শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

সেপ্টেম্বরে শুরু হচ্ছে ইউএসবিসিসিআই বিজনেস এক্সপো

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চিফ কো-অর্ডিনেটর এনামুল কবির সুজন। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
১৯ মার্চ, ২০২৩ ২১:৩৩
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই) কর্তৃক আয়োজিত ‘ইউএসবিসিসিআই বিজনেস এক্সপো-২০২৩’ আগামী ২২-২৪ সেপ্টেম্বর নিউইর্য়কের লা-গার্ডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়টে অনুষ্ঠিত হবে।

গত শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইউএসবিসিসিআই) বাংলাদেশ অংশের চিফ কো-অর্ডিনেটর এনামুল কবির সুজন। অনলাইনে যুক্ত হয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ইউএসবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. লিটন আহমেদ ও ইউএসবিসিসিআই এক্সপো স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দোজা সাগর।

এনামুল কবির সুজন বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং উন্নত রাষ্ট্রের দিকে পথযাত্রা সুগম করার লক্ষ্যে ইউএসবিসিসিআই কাজ করে যাচ্ছে। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সবাই লাভবান হবে এবং ব্যবসায়িক অগ্রগতি সাধিত হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে টিকে থাকার লড়াইয়ে একে অপরের পাশে থাকার বিকল্প নেই, আর তাই ইউএসবিসিসিআইয়ের এই উদ্যোগ।

এ ছাড়া এই এক্সপোতে ইপিবি, বিডা, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়ার কথা জানান সুজন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) ডিরেক্টর জেনারেল শাহ্ মোহাম্মদ মাহবুব উপস্থিত থেকে ‘ইউএসবিসিআই বিজনেস এক্সপো ২০২৩’-এর সঙ্গে বিডার সব ধরনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন।

অনলাইনে যুক্ত হয়ে ইউএসবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. লিটন আহমেদ বলেন, ‘ইউএসবিসিআই বিজনেস এক্সপো-২০২২’-এ আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা ব্যবসার নতুন নতুন উপাদান খুঁজে পেয়েছি বিগত বিজনেস এক্সপোর মাধ্যমে। তাই এই এক্সপো আমাদের কাছে বিশেষ স্মরণীয় হয়ে আছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের মতো এবারও আমরা তিন দিনব্যাপী ‘ইউএসবিসিআই বিজনেস এক্সপো-২০২৩’ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এ ছাড়া চলতি বছর আমরা আরও কিছু আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইউএসবিসিসিআই ‘মহিলা উদ্যোক্তা সামিট-২০২৩’, যা আগামী ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া কমিউনিটিসহ সবার স্বার্থে কিছু উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউএসবিসিসিআই)। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিডি টেক্সটাইল এবং আরএমজি এক্সপেন্ডারেশন, রিয়েল এস্টেট এটুজেড সেমিনার, উদ্যোক্তাদের জন্য এসবিএস/এসবিএর সঙ্গে গ্রান্ট নিয়ে সেমিনার।

অনলাইন বার্তায় ইউএসবিসিসিআই এক্সপো স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দোজা সাগর জানান, ইউএসবিসিসিআই কর্তৃক অনুষ্ঠিতব্য ‘ইউএসবিসিআই বিজনেস এক্সপো-২০২৩’-এ বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত ৩ মার্চ শুক্রবার ফ্লোরিডায় হোটেল হিলটনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফুড ফেয়ার অ্যান্ড কালচারাল শোতে উপস্থিতকালে বাণিজ্যমন্ত্রীকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ বছর অনুষ্ঠিত ‘ইউএসবিসিসিআই বিজনেস এক্সপো-২০২৩’-এ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব সংস্থাকে ওই বিজনেস এক্সপোতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইউএসবিসিসিআইয়ের বিজনেস এক্সপো-২০২৩-এর মার্কেটিং কো-অর্ডিনেটর মো. রেদওয়ানুর রহমান রিয়াদ এক্সপো নিয়ে তার মার্কেটিং প্ল্যান ও বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরেন।


ঈদে পোশাক বিক্রিতে প্রতারণা করলে ব্যবস্থা নেবে ভোক্তা অধিদপ্তর

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর
আপডেটেড ৩১ মার্চ, ২০২৩ ১৯:৫৪
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ঈদে ক্রেতারা বছরের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কাপড় কেনেন। ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতারা যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সে জন্য এবার আগেভাগে নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ভোক্তার সঙ্গে কোনো ধরনের ছলচাতুরীর আশ্রয় নিলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে গত বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তৈরি পোশাকের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও বুটিক হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯-বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এমন বার্তা দেয়া হয়। শুক্রবার অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সভায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলা হয়, ঈদ উপলক্ষে একই পোশাকের দাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাড়িয়ে দেয়া, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, এক ধরনের পোশাকে ভিন্ন ভিন্ন দামের ট্যাগ লাগানো, ছিট কাপড়ের ক্ষেত্রে মিটারের পরিবর্তে গজের ব্যবহার এবং আসল বলে নকল কাপড় বিক্রির অভিযোগ পেলে ভোক্তা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ছাড়া কারখানা থেকে পোশাকের মোড়কের গায়ে খুচরা মূল্য না লেখা, খুচরা মূল্য ঘষামাজা বা কাটাকাটি করে বেশি মূল্য নির্ধারণ, পুরোনো মূল্যের ওপর নতুন স্টিকার লাগিয়ে বেশি দাম নেয়া, শতভাগ কটন ঘোষণা দিয়ে তাতে ভেজাল দেয়া, কাটা-ফাটা পোশাক বিক্রি করা, সময়মতো কাপড় পরিবর্তন করে না দেয়া এবং টাকা পরিশোধে লম্বা সারিতে অপেক্ষমাণ না রাখার বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের তাগিদ দেয়া হয়।

নকল পণ্যের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘অন্যান্যবারের মতো এবারও কাপড়ের বাজারে আমাদের তদারকি থাকবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদেশি পোশাক ও প্রসাধনীর ক্ষেত্রে আমদানিকারকের নাম ও সিল থাকতে হবে।’

শপিংমলগুলোতে অনিয়ম পেলে মার্কেট কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কিছু ব্যবসায়ী আমাদের দেশে আসেন। তারা বাসা ভাড়া নিয়ে ভেতরে–ভেতরে টার্গেট কাস্টমারের কাছে বিদেশি কাপড় বিক্রি করেন। এ ধরনের কার্যক্রম দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে দেয়া হলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা চাই, সবাই আইন মেনে ব্যবসা করুক। ভোক্তারা যেন ন্যায্যমূল্যে পণ্য পান।’

সভার স্বাগত বক্তব্যে ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাপড়ের গুণগত মান যেন ভালো থাকে। যাতে বিদেশি যারা আসেন, তারা যেন কাপড়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারেন। কাপড়ের দামের ট্যাগ যেন কারখানায় লাগানো হয়। বিক্রয়কেন্দ্রে যেন দামের ট্যাগ লাগানো না হয়। এর ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, আড়ং, আর্টিসান, অঞ্জনস, টপ টেন, লুবনান, নগরদোলা, রং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন পোশাকের ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


দুদিন পর আবার বাড়ল ব্রয়লারের দাম

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩১ মার্চ, ২০২৩ ১৬:২৬
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

দুদিনের মতো ২০০ টাকার ঘরে থাকার পর ব্রয়লার মুরগির দাম আবার বেড়েছে। শুক্রবার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।

গত বেশ কিছু দিন ধরে দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে ‘অরাজকতা’ চলছিল। ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম হাঁকিয়েছিলেন বিক্রেতারা। তবে এর কয়েক দিন পরই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা দেশের ‘বিগফোর’ খ্যাত চারটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে তলব করলে দাম কিছুটা কমে ২০০ টাকার ঘরে এসেছিল।

ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা চাইলেন দাম বাড়ে, তারা চাইলেই দাম কমে। এই ‘সিন্ডিকেট’ থেকে মুক্তি চান ক্রেতারা।

শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লারের দাম গত সপ্তাহে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, ভোক্তার তলবের পর চার প্রতিষ্ঠান আশ্বাস দেয় খামার পর্যায়ে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা বিক্রি করার। সেই আশ্বাসের পর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। মিলগেটে বিক্রি হয় ১৫৫ টাকায়। তবে তার দুদিন পরই এই দাম আরেকবার লাফ দেয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। এ ছাড়া লেয়ার মুরগি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হতে দেখা গেছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজিতে।

বাড্ডা বাজারে ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন সবুজ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দেখলাম ব্রয়লারের দাম একটু কমেছে। এখন বাজারে এসে দেখি আবার ২০ টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে। দুই দিনের ব্যবধানে কেজি ৬০-৮০ টাকা কমিয়ে তারা কীভাবে ২০০ টাকা বিক্রি করছিল? এখন তাহলে আবার কেন কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে দিল? তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে এগুলোর দাম তারা নিজের ইচ্ছেমতো বাড়ায় ও কমায়। এসব সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হওয়া দরকার।’

এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজিতে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা কেজিতে। আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকা কেজিতে।

গত সপ্তাহের মতোই প্রকারভেদে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি, বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, খেসারি ডালের বেসন ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, আর চিকন মসুর ডাল ১৪৫ টাকায় অপরিবর্তিত দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির মূল্য গত সপ্তাহের সমান ১২০ টাকা কেজি, মুড়ি ৮০ টাকা, বেগুনের দর ৮০ টাকা, আলুর কেজি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর দাম কিছুটা কমে প্রকারভেদে হালি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির মধ্যে সবগুলোর দামই গত সপ্তাহের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে। করলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় এবং শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি পটলের দাম ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে। লাউ প্রকারভেদে প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারও স্থিতিশীল

বাজারে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের মাছের দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। রুই আকারভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা প্রতি কেজিতে। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়।

দাম অপরিবর্তিত থাকার ব্যাপারে নাখালপাড়া কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সোহেল হোসাইন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘রোজা এলে সবকিছুর দামই একটু বাড়তির দিকে থাকে। তবে রোজার কয়েক দিন যাওয়ার পর থেকেই দাম কমা শুরু করে। তাই গত সপ্তাহে যেসব পণ্যের দাম কমেছিল, সেগুলো আগের দরেই আছে। রোজার আরও কিছুদিন পর আরেকটু কমতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এখন কমা বা আগের দাম থাকলেও ঈদের কয়েক দিন আগে আবার কিছুটা দাম বাড়বে। বুঝেনই তো, মানুষ ঈদের আগে একটু কেনাকাটার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। তাই চাহিদাও বাড়ে, দামও বাড়ে। তবে দাম কম থাকলে আমাদের বেচাকেনা বেশি হয়।’

বিষয়:

সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা

তহমিনা ইয়াছমিন। গৃহিণী, রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামীর বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে যা বাঁচত তা জমিয়ে কয়েক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। মাসে মাসে ভালোই মুনাফা আসত নিজের ব্যাংক হিসাবে। তা দিয়ে সংসারের এটা-ওটা কিনতেন। ছেলের পড়ালেখার পেছনে খরচ করতেন।

কিন্তু আর চলছে না। বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বামীর বেতনের টাকায় আর সংসার চলছে না। তাই মেয়াদপূর্তির আগেই সব সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করেছেন অর্থাৎ ভাঙিয়েছেন; আসল টাকা থেকে কিছু টাকা কমও পেয়েছেন।

দৈনিক বাংলাকে আক্ষেপ করে তহমিনা ইয়াছমিন বললেন, ‘কিছুই করার নেই। আর চলছে না। সে কারণেই আসল টাকার চেয়ে কম টাকা নিয়েও ভাঙিয়ে ফেললাম।’

তহমিনা ইয়াছমিনের মতো অনেকেই এখন সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতে মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনের নিচতলায় মতিঝিল অফিস, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সঞ্চয়পত্র শাখায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, তহমিনা ইয়াছমিনের মতো অনেকেই মেয়াদপূর্তির আগেই তার নামে কেনা সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করছেন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতেও এর প্রমাণ মিলেছে। তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আষ্টম মাস এবং ২০২৩ সালের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৪৪০ কোটি ৮ টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ) হয়েছে। অর্থাৎ এই মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৪৪০ কোটি ৮ টাকা সরকার তার কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।

শুধু ফেব্রুয়ারি নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই চলছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে এই বেহাল দশা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ বাড়ায় সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে আর বিনিয়োগ করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। আর এ কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার। উল্টো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, তা থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরও ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা ছিল। যা থেকে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়েছে; ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে খুব একটা ঋণ করতে হয়নি।

কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একেবারেই উল্টো চিত্র। এই মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ৪৪০ কোটি ৮ টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ)। অর্থাৎ এই মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি; এই পরিমাণ টাকা সরকার তার কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।।

আগের মাস জানুয়ারিতে মাত্র ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭০ গুণ বেশি ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।

আর অর্থবছরের আট মাসের হিসাবে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৩ হাজার ৫০৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ) হয়েছে। অর্থাৎ এই আট মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৫০৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকার তার কোষাগার থেকে শোধ করেছে।

অথচ গত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৬৮৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই আট মাসে গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধের পরও সরকারের কোষাগারে এই পরিমাণ টাকা জমা ছিল। এই টাকা সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খাতে খরচ করেছিল।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সুদের হার হ্রাস ও নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রি এমনিতেই কমছিল। সে কারণেই নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছে। সরকারকে কোষাগার থেকে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেই খরচ বেড়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে।’

আহসান মনসুর বলেন, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ বাজেটের অন্যান্য খরচ মেটাতে বছরের পর বছর ধরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়ে আসছিল সরকার; কিন্তু এখন ঋণ বা ধার করা তো দূরে থাক, যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসলই মেটানো যাচ্ছে না। বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই চলে যাচ্ছে বেশি। অর্থাৎ সরকারের কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল শোধ করতে হচ্ছে।’

‘এতে সরকারের একদিক দিয়ে ভালো হচ্ছে’- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র খাতে বড় অঙ্কের সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে না।’

বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার পরও বাড়তে থাকে বিক্রি।

সর্বশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। এরপর থেকেই বিক্রি কমছে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর বিপরীতে প্রথম সাত মাসে এই খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার, উল্টো ৩ হাজার ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।

মূল্যস্ফীতির প্রভাব সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই দুই বছরের করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয়-উপার্জন কমে গিয়েছিল। অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কারও বেতন কমেছে। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সরকার। বাজারে জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই বেশি ছিল। এরপর যুদ্ধের কারণে তা আরও বেড়ে গেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থাৎ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে না।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য বলছে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগের মাস নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আগস্টে ছিল আরও বেশি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে মজুরি সূচক ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

জায়েদ বখত বলেন, ‘বিবিএসের এই তথ্যই বলছে, দেশের মানুষ যা আয় করছে, তাতে তার সংসারই চলছে না; সঞ্চয় করবে কীভাবে?।’

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে গ্রাহকদের মূল টাকা (বিনিয়োগ) ও মুনাফা (সুদ) বাবত পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারকে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।

বিষয়:

মানুষের হাতে হাতে ব্যাংক

আপডেটেড ৩১ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৪৭

গত জানুয়ারিতে মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে এক বছরে গড় লেনদেনের অঙ্ক দাঁড়ায় ১২ লাখ ৭ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। শতাংশ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যত টাকা লেনদেন হয়, তা মোট জিডিপির ৩০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এই তথ্যই বলছে, দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখছে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস)। সরকারের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, ছোট-বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একজন রিকশাচালকও অকপটে স্বীকার করবেন ‘এমএফএস ছাড়া আমার চলেই না!’

এক কথায় বলা যায়, ব্যাংকিংসেবায় বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। সব লেনদেন এখন নিমিষেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

কেবল টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিং। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা এখন অন্যতম পছন্দের মাধ্যম। এই সেবার কারণে বেড়েছে নতুন কর্মসংস্থান। সবকিছু চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। সময় বেঁচেছে এবং ঝুঁকিও কমেছে।

মোবাইল ব্যাংকিং এখন শুধু টাকা-পয়সা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানোর কাজেই সীমাবদ্ধ নেই। গ্রাহকদের জন্য প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসছে তারা। এখন পর্যন্ত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম, ইন্স্যুরেন্সের টাকা, বিভিন্ন ধরনের বিল এবং পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে।

এত কিছু করেছে যে সেবা, দেশের অর্থনীতিতে প্রতি মুহূর্তে অবদান রেখে চলেছে যে সেবা- সেই সেবার ১২ বছর বা এক যুগ পূর্তি হচ্ছে আজ শুক্রবার। বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে খুব সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের সেবা নগদও দিচ্ছে এই সেবা। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এমএফএস বাজারের ৭০ শতাংশের বেশি বিকাশের নিয়ন্ত্রণে, এর পরই রকেটের। বাকিটা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।

ব্যাংকে না গিয়েও যে আর্থিক সেবা মিলবে, এমন আলোচনা ১২ বছর আগেও শুরু হয়নি। নব্বইয়ের দশকে যখন দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়, এই ফোনই যে একসময় অনেক আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে, এমন পূর্বাভাসও তখন কেউ দেয়নি। আর এক যুগ আগে যখন মোবাইল ব্যাংকিং শুরু হয়, তখন এই সেবার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে এখন বাস্তবতা হলো- বিকাশ, রকেট, নগদের মতো সেবা এখন প্রতি মুহূর্তের আর্থিক প্রয়োজনে অপরিহার্য অংশ। হাতের মুঠোফোনটিই এখন নগদ টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে।

দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখন এসব সেবার গ্রাহক। সারা দেশে এসব সেবায় নিবন্ধন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি। যদিও সক্রিয় ব্যবহারকারীর হিসাব ৭ কোটির কিছুটা কম। ১২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের দেশে এই সংখ্যা নেহাত কম নয়।

এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম না। এর ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের লেনদেনে। বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টদের কাছেও যেতে হচ্ছে না। ব্যাংক বা কার্ড থেকে সহজেই টাকা আনা যাচ্ছে এসব হিসাবে। আবার এসব হিসাব থেকে ব্যাংকেও টাকা জমা শুরু হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড বা সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তিও জমা দেয়া যাচ্ছে। এর ফলে একটি মুঠোফোনই যেন একেকজনের কাছে নিজের ব্যাংক হয়ে উঠেছে।

দৈনিক লেনদেন ৩৩০০ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। ৯ মাস আগে গত বছরের এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। গড় হিসাব বলছে, জানুয়ারিতে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিলে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়; লেনদেন হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ টাকা। মে মাসে না কমে ৭৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকায় নেমে আসে। শতাংশ হিসাবে গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৮৪ হাজার ৭৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এখন এমএফএস। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে এই সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সেবার ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেন।

বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়, নগদসহ দেশে বর্তমানে ১৫টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির মোবাইল ব্যাংকিংসেবা এই হিসাবে এতদিন অন্তর্ভুক্ত ছিল না। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নগদের মাধ্যমে করা লেনদেনও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

এমএফএসের কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান মাস চলছে, কয়েক দিন পর ঈদ উৎসব। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে চলতি মার্চ ও এপ্রিলে লেনদেন আরও বাড়বে। কেন বাড়বে তার কারণ ব্যাখ্যা করে কর্মকর্তারা বলেন, রোজা ও ঈদে সব ধরনের পণ্যের বেচাকেনা বেড়ে যায়। যার প্রভাবে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেনও বেড়ে যায়।

গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন এই মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা করতে পারেন।

মোবাইল ব্যাংকিংসেবা যেমন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের জন্য সুবিধা করে দিয়েছে, আবার গৃহকর্মী ও কম আয়ের মানুষের কাছে বড় আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। কারণ অনেক শিল্পপতিকে এখন আগের মতো মাস শেষে ব্যাংক থেকে বস্তায় টাকা ভরে কারখানায় নিতে হয় না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন-ভাতা চলে যায় শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে।

ডাচ্-​বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ডাচ্‌​-বাংলা ব্যাংক শুরু থেকেই প্রযুক্তিতে এগিয়ে। ২০০৪ সালে আমরাই প্রথম এটিএম সেবা চালু করি। তবে এটিএম সেবার মাধ্যমে সব শ্রেণির কাছে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই গ্রামের তথা প্রান্তিক মানুষের কাছে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দিতে আমরা বিকল্প কিছু খুঁজছিলাম। তারই অংশ হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করা হয়।’ এ সেবার নাম পরিবর্তন বিষয়ে ডাচ্‌​-বাংলার এমডি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংসেবার নিজস্ব ব্র্যান্ড বা পরিচয় দাঁড় করাতেই ২০১৬ সালে নাম পরিবর্তন করে রকেট করা হয়। তারপর তো ইতিহাস।

এমএফএস লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর দৈনিক বাংলাকে বলেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মোবাইল আর্থিক সেবা দেশের মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনকে প্রযুক্তিনির্ভর করে সহজ, নিরাপদ এবং তাৎক্ষণিক করেছে। সামগ্রিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের ওপর যার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশে ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্যাশলেস সমাজ নির্মাণেও এই খাত ভূমিকা রাখবে।

এক মাসে গ্রাহক বেড়েছে ৩১ লাখ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক বেড়েছে ৩০ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪। জানুয়ারি শেষে এমএফএসের নিবন্ধিত হিসাব দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ১৩৭টি। ডিসেম্বরে ছিল ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ১১২টি।

অন্যান্য সেবা

মোবাইল ব্যাংকিংসেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই, রাজধানী ও জেলা শহরে গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবামাধ্যম ব্যবহার করে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা দি ইকোনমিস্ট ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংসেবায় শীর্ষ দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। প্রথম অবস্থানে ছিল কেনিয়া, তারপর তানজানিয়া, বোতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, ক্যামেরুন, ফিলিপাইন। এর পরের অবস্থানই ছিল বাংলাদেশের। এরপর অবশ্য মোবাইল ব্যাংকিংসেবায় শীর্ষ দেশগুলোর কোনো তালিকা দেশে-বিদেশে কোনো গণমাধ্যম বা গবেষণা সংস্থা প্রকাশ করেনি।

কয়েকটি পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ আনা-নেয়া করা যায়। তার মধ্যে এজেন্টের কাছে গিয়ে সুনির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠানো, এজেন্টের কাছে গিয়ে হিসাব খুলে সেখানে টাকা জমা করে নিজের মোবাইলে স্থিতি বা ব্যালান্স নিয়ে কাউকে পাঠানো এবং ব্যাংকে হিসাব খুলে সেখানে টাকা রেখে নিজের মোবাইলে স্থিতি নিয়ে লেনদেন সবচেয়ে জনপ্রিয়। স্থিতির বিপরীতে মাস শেষে মুনাফাও পাওয়া যায়।

বিষয়:

রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারের দর ১০৫ টাকা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি মার্কিন ডলারে আরও এক টাকা বেশি দেবে ব্যাংকগুলো। আগামী রোববার থেকে প্রতি ডলারে রপ্তানিকারকরা পাবেন ১০৫ টাকা। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম দৈনিক বাংলাকে বলেন, বাফেদা-এবিবির বৈঠক হয়েছে আজ। সর্বসম্মতিক্রমে রপ্তানি বিল নগদায়ন ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২ এপ্রিল থেকে সব ব্যাংক রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৫ টাকা করে রাখবে।

এতদিন ধরে রপ্তানি বিল নগদায়ন করা হতো ১০৪ টাকা। গত ১ মার্চ থেকে রপ্তানিকারকদের এ দরে বিল নগদায়ন করত ব্যাংকগুলো। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী রোবাবার থেকে দেশের সব ব্যাংক রপ্তানি নগদায়নে ১০৫ টাকা করে দিবে। অবশ্য প্রবাসী আয় ও ‘হোয়াইট কলার’ অনিবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো আয় আগের নির্ধারিত প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকাতেই বহাল রাখা হয়েছে।

গত বছর ২০২২ সালে সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো ডলার কিনতে ১১৪ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছিল। দেড় বছর আগেও যেখানে ডলার ছিল ৯০ টাকার নিচে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত সেপ্টেম্বর থেকে ডলার কেনায় সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করে আসছিল ব্যাংকগুলো। ডলারসংকটের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পর সংগঠন দুটি গত সেপ্টেম্বর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের হার নির্ধারণ করে আসছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করেই সময়ে সময়ে দর নির্ধারণ করা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা এবং প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি যৌথভাবে চিঠি দিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

শুরুতে গত ১১ সেপ্টেম্বর রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৮ এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ৯৯ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। তবে দুয়ের মধ্যে দরের পার্থক্য কমাতে রেমিট্যান্সে এক টাকা কমানো হয়। আর রপ্তানি বিল নগদায়নে দর বাড়ানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দুটি ক্ষেত্রেই ডলারের দর কাছাকাছি হবে।

বিষয়:

পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়ল ২০%

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ২১:২৫
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর বিনিয়োগসীমা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর ফলে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি। কিন্তু বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস দেয়া অবস্থায় এ ধরনের উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না।

বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮০ শতাংশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মিউচুয়াল ফান্ডগুলো মানুষের কাছে ফান্ড বিক্রি করে। সেই টাকা বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ করে। সেখান থেকে মুনাফা করে। ইউনিট হোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়। মিউচুয়াল ফান্ডের এই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা যাবে, সেটা নিয়ে একটি নীতিমালা আছে। সেখানে বলা আছে, মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা যা আছে এর মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকা দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার, বন্ড বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। এখন এই সীমা ৮০ শতাংশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডে যাতে বিনিয়োগ বাড়ায় সে জন্যই এই আইন করা হয়েছে। নির্দেশনা জারি করা হলে সেদিন থেকে এটা মেনে চলতে হবে। এখান থেকে টাকা এলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে টাকা বাড়বে। তারল্য বাড়বে, এখন তারল্য সমস্যা আছে কেটে যাবে।’

পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে এই আইন করা হলেও সেটা কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করেন দেশের পুঁজিবাজারের বড় একজন সম্পদ ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, ‘এখন এগুলো কোনো কাজে আসবে না। দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেয়া আছে। আর মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর হাতে সে রকম কোনো টাকা নেই, এগুলো করে কোনো কাজ হবে না। দেশের পুঁজিবাজারে কোনো নতুন টাকা আসবে না।’

মিউচুয়াল ফান্ডসংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ‘না বুঝে এই সার্কুলার করা হয়েছে। কারণ বিভিন্ন ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড আছে। এদের মধ্যে অনেকগুলো আছে তারা কোনোভাবেই দেশের পুঁজিবাজারে তাদের টাকার ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে না। এ ছাড়া এভাবে বিনিয়োগ করলে দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ক্ষতি হয়ে যাবে।’


কোনো দিক থেকে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না: ডিএসই চেয়ারম্যান

বৃহস্পতিবার সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ডিএসই চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ২০:৩৫
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেছেন, ‘বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রেক্ষাপট ও গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিএসইও অবকাঠামোগতভাবে এবং প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাবে। কোনো দিক থেকে আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।’

বৃহস্পতিবার সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ডিএসইর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ডিএসই কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ডিএসই ও সিইও ফোরামের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে এবং যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য, আর সেটি হলো পুঁজিবাজারকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। আমি ব্রোকারেজ হাউজের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। তাই ব্রোকারেজ হাউজ এবং ডিএসই এই দুই প্রান্তের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকতে হবে।’

ডিএসই চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক বিবেচনায় দেশের পুঁজিবাজার এমন থাকতে পারে না। সকল পক্ষের অংশীদারিত্বমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং যথোপোযুক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের পুঁজিবাজারের পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার। সবার সহযোগিতায় আমরা বাজারের উন্নয়ন করতে চাই। অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, পুঁজিবাজার পিছিয়ে থাকতে পারে না।’

সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বাজারে বর্তমানে বেশ কিছু সমস্যা কাজ করছে। এরমধ্যে এক্সপোজার লিমিট, মাল্টিপল ট্যাক্স, ফ্লোর প্রাইস, ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে না আসা ইত্যাদি বিষয় অন্যতম। আমরা আশা করি, বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সব রেগুলেটর সমন্বয়ের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে একসাথে কাজ করবে। আমাদের সহযোগিতা সবসময় আপনাদের সঙ্গে থাকবে।’

বিষয়:

কর আহরণ কাযক্রমে সংস্কার দরকার: এডিমন গিন্টিং 

এডিমন গিন্টিং। ফাইল ছবি
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ২০:১৮
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং মনে করেন বাংলাদেশ যে হারে কর আহরণ করছে সেটা যথেষ্ঠ নয়। কর আহরণ কার্যক্রমে সংস্কার দরকার।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এডিমন গিন্টিং বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সবসময়ই সহায়তা দিচ্ছি। তবে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। বিশেষ করে আয়কর অধ্যাদেশ সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়া হবে।’

পাঁচ প্রকল্পে ২৩ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি

বৈঠক শেষে জানানো হয় বাংলাদেশকে ৫ প্রকল্পে ২৩ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। গত বুধবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল।

এডিমন গিন্টিং বৃহস্পতিবার আরও বলেন,‘ বাজেট সহায়তার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। অভ্যরন্তীণ তৎপরতা অব্যাহত আছে। আশা করি দদ্রুত হবে। ৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দ্রুত হলে আমরা চুক্তির কার্যক্রম শুরু করতে পারি।’

বৈঠক শেষে পরিকল্পামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রেল উন্নয়ন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত টিউবওয়েল সংস্কার করে খাবার পানি নিশ্চয়তা দেওয়াসহ মোট ৫টি প্রকল্প তৈরি আছে। এখন আমার দায়িত্ব হলো এসব প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন করিয়ে দেয়া। এরপরই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চুক্তির বিষয়গুলো চুড়ান্ত করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা নিজেরাই সংস্কার করছি। কোন সময় বন্ধুদের পরামর্শেও সংস্কার করা হয়। সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদেও আয়ের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে।


শেয়ারবাজারে সূচকের সঙ্গে লেনদেনের উত্থান

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৫০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৬৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৮২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার।

এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২০৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৩২ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৭৯টি এবং কমেছে ৪৫টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৯৫টির।

লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিক হোটেল ৪১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ৩৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা, জেনেক্স ইনফোসিস ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচ ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, আমরা নেটওয়ার্ক ১৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, এডিএন টেলিকম ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস বুধবার ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১২৭টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৪৪টি, কমেছে ২৩টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৬০টির।


দেশে বেকারত্বের হার কমেছে

ফাইল ছবি
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৬:৫৪
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ। ৫ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সাল শেষে দেশে এ সংখ্যা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। এই ৫ বছরে দেশে ৯৯ লাখ ৮০ হাজার নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যেখানে এই সংখ্যক মানুষ এসব কাজে যুক্ত হয়েছেন। এই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে নতুন করে ২০ লাখ মানুষের চাকরি হয়েছে। পাশাপাশি বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে ‘শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২’-এর সাময়িক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রাথমিক এই জরিপের ফলাফল পরে পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানানো হয়।প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২-এর প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান।

৫ বছরে দেশে শ্রমশক্তি বেড়েছে ১ কোটি

শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২২ সালে বাংলাদেশে কর্মরত জনবল ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। ২০১৬-২০১৭-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত জনবল ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ছিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ আর নারী ২ কোটি।

৫ বছর পর পুরুষ শ্রমশক্তি দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার। আর নারী শ্রমশক্তি ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার। সেই হিসাবে দেশে গত ৫ বছরে শ্রমশক্তি বেড়েছে ৯৯ লাখ ১০ হাজার জন। এই শ্রমশক্তি গণনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ও তার ওপরের জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

৫ বছরে ১ কোটি মানুষ নতুন চাকরি পেয়েছে

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে কর্মরত জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ। যার মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ২২ লাখ এবং নারী ১ কোটি ৮৬ লাখ।

৫ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সাল শেষে দেশে কর্মরত জনসংখ্যা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার পুরুষ, আর নারী ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার। এই ৫ বছরে দেশে ৯৯ লাখ ৮০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।

সপ্তাহে যারা এক ঘণ্টা কাজ করেছেন, তাদের কর্মরত ধরা হয়েছে। যারা বাসায় ২টি মুরগি পালন করেছেন তাদেরও কর্মরত ধরা হয়েছে।

দেশে বেকারত্বের হার কমেছে

২০২২ সালের জরিপে উঠে এসেছে দেশে বেকার জনবলের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। যার মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার পুরুষ আর ৯ লাখ ৪০ হাজার নারী। এই সময় বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে দেশে বেকার জনবলের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। যার মধ্যে ১৪ লাখ পুরুষ আর ১৩ লাখ নারী।

সবচেয়ে বেশি মানুষ কৃষি খাতে কাজ করে

২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, বাংলাদেশে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ৩ কোটি ২২ লাখ শ্রমিক কৃষি খাতে কাজ করেন। শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার আর সেবা খাতে কাজ করেন ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।

৫ বছর আগে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ২ কোটি ৪৭ লাখ শ্রমিক কৃষি খাতে কাজ করতেন।

বেকারত্বের হার কমা আর কৃষি খাতে শ্রমিক বাড়া নিয়ে প্রশ্ন

একদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ, অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। দেশ যখন অর্থনৈতিক চাপে আছে, সেই সময় বেকারত্বের হার কমা কতটা বাস্তবসম্মত- এই প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা এর আগে ঢাকার মধ্যে জরিপ করে দেখেছিলাম। করোনার মধ্যে ঢাকায় দ্রারিদ্র্যের হার কমেছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকার খুব দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে লকডাউন উঠিয়ে দেয়। তারপর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস চাকরিতে প্রভাব ফেলেনি। এ ছাড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্য পরিবর্তন হতে পারে।’

উন্নত অর্থনীতিতে কৃষি খাত থেকে শ্রমিক কমে সেবা খাতে বা শিল্প খাতে যায়, বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে কেন- এই প্রশ্নও ওঠে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এর উত্তরে বলেন, ‘আমি মনে করি এই কৃষিতে বাড়তি শ্রমিক এটা সাময়িক, এটা আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমি বলেছি প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করতে। মূল গবেষণায় তথ্য অন্য রকম আসতে পারে।’

জরিপের আওতা

এই জরিপ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এই জরিপ করার জন্য পুরো দেশকে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক গণনা এলাকায় ভাগ করা হয়। প্রতি এলাকা থেকে ২৪টি খানা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি তিন মাসে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা আর সারা বছরে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে তথ্য নেয়া হয়।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর এই জরিপ চালানো হয়।


বড়রা গিলে ফেলছে ছোটদের

আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৩৭
আরিফুজ্জামান তুহিন ও বীর সাহাবী

পাঁচ মাস ধরে উৎপাদনের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছেন খামারিরা। লোকসান দিয়ে বিক্রি করায় ছোট ও মধ্যম মানের খামারিদের বড় অংশ পথে বসে গেছেন, অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ হওয়া খামারিদের সংখ্যা প্রায় ৬৩ হাজার, যা মোট খামারের ৪০ শতাংশ। এতে দৈনিক চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ২০ শতাংশ বড় ফারাক হওয়ায় বাজারে ১৫০ থেকে প্রায় পৌনে তিন শ টাকায় গিয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম পৌঁছায়। বড় অঙ্কের লাভ করে এই খাতের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে মুরগি বিক্রি শুরু করেছে। এতে ছোট খামারিরা ফের লোকসানের মুখে পড়েছেন।

বর্তমানে প্রতিটি মুরগির উৎপাদন ব্যয় থেকে খামারিরা ১ টাকা লোকসান দিচ্ছেন। এতে আগামী তিন মাসের মধ্যে ছোট ও মাঝারি খামারিদের একটি অংশ ক্রমাগত লোকসানে পড়ে প্রতিযোগিতা থেকে হারিয়ে যাবেন। তখন চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের মধ্যে ফারাক তৈরি হবে। ডিমের দাম এ সময় দ্বিগুণ হতে পারে।

উৎপাদন খরচের কমে মুরগির দাম বাড়ানোর বিষয়টি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মিলগেটে ১৯৫ টাকায় বিক্রির আশ্বাস দিলেও গত মঙ্গলবার মিলগেটে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫৩-১৫৫ টাকায়। এখন এই দু-এক দিনের ব্যবধানে তারা কীভাবে ১৯৫ থেকে ১৫৫ টাকায় নেমে এল? এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা নীল নকশা করে ব্রয়লারের দাম বাড়িয়েছে সাধারণ পোলট্রি ব্যবসায়ীদের পথে বসিয়ে দেয়ার জন্য।

কম দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি

পাঁচ মাস আগে প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন ব্যয় ছিল ১৩৫ টাকা। এ সময় খামারিরা প্রতি কেজি পাইকারি ব্রয়লার মুরগির দাম পেয়েছেন ১১৫ টাকা। কেজিতে এ সময় প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে ২০ টাকা কমে বিক্রি করেছেন খামারিরা।

পাঁচ মাস আগে সপ্তাহে মুরগির উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৭২ লাখ পিস বা ২৯ হাজার টনের কিছু বেশি। প্রতিদিন এ সময় মুরগির জোগান ছিল গড়ে ৪ হাজার ১৭৭ টন। এ সময় খামারিরা পাইকারি মুরগি গড়ে বিক্রি করেছেন ১১৫ টাকায়, আর তা খোলাবাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত বদল হয়ে দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকায়।

টানা লোকসানের ধকল টানতে না পেরে মধ্য ও ছোট খামারিদের ৪০ শতাংশই বন্ধ করে দিয়েছে বলে ফিডমিল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য। পাঁচ মাস আগেও দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে খামারি ছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯, বর্তমানে সেখানে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার চালু আছে। উৎপাদনের ১০ শতাংশ আসে দেশের ১০টি বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে। দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুরগি উৎপাদন যারা করে তাদের মধ্যে সিপি, সুগনা, আফতাব, কাজী, আলাল, নাহারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯০ শতাংশ মুরগির জোগান আসে দেড় লাখের বেশি ছোট ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে। বর্তমানে সপ্তাহে মুরগি উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪২ লাখ বা ২৪ হাজার টনের কিছু বেশি। দৈনিক মুরগির জোগান রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টন। অথচ এই সময় দৈনিক প্রায় ৪ হাজার টন মুরগির চাহিদা রয়েছে, চাহিদার মধ্যে দৈনিক ৫০০ টনের ঘাটতি থাকায় মুরগির দাম বেড়ে যায়।

খামারিরা বলছেন, মুরগি ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি খামারে রাখা যায় না। কারণ এরপর মুরগির বৃদ্ধি হয় না, কিন্তু খাবার খাওয়া ও দেয়া অব্যাহত থাকে। ফলে ব্রয়লার মুরগি সর্বোচ্চ ৩৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করে ফেলতে হয়, এটি সংরক্ষণ করে রাখারও সুযোগ নেই। খামারির লাভ হোক আর লোকসান হোক, ৩৫ দিনের মধ্যে মুরগি বিক্রি করতেই হয়। আর সেই সুযোগটিই নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা।

মুরগির দাম বাড়ায় সারা দেশে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। তবে মুরগির দাম বাড়ানোর পেছনে বড় দায় মধ্যস্বত্বভোগীদের। ৩০ থেকে ৩৫ দিন মুরগি পেলে কেজিপ্রতি ২০ টাকা লাভ করা কঠিন হয়ে যায় খামারিদের।

ফের বিপাকে পড়েছেন খামারিরা

গত এক বছরে মুরগির খাবার বা ফিডের দাম গড়ে ৭০ শতাশ বেড়েছে। কিন্তু এই সময় মুরগির মাংসের দাম বাড়েনি। প্রতি কেজি পোলট্রি মুরগির উৎপাদন ব্যয় এখন ১৬৫ টাকা। এর নিচে মুরগি বিক্রি করলে নিট লোকসানে পড়বেন খামারিরা। গত সপ্তাহের আগে খামারিরা গড়ে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন পাইকারি মুরগি। সেই মুরগি মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত ঘুরে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে গিয়ে দাম পড়ে প্রায় ৩০০ টাকা। কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা লাভ করে খামারিরা আগের লোকসান কাটিয়ে উঠছিলেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পোলট্রি মুরগির দাম নিয়ে এ খাতের বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর বড় করপোরেট ব্যবসায়ীরা ১৫০ টাকায় মুরগি বিক্রি শুরু করলে ফের লোকসানে পড়া শুরু করেন দেশের ৯০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি খামারি।

গত ২৭ মার্চ গাজীপুরে ১৫০ টাকা, চট্টগ্রামে ১৫৫, বরিশালে ১৮০, ময়মনসিংহে ১৫০, ফরিদপুরে ১৫০, বগুড়ায় ১৬০, ঢাকায় ১৬০ টাকা দামে প্রতি কেজি পাইকারি মুরগি বিক্রি হয়েছে। এতে খামারিরা ফের লোকসানে পড়েছেন। ঢাকায় মুরগি আসে গাজীপুর থেকে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ব্রয়লারের দাম কমার কারণ হচ্ছে এতদিন প্রান্তিক খামারিদের পণ্য ছিল না। এখন যখন প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে ফিরলেন, তখন ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বাচ্চারও দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক খামারিরা তারপরও উৎপাদনে এসেছেন। ঠিক এই মুহূর্তে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে করপোরেটরা এখন কম দামে বিক্রি করা শুরু করেছে।

ডিমে লোকসান করছেন খামারিরা

স্থানভেদে বর্তমানে প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে প্রকৃত ব্যয় ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৭০ পয়সা। আর গতকাল বুধবার প্রতি পিস ডিম পাইকারি বাজারে গাজীপুরে ৮ টাকা ৯০ পয়সা, রাজশাহীতে ৮ টাকা ৫০ পয়সা, খুলনা ৯ টাকা ৫০ পয়সা, বরিশালে ৯ টাকা ৪০ পয়সা, ময়মনসিংহ ৮ টাকা ৯০ পয়সা, সিলেটে ৯ টাকা ৭০ পয়সা, রংপুরে ৯ টাকা ও বগুড়া ৮ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস ডিম বিক্রি করে খামারিরা লোকসান করছেন ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত। গাজীপুর থেকে কিনে আনা ডিম ঢাকায় আসার পর প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একটি মুরগি ৫২ সপ্তাহ ধরে বড় হওয়ার পর ডিম পাড়া শুরু করে। পেলে-পুষে ৫২ সপ্তাহ বড় করার পর খামারিরা প্রতি পিস ডিমে ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত যখন লোকসান করছেন, ঠিক তখন ঢাকার মধ্যস্বত্বভোগী দোকানিরা প্রতি পিস ডিমে ১ টাকা ৮০ পয়সা লাভ করছেন।

পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে ১৮ হাজারের মতো খামার আছে। এই খামারের দৈনিক ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা ৬ কোটি ৬৫ লাখ। বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ডিম। ডিম উৎপাদনক্ষমতা থেকে ২৫ শতাংশ কম ডিম উৎপাদন করছেন খামারিরা। লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে বহু খামারি পথে বসে যাবেন। তখন চাহিদার চেয়ে কম ডিম উৎপাদন হবে। আর এই সুযোগেই বড় করপোরেট ডিম উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা রাতারাতি ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।

১৮ হাজার খামারির মধ্যে ৯০ শতাংশ ডিম আসে ছোট ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে। বাকি ১০ শতাংশ ডিম আসে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ডায়মন্ড এগ, কাজী ফার্মস, আফতাব, প্যারাগান, সিপি অন্যতম।

যেখানে নজর দিতে হবে

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামারিদের কাছ থেকে মুরগি বা ডিম কেনার কোনো সময় পাকা মেমো দেয়া হয় না। ফলে সরকারের কোনো নজরদারি সংস্থার পক্ষে মুরগি ও ডিমের প্রকৃত ক্রয়মূল্য বের করা সম্ভব না। মেমো ছাড়া কেউ মুরগি ও ডিম খামারিদের কাছ থেকে কিনতে পারবে না- এমন ব্যবস্থা সরকার করে দিলে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মুরগি, মাছ ও গোখাদ্যের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ

গত এক বছরে মাছ, মুরগি ও গোখাদ্যের দাম বেড়েছে গড়ে ৭০ শতাংশ। পোলট্রি মুরগি ও ডিম উৎপাদনের জন্য মুরগির (লেয়ার) খাদ্য উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল ছয়টি। মাছের খাদ্য উৎপাদনে প্রধান কাঁচামাল ১০টি ও গোখাদ্যের প্রধান কাঁচামাল ৭টি। এসবের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, সয়াবিন, রাইস পলিস, তেল, ডিওআরবি, মেজ গ্লুটেন, রেপসিড, ফিশ মিল, ফিশ অয়েল, চিটাগুড় (মোলাসেস) উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসও রয়েছে, যার বেশির ভাগই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। সব মিলিয়ে আমদানির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে।

বাজারের তথ্য বলছে, মুরগি ও গোখাদ্যের প্রধান উপাদান ভুট্টার প্রতি কেজি দাম ২০২০ সালের জুলাইয়ে ছিল ১৭ টাকা ৩০ পয়সা, সেটি ২০২১ সালের জুলাইয়ে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সা আর গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ টাকা। এক ভুট্টার দামই বেড়েছে ১৩১ দশমিক ২১ শতাংশ। সয়াবিন অয়েল কেক প্রতি কেজি ২০২০ সালের জুলাইয়ে ছিল ৩৮ টাকা, সেটি ২০২১ সালের জুলাইয়ে ৪৪ টাকা ৫৪ পয়সা আর গত ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ টাকা। সয়াবিন অয়েল কেকের দাম বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এভাবে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও গমের আটা ১৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, মুরগি ও গোখাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ধেক আমদানি করতে হয়। ডলারের দাম ২৭ শতাংশ বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করার পর শুধু ডলারের দামের ব্যবধানে ২৭ শতাংশ দাম বেড়ে যাচ্ছে। এরপর রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম। গত এক বছরে ফিডের দাম অন্তত ৭০ শতাংশ বেড়েছে। আর সব গিয়ে পড়েছে খামারিদের উৎপাদকের ওপর। ডিম ও মুরগির যথাযথ দাম খামারিরা না পেলে খামার বন্ধ হয়ে যাবে, তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।

তিনি বলেন, মুরগি ও ডিম যখন পাইকাররা কেনেন, তখন তারা খামারিদের কোনো পাকা রসিদ দেন না। কেনাবেচায় পাকা রসিদ নিশ্চিত করা গেলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। ৫২ সপ্তাহ মুরগি পেলে ডিম উৎপাদন করে খামারিরা প্রতি ডিমে লোকসান দেবেন গড়ে দেড় টাকা আবার পোলট্রি মুরগির কেজিতে দেবেন ১০ থেকে ২০ টাকা। আর সেই মুরগি ও ডিম দোকানে তুলে এক দিনের মাথায় মধ্যস্বত্বভোগীরা অযৌক্তিক বেশি মুনাফা করবেন- এটা হতে পারে না।


আবার সেরা হবে জনতা ব্যাংক

মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৭:০২
আবদুর রহিম হারমাছি ও এ এস এম সাদ

একসময় দেশের সেরা ব্যাংক ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। কিন্তু নানা ঝামেলায় সেই সাফল্যে ভাটা পড়েছিল। সুখবর হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়িয়েছে জনতা ব্যাংক। আবার দেশের সেরা ব্যাংক হতে চলেছে জনতা ব্যাংক। কীভাবে সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে, সেসব বিষয় নিয়ে দৈনিক বাংলায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি ও প্রতিবেদক এ এস এম সাদ

দৈনিক বাংলা: জনতা ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা কী?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: আগের সব সংকট অতিক্রম করে জনতা ব্যাংকের সব সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, এসএমই প্রকল্প, কৃষিঋণ বিতরণসহ ব্যাংকিং খাতের প্রায় সব মাপকাঠিতে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমছে। এই বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি এটা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি অনুসরণ করে এননটেক্স, ক্রিসেন্ট লেদারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

দৈনিক বাংলা: এননটেক্স গ্রুপের ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এই গ্রুপের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: এননটেক্স গ্রুপ উৎপাদনমুখী একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। তাই নিয়ম মেনেই এই প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণ করেছে জনতা ব্যাংক। তবে একটা সময় নানা রকমের সমস্যার কারণে এননটেক্স গ্রুপ খেলাপি হয়ে পড়ে। খেলাপির সঙ্গে সুদের পরিমাণও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে ৩ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা সুদ উঠে যায়। গত বছর সুদ আরোপের ফলে পাওনা দাঁড়ায় ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল থেকে কোম্পানিটি রিস্ট্রাকচার শুরু করে। এরপর ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে পুনঃতফসিল প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে এননটেক্স ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগের সার্কুলার অনুসরণ করে সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে এননটেক্সের কাছ থেকে নগদ ২ শতাংশ বা ১৪২ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট নিয়ে সুদ মওকুফ করা হয়।

এননটেক্স গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে বড় পরিমাণের ঋণ দেয়া হয়েছে। খেলাপি হওয়ায় গ্রুপটির মালিক এই দায় থেকে বের হতে চাইছিল। তাই তিনি জনতা ব্যাংককে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে কিংবা হস্তান্তর করে ঋণ পরিশোধ করবেন তিনি। সে জন্য ১৪২ কোটি টাকা নগদ আদায় করে সুদ মওকুফ করা হয়েছে। ফলে জুন পর্যন্ত বাকি টাকা পরিশোধের সময় দেয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড ৬ দশমিক ৩৪। ফলে ব্যাংকটির কোনো লোকসান হয়নি।

দৈনিক বাংলা: এননটেক্স গ্রুপের ঋণটি আদায় হলে জনতা ব্যাংকের কী ধরনের সুবিধা হবে?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: এননটেক্সকে যে পরিমাণ অর্থঋণ দেয়া হয়েছে তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এই ঋণের ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকের বাইরে রয়েছে। অর্থের দিক বিবেচনা করলে এটি বড় রকমের ঋণের পাওনা রয়েছে। তাই এই টাকা আদায় করলে জনতা ব্যাংকের তারল্য অনেক বেড়ে যাবে এবং সার্বিক দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান শক্তিশালী হবে। বিশাল পরিমাণের অর্থ ব্যাংক ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত আসার জন্যই এসব প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। বাকি টাকা আদায় করতে পারলে জনতা ব্যাংক এ বছর শেষে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে। জনতা ব্যাংকের অবস্থান আরও ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন ঘটবে। ফলে জনতা ব্যাংক শ্রেষ্ঠ ব্যাংকে পরিণত হবে। কারণ নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমাণে কস্ট অব ফান্ডে করা সম্ভব হয়েছে। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকের নেগেটিভ অ্যাসেটও কমেছে। এ ছাড়া সুদ মওকুফ একটা চিরাচরিত নিয়ম।

দৈনিক বাংলা: দেশের ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: সত্যি কথা বলতে কী, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বর্তমানে দেশের পুরো ব্যাংকিং খাত খারাপ অবস্থানে রয়েছে। ফলে ব্যাংকের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থায় নানা রকমের সংস্কার করতে বলেছে। তাই জনতা ব্যাংক সব দিক বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। এখন আমাদের ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের ১৭ শতাংশ খেলাপি; টাকার অঙ্কে যা ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একটা সময় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপির শীর্ষে থাকলেও বর্তমানে দ্বিতীয়তে জনতা ব্যাংক। ফলে জনতা ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

একটা সময় দেশের বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। নানা সময়ে সেগুলো খেলাপি হয়ে গেছে। চলতি বছর এই খেলাপি ঋণের অর্ধেক আদায় করা হবে। ফলে ২০২৩ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই ব্যাংকটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।

আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে, অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় জনতা ব্যাংকের অবলোপন বা রাইট অব ঋণের পরিমাণ কম। জনতার অবলোপন ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে বড় রকমের কোনো খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়নি। কিছু ক্ষুদ্র কৃষিঋণ ছাড়া বাকি ঋণ অবলোপন করা হয়নি। ফলে দেশের তিনটি বৃহৎ ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকের অবলোপন ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে কম। ফলে মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বড় ঋণগুলো অবলোপন করলে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে যেত।

দৈনিক বাংলা: বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এর প্রভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জনতা ব্যাংকের আমানতের কী অবস্থা?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: এখানেও আমি ভালো তথ্য দিতে চাই। অন্যান্য ব্যাংকের আমানত বা ডিপোজিট কমলেও জনতা ব্যাংকের আমানত বাড়ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১২ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে এবং সরকারি এলসি খোলা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো জনতা ব্যাংকে এলসি খুলেছে। স্কয়ার, নাসা, বেক্সিমকো, ওরিয়নসহ দেশে যত বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে সব কোম্পানির ঋণপত্র বা এলসি খোলে জনতা ব্যাংকে।

গত বছর ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করেছে জনতা ব্যাংক। আবার ২০২১-এর চেয়ে ২০২২ সালের নিট মুনাফা ৪০০ কোটি টাকা বেড়েছে। একই সময়ে নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ৫০৭ কোটি টাকার বেশি। নতুন আটটি শাখা চালু হয়েছে। ২০২১ সালে অ্যাসেট ছিল ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা।

প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রেও বড় সাফল্য দেখিয়ে চলেছে জনতা ব্যাংক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৪২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী ভাইবোনেরা। চলতি মার্চ মাসের আরও বেড়েছে। ২৩ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ৬৬ মিলিয়ন ডলার। আশা করছি মাস শেষে এটি ৮০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। ফলে সার্বিকভাবে বলতে চাই, জনতা ব্যাংকের অবস্থা ও অবস্থান ভালোর দিকে যাচ্ছে। দিন যত যাবে, ব্যাংকের তত উন্নতি হবে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। একটা কথা আমি বলতে চাই, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই দেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটিয়েছি। জনতা ব্যাংককে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমার একটি চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করছি।

দৈনিক বাংলা: এননটেক্স ছাড়াও ক্রিসেন্ট গ্রুপসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনতা ব্যাংকের মোটা অঙ্কের খেলাপি ঋণ রয়েছে। সেগুলোর কী অবস্থা?

আব্দুছ ছালাম আজাদ: ক্রিসেন্টের ৭০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে এ গ্রুপের মাধ্যমে পাওনা টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে আদায় করা হবে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবিধান মেনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে অব্যাহত থাকলে জনতা ব্যাংকের অবস্থান ২০১০ সালের আগে যে রকম ছিল সেই অবস্থানে ফিরে যাবে। জনতা ব্যাংক শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, সাব-কন্টিনেন্টের মধ্যে একটি শক্তিশালী ব্যাংকে পরিণত হবে।


সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে ৩৫% পরিবার

রাজধানীর ব্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩০ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৩৯
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। বাজারের আগুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি চড়ছে; উঠেছে প্রায় ৯ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির এই চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের এক জরিপে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি।

দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

সানেমের জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের বেশির ভাগ কোনো না কোনো অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। তাদের মাসিক আয় ১৪ হাজার টাকার বেশি নয়। তাদের ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ ওএমএস ও টিসিবির তালিকাভুক্ত এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সুবিধাভোগী।

বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘কেমন আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ?’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল এবং গরিব মানুষের আয়-ব্যয় চিত্র তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি গরিবদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা জানতে গত ৯ থেকে ১৮ মার্চ সারা দেশে আটটি বিভাগের প্রতিটিতে ২০০ জন করে মোট ১ হাজার ৬০০ নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

জরিপে অংশ নেয়াদের অর্ধেক বাস করেন বিভাগীয় শহরে, বাকিরা উপজেলা শহরের আশপাশে। এদের মধ্যে ৪৫৬ জন সরকারের খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রি কর্মসূচি ওএমএস ও ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির সুবিধাভোগী। বাকিদের সবাই অন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সরকারের কাছ থেকে নগদ টাকা পান।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এই ছয় মাসের তথ্য নেয়া হয়েছে। সানেম বলছে, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে না কমেছে, তা তুলে ধরার জন্য এই জরিপ করা হয়নি। জরিপ করা হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের সামনে নিয়ে আসার জন্য।

সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বাড়তে থাকায় গত ছয় মাসে যে ৭৪ শতাংশ পরিবার ধার করে চলেছে, তাদের ধার করা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ হবে, এমন পরিস্থিতি এখনো আসেনি। বরং পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে যে, আগামী ছয় মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে। জরিপ বলছে, ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে, আর সঞ্চয় বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার।

গত ছয় মাসে ধারের উৎস হিসেবে ৪৫ শতাংশ পরিবার বেছে নিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণের প্রতিষ্ঠান। সানেম মনে করে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ সুদের দুষ্টচক্রে পড়ে এবং পরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। ধার করার জন্য আরও অনেক পথ খুঁজছে মানুষ। এর মধ্যে ৩৭ শতাংশ পরিবার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সমবায় সমিতি থেকে ধার করছে ২৩ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ব্যাংক ও মহাজনি ঋণ নিয়েছে যথাক্রমে ১৪ ও ৩ শতাংশ পরিবার।

সানেম বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেয়া ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবারে মাসে চারবার মুরগি খেত, এখন তারা দুইবার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।

খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং সেবায়ও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জরিপের তথ্য বলছে, শহরের নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্য কিনতে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের পরিবারগুলো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে খরচ কমিয়েছে বেশি।

সানেমের জরিপে উঠে এসেছে, ঘরে খাবার আছে কি না, তা নিয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারে আগের তুলনায় উদ্বেগ বেড়েছে। ফলে খাবারে বৈচিত্র্য কমেছে। খাদ্যতালিকায় থাকছে মাত্র কয়েকটি পদ। ৩৭ শতাংশ পরিবার বলেছে, তাদের এখন মাঝেমধ্যে কোনো একবেলা খাবার না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় খাবার কম খাচ্ছে বলে মনে করে ৭১ শতাংশ পরিবার।

জরিপকারীদের কাছে ১৮ শতাংশ পরিবারের লোকজন দাবি করেছেন যে, এই ছয় মাসে এমন কিছুদিন গেছে, যেদিন তাদের পুরো দিনও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। খাবারের গুণগত মানেও ছাড় দিতে হচ্ছে এসব মানুষের। যার কারণে আগের থেকে কম দামি মাছ-মাংস খেতে হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার ভয় বেশি শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারে।

জরিপে অংশ নেয়া ৫৬ শতাংশ পরিবার মনে করে, আগামী ছয় মাসে তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। ৪১ শতাংশ পরিবার এটাও বলছে, ভবিষ্যতে তাদের ভিক্ষা বা শর্তহীন সাহায্য নিয়ে চলতে হতে পারে। টিকে থাকার জন্য শহর থেকে গ্রামে যেতে চায় বেশির ভাগ মানুষ। বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশ মানুষ বলেছেন, সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সানেম বলছে, ময়মনসিংহ, উত্তরাঞ্চল ও সিলেটের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার ভয় বেশি।

সানেম আরও বলছে, খাবার জোগাড় করতে জমি বিক্রি করে চলতে হতে পারে বলে মনে করে ১৭ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার। অবস্থা সামাল দিতে ভবিষ্যতে ঘরের শিশুদের শ্রমে নিযুক্ত করতে হতে পারে বলে ১৯ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসায় ২৪ শতাংশ পরিবার মনে করে ব্যয় কমাতে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করতে হতে পারে। মেয়ে-সন্তানকে দ্রুত বিয়ে দেয়ার কথাও বলছেন অনেকে। ২৫ শতাংশ পরিবার মনে করে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের হাতে এখন আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই। তারা এখন নিরুপায়।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সানেম মনে করে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য আমদানিতে আরও বেশি কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বাজার তদারকিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রয়োজনে ব্যবসায়ী সংগঠনদের সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। এ ছাড়া বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে জানায় সানেম।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে, তার জন্য জরিপ না করেও বলে দেয়া সম্ভব, তারা কেমন আছে। এ জন্য এই জরিপে যা উঠে এসেছে, তা হয়তো অনেকের জানা। তবে নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য পেশাগত দায়িত্বের মধ্য দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ যে চাপে আছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘এই জরিপে দেশের সব নিম্ন আয়ের মানুষের চিত্র পুরোপুরি উঠে এসেছে কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে, এমনটা বলা না গেলেও সামগ্রিক অবস্থার একটা ধারণা অন্তত পাওয়া সম্ভব। সানেমের আরও গবেষণা আছে, যেখানে দেখা গেছে সরকারি মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান যা বলে, নিম্ন আয়ের মানুষ তার চেয়ে বেশি চাপ অনুভব করে। সুতরাং বর্তমান বাজারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরতে আমরা জরিপটি করেছি।’

জরিপের বিষয়ে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘ঋণ নেয়াকে অনেকে উদ্ধার পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়েছেন। তবে এসব ঋণে সুদের হার অনেক বেশি। ফলে সুদের দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়তে পারে এসব মানুষ। বিষয়টি এসব মানুষকে ভবিষ্যতে আরও ভোগাবে। আমাদের দেশে বিমা সুবিধা কম, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো বিষয়ে এসব মানুষ বিনিয়োগ কম করবে। সার্বিকভাবে এসব বিষয় এসডিজির লক্ষ্য অর্জন থেকে পিছিয়ে দেবে। বিষয়টি নিয়ে এখনই নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।’


banner close