শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
২৩ কার্তিক ১৪৩২

দাম বাড়িয়ে ধরা ইউনিলিভার-কাজী ফার্মস-সিটি গ্রুপ

পণ্যের দাম বাড়িয়ে ধরায় ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপ, কাজী ফার্মস, প্যারাগন গ্রুপসহ ১১ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার। ছবি: দৈনিক বাংলা
প্রতিবেদক,
প্রকাশিত
প্রতিবেদক,
প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৩৬

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার, কাজী ফার্মস, সিটি গ্রুপসহ ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। বাজারে চাল, আটা-ময়দা, ডিম, মুরগির মাংস ও টয়লেট্রিজ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে এ সব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজারের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার নিয়ম ভেঙে চাল, আটা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্টসহ অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য মামলা করা হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হবে।’

চালের বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ ও নওগাঁর বেলকন গ্রুপের বেলকন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে।

দুই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিটি গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আটা-ময়দার সংকট তৈরির অভিযোগে। বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তেলের বাজারে সংকট তৈরির অভিযোগে।

ডিমের সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ্, কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

মুরগির বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগও আনা হয়েছে প্যারাগন পোলট্রি ও কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হয়েছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সাবান, সুগন্ধী সাবান ও গুঁড়া সাবানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ এনে।

কমিশনের সচিব আবদুস সবুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত বুধবার বিভিন্ন অভিযোগে চাল, আটা, মুরগির মাংস, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকারী ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভোক্তাদের স্বার্থে প্রতিযোগিতা কমিশন তো এত দিন কিছুই করেনি। এই প্রথম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করল। এখন দেখতে হবে, কত দ্রুততার সঙ্গে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়। আইন অনুযায়ী কাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অন্যায়ভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষের পকেট থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেই অপরাধে যদি সত্যিই এদের উপযুক্ত শাস্তি হয়, তাহলে বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যরা ভয় পাবে, অযৌক্তিকভাবে ইচ্ছামতো আর পণ্যের দাম বাড়াবে না। দেশের মানুষ স্বস্তি পাবে।’

গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘আমি প্রতিযোগিতা কমিশনের এই মামলা করাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। যদি সত্যিই এদের উপযুক্ত শাস্তি হয়, তাহলে আমি কমিশনকে সাধুবাদ জানাব।’

মামলার বিষয়ে কমিশনের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের বাজারে চাল, আটা-আটা, ডিম, বয়লার মুরগি, টয়লেট্রিজের (সাবান, সুগন্ধী সাবান, গুঁড়া সাবান, ইত্যাদি) অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকটের ফলে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা দূরীকরণে এই ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে।

চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোম্পানিগুলোকে ধারাবাহিকভাবে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫-তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬-তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।

গত কয়েক মাস ধরে দেশে চাল, তেল, আটা, ডিম, মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্ট ও টুথপেস্টের বাজারে অস্থিরতা চলছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে, যেখানে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরির জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ভোক্তা অধিদপ্তর ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে।

এদিকে কয়েক মাস ধরে বাজারে চালের দাম বেশি। মাসখানেক আগে মোটা চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৫৫ টাকার ওপরে। একইভাবে সরু বা চিকন চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৮৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে অভিযান শুরু ও চাল আমদানির কারণে তা আবার কমতে শুরু করেছে।

একইভাবে মাসখানেক আগে ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তখন ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকার ওপরে ওঠে। অভিযানের কারণে ডিম ও মুরগির দাম মাঝে কিছু দিন কম থাকলেও এখন আবার বেড়েছে; ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য নিত্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডলারের বাড়তি দাম ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দিলেও সরকারি-বেসরকারি একাধিক মতবিনিময় সভায় মূল্য যতটা বৃদ্ধির কথা, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান শামীমা আক্তার দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো নোটিশ পাইনি। তবে গণমাধ্যমে দেখেছি। তাই কী পরিপ্রেক্ষিতে এটি হয়েছে, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে আমরা দেশের সব ধরনের আইন মেনে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছি। কমিশনকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতা কমিশন অনেক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর আগেও এমন হয়েছে।’

সিটি গ্রুপের মামলার ব্যাপারে জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ তথ্য আমরা পেয়েছি। এর আগেও প্রতিযোগিতা কমিশন সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময়ও মামলা করেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা আমাদের অবস্থান কমিশনকে জানাব।’

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ চালে ১৯টি, আটা-ময়দায় আটটি, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমে ছয়টি, সাবান ও ডিটারজেন্টে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।

শুনানি সোমবার থেকে

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুর ১২টায় কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডিম ও ‍মুরগির বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। পর দিন বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে শুনানি হবে।


বিদেশেও খ্যাতি ছড়িয়েছে বগুড়ার ‘কটকটি’

বছরে ৪০ কেনাবেচা হয় কোটি টাকার কটকটি
আপডেটেড ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ২১:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

খাওয়ার সময় কটকট শব্দ হওয়ায় খাবারটির নাম কটকটি বলে ধারণা স্থানীয়দের। বগুড়ার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সুমিষ্ট খাবার কটকটি। অনেকে চেনেন মহাস্থানের কটকটি বলে। সুস্বাদু এই খাবারের সুনাম দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে এখন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। শুকনো মিষ্টি এই খাবার আজ বগুড়ার গর্ব।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের অবস্থান। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাপী মহাস্থানগড়ের পরিচিতি আছে। তবে মহাস্থানগড়ের সুখ্যাতি রয়েছে সুস্বাদু কটকটির জন্য। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই খাবারটি মহাস্থানগড়ে তৈরি ও বিক্রি হয়ে আসছে।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে স্থানীয়দের হাতে এই মিষ্টি খাবারের যাত্রা শুরু হয়। চালের বা গমের আটার সঙ্গে গুড় মিশিয়ে তৈরি হতো এই শুকনো মজাদার খাবার। শুরুর দিকে কটকটি বেশ শক্ত ছিল এবং খেতে কটকট শব্দ হতো। তবে সময়ের সঙ্গে এখন নরম ও সুস্বাদু কটকটি তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, প্রায় দেড়শত বর্ষ আগে বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়ার জয়নাল আলী মণ্ডল, ভোলা মণ্ডল আর গেদা মণ্ডল প্রথম কটকটি বানানো শুরু করেন। গ্রামের মেলা কিংবা বিয়ের আসরে তখন পরিবেশন করা হতো এই নতুন ধরনের খাবার। মচমচে স্বাদ আর সহজলভ্য উপকরণের কারণে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে জনপ্রিয়তা।

মহাস্থানগড় এলাকায় প্রায় শতাধিক কটকটির দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে শত শত কেজি কটকটি। দামও ভিন্ন ভিন্ন। ডালডায় ভাজা কটকটি কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, ঘি স্প্রে করা ২২০ টাকা, আর পোলার চালের কটকটি ২৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে অর্থ্যাৎ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহঃ) এর বিজয় দিবসে ১ থেকে ২ হাজার মণ বিভিন্ন প্রকার কটকটি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন।

এছাড়াও দর্শনার্থীরা মহাস্থানগড়ে ঘুরে ফেরার পথে তবারক হিসেবে কটকটি নিয়ে যান। দেশ ছাড়িয়ে আজ তা পৌঁছে গেছে বিশ্বের শতাধিক দেশে।

কটকটি ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়ার কটকটি এখন শুধু একটি খাবার নয়, এটি বগুড়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক। শুধু ঐতিহ্য নয়, এই খাবারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার লেনদেন হয় মহাস্থানগড় এলাকায়।

কটকটি ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, আমাদের পরিবার ছয় পুরুষ ধরে এই কটকটি ব্যবসা করে আসছে। এখন আমাদের দেখে আরও অনেকে এই পেশায় যুক্ত হয়েছে। মহাস্থান মাজারকে ঘিরে সারা বছরই এই ব্যবসা চলে।

কটকটি তৈরির কারিগর মজনু জানান, তারা ছোটবেলা থেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। কটকটি তৈরি করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের বগুড়ার কর্মকর্তা মো. রাসেল জানিয়েছেন, মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় কটকটি প্রস্তুত ও বিক্রয়ের উপর নিয়মিত তদারকি করা হয়। যেন কোনো ভেজাল রঙ বা স্যাকারিন ব্যবহার করা না হয়। দোকানি ও কারিগরদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কটকটি প্রস্তুতের পরামর্শ দেওয়া হয়।


১০টি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালের সঙ্গে বিজিএমইএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) তাদের সদস্য, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিদেশের পরিবর্তে দেশের মধ্যেই উন্নত চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক সেবা গ্রহণে উৎসাহিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিজিএমইএ বৃহস্পতিবার ১০টি শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে নয়টি হাসপাতাল ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বিজিএমইএ সদস্য ও তাদের নির্ভরশীলরা বিশেষ ছাড়ে উন্নত চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক সুবিধা পাবেন বলে সমিতির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। অনুষ্ঠানে প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি এনামুল হক খান, সহ-সভাপতি মো. রেজওয়ান সেলিম, সহ-সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী, ফয়সাল সামাদ, মো. হাসিব উদ্দিন, নাফিস-উদ-দৌলা ও এনামুল আজিজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সমন্বয় করেন বিজিএমইএ পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী।

বিজিএমইএর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট লিমিটেড, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ল্যাবএইড গ্রুপ লিমিটেড, ল্যাবএইড ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, লাইফপ্লাস বাংলাদেশ লিমিটেড (ডিজিটাল হেলথকেয়ার প্ল্যাটফর্ম), পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড, প্রাভা হেলথ বাংলাদেশ লিমিটেড, সমরিতা হসপিটাল লিমিটেড, ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেড এবং ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড।

বিজিএমইএর পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন— বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের মার্কেটিং প্রধান হাদিউল করিম খান, ল্যাবএইড গ্রুপ, ল্যাবএইড ক্যান্সার হসপিটাল ও লাইফপ্লাস বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষে ল্যাবএইড গ্রুপের সিইও শরীফ মোহাম্মদ আবিদ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন) অচিন্ত্য কুমার নাগ, প্রাভা হেলথের সিইও মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন, সমরিতা হসপিটালের কনসালট্যান্ট ও সিইও ডা. সাইফুদ্দিন আহমেদ সজিব, ইউনাইটেড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মালিক তালহা ইসমাইল বারী এবং ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে গাজীপুর বা আশুলিয়া শিল্প এলাকায় একটি আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে বিজিএমইএ। দেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এ হাসপাতালের পরিচালনায় যুক্ত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরই আমাদের বৃহত্তর স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ।’

বিজিএমইএ পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘এই উদ্যোগ পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা ও কর্মীদের জন্য আরও নিরাপদ ও সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।’

বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ অংশগ্রহণকারী হাসপাতালগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান, যাতে তারা বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য বিশেষ সেবা প্রদানে নিবেদিত একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ স্থাপন করে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা পোশাক খাতের প্রতি সহায়তা দিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও শক্তিশালী করতে বিজিএমইএ নেতাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান।


মূল্যস্ফীতির হার কমে  ৮.১৭ শতাংশে, ৩৯ মাসের সর্বনিম্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

খাদ্য বহির্ভূত পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়লেও খাদ্যপণ্যে মাসের ব্যবধানে দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমায় অক্টোবর মাসের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৩৯ মাসের সর্বনিম্ন হয়েছে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে বেড়েছে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। মূলত খাদ্য পণ্যের দাম কমায় অক্টোবরে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এখন বেশি।

বুধবার মাসিক ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) মূল্যস্ফীতির এসব তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সিপিআইয়ের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে দুই দশমিক ৭ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৪ সালের অক্টোবরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, একই পণ্য গত অক্টোবরে কিনতে হয়েছে ১০৮ টাকা ১৭ পয়সায়।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল গড় মূল্যস্ফীতিকে ৬.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা। তবে, মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকায় এই অর্থবছরের জন্য এ লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিপিআই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছে। যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যদিও এক বছরে আগে একই সময়ে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও এ সময় দেশের খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ি, অক্টোবর মাসে দেশের খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। যা সেপ্টেম্বরে কমে হয়ে ছিল ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

সর্বশেষ এ মাসে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হয়েছে। অক্টোবর মাসে শহরে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এ সময় গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, কিন্তু একই সময়ে শহরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল উল্টো। ওই মাসে শহরের তুলনায় গ্রামে মুল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল।

অক্টোবরে গ্রাম এলাকায় খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। একই সময়ে শহরের নাগরিকদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ।


বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বছরে উৎপাদন হবে দেড় লাখ ড্রোন

চীনা কোম্পানির সঙ্গে বেপজার চুক্তি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেপজা ইজেড) একটি ড্রোন উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য এরোসিন্থ লিমিটেডকে অনুমতি প্রদান করেছে। উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে বিনিয়োগের ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে এরোসিন্থ লিমিটেডকে স্বাগত জানিয়েছে বেপজা। এটি হবে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ড্রোন উৎপাদনের দ্বিতীয় কারখানা।

চীনা মালিকানাধীন কোম্পানিটি ৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে যেখানে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন যেমন- খেলনা ড্রোন, মাছ ধরার ড্রোন এবং হালকা পণ্য ডেলিভারির জন্য ড্রোন তৈরি করা হবে। কারখানাটি বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট ড্রোন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যেখানে ৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম ড্রোন উৎপাদন প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তারা কৃষিতে কীটনাশক স্প্রে, অগ্নি নির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার, পণ্য বিতরণ, সিনেমাটোগ্রাফি এবং ম্যাপিংয়ের জন্য ড্রোন উৎপাদন করবে। এই প্রকল্পগুলো বেপজার শিল্পখাতের বৈচিত্র্য ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

বুধবার ঢাকাস্থ বেপজা কমপ্লেক্সে বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং এরোসিন্থ লিমিটেডের প্রতিনিধি মিজ হু ড্যানড্যান লিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জি, এমফিল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে উচ্চ-প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদনের জন্য বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য এরোসিন্থ লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানান। তিনি নির্বিঘ্নে ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বেপজার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছে, যদিও উন্নয়ন কাজ এখনো চলমান। এই চালু শিল্পগুলো প্রায় ৪ হাজার শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং প্রায় ১৯.৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শীঘ্রই উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে, যা বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পভিত্তিকে আরও সম্প্রসারিত করবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) আবদুল্লাহ আল মামুন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসেস) মো. খুরশিদ আলম, নির্বাহী পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল মো. আরিফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ.এস.এম. আনোয়ার পারভেজ এবং এরোসিন্থ লিমিটেডের প্রতিনিধিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


বিটকয়েনের বাজারে বড় ধস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের শীর্ষ ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন (Bitcoin) বুধবার এক ধাক্কায় ৬ শতাংশের বেশি মূল্য হারিয়েছে। জুনের পর এই প্রথমবার ১ লাখ ডলারের নিচে নেমে গেছে এর দাম।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে অস্থিরতা এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিমুক্ত সম্পদের দিকে ঝোঁক এই পতনের মূল কারণ।

গত কয়েক দিনে পতনের পর বিটকয়েনের দাম দাঁড়িয়েছিল ১ লক্ষ ১ হাজার ৮২২ ডলারে। বুধবার সেই পর্যায় থেকে ৩.৭ শতাংশ পতনের জেরে প্রতি বিটকয়নের দাম হয় ৯৯ হাজার ১০ ডলার। এই পতনের জেরে বাংলাদেশি মুদ্রায় বিটকয়েনের দাম হয়েছে প্রায় ১২১ লাখ টাকা।

এ বছরের শুরু থেকেই বিটকয়েনের দামে রেকর্ড অঙ্কের উত্থান হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর থেকেই বিটকয়েন-সহ একাধিক ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম লাফিয়ে বেড়েছে। এই বৃদ্ধির জেরে অক্টোবর মাসে বিটকয়েনের দাম পৌঁছেছিল ১ লক্ষ ২৬ হাজার ১৮৬ ডলারে। সেই পর্যায় থেকে প্রায় ২০ শতাংশ দাম কমেছে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সির।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিটের শীর্ষ নির্বাহীরা সম্ভাব্য বাজার সংশোধনের (মার্কেট কারেকশন) ইঙ্গিত দেওয়ার পর থেকেই এই পতন। বিনিয়োগকারীরা ক্রিপ্টো ও প্রযুক্তি খাত থেকে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন। এতে বিটকয়েনের পাশাপাশি অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদের দামও দ্রুত নিচে নামছে।

বিটকয়েনের এই পতনে গত কয়েক মাসের অর্জিত বেশিরভাগ লাভ প্রায় শেষের পথে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি-সম্পর্কিত বিনিয়োগের উৎসাহে সাম্প্রতিক সময়ে যে উর্ধ্বগতি তৈরি হয়েছিল, তা এখন থেমে গেছে।

নিরাপদ সম্পদের দিকে বৈশ্বিক ঝোঁকের কারণে মার্কিন ডলার ইউরোর বিপরীতে চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ট্রেজারি বন্ডের আয় কমেছে। ১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ৪.০৮৭%-এ নেমে গেছে। ইউরো টানা পঞ্চম দিনে কমে ১.১৪৮ এ নেমে গেছে। যা আগস্ট ১ তারিখের পর সর্বনিম্ন। ব্রিটিশ পাউন্ডও ০.৭২% কমে ১.৩০ ডলারে নেমেছে।

ক্রিপ্টোর পতনের ধাক্কা লেগেছে তেল বাজারেও। ডলার শক্তিশালী হওয়ায় পণ্যের দামেও প্রভাব পড়েছে। মার্কিন ক্রুড অয়েল প্রতি ব্যারেল ৪৯ সেন্ট কমে ৬০.৫৬ ডলারে নেমেছে। ব্রেন্ট ক্রুড ৪৫ সেন্ট কমে ৬৪.৪৪ ডলারে নেমেছে।


দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে ওষুধের বাজার ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে

ডিএসই ও বিএপিআই নির্বাহী কমিটির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বক্তারা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) নির্বাহী কমিটির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

বিএপিআইয়ের কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সমিতির সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির। বৈঠকে ডিএসই এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। বুধবার ডিএসই থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বর্তমানে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজারে উন্নীত হয়েছে এবং দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের বাজার ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের মোট জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে।

বক্তারা আরও বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন বিনিয়োগ, গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুঁজিবাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অর্থায়ন উৎস।

বিএপিআই সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা ফিরিয়ে আনতে নীতি ও আইনে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর সুবিধা নিশ্চিত করা হলে আরও প্রতিষ্ঠান বাজারে আসবে।

তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি শুধু মূলধন সংগ্রহ নয়, এটি কোম্পানির স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।’

ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানান, পুঁজি বাজারকে আরও কার্যকর এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে ডিএসই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় আছে।

তিনি বলেন, ‘ব্লু-চিপ কোম্পানির আইপিও সর্বোচ্চ দুই মাসে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে তথ্যপ্রবাহ বাড়াতে ‘সেন্ট্রাল ইনফরমেশন আপলোড সিস্টেম’ চালু করা হচ্ছে।

অন্যান বক্তারা বলেন, তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়। তারা ‘এসএমই এবং অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড’ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বড়-ছোট সব ধরণের কোম্পানির বাজারে আসার সুযোগের কথাও তুলে ধরেন। তারা আরও বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন জরুরি, যা ব্যাংকের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করলে খরচ ও ঝুঁকি কমবে।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘নীতিগত সহযোগিতা ও যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করা সম্ভব। শিল্প খাত ও স্টক এক্সচেঞ্জ একসাথে কাজ করলে জাতীয় অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।’


৫ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও ব্যাংকিং সেবা চালু থাকবে: গভর্নর

আর্থিক সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স ও এলসিসহ সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মনসুর বলেন, যদিও বোর্ড বাতিল, তবে ব্যাংকগুলোর দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হবে না। বিজনেস কন্টিনিউ থাকছে। পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি—সব চলবে। আমাদের লক্ষ্য, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু রাখা এবং ধাপে ধাপে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও আইটি সিস্টেম একীভূত করা।

তিনি বলেন, পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। লিকুইডেশন এড়াতে তাদের স্বার্থে প্রথম ধাপেই কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত একীভূতকরণ শুরু করা হয়েছে।

গভর্নর বলেন, ‘নন-ভায়েবল’ বা টেকসই নয় বলে ঘোষিত পাঁচটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে প্রতিটিতে অস্থায়ী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করা হয়েছে। সকালে ব্যাংকগুলোর কোম্পানি সেক্রেটারিকে ‘নন-ভায়েবিলিটি’ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোর্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হয়েছে—তারা আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

গভর্নর বলেন, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক মিলেই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা—যা বর্তমানে দেশের যেকোনো ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।

গভর্নর বলেন, এটি সরকারি মালিকানাধীন হলেও বেসরকারি ব্যাংকের মতো পরিচালিত হবে। পেশাদার এমডি, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো, পৃথক শরিয়াহ বোর্ড গঠন করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি—ইসলামিক ব্যাংকিং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

শেয়ারহোল্ডিং নিয়ে প্রশ্নের জবাবে গভর্নর স্পষ্টভাবে বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

আমানতকারীর সুরক্ষা বিষয়ে গভর্নর জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বলেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা ১০০ শতাংশ টাকা তুলতে পারবেন। বড় অংকের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে। এর বিস্তারিত পরবর্তীতে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না—জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটি দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।

এর আগে আর্থিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই ব্যাংকগুলোকে একটি বৃহৎ একক ইসলামী ব্যাংকে একীভূত করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে একটি নোটিশের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, তারা পুরো একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি সরাসরি তদারকি করবে।

যে পাঁচটি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ছিল এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। আর একটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার-এর হাতে।

অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর ধরে নানা অনিয়ম ও একাধিক ঋণের মাধ্যমে এই ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গোপনে সরিয়ে নেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।


সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং রাজস্ব ও পরিচালন ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশে একটি সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস (ডিএমও) প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ কারিগরি সহায়তা মিশন।

‘ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক কর্মশালায় এই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

কর্মশালাটি গত সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

অর্থ বিভাগের ‘ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় সার্বজনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ ও সেবা প্রদান সক্ষমতা বৃদ্ধি (এসপিএফএমএস) কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

মিশনটি পর্যবেক্ষণ করেছে যে বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনার কাজগুলো বর্তমানে একাধিক সংস্থার মধ্যে বিভক্ত। ফলে সমন্বয়ের ঘাটতি, অসঙ্গত ঋণের তথ্য এবং একটি বিস্তৃত কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অসুবিধা দেখা দিচ্ছে।

এছাড়া একটি কেন্দ্রীয় ও নিরীক্ষিত ঋণ ডাটাবেইসের অনুপস্থিতি এবং আনুষ্ঠানিক নগদ প্রবাহ পূর্বাভাস ব্যবস্থার অভাবকেও তারা চিহ্নিত করেছে। এগুলো কার্যকর ও সাশ্রয়ী সরকারি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, পরিকল্পনা ও টিডিএম) মো. হাসানুল মতিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ও এসপিএফএমএস-এর জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক ড. জিয়াউল আবেদীন এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ম্যাক্রোইকনমিকস-১) হাসান খালেদ ফয়সাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন।

আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মিশনের নেতৃত্ব দেন সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর এক্সপার্ট অরিন্দম রায়। তার সঙ্গে ছিলেন ড. জেন্স ক্লাউসেন, ফিলিপ আর. ডি. অ্যান্ডারসন ও পার জনসন।

বিশেষজ্ঞ মতামত উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব (ব্যয় ব্যবস্থাপনা) মো. মনজরুল হক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ।

প্রেজেন্টেশনে মিশনটি প্রস্তাব করে যে সরকার ও সরকার-গ্যারান্টিযুক্ত সব ঋণ-সম্পর্কিত কার্যক্রম অর্থ বিভাগের অধীনে একীভূত করা হোক। এর প্রথম ধাপ হিসেবে ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখা পুনর্গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ডিএমও দেশীয় ঋণ ইস্যু তত্ত্বাবধান করবে, বার্ষিক ঋণগ্রহণ পরিকল্পনা তৈরি করবে, নিলাম ক্যালেন্ডার সমন্বয় করবে, ঋণ পোর্টফোলিও ঝুঁকি মূল্যায়ন করবে এবং বিদ্যমান সিস্টেম ও ডাটাবেইস একত্রিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ ঋণ ডাটাবেইস গড়ে তুলবে।

মিশনটি ঋণ গ্রহণের কর্তৃত্ব, জবাবদিহিতা, প্রতিবেদন দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার মান নির্ধারণের জন্য একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য, মিশনটি ডিএমও-তে পুঁজিবাজার, মূল্য নির্ধারণ, নিষ্পত্তি কার্যক্রম এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই ধরনের দক্ষতা বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে দক্ষ পেশাদারদের ধরে রাখতে, সরকারকে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষতিপূরণ এবং ক্যারিয়ার উন্নয়নের পথ চালু করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, মধ্যমেয়াদে, ডিএমও আরও স্বায়ত্তশাসিত সত্তায় পরিণত হতে পারে যার সম্প্রসারিত কার্যাবলী থাকবে, যার মধ্যে থাকবে আকস্মিক দায়বদ্ধতা তদারকি এবং বিনিয়োগকারী সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা।

কর্মশালায় উপস্থাপিত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, ১৯৮০-এর দশক থেকে অনেক দেশ কেন্দ্রীভূত ডিএমও পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ঋণ গ্রহণের খরচ ও ঝুঁকি হ্রাস, রাজস্ব স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রানীতির কার্যক্রমের মধ্যে স্পষ্ট পৃথকীকরণে সহায়তা করেছে।

মিশনটি আরও জানায়, সফল ডিএমও সাধারণত তিনটি মূল ইউনিটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এগুলো হল-ফ্রন্ট অফিস (ঋণ গ্রহণ ও বাজার লেনদেন), মিডল অফিস (ঝুঁকি ও কৌশল) এবং ব্যাক অফিস (নিষ্পত্তি, তথ্য প্রশাসন, হিসাব ও প্রতিবেদন)।

মিশনটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে একটি ডিএমও প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, পর্যায়ক্রমে পুনর্গঠন, আধুনিক আইটি সিস্টেমে বিনিয়োগ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে টেকসই সমন্বয় প্রয়োজন।

একবার কার্যকর হলে একীভূত ডিএমও বাজারের আস্থা বৃদ্ধি করবে, অর্থায়ন খরচ এবং ঝুঁকি কমাবে এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।


এই বছর বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলারের কৃষি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের: রাষ্ট্রদূত জ্যাকবসন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে কৃষি পণ্য রপ্তানি বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে এই খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৭৯ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৫ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।

মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি), কেজিএস গ্রুপ ও মাহবুব গ্রুপের মধ্যে একটি লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) সই অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এ বছর কৃষি পণ্য রপ্তানিতে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছি। আজকের এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি সেই বৃহত্তর লক্ষ্যেরই একটি অংশ।’

তিনি জানান, সয়াবিন মিল রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালে যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২০ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছর বাংলাদেশি অংশীদারদের সহযোগিতায় এই খাতে রপ্তানি ৮৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত জ্যাকবসন আরও উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র উচ্চমানের সয়াবিন মিল উৎপাদন করে, যা বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতের জন্য সুবিধাজনক। এর ফলে স্থানীয় ভোক্তারা উপকৃত হন, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরাও লাভবান হন।’

তিনি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার প্রশংসা করে বলেন, এই সম্পর্ক বছরের পর বছর আরও ভালো হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত কেজিএস গ্রুপ, মাহবুব গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের অবদান দুই দেশের কৃষি-বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


ইথিওপিয়ায় প্রথমবারের মতো ‘আফ্রিকা-বাংলাদেশ ট্রেড শো ও বিজনেস সামিট'

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে ‘আফ্রিকা-বাংলাদেশ ট্রেড শো ও বিজনেস সামিট ২০২৫’।

ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আগামী ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর ২০২৫ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে ডি লিওপল হোটেল, আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া।

এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি যৌথভাবে আয়োজন করছে আফ্রিকা বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (এবিবিএফ) এবং ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

এই সম্মেলন হবে দুই অঞ্চলের ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।

ইভেন্টের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের রপ্তানিকারক, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করা। এছাড়াও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল ও চামড়াজাত শিল্পখাত আফ্রিকার বাজারে প্রবেশের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

দুই দিনব্যাপী এই সামিটে থাকবে ব্যবসায়িক প্রদর্শনী, বিনিয়োগ বিষয়ক আলোচনা, রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষর ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ক সেশন। দুই অঞ্চলের সরকারি প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা এতে অংশ নেবেন।


১৯তম বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো শুরু কাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ডেনিম শিল্পের বিকাশে নিবেদিত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৯তম আসর শুরু হচ্ছে কাল বুধবার। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনব্যাপী এ আয়োজন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

এ বছর প্রদর্শনীতে ১০টি দেশ থেকে ৪৫টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিষ্ঠানগুলো ডেনিম ও নন-ডেনিম ফ্যাব্রিক, গার্মেন্টস, সুতা, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

প্রদর্শনীতে ডেনিম উৎপাদনের সর্বশেষ উদ্ভাবন, টেকসই প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্যময় পণ্যের প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও বৈশ্বিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরা হবে। বিশ্বজুড়ে ডেনিম শিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবক ও বিশেষজ্ঞরা এ আয়োজনে একত্রিত হবেন, যেখানে ডেনিম উৎপাদন, টেকসইতা ও প্রযুক্তির পরিবর্তনশীল ধারা নিয়ে আলোচনা হবে।

এ আয়োজনে তিনটি প্যানেল আলোচনা ও দুটি সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও বৈশ্বিক প্রভাব উপস্থাপন করা হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) বেবি রানি কর্মকার ‘ডেনিম রাইজিং: বাংলাদেশস জার্নি টু গ্লোবাল লিডারশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেবেন।

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন জানান, দীর্ঘ পথচলায় বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো তার উদ্ভাবনী ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রস্তুতকারক, ব্র্যান্ড ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এটি এখন শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেনিম প্রস্তুতকারক ও ক্রেতারা সংযুক্ত হন।

মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এক্সপোকে এমন এক মঞ্চে পরিণত করেছি, যেখানে টেকসইতা, বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও বৈশ্বিক শিল্পের পরিবর্তনশীল রূপ একসঙ্গে প্রতিফলিত হয়। এ বছর এক্সপোতে থাকবে আরও নতুনত্ব, যা দর্শনার্থীদের বৈশ্বিক ডেনিম শিল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে সহায়তা করবে।’


তুলা রপ্তানিতে জটিলতা নিরসনে সহযোগিতা চায় মার্কিন রপ্তানিকারকরা

বিজিএমইএ ও মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের বৈঠক
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকরা। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই দাবি জানান মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকরা। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কটন ইউএসএ-এর উদ্যোগে মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের দাবির প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রতিনিধিদলকে লিখিত আকারে তাদের প্রস্তাবনা জানানোর আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেন যে, বিজিএমইএ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে, যাতে দ্রুত এই জটিলতাগুলোর নিরসন করা যায়।

বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলে ইকম-এর লি ইন, কারগিল-এর ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসি-এর ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রি-এর ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর ওয়েন বোসম্যান, স্ট্যাপলকটন কো-অপারেটিভ-এর ক্রিস জোন্স এবং কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল-এর উইল বেটেনডর্ফ ও আলী আরসালান উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, মার্কিন তুলার ব্যবহার সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে নবঘোষিত শুল্ক সুবিধা কাজে লাগাতে করণীয় ঠিক করা।

আলোচনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতে মার্কিন তুলা সরবরাহের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। মূল ফোকাস ছিল সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন নির্বাহী আদেশ, যেখানে পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০% মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক থেকে আনুপাতিক ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এই নতুন শুল্ক ছাড়ের সুযোগ আমাদের শিল্পখাতের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা এনে দিয়েছে, যা আমাদের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই সুবিধা বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাভ করবে, সে বিষয়ে এখনো বিজিএমইএর কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। বিজিএমইএ সভাপতি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান, যেন তারা মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ এনে বিজিএমইএকে সরবরাহ করেন। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিলম্ব না করে শুল্ক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে অবিলম্বে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত তুলার প্রায় ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে, যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সুচিন্তিত কৌশলগত পদক্ষেপ।’ তিনি মনে করেন, ‘মার্কিন তুলার উচ্চ গুণগত মান ও তুলনামূলক সুবিধা নিয়ে বিশদ গবেষণা করে স্পিনার ও কারখানাগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা হলে তারা আমদানি বাড়াতে উৎসাহিত হবেন।’

পরে মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএ সভাপতির এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বৈঠকে কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণাবলী, নির্ভরযোগ্যতা এবং উচ্চমানের জন্য সুপরিচিত। আমরা বিশ্বাস করি, মার্কিন তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের মান আরও উন্নত করতে পারবে এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পারবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন তুলা সরবরাহ আরও সহজ ও দ্রুত করতে লজিস্টিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি ওয়্যারহাউজ স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়েও মতবিনিময় করা হয়, যা বাস্তবায়িত হলে শিল্পের লিড টাইম কমবে। উভয় পক্ষ নতুন শুল্কনীতি এবং মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহারের পরিমাপ পদ্ধতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলোর দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে, বিজিএমইএ ইনোভেশন সেন্টারে মিলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি ও অপচয় হ্রাসে গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা ও জ্ঞান প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।

উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


বদলে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের অর্থনীতি

আপডেটেড ৩ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীর দুই তীরে চোখে পড়ে শত শত হাঁসের খামার। বাঁশের খুঁটি আর জালের বেষ্টনী দিয়ে বর্ষার ভাসান পানিতে গড়ে ওঠা এসব অস্থায়ী খামারে সারাদিন সাঁতার কাটে দেশি প্রজাতির হাঁস। রাতে তারা নদীর ধারে তৈরি খুপরি ঘরে বিশ্রাম নেয়।

খামারিদের ভাষায়, কম পুঁজি, সহজলভ্য প্রাকৃতিক খাদ্য (শামুক, ঝিনুক) ও সামান্য দানাদার খাবারের সহায়তায় এ খাতে এখন লাভজনক আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে হাওরাঞ্চলের অনেক পরিবারের জীবনযাত্রা।

নিকলীর পাশাপাশি ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও তাড়াইলএই হাওর অধ্যুষিত উপজেলা গুলোতেও বর্ষা মৌসুমে নদ-নদী ও হাওরের ভাসান পানিতে হাঁস পালনের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের খামারগুলো থেকে বছরে প্রায় দুই কোটি হাঁসের ডিম উৎপাদিত হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের মোট চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ ডিম আসে এখান থেকে।

এই ডিম ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট ও অন্যান্য বড় শহরে সরবরাহ হয়। পাশাপাশি, হাওরের হাঁসের মাংসও দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়।

ডিমকে ঘিরে তাড়াইল উপজেলার দামিহা এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক হ্যাচারি। সেখানে তুষ বা ভাপ পদ্ধতিতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লাখ হাঁসের বাচ্চা উৎপাদিত হয়। যা স্থানীয় খামার ও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

নিকলীর খামারি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ভাসান পানিতে খামার করলে আলাদা জমি লাগে না। জাল ও বাঁশের ঘের দিয়ে হাঁস ছেড়ে দিই, শামুক আর দানাদার খাবারেই বেশির ভাগ চাহিদা মেটে। খরচ কম, তাই মৌসুমে ভালো লাভ হয়।’

মিঠামইনের রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের ডিম পাইকাররা সরাসরি নিয়ে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামে। কিন্তু হাঁসের রোগ হলে দ্রুত ডাক্তার পাই না। মোবাইল ভেট টিম থাকলে ক্ষতি অনেক কমে যেত।’

তাড়াইলের দামিহা এলাকার হ্যাচারি উদ্যোক্তা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘দামিহায় এখন অনেক হ্যাচারি হয়েছে। আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার বাচ্চা তুলতে পারি। যদি বিদ্যুৎ স্থিতিশীল থাকে আর একটা স্থায়ী সংগ্রহ কেন্দ্র হয়, তাহলে কাজটা আরও বড় পরিসরে করা যাবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘হাওরের ভাসান পানিতে উৎপাদিত হাঁসের মাংস ও ডিম নির্ভেজাল, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। তাই বাজারে এর চাহিদা সবসময়ই বেশি।’ তিনি জানান, এই সম্ভাবনাময় খাতের উন্নয়নে খামারিদের প্রশিক্ষণ, টিকাদান ও পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’

বর্তমানে কিশোরগঞ্জে প্রায় ২ হাজার হাঁস খামার রয়েছে। এসব খামারে ২৫ লাখের বেশি হাঁস লালনপালন হচ্ছে। খামারি বা উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ১৫০০, আর এ খাত থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ১২ হাজার পরিবার। বছরে মোট উৎপাদন হয় প্রায় দুই কোটি ডিম।

খামারিদের অভিযোগ, হাঁসের রোগ-বালাই দেখা দিলে দ্রুত ভেটেরিনারি সহায়তা পাওয়া যায় না। তারা চান মোবাইল ভেট সার্ভিস, টিকা, ঔষধে সহায়তা, স্বল্পসুদে ঋণ, ফিড ও ডিমের সংগ্রহকেন্দ্র এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চয়তা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বাজারসংযোগ বাড়ানো গেলে হাওরের হাঁস পালন শুধু স্থানীয় জীবিকার খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি দেশের একটি বড় অর্থনৈতিক খাতে পরিণত হতে পারে।


banner close