আসন্ন রমজান মাসে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। স্বাভাবিক সময়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে দুপুর ১.১৫টা থেকে ১.৩০টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে।
রমজান মাস পার হওয়ার পর অফিসের সময়সূচি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
এর আগে জানানো হয়, রোজায় ব্যাংক লেনদেন হবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। তবে আনুষঙ্গিক কাজ পরিচালনার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। এই চাপ সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখন বিদেশি ঋণ-সহায়তা। কিন্তু কম সুদের এই ঋণ প্রবাহে দৈন্যদশা দেখা দিয়েছে।
দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকটের মধ্যে বিদেশি ঋণের ছাড় ও প্রতিশ্রুতি দুটিই কমছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) উন্নয়ন সহযোগীরা ৪৮৭ কোটি (৪.৮৭ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই আট মাসে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ৫৮৯ কোটি (৫.৮৯ বিলিয়ন) ডলার অর্থায়ন করেছিল দাতারা।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে দাতারা। অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মাত্র ১৭৮ কোটি (১.৭৮ বিলিয়ন) ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি- ৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের পর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম উৎস হচ্ছে বিদেশি ঋণ-সহায়তা। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণ ও এই ঋণের প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়া মানে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলার বেশি-৪৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয় বাড়ছে। রেমিট্যান্সও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই দুই সূচক যদি না বাড়ত, আর আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি যদি না আসত, তাহলে কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যেত। সে কারণে রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যেসব ঋণ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত ছাড় করাতে দাতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে।’
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।
কিন্তু সেই জোয়ার আর নেই। অল্প সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। ইতিমধ্যে ৪৭ কোটি ৬০ ডলার পাওয়াও গেছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে বাড়তি বাজেট সহায়তার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এসব ঋণ পাওয়া গেলেও এবার অর্থবছর শেষে মোট ঋণ-সহায়তার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।
দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগীরা এখন বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে বেশি সহায়তা দিচ্ছে বিধায় বিদেশি ঋণের ছাড় ও প্রতিশ্রুতি কমেছে। এ ছাড়া প্রতিশ্রুতি হিসেবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ পাইপলাইনে থাকলেও আমরা সেটি দ্রুত পাচ্ছি না। দাতারা নতুন প্রতিশ্রুতি দেয়ার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে, তার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গতকাল বিদেশি ঋণপ্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিদেশি ঋণপ্রবাহের উল্লম্ফন নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ৪৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছিল, যা ছিল গত জুলাইয়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসে তা হোঁচট খায়। ওই মাসে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করে দাতারা, যা ছিল আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম।
পরের দুই মাস সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অবশ্য তা কিছুটা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে আসে ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আর অক্টোবরে আসে ৬২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে তা কমে ৪৯ কোটি ডলারে নেমে আসে। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে অবশ্য বিদেশি ঋণ-সহায়তার অঙ্ক বেশ বাড়ে; ওই মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ১৩২ কোটি ডলার এসেছে। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে ৪৮ কোটি ডলার। সবশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ৬১ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৪ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ কম।
এই অর্থবছরে বিদেশি ঋণ কমার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসান মনসুর বলেন, ‘দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণ-সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর কোভিডের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিতে হচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোকে। সে কারণেই বিদেশি ঋণ কমছে। আমার মনে হচ্ছে, এবার গতবারের চেয়ে ঋণ বেশ খানিকটা কম আসবে।’
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দাতাদের কাছ থেকে যে ৪৮৭ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য এসেছে ৪৬৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। আর অনুদান পাওয়া গেছে ২১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময় প্রকল্প সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ৫৭৩ কোটি ডলার। অনুদান এসেছিল ১৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশি ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড় কমলেও ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আগে নেয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ দাতাদের ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।
এক পরিবার থেকে ব্যাংকে তিনজনের বেশি পরিচালক হওয়ার পথ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে ব্যাংকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হচ্ছে।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা পতন চলছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্য দিবস মঙ্গলবারও সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুদিন পতন দেখল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা। এ দিন সূচকের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।
মঙ্গলবার ডিএসইতে ১০ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট সূচক কমে লেনদেন শেষ হয়েছে। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৭২ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা কম। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর আগে গত ২৩ মার্চ পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৮৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকার শেয়ার।
ডিএসইতে মঙ্গলবার লেনদেন হওয়া ২৮৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৮টির এবং কমেছে ৫৬টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২০১টির। এদিন ডিএসইতে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন ইস্টার্ন হাউজিং ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
এদিন লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেল ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচ ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা, আরডি ফুড ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ১২ কোটি ৯ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, শাইনপুকুর ৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, আলহাজ টেক্সটাইল ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং আমরা নেটওয়ার্ক ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস সোমবার ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১০১টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ৩৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৪৮টির।
রমজান মাস সামনে রেখে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সে কারণে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ফের গতি ফিরেছে। চলতি মার্চ মাসের ২৪ দিনেই ১৬০ কোটি (১.৬০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই অঙ্ক ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির পরিমাণও কমছে। আর এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে। বাড়তে শুরু করেছে এই সূচক।
চলতি মাসের বাকি ৭ দিনে এই হারে রেমিট্যান্স আসলে ছয় মাস পর অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ২০৭ কোটি (২.৭ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে।
রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৭ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৪ দিনে ১৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি প্রবাসী। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বা ৭১৩ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাস ২৪ দিনে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ) ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৯ লাখ (১৫.৬১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি।
২৪ মার্চ থেকে রমজান মাস (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) শুরু হয়েছে। রোজায় প্রতিবারের মতো এবার বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২২ অথবা ২৩ এপ্রিল দেশে ঈদ উদযাপিত হবে। ঈদকে সামনে রেখে আরও বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে বলে আশা করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। সে হিসাবে এপ্রিল মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
টানা তিন মাস বাড়ার পর ফেব্রুয়ারিতে হোঁচট খায় রেমিট্যান্স। ওই মাসে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার আগের তিন মাস- নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ, ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ এবং ১৯৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
তবে মার্চ মাসে এই সূচকে ফের গতি ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার রেমিট্যান্সপ্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, এই মাসের প্রথম ২৪ দিনে ১৫৯ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৩৬ কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ফেব্রুয়ারিতে এই সূচক চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম এসেছিল। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের (২০২০-২১) চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম। তবে বেশ উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর; প্রথম মাস জুলাইয়ে ২১০ কোটি (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে হোঁচট খায়, এক ধাক্কায় নেমে আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলারে। অক্টোবরে তা আরও কমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে নেমে আসে।
পরের তিন মাস টানা বেড়েছে, নভেম্বরে আসে ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে আসে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আসে আরও বেশি, ১৯৬ কোটি ডলার। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা বেশ কমে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারি মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স কিছুটা কম আসে। এর কারণ, ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে শেষ হয়।’ এখন রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই রোজা ও দুই ঈদে রেমিট্যান্স বাড়ে; রোজা ও ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের বাড়তি প্রয়োজন মেটাতে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। এবারও তাই হচ্ছে।’ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও রেমিট্যান্স বাড়বে জানান তিনি।
ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় বেশি টাকা পাওয়ায় মাঝে কয়েক মাস প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোয় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক হুন্ডির বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করছেন মেজবাউল হক।
অর্থনীতির গবেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই কিন্তু সংকট সামাল দিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি টাকা পাওয়ায় প্রবাসীরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোয় মাঝে কয়েক মাস রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় এখন বাড়ছে। এই ধারা যদি জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে অর্থবছর শেষে ৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে। বর্তমান পেক্ষাপটে তা অবশ্যই ভালো।’
তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স যদি না বাড়ত তাহলে কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যেত; অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়ত। তাই রিজার্ভ যাতে আর না কমে যায়, সে জন্য রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও কম সুদের বিদেশি ঋণ বাড়ানোর দিকেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।’
ডলার বিক্রি কমছে, বাড়ছে রিজার্ভ
সোমবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। রেমিট্যান্স বাড়ায় গত কয়েক দিনে তা বেড়ে ৩১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাস ২৭ দিনে (২০২২ সালে ১ জুলাই থেকে ২৭ মার্চ) ১০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে কোনো অর্থবছরের (১২ মাস) পুরো সময়েও রিজার্ভ থেকে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।
তবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ গত তিন মাস ধরে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ থেকে ১ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। অক্টোবরে বিক্রি করা হয় আরও বেশি ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে তা কিছুটা কমে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ডিসেম্বরে তা ফের বেড়ে ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন বিক্রি করা হয়। একক মাসের হিসাবে যা রেকর্ড; এর আগে কখনোই এক মাসে রিজার্ভ থেকে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।
এরপর থেকে অবশ্য বিক্রি কমছে। জানুয়ারিতে বিক্রি করা হয় ১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। ফেব্রুয়ারিতে নেমে আসে ১ বিলিয়নের নিচে; বিক্রি হয় ৯২ লাখ ৪২ হাজার ডলার। আর চলতি মার্চ মাসের ২৭ দিনে অর্থাৎ গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৭০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
বাজার ব্যবস্থাপনার মান বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি। তারা বলেছে, বিশ্ববাজারের দোহাই দেয়া হলেও অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক পণ্যের দাম বেশি। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
নতুন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সোমবার সকালে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ পরামর্শ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে, কিন্তু সেগুলোর সুফল আমরা পাচ্ছি না। শুধু বিদেশি পণ্য নয়, দেশি পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার অনেক কারণ দেখানো হয়, এর কোনোটা যৌক্তিক কোনোটা যৌক্তিক নয়।’
‘আমাদের যে বাজার ব্যবস্থাপনা, যে করের ব্যবস্থাপনা, সেখানে কমিয়ে এনে কিছুটা স্বস্তি দেয়া যেতে পারে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যেটা থাকার কথা, সেটা আমরা দেখছি না। যার ফলে যেকোনো সংকট হলে, সেটার সুযোগ নেয়া হচ্ছে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো দরকার। আর এই পণ্য যাদের দরকার তারা যেন পায়। আরও বেশি পণ্য বিক্রি করা দরকার। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ বাড়াতে হবে। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।’
‘প্রতিযোগিতা আইনকে শক্তিশালী করে একচেটিয়া ব্যবসাকে ঠেকাতে হবে। প্রত্যক্ষ অর্থ সহায়তা দেয়া দরকার, যেন সেটা গরিব মানুষের হাতে যায়’, বলেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা ২৮টি পণ্য পেয়েছি, যেগুলোর ওপর কর কমাতে হবে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলবে কর আহরণ কমে যাবে। তবু আমরা মনে করি, কর কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিলে সেটা সামগ্রিক কর আহরণে তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে চালের দাম থাইল্যান্ড অথবা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে নিচের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশি আছে। বাংলাদেশে চিনির দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা গুরুর মাংস আমদানি করি না। তারপরও বাংলাদেশে গুরুর মাংসের দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা যে সবসময় বিশ্ববাজারকে দোষ দেব সেটা নয়।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবার যদি পুরো মাস ভালো খায়, তাহলে তাদের খরচ হবে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ খাতেই যারা কাজ করছেন তাদের আয় এই খরচের তুলনায় কম। যদিও মূল্যস্ফীতির হার কম, কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাজারের পণ্যের দামের মিল নেই। আমরা দেখেছি বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।’
নতুন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের গরিব মানুষের ওপর করের বোঝা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি। পাশাপাশি দেশের বাজার ব্যবস্থাপনার মান বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।
নতুন অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সোমবার সকালে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের এ সুপারিশ তুলে ধরে।
সিপিডির অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে যে কর কাঠামো আছে, সেখানে গরিব মানুষের তুলনায় ধনী মানুষ বেশি সুবিধা পাচ্ছে। ধনী মানুষের কর সুবিধা কমিয়ে দিয়ে গরিব মানুষের কর সুবিধা বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘গত বছর আয় করের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করের হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান করছি। কারণ যারা বেশি আয় করেন তাদের উচিত বেশি কর দেয়া। আগেরবার এই হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এই সুবিধা পাচ্ছেন ধনীরা।’
‘আর কম আয়ের মানুষকে সুবিধা দেয়ার জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত। এরপর দ্বিতীয় স্ল্যাব এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত’, বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।
বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর পরামর্শ
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে, কিন্তু সেগুলোর সুফল আমরা পাচ্ছি না। শুধু বিদেশি পণ্য নয়, দেশি পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার অনেক কারণ দেখানো হয়, এর কোনোটা যৌক্তিক কোনোটা যৌক্তিক নয়।’
‘আমাদের যে বাজার ব্যবস্থাপনা, যে করের ব্যবস্থাপনা, সেখানে কমিয়ে এনে কিছুটা স্বস্তি দেয়া যেতে পারে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যেটা থাকার কথা, সেটা আমরা দেখছি না। যার ফলে যে কোনো সংকট হলে, সেটার সুযোগ নেয়া হচ্ছে।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো দরকার। আর এই পণ্য যাদের দরকার তারা যেন পায়। আরও বেশি পণ্য বিক্রি করা দরকার। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ বাড়াতে হবে। বাজারে পণ্য নিয়ে যারা কারসাজি করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।’
‘প্রতিযোগিতা আইনকে শক্তিশালী করে একচেটিয়া ব্যবসাকে ঠেকাতে হবে। প্রত্যক্ষ অর্থ সহায়তা দেয়া দরকার, যেন সেটা গরিব মানুষের হাতে যায়’, বলেন তিনি।
খাদ্যের ওপর কর কমানোর পরামর্শ
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা ২৮টি পণ্য পেয়েছি, যেগুলোর ওপর কর কমাতে হবে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলবে কর আহরণ কমে যাবে। তবু আমরা মনে করি, কর কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দিলে সেটা সামগ্রিক কর আহরণে তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না।’
বাংলাদেশে অনেক পণ্যের দাম বেশি
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশে চালের দাম থাইল্যান্ড অথবা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে নিচের দিকে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশি আছে। বাংলাদেশে চিনির দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা গুরুর মাংস আমদানি করি না। তারপরও বাংলাদেশে গুরুর মাংসের দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বেশি। আমরা যে সবসময় বিশ্ববাজারকে দোষ দেব সেটা নয়।’
৪ সদস্যের এক পরিবারের খরচ ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা
সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, ঢাকা শহরে চার সদস্যের একটি পরিবার যদি পুরো মাস ভালো খায়, তাহলে তাদের খরচ হবে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ খাতেই যারা কাজ করছেন তাদের আয় এই খরচের তুলনায় কম। যদিও মূল্যস্ফীতির হার কম, কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাজারের পণ্যের দামের মিল নেই। আমরা দেখেছি বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে ২৪ শতাংশ বেড়েছে।’
মজুরি বাড়াতে হবে
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা দেখেছি একমাত্র ওষুধ খাত ছাড়া সব সব খাতে মিনিমাম (ন্যূনতম) মজুরি কম। আমরা মনে করি ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো দরকার। কমপক্ষে ৫ শতাংশ।’
হালিমের পুরোনো সেই স্বাদগন্ধ আর খুঁজে পান না পঞ্চাশোর্ধ্ব আবুল কাশেম। অতীতের সেই স্বাদ আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই তো ধানমন্ডি থেকে কলাবাগানে ‘মামা হালিম’ কিনতে চলে এসেছেন ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে। প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে সফল হলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ব্যক্তি।
অতীতের মামা হালিমের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খানিকটা নীরব হয়ে যান। অসন্তোষ প্রকাশ করে দীর্ঘশ্বাস তুলে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আসল কথা হইছে, আগের মতন স্বাদ, ঐতিহ্য আর নাই। একটা হইতে পারে নামে খাইয়া গেছে। আগের মতন ভালো ভালো জিনিসও দেয় না তারা। মাংসের দামও বেশি।’
কলাবাগানের মামা হালিম নিয়ে শুধু আবুল কাশেমের আক্ষেপ, তা নয়। মোহাম্মদপুরে মনা হালিমের দোকানে এসেও ক্রেতারা বলছেন ‘মামা, হাড্ডি দিয়েন না। একটু মাংস বেছে দিয়েন।’ একই চিত্র চোখে মেলে নগরীর পান্থপথের ফুটপাতে। সেখানেও একটু ‘ভালো’ করে হালিম পার্সেলে দেয়ার দাবি ক্রেতাদের।
হালিম নামের উৎপত্তি আরবি ‘হারিস’ থেকে। এর অর্থ হচ্ছে পিষে ফেলা। তুরস্ক, ইরান, মধ্য এশিয়া, আরব, আর্মেনিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে এই খাবারের সুখ্যাতি। যার মূল উপাদান মাংস, ডাল, গম বা বার্লি আর মসলা। এই মসলা অঞ্চলভেদে হালিমের স্বাদে এনেছে ভিন্নতা। তবে ঢাকায় হালিমের আগমন মোগল আমলেই। পুরান ঢাকায় রোজা ছাড়াও মহররম উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে হালিম তৈরির রেওয়াজ রয়েছে। আর রাজধানীর ডিসেন্টসহ বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইফতার আইটেম হিসেবে এখন হালিম তো মাস্ট। পাড়ামহল্লার খাবার হোটেলেও এই পদ পাওয়া যায়।
কোথাও কেজি দরে, কোথাও লিটার আবার কোনো জায়গায় হালিম বিক্রি হচ্ছে বাটির সাইজ মেপে। যার ফলে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। মামা হালিমে খাসির মাংস দিয়ে তৈরি হালিমের সর্বোচ্চ মূল্য ২ হাজার ৪০০ টাকা। সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা। গরুর মাংসের হালিমের সর্বোচ্চ মূল্য ২ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা। অন্যদিকে মুরগি দিয়ে তৈরি হালিমের দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ১৬০ টাকা।
মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডের মনা হালিম সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাড়ামহল্লায় ১২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
মনা মামার হালিমের মালিক মো. মনা রমজানের সময় কথা বলতেই নারাজ। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রমজানের সময় ওহন কথা বলা যায়? বেচাবিক্রি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। খাসির দাম বেশি, তাই গরুর হালিম বেচি। সঙ্গে কোয়েলের ডিম সবই থাকে।’
২৫০, ২০০ ও ১৫০ টাকা দামে মোহাম্মদপুরের আল মাদিনা হোটেল হালিম বিক্রি করে থাকে বলে জানান বিক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘২৫০ টাকার বাটিতে আট পিস মাংস দিই। ১০০ গ্রামের একটু কম হইব। বিক্রি মোটামুটি, তেমন একটা সুবিধা না। এখনো বিক্রি বাড়ে নাই। সব জিনিসেরই তো দাম বেশি।’
নতুন এই হোটেলের মালিক মো. ইউসুফ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আছে মোটামুটি ভালো। আল্লাহ যা-ই দেন আরকি তাই ভালো। আমি নতুন হোটেল দিছি, এখনো ওই রকম কাস্টমার ধরতে পারি নাই।’
কলাবাগানের মামা হালিমের দাম বাড়ানো হয়নি দাবি করে এই দোকানের বিক্রেতা মো. খোকন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দাম বাড়াই নাই। তবে বাটিটা একটু ছোট আছে। গরু, খাসি, মুরগি তিনটাই আছে। লিটারের কোনো হিসাব নাই। আমাদের বাটি হিসাব।’
বাজারে মাংসের দাম বাড়ার পরও কীভাবে কী করছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে এই বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের বাটি আগে যে সাইজ ছিল; বাজারে ওই সাইজটা পাচ্ছি না, তাই ওই ছোট বাটিতে বিক্রি করছি।’
তবে বর্তমানের বিক্রি নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট না এই বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় বিক্রি ভালো ছিল। করোনায় দোকানদারি অনেক ভালো ছিল, এখনকার চেয়ে বেশি।’
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সব মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। তবে টাকার অংকে লেনদেন বেড়েছে ৩০ কোটি।
তথ্যমতে, সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ১১ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৬ হাজার ২০৩ পয়েন্টে। একইসঙ্গে ‘ডিএস-৩০’ সূচক ২ পয়েন্ট কমে এবং ‘ডিএসইএস’ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ২২১৫ ও ১৩৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এদিন ডিএসইতে ৩১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৮৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
ডিএসইতে মোট ২৮৩ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৮ কোম্পানির। দরপতন হয়েছে ৭২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর।
অপর বাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। সিএসইতে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশ্বের বাজারের নিয়ন্ত্রকদের আগাম সতর্ক করলেন। সতর্কতার কারণ, খুব শিগগিরই বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতাবস্থা কিছুটা টালমাটাল হতে চলেছে বলে মনে করছেন ক্রিস্টালিনা।
আই্মএফ প্রধান জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে সাম্প্রতি যে ঝড় উঠেছে, তার কারণেই এই ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। তাই বিশ্ব বাজারের ক্রীড়ানকদের ক্রিস্টালিনার পরামর্শ, ‘একটু নজর রাখুন।’ খবর রয়টার্সের
কেন নজর রাখতে হবে তার একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। সেই সমস্যার মোকাবিলা করতে বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের সুদের হার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ক্রিস্টালিনার মতে, এই সব কিছুই বৃহত্তর আর্থিক ব্যবস্থাকে চাপে ফেলেছে।
ক্রিস্টালিনার মতে, ‘দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা কম সুদের হার থেকে হঠাৎ বেশি হারের সুদের এই উত্তরণের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হল অর্থনীতির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়া। অর্থনীতির দুর্বল বা অতি সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া। ব্যাংকিংয়ে খাতে যা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।’
গতকাল রোববার চীনের বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। ক্রিস্টালিনা জানিয়েছেন, এক দিকে অতিমারি, অন্য দিকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বজুড়ে আর্থিক বৃদ্ধি কমে ৩ শতাংশেরও নিচে চলে এসেছে।
ইন্স্যুরেন্স বা বিমা পলিসি বিক্রি করবে ব্যাংক। বিমার পলিসি কিনতে আলাদাভাবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যাওয়ার দরকার নেই, ব্যাংক থেকেই এ সুবিধা পাওয়া যাবে। আর ব্যাংক থেকে বিমার পণ্য কেনার এ ব্যবস্থার নাম ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’। চলতি বছরের মধ্যেই এটি চালু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে ব্যাংকাস্যুরেন্স ধারণা নতুন হলেও বাইরের দেশগুলোতে এটি চালু হয়েছে অনেক আগেই। বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি বিমার পণ্য বিক্রি করে।
সাধারণত বিমা প্রতিষ্ঠান নানা রকমের পলিসি বিক্রি করে। গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ক্রয় করেন। এতে গ্রাহককে সেসব বিমা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। কিন্তু ব্যাংকাস্যুরেন্স এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে গ্রাহককে বিমা পলিসি কেনার জন্য আলাদাভাবে বিমা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। ব্যাংক থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিমা পলিসি কিনতে পারবেন গ্রাহক। এ প্রক্রিয়া চালু হলে দেশের ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স যৌথভাবে কাজ করবে। অফিসের বেতন, আমানত, পেনশনসহ নানা রকমের কাজের জন্য প্রায় সব ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তা ছাড়া ব্যাংকের অবকাঠামো শক্তিশালী হওয়ায় মানুষের আস্থাও বেশি। ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে একটি ব্যাংকের সঙ্গে তিন-চারটি বিমা কোম্পানি সংযুক্ত থাকবে। লাইফ ও নন-লাইফ দুই ধরনের বিমা কোম্পানির করপোরেট এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে ব্যাংক। গ্রাহক পছন্দ অনুযায়ী তার ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত বিমা কোম্পানিগুলোর পলিসি কিনতে পারবেন।
আইডিআরএ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে ব্যাংকাস্যুরেন্স-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই ব্যাংকাস্যুরেন্সের এজেন্ট হতে পারবে। সে জন্য বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে তাদের। এ জন্য বিমা কোম্পানিকে আইডিআরএ এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সূত্র জানায়, ব্যাংকাস্যুরেন্স অনুমোদন হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর আইডিআরএ বাংলায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ইংরেজিতে কিছু দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দুটোকে মিলিয়ে বাংলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাতেও দিকনির্দেশনাপত্র জমা দেয়। সূত্র জানায়, চলতি বছরের মধ্যেই ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হবে।
চার্টার্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক বলেন, ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে বিমার ডিস্ট্রিবিউশন বাড়বে, আস্থার জায়গা তৈরি হবে। অন্যদিকে বিমা কোম্পানিগুলোর খরচ কমে আসবে। আর ব্যাংক যখন বিমা পলিসি বিক্রি করবে, তখন সবার মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। কারণ ব্যাংকের কর্মীরা পেশাদারত্বের দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে স্বচ্ছতা বাড়বে, জবাবদিহির জায়গা তৈরি হবে। এতে বিমা খাতে প্রিমিয়াম পেনিট্রেশন হার আরও বাড়বে।’
১৯৮০ সালে ফ্রান্সে ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু হলে পরবর্তী সময়ে এই কার্যক্রম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে ব্যাংকের মাধ্যমে জীবন বিমা পলিসি বিক্রি হয়। ভারত, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভারতে এটি চালু হয় প্রায় তিন যুগ আগে। অথচ দেশে ৬১টি ব্যাংক ও ৭৯টি বিমা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এখনো ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করা সম্ভব হয়নি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স পণ্য বিক্রি করতে পারে না। তাই আইনে কিছু পরিবর্তন আসবে। এ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু করলে জিডিপিতে বিমার অবদান বাড়বে। বর্তমানে অবদান ১ শতাংশেরও কম। এ ছাড়া বিমার প্রতিষ্ঠানগুলোর এজেন্টদের অনেকে বিশ্বাস করে না। তাই এই প্রক্রিয়া চালু হলে সার্বিক দিক থেকে ইতিবাচক হবে।’
বিমা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিমা কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত হতে ২০২০ সাল থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ব্যাংকাস্যুরেন্স চালু থাকলে গ্রাহক সহজে পলিসি করতে সক্ষম হবেন। আবার এতে করে দুটি সুবিধা হবে। এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের কাছে মাঠকর্মীরা পৌঁছতে পারেন না। কিন্তু ব্যাংকের কাছে তারা নিয়মিতই আসেন। তারা সহজেই বিমার গ্রাহক হতে পারেন, মানুষের মধ্যে বিমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। দ্বিতীয়ত, গ্রাহক আস্থা তৈরি হবে। কারণ বর্তমানে বিমা নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা বিরূপ মনোভাব দেখা যায়। এখনো অনেক কোম্পানি তাদের গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করতে কালক্ষেপণ করছে।
আইডিআরএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমেও পলিসি বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো। প্রান্তিক অঞ্চলে ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। ব্যাংকের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের সিস্টেম চালু থাকলে অ্যাকাউন্ট থেকেই প্রিমিয়াম কেটে রাখা হবে।
স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগির দামে। বড় কোম্পানিগুলো খামারে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি শুরুর পর খুচরা বাজারে এর দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। খুচরায় রোববার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। তবে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে ডিমের দামে। বাজারে গত তিন দিনে ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারভেদে ডজনপ্রতি ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০-২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা রোজা শুরুর আগের দিন ৩০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছিল। পোলট্রি খাতের শীর্ষ স্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি নির্ধারণের পরই বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা। সেই হিসেবে তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে অন্তত ৫০ টাকা কমেছে। কমেছে সোনালি মুরগির দামও। বাজারভেদে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়।
মিরপুর শাহ আলী বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান বলেন, মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। গতকালের মতো আজকেও ব্রয়লার মুরগি পাইকারিতে কেনা পড়েছে ২০০ টাকার নিচে। আমরা খরচ বাদে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো দাম সমন্বয় করে খুচরায় বিক্রি করছি।
এদিকে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে ডিমের হালি এখন ৪৭-৪৮ টাকা। কোথাওবা ৫০ টাকাও রাখা হচ্ছে।
তবে মুরগির দাম কমা আর ডিমের দাম বাড়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সরকার মুরগির দাম নির্ধারিত করে দিয়েছে। ফলে এর থেকে বেশি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। তবে ডিমের কোনো নির্ধারিত দাম নেই। সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে।
বাজার কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা কবির বলেন, সারা দেশে বৃষ্টির কারণে ডিমের সরবরাহ অনেক কম। এ কারণে তিন দিন ধরে দাম ঊর্ধ্বমুখী। একই বাজারের ডিম বিক্রেতা কামরুল বলেন, ডিমের দাম এই বাড়ে তো এই কমে। আগে ১৩০ টাকা ডজন বিক্রি করেছি। এরপর হলো ১৩৫ টাকা। পরে তা কমে আবার ১৩০ টাকায় নামে। এখন আড়তে ডিমের দাম বাড়ছে। বাজারে ডজনপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। ১৪০ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, রোজায় ডিমের বাড়তি চাহিদা থাকে না। তবে বাজারে মাছ-মাংসের দাম খুব বেশি হওয়ার কারণে ডিমের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। মানুষ ডিম খাচ্ছে।
অন্যদিকে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে ডিম কিনতে আরও কয়েক টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। খুচরা দোকানে ডিমের হালি ৪৭-৪৮ টাকা, কোথাওবা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফার্মের মুরগির সাদা ডিম একটু কমে, প্রতি হালির দাম রাখা হচ্ছে ৪৫ টাকা। অন্যদিকে বাজারভেদে হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগির দাম নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এই সুযোগে ডিমের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দিবসটি উপলক্ষে রোববার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএসইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে এই পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণকালে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, আব্দুল হালিম ও রুমানা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, মো. সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. রশীদুল আলম।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই)।
রোববার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের প্রতি এই শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ডিএসইর নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন নব-নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, মো. আফজাল হোসেন, রুবাবা দৌলা, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, শরীফ আনোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সাত্তিক আহমেদ শাহ, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাসার, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. ছামিউল ইসলাম, কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান।