মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

যেভাবেই হোক, ডলারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে

ইকবাল আহমেদ।
রাজিউল হাসান
প্রকাশিত
রাজিউল হাসান
প্রকাশিত : ১ অক্টোবর, ২০২২ ০৭:৪৯

বাংলাদেশের সিলেটের সন্তান ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ এখন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানিতে শীর্ষে তিনি। একসঙ্গে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে কাজ করে চলেছেন, অবদান রাখছেন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করায়। সম্প্রতি তিনি দৈনিক বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার সহকারী বার্তা সম্পাদক রাজিউল হাসান।

দৈনিক বাংলা: করোনা মহামারির ধাক্কার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুই ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে যোগ হয়েছিল রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ব্রেক্সিটের ধাক্কা তো আছেই। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন যাচ্ছে?

ইকবাল আহমেদ: যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য প্রথম ধাক্কা ব্রেক্সিট। আমরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরো অংশকে এক ভূখণ্ড ভাবতাম। আমরা যুক্তরাজ্য থেকে এসব দেশে পণ্য রপ্তানি না, সরবরাহ করতাম। শুল্কমুক্ত এই বাজারের ‍সুবিশালতার জন্য ইউরোপে অনেক ব্যবসাই সফল হয়েছে। কিন্তু ব্রেক্সিট ভয়াবহ ধাক্কা দিল। আমাদের পণ্যে আবগারি শুল্ক, মাশুল যোগ হলো। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে গেল। মুখ থুবড়ে পড়ল অনেক ব্যবসা।

এই ধাক্কার মধ্যেই এল করোনা মহামারি। সব বন্ধ হয়ে গেল। তবে এ সময়ে অনলাইন বাজারটা বড় হলো। করোনার ধাক্কা সামাল দিতে যুক্তরাজ্যের সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ব্যবসা সংকুচিত হচ্ছে।

দৈনিক বাংলা: অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শীত পর্যন্ত বা তার বেশি সময় দীর্ঘায়িত হবে। এতে বৈশ্বিক সংকট আরও ভয়াবহ হবে। এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে কোনো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কি? সরকার কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে?

ইকবাল আহমেদ: যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানির দাম বেড়ে যাচ্ছে, তার প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যে। কাজেই এই যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় তত বড় হবে। এই অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। অবশ্য যুক্তরাজ্যের সরকার ব্যবস্থাও নিচ্ছে। সম্প্রতি ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী, যাকে মিনিবাজেট বলা হচ্ছে। এই প্যাকেজে যুক্তরাজ্যের ব্যবসাগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দৈনিক বাংলা: আপনার প্রতিষ্ঠান সিমার্ক পিএলসি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজার থেকে মাছসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বাজারে সরবরাহ করে। কী ধরনের পণ্য আপনি আমদানি ও রপ্তানি করেন?

ইকবাল আহমেদ: চিংড়ি রপ্তানি করে আমরা স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদকসহ অনেক স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে আমরাই চিংড়ির সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। ইউরোপের বাজারে প্রক্রিয়াজাতকৃত চিংড়ি সরবরাহ করি। ইউরোপের ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনগুলো, এয়ারলাইন, রেস্তোরাঁসহ অনেকেই আমাদের গ্রাহক। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি ছাড়াও আমরা সবজিসহ আরও কিছু জিনিস রপ্তানি করি। ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের ৭০টি দেশে পণ্য রপ্তানি করি আমরা।

ইউরোপের বাজারে আমরা কেবল মাছ আর হিমায়িত সবজিই সরবরাহ করি না। আমরা শিঙাড়া, সমুচা, পরোটা, ড্রাইকেকসহ নানা ধরনের স্ন্যাকসও বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ করি। ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের পণ্যের গ্রাহক।

বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ। যেমন ব্রাজিল থেকে আমরা পোল্ট্রি আমদানি করে ইংল্যান্ডে নিজেদের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করি। এর বাইরে যুক্তরাজ্যে আমাদের আরও কিছু ব্যবসা রয়েছে। যেমন আবাসন ব্যবসা, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন ভাড়া ইত্যাদি। আমাদের হসপিটালিটি ডিভিশনের আওতায় হোটেল, রেস্তোরাঁ পরিচালিত হয়।

দৈনিক বাংলা: বিভিন্ন দেশ থেকে, বিশেষত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বৈশ্বিক চলমান অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়েছে কি?

ইকবাল আহমেদ: আমরা ডলারে পণ্য আমদানি করি। ডলারের বিপরীতে পাউন্ড দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে। এতে আমাদের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে। গ্রাহক বেশি দামে সে পণ্য কিনতে চাইছে না। ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খুব সহজ হিসাব এটা। এই অস্থিরতা যত দিন গড়াবে, তত বাড়বে। এভাবে চলতে থাকলে যুক্তরাজ্যেই অনেক ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে।

বাংলাদেশেও কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাতদৃশ্যে মনে হচ্ছে, রপ্তানিকারকরা ডলারের দাম বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারেও তো পণ্যের দাম বাড়ছে। আমদানিকারকরা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি।

দৈনিক বাংলা: তাহলে এই পরিস্থিতির সমাধান কী?

ইকবাল আহমেদ: আমি দুবাইয়ের উদাহরণ দিতে পারি। তারা আর যা-ই হোক, ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবনমন ঠেকিয়ে রেখেছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব তাদের ওখানে সেভাবে পড়েনি। কাজেই যেভাবেই হোক, ডলারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। তাহলে দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশকে আরও ব্যবসাবান্ধব করতে হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?

ইকবাল আহমেদ: বাংলাদেশ থেকে আমি চিংড়িসহ কিছু পণ্য আমদানি করি। গুণগতমানের উন্নয়ন ঘটানো গেলে আরও অনেক কিছু আমদানি করা যেত। বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় গবেষণায় বিনিয়োগ কম। উৎপাদন কীভাবে হচ্ছে, সে ব্যাপারে নজরদারি কম। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে নজরদারি নেই। উদাহরণ দিই একটা। বাংলাদেশে কিন্তু প্রচুর আম হয়। কিন্তু সে আমের সিংহভাগ আমরা আমদানি করতে পারি না। আম কীভাবে উৎপাদন হচ্ছে, কীভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে, তার কিন্তু নজরদারি নেই। ফলে আমের মান কেমন, সেটা নিশ্চিত করতে পারে না কেউ। এভাবে তো আর আমদানি হয় না। কাজেই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের মানের দিকে নজর দিতে হবে।

বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এখনো তৈরি পোশাকনির্ভর। এই খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসে। এভাবে একটা খাতের ওপর এতটা নির্ভরশীল থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে এই খাতে ধস নামলে বা আয় কমে গেলে বিপদ ঘটতে পারে। কাজেই অন্য খাতকেও রপ্তানিমুখী করতে হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। সরকারকেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরেকটা বিষয়। দেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ আনতে হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান যত বেশি দেশে আসবে, তত কর্মসংস্থান হবে, দেশে রপ্তানিবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আপনি। এ দেশে ব্যাংক করার পরিকল্পনা এল কী করে? উদ্যোক্তাদের একজোট করলেন কীভাবে?

ইকবাল আহমেদ: আমি বিদেশে থাকলেও মনটা সবসময় বাংলাদেশে থাকে। এ কারণে দেশের জন্য সবসময় কিছু না কিছু করতে চেয়েছি আমি। তারই অংশ হিসেবে একসময় ব্যাংকের কথা মাথায় এল। এতে বহুমাত্রিক লাভ। প্রথমত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন, দ্বিতীয়ত, দেশে কর্মসংস্থান হবে, তৃতীয়ত, এই ব্যাংক সফল হলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। এসব দিক বিবেচনায় আমি বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংক গড়ার পরিকল্পনা করি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। নিজের আগ্রহ ও তাদের উৎসাহে আমি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত ৪৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তাকে খুঁজে বের করি। এভাবেই আসলে শুরু।

আমি ব্যাংকটিকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক হিসেবে গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিস্থিতি ও সময়ের জন্য পারিনি।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে জড়িত থাকার কারণে আপনি এখানকার অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে দেশের ব্যাংক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো কী?

ইকবাল আহমেদ: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সম্ভাবনা প্রচুর। তবে নজরদারি বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও বেশি সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে। যেসব ব্যাংক ভালো করছে না, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একটা ব্যাংক কতটা ভালো করবে অথবা কতটা লোকসানি হবে, তা নির্ভর করে আসলে পরিচালনা পর্ষদের নীতির ওপর। এখন ধরা যাক, একটা খারাপ লোককে জেনেশুনে ঋণ দিয়ে দিল একটা ব্যাংক। সে ঋণখেলাপি হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে লোকসান তো গুনতেই হবে। শুধু তা-ই নয়, বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি এক সময় রাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও চাপ তৈরি করে।

কাজেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কারা বসছেন, তাদের নীতি কী, এসব বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ ব্যাংক খাত যত শক্তিশালী হবে, অর্থনীতি তত জোর পাবে।

দৈনিক বাংলা: ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ব্রিটিশ সরকার আপনাকে ওবিই ও ডিবিএ উপাধি দিয়েছে। এই উপাধিগুলো আসলে কী?

ইকবাল আহমেদ: ওবিই হচ্ছে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এই উপাধি দেয়া হয় যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক হয়েছি আমি। পাশাপাশি আমি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলাম। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার ওই উপাধি আমাকে দিয়েছে।

আর ডিবিএ হলো ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। শিক্ষা ও ব্যবসা খাতে অবদান রাখার জন্য এই ডিগ্রি দেয়া হয়।

আমি যে শুধু যুক্তরাজ্যে ব্যবসা খাতে অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত হয়েছি, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ সরকারও আমাকে বেশ কয়েকবার সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে।

দৈনিক বাংলা: অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন। বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আপনার পরিচয় রয়েছে। এমনকি চট্টগ্রামে আপনার কারখানা উদ্বোধন করতে প্রিন্সেস অ্যান এসেছিলেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

ইকবাল আহমেদ: ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয় বেশ আগে থেকে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। রানির গার্ডেন পার্টিতে আমি পাঁচবার গিয়েছি। বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আমার চারবার দেখা হয়েছে। আর প্রিন্সেস অ্যানের সঙ্গে তো অনেকবার হয়েছে। বর্তমান রাজার অর্গানাইজেশনের দুটি প্রকল্পে আমি সংশ্লিষ্ট। এর একটি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সহযোগিতা। এই প্রকল্পকে বলে মোজাইক। এতে আমি সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট।

দৈনিক বাংলা: আপনি বেশ কিছু দাতব্য কাজেও জড়িত। সে কাজগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন।

ইকবাল আহমেদ: আমি বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কাজ করি। সিলেটে আমি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ার পরিকল্পনা আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে রুরাল ইউনিভার্সিটি। প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েরা বিশ্বমানের পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে। ইংল্যান্ডে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে গৃহহীনদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার চেষ্টা করি আমি। বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের যেখানে সুযোগ পেয়েছি, সেখানেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।

দৈনিক বাংলা: এখন যারা উদ্যোক্তা হতে চান বা চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?

ইকবাল আহমেদ: প্রথম কথা, পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। আগে পড়ালেখা করতে হবে। তারপর কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে বেশি ভালো। বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে সবকিছু শেখা যায় না। একটা গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবদিকের সব কাজের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ করে তারপর ব্যবসা শুরু করতে হবে। আরেকটা কথা, ব্যবসার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল হতে হবে। বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।

দৈনিক বাংলা : সব উদ্যোক্তা প্রথম দফায়ই সফল হন না। বারবার চেষ্টার পরও বিফল হয়ে এক সময় হতাশ হয়ে পড়েন অনেকে। তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?

ইকবাল আহমেদ: অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। এর জন্য কিছু বিষয় অন্যতম দায়ী। অনেকে আছেন, এক ব্যবসায় ভালো করতে না পেরে অন্য ব্যবসায় চলে যান। এভাবে সুইচ করতে থাকলে আপনি কোনো ব্যবসায়ই ভালো করতে পারবেন না। একটার পেছনে লেগে থাকতে হবে। যত ব্যর্থ হবেন, তত অভিজ্ঞতা হবে। আরেকটা কথা, যখন দেখা যাবে, কিছুতেই একা সফল হওয়া যাচ্ছে না, তখন অংশীদার জোগাড় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হলো, আমার মধ্যে যে চিন্তা, যে সৃজনশীলতা নেই, তা আমার অংশীদারের মধ্যে থাকতে পারে। কাজেই সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন না পারলে, দুজন, দুজন না পারলে চারজনে মিলে উদ্যোগ নিতে হবে।

দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশে আরও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আর কী করতে হবে?

ইকবাল আহমেদ: সর্বপ্রথম তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসায় আগ্রহী করতে হবে। চাকরির ওপর ব্যবসাকে জোর দিতে হবে। সরকারের দিক থেকেই এই বার্তাটা আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স, ব্যাংক ঋণসহ সবকিছু আরও সহজ করতে হবে। ব্যাংক যদি আমাদের ঋণ না দিত, তাহলে আজ যতটুকুই এসেছি, তা কী আসতে পারতাম? কাজেই ব্যাংক খাতকে এখানে জোরালো অবস্থান নিতে হবে।

দৈনিক বাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

ইকবাল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।


‘সারা বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নিত্যপণ্য সরবরাহের কাজ করব’

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১৯:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক

শুধু রমজান নয়- সারা বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নিত্যপণ্য সরবরাহের জন্য কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ লোকাল সাপ্লাই চেইনগুলো শক্তিশালী করব। আমাদের কাজ হলো বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা, বাজার ব্যবস্থাপনা কার্যকর রাখা। এই কাজ আমরা করব।

আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল রমজানে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া, সেটা রমজানের পরেও অব্যাহত থাকবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, রমজানটা ব্যাপক চ্যালেঞ্জ ছিল, কারণ সব কিছুর চাহিদা তিনগুণ বেড়ে যায়। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ভারত থেকে পেঁয়াজ এনেছি। সেই সঙ্গে আমাদের তেল-চিনিসহ নিত্যপণ্য পর্যাপ্ত ছিল। চ্যালেঞ্জগুলো পার হয়ে এসেছি।

চালের বস্তায় দাম লিখে দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় সঠিক উত্তর দিতে পারবে। কৃষি মন্ত্রণালয় আরও ভালো উত্তর দিতে পারবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের কোনো কিছু থাকলে আমরা সমন্বয় করব। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় যার যার কাজ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো বাজার ব্যবস্থাপনা ও পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা; বিশেষ করে, আমদানি করে যেসব জিনিস আনা হয়। আর লোকাল কৃষিপণ্য ও খাদ্য এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বললে ভালো হবে। গ্রামে বেগুন ৫ টাকা শহরে এসে ৭০ টাকা হয় কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সংশ্লিষ্ট প্রশ্নটি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ভালো উত্তর দিতে পারবে। আমরা কাজ করতে পারি বাজার ব্যবস্থাপনার অংশটুকু নিয়ে। তেল, চিনিসহ আমদানি বাজারে যেসব জিনিস রয়েছে সেগুলোতেই আমাদের নজরদারি থাকবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ (দ্রব্যমূল্য) নিয়ে কেউ সমালোচনা করলে তা ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে’। এই ঈদে আমি পাঁচ দিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। মাঠে-ঘাটে ঘুরেছি, মানুষের সঙ্গে মিশেছি। সেখানে সবার মধ্যে একটা স্বস্তি আমি দেখতে পেয়েছি।

তিনি বলেন, সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে বৈশাখী মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলা থেকে তারা বিভিন্ন সামগ্রী কিনেছে। সেখানে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছি। রাজনৈতিক কারণে কেউ দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখালে সেটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। জনগণই বুঝবে যে তারা ভালো আছে কি না।

মন্ত্রিসভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা পাস হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক চাওয়া এই নীতিমালায় স্থান পেয়েছে। আমদানি রপ্তানি নীতিমালা, জাতীয় লজিস্টিকস নীতিমালা পাস হয়েছে মন্ত্রিসভায়। আমি এই নীতিমালা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে খুবই আশাবাদী।


চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.১%: এডিবি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১২ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:৪০
বাণিজ্য ডেস্ক

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক এক শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।

আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকটি তাদের এপ্রিলের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।

এডিওতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে এডিবি বলেছে, ২০২৪ (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ছয় দশমিক এক শতাংশ পর্যন্ত। ২০২৫ (২০২৪-২৫) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়ে হতে পারে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ।

বাংলাদেশে কোনো বছরের জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের জুন পর্যন্ত ১২ মাসকে এক অর্থবছর ধরা হয়। সে হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ জুন।

এডিওতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সস্তা তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা দেশে তৈরি সুতা ও বস্ত্র ব্যবহার করছেন।

মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ভোগ বাড়তে পারে। অন্যদিকে ভর্তুকি কম দেয়া এবং কৃচ্ছ্রতার ব্যবস্থাগুলো অব্যাহত রাখায় সরকারি পর্যায়ে ভোগও সামান্য বাড়তে পারে।


মার্চ মাসের বেতন-ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে সব কারখানা: বিজিএমইএ সভাপতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ঈদুল ফিতরের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পুরোপুরি পরিশোধ করায় তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নবনির্বাচিত সভাপতি এস এম মান্নান। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। গার্মেন্টস শ্রমিকরা যাতে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে আসন্ন ঈদ উদযাপন উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে কারখানা মালিকদের প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা তুলে ধরেন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি। এই আর্থিক প্রক্রিয়াটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে অবিচ্ছেদ্য ভূমিকার জন্য সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শ্রমিক নেতা এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

ঈদের আগে বেতন ভাতা বিষয়ে সমস্যা হতে পারে এরকম ৪৫০টি কারখানার ওপর নজরদারির কথা উল্লেখ করেন মান্নান। বিশেষ করে ২৬টি কারখানায় বিজিএমইএর সরাসরি হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধানে সাফল্যের কথা তুলে ধরেন তিনি।

মান্নান বিবৃতিতে আরও জানান, এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে সব কারখানা মার্চ মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে পেরেছে। অল্পকিছু কারখানা বাকি আছে, তারাও আজকের মধ্যে পরিশোধ করে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর্থিক খাতের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিজিএমইএ সভাপতি পোশাক কারখানার আশেপাশের এলাকাগুলোতে সরকারি ছুটির দিনেও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান। এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপটি শ্রমিকদের সময়মত এবং সম্পূর্ণ বেতন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ভবিষ্যতে ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মান্নান। বিশেষ করে বাস, ট্রেন এবং নৌযানে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।


যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

আপডেটেড ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, ক্রেতাদের হাত-খোলা খরচ ও মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

২০২৩ সালে এ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম দুই মাসে এই হার ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আগামী মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এ বছর শেষে এর পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

করোনা মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা কম খরচ করায় অনেক পোশাক অবিক্রীত থেকে যায়। ফলে সেখানকার ব্র্যান্ডগুলো গত দুই বছরে সারা বিশ্ব থেকে কম পোশাক আমদানি করে।

গত বছরও এমন পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। মহামারির বিপর্যয়ের পরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বহু দশকের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে যায়। এটি ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

গত বছরের নভেম্বরে বিক্রি বাড়তে শুরু করলে পণ্যের মজুত কমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে পোশাকের কার্যাদেশ বাড়তে থাকে।

ফারুক হাসান আরও বলেন, গত বছর প্রায় প্রতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছিল। এ বছর শুরু থেকেই তা বাড়ছে।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি ডলার। বস্ত্র ও পোশাকের মোট চালান ছিল ১২১ কোটি ডলার, যা ১৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ।

রপ্তানিকারকদের মতে, প্রতিযোগিতামূলক দাম ও সময় মতো পণ্য সরবরাহ করায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য আকর্ষণীয় সোর্সিং গন্তব্য। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রেতাদের বৃহত্তম বাণিজ্য সংস্থা ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) গত ২০ মার্চ পূর্বাভাসে বলেছে, চলতি বছর খুচরা বিক্রি আড়াই শতাংশ থেকে সাড়ে তিন শতাংশের মধ্যে বাড়বে। এটি পাঁচ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে পাঁচ দশমিক ২৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এটি হবে আমেরিকার অর্থনীতিতে ক্রেতাদের শক্তিশালী ভূমিকার কারণে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনআরএফ প্রেসিডেন্ট ও সিইও ম্যাথিউ শায় বলেন, ‘ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থা মার্কিন অর্থনীতিতে শক্তি জোগাচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে বছরের শেষ নাগাদ মাঝারি আকারে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি হবে।’

২০২৪ সালের বিক্রয় পূর্বাভাসে ২০২৩ সালের তিন দশমিক ছয় শতাংশ বার্ষিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, ১০ বছরের প্রাক-মহামারি গড় বার্ষিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ছয় শতাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে এই পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

নন-স্টোর ও অনলাইন বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত থেকে নয় শতাংশের মধ্যে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি এক দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে এক দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। ২০২৩ সালে নন-স্টোর ও অনলাইন বিক্রি ছিল এক দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

এনআরএফ ধারণা করছে, পুরো বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় দুই দশমিক তিন শতাংশ হবে। এটি ২০২৩ সালের আড়াই শতাংশের তুলনায় কম। তবে চাকরির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য তা যথেষ্ট শক্তিশালী।

চাঙা অর্থনীতি, শ্রম ও পণ্যের বাজারে আরও ভারসাম্য এবং আবাসন খরচ কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও আগের বছরের তুলনায় দুই দশমিক দুই শতাংশ কমবে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এনআরএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাক ক্লেইনহেনজের প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত এ বছর ক্রেতারা খরচের বিষয়ে কি দাপট বজায় রাখতে পারবেন? তার ভাষ্য, বেশ কয়েকটি জরিপে খরচের বিষয়ে ক্রেতাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে। তবে কঠোর ঋণ ব্যবস্থা ও মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকে কষ্টে আছেন।


বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এবার একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার বেসরকারি খাতের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক সিটির সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের একীভূত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি হবে দুই ব্যাংকের ইচ্ছায়।

জানা গেছে, সোমবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য এর আগেই একীভূত হওয়া নিয়ে দু ব্যাংকের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করা নিয়ে আলোচনা হয়। বেসিক ব্যাংকের পর্ষদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যাংক দুটি একীভূত হলেও অবশ্য আগামী তিন বছর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করবে সিটি ও বেসিক ব্যাংক।

এ নিয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন গণমাধ্যমকে জানান, ‘একত্রীকরণ নীতিমালার আওতায় সবল ব্যাংক হিসেবে কোন দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এক করা যায় তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। সিটি নিজেই ২০০৭ সালে একটা প্রবলেম ব্যাংক ছিল, তবে এখন সিটি দেশসেরা স্থানীয় ব্যাংক হতে পেরেছে। আমরা ব্যাংক পুনর্গঠনে অভিজ্ঞ’। তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন ব্যালেন্স শিট একত্রীকরণে তিন বছর সময় পাওয়া যাবে। এ তিন বছর ভালোভাবে কাটলে আমি আশাবাদী সময় আরও বাড়বে। আমরা চাই কাউকে নিয়ে আরও সবল ব্যাংক হয়ে আর্থিক খাতের সংকট মোকাবিলা করতে’।

এদিকে সিটির সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের একীভূত হওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের আলোচনা হচ্ছে। একীভূত হওয়া নিয়েও অনেকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, যখন চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হবে তখন আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব’।

এখন পর্যন্ত মোট আটটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটি আর বেসরকারি ব্যাংক তিনটি। মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়। এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


ঈদ-অর্থনীতির আকার বাড়ছে

আপডেটেড ৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও ঈদ অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির (বিএসওএ) জরিপে দেখা গেছে, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যবসা হয় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে পোশাক খাতে খরচ হয় ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নামাজের টুপি থেকে শুরু করে দুধ, চিনি ও আনুষঙ্গিক প্রায় সবকিছুর পেছনেও অনেক টাকা খরচ হয়।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলেছে। একসময় ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ ছিল পোশাক, জুতা, অলংকার ও সেমাই-চিনির মধ্যে। এখন তা গৃহস্থালি থেকে পৌঁছেছে প্রসাধনীতে। ঈদ ঘিরে বেড়েছে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের প্রবণতাও। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ ঘিরে অর্থপ্রবাহ বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের চাহিদা মেটাতে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য আমদানি করা হয়। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দিনে গড়ে ৩০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজসহ নানা পোশাক বিক্রি হয়, সেখানে ঈদের আগে গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার টাকার পণ্য। দিনে গড়ে ৩ লাখ টাকার অলংকার বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঈদে সারাদেশে ২৫ লাখ দোকানে কেনাবেচা হবে। মুদি থেকে শুরু করে নানা পদের দোকানে বছরের অন্য সময় গড়ে দিনে ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও, এখন তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।

দেশের ঈদ অর্থনীতি নিয়ে সরকারিভাবে কোনো গবেষণা নেই। তবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সমীক্ষা বলছে, ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে ১ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রোজা ও ঈদ ঘিরে সম্ভাব্য অতিরিক্ত অর্থপ্রবাহ ছিল প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এবার এটি কিছুটা কমতে পারে।

উৎসবের মর্মবাণীর সঙ্গে মিল রেখে উপহার-দান-খয়রাত দেখা যায় পুরোদমে। ঈদকে সামনে রেখে দাতব্য কাজে সহায়তা করা হয় যাতে দরিদ্ররাও উৎসবে অংশ নিতে পারেন।

দোকান মালিক সমিতির হিসাব অনুসারে, প্রায় ৪৯৫ কোটি টাকা ফিতরা হিসেবে দেওয়া হয়। প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের জন্য এই দান বাধ্যতামূলক। এমনকি, আরও অনেক বেশি অর্থ অনানুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করা হয়। বিশেষ করে, যখন তিন দিনের ঈদে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যান তখন অনেককে দরিদ্রদের দিকে সহায়তার হাত বাড়াতে হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে- ঈদ উপলক্ষে প্রায় চার-পাঁচ কোটি মানুষ যাতায়াত করেন। পরিবহন খাত সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। সাধারণত ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স আসা তুলনামূলক বাড়লেও গত মার্চে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। প্রবাসীরা গত মাসে ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২২ হাজার কোটি। এ অর্থের বেশির ভাগই খরচ হবে ঈদ ঘিরে। এসব মিলে এবার ঈদ অর্থনীতির আকার ২ লাখ টাকা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাছাড়া এবার ঈদের পরই পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ। এ উৎসব ঘিরেও বেশ কেনাবেচা হয়। এটিও এবার ঈদ অর্থনীতিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে।

ঈদে বিপুল পরিমাণে নগদ লেনদেন হয়ে থাকে। এটি অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনে। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান রাখে। প্রায় সব ব্যবসায় ভালো বিক্রি হয়। অনেকে ঘর সাজাতে এবং উপহার দিতে জামা-কাপড়, গহনা, আসবাবপত্র ও অন্যান্য পণ্য কেনেন।

উৎসবে মিষ্টি ও মজাদার খাবার থাকে। সে সময় অতিথিদের আপ্যায়নে ২৭ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা খরচ হয়। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, সবাই ঈদকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করতে চান। সেদিন ভালো খাবার খেতে চান। নতুন কাপড় পড়তে চান। সে সময় অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়।

ফ্রিজ-টেলিভিশনের মতো পণ্যের বিক্রি বাড়াতে লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচারণা ও নানা আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করার প্রস্তুতি ব্যবসায়ীরা কয়েক মাস আগেই নিয়ে থাকেন। রমজান শুরুর পরপরই শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে হাজারো মানুষের ভিড় হয়। ঈদকে সামনে রেখে নতুন ডিজাইন তৈরির পাশাপাশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেক কাজ হয়ে থাকে। উৎসবের প্রায় এক বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। দোকান মালিক সমিতির জরিপে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে একটি পোশাক ব্র্যান্ডের দৈনিক বিক্রি গড়ে তিনগুণ বেড়ে যায়।

ঈদকে সামনে রেখে বেড়ে যায় জুতার চাহিদাও। বাটার হেড অব রিটেইল আরফানুল হক বলেন, মোট বিক্রির প্রায় ২৫ শতাংশ হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে। এ সময় জুতা বিক্রি তিনগুণ বেড়ে যায়। অর্ধেক নতুন ডিজাইনও বাজারে আসে। ঈদের সঙ্গে রান্নার বিষয়টিও জড়িত। তাই চিনি ও দুধের চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক। ঈদের আগে সুগন্ধি চাল, মুরগি, গরু-খাসির মাংস, তেল ও মসলার চাহিদা বেড়ে যায়। অলঙ্কারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি জুয়েলারি দোকানের দৈনিক বিক্রি ৮০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে প্রায় তিন লাখ টাকায় দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে দোকান মালিক সমিতি।


বর্তমান কমিশনের যুগোপযোগী পদক্ষেপ, বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব পড়েনি পুঁজিবাজারে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৬ এপ্রিল, ২০২৪ ২২:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী মে মাসে। এ চার বছরের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দাভাব সৃষ্টি হলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির আরোপ করা ফ্লোর প্রাইসসহ বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে পুরো মেয়াদজুড়েই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বিএসইসি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণে অনন্য দৃষ্টি স্থাপন করেছে বর্তমান কমিশন। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ কমিশনের যথাযথ পদক্ষেপ অব্যাহত না থাকলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত।

তাদের মতে, গত কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যতটুকু পড়েছে তা খুবই সামান্য। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এ বাজারে ইতিবাচক রিটার্ন ছিল। পরবর্তীতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানিসহ বিভিন্ন সংকট তৈরি হলে আগে থেকেই এর নেতিবাচক প্রভাব বুঝতে পেরে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। এটি ছিল বাজারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কমিশনের সবচেয়ে বড় যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে কমিশন পুরো সময়জুড়ে বাজার উন্নয়নে সংক্রিয় ছিল।

২০২০ সালের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাত। ঠিক ওই সময় টালমাটাল পুঁজিবাজারকে সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে বিএসইসিতে কাজে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম। এ ছাড়া তৎকালীন আরেক কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন খোন্দকার কামালুজ্জামান। পরে তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন কমিশনার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলামকে নিয়োগ দেয় সরকার। এ চার কমিশনার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির দায়িত্ব নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বর্তমান কমিশনের অধীনে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো

২০২০ সালে ১৭ মে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে পুঁজিবাজার খোলা রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে সুশাসন ফেরাতে আইন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুর্বল ও লোকসানে থাকা কোম্পানিতে স্বচ্ছতা আনতে প্রশাসক বসানো এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করা হয়। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জিরো টলারেন্স নীতিতে অনেক কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকদের বিও হিসেবে থাকা শেয়ার স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে অনেকের ব্যাংক হিসাবও। এর বাইরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন‌্যূনতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়।

ওই বছর এসবের পাশাপাশি বন্ড মার্কেটকে গতিশীল করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করে কর সুবিধা বাড়ানো, রাষ্ট্রায়ত্তসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তাগিদ বৃদ্ধি করা, ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ সেপ্টেম্বরের আগে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) শক্তিশালী করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করপোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করা, জেড ক্যাটাগরি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, পুঁজিবাজারের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সভা (এজিএম, ইজিএম, পর্ষদ সভা) করার অনুমোদন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়া সহজতর করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ও বিদেশে ব্রোকার হাউসের শাখা হিসেবে ‘ডিজিটাল বুথ’ খোলার অনুমোদন এবং পুঁজিবাজারকে ডিজিটালাইজড করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

২০২১ সালে পুঁজিবাজারের সুশাসন ফেরাতে বিভিন্ন আইন-কানুন সংস্কার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর কঠোরতা আরোপ, দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিতে স্বচ্ছতা আনতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্বল কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার ও ব্যাংক হিসাব জব্দ, ২০ হাজার কোটি টাকার ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন, আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ার আনুপাতিক সমবণ্টন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে একাধিক আইপিও বাতিল করা, ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট (ওটিসি) বাতিল করে এসএমই প্ল্যাটফর্ম চালু করা, অল্টারনেটিভ প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ, পরিস্থিতি অনুকূলে আসায় ২০২০ সালে আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, লভ্যাংশ না দেওয়া ও নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগসীমা বৃদ্ধির মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ ছাড়া ওই বছর বুকবিল্ডিংয়ের বিডিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর উদ্যোগ, বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে-বিদেশে ব্রোকার হাউসের শাখা হিসেবে ডিজিটাল বুথ স্থাপন, পুঁজিবাজারের ব্র্যান্ডিং ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দেশে ‘রোড শো’-এর কার্যক্রম শুরু করা, বিএসইসিসহ স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ, স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ড-সুকুক-ট্রেজারি বন্ড চালুর উদ্যোগ, ব্রোকারেজ হাউসের সংখ্যা বাড়াতে নতুন ট্রেক ইস্যু করা, বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ, স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ, মার্কেট মেকারের অনুমোদন, পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

২০২২ সালে বিএসইসির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক সংকট বিবেচনায় পুনরায় ফ্লো প্রাইস আরোপ করা অন্যতম। বৈশ্বিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন রোধে ওই বছরের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শেয়ারের দাম কমানো ঠেকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এ ধরনের পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের পুঁজিবাজারে না থাকলেও আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনার ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ করার সুপারিশ, দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলোকে পুনরায় উৎপাদনে ফেরানো, পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে লাপাত্তা হওয়া সেগুলোকে ডি লিস্টিং করিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশ কিছু আইন-কানুন, বিধিবিধান সংস্কার, কোম্পানিগুলোকে বোনাস লভ্যাংশের বদলে নগদ লভ্যাংশ দিতে অনুপ্রাণিত করা, পুঁজিবাজারে সরকারি সিকিউরিটিজের (ট্রেজারি বন্ড ও ডিবেঞ্চার) লেনদেন চালু, মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে শৃঙ্খলায় ফেরানো, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, ইসলামি গ্রিন সুকুকের লেনদেন চালু এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।

ওই বছর এর বাইরে জাপানে ভার্চুয়ালি রোড শো আয়োজন করা, মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিদের কাজে উৎসাহ বাড়াতে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার- ২০২২ প্রদান, বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ পুনর্বহাল রাখার সুপারিশ, এসএমই প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ সহজ করা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনে সহায়তা প্রদান, সিএসইর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজিকে অনুমোদন প্রদান, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড (ইটিএফ) ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) গঠনে আইনপ্রণয়ন, বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) মাধ্যমে ফেরত প্রদান, চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব বা ভীতি ছড়ানো কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মাধ্যমিকপর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ, শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ প্রদানে উৎসাহিত করা ও বোনাস শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তন, ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখার কারণে স্তিমিত থাকা নতুন বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আনতে নগদ লভ্যাংশ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

২০২৩ সালে পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্যময় পণ্য হিসেবে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) চালু করা, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালু করা, কমোডিটি ও ডেরিভিটিভস এক্সচেঞ্জ চালু করতে বিধিমালা তৈরি করে গেজেট প্রকাশ, বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা ইউরোপের দেশগুলোতে রোড শো আয়োজন করা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে তৃতীয় দফায় ফ্লো প্রাইস আরোপ করা, শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখার সিদ্ধান্তে সুপারিশে প্রদান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি অর্জনে সহায়তার লক্ষ্যে শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গঠনে ইউএনডিপি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনসের (আইএফসি) সহায়তার গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণসহ সমঝোতা চুক্তি, নারীদের জন্য ‘অরেঞ্জ বন্ড’নামক এক বিশেষায়িত বন্ড তৈরির উদ্যোগ, বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ প্রদানের সুবিধা বাড়াতে নীতি সয়হতা প্রদান এবং পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানো হয়।

এ ছাড়া ওই বছর ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও অর্থের হিসাব সংরক্ষণের জন্য পৃথক ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের পরিবর্তে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার চালুর উদ্যোগ, পুঁজিবাজারে ইসলামিক শরিয়াভিত্তিক বিভিন্ন প্রকার সিকিউরিটিজ আনা এবং ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে শরিয়াহ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের (এসএসি) অনুমোদন, আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) সভা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আয়োজন করা, ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা স্পষ্টীকরণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে সতর্কতা বাড়ানোর উদ্যোগ, মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি কমাতে পুঁজিবাজারে ‘ফরেক্স’ চালুর উদ্যোগ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে পুনরায় কঠোরতা আরোপ, আইন-পলিসি নির্ধারণ নিয়ে বিএসইসি ও আইএমএফের বৈঠক, ৪ ব্রোকারেজ হাউসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রদান, পুঁজিবাজারে স্বতন্ত্র পরিচালকের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি, বিভিন্ন কোম্পানি একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত এবং বছরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে পুঁজিবাজারের সদস্য করা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার আগে উত্তরা ব্যাংকের (তৎকালীন ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশন) ৪০টি শেয়ার তার যোগ্য উত্তরসূরির নিকট হস্তান্তর করা ২০২৩ সালের অন্যতম বড় অর্জন।

চলতি ২০২৪ সালে শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া বিএসইসি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো সিএসইকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সনদ প্রদান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী পালন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদান, স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের গ্রাহকের (বিনিয়োগকারী) মার্জিন ঋণের পোর্টফোলিওতে পুনর্মূল্যায়নজনিত অনাদায়কৃত ক্ষতির বিপরীতে রক্ষিতব্য প্রভিশন সুবিধার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো, প্রায় ৫ বছর ধরে বন্ধ থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের লেনদেন শুরুর সিদ্ধান্ত এবং অডিটর ও অডিট প্রতিষ্ঠান বিএসইসির তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।


আবারও বিএসইসি প্রধান হচ্ছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত

আপডেটেড ৬ এপ্রিল, ২০২৪ ২২:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পুনর্নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। গত ৩১ মার্চ শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে আরও এক মেয়াদে পুনর্নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এরপর ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।

সার সংক্ষেপে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৭ মে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ আগামী ১৬ মে তার মেয়াদ শেষ হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা-৫ (১) অনুসারে, বিএসইসিতে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন কমিশনার থাকেন। বর্তমানে কমিশনে একজন চেয়ারম্যান এবং চারজন কমিশনার আছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান পুনর্নিয়োগের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা তাদের নিয়োগের তারিখ থেকে চার বছর মেয়াদের জন্য নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন এবং অনুরূপ একটিমাত্র মেয়াদের জন্য পুনর্নিয়োগের যোগ্য হবেন। তবে শর্ত হলো, কোনো ব্যক্তির বয়স ৬৫ পূর্ণ হলে তিনি চেয়ারম্যান বা কমিশনার পদে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন না অথবা চেয়ারম্যান বা কমিশনার পদে বহাল থাকবেন না।

সার সংক্ষেপে আরও বলা হয়েছে, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বয়স আগামী ১৬ মে ৫৬ বছর ৪ মাস ১৫ দিন হবে। অর্থাৎ তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হতে ৪ বছরের বেশি সময় বাকি আছে। সে অনুযায়ী তিনি আরও একটি মেয়াদে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগের যোগ্য। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩ অনুযায়ী আগামী ১৭ মে ২০২৪ তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছরের জন্য আরও একটি মেয়াদে বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশকৃত সম্মতিপত্র অনুসারে চলতি সপ্তাহেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ প্রজ্ঞাপন জারির পর আগামী ১৭ মে হতে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য আরও এক মেয়াদে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বিএসইসি চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক পুনর্নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ধামরাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার গভ. ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫-১৯৮৯ সালে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিতা রফিকুল ইসলাম খান অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। মা দেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী প্রয়াত হাসিনা মমতাজ। তার স্ত্রী শেনিন রুবাইয়াত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এবং বিটিভির একজন সংবাদ পাঠিকা। এই দম্পতির দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এই সময়ে তিনি দেশে-বিদেশে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং এবং বিমা সম্পর্কিত অনেক ব্যবসায়, চেম্বার এবং গবেষণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি টারশিয়ারি পর্যায়ের জন্য ‘ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং’ এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় বোর্ড প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং’ বইয়ের লেখক। বিষয়-সংশ্লিষ্ট ১৬টিরও বেশি গবেষণা প্রকাশনা এবং ৫টি আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ রয়েছে তার। অধ্যাপক শিবলী আইন ও ব্যবহারিক ব্যাংকিং, রিটেইল ও ই-ব্যাংকিং, বৈদেশিক বিনিময় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং, করপোরেট সুশাসন, ব্যবসায় ও মৌলিক বিমা সংক্রান্ত আইন বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ। তিনি চীনের চেংদু-তে অবস্থিত সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘অতিথি অধ্যাপক’ হিসেবে এবং বিএকেইউএমএসইএম সম্মেলনে শ্রেষ্ঠ গবেষণা পত্রিকার উপস্থাপক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও যোগ্যতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) পরিচালক (বোর্ড ডিরেক্টর) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি আইওএসকোর বোর্ড ডিরেক্টর হয়েছেন। একই সঙ্গে আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির ভাইস চেয়ার হিসেবে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। আগামী ২০২৪-২৬ সাল পর্যন্ত সময়ে উক্ত পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। চলতি বছরের গত ২০ ফেব্রুয়ারি আইওএসকোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন মোলোনি স্বাক্ষরিত এক বার্তায় তাকে এ তথ্য জানানো হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য প্রথম কোনো বড় অর্জন। এতে দেশের পুঁজিবাজার অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছেছে।


সবজি-পেঁয়াজের দাম কমলেও বেড়েছে মাছ-মাংসের দাম

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদে ঘরমুখো মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করায় চাহিদা কমে গেছে শাকসবজি, পেঁয়াজ ও ফলমূলসহ স্থানীয় মৌসুমি ফলের। তাই তরমুজ, আনারস ও আমদানি করা ফলের দাম কিছুটা কমেছে। এদিকে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, গম ও আটার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও গরু ও মুরগির মাংস এবং মাছের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, মালিবাগ, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজ শুক্রবার গরুর মাংস, মুরগি ও মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এসব পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদ সামনে রেখে মাংসের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের কসাই আবু বকর জানান, প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস বা ছাগলের মাংস যথাক্রমে ১০০০ ও ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার পরিদর্শন করেছেন, তাই হঠাৎ করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে গত ঈদের চেয়ে এবার পশুর সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় মাংস ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমেছে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার কারওয়ান বাজারের বাইরে মান ভেদে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। মান ভেদে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১৮০ টাকায়, যা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে।

দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিরও। গত সপ্তাহে ছিল ২২০ টাকা তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায়। এ ছাড়া সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে।

একইভাবে প্রতি কেজি কক মুরগি ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির খাবার ও ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায় মুরগির দাম বেড়ে গিয়েছে।

এদিকে চাহিদা কমে যাওয়ায় শুক্রবার প্রায় সব সবজির দাম কমলেও ঢেঁড়স, সজিনা, মটরশুঁটি ও করলার মতো নতুন সবজি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দামের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। মৌসুম শেষ হওয়ায় বেড়েছে টমেটোর দাম। ভালো মানের টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। বেগুনসহ অন্যান্য সবজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ, চালকুমড়া ও ফুলকপি প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, আদা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম কিছুটা কমিয়ে প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৭০ টাকা এবং গৃহপালিত মুরগির ডিম প্রতি হালি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে কমে গেছে তরমুজের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের তরমুজ প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকার এবং মানের ভিত্তিতে প্রতি পিস আনারস ২০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেয়ারা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পাকা পেঁপে যা রমজানের প্রথম সপ্তাহে ২০০ টাকা বা তার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছিল, তা ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আপেল, মাল্টা, কমলা ও নাশপাতি ২৬০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি রমজানের প্রথম ২ সপ্তাহে এই ফলগুলো ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো।

এ সপ্তাহে কাঁচাবাজারের অন্যান্য পণ্যের দামে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।


ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক প্রস্তাব আগামী বাজেটে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এনবিআরের পরামর্শক কমিটির সভায় অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার, ব্যাংক ঋণের সুদহার হ্রাসসহ ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের মতামতের গুরুত্ব দেয়। যে উন্নয়ন-অগ্রগতি হচ্ছে, সেখানে কেউ বাদ থাকুক সেটা আমরা চাই না। আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রস্তাবসমূহ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে এনবিআরের ৪৪তম পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সভায় এফবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা ও উদ্যোক্তারা বক্তব্য দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সরকার এবং বেসরকারি খাত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করব। বাজেট প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া। সব কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের মতামতের গুরুত্ব থাকবে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আগামী বাজেটের জন্য যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে। সবাই যদি কেবল অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য করতে চান, তাহলে রপ্তানি বাড়বে না। তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে।

ব্যবসায়ীরা কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ র্নিমাণে সরকার ও ব্যবসায়ী সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে আমাদের যেমন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও রাজস্ব ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, একই সঙ্গে কর আহরণের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে। এই সক্ষমতা যদি অর্জন করতে না পারি, তাহলে উন্নত বিশ্বে আমরা যেতে পারব না। ব্যবসায় ব্যয় কমানো কিংবা ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে এনবিআর কাজ করছে বলে জানান তিনি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, কর সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ব্যবসায়ীর যদি অসন্তোষ থেকে থাকে, আমি মনে করি সেটি ব্যক্তিপর্যায়ের। এই অসন্তোষ সংশ্লিষ্ট কমিশনার কিংবা রাজস্ব বোর্ডে কথা বলে সমাধান করা সম্ভব বলে তিনি আশ্বস্ত করেন ব্যবসায়ীদের।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যবসায় খরচ কমাতে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যসহ শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার, ব্যাংক ঋণের সুদহার হ্রাসসহ আমদানি পণ্যের যথাযথ শুল্কায়ন এবং পণ্য খালাসের জটিলতা দূর করতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অটোমেশনের প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে তিনি রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পণ্য, কাঁচামাল ও সেবা ক্রয়কে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।

মাহবুবুল আলম মূল্যস্ফীতি এবং মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় রেখে আগামী জাতীয় বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাক থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।

আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে ব্যাংকিং কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেউ যদি এনবিআরের কোনো কর্মকর্তার কারণে হয়রানির শিকার হন। সেই অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। তবে এফবিসিআিই এবং এনবিআরের সমন্বয়ে একটা অভিযোগ সেল গঠন করা হলে ব্যবসায়ীরা সেখানে অভিযোগ করতে পারবেন। আগামী বাজেটে এ ধরনের একটা অভিযোগ সেল গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

এ ছাড়া এফবিসিসিআই ব্যবসা সহজীকরণের সেবা বাড়াতে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ নামে একটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব করেন।

মাহবুবুল আলম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর হার ১ শতাংশ হতে হ্রাস করে পূর্বের ন্যায় ০ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনিসহ সকল প্রকার কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেন। আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট শিল্প, বিনিয়োগ ও জনবান্ধব হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

সভায় এনবিআরের তিনজন সদস্য আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস সম্পর্কিত কার্যক্রমের ওপর আলাদা তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।


১৪ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১০ গুণ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানি সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিগত কয়েক বছরে নতুন বাজারগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত ১৪ বছরে এ হার বেড়েছে ১০ গুণ। এ সময়ের ব্যবধানে নতুন বাজারে রপ্তানি ৮৪৯ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন সময়কালে ৩ বছরে নতুন করে দেশে ৩৯৩টি কারখানা বিজিএমইএর সদস্য পদ গ্রহণ করেছে বলে জানান।

বিজিএমইএ কার্যালয়ে ‘রোডম্যাপ টু রিকভারি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন অনুষ্ঠানে আজ এসব তথ্য জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। এ সময় সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ফারুখ হাসান বলেন, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নতুন বাজারগুলোতে আমাদের পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে তুরস্কে ৬৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সৌদি আরবে ৪৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, চীনে ৪৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রাশিয়ায় ২৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। বর্তমান সংকটময় সময়ে নতুন বাজারে প্রবৃদ্ধি আমাদের রপ্তানিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির আগে, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ছিল ৪০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। সে বছর মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ ছিল পোশাক খাতের অবদান। বছরটিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পরের অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় আমাদের পোশাক রপ্তানি নেমে আসে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা আগের বছরের থেকে প্রায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ধারাবাহিকতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। আর সবশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে পোশাকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এসেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বিজিএমইএ সভাপাতি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংকটে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একই সময় বেশকিছু নতুন কারখানা ও নতুন বিনিয়োগ এসেছে। আমরা বিজিএমইএর দায়িত্ব নেওয়ার পরে (২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত) ৩৯৩টি নতুন কারখানা বিজিএমইএর সদস্য পদ গ্রহণ করেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এবং পোশাকের খুচরা বিক্রিতে কিছুটা গতি সঞ্চার হওয়ায় চলতি জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আশার বিষয় হচ্ছে, শিল্পে আমরা নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের পদচারণা দেখতে পাচ্ছি।

সংগঠনের বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ আর মাত্র দুই দিন পর সফলভাবে শেষ হতে যাচ্ছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তিনটি বছর আমরা বাজার সম্প্রসারণের নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা গত বছর জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়াতে দিনব্যাপী বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিট আয়োজন করেছি। আরও বেশকিছু অপ্রচলিত বাজার নিয়ে কাজ করছি, যেমন- দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব ও ইরাক। যদি এই উদ্যোগগুলো চলমান রাখতে পারি তাহলে এই বাজারগুলোতে রপ্তানি আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সবুজ শিল্পায়নে অগ্রগতি চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে লিড সনদপ্রাপ্ত গ্রিন কারখানার সংখ্যা বেড়ে ২১৪টিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রিন কারখানার সংখ্যা ছিল ১২৮টি। গত তিন বছর ৩ মাসে নতুন ৮৬টি কারখানা যোগ হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫টি প্লাটিনাম, ৩৮টি গোল্ড, একটি সিলভার ও দুটি সাধারণ সার্টিফায়েড মানের। শুধু ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত মোট আটটি পোশাক কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। যার মধ্যে চারটিই ছিল প্লাটিনাম, আর চারটি গোল্ড সনদ প্রাপ্ত। এর মধ্যে একটি বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্বে ‘শীর্ষ দুটি কারখানাই’ বাংলাদেশের। আর শীর্ষ ২৩ গ্রিন কারখানার মধ্যে ২১টি বাংলাদেশের।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর নতুন নেতৃত্বের মধ্যে পরিচালক আব্দুল্লা হিল রাকিব, নুসরাত বারি আশা, শোভন ইসলামসহ উপস্থিত ছিলেন।


ফোর্বসের শতকোটিপতিদের নতুন তালিকায় শীর্ষে যারা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

চলতি বছরটি বিশ্বের শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ারদের দারুণ কাটছে। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো বাধা পেরিয়ে ধনীদের সম্পদমূল্য বাড়ছেই। গত এক বছরে তাদের সম্পদমূল্য বেড়েছে দুই লাখ কোটি ডলার। ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০২৪ সালের ধনীদের নতুন তালিকায় এ তথ্য জানিয়েছে।

ধনীদের তালিকায় এখন সবার ওপরে বার্নার্ড আর্নল্ট ও পরিবার। ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিচেস্ট ইন ২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পরিবার নিজেদের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বার্নার্ড আর্নল্ট ইলন মাস্ককে হটিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর আসন লাভ করেন। তার সম্পদমূল্য ২২ হাজার ২৪০ কোটি ডলার।

২০২৪ সালের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অ্যামাজনের সহপ্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস- তার সম্পদমূল্য ১৯ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার। তৃতীয় স্থানে আছেন ইলন মাস্ক। টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এই ধনীর সম্পদমূল্য ১৯ হাজার ২০ কোটি ডলার। ১৭ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। পঞ্চম স্থানে আছেন ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তাঁর সম্পদমূল্য ১৫ হাজার ৩৪০ কোটি ডলার।

বিশ্বে এখন যত শতকোটিপতি আছেন, অতীতে তাঁদের সংখ্যা কখনোই এত বেশি ছিল না। এখন সব মিলিয়ে শতকোটিপতি আছেন ২ হাজার ৭৮১ জন; এই সংখ্যাটা গত বছরের চেয়ে ১৪১ জন বেশি এবং ২০২১ সালে যখন শতকোটিপতিদের সংখ্যাগত সর্বশেষ রেকর্ড স্থাপিত হয়, তার চেয়ে ২৬ জন বেশি।

শতকোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাঁদের মোট সম্পদমূল্যও স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে এখন তাঁদের সম্পদমূল্য ১৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার; এই পরিসংখ্যান ২০২৩ সালের চেয়ে দুই লাখ কোটি ডলার বেশি এবং ২০২১ সালের সর্বশেষ রেকর্ডের চেয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার বেশি।

শতকোটিপতিদের তালিকায় স্থান পাওয়া দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের সম্পদমূল্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে, মাত্র এক-চতুর্থাংশ ধনীর সম্পদমূল্য কমেছে। শীর্ষ ২০ জন ধনীর সম্পদমূল্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এদের সম্পদমূল্য বেড়েছে সামগ্রিকভাবে ৭০ হাজার কোটি ডলার। জাতীয়তার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে মার্কিন ধনীদের। তালিকায় এখন মার্কিন ধনীদের সংখ্যা রেকর্ড ৮১৩ জনে উঠেছে; তাঁদের সম্মিলিত সম্পদমূল্য ৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার।

ফোর্বসের ধনীদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছেন দানবীর, ওরাকল অব ওমাহা ও বিনিয়োগ গুরু হিসেবে খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। আজ তাঁর সম্পদমূল্য ১৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। ৭ম স্থানে আছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস; তাঁর সম্পদমূল্য ১৩ হাজার ৭০ কোটি ডলার। অষ্টম স্থানে আছেন অ্যালফাবেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ; তাঁর সম্পদমূল্য ১২ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। ১২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে ৯ম স্থানে আছেন লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্সের স্বত্বাধিকারী স্টিভ বালমার এবং অ্যালফাবেটের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা সার্জেই ব্রিন আছেন ৯ম স্থানে। তার সম্পদমূল্য ১২ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার।

শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা বার্নার্ড আর্নল্ট পরিবার ছাড়া বাকি সবাই মার্কিন; আর্নল্ট পরিবার ফরাসি।

ধনীদের তালিকায় মার্কিনদের পর সবচেয়ে বেশি আছেন চীনারা; হংকংয়ের নাগরিকসহ চীনের মূল ভূখণ্ডের ধনীদের মধ্যে শতকোটিপতির সংখ্যা ৪৭৩ জন। যদিও দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। দেশটির আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতে যে সংকট চলছে, তার জেরে সামগ্রিকভাবে চীনা ধনীদের সম্পদমূল্য কমেছে ৩০ হাজার কোটি ডলার। দুই শ বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে ভারত, দেশটির ধনীদের জন্য এটি নতুন রেকর্ড। অর্থাৎ এর আগে আর কখনো এতসংখ্যক ভারতীয় শতকোটিপতি ছিলেন না।

তালিকায় ১১তম স্থানে আছেন ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানি। তার সম্পদমূল্য ১১ হাজার ৬২০ কোটি ডলার। আরেক ভারতীয় শীর্ষ ধনী ও একসময় এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির সম্পদমূল্য ৮ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার- তার অবস্থান এখন ১৭তম।

২০২৪ সালের শীর্ষ এই শতকোটিপতিদের তালিকা তৈরিতে ফোর্বস গত ৮ মার্চ থেকে স্টকমূল্য ও মুদ্রার বিনিময় মূল্য ব্যবহার করছে। তবে গতকাল বেশির ভাগ ধনীর সম্পদমূল্য কমেছে।


২৫ কেজি সোনা নিলামে বিক্রি করল বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৬ বছর পর নিলামে সোনা বিক্রি করল। বিভিন্ন মানের ২৫ কেজি ৩১২ গ্রাম সোনা বিক্রি করা হয়েছে ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। আজ বুধবার সব প্রক্রিয়া শেষে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভেনাস জুয়েলার্সের কাছে এসব সোনা হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে এই সোনা বিক্রির জন্য ২০২২ সালের নভেম্বরে নিলাম ডেকেও উপযুক্ত দরদাতা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আর বিক্রি করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক এ বিষয়ে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার জব্দ করা সোনা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির বিপরীতে পাওয়া ১৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কাস্টমসের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় নিলামের মাধ্যমে এ সোনা বিক্রি করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই নিলামের মাধ্যমে ২১ কেজি ৮২২ গ্রাম সোনা বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছরের শুরুর দিকে তিন ধাপে আরও ২৫, ২১ ও ২০ কেজি বিক্রি করা হয়। আশানুরূপ দরদাতা না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন নিলাম ডাকা বন্ধ রাখা হয়েছিল।


banner close