জালিয়াতি বা ছলচাতুরির মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে জীবন বিমা কোম্পানি যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে। এফডিআর বা মেয়াদি আমানতের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না কোম্পানিটি। মাসে মাসে কোনো মুনাফাও দিচ্ছে না।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ৯৩ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা তুলেছে যমুনা লাইফ। এক বছরে ৯ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিপুল এই অর্থ তুলে নেয় কোম্পানিটি। পরে সেই টাকাগুলো গ্রাহকদের না জানিয়ে ১৫-২০ বছর মেয়াদি বিমা পলিসি করে ফেলে যমুনা লাইফ। এতে প্রতারণার শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা। কোম্পানিটির দাবি, সব গ্রাহক যমুনা লাইফে বিমা করেছেন। ফলে অর্থ ফেরত না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
চট্টগ্রামে যারা এফডিআর করেছেন তাদের একজন রিপন বড়ুয়া। দীর্ঘদিন পর প্রবাস থেকে ফিরে নিজের সঞ্চিত কয়েক লাখ টাকা ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে রেখেছিলেন তিনি। মুনাফাও ভালো পাচ্ছিলেন। হঠাৎ দুই বছর আগে তার বাসার উল্টো পাশের বাসায় বসবাস করা যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মী মোহাম্মদ রায়হানের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে রায়হান রিপনকে একদিন জানান, তাদের কোম্পানি একটি এক বছর মেয়াদি এফডিআরের অফার দিচ্ছে। সেখানে ৫ লাখ টাকা রাখার জন্য মাসে প্রতি লাখের জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা করে মুনাফা দেয়ার কথাও জানান। অতিরিক্ত লাভের আশায় রিপন এরপর ৫ লাখ টাকা দেন।
রিপন বড়ুয়া দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এফডিআরের বিপরীতে প্রতি মাসেই লাখপ্রতি তারা ১ হাজার ৪০০ টাকা মুনাফা আমার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছিল। এক বছর যাওয়ার পর আমি আমার মূল টাকা তুলতে গেলে তারা আমাকে আরও এক বছর রাখতে বলেন। তারা বলেন, এখন থেকে প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে মুনাফা দেব। আমি আর তাদের কিছু বলিনি এবং টাকাও তুলিনি। ছয় মাস ঠিকঠাক মুনাফা দেয়। এরপর মুনাফা দেয়া বন্ধ হয়ে গেলে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি বুঝতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি। তারা জাল কাগজপত্র বানিয়ে এফডিআরকে বিমায় রূপান্তর করেছে। রায়হানকে বারবার বিষয়টি জানিয়েও সমাধান পাইনি। এখন আমি আর মুনাফা নয়, আমার মূল টাকাটা ফেরত চাই।’
চট্টগ্রামে আরও যারা এফডিআর করেছেন তাদের আরেকজন স্কুলশিক্ষক বদিউল আলম। এক বছরের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সাড়ে ৬ লাখ টাকার এফডিআর করার জন্য অর্থ নেয় যমুনা লাইফ। বদিউল আলম প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম অনুযায়ী রাজধানীর রূপালী ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকে যমুনা লাইফের অ্যাকাউন্টে মোট সাড়ে ৬ লাখ টাকা জমা দেন। প্রথম আট মাসে তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা দেয় যমুনা লাইফ। এরপর টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয় কোম্পানিটি। বদিউল আলম পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটিতে যোগাযোগ করলে তাকে জানানো হয় তার পুরো টাকা ২০ বছরের জন্য জীবন বিমা পলিসি করা হয়েছে। অথচ তার কাছ থেকে এফডিআর করার শর্ত দিয়ে টাকা নেয়া হয়েছিল। যমুনা লাইফ সে সময় এফডিআর-সংক্রান্ত এক সার্কুলার প্রকাশ করেছিল। সেই সার্কুলারে বলা হয়, এককালীন এফডিআরের ওপর ইনসেনটিভ ঘোষণা করা হলো।
এ বিষয়ে বদিউল আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নিয়েছে যমুনা লাইফ। আমাকে না জানিয়ে ২০ বছরের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকার বিমা করেছে যমুনা লাইফ। অথচ ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের জন্য টাকা জমা দিয়েছিলাম। যমুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল হাসান খন্দকারের সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, যমুনার এজেন্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে। আমি তো যমুনা লাইফের অ্যাকাউন্টেই টাকা জমা দিয়েছিলাম। তাহলে কেন এমডি এখন এ কথা বলবেন। এ রকম অব্যবস্থাপনায় তিনিও (এমডি) দায়ী।’
যমুনা লাইফের এমডি কামরুল হাসান খন্দকারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছি, বিকেলে কল দেন, তখন কথা বলব।’ এরপর টানা তিন দিন একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
চট্টগ্রামে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে এক সার্কুলার দেয় যমুনা লাইফ। যেখানে উল্লেখ থাকে এফডিআর করলে সুদ দেয়া হবে। এই সার্কুলার দেখিয়ে যমুনা লাইফের এজেন্টরা বাড়তি সুদ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে লোকজনকে এফডিআর করতে বলে। যমুনা লাইফ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চট্টগ্রামে গিয়েও সাধারণ মানুষদের এফডিআর করতে বলেন। এর মধ্যে অন্যতম যমুনা লাইফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন ও সহকারী উপব্যবস্থপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দুজন চট্টগ্রামে প্রতারণার প্রধান হোতা।
চট্টগ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, বিমা করার নির্ধারিত বয়স পার হয়ে গেলেও এমন অনেকজনকে বাড়তি সুদ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে জাল সনদপত্র ও ভোটার আইডি নিজেরাই তৈরি করেছে যমুনা লাইফ। ৬৫ বছর বয়সী একজনকে জাল সনদ বানিয়ে বয়স পঞ্চাশের কম করা হয়। আবার অনেকের কর্মস্থলের নাম পরিবর্তন করে অন্য প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সনদপত্র তৈরি করেছে যমুনা লাইফ। এ রকম অসংখ্য গ্রাহকের জাল সনদ বানিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বেসরকারি এ বিমা কোম্পানিটি। একাধিক এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল হাসান খন্দকারের নির্দেশে তারা অসংখ্যজনের কাছ থেকে এফডিআরের কথা বলে গ্রাহকদের নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বলেন। এসব গ্রাহক কয়েক মাস কোম্পানি থেকে মুনাফা পেলেও একসময় সেটা দেয়া বন্ধ করে দেয় যমুনা লাইফ। এজেন্ট এবং গ্রাহকদের কোনো কিছু না জানিয়ে তাদের টাকা ১৫-২০ বছর মেয়াদি জীবন বিমা পলিসি করে দেয়।
একাধিক এজেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন এমডি এজেন্টদের দোষারোপ করছেন। অথচ এমডি এফডিআরে মুনাফার কথা বলে অ্যাকাউন্ট খোলাতে বলেছেন। যমুনা লাইফের এমডি, সাবেক অতিরিক্ত এমডি, ভাইস চেয়ারম্যানসহ কোম্পানিটির কয়েকজন কর্মকর্তা এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কারণ গ্রাহকদের সবাই এফডিআরএর টাকা যমুনা লাইফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন। কোম্পানি থেকেই এজেন্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে কোম্পানিতে এফডিআর করা হলে ৯ শতাংশ সুদ দেয়া হবে এবং এক বছর পর পুরো অর্থ ফেরত দেয়া হবে। পরে সেই টাকা একেক জনের দীর্ঘমেয়াদি বিমা পলিসি করা হয়েছে। এতে গ্রাহকদের প্রতারিত করা হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইডিআরএ একটা অকার্যকর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইডিআরএ যারা নানা সময়ে দায়িত্বে ছিলেন তারাও নানা রকমের অনিয়মের মধ্যে জড়িয়ে গেছেন। কারণ আইডিআরএর দায়িত্ব এসব কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা।’ তিনি বলেন, ‘গ্রাহক এফডিআরের জন্য বিমা কোম্পানিতে অর্থ জমা রাখছে, কোনোভাবেই তাকে না জানিয়ে কিংবা গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া বিমা পলিসি নেয়া যাবে না। কোনো কোম্পানি এ রকম করলে তার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া উচিত।’
তাড়নার শিকার হওয়া গ্রাহকরা যমুনা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান খন্দকার, অতিরিক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন, সহকারী অতিরিক্ত ব্যবস্থপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম, উন্নয়ন ও প্রশাসন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদুল হক শামীম- এই চারজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের মূল হোতা রবিউল ইসলাম। এ ছাড়া সব অনিয়ম কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এ চারজন কর্মকর্তার মাধ্যমে।
প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় গ্রাহকদের করা মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক অবশ্য এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে চাননি। জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না।’
এসব গ্রাহক আইডিআরএতে লিখিত চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে আইডিআরএ এখনো কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। এ বিষয়ে আইডিআরএর পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইডিআরএ কাজ করছে। পর্যালোচনা করে আপনাদের জানানো হবে।’
শুধু গ্রাহকদের নয়, কোম্পানিটি নিজেদের কর্মীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে। তাদের একজন হলেন সাজু দাশ। তিনি কোম্পানির চট্টগ্রাম শাখায় ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ছিলেন। শাখা ব্যবস্থাপক হলেও তিনি মূলত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অধীনেই ছিলেন। তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী সাজু বিভিন্নজনের কাছ থেকে কখনো এফডিআর, কখনো ডিপোজিট পেনশন স্কিমের (ডিপিএস) নামে কোম্পানিকে টাকা এনে দিয়েছেন। এসবের জন্য কোম্পানির নিয়মে কমিশন থাকলেও কখনো সেটি পাননি সাজু।
সাজু দাশ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ওপর গ্রাহক বাড়ানোর চাপ থাকত। সে জন্য নিজের অন্তত ১৪ জন আত্মীয়ের কারও ১ লাখ, কারও ২ লাখ ও কারও ৫ লাখ টাকা নিয়ে কোম্পানিতে জমা দিয়েছি। কোম্পানির শর্ত অনুযায়ী আত্মীয়দের বলেছিলাম তাদের প্রতি মাসেই ভালো অঙ্কের মুনাফা দেয়া হবে। আর টাকা আনার বিপরীতে নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কমিশন দেয়ার কথা থাকলেও তা কখনো দেয়া হয়নি। আমাকে মাসে কখনো ৫ হাজার, কখনো ১০ হাজার বেতনের নামে দেয়া হতো। একপর্যায়ে গত বছর প্রতারিত কয়েকজন গ্রাহক মামলা করলে আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। এই কোম্পানির সঙ্গে বড় বড় মানুষ জড়িত। তাদের দেখে কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলাম, আত্মীয়স্বজনের টাকা এনে দিয়েছিলাম। এখন আমি ফেঁসে গেছি। এখন আত্মীয়রা নিয়মিতই তাদের মূল টাকার জন্য আমাকে বিরক্ত করছেন। এই যন্ত্রণায় বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে সবজির দাম বেড়েছে হু-হু করে- যেখানে ১০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। আলু ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজিই ক্রেতার নাগালের বাইরে। ভালো বোরো ফলন সত্ত্বেও চালের দামও প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুসারে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে, যা গত আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ০.০৭ শতাংশ পয়েন্ট।
মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশ মানে হলো- ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কেনা যেত, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে সেটির জন্য গুণতে হয়েছে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সা।
বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। অথচ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে। এই লক্ষ্য অর্জনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রহণ করেছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। তবুও লক্ষ্য পূরণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
সিপিআই বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সময় খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা এক মাস আগে ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ, দুই খাতেই পণ্যমূল্য বেড়েছে।
গ্রাম ও শহরের তুলনায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় শহরের চেয়ে বেশি বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামীণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশে, যেখানে শহরাঞ্চলে তা ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বৃদ্ধির চাপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে।
গ্রামাঞ্চলে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে খাদ্য খাতে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।
তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এর আগের বছর ২০২৩ সালে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ- খাদ্যে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ২০২২ সালে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যেখানে খাদ্যে ছিল ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এখনো বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। বর্তমানে ভারতে মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২ দশমিক ২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভুটানে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্ববাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশীয় বাজারে সরবরাহ ব্যয়, পরিবহন খরচ ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
ডলারের দাম ধরে রাখতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে আরও ১০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার (১০৪ মিলিয়ন ডলার) কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি বছর জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ডলারের দরে এক রকম স্থিতিশীলতা জরুরি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার না কিনলে বৈদেশিক মুদ্রাটির দর পড়ে যেত।
আর ডলারের দর বেড়ে যাওয়া যেমন অর্থনীতির জন্য ভালো নয়, তেমনি কমে যাওয়াও ভালো নয়।
বর্তমানে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার জন্য রেমিট্যান্স প্রেরক ও রপ্তানিকারকরা সুবিধা পাচ্ছেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকও এ দুই সূচকের প্রবাহ ইতিবাচক রাখার জন্যই নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছে। অন্যদিকে ডলার কেনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ-ও বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্স (ডিবিপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্বে আবদ্ধ হয়েছে।
এই অংশীদারিত্বের মূল লক্ষ্য হলো- ‘ডিজিটাল ফ্যাক্টরি পাসপোর্ট (ডিএফপি)’ নামে একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা চালু করা। এটি হবে এআইচালিত একটি ইএসজি (পরিবেশগত, সামাজিক ও সুশাসন) কমপ্লায়েন্স ফ্রেমওয়ার্ক, যা দেশের পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়াকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বাড়াবে এবং বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।
এ বিষয়ে গত রোববার উত্তরাস্থ বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএ এবং ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি ভিদিয়া অমৃতখান, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান এবং পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল।
ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের পক্ষ থেকে ছিলেন নাবিল চৌধুরী ও হায়দার আনওয়ার।
এই ডিজিটাল ফ্যাক্টরি পাসপোর্ট একটি সমন্বিত ডিজিটাল টুল হিসেবে কাজ করবে, যা কারখানার তথ্য ব্যবস্থাপনা ও রিপোর্টিং প্রক্রিয়াকে সুবিন্যস্ত করবে। বিশেষ করে পোশাক কারখানার সকল তথ্য, যেমন- উৎপাদন প্রক্রিয়া, পরিবেশগত প্রভাব, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণ এবং সাপ্লাইচেইনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডেটাগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসবে। ফলে বিভিন্ন ক্রেতা ও সংস্থার জন্য বারবার অডিট বা নিরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা কমবে এবং টেকসই কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণে দক্ষতা বাড়বে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমাদের পোশাকশিল্পের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল রূপান্তর ও উদ্ভাবন অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, বিজিএমইএ ও ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের এই অংশীদারিত্ব পোশাকশিল্পে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন ও প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে বিজিএমইএর চলমান প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সর্বোপরি, একটি মানসম্মত ও এআইচালিত পদ্ধতি প্রদানের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি কারখানাগুলোকে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের শর্ত পূরণে সহায়তা করবে এবং বৈশ্বিক সোর্সিং হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানকে ভবিষ্যতে আরও সুরক্ষিত করবে।
ডিজিটাল ব্রিজ পার্টনার্সের প্রতিনিধিরা ডিজিটাল সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই শিল্পকে আরও বেশি দক্ষতা ও স্বচ্ছতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের জন্য বৈদেশিক লেনদেন প্রক্রিয়া আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে নিবন্ধিত এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক ক্রেডিট, ডেবিট অথবা প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে বছরে সর্বোচ্চ তিন হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারবে।
গত রোববার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় বৈদেশিক লেনদেন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও কার্যকর করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেলের পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিশোধের সুযোগ তৈরি করাই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
সার্কুলার অনুযায়ী, প্রতিটি নিবন্ধিত এসএমই প্রতিষ্ঠান তাদের মনোনীত কর্মকর্তার নামে রিফিলযোগ্য আন্তর্জাতিক কার্ড অথবা ‘এসএমই কার্ড’ নিতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে এই কার্ডে সর্বোচ্চ ৬০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত লোড করা যাবে, যা বৈধ অনলাইন খরচ পরিশোধের জন্য ব্যবহৃত হবে। তবে কার্ড লেনদেন ও সরাসরি রেমিট্যান্স- এই দুটি ক্ষেত্র মিলিয়ে বছরে মোট বৈদেশিক লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন হাজার মার্কিন ডলার। এই অর্থ আন্তর্জাতিক সেমিনার, সম্মেলন, প্রযুক্তিগত সহায়তা ফি, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ব্যয় মেটাতে ব্যবহার করা যাবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কেবল একটি অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের মাধ্যমে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। শাখা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।
লেনদেনের সময় ব্যাংকগুলোকে প্রচলিত নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। উৎস কর, ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি গ্রাহক যাচাই, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ সংক্রান্ত সব নীতিমালা মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নামে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ১২টি আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার ও ল-ফার্মের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) চুক্তি করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে সোমবার অনুষ্ঠিত এক সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উপস্থিতিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ওমর ফারুক খান বাসসকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থের উৎস অনুসন্ধান ও ফেরত আনার কাজে যুক্ত হবে।’
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা দেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কিছু ব্যাংক অন্যদের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম গঠন করে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে। চুক্তি সম্পন্ন হলে পুনরুদ্ধারকৃত অর্থ কীভাবে জমা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দেশের ১১টি শিল্পগোষ্ঠীকে শনাক্ত করেছে। যার মধ্যে নাসা ও এস আলম গ্রুপের নাম রয়েছে।
ওমর ফারুক খান বলেন, ‘আমরা নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (এনডিএ) আওতায় এসব সম্পদ পুনরুদ্ধার সংস্থার সঙ্গে কাজ করব। কিছু প্রাথমিক আলোচনাও শুরু হয়েছে।’
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অর্থপাচারের অভিযোগে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, সিকদার গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল ও সামিটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের উপকারে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপকৃত করেছে বলে ধারণা করা হয়।
দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো দুই লাখ টাকায় উঠেছে দাম। নতুন করে প্রতি ভরিতে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) দাম বেড়েছে তিন হাজার ১৫০ টাকা। এতে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ বিক্রি হবে দুই লাখ ৭২৬ টাকায়। আজ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে নতুন এ দর কার্যকর হবে।
সোমবার রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাম বৃদ্ধির তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজুস।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি দাম বেড়ে এক লাখ ৯১ হাজার ৬০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি দাম এক লাখ ৬৪ হাজার ২২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি দাম এক লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপরিবর্তিত আছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ৮১১ টাকা।
২১ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ৬৮৩ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ২৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬ অক্টোবর স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৯২৯.৯১ ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে ডিসেম্বর ডেলিভারির মার্কিন স্বর্ণ ফিউচার ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ে এবং দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৫৪.৭০ ডলারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়েনের দুর্বলতা, মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়েছে। কেসিএম ট্রেডের বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, কম সুদের পরিবেশে স্বর্ণই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ।
২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম ২৭ শতাংশ বেড়েছিল, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডের চাহিদা, ডলারের দুর্বলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ভূমিকা রেখেছে।
অন্য মূল্যবান ধাতুর বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার স্পট সিলভার ৪৮.৫৩ ডলার, প্লাটিনাম ১,৬২৩.৮৮ ডলার এবং প্যালাডিয়াম ১,২৭৫.৬৫ ডলারে পৌঁছেছে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটাতে গত সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এলএনজি বোঝাই ১০টি কার্গো বাংলাদেশে পৌঁছেছে। রোববার সরকারি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার পরিচালক এ. কে. এম. মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, বিদেশি এলএনজি উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি চুক্তি এবং অন দ্য স্পট ক্রয় নীতিমালা মেনে গত সেপ্টেম্বরে এলএনজি বোঝাই এসব কার্গো গ্রহণ করা হয়েছে।
এই ১০টি কার্গোর মধ্যে কাতার এনার্জি চারটি কার্গো সরবরাহ করেছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ভিত্তিতে। ওমানের ওকিউ ট্রেডিং (ওকিউটি) দুটি কার্গো দিয়েছে—একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং একটি স্বল্পমেয়াদি চুক্তির আওতায়।
তিনি আরও জানান, বাকি চারটি এলএনজি কার্গো স্পট মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যাতে দেশে জ্বালানি সরবরাহে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এর আগে আগস্ট মাসে সরকার ১১টি এলএনজি কার্গো সংগ্রহ করেছিল, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩.৬৫ কোটি এমএমবিটিইউ।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, প্রতিটি কার্গোতে গড়ে ৩২ লাখ এমএমবিটিইউ এলএনজি থাকে।
সরকারের নিয়মিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী, সাপ্তাহিক বৈঠকে তরল গ্যাসের চাহিদা পর্যালোচনা করে এলএনজি সংগ্রহের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।
বিশ্বের বৃহত্তম হালাল পণ্য প্রদর্শনী মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (মিহাস) ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কসমেটিক্স ও স্কিনকেয়ার শিল্প নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছে।
রোববার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া দেশি কোম্পানিগুলোর পণ্যের প্রতি ২১টি দেশের ১১৮টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও রিটেইলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ২৫ লাখ মার্কিন ডলারের সম্ভাব্য রপ্তানি অর্ডার পেয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে এবারে মোট ১২টি বুথ অংশ নেয়, যার মধ্যে দুটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ হাইকমিশন। খাদ্য, কসমেটিক্স, হস্তশিল্প, সিরামিক, পাটজাত এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতের পণ্য প্রদর্শিত হয়। হালাল সার্টিফায়েড কসমেটিক্স, স্কিনকেয়ার ও পার্সোনাল কেয়ার পণ্য মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে জায়গা করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ক্রেতারা বাংলাদেশে উৎপাদিত হালাল কসমেটিক্সের গুণগত মান, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং প্যাকেজিং দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রদর্শনীর সময় একাধিক দেশি কোম্পানি সরাসরি রপ্তানি অর্ডার পায় এবং ভবিষ্যতে প্রাইভেট লেবেল উৎপাদন ও প্যাকেজিং সহযোগিতায় প্রাথমিক সমঝোতা হয়।
মালয়েশিয়ার জাতীয় ঐক্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জেনারেল দাতো হাসলিনা বিনতে আবদুল হামিদ বাংলাদেশের পণ্যের মান ও উপস্থাপন দেখে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তৈরি হালাল পণ্যের মান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে এবং এটি বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রাখে।’
প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোছাম্মৎ শাহানারা মনিকা এবং বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবির) মহাপরিচালক বেবি রানী কর্মকার। তারা প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর স্টল পরিদর্শন করে পণ্যের মান ও প্যাকেজিংয়ের প্রশংসা করেন।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া রিমার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাশেদুল ইসলাম জানান, ‘রপ্তানির এই নতুন দিগন্ত শুধু আমাদের জন্য নয়, দেশের জন্যও গর্বের বিষয়।’
মিহাস ২০২৫-এ অংশ নেয় বিশ্বের ৮০টি দেশের ১ হাজার ১৯টি কোম্পানি, যেখানে ছিল ২ হাজার ৩৮০টিরও বেশি স্টল। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থী প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
আয়োজনের মধ্যে ছিল ইনভেস্টমেন্ট ও পারচেজিং মিশন, বিজনেস সেমিনার, অ্যাওয়ার্ড শো এবং নলেজ হাব।
চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৫.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৮৬ মিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ হাজার ৫৪৩ মিলিয়ন ডলার।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা দেশে ২ হাজার ৬৮৫ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ৪০৫ মিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৬ কোটি ৬৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে ২৫ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬২ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে আসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। আগস্টে প্রবাসীরা পাঠান ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা ছিল বছরের রেকর্ড। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সপ্রবাহ ছিল যথাক্রমে- জুলাইয়ে ১৯১.৩৭ কোটি ডলার; আগস্টে ২২২.১৩ কোটি ডলার; সেপ্টেম্বরে ২৪০.৪১ কোটি ডলার; অক্টোবরে ২৩৯.৫০ কোটি ডলার; নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার; ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার; জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার; ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার; মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার; এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার; মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলার।
এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার মোট ৩৯৫টি কোম্পানির ১৯ কোটি ৮৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৩টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। দিনের শেষে মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৭টি ট্রেডের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১৯ কোটি ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৯ টাকা।
সূচকের দিক থেকেও দিনটি ইতিবাচক ছিল। সব সূচক বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩১.৮৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫,৪৪৭.৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ১০.৭২ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ২,০৯২.৫৬ পয়েন্টে।
অন্যদিকে ডিএসই শরীয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ২.০৫ পয়েন্ট বেড়ে বর্তমানে ১,১৭৪.০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৮৩টির দর বেড়েছে, ১৪৭টির কমেছে এবং ৬৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
মূল্য অনুযায়ী লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি হলো: সিভিও পেট্রোলিয়াম, সোনালি পেপার, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, তৌফিকা ফুডস, ওরিয়ন ইনফিউশন, ডমিনেজ স্টিল, খান ব্রাদার্স পিপি, কে অ্যান্ড কিউ, বিএসসি এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানি:
এক্সিম ব্যাংক, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, এসআইবিএল, এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, সিভিও পেট্রোলিয়াম, রিলায়েন্স ১ম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, রহিমা ফুডস এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স।
দরপতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানি:
ট্রাস্ট ব্যাংক ১ম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইনটেক লিমিটেড, মিথুন নিটিং, এমএল ডায়িং, আইএসএন লিমিটেড, আনলিমা ইয়ার্ন, সেলভো কেমিক্যাল, এশিয়াটিক ল্যাব, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং আলহাজ টেক্সটাইল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিনের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সক্রিয় ছিল। ব্যাংক ও বিমা খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধিতে বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। মধ্যম মানের লেনদেনের সঙ্গে সূচকের ধারাবাহিক উত্থান বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসেই পণ্য রপ্তানিতে কিছুটা হোঁচট আসে। আয় কমে যায় ৩ শতাংশের মত। তৃতীয় মাসও চলে সেই ধারায়। এবার রপ্তানি আরও কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমে গেছে ৫ শতাংশের মতো।
গত বছরের একই মাসের চেয়ে মাসটিতে পরিমাণে রপ্তানি কমলো ১৭ কোটি ডলারেরও বেশি। রপ্তানির পরিমাণ নেমে আসে ৩৬৩ কোটি ডলারে, যা আগের সেপ্টেম্বরে ছিল ৩৮০ কোটি ডলারেরও বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশের মত। মূলত পোশাকের রপ্তানি এ হারে কমে যাবার প্রভাবেই গোটা রপ্তানি আয় নেতিবাচক ধারা চলছে। পোশাকের রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ২৮৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৩০১ কোটি ডলার।
একক মাসের হিসেবে রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ শতাংশের মত বেশি আছে।
এর কারণ, অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি বেশি হয় ২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় মাস রপ্তানি কমে ৩ শতাংশের মতো।
অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে কার্পেট রপ্তানি ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং হিমায়িত মাছ রপ্তানি ১২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বিষয়ে একব্যবসায়ী নেতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ধাক্কার প্রভাবে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয়েও প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে, কারণ বেশির ভাগ ক্রেতাই নতুন করে কোনো ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না। তারা এখন অতিরিক্ত ২০ শতাংশ রেসিপ্রোক্যাল শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রপ্তানিকারকদের পক্ষে এ অতিরিক্ত চাপ বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ তারা এরই মধ্যে প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয় এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবসহ বিভিন্ন ধরনের চাপে রয়েছেন।
এছাড়া, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। কারণ চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যোগ করেন বিকেএমইএ সভাপতি।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেনা, "এ ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে, আমাদের রপ্তানি আবারও পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করছি। এ সময়টায় রপ্তানিকারকদের ধৈর্য সহকারে ক্রেতাদের যে কোনো ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে।’
সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আজ (সোমবার) রাজধানীতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘সৌদি আরব-বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’।
সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এসএবিসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সামিটের লক্ষ্য হচ্ছে- সৌদি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের উপস্থিতি বাড়ানো এবং সীমিত সংখ্যক ক্রেতার ওপর নির্ভরতা কমানো।
রোববার গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসএবিসিসিআই সভাপতি আশরাফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই যৌথ উদ্যোগটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব গঠনে সহায়ক হবে। সামিটের মূল লক্ষ্য হলো- সৌদি বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি বাড়ানো, যাতে আন্তর্জাতিক ক্রেতার সীমিত নির্ভরতা কমানো যায়।’
সামিটে দুদেশের ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন।
২০ সদস্যের একটি সৌদি ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধিদল এই আয়োজনে অংশ নেবে, যা বিভিন্ন খাতে বিশাল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা উন্মোচনে সহায়ক হবে। সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন মাজদ আল উমরান গ্রুপের মালিক শেখ ওমর আবদুল হাফিজ আমির বখশ।
আগামীকাল ৭ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিতব্য সামিটের মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সামিটের সূচি অনুযায়ী, প্রথম দিন সৌদি প্রতিনিধিদলের ঢাকা আসবে এবং তাদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন। শেষ দিন, ৮ অক্টোবর, থাকবে বি২বি (ব্যবসায়িক) বৈঠক এবং সৌদি প্রতিনিধিদলের চূড়ান্ত সভা।
সৌদি বাজারে বাংলাদেশি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজিটাল ফিন্যান্স এবং পাটজাত পণ্য রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি, বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন খাতে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী, যা অতীতের দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের প্রচলিত ধারা থেকে একটি অগ্রগতি।
আশরাফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, পেট্রোকেমিক্যাল, স্টিল, কৃষিশিল্প, সবুজ প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা এবং সেমিকন্ডাকটরসহ বিভিন্ন উন্নত ও শিল্প খাতে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের প্রায় শতবর্ষী ব্যবসায়িক সংগঠন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)-এর পরিচালক পদে নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
ঋণ খেলাপি হওয়ায় ও পুলিশি প্রতিবেদন ঠিক না থাকায় তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ৮ জন। আর চূড়ান্তভাবে প্রার্থিতা পেয়েছেন ৬৩ জন। তবে, পরিচালক পদের জন্য লড়তে হবে ৫৭ জনকে। অন্যদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক হচ্ছেন টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপে তিনজন।
রোববার প্রকাশিত বৈধ প্রার্থী তালিকা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
নির্বাচন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চূড়ান্ত তালিকায় সাধারণ শ্রেণি থেকে ৪১ জন, সহযোগী শ্রেণি থেকে ১৬ জন এবং ট্রেড ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণি থেকে যথাক্রমে ৩ জন করে মিলে মোট ৬৩ জন প্রার্থী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
এর আগে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় মোট ৭১টি আবেদন জমা পড়ে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ৩৫টি মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল তারা ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপিল করার সুযোগ পান। এরপর ২৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুনানি শেষে আজ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
চিটাগং চেম্বারের সহকারী সচিব মো. তারেক বলেন, ‘মনোনয়ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এতে সকল শ্রেণি থেকে বৈধ প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের জন্য এখন প্রস্তুতি শুরু হবে। পাশাপাশি কেউ যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চান, তারা তা ৮ অক্টোবর দুপুর ১টার মধ্যে আবেদন করবেন।’