বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

দেশের টাকা কানাডার বেগমপাড়ায় চলে যাচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সেমিনারে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:৫৫
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

দেশের টাকা বিভিন্ন উপায়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। বহু টাকা এ দেশ থেকে কানাডার বেগমপাড়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। আন্ডার ভয়েস, ওভার ভয়েসসহ নানাভাবে যে কেউ চাইলেই খুব সহজেই বিদেশে টাকা পাঠাতে পারে। এটিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কাস্টমস বিষয়ক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব সম্মেলন ২০২৩ উপলক্ষে 'বাংলাদেশ কাস্টমস: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সারথি' শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

রাজস্ব আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আগের তুলনায় রাজস্ব অনেক বেড়েছে, কিন্তু রাজস্ব- জিডিপি অনুপাতে এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। এটিকে আরও বাড়ানো উচিত। বিশেষ করে আয়করে আমরা এখনো সফল হতে পারিনি। সেজন্য, রাজস্ব বিভাগের সক্ষমতা ও দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সারা বিশ্ব তার স্বীকৃতি দিচ্ছে, প্রশংসা করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রশংসা করছে। সেখানে দেশের ভিতরে কেউ কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। জাতি হিসেবে আমাদের আত্মসম্মানবোধ থাকা উচিত।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মাহবুবুর রহমান ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফাইজুর রহমান।


শেয়ারবাজারে সূচকের সঙ্গে লেনদেনের উত্থান

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৫০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৬৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৮২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার।

এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২০৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৩২ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৭৯টি এবং কমেছে ৪৫টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৯৫টির।

লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেল ৪১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ৩৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচ ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, আমরা নেটওয়ার্ক ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, এডিএন টেলিকম ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস বুধবার ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১২৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৪৪টি, কমেছে ২৩টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৬০টির।


দেশে বেকারত্বের হার কমেছে

ফাইল ছবি
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৫৪
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ। ৫ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সাল শেষে দেশে এ সংখ্যা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। এই ৫ বছরে দেশে ৯৯ লাখ ৮০ হাজার নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যেখানে এই সংখ্যক মানুষ এসব কাজে যুক্ত হয়েছেন। এই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে নতুন করে ২০ লাখ মানুষের চাকরি হয়েছে। পাশাপাশি বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে ‘শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২’-এর সাময়িক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রাথমিক এই জরিপের ফলাফল পরে পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানানো হয়।প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২-এর প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান।

৫ বছরে দেশে শ্রমশক্তি বেড়েছে ১ কোটি

শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২২ সালে বাংলাদেশে কর্মরত জনবল ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। ২০১৬-২০১৭-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত জনবল ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ছিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ আর নারী ২ কোটি।

৫ বছর পর পুরুষ শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার। আর নারী শ্রমশক্তি ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার। সেই হিসাবে দেশে গত ৫ বছরে শ্রমশক্তি বেড়েছে ৯৯ লাখ ১০ হাজার জন। এই শ্রমশক্তি গণনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ও তার ওপরের জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

৫ বছরে ১ কোটি মানুষ নতুন চাকরি পেয়েছে

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে কর্মরত জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ। যার মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ২২ লাখ এবং নারী ১ কোটি ৮৬ লাখ।

৫ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সাল শেষে দেশে কর্মরত জনসংখ্যা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার পুরুষ, আর নারী ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার। এই ৫ বছরে দেশে ৯৯ লাখ ৮০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।

সপ্তাহে যারা এক ঘণ্টা কাজ করেছেন, তাদের কর্মরত ধরা হয়েছে। যারা বাসায় ২টি মুরগি পালন করেছেন তাদেরও কর্মরত ধরা হয়েছে।

দেশে বেকারত্বের হার কমেছে

২০২২ সালের জরিপে উঠে এসেছে দেশে বেকার জনবলের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। যার মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার পুরুষ আর ৯ লাখ ৪০ হাজার নারী। এই সময় বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দেশে বেকার জনবলের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। যার মধ্যে ১৪ লাখ পুরুষ আর ১৩ লাখ নারী।

সবচেয়ে বেশি মানুষ কৃষি খাতে কাজ করে

২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, বাংলাদেশে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ৩ কোটি ২২ লাখ শ্রমিক কৃষি খাতে কাজ করেন। শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার আর সেবা খাতে কাজ করেন ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।

৫ বছর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ২ কোটি ৪৭ লাখ শ্রমিক কৃষি খাতে কাজ করতেন।

বেকারত্বের হার কমা আর কৃষি খাতে শ্রমিক বাড়া নিয়ে প্রশ্ন

একদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ, অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। দেশ যখন অর্থনৈতিক চাপে আছে, সেই সময় বেকারত্বের হার কমা কতটা বাস্তবসম্মত- এই প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা এর আগে ঢাকার মধ্যে জরিপ করে দেখেছিলাম। করোনার মধ্যে ঢাকায় দ্রারিদ্র্যের হার কমেছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকার খুব দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে লকডাউন উঠিয়ে দেয়। তারপর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস চাকরিতে প্রভাব ফেলেনি। এ ছাড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্য পরিবর্তন হতে পারে।’

উন্নত অর্থনীতিতে কৃষি খাত থেকে শ্রমিক কমে সেবা খাতে বা শিল্প খাতে যায়, বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে কেন- এই প্রশ্নও ওঠে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এর উত্তরে বলেন, ‘আমি মনে করি এই কৃষিতে বাড়তি শ্রমিক এটা সাময়িক, এটা আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমি বলেছি প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করতে। মূল গবেষণায় তথ্য অন্য রকম আসতে পারে।’

জরিপের আওতা

এই জরিপ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এই জরিপ করার জন্য পুরো দেশকে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক গণনা এলাকায় ভাগ করা হয়। প্রতি এলাকা থেকে ২৪টি খানা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি তিন মাসে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা আর সারা বছরে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে তথ্য নেয়া হয়।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর এই জরিপ চালানো হয়।


বড়রা গিলে ফেলছে ছোটদের

আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৩৭
আরিফুজ্জামান তুহিন ও বীর সাহাবী

পাঁচ মাস ধরে উৎপাদনের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছেন খামারিরা। লোকসান দিয়ে বিক্রি করায় ছোট ও মধ্যম মানের খামারিদের বড় অংশ পথে বসে গেছেন, অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ হওয়া খামারিদের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার, যা মোট খামারের ৪০ শতাংশ। এতে দৈনিক চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ২০ শতাংশ বড় ফারাক হওয়ায় বাজারে ১৫০ থেকে প্রায় পৌনে তিন শ টাকায় গিয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম পৌঁছায়। বড় অঙ্কের লাভ করে এই খাতের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে মুরগি বিক্রি শুরু করেছে। এতে ছোট খামারিরা ফের লোকসানের মুখে পড়েছেন।

বর্তমানে প্রতিটি মুরগির উৎপাদন ব্যয় থেকে খামারিরা ১ টাকা লোকসান দিচ্ছেন। এতে আগামী তিন মাসের মধ্যে ছোট ও মাঝারি খামারিদের একটি অংশ ক্রমাগত লোকসানে পড়ে প্রতিযোগিতা থেকে হারিয়ে যাবেন। তখন চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের মধ্যে ফারাক তৈরি হবে। ডিমের দাম এ সময় দ্বিগুণ হতে পারে।

উৎপাদন খরচের কমে মুরগির দাম বাড়ানোর বিষয়টি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মিলগেটে ১৯৫ টাকায় বিক্রির আশ্বাস দিলেও গত মঙ্গলবার মিলগেটে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫৩-১৫৫ টাকায়। এখন এই দু-এক দিনের ব্যবধানে তারা কীভাবে ১৯৫ থেকে ১৫৫ টাকায় নেমে এল? এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা নীল নকশা করে ব্রয়লারের দাম বাড়িয়েছে সাধারণ পোলট্রি ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে দেয়ার জন্য।

কম দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি

পাঁচ মাস আগে প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন ব্যয় ছিল ১৩৫ টাকা। এ সময় খামারিরা প্রতি কেজি পাইকারি ব্রয়লার মুরগির দাম পেয়েছেন ১১৫ টাকা। কেজিতে এ সময় প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে ২০ টাকা কমে বিক্রি করেছেন খামারিরা।

পাঁচ মাস আগে সপ্তাহে মুরগির উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৭২ লাখ পিস বা ২৯ হাজার টনের কিছু বেশি। প্রতিদিন এ সময় মুরগির জোগান ছিল গড়ে ৪ হাজার ১৭৭ টন। এ সময় খামারিরা পাইকারি মুরগি গড়ে বিক্রি করেছেন ১১৫ টাকায়, আর তা খোলাবাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত বদল হয়ে দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকায়।

টানা লোকসানের ধকল টানতে না পেরে মধ্য ও ছোট খামারিদের ৪০ শতাংশই বন্ধ করে দিয়েছে বলে ফিডমিল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য। পাঁচ মাস আগেও দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে খামারি ছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯, বর্তমানে সেখানে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার চালু আছে। উৎপাদনের ১০ শতাংশ আসে দেশের ১০টি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে। দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুরগি উৎপাদন যারা করে তাদের মধ্যে সিপি, সুগনা, আফতাব, কাজী, আলাল, নাহারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯০ শতাংশ মুরগির জোগান আসে দেড় লাখের বেশি ছোট ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে। বর্তমানে সপ্তাহে মুরগি উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪২ লাখ বা ২৪ হাজার টনের কিছু বেশি। দৈনিক মুরগির জোগান রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টন। অথচ এই সময় দৈনিক প্রায় ৪ হাজার টন মুরগির চাহিদা রয়েছে, চাহিদার মধ্যে দৈনিক ৫০০ টনের ঘাটতি থাকায় মুরগির দাম বেড়ে যায়।

খামারিরা বলছেন, মুরগি ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি খামারে রাখা যায় না। কারণ এরপর মুরগির বৃদ্ধি হয় না, কিন্তু খাবার খাওয়া ও দেয়া অব্যাহত থাকে। ফলে ব্রয়লার মুরগি সর্বোচ্চ ৩৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করে ফেলতে হয়, এটি সংরক্ষণ করে রাখারও সুযোগ নেই। খামারির লাভ হোক আর লোকসান হোক, ৩৫ দিনের মধ্যে মুরগি বিক্রি করতেই হয়। আর সেই সুযোগটিই নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা।

মুরগির দাম বাড়ায় সারা দেশে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। তবে মুরগির দাম বাড়ানোর পেছনে বড় দায় মধ্যস্বত্বভোগীদের। ৩০ থেকে ৩৫ দিন মুরগি পেলে কেজিপ্রতি ২০ টাকা লাভ করা কঠিন হয়ে যায় খামারিদের।

ফের বিপাকে পড়েছেন খামারিরা

গত এক বছরে মুরগির খাবার বা ফিডের দাম গড়ে ৭০ শতাশ বেড়েছে। কিন্তু এই সময় মুরগির মাংসের দাম বাড়েনি। প্রতি কেজি পোলট্রি মুরগির উৎপাদন ব্যয় এখন ১৬৫ টাকা। এর নিচে মুরগি বিক্রি করলে নিট লোকসানে পড়বেন খামারিরা। গত সপ্তাহের আগে খামারিরা গড়ে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন পাইকারি মুরগি। সেই মুরগি মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত ঘুরে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে গিয়ে দাম পড়ে প্রায় ৩০০ টাকা। কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা লাভ করে খামারিরা আগের লোকসান কাটিয়ে উঠছিলেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পোলট্রি মুরগির দাম নিয়ে এ খাতের বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর বড় করপোরেট ব্যবসায়ীরা ১৫০ টাকায় মুরগি বিক্রি শুরু করলে ফের লোকসানে পড়া শুরু করেন দেশের ৯০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি খামারি।

গত ২৭ মার্চ গাজীপুরে ১৫০ টাকা, চট্টগ্রামে ১৫৫, বরিশালে ১৮০, ময়মনসিংহে ১৫০, ফরিদপুরে ১৫০, বগুড়ায় ১৬০, ঢাকায় ১৬০ টাকা দামে প্রতি কেজি পাইকারি মুরগি বিক্রি হয়েছে। এতে খামারিরা ফের লোকসানে পড়েছেন। ঢাকায় মুরগি আসে গাজীপুর থেকে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ব্রয়লারের দাম কমার কারণ হচ্ছে এতদিন প্রান্তিক খামারিদের পণ্য ছিল না। এখন যখন প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে ফিরলেন, তখন ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বাচ্চারও দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক খামারিরা তারপরও উৎপাদনে এসেছেন। ঠিক এই মুহূর্তে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে করপোরেটরা এখন কম দামে বিক্রি করা শুরু করেছে।

ডিমে লোকসান করছেন খামারিরা

স্থানভেদে বর্তমানে প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে প্রকৃত ব্যয় ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৭০ পয়সা। আর গতকাল বুধবার প্রতি পিস ডিম পাইকারি বাজারে গাজীপুরে ৮ টাকা ৯০ পয়সা, রাজশাহীতে ৮ টাকা ৫০ পয়সা, খুলনা ৯ টাকা ৫০ পয়সা, বরিশালে ৯ টাকা ৪০ পয়সা, ময়মনসিংহ ৮ টাকা ৯০ পয়সা, সিলেটে ৯ টাকা ৭০ পয়সা, রংপুরে ৯ টাকা ও বগুড়া ৮ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস ডিম বিক্রি করে খামারিরা লোকসান করছেন ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত। গাজীপুর থেকে কিনে আনা ডিম ঢাকায় আসার পর প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একটি মুরগি ৫২ সপ্তাহ ধরে বড় হওয়ার পর ডিম পাড়া শুরু করে। পেলে-পুষে ৫২ সপ্তাহ বড় করার পর খামারিরা প্রতি পিস ডিমে ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত যখন লোকসান করছেন, ঠিক তখন ঢাকার মধ্যস্বত্বভোগী দোকানিরা প্রতি পিস ডিমে ১ টাকা ৮০ পয়সা লাভ করছেন।

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে ১৮ হাজারের মতো খামার আছে। এই খামারের দৈনিক ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা ৬ কোটি ৬৫ লাখ। বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ডিম। ডিম উৎপাদনক্ষমতা থেকে ২৫ শতাংশ কম ডিম উৎপাদন করছেন খামারিরা। লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে বহু খামারি পথে বসে যাবেন। তখন চাহিদার চেয়ে কম ডিম উৎপাদন হবে। আর এই সুযোগেই বড় করপোরেট ডিম উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা রাতারাতি ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।

১৮ হাজার খামারির মধ্যে ৯০ শতাংশ ডিম আসে ছোট ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে। বাকি ১০ শতাংশ ডিম আসে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডায়মন্ড এগ, কাজী ফার্মস, আফতাব, প্যারাগান, সিপি অন্যতম।

যেখানে নজর দিতে হবে

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারিদের কাছ থেকে মুরগি বা ডিম কেনার কোনো সময় পাকা মেমো দেয়া হয় না। ফলে সরকারের কোনো নজরদারি সংস্থার পক্ষে মুরগি ও ডিমের প্রকৃত ক্রয়মূল্য বের করা সম্ভব না। মেমো ছাড়া কেউ মুরগি ও ডিম খামারিদের কাছ থেকে কিনতে পারবে না- এমন ব্যবস্থা সরকার করে দিলে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মুরগি, মাছ ও গোখাদ্যের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ

গত এক বছরে মাছ, মুরগি ও গোখাদ্যের দাম বেড়েছে গড়ে ৭০ শতাংশ। পোলট্রি মুরগি ও ডিম উৎপাদনের জন্য মুরগির (লেয়ার) খাদ্য উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল ছয়টি। মাছের খাদ্য উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল ১০টি ও গোখাদ্যের প্রধান কাঁচামাল ৭টি। এসবের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, সয়াবিন, রাইস পলিস, তেল, ডিওআরবি, মেজ গ্লুটেন, রেপসিড, ফিশ মিল, ফিশ অয়েল, চিটাগুড় (মোলাসেস) উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসও রয়েছে, যার বেশির ভাগই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। সব মিলিয়ে আমদানির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।

বাজারের তথ্য বলছে, মুরগি ও গোখাদ্যের প্রধান উপাদান ভুট্টার প্রতি কেজি দাম ২০২০ সালের জুলাইয়ে ছিল ১৭ টাকা ৩০ পয়সা, সেটি ২০২১ সালের জুলাইয়ে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সা আর গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ টাকা। এক ভুট্টার দামই বেড়েছে ১৩১ দশমিক ২১ শতাংশ। সয়াবিন অয়েল কেক প্রতি কেজি ২০২০ সালের জুলাইয়ে ছিল ৩৮ টাকা, সেটি ২০২১ সালের জুলাইয়ে ৪৪ টাকা ৫৪ পয়সা আর গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ টাকা। সয়াবিন অয়েল কেকের দাম বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এভাবে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও গমের আটা ১৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, মুরগি ও গোখাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ধেক আমদানি করতে হয়। ডলারের দাম ২৭ শতাংশ বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করার পর শুধু ডলারের দামের ব্যবধানে ২৭ শতাংশ দাম বেড়ে যাচ্ছে। এরপর রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম। গত এক বছরে ফিডের দাম অন্তত ৭০ শতাংশ বেড়েছে। আর সব গিয়ে পড়েছে খামারিদের উৎপাদকের ওপর। ডিম ও মুরগির যথাযথ দাম খামারিরা না পেলে খামার বন্ধ হয়ে যাবে, তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।

তিনি বলেন, মুরগি ও ডিম যখন পাইকাররা কেনেন, তখন তারা খামারিদের কোনো পাকা রসিদ দেন না। কেনাবেচায় পাকা রসিদ নিশ্চিত করা গেলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। ৫২ সপ্তাহ মুরগি পেলে ডিম উৎপাদন করে খামারিরা প্রতি ডিমে লোকসান দেবেন গড়ে দেড় টাকা আবার পোলট্রি মুরগির কেজিতে দেবেন ১০ থেকে ২০ টাকা। আর সেই মুরগি ও ডিম দোকানে তুলে এক দিনের মাথায় মধ্যস্বত্বভোগীরা অযৌক্তিক বেশি মুনাফা করবেন- এটা হতে পারে না।


আবার সেরা হবে জনতা ব্যাংক

মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৭:০২
আবদুর রহিম হারমাছি ও এ এস এম সাদ

একসময় দেশের সেরা ব্যাংক ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। কিন্তু নানা ঝামেলায় সেই সাফল্যে ভাটা পড়েছিল। সুখবর হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়িয়েছে জনতা ব্যাংক। আবার দেশের সেরা ব্যাংক হতে চলেছে জনতা ব্যাংক। কীভাবে সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে, সেসব বিষয় নিয়ে দৈনিক বাংলায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি ও প্রতিবেদক এ এস এম সাদ

দৈনিক বাংলা: জনতা ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা কী?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: আগের সব সংকট অতিক্রম করে জনতা ব্যাংকের সব সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, এসএমই প্রকল্প, কৃষিঋণ বিতরণসহ ব্যাংকিং খাতের প্রায় সব মাপকাঠিতে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমছে। এই বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি এটা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি অনুসরণ করে এননটেক্স, ক্রিসেন্ট লেদারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

দৈনিক বাংলা: এননটেক্স গ্রুপের ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এই গ্রুপের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: এননটেক্স গ্রুপ উৎপাদনমুখী একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। তাই নিয়ম মেনেই এই প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণ করেছে জনতা ব্যাংক। তবে একটা সময় নানা রকমের সমস্যার কারণে এননটেক্স গ্রুপ খেলাপি হয়ে পড়ে। খেলাপির সঙ্গে সুদের পরিমাণও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা সুদ উঠে যায়। গত বছর সুদ আরোপের ফলে পাওনা দাঁড়ায় ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল থেকে কোম্পানিটি রিস্ট্রাকচার শুরু করে। এরপর ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে এননটেক্স ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগের সার্কুলার অনুসরণ করে সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে এননটেক্সের কাছ থেকে নগদ ২ শতাংশ বা ১৪২ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট নিয়ে সুদ মওকুফ করা হয়।

এননটেক্স গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে বড় পরিমাণের ঋণ দেয়া হয়েছে। খেলাপি হওয়ায় গ্রুপটির মালিক এই দায় থেকে বের হতে চাইছিল। তাই তিনি জনতা ব্যাংককে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে কিংবা হস্তান্তর করে ঋণ পরিশোধ করবেন তিনি। সে জন্য ১৪২ কোটি টাকা নগদ আদায় করে সুদ মওকুফ করা হয়েছে। ফলে জুন পর্যন্ত বাকি টাকা পরিশোধের সময় দেয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড ৬ দশমিক ৩৪। ফলে ব্যাংকটির কোনো লোকসান হয়নি।

দৈনিক বাংলা: এননটেক্স গ্রুপের ঋণটি আদায় হলে জনতা ব্যাংকের কী ধরনের সুবিধা হবে?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: এননটেক্সকে যে পরিমাণ অর্থঋণ দেয়া হয়েছে তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এই ঋণের ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের বাইরে রয়েছে। অর্থের দিক বিবেচনা করলে এটি বড় রকমের ঋণের পাওনা রয়েছে। তাই এই টাকা আদায় করলে জনতা ব্যাংকের তারল্য অনেক বেড়ে যাবে এবং সার্বিক দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান শক্তিশালী হবে। বিশাল পরিমাণের অর্থ ব্যাংক ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত আসার জন্যই এসব প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। বাকি টাকা আদায় করতে পারলে জনতা ব্যাংক এ বছর শেষে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে। জনতা ব্যাংকের অবস্থান আরও ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন ঘটবে। ফলে জনতা ব্যাংক শ্রেষ্ঠ ব্যাংকে পরিণত হবে। কারণ নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমাণে কস্ট অব ফান্ডে করা সম্ভব হয়েছে। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের নেগেটিভ অ্যাসেটও কমেছে। এ ছাড়া সুদ মওকুফ একটা চিরাচরিত নিয়ম।

দৈনিক বাংলা: দেশের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: সত্যি কথা বলতে কী, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বর্তমানে দেশের পুরো ব্যাংকিং খাত খারাপ অবস্থানে রয়েছে। ফলে ব্যাংকের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থায় নানা রকমের সংস্কার করতে বলেছে। তাই জনতা ব্যাংক সব দিক বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। এখন আমাদের ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের ১৭ শতাংশ খেলাপি; টাকার অঙ্কে যা ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একটা সময় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপির শীর্ষে থাকলেও বর্তমানে দ্বিতীয়তে জনতা ব্যাংক। ফলে জনতা ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

একটা সময় দেশের বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। নানা সময়ে সেগুলো খেলাপি হয়ে গেছে। চলতি বছর এই খেলাপি ঋণের অর্ধেক আদায় করা হবে। ফলে ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই ব্যাংকটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।

আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে, অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় জনতা ব্যাংকের অবলোপন বা রাইট অব ঋণের পরিমাণ কম। জনতার অবলোপন ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে বড় রকমের কোনো খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়নি। কিছু ক্ষুদ্র কৃষিঋণ ছাড়া বাকি ঋণ অবলোপন করা হয়নি। ফলে দেশের তিনটি বৃহৎ ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকের অবলোপন ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে কম। ফলে মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বড় ঋণগুলো অবলোপন করলে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে যেত।

দৈনিক বাংলা: বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জনতা ব্যাংকের আমানতের কী অবস্থা?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: এখানেও আমি ভালো তথ্য দিতে চাই। অন্যান্য ব্যাংকের আমানত বা ডিপোজিট কমলেও জনতা ব্যাংকের আমানত বাড়ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১২ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে এবং সরকারি এলসি খোলা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংকে এলসি খুলেছে। স্কয়ার, নাসা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ দেশে যত বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে সব কোম্পানির ঋণপত্র বা এলসি খোলে জনতা ব্যাংকে।

গত বছর ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে জনতা ব্যাংক। আবার ২০২১-এর চেয়ে ২০২২ সালের নিট মুনাফা ৪০০ কোটি টাকা বেড়েছে। একই সময়ে নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ৫০৭ কোটি টাকার বেশি। নতুন আটটি শাখা চালু হয়েছে। ২০২১ সালে অ্যাসেট ছিল ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রেও বড় সাফল্য দেখিয়ে চলেছে জনতা ব্যাংক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী ভাইবোনেরা। চলতি মার্চ মাসের আরও বেড়েছে। ২৩ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ৬৬ মিলিয়ন ডলার। আশা করছি মাস শেষে এটি ৮০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ফলে সার্বিকভাবে বলতে চাই, জনতা ব্যাংকের অবস্থা ও অবস্থান ভালোর দিকে যাচ্ছে। দিন যত যাবে, ব্যাংকের তত উন্নতি হবে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। একটা কথা আমি বলতে চাই, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই দেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটিয়েছি। জনতা ব্যাংককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমার একটি চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করছি।

দৈনিক বাংলা: এননটেক্স ছাড়াও ক্রিসেন্ট গ্রুপসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনতা ব্যাংকের মোটা অঙ্কের খেলাপি ঋণ রয়েছে। সেগুলোর কী অবস্থা?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: ক্রিসেন্টের ৭০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে এ গ্রুপের মাধ্যমে পাওনা টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে আদায় করা হবে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবিধান মেনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে অব্যাহত থাকলে জনতা ব্যাংকের অবস্থান ২০১০ সালের আগে যে রকম ছিল সেই অবস্থানে ফিরে যাবে। জনতা ব্যাংক শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, সাব-কন্টিনেন্টের মধ্যে একটি শক্তিশালী ব্যাংকে পরিণত হবে।


সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে ৩৫% পরিবার

রাজধানীর ব্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৩৯
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। বাজারের আগুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি চড়ছে; উঠেছে প্রায় ৯ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির এই চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের এক জরিপে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি।

দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

সানেমের জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের বেশির ভাগ কোনো না কোনো অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। তাদের মাসিক আয় ১৪ হাজার টাকার বেশি নয়। তাদের ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ ওএমএস ও টিসিবির তালিকাভুক্ত এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সুবিধাভোগী।

বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ?’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল এবং গরিব মানুষের আয়-ব্যয় চিত্র তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি গরিবদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা জানতে গত ৯ থেকে ১৮ মার্চ সারা দেশে আটটি বিভাগের প্রতিটিতে ২০০ জন করে মোট ১ হাজার ৬০০ নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

জরিপে অংশ নেয়াদের অর্ধেক বাস করেন বিভাগীয় শহরে, বাকিরা উপজেলা শহরের আশপাশে। এদের মধ্যে ৪৫৬ জন সরকারের খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রি কর্মসূচি ওএমএস ও ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির সুবিধাভোগী। বাকিদের সবাই অন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সরকারের কাছ থেকে নগদ টাকা পান।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এই ছয় মাসের তথ্য নেয়া হয়েছে। সানেম বলছে, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে না কমেছে, তা তুলে ধরার জন্য এই জরিপ করা হয়নি। জরিপ করা হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের সামনে নিয়ে আসার জন্য।

সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বাড়তে থাকায় গত ছয় মাসে যে ৭৪ শতাংশ পরিবার ধার করে চলেছে, তাদের ধার করা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ হবে, এমন পরিস্থিতি এখনো আসেনি। বরং পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে যে, আগামী ছয় মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে। জরিপ বলছে, ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আর সঞ্চয় বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার।

গত ছয় মাসে ধারের উৎস হিসেবে ৪৫ শতাংশ পরিবার বেছে নিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের প্রতিষ্ঠান। সানেম মনে করে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ সুদের দুষ্টচক্রে পড়ে এবং পরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। ধার করার জন্য আরও অনেক পথ খুঁজছে মানুষ। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ পরিবার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সমবায় সমিতি থেকে ধার করছে ২৩ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ব্যাংক ও মহাজনি ঋণ নিয়েছে যথাক্রমে ১৪ ও ৩ শতাংশ পরিবার।

সানেম বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেয়া ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবারে মাসে চারবার মুরগি খেত, এখন তারা দুইবার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।

খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং সেবায়ও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জরিপের তথ্য বলছে, শহরের নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্য কিনতে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের পরিবারগুলো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে খরচ কমিয়েছে বেশি।

সানেমের জরিপে উঠে এসেছে, ঘরে খাবার আছে কি না, তা নিয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারে আগের তুলনায় উদ্বেগ বেড়েছে। ফলে খাবারে বৈচিত্র্য কমেছে। খাদ্যতালিকায় থাকছে মাত্র কয়েকটি পদ। ৩৭ শতাংশ পরিবার বলেছে, তাদের এখন মাঝেমধ্যে কোনো একবেলা খাবার না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় খাবার কম খাচ্ছে বলে মনে করে ৭১ শতাংশ পরিবার।

জরিপকারীদের কাছে ১৮ শতাংশ পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন যে, এই ছয় মাসে এমন কিছুদিন গেছে, যেদিন তাদের পুরো দিনও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। খাবারের গুণগত মানেও ছাড় দিতে হচ্ছে এসব মানুষের। যার কারণে আগের থেকে কম দামি মাছ-মাংস খেতে হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার ভয় বেশি শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারে।

জরিপে অংশ নেয়া ৫৬ শতাংশ পরিবার মনে করে, আগামী ছয় মাসে তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। ৪১ শতাংশ পরিবার এটাও বলছে, ভবিষ্যতে তাদের ভিক্ষা বা শর্তহীন সাহায্য নিয়ে চলতে হতে পারে। টিকে থাকার জন্য শহর থেকে গ্রামে যেতে চায় বেশির ভাগ মানুষ। বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশ মানুষ বলেছেন, সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সানেম বলছে, ময়মনসিংহ, উত্তরাঞ্চল ও সিলেটের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার ভয় বেশি।

সানেম আরও বলছে, খাবার জোগাড় করতে জমি বিক্রি করে চলতে হতে পারে বলে মনে করে ১৭ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার। অবস্থা সামাল দিতে ভবিষ্যতে ঘরের শিশুদের শ্রমে নিযুক্ত করতে হতে পারে বলে ১৯ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসায় ২৪ শতাংশ পরিবার মনে করে ব্যয় কমাতে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করতে হতে পারে। মেয়ে-সন্তানকে দ্রুত বিয়ে দেয়ার কথাও বলছেন অনেকে। ২৫ শতাংশ পরিবার মনে করে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের হাতে এখন আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই। তারা এখন নিরুপায়।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সানেম মনে করে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য আমদানিতে আরও বেশি কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বাজার তদারকিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রয়োজনে ব্যবসায়ী সংগঠনদের সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। এ ছাড়া বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে জানায় সানেম।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে, তার জন্য জরিপ না করেও বলে দেয়া সম্ভব, তারা কেমন আছে। এ জন্য এই জরিপে যা উঠে এসেছে, তা হয়তো অনেকের জানা। তবে নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য পেশাগত দায়িত্বের মধ্য দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ যে চাপে আছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘এই জরিপে দেশের সব নিম্ন আয়ের মানুষের চিত্র পুরোপুরি উঠে এসেছে কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে, এমনটা বলা না গেলেও সামগ্রিক অবস্থার একটা ধারণা অন্তত পাওয়া সম্ভব। সানেমের আরও গবেষণা আছে, যেখানে দেখা গেছে সরকারি মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান যা বলে, নিম্ন আয়ের মানুষ তার চেয়ে বেশি চাপ অনুভব করে। সুতরাং বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরতে আমরা জরিপটি করেছি।’

জরিপের বিষয়ে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘ঋণ নেয়াকে অনেকে উদ্ধার পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়েছেন। তবে এসব ঋণে সুদের হার অনেক বেশি। ফলে সুদের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়তে পারে এসব মানুষ। বিষয়টি এসব মানুষকে ভবিষ্যতে আরও ভোগাবে। আমাদের দেশে বিমা সুবিধা কম, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়ে এসব মানুষ বিনিয়োগ কম করবে। সার্বিকভাবে এসব বিষয় এসডিজির লক্ষ্য অর্জন থেকে পিছিয়ে দেবে। বিষয়টি নিয়ে এখনই নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।’


চলতি বছর এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৫%

দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশে শুরু হয়েছে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া ২০২৩। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৯ মার্চ, ২০২৩ ২০:১১
 মৌসুমী ইসলাম, চীনের হাইনান থেকে

২০২৩ সালে এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের বছর ২০২২ সালে যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ইকোনমিক আউটলুক এবং ইন্টিগ্রেশন প্রগ্রেস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন এমন তথ্য উঠে আসে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকা শক্তি এশিয়া অঞ্চল। ২০২৩ সালে এই অঞ্চলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে এটি আশার খবর।

দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশে গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া ২০২৩। ছিয়ংহাই সিটির বোয়াও শহরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই ফোরাম। এখানে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ব্যক্তি, ব্যবসায়ী নেতাসহ প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি অংশ নিয়েছে।

বোয়াও-এ এশিয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘একটি অনিশ্চিত বিশ্ব: চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে উন্নয়নের জন্য সংহতি এবং সহযোগিতা।’

ফোরামে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক ঐক্যমত্যকে সুসংহত করার লক্ষ্যে উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিকরণ, দক্ষতা ও নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।

মূল প্রতিবেদনে আশা করা হয়েছে, এই বছর অঞ্চলটি বিশ্বকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে নিয়ে যাবে। বৈশ্বিক চাহিদা দুর্বল হওয়া এবং অনিশ্চয়তার চাপ সত্ত্বেও এশীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ায় এশিয়ান রপ্তানিকারকদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু চীনের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তন এশিয়ার বাকি অংশ এবং বিশ্বের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত পাঠাচ্ছে বলে দাবি করা হয়।

বোয়াও ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল লি বাওডং বলেছেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্যে উত্তরণে এশিয়া একটি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যে এশিয়া সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে ত্বরান্বিত করবে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক উৎপাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আর্থিক একীকরণ এবং সংহতির অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে।’

প্যানেল আলোচনায় বলা হয়, সামনের অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এশিয়ার অর্থনীতির এ বছর শক্তিশালী অবস্থানে যাবে।

বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া একটি বেসরকারি, অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা। এশিয়ার ২৮টি দেশ নিয়ে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এটি এশিয়ায় আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রচার এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করে।

২০২০ সালে চীন সমগ্র হাইনান দ্বীপকে একটি বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী এবং উচ্চ-স্তরের ফ্রি ট্রেড পোর্ট বা এফটিপিতে পরিণত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করেছে। তারপর থেকে, হাইনান এফটিপি-র উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য শূন্য শুল্ক এবং সহজ বাজার এবং বিদেশী বিনিয়োগ সহজ করাসহ নীতি সহজীকরণ করেছে।

বলা হয়, হাইনানে ২০২৩ সালের মধ্যে স্বতন্ত্র কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সমগ্র দ্বীপ জুড়ে নিজস্ব কাস্টমস কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বোয়াও ফোরাম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ এবং ঐক্যমত্য তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

বিষয়:

সূচকের মিশ্রাবস্থায় বেড়েছে নামমাত্র লেনদেন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
আপডেটেড ২৯ মার্চ, ২০২৩ ১৫:০৬
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার মূল্য সূচকের উত্থান-পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে নামমাত্র।

বুধবার ডিএসইতে ৩৮২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ, আগের দিন থেকে লেনদেন বেশি হয়েছে ১১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইতে ২৭২ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ২০৬ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে ৩০৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ২৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯৮টির।

অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। সিএসইতে ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।


বিদেশি ঋণে দৈন্যদশা

আপডেটেড ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। এই চাপ সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখন বিদেশি ঋণ-সহায়তা। কিন্তু কম সুদের এই ঋণ প্রবাহে দৈন্যদশা দেখা দিয়েছে।

দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণের ছাড় ও প্রতিশ্রুতি দুটিই কমছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) উন্নয়ন সহযোগীরা ৪৮৭ কোটি (৪.৮৭ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই আট মাসে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ৫৮৯ কোটি (৫.৮৯ বিলিয়ন) ডলার অর্থায়ন করেছিল দাতারা।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে দাতারা। অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মাত্র ১৭৮ কোটি (১.৭৮ বিলিয়ন) ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি- ৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের পর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম উৎস হচ্ছে বিদেশি ঋণ-সহায়তা। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণ ও এই ঋণের প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়া মানে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলার বেশি-৪৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয় বাড়ছে। রেমিট্যান্সও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই দুই সূচক যদি না বাড়ত, আর আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি যদি না আসত, তাহলে কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যেত। সে কারণে রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যেসব ঋণ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত ছাড় করাতে দাতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে।’

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।

কিন্তু সেই জোয়ার আর নেই। অল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। ইতিমধ্যে ৪৭ কোটি ৬০ ডলার পাওয়াও গেছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে বাড়তি বাজেট সহায়তার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এসব ঋণ পাওয়া গেলেও এবার অর্থবছর শেষে মোট ঋণ-সহায়তার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীরা এখন বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে বেশি সহায়তা দিচ্ছে বিধায় বিদেশি ঋণের ছাড় ও প্রতিশ্রুতি কমেছে। এ ছাড়া প্রতিশ্রুতি হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ পাইপলাইনে থাকলেও আমরা সেটি দ্রুত পাচ্ছি না। দাতারা নতুন প্রতিশ্রুতি দেয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে, তার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গতকাল বিদেশি ঋণপ্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিদেশি ঋণপ্রবাহের উল্লম্ফন নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ৪৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছিল, যা ছিল গত জুলাইয়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসে তা হোঁচট খায়। ওই মাসে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করে দাতারা, যা ছিল আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম।

পরের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অবশ্য তা কিছুটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে আসে ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আর অক্টোবরে আসে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে তা কমে ৪৯ কোটি ডলারে নেমে আসে। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে অবশ্য বিদেশি ঋণ-সহায়তার অঙ্ক বেশ বাড়ে; ওই মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ১৩২ কোটি ডলার এসেছে। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে ৪৮ কোটি ডলার। সবশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ৬১ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ কম।

এই অর্থবছরে বিদেশি ঋণ কমার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসান মনসুর বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণ-সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর কোভিডের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিতে হচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোকে। সে কারণেই বিদেশি ঋণ কমছে। আমার মনে হচ্ছে, এবার গতবারের চেয়ে ঋণ বেশ খানিকটা কম আসবে।’

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দাতাদের কাছ থেকে যে ৪৮৭ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য এসেছে ৪৬৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। আর অনুদান পাওয়া গেছে ২১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময় প্রকল্প সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ৫৭৩ কোটি ডলার। অনুদান এসেছিল ১৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশি ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড় কমলেও ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আগে নেয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ দাতাদের ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।


ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে জনতা ব্যাংক এমডির বৈঠক

ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ
আপডেটেড ২৯ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৫২
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সম্প্রতি রোমে ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইতালির সঙ্গে জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএলের এজেন্সি অপারেশন চালুর বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইতালির প্রতিনিধিবৃন্দ এজেন্সি অপারেশনের অনুমোদন প্রাপ্তির লক্ষ্যে উপস্থাপিত বিজনেস প্ল্যানের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএলের কাস্টমার ডাটাবেজে বেনিফিশিয়ারিদের কিছু তথ্য সংযোজন করার পরামর্শ দেন।

জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি (জেইসি) এসআরএলের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান হিসেবে জনতা ব্যাংকের এমডি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ, জেইসি পরিচালক জিওভানি ইম্বারগেমো, কমার্শিয়ালিস্ট স্টেফানো সিরুচ্চি এবং মানি লন্ডারিং-বিষয়ক কর্মকর্তা ডট স্টেলা লিবার্তো বৈঠকে অংশ নেন।


ব্যাংকে এক পরিবারের তিনজনের বেশি পরিচালক নয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

এক পরিবার থেকে ব্যাংকে তিনজনের বেশি পরিচালক হওয়ার পথ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে ব্যাংকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হচ্ছে।


ফের ২০০ কোটিতে নামল পুঁজিবাজারের লেনদেন

মঙ্গলবার ডিএসইতে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৭২ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকার। ছবি: ডিএসই ওয়েবসাইট
আপডেটেড ২৮ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৩৬
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা পতন চলছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্য দিবস মঙ্গলবারও সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুদিন পতন দেখল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা। এ দিন সূচকের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।

মঙ্গলবার ডিএসইতে ১০ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট সূচক কমে লেনদেন শেষ হয়েছে। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৭২ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা কম। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর আগে গত ২৩ মার্চ পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৮৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকার শেয়ার।

ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন হওয়া ২৮৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৮টির এবং কমেছে ৫৬টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২০১টির। এদিন ডিএসইতে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন ইস্টার্ন হাউজিং ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

এদিন লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেল ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচ ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, আরডি ফুড ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ১২ কোটি ৯ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, শাইনপুকুর ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, আলহাজ টেক্সটাইল ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং আমরা নেটওয়ার্ক ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

দেশের অপর শেয়ারবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস সোমবার ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১০১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ৩৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৪৮টির।


ডলার বিক্রি কমছে, বাড়ছে রিজার্ভ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
আবদুর রহিম হারমাছি

রমজান মাস সামনে রেখে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সে কারণে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ফের গতি ফিরেছে। চলতি মার্চ মাসের ২৪ দিনেই ১৬০ কোটি (১.৬০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এই অঙ্ক ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির পরিমাণও কমছে। আর এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে। বাড়তে শুরু করেছে এই সূচক।

চলতি মাসের বাকি ৭ দিনে এই হারে রেমিট্যান্স আসলে ছয় মাস পর অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২০৭ কোটি (২.৭ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।

রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৭ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৪ দিনে ১৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি প্রবাসী। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বা ৭১৩ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাস ২৪ দিনে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ) ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৯ লাখ (১৫.৬১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।

২৪ মার্চ থেকে রমজান মাস (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) শুরু হয়েছে। রোজায় প্রতিবারের মতো এবার বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২২ অথবা ২৩ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হবে। ঈদকে সামনে রেখে আরও বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে বলে আশা করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। সে হিসাবে এপ্রিল মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে বলে মনে করছেন তারা।

টানা তিন মাস বাড়ার পর ফেব্রুয়ারিতে হোঁচট খায় রেমিট্যান্স। ওই মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার আগের তিন মাস- নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ, ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ এবং ১৯৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

তবে মার্চ মাসে এই সূচকে ফের গতি ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার রেমিট্যান্সপ্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, এই মাসের প্রথম ২৪ দিনে ১৫৯ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ফেব্রুয়ারিতে এই সূচক চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এসেছিল। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। তবে বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর; প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খায়, এক ধাক্কায় নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে।

পরের তিন মাস টানা বেড়েছে, নভেম্বরে আসে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে আসে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে আরও বেশি, ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারি মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স কিছুটা কম আসে। এর কারণ, ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে শেষ হয়।’ এখন রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই রোজা ও দুই ঈদে রেমিট্যান্স বাড়ে; রোজা ও ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের বাড়তি প্রয়োজন মেটাতে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। এবারও তাই হচ্ছে।’ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও রেমিট্যান্স বাড়বে জানান তিনি।

ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় বেশি টাকা পাওয়ায় মাঝে কয়েক মাস প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোয় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডির বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করছেন মেজবাউল হক।

অর্থনীতির গবেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই কিন্তু সংকট সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি টাকা পাওয়ায় প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোয় মাঝে কয়েক মাস রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় এখন বাড়ছে। এই ধারা যদি জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে অর্থবছর শেষে ৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে। বর্তমান পেক্ষাপটে তা অবশ্যই ভালো।’

তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স যদি না বাড়ত তাহলে কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যেত; অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়ত। তাই রিজার্ভ যাতে আর না কমে যায়, সে জন্য রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও কম সুদের বিদেশি ঋণ বাড়ানোর দিকেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।’

ডলার বিক্রি কমছে, বাড়ছে রিজার্ভ

সোমবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। রেমিট্যান্স বাড়ায় গত কয়েক দিনে তা বেড়ে ৩১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাস ২৭ দিনে (২০২২ সালে ১ জুলাই থেকে ২৭ মার্চ) ১০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে কোনো অর্থবছরের (১২ মাস) পুরো সময়েও রিজার্ভ থেকে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।

তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ গত তিন মাস ধরে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ থেকে ১ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। অক্টোবরে বিক্রি করা হয় আরও বেশি ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে তা কিছুটা কমে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ডিসেম্বরে তা ফের বেড়ে ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন বিক্রি করা হয়। একক মাসের হিসাবে যা রেকর্ড; এর আগে কখনোই এক মাসে রিজার্ভ থেকে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।

এরপর থেকে অবশ্য বিক্রি কমছে। জানুয়ারিতে বিক্রি করা হয় ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে নেমে আসে ১ বিলিয়নের নিচে; বিক্রি হয় ৯২ লাখ ৪২ হাজার ডলার। আর চলতি মার্চ মাসের ২৭ দিনে অর্থাৎ গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৭০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।


বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য কমানোর আহ্বান সিপিডির

নতুন অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সোমবার সকালে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বাজার ব্যবস্থাপনার মান বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি। তারা বলেছে, বিশ্ববাজারের দোহাই দেয়া হলেও অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পণ্যের দাম বেশি। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

নতুন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সোমবার সকালে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ পরামর্শ দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে, কিন্তু সেগুলোর সুফল আমরা পাচ্ছি না। শুধু বিদেশি পণ্য নয়, দেশি পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার অনেক কারণ দেখানো হয়, এর কোনোটা যৌক্তিক কোনোটা যৌক্তিক নয়।’

‘আমাদের যে বাজার ব্যবস্থাপনা, যে করের ব্যবস্থাপনা, সেখানে কমিয়ে এনে কিছুটা স্বস্তি দেয়া যেতে পারে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যেটা থাকার কথা, সেটা আমরা দেখছি না। যার ফলে যেকোনো সংকট হলে, সেটার সুযোগ নেয়া হচ্ছে।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো দরকার। আর এই পণ্য যাদের দরকার তারা যেন পায়। আরও বেশি পণ্য বিক্রি করা দরকার। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ বাড়াতে হবে। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।’

‘প্রতিযোগিতা আইনকে শক্তিশালী করে একচেটিয়া ব্যবসাকে ঠেকাতে হবে। প্রত্যক্ষ অর্থ সহায়তা দেয়া দরকার, যেন সেটা গরিব মানুষের হাতে যায়’, বলেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা ২৮টি পণ্য পেয়েছি, যেগুলোর ওপর কর কমাতে হবে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলবে কর আহরণ কমে যাবে। তবু আমরা মনে করি, কর কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিলে সেটা সামগ্রিক কর আহরণে তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে চালের দাম থাইল্যান্ড অথবা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে নিচের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশি আছে। বাংলাদেশে চিনির দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা গুরুর মাংস আমদানি করি না। তারপরও বাংলাদেশে গুরুর মাংসের দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা যে সবসময় বিশ্ববাজারকে দোষ দেব সেটা নয়।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবার যদি পুরো মাস ভালো খায়, তাহলে তাদের খরচ হবে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ খাতেই যারা কাজ করছেন তাদের আয় এই খরচের তুলনায় কম। যদিও মূল্যস্ফীতির হার কম, কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাজারের পণ্যের দামের মিল নেই। আমরা দেখেছি বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।’


banner close