বৈশ্বিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। একদিকে স্বস্তি দিতে গিয়ে অন্য দিকে টান পড়ছে। প্রতি মুহূর্তে খেয়াল রাখতে হচ্ছে আইএমএফের শর্ত; যেন কোনো অবস্থাতেই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো আটকে না যায়। অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ ফের চড়ছে। রোজার ধাক্কায় চলতি মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অভাস দিয়েছেন। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে ইতিমধ্যেই জোর রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অর্থনীতিতে টানাপোড়েন, আইএমএফের নানা শর্ত আর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বড় বাজেট দিতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর চলতি বছর ৮ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন বাজেট। সে হিসাবে আগামী বাজেটের ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) বাস্তবায়ন করবে বর্তমান সরকার। আর নতুন সরকার বাস্তবায়ন করবে বাকি ছয় মাস জানুয়ারি থেকে জুন।
দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময়ের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩১ বিলিয়ন ডলারে। বাজারে ডলারের সংকট এখনো কাটেনি। বাজারের আগুনে মূল্যস্ফীতি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে; উঠেছে প্রায় ৯ শতাংশে।
এমন সংকটকালেই টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। মূলত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরিকল্পনা সাজাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি ও বাজেটঘাটতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি কমিয়ে আনা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এসব শর্ত পূরণের বিষয় বিবেচনায় রাখা হবে নতুন বাজেটে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে এসব শর্ত সম্পর্কিত। আইএমএফ প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিয়েছে। বাকি অর্থ সমান ছয় কিস্তিতে দেবে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কম সুদের এই ঋণের বাকি কিস্তিগুলো নির্বিঘ্নে পাওয়ার জন্য নতুন বাজেটে আইএমএফের শর্তের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলে আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে। সে জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাজেট প্রণয়নে দিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেহেতু এটা এই সরকারের শেষ বাজেট, তাই আসন্ন বাজেটটি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে নির্বাচনের প্রতিফলন থাকে। নতুন বাজেটে দেয়া পদক্ষেপগুলো যাতে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে; খুশি হয়। কর্মকর্তারা সেই নির্দেশনা মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের মতো আগামী বছরও মূল্যস্ফীতি উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে নতুন অর্থবছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ।’
যোগাযোগ করা হলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এবার যুদ্ধাবস্থার মধ্য দিয়ে নতুন বাজেট করতে হচ্ছে। যুদ্ধ সব দেশকেই কম-বেশি প্রভাবিত করেছে। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি এক নম্বর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। জিডিপির প্রবৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ প্রবৃদ্ধি কমলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রেখে নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আবার ব্যয়ও কমানো যাবে না। এসব বিবেচেনা করে কৌশলপূর্ণ একটি বাজেট করতে হবে।’
রাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুমুখী চাপের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, ডলারসংকট, রাজস্ব আয়ে বড়ধরনের ঘাটতি, আইএমএফের শর্তের খড়্গ, ভর্তুকির বোঝা, নির্বাচনী বছরে বাড়তি খরচের চাহিদা, অর্থায়নসংকট- এসব মিলিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে নতুন বাজেট তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আয়ের পথ সীমিত, তার পরও নির্বাচনে জনতুষ্টির কথা মাথায় রেখে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বড় বাজেট আসছে। যেখানে আইএমএফের একগাদা শর্ত মানতে গিয়ে অবাধে করছাড় তুলে দিয়ে বরং করের বোঝা বাড়ানোর মতো অপ্রিয় পথে হাঁটতে হতে পারে সরকারকে। যে কারণে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হতে পারে।
নতুন বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সারেও ভর্তুকির চাপ থাকবে। চাপ থাকবে এক বছরের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের দামে যে ২৫ শতাংশ উল্লম্ফন হয়েছে, তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। যদিও আইএমএফের শর্তের কারণে ভর্তুকি থেকে সরে আসার কথা বলা হয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষির প্রসার আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চিন্তা করে সরকার শিগগিরই হয়তো ভর্তুকি তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না বলেই মনে করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা যায়, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি করার কারণে সরকারকে বেশ কিছু কঠিন শর্ত পালন করতে হবে। আর এসব শর্তের প্রতিফলন আসছে বাজেটে থাকবে। যেমন- রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) নিতে হবে। এটা করতে হলে গণহারে যে করছাড় দেয়া আছে, তা তুলে দিতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে দেয়া কর অবকাশ সুবিধা তুলে দিতে কঠোর হতে হবে। এটা করা হলে দেশীয় শিল্পগুলো কমবেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। তাছাড়া বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্য যখন নানান চাপের মধ্যে তখন বাড়তি করের বোঝা চাপবে তাদের ওপর। এর সঙ্গে সব স্তরের করের বোঝা বাড়বে। কারণ, আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আসছে অর্থবছরে অন্তত ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে। এটা করতে কমবেশি ব্যক্তিশ্রেণির কর যেমন বাড়বে, তেমনি সব স্তরেই করের চাপ পড়বে। এটা নির্বাচনের আগে অজনপ্রিয় হলেও শেষ পর্যন্ত এটা না করে পারবে না সরকার। এমনিতেই রাজস্ব আয়ে নাজুক অবস্থা চলছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ঘাটতি প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।
একদিকে, রাজস্ব আদায় বাড়ছে না, অন্যদিকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিতে হচ্ছে। জানা যায়, শুধু এনবিআরকেই আসছে অর্থবছরে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটা কঠিন হলেও এ পথেই হাঁটছে সরকার। এটা ধরে নিয়েই নির্বাচন সামনে রেখে হাত খুলে খরচের হিসাব কষছে সরকার।
অর্থনীতির গবেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমরা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় মিলিত হয়েছিলাম। সেখানে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, বর্তমান এই কঠিন সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখার দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে। তাদের আগে স্বস্তি দিতে হবে। তারপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিকে তাকাতে হবে। সেইসঙ্গে রিজার্ভ যাতে আর না কমে সেজন্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কম সুদের বিদেশি ঋণ বাড়াতে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে। যেটা আইএমএফও বলছে। এখানে একটা কথা আমি বলতে চাই। ঋণের শর্তে আইএমএফ যে সংস্কার বা শর্তের কথা বলছে, সেগুলো কিন্তু নতুন নয়। এই কথাগুলো আমরা অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই বলছি। এখন যেকোনো কারণেই হোক এই সংস্কারগুলো হলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।’
সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং রাজস্ব ও পরিচালন ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশে একটি সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস (ডিএমও) প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ কারিগরি সহায়তা মিশন।
‘ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক কর্মশালায় এই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
কর্মশালাটি গত সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অর্থ বিভাগের ‘ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় সার্বজনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও সেবা প্রদান সক্ষমতা বৃদ্ধি (এসপিএফএমএস) কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
মিশনটি পর্যবেক্ষণ করেছে যে বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনার কাজগুলো বর্তমানে একাধিক সংস্থার মধ্যে বিভক্ত। ফলে সমন্বয়ের ঘাটতি, অসঙ্গত ঋণের তথ্য এবং একটি বিস্তৃত কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অসুবিধা দেখা দিচ্ছে।
এছাড়া একটি কেন্দ্রীয় ও নিরীক্ষিত ঋণ ডাটাবেইসের অনুপস্থিতি এবং আনুষ্ঠানিক নগদ প্রবাহ পূর্বাভাস ব্যবস্থার অভাবকেও তারা চিহ্নিত করেছে। এগুলো কার্যকর ও সাশ্রয়ী সরকারি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, পরিকল্পনা ও টিডিএম) মো. হাসানুল মতিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ও এসপিএফএমএস-এর জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক ড. জিয়াউল আবেদীন এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ম্যাক্রোইকনমিকস-১) হাসান খালেদ ফয়সাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন।
আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মিশনের নেতৃত্ব দেন সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর এক্সপার্ট অরিন্দম রায়। তার সঙ্গে ছিলেন ড. জেন্স ক্লাউসেন, ফিলিপ আর. ডি. অ্যান্ডারসন ও পার জনসন।
বিশেষজ্ঞ মতামত উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব (ব্যয় ব্যবস্থাপনা) মো. মনজরুল হক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ।
প্রেজেন্টেশনে মিশনটি প্রস্তাব করে যে সরকার ও সরকার-গ্যারান্টিযুক্ত সব ঋণ-সম্পর্কিত কার্যক্রম অর্থ বিভাগের অধীনে একীভূত করা হোক। এর প্রথম ধাপ হিসেবে ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখা পুনর্গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ডিএমও দেশীয় ঋণ ইস্যু তত্ত্বাবধান করবে, বার্ষিক ঋণগ্রহণ পরিকল্পনা তৈরি করবে, নিলাম ক্যালেন্ডার সমন্বয় করবে, ঋণ পোর্টফোলিও ঝুঁকি মূল্যায়ন করবে এবং বিদ্যমান সিস্টেম ও ডাটাবেইস একত্রিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ ঋণ ডাটাবেইস গড়ে তুলবে।
মিশনটি ঋণ গ্রহণের কর্তৃত্ব, জবাবদিহিতা, প্রতিবেদন দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার মান নির্ধারণের জন্য একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য, মিশনটি ডিএমও-তে পুঁজিবাজার, মূল্য নির্ধারণ, নিষ্পত্তি কার্যক্রম এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই ধরনের দক্ষতা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে দক্ষ পেশাদারদের ধরে রাখতে, সরকারকে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষতিপূরণ এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের পথ চালু করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, মধ্যমেয়াদে, ডিএমও আরও স্বায়ত্তশাসিত সত্তায় পরিণত হতে পারে যার সম্প্রসারিত কার্যাবলী থাকবে, যার মধ্যে থাকবে আকস্মিক দায়বদ্ধতা তদারকি এবং বিনিয়োগকারী সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা।
কর্মশালায় উপস্থাপিত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, ১৯৮০-এর দশক থেকে অনেক দেশ কেন্দ্রীভূত ডিএমও পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ঋণ গ্রহণের খরচ ও ঝুঁকি হ্রাস, রাজস্ব স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রানীতির কার্যক্রমের মধ্যে স্পষ্ট পৃথকীকরণে সহায়তা করেছে।
মিশনটি আরও জানায়, সফল ডিএমও সাধারণত তিনটি মূল ইউনিটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এগুলো হল-ফ্রন্ট অফিস (ঋণ গ্রহণ ও বাজার লেনদেন), মিডল অফিস (ঝুঁকি ও কৌশল) এবং ব্যাক অফিস (নিষ্পত্তি, তথ্য প্রশাসন, হিসাব ও প্রতিবেদন)।
মিশনটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে একটি ডিএমও প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, পর্যায়ক্রমে পুনর্গঠন, আধুনিক আইটি সিস্টেমে বিনিয়োগ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে টেকসই সমন্বয় প্রয়োজন।
একবার কার্যকর হলে একীভূত ডিএমও বাজারের আস্থা বৃদ্ধি করবে, অর্থায়ন খরচ এবং ঝুঁকি কমাবে এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে কৃষি পণ্য রপ্তানি বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে এই খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৭৯ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।
মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি), কেজিএস গ্রুপ ও মাহবুব গ্রুপের মধ্যে একটি লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) সই অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এ বছর কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছি। আজকের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি সেই বৃহত্তর লক্ষ্যেরই একটি অংশ।’
তিনি জানান, সয়াবিন মিল রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালে যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২০ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছর বাংলাদেশি অংশীদারদের সহযোগিতায় এই খাতে রপ্তানি ৮৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত জ্যাকবসন আরও উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র উচ্চমানের সয়াবিন মিল উৎপাদন করে, যা বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতের জন্য সুবিধাজনক। এর ফলে স্থানীয় ভোক্তারা উপকৃত হন, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরাও লাভবান হন।’
তিনি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার প্রশংসা করে বলেন, এই সম্পর্ক বছরের পর বছর আরও ভালো হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত কেজিএস গ্রুপ, মাহবুব গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের অবদান দুই দেশের কৃষি-বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে ‘আফ্রিকা-বাংলাদেশ ট্রেড শো ও বিজনেস সামিট ২০২৫’।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আগামী ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৫ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ডি লিওপল হোটেল, আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া।
এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি যৌথভাবে আয়োজন করছে আফ্রিকা বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (এবিবিএফ) এবং ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
এই সম্মেলন হবে দুই অঞ্চলের ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।
ইভেন্টের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের রপ্তানিকারক, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করা। এছাড়াও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল ও চামড়াজাত শিল্পখাত আফ্রিকার বাজারে প্রবেশের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।
দুই দিনব্যাপী এই সামিটে থাকবে ব্যবসায়িক প্রদর্শনী, বিনিয়োগ বিষয়ক আলোচনা, রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষর ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ক সেশন। দুই অঞ্চলের সরকারি প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা এতে অংশ নেবেন।
দেশের ডেনিম শিল্পের বিকাশে নিবেদিত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৯তম আসর শুরু হচ্ছে কাল বুধবার। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনব্যাপী এ আয়োজন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।
এ বছর প্রদর্শনীতে ১০টি দেশ থেকে ৪৫টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিষ্ঠানগুলো ডেনিম ও নন-ডেনিম ফ্যাব্রিক, গার্মেন্টস, সুতা, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।
প্রদর্শনীতে ডেনিম উৎপাদনের সর্বশেষ উদ্ভাবন, টেকসই প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্যময় পণ্যের প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও বৈশ্বিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরা হবে। বিশ্বজুড়ে ডেনিম শিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবক ও বিশেষজ্ঞরা এ আয়োজনে একত্রিত হবেন, যেখানে ডেনিম উৎপাদন, টেকসইতা ও প্রযুক্তির পরিবর্তনশীল ধারা নিয়ে আলোচনা হবে।
এ আয়োজনে তিনটি প্যানেল আলোচনা ও দুটি সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক প্রভাব উপস্থাপন করা হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) বেবি রানি কর্মকার ‘ডেনিম রাইজিং: বাংলাদেশস জার্নি টু গ্লোবাল লিডারশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন জানান, দীর্ঘ পথচলায় বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো তার উদ্ভাবনী ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রস্তুতকারক, ব্র্যান্ড ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এটি এখন শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেনিম প্রস্তুতকারক ও ক্রেতারা সংযুক্ত হন।
মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এক্সপোকে এমন এক মঞ্চে পরিণত করেছি, যেখানে টেকসইতা, বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও বৈশ্বিক শিল্পের পরিবর্তনশীল রূপ একসঙ্গে প্রতিফলিত হয়। এ বছর এক্সপোতে থাকবে আরও নতুনত্ব, যা দর্শনার্থীদের বৈশ্বিক ডেনিম শিল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশে তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকরা। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই দাবি জানান মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকরা। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কটন ইউএসএ-এর উদ্যোগে মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের দাবির প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রতিনিধিদলকে লিখিত আকারে তাদের প্রস্তাবনা জানানোর আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বিজিএমইএ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে, যাতে দ্রুত এই জটিলতাগুলোর নিরসন করা যায়।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলে ইকম-এর লি ইন, কারগিল-এর ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসি-এর ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রি-এর ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর ওয়েন বোসম্যান, স্ট্যাপলকটন কো-অপারেটিভ-এর ক্রিস জোন্স এবং কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল-এর উইল বেটেনডর্ফ ও আলী আরসালান উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা।
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, মার্কিন তুলার ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নবঘোষিত শুল্ক সুবিধা কাজে লাগাতে করণীয় ঠিক করা।
আলোচনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতে মার্কিন তুলা সরবরাহের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। মূল ফোকাস ছিল সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন নির্বাহী আদেশ, যেখানে পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০% মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এই নতুন শুল্ক ছাড়ের সুযোগ আমাদের শিল্পখাতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যা আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এই সুবিধা বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাভ করবে, সে বিষয়ে এখনো বিজিএমইএর কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। বিজিএমইএ সভাপতি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান, যেন তারা মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ এনে বিজিএমইএকে সরবরাহ করেন। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিলম্ব না করে শুল্ক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ।’ তিনি মনে করেন, ‘মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধা নিয়ে বিশদ গবেষণা করে স্পিনার ও কারখানাগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা হলে তারা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।’
পরে মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএ সভাপতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বৈঠকে কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণাবলী, নির্ভরযোগ্যতা এবং উচ্চমানের জন্য সুপরিচিত। আমরা বিশ্বাস করি, মার্কিন তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের মান আরও উন্নত করতে পারবে এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন তুলা সরবরাহ আরও সহজ ও দ্রুত করতে লজিস্টিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি ওয়্যারহাউজ স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়েও মতবিনিময় করা হয়, যা বাস্তবায়িত হলে শিল্পের লিড টাইম কমবে। উভয় পক্ষ নতুন শুল্কনীতি এবং মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহারের পরিমাপ পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়।
বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলোর দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে, বিজিএমইএ ইনোভেশন সেন্টারে মিলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি ও অপচয় হ্রাসে গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও জ্ঞান প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।
উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীর দুই তীরে চোখে পড়ে শত শত হাঁসের খামার। বাঁশের খুঁটি আর জালের বেষ্টনী দিয়ে বর্ষার ভাসান পানিতে গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী খামারে সারাদিন সাঁতার কাটে দেশি প্রজাতির হাঁস। রাতে তারা নদীর ধারে তৈরি খুপরি ঘরে বিশ্রাম নেয়।
খামারিদের ভাষায়, কম পুঁজি, সহজলভ্য প্রাকৃতিক খাদ্য (শামুক, ঝিনুক) ও সামান্য দানাদার খাবারের সহায়তায় এ খাতে এখন লাভজনক আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের অনেক পরিবারের জীবনযাত্রা।
নিকলীর পাশাপাশি ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও তাড়াইলএই হাওর অধ্যুষিত উপজেলা গুলোতেও বর্ষা মৌসুমে নদ-নদী ও হাওরের ভাসান পানিতে হাঁস পালনের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের খামারগুলো থেকে বছরে প্রায় দুই কোটি হাঁসের ডিম উৎপাদিত হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের মোট চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ ডিম আসে এখান থেকে।
এই ডিম ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট ও অন্যান্য বড় শহরে সরবরাহ হয়। পাশাপাশি, হাওরের হাঁসের মাংসও দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়।
ডিমকে ঘিরে তাড়াইল উপজেলার দামিহা এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক হ্যাচারি। সেখানে তুষ বা ভাপ পদ্ধতিতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ হাঁসের বাচ্চা উৎপাদিত হয়। যা স্থানীয় খামার ও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
নিকলীর খামারি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভাসান পানিতে খামার করলে আলাদা জমি লাগে না। জাল ও বাঁশের ঘের দিয়ে হাঁস ছেড়ে দিই, শামুক আর দানাদার খাবারেই বেশির ভাগ চাহিদা মেটে। খরচ কম, তাই মৌসুমে ভালো লাভ হয়।’
মিঠামইনের রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের ডিম পাইকাররা সরাসরি নিয়ে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামে। কিন্তু হাঁসের রোগ হলে দ্রুত ডাক্তার পাই না। মোবাইল ভেট টিম থাকলে ক্ষতি অনেক কমে যেত।’
তাড়াইলের দামিহা এলাকার হ্যাচারি উদ্যোক্তা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘দামিহায় এখন অনেক হ্যাচারি হয়েছে। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার বাচ্চা তুলতে পারি। যদি বিদ্যুৎ স্থিতিশীল থাকে আর একটা স্থায়ী সংগ্রহ কেন্দ্র হয়, তাহলে কাজটা আরও বড় পরিসরে করা যাবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘হাওরের ভাসান পানিতে উৎপাদিত হাঁসের মাংস ও ডিম নির্ভেজাল, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই বাজারে এর চাহিদা সবসময়ই বেশি।’ তিনি জানান, এই সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে খামারিদের প্রশিক্ষণ, টিকাদান ও পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
বর্তমানে কিশোরগঞ্জে প্রায় ২ হাজার হাঁস খামার রয়েছে। এসব খামারে ২৫ লাখের বেশি হাঁস লালনপালন হচ্ছে। খামারি বা উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ১৫০০, আর এ খাত থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ১২ হাজার পরিবার। বছরে মোট উৎপাদন হয় প্রায় দুই কোটি ডিম।
খামারিদের অভিযোগ, হাঁসের রোগ-বালাই দেখা দিলে দ্রুত ভেটেরিনারি সহায়তা পাওয়া যায় না। তারা চান মোবাইল ভেট সার্ভিস, টিকা, ঔষধে সহায়তা, স্বল্পসুদে ঋণ, ফিড ও ডিমের সংগ্রহকেন্দ্র এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চয়তা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারসংযোগ বাড়ানো গেলে হাওরের হাঁস পালন শুধু স্থানীয় জীবিকার খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি দেশের একটি বড় অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হতে পারে।
যেকোনো দুর্যোগে শিল্প-কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মোংলা ইপিজেডে ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি, ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা এবং মাল্টি-হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই -এর সেইফটি কাউন্সিল এবং মোংলা ইপিজেডের যৌথ উদ্যোগে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষণে মোংলা ইপিজেডের শিল্প-কারখানা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল সোমবার সকালে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক কালাম মো. আবুল বাশার।
তিনি বলেন, দুর্যোগের প্রস্তুতি ও দুর্যোগকালে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিল্পকারখানার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিল্পের উৎপাদনশীলতা অব্যাহত রাখা সম্ভব।
এ সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়ন ও ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে এফবিসিসিআইর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। এফবিসিসিআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মোংলা ইপিজেডের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে কারখানা পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এই প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণকারীদের ক্ষমতা ও দক্ষতা উভয়ই বৃদ্ধি করবে।
এফবিসিসিআই সেইফটি কাউন্সিলের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. মঞ্জুর কাদের খান তার বক্তব্যে প্রকল্পের লক্ষ্য, কার্যক্রম ও এফবিসিসিআইর চলমান উদ্যোগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
তিনি জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ প্রিপেয়ার্ডনেস পার্টনারশিপ (বিপিপি) প্রকল্পের আওতায় এফবিসিসিআই দেশের শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগে দেশে টেকসই ও নিরাপদ ব্যবসায় পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় তিনি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য গেটস ফাউন্ডেশন এবং কারিগরি সহায়তার জন্য এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টারকে (এডিপিসি) ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোংলা ইপিজেডের পরিচালক (প্রশাসন) মো. কাউসার হোসেন, ইপিজেড জোন অফিসের কর্মকর্তারা এবং এফবিসিসিআই সেইফটি কাউন্সিলের কর্মকর্তারা।
বিশ্ববাজারে আকরিক লোহার দাম সামান্য হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে চীনের চাহিদা কমে যাওয়া ও মজুত বৃদ্ধির কারণে দাম কমেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির আশায় সপ্তাহ ও মাসজুড়ে দাম সামগ্রিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। খবরটি জানিয়েছে বিজনেস রেকর্ডার।
চীনের দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে জানুয়ারির সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া আকরিক লোহার চুক্তির দাম গত শুক্রবার ০.৯৩ শতাংশ কমে মেট্রিক টনপ্রতি ৭৯৭ ইউয়ান বা ১১১.৮৯ ডলারে নেমে আসে। তবু পুরো সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জে ডিসেম্বরের মানদণ্ড আকরিক লোহার দাম ০.৬১ শতাংশ কমে টনপ্রতি ১০৫.৮ ডলারে দাঁড়ায়, যা সপ্তাহজুড়ে ২ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। উভয় সূচকই মাসের হিসেবে প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-শি বৈঠকের পর সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির আশায় দামকে সমর্থন মিলেছে।
তবে সামষ্টিক প্রভাব কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আবার বাজারের মৌলিক অবস্থার দিকে নজর দিচ্ছেন। মাইস্টিলের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সপ্তাহে চীনের গড় দৈনিক গরম ধাতু উৎপাদন আগের সপ্তাহের তুলনায় ১.৫ শতাংশ কমে ২৩.৬ লাখ টনে নেমেছে। একই সময়ে বন্দরভিত্তিক মজুত বেড়েছে ০.৮ শতাংশ।
এছাড়া, টানা সপ্তম মাসের মতো অক্টোবরেও চীনের কারখানা কার্যক্রমে সংকোচন দেখা গেছে, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহৃত অন্যান্য উপকরণ যেমন কোকিং কয়লা ও কোকের দাম যথাক্রমে ১.০৪ শতাংশ ও ০.৫৮ শতাংশ বেড়েছে। শাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জে বেশিরভাগ ইস্পাত পণ্যের দাম কমেছে; রিবার ০.১৯ শতাংশ, হট-রোল্ড কয়েল ০.২১ শতাংশ এবং স্টেইনলেস স্টিল ০.৪৩ শতাংশ কমেছে। তবে ওয়্যার রডের দাম বেড়েছে ০.১২ শতাংশ।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, বিডা অন্যান্য সাধারণ সরকারি দপ্তরের মতো নয়। এটি বিশেষায়িত সংস্থা, যার মূল দায়িত্ব বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত সাড়া দেওয়া। বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই বিডাকেও সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাল্টিপারপাস হলে বিডার পুনর্বিন্যাসকৃত সাংগঠনিক কাঠামো বিষয়ে অবহিতকরণ সভায় চৌধুরী আশিক এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে চৌধুরী আশিক জানান, এ কাঠামোগত সংস্কার বিডার দেশি ও বিদেশি অংশীজনদের দীর্ঘদিনের পরামর্শের ফলাফল, যা তারা এখন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন।
নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বিডা বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলোর সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কার এনেছে। এ পুনর্গঠনের মাধ্যমে দায়িত্ব ও কর্তব্যে অধিকতর স্পষ্টতা আসবে, বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবা হবে আরও দ্রুত ও কার্যকর এবং সেবার মান পরিমাপের জন্য নির্ধারিত সূচক প্রবর্তন করা হয়েছে।
চৌধুরী আশিক বলেন, এ কাঠামোগত সংস্কার সরকারঘোষিত ৩২ দফা বিনিয়োগ পরিবেশ সংস্কার কর্মপরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি জানান, বিডার নতুন কাঠামো সাজানো হয়েছে বিনিয়োগ চক্রের সঙ্গে মিল রেখে। এ কাঠামো অনুযায়ী বিডায় থাকবে পাঁচটি প্রধান অনুবিভাগ বা উইং। সেগুলো হলো-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন (বিনিয়োগ আকর্ষণ ও প্রবেশ পর্যায়), রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি (নীতি সহায়তা ও অ্যাডভোকেসি), অপারেশনস (বিনিয়োগ শুরু, সম্প্রসারণ ও ধারাবাহিকতা রক্ষা), ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট (বিনিয়োগ সেবার আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সংস্কার) এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সহায়তা)।
চৌধুরী আশিক বলেন, বিডার নতুন কাঠামোগত সংস্কারের উল্লেখযোগ্য দিক হলো- নির্বাহী সদস্য পদে এখন থেকে বিডার নিজস্ব কর্মকর্তা ছাড়াও বেসরকারি খাতের পেশাজীবীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন, যা পূর্বে শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি এবং ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন শাখাকে পৃথক ইউনিট হিসেবে গঠন করা হয়েছে। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় বিশেষ ডেস্ক চালু করা হচ্ছে এবং বিনিয়োগ সহায়তায় খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি দেশের সব বিনিয়োগ সংস্থা সমন্বিত করে একটি একীভূত কাঠামো প্রণয়নের রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা খণ্ডিত সেবা ব্যবস্থার পরিবর্তে একক একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রয়োজনীয় সব সেবা নিতে পারবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শর্তসাপেক্ষ রপ্তানি দিয়ে মূলত পাট রপ্তানিতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পাট রপ্তানিকারকরা। তারা বলেন, এতে করে কৃষক, ব্যাপারী, পাট শ্রমিক ও রপ্তানীকারকেরা অনেক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। সেই সঙ্গে বাংকের সুদ বাড়ছে। ফলে অনতিবিলম্বে এই শর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন পাট রপ্তানিকারকরা। অন্যথায় আন্দোলনে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
রোববার বিজেএর নারায়ণগঞ্জ অফিসের ৪র্থ তলায় আফজাল হোসেন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) ৫৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় পাট ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় দেশসেরা পাট রপ্তানিকারক ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্সের কর্ণধার গণেষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শর্তসাপেক্ষ রপ্তানি দিয়ে মূলত অলিখিত পাটের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
ফলে পাট ব্যবসায়ীরা এখনো রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে যে এলসি ছিল, সেই এলসির মালামাল রপ্তানি করতে পারে নাই। ১৯১০ ও ১৯১৫ সালে পাট মন্ত্রণালয় থেকে পাট নিষেধাজ্ঞা হয়েছিল। তখন কাটজুট পাট নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে ছিল। এবার এই কাটজুট আওতামুক্ত রাখে নাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনতিবিলম্বে শর্তসাপেক্ষ আদায় প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা পাটের বাজার যেকোনো সময় দুই হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পাটের দাম পড়ে যেতে পারে। পাটের উৎপাদন কম হয়েছে, পাটের ঘাটতির কথা বলে বাংলাদেশের জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন দাবি তুলে ৭ থেকে ৮ লাখ বেল পাট রপ্তানি ব্যাহত করছে। অনতিবিলম্বে কৃষকের স্বার্থে পাট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এবং পাট শ্রমিকদের স্বার্থে এই শর্তসাপেক্ষ প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিজেএ’র সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন আকন্দ।
তিনি সভা শেষে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে অভ্যর্থনা ও দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সেই সঙ্গে সভায় বিগত অর্থ বছরের চূড়ান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খন্দকার আলমগীর কবির বলেন, ‘বর্তমানে কাঁচাপাট রপ্তানি বন্ধ থাকায় কাঁচাপাট ব্যবসায়ী রপ্তানিকারকরা সংকটে রয়েছেন। অনেক কাঁচাপাট ব্যবসায়ী ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। দুই মাসে আমরা এক বেলও কাঁচাপাট রপ্তানি করতে পারি নাই। শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে মজুরি দিতে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘রপ্তানি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা শিগগিরই উপদেষ্টা মহোদয় ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলব। আগামী ১০ দিনের মধ্যে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। এটার সমাধান না হলে কঠিনতম অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে হবে।’
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এস এম সাইফুল ইসলাম পিয়াস, ভাইস চেয়ারম্যান মো. তারেক আফজাল, কমিটির কার্যকরী সদস্য মো. ফাহাদ আহমেদ আকন্দ, শামীম আহমেদ, এস এম মনিরুজ্জামান (পলাশ), খাইরুজ্জামান, মো. কুতুবউদ্দিন, শেখ ঈমাম হোসেন, এস এম হাফিজুর রহমান, বদরুল আলম (মার্কিন), এইচ এম প্রিন্স মাহমুদ, মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, মো. নূর ইসলাম, মো. আলমগীর খান, রঞ্জন কুমার দাস ও এসএম সাইফুল ইসলাম।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার পুঁজিবাজারে সূচকের মিশ্র প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার ডিএসই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১০৭৮ ও ১৯৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৬৮ কোটি টাকার লেনদেন বেড়েছে। আগের দিন ডিএসইতে ৪৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
রোববার ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৮টি কোম্পানির, কমেছে ২০৭টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানগুলো, মনোস্পুল পেপার, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, খান ব্রাদার্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, রূপালী লাইফ, বিচ হ্যাচারি, সিমটেক ইন্ডাস্ট্রি ও সোনালি পেপার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৩১৩ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ১৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৯২টির, কমেছে ৬১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির কোম্পানির শেয়ার দর।
রোববার সিএসইতে ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার লেনদেন বেড়েছে। আগের দিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে নতুন একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কম কার্বন নির্ভরতা অর্জনে উৎসাহিত করা। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে গ্লোবাল অ্যানভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)।
রোববার চালু হওয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য শক্তি (যেমন সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, জৈব শক্তি) এবং বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়ে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানো।
পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের নাম ‘প্রমোটিং অ্যানার্জি-রিলেটেড লো কার্বন আরবান ডেভেলপমেন্ট বা এলসিইউডি’। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ-৩০) আগেই প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। রাজধানীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে নিজ নিজ সংস্থার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুর আহমেদ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলার।
অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘এই প্রকল্পটি আমাদের শহরগুলোতে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান ও সক্ষমতা তৈরি করবে। আমি ইউএনডিপিকে ধন্যবাদ জানাই এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে সহযোগিতার জন্য। এখন আমাদের দায়িত্ব ঘাটতিগুলো পূরণ করা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা এবং এই কার্যক্রমকে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে প্রসারিত করা, যেন সবার জন্য পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগর জীবন নিশ্চিত হয়।’
স্টেফান লিলার বলেন, ‘ইউএনডিপি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে নগর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। নতুন এই প্রকল্প আমাদের অংশীদারিত্বকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে, যা টেকসই ও কম কার্বন নির্ভর নগর উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা এই সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, যাতে এর সুফল বাস্তবেই নাগরিক জীবনে পৌঁছায়।’
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুর আহমেদ বলেন, ‘এই প্রকল্পটি কম কার্বন অবকাঠামোয় বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে, যা দেশের অন্যান্য শহরের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। আমরা প্রকল্পটি সময়মতো ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকব।’
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (জাতিসংঘ উইং প্রধান) একেএম সোহেল, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমাদ এবং স্রেডার নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়ন পরিচালক (উপ-সচিব) প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান।
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান।
গত রোববার সকালে তিনি সংগঠনটির প্রশাসক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা অফিস আদেশ অনুযায়ী, ট্রেড অর্গানাইজেশন অ্যাক্ট, ২০২২-এর ধারা ১৭-এর অধীনে মো. আবদুর রহিম খানকে এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
আদেশ অনুযায়ী, তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত বোর্ডের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।