রোজার মাসে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলবে। এ সময়ে ক্লিয়ারিং হাউজে লেনদেনে আন্তঃব্যাংকের চেক নিষ্পত্তির নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস), স্বয়ংক্রিয় চেক নিকাশ ঘর (বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ-বিএসিএইচ বা ব্যাচ) এবং বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন)-এ তিন প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রমের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব সেবার মাধ্যমে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বা অন্য ব্যাংকের গ্রাহককে অর্থ পরিশোধ ও স্বয়ংক্রিয় চেক নিষ্পত্তি করে থাকে।
বিএসিএইচ-এর মাধ্যমে হাই ভ্যালু চেক (৫ লাখ টাকার বেশি) এবং রেগুলার ভ্যালু চেক (৫ লাখ টাকার কম) নিকাশ ব্যবস্থা নিষ্পত্তি করা হয়। রমজান মাসে হাই ভ্যালুর চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য বেলা ১১টার মধ্যে পাঠাতে হবে। এগুলো দুপুর দেড়টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। আর যেকোনো রেগুলার ভ্যালুর চেক বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ক্লিয়ারিং হাউজে পাঠাতে হবে। এসব চেক বিকেল ৩টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে।
আরটিজিএস-এর লেনদেন হবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। তবে গ্রাহক লেনদেন করতে পারবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, কাস্টমস ডিউটি ই-পেমেন্ট বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এবং আন্তঃব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার ও রিটার্ন লেনদেন আরটিজিএস-এর মাধ্যমে বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পরিশোধ করা যাবে।
প্রযুক্তির সাম্প্রতিক উদ্ভাবন, তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের সক্ষমতা, সাফল্য ও সম্ভাবনা দেশ এবং বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা, উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্দেশে দেশে আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২৬।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
‘বাংলাদেশ টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী যৌথভাবে আয়োজন করবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। যা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশের মানুষেরও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এটা প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিবাচক দিক। যেকোনো দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তর একটা চলমান প্রক্রিয়া। সে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অনেকটা এগিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সেই ডিজিটাল রূপান্তরের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেন, এবারের এক্সপোতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ টু দ্য গ্লোবাল’ ধারণার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ও গবেষণার সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চাই।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘এবারের আয়োজনে আমরা ৩
লাখ দর্শনার্থীর প্রত্যাশা করছি।’
তিনি জানান, স্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ কোম্পানি, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন থাকছে এই প্রদর্শনীতে। সে সঙ্গে থাকছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বিভিন্ন সেমিনার, প্যানেল আলোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণী আলোচনা।
সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রদর্শনীর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম, সেলিব্রেটি, হারমনি, কার্নিভাল, মিল্কিওয়ে, মিডিয়া বাজার, উইন্ডি টাউনসহ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের প্রায় ৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
প্রদর্শনীটি কয়েকটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- লোকাল ম্যানুফ্যাকচারার্স, প্রোডাক্ট শোকেস, ইনোভেশন, মিট উইথ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার্স, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, মেগা সেলস, সেমিনার, বিটুবি ম্যাচমেকিং।
দেশিয় ও আন্তর্জাতিক শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তর এ প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে।
এতে স্থানীয় ডিজিটাল পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ও সার্ভিস প্রোভাইডারস, স্থানীয় উদ্ভাবনী প্রদর্শক, আন্তর্জাতিক বিখ্যাত ব্রান্ড, কম্পিউটার গেমিং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, হার্ডওয়্যার খাতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, ওইম (অরিজিনাল ইকুয়েপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস) এবং সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।
প্রদর্শনীতে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন সব পণ্য, সেবা, জীবনশৈলী ও ধারণা উপস্থাপন করবে এসব প্রতিষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তির সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচি এবং উদ্যোগগুলোও উপস্থাপন করা হবে। ১৩০টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলে এসব প্রদর্শন করা হবে।
প্রদর্শনীতে যৌথভাবে সহযোগিতা করবে আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্প, ডিপার্টমেন্ট অব আইসিটি, ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি (এনসিএসএ), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রত্যয়নকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ (সিসিএ)।
সহযোগিতায় থাকবে বাংলাদেশ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এবং টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।
তালেবান সরকার তিন বছর আগে আফিম উৎপাদনের জন্য পপি চাষ নিষিদ্ধ করার পর থেকে উত্তর আফগানিস্তানের কৃষকেরা এখনো তাদের হারানো আয় পুনরুদ্ধার করতে পারেননি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
কাবুল থেকে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি)’র বরাত দিয়ে এএফপি সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) জানায়, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে চলতি বছরে আফগানিস্তানে পপি চাষের পরিমাণ কমে মাত্র ১০ হাজার ২০০ হেক্টরে (২৫ হাজার ২০০ একর) নেমে এসেছে, যা দেশটির ইতিহাসে ‘এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত সর্বনিম্ন মাত্রাগুলোর একটি’।
তবে এর ফলে পপি চাষের ভৌগোলিক অবস্থানেও পরিবর্তন এসেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী উৎপাদন এলাকা থেকে চাষ সরে গিয়ে তালেবান কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলকভাবে কম এমন উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বিস্তার লাভ করেছে।
সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অসুযায়ী তাজিকিস্তান সীমান্তবর্তী বাদাখশান প্রদেশে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পপি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই প্রদেশসহ পার্শ্ববর্তী কুন্দুজ ও বালখে ‘গড়ে ৮৫ শতাংশ পরিবার পপি চাষ বন্ধ করার পর তাদের আগের আয় পুরোপুরি বা আংশিকভাবেও প্রতিস্থাপন করতে পারেনি’।
অনেক কৃষক এখন গম ও অন্যান্য শস্য চাষে ঝুঁকছেন। তবে ২০২৩ সালে ‘প্রতি হেক্টরে গম চাষ থেকে গড় আয় ছিল মাত্র ৭৭০ ডলার, যেখানে অপিয়াম পপি থেকে আয় হতো প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০ হাজার ডলার’।
ইউএনওডিসির আঞ্চলিক প্রতিনিধি অলিভার স্টলপে বলেন, ‘এই আয়হানি শুধু পরিবার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়; এটি গ্রামীণ ক্রয়ক্ষমতা দুর্বল করছে, স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে দিচ্ছে এবং দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’
সংস্থাটি আফগানিস্তানে জাফরান, বাদাম, ভেষজ উদ্ভিদ এবং খরচ সহনশীল ও উচ্চমূল্যের ফল যেমন এপ্রিকট ও আঙুর চাষে উৎসাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে, যেগুলো শুষ্ক ও উচ্চভূমির পরিবেশের জন্য বেশি উপযোগী।
২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার আগে দীর্ঘদিন ধরে পপি থেকে প্রাপ্ত আয় আফগানিস্তানের অর্থনীতির একটি বড় অংশ ছিল।
গত মাসে ইউএনওডিসি জানায়, চলতি বছরে আফগানিস্তানে অপিয়াম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ২৯৬ টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম।
এতে কৃষকদের অপিয়াম বিক্রি থেকে আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে—২০২৪ সালের ২৬০ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে চলতি বছরে দাঁড়িয়েছে ১৩৪ মিলিয়ন ডলারে।
সরকারের মাদকবিরোধী কার্যক্রমবিষয়ক উপমন্ত্রীালয় এই প্রতিবেদনকে কৃষকদের ‘বাস্তবতা ও প্রকৃত চ্যালেঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন’ বলে স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত এক প্রতিক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ‘টেকসই গ্রামীণ উন্নয়ন এবং মাদক ফসল চাষের ওপর নির্ভরতা কমাতে’ নীতিমালা অনুসরণ করবে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ১৩৩ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণেরও বেশি।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কর্তৃক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ নতুন ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রায় ১২১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।
গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) একই সময়ে প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ৫২ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৫৮ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে। আর বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রায় দুই কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশ ওই চার মাসে সাড়ে ৬২ কোটি ডলার দেবে বলে জানিয়েছে।
তবে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বড় বড় বন্ধুপ্রতিম দেশ কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এই তালিকায় আছে ভারত, চীন, রাশিয়া ও জাপান। এই চারটি দেশ নতুন করে প্রতিশ্রুতি না দিলেও আগে নেওয়া ঋণের অর্থ ছাড় করেছে। এর পাশাপাশি এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকও (এআইআইবি) গত ৫ মাসে ঋণের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
অর্থবছরের পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ ছাড় করেছে রাশিয়া। দেশটি ৫ মাসে দিয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। এরপরে আছে বিশ্বব্যাংক। এই সংস্থা দিয়েছে ৪৩ কোটি ডলার। আর এডিবি দিয়েছে সাড়ে ৩৩ কোটি ডলার। চীন ও ভারত ছাড় করেছে যথাক্রমে সাড়ে ১৯ কোটি ডলার ও ৯ কোটি ডলার। জাপান দিয়েছে সাড়ে ৮ কোটি ডলার।
ইআরডি সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, সরকার পতন, প্রশাসনে অস্থিরতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থার সংকেটর কারণে বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতি কম ছিল। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় প্রতিশ্রুতি আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে।
ইআরডির তথ্যানুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের পরিমাণও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।
ইআরডি সূত্রে আরও জানা গেছে, গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। তবে জুলাই-নভেশ্বর সময়ে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা, প্রায় সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধও করেছে বাংলাদেশ।
এই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে ১৯৪ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে, বিপরীতে বাংলাদেশ প্রায় সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিভিন্ন বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে মূলধন ও সুদ বাবদ বাংলাদেশ পরিশোধ করেছে ১৮৯ কোটি ডলার।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৫ জন নারী-পুরুষ কর্মী বিদেশে গেছেন এবং এ সময়ে তারা দেশে ১৫,৭৯১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,৫৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জনশক্তি রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত এবং সরকার একে থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির বাস্তবধর্মী নীতির মাধ্যমে বিদেশে কর্মী পাঠাতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিদেশে কর্মসংস্থানে গেছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশি, আর ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন, জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৫,৭৯১ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩,৫৪৫ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩০ বিলিয়ন ডলার (৩ হাজার কোটি ডলার) ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬.৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২৪.৮ বিলিয়ন ডলার।
রিক্রুটিং এজেন্ট ও অভিবাসী শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মালয়েশিয়ার মতো কিছু ঐতিহ্যবাহী গন্তব্যে বিদেশে কর্মসংস্থান কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও নতুন গন্তব্য চিহ্নিত করা এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা বাড়ায় সামগ্রিক পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের ব্যবধান কমে আসা এবং মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার কারণে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানায়, গত ১১ মাস ২৮ দিনে কর্মসংস্থানের জন্য ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬১৯ জন বাংলাদেশি সৌদি আরব গেছেন, কাতারে গেছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৮০৫ জন, আর সিঙ্গাপুরে গেছেন ৬৯ হাজার ৪৯১ জন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও আমরা কাজ করছি।’
তিনি জানান, দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীদের জন্য রাশিয়া, ব্রুনাই দারুসসালাম ও পূর্ব ইউরোপসহ কিছু নতুন গন্তব্য দেশ অনুসন্ধান করেছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ২৬,৮৮৯.৫৪ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর সঞ্চিত অর্থই মূলত প্রবাসীরা দেশে পাঠান। তারা আরও বলেন, নার্স, চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ চাহিদাভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, কারণ ভবিষ্যতে বহু দেশে এসব পেশার চাহিদা আরও বাড়বে।
সরকার বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন এবং দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করেছে। এসব প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে—শিপ বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা, রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং, জেনারেল মেকানিক্স, ইলেকট্রিক্যাল মেশিন মেইনটেন্যান্স, অটো ক্যাড ২ডি ও ৩ডি, ওয়েল্ডিং (৬জি), ক্যাটারিং, রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণ এবং কোরিয়ান, আরবি, ক্যান্টনিজ ও জাপানি ভাষা শিক্ষা।
সরকার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিদেশে নথিভুক্ত (ডকুমেন্টেড) কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সূত্র : বাসস
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি এভিটা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে এসে পৌঁছেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে নগদ ক্রয় চুক্তি নম্বর জি টু জি-২ এর অধীনে এই গম আমদানী করা হয়েছে। গতকাল রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সরকার টু সরকার (জি টু জি) ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু করছে।
জি টু জি-২ চুক্তির আওতায় মোট ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে, যার প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন গম এই চালানের মাধ্যমে দেশে পৌঁছেছে।
৫৬ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন গমের মধ্যে ৩৪ হাজার ১৩৪ মেট্রিক টন চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।
উল্লেখ, জি টু জি-১ চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যে মোট ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি হয়েছে। জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রপ্তানি উৎসাহিত করতে সরকারের দেওয়া নগদ সহায়তা আরও অন্তত তিন বছর অব্যাহত রাখার অনুরোধ জনিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের কাছে পাঠানো আলাদা চিঠিতে এই অনুরোধ জানান বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। কেন এই অনুরোধ করা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে বিটিএমএর পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমানের পতন, গ্যাসের দাম ২৫০ শতাংশ ও শ্রমিকের মজুরি ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে মিলগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। এ কারণে বস্ত্রকলগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। এসব কারণে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা আরও অন্তত তিন বছর বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনার বর্তমান সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ গত জুলাই মাসে প্রণোদনা কমিয়ে নতুন সার্কুলার জারি করে। এর পর থেকে রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান দেড় শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা দশমিক ৫০ শতাংশ, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা ৩ শতাংশ রয়েছে। এ ছাড়া বস্ত্র খাতে নতুন পণ্য বা বাজার সম্প্রসারণে প্রচলিত বাজারের বাইরে অন্য বাজারের জন্য ২ শতাংশ ও তৈরি পোশাক খাতে দশমিক ৩০ শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তা রয়েছে।
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবসে ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মেলে, বিপরীতে দুই কার্যদিবসে দরপতন হয়। এরপরও সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মূল্যসূচক। তবে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৪১টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। আর ১০১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬২ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বেড়েছে।
দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৭ কোটি টাকা বা দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে প্রধান মূল্যসূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৫২ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ২২ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
এদিকে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের গতি কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৮৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সায়হান কটনের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
এছাড়া, লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং, লাভেলো আইসক্রিম, রহিমা ফুড, মুন্নু ফেব্রিক্স, ফাইন ফুড এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম উভয়ই কমেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের আগে তেলের দাম কমল। এই বৈঠকের আগে বাজারের ধারণা, বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলার ৬৪ সেন্টে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ৫৬ ডলার ৭৪ সেন্টে নেমে এসেছে।
চলতি বছর তেলের দাম অনেকটাই কমেছে। বাস্তবতা হলো, গত ১৬ ডিসেম্বর তেলের দাম পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এরপর বাজারে সরবরাহ–সংকটের আশঙ্কায় দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে চলতি বছর ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১৯ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ২১ শতাংশ কমেছে।
বাস্তবতা হলো, ২০২০ সালের পর চলতি বছরে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি কমবে—এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতির ধীরগতির কারণে বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা কমে। সেই সঙ্গে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন বাড়তে থাকায় আগামী বছরে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের সম্ভাবনা আছে। এই বাস্তবতায় তেলের দাম কমছেই।
রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয় কি না, বিনিয়োগকারীদের নজর এখন সেদিকেই। শান্তিচুক্তি হলে রাশিয়ার তেল খাতে আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। ফলে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে।
যুদ্ধ থামানোর আলোচনায় এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে জমি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। জানা গেছে, ২০ দফা–সংবলিত শান্তিচুক্তির কাঠামো ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা-সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কাছাকাছি।
বৈঠকের ঘোষণা দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, নতুন বছরের আগেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে তিনি জানান, রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তাহলে প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামো নিয়ে গণভোট আয়োজন করতেও তিনি প্রস্তুত।
এদিকে ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পাওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক তেল মজুত বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনায় সামান্য অগ্রগতি—এ দুটি কারণে তেলের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সরকারের নতুন সিদ্বান্ত অনুযায়ী দেশের সব স্থলবন্দরের সেবা মাশুলের হার ৫ শতাংশ বাড়ছে। প্রতিটি সেবার বিপরীতে কর, টোল, মাশুলের পরিমাণ আগের চেয়ে এই হারে বেড়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন এই মাশুল কার্যকর করা হবে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অন্য স্থলবন্দরের তুলনায় বেনাপোল স্থলবন্দরে মাশুল কিছুটা বেশি। তাই বেনাপোল বন্দরের জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরে ২৭ ধরনের সেবার বিপরীতে মাশুল আদায় করা হয়। যেসব যাত্রী বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য ২০২৫ সালে মাশুলের পরিমাণ ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা। ২০২৬ সালের জন্য বাড়িয়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরি প্রবেশ করলে এখন ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা দিতে হবে। আগে এর পরিমাণ ছিল ১৭৫ টাকা ৯০ পয়সা। মোটর কার, জিপ, পিকআপ, থ্রি-হুইলারের জন্য মাশুল ১১০ টাকা ৮২ পয়সা। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলের জন্য নতুন মাশুল ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা।
বেনাপোল স্থলবন্দরে ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহারের মাশুল ট্রাক, লরিতে দিতে হবে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা। অন্যদিকে কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণ মাশুল ১৯৫ টাকা ৭ পয়সা। কোনো যানবাহন ইয়ার্ডে সারা রাত থাকলে ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা। এ ছাড়া গুদামে পণ্য রাখলে তার মাশুল বেড়েছে পণ্য রাখার সময় অনুযায়ী। এভাবে সব ধরনের মাশুলের পরিমাণই বেড়েছে।
বেনাপোল ছাড়া অন্য স্থলবন্দরগুলোতেও মাশুল বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। যেসব যাত্রী বেনাপোল ছাড়া অন্য স্থলবন্দর ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য ২০২৫ সালে মাশুলের পরিমাণ ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা। নতুন বছরের জন্য তা বাড়িয়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা করা হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর ছাড়া অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য এখন ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা দিতে হবে। আগে এর পরিমাণ ছিল ১৫১ টাকা ৬৪ পয়সা। মোটর কার, জিপের জন্য মাশুল ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা। মোটরসাইকেল, স্কুটার, বেবি ট্যাক্সি, থ্রি–হুইলারের জন্য নতুন মাশুল ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা।
এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করলেও পণ্য ভেদে মাশুলের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও মাশুল বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নতুন মাশুল কার্যকর করা হবে।’
পর্তুগাল-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (পিবিসিসিআই) ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে প্রেসিডেন্ট আবদুল আহাদ সালমান এবং সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম শফিক। এ ছাড়া কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন রাজীব হোসাইন। এই কমিটির মেয়াদ তিন বছর।
এ উপলক্ষে সম্প্রতি পর্তুগালের লিসবনে অবস্থিত পিবিসিসিআই মিলনায়তনে পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে পিবিসিসিআই পরিচালিত আলফালিস একাডেমির পর্তুগিজ ভাষা শিক্ষা কোর্সের এ-১ ও এ-২ স্তর সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পিবিসিসিআইর জেনারেল অ্যাসেম্বলি প্রেসিডেন্ট জোসে রুই দ্য কস্তা কারভালহো, জেনারেল অ্যাসেম্বলি সেক্রেটারি-১ শফিকুল আলম, সেক্রেটারি-২ মুহাম্মদ উল্লাহ, প্রেসিডেন্ট সুপারভাইজার মুহিব্বুল্লাহ হেলাল, সেক্রেটারি সুপারভাইজার মারিয়া ইনেস সান্তানা দো রোজারিও কারভালহো। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাহেদুজ্জামান মোল্লা, মো. জামাল উদ্দিন, নাসির উদ্দীন, জাহাঙ্গীর আলম, সানি রাহমান সুমন, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
পিবিসিসিআ’র নবগঠিত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন, অ্যাসেম্বলিয়া কমিটির প্রেসিডেন্ট-জোসে রুই দ্য কোস্টা কারভালহো, সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, সহসভাপতি শফিকুল আলম, সুফার ভাইজার কমিটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ হেলাল, সহসভাপতি এমডি মাহবুব আলম, সেক্রেটারি মারিয়া ইনেস সান্তানা দো রোজারিও কারভালহো আকোনুয়ালহা। এ ছাড়া আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল ফজল, বাংলাদেশবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ শফিউল আযম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আন্দ্রে সন কোস্তা, প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সজল, পর্তুগালবিষয়ক সম্পাদক ড. মারিয়া এডুয়ার্দা মিরান্ডা পানিয়াগ, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, মিডিয়া সম্পাদক নজরুল ইসলাম।
স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের সময়সীমা বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের ৯৮৯তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর কমিশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সভায় বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান পর্যালোচনা করে এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, নিউ ইরা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, কবির সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং এনবিএল ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
এছাড়া, যেসব স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার এখনো বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান কমিশনে দাখিল করেনি। তাদেরকে অবশ্যই আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যথাযথ ও বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান কমিশনে জমা দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান দাখিল না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বল্প আয়ের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে ১৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ সহায়তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে নারী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ওপর।
রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্পের আওতায় এই অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে সারাদেশে আরও প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার যুবকের জন্য কর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর আগে এ প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ (অ্যাপ্রেন্টিসশিপ), উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণের সুযোগসহ একটি সমন্বিত সেবা প্যাকেজ পাবেন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান ও ব্যবসা সম্প্রসারণের বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারবেন।
এ প্রকল্পের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে মানসম্মত শিশুযত্ন (চাইল্ডকেয়ার) সেবার সুযোগ সৃষ্টি। পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল জীবিকাভিত্তিক কার্যক্রম চালু করা হবে, যাতে জনগোষ্ঠী জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক গেইল মার্টিন বলেন, ‘একটি ভালো চাকরি একটি জীবন, একটি পরিবার ও একটি সমাজকে বদলে দিতে পারে। অথচ প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করা বহু বাংলাদেশি তরুণ কাজের সুযোগ পায় না। পাশাপাশি দেশে কাজের মান, দক্ষতার ঘাটতি ও পেশাগত অমিলের মতো চ্যালেঞ্জও রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অতিরিক্ত অর্থায়ন স্বল্পআয়ের পরিবারের আরও বেশি যুবক-যুবতী, বিশেষ করে নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের জন্য বাজারভিত্তিক দক্ষতা, প্রয়োজনীয় সম্পদ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা তাদের ভালো কর্মসংস্থান ও জীবিকার পথ সুগম করবে।’
এই অর্থায়নের ফলে প্রকল্পটির কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক সীমা ছাড়িয়ে গ্রামীণ এলাকাতেও সম্প্রসারিত হবে, যাতে সারাদেশের প্রান্তিক যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা পেতে পারেন।
এ ছাড়া নারীদের জন্য মানসম্মত ও সাশ্রয়ী ঘরভিত্তিক শিশুযত্ন সেবার একটি পাইলট কার্যক্রম চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে নারীদের প্রশিক্ষণ ও প্রারম্ভিক অনুদান দেওয়া হবে। শিশুযত্ন সেবার চাহিদা ও সরবরাহ—উভয় দিক বিবেচনায় নিয়ে এসব উদ্যোগ নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বাড়াবে এবং পরিচর্যা খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও বিকাশও উন্নত হবে।
নারীদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়ন বাড়াতে জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। অতিরিক্ত অর্থায়নের আওতায় চাকরির মধ্যস্থতা কার্যক্রম জোরদার করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে চাকরি মেলা আয়োজন, সম্ভাব্য নিয়োগদাতাদের সঙ্গে প্রার্থীদের সংযুক্ত করা এবং বিপণন ও চুক্তি আলোচনায় সহায়তা প্রদান।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সামাজিক সুরক্ষা অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, ‘রেইজ প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে আমরা কার্যকর উদ্যোগগুলো আরও সম্প্রসারণ, ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ বাড়ানো এবং মানসম্মত শিশুযত্নের মতো উদ্ভাবনী সমাধান চালু করতে পারব—যার ফলে আরও বেশি যুবক ও নারী তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।’
প্রকল্পটি ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা শিক্ষানবিশদের ৮০ শতাংশের বেশি তিন মাসের মধ্যেই কর্মসংস্থান পেয়েছেন। পাশাপাশি তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আয় বৃদ্ধি ও উন্নত ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা জানিয়েছেন।
২০২১ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে রেইজ প্রকল্প কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে পুনরুদ্ধার ঋণ ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিয়েছে, ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসীকে পুনঃএকত্রীকরণ সহায়তার জন্য নিবন্ধন করেছে এবং ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি উপকারভোগীকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা প্রদান করেছে। যাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী।
এই অতিরিক্ত অর্থায়নের ফলে রেইজ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াল ৩৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের জন্য খেজুরের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে বড় ধরনের শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে যে, খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৪০ শতাংশ কমানো হয়েছে। মূলত রমজানে এই অতিপ্রয়োজনীয় ফলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখাই এই পদক্ষেপের প্রধান লক্ষ্য।
এনবিআর-এর নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি বা আমদানি শুল্ক আগের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে এখন থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিশেষ সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। জনগণের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে ২৩ ডিসেম্বর এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
শুল্ক হ্রাসের পাশাপাশি আমদানিকারকদের জন্য করের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় বহাল রাখা হয়েছে। বিগত বাজেটে খেজুরসহ সব ধরনের ফল আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল, যা চলতি বছরেও কার্যকর থাকছে। এর ফলে খেজুর আমদানিতে অগ্রিম আয়করের ওপর ৫০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করছে, আমদানি শুল্ক এবং অগ্রিম আয়করে এই উল্লেখযোগ্য ছাড়ের ইতিবাচক প্রভাব খুব দ্রুতই বাজারে পরিলক্ষিত হবে। শুল্ক কমানোর ফলে আসন্ন রমজানে বাজারে খেজুরের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তারা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে খেজুর কিনতে পারবেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।