দেশের বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে চলছে শেখ হাসিনা আন্তব্যাংক ফুটবল টুর্নামেন্ট। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের খেলায় শুক্রবার জয় পেয়েছে এক্সিম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া এবি ব্যাংকের সঙ্গে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ম্যাচ ড্র হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস মাঠ ও মিরপুর পুলিশ লাইনস মাঠে দিনব্যাপী এসব খেলা হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে। আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করছে সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। টুর্নামেন্টে দেশের ৩৪টি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। আগামী ৯ জুন বিকেলে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে গ্রুপ পর্বের ১২তম দিনে দুই মাঠে ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর পুলিশ লাইনস মাঠে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে যমুনা ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলা হয়। অন্যদিকে ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে এবি ব্যাংকের সঙ্গে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সীমান্ত ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে পূবালী ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংকের সঙ্গে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের খেলা হয়। গ্রুপ পর্বের শেষ দিকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জমে উঠেছে টুর্নামেন্ট। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করতে মরিয়া প্রতিটি দল।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে ৬ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে যমুনা ব্যাংক। শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে খেলতে থাকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে যমুনা ব্যাংকের রক্ষণভাগ। অন্যদিকে যমুনা ব্যাংক একটি গোল শোধ দিলেও হার এড়াতে পারেনি দলটি।
এ ছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের সঙ্গে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ম্যাচেও গোলবন্যা দেখেছেন পুলিশ লাইনস মাঠের দর্শক। ৬-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। যার ফলে গ্রুপ পর্বে শতভাগ জয় নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। তবে তিন ম্যাচের দুটিতে জয় নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকও।
সীমান্ত ব্যাংকের সঙ্গে ৬ গোলের দুর্দান্ত জয় পেয়েছে এক্সিম ব্যাংক। নির্ধারিত ৬০ মিনিটের খেলায় আক্রমণেই উঠতে পারেনি সীমান্ত ব্যাংক। পুরোটা সময় নিজেদের ডি-বক্সে আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল তারা।
উত্তরা ব্যাংকের সঙ্গে ৩ গোলের ব্যবধানে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। ম্যাচের ৮ মিনিটেই প্রথম গোলের দেখা পায় শাহ্জালাল ব্যাংক। গোল শোধ দিতে দারুণ সব আক্রমণ সাজালেও বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ মিস করে উত্তরা ব্যাংক। অন্যদিকে ম্যাচের ২৯ মিনিটের মাথায় ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। ম্যাচে জোড়া গোল করেন শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের খেলোয়াড় কংকর বিশ্বাস।
অন্যদিকে এবি ব্যাংকের সঙ্গে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খেলায় গোলের দেখা পায়নি কোনো দলই। ফলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।
ট্রাস্ট ব্যাংকের সঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। ম্যাচে প্রথমেই গোলে লিড নেয় ট্রাস্ট ব্যাংক। পূবালী ব্যাংকের খেলোয়াড়রাও গোল শোধ দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ফলে প্রথমার্ধেই পূবালী ব্যাংক গোল শোধ দিলেও ফের ব্যবধান বাড়ায় ট্রাস্ট ব্যাংক। ফলে ২-১ গোলে বিরতিতে যায় খেলা। বিরতির পর খেলার ৪৮ মিনিটে সমতায় ফেরে পূবালী ব্যাংক। উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শকরা। তবে খেলার ৫৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে পূবালী ব্যাংকের দূরপাল্লার শট গোলপোস্ট থেকে ফিরে এলে জয় হাতছাড়া হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল।
অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ ধরে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয় ডলারসংকট। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই যেহেতু নিয়ন্ত্রণ হয় মার্কিন ডলার দিয়ে তাই যুদ্ধের অজুহাতে বাড়তে থাকে অতি প্রয়োজনীয় এ মুদ্রাটির চাহিদা। করোনা মহামারিপরবর্তী বাংলাদেশেও বেড়ে যায় আমদানি, যার সুবাদে দেশে চাহিদা বাড়ে মার্কিন ডলারের। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় বিক্রি করতে হয়েছে ডলার। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে।
তবে ডলারসংকট কিংবা রিজার্ভ কমে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে গভর্নর হিসেবে আবদুর রউফ তালুকদারের নিয়োগের পরই অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে নেওয়া হয় বেশ কিছু পদক্ষেপ। এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশনা দেয় ব্যাংকগুলোকে। সেসব পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, আমদানি ও রপ্তানির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে তাদের নেওয়া পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, গেল চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমে হয়েছে ৩৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের চার মাসের হিসাবে শতকরা বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও সার আমদানির প্রভাবে যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১৮২ কোটি ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতি কমার কারণ হিসাবে বড় অবদান রেখেছে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানির হিসেবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে মোট আমদানি হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। যা এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে ছিল ২ হাজার ৫৫১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চার মাসে আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, একই সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় এসেছে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ছিল ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানিতে বড় কোনো প্রবৃদ্ধি না হলেও বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাড়ানো গেলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কোনো আমদানিকারক যেন পণ্যের বাড়তি দাম দেখিয়ে আমদানি করতে না পারে সেদিকেও রয়েছে কঠোর নজরদারি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাংককে আমরা সতর্কতার সঙ্গে আমদানির ঋণপত্র খুলতে বলেছি। আমদানিতে যেন কোনোভাবেই কোনো মিথ্যা তথ্য না আসে সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে।’ শুধু তাই নয়- আমদানির আড়ালে যেন কোনোভাবেই অর্থ পাচার না হয় সেদিকেও তাদের নজরদারি রয়েছে। ‘বর্তমানে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে, এ ছাড়া বাড়তি প্রাইস মনে হলে তা সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ জন্য আমদানি কিছুটা কমে এসেছে’ বলেও জানান তিনি। আমদানি কমানোর প্রবণতা অব্যাহত থাকবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ভুল দামে আমদানি করতে দেব না, আমার মনে হয় এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ঘাটতি কমে আসবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ছিল ১ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে। করোনা মহামারি প্রথম বছরে বাণিজ্য ঘাটতি সব রেকর্ড ভেঙে ছাড়িয়ে যায় ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলারের ঘর। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হয় বাণিজ্য ঘাটতি। যা চলতি অর্থবছর শেষে আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তবে তার প্রভাবে যেন আমদানি কমে না আসে সেদিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। অর্থনীতিবিদ ও দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ-আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন এফসিএ বলেন, ‘রিজার্ভের কথা চিন্তা করে আমদানি কমিয়ে আনতে হবে, সেটা ধীরে ধীরে হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা আমদানি করতে না পারলে রপ্তানিও কমে আসবে।’ তবে তার পরামর্শ আমদানির আড়ালে যেন অর্থ পাচার না হয় সেদিকে আরও নজরদারি বাড়াবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে অর্ডার দেওয়া পণ্য না নেওয়া কিংবা অর্থ পরিশোধ না করার শর্ত দিয়েছে তৈরি পোশাকের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিবৃতিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ববাণিজ্যের ধরন এখন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। মানবাধিকার এবং পরিবেশের বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক বিষয়ও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু বাণিজ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, সে কারণে বাণিজ্যনীতি-সংক্রান্ত যে কোনো পরিবর্তনই উদ্বেগের।
তিনি বলেন, বিজিএমইএর একটি সদস্য কারখানার বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে এলসির একটি অনুলিপি তাদের নজরে এসেছে। এলসিতে ক্রেতার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া কোনো দেশ, অঞ্চল বা দলের সঙ্গে লেনদেন করব না। কোনো ধরনের বিলম্ব, অপারগতা কিংবা তথ্য প্রকাশের দায়ও নেব না।’ এ কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়। এটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং কোনো দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ নয়। সুতরাং, একে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে– এভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি এবং প্রটোকল থাকতেই পারে। তবে একটি এলসি কপি দাপ্তরিক কোনো ঘোষণা নয়। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক মিশন কিংবা সরকারি উৎস বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জাতীয় তথ্য পায়নি বিজিএমইএ।
ফারুক হাসান জানান, শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের কল্যাণ বিজিএমইএর কাছে সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয়। পাশাপাশি ব্র্যান্ড, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এবং তাদের সহায়তায়ও বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছেন তারা। উৎপাদন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দায়িত্বশীল করতে আরো অনেক উদ্যোগ বিজিএমইএর পরিকল্পনায় রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্মারক বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্মারকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পদক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য নেওয়া হয়নি। বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মাত্র।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এলসির ধারা অন্তর্ভুক্তিকে আমরা সমর্থন করি না। এটি বাণিজ্য নীতিমালার লঙ্ঘন। এ ধরনের শর্ত দেওয়ায় ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র না-ও খুলতে পারে। কেননা, তৈরি পোশাক রপ্তানির পর অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। এ ঘটনায় উদ্যোক্তারা টেনশনে পড়তে পারেন। তবে ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি বিশ্বের সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, সেহেতু অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের শর্ত হয়তো কেউ কেউ দিচ্ছে।
তিনি বিবৃতিতে বলেন, আমরা অতীতে একই ধরনের উদাহরণ দেখেছি একজন ক্রেতার কাছ থেকে একটি এলসি ক্লজ উদ্ধৃত করার জন্য এটিকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে সাধারণীকরণ করার জন্য এবং সত্যের এই ধরনের ভুল উপস্থাপনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি। বিজিএমইএ তার সদস্যদেরকে, যারা উল্লিখিত এই ধরনের ধারাসহ এলসি প্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এবং যদি এই ধারাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের জন্য উল্লেখ করা থাকে তবে একটি স্পষ্টীকরণের অনুরোধ জানাচ্ছে। যদি ধারাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের পক্ষে জারি করা এলসিতে উপস্থিত হয়, তবে এটি নৈতিকতা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা আমাদের সদস্য কারখানাগুলিকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে এই ধরনের ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পর্যালোচনা/পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তাদের অর্ডার দেওয়া পণ্য নেবে না কিংবা অর্থ পরিশোধ করবে না– এমন শর্ত যুক্ত করে বাংলাদেশের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ঋণপত্র বা এলসি দিয়েছে সে দেশের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। পণ্য জাহাজীকরণের পরও যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলেও অর্থ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে শর্ত দেওয়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনিক গ্রুপ ও নতুন ভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীর মেয়ে নাদিহা আলী (৩৭) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিমানবন্দরের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। নাদিহা আলী মো. নূর আলী ও সেলিনা আলী দম্পতির দ্বিতীয় কন্যা। যুক্তরাষ্ট্রে জানাজার পর তার দাফন সেখানেই সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
নাদিহার মৃত্যুতে পদ্মা ব্যাংক ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান এবং দৈনিক বাংলার প্রকাশক ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, 'এই বেদনাবিধুর ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি এবং নিজের কন্যা হারানোর ব্যাথা অনুভব করছি।'
এছাড়া, ইউনিক গ্রুপের এক বার্তায় নাদিহা আলীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। বার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
যতবারই এ দেশে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ততবারই দেখা গেছে একশ্রেণির মানুষ হইহই, রইরই, গেল গেল সব গেল, শিক্ষা গেল, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গেল- এমন সব কথা বলে রাস্তায় মিছিল, সভা-সমাবেশ, সেমিনার করে আসছে। চলতি বছরে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে এবং পরেও চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেওয়ার নানা উদ্যোগ দেখা গেছে। কোথাও অভিভাবকরা, কোথাও শিক্ষকরা, কোথাও বা বিশেষজ্ঞ নামেও নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। নতুন এ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আগামী নতুন বছরে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার, ধর্মীয় উন্মাদনা, মিথ্যাচার ইত্যাদি ছড়িয়ে দিয়ে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক তথা গোটা জাতিকেই যেন জাগিয়ে তোলা হচ্ছে, বলার চেষ্টা হচ্ছে আপনারা কেন ঘুমিয়ে আছেন, প্রতিবাদ করুণ ইত্যাদি ইত্যাদি। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও অনেকে শিক্ষাক্রমকে অপপ্রচারের শিখণ্ডী বানাতে মাঠে নেমে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন সব আজগুবি কথা প্রচার করা হচ্ছে যা উচ্চারণ করাও শোভনীয় নয়।
শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হতেই পারে; কিন্তু সেটি পাঠ্য বিষয়ের বিভিন্ন সূচি ধরে ধরে গঠনমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করেই সাধারণত করা হয়ে থাকে। সেসবের চেষ্টা দেখি না। যা কিছু বলা হয়, তা গড়ে হরিবোল বললেও যেন কম বলা হবে। এভাবে তো কোনো শিক্ষাক্রমকে মূল্যায়ন করা যায় না। শিক্ষাক্রম হচ্ছে শিক্ষার দর্শন, হৃদপিণ্ড যা একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞই বোঝেন। যেমন- একজন হার্ট স্পেশালিস্ট ডাক্তার মানুষের হৃদপিণ্ড সম্পর্কে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাশেষে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন; কিন্তু আমাদের এখানে পাঠ্যবই নিয়ে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে অনেকেই মাঠে নেমে পড়েন। অনেকের গাইড বইয়ের ব্যবসা লাটে ওঠার আশঙ্কা থেকে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে ঘৃতাহুতি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। আবার অনেক শিক্ষক নিজেদের লাভালাভ হিসাব করেও এর বিপক্ষে অবস্থান নেন। বর্তমান শিক্ষাক্রম নিয়ে কোনো কোনো শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পাঠদানের পরিবর্তে বই ছুড়ে মেরে শিক্ষামন্ত্রীকে গালাগাল করছেন এমন কথাও আমি শুনতে পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে গোটা বিষয়টাই আমার কাছে খুব বেশি অবাক হওয়ার মতো নয়। কারণ ’৭২ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন থেকে হালের নতুন শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাক্রম নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের নানা অবস্থান আমার দেখা বিষয়, বোঝারও বিষয়। স্পষ্টই বুঝতে পারি যে শিক্ষাক্রম নিয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের বক্তব্যে থাকে গঠনমূলক সমালোচনা। বাকি যারা উঠেপড়ে সমালোচনা করেন তাদের নানান জনের নানা উদ্দেশ্য, স্বার্থ, অজ্ঞতা এবং দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটি কোনোকালেই জাতীয় শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাক্রম দ্বারা গঠিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থাই নানা অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত থেকেছে চিরকালই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শুরুতেই প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন। শিক্ষাকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্বের মধ্যে নিয়ে আসেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ’৮০ সালের মধ্যেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এরপর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে আসা। কিন্তু কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পরই নানা গোষ্ঠী নানা অপবাদে এমন একটি শিক্ষানীতিকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল যারা এর ভেতরের দর্শনটি বুঝতে অক্ষম ছিল। তাদেরই উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সফল হলো ’৭৫-এর পর। দেশে তখন থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন ধারার ও নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে যার মতো করে গড়ে তোলা শুরু করেছে। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এমন হালচাল হলে সেই জাতি কোনোভাবেই শিক্ষার দর্শন দ্বারা গঠিত হতে পারে না। আমরাও সে কারণে হতে পারিনি। আমাদের মধ্যে এতসব বিভাজন সৃষ্টির মূলেই হচ্ছে ‘নামে শিক্ষাব্যবস্থা, বাস্তবে ব্যবসা-বাণিজ্য আর অদক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির অব্যবস্থা’। সেটিই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভেতরের আসল রূপ। আমাদের কোনো স্তরেই শিক্ষাক্রম ঠিক নেই। যে যার মতো করে প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ছে, বই-পুস্তক ঠাসা আর পরীক্ষার জাঁতাকলে শিক্ষার্থীদের পিষ্ট করার এক ভয়ংকর তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থায় জাতির কয়েকটি প্রজন্মও তেমনি কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সত্যিকার দক্ষ, জীবন, কর্ম, জ্ঞান ও সৃজনশীলতায় বেড়ে ওঠা শিক্ষিত মানব গড়ে তুলতে আমরা পেরেছি বলে দাবি করতে পারব না। কারণ শিক্ষার দর্শনই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। শিক্ষার দর্শন হচ্ছে কি পড়ব বা পড়াব, কেন পড়ব বা পড়াব, পড়ার অর্জনটা কী হবে বা হবে না- সেটি হাতেনাতে দেখতে পাওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা কি দাবি করতে পারব যে আমাদের এ ৫ দশকের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা যুগোপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পেরেছি? যদি পারতাম তাহলে প্রতিবছর হাজার হাজার ধনী ঘরের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে কেন? একবারও কি আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি? আমাদের করণীয় কী সেগুলো সম্পর্কে কতজনই বা আমরা অবহিত? কিন্তু যখনই দেশে শিক্ষায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই বিরোধিতাটা প্রবলভাবেই আসে, বিরোধিতাটা যদি গঠনমূলক হতো তাহলে আপত্তির কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু গোটা বিরোধিতাটাই যখন ব্যঙ্গাত্মক, বিদ্রূপাত্মক এবং নানা ধরনের শ্লেষ, মনগড়া, ধর্মকে মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে, তখন বুঝতেই হবে এত বছরের আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যারা বের হয়ে এসেছেন তাদের বেশির ভাগেরই শিখনফল ব্যঙ্গবিদ্রূপ, তামাশা, অপরাজনীতি ও বিভ্রান্ত করতে যতটা ‘পারদর্শিতা’ অর্জন করেছে, নীতি-নৈতিকতা, যুক্তিবাদী জ্ঞানবিজ্ঞানে দক্ষ ও সৃজনশীল মানুষরূপে গড়ে উঠতে অক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কারণ সেই শিক্ষাক্রমটাই এতদিনকার শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যুক্ত করা হয়নি। একটা উদাহরণ দিই। শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়ে ছোট দেশ হলেও নানাভাবে তারা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে গেছে। দেশের প্রায় শতভাগ মানুষই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। সে কারণেই লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গেল বছর তাদের দেশে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল। এমনকি সরকারপ্রধানের প্রাসাদও দখল করেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে কেউ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কিছুই ধ্বংস করেনি। এর মানে কী? আমরা কি এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেও কোনো ফল বের করতে পারব? এ ধরনের ঘটনা যদি বাংলাদেশে ঘটত তাহলে কি হতো? ভাঙচুর, লুটপাট, মারামারি, কাটাকাটি, কি না হতো? শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মধ্যে এই পার্থক্যটি টানার কারণ হচ্ছে সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ কিছু নীতি-নৈতিকতা, যুক্তি ও বিবেকবোধ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেসবের চর্চা কোথায়? এখানেই বোঝা যায় শিক্ষাক্রমের পার্থক্যের মধ্যেই ভিন্ন জাতি গঠনের কারণ নিহিত থাকার।
বর্তমানে যেই শিক্ষাক্রম সরকার স্কুলপর্যায়ে প্রবর্তন করেছে সেটিকে এক কথায় জীবন, কর্ম ও জ্ঞানমুখী জনশক্তি তৈরি করার আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। আমাদের আগের সৃজনশীলব্যবস্থা কিছু কিছু সফলতা দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। পরীক্ষা আর মুখস্থবিদ্যার পুরাতন পদ্ধতির মধ্যেই আমাদের শিক্ষার্থীরা আটকে ছিল। শিক্ষার্থীরা শেষ বিচারে পরীক্ষার্থীই থেকেছে। পরীক্ষার জন্য তাদের গাইডবই ক্রয় করতে আর টিউটরের কাছে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীদের ওপর মুখস্থবিদ্যার চাপ জগদ্দল পাথরের মতো চেপেছিল। গতানুগতিক শিক্ষায় বিশ্বাসী শিক্ষক ও অভিভাবকরা যুগযুগ ধরে এমনটি দেখে এসেছেন, শিখে এসেছেন। তারা জিপিএ-৫ পাওয়ায় সন্তানের ‘উজ্জ্বল’ ভবিষ্যৎ দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে কয়জন সেই ভবিষ্যতের মালিক হতে পেরেছেন ? আমাদের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাও ছিল গতানুগতিক। শ্রেণিপাঠ, মুখস্তবিদ্যা আদায় করা, পরীক্ষার মূল্যায়নও সেভাবে নির্ধারণ করা হতো। আর এর জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর পাঠ্যবইয়ের চেয়ে গাইডবই, শ্রেণিপাঠের চেয়ে কোচিং সেন্টার বা শিক্ষকের বাড়ি বাড়ি কোচিং নেওয়ার দৌড়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। এটি কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীর জ্ঞান, জীবন ও শিক্ষার মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে না। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা এখন পৃথিবীর বেশির ভাগ রাষ্ট্রেই অচল হয়ে গেছে। আমরা যুগযুগ ধরে সেটাকেই নানা নামে অব্যাহত রেখেছি। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তাদের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা সেভাবে গড়ে উঠছে না। অথচ দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গড়ে উঠেছে। প্রতিবছরই পাবলিক পরীক্ষায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী নেই এমন খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং শিক্ষকতার পেশায় নিজেদের যুক্ত রাখার প্রবণতায় বিরাট ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদের একটা বিরাট অংশই আধুনিক শিক্ষাক্রমের সঙ্গে পরিচিত নন। ফলে করোনাকালে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষাক্রম বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু করোনাকাল আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে আগের বোধ, বিশ্বাস আর অভ্যস্ততার মধ্যে গুটিয়ে থাকলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে টিকে থাকা যাবে না। পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতায় আসতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম কেবলই প্রবর্তিত হয়েছে, হচ্ছে। এর পরিমার্জন, পরিবর্ধন এবং উন্নততর করার আবশ্যকতা থাকতেই পারে; কিন্তু এটিকে বাতিল করে আগের মুখস্থ বিদ্যা এবং গাইডবই, টিউশননির্ভর শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার যারা দাবি করেন তাদের উদ্দেশ্য শিক্ষা নয়, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা হতে পারে। যে শিক্ষকরা সেখানে ফিরে যেতে চান, তারাও একই দোষে দোষী। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে; কিন্তু প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করা প্রতিটি শিক্ষকেরই দায়িত্ব। কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না যে আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের অনেক শিক্ষকেরই পঠনপাঠনের নিয়মিত অভ্যাস নেই। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে নিজেকে আপডেট রাখা ও শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতার অভাব রয়েছে। অথচ শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ এবং নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী হাতেকলমে শেখন, মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমেই যুগের সঙ্গে যেমন তাল মেলাতে পারেন, শিক্ষার্থীদেরও গড়ে তুলতে অবদান রাখতে পারেন। অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করা নয় বরং সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়া, আস্থা রাখা এবং তাদের জীবন, কর্ম ও জ্ঞান দক্ষতায় গড়ে তোলার শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রতি আস্থাশীল হতেই হবে। অপপ্রচার, গুজব, ব্যঙ্গবিদ্রূপ শিক্ষার সঙ্গে যায় না, জীবনের সঙ্গেও নয়। এটাই শিক্ষার দর্শন।
লেখক: ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
রিজার্ভ নিয়ে এবার সুখবর দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ডিসেম্বর মাসে দেশের রিজার্ভ কমবে না, বরং কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।
গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন।
রিজার্ভ না কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন, বিদেশি ঋণ ও সহায়তার বড় অঙ্ক আসবে ডিসেম্বরে। জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বরেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সহায়তা ও ঋণ বাবদ ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই প্রতিদিনের ডলার বিক্রির চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পুরো পৃথিবীতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লে দাম বাড়তে থাকে প্রায় সব ধরনের পণ্যের। পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে থাকলে প্রয়োজন পড়ে বাড়তি আমদানির। সে সময় থেকেই আমদানির চাপ সামাল দিতে ডলারের সংকট তৈরি হয়। যদিও সে চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় ডলার বিক্রি করেছে। তাতে একসময়ের ৪৮ বিলিয়ন ডলারে থাকা রিজার্ভ কমে এখন ২৫ বিলিয়নের ঘরে এসেছে।
সম্প্রতি ডলারের দাম দুই দফায় কমানো হয়েছে। বিদেশ থেকেও ভালো রেমিট্যান্স আসছে। তারপরও হুন্ডিসহ নানা কারণে অস্থিরতা কমছে না ডলারের বাজারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রিজার্ভ শক্তিশালী হলে ডলারের বাজারের অস্থিরতাও কিছুটা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসে এডিবি থেকে রিজার্ভে বাজেট-সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যুক্ত হবে। এ ছাড়াও ডিসেম্বরের ১২ তারিখ আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাব সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদন পেতে পারে। সে দিন অনুমোদন পেলে পরদিনই তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পাবে আরও ৬৮ কোটি ডলার। সব মিলে ১০৮ কোটি ডলার বা এক বিলিয়নের খানিকটা বেশি অর্থ যোগ হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে। আর এতেই রিজার্ভ কমার পরিবর্তে বরং কিছুটা বাড়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন ছয় থেকে আট কোটি ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের প্রয়োজনে জ্বালানি ও রাসায়নিক সার কেনার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। জানা যায়, এ কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বিক্রি করতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৫ ডিসেম্বর দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে। তবে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এ জন্য এডিবি ও আইএমএফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বর্তমান সময় বিবেচনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ঢাকা সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বদর আই আলবদরের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার রাজধানীর লে মেরিডিয়েন হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দূরদর্শী নেতার মধ্যে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমিন আহমেদ, চেয়ারম্যান, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা, হাসান আহমেদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা এবং মি. কস্তাস, জেনারেল ম্যানেজার, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা।
বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ প্রকাশ করে সৌদি আরব থেকে ৩১ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে। তারা সৌদি আরবের বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত দেশে চেইন হোটেল, উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক অঞ্চল, জ্বালানি এবং রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেক্টরে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জেনারেল ইলেকট্রিক, ম্যারিয়ট, কোহলবার্গ ক্রাভিস রবার্টস- কেকেআর, নেব্রাস পাওয়ার (কাতার), এলআইসি ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য বিশ্বখ্যাত সংস্থার সঙ্গে তার অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্য রয়েছে।
সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো চেইন হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বাংলাদেশে বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্ভাব্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- ম্যারিয়ট হোটেল প্রকল্প, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, হেইলিবেরি স্কুল এবং অন্যান্য বড় মাপের অবকাঠামো প্রকল্প।
বৈঠকে বদর আই আলবদর ড. সরাফাতকে সম্ভাব্য অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সৌদি আরবে আরও বাণিজ্য সহযোগিতা এবং সম্প্রসারণকে সহজতর করার লক্ষ্যে বিশ্বকাপ মৌসুমে আসন্ন এক্সপো ২০৩০ ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে কৌশল নির্ধারণ এবং প্রকল্পগুলো প্রদর্শন করতে উভয় পক্ষই পারস্পরিকভাবে সম্মত হয়েছে। ড. সরাফাত এ অঞ্চলে হোটেল এবং অবকাঠামোগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে সৌদি কোম্পানিগুলির সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক ব্যবসা করাকে একটি সুযোগ বলে মনে করেন।
বৈঠকটি বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারত্বের ক্ষেত্র তৈরি করে, যা উভয় দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বস্তুটিতে নেই কোনো সোনার চিহ্ন। গুণেও নেই স্বর্ণের বাহার। তবে দামে সোনার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের এই মশলা। ছাড়িয়ে গিয়েছে রুপাকেও। ভারত মশলার দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই বিদেশে মশলার ব্যবসার জন্য বিখ্যাত দেশটি। সেই মশলার সাম্রাজ্যে অন্যতম অবদান রয়েছে কাশ্মীরের। কথা হচ্ছে কেশর নিয়ে। একগুচ্ছ সরু সুতোর মতো লাল বস্তুটিকে দেখলে মশলা বলে মনেই হয় না। অথচ স্বাদে ও গন্ধে রান্নায় তার কদরই আলাদা।
বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মণ্ডা-মিঠাই, হেঁশেলে কেশরের ব্যবহার অনেক পুরোনো। যত দিন গেছে, দর আরও বাড়িয়ে ফেলেছে এই মশলা। ভালো রান্নায় কেশর না হলে যেন চলেই না।
সাধারণের সাধ্যাতীত কেশর। কারণ এর দাম আকাশছোঁয়া। এক কেজি কেশরের দাম প্রায় দেড় লাখ রুপি। তাই সব রান্নায় ইচ্ছা থাকলেও কেশর ব্যবহার করা যায় না।
দামের কারণে কেশরকে ‘লাল সোনা’ বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে ‘সোনার মশলা’ বলেও উল্লেখ করেন। কেশর কিনতে গিয়ে পকেটে ছ্যাঁকা লাগে মধ্যবিত্ত পরিবারের।
কেন এত দাম কেশরের? দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল কেশরের উৎপাদন ভূমি। কাশ্মীরের প্যামপোর শহরকে ‘কেশরের শহর’ বলা হয়ে থাকে। মূলত সেখানেই কেশর উৎপাদনকারী গাছের চাষ হয়।
ক্রোকাস গাছ থেকে কেশর পাওয়া যায়। এই গাছে বেগুনি রঙের যে ফুল ফোটে, তার গর্ভদণ্ডগুলোই কেশর। সরু সুতোর মতো সেই কেশর পেতে ব্যবসায়ীদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।
এক কিলোগ্রাম কেশর পেতে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুল লাগে। উৎপাদন প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। সারা বছর ফুল মেলে না। তাই নানা কারণে কেশরের দাম বেড়েছে।
শুধু রান্নায় স্বাদ নয়, কেশরের স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কেশরের ক্রোসিন আর ক্রোসেটিন নামক দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। মানসিক অবসাদও কমায়। নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে শর্করার পরিমাণও।
সম্প্রতি কাশ্মীরে কেশরের উৎপাদন কমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগে একটি মৌসুমে তিন থেকে পাঁচবার গাছে ফুল হতো। তা থেকে অনেক কেশর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মৌসুমে মাত্র দুই থেকে তিনবার ফুল ফোটে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনকেই কেশরের উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অনিয়ন্ত্রিত বৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি এবং অত্যধিক গরম এই উৎপাদনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, কাশ্মীরে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের ধরন বদলেছে। ১০ বছর আগেও যে সময়ে যে পরিমাণে তুষারপাত বা বৃষ্টি হতো, এখন তা হয় না। যা কেশর ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে।
পাশাপাশি, নাগরিক সভ্যতার বিকাশও কেশর উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী। কেশরের খেতে ক্রমে ঢুকে পড়ছে নগর। খেত একটু একটু করে কমে আসছে। তার ফলেও আগের চেয়ে উৎপাদন কমেছে বলে দাবি।
পাহাড়ের বুকে কেশর ফোটাতে অত্যন্ত যত্ন এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। পরিশ্রম অনুযায়ী চাহিদা কম এই মশলার। দামের কারণেই অনেকে তা কিনতে চান না। তাই কেশর ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেছেন, দেশের মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্য বাড়ছে। আর এই আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
আইসিডিডিআর,বির ৬৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার বিনায়ক সেন খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৫০। শহরাঞ্চলে গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৫৪ আর গ্রামাঞ্চলে তা শূন্য দশমিক ৪৫। একই সঙ্গে দেশে ভোগের ক্ষেত্রেও অসমতা বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভোগ অসমতার ক্ষেত্রে গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৩৩৪; শহরাঞ্চলে যা ছিল শূন্য দশমিক ৩৫৬ আর গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে যা ছিল শূন্য দশমিক ২৯১।
গিনি সহগের মান শূন্য হলে বোঝা যায়, সমাজে চূড়ান্ত সমতা আছে। ১ হলে বোঝা যায় চূড়ান্ত অসমতা আছে; শূন্য দশমিক ৫০ অতিক্রম করলে বোঝা যায়, দেশে উচ্চ অসমতা আছে। অর্থাৎ দেশে এখন উচ্চ অসমতা বিরাজ করছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশে বর্তমানে যে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে, তা ঠিক এই অসমতা মোকাবিলা করার মতো নয়, অর্থাৎ বৈষম্যে তার তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না বলে মন্তব্য করেন বিনায়ক সেন।
তিনি ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের সূত্রে বলেন, তখন দেশের ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ছিল। তথ্যে দেখা যায়, গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে এ নিয়ে বড় ব্যবধান আছে; গ্রামাঞ্চলের ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকলেও শহরাঞ্চলের মাত্র ১০ দশমিক ১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আছে, যদিও শহরাঞ্চলে অসমতা বেশি।
বিনায়ক সেন আরও বলেন, বৈষম্য বাড়ছে- সাধারণভাবে এই কথার অর্থ হলো ধনী আরও ধনী হচ্ছে আর দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে অসমতার প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। তাঁর ভাষ্য, দেশে দরিদ্র ও অদরিদ্র উভয় শ্রেণির মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, কিন্তু অদরিদ্র শ্রেণির উন্নতির হার বেশি।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা এবং নিয়ামকসমূহ: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন সংঘাত দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এর আগে গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিনায়ক সেন দারিদ্র্যের প্রধান কারণগুলো তুলে ধরেন এবং তা থেকে উত্তরণে বেশ কিছু নীতিগত প্রস্তাব তুলে ধরেন। স্মার্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সেসব নীতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন তিনি।
বিনায়ক সেন উপস্থাপনায় দেখান, সরকারি ব্যয় বাড়লেও কর-জিডিপির অনুপাত কমে যাচ্ছে। ২০০০-০১ সালে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০১০-১১ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, সে বছর জিডিপির অনুপাতে সরকারি ব্যয় ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, কিন্তু সরকারি ব্যয়-জিডিপির অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস।
টানা ১৫ বার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন পুরান ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী মো. কাউছ মিয়া। দেশের অনেক বড় ব্যবসায়ীকে পেছনে ফেলে এবার তিনি সেরা করদাতা হয়েছেন। কাউছ মিয়া হাকিমপুরী জর্দা প্রস্তুতকারী কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। ২০২২-২৩ করবর্ষে ‘ব্যবসায়ী’ শ্রেণিতে এই ব্যবসায়ী সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন।
চলতি বছর ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে মো. কাউছ মিয়ার পাশাপাশি গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মুর্তজা, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল আলম ও চেয়ারম্যান এস এম শাসছুল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলমকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছে।
গত বছর সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে মো. কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছিল। চলতি বছরে ব্যক্তি, কোম্পানি ও অন্যান্য ক্যাটাগরিসহ মোট ১৪১ জনকে সেরা করদাতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ অধিশাখা-২ (কর)-এর সিনিয়র সহকারী সচিব নুসরাত জাহান নিসুর সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মুজিববর্ষের সেরা করদাতা হিসেবেও বিশেষ সম্মাননা পান কাউছ মিয়া। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের সময় শীর্ষ করদাতা হয়েছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে কাউছ মিয়া দেশে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন। গত ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন তিনি। প্রথম কর দেন ১৯৫৮ সালে।
চাঁদপুর জেলার রাজরাজেশ্বর গ্রামে (ব্রিটিশ আমলের ত্রিপুরা) ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কাউছ মিয়া। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদি দোকান চালু করেন।
পরে ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। এরপর ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে তার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা।
২০১৯ সালে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে “ফ্রি” হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম।’
জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২২-২৩ করবর্ষের জন্য খেলোয়াড়সহ সেরা করদাতা মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে ব্যক্তি ৭৬ জন, কোম্পানি ৫৪টি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১১ জন। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত সরকারি গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ১০ ডিসেম্বর জাতীয় ভ্যাট দিবসে সেরা করদাতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড দেবে এনবিআর। ২০১৬ সাল থেকে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা দিয়ে আসছে এনবিআর।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার একটি বন্ড অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৮৯০তম কমিশন সভায় এ বন্ডটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আলোচ্য বন্ডটির বৈশিষ্ট্য হবে মুদারাবা ফ্লোটিং রেট, নন-কনভার্টিবেল, আনসিকিউরিড সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। এর প্রধান বেশিষ্ট্য হবে নন-কনভার্টিবেল, অর্থাৎ এ বন্ডের কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে না। বন্ডটির কুপন রেট তথা সুদ হার হবে ৬ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে। এটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে। এর প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য হবে ১০ লাখ টাকা। এ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ব্যাংকটি তার টিয়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করবে।
আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ডিবিএইচ ফিন্যান্স। আর এর অ্যারেঞ্জারের হিসেবে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বন্ডটিকে স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত হওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের মে মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ব্যাংকটি জানিয়েছিল, তাদের পর্ষদ সভায় নন-কনভার্টিবেল, আনসিকিউরিড, ফুললি রিডিমেবল ফ্লোটিং রেটবিশিষ্ট ‘এসজেআইবিএল থার্ড মুদারাবা সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড’ ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ বন্ড ইস্যু করে ব্যাসেল-থ্রি এর অধীনে থাকা তাদের ব্যাংকের টিয়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করা হবে। বন্ডটির মেয়াদকাল হবে ৭ বছর, যা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে। সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে নীতিমাল অনুসরণ করে এ বন্ডটি ইস্যু করার কথা জানানো হয় তখন। এরই মধ্যে এ বন্ড ইস্যুর জন্য বিএসইসির অনুমোদন পেল এসজেআইবিএল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত করেনি ব্যাংকটি।
বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। রিকোভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (আরঅ্যান্ডআর) ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থ বছরে ২৫ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব ছিল, যা এখন বাড়িয়ে ৫০ কোটি ডলার করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থছাড় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিপিসি কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, অর্থ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে ইআরডি। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের চিঠিতে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এটা খুবই উৎসাহজনক বিষয় যে, দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসিতে টার্গেট করা প্রায় সব সংস্কার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে। জাতীয় ট্যারিফ নীতি গ্রহণ, এই চালান পদ্ধতির বাস্তবায়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা, সুরক্ষিত লেনদেন আইন প্রণয়ন এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ- এর মধ্যে কয়েকটি।
‘দেশকে টেকসই উন্নয়নের ধারায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ এসব সংস্কার। দ্বিতীয় ডিপিসিতে টার্গেট করা সংস্কারের মধ্যে মাত্র কয়েকটির কাজ সম্পন্ন হওয়া বাকি থাকলেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডিপিসিতে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত সংস্কার পদক্ষেপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
‘অর্থ বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় যে, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রেখেছে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি সাসটেইনেবল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই একটি স্থিতিস্থাপক ও টেকসই ভবিষ্যৎ; এবং এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল আলোচনা এবং অর্থছাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।’
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং রিজার্ভ সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর সঙ্গে ৪০ কোটি ডলার করে মোট ৮০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
চলতি মাসে দুই সংস্থার সঙ্গে এ-সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।
কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনৈতিক সংকট এবং টিকা কিনতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার ওপর জোর দেয়। পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের বাজেট সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ হয়েছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেয়েছে ১.৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার। তার আগের তিন বছর যথাক্রমে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল ২.৫৯ বিলিয়ন, ১.০৯ বিলিয়ন এবং ১ বিলিয়ন ডলার।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হতে পারে, যার পরিমাণ ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। দুটো প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হতে পারে ১১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর এডিবি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া একই দিনে আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
উভয় ঋণ প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ অর্থ প্রাপ্তি বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে স্বস্তি আনবে। এর মাধ্যমে আমদানি বিল পরিশোধ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসার অর্থ পাঠাতে প্রয়োজনীয় ডলারের ঘাটতি মেটাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবটি আগামী সপ্তাহে সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে।
বোর্ড সভার সময়সূচি অনুসারে, আগামী ১২ ডিসেম্বর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন বা ৬৮ দশমিক ১০ কোটি ডলার অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে সেগুলো হলো—অনুচ্ছেদ ৪ পরামর্শ ও বর্ধিত ঋণ সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব সুবিধার পর্যালোচনা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে আইএমএফ নির্ধারিত ছয়টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাংলাদেশ দুটি অর্জন করতে পারেনি।
গত অক্টোবরে আইএমএফ দল দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফর করে। এরপর তারা ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করে বোর্ডের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আশাবাদী যে আইএমএফ বোর্ড সভায় দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে। তারা আইএমএফকে ঋণের দুটি শর্ত পূরণে বাংলাদেশের অপারগতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব ইতোমধ্যে আইএমএফ বোর্ডে তোলা হয়েছে, তাই অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ যে ঋণ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তা দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিনের খরচ চালানো যাবে।
বাংলাদেশ যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি সেগুলোর একটি হলো গত জুন শেষে ন্যূনতম ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রাখা।
জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্যের দাম পরিশোধে সরকারকে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছিল বলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার কমেছে।
ন্যূনতম কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যায়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা কর-রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজন ছিল। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তিন লাখ ২৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা কম।
আইএমএফ রিভিউ টিমের সঙ্গে গত ১৯ অক্টোবর বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আইএমএফ দল বাংলাদেশের কাঠামোগত সংস্কারের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট। ঋণের জন্য আইএমএফ যে ছয়টি শর্ত বেঁধে দিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ চারটি পূরণ করতে পেরেছে। আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির জন্য আর কোনো শর্ত যোগ করছে না। হক বলেন, এ শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বাজারের ওপর ভিত্তি করে একক বিনিময় হার, মুদ্রানীতির আধুনিকীকরণ, ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আইএমএফ পদক্ষেপ ও এগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে উন্নীতকরণ এবং বাজার ভিত্তিক কর রাজস্ব ও সুদের হার সংগ্রহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রিজার্ভ ও রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি বর্ণনা করেছি। গৃহীত পদক্ষেপ এবং চলমান প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করেছি। তারা এর মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮শতাংশের নিচে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। বাকিগুলো আরও পাঁচ দফায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।