ব্যাংকিং খাতে প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ। বিশাল অঙ্কের এই ঋণ আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমছে না; উল্টো বেড়েই চলেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত মঙ্গলবার শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছেন, যা নিয়ে দেশে এখন বেশ আলোচনা হচ্ছে। এই খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার প্রতিবেদক বীর সাহাবী।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে? অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি কেমন দেখছেন?
গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে তা এখনো বিদ্যমান এবং বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা যদি আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাব যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সরাসরি আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শিল্পসংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানি খরচ অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। পাশাপাশি, আমরা যেসব দেশে রপ্তানি করে থাকি সেসব দেশে যুদ্ধপরিস্থিতির প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানিতেও প্রভাব ফেলেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়েছে।
আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি অনেকাংশে বেড়ে গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় আমাদের জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ গ্যাস ও ডিজেলের আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতি একটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করছে, কিন্তু বেসরকারি খাত ও সরকার যৌথভাবে এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যে হারে বেড়েছে, এতে ব্যবসায়ীরা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো সংকটে পড়বে কী?
আন্তর্জাতিক বাজারে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ার কারণে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিত তৈরি হয়েছে। সে কারণে নিরুপায় হয়ে সরকারকে ৬ মাস আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক সময়ে ২২ শতাংশ বিদ্যুতের এবং শিল্পপর্যায়ে ১৯ শতাংশ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করতে হয়েছে। যাতে করে বেশি মূল্য দিয়ে আমদানি করে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত করছিল। এতে শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। একই হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কটেজ, ক্ষুদ্র, মাঝারিদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে যেতে পারে। সে কারণে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি মূল্যের অস্থিরতার কারণে সরকারকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তবে স্থানীয় শিল্প এবং বেসরকারি খাতের ওপর যাতে বেশিমাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য যৌক্তিকভাবে সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারকে পরবর্তী সময়ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
যেহেতু এটা দৃশ্যমান যে, বাংলাদেশ সরকার প্রতি মাসেই জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করার পরিকল্পনা করছে এবং সে- সংক্রান্ত একটি কৌশল নির্ধারণের কাজ চলছে, তাই সরকার যেন বিদ্যুতের মূল্য সহনশীলভাবে এবং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে, যাতে করে, বেসরকারি খাত অপ্রত্যাশিত বর্ধিত ব্যয়ের বোঝা এড়াতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির হয়তো কোনো বিকল্প নেই, তবুও সরকারের একটি অনুমানযোগ্য মূল্য নির্ধারণ নীতিমালা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে করে এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট প্রভাব সম্পর্কে বেসরকারি খাত আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণসহ তাদের ব্যবসা পরিচালনায় কৌশলী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। যদিও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে চলমান পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে সরকার যেন ফের এই বর্ধিত মূল্য হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিষয়টি কোনোভাবেই একমুখী হওয়া উচিত হবে না। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, বর্তমানে অস্থির বিশ্বপরিস্থিতির কারণে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। আমরাও বুঝতে পারছি এ ছাড়া সরকারের অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তবে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমে আসবে, টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্বাভাবিক হবে, গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে আসবে, তখন যেন সরকার বর্ধিত মূল্য হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ভর্তুকির অজুহাত দেখিয়ে শুধু দাম বাড়ানো হবে, পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে কমানো হবে না- এমনটা যেন না হয়।
বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব ছোট-বড় সব দেশেই পড়েছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। এই সংকটে থেকে উত্তরণের পথ কী?
আমার মনে হয়, বিশ্বের ধনী-গরিব সব রাষ্ট্রই চলমান সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক এ সমস্যায় কিছু দেশ সংকটে পড়েনি বিষয়টি তেমন নয়। সংকটের কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানির মতো দেশে মূল্যস্ফীতি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১২%, যুক্তরাজ্য ১০.১%, কানাডা ৮.১%, জার্মানি ৭.৯%। যে জাপানের মূল্যস্ফীতি সব সময় নেগেটিভ থাকত তাদের মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ৪.১%।
উন্নত বিশ্বের এ ধরনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের স্থানীয় অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করেছে। এতে তাদের কাজের সুযোগ কমেছে এবং দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। কেননা, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে সব থেকে বেশি রপ্তানি করে থাকে। তাদের ক্রমক্ষমতা কমে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে আমাদের রপ্তানিতে সরাসরি আঘাত। অথচ বাংলাদেশের সামগ্রিক জিডিপির ১৫ শতাংশ রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। একইভাবে আমাদের আমদানি খরচও বেড়েছে অত্যধিক হারে। কেননা, আমরা যেসব দেশ থেকে আমরা আমদানি করি তাদেরও উৎপাদন খরচ এবং সাপ্লাই চেইন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কাছে বেশি দামে বিভিন্ন নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল, মেশিনারি বিক্রি করছে। এর ফলে আমাদের রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমদানি খরচ বেড়ে গেছে এবং আমাদের অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে সে কারণে সংকটে পড়েছে রিজার্ভ। সর্বোপরি বাংলাদেশ যেহেতু বর্তমান বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, সেহেতু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সংকট বাংলাদেশ এড়াতে পারে না।
এই পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে এখন করণীয় কী? সরকার ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতি যেহেতু একটি ভূরাজনৈতিক ও শক্তিধর দেশের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের প্রতিফলন এবং বাংলাদেশ তার ভুক্তভোগী, সেহেতু বাংলাদেশ এককভাবে সংকট দূর করতে পারবে না। বাংলাদেশ তেমন কোনো শক্তিধর নয় বা ধনী দেশগুলোর প্রতিনিধিও নয়। সে কারণে বাংলাদেশ সরাসরি সংকট বন্ধের জন্য জোরালো পদক্ষেপেরও অংশ হতে পারছে না। এ সংকট কাটাতো জি-৭ ভুক্ত ও অন্যান্য ধনী দেশগুলোর কার্যকর আলোচনা মূলত প্রধান উপায়। বিশ্বের সংকটজনক পরিস্থিতি উত্তরণে উন্নত বিশ্ব যত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে, বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বার্থের জন্য সেটা ততটাই মঙ্গলজনক হবে। তবে বাংলাদেশ যে নীরব হয়ে আছে তেমন কিন্তু নয়, বাংলাদেশ জাতিসংঘের মাধ্যমে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট কেটে গিয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সে লক্ষ্যে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে আবারও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিত স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের বাণিজ্য প্রায় ১ শতাংশ কমে যাবে। যার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশ, চীনসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর পড়বে। সুতরাং শুধু যে বাংলাদেশ সংকটে রয়েছে অন্যরা তেমন সংকটে নেই এ কথাটি এমন নয়। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে সংকটময় এ পরিস্থিতি কেটে গিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আবারও একটি স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসবে।
বর্তমান সংকট উতরাতে সরকার আর কী কী করতে পারে?
চলমান বৈশ্বিক এ সংকটকে মোকাবিলা করার জন্য সরকারের তেমন কিছু করার নেই। কারণ, আমরা বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছি না। কিন্তু আমরা যেহেতু এ সংকটের কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, সে কারণে সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে জাতিসংঘ, ডব্লিউটিও ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ, সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক করা ও সংকট সমাধানের জন্য জোরালো আওয়াজ তুলতে পারি। অন্যদিকে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ব্যয় কমিয়ে ও সামগ্রিক আমদানি ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে পণ্য আমদানি না করে কৃচ্ছ্রসাধন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখতে পারি।
সরকার ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার প্রচেষ্টা চলমান রেখেছে এবং আর্থিক খাত স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে, ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ (নন পার্ফরমিং লোন বা এনপিএল) কমানোর মাধ্যমে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বেশি পরিমাণে তারল্য বাড়াতে সহায়তা করলে বেসরকারি খাত আরও উপকৃত হতে পারবে। আমার মনে হয়, এই সংকটকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের মতো একটি ছোট দেশে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাইট অফ বা অবলোপন এবং আদালতে মামলার কারণে আটকে থাকা খেলাপি ঋণ যোগ করলে প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। আর দেরি না করে, বিশাল অঙ্কের এই টাকাটা আদায়ের জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশেল এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। বর্তমানে বেসরকারি খাতের অবস্থা কেমন দেখছেন?
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমবে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বাস্তবতায় ব্যবসায়িক মুনাফা কমে যাবে এবং বিনিয়োগের গতি কমবে। অনেকে সংশয়ের মধ্যে থেকে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। মূল বিষয় হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়বে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়বে না বরং অনেক ক্ষেত্রে কমবে। এদিকে, জ্বালানি ও আর্থিক খাতে ভূরাজনৈতিক সংকটের চ্যালেঞ্জ বাড়ছে এবং তা এক বছর আগে কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। এ কারণে নতুন বিনিয়োগ খুব কম মাত্রায় হবে। একই সঙ্গে সম্প্রতি ঘোষিত এমপিএস এ দেখা গেছে এ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতের ঋণের টার্গেট ছিল ১৪.১ শতাংশ কিন্তু তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি, মাত্র ১২.৮ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। নতুন যে টার্গেট নেয়া হয়েছে তার বাস্তবায়নও যথেষ্ট অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে যদি সরকারের ব্যয় লাগামহীন ভাবে বাড়তে থাকে। তবে সিএমএসএমইদের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ।
যদি বিশ্ব পরিস্থিতি এমনই থাকে তাহলে সরকার বাধ্য হয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করলে বেসরকারি খাতের ওপর তার প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া ও সাপ্লাই চেইন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতও বাধ্য হয়ে পণ্যের মূল্য বাড়াতে গিয়ে তাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারাতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত হবে।
এ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ পরিস্থিতিতে কিসে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন?
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, তবে আমরা মনে করি বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অনেক বেশি কেয়ারফুল। বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছে তার ফলে অনেক সংকট আসার পরেও বাংলাদেশ এখনো বেশ ভালোভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সামনের দিনেও এভাবে চলতে পারলে আমরা হয়তো অত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব না যেমনটা ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ধরনের সহিংসতা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা হলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কারণে আমি সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ করছি। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের সবাইকে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে হবে।
আমদানিপ্রধান দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাড়ছে রপ্তানি বাণিজ্য। চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ৪২৯টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। দেশি কোম্পানির বিস্কুট, আসবাব, প্লাস্টিকের পাইপসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে আমদানিও।
রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য এসেছে শ্রমিকদের মধ্যে। হিলি কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ৪২৯টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন দেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। একই সময় আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৩৮৪টি ট্রাকে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন পণ্য। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই বন্দরে ভারত থেকে ৮ হাজার ৪৮৭টি ট্রাকে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ২৬৫ কোটি টাকা।
হিলি স্থলবন্দর সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে হিলি বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি শূন্যের কোঠায় ছিল। চলতি অর্থ বছরে অনেক দেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
পাশাপাশি গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে এই বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্ম ব্যস্ততা বেড়েছে বন্দর কেন্দ্রীক সব শ্রমিকদের।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক নূর ইসলাম বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানিও বেড়েছে। গত বছর প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করত। চলতি বছর গত ১২ আগস্ট থেকে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। এ বছর একই সময় সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৬০টি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে। আমরা সবাই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলে বন্দরের সব পেশাজীবী মানুষ উপকৃত হয়।’
হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘হিলি বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। এতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এর আগে এই বন্দর দিয়ে তেমন কোনো পণ্য রপ্তানি হতো না। বর্তমান আমরা রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামীতে ভারতে আরও বেশি দেশি পণ্য রপ্তানি হবে।’
হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক অতিশ কুমার শ্যানাল বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। ভারতে রপ্তানি হওয়া পণ্যবাহী ট্রাকপ্রতি ওজন ফি ১৪৬ টাকা এবং এন্ট্রি ফি ১৬৮ টাকা নেওয়া হয়।’
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। অন্য অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছর এই বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় পণ্যের আমদানিও গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। ভারত থেকে কাঁচা পণ্য যেমন আদা, রসুন, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও মটরশুঁটি আমদানি হয়ে থাকে। যেহেতু এসব পণ্য পচনশীল, তাই আমরা কাস্টমসের সব কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে থাকি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আমদানি-রপ্তানি সহজ করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দেশের সব বন্দর ও বিমানবন্দরে দ্রুত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) চালু করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন থাকা জরুরি। প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বণিক সমিতি, চেম্বার প্রতিনিধি, বন্দর, কাস্টমস, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও তপশিলি ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
গভর্নর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ এ অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। তবে এ সম্ভাবনাকে পূর্ণ রূপ দিতে আর্থিক খাতের সুদৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অব্যবহৃত ফান্ড এ অঞ্চলের উপর্যুক্ত গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে প্রত্যেক ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে গেস্ট অব অনার ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বৃদ্ধির ধারা বিজয়ের মাসেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি (ডিসেম্বর) মাসের প্রথম ২০ দিনে দেশে এসেছে প্রায় ২১৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয়। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে ২৬ হাজার ৪৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই মাসে তিন বিলিয়ন ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলছে, ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি ডলার বেশি এসেছে। গত বছরের ওই সময়ে এসেছিল ১৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫২১ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০৯ কোটি ডলার বেশি। তখন এসেছিল ১ হাজার ৩১২ কোটি ১০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত বছর শুধু রমজানের ঈদ কেন্দ্র করেই এক মাসে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণে বিভিন্ন প্রণোদনা, বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ওপর উৎসাহ বাড়ানো এবং এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সক্রিয় ভূমিকা উল্লেখ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মাসভিত্তিক প্রবাসী আয় ছিল- জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার ও নভেম্বরে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল, যা ছিল ওই অর্থবছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন আগামী বছর থেকে সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের রিটার্ন অনলাইন জমা বাধ্যতামূলক করবে। তিনি জানান, বর্তমানে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী বছর থেকে আমরা ভ্যাটের অনলাইন রিটার্নও বাধ্যকতামূলক করে দেব। আজও আমি একটা মিটিং করেছিলাম আমাদের বোর্ডে এবং সেখানে আমি নির্দেশনা দিয়েছি যে আমরা পারতপক্ষে পেপার রিটার্নটা নেব না। কারণ এর মধ্যে অনেক ঝামেলা হয়।
কর বা ভ্যাটের রিটার্ন জমা নেওয়ার মাধ্যমে ডলার সাশ্রয় সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভ্যাটের রিটার্নটা খুব সহজ, বেশি জটিল কিছু না।’
তিনি বলেন, ‘দৌড়াদৌড়ি করে কিংবা যানবাহন ব্যবহার করে ম্যানুয়াল পদ্ধতি রিটার্ন জমা দিতে গেলে তেল পোড়ে। এই তেল কিনতে হয় রেমিট্যান্স থেকে আসা অর্থ দিয়ে।’
অনলাইন ফিটার্ন জমায় ভয়ের কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং এটা মানে খুবই পরিচ্ছন্ন একটা পদ্ধতি। আমরা আগামী বছর এটাকে অ্যাপ তৈরি করে আপনাদের মোবাইলেও দিয়ে দেব। আপনারা চাইলে গাড়িতে বসে, অবসর সময়ে, বিছানায় শুয়ে মোবাইলেও করে ফেলতে পারবেন। শুধু আপনাদের তথ্যগুলো লাগবে। আরেকটা বড় সুবিধা এখানে কোনো ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয় না। আপনার কিছু দেওয়া লাগবে না। আপনি শুধু ইনফরমেশনগুলো দেবেন, আমরা ওটাকেই ১০০ শতাংশ বিশ্বাস করে নিয়ে নিলাম। কিন্তু পরে যদি আপনি কোনো মিথ্যা ঘোষণা দেন, সেই দায় আপনার।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আয়করের জটিল আইন-কানুন, বিধি-বিধান কোনো কিছুই আপনাদের জানার দরকার নেই। আপনি শুধু আপনার ই-রিটার্ন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করে যে তথ্যগুলো সেখানে আপনার কাছে চায়, সেই তথ্যগুলো ঠিকভাবে অ্যান্ট্রি করবেন।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটা ফর্মুলা করে, প্রোগ্রামিং করে প্রতি বছর যে আইনটা হয়, সে অনুযায়ী আমরা সিস্টেমকে কমান্ড দিয়েছি। সুতরাং সিস্টেম নির্ভুলভাবে ক্যালকুলেশন করবে। ট্যাক্স অথরিটিও আপনাকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না যে আপনার ক্যালকুলেশনে ভুল আছে, আপনি বেশি রিবেট নিয়ে গেছেন, আপনি কম কর দিয়েছেন- এই কথাগুলো বলার কোনো সুযোগ থাকবে না। আপনাকে যেটা বলতে পারবে, যদি আপনার কোনো তথ্য যদি ভুল হয় অথবা যদি কোনো তথ্য যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি না দেখান, সেটার দায়-দায়িত্ব আপনার।’
এ সময় তিনি ডিআরইউ সদস্যদের জন্য ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল সাপোর্টিং বুথের উদ্বোধন করেন। ডিআরইউ সভাপতি সালেহ আকন, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ এসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত এজিএমএ বিজিবিএর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজিবিএর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব শাহরিয়ার হাসান, এবং ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক পিএলসির এএমডি আদনান মাসুদ।
সভার শুরুতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন শেষে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন বিজিবিএর ট্রেজারার ফজলুল হক সাঈদ।
সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন এ এইচ এম সালেহ উজ্জামান। সভায় উপস্থিত বিজিবিএর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট কাইয়ুম রেজা চৌধুরী প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন। সেক্রেটারি জেনারেল মো. জাকির হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যসহ বিগত বছরে গৃহিত ও বাস্তবায়িত কার্যক্রম উপস্থাপন করেন। ট্রেজারার ফজলুল হক সাঈদ বিজিবিএর অফিসের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আয়-ব্যয় ও অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
সবার বক্তব্য ও অডিট রিপোর্ট উপস্থাপনের পর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এতে অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন এবং বিজিবিএর সার্বিক উন্নয়নে সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নবগঠিত শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল (এসএসি) প্রথম সভা গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় শরিয়াহ ভিত্তিক পুঁজিবাজার কার্যক্রম আরও সুসংহত, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত করার বিষয়ে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় বিএসইসি ভবনের কমিশন সভা কক্ষে নবগঠিত কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাকিব মুহাম্মদ নাসরুল্লাহ। বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
সভায় কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে জামিয়া ইসলামীয়া দারুল উলুমের সিনিয়র মুফতি ও মুহাদ্দিস মুফতি মাসুম বিল্লাহ, জামিয়াহ শরিয়াহ মালিবাগ ঢাকার সিনিয়র ডেপুটি মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর সাদাত, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চিফ ফিন্যান্স অফিসার মোহাম্মদ আব্দুর রহিম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজুর-ই-এলাহী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিন্সের অধ্যাপক ও ইসলামিক ফিন্যান্স স্পেশালিস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কবির হাসান জুমের মাধ্যমে অনলাইনে সভায় অংশগ্রহণ করেন।
চীনের সঙ্গে থাইল্যান্ডের রপ্তানি চুক্তি ও আঞ্চলিক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে এশিয়ার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ছিল চালের দাম। বিশেষ করে থাইল্যান্ডে চালের দাম সাত মাসেরও বেশি সময়ে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। একই সময় ভারত ও ভিয়েতনামেও চালের রপ্তানিমূল্য বেড়েছে। পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তন ও নতুন ক্রয়দেশ দরবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।
থাইল্যান্ডে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম গত সপ্তাহে পৌঁছেছে টনপ্রতি ৪১৫ ডলারে, যা ৮ মের পর সর্বোচ্চ। আগের সপ্তাহে এ দর ছিল ৪০০ ডলার।
ব্যাংককভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, নভেম্বরে থাইল্যান্ড থেকে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির ঘোষণা দেয় চীন। এর পরই দাম বাড়তে শুরু করেছে খাদ্যশস্যটির। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে যে দ্বিতীয় মৌসুমের ধান কাটা হবে, তা বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ফলে সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বড় কোনো অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না।
ভারতেও চালের রপ্তানিমূল্য কিছুটা বেড়েছে। নয়াদিল্লিভিত্তিক এক রপ্তানিকারক বলেন, ‘দাম তুলনামূলক কম থাকায় এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু ক্রেতা ছোট পরিসরে চাল আমদানি শুরু করেছেন। এতে ধীরে ধীরে রপ্তানি চাহিদা বাড়ছে।’
চলতি সপ্তাহে ৫ শতাংশ খুদ্যযুক্ত সিদ্ধ চালের দাম পৌঁছেছে টনপ্রতি ৩৪৮-৩৫৬ ডলারে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩৪৭-৩৫৪ ডলার। একই সময় ৫ শতাংশ খুদ্যযুক্ত আতপ চাল বেচাকেনা হয়েছে টনপ্রতি ৩৪৫-৩৫০ ডলারে। ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার রেকর্ড নিম্নস্তরে নামায় রপ্তানি থেকে রুপির হিসেবে আয় বেড়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
ভিয়েতনামেও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদ্যযুক্ত চালের দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৩৭০-৩৭৫ ডলারে। আগের সপ্তাহে এ দর ছিল ৩৬৫-৩৭০ ডলার। ৬ নভেম্বরের পর এটি সর্বোচ্চ।
হো চি মিন সিটিভিত্তিক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘চীন, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি বাজার থেকে ভিয়েতনামের চালের চাহিদা বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। থাইল্যান্ডের তুলনায় ভিয়েতনামের চালের দাম এখনো তুলনামূলক কম।’
বিশ্লেষকদের মতে, বড় আমদানিকারকদের নতুন ক্রয়াদেশ ও মুদ্রাবাজারের পরিবর্তনের প্রভাবে আগামী কয়েক সপ্তাহে এশিয়ার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে চালের দাম।
সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এই মূলধন ছিল ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
এ সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর সব কয়টি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৪৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৫৩৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
আর প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৩০ কোটি ২২ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৮৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৮৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩২টি কোম্পানির, কমেছে ৩৩৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ও সিএসসিএক্স যথাক্রমে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও ১ দশমিক ৭২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৬২৪ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে ও ৮,৪০৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও সিএসআই সূচক ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১,০৪৬ দশমিক ৩২ পয়েন্টে ও ৮৫৮ দশমিক ১৮ পয়েন্টে। আর সিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সূচকটি অবস্থান করছে ১২,০৯০ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে।
চলতি সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ২৫০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ১৫৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির কোম্পানির শেয়ারদর।
পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে 'প্রাইভেট পুণ্ড্র ইকোনমিক জোন’ নামের একটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে বগুড়ায়। ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (বিসিএল) গড়ে তুলছে ওই শিল্পাঞ্চলটি ।
সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নামের শিল্পাঞ্চলটি উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণভাবে চালু হলে আন্তর্জাতিক মানের গ্লাস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ভেষজ তেল উৎপাদন কারখানা, ফিডমিল ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে।
জানা যায়, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে বগুড়ার গোকুল এলাকায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমি নিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রথম বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। তবে আরো ১০০ বিঘা ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিল্পাঞ্চলটির মোট জমির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০০ বিঘায়।
প্রাইভেট পুণ্ড্র ইকোনমিক জোনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বড় বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো এখানে শিল্প-কারখানা স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে এখানে শিল্পায়ন দ্রুত করতে হলে দরকার গ্যাস। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি কারখানা স্থাপন করেছে বিসিএল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ। গ্যাস সংযোগ পাওয়া মাত্রই কারখানাটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ কারখানায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার পুরুত্বের বিভিন্ন ধরনের গ্লাসের পাশাপাশি রঙিন গ্লাসও তৈরি করা হবে, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও রফতানি উপযোগী। প্রাথমিকভাবে এখানে অন্তত এক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
শিল্পাঞ্চলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখানে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার জন্য গ্যাসের প্রাথমিক চাহিদা দেড় লাখ কিউবিক মিটার ধরা হয়েছে। তবে বিসিএল গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাটি চালু করতেই প্রয়োজন ৫০ হাজার কিউবিক মিটার গ্যাস।
বগুড়ার শিল্প-মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিল্পাঞ্চলটিতে পর্যাপ্ত শ্রম সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা এবং স্বল্পমূল্যে শিল্প অবকাঠামো গড়ে তোলার মতো জায়গা সহজলভ্য হওয়ায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষত সরাসরি সড়ক ও রেল সুবিধা। এছাড়া বিমানবন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। এসব সুবিধার কারণে এখানে ট্যানারি, রড-সিমেন্ট, মোটরবাইক ও গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপন করতে চান উদ্যোক্তা।
প্রস্তাবিত এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত এলাকাটি পরিদর্শন করে। টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ আশা করছে, কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি অনুমোদন পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) বগুড়ার এক কর্মকর্তা বলেন, জায়গা পেলে বগুড়ায় এখনই দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ সম্ভব। শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য সহজ শর্তে জমি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। আর কর্মসংস্থান হবে স্থানীয় হাজার হাজার শ্রমিকের।
উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভ্যাট ও কর কাঠামোকে যুক্তিসঙ্গত করাসহ নতুন উদ্যোক্তা, স্টার্ট-আপের মতো সংস্থাগুলোকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর বোর্ডরুমে ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ কথা জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। সভার শুরুতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে বিসিআইয়ের মরহুম সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহি ও সাবেক সভাপতি এটিএম ওয়াজিউল্লাহের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ও নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।
এরপর আলোচ্য সূচি অনুযায়ী সভাপতির অনুমতিক্রমে সভার কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন এনডিসি।
বিসিআইয়ের সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, আমি আনন্দিত ব্যবসায়ী নেতাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। আপনাদের সবার সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে বিসিআই তার সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের একক ও একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার হিসেবে বিসিআই দেশের সব প্রকার শিল্পের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য কাজ করে চলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে শিল্পের সমস্যা সমাধানে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘আজকের সভায় ট্যাক্স ও ভ্যাটবিষয়ক যে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়েছে, এগুলো নিয়ে বিসিআই সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করবে।’
কিছু বিষয়ের ওপর আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত জানিয়ে বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে বর্তমান শিল্পের প্রতিযোগিতামূলকতা বজায় রাখার জন্য আমাদের সব শিল্প এলাকায় গ্যাস এবং বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করা।’
উৎপাদনের কার্যকর সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখার জন্য এবং উৎপাদনের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য আমাদের মসৃণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর করা। আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং আয় বৈষম্য কমাতে আমাদের টেকসই এমএসএমই উন্নয়ন পরিবেশের ওপর মনোযোগ দেওয়া।
এ ছাড়া শিল্প খাতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য শিক্ষাবিদ, শিল্প এবং সরকারের যৌথ সহযোগিতা। পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন উদ্যোক্তাবান্ধব করা। নতুন উদ্যোক্তা এবং স্টার্ট-আপগুলোকে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তা দেওয়া।
উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধির ওপর দৃষ্টি দিয়ে ভ্যাট এবং কর কাঠামোকে যুক্তি সঙ্গত করা। আলোচনা সভায় অংশ নেন বিসিআইয়ের সদস্য ওবায়দুর রহমান, বিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম, বিসিএমইয়ের সভাপতি মইনুল ইসলাম, উত্তরা মোটর করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, বিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. ইউনুস, বিসিআই সদস্য নুরুল হাসান মিয়া, শহিদুল হক, মো. জিয়াউদ্দিন প্রমুখ। সভায় বিসিআই সদস্য ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষ ভাগে বিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মিসেস প্রীতি চক্রবর্তী সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও ভবিষ্যতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই–নভেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি—এডিপি বাস্তবায়নে ভয়াবহ স্থবিরতার চিত্র উঠে এসেছে। এ সময়ে আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের ৫ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। এর মধ্যে সংসদবিষয়ক সচিবালয় এক টাকাও খরচ করতে পারেনি।
অন্য সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো—আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জুলাই-নভেম্বর মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, সংসদবিষয়ক সচিবালয়ের এক প্রকল্পে ২০ লাখ বরাদ্দ থাকলেও এখনো কোনো টাকা খরচ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য খাতেও রয়েছে একই চিত্র। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১৫টি প্রকল্পে ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৯৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৬ কোটি টাকা।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাদ্দের মাত্র ২ দশমিক ৩১ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ২ দশমিক ১২ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং জননিরাপত্তা বিভাগ ১ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।
সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই সময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কম।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই এডিপির আওতায় বর্তমানে ১ হাজার ১৯৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার বরাদ্দের মাত্র ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। ওই অর্থবছরে বরাদ্দও বেশি ছিল। আগের দুই অর্থবছর ২০২৩-২৪ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল যথাক্রমে ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ও ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল বরাদ্দের ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ গত কয়েক বছর ধরে এডিপি বাস্তবায়নের হার কমছেই।
আইএমইডির তথ্য-উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩-২৪ ও ২০২২-২৩ এই সময়ে এডিপি ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা এবং ৪৭ হাজার ১২২ কোটি টাকা।
এ দিকে একক মাসের হিসাবেও গত নভেম্বরে বাস্তবায়নের হার অন্যান্য বছরের একই মাসের চেয়ে কম। মাসটিতে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত নভেম্বরে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে এ পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার বেশি।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা, যা ছিল বরাদ্দের ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা চলতি বছর রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) ‘কোল ২০২৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কয়লার ব্যবহার কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো এটি সবচেয়ে বড় জ্বালানির উৎস। তাই চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বেড়ে রেকর্ড ৮৮৫ কোটি টনে পৌঁছেছে বলে প্রাথমিকভাবে হিসাব করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
অন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লা ব্যবহারে ভিন্নধর্মী প্রবণতা দেখা গেছে। এ সময় ভারতে টানা ভারি মৌসুমি বৃষ্টির কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। ফলে এ সময় দেশটিতে পাঁচ দশকের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো কয়লা ব্যবহার কমেছে।
বিশ্বে শীর্ষ কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন। দেশটিতে চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। আইইএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে কয়লার ব্যবহার কিছুটা কমতে পারে। তবে চীনে বিদ্যুতের চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বাড়লে অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে ধীরগতি দেখা দিলে কয়লার চাহিদা পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি হতে পারে।
আইইএ আরও জানায়, বিশ্বব্যাপী কয়লার চাহিদা চলতি বছর রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছালেও ২০৩০ সালের মধ্যে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরমাণু ও প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমার পেছনে ভূমিকা রাখবে।
আইইএর ডিরেক্টর অব এনার্জি মার্কেটস অ্যান্ড সিকিউরিটি কেইসুকে সাদামোরি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা স্থিতিশীল হয়ে আসছে। চলতি দশকের শেষ পর্যন্ত তা খুব ধীরে ও ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করবে।’
আইইএ আরও জানায়, অন্যান্য দেশে কমলেও ২০৩০ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে কয়লার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বাড়বে ভারতে। দেশটিতে চাহিদা গড়ে প্রতি বছর ৩ শতাংশ বাড়তে পারে। এ সময় জ্বালানি পণ্যটির মোট ব্যবহার পৌঁছতে পারে ২০ কোটি টনে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় চাহিদা ৪ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রধান উত্তোলনকারী দেশগুলোয় কয়লা উত্তোলন কমতে পারে। তবে এ সময় আমদানি নির্ভরতা কমাতে কয়লা উত্তোলন বাড়াতে পারে ভারত সরকার। এর আগে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, দীর্ঘমেয়াদে ভারতে কয়লার ব্যবহারও উর্ধ্বমুখী থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৬ ও ২০২৭ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লার ব্যবহার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকবে। বিদ্যুচ্চালিত যানবাহন (ইভি), শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও ডাটা সেন্টারের বিস্তারের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের কারণে কয়লার ওপর নির্ভরতা কমতে থাকবে।
পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় গরু-মহিষেই ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে গবাদিপশু পালন এখন আর শুধু পারিবারিক আয়ের বিকল্প নয়; এটি দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কৃষিকাজের পাশাপাশি গরু ও মহিষ লালন-পালনের মাধ্যমে উপজেলার হাজারও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই খাতের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ খামারিই কোনো প্রকার ব্যাংক ঋণ ছাড়াই নিজস্ব শ্রম ও সীমিত পুঁজি বিনিয়োগ করে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দশমিনা উপজেলায় বর্তমানে ৫ হাজার ৬২০টিরও বেশি গরু ও মহিষ পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রনগোপালদী ও চর বোরহান ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার ৫০০টি, আলীপুরা ইউনিয়নে এক হাজার ৩০০টি, বেতাগী-সানকিপুর ইউনিয়নে এক হাজার ১০০টি, বহরমপুর ইউনিয়নে এক হাজার ১৫০টি, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে এক হাজার ৯০০টি এবং সদর ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৯৫০টি গবাদি পশু রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট গবাদিপশুর প্রায় ৬৫ শতাংশই মহিষ, যা দেশের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ব্যতিক্রমী। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, চরাঞ্চলের পরিবেশ মহিষ পালনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হওয়ায় এখানে মহিষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। একটি মহিষ সাধারণ গৃহপালিত গরুর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দুধ এবং দেড় গুণ বেশি মাংস উৎপাদনে সক্ষম। হিসাব অনুযায়ী, দশমিনা উপজেলায় বিদ্যমান মহিষ থেকে বছরে প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ এবং প্রায় সাত লাখ ৪০ হাজার কেজি মাংস উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার চর হাদি এলাকার খামারি আবদুস সালামের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আগে শুধু ধান চাষ করতাম, তাতে পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতাম। এখন আমার তিনটি গরু ও একটি মহিষ আছে। দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়। এতে সংসারের অভাব অনেকটাই কমেছে।’
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দশমিনা উপজেলার মোট জমির প্রায় ২৫ শতাংশ চরাঞ্চল। এসব এলাকার প্রায় ১০ শতাংশ জমি অনাবাদি এবং ফসলি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ এক ফসলি। বছরের অন্তত ছয় মাস এসব জমিতে কোনো ফসল উৎপাদন কার্যক্রম থাকে না। ফলে কৃষিনির্ভর আয় সীমিত হয়ে পড়ে। এই শূন্যস্থান পূরণে চরাঞ্চলে গবাদিপশু পালন কার্যক্রম বিকল্প ভূমিকা রেখেছে কৃষকের জীবনে।
তবে সম্ভাবনার পাশাপাশি রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। চর সামাদ এলাকার খামারি করিম মোল্লা বলেন, ‘পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়। এতে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হয়। অনেক সময় দেরি হওয়ায় পশু মারা ও যায়।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, চরাঞ্চলগুলোকে পরিকল্পিতভাবে চারণভূমি হিসেবে ঘোষণা করে উন্নত ঘাস চাষ, নিয়মিত টিকাদান, স্বল্প সুদে ঋণ, প্রশিক্ষণ ও বাজারজাত ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে একদিকে যেমন হাজারও পরিবার স্বাবলম্বী হবে, অন্যদিকে জেলার দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।
দশমিনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শুভেন্দু সরকার বাসসকে বলেন, ‘দশমিনার চরাঞ্চলে গরু ও মহিষ পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে মহিষের জন্য প্রাকৃতিক বাথান ও বিস্তীর্ণ চরভূমি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহিষ দ্বিচারী প্রাণী হওয়ায় চরাঞ্চলের ঘাস ও জলাভূমি তাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বিশেষ করে শীতকালে পানির সংস্পর্শে থাকলে মহিষের প্রজনন হার বৃদ্ধি পায়। এই অঞ্চলে হাঁস পালনও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।’
স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দশমিনার অবহেলিত চরাঞ্চলগুলো অদূর ভবিষ্যতে গবাদিপশু উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে। এতে দারিদ্র্য হ্রাসের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
সূত্র: বাসস