শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩

৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রপ্তানি ফেব্রুয়ারিতে

প্রতীকী ছবি
আবদুর রহিম হারমাছি
প্রকাশিত
আবদুর রহিম হারমাছি

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়ের গতিও কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে টানা তিন মাস পাঁচ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল। কিন্তু সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে চার দশমিক ৬৩ বিলিয়ন (৪৬৩ কোটি) ডলারে নেমে এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

সর্বশেষ চার মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন হলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন (৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ) ডলার আয় করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার এসেছিল দেশে। আগস্টে আসে ৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আসে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ও ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ১০, ৫ দশমিক ৩৬ ও ৫ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে মোট ৩৭ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। তারপরও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা; ৩৭ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যের তুলনায় অর্জন শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এই আট মাসে ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার বা ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয়ের মতো ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্সেও ছিল নিম্ন গতি। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্সপ্রবাহের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটিও চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে রপ্তানি আয়ের মতোই ফেব্রুয়ারিতে দেশে আসা রেমিট্যান্স গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

তবে বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ (২ দশমিক শূন্য তিন) ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খেয়ে এক ধাক্কায় রেমিট্যান্স নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে।

পরের তিন মাস অবশ্য রেমিট্যান্স টানা বেড়েছে। নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৭০ কোটি ডলার ও ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের এই ধীরগতির কারণে রিজার্ভ আরও কমেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে গত বছরের ১ মার্চ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। তার আগে ছিল প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

আগামী সপ্তাহেই আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।


১০ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৬০ হাজার কোটি টাকা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি অর্থায়ন এবং বৈদেশিক ঋণ মিলিয়ে আগামী এক বছরের উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

বিশাল এ উন্নয়ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও শিক্ষা খাতে। এডিপির উল্লেখযোগ্য অংশ খরচ হবে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোতে, ৬০ হাজার কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘অবকাঠামো ও সামাজিক খাতে দ্রুত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দরিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে এডিপিতে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করেছে।’

সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মেগা প্রকল্পে বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। দেশের প্রথম ও একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি বরাদ্দ পেয়েছে ৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রায় ৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রায় ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি) প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা আর ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

বিষয়:

মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আনতে অর্থমন্ত্রী শোনালেন আশার কথা

আপডেটেড ২ জুন, ২০২৩ ০০:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে আরেকটি বড় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহালের মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে বাজারের আগুনে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি থেকে কিছুটা রেহাই দিতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৩ লাখ টাকা থেকে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না। তবে করপোরেট করে হাত দেননি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল; কর আগের মতোই থাকছে। বিদ্যমান করপোরেট কর হিসেবে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৭ শতাংশ করই অপরিবর্তিত থাকছে।

বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বয়স্ক ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা; বিধবা ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি তার এবারের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছেন। আর বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে দেশের অর্থনীতি যখন নানামুখী চাপের মধ্যে, সেই সময় নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তারা। বলেছেন, অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সাফ বলে দিয়েছেন, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘পূরণ হবে না’। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে, সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে। আমার বিবেচনায় সেটাও কমে হয়তো ৫-এর ঘরে চলে আসবে। আগামী বছর যে খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তা মনে হয় না। তাহলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন জাদুবলে আসবে। এটা অসম্ভব; অবাস্তব লক্ষ্য। অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।’

তিনি বলেন, ‘গড় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৯ শতাংশ। সেই মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশে নেমে আসবে- এটাও আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।’

প্রস্তাবিত বাজেটের ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় পরিবর্তিত বিশ্ববাজার, জ্বালানি ও ডলারসংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটা মধুর হতে দেয়নি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।

সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বছরে এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের বছরে জনতুষ্টির খুব বেশি সুযোগ রাখার পথ মুস্তফা কামালের সামনে নেই। তার পরও স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছানোর নির্বাচনী স্লোগানটিকেই তিনি বাজেটে ফিরিয়ে এনেছেন। তার এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।”

২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় সেই ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় এবার বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মুস্তফা কামাল।

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ‍সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করলে বেড়ে যায় আমদানি। তাতে সরকারের জমানো ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়। রপ্তানি বাড়লেও আমদানির মতো অতটা না বাড়ায় এবং রেমিট্যান্সের গতি ধীর হয়ে আসায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য আর জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ডলার বাঁচাতে সরকার বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম দেয়ার পাশাপাশি কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে শুরু করে।

রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক ৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণসহ অন্যান্য সংস্কারের মাধ্যমে কর নেট সম্প্রসারণ, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহায়ক ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন ও সম্প্রসারণ, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, কর প্রশাসনের অটোমেশন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হবে।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা জোগানোর চাপ থাকায় কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রাক্কলনের ভিত্তিতে অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে বলে সরকার ধারণা করছে। তার পরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।


‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ কী থাকবে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করে তোলার উদ্দেশ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি, ও স্মার্ট ইকোনমি- এ চারটি মূল স্তম্ভের ওপর নির্ভর করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে।

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।’

তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে ৩ শতাংশের কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি ৪-৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে এবং বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে।

রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপর এবং বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ, বলেন অর্থমন্ত্রী।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে এবং স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে সবার দোরগোড়ায়।

স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা হাতের নাগালে থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি।

‘সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা’, বলেন অর্থমন্ত্রী।

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের চালিকাশক্তি হিসেবে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করে তোলার উদ্দেশ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও উন্নয়নমূলক কাজে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেন, গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে এবং তার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের উদ্যোগগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখবে, বলেন অর্থমন্ত্রী।

বিষয়:

কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ চ্যালেঞ্জ হতে পারে: এফবিসিসিআই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ চ্যালেঞ্জ হতে পারে।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ২০৪১ সাল এবং এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ) গ্র্যাজুয়েশনকে মাথায় রেখে বাজেট ঘোষণা করেছেন। সেখানে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে, কালেকশনটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমাদের ফরেন কারেন্সি যেহেতু এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের ফরেন কারেন্সির প্রাইসটা কোথায় পর্যন্ত যাবে আমরা জানি না। এগুলোকে যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি...বাজেটে কালেকশন যদি না হয় তাহলে এক্সপেনডিউচার তো ডিফিকাল্ট।’

তিনি বলেন, ‘টার্গেট অ্যাচিভ করতে হলে এক্সপেনডিউচারে যেতেই হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কালেকশন বাড়াতেই হবে। বাড়ানোর জন্য আমরা সব সময় যেটি বলি, এক জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে জাল বিস্তৃত করা। সহজে যেসব জায়গা থেকে ট্যাক্স কালেকশন করা যায়- ভ্যাট সোর্স, অগ্রিম আয়কর (এআইটি), অ্যাডভান্স ভ্যাট; এগুলো কম করে বরং নতুনদের করের আওতায় নিয়ে আসা।’

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, সহজ পদ্ধতি থেকে আমাদের বের হতে হবে। এর জন্য দরকার কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। আরও যারা ট্যাক্স কালেকশন করেন, তাদের কাঠামোগত সংস্কার দরকার। এবার ১৬ শতাংশ ট্যাক্স গ্রোথ আছে। কালেকশন বেশি করবে বললে আমরা ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে যাই যে, আমাদের ওপর নাকি আসে! সব সময় তাই হয়।’

ট্যাক্স আরোপে উদ্বেগ প্রকাশ করে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘২৪৪টি আইটেমের ওপর সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ১৯১টির ওপর রেগুলেটরি ট্যাক্স হয়েছে, আমি মনে করি এটা ঠিক হয়নি। কারণ তাহলে লোকাল ইন্ডাস্ট্রির প্রটেকশন কমে যায়।’

বিষয়:

বাজেট জনকল্যাণমুখী ও সাহসী: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

এবারের বাজেটকে সুচিন্তিত, জনকল্যাণমুখী ও সাহসী বলে মন্তব্য করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

সংগঠনের সভাপতি খলিলুর রহমান সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অর্থমন্ত্রী ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব, সুশাসন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সদিচ্ছায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এ বাজেট বাস্তবায়ন সহায়ক হতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়মিত কর প্রদান করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব প্রদান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতিতে রপ্তানি বাণিজ্য মন্দা, তাই দেশের বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রদানে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে তার জন্য সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ঘাটতি মোকাবিলায় বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার দাবি জানাই।’

বিষয়:

ঘাটতি বাজেটে খেলাপী ঋণ বাড়বে: ডিসিসিআই

আপডেটেড ১ জুন, ২০২৩ ২২:৪০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এবার অনেক টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিবে। এর ফলে বেসরকারি খাতে চাপ বাড়বে আর ঋণ খেলাপী বাড়বে বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিক্রিয়া জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন।

ডিসিসিআই’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। সরকারের এ ব্যাংক নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি খেলাপী ঋণ বৃদ্ধি পাবে।

করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা ৫ লাখ হলে ভালো প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করেছে, তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সেটাকে ৫ লাখ টাকা করা প্রয়োজন বলে মনে করে ডিসিসিআই। করযোগ্য নয় এমন টিনধারীদের ওপর নূন্যতম ২ হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা তৈরি করবে, তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।

ডিসিসিআই মনে করে কর্পোরেট করের হার না কমানোর ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়বে। কর্পোরেট করের হার এবং ক্যাশ লেনদেনের সীমা ৩৬ লাখ টাকার পরিবর্তে বার্ষিক খরচের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

মোবাইল ফোনের ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংগঠনের পক্ষে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোনের উৎপাদনের ওপর ভ্যাট আরোপের কারণে এর উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে, ফলে দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

বিষয়:

জমি-ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে: রিহ্যাব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা না করলে জমি এবং ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে মনে করছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ রিহ্যাব বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে জমি রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কম পক্ষে ১০-১২টি পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যে সকল পণ্যের দাম বাড়বে তার ক্রেতা হচ্ছি আমরা, যারা ফ্ল্যাট তৈরি করি।

রিহ্যাব বলছে, এই পন্যের দাম গিয়ে পড়বে ফ্ল্যাট ক্রেতার উপর। এই সব পণ্যের দাম সহনশীল না রাখলে আবাসন শিল্পে সংকট তৈরি হবে।

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার আবাসন খাতকে রক্ষায় প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এ খাত সম্প্রতি নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। উদীয়মান এই খাতে নানা রকম কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে জমি রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর বৃদ্ধি, সিমেন্ট সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর উপর নতুন করে অতিরিক্ত কর আরোপ এই আবাসন খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দিবে। বাড়তি দাম ক্রেতার উপর পড়বে এবং সবার জন্য আবাসন এই শ্লোগানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে ও অনেকের আবাসনের স্বপ্ন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

বিষয়:

রিজার্ভ থেকে ১১ মাসে ১২.৭৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
এ এস এম সাদ

বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই ১ তারিখ থেকে জুনের ১ তারিখ পর্যন্ত) ১২ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দর আরও দেড় টাকা দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে ১০৬ টাকা দরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এত দিন প্রতি ডলারের জন্য ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা টাকা নেয়া হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চলতি বছরের ৪ মে থেকে প্রতি ডলার ১০৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করা হচ্ছিল। তা ১ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৬ টাকা করা হয়েছে।’

তবে সব ব্যাংক এই দরে ডলার পাচ্ছে না। সরকারের প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলোকে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

এদিন রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ৪৫ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। ২০২৩ সালের ১ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়াল ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এর এক দিন আগে ৩১ মে রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।

বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা, সর্বনিম্ন ১০৭ টাকা ৬৫ পয়সা। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সে জন্য সরকারের প্রয়োজনেই শুধু রিজার্ভ থেকে ডলার ছাড়া হচ্ছে।

আন্তব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে সব ব্যাংকই বর্তমানে ভাসমান বিনিময় দর অনুসরণ করছে। তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে নিজেদের নির্ধারিত আলাদা দর অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাকে বলা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট’। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত, সেটিকে ‘ইন্টার ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা আন্তব্যাংক লেনদেন হার নামে অভিহিত করা হতো। ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করত, তখন সেই দরকেই ডলার রেট ধরা হতো। তবে গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দর নির্ধারণ করছে। বর্তমানে রেমিট্যান্স ১০৭ টাকা, রপ্তানি বিল নগদায়ন ১০৫ টাকা এবং আমদানি নগদায়ন হয় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়নের গড় করে এক টাকা স্প্রেড করতে হয়।

বুধবার এবিবি-বাফেদা সভায় ডলারের নতুন দর করা হয়। প্রতি ডলার রেমিট্যান্স ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি পরিশোধের বিল ১০৭ টাকা করা হয়। আর বাফেদা-এবিবির এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঠিক একদিন পর বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সেলিং রেট বাড়াল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুটি প্রধান কারণে দ্রুতহারে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এর মধ্যে একটি হলো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমানো। আরেকটি কারণ হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ইউনিফায়েড এক্সচেঞ্জ রেট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে।

একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ডলার চাওয়া হয় তার ৩০% - ৪০% পাওয়া যায়। দেড় বছর ধরে এই সংকট চলছে দেশে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২২ দশমিক ৬১%; এর ফলে ডলারের দর ৮৬.৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০৬ টাকা হয়েছে।


আপনার করের টাকা কোথায় ব্যয় হবে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ধরুন, আপনি ১০০ টাকা কর দিয়েছেন। এখন দেখা যাক, এবারের বাজেটে এই টাকাটা কোথায় ব্যয় হবে, কারা বেশি পাবেন। যেমন আপনি ১০০ টাকা কর দিয়েছেন।আপনার এই করের টাকা কোথায় যাচ্ছে। আপনার দেওয়া ১০০ টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০ টাকা ৫০ পয়সা ব্যয় হবে সরকারের ভর্তুকি ও প্রণোদনায়।

যেসব খাতে ব্যয় হবে আপনার করের টাকা।

বেতন-ভাতা বাবদ ১৬.৬ টাকা।

সুদ ১৯.৫ টাকা।

সাহায্য মঞ্জুরি ১৪.৯ টাকা।

পণ্য ও সেবায় ৯.১ টাকা। সম্পদ সংগ্রহে ৪.৬ টাকা।

পেনশনে ৬.৮ টাকা।

শেয়ার ও ইকুইটিতে ৩.৫ টাকা।

অপ্রত্যাশিত ব্যয় ও অন্যান্য থোক বাবদ ২.৭ টাকা।

বিবিধ খাতে ব্যয় হবে ১.৮ টাকা।


‘তিনি আমাদের চেয়ে কর্মচারীদের বেশি ভালোবাসতেন’

দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মঈনুদ্দিন মোনেম। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জুন, ২০২৩ ২৩:৩৯
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

‘যারা ভালো কাজ করতেন তাদের আদর করতেন। আমাদের চেয়ে কর্মচারীদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন বাবা।’ আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল মোনেমের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এভাবেই বাবার কথা স্মরণ করেন আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মঈনুদ্দিন মোনেম।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বীর উত্তম সি আর দত্ত রোডে অবস্থিত মোনেম বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ব্যবসায়িক সহযোগীদের উদ্দেশে মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, ‘সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি যারা আমার আব্বার প্রশংসা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনারা সবাই আব্বার সম্পর্কে অনেক মন্তব্য করেছেন। ওনার অনেক ভালো গুণ ছিল।’

বাবার কথা স্মরণ করে মঈনুদ্দিন মোনেম বলেন, তিনি সব সময় তাকে ভালো মানুষ, সৎ মানুষ হতে উপদেশ দিতেন। সততা নিষ্ঠা, দৃঢ়তার কথা বলতেন।

সাবেক সচিব ড. জহিরুল করিম স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘ওনার সঙ্গে আমার বড় ভাই ছোট ভাই সম্পর্ক। ওনার তিনটি গুণ ছিল। উনি নামাজের তাগিদ দিতেন। কাজের মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতেন না। শ্রমিকরা খেয়েছেন কি না, সে খোঁজও রাখতেন তিনি।’

আব্দুল মোনেম লিমিটেডের চিফ অ্যাডভাইজার শরীফ মাহমুদ বলেন, ‘তিন-চারটা গুণের ওপরে তিনি তার জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন। ওনার কমিটমেন্ট, দায়িত্ববোধ ছিল অতুলনীয়। উনি যা করতেন সবচেয়ে ভালোভাবে করতেন। আর তার সবকিছুর পেছনে ছিলেন তার সহধর্মিণী মেহেরুনেচ্ছা।’

অনুষ্ঠানে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদাসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।


বাজেটে নৌ পরিবহনে বরাদ্দ বেড়েছে দিগুণ

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌবন্দর। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জুন, ২০২৩ ২০:৪৯
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিলো ৫ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থ বছরের তুলনায় বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়লো ৫ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। গত বাজেটের বিবেচনায় চলতি বাজেটে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রায় দিগুণ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে দেশের ৫২তম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবার ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। তার বাজেট বক্তৃতায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের তথ্য উঠে আসে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ সমুদ্র বন্দরগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে স্থল ও নৌ-বন্দগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রপ্তানি বাণিজ্য এবং দেশি-বিদেশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে অন্যতম লজিস্টিকস হল বন্দরসমূহ। ফলে শুরু থেকেই সমুদ্রবন্দর, নৌ ও স্থল বন্দর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ সাধনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টায় বন্দরগুলো জাহাজ আগমন ও পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর সমুদ্রে কন্টেইনার সংরক্ষণ ও কন্টেইনার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বর্তমানে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এ ছাড়া মোংলা বন্দরকে একটি আধুনিক সমুদ্র বন্দরে রূপ দেয়ার জন্য কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, মংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং, আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, সহায়ক জলযান সংগ্রহ, নতুন জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পায়রা বন্দরকে একটি বিশ্বমানের সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

যাত্রী পরিবহনে নৌ-পথের ব্যবহার প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় মুস্তফা কামাল বলেন, নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের উদ্দেশে ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌ পথ নির্মাণ করা হয়েছে, বর্তমানে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। গত ১৪ বছরে আমরা মৃত এবং মৃতপ্রায় নদীতে খনন ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৭২০ কিলোমিটার নৌ-পথ পুনরুদ্ধার করেছি।


একাধিক গাড়ি থাকলেই বাড়তি কর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

আগামী অর্থবছর থেকে একের অধিক গাড়ি থাকলেই মালিকদের বাড়তি কর দিতে হবে। কার্বন কর নামে নতুন এ করের পরিমাণ ২৫ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামের বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ কমাতে ও পরিবেশ দূষণ রোধ এবং ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সরকার কার্বন কর আরোপ করছে।’

প্রস্তাবিত বাজেটে কার্বন কর পাস হলে দেড় হাজার সিসির গাড়ির মালিকদের একই ইঞ্জিনের দ্বিতীয় ও পরের সব গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে।

দেড় হাজার থেকে ২ হাজার সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে এই কর ৫০ হাজার টাকা, ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার সিসির ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা, ৩ হাজার সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে ২ লাখ এবং সাড়ে ৩ হাজার সিসির গাড়ির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করের প্রস্তাব করা হয়।


কাতার থেকে আরও ১৮ লাখ টন এলএনজি কিনছে বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় ১৫ বছরের ১৮ লাখ টন এলএনজি সরবরাহের চুক্তি সই হয়। ছবি: বাসস
আপডেটেড ১ জুন, ২০২৩ ২৩:৩৭
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা

কাতারের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদে সরকার ১৮ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার চুক্তি সই করেছে। বৃহস্পতিবার কাতারের দোহায় এই চুক্তি সই হয়। এর আগে ২০১৮ সালে দেশটির সঙ্গে ১৭ লাখ টন এলএনজি কেনার চুক্তি হয়েছিল। নতুন করে ১৮ লাখ টন এলএনজি কেনার চুক্তি করায় বছরে কাতার এখন বাংলাদেশকে ৩৫ লাখ টন এলএনজি দেবে। দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তিতে কেনা এই এলএনজির দাম স্পট মার্কেট বা ভাসমান মার্কেট থেকে কম হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপ রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করায় আন্তর্জাতিক বাজারের স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যায়। এ সময় বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছিল। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করার ফলে দেশের গ্যাস সংকটের অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করছেন সরকারের দায়িত্বশীলরা।

এর আগে সম্প্রতি কাতার সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে, এটি সরকারের কূটনীতির বড় বিজয়। অবশ্য কাতার থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বেশ কয়েকমাস ধরেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৩৬০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দৈনিক সরবরাহ করা হয় ২৬০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সারকারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। বেসরকারি কলকারখানার চাহিদামত গ্যাস সরবরাহও করা সম্ভব হয় না। বাসাবাড়িতে গ্যাসের স্বল্প চাপ তো রয়েছেই। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র নতুন করে আর আবিষ্কার করতে না পারলে বর্তমান মজুদ দিয়ে ১০/১২ বছর চলবে। এ পরিস্থিতিতে সরকার বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে।

দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়, আর দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ১৬০ কোটি ঘনফুট। সব মিলিয়ে ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেশের চাহিদার তুলনায় কম। কাতারের কাছ থেকে নতুন করে বছরে ১৮ লাখ টন এলএনজি আমদানি জ্বালানি সংকট সামাল দিতে বড় ভূমিকা পালন করবে বলে সরকারের দায়িত্বশীলরা মনে করছেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমাদের সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেক ধনী দেশ ডলার নিয়ে বসে আছে, তারা দামও বেশি দিতে চাচ্ছে কিন্তু এলএনজি মিলছে না। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা কাতারের কাছ থেকে বছরে ৩৫ লাখ টন এলএনজি আনছি দীর্ঘ মেয়াদে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন নতুন করে চুক্তি করা হলো। এটি সরকারের কূটনীতির বড় জয়।

নসরুল হামিদ বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সকল প্রকার জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি জ্বালানি যোগান দিয়ে দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। প্রয়োজনীয় জ্বালানি সঠিক সময়ে সরবরাহের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং কাতারের মধ্যকার এই জ্বালানি মৈত্রী, দুই দেশের বিরাজমান বন্ধুত্বে এক নতুন মাত্রা যোগ করলো। পৃথিবীজুড়ে জ্বালানি অস্থিরতার এই সময়ে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক অর্জন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতার জন্যই দ্রুত এই দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়েছে।

কাতারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন সেরিদা আল কাবি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশে বৃহত্তম এলএনজি সরবরাহকারী দেশ হতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত। বার্ষিক ৩৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

বাংলাদেশে কাতার সরকারের একমাত্র সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডে (ইউএমপিএল)। বাংলাদেশের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ২৪ শতাংশ কিনে নিয়েছে কাতারভিত্তিক কোম্পানি নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (এনপিআইএম)। মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও দেশের শিল্প উদ্যোক্তা চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘জ্বালানি খাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফসল হচ্ছে কাতার সরকারের সঙ্গে ১৮ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার চুক্তি সম্পন্ন করা। ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে যেখানে জ্বালানির জন্য হাহাকার চলছে, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের এই চুক্তি আমাদের জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় বিশেষভাবে সহায়ক হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই সংকটময় সময়ে আমরা বেশ কম দামে এলএনজি পাচ্ছি।’

১৫ বছর এলএনজি দেবে কাতার
বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় ১৫ বছরের ১৮ লাখ টন এলএনজি সরবরাহের চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশ ও কাতারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

কাতারের প্রতিষ্ঠান কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি বছরে ১৮ লাখ টন এলএনজি দেবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের পক্ষে পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান জ্ঞনেন্দ নাথ সরকার ও কাতার এনার্জি ট্রেডিংয়ের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ আহমাদ আল হোসাইনি চুক্তিতে সই করেন। ১ জুন হতে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর এই চুক্তি বলবৎ থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে বছরে কাতার এনার্জি ট্রেডিং ১৮ লাখ টন এলএনজি দেবে।

এর আগে বছরে ১৭ লাখ টন এলএনজি আনার চুক্তিটি হয়েছিল কাতারের রাস গ্যাসের সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।
প্রথম চুক্তি অনুযায়ী রাস গ্যাস বছরে ৪০ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সাল পর্যন্ত বছরে সর্বোচ্চ ২৪ কার্গো করে এলএনজি সরবরাহ করবে তারা। এটি ২০২৭ সালে গিয়ে ঠেকবে বছরে ৩৬ কার্গো এলএনজিতে।

কাতার ছাড়াও সরকার ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে দীর্ঘ মেয়াদে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এখন কাতার থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট ১০ দশমিক ৭ ডলার এবং ওমান থেকে ১০ দশমিক ২ ডলারে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে সরকার প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ৪০ ডলার পর্যন্ত কিনেছে। তবে সম্প্রতি এই দাম ১৪ ডলারে এসে দাড়িয়েছে। যদিও স্পট মার্কেটে দামের ওঠানামা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে অধিকাংশ দেশ দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি কেনার চুক্তি করতে চায়। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এলএনজি দীর্ঘমেয়াদে কেনার হিড়িক পড়ে গেছে।


banner close