সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২

তিন বছরে খেলাপি ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে নামবে

মো. আফজাল করিম। ছবি: ওসমান গনি
প্রকাশিত
প্রকাশিত : ৬ মে, ২০২৩ ০৯:১৮

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে বলে মনে করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম। ব্যাংকটির সার্বিক পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাতের নানা দিক নিয়ে দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক বাংলার প্রতিবেদক এ এস এম সাদ

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানোর অগ্রগতি কতদূর?
ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। অন্যান্য ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের সমস্যা ছিল। আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর খেলাপির সংখ্যা যাতে না বাড়ে, সেদিকে জোর দিয়েছি। কারণ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতকে দুর্বল করে তোলে। সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ১৮ শতাংশ খেলাপি ছিল ২০২১ সালে। সেটি ২০২২ সালে সাড়ে ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয় তদারকি করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে তবে সেই অনুপাতে খেলাপি ঋণ বাড়েনি। সোনালী ব্যাংকে ২০২১ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ১১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬ কোটি টাকা। ৪৬ কোটি টাকার মতো খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

খেলাপি ঋণ কমাতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
প্রত্যেকটি খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে যেসব ঋণ খেলাপি রয়েছে, সেগুলো নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। তিন স্তরের মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে খেলাপি ঋণের কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে। ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সরাসরি নিজেই ২৫টি খেলাপি ঋণ তদারকি করছেন। এসব কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও গাইডলাইন অনুযায়ী করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কারণ একজন শাখা ব্যবস্থাপকের নানা ধরনের দায়িত্ব থাকে। খেলাপি ঋণকে কীভাবে ডাউন পেমেন্ট করে তা পুনঃতফসিলের মাধ্যমে আদায় করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। যখন পুনঃতফসিলের মাধ্যমেও খেলাপি ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব হয় না তখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে সোনালী ব্যাংক। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিন বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৬ সাল নাগাদ সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসা হবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন খাতে সংস্কারে বেশি নজর দিয়েছেন?
২০২২ সালের আগস্টে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগদান করি। প্রথমে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। সোনালী ব্যাংকের অ্যাডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বরাবর কম ছিল। ২০১৯ সালে এটি ছিল ৪৮ শতাংশ। ২০২০ সালে কমে দাঁড়াল ৪৭ শতাংশ। ২০২১ সালে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশ। এরপর ২০২২ সালে এডি রেশিও ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এডি রেশিও ৬২ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। এটি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। আর এসব বিতরণ করা ঋণ সময়মতো আদায় করা সম্ভব হয়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সোনালী ব্যাংকে নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন ২০২১ সাল পর্যন্ত নেগেটিভ ছিল। সর্বশেষ ডাটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন ৯৮৯ কোটি টাকা নেগেটিভ ছিল। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসে দাঁড়াল ৩৩২ কোটি টাকা পজিটিভ। এই প্রথম নিট পজিটিভ করল সোনালী ব্যাংক। নিট পজিটিভ হওয়া মানে দুই দিকে সাফল্য রয়েছে। পারফর্মিং লোন বা ঋণ বেড়েছে, অন্যদিকে খেলাপি ঋণ বাড়তে দেয়া হয়নি। লো কস্ট আমানতকে বাড়িয়ে আনা এবং হাই কস্ট আমানতকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ইন্টারেস্ট এক্সপেন্ডিচার বা ঋণের অতিরিক্ত সুদ ব্যয় কমানো হয়েছে। তাতে ইন্টারেস্ট মার্জিন পজিটিভ হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কী অবস্থা?
অন্যান্য ব্যাংকের মতো সোনালী ব্যাংকেরও মূলধন ঘাটতি ছিল। ২০২১ সালে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি কমানো সম্ভব হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়তে না দেয়া, পুনঃতফসিলের মাধ্যমে অর্থ আদায় করা, পরিচালন ব্যয় কমানো, পারফর্মিং ঋণ বাড়ানো, রাইট অব বা অবলোপন ঋণ থেকে টাকা আদায় করা- এসব কার্যক্রমের কারণে মূলধন ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

ব্যাংকটির আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধি কেমন হয়েছে?
২০২১ সালে সোনালী ব্যাংকে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের স্থিতি দাঁড়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ পরিমাণ বেড়েছে। ২০২১ সাল শেষে আউটস্ট্যান্ডিং বা মোট ঋণের স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২২ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ফলে আমানত ও ঋণ- দুটিরই প্রবৃদ্ধি রয়েছে। একটি ব্যাংক অ্যাডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। বাকি ৪ শতাংশ সিআরআর খাতে নগদ অর্থ জমা রাখতে হয় এবং ৯ শতাংশ এসএলআর রাখতে হয়। গত বছরে দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো ঋণকে রাইট অব বা অবলোপন করা হয়নি। আগের রাইট অব ঋণ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। সেখান থেকে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা টাকা আদায় করছি।

ব্যাংকিং কার্যক্রমে নতুন কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?
দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটিকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালে সোনালী ই-সেবা অ্যাপ চালু করা হয়। ছোটখাটো ট্রানজেকশন করতে এবং হিসাব খুলতে গ্রাহকদের আর ব্যাংকে আসতে হয় না। সোনালী ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে প্রবাসী গ্রাহকরা তাদের কস্টার্জিত অর্থ মাত্র ৫ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের হিসাবে জমা করতে পারেন। দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকের সব শাখা এখন অনলাইন। আইটি খাতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিচ্ছেন এ ব্যাংকের কর্মীরা। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজারটি ট্রানজেকশন হচ্ছে। বিশ্বে পেপারলেস ব্যাংকিং একটি জনপ্রিয় ধারণা। বাংলাদেশও এতে পিছিয়ে নেই। বর্তমানে সব মানুষই স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। কোভিডকালীন সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ফলে গ্রাহকরা ঘরে বসেই সব ধরনের সেবা পেয়েছেন। বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সিটিজেন, যারা সরকারি এই ব্যাংক থেকে ভাতা নেন, তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম। প্রবাসীদের অনেক দিনের দাবি ছিল তারা যেন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সহজ পন্থায় টাকা পাঠাতে পারেন। সেই কাজটি আমরা করতে সফল হয়েছি। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে বিদেশ থেকে খুব সহজে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এনড্রয়েড ও আইফোন দুই ধরনের মোবাইল দিয়েই অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব। এ ছাড়া ক্যাশলেসের একটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। চেক বই ছাড়া কিউআর কোডের মাধ্যমে টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছে। ফলে টাকা লেনদেনের বিষয়গুলোকে আরও সহজ করা হয়েছে। কিউআর কোড ব্যবহার করেই ক্যাশ টাকা উঠানো সম্ভব। ফলে গ্রাহককে আগের মতো চেকবই বহন করতে হবে না। মার্চ মাসে সোনালী ব্যাংক কল সেন্টার উদ্বোধন করল। এটি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম। কল সেন্টারের নম্বর ১৬৬৩৯। এই নম্বরে কল দিলে সোনালী ব্যাংকের সব তথ্য সরবরাহ করা হবে। অনেকে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেন। কোনো সময় তাদের এই কার্ড হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কল সেন্টারে জানিয়ে দেয়া যাবে। এতে গ্রাহকের টাকা নিরাপদ থাকবে।

ডলার সংকটকালে আমদানি-রপ্তানিতে সোনালী ব্যাংকের অবস্থান কেমন?
সোনালী ব্যাংকের আমদানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি ছিল। ২০২২ সালে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেই তুলনায় রপ্তানি কম হয়েছে। ২০২২ সালে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। তবে আমদানির সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। অথরাইজড ডিলার (এডি) ব্রাঞ্চে আমরা যোগাযোগ বাড়িয়েছি। কীভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায় সেদিকে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪৮টি এডি ব্রাঞ্চ রয়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে চলতি বছর রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। যা সার্বিক অর্থনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ কি আশানুরূপ?
২০২২ সালে মোট ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। চলতি বছরে ২৩-২৪ বিলিয়ন ডলার আসতে পারে। আমেরিকায় সোনালী ব্যাংকের বুথ রয়েছে। আগে প্রবাসীরা যখন রেমিট্যান্স পাঠাত, সেখানে ১-২ ডলার পর্যন্ত কমিশন নেয়া হতো। কিন্তু রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সেই কমিশন ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। কর্মদিবস ছাড়াও বাইরের দেশের সরকারি ছুটির দিন সোনালী ব্যাংকের বুথ খোলা রাখা হয়। কারণ কর্মদিবসে প্রবাসী কর্মীরা কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে ছুটির দিনে যদি তারা নিশ্চিন্তে টাকা পাঠাতে পারেন, সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বাফেদার চেয়ারম্যান হিসেবে ডলার সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন কি?
কোভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়েছে। সেই প্রভাব থেকে বাংলাদেশও বাদ যায়নি। তবে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়েছে। দেড় বছর ধরে ডলার বাজার অস্থির। ডলার সংকটের কারণে নানা মহল এই বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। বিদেশি মুদ্রা বা ডলার বাজার যাতে অস্থিতিশীল না করা যায়, সে জন্য প্রতি মাসে বাফেদা-এবিবি যৌথ সভার মাধ্যমে ডলারের দর নির্ধারণ করে। এটি গত ছয় মাস ধরে চলছে। কারণ বছরখানেক আগেও দেশের ব্যাংকগুলো এক রকম অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ডলার সংগ্রহ করা শুরু করে। আমদানি ও রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদাও বেড়ে যায়। সেজন্য তখন ব্যাংকগুলো যে যত বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। ডলারের অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা বাফেদার নজরে আসে। এ ছাড়া খোলা বাজারে ডলারের কারসাজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে এবিবি-বাফেদা সভা করে ডলারের দর নির্ধারণ করে। রেমিট্যান্সের দর সর্বপ্রথম ১০৮ টাকা করা হয়। এর সঙ্গে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়। তখন রপ্তানি বিল ও আমদানি বিলের একটা দর দেয়া হয়েছিল। এভাবে প্রতি মাসে ডলারের একটা দর নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাজার ও অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রেমিট্যান্সে দর নির্ধারণ করা হয়। করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে অনেকে আলোচনায় এনেছিল যে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং প্রবাহ বিরাজমান রয়েছে। ফলে আমি মনে করি দেশে যে এক ধরনের ডলার সংকট তৈরি হয়েছিল, তা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।

ব্যাংকগুলো আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে পেরেছে?
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের সঙ্গে সভা হয়েছে। আইএমএফ ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আদায়ের অগ্রগতি, ঋণ-আমানতের সুদের হারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়েছে। পজিটিভ প্রবৃদ্ধি রয়েছে কিনা সে বিষয়গুলো আইএমএফের পর্যালোচনায় ছিল। হঠাৎ করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। আইএমএফ সব কিছুর বিবেচনায় একটি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। কারণ আগের চেয়ে ব্যাংক খাতে নানা সূচকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা কী?
বর্তমান সরকারের সময় ব্যাংক খাতের প্রভূত পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে এ খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংক খাত শক্তিশালী হয় আমানতের পরিমাণ বাড়লে। আর ব্যাংক খাত শক্তিশালী হলে একটি দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থানও শক্তিশালী হয়। ব্যাংক খাতে মোট আমানত ১৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর ঋণও ১৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বিতরণ করা হয়েছে। ফলে আমানত ও ঋণ- দুটিরই বড় রকমের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সেই অনুযায়ী খেলাপি ঋণ বাড়েনি। শতাংশ হিসাব করলে ১১ শতাংশের মধ্যেই আছে। আর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমতির দিকে। গত বছর গুজব তৈরি হয়েছিল- ব্যাংকে টাকা নেই। এর ফলে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তখন ব্যাংক খাত এক ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে যায়। সেই বিপর্যয় অনেকটা কাটিয়ে উঠছে ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং নানা রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট বিদ্যমান আছে?
ঈদের সময় ব্যাংকগুলোতে টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে এ সময় টাকার সরবরাহ বাড়ে। টাকার চাহিদা বাড়লে কলমানিতে সুদের হার বেড়ে যায়। কিন্তু এবার ঈদের আগের দিন কলমানিতে সুদের হার সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে ছিল। প্রতি ঈদে এটি আরও বেড়ে যায়। ফলে কলমানির সুদের হার দিয়ে বোঝা যায় ব্যাংকে তারল্যসংকট নেই। ঈদের আগে ব্যাংকে তারল্য ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর পরও যদি সিআরআর ও এসআরআর বাদ দিলেও ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার মতো তারল্য ছিল। অন্যদিকে বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তা ছিল। ফলে এবার ঈদে বাজারে তারল্যসংকট ছিল না।

বিষয়:

এইচবিএল প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর: বাণিজ্য-বিনিয়োগে নতুন অঙ্গীকার

এইচবিএল-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ নাসির সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

হাবিব ব্যাংক লিমিটেড (এইচবিএল)-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও মোহাম্মদ নাসির সেলিম সম্প্রতি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এই সফরে তিনি আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি ব্যাংকের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশে অবস্থানকালে তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা ।

গত ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে হাবিব ব্যাংক বাংলাদেশে কাজ করছে। দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বহুজাতিক ব্যাংকটি। চীনে শক্ত অবস্থান তৈরি করা ব্যাংকটির শাখা রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর বেইজিংয়ে। হাবিব ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে চীনে কাজ করা তিনটি ব্যাংকের মধ্যে একটি যারা চীনা মুদ্রায় লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা দেয়। এতে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করতে বিশেষভাবে অবদান রেখে চলেছে ব্যাংকটি।

ঢাকায় ব্যাংকটির একটি ‘চায়না ডেস্ক’ রয়েছে যা ব্যবসায়ীদের ভাষা, নিয়মকানুন ও ব্যাংকিং সেবা নিয়ে সহায়তা করে। এতে করে চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য আরও সহজ হচ্ছে।

কৌশলগত সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে এইচবিএল সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) চালু করেছে। এর মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সেবা আরও সহজ হবে। বিশেষ করে দেশের ইকোনমিক জোন ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা থেকে রপ্তানি বাড়াতে এটি সহায়ক হবে।

মোহাম্মদ নাসির সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। আমরা চাই বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সহজে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করুক। চীন, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল বাজারগুলোতে আমরা তাদের পাশে থাকতে চাই।’

এইচবিএল তার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও অংশীদার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে ব্যবসা বাড়াতে সহায়তা করেছে। ব্যাংকটি ট্রেড ফাইন্যান্স, পরামর্শ সেবা, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক মুদ্রা সেবা নিয়ে কাজ করছে।


শুক্রবার খোলা থাকবে ৪ রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের দীর্ঘ ছুটি শুরু হলেও শুক্রবার (২৮ মার্চ) ৪ রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের আগেই বেতন-ভাতা তোলার সুবিধার্থে এসব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা শুক্রবার খোলা থাকবে।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত রাষ্ট্রায়াত্ত এসব ব্যাংক খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।। এ সময়ের মধ্যে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে। দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত জুমাতুল বিদার বিরতি থাকবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জনস্বার্থে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম অনুযায়ী ভাতা পাবেন বলে নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


সংকটাপন্ন ৬ ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে

ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল, এক্সিম ব্যাংক, ইউসিবি, আইএফআইসি ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক
প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির কারণে প্রায় ধসের মুখে থাকা ১১টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের মধ্যে ছয়টি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ছয় মাসে আমানত সংগ্রহ ও গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এসব ব্যাংক এ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত বছরের আগস্টে গভর্নর আহসান এচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে।

ঘুরে দাঁড়ানো ছয়টি ব্যাংক হলো- ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), আইএফআইসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের বেশির ভাগই এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল নয়। সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি সহায়তার ফলে এগুলো তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ সরে যাওয়ার পর দেশের বৃহত্তম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ব্যাংকটি গত ছয় মাসে ১৭ হাজার কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাপক আমানত উত্তোলনের চাপে পড়েছিল ব্যাংকটি, যার ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিতে হয়। তবে, বর্তমানে এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকটি পুনরায় স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পায়। তবে, আমানতের ধারাবাহিক প্রবাহ বজায় থাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংকটির আর তারল্য সহায়তার প্রয়োজন হয়নি।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংক মুক্ত হওয়ার পর চেয়ারম্যান নিযুক্ত ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ জানান, গত ছয় মাসে ব্যাংকটিতে সাড়ে ১২ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তিনি ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার মূল্যায়নের জন্য একটি অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে এবং অতীতের অনিয়মের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

পূর্বে শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রিত আইএফআইসি ব্যাংক গত চার মাসে চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা আমানত হারায় ব্যাংকটি। ফলে অক্টোবরে ব্যাংকের মোট আমানত ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে, যেখানে জুলাই মাসে এটি ছিল ৫০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।

বিপুল পরিমাণ আমানত উত্তোলনের ফলে তারল্য সংকট দেখা দেয় এবং ব্যাংক আমানতকারীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তবে, চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে নবনিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় আমানতের প্রবাহ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূর্বে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর আমানত উত্তোলনের চাপ কাটিয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমানত প্রবাহ বাড়ায় ব্যাংকটি নিজস্ব তারল্য দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ব্যাংকটি দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তবে, আমানত ক্ষয় বন্ধ হওয়ায় গ্রাহকেরা এখন আবার তাদের তহবিল ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গত ছয় মাসে ব্যাংকটি দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা নিট আমানত সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ এসেছে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, যা আগে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাত হাজার কোটি টাকা আমানত উত্তোলনের মুখে পড়েছিল। তবে তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার পর ব্যাংকটি এখন স্বাভাবিক নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করায় ব্যাংকটির বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পুনরায় সচল হয়েছে। তবে, এস আলম গ্রুপের সময় খোলা এলসির বিপরীতে বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যাংকটি এখনো কিছুটা তারল্য সংকটে রয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটি নতুন করে ৯০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

এক্সিম ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমও বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে এবং আমানত উত্তোলনের চাপ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এক্সিম ব্যাংক ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া তারল্য সহায়তার একটি বড় অংশ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে এ দুটি ব্যাংক আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার ওপর নির্ভর করছে না।


৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত দেশের ৬টি ব্যাংকের সম্পদের গুনমান মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (ইওয়াই) ও কেপিএমজিকে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে দেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

নিরীক্ষার জন্য বাছাই ব্যাংকগুলো হলো-

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইওয়াই গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং কেপিএমজি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের নীরিক্ষা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) পদে ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।

নিরীক্ষায় যদি প্রমাণিত হয় এমডিরা আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন, তাহলে তারা আবার তাদের ভূমিকায় ফিরে যেতে পারেন। অন্যথায় তাদের স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানান শিখা।

উল্লেখ্য, ৬টি ব্যাংকের মধ্যে চারটিই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংস্কার প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে সহায়তাকারী এডিবি সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। তারা ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান পর্যালোচনার সুপারিশ করায় এই উচ্চ পর্যায়ের নিরীক্ষা করা হয়।

এরই মধ্যে ৬টি ব্যাংকের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিরীক্ষা দলকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তা এবং এডিবির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৈঠকে স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক পরিদর্শনে বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের আশঙ্কাজনক নমুনা পাওয়া গেছে।


৫ ব্যাংকের এমডিকে ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণ জালিয়াতিতে আলোচিত আরও ৫ ব্যাংকের এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- এক্সিম, গ্লোবাল ইসলামী, এসআইবিএল, আইসিবি ইসলামিক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। রোববার তাদের ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, এডিবির অর্থায়নে ৬টি ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট শুরু করছে বিদেশি অডিট ফার্ম। স্বচ্ছতার সঙ্গে অডিট সম্পন্ন করতে তারা চায় বর্তমান এমডিরা কেউ দায়িত্বে না থাকুক। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।

বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে অডিট সম্পন্ন করার জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারও দায় প্রমাণিত না হলে তিনি আবার ফিরতে পারবেন। এর আগে শনিবার ফার্স্টসিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তাকে আগামী তিন মাসের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করবেন ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ৬ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। সেখানে এসব ব্যাংকে অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে এস আলম ঘনিষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক শনিবার পরিচালনা পর্ষদের জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর উচ্চ পদে শিগগিরই পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে। ২০১৭ সালে এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলের সময় আব্দুল মান্নানকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পদত্যাগ করানো হয়।


নসরুল হামিদের ৯৮ ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ

দুদকের মামলা, স্ত্রী ও ছেলেও আসামি
নসরুল হামিদ বিপু। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৮১ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্যও পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগে নসরুল হামিদ বিপু, তার স্ত্রী সীমা হামিদ ও ছেলে জারিফ হামিদের নামেও আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

আক্তার হোসেন জানান, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় দুদক আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আরেক মামলায় নসরুল হামিদ বিপু ও তার ছেলে জারিফ হামিদকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ছেলে জারিফের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে তার ২০টি ব্যাংক হিসাবে ২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা জমা এবং ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

ছেলে জারিফের লেনদেনকে ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক’ উল্লেখ করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ এবং পিতার প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার ছেলে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

তৃতীয় মামলায় নসরুল হামিদ বিপু ও তার স্ত্রী সীমা হামিদকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় সীমার বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তার ২০টি ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৯ টাকা জমা এবং ১১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৮ টাকা উত্তোলনসহ ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক’ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।

গত ২২ আগস্ট নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওইদিন তার প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এ ছাড়া রাজধানীর বনানীর নসরুল হামিদের ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ২০০ তুর্কি মুদ্রা উদ্ধার এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।


এস আলম ও তার পরিবারের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক ইব্রাহীম মিয়া এ নির্দেশ দেন।

এদিন দুদকের উপপরিচালক (টিম লিডার) মো. আবু সাঈদ এ আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত ১২৫ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম বিষয়টি বাসসকে নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ০১ (এক) বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির বিভিন্ন শাখার ১২৫টি হিসাবে জমাকৃত বাইশ কোটি পয়ষট্টি লাখ ঊনপঞ্চাশ হাজার একশত একানব্বই টাকা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। এসব হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।

আবেদনে আরও বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন উদ্দেশ্যে ব্যাংক হিসাবসমূহে জমা রেখেছেন। যেকোনো সময় এ অর্থ উত্তোলন করে বিদেশে পাচার বা গোপন করার আশঙ্ক্ষা রয়েছে।


ব্যাংকে চাকরি প্রার্থীদের বয়সসীমা বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলোতে প্রবেশ স্তরের চাকরির জন্য নতুন বয়সসীমা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকীর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা আগের ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ১৮ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি অধ্যাদেশে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় এমন সরকারি করপোরেশন এবং স্ব-শাসিত সংস্থার জন্য সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘অধ্যাদেশের আলোকে এখন ব্যাংকগুলোকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছরের পরিবর্তে ৩২ বছর নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হলো।’

২০১৩ সালের ২৩ জুন বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ০৮-এ বর্ণিত পূর্বের নির্দেশনাও বাতিল করা হয়। তবে, প্রত্যাহার করা নির্দেশিকাগুলোর অধীনে পূর্বে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বৈধ থাকবে।


৬ ব্যাংকের ঋণপত্রের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৯:৩৭
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সংকটে পড়া ছয় ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ঋণপত্র খোলার সময় এসব ব্যাংককে আর শতভাগ মার্জিন বজায় রাখতে হবে না। এর আগে চলতি বছরের আগস্টে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক চিঠির মাধ্যমে এসব ব্যাংককে এখন থেকে শতভাগ মার্জিন শর্ত না মেনে আগের নিয়মে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।

এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আগে সমালোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল।


এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত কমল ৫৪৩ কোটি টাকা

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৩:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই মাসে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে স্থবিরতা এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। টানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত কমেছে ১২ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৪) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। আর তিন মাস পর অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ১০৯টি। সেই হিসাবে তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫১টি।

২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৫৪৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ-মূল্যস্ফীতির একটা বড় প্রভাব প্রান্তিক মানুষের ওপর পড়েছে। যার ফলে আমানত কমতে পারে। এ ছাড়াও গত বছরের জুন থেকে ব্যাংকিং খাতে প্রতি মাসেই ঋণের সুদহার বাড়ছে। যার কারণে গ্রাহকরাও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করছেন। প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে ঋণ বিতরণের স্থিতি বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯৫ জন। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন ১ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার ৮৪৬ জন।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সহজ করতেই মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। সাময়িকভাবে কোনো মাসে লেনদেন কমতে পারে। তবে বাস্তবিক অর্থে এটা এখন সারা দেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাধারণ মানুষ হাতের কাছে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ এখন এসব এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে ঋণও নিতে পারছেন।


ডাচ-বাংলা ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ থাকবে ৫ দিন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী বছরের শুরুতে পাঁচ দিন ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময়ে ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথ থেকে কোনো সেবা পাবেন না ব্যাংকটির গ্রাহকরা। তবে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের লেনদেন চালু থাকবে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার হালনাগাদ করার জন্য ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মূল ব্যাংকিং সেবা আগামী ১ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির কোনো গ্রাহক শাখায় যেমন লেনদেন করতে পারবেন না, তেমনি ব্যাংকটির এটিএম বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারবেন না। এ ছাড়া ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট সাত দিন বন্ধ থাকবে। তবে এই বন্ধের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি ও বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যাংক হলিডে রয়েছে। সেই হিসাবে মূলত ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন বন্ধ থাকবে দুই দিন।

বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি বুধবার ব্যাংক হলিডে। ৩ ও ৪ জানুয়ারি শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ও ৫ জানুয়ারি রোববার ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে ব্যাংক বন্ধ রাখার বিষয়ে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এ বিষয়ে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘বছরের শুরুর সময়টাতে ব্যাংকিং লেনদেনের চাপ কম থাকে। তাই গ্রাহকসেবার মান আরও উন্নত করতে সফটওয়্যার হালনাগাদের জন্য আমরা এই সময়টাকে বেছে নিয়েছি।’


সমস্যা থাকলেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সমস্যা থাকলেও কোনো ব্যাংক বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকও উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে কিছু ব্যাংকে এখনও সমস্যা আছে। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করব না।’

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

তবে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা এতে প্রভাবিত হবে না’বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।


তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাস
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০০:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক ব্যাংকের মুনাফায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে অনিবার্য কারণবশত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। বাকি ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ১৮টির। বিপরীতে মুনাফা কমেছে ১৪টির। আর লোকসান করেছে ৩টি ব্যাংক। এর মধ্যে একটি নতুন করে লোকসানি তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

আলোচিত সময়ে শতকরা হিসাবে মুনাফায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে ওয়ান ব্যাংকে। এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৬২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফায় ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তালিকায় ৩য় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। অন্যদিকে আলোচিত সময়ে মুনাফা সবচেয়ে বেশি কমেছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। এই হার ছিল ৯০ শতাংশ। ৮৩ শতাংশ মুনাফা কমে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। আর এবি ব্যাংক ৬৫ শতাংশ মুনাফা হারিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৬৩ পয়সা। আগের বছরের প্রথম ৯ মাসে ২৮ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চলতি বছরের আলোচিত সময়ে শেয়ারপ্রতি ৪৮ পয়সা মুনাফা লুফে নিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক আলোচিত সময়ে ৪ টাকা ৯২ পয়সা ইপিএস করলেও আগের বছরের একই সময়ে ২ টাকা ৯৭ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছিল। আগের বছরের জানুয়ারি-সেপেম্বর সময়ে উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ২ টাকা ৩৭ পয়সা। চলতি বছরের একই সময়ে এ মুনাফা ৬১ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৮২ পয়সা হয়েছে। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯৫ পয়সা ইপিএস করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে এই ইপিএস হয়েছিল ৬০ পয়সা।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৪ পয়সা, প্রাইম ব্যাংকের ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৩৮ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৭ টাকা ৫৮ পয়সা, ইউসিবির ৩২ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৫১ পয়সা, যমুনা ব্যাংকের ২৪ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৬৯ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ২২ শতাংশ বেড়ে ২৮ পয়সা, সিটি ব্যাংকের ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৩৫ পয়সা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ শতাংশ বেড়ে ৪৩ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৬৫ পয়সা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৯ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৪১ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২ টাকা ১১ পয়সা, প্রাইম ব্যাংকের ৩ টাকা ৫ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৫ টাকা ৩০ পয়সা, ইউসিবির ১ টাকা ১৪ পয়সা, যমুনা ব্যাংকের ৩ টাকা ৭৮ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ২৩ পয়সা, সিটি ব্যাংকের ২ টাকা ২৮ পয়সা, রূপালী ব্যাংকের ৩৭ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ৩ টাকা ৩১ পয়সা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৩ টাকা ১৪ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।

এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এনসিসি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৮ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৪৮ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা। আর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৭ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৭ পয়সা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৩ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৮৬ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংক দুটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল যথাক্রমে ১ টাকা ৯৪ পয়সা এবং ২ টাকা ৭৮ পয়সা।

অন্যদিকে মুনাফা কমে যাওয়া ১৪টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে কমে মাত্র ১৪ পয়সা হয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এই মুনাফা ৯০ পয়সা থেকে কমে ১৫ পয়সা হয়েছে। আর এবি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আলোচিত সময়ের ব্যবধানে ৫৪ পয়সা থেকে কমে ১৯ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আলোচিত ৯ মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৬৩ শতাংশ কমে ৪৮ পয়সা, আল্-আরাফাহ ব্যাংকে ৪৯ শতাংশ কমে ৫৭ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ কমে ১ টাকা ১৭ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৪৬ শতাংশ কমে ৩৬ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ কমে ২ টাকা ৭০ পয়সা এবং ব্যাংক এশিয়া ব্যাংকের ৪২ শতাংশ কমে ১ টাকা ৭৬ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের ৯ মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১ টাকা ৩০ পয়সা, আল্-আরাফাহ ব্যাংকে ১ টাকা ১২ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকে ২ টাকা ২৫ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকে ৬৭ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ৪ টাকা ৭১ পয়সা এবং ব্যাংক এশিয়ায় ৩ টাকা পয়সা ইপিএস হয়েছিল।

এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা চলতি বছরের ৯ মাসে ৩৯ শতাংশ কমে ১ টাকা ৬৬ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকে ২৪ শতাংশ কমে ৮৭ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ২০ শতাংশ কমে ২ টাকা ৩ পয়সা, মিডল্যান্ড ব্যাংকে ৭ শতাংশ কমে ৫৪ পয়সা এবং ঢাকা ব্যাংকে ৬ শতাংশ কমে ১ টাকা ৭৬ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যথাক্রমে ব্যাংকগুলোর ২ টাকা ৭২ পয়সা, ১ টাকা ১৪ পয়সা, ২ টাকা ৫৩ পয়সা, ৮৫ পয়সা এবং ১ টাকা ৮৮ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টি লোকসান করেছে। এর মধ্যে দুটি আগের বছরের ধারাবাহিকতায় লোকসান করলে নতুন করে লোকসানের তালিকায় এসেছে এক্সিম ব্যাংক। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৭৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ১ টাকা ৫৮ পয়সা। গতানুগতি অন্য দুই লোকসানি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের আলোচিত সময়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান ৫৭ শতাংশ বেড়ে ৫ টাকা ৪৯ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এই লোকসান হয়েছিল ৩ টাকা ৪৯ পয়সা। আর আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৭ শতাংশ বেড়ে ৭১ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এ লোকসান ৫৬ পয়সা হয়েছিল।


banner close