প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরকালে বাংলাদেশের ৪টি প্রকল্প এবং বাজেট সহায়তা হিসেবে একটি কর্মসূচিতে মোট পাঁচটি প্রকল্পে ২২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়েছে। সার্ভিস চার্জসহ এই ঋণের সুদের হার হবে ২ শতাংশ; পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক দিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি সই হয়নি।
গত ২৯ এপ্রিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এতে সই করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গত সোমবার বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের উপস্থিতিতে এসব ঋণচুক্তি বিনিময় হয়েছে বলে মঙ্গলবার ইআরডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
পাঁচটি ঋণের মধ্যে ৪টি প্রকল্পে ১৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ঋণ সম্পূর্ণ আইডিএ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলারে মধ্যে ১৭ কোটি ডলার আইডিএ সহায়তার মধ্যে থাকবে। বাকি ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার স্বল্পমেয়াদি ঋণ, যা ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে ঋণের এ অংশে কোনো সার্ভিস চার্জ বা সুদ নেই।
ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) হলো কম সুদে নমনীয় ঋণ প্রদান বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যার সবচেয়ে বড় গ্রাহক বাংলাদেশ। আইডিএ ঋণের সার্ভিস চার্জ শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সুদহার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। অ–উত্তোলিত অর্থায়ন স্থিতির ওপর বছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি অব্যাহতি ৫ বছর। আর পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে ।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চার হাজার কোটি ডলারের বেশি আইডিএ ঋণ নিয়েছে। বর্তমানে দেশের চলমান প্রকল্পগুলোতে আইডিএ তহবিল রয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের বেশি।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ নিম্ন–মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আগে যখন নিম্ন আয়ের দেশ ছিল, তখন আইডিএ ঋণে শুধু শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ছিল। অন্যদিকে ১০ বছরে গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করার নিয়ম ছিল।
কোন প্রকল্পে কত ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
১. বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি রিডাকশন বা রিভার প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, সহনশীল ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক মানুষকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং দুর্যোগ প্রশমনে দেশের সক্ষমতার উন্নয়ন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ৩০ জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
২. বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনিবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন বা বেষ্ট প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৫ কোটি ডলার। পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও হাই–টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের যৌথ বাস্তবায়নে এ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় সরকারের সক্ষমতা বাড়ানো এবং দূষণ কমানো হবে। এর মেয়াদকাল ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
৩. অ্যাক্সিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (অ্যাক্সেস)– বাংলাদেশ পর্যায়–১ প্রকল্পে ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এনবিআর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পরিবহনের উন্নয়ন।
৪. সাসটেইনেবল মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন বা স্মার্ট প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি ডলার। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য জলবায়ু–সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রসারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। পিকেএসএফ ২০২৩ থেকে ২০২৮ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এবং
৫. ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট বা জিসিআরডি কর্মসূচিতে ৫০ কোটি ডলারে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সরকারকে সহায়তা করা। কিছু শর্ত পালন সাপেক্ষে আগামী অর্থবছরে এ অর্থ ছাড় করবে বিশ্বব্যাংক।
দেশের রেলওয়ে খাতে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার আধুনিকায়ন ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি প্রতিনিধিদল গত মঙ্গলবার কারখানার বিভিন্ন কার্যক্রম ও অবকাঠামো পরিদর্শন করেন।
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর এডিবি উইং চিফ এস এম জাকারিয়া হক এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হুই ইউন জিওং।
কারখানা পরিদর্শনে এসে প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ, কর্মব্যবস্থাপক (ডাব্লিউএম) মমতাজুল হকসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন এডিবির প্রিন্সিপাল ফিনান্সিয়াল সেক্টর অফিসার মারুফ হোসাইন, সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার (আরবান) অমিত দত্ত রায়, অ্যাসোসিয়েট ওয়াটার রিসোর্স অফিসার সোহেল রানা, অ্যাসোসিয়েট প্রজেক্ট অফিসার (এনার্জি) মশিউর রহমান, সিনিয়র অপারেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট নাশিয়াত আল সাফওয়ানা চৌধুরী এবং অপারেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট দিপা হেমব্রোম।
পরিদর্শনকালে দলটি কারখানার বগি ও ওয়াগন শপ, ক্যারেজ কনস্ট্রাকশন শপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘুরে দেখেন। পরে বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তারা।
সভায় ডিএস শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ ও ডাব্লিউএম মমতাজুল হক কারখানার সার্বিক কর্মকাণ্ড, চ্যালেঞ্জ, উন্নয়ন সম্ভাবনা এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
ডিএস শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, কারখানার দুটি উপকারখানা সম্প্রসারণ, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এডিবি প্রতিনিধিদল সেই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে এসেছে। তারা আমাদের প্রস্তাবনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা ও অবকাঠামোতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। স্থানীয়ভাবে রেল কোচ, বগি ও ওয়াগন উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন রেলওয়ে ওয়ার্কশপ। বর্তমানে কারখানাটি পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে রেল কোচ ও বগির রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ রেল ইঞ্জিনিয়ারিং হাবে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইসিসি একাডেমি সাপ্লাই চেইন ফিন্যান্স সামিট ২০২৫-এ অংশগ্রহণের জন্য আটটি ব্যাংকের ২৯ জন ব্যাংকার এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর দুজন প্রতিনিধিকে পাঠায়। সম্মেলনটি গত ২২ থেকে ২৩ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইসিসি বাংলাদেশ ছিল আইসিসি একাডেমির অংশীদার হিসেবে এই সম্মেলন আয়োজনের সহযোগী। আইসিসি বাংলাদেশের মহাসচিব আতাউর রহমান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)-এর মহাসচিব জন ডেন্টন সম্মেলনটির উদ্বোধন করেন। এতে বাণিজ্য, অর্থনীতি, নীতি, প্রযুক্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষেত্রের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৫০ জনেরও বেশি শীর্ষ ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- ‘আস্থা পুনর্গঠন, উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা: বিভক্ত বিশ্বে সাপ্লাই চেইন ফিন্যান্সের ভবিষ্যৎ।’
দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, ডিজিটাল পরিবর্তন এবং স্থায়িত্ব ও স্বচ্ছতার বাড়তি চাহিদার প্রেক্ষাপটে করণীয় সম্পর্কে কার্যকর দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বিভিন্ন অধিবেশনের আলোচকরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন-আস্থা পুনর্গঠন: জটিল সাপ্লাই চেইনে আস্থা ফিরিয়ে আনা ও সুশাসন নিশ্চিত করার উপায়; অস্থির বাজারে তারল্য: কঠোর ঋণনীতির প্রেক্ষাপটে তারল্যের পরিবর্তনশীল চিত্র ও টেকসই অর্থায়নের উপায়; নতুন অর্থায়ন কাঠামো: বৈশ্বিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি মূল্যায়নের পরিবর্তন, বিকল্প ঋণদাতাদের ভূমিকা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত ও নমনীয় কর্মমূলধন সরবরাহের সম্ভাবনা; প্রযুক্তিগত রূপান্তর: ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডিজিটাল ডকুমেন্টেশনসহ উদ্ভাবনগুলো কীভাবে দক্ষতা ও নতুন ঝুঁকি মডেল তৈরি করছে; সবুজ অর্থায়ন ও উদ্ভাবনের সমন্বয়।
সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে ভবিষ্যতের বাণিজ্য অর্থায়ন পেশাজীবীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও ক্যারিয়ার বিকাশের দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া ডিসেন্ট্রালাইজড ফিন্যান্স (ডিফাই) প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি নাকি সুযোগ- সে বিষয়েও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন শেষে আইসিসি একাডেমি আধুনিক সাপ্লাই চেইনের জটিলতা মোকাবিলায় বৈশ্বিক মান নির্ধারণ এবং বাণিজ্য পেশাজীবীদের জন্য বিশ্বমানের জ্ঞান ও সম্পদ প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের (আইসিএসবি) নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হোসেন সাদাত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সভা কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় দেশের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। দেশের পুঁজিবাজারের সুশাসন বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও তাদের আস্থা বৃদ্ধির বিষয়টিও সভায় আলোচিত হয়। এ ক্ষেত্রে আইসিএসবির কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার বিষয়টি সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
সৌজন্য সাক্ষাতে বিএসইসির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ, নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও পরিচালক মো. মনসুর রহমান।
আইসিএসবির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট হোসেন সাদাত, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রফিকুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শরীফ হাসান এবং সেক্রেটারি ইনচার্জ ও সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মো. শামিবুর রহমান।
দেশের বাজারে বড় অংকে কমেছে স্বর্ণের দাম। এক লাফে প্রতি ভরিতে ভালো মানের স্বর্ণের (২২ ক্যারেট) দাম কমেছে ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা। এখন থেকে দেশের বাজারে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হবে এক লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকায়।
মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম কমার এ তথ্য জানায়। আগামীকাল বুধবার থেকে সারা দেশে স্বর্ণের নতুন এ দর কার্যকর হবে।
এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী (পিওর গোল্ড) স্বর্ণের মূল্য কমেছে। যে কারণে স্বর্ণের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজুস।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম কমে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ৫৮ হাজার ৫৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ৩১ হাজার ৬২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অপরিবর্তিত আছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের রুপার ভরি ৪ হাজার ২৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি ৪ হাজার ৪৭ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি তিন হাজার ৪৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের উদীয়মান নিরাপদ খাদ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ‘কৃষি’ মধু খাওয়ার চিরাচরিত ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করল। সম্প্রতি একটি আকর্ষণীয় আয়োজনের মাধ্যমে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিল ‘হ্যানি স্যাচেট’—একটি অভিনব মধু প্যাকেজিং যা মধু উপভোগকে করবে আরও সহজ ও ঝামেলামুক্ত।
অনুষ্ঠানে ‘কৃষি’ তাদের মিশন ও দীর্ঘ যাত্রার গল্প তুলে ধরে। কয়েক বছর ধরে তারা দেশের গ্রামীণ মানুষ, কৃষক ও মাটিকে শহরবাসীর নিকট পৌঁছে দিতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন করে আসছে। তাদের লক্ষ্য—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, একজন মানুষ যেন প্রতিটি মুহূর্তে গ্রামবাংলার নিরাপদ কৃষি পণ্যের স্বাদ উপভোগ করতে পারে। এজন্য তারা গ্রামীণ উপকরণ দিয়ে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করছে, যা আধুনিক মানুষের প্রয়োজন ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে সাজানো।
এই উদ্ভাবনী যাত্রায় নতুন সংযোজন ‘হ্যানি স্যাচেট’। বোতল বা জটিল প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজন নেই—ছোট্ট এই স্যাচেট সহজে ব্যাগে বা টিফিনবক্সে রাখা যায়, যা যে কোনো সময়ে নিরাপদ মধু খাওয়ার সুযোগ করে দেয়। নতুন এই প্রোডাক্টের ফলে মধু হবে দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ, সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী ও স্বাস্থ্যকর।
আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইসমাইল, অতীশ দিপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মিহির লাল সাহা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমডি. কাইয়ুম হোসেনসহ দেশসেরা কয়েকজন অধ্যাপক, ডাক্তার ও পুষ্টিবিদ। তাঁরা হ্যানি স্যাচেটের সম্ভাবনা ও এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের মধু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আরোও উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ মইনুল আনোয়ার। তার বক্তব্যে তিনি বলেন আমাদের সকলের নিয়মিত মধু খেতে হবে। কিন্তু সেটা যেন ভেজাল না হয়। তিনি আরোও উল্লেখ করেন ভেজাল মধু পরিক্ষার জন্য সমাজে প্রচলিত আগুন পরীক্ষা, পানি পরীক্ষা কিংবা পিপড়া পরীক্ষা বিজ্ঞানসম্মত নয়, সম্পূর্ণ ভুয়া।
ইভেন্টের সমাপ্তি ঘোষণা করতে গিয়েই কৃষি জানিয়েছে—‘হ্যানি স্যাচেট’ শুধু একটি পণ্য নয়, এটি আমাদের খাওয়ার অভ্যাসে এক নতুন জীবনধারা নিয়ে আসবে। এই নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি তার মিশন অব্যাহত রেখেছে—সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য পৌঁছে দেওয়া। প্রোডাক্ট ও মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্রেতাদের কৃষি'র ওয়েবসাইটে ভিজিট করার আহ্বান জানানো হয়।
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে পিকেএসএফ।
মঙ্গলবার পিকেএসএফ-এর পরিচালনা পর্ষদের ২৬২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পিকেএসএফএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ড. সহিদ আকতার হোসাইন, নূরুন নাহার, ফারজানা চৌধুরী, ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম, লীলা রশিদ এবং পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
সভায় জানানো হয়, দেশের মোট কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য অংশ কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ খাতের প্রসারে চলতি অর্থবছরে পিকেএসএফ মোট ৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এ অর্থের সঙ্গে নিজস্ব তহবিল ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তহবিল যোগ করে সহযোগী সংস্থাগুলো প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, পরিবর্তনশীল তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ক্রমশ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অধিক হারে মনোনিবেশ করা জরুরি।
এছাড়া দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ, বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি শিক্ষা ও শিল্প খাতের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, প্রশিক্ষণ প্রদানে নিয়োজিত সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সেই সঙ্গে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে সকল স্তরের সচেতনতার অভাবের বিষয়টিও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এনএসডিএ নিজের আইনগত কাঠামো, ভৌত ও প্রশাসনিক অবকাঠামোর ওপর নজর দিলেও বর্তমানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণের ওপর বেশি মনোযোগী হয়েছে।
নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, জাপানে ১ লাখ দক্ষ বাংলাদেশি প্রেরণের লক্ষ্যে সরকারি ও শিক্ষা খাতের সহায়তায় জাপানি ভাষা শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ করে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কেবল প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয় বরং উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শ্রমবাজারে গভীর ও মৌলিক রূপান্তর এনেছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের শিল্প ও সেবা খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
তিনি জানান, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য মতে আগামী পাঁচ বছরে বর্তমান চাকরির বাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বদলে যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলেও একই সময়ে ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্মার্ট মানবসম্পদই হবে বাংলাদেশের একমাত্র হাতিয়ার। তবে তাদের প্রযুক্তিনির্ভর নতুন যুগের কর্মসংস্থানে নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, কারিগরি শিক্ষার ওপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ এবং শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, এটুআই ও ইউএনডিপির ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্য ও কৃষি, ফার্নিচার, পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতে প্রায় ৫৩ লাখ ৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের কর্মরত মানবসম্পদকে প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের ওপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
তিনি সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমের যুগোপযোগীকরণের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এছাড়া দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিতের ওপর জোরারোপ করেন নিয়াজ আসাদুল্লাহ।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব (আইসিটি ডিভিশন) মোহাম্মদ সাইফুল হাসান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামস রহমান, দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবির) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ট্রান্সকম গ্রুপের করপোরেট মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান এম সাব্বির আলী, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর রিজিওনাল সিনিয়র ম্যানেজার খান মোহাম্মদ শফিকুল আলম, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী এবং ব্রেইন স্টেশন ২৩-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবীর অংশগ্রহণ করেন।
হাইটেক পার্কগুলোতে একক ও যৌথ বিনিয়োগের জন্য দেশীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ সাইফুল হাসান।
অধ্যাপক ড. শামস রহমান বলেন, শিল্প খাতের চাহিদার নিরিখে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা-শিল্প খাতের সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি।
আইসিএমএবি সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের মাত্র ২০ শতাংশ তাদের দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি পেয়ে থাকে এবং প্রায় ২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বেকার রয়েছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় কারিগরিশিক্ষার ওপর জোরারোপ ও সমাজের সকল স্তরের মানসিকতা পরিবর্তনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি ও অটোমেশনের ফলে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের আরও সচেতনতা বাড়ানো, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নজরদারির জন্য একটি আলাদা জাতীয় কাউন্সিল স্থাপনের প্রস্তাব করেন এম সাব্বির আলী।
খান মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা কারিকুলামের যুগোপযোগীকরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী বলেন, গ্রাম ও শহরের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষামানে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তর থেকেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাই শিক্ষার সকল স্তরে মান নিশ্চিত করা জরুরি।
রাইসুল কবীর বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও মানসম্মত কাজের চাহিদা বাড়ছে। এর কারণে কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে ভবিষ্যতের চাহিদার নিরিক্ষে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ খাতের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ প্রেরণের ওপর জোরারোপ করেন। যার মাধ্যমে আরও বেশি হারে রেমিট্যান্স আহরণ সম্ভব, সেই সঙ্গে কারিগরিশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
এছাড়া ডিসিসিআই পরিচালক মোহাম্মদ জমশের আলী, স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মীর শাহরুক ইসলাম প্রমুখ মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে ‘রাব হল’ বা অস্থায়ী গুদাম স্থাপনে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিজিএমইএ সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও সচল রাখার স্বার্থে ‘জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা এ গুদাম প্রস্তুত করবে।
বিজিএমইএ বলেছে, গত ১৮ অক্টোবর বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে আমদানি শেডটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে পোশাক শিল্পের আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, তৃতীয় টার্মিনালে (যা বর্তমানে পণ্য সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত নয়) দ্রুত সময়ের মধ্যে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ‘রাব হল’ স্থাপন করা হবে।
ইতোমধ্যে বিজিএমইএ এই ‘রাব হল’ স্থাপনের জন্য একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
গত ২০ অক্টোবর বিজিএমইএ ও নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নেতারা বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
সেই বৈঠকে কার্গো ভিলেজের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং আমদানি পণ্যের সুরক্ষায় অস্থায়ী গুদাম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজিএমইএ বলেছে, এই যৌথ উদ্যোগ আমদানি পণ্যের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রেখে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেবে।
গত ১৮ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে লাগা আগুন ওইদিন রাত ৯টায় নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিমান চলাচল শুরু হয়। তবে পুরোপুরি নেভাতে লেগে যায় ২৭ ঘণ্টা।
ওই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবি।
আগুনের ঘটনার পর শাহজালালে পণ্য আমদানি প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটছে এবং পণ্যের খালাসে বেশি সময় লাগছে। সেই জটিলতা নিরসনের জন্যই অস্থায়ী এ গুদামের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এশিয়ার শেয়ারবাজারে সোমবার ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন। আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যবিরোধ প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ‘কার্যত টেবিলের বাইরে।’ তার ভাষায়, ‘শুল্ক এড়ানো হবে।’ তিনি আরও জানান, চীন বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিলম্বিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ সয়াবিন ক্রয় করতে সম্মত হয়েছে।
অন্যদিকে, চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফেং বলেন, উভয় দেশ শুল্ক, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং ফেন্টানাইল সহযোগিতার বিষয়ে ‘প্রাথমিক ঐকমত্যে’ পৌঁছেছে। আলোচনাকে তিনি ‘স্পষ্ট, গভীর ও গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
এই অগ্রগতির ফলে আসন্ন আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠকের পথ সুগম হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর এটি হবে দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।
আলোচনার ইতিবাচক প্রভাব সোমবার সকালে এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ারবাজারে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার প্রায় দুই শতাংশ করে বেড়েছে এবং উভয়ই সাম্প্রতিক সময়ের মাইলফলক ছুঁয়েছে। হংকং, সাংহাই ও তাইপেইর বাজারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করেছে।
গত শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে শক্তিশালী লেনদেন সমাপ্তির পর এশিয়ার বাজারেও ইতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতি তথ্য ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমানোর পথে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভূমিকা রেখেছে।
গত রোববার কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (চীন) একটি চুক্তি করতে চায়, আমরাও চুক্তি করতে চাই।’ তিনি বর্তমানে পাঁচ দিনের এশিয়া সফরে রয়েছেন, যার অন্তর্ভুক্ত মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রতিটি সফরেই বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির খবরে বৈশ্বিক বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তামার ভবিষ্যৎমূল্য বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী শিল্প ও নির্মাণখাতে চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গত কয়েকমাস ধরে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দেয়, যা ওয়াশিংটন ‘অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল।
তবে সর্বশেষ অগ্রগতি উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্টের ভাষায়, ‘চুক্তির কাঠামো অনুযায়ী চীন এক বছরের জন্য তার বিরল মৃত্তিকা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখবে, এরপর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অগ্রগতি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য নয়, বরং পুরো এশীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১১৭ দিনে ২৫৫টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ) জানিয়েছে, মোট জাহাজের মধ্যে ১৮টি জাহাজ ১০ হাজার ৬০৮টি টিইইউ কন্টেইনার বহন করেছে এবং ১০টি জাহাজ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩ হাজার ২৫৩টি গাড়ি আমদানি করেছে।
এমপিএ উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ মাকরুজ্জামান বলেন, গত ১ জুলাই থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বন্দরে মোট ৪৭ লাখ টন পণ্য পরিচালনা করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ মোংলা বন্দরে জাহাজের আগমন বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
মাকরুজ্জামান জানান, বর্তমানে, সার, ক্লিংকার, এলপিজি, কয়লা এবং পাথর বহনকারী ২২৭টি বিদেশি জাহাজ বন্দরের জেটি ও স্থায়ী নোঙ্গরস্থলে নোঙর করে আছে। এর মধ্যে রয়েছে হারবাড়িয়া, বেস ক্রিক, সুন্দরী কোটা এবং মুরিং বোয়া।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আমদানি-রপ্তানি সহজতর করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, সিমেন্টের কাঁচামাল, সার, অটোমোবাইল, যন্ত্রপাতি, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তৈলবীজ এবং এলপিজি। অন্যদিকে রপ্তানির মধ্যে রয়েছে মাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, মাটির টাইলস, রেশম কাপড় এবং অন্যান্য সাধারণ পণ্য।
তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ আমদানিকারকরা এই সুবিধা ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের স্বাগত জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, বন্দরের ধারণক্ষমতার ৪০ শতাংশ এখনও উপলব্ধ রয়েছে এবং এ বছর বন্দর ব্যবহারের জন্য কোনো কর বাড়ানো হয়নি।
বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের তেলমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য, টেক্সটাইল ও পাট, এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের সঙ্গে উপদেষ্টার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে দুই পক্ষ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। বিদ্যমান বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগ ক্ষেত্র চিহ্নিত করার উপায়ও আলোচনা করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়েছে।
উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে এবং এখন সময় এসেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও সমমানের উন্নয়নের দিকে নেওয়ার।
তিনি উল্লেখ করেন, দেড় দশকেরও বেশি সময়ের স্থবিরতার পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) পুনরায় চালু করা হয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। উপদেষ্টা বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করার এবং বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন।
পাকিস্তানের মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। তিনি উন্নত বাণিজ্য সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য পাকিস্তানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎকালে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের জাতীয় মান প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন এর সাথে পাকিস্তানের হালাল বিষয়ক সংস্থা- পাকিস্তান হালাল অথরিটি (পিএইচএ) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। জাতীয় মান প্রণয়নে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এ সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পাকিস্তানের যৌথ অর্থনেতিক কমিশনের ৯ম বৈঠকে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।
বাংলাদেশের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এনডিসি ও পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশে নিয়োজিত পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান হায়দার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বিএসটিআই অনুমোদিত হালাল পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করা যাবে। বিএসটিআইয়ের হালাল সনদ থাকলে তা পাকিস্তানে বিনা পরীক্ষণে প্রবেশ করবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের হালাল অথরিটি (পিএইচএ) এর সনদ থাকলে তা বাংলাদেশেও বিনা পরীক্ষণে প্রবেশ করবে। এটি উভয় দেশের মধ্য বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার একটি প্রচেষ্টা। এর ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে হালাল পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্যের পথ সুগম করবে এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।
অনুষ্ঠানে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া সার্ককে আরো পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। এই বৈঠকে দুই দেশের জনগণের সম্পর্কেরও উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশা করেন।।
আলী পারভেজ মালিক বলেন, বিএসটিআইয়ের সঙ্গে হালাল পণ্য বিষয়ক একটা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যেখানে বলা হয় বিএসটিআই অনুমোদিত যে কোনো হালাল পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করা যাবে এবং পাকিস্তান তা গ্রহণ করবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পিএইচএ যে হালাল সনদ প্রদান করবে তা বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।
দেশের তৈরি পোশাক খাতে সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, শ্রমিকদের প্রায় ১৩ শতাংশ এখনো বর্ধিত মজুরি সম্পূর্ণভাবে পাচ্ছেন না। তাদের কেউ আংশিকভাবে বাড়তি মজুরি পেয়েছেন, আবার কেউ একেবারেই পাননি।
গবেষণাটি ২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে তৈরি হয়। এতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলার ৬০টি পোশাক কারখানার ২৪০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ‘ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন: বাস্তব অবস্থা ও শ্রমিকদের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। মন্ডিয়াল এফএনভির সহায়তায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আওয়াজ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার।
সরকার ২০২৩ সালে তৈরি পোশাক খাতের প্রবেশ পর্যায়ের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, জরিপে দেখা গেছে—প্রায় ৮৭ শতাংশ শ্রমিক নতুন কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ বর্ধিত মজুরি পাচ্ছেন। বাকি ১৩ শতাংশের মধ্যে ৮ শতাংশ আংশিকভাবে এবং ৫ শতাংশ এখনো সংশোধিত গ্রেড অনুযায়ী মজুরি পাননি।
তিনি আরও জানান, জরিপে অন্তর্ভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে নিট, ওভেন ও কম্পোজিট ইউনিট ছিল, যা খাতটির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানে সাবেক শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সামাদ আল আজাদ এবং সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এ কে এম নাসিমসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, যেসব কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন বা সংগঠন আছে, সেখানে বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকরের পর ৩১ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত কাজের (ওভারটাইম) বেতন ১ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত দেরিতে পেয়েছেন। ৫২ শতাংশ শ্রমিক কাজের চাপ ও উৎপাদন টার্গেট বৃদ্ধিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ২২ শতাংশ চাকরির অনিশ্চয়তা, ১৪ শতাংশ অনিয়মিত বেতন এবং ১১ শতাংশ গ্রেড নির্ধারণ ও পদোন্নতি নিয়ে বিভ্রান্তির কথা জানিয়েছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ শতাংশ শ্রমিক ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক জানিয়েছেন এটি কার্যকর হয়েছে, তবে ১৩ শতাংশ এখনো ইনক্রিমেন্ট পাননি।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, গবেষণায় যেসব কারখানায় অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কি না- তা স্পষ্ট নয়। তার দাবি, রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকরা মাস শেষে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন।
তিনি প্রস্তাব করেন, প্রতি পাঁচ বছর পর বড় মজুরি বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিবছর মজুরি পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে শ্রমিক আন্দোলন ও উৎপাদনে বিঘ্ন না ঘটে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কোনো সদস্য কারখানা বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়নি। কিছু কারখানা হয়তো আংশিকভাবে মজুরি দিয়েছে। তবে যেসব কারখানা সদস্যভুক্ত নয়, সেগুলোর তদারকি সরকারের দায়িত্ব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরান রামজুথন বলেন, সময়মতো ও পূর্ণ বেতন প্রদান শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার। এটি না হলে শুধু শ্রমিক নয়, দেশের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অনিয়ম রোধে পরিদর্শন ও তদারকি জোরদার করতে হবে, ফলাফল প্রকাশ করতে হবে এবং নিয়মিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও দায়িত্বশীল ক্রয়নীতি অনুসরণ করা জরুরি।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বলেন, মজুরি গেজেটে পরিষ্কার নির্দেশনার অভাবে অনেক মালিক ইচ্ছামতো গ্রেড নির্ধারণ করছেন, ফলে শ্রমিকরা বৈধ বেতন বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বড় কারখানাগুলো আরও প্রসারিত হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক উৎপাদন ও রপ্তানি আয় দুই-ই বৃদ্ধি পাচ্ছে।