দুই বছরের করোনা মহামারির পর এক বছরের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কার প্রভাব বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও পড়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি তলানিতে নেমে গিয়েছিল লেনদেন। এখন অবশ্য বাড়ছে। অর্থনীতিতেও অস্থিরতা কমতে শুরু করেছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়সহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়ছে; তলানিতে থেকে উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আগামীতে পুঁজিবাজার ভালো হবে বলেই মনে হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার নিজ অফিসে দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ আশার কথা শুনিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক বাংলার প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান নূর।
পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?
পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে যদি বলি, আমরা এখনো সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। উন্নয়নশীল অবস্থায় আছি, উন্নত মার্কেট হতে পারিনি। পুঁজিবাজারের ইতিহাস দেখলে জানা যায়, দুই থেকে তিনটি বড় পতন হয়েছে। তাতে বিনিয়োগকারীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মেলাতে যাই, তাহলে আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। বিনিয়োগ শিক্ষার ঘাটতি আছে। বাজার জানার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের সেই সদিচ্ছা আছে উন্নত পুঁজিবাজার গড়ার জন্য। সেই প্রত্যাশা আমরা করছি। আমরা যেখানে যারা আছি, সেখান থেকে সহায়ক ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছি।
এখন বিনিয়োগ করার অনুকূল সময় কি না?
এখন বিনিয়োগ করার সময় কি না, এটা একটা প্রশ্ন। আর ইনস্টিটিউশন বা প্রফেশনালরা কী বলছেন, সেটা আরেক প্রশ্ন। বিনিয়োগের সময় সব সময়। কিন্তু কোথায় বিনিয়োগ করবেন, সেটার ওপর সময়ের ভ্যারিয়েশন আসতে পারে। বাজার যখন খুব খারাপ থাকে, তখনো কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। আবার যখন খুব ভালো বা ঊর্ধ্বমুখী থাকে, সে সময়ও কিছু প্রতিষ্ঠানের দর নিম্নমুখী হয়। তার মানে এটা টাইমিংয়ের জন্য হয়। আপনি কখন বিনিয়োগ করবেন, সেটার ওপরে চয়েস করা হবে কোন জায়গায় বিনিয়োগ করবেন। কোন জায়গায় বিনিয়োগ করতে চান, সেটার জন্য কোন সময়টা প্রযোজ্য তা চিন্তা করতে হবে। সেই অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে হবে।
লভ্যাংশের জন্য বিনিয়োগ করতে চাইলে আপকামিং লভ্যাংশ কোথায় আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ বা উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ডিভিডেন্ড ইল্ড (শেয়ারের দামের সঙ্গে লভ্যাংশের অনুপাত) অনেক বেশি। তার পরও আমরা বাজার নিয়ে হতাশ। কারণ আমরা খুব দ্রুত ক্যাপিটাল গেইন করতে চাই। সবাই যখন ক্যাপিটাল গেইনের জন্য একসঙ্গে বিনিয়োগ করতে যাই, বাজার বেড়ে যায়। আবার যখন লাভটা উঠিয়ে নিতে চাই, বাজার নিম্নমুখী হয়। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিষয় না। সবাই বিনিয়োগকারী। যার যার ফান্ড, কাঠামো বা পলিসি অনুযায়ী বিনিয়োগ করে। কে কখন বিনিয়োগ করবেন, কী মাইন্ড-সেটআপ নিয়ে বিনিয়োগ করবেন, সেটা তার নিজস্ব বিষয়।
প্রত্যেকেই বাজারের ঝুঁকির কথা মাথায় রাখেন। কীভাবে সেই ঝুঁকিটা মিটিগেশন করবেন এবং কোন সেক্টরে কতটুকু বিনিয়োগ করবেন, কখন করবেন, কোন বিনিয়োগটা লভ্যাংশের জন্য করবেন, কোনটা ক্যাপিটাল গেইনের জন্য তা সবই নিজস্ব চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ। যদি কেউ বলে এখন বিনিয়োগের সময় না, সেটার সঙ্গে আমি একমত নই। আবার যদি বলে এক্ষুণি বিনিয়োগ করার সময়, সেটার সঙ্গেও আমি একমত নই। কারণটা হলো, কোথায় বিনিয়োগ করবেন, কত টাকা বিনিয়োগ করবেন, বিনিয়োগের রিটার্ন কখন চাচ্ছেন, এই পলিসিগুলো বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এগুলো অ্যানালাইসিস ছাড়া যদি কেউ ইয়েস বা নো বলে দেয়, তাহলে যৌক্তিক হবে না। এটা ঝুঁকি বাড়তে পারে অথবা আনএক্সপেক্টেড লাভ পেয়ে যেতে পারেন। কাকতালীয়ভাবে কিছু একটা। টাকা ও সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে চিন্তা করতে হবে কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করলে প্রত্যাশা অনুযায়ী রিটার্ন পেতে পারেন। সময়মতো টাকা ফেরত পেতে পারেন।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট শেয়ারের কস্ট প্রাইসে গণনার দাবি ছিল প্রায় এক যুগের। সেটি বাস্তবায়ন হয়েছে, বাজারে এর প্রভাব কতটা পড়েছে?
কস্ট প্রাইস আর মার্কেট প্রাইসের মধ্যে যে প্রভাবটা বাজারে পড়ে- এর আগে দেখা গেছে, হঠাৎ করে বাজার একটু ভালো হলে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ পড়ত। যদি কেউ ১০০ টাকা দিয়ে একটা শেয়ার কেনে, তার এক্সপোজার মার্জিনাল। কাল বা ১৫ দিন পরে ১০০ টাকার শেয়ারটা যদি ১১০ টাকা হয়ে যায়, তখন কিন্তু সে ব্রিজ করছে। এই যে একটা আনসার্টেনিটি, সেটা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমাদের প্রস্তাবটা ছিল। আরেকটা ইস্যু হলো- একজন স্ট্রাটেজিক বা দীর্ঘমেয়াদি ইনভেস্টমেন্টে যেতে পারেন। যদি তিনি কোনো পরিকল্পনা করেন বা কোনো কোম্পানির বোর্ডে ঢোকেন, তাহলে তার শেয়ার লকইন হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে শেয়ারের দাম সিগনিফিক্যান্টলি বেড়ে গেল। এখন তিনি কী করবেন? এক্সপোজার ব্রিজ করছে, আবার ডিরেক্টর হিসেবে শেয়ারগুলো বিক্রিও করতে পারবেন না। এসব জটিলতা দূর করার জন্য আমরা চার-পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করেছি। অবশেষে নতুন গভর্নর সাহেব আসার পর বিষয়টা অনুধাবন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত এসেছে, এক্সপোজার বলতে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনা করা যাবে। এটা হওয়ার ফলে কারও আর আনসার্টেনিটি থাকছে না। প্রেসার হচ্ছে না। ইচ্ছেমতো পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে।
আমরা কখনো বলিনি যে কস্ট প্রাইস এলেই শেয়ারের দাম বেড়ে যাবে। বিষয়টা তা নয়। আমাদের ওপর যে অ্যাডিশনাল চাপ ছিল, সেটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পেরেছি। এখন আমি যদি মনে করি, একটা শেয়ার ১০ বছর হোল্ড করব, সেটা বিক্রির জন্য আমার ওপর চাপ প্রয়োগ হবে না। এটার প্রাইস যেখানেই যাক, বাজারকে প্রভাবিত করবে না। এই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। সেটা পূরণ হয়েছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন ও বিনিয়োগ পুরোপুরি হয়নি কেন বলে আপনি মনে করেন?
দেশে ৬০টির বেশি ব্যাংক থাকার পরও কিন্তু সবই পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত না। খুব সীমিতসংখ্যক ব্যাংক বাজারের সঙ্গে জড়িত। এখন একটা ফ্যাসিলিটিজ দেয়া আছে, সেটা গ্রহণ করবেন কি না, সেটা নিজস্ব বিষয়। সেটা করতে গেলে রিস্ক আছে কি না, অপারেট করার লোক আছে কি না, এ রকম অনেক বিষয় আছে। যাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, জনবল আছে, তারা এটার সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। যাদের নেই, জড়িত হয়নি। এটা আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়। এটা হলো একটা সুযোগ। অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে কিন্তু করছে না কেন, এটা সঠিক না। কেউ করতে চাইলে সুযোগ আছে। এখন সবাই কি সব সুযোগ কাজে লাগায়, সেটা বড় বিষয়? যদি কেউ মনে করেন, এটা হ্যান্ডেল করতে পারব না। তাহলে সুযোগ থাকলেও সেটা নিয়ে কাজ করবেন না। এটাই স্বাভাবিক বিষয়।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে পুঁজিবাজার ও বিদেশি বিনিয়োগের ওপর কী প্রভাব পড়েছে?
ডলারের এই বিষয়টা মানি মার্কেট ও ক্যাপিটল মার্কেট দুই জায়গাতেই অস্থিরতা তৈরি করেছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ওই সময়টা মুভ করেছে। সরাসরি যদি এখানে অস্থিরতা নাও হয়, তার পরও গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে সব তথ্য খুব দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। যার ফলে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়। সেটা সব জায়গায় হয়।
কনজ্যুমার গুডের কথা যদি বলি। আগে গণমাধ্যম এত ইজি ছিল না। তখন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অত বাড়াবাড়ি আমরা দেখিনি। এখন ঢাকা শহরের কোনো তথ্য মিনিটের মধ্যে বর্ডার এলাকাতেও চলে যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানেও সেটার প্রভাব তৈরি হয়ে গেছে। সহজ প্রচারমাধ্যম যেমন আমাদের উপকার করছে, তেমনি ঝুঁকির মুখেও ফেলছে। হতাশাও তৈরি হচ্ছে। এই ধরনের প্রচার-প্রচারণা, বিভিন্ন টকশো সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করছে। অর্থনীতিতে যতটা না নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তার চেয়েও বেশি সাইকোলজিক্যালি প্রভাব পড়ছে। এটাই আমাদের বেশি বিচলিত করছে।
শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটছে। সেখানে শেয়ার মার্কেট পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। আর সেই বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার নেগেটিভ হচ্ছে। একদিন আমাদের বাজারে সর্বোচ্চ পতন হয়েছিল, প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ পয়েন্টের মতো পড়েছিল। ওই দিন শ্রীলঙ্কার বাজারে ২৮৭ পয়েন্ট বেড়েছিল এবং ভারতের বাজারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৮৩ পয়েন্ট বেড়েছিল।
কনফিডেন্টলি বলতে পারি, আমাদের দেশে খাদ্যের অভাব হবে না। আমাদের কৃষির অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সরকার অনেক সাবসিডাইজ করেছে। উৎপাদন খুব সিগনিফিক্যান্টলি বাড়ছে। মানুষের খেয়েপরে বেঁচে থাকার মতো ধান-চাল আছে। অন্য জায়গায় হয়তো প্রভাব পড়তে পারে। কৃষি উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। এই জায়গায় আমরা নিরাপদ। তেল, জ্বালানি আমদানি করতে হয়, সেগুলোর ওপর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির চালিকাশক্তি শিল্প-কারখানায়। জ্বালানি আমদানি করলে ডলারের কারণে দাম যখন বেড়ে যাচ্ছে, সেটা খুচরা বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতির কোনো একটা জায়গায় যখন ইফেক্ট আসে, তখন সব উইন্ডোতে প্রোপোরশনিট ইফেক্ট আসে। তেলের দাম বেড়ে গেছে, গাড়ির ভাড়া বেড়ে গেছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। যে ট্রাক আগে ৩ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করা যেত, সেটা এখন ৫ হাজার টাকা। তার মানে একই পরিমাণ মালামাল আনার জন্য ২ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। ২ হাজার টাকা যখন বেড়ে যাচ্ছে, তখন বেশি দামেই তরকারি বা গ্রোসারি বিক্রি করতে হবে। তাহলে অর্থনৈতিক প্রভাব এক জায়গায় ন্যারো হয়ে থাকে না। এটার বিস্তারটা অনেক বড়। আগে যখন যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে এত সহজ ছিল না। তখন অনেক সময় নিত এগুলো প্রসারিত হতে। এখন তৎক্ষণাৎ শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।
বছর দুয়েক আগে লবণের দাম বেড়েছিল। টিভিতে সংবাদের লাইভে দেখেছিলাম, এক ভদ্রলোক সকালে ১০ কেজির লবণ কেনার পর বিকেলে আবার সাড়ে সাত কেজি লবণ কেনেন। কেন কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম বেড়ে যাবে।’ সে যে সাড়ে ১৭ কেজি লবণ কিনেছেন, সেটা কয় দিনে খাবেন? এক বছরে খেতে পারবেন? সেটা পারবেন না। চাল, আটার দাম বেড়ে যাবে বলে কি পাঁচ বছরের খাবার একসঙ্গে কিনবেন? তা না করে যদি আগের মতোই স্বাভাবিক থাকেন, তাহলে বাজারে প্রভাব কম পড়বে। আর অস্থির হলে বাজারে প্রভাব বেশি পড়বে। ক্রাইসিস তৈরি হবে।
আগে কিনতেন এক কেজি, এখন কিনতে চাচ্ছেন পাঁচ কেজি, আপনার মতো যখন ১০ জন চলে এসেছেন। দোকানদার হয়তো মাল রাখতেন ৫০ কেজি, কিন্তু এবার চাহিদা হয়ে গেছে ৫০০ কেজি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যাবে। এই ধরনের প্রচারের কারণেই আমরা অর্থনৈতিক সমস্যায় বেশি ভুগি।
সত্যিকার অর্থে আমরা যত বেশি হতাশা, আলোচনা, পর্যালোচনা করি, অতটা অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় নেই। আমরা সেই অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে এসেছি।
আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ, রেমিট্যান্স বাড়ছে। রপ্তানিও বাড়ছে। আইএমএফের ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা ছিল, সেটাও হয়ে গেছে। ফান্ডও ছাড় হয়ে গেছে। আমরা ইতিবাচক দিকে যাচ্ছি। আমাদের উচিত হলো, হতাশা থেকে বের হয়ে ইতিবাচক ও সুস্থির চিন্তা করা। আগামীতে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভালো হবে।
বোরো ধানের মৌসুম আসছে, এখন রোপণ করা হচ্ছে। প্রতিবছরই এপ্রিল-মে মাসে গিয়ে ধানের যে ফলন হয়, সেটা দিয়ে আমাদের সারা বছর চলে যায়। যে রোডেই যাওয়া যাক, দেখা যায় হাইওয়েতে জমা করা হয়েছে প্রচুর সবজি। ট্রাকে করে গ্রাম থেকে শহরে নেয়া হচ্ছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য যদি থাকে, তাহলে আমার হতাশাটা কীসের?
জীবনচক্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে, আসবে। ১৯৯১ সালে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকেন্দ্রিক। এর পর থেকে আর কোনো ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ ওইভাবে মারা যায়নি, যদিও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ওইটার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। গত কয়েক বছরে কতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তাতে যানমালের ক্ষতি হয়নি। কারণ মানুষ সচেতন হয়েছে সরকারের মাধ্যমে।
সরকারের পক্ষ থেকে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পদক্ষেপ আছে। আমাদের হতাশ না হয়ে গঠনমূলক চিন্তা করা দরকার। যত বেশি হতাশ হব, তত বেশি অস্থিরতা বাড়বে। অসুস্থ হলে প্রয়োজন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া, হতাশা নয়।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে মুনাফা কমায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে কি?
বিনিয়োগকারীদের প্রফেশনাল অ্যানালিস্ট থাকে, সারা বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করে। রিসার্চের আলোকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করে ও প্রত্যাহার করে। হয়তো তারা আগে থেকেই কোভিড নিয়ে খুব বেশি কনসার্ন ছিল। কোভিডের আগে দিয়েই তারা এক্সিট নিয়েছে। কোভিডের পরে নতুন করে ইনভেস্টমেন্ট আসেনি। ডলারের দাম তো তাদের জন্য আরও অস্থিরতা বাড়িয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের বিদেশি বিনিয়োগের ক্যাপিটাল মার্কেটের জায়গাটা হয়তো কিছুটা নেতিবাচক হয়েছে। কিন্তু এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) তো বন্ধ হয়নি। ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং ক্যাপিটাল মার্কেটের ছোট্ট একটা পোরশন নেতিবাচকভাবে খুব বেশি হাইলাইট করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ, যারা ক্যাপিটাল মার্কেটে ইনভেস্ট করেন তাদের অ্যানালাইসিস এক রকম, আর এফডিআইতে যারা করেন তাদের অন্য রকম। আমাদের মার্কেটে খুবই ইনসিগনিফিক্যান্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্টের। ডলারের অস্থিরতা কেটে স্থিতিশীল জায়গায় চলে এসেছে, এখন আবার ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আসতে শুরু করবে। ইতিমধ্যে কিছু পার্টিসিপেশন হচ্ছে।
করপোরেট গভর্ন্যান্সের কথা বলা হলেও অনেক কোম্পানি ঠিকমতো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করাসহ আরও অনেক নন-কমপ্লায়েন্স করে থাকে। করপোরেট গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করবে কে?
করপোরেট গভর্ন্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যে মহল্লায় থাকেন, সেখান মসজিদ আছে, ইমাম সাহেব আছেন, মুসল্লিও আছেন, আবার দুষ্কৃতকারীও আছে। যারা মসজিদে যান, তাদের চিন্তা অন্য রকম, দুষ্কৃতকারীদের আরেক রকম। কোনো সমাজেই একচ্ছত্র প্রভাব নেই। ভালো-খারাপের সংমিশ্রণ থাকে। যারা ভালো প্রতিষ্ঠান, করপোরেট গভর্ন্যান্স মেনে চলেন তাদের নিয়ে সমস্যা নেই। যারা মানেন না, তাদের মানানো জরুরি। এর উদ্দেশ্যে কী? আমরা চাচ্ছি স্বচ্ছতা-জবাবদিহি। একটা কোম্পানি যদি লাভ বা লোকসান করে, সেটা তার বিনিয়োগকারীরা যেন সঠিকভাবে জানতে পারেন। যেন স্পেকিউলেটিভ ক্রিয়েট না হয়। কোনো তথ্য যেন হাইড না হয়। অবাধে শেয়ার না হয়। এই বিষয়গুলোই চাচ্ছি, অনেস্টির জায়গা, সিনসিয়ারিটির জায়গাটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। ৩৫০ কোম্পানি আছে, তত বোর্ড, ম্যানেজমেন্টের বিষয়। তাহলে কয়েক হাজার লোকের বিষয়। তাদের সবাইকে কি এক শপথ বাক্য পাঠ করাতে পারবেন? এ রকম আশা করেন? করেন না।
আমরা চাই, করপোরেট গভর্ন্যান্সের নিশ্চয়তা। সেটার জন্য আমাদের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন খুবই শক্তভাবে ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্যের বিভ্রাট হয়েছে। এ জন্য আজকে (বৃহস্পতিবার) সকালেও চারজন সাসপেন্ড হয়েছেন। বিএসইসি কেয়ারফুলি, স্ট্রংলি হ্যান্ডেল করছে। তারপরও দুই-চারজন অসাধু ব্যক্তি থাকতে পারেন। তারা কিন্তু শাস্তি পাচ্ছেন। অনেক বড় বড় পেনাল্টি, মামলা দিয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। আমি একবার চকোরিয়া থানায় গিয়েছিলাম, ওসির মাথার ওপরে দেয়ালে লেখা ‘সবাই যদি ভালো হতো, তাহলে পুলিশের প্রয়োজন হতো না। আবার সবাই যদি খারাপ হতো তাহলেও পুলিশের প্রয়োজন হতো না।’ যেহেতু এটা ভালো খারাপের সংমিশ্রিত সমাজব্যবস্থা। ভালো লোকদের স্বার্থে দুষ্ট লোকদের নিবারণ করার জন্য আইনের ব্যবস্থা রয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে। পৃথিবী যতদিন থাকবে, এ রকম থেকে যাবে।
কেউ অন্যায়ভাবে ১০০ কোটি টাকা আয় করে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে পার পেলে সে কি অনিয়ম করা ছেড়ে দেবে?
এই যে প্রশ্নটা আপনি করলেন, তা অনেক টকশোতে দেখেছি। অনেক পত্রিকার নিউজেও দেখেছি। এটা সম্পর্কে কিন্তু সুস্পষ্ট তথ্য আপনার বা আমার কাছে নাই। আমি মনে করি, বিএসইসি তাদের বেস্ট জাজমেন্ট অ্যাপ্লাই করে। আপনি মনে করছেন যে, ১০০ কোটি টাকা সে লাভ করেছে, তার ৫ বা ১০ কোটি টাকা জরিমানা হচ্ছে। এই তথ্যটা কিন্তু অনুমাননির্ভর, সত্য তথ্য কিন্তু আপনার কাছে নেই। আসলেই কি সে ১০০ কোটি টাকা ব্যবসা করেছে? আপনি যেটা বলছেন তা যৌক্তিক। ১০০ টাকা যদি গেইন করতে পারি। বিপরীতে ৫ বা ১০ টাকা জরিমানা দিতে হয়, তাহলে তো ভালোই। তাহলে অন্যায় করেই যাব। আপনার এই প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু সঠিক তথ্য ছাড়া এ কথা বলা যাবে না। আমরা যতটুকু জানি বিএসইসি কাউকে কাউকে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে বের করে দিয়েছে, কাউকে জরিমানা করেছে, কারও বিজনেস অ্যাক্টিভিটিস বন্ধ করে দিয়েছে। কারোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এখন কে কতটুকু অপরাধ করেছে, আইনের সঙ্গে কতটুকু নন-কমপ্লায়েন্স হয়েছে এটা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বলতে পারবে। আমরা তো বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। এটুকু বলতে পারি, অপরাধীর বিচারের ব্যবস্থা উনারা করছেন। সাধারণ বিচারব্যবস্থায় কী হয়? যখন কেউ লোয়ার কোর্টের রায় পান, বিপক্ষে গেলে সেটাতে সন্তুষ্ট হন না। আবার হাইকোর্টে চলে যান। যদিও রায়টা প্রোপার হয়েও থাকে তারপরও সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেন যে, রায়টা সঠিক হয়নি। বিচারব্যবস্থার মধ্যে এই সমালোচনাটা কিন্তু রয়েই গেছে।
আগামীতে বাজার কেমন যাবে বা কোন খাত ভালো করবে বলে মনে করেন?
আমরা যেসব প্রতিবন্ধকতা দেখেছিলাম বা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, যেমন- কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়। এগুলো কাছাকাছি সময়ে ঘটেছে। সেগুলোর প্রভাবে আমাদের মধ্যে অস্থিরতা হয়েছিল। অস্থিরতা ও ভীতি থেকে বের হয়ে এসেছি। ইনফ্লেশন যে জায়গা ওঠার ভয় ছিল সেটা হয়ে গেছে। এখন স্ট্যাবিলিটির দিকে আসছে। ইতিমধ্যে আমরা অর্থনীতির বেশ কিছু ইনডিকেটর (সূচক) পজিটিভ দেখছি, যেমন রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বেড়েছে। ব্যাংক, লিজিং ও মাল্টিন্যাশনালের ইয়ার এন্ডিং ডিসেম্বর মাস। তার মানে এই মাসের শেষ দিক থেকে বা আগামী মাসের প্রথম দিক থেকে বিভিন্ন কোম্পানির ডিভিডেন্ডের ঘোষণা আসতে থাকে। পাশাপাশি যাদের জুন এন্ডিং তাদের থার্ড কোয়ার্টার আসতে থাকবে এপ্রিল মাস থেকে। তখন এই জায়গাতে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করি। গত দুই তিন বছরে ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ইল্ড এফডিআর রেটের চেয়ে বেশি। এবারও ভালো দেবে আশা করি। অপারেটিং ইনকামের যে তথ্য প্রচার হয়েছে, মনে হচ্ছে- অনেক ব্যাংক ভালো করেছে। ভালো ডিভিডেন্ড হয়তো দেবে। বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্যেই হলো ডিভিডেন্ড। এই বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে।
আমাদের গার্মেন্ট সেক্টর ভালো করছে, এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টে। বছর শেষে ডিসেম্বরে ইয়ার এন্ডিং তাদের ডিভিডেন্ড আসবে। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের প্রতি নিরুৎসাহিত করে একটা বিষয়। যেটা আমাদের পুঁজিবাজারের অস্থিরতারও কারণ। সেটা হলো, ক্যাপিটাল গেইনে কোনো ট্যাক্স নেই, সবাই ক্যাপিটাল গেইনে আগ্রহী। কিন্তু ডিভিডেন্ডের ওপরে সর্বোচ্চ হারে ট্যাক্স দিতে হয়। একবার করপোরেট ট্যাক্স দেয়ার পরেও ব্যক্তিগতভাবে যখন তারা ডিভিডেন্ড নেন, তখন আবার ট্যাক্স দিতে হয়। লভ্যাংশের এই ডুয়েল ট্যাক্সেশন আমাদের পুঁজিবাজারকে টেনে ধরেছে। এই গতিটা বাড়াতে হলে সরকারের বাজেটে লভ্যাংশে দ্বৈত কর প্রত্যাহার করা উচিত। পুঁজিবাজারের গভীরতা ও অর্থনীতিতে অবদান বাড়াতে হলে ভালো কোম্পানি ও গ্রুপ, যারা ভালো ব্যবসা করে তাদের তালিকাভুক্ত করাতে হবে। তাদের অর্থের অভাব নেই। অর্থের জন্য আসবে না। তাদের ইনসেনটিভ দিতে হবে, এনকারেজ করতে হবে। লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ট্যাক্সের পার্থক্য বাড়াতে হবে। ভালো প্রতিষ্ঠান যত বেশি বাড়বে, তত বাজারের গভীরতা বাড়বে। দেশি-বিদেশি ভালো বিনিয়োগকারীর সমন্বয় বেশি হবে। এসব জায়গাতে পলিসি সাপোর্টের সুযোগ রয়েছে।
আমাদের যারা ভালো ব্যবসা করেন তারা খুব সহজেই ব্যাংক লোন পেয়ে যান, ব্যবসা করতে পারেন। সেখানে দেখা যায়, তাদের অপারেটিং কস্ট অনেক কমে যায়। ইন্টারেস্ট রেট ৯ শতাংশের মধ্যে। আর লিস্টেড হলে তাকে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিতে হতো, তার আগে আবার করপোরেট ট্যাক্স দিতে হবে। পুঁজিবাজারকে ভালো করতে হলে এই জায়গাগুলোতে সাপোর্ট দরকার। আমি মনে করি, টাকার চেয়ে পলিসি সাপোর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ট্যাক্স গ্যাপ বাড়াতে হবে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ডিভিডেন্ডের ট্যাক্স প্রত্যাহার করা উচিত। তাহলে নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এতে সবাই ডিভিডেন্ড নিতে চাইবে, লং টার্ম ইনভেস্টমেন্টে যাবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বাড়বে।
পুঁজিবাজার ভালো হলে সরকারের লাভ। সরকার প্রতিটা ট্রানজেকশন, প্রত্যেক ইন্টারমিডিয়ারিজ, এমপ্লয়ি, এক্সচেঞ্জ থেকে ট্যাক্স পাচ্ছে। সাইজ যত বড় হবে ট্যাক্স তত বড় হবে। পলিসি সাপোর্ট দিয়ে আকৃতি বড় করা গুরুত্বপূর্ণ। তাতে কর্মসংস্থান হবে। তারপর রাজস্ব অটোমেটিক্যালি পেতে থাকবে সরকার।
নতুন তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ইস্যুমূল্যের নিচে, এমনটা কেন হচ্ছে?
ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও লিজিং কোম্পানি রেগুলেটর কমপ্লায়েন্সের জন্য তালিকাভুক্ত হয়। যখন তাদের লেটার অব ইনটেন্ড দেয়া হয়, তখন বলা হয়, তিন বছর পরে পাবলিক লিস্টেড হতে হবে এবং তা ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ যে ক্যাপিটাল থাকে তার সমপরিমাণ বাজার থেকে সংগ্রহণ করতে হবে। এই বাধ্যবাধকতার জন্য তারা বাজারে আসেন।
১৯৯৭ সালের দিকে বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারই ফেসুভ্যালুর নিচে ছিল। সম্ভবত ২০০৩-০৪ সাল থেকে ব্যাংকের শেয়ার বেড়েছিল। এর পরে ১০০ টাকার শেয়ার কিন্তু ১২ হাজার টাকাও হয়েছে। এটা হিউম্যান সাইকোলজি। আমার ব্যক্তিগত মতামত, ব্যাংকের ক্যাপিটাল অনেক বড়। এগুলো নিয়ে স্পেকুলেশন করা সম্ভব হয় না। যে ব্যাংকের ক্যাপিটাল ২০০৪-৫ সালের দিকে ছিল ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা, সেটা এখন হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয়ত, পত্রপত্রিকা খুললেই নেতিবাচক খবর দেখা যায়। অনেক টকশোতে দেখি ব্যাংকের অবস্থা নিয়ে অনেক নেতিবাচক পর্যালোচনা হয়। এসব নেতিবাচক বিষয় ও সাইজ অব ক্যাপিটাল মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। যারা বড় বিনিয়োগকারী তারা সেখানে বিনিয়োগ করে রিটার্ন আসা করে। ক্যাপিটাল গেইন হবে না কিন্তু ডিভিডেন্ড ইল্ড এফডিআরের চেয়ে বেশি।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে কী বলবেন?
মার্কেট ইন্টারমিডিয়েটরি হিসেবে আমরা সব সময়ই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাই। তাদের স্বার্থ এককভাবে রক্ষা করতে পারব না। তাদের সচেতন হতে হবে। জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করা যাবে না। অনুমাননির্ভর, ফেসবুকনির্ভর তথ্য দিয়ে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষা না হলে বাজারের ক্ষতি। অর্থনীতির ক্ষতি। বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কাদের নিয়ে ব্যবসা করব? বিনিয়োগকারীর প্রাণ আমি মনে করি লভ্যাংশ। তাহলে সেই জায়গাতে সিক্যুয়েন্স ও কমিউনিকেশন ঠিক থাকে, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। সে ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। তাই আমরা সব সময়ই বিনিয়োগকারীদের বলি জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন।
উত্থান দিয়ে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসের লেনদেন শুরু হলেও শেষ হয়েছে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে। দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ঢাকা-চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৬ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস কমেছে ১২ পয়েন্ট এবং বাছাই করা কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ১৬ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮ কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগের দাম ছিল নিম্নমুখী। ৫৪ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৩০৯ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই কমেছে শেয়ারের দাম। লভ্যাংশ দেওয়া ভালো শেয়ারের এ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ২২০ কোম্পানির মধ্যে ৩২ কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। দর কমেছে ১৭৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৬ মিউচুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগের। ৩২ কোম্পানির দর পতনের বিপরীতে দর বেড়েছে ২ এবং অপরিবর্তিত আছে ২ কোম্পানির।
২২ কোম্পানির ৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ডিএসই ব্লক মার্কেটে। এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড সর্বোচ্চ ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কমেছে ঢাকার বাজারে। সারাদিনে মোট ৩৪৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৩৬৪ কোটি টাকা।
৮.১১ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ার ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। অন্যদিকে ১৬ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে মিডাস ফাইন্যান্সিং।
চট্টগ্রামেও পতন
ঢাকার মতো সূচক কমেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সারাদিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ৩৬ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫, কমেছে ১১৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষ শেয়ার আইসিবি সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড এবং ১৩ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে ডিএসই'র মতো সিএসইতেও তলানিতে মিডাস ফাইন্যান্সিং।
পতন দিয়ে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেন শুরু হলেও শেষ হয়েছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে। দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ঢাকা-চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট। তবে প্রধান সূচক বাড়লেও বাকি দুই সূচকের সুবিধা করতে পারেনি ঢাকার বাজার।
শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস বেড়েছে ১ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৪ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ১৮৯ কোম্পানির দর বাড়লেও কমেছে ১৬০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই বেড়েছে শেয়ারের দাম। লভ্যাংশ দেওয়া ভালো শেয়ারের এ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ২১৬ কোম্পানির মধ্যে ১২২ কোম্পানির দর বেড়েছে। দর কমেছে ৮০ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৪ কোম্পানির শেয়ারমূল্য।
দাম বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৬ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগের। ৩০ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরে পতন হয়েছে ৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩ কোম্পানির।
২১ কোম্পানির ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ডিএসই ব্লক মার্কেটে। বেকন ফার্মা সর্বোচ্চ ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সূচক এবং কোম্পানির শেয়ারের দাম সন্তোষজনক হলেও লেনদেনে সুবিধা করতে পারেনি ডিএসই। সারাদিনে মোট ৩৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ৩৬৬ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ার নর্দান ইসলামি ইনস্যুরেন্স। অন্যদিকে সাড়ে ৩ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে নেমেছে বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো সূচক বেড়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সারাদিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯১, কমেছে ৭১ এবং অপরিবর্তিত আছে ২০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২১ কোটি টাকার ওপরে।
৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষ শেয়ার ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং ১০ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে রয়েছে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স পিএলসি।
গত দিনের দেড়শ পয়েন্ট সূচকের পতনের পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে উত্থান দিয়ে, বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ২৫ এবং বাছাইকৃত ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। ৩৬৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৯ কোম্পানির এবং দাম অপরিবর্তিত আছে ১২ কোম্পানির শেয়ারের।
দিনের প্রথম দুই ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে ১৫০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
ঢাকার মতো লেনদেনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় আছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ৬৬ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৮০ কোম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৩১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথমার্ধে ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতেই পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার, কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (১৩ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ার ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৯ কোম্পানি এবং দর অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকার বাজারে মোট শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
একইভাবে সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৮ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৬৭ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের পর দেশের শেয়ারাবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ভোটের পর প্রথম সপ্তাহের মতো দ্বিতীয় সপ্তাহেও টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। বেড়েছে লেনদেনও।
ইতিবাচক পুঁজিবাজারে বেড়েছে বাজার মূলধন। গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। একই সঙ্গে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। আর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৩৫ পয়েন্টের বেশি।
গত ৭ জানুয়ারি হয়েছে বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। তবে এই ভোটের আগে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এতে আতঙ্কে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকেন। ফলে একদিকে পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি যেমন কমেছে, তেমনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরও ধারাবাহিক পতন হয়েছে।
তবে বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। স্বাভাবিক পরিবেশে ভোট এবং নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় শেয়ারবাজারেও যেন তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে ভোটের পর টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির। আর ২০৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮৬ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা বা দশমিক ২২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫৭ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়েছে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ১১ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আর ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৭৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ১৯৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ৬৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, দেশবন্ধু পলিমার, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বিচ হ্যাচারি, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি।
স্মার্ট অর্থনীতির দেশ বিনির্মাণে মানি মার্কেটের পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্যাপিটাল মার্কেট। এ বাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন যথাযথ জ্ঞান ও শিক্ষার। যদিও আমাদের দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কিত শিক্ষার অভাবের বিষয়টি বারবার সমালোচিত হয়। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কিত পাঠ্য ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হলেও দীর্ঘ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তত্ত্বাবধানে সরকারি অর্থায়নে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মশালাসহ সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম)। সম্প্রতি বিনিয়োগ শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা বলেন বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেদী হাসান সজল।
২০২০ সালের ৩ আগস্ট তিন বছরের জন্য বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। সময় শেষ হওয়ায় সম্প্রতি বিআইসিএমে তার চাকরির মেয়াদ আবার দুই বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে জাপানের সুকুবা ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পিএইচডি অর্জন করেন। এর আগে ১৯৯৭ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে স্নাতক ও ১৯৮৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব কতটা?
: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব এককথায় বোঝানো সম্ভব নয়। কেননা এটি একটি টেকনিক্যাল জায়গা। মূলত সব বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই শিক্ষার প্রয়োজন আছে। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্বটা অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় একটু বেশি। যদিও আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে কোনো পাঠদান ব্যবস্থা নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাধ্যমিক স্তর থেকেই আর্থিক স্বাক্ষরতার বিষয়টি যুক্ত করা প্রয়োজন। পরে নবম-দশম শ্রেণিতে এখানে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ স্তর থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দিয়ে দিতে হবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে তুলনামূলক কিছুটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যত বেশি ঝুঁকি থাকে তত বেশি মুনাফা গেইন করারও সুযোগ থাকে। কম ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগের সুযোগও এখানে রয়েছে। আবার ঝুঁকিহীন বিনিয়োগেরও ব্যবস্থা আছে। কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে ঝুঁকি নিয়ে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে, এটা জানতে আমাদের বিনিয়োগ শিক্ষা থাকতে হবে। তাই এককথায় আমরা বলতে পারি, পুঁজিবাজারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
বিনিয়োগ শিক্ষায় বিআইসিএমের অবস্থান সম্পর্কে বলুন?
: ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে দুটি বড় মহাধস হয়েছে। মূলত প্রথম মহাধসের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন মহলে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব দিতে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে বিআইসিএম প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১০ সালের দিকে। পরে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে বিআইসিএম। এরপর মার্কেট, মার্কেটের পণ্য, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারের ওপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা চালু করা হয়। পরে ২০২১ সালে বিআইসিএম মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করে। এর বাইরে আমরা পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
বিআইসিএমের কার্যপরিধি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে কি, এখানে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে?
: বিনিয়োগ সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এখন আরও বিনিয়োগ দরকার। ঢাকার বাইরে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি নেয়া দরকার। মূলত এ ক্ষেত্রে বাজেট একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আমরা যে ভবনটিতে থাকি সেটি এখনো ভাড়ায় নেয়া। এর পাশাপাশি আমাদের শিক্ষক ও স্টাফদের বেতন বাবদ বড় একটি অংশ ব্যয় হয়। এসবের খরচ মিটিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য যে অংশটা আমরা সরকারের কাছ থেকে পাই তা আসলে যথাযথ নয়। আমাদের যদি একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকত তাহলে আরও ভালো কাজের সুযোগ তৈরি হতো। আমরা কাজের পরিধি বাড়াতে চাইলেও বাজেট স্বল্পতার জন্য তা হয়ে ওঠে না।
পুঁজিবাজারের বিশ্লেষকরা প্রায়ই বলে থাকেন এখানের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ শিক্ষা নেই। তারা গুজবকেন্দ্রিক বিনিয়োগে অভ্যস্ত। এ থেকে বিনিয়োগকারীদের ফেরাতে আপনাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলুন?
: বিআইসিএম বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে; কিন্তু পুঁজিবাজারের পরিধি অনুসারে বিআইসিএমের একার প্রচেষ্টায় গুজব ঠেকানো সম্ভব নয়। এখানে মার্কেটসংশ্লিষ্ট সব মহলের যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আমরা বিনিয়োগ শিক্ষা নেয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই; কিন্তু সব মহল থেকে যদি সেই তাগিদ না আসে তাহলে বিনিয়োগকারী কতটা আগ্রহী হবেন? একটা সাসটেইনেবল মার্কেট গঠনের জন্য বাজারসংশ্লষ্ট সবার যৌথ প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এমন একটি ইকো-সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যাতে সব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ শিক্ষা নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বিআইসিএম বিভিন্ন সময়ে সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি কর্মশালাসহ বিনিয়োগ শিক্ষা কোর্সে ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে কতটা সাড়া মিলছে?
: পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমরা বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করার ক্ষেত্রে খুব একটা ভূমিকা দেখতে পাই না। এ জন্য আমরা নিজেরাই সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী করতে কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কোর্স সম্পর্কে তাদের অভিহিত করছি। এ ছাড়া আমরা নারী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতেও কাজ করছি। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এ প্রচারণার সুফল পাওয়া যাবে।
বিআইসিএমের কোর্স ফি আরও কমানো হলে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছেন কি?
: কোর্স ফি আরও কমানো হলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি মনে করছি না। এরই মধ্যে আমরা কোর্স ফি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। তা সত্ত্বেও কিন্তু আগ্রহ বাড়তে দেখিনি। মার্কেট যদি ভালো হতো তাহলে বিনিয়োগকারীরা হয়তো অনেকটা আগ্রহী হয়ে উঠতেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ শিক্ষা নেয়ার বিষয়ে তাগিদ বাড়াতে হবে। তাহলে বিনিয়োগ শিক্ষায় আগ্রহ বাড়বে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্থিতিশীল বাজার গঠন করা সম্ভব হবে।
বিআইসিএম সম্প্রতি ‘লাইসেন্সড মিউচুয়াল ফান্ড সেলিং এজেন্ট প্রোগ্রাম’ চালু করেছে। বিনিয়োগ শিক্ষায় নতুনত্ব আনয়নে এ ধরনের আর কোনো উদ্যোগ পাইপলাইনে আছে কি?
: আমরা এ ধরনের নতুনত্ব আনয়নে সব সময় কাজ করছি। ফিন্যান্সিয়াল মডিউল অ্যান্ড ভেলুয়েশন এক্সপার্ট নামক একটি সার্টিফিকেট কোর্স আছে এক বছরের। এর আগে আমরা ডেটা এনালাইসিসের ওপর একটি কোর্স করিয়েছি। ‘লাইসেন্সড মিউচুয়াল ফান্ড সেলিং এজেন্ট প্রোগ্রাম’-এ কোর্সটি আগামীকাল (৬ নভেম্বর) থেকে চালু হবে। এরই মধ্যে অনেকেই এ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করে ভর্তি হয়েছেন। এ ধরনের কাজগুলো আমাদের চলমান একটি প্রক্রিয়া।
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?
: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে চোখ-কান খোলা রেখে বিনিয়োগ করতে হবে। কারও থেকে প্রবঞ্চিত হয়ে বিনিয়োগ করার জায়গা পুঁজিবাজার নয়। এখানে বিনিয়োগ করতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা এ বাজার যেমনি ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি সম্ভাবনাময়ও।
মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
: আপনাকেও ধন্যবাদ
ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউসগুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও অর্থের হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে। এখন থেকে সব ব্রোকারেজ হাউসে ‘সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার’ চালুর নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এ সফটওয়্যার চালুর নির্দেশ দিয়ে গত সোমবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে সংস্থাটি।
বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ও সিকিউরিটিজ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যে ব্যাক অফিস সফটওয়্যারে ব্যবহার করে, তাতে ব্যবহারকারীর দেয়া তথ্য পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা যায়। এ ধরনের কার্যকালাপের ফলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানী হয়েছে এবং শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে। তাই পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্টেকহোল্ডার কোম্পানির এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সমন্বিত সফটওয়্যার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিএসইসির নির্দেশনায়।
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসংক্রান্ত গাইডলাইন দিয়ে প্যানেলভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সব ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে কমিশনের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং যে কোনো এক্সচেঞ্জের এ সংক্রান্ত গাইডলাইন পরিপালন করে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্যানেলভুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহ করা সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যেসব ব্রোকারেজ হাউস এরই মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছে, সেসব ব্রোকারেজ হাউসকে স্টক এক্সচেঞ্জের তৈরি করা নীতিমালা মেনে ওই সফটওয়্যারের বিপরীতে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সনদ নিতে হবে। এই সনদ না নিলে কোনো এক্সচেঞ্জের প্যানেলভুক্ত সফটওয়্যার ভেন্ডার থেকে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার কিনে ও ইনস্টল করে কমিশনের এসংক্রান্ত নির্দেশনা ও যেকোনো এক্সচেঞ্জের এসংক্রান্ত গাইডলাইন পরিপালন করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ দৈবচয়ন ভিত্তিতে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের পর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোর সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করছে কি না তা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্দেশনার পাশাপাশি বিএসইসি থেকে ডিএসই, সিএসই এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- ডিএসই এবং সিএসইর ট্রেকহোল্ডার মার্জিন নীতিমালা অনুযায়ী পাওয়া ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জের মালিকানা শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্য লভ্যাংশ দেয়া স্থগিত থাকবে। যোগ্য বিনিয়োগকারীর (এলিজেবল ইনভেস্টর/কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর) আইপিও, আরপিও, কিউআইও সুবিধা স্থগিত থাকবে। নতুন শাখা অথবা ডিজিটাল বুথ খোলার সুবিধা স্থগিত থাকবে। এই নির্দেশনার মধ্যদিয়ে বিএসইসি এর আগে ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি জারি করা এসংক্রান্ত নির্দেশনা রহিত করেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পর্ষদ সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। এর বাইরে উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য ৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশে সুপারিশ করেছে কোম্পানিটি। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমেছে তা সত্বেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ বাড়িয়েছে কোম্পানিটি।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ওয়ালটনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৫ টাকা ৮৪ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরে যা হয়েছিল ৪০ টাকা ১৬ পয়সা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ১৪ টাকা ৩২ পয়সা বা সাড়ে ৩৫ শতাংশ। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৪২ টাকা ১৮ পয়সায় (পুর্নমূল্যায়িত)। আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ২৩১ টাকা ৩৪ পয়সায় (পুর্নমূল্যায়িত)।
ঘোষিত লভ্যাংশ ও আলোচ্য হিসাব বছরের অন্যান্য এজেন্ডায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে এ বছরের ২৯ অক্টোবর বেলা ১২টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটি। এ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ২ অক্টোবর।
এর আগে ২০২১-২২ হিসাব বছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। এর বাইরে এ হিসাব বছরের জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের ১৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
বিশ্বে দেশের পুঁজিবাজারের ব্যাপ্তি বাড়াতে ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় বিনিয়োগ মেলা করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গে ‘রোড শো’ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার রোড শোটি উদ্বোধন করবেন। এটি হবে বিএসইসির সপ্তম আয়োজন। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী ২৩ আগস্ট (বুধবার) ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক এবারের রোড শোটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) যৌথভাবে আয়োজন করছে। এ ছাড়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সহযোগিতায় রয়েছে আলিফ গ্রুপ।
তথ্যমতে, আগামী বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গের ওআর টাম্বোর রেডিসন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রোড শো শুরু হবে। এ আয়োজন চলবে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত। দুটি পর্বে রোড শোটি আয়োজন করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি ও দেশটির বিনিয়োগকারীরা যোগ দেবেন।
জানা গেছে, এবার দক্ষিণ আফ্রিকার রোড শোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জানিয়েছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনটি সকালে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে সরকার, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজন, প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামসহ বিএসইসির প্রতিনিধিরা।
এবারের রোড শোতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, পুঁজিবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে।
এছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হবে।
দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও শহরগুলোতে ধারাবাহিক রোড শো করার পরিকল্পনা করেছে বিএসইসি।
এর আগে প্রথম দফায় দুবাইতে, দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রে, তৃতীয় দফায় সুইজারল্যান্ড, চতুর্থ দফায় যুক্তরাজ্য, পঞ্চম দফায় কাতার ও ষষ্ঠ দফায় জাপানে সফলতার সঙ্গে রোড শো সম্পন্ন করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, জার্মানি, কানাডা, রাশিয়া, ইতালি, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে রোড শো আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া, চলতি বছরের অক্টোবরে ইউরোপের বিনিয়োগ আকৃষ্টে ফ্রান্সের দুই শহরে রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে বিএসইসির সপ্তম আয়োজন। চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর প্যারিস ও ১৮ অক্টোবর টুলুসে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত চলবে সম্মেলন। এতে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি ও দেশটির বিনিয়োগকারীরা যোগ দেবেন।
গত কয়েক মাস ধরেই ফু ওয়াং ফুড কোম্পানি হয় লেনদেনের শীর্ষে থাকছে, না হয় শীর্ষ ১০-এর মধ্যে থাকছে। গত সপ্তাহ শেষে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ফু ওয়াং ফুড। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববারও লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে ফু ওয়াং ফুড।
গত ২ জুলাই ফু ওয়াং ফুডের দাম ছিল ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। এর পরে টানা বাড়তে থাকে শেয়ারটির দাম। ১৬ জুলাই দাম বেড়ে হয় ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা। এই সময়ে ২০ টাকা বা ৮৫ দশমিক ১১ শতাংশ বাড়ে এই শেয়ারের দাম। এর পরেই এই শেয়ারের দাম কমতে থাকে। গতকাল এই শেয়ারের দাম হয়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সা। ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমেছে ৩৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সূচক কমেছে। লেনদেন বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এদিন সূচক ও লেনদেন কমেছে।
গতকাল ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। আগের দিন সূচক ছিল ৬ হাজার ২৯৭ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।
গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে লেনদেন হচ্ছে ৪০০ কোটির আশপাশে। দুই দিন লেনদেন হয়েছে ৪০০ কোটির নিচে।
গতকাল ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির দাম কমেছে। এই দিন ডিএসইতে মোট ৩৩৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৫টির। দাম কমেছে ৮৯টির। আর দাম অপরিবর্তিত আছে ১৭১টির।
গতকাল সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য খাতের শেয়ারে। খাদ্য খাতে লেনদেন হয় ৭৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সাধারণ বিমা খাতে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিবিধ খাতে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী পেপার।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আরডি ফুড, জেমিনি সি ফুড, এমারেল্ড অয়েল, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সোনালী আঁশ এবং কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
দাম বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানি হচ্ছে, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেঃ ইন্স্যুরেন্স, আরামিট, অ্যাম্বি ফার্মা, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্স।
দাম কমার শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানি হচ্ছে; ফু ওয়াং ফুড, দেশবন্ধু পলিমার, খান ব্রাদার্স পিপি, ইয়াকিন পলিমার, অলিম্পিক এক্সেসোরিজ, খুলনা প্রিন্টিং, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, মেট্রো স্পিনিং, ফার কেমিক্যাল ও বিচ হ্যাচারী।
এই দিন দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। সিএসইতে এই দিন লেনদেন হয়েছে মোট ১৯৬টি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৪টির কমেছে ৬৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৮৭টির। সিএসইতে এই দিন সূচক সামান্য কমেছে। সিএসইতে এই দিন সূচক কমেছে ৩০ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। সূচক কমে হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট। আগের দিন সূচক ছিল ১৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট।
একদিকে লেনদেন খরা অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে না পারা, সব মিলে সময়টা অনুকূলে নেই পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।
এমন সময়েও গুজব ছড়িয়ে কিছু কিছু কোম্পানিকে অতি মূল্যায়িত করা হচ্ছে।
বিপরীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ কাজে আসছে কতটুকু?
পুঁজিবাজারের বর্তমান নিয়ে ‘দৈনিক বাংলা’কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সিনিয়র রিপোর্টার সুলতান আহমেদ।
আল-আমিন, সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ
প্রশ্ন: আমরা দেখছি, গত দুই সপ্তাহে বাজারে লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। পাশাপাশি অল্প করে হলেও কমছে প্রধান সূচকগুলো। অন্যদিকে আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান বলেছেন, বাজারে সুসময় এলেই তুলে নেয়া হবে ‘ফ্লোর প্রাইস’। এখন বিনিয়োগকারীদের মনেও প্রশ্ন সেই সুসময় আসবে কবে?
আল-আমিন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি জানেন যে, বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্য স্থির বেঁধে দেয়া রয়েছে। এর অর্থ কোনো শেয়ার সেই সীমার নিচে নেমে লেনদেন করতে পারছে না। এর সুযোগ নিয়েছে একটা শ্রেণি। বাজারে যখন ভালোমানের প্রায় ৮০ ভাগ কোম্পানি আটকে রয়েছে ফ্লোর প্রাইসে তখন দুর্বল শেয়ার নিয়ে সেই শ্রেণিটা কারসাজি করছে। তারা স্মার্ট মানি বা নতুন করে কিছু পুঁজি ঢুকিয়ে কোম্পানিগুলোকে অতি মূল্যায়িত করেছে। এমন হয়েছে যে, ৩৭ টাকার শেয়ার ১৮৮ টাকায় চলে গিয়েছে, ২০ টাকার শেয়ার ৪০ টাকা হয়েছে। মানে হচ্ছে একটা সিগনিফিকেন্ট গ্রোথ হয়েছে। আবার বিমা খাতে দেখেন নতুন নতুন ফান্ড এসেছে, এখানে আমি বলব যদি ভালোমানের কোম্পানি হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তবে যেগুলোর মৌলভিত্তি নেই সেগুলোতে ফান্ড ঢুকলেই বিপদ।
এবার আসি লেনদেনে, কিছুদিন আগেও ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, এখন সেটা নেমে এসেছে ৫০০ কোটির ঘরে। এই যে ড্রপ ডাউনটা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে কিছু ফান্ড বাজার থেকে বের হয়ে গেছে। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীরা চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকের অনেক বিপদেও তাদের টাকা ক্যাশ করতে পারছেন না। এই যদি হয় তাহলে বাজারে সুদিন কীভাবে আসবে আমার বোধগম্য নয়। এখন তো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুধু বিক্রির প্রবণতা দেখি। ফান্ড যদি বের না হয়ে বাজারে থাকে তাহলে এটা সমস্যা নয়, তবে ফান্ড বের হয়ে গেলে তো বাজার ভালো হবে না।
প্রশ্ন: তাহলে লোকসান হওয়ার কারণে ফান্ড চলে যাচ্ছে, নাকি অন্য কোনো কারণ?
আল-আমিন: অবশ্যই। লোকসান হওয়ার কারণে। আপনি কি চাইবেন বিনিয়োগ করে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে? সবাই এখানে আসে কিছু লাভের আশায়। একটা শেয়ার কিনবে সেখান থেকে কিছু লাভ হবে, আবার দু-এক জায়গায় হয়তো লোকসান হবে, এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে এসব হচ্ছে না, এখনকার বাজারে দেখেন ভালোমানের শেয়ার পড়ে আছে ফ্লোরে। অনেক কোম্পানির ইপিএস, পিই রেশিও ভালো, ডিভিডেন্টও দিচ্ছে ভালো, তার পরও দেখতে পাচ্ছি সেই শেয়ারের মুভমেন্ট হচ্ছে না। কারণ হচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারী যারা তারা সেই কোম্পানির সঙ্গে নেই। যারা বাজারে ফান্ডামেন্টাল দেখে বিনিয়োগ করেছেন তারাও এখন হতাশ হয়ে তাদের ফান্ড সরিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
যেটা কোনো স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। আবার দেখেন, যে কোম্পানির নিলাম হচ্ছে, ১০০ কোটি টাকার ওপর দায়-দেনা রয়েছে সেই কোম্পানি ৩৭ টাকা থেকে ১৮৮ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এমন বহু কোম্পানির ক্ষেত্রে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এসব জায়গাতে কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী নেই বরং কোনো চক্র কাজ করছে।
প্রশ্ন: তাহলে এই বাজারে ব্যবসা করছে কারা?
আল-আমিন: আপনি জেনে থাকবেন, বহু ব্রোকারেজ হাউস তাদের কর্মী ছাঁটাই করছে। আবার কেউ কেউ ভালো ব্যবসাও করছে। এর কারণ হলো একই বাজারে ভালো কোম্পানি, ভালো বিনিয়োগকারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। আবার এমন চক্রে যারা আছেন তারা ভালো ব্যবসা করছেন। সে জন্য আমি মনে করি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কারও বিষয়ে কোনো অভিযোগ উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সিদ্ধান্ত দিতেই যদি পাঁচ ছয় মাস লেগে যায়, তাহলে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেল। তার ব্যবসা সে করে নিল এই সময়ের মধ্যে, আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখানেও ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
প্রশ্ন: তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করণীয় কি?
আল-আমিন: ওই যে আগেই বললাম, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী এখন চাচ্ছে বাজার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে। সেটাও তারা পারছেন না। কারণ চাইলেও তাদের শেয়ার তারা বিক্রি করতে পারছেন না। দেখুন, ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোনো শেয়ার যদি ব্লকেও বিক্রি করতে চান তাহলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তার মানে ছোটরা চাইলেও তাদের হাতে থাকা ১ লাখ, ২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ধৈর্য ধরা ছাড়া কিছুই করার নেই। ভালোমানের শেয়ারে থাকলে একদিন সেটার দাম বাড়বেই। তখন চাইলে যে কেউ বিক্রি করে বের হতে পারবেন।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি, দুর্বল শেয়ারের লেনদেনও বেশি হচ্ছে। ‘বি’ এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরি শুধু দাম বাড়ার শীর্ষে নয়, লেনদেনেও শীর্ষে উঠে আসছে। এর কারণ কি?
আল-আমিন: ওই যে বললাম, চক্র। তারা তাদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার কিনে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে এটা বাড়বে, ওটা বাড়বে। বিনিয়োগকারীরাও দেখে শেয়ারটির দাম কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে, তখন বুঝে হোক আর না বুঝে হোক শেয়ার কেনার হিড়িক পড়ে। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে চক্রটি শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছে, দিন শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিতে পড়ছেন। কোনো কোনো শেয়ারের ক্ষেত্রে দেখবেন একটু বাড়লেই ডিএসইর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হচ্ছে, আবার কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে বহুগুণ বাড়লেও তা দেয়া হচ্ছে না। এগুলো কেন হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খুঁজে বের করতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে কখনোই মানুষের আস্থা ফিরবে না।
দেশের পুঁজিবাজার কবে আরও ভালো করবে, সে ব্যাপারে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলছেন, ‘সরকারের বিভিন্ন নীতির কারণে আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ঠিক হয়ে এসেছে। রিজার্ভ কম ছিল, সেটা আবার ৩০ বিলিয়নে স্থিতিশীল আছে। আমাদের ডলারের সরবরাহ বাড়ছে। আমাদের ডলারের দাম হয়তো ৯০-এর ঘরে চলে আসবে। সেদিকে এখন যাচ্ছে। ডলারের দাম ৯০ টাকায় এলে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।’
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘যখন দ্রব্যমূল্য কমে আসবে, তখন আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও ক্ষমতা বাড়বে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এক সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) তাদের কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘ডলার সংকটের বড় প্রভাব পড়েছিল আমাদের পুঁজিবাজারে। তারল্যের সংকটে পড়ায় পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে ফেলেছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সেই টাকা ফিরে এসেছে, আসছে। আমাদের জ্বালানি সংকট হয়েছিল, সেটা সমাধান হয়ে গেছে। এখন যদি আমাদের জ্বালানি সংকট না থাকে, তারল্য ব্যবস্থাপনা ভালো হয়, খাদ্যশস্য সরবরাহে যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে আমরা একটি ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছি।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান এসময় বলেন, ‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি যদি দেখি মানুষের পুঁজির নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব, কেউ বিপদে পড়বে না। কখনো সেই ইতিহাস ফিরে আসবে না। সাথে সাথে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেব।’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সাংবাদিক মোহাম্মদ মোফাজ্জল। এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সভাপতি হাসান ইমাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ডা. হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল।