোথাও পরিমাণে বেশি কিনলে কিছু সম্মানী করছিলেন বিক্রেতারা। মাছের বাজারে দাম বেড়েছে আগেই, সেই দামেই স্থিতিশীল ছিল গতকাল। মুদিপণ্যেও দামের খুব একটা হেরফের দেখা যায়নি। তবে ভরা মৌসুমেও চালের দাম আগেই বেড়ে ক্রেতাদের অস্বস্তির জায়গায় পৌঁছেছে।
গতকাল শুক্রবার মিরপুর, তালতলা, শেওড়াপাড়া ও মহাখালীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম প্রায় সব জায়গাতেই বেড়েছে। বাজারে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া সজনে আরও বেড়ে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচা আম ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকায় এবং কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহব্যাপী মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৬০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৬৩০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমলেও তা এখনো কিছুটা চড়া। দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে এবং তা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। শিং মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের দামও আগের মতোই রয়েছে।
গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। এক ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত মুদি দোকানের পণ্যের দাম
গতকাল মুদি বাজারে দেখা গেছে, কয়েকটি পণ্য বাদে সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকের বাজারে প্রতি কেজি ছোট মুসরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাশকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০-৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২০ টাকা, খোলা চিনি ১১৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল প্রতি কেজিতে ছোট মুসরের ডালের দাম কমেছে ৫ টাকা, বুটের ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা। আর প্রতি কেজিতে কাজু বাদামের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সর্বশেষ মার্চ মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই মাসে ৩২৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। রেমিট্যান্সের এ গতিধারা চলতি এপ্রিল মাসেও অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখন দেশের মোট রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ধীরে ধীরে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। আর রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপরও চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২৩ টাকার মধ্যে আটকে রয়েছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে অনেক পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর কাছে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত, ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে অথবা বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই কেবল রিজার্ভ বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভের এই মজবুত অবস্থান রেমিট্যান্সে ভর করে এগিয়ে চলছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৩ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি। আর গত বছরের এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রায় ৫৭ কোটি ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। শতকরা হিসাবে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এ নিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে দেশে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একইস সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫২৮ কোটি ডলারের বেশি বা ২৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে, অন্যদিকে বন্ধ হয়েছে অর্থপাচার। এছাড়া খোলা বাজার এবং ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের একই দাম পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতেই প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। তবে আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৩৯ কোটি ডলার। এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে জানানো হয়। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের ‘বিপিএম-৬’ পরিমাপ অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বের হয়।
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আদায়ে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কারখানা-গুদামসহ প্রায় ১১ একর সম্পত্তি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা এস আলমের এসব সম্পদ নিলামে কিনতে আগ্রহীদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার বিনিয়োগ গ্রাহক এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাছান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের কাছ থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত লভ্যাংশসহ ব্যাংকের খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এ কারণে আদায়কাল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচ আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩এর ১২ (৩) ধারা মোতাবেক ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের বন্ধকী রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধানের দেওয়া এ বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তি অনুসারে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর মৌজায় ১০ দশমিক ৯৩ একর জায়গা এবং এসব জায়গার উপর কারখানা-গুদাম ও ভবনসহ পুরো স্থাপনা নিলামে তোলার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চের ৩৭৪৬ নম্বর, ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মের ৮০৫৭ নম্বর এবং ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের ৩৩২৭ নম্বর রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তিবদ্ধ সম্পদ আছে।
উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে সুনামের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়া ইসলামী ব্যাংক গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘দখলে’ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির সিংহভাগ মালিকানায় তাদের নিয়ন্ত্রিত ছিল। ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করে পাচারের অভিযোগ আছে এস আলমের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার এসে ব্যাংকটিকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে। এখন ইসলামী ব্যাংক সেই এস আলম গ্রুপের কাছ থেকেই ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে।
আম উৎপাদনে শীর্ষ দশে থাকলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর প্রধান কারণ আকাশপথে পণ্য পরিবহনের অস্বাভাবিক উচ্চ ব্যয়—যা প্রতিযোগীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই চড়া ব্যয়ই ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো থেকে ছিটকে দিচ্ছে।
তবে সম্প্রতি আম রপ্তানি নিয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুণগত মান ঠিক রেখে আম উৎপাদন করতে পারলে কম পরিবহন ব্যয়ের সুবাদে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার হয়ে উঠতে পারে চীন।
রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি ফল পাঠাতে ইউরোপে ৩৫০-৩৮০ টাকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ২০০-২২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
অন্যদিকে চীনে ফল পাঠাতে ভাড়া দিতে হয় আরও কম, কেজিতে ৭০-৮৫ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মনে করেন, আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত’।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আম অন্যান্য দেশের তুলনায় গুণগত মানে ও স্বাদে ভালো। চীনের বাজারে এটা আমাদের এগিয়ে রাখবে।’
আরিফুর আরও বলেন, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে আমের জন্য স্পেশাল কার্গো দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি চীনে আম রপ্তানি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে।
‘চীনের প্রতিনিধিদল কয়েক দফায় আমাদের দেশে এসেছে। তারা অনেক ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছে। এর সঙ্গে তারা কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি চীনে আম রপ্তানি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে,’ বলেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩২১ টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই রপ্তানি কমছে।
বাংলাদেশ থেকে গত বছর ২১টি দেশে আম রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইতালি ও সিঙ্গাপুরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ রয়েছে। যদিও এর আগের অর্থবছরে ৩৬টি দেশে আম রপ্তানি হয়।
এনএইচবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী ও আম রপ্তানিকারক নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া ১৯৯১ সাল থেকে আম রপ্তানি করছেন। গত বছর তিনি সুইডেন ও ইউরোপে আম পাঠিয়েছেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, গত বছর প্যাকেজিং ও বিমান ভাড়া মিলে কেজিতে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। গতবার অস্বাভাবিক ভাড়ার কারণে রপ্তানিকারক ও যারা কিনেছিলেন, সবাই লোকসান দিয়েছেন।
নাজমুল বলেন, ‘আম রপ্তানি নিয়ে আমাদের কোনো সমন্বিত কৌশল নেই। প্যাকিং হাউস করা হয়েছে শ্যামপুরে, পণ্য পাঠাতে হয় বিমানবন্দর থেকে। অথচ দুটো একই জায়গায় হওয়া প্রয়োজন ছিল। এতে খরচ কমত। আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে। আমাদের প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে।’
আম রপ্তানিকারক ও গ্লোবাল ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো আম রপ্তানিতে আলাদা কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করে, অথচ বাংলাদেশ নির্ভর করে যাত্রীবাহী বিমানের ওপর।
ফলে ইউরোপে প্রতি কেজিতে আমাদের প্রায় ১.৫০ ডলার পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। জিএসপি থেকে কিছুটা সুবিধা পেলেও আমাদের স্থানীয় আমের দাম তুলনামূলক বেশি। স্বাদে হয়তো আমরা এগিয়ে, কিন্তু গুণমানের ধারাবাহিকতায় ওরা আমাদের থেকে অনেকটা সুশৃঙ্খল। এখানেই আমরা পিছিয়ে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে আম রপ্তানি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ঢাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে চীনও।
রপ্তানিকারক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন বছরে প্রায় ৪ লাখ টন আম আমদানি করে। মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন থেকে বেশি আম আমদানি করে চীন। তারা বলছেন, চীনে আম রপ্তানি করলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের তুলনায় খরচ কম পড়বে। তবে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আম রপ্তানিতে টিকে থাকতে পারবে কি না সেটা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
২০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চীনের মানুষ বাংলাদেশি আম পছন্দ করে’ বলে বৃহৎ পরিসরে আম রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।
চীন বছরে প্রায় ৪ লাখ টন আম আমদানি করে। মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন থেকে বেশি আম আমদানি করে দেশটি। রপ্তানিকারক ও কর্মকর্তারা মনে করেন, গুণগত মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
নাজমুল ভূঁইয়া বলেন, ‘চীনে নতুন বাজার তৈরি হয়েছে, এটা নিয়ে আমি আশাবাদী। তবে টিকে থাকতে হলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কারণ আমরা যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব, তারা আমাদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে।’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, চীন থেকে যেসব কার্গো বিমান পণ্য নিয়ে আসে, সেগুলো অনেক সময় খালি ফেরত যায়। এ কারণে চীনে রপ্তানিতে বিমান ভাড়া কম পড়বে।
‘এসব রিটার্ন ফ্লাইট পুরোটা ব্লক করা গেলে খরচ আরও কমে আসবে। হয়তো কেজিতে ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসবে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে চীন-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মের মহাসচিব অ্যালেক্স ওয়াং বাংলাদেশি আমের প্রতি চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ম্যাঙ্গো হারভেস্টিংয়ের সময় চীনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাগান ও প্যাকেজিং কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। ইতোমধ্যে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’
শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল এপি প্রশিক্ষক অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ বলেন, চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের গাইডলাইন অনুযায়ী আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে ৩০টি শর্ত পূরণ করতে হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের আমে চীনের জন্য ২১টি কোয়ারেন্টিইন পেস্ট শনাক্ত করা হয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমকে এসব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ‘পরিবহন-পূর্ব পরিদর্শনে প্রতি ব্যাচের ২ শতাংশ বা ৬০০টি আম—যেটি বেশি হয়—টেস্ট করতে হবে, এবং এর মধ্যে সন্দেহজনক ৬০টি আম কেটে পরীক্ষা করতে হবে। কোনো কোয়ারেন্টিন পেস্ট পাওয়া গেলে পুরো ব্যাচ বাতিল করা হবে।’
অধ্যাপক ফারুক বলেন, শুধু চীনের ক্ষেত্রে নয়, বরং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্যই গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (গ্যাপ) কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘গ্যাপ অনুসরণ করে রপ্তানির জন্য আম উৎপাদন করলে বা গ্যাপ সার্টিফিকেট থাকলে চীনের শর্ত মানা কঠিন হবে না।’
তিনি আরও বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাড়তি সুবিধা দেয়। যেমন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে চীনের ডুরিয়ান চুক্তি কিংবা আমের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের চুক্তি বাংলাদেশের জন্য মডেল হতে পারে। ‘চীনের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তি করলে বাজারে প্রবেশ অনেকটাই সহজ হবে।’
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটি থেকে জুলাই-মার্চ সময়ে ৩৯৪ কোটি ৬১ লাখ (৩.৯৪ বিলিয়ন) ডলার এসেছে, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এই রেমিট্যান্সের গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১০৩ শতাংশের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ (১.৯৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্যে উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ (২১.৭৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ের ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের চেয়ে অনেক কম বাংলাদেশি অবস্থান করেন আমেরিকায়।
‘রেমিট্যান্স মানেই সৌদি থেকে আসে’ সবার মুখে মুখে ছিল এতদিন। কিন্তু গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ঘটে ব্যতিক্রম; ওই অর্থ বছরে সৌদিকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সেটাও উল্টে গেছে। এখন সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এতদিন প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই।
চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
অন্য দেশগুলোর মধ্যে এই নয় মাসে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব থেকে এসেছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে ১০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে গত অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল যে দেশ থেকে, সেই আরব আমিরাত থেকে এই নয় মাসে কমেছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সৌদি আরব থেকে অবশ্য ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। মালয়েশিয়া থেকে আরও বেশি বেড়েছে, ৫৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাজ্য থেকে বেড়েছে ১ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্সে যে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে তা মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই হয়েছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহের চিত্র পাল্টে যায়। প্রতি মাসেই বেশি প্রবাসী আয় আসছে দেশটি থেকে।
প্রবাসী আয় সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। একক মাসের হিসাবে যা রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।
হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও প্রবাসী আয় আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তার বলেন, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ প্রবাসী আয় প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহের পর তা এক জায়গা থেকে গন্তব্য দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠান যে দেশ থেকে এসব আয় পাঠাচ্ছে, সেসব দেশে থেকে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়া মানে দেশটি থেকে প্রকৃত প্রবাসী আয় বেড়েছে হয়তো তেমন নয়। অন্যান্য দেশের আয়ও প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে। এ কারণে পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বড় প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে কাগজে-কলমে।’
অন্য কারণও বলেছেন অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রথমত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিল; মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশটির মানুষের পাশাপাশি সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদেরও খরচ বেড়েছিল।’ ‘সে কারণে সেখানকার প্রবাসীরা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে কম টাকা পাঠিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়েছে; ২ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। তাই এখন আমাদের প্রবাসীরা বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে এ দফার পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সমঝোতা হয়নি বাংলাদেশের। ফলে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত জানায়নি সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে।
দুই সপ্তাহের পর্যালোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আইএমএফ আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান (তিনি মিশনপ্রধান) ক্রিস পাপাজর্জিওসহ অন্য ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এ বৈঠক হবে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল।
পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।
করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।
মিশনটি ৬ এপ্রিল থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইত্যাদি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৬ ও ১৬ এপ্রিল এ মিশন বৈঠক করেছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও।
এর আগেও কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফ মিশন এসেছিল। মিশন শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি ‘স্টাফ লেবেল’ চুক্তি হয়েছিল। এটি আসলে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ। এবার এ ধরনের স্টাফ লেবেল চুক্তি হয়নি বলে জানা গেছে।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের বেলায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আশা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।
শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
ঈদের পরও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ১২ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৫ কোটি (১.০৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এর মধ্যে ১ থেকে ৫ এপ্রিল ৫ দিনে এসেছে ১১ কোটি ৯২ লাখ ডলার; প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এই পাঁচ দিন ছিল সরকারি ছুটি। ঈদের পর ব্যাংক-বিমা, অফিস-আদালত শুরু হয় ৬ এপ্রিল থেকে। সে হিসাবে বলা যায়, এপ্রিল মাস শুরু হয়েছে আসলে ৬ এপ্রিল থেকেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার ১২ এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ৬ থেকে ১২ এপ্রিল- এই সাত দিনেই (এক সপ্তাহ) ৯৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। টাকার হিসাবে যা ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ১৮ দিনে (১৩ থেকে ৩০ এপ্রিল) এ হারে এলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ (৩.৪৫ বিলিয়ন) ডলার, যা হবে নতুন রেকর্ড।
গত মার্চ মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ আট লাখ ডলার।
অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে রেমিট্যান্স। প্রতিবারই দুই ঈদকে উপলক্ষ করে প্রবাসীরা দেশে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। তারপর কমে যায়; কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনে মোট ১০৫ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার (১.০৫ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১২ দিনে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ১২ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল) ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার (২২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে; যা হবে আরেকটি রেকর্ড।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল অর্থ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল।
তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছি তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) আট মাসেই (আগস্ট-মার্চ) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।
২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।
চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাণিজ্য সম্ভাবনার সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ইস্যু সমাধানের ব্যাপারে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত আছেন এবং আমরাও উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করছি।’
বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন এবং বলেছেন, বিভিন্ন দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো অনুকূল বাণিজ্য শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশে পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অর্থ উপদেষ্টা আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন।
তারা ইউএসটিআরসহ সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং আরো নির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।
বশির বলেন, তাদের সফর শেষে তিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘তখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আরো স্পষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করব এবং ইনশাআল্লাহ, প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাণিজ্য সম্ভাবনার সমন্বয়ে এই সমস্যার সমাধান করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ভুল অর্থনৈতিক নীতির দিকে যাব না।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পশু খাদ্য ও সয়াবিন তেলের দাম এবং শুল্ক সঠিকভাবে পরিচালনার পাশাপাশি কিছু অবকাঠামো সুবিধার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা পণ্যের প্রতিযোগিতা ও মান বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গতিশীল নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ‘ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের তথ্য অনুযায়ী সাধারণ মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমছে এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে তা ৬ শতাংশের কাছাকাছি নামবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বশির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল শুল্ক ও অশুল্ক কাঠামোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানবে এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউএসটিআরের কাছে চিঠি পাঠানোর পরও এখন পর্যন্ত তারা কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া পায়নি।
তবে তিনি আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সরকার তাদের যুক্তি দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হবে।
শেখ বশির বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নন বরং আরো কিছু রপ্তানি আদেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, প্রতিযোগী বাজার চীন এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১শ’ শতাংশের বেশি শুল্কের সম্মুখীন।
তিনি আরো বলেন, দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের মালিকরা আত্মবিশ্বাসী যে এর কোনও নেতিবাচক প্রভাব তাদের ওপর পড়বে না।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বশির বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমি বাণিজ্য সংযুক্তি চাই এবং দেশের বাণিজ্যিক ভিত্তিকে আরো বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন এবং পাকিস্তান এই তিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা নিজেদের স্বার্থে সবার সঙ্গে বাণিজ্য করব।’
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বিকল্প খুঁজছে না বরং বিষয়টি বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এতে অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকার ‘ব্যবসায়িক খরচ’ যুক্ত হতে পারে, তবে এই বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা তিনি পেয়েছেন। বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং উন্নত করার জন্য তিনি নতুন দায়িত্বে (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) কাজ করছেন।
বশির বলেন, সরকার যেমন বাজার বৈচিত্র্যকরণ ও সরবরাহ চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, তেমনি অতিরিক্ত খরচও শূন্য বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
চালের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকলে থাকায় এবং ধানের সম্ভাব্য বাম্পার ফলনের কারণে চালের দাম স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশাবাদী।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বশির বলেন, সরকার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয় এবং ব্যাংক ঋণ কমে আসে। তিনি বলেন, সরকারকে বর্তমানে ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক ছাড়ের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি ভোজ্যতেলের দাম আবার স্থিতিশীল হবে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে কখন হবে তা বলা যাচ্ছে না।’
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়লেও সূচকের দশা দোদুল্যমান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার (১৬ এপ্রিল) লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএসের অবস্থান শূন্যের নিচে এবং ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ১ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৯, কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সার্বিক সূচক কমেছে ২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৫ কোম্পানির মধ্যে ৫৭ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫২ কোম্পানি এবং দাম অপরিবর্তিত আছে ১৬ কোম্পানির।
সিএসইতে লেনদেনের প্রথমার্ধে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ওপর শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতেই পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার, কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (১৩ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ার ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৯ কোম্পানি এবং দর অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকার বাজারে মোট শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
একইভাবে সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৮ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৬৭ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।