স্বর্ণশিল্পের জন্য বিশেষায়িত অঞ্চল ও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। ঢাকার বসুন্ধরা বা আশপাশে কোনো জায়গা ঠিক করলে সেখানে স্বর্ণশিল্পের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা যায়। সরকার নীতি সহায়তা দেবে। নিয়ন্ত্রক হিসেবে করণীয়ও করবে, যা অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।’
শুক্রবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) স্বর্ণমেলার দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) আয়োজিত ‘জুয়েলারি শিল্পে সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘স্বর্ণ অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস। বিষয়টি মাথায় রেখে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাজুস মিলে একটি নীতি করতে হবে। যদিও একটি নীতিমালা রয়েছে! স্বর্ণশিল্প ওই নীতিমালার ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে। যদি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সঠিকভাবে কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারি, তাহলে স্বর্ণশিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দক্ষ জনশক্তি আছে, আছে বাজারও। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেখানে বাঙালি আছে, সেখানে স্বর্ণালংকারের চাহিদা রয়েছে। এ সম্ভাবনার কথা বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বলে থাকেন।’
বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘শিল্পমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন স্বর্ণশিল্পের জন্য একটি নিরাপদ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাজুস কমিটি মিলে প্রয়োজনীয় করণীয় ঠিক করা হবে। এটা আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে ৪৪ লাখ মানুষ জড়িত। সরকার সঠিকভাবে সহায়তা করলে এই শিল্প দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পে পরিণত হবে। বাইরে থেকে মনে হতে পারে এই শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য কত টাকা লাগে! আমার জানা মতে, ৫০ লাখ টাকা দিয়ে এই শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তারপর আস্তে আস্তে বড় হবে। এই শিল্পের জন্য আমাদের একটি নিরাপদ জায়গা প্রয়োজন। এ খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি এটি। আমরা সরকারের কাছে ঢাকার মধ্যে এক হাজার থেকে তিন হাজার একরের একটি জায়গা চাই। যেখানে ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা থাকবে।’
আইন সংশোধন না করলে কোনো দিনই স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ হবে না উল্লেখ করে সায়েম সোবহান বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পে ৭ শতাংশের নিচে মূল্য সংযোজন হয়। স্বর্ণশিল্পে ৫০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা সম্ভব। স্বর্ণে বাংলাদেশে দক্ষ জনবল আছে, দক্ষ শিল্পী আছে। আমাদের শিল্পীরা অসাধারণ ডিজাইন করে। দেশের বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিও করা যাবে স্বর্ণালংকার।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বর্ণালংকার তৈরি ও ব্যবহার আবহমানকাল থেকে। স্বর্ণালংকারের জন্য এ অঞ্চল সুনামও কুড়িয়েছে। স্বর্ণালংকারের ৮০ শতাংশ তৈরি হয় ভারত ও বাংলাদেশে। এই সুনামকে কাজে লাগিয়ে স্বর্ণশিল্পের বিকাশ সম্ভব। এটা করা সম্ভব হলে দেশের রপ্তানির যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে তা পূরণে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে রপ্তানি আয়ের ৮৩ থেকে ৮৪ শতাংশ দখল করে আছে একটি পণ্য। বাকি সব পণ্য মিলে রপ্তানি হয় ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে গুটিকয়েক পণ্য দিয়ে তা সম্ভব নয়। এ জন্য রপ্তানিপণ্য বহুমুখী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণশিল্প সম্ভাবনা তৈরি করেছে। গত কয়েক বছর ধরে স্বর্ণভিত্তিক শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর গোল্ড রিফাইনারি প্রতিষ্ঠা ও বাজুসের দায়িত্ব নেয়ার মধ্য দিয়ে সেই প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে।’
তিন দিনব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আগামী শনিবার শেষ হবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য বাড়াতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে যাতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে পারি সেজন্য এ কমিশন করা হবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষ খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে একমত হয়েছি। খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। কিছু কিছু মধ্যবর্তী পণ্য যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে পারলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা আনারস রপ্তানির কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছি। তারা সব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘এন্টি-ডাম্পিং বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাহিরেও আমাদের পাকিস্তান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আমদানির ওপর এন্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করেছিল আমরা সেটা সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি। তারা এটা রাখবে আশা করি। আমরা পাকিস্তান বাজারে ডিউটি ফ্রি ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির কথা জানিয়েছি। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী আরো তিনদিন থাকবেন, এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু সমঝোতা স্বাক্ষর হবে। এরমধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কমিশন গঠন, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি। এই ট্রেড কমিশন বন্ধ ছিল না। সেখানে কিছু আলোচনা হতো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন করতে চাই। আমাদের দুই দেশে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ালে ভারতের সঙ্গে আরো বৈরিতা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে বাণিজ্যে সক্ষমতা তৈরি করা। এ বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করুন। এটা আমার কনসার্ন নয়। আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করছি। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশের স্বার্থে অন্য যে যে দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন হয় আমরা সেটা করব।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার কাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ। দেশের স্বার্থে আমাদের যা যা করণীয় সেটা আমরা করব। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের যে পাওনা-দেনা ছিল সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাণিজ্যের কোনো বিষয় না। আর এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ছিল না বললেই চলে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও বাণিজ্য বাড়াতে অসুবিধা দেখি না। আমাদের উভয় দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে এ বাণিজ্য বাড়ানো যায়। আমাদের উপদেষ্টা ধারণা দিয়েছেন পাকিস্থানে কি কি বিষয় রপ্তানি করতে পারে। আমরা পাকিস্তান থেকে বেশি আমদানি করি কিন্তু রপ্তানি করি কম। আমরা চাই এটা পরিবর্তন হোক। আমরাও যাতে বেশি রপ্তানি করতে পারি। এতে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
বাংলাদেশ পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কিনা এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার দিকে ঝুঁকছি।, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছি। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আনছি। সর্বাগ্রে বাংলাদেশের স্বার্থ, যেখানে দেশের স্বার্থ আছে, সেখানেই ঝুঁকছি।’
বাণিজ্যসচিব মাহবুবর রহমান বলেন, ‘গত দেড় দশক পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য তেমন ছিল না বললেই চলে। খাদ্য ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমরা নানা দেশ থেকে আমদানি করি, প্রতিযোগিতা দরে পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আনা গেলে সমস্যা নেই। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছি। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে ইম্পোর্ট করি বেশি, রপ্তানি কম করি। আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। গত অর্থবছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার।’
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্থানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, বাংলাদেশে পাকিস্থানের হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর কামরান ধাংগাল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক প্রতিনিধি জাইন আজিজ এবং বাণিজ্য সহকারী ওয়াকাস ইয়াসিন।
বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান আজ রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কার্যালয়ে চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের দিক দিয়ে দুদেশের মানুষের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আর পাকিস্তানের টেক্সটাইল ও বিশেষ করে জুয়েলারি পণ্য এদেশের মানুষের মাঝে বেশ চাহিদা রয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য এদেশের বেসরকারি খাত সবসময়ই সরকারকে প্রস্তাব দিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।
তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান ও কার্গো যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই রপ্তানির ক্ষেত্রে তৈরি পোষাক এবং টেক্সটাইল খাতের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল। দুদেশেরই রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোসহ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত পোশাকের নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেখানে দুদেশের পোষাক খাতের উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশ করা আবশ্যক। যার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ব আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে দুদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া প্রভৃতি খাতে পাকিস্তান বেশ ভালো করছে এবং বাংলাদেশ চাইলে পাকিস্তান থেকে এ পণ্যগুলো আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি ঔষধ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা পাকিস্তানের জন্য বেশ কার্যকর হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, দুদেশের কৃষি কাজ এবং পণ্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি ও মূল্য সংযোজন বৃদ্ধি করা গেলে এখাতে বৈশ্বিক বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
জাম কামাল খান জানান, পাকিস্তানের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে শিগগিরই বাংলাদেশে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন’-এর আয়োজন করা হবে। যার মাধ্যমে দুদেশের বেসরকারি খাতের সম্পর্ক আরও জোরাদারের সুযোগ তৈরি হবে।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং পাকিস্তান হাইকমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এর আগে গত ১৩ আগস্টের এক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও ব্যাংকখাতের বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকজন পরিচালক নতুন কোনো ব্যাংকের অনুমোদনের বিপক্ষে মত দেন।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পাওয়া নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এখনো বাংলাদেশে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। একই সময়ে কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
তবে পরিকল্পনা থেমে নেই। আগ্রহীদের কাছ থেকে নতুন ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন চাওয়া হতে পারে শিগগির। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদন আহ্বান করে। তখন ৫২টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯টি প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিচালনা পর্ষদের সভায়।
এর মধ্যে নগদ ও কড়ি ছাড়াও স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক এবং জাপান-বাংলা ডিজিটাল ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওএল) দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিকাশ, ডিজি টেন এবং ডিজিটাল ব্যাংককে পৃথক লাইসেন্স না দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং উইং খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আবেদন বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগেরবার রাজনৈতিক বিবেচনায় যে প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও কঠোর মানদণ্ডে নতুন আবেদনগুলো যাচাই করা হবে।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’-এ এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ১ বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে আরও ওঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংক খাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামী ব্যাংক।
মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।
তবে ব্যাংক খাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে ৩০ টনের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের পক্ষ থেকে সংগঠনটির কার্যালয়ে জারুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। আমদানির অনুমতি অব্যাহত না রাখলে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘গত ১৪ আগস্ট পেঁয়াজের আইপি দেয় সরকার, ফলে ১৭ আগস্ট থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এতে দেশের বাজারে পণ্যটির সররবাহ বাড়ায় দাম কমে আসছিল। কিন্তু ১৯ আগস্ট থেকে আবারো হঠাৎ করে আইপি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
এখন আমদানিকারকরা আবেদন করলেও কোনো আইপি ইস্যু করা হচ্ছেনা। এতে করে আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। হঠাৎ করে আইপি বন্ধের কারণে সীমান্তের ওপারে শতাধিক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব আমদানিকারক ইতোমধ্যে আইপির জন্য আবেদন করেছেন ও ভারতে পেঁয়াজ কিনে ট্রাকে লোড করে রেখেছেন তাদের জন্য পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির দাবি জানানো হয়। আমদানি উন্মুক্ত থাকলে দেশের বাজারে দাম কমে আসবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
সেসময় সেখানে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ও আমদানিকারক রিপন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টানা চার কার্যদিবস সূচকের উত্থানের পর বুধবার পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার; কমেছে সূচক, বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও সার্বিক লেনদেন।
উত্থান দিয়ে লেনদেনে শুরু হলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূচকের পতন হতে থাকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। লেনদেনে শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস কমেছে ১১ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ শেয়ার ডিএস-৩০ কমেছে ১৮ পয়েন্ট।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮ কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে বেশিরভাগের। ১২৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২২৩ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত ৫১ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়া এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ২১৯ কোম্পানির মধ্যে ৭২ কোম্পানির দরবৃদ্ধির পাশাপাশি দর কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ব্লক মার্কেটে ২৯ কোম্পানির ২৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এশিয়াটিক ল্যাবরেটারিজ সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
লেনদেন কমেছে ডিএসইতে; সারাদিনে ৯৫৩ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে, যা গতদিন ছিল ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক লিমিটেড এবং ৭ শতাংশের ওপর দাম কমে তলানিতে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতোই সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই), সার্বিক সূচক কমেছে ৭৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৮ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯০, কমেছে ১০৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
গতদিনের লেনদেন অর্ধেকে নেমে এসেছে সিএসইতে। সারাদিনে ৯ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ১৮ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে মেট্রো স্পিনিং লিমিটেড।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, পোশাকশিল্পে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেক কারখানা তাদের পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। গ্যাস না থাকায় শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে রপ্তানি এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বুধবার বিজিএমইএ সভাপতি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার সচিবালয়স্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন। পোশাক শিল্পের সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এ সময় বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম ও এ বি এম সামছুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে পোশাক শিল্পের পথ সুগম করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান গ্যাস পরিস্থিতি এবং গ্যাস সংকটের কারণে সৃষ্ট নানা সমস্যা তুলে ধরেন। এ সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ সভাপতি পাঁচটি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
এগুলো হলো: দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সুরক্ষার জন্য গ্যাসের নতুন সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রমঘন পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তিতাস গ্যাসের নতুন সংযোগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান, যাতে করে কারখানাগুলো সময়মতো উৎপাদন শুরু করতে পারে, লোড বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, শুধু সরঞ্জাম পরিবর্তন, পরিমার্জন বা স্থানান্তরের জন্য আবেদনকারীদের একটি আলাদা তালিকা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রদান করার অনুরোধ জানানো হয়, কম লোড বৃদ্ধির আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়, যা ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো দ্রুত উৎপাদনে যেতে সাহায্য করবে, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের মতো যেসব এলাকার গ্যাস পাইপলাইনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত কারখানাগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যায়, সেখানে অন্তত ৩-৪ পিএসআই চাপ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিজিএমইএ সভাপতির কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত পোশাকশিল্পকে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে প্রবৃদ্ধির হার ইইউর মোট আমদানি বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হলেও চীন ও কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগীদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের এই সময়ে বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ১০.২৯ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৮.৭৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৭.৯% বেশি। আর সামগ্রিকভাবে ইইউর পোশাক আমদানি ১২.৩% বেড়ে ৪৩.৩৯ বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের ৩৮.৬৪ বিলিয়ন ইউরো থেকে বেশি।
এই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ইইউর বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তবে, এই বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়িয়েছে এশিয়ার দেশ চীন ও কম্বোডিয়া। এ বছর ইইউর বাজারে চীন তার সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির রপ্তানি ২২.৩% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.২৬ বিলিয়ন ইউরোতে। অপরদিকে কম্বোডিয়া সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাদের রপ্তানি ৩০.৪% বৃদ্ধি পেয়ে ২.০৭ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে।
তবে বাংলাদেশ তার প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ইইউ বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। যেমন- ভারত এ সময়ে ২.৭০ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের ২.৩৪ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৫.৪% বেশি। তবে প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা কম।
এছাড়া পাকিস্তান রপ্তানি করেছে ১.৮৬ বিলিয়ন ইউরো, যা ২০২৪ সালের ১.৫৯ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৬.৬% বৃদ্ধি। এতে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলেও রপ্তানির পরিমাণ বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে ভিয়েতনামও তার প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। দেশটি ২.০২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা এক বছর আগে ১.৭৩ বিলিয়ন ইউরো থেকে ১৭.৩% বৃদ্ধি।
তবে তুরস্ক নেতিবাচক ধারা দেখিয়েছে। তাদের রপ্তানি ৭% কমে দাঁড়িয়েছে ৪.২৭ বিলিয়ন ইউরোতে, যা ইইউর বাজারে চাহিদা কমার প্রতিফলন।
সামগ্রিকভাবে তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৭.৯% প্রবৃদ্ধি ইইউর গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি এবং ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের চেয়ে শক্তিশালী। তবে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে চীন ও কম্বোডিয়ার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ, যা ইইউ বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আগামী ৪-১১ নভেম্বর রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা। এসএমই চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল বুধবার এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতের ৮৫০ জন উদ্যোক্তা আবেদন করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই নির্বাচিতদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ও পর্ষদ সদস্য সামিম আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. নাজিম হাসান সাত্তার।
সভায় জানানো হয়, শতভাগ দেশীয় পণ্যের এ মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য তিন শতাধিক স্টলের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি সচিবালয়, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থাকবে।
মেলায় বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনারের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ পেতে ব্যাংকার-উদ্যোক্তা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আয়োজন করা হবে। দেশীয় উৎপাদনকারী অথবা সেবামূলক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাই মেলায় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পাবেন। বিদেশি বা আমদানি করা পণ্য মেলায় প্রদর্শন কিংবা বিক্রি করা যাবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জুলাইয়ে রেকর্ড পরিমাণে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকে তারল্য সংকট কমাতে এবং লেনদেন স্বাভাবিক করতেই এই সহায়তা দেওয়া হয়।
ওই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়। এর বিপরীতে সুদের হার ছিল ১০ থেকে ১২ শতাংশ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে মোটা অঙ্কের টাকা ধার দিয়েছে।
গত জুন মাসে বিশেষ তারল্য সহায়তা বাবদ দেওয়া হয়েছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেওয়া বিশেষ তারল্য সহায়তার মধ্যে গত জুলাইয়ে দেওয়া সহায়তাই সর্বোচ্চ। গত সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতে লুটপাটের কারণে সৃষ্ট ক্ষত আরও প্রকট হচ্ছে। লুটের অর্থ এখন খেলাপি হচ্ছে। যে কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এখন ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান খারাপ হচ্ছে। এর বিপরীতে তারল্য সংকট বাড়ছে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো যেমন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তেমনই গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণও বিতরণ করতে পারছে না। আগে বিতরণ করা ঋণ খেলাপি হওয়ায় এবং নতুন ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী উপকরণ ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয়। একদিন থেকে এক বছর মেয়াদি এসব সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি অনেক সুবিধার অর্থ ব্যাংকগুলো পরিশোধ করে দিয়েছে। প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সবচেয়ে বেশি তারল্য সুবিধা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোপোর মাধ্যমে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর আগে কেনা ট্রেজারি বিল রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জুনে দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি এবং মে মাসে দেওয়া হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি মাসে এক লাখ টাকার কম করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হয়েছে কলমানি মার্কেট থেকে। এ মার্কেট থেকে জুলাইয়ে ব্যাংকগুলো এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে মোট সহায়তা নিয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে নিয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা, মে মাসে নিয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ধার নেওয়া হয়েছে। বাকি সময়ে ধারের পরিমাণ প্রতিমাসে ১ লাখ কোটি টাকার কম ছিল।
আন্তঃব্যাংক রেপোর মাধ্যমেও এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। কিন্তু এ খাতে লেনদেন কম হচ্ছে। গত জুলাইয়ে এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। জুনে আন্তঃব্যাংক রেপোতে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত জানুয়ারিতে এ খাতে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে তারল্য ব্যবস্থায় সমতা আনার জন্য ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থাপনায় জোর দিক। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আস্থাহীনতা (বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতি সবল ব্যাংকগুলোর) এমনভাবে বেড়েছে, এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পরিশোধ করতে পারছে না। এ খাতে দেওয়া ধারও খেলাপি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংক ব্যাংক এশিয়া থেকে ধার নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছে। এটি নিয়ে মামলাও হয়েছে। আরও কিছু ব্যাংকের ধারদেনা পরিশোধের ব্যর্থতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
দেশে ২০২৪-’২৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা সমমূল্যের ৯১ হাজার মেট্রিক টন মাছ বা মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে ‘মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন এবং সর্বোত্তম ব্যবহার’ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনাস্থ বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় আরও জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশের ১৪ লাখ নারীসহ ২ কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান প্রায় ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ইলিশ আহরণে প্রথম, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে দ্বিতীয় ও তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে পঞ্চম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক বিপুল কুমার বসাক।
সভায় বক্তারা বলেন, বিদেশে মানসম্মত মৎস্যপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। তবে পণ্যের মান ধরে রাখতে না পারলে অথবা মাছে অপদ্রব্য মেশালে মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে হবে। তাই মাছের পোনা সংগ্রহ, চাষ, আহরণ, বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব পর্যায়ে আদর্শমান ঠিক আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা আবশ্যক।
তারা আরও বলেন, দেশের মোট রপ্তানি আয়ে মৎস্যখাত এক সময় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখত, এখন সেটা সপ্তম স্থানে নেমে এসেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। ভালো মানের পোনা সরবরাহ নিশ্চিতে মৎস্য বিভাগ আরও সক্রিয় হবে বলে আশা করা যায়। কার্প জাতীয় মাছ চাষের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।
খুলনা বিএফএফইএয়ের সাবেক সহ-সভাপতি এস হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান, মৎস্য অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানেজার মো. জাহিদুল হাসান এবং মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আবুল হাসান।
সভায় মৎস্য খাতে খুলনা অঞ্চলের অবদান, লাভজনক ও মানসম্মতভাবে মাছচাষ, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন-২০২০ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপ্টন সরদার।
খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় আয়োজিত সভায় মাছচাষি, মাছ ব্যবসায়ী ও রপ্তানি খাত-সংশ্লিষ্টরা অংশ গ্রহণ করেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ) চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এবং এক কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই সময়ে প্রায় ৯০০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরের জেটিতে নোঙর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমপিএ উপপরিচালক (মিডিয়া) মো. মাকরুজ্জামান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দর ১ কোটি ৪ লাখ টন পণ্য পরিবহন করে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে নতুন রেকর্ড গড়েছে। সে সময় বন্দরের মুনাফা দাঁড়ায় ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা নির্ধারিত ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকার তুলনায় ২০৩.৪৯ শতাংশ বেশি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান সামুদ্রিক কেন্দ্র হিসেবে মোংলাকে গড়ে তুলতে বন্দরটিতে ব্যাপক রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে। শক্তিশালী আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও সম্প্রসারণ উদ্যোগের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তাভাবনার অংশ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪৮ দিনে (১৭ আগস্ট পর্যন্ত) মোংলায় ১০৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে এবং তারা প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য হ্যান্ডেল করেছে। এর মধ্যে আটটি জাহাজ ৫ হাজার ৩৩২ টিইইউ কনটেইনার পণ্য বহন করেছে। শুধু জুলাই মাসেই মোংলা বন্দর ৪ হাজার ৪৫৯ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে, ৫১৮টি পুরান গাড়ি আমদানি হয়েছে এবং ৬.৫ লাখ টন পণ্য প্রক্রিয়াকরণ করেছে।
মোংলা বন্দরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- চ্যানেল খনন, কনটেইনার টার্মিনাল সম্প্রসারণ এবং শুল্ক ও বন্দর কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন। এসব উদ্যোগ বন্দরটির কার্যক্রম আরও গতিশীল করছে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো ও ভুটানের জন্য নির্ধারিত পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে মোংলার ভূমিকা জোড়ালো হচ্ছে।
এমপিএ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বাসসকে বলেন, বন্দরের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগানো গেলে বছরে দেড় হাজার বিদেশি জাহাজ নোঙর করতে পারবে, এক লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেল, দুই কোটি টন সাধারণ পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ২০ হাজার পুরান গাড়ি ক্লিয়ার করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এই লক্ষ্যগুলো অর্জিত হলে জাতীয় বাণিজ্য সক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অবকাঠামো আধুনিকীকরণ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক লজিস্টিকস হাব হিসেবে মোংলার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো।
কৌশলগত অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান সক্ষমতার কারণে মোংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, যা দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের জট কমিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নে সহায়তা করছে।
নির্বিঘ্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং এজেন্ট, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট, স্টিভেডরস এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বৈঠক করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দরে জাহাজ নোঙর বাড়ানো ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ইতোমধ্যে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।