দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণের ছাড় ও প্রতিশ্রুতি দুটোই কমেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) উন্নয়ন সহযোগীরা ৪২৫ কোটি ৯৫ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই সাত মাসে ৪৬৯ কোটি ৯ লাখ (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলার অর্থায়ন করেছিলেন দাতারা।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে। এই সাত মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি- ১০৪ কোটি ৯ লাখ ডলার ছাড় করেছে জাপান। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে আলোচ্য সময়ে মোট বিদেশি ঋণের চার ভাগের এক ভাগ বা ২৫ শতাংশই দিয়েছে জাইকা।
পাশাপাশি আগামীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতিও কমিয়েছে দাতারা। অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১৭৬ কোটি ৫৭ লাখ (১.৭৬ বিলিয়ন) ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল ৬২ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি- ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের পর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম উৎস হচ্ছে বিদেশি ঋণ-সহায়তা। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণ ও এই ঋণের প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়া মানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। গতকাল সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১১২ কোটি (১.১২ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তার আগে ছিল প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। সেই বিল ১ বিলিয়ন ডলার হলেও রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, গত তিন মাস ধরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। রেমিট্যান্সও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই দুই সূচক যদি না বাড়ত আর আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি যদি না আসত, তাহলে কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যেত। এখন কথা হচ্ছে, আগামী দু-এক মাসের মধ্যে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বিদেশি ঋণও কমছে। আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি কমে যায়, তখন কিন্তু রিজার্ভ কমে যাবে।’
সে কারণে রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে বিদেশি মুদ্রা সরবরাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।’
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।
কিন্তু সেই জোয়ার আর নেই। সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে বাড়তি বাজেট সহায়তার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ঋণ পাওয়া গেলেও এবার অর্থবছর শেষে মোট ঋণ-সহায়তার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপে পড়েছে। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশাপাশি রিজার্ভও কমছে। এই চাপ সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখন কম সুদের বিদেশি ঋণ-সহায়তা।’
তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে জাপান- ১০৪ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে মোট বিদেশি ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশই দিয়েছে জাইকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গতকাল সোমবার বিদেশি ঋণপ্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিদেশি ঋণপ্রবাহের উল্লম্ফন নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ৪৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছিল, যা ছিল গত জুলাইয়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসে তা হোঁচট খায়। ওই মাসে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করে দাতারা, যা ছিল আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম।
পরের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অবশ্য তা কিছুটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে আসে ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আর অক্টোবরে আসে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে তা কমে ৪৯ কোটি ডলারে নেমে আসে। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে অবশ্য বিদেশি ঋণ-সহায়তার অঙ্ক বেশ বেড়েছে; এই মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ১৩২ কোটি ডলার এসেছে। সবশেষ ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এসেছে ৪৮ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ বিদেশি ঋণ কম এসেছে দেশে।
‘এই মুহূর্তে কম সুদের বিদেশি ঋণ খুবই প্রয়োজন’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতির বিশ্লেষক আতিউর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে। এই চাপ সামলাতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থার ঋণ প্রয়োজন। এসব সংস্থার পাইপলাইনে যেসব ঋণ আছে, সেগুলো দ্রুত আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এই অর্থবছরে বিদেশি ঋণ কমার কারণ ব্যাখ্যা করে দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণ-সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর কোভিডের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিতে হচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোকে। সে কারণেই বিদেশি ঋণ কমছে। আমার মনে হচ্ছে, এবার গতবারের চেয়ে ঋণ বেশ খানিকটা কম আসবে।’
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দাতাদের কাছ থেকে যে ৪২৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য এসেছে ৪০৪ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। আর অনুদান পাওয়া গেছে ২১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময় প্রকল্প সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ৪৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। অনুদান এসেছিল ১৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।
অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে এডিবি ছাড় করেছে ৬৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার, প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৮৪ কোটি ৭ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৬৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ৩০ কোটি ডলারের। চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৫৬ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার; তবে কোনো প্রতিশ্রুতি মিলেনি। এ ছাড়া ভারত দিয়েছে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া গেছে প্রায় ৪৬ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
দেশব্যাপী চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। চলমান দাবদাহে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য চাহিদা বেড়েছে ডাবের। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেছে দামও। রাজধানীতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। আর মাঝারি ও বড় আকারের ডাব প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। এটি এ বছরের রেকর্ডমূল্য।
মতিঝিল এলাকায় ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করেন জুসিনুর। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির পর পাইকাররা ডাবের দাম ৩০ থেকে ৬০ টাকা বাড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছরে ব্যবসায় এত বেশি দাম কখনো দেখেননি। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও নয়।
সদরঘাটের বাদামতলীতে ডাব ও ফলের পাইকারি বিক্রেতা ইব্রাহিম সরদার জানান, সবসময় ঈদের পরপর চাহিদা কম থাকত কিন্তু এবার তীব্র দাবদাহের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে।
উৎপাদকদের কাছ থেকে সরবরাহকারীরা বেশি দামে ডাব কিনেছেন আর সেই কারণে পাইকারি বাজারে ডাবের দাম বাড়ছে বলে জানান এই বিক্রেতা। সে কারণেই তাকেও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে বেশি দামেই ডাব কিনতে হয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ, গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় ডাবের দাম বেশ বাড়তি দেখা গেছে। ঢাকার অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারেও দেখা গেছে ডাবের দাম বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, বরিশাল, ভোলা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, ফরিদপুর, যশোর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সরবরাহ পয়েন্টেও বেড়েছে ডাবের দাম।
গত ১০ দিনের ব্যবধানে সরবরাহ পর্যায়ে ডাবের দাম প্রতিটিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বিক্রেতা সূর্য আলী জানান, ১০০টি ডাবের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এত চড়া দাম আগে দেখা যায়নি। গত রমজান মাসেও ডাবের দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকার কম ছিল বলে জানান তিনি।
এই দামে ক্রেতারা কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও গরমে পানির চাহিদা মেটাতে ডাব কিনছেন তারা। মৌচাক মোড়ে ডাব খেতে খেতে মো. মিলন নামের এক পথচারী বলেন, ঈদের আগে রমজানের মধ্যে ৬০ টাকা দিয়ে যে আকারের ডাব কিনেছিলাম; আজ সেই একই আকারের ডাম ১২০ টাকা দিয়ে খেলাম। গরমে আর কিছু তো সেভাবে খাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য দাম দিয়ে হলেও ডাব খেলাম।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ঢাকায় একটি ডাবের দাম ছিল গড়ে ২২ টাকা। ২০২০ সালে প্রতিটির দাম উঠেছিল ৭৪ টাকা।
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ডাবের গড় দাম ১০০ টাকার নিচে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে নারিকেলের উৎপাদন ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯১ টন থেকে কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ২২১ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টনে নেমে এসেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর থেকে নারকেলের উৎপাদন কমতে শুরু করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫১ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩২ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫২০ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৪৫৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টন নারিকেল উৎপাদন হয়েছে। ভোলা জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার টন নারিকেল উৎপাদিত হয় এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫০ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন বছরব্যাপী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারিকেলের চাষ বাড়ছে না। দেশে চাহিদা বাড়ায় ডাব ও নারিকেলের উভয়ের দামই বেড়েছে বলে জানান তিনি।
কমানোর পরের দিনই বাড়ল সোনার দাম। ভালো মান বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বেড়েছে ৬২৯ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৭ টাকা।
আজ রোববার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৫১৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৪২০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল দেশের বাজারে রেকর্ড সোনার দাম বাড়ায় বাজুস। ওই সময় ভরিতে ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। তাতে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮টাকা। এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম ছিল। পরে গতকাল শনিবার ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম কমে ৮৪০ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ ইমরান।
তিনি একই সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করতে প্রবাসে দেশের অসাধারণ সাফল্য গাঁথা তুলে ধরার জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে সোনালী এক্সচেঞ্জের ‘গ্রাহক সমাবেশ ও এসইসিআই (SECI) অ্যাপ ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত এ আহ্বান জানান।
বৈধ পথে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ আফজাল করিম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ইনকরপোরেশন, ইউএসএ-এর সিইও দেবশ্রী মিত্র।
রাষ্ট্রদূত ইমরান উল্লেখ করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত দেড় দশকে সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে।
তিনি বলেন এই সময়কালে দেশে অনেক ইতিবাচক অর্জন ও পরিবর্তন ঘটেছে এবং যদি আমরা এই সাফল্যের গল্প সবাইকে জানাতে পারি ও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে দেশ একটি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।
রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, বাংলাদেশ একটি বিজয়ী জাতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই জাতি বহুল আকাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই লক্ষ্য অর্জন থেকে দেশ এখন আর বেশি দূরে নয়।
রাষ্ট্রদূত বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের এসইসিআই অ্যাপ প্রবর্তনের প্রশংসা করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অ্যাপটির সুবিধাগুলো সবাইকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক বর্তমানে প্রদত্ত বিভিন্ন কনস্যুলার সেবার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরেন।
সোনালী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আফজাল করিম তার বক্তব্যে দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সেবা জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে এর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এসইসিআই অ্যাপের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই অ্যাপটি চালু করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন এই অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রবাসীরা তাৎক্ষণিকভাবে এবং সহজে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ও বৈধ পথে অর্থ পাঠালে দেশ অত্যন্ত উপকৃত হবে।
ওয়াশিংটন ডিসি এবং এর পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্যগুলিতে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাউন্সেলর ও দুতালয় প্রধান শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৮ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যমতে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ১২৮ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
এর আগে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে এসেছে ২১০ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচক কমেছে। এরপরও সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। এর আগে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে দুই মাসের বেশি সময় ধরে নিম্নমুখী ছিল শেয়ারবাজার। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন এক লাখ কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। তবে ঈদের আগে শেষ চার কার্যদিবস কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকে বাজার। অবশ্য তাতে খুব একটা উপকার হয়নি বিনিয়োগকারীদের। ঈদে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে থেকেই যান বিনিয়োগকারীরা। আর ঈদের পর আবার শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা যাচ্ছে।
ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে শেয়ারবাজার এই পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দেয়। কিন্তু ঈদের ছুটি শেষে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই ইসরায়েলের ওপর নজিরবিহীন রকেট হামলা করে ইরান। এতে বৈঠকে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও। ফলে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই পতন দেখতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
গত ১৭ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ধারাবাহিকভাবে কমে ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে সেই বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর বাজার মূলধন হারায় ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। আর ঈদের পর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হলেও গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। অবশ্য এরপরও ১৭ জানুয়ারির সঙ্গে তুলনা করলে ডিএসইর বাজার মূলধন এখনো ৮২ হাজার ১২৪ কোটি টাকার ওপরে কম রয়েছে।
গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৮৯টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮৫টির। আর ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৭৭ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৪৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩৫ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সবকটি মূল্য সূচক কমলেও লেনদেনের গতি কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। দৈনিক গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার দৈনিক গড়ে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বেস্ট হোল্ডিং, ফু-ওয়াং ফুড, ফু-ওয়াং সিরামিক, গোল্ডেন সন, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, শাহিনপুকুর সিরামিক এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস।
চলতি মাসে তিন বার সোনার দাম বাড়ানোর পর এবার কিছুটা কমানোর ঘোষণা এসেছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) পক্ষ থেকে। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে এই নতুন দাম কার্যকর করা হয়।
আজ শনিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সোনার দাম তিন দফায় ৪ হাজার ৫৬০ টাকা বাড়িয়ে এখন প্রতি ভরিতে কমানো হয়েছে মাত্র ৮৪০ টাকা। কমানোর পর ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা। আজ দুপুর পর্যন্ত যার দাম ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা।
বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম কিছুটা কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আইএমএফের ঋণের দশটি শর্তের নয়টি পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাই ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে কোনো অসুবিধা হবে না।
তৃতীয় কিস্তির ঋণ ছাড়ের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশ সফরে আইএমএফ প্রতিনিধি দল আসবে বলেও জানান আব্দুর রউফ তালুকদার।
উল্লেখ্য, গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্থনীতির সবগুলো সূচকে বাংলাদেশ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে চলেছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে দিনভর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের স্প্রিং মিটিং-২০২৪-এর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
গভর্নর বলেন, মরিশাসের সঙ্গে অফশোর ব্যাংকিং চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে মরিশাসের ব্যাংকের লেনদেন সহজ হবে।
তিনি বলেন, মরিশাসের গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এর ফলে মরিশাসে অবস্থানরত ৪০ হাজার বাংলাদেশি খুব সহজেই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। এখন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন না।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন।
আজ শুক্রবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী এ তিনি কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের স্প্রিংমিটিং-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিতে অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী এখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এবং মাহমুদ আলীর বর্ণাঢ্য কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক কর্মজীবন সংক্ষেপে তুলে ধরেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন এবং তার নেতৃত্বে দেশ সামনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তিনি জাতিকে এর অভীষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান এবং তারা দেশের চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কে তার কূটনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণা করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত প্রথম কূটনীতিক যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এর আগে অর্থমন্ত্রী দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
দূতাবাসে পৌঁছালে অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
চলমান লোহিত সাগর-সংকট ও গাজা যুদ্ধের কারণে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি নতুন করে উদ্বেগের মুখে পড়েছে।
স্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, ব্যবসার খরচ আরও বাড়বে। কারণ, এই উত্তেজনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিলে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তেলের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে।
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গত রোববার ইরান থেকে ইসরায়েলে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিদেশি ক্রেতারা ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পণ্য সরবরাহ করতে বলেছেন। কেননা, গত অক্টোবরে লোহিত সাগর সংকটের পর পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
সুয়েজ খালের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপের সংযোগকারী লোহিত সাগরে সংকট বৈশ্বিক উত্তেজনার কেন্দ্র হিসেবে দেখা দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বন্দরে পণ্য পাঠাতে সাধারণত ৩০ দিন লাগত।
সেই নৌপথে চলাচলকারী জাহাজগুলো লক্ষ্য করে হুতিদের হামলার কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ ঘুরে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ঘুরে যাওয়ার কারণে পণ্য সরবরাহে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হচ্ছে এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এই সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি খুচরা পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ড পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা এড়াতে কিছু পণ্যের কার্যাদেশ বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক বা ভিয়েতনামে সরিয়ে নিচ্ছে।
কার্যাদেশ কমে যাওয়ার এই ঘটনা এমন সময়ে ঘটল যখন বাংলাদেশের আয়ের সবচেয়ে বড় খাতটি করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মারাত্মক বিপর্যয় থেকে জেগে ওঠার চেষ্টা করছে।
পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঊর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাছাকাছি জায়গা থেকে পণ্য নেওয়া হচ্ছে। এসব কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও অনেক ক্রেতা তুরস্ককে দিচ্ছেন। কারণ সময়মতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ক্রেতাদের জন্য জরুরি।
বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এক সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় বলে কম সময়ের মধ্যে পণ্য বাজারে আনার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম কমে যায়। এটি শেষ পর্যন্ত রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, লোহিত সাগর সংকটের কারণে বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানিকারকদের কম দাম দিয়ে জাহাজ পরিচালনার খরচ তুলে নিচ্ছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাহাজ চলাচলের খরচ বহন করে তবু অনেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রপ্তানিকারকদের ওপর খরচ চাপিয়ে দেন।
৯৫ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে ক্রেতারা ফ্রেইট অন বোর্ড পদ্ধতিতে পণ্য কেনায় জাহাজের খরচ দিয়ে থাকেন। রপ্তানিকারকরা পাঁচ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ দেন।
আশরাফ ও নাসির উভয়ের মতে, ক্রেতারা যেকোনো অতিরিক্ত খরচ রপ্তানিকারকদের ওপর চাপিয়ে দেন।
কারখানার মালিকরা আশঙ্কা করে বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বাড়লে তা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে।
তেলের দাম বাড়লে জাহাজ চলাচলের খরচ বেড়ে যাবে। এটি উৎপাদন ও পণ্য পরিবহন খরচ বাড়িয়ে তুলবে।
দীর্ঘ সময় মধ্যপ্রাচ্য সংকট চললে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক ও ইরানের মতো উদীয়মান বাজারগুলোয় পোশাক বিক্রি ততটা সহজ হবে না, যতটা অনেকে আশা করছিলেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লোহিত সাগর সংকট শুরুর পর ঢাকা থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে গেছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে তা আরও বাড়তে পারে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে ইউরোপের বিমানবন্দরগুলোয় এক কেজি পণ্য পরিবহনে এয়ারলাইনসগুলো আড়াই ডলারের বেশি চার্জ করে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে একই গন্তব্যে ৩০ মার্কিন সেন্টের চেয়ে বেশি দরকার হয়।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বেড়েছে। আগে পাঁচ লিটারের তেলের বোতলের দাম ছিল ৮০০ টাকা সেটি এখন বিক্রি হবে ৮১৮ টাকায় এবং পাম ওয়েলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি বলেন, ‘বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১৪৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪৭ টাকা করা হয়েছে। আজ থেকে এ দাম কার্যকর হবে।’
গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা এক চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ভোজ্যতেলের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন পর্যায়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে জারি করা এসআরওদ্বয়ের মেয়াদ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে শেষ হচ্ছে বিধায় আগামী ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখ থেকে বাজারে ভোজ্যতেল (পরিশোধিত পাম তেল ও পরিশোধিত সয়াবিন তেল) সরবরাহে ভ্যাট অব্যাহতি পূর্ববর্তী মূল্যে পণ্য সরবরাহ হবে।’
চিঠিতে ১৬ এপ্রিল থেকে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটার ৮৪৫ টাকা এবং খোলা এক লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা প্রস্তাব করা হয়।
এর আগে পবিত্র রমজান মাসে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। আমদানি পর্যায়ে তেলের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এতে ব্যবসায়ীরাও হাসি মুখে তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব মেনে নেন। সেসময় সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয় প্রতি লিটারে ১০ টাকা। তবে ঈদ যেতে না যেতেই আবারও দাম বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মাত্র ১২ দিনে (চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিন) দেশে প্রায় ৮৮ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবছর ঈদের আগে রমজান মাসে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৮৭ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ঈদের সময় রমজানের শেষদিকে দৈনিক রেমিট্যান্স এসেছে ৮০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
আলোচিত সময় অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম ১২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৬ লাখ ৭১ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এর আগে মার্চ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে এসেছে ২১০ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। যা সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দেশে পালিত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষ্যে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল (বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ) নির্ধারিত সরকারি সাধারণ ছুটি ছিল। ঈদের পর ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ও ১৪ এপ্রিল রোববার নববর্ষের ছুটি। ফলে ১০ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ছুটি কাটান ব্যাংক-বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি চাকরিজীবীরা। ঈদে টানা পাঁচ দিন ছুটির পর সোমবার খুলছে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
পবিত্র রমজান মাসে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। আমদানি পর্যায়ে তেলের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এতে ব্যবসায়ীরাও হাসি মুখে তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব মেনে নেন। সেসময় সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয় প্রতি লিটারে ১০ টাকা।
তবে ঈদ যেতে না যেতেই আবারও দাম বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতি না থাকায় ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে তেল সরবরাহ করা হবে। সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লা চিঠিটি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তাদের প্রস্তাবিত দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও প্রতি লিটার পামতেলের দাম হবে ১৩২ টাকা।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু অবশ্য বলেছেন এই মুহূর্তে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।
প্রতিমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, ‘তেলে ৫ শতাংশ ডিউটি কমিয়েছিলাম এতে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমেছিল। সেই ভ্যাট ছাড়ের মেয়ার শেষ হয়েছে ১৫ এপ্রিল। তবে এ নিয়ে আমাদের ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে। মিলাররা যে দাবি করেছে তার যৌক্তিকতা যাচাই করা হচ্ছে। তাদের আমদানি পর্যায়ে খরচ তার সঙ্গে সরকারের কর সব মিলিয়ে কেমন খরচ পড়ছে ইত্যাদি যাচাই করছে কমিশন। তবে এটা বলতে পারি আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই’।
ব্যবসায়ীদের চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চিঠির বিষয়ে আমি এখনও কিছুই জানি না। চিঠিও আমি এখনো হাতে পায়নি, যদি পাঠিয়ে থাকেন অফিসে গিয়ে দেখব।’
এদিকে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। যেখানে তারা এখনই ভ্যাট না বাড়াতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছে। কমিশনের বাণিজ্যনীতি বিভাগের উপপ্রধান প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে সয়াবিন তেলসহ ভোজ্যতেল আমদানির ওপর আগের নির্ধারিত ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ভ্যাট নেয়া হচ্ছে ১০ শতাংশ। যার মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করার অনুরোধ করা হলো।
বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক- এডিবি মনে করে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ম্যানিলাভিত্তিক ঋণদাতা এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি তাদের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে। যদিও সংস্থাটি তাদের আগের পূর্বাভাসে জানিয়েছে এই অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বৈশিক ও অভ্যন্তরীণ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে প্রবৃদ্ধি দশমিক ১ শতাংশ কমে আসার কথা বলেছে এডিবি।
যদিও সংস্থাটি মনে করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক। সংস্থাটির মতে, চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠে পরের বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে ঢের বেশি। এডিবি বলছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা, সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির উন্নতি ও পর্যটন পুনরুদ্ধারের মধ্যে এই অঞ্চলে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ।
এডিবির দেওয়া প্রক্ষেপণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার ভারতের পরই প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হবে বাংলাদেশ। এডিবি মনে করে বাংলাদেশের ভালো প্রবৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখবে পোশাক রপ্তানি খাত। সংস্থাটির হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এখনো রপ্তানি খাত।
তবে সংস্থাটির প্রক্ষেপন বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে ৮ দশমিক ৪ এর ঘরে। যদিও পরের বছরেই মূল্যস্ফীতি কমে নেমে আসবে ৭ শতাংশে। সংস্থাটির মনে করে মূল্যস্ফীতি কমে আসলে ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগ বাড়বে। এ ছাড়া জ্বালানি ও রেল খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে এডিবি।