দেশের পুঁজিবাজারের অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে মানববন্ধন করেছে বিনিয়োগকারীরা। কর্মসূচি থেকে বিনিয়োগকারীরা ১২ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করা হবে বলে মানববন্ধনে ঘোষণা দেয়া হয়।
রোববার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পুরনো ভবনের সামনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক, সহ-সভাপতি মহসিন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন শামীম, অর্থ সম্পাদক পারভেজ আলীসহ বিনিয়োগকারী নেতারা।
বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক বলেন, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে দেশের পুঁজিবাজারে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এছাড়া বিএসইসির ওপর আস্থা রেখেই ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করেছি। আর এ দাবিগুলোকে স্মারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিকেলে জমা দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো ওই স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমরা অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের জন্য আপনার নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সহজ শর্তে অর্থাৎ ৩ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। যা আইসিবিসহ বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হতে সহায়তা করবে।
পুঁজিবাজারের বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখার বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এতে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা, ফোর্সসেল বন্ধ রাখা এবং সব ধরনের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখার দাবি করছি।
লভ্যাংশের ওপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। কোম্পানিগুলো লভ্যাংশের ঘোষণার পূর্বে সরকারের অগ্রিম যে ট্যাক্স দিয়ে থাকে সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসেবে গণ্য করতে হবে। ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় তখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং অস্থিরতা কমবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা করেও উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। উপযুক্ত পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হার এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের পার্থক্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সুবিধা ভালোমানের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করে না। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এতে বহু ভালোমানের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এবং লভ্যাংশ প্রদানেরে সক্ষমতা বাড়বে।
পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে বাইব্যাক আইন পাস করার জোড় দাবি জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যু মূল্যে অথবা এনএভি এর ৫ শতাংশ কম এই দুইটির মধ্যে যেটি বেশি হবে, সেই মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।
অপ্রদর্শিত অর্থ ৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করে বিনা শর্তে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিবে হবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিদেশে অর্থের পাচার বন্ধ হবে ও দেশীয় শিল্প উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। এতে সরকারেরও প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত বিএসইসির ২সিসি ধারা মোতাবেক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ২০ শতাংশ ও এককভাবে নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করার দাবি জানাচ্ছি।
পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য ভবিষ্যতে কোনো কোম্পানিকে আইপিও এর মাধ্যমে টাকা তুলতে হলে কমপক্ষে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার আপলোড করার বিধান রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।
কারসাজি রোধে বিএসইসিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইউ এর মতো একটি নতুন ইউনিট চালু করার দাবি জানাচ্ছি। যেখানে ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি এর কর্মকর্তা সংযুক্ত থাকবেন, যা সরাসরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন থাকবে।
গত দিনের দেড়শ পয়েন্ট সূচকের পতনের পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে উত্থান দিয়ে, বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ২৫ এবং বাছাইকৃত ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। ৩৬৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৯ কোম্পানির এবং দাম অপরিবর্তিত আছে ১২ কোম্পানির শেয়ারের।
দিনের প্রথম দুই ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে ১৫০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
ঢাকার মতো লেনদেনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় আছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ৬৬ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৮০ কোম্পানির দাম বেড়েছে, কমেছে ৩১ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথমার্ধে ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতেই পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার, কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (১৩ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ার ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৯ কোম্পানি এবং দর অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকার বাজারে মোট শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
একইভাবে সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৮ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৬৭ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের পর দেশের শেয়ারাবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ভোটের পর প্রথম সপ্তাহের মতো দ্বিতীয় সপ্তাহেও টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। বেড়েছে লেনদেনও।
ইতিবাচক পুঁজিবাজারে বেড়েছে বাজার মূলধন। গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। একই সঙ্গে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। আর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৩৫ পয়েন্টের বেশি।
গত ৭ জানুয়ারি হয়েছে বহুল আলোচিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। তবে এই ভোটের আগে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এতে আতঙ্কে অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকেন। ফলে একদিকে পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি যেমন কমেছে, তেমনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরও ধারাবাহিক পতন হয়েছে।
তবে বড় ধরনের কোনো সংঘাত ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। স্বাভাবিক পরিবেশে ভোট এবং নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় শেয়ারবাজারেও যেন তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে ভোটের পর টানা দুই সপ্তাহ দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির। আর ২০৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা, যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮৬ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা বা দশমিক ২২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫৭ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়েছে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি বেড়েছে ১১ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আর ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৭৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ১৯৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ৬৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, দেশবন্ধু পলিমার, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, বিচ হ্যাচারি, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি।
স্মার্ট অর্থনীতির দেশ বিনির্মাণে মানি মার্কেটের পাশাপাশি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্যাপিটাল মার্কেট। এ বাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন যথাযথ জ্ঞান ও শিক্ষার। যদিও আমাদের দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কিত শিক্ষার অভাবের বিষয়টি বারবার সমালোচিত হয়। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কিত পাঠ্য ব্যবস্থা চালুর কথা বলা হলেও দীর্ঘ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তত্ত্বাবধানে সরকারি অর্থায়নে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মশালাসহ সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম)। সম্প্রতি বিনিয়োগ শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা বলেন বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেদী হাসান সজল।
২০২০ সালের ৩ আগস্ট তিন বছরের জন্য বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। সময় শেষ হওয়ায় সম্প্রতি বিআইসিএমে তার চাকরির মেয়াদ আবার দুই বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে জাপানের সুকুবা ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পিএইচডি অর্জন করেন। এর আগে ১৯৯৭ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে স্নাতক ও ১৯৮৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব কতটা?
: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব এককথায় বোঝানো সম্ভব নয়। কেননা এটি একটি টেকনিক্যাল জায়গা। মূলত সব বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই শিক্ষার প্রয়োজন আছে। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে এর গুরুত্বটা অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় একটু বেশি। যদিও আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে কোনো পাঠদান ব্যবস্থা নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাধ্যমিক স্তর থেকেই আর্থিক স্বাক্ষরতার বিষয়টি যুক্ত করা প্রয়োজন। পরে নবম-দশম শ্রেণিতে এখানে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ স্তর থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েদের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দিয়ে দিতে হবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে তুলনামূলক কিছুটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যত বেশি ঝুঁকি থাকে তত বেশি মুনাফা গেইন করারও সুযোগ থাকে। কম ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগের সুযোগও এখানে রয়েছে। আবার ঝুঁকিহীন বিনিয়োগেরও ব্যবস্থা আছে। কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে ঝুঁকি নিয়ে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে, এটা জানতে আমাদের বিনিয়োগ শিক্ষা থাকতে হবে। তাই এককথায় আমরা বলতে পারি, পুঁজিবাজারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
বিনিয়োগ শিক্ষায় বিআইসিএমের অবস্থান সম্পর্কে বলুন?
: ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে দুটি বড় মহাধস হয়েছে। মূলত প্রথম মহাধসের পর থেকেই সরকারি বিভিন্ন মহলে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব দিতে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে বিআইসিএম প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১০ সালের দিকে। পরে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে বিআইসিএম। এরপর মার্কেট, মার্কেটের পণ্য, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারের ওপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা চালু করা হয়। পরে ২০২১ সালে বিআইসিএম মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করে। এর বাইরে আমরা পুঁজিবাজার নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
বিআইসিএমের কার্যপরিধি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে কি, এখানে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে?
: বিনিয়োগ সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এখন আরও বিনিয়োগ দরকার। ঢাকার বাইরে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি নেয়া দরকার। মূলত এ ক্ষেত্রে বাজেট একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আমরা যে ভবনটিতে থাকি সেটি এখনো ভাড়ায় নেয়া। এর পাশাপাশি আমাদের শিক্ষক ও স্টাফদের বেতন বাবদ বড় একটি অংশ ব্যয় হয়। এসবের খরচ মিটিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য যে অংশটা আমরা সরকারের কাছ থেকে পাই তা আসলে যথাযথ নয়। আমাদের যদি একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকত তাহলে আরও ভালো কাজের সুযোগ তৈরি হতো। আমরা কাজের পরিধি বাড়াতে চাইলেও বাজেট স্বল্পতার জন্য তা হয়ে ওঠে না।
পুঁজিবাজারের বিশ্লেষকরা প্রায়ই বলে থাকেন এখানের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ শিক্ষা নেই। তারা গুজবকেন্দ্রিক বিনিয়োগে অভ্যস্ত। এ থেকে বিনিয়োগকারীদের ফেরাতে আপনাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলুন?
: বিআইসিএম বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আসছে; কিন্তু পুঁজিবাজারের পরিধি অনুসারে বিআইসিএমের একার প্রচেষ্টায় গুজব ঠেকানো সম্ভব নয়। এখানে মার্কেটসংশ্লিষ্ট সব মহলের যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আমরা বিনিয়োগ শিক্ষা নেয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাই; কিন্তু সব মহল থেকে যদি সেই তাগিদ না আসে তাহলে বিনিয়োগকারী কতটা আগ্রহী হবেন? একটা সাসটেইনেবল মার্কেট গঠনের জন্য বাজারসংশ্লষ্ট সবার যৌথ প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের এমন একটি ইকো-সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যাতে সব বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ শিক্ষা নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
বিআইসিএম বিভিন্ন সময়ে সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি কর্মশালাসহ বিনিয়োগ শিক্ষা কোর্সে ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে কতটা সাড়া মিলছে?
: পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমরা বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করার ক্ষেত্রে খুব একটা ভূমিকা দেখতে পাই না। এ জন্য আমরা নিজেরাই সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী করতে কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কোর্স সম্পর্কে তাদের অভিহিত করছি। এ ছাড়া আমরা নারী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতেও কাজ করছি। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এ প্রচারণার সুফল পাওয়া যাবে।
বিআইসিএমের কোর্স ফি আরও কমানো হলে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছেন কি?
: কোর্স ফি আরও কমানো হলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি মনে করছি না। এরই মধ্যে আমরা কোর্স ফি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। তা সত্ত্বেও কিন্তু আগ্রহ বাড়তে দেখিনি। মার্কেট যদি ভালো হতো তাহলে বিনিয়োগকারীরা হয়তো অনেকটা আগ্রহী হয়ে উঠতেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ শিক্ষা নেয়ার বিষয়ে তাগিদ বাড়াতে হবে। তাহলে বিনিয়োগ শিক্ষায় আগ্রহ বাড়বে। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্থিতিশীল বাজার গঠন করা সম্ভব হবে।
বিআইসিএম সম্প্রতি ‘লাইসেন্সড মিউচুয়াল ফান্ড সেলিং এজেন্ট প্রোগ্রাম’ চালু করেছে। বিনিয়োগ শিক্ষায় নতুনত্ব আনয়নে এ ধরনের আর কোনো উদ্যোগ পাইপলাইনে আছে কি?
: আমরা এ ধরনের নতুনত্ব আনয়নে সব সময় কাজ করছি। ফিন্যান্সিয়াল মডিউল অ্যান্ড ভেলুয়েশন এক্সপার্ট নামক একটি সার্টিফিকেট কোর্স আছে এক বছরের। এর আগে আমরা ডেটা এনালাইসিসের ওপর একটি কোর্স করিয়েছি। ‘লাইসেন্সড মিউচুয়াল ফান্ড সেলিং এজেন্ট প্রোগ্রাম’-এ কোর্সটি আগামীকাল (৬ নভেম্বর) থেকে চালু হবে। এরই মধ্যে অনেকেই এ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করে ভর্তি হয়েছেন। এ ধরনের কাজগুলো আমাদের চলমান একটি প্রক্রিয়া।
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী?
: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে চোখ-কান খোলা রেখে বিনিয়োগ করতে হবে। কারও থেকে প্রবঞ্চিত হয়ে বিনিয়োগ করার জায়গা পুঁজিবাজার নয়। এখানে বিনিয়োগ করতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগ শিক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা এ বাজার যেমনি ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি সম্ভাবনাময়ও।
মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
: আপনাকেও ধন্যবাদ
ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউসগুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও অর্থের হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে। এখন থেকে সব ব্রোকারেজ হাউসে ‘সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার’ চালুর নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এ সফটওয়্যার চালুর নির্দেশ দিয়ে গত সোমবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে সংস্থাটি।
বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ও সিকিউরিটিজ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যে ব্যাক অফিস সফটওয়্যারে ব্যবহার করে, তাতে ব্যবহারকারীর দেয়া তথ্য পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা যায়। এ ধরনের কার্যকালাপের ফলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানী হয়েছে এবং শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে। তাই পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্টেকহোল্ডার কোম্পানির এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সমন্বিত সফটওয়্যার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিএসইসির নির্দেশনায়।
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসংক্রান্ত গাইডলাইন দিয়ে প্যানেলভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সব ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে কমিশনের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং যে কোনো এক্সচেঞ্জের এ সংক্রান্ত গাইডলাইন পরিপালন করে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্যানেলভুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহ করা সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যেসব ব্রোকারেজ হাউস এরই মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছে, সেসব ব্রোকারেজ হাউসকে স্টক এক্সচেঞ্জের তৈরি করা নীতিমালা মেনে ওই সফটওয়্যারের বিপরীতে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সনদ নিতে হবে। এই সনদ না নিলে কোনো এক্সচেঞ্জের প্যানেলভুক্ত সফটওয়্যার ভেন্ডার থেকে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার কিনে ও ইনস্টল করে কমিশনের এসংক্রান্ত নির্দেশনা ও যেকোনো এক্সচেঞ্জের এসংক্রান্ত গাইডলাইন পরিপালন করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ দৈবচয়ন ভিত্তিতে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের পর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোর সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করছে কি না তা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্দেশনার পাশাপাশি বিএসইসি থেকে ডিএসই, সিএসই এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- ডিএসই এবং সিএসইর ট্রেকহোল্ডার মার্জিন নীতিমালা অনুযায়ী পাওয়া ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জের মালিকানা শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্য লভ্যাংশ দেয়া স্থগিত থাকবে। যোগ্য বিনিয়োগকারীর (এলিজেবল ইনভেস্টর/কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর) আইপিও, আরপিও, কিউআইও সুবিধা স্থগিত থাকবে। নতুন শাখা অথবা ডিজিটাল বুথ খোলার সুবিধা স্থগিত থাকবে। এই নির্দেশনার মধ্যদিয়ে বিএসইসি এর আগে ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি জারি করা এসংক্রান্ত নির্দেশনা রহিত করেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পর্ষদ সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। এর বাইরে উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য ৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশে সুপারিশ করেছে কোম্পানিটি। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমেছে তা সত্বেও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ বাড়িয়েছে কোম্পানিটি।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ওয়ালটনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৫ টাকা ৮৪ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরে যা হয়েছিল ৪০ টাকা ১৬ পয়সা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ১৪ টাকা ৩২ পয়সা বা সাড়ে ৩৫ শতাংশ। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৪২ টাকা ১৮ পয়সায় (পুর্নমূল্যায়িত)। আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ২৩১ টাকা ৩৪ পয়সায় (পুর্নমূল্যায়িত)।
ঘোষিত লভ্যাংশ ও আলোচ্য হিসাব বছরের অন্যান্য এজেন্ডায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে এ বছরের ২৯ অক্টোবর বেলা ১২টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটি। এ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ২ অক্টোবর।
এর আগে ২০২১-২২ হিসাব বছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। এর বাইরে এ হিসাব বছরের জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের ১৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।
বিশ্বে দেশের পুঁজিবাজারের ব্যাপ্তি বাড়াতে ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় বিনিয়োগ মেলা করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গে ‘রোড শো’ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার রোড শোটি উদ্বোধন করবেন। এটি হবে বিএসইসির সপ্তম আয়োজন। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী ২৩ আগস্ট (বুধবার) ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক এবারের রোড শোটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) যৌথভাবে আয়োজন করছে। এ ছাড়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সহযোগিতায় রয়েছে আলিফ গ্রুপ।
তথ্যমতে, আগামী বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গের ওআর টাম্বোর রেডিসন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রোড শো শুরু হবে। এ আয়োজন চলবে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত। দুটি পর্বে রোড শোটি আয়োজন করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি ও দেশটির বিনিয়োগকারীরা যোগ দেবেন।
জানা গেছে, এবার দক্ষিণ আফ্রিকার রোড শোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জানিয়েছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনটি সকালে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে সরকার, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজন, প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামসহ বিএসইসির প্রতিনিধিরা।
এবারের রোড শোতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, পুঁজিবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হবে।
এছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হবে।
দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও শহরগুলোতে ধারাবাহিক রোড শো করার পরিকল্পনা করেছে বিএসইসি।
এর আগে প্রথম দফায় দুবাইতে, দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রে, তৃতীয় দফায় সুইজারল্যান্ড, চতুর্থ দফায় যুক্তরাজ্য, পঞ্চম দফায় কাতার ও ষষ্ঠ দফায় জাপানে সফলতার সঙ্গে রোড শো সম্পন্ন করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, জার্মানি, কানাডা, রাশিয়া, ইতালি, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে রোড শো আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া, চলতি বছরের অক্টোবরে ইউরোপের বিনিয়োগ আকৃষ্টে ফ্রান্সের দুই শহরে রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। এটি হবে বিএসইসির সপ্তম আয়োজন। চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর প্যারিস ও ১৮ অক্টোবর টুলুসে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত চলবে সম্মেলন। এতে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি ও দেশটির বিনিয়োগকারীরা যোগ দেবেন।
গত কয়েক মাস ধরেই ফু ওয়াং ফুড কোম্পানি হয় লেনদেনের শীর্ষে থাকছে, না হয় শীর্ষ ১০-এর মধ্যে থাকছে। গত সপ্তাহ শেষে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ফু ওয়াং ফুড। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববারও লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে ফু ওয়াং ফুড।
গত ২ জুলাই ফু ওয়াং ফুডের দাম ছিল ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। এর পরে টানা বাড়তে থাকে শেয়ারটির দাম। ১৬ জুলাই দাম বেড়ে হয় ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা। এই সময়ে ২০ টাকা বা ৮৫ দশমিক ১১ শতাংশ বাড়ে এই শেয়ারের দাম। এর পরেই এই শেয়ারের দাম কমতে থাকে। গতকাল এই শেয়ারের দাম হয়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সা। ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমেছে ৩৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সূচক কমেছে। লেনদেন বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এদিন সূচক ও লেনদেন কমেছে।
গতকাল ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৯ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে। আগের দিন সূচক ছিল ৬ হাজার ২৯৭ দশমিক ২৫ পয়েন্ট।
গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে লেনদেন হচ্ছে ৪০০ কোটির আশপাশে। দুই দিন লেনদেন হয়েছে ৪০০ কোটির নিচে।
গতকাল ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির দাম কমেছে। এই দিন ডিএসইতে মোট ৩৩৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৫টির। দাম কমেছে ৮৯টির। আর দাম অপরিবর্তিত আছে ১৭১টির।
গতকাল সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য খাতের শেয়ারে। খাদ্য খাতে লেনদেন হয় ৭৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সাধারণ বিমা খাতে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিবিধ খাতে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী পেপার।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আরডি ফুড, জেমিনি সি ফুড, এমারেল্ড অয়েল, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সোনালী আঁশ এবং কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
দাম বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানি হচ্ছে, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেঃ ইন্স্যুরেন্স, আরামিট, অ্যাম্বি ফার্মা, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্স।
দাম কমার শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানি হচ্ছে; ফু ওয়াং ফুড, দেশবন্ধু পলিমার, খান ব্রাদার্স পিপি, ইয়াকিন পলিমার, অলিম্পিক এক্সেসোরিজ, খুলনা প্রিন্টিং, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, মেট্রো স্পিনিং, ফার কেমিক্যাল ও বিচ হ্যাচারী।
এই দিন দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। সিএসইতে এই দিন লেনদেন হয়েছে মোট ১৯৬টি শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৪টির কমেছে ৬৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৮৭টির। সিএসইতে এই দিন সূচক সামান্য কমেছে। সিএসইতে এই দিন সূচক কমেছে ৩০ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট। সূচক কমে হয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট। আগের দিন সূচক ছিল ১৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট।
একদিকে লেনদেন খরা অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে না পারা, সব মিলে সময়টা অনুকূলে নেই পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।
এমন সময়েও গুজব ছড়িয়ে কিছু কিছু কোম্পানিকে অতি মূল্যায়িত করা হচ্ছে।
বিপরীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ কাজে আসছে কতটুকু?
পুঁজিবাজারের বর্তমান নিয়ে ‘দৈনিক বাংলা’কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন সিনিয়র রিপোর্টার সুলতান আহমেদ।
আল-আমিন, সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ
প্রশ্ন: আমরা দেখছি, গত দুই সপ্তাহে বাজারে লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। পাশাপাশি অল্প করে হলেও কমছে প্রধান সূচকগুলো। অন্যদিকে আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান বলেছেন, বাজারে সুসময় এলেই তুলে নেয়া হবে ‘ফ্লোর প্রাইস’। এখন বিনিয়োগকারীদের মনেও প্রশ্ন সেই সুসময় আসবে কবে?
আল-আমিন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি জানেন যে, বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্য স্থির বেঁধে দেয়া রয়েছে। এর অর্থ কোনো শেয়ার সেই সীমার নিচে নেমে লেনদেন করতে পারছে না। এর সুযোগ নিয়েছে একটা শ্রেণি। বাজারে যখন ভালোমানের প্রায় ৮০ ভাগ কোম্পানি আটকে রয়েছে ফ্লোর প্রাইসে তখন দুর্বল শেয়ার নিয়ে সেই শ্রেণিটা কারসাজি করছে। তারা স্মার্ট মানি বা নতুন করে কিছু পুঁজি ঢুকিয়ে কোম্পানিগুলোকে অতি মূল্যায়িত করেছে। এমন হয়েছে যে, ৩৭ টাকার শেয়ার ১৮৮ টাকায় চলে গিয়েছে, ২০ টাকার শেয়ার ৪০ টাকা হয়েছে। মানে হচ্ছে একটা সিগনিফিকেন্ট গ্রোথ হয়েছে। আবার বিমা খাতে দেখেন নতুন নতুন ফান্ড এসেছে, এখানে আমি বলব যদি ভালোমানের কোম্পানি হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তবে যেগুলোর মৌলভিত্তি নেই সেগুলোতে ফান্ড ঢুকলেই বিপদ।
এবার আসি লেনদেনে, কিছুদিন আগেও ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, এখন সেটা নেমে এসেছে ৫০০ কোটির ঘরে। এই যে ড্রপ ডাউনটা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে কিছু ফান্ড বাজার থেকে বের হয়ে গেছে। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীরা চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকের অনেক বিপদেও তাদের টাকা ক্যাশ করতে পারছেন না। এই যদি হয় তাহলে বাজারে সুদিন কীভাবে আসবে আমার বোধগম্য নয়। এখন তো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুধু বিক্রির প্রবণতা দেখি। ফান্ড যদি বের না হয়ে বাজারে থাকে তাহলে এটা সমস্যা নয়, তবে ফান্ড বের হয়ে গেলে তো বাজার ভালো হবে না।
প্রশ্ন: তাহলে লোকসান হওয়ার কারণে ফান্ড চলে যাচ্ছে, নাকি অন্য কোনো কারণ?
আল-আমিন: অবশ্যই। লোকসান হওয়ার কারণে। আপনি কি চাইবেন বিনিয়োগ করে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে? সবাই এখানে আসে কিছু লাভের আশায়। একটা শেয়ার কিনবে সেখান থেকে কিছু লাভ হবে, আবার দু-এক জায়গায় হয়তো লোকসান হবে, এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে এসব হচ্ছে না, এখনকার বাজারে দেখেন ভালোমানের শেয়ার পড়ে আছে ফ্লোরে। অনেক কোম্পানির ইপিএস, পিই রেশিও ভালো, ডিভিডেন্টও দিচ্ছে ভালো, তার পরও দেখতে পাচ্ছি সেই শেয়ারের মুভমেন্ট হচ্ছে না। কারণ হচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারী যারা তারা সেই কোম্পানির সঙ্গে নেই। যারা বাজারে ফান্ডামেন্টাল দেখে বিনিয়োগ করেছেন তারাও এখন হতাশ হয়ে তাদের ফান্ড সরিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
যেটা কোনো স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। আবার দেখেন, যে কোম্পানির নিলাম হচ্ছে, ১০০ কোটি টাকার ওপর দায়-দেনা রয়েছে সেই কোম্পানি ৩৭ টাকা থেকে ১৮৮ টাকা হয়ে যাচ্ছে। এমন বহু কোম্পানির ক্ষেত্রে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এসব জায়গাতে কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী নেই বরং কোনো চক্র কাজ করছে।
প্রশ্ন: তাহলে এই বাজারে ব্যবসা করছে কারা?
আল-আমিন: আপনি জেনে থাকবেন, বহু ব্রোকারেজ হাউস তাদের কর্মী ছাঁটাই করছে। আবার কেউ কেউ ভালো ব্যবসাও করছে। এর কারণ হলো একই বাজারে ভালো কোম্পানি, ভালো বিনিয়োগকারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। আবার এমন চক্রে যারা আছেন তারা ভালো ব্যবসা করছেন। সে জন্য আমি মনে করি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে। কারও বিষয়ে কোনো অভিযোগ উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সিদ্ধান্ত দিতেই যদি পাঁচ ছয় মাস লেগে যায়, তাহলে যা হওয়ার তা তো হয়েই গেল। তার ব্যবসা সে করে নিল এই সময়ের মধ্যে, আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখানেও ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
প্রশ্ন: তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করণীয় কি?
আল-আমিন: ওই যে আগেই বললাম, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী এখন চাচ্ছে বাজার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে। সেটাও তারা পারছেন না। কারণ চাইলেও তাদের শেয়ার তারা বিক্রি করতে পারছেন না। দেখুন, ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোনো শেয়ার যদি ব্লকেও বিক্রি করতে চান তাহলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তার মানে ছোটরা চাইলেও তাদের হাতে থাকা ১ লাখ, ২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ধৈর্য ধরা ছাড়া কিছুই করার নেই। ভালোমানের শেয়ারে থাকলে একদিন সেটার দাম বাড়বেই। তখন চাইলে যে কেউ বিক্রি করে বের হতে পারবেন।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি, দুর্বল শেয়ারের লেনদেনও বেশি হচ্ছে। ‘বি’ এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরি শুধু দাম বাড়ার শীর্ষে নয়, লেনদেনেও শীর্ষে উঠে আসছে। এর কারণ কি?
আল-আমিন: ওই যে বললাম, চক্র। তারা তাদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার কিনে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে এটা বাড়বে, ওটা বাড়বে। বিনিয়োগকারীরাও দেখে শেয়ারটির দাম কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে, তখন বুঝে হোক আর না বুঝে হোক শেয়ার কেনার হিড়িক পড়ে। সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে চক্রটি শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছে, দিন শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিতে পড়ছেন। কোনো কোনো শেয়ারের ক্ষেত্রে দেখবেন একটু বাড়লেই ডিএসইর পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হচ্ছে, আবার কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে বহুগুণ বাড়লেও তা দেয়া হচ্ছে না। এগুলো কেন হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খুঁজে বের করতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে কখনোই মানুষের আস্থা ফিরবে না।
দেশের পুঁজিবাজার কবে আরও ভালো করবে, সে ব্যাপারে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলছেন, ‘সরকারের বিভিন্ন নীতির কারণে আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ঠিক হয়ে এসেছে। রিজার্ভ কম ছিল, সেটা আবার ৩০ বিলিয়নে স্থিতিশীল আছে। আমাদের ডলারের সরবরাহ বাড়ছে। আমাদের ডলারের দাম হয়তো ৯০-এর ঘরে চলে আসবে। সেদিকে এখন যাচ্ছে। ডলারের দাম ৯০ টাকায় এলে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।’
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘যখন দ্রব্যমূল্য কমে আসবে, তখন আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। তখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও ক্ষমতা বাড়বে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এক সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) তাদের কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘ডলার সংকটের বড় প্রভাব পড়েছিল আমাদের পুঁজিবাজারে। তারল্যের সংকটে পড়ায় পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে ফেলেছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সেই টাকা ফিরে এসেছে, আসছে। আমাদের জ্বালানি সংকট হয়েছিল, সেটা সমাধান হয়ে গেছে। এখন যদি আমাদের জ্বালানি সংকট না থাকে, তারল্য ব্যবস্থাপনা ভালো হয়, খাদ্যশস্য সরবরাহে যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে আমরা একটি ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছি।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান এসময় বলেন, ‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি যদি দেখি মানুষের পুঁজির নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব, কেউ বিপদে পড়বে না। কখনো সেই ইতিহাস ফিরে আসবে না। সাথে সাথে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেব।’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সাংবাদিক মোহাম্মদ মোফাজ্জল। এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সভাপতি হাসান ইমাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ডা. হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের যে সর্বনিম্ন দাম (ফ্লোর প্রাইস) বেঁধে দেয়া হয়েছিল, তা পুঁজিবাজারের সুসময়ে তুলে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত এক সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান এ কথা জানান। অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। পুঁজিবাজারের লেনদেন আরও বাড়লে, শেয়ারের দামগুলো বেড়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেব।’
ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন শিবলী রুবাইয়াত। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তিন বছর দুই মাস হয়েছে। যখন আমরা কাজ শুরু করি তখন মানুষ বাসা থেকে বের হতো না। করোনাভাইরাসের আক্রমণ ছিল। এরপর আবার শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধের পরে পৃথিবীর অনেক দেশ বিপদে পড়ে যায়। এরপর আমাদের দেশে জ্বালানির দাম বেড়ে গেল। তারপর খাদ্যের দাম বেড়ে গেল। এরপর সারা বিশ্বে ডলারের দাম নিয়ে সমস্যা শুরু হয়ে গেল। দেশে দেশে আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে এর প্রভাব পড়ে গেল। এই সমস্যার কারণে আমাদের রিজার্ভ কমে গেল।’
‘আমাদের আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে যখন আমদানি কমে যায় তখন সমস্যা দেখা দেয়। আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে কাঁচামাল আসা কমে হয়ে যায়। তখন উৎপাদন কমে যায়। উৎপাদন কমে গেলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কারখানাগুলো সমস্যায় পড়ে গেলে তারা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয় না। তখন ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে যায়।’
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘অর্থনীতিতে একটি মহাবিপদ আসতে যাচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। সেই সময় সব মিলিয়ে আমাদের পুঁজিবাজারের সূচক কমা শুরু করে। আমরা তখন আমাদের বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার কথাটা প্রথমেই চিন্তা করি। লাভ-ক্ষতি ব্যবসা-বাণিজ্যে হবে, তবে আগে আমাদের বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষা করতে হবে। সেই কারণেই আমর চাইনি যে আমাদের বিনিয়োগকারীদের ওপর বড় কোনো ধাক্কা আসুক। এই প্রক্ষাপটে আমরা দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেই। এটা একটি সাময়িক বিষয়। কখনো কখনো সময় আসে মানুষকে রক্ষা করা মূল দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তখন কিছু করার থাকে না। আর দেশের বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতেই এই ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছিল।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সাংবাদিক মোহাম্মদ মোফাজ্জল। এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সভাপতি হাসান ইমাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ডা. হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল।
২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৭৮ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সরকারি ট্রেজারি বন্ডের অংশ ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বেড়েছে। আর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। এই বাজার মূলধনের ১ লাখ ৮৬ হাজার ২২২ কোটি টাকাই শীর্ষ ১০ কোম্পানির, যা মোট ইক্যুইটির বাজার মূলধনের ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
গ্রামীণফোন: ৩৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে টেলিকম খাতের কোম্পানি গ্রামীণফোন। যদিও কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩ লাখ টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ২২ টাকা ২৯ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ২৫ টাকা ২৮ পয়সা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ২ টাকা ৯৯ পয়সা বা ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৩৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকায়। গত এক বছরে ১ হাজার ১২ কোটি টাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে গ্রামীণফোন। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গ্রামীণফোনের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সা লেনদেন হচ্ছে।
ওয়ালটন: ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের বাজার মূলধন ৩১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে ১ হাজার ৪৭ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো: ৫৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির বাজার মূলধন ২৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে বিএটিবিসির বাজার মূলধন ছিল ২৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ডিএসইতে ফ্লোর প্রাইসে ৫১৮ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে তাদের শেয়ার।
স্কয়ার: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিশোধিত মূলধন ৮৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকায়। অর্থবছরের শুরুতে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৬১২ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে ২০৯ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
রবি: পরিশোধিত মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু ১৫ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের অর্থবছরে শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
রেনেটা: ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর আগের অর্থবছরে শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ১৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন কমেছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ১১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রেনেটার শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ১ হাজার ২১৭ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
ইউনাইটেড পাওয়ার: ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস ২৩৩ টাকা ৭০ পয়সায় ডিএসইতে লেনদেন হচ্ছে।
বেক্সিমকো: বেক্সিমকো লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ৮৯৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে খাতসংশ্লিষ্ট আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বাজার মূলধন ছিল ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছর শেষে যা ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৩৭৫ কোটি টাকা। ডিএসইতে শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইস ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
বার্জার পেইন্ট: ৪৬ কোটি ৪০ টাকার পরিশোধিত মূলধনের বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশের বাজার মূলধন ৮ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। কোম্পানিটির ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৪৪ টাকা ১৬ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৪৩ টাকা ১৮ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ৯৮ পয়সা বা ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এই কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ১ হাজার ৭১১ টাকা ৬ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ: লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২ কোটি টাকায়। এর আগের অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ছিল ৭ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকায়। বাজার মূলধন এক বছরের ব্যবধানে ১২৮ কোটি টাকা বেড়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারে রিটার্ন বেড়েছে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের সামান্য ওপরে ৬৫ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।