সংকটের মধ্যে ও জাতীয় নির্বাচনের বছরে আরেকটি উচ্চাভিলাষী বাজেট নিয়ে আসছে সরকার। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে হাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহালের মধ্যে আসছে এই বাজেট।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেট হবে দেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট।
আকারের দিক থেকে এটিই হবে দেশের বৃহত্তম বাজেট। চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এটি হবে ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংসদে পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন করবেন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার।
প্রথা অনুযায়ী ৩০ জুন অথবা তার আগের দিন ২৯ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পাস হয়। ১ জুলাই থেকে শুরু হয় নতুন বাজেটের বাস্তবায়ন। ২৮ জুন থেকে কোরবানির ঈদের ছুটি শুরু হবে। সে কারণে এবার বাজেট পাস হবে ২৬ জুন।
এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ করার কথা তুলে ধরা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’।
শেষ তিনটি বাজেট করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকটের মধ্যে দিতে হয়েছে সরকারকে। এবারও সেই সংকটের মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে হচ্ছে তাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোট আর আইএমএফের শর্তের চাপ।
বৈশ্বিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। একদিকে স্বস্তি দিতে গিয়ে অন্যদিকে টান পড়ছে। প্রতি মুহূর্তে খেয়াল রাখতে হচ্ছে আইএমএফের শর্ত; যেন কোনো অবস্থাতেই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো আটকে না যায়। অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ ফের চড়ছে। এপ্রিলে এই সূচক ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মে মাসের তথ্য পাওয়া গেলে সেটি দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে ইতিমধ্যেই জোর রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
অর্থনীতিতে টানাপোড়েন, আইএমএফের নানা শর্ত আর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রায় পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকার বড় বাজেট দিতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।
সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন বাজেট। সে হিসাবে আগামী বাজেটের ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) বাস্তবায়ন করবে বর্তমান সরকার। আর নতুন সরকার বাস্তবায়ন করবে বাকি ছয় মাস, জানুয়ারি থেকে জুন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারে। বাজারে ডলারের সংকট এখনো কাটেনি।
এমন সংকটকালেই টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। মূলত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা সাজিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি কমিয়ে আনা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এসব শর্ত পূরণের বিষয় বিবেচনায় রাখা হবে নতুন বাজেটে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে এসব শর্ত সম্পর্কিত। আইএমএফ প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার দিয়েছে। বাকি অর্থ সমান ছয় কিস্তিতে দেবে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে কম সুদের এই ঋণের বাকি কিস্তিগুলো নির্বিঘ্নে পাওয়ার জন্য নতুন বাজেটে আইএমএফের শর্তের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলে আগামী বছরও উচ্চমূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে। সে জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাজেট প্রণয়নে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেহেতু এটা এই সরকারের শেষ বাজেট, তাই আসন্ন বাজেটটি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে নির্বাচনের প্রতিফলন থাকে। নতুন বাজেটে দেয়া পদক্ষেপগুলো যাতে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে; খুশি হয়। কর্মকর্তারা সেই নির্দেশনা মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের মতো আগামী বছরও মূল্যস্ফীতি উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে নতুন অর্থবছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ।’
যোগাযোগ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এবার যুদ্ধাবস্থার মধ্য দিয়ে নতুন বাজেট করতে হচ্ছে। যুদ্ধ সব দেশকেই কমবেশি প্রভাবিত করেছে। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি এক নম্বর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। জিডিপির প্রবৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ প্রবৃদ্ধি কমলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
যুক্তিসংগত ভারসাম্য রেখে নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আবার ব্যয়ও কমানো যাবে না। এসব বিবেচেনা করে কৌশলপূর্ণ একটি বাজেট দিচ্ছি আমরা।’
রাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুমুখী চাপের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, ডলারসংকট, রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি, আইএমএফের শর্তের খড়্গ, ভর্তুকির বোঝা, নির্বাচনী বছরে বাড়তি খরচের চাহিদা, অর্থায়ন সংকট- এসব মিলিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে নতুন বাজেট তৈরিতে হিমশিম খেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আয়ের পথ সীমিত, তার পরও নির্বাচনে জনতুষ্টির কথা মাথায় রেখে বড় বাজেট আসছে। যেখানে আইএমএফের একগাদা শর্ত মানতে গিয়ে অবাধে করছাড় তুলে দিয়ে বরং করের বোঝা বাড়ানোর মতো অপ্রিয় পথে হাঁটতে হতে পারে সরকারকে। যে কারণে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হচ্ছে।
নতুন বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সারেও ভর্তুকির চাপ থাকবে। চাপ থাকবে এক বছরের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের দামে যে ২৮ শতাংশ উল্লম্ফন হয়েছে, তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। যদিও আইএমএফের শর্তের কারণে ভর্তুকি থেকে সরে আসার কথা বলা হয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষির প্রসার আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চিন্তা করে সরকার শিগগিরই হয়তো ভর্তুকি তুলে দেয়ার ক্ষেত্রে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলেই মনে হচ্ছে।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি করার কারণে সরকারকে বেশ কিছু কঠিন শর্ত পালন করতে হবে। আর এসব শর্তের প্রতিফলন নতুন বাজেটে থাকবে। যেমন- রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) নিতে হবে। এটি করতে হলে গণহারে যে করছাড় দেয়া আছে, তা তুলে দিতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে দেয়া কর অবকাশ সুবিধা তুলে দিতে কঠোর হতে হবে। এটি করা হলে দেশীয় শিল্পগুলো কমবেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।
তা ছাড়া বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্য যখন নানা ধরনের চাপের মধ্যে, তখন বাড়তি করের বোঝা চাপবে তাদের ওপর। এর সঙ্গে সব স্তরের করের বোঝা বাড়বে। কারণ আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আসছে অর্থবছরে অন্তত ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে। এটি করতে কমবেশি ব্যক্তিশ্রেণির কর যেমন বাড়বে, তেমনি সব স্তরেই করের চাপ পড়বে। এটি নির্বাচনের আগে অজনপ্রিয় হলেও শেষ পর্যন্ত না করে পারবে না সরকার। এমনিতেই রাজস্ব আয়ে নাজুক অবস্থা চলছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ঘাটতি ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
একদিকে রাজস্ব আদায় বাড়ছে না, অন্যদিকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দিতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতির গবেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, বর্তমান এই কঠিন সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখার দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে। তাদের আগে স্বস্তি দিতে হবে। তারপর জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিকে তাকাতে হবে। সেই সঙ্গে রিজার্ভ যাতে আর না কমে সে জন্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও কম সুদের বিদেশি ঋণ বাড়াতে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে।’
এবারও ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। বিবিএস ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাব কষে বলেছে- এবার ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি বলছে ৫ শতাংশের কিছু বেশি হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে; কবে শেষ হবে- নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যুদ্ধের প্রভাব প্রতিনিয়ত পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলারের দর বেড়েই চলেছে; ৮৬ টাকার ডলার হাতে গুনে ১০৯ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ডলারের এই উল্লম্ফনের নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির সব খাতেই পড়ছে।
এদিকে অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে যোগ হয়েছে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এসব সংকটের মধ্যেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। আর সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এবার জিডিপির মোট আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেটি কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।
নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী সরকারি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করবেন ৫ লাখ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ১০ শতাংশের সমান। তবে চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাজেটে মোট ঘাটতি নির্ধারণ করেছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।
এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী অর্থ সংগ্রহের দুটি উৎস চিহ্নিত করেছেন। একই সঙ্গে কোন উৎস থেকে কত টাকা তিনি ঋণ করবেন, সেটিও স্পষ্ট করেছেন। বাজেটের সারসংক্ষেপ থেকে জানা গেছে, ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থমন্ত্রী মোট ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। এটি মোট ঘাটতি অর্থায়নের ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ পরিমাণ অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে তিনি ঋণ নিতে চান ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি, আর সঞ্চয়পত্র থেকে নেবেন ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা নেবেন বিদেশি ঋণ।
এদিকে প্রায় পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট থেকে অর্থমন্ত্রী খরচের দুটি খাত নির্ধারণ করেছেন। এর একটি হলো সরকারের আবর্তক ব্যয় বা পরিচালন ব্যয়। এর আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, যা মোট সরকারি ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং জিডিপির ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যটি হলো উন্নয়ন ব্যয়, যার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় মোট ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছর উন্নয়ন ব্যয়ের মোট আকারকেও দুভাবে নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ব্যয়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ এডিপির জন্য।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে সরকার ব্যয় করবে মোট ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির বড় অংশ ব্যয় করা হবে বিদ্যুতে, যার পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষিতে যাবে ১৭ হাজার কোটি, রপ্তানি ভর্তুকিতে যাবে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের ভর্তুকিতে ব্যয় হবে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা।
অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরও সরকারের ব্যয়ের বড় অংশ যাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির খাতগুলোর ব্যয়ে। আগামী অর্থবছর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেট ব্যয়ের ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন থামছেই না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে শেয়ার বিক্রির অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমানোর প্রেক্ষিতে দুদিন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও ফের টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে শেয়ারবাজার।
আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় রোববার (১০ নভেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন দেখা দিলে গত ৪ নভেম্বর দুপুরে মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর প্রেক্ষিতে ওই দিন এবং পর দিন শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু এরপর আবার পতনের ধারা শুরু হয় শেয়ারবাজারে।
গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত থাকে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৪১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২১ কোটি ৬৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী আঁশের ১৯ কোটি ৭১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট নিটিং।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, বিচ হ্যাচারি, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং আফতাব অটোমোবাইল।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪০টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা।
গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এটি ছিল ৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১.৩৮ শতাংশ
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
ওভেন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে।
অক্টোবর মাসে পোশাক খাত ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন আয় করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।
পোশাক খাত আয়ের তীক্ষ্ণ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ এ খাতটি জাতীয় রপ্তানিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখে।
গ্রীষ্মের জন্য পণ্য পাঠানোর শেষ মাস ছিল অক্টোবর। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে জুলাই-আগস্টে কম চালান হয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অক্টোবরে আটকে থাকা পণ্য পাঠানো হয়েছিল, যা রপ্তানি আয়কে তীব্রভাবে বাড়িয়েছে।
‘তবে প্রবৃদ্ধির প্রবণতা সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য আমাদের আগামী কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সেক্টরে অস্থিরতা ছিল এবং ক্রেতারা কাজের অর্ডার দিতে ধীরগতিতে চলেছিলেন’, যোগ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা এত শক্তিশালী বৃদ্ধির জন্য কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি এবং এটি টিকবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এখনই মন্তব্য করার সময় নয় বরং অপেক্ষা করতে হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পোশাক খাত অভূতপূর্ব অস্থিরতা দেখেছে এবং ক্রেতারা কাজের আদেশ স্থানান্তর করেছে।’
রপ্তানিকারকরা বলছেন, পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির জন্য খাতটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী হওয়া উচিত। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আন্তরিক আহ্বান।
অন্য খাতগুলোর রপ্তানি আয়
অক্টোবর মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১১৩ মিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ৩০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ২০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৫৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১ শতাংশ কমে ৮৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের আয় ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে ৭৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বিশেষায়িত টেক্সটাইল সেক্টর ৩৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং আয় করেছে ৬৪ মিলিয়ন ডলার।
হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ থেকে রপ্তানি আয় অক্টোবরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। আয় হয়েছে ৫২ মিলিয়ন ডলার, যা গত অক্টোবরের একই সময়ে ছিল ৩৯ মিলিয়ন।
অক্টোবরে ওষুধ পণ্য রপ্তানি ৪৯ শতাংশ বেড়ে ২১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
চালের সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দামে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম গড়ে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দামে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে মিলার, ধান-চালের মজুদদার, পাইকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী ‘সিন্ডিকেট’। মুনাফালোভী সিন্ডিকেট চালের মজুদ গড়ে তুলেছে। এরাই চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের ইতিবাচক সব উদ্যোগ। যদিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মাঝারি আকারের বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতের চালের। এ ধরনের চালের ভোক্তা সাধারণত মধ্যবিত্ত। গতকাল শনিবার ঢাকার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এ দুই জাতের চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৪ টাকায়। এ ছাড়া মোটা চালের (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫২-৫৫ টাকা ও চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। মাস তিনেক আগে মোটা চালের কেজি ৪৮-৫০, মাঝারি চাল ৫৪-৫৮ এবং চিকন চাল ৬৮-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে সরু চালের দর প্রায় ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ ও মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি। এ সময় সব ধরনের চালের দর বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।
সূত্র মতে, বাজারে চালের অভাব নেই। তবে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত এই চক্র জাল বিছিয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ কারণে চাল উৎপাদন বেশি। বাজারে চালের সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক।
ঢাকায় চালের বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলেছেন- এক. ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। দুই. আমনে যে উৎপাদন কম হবে, সে খবর বাজারে আছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্সের গোলাম হাফিজ মানিক বলেন, মিলার, মজুদদার ও পাইকার এবং বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি চালের দামে ফায়দা লুটছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল কিনে গুদামজাত করে। পরে সুবিধামতো সময়ে বেশি দামে বিক্রি করে।
বাজারে ধানের দাম বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বড় মিলার গোডাউনে হাজার হাজার টন পুরোনো চাল ও ধান মজুদ করে রেখেছে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
গোলাম হাফিজ মানিক আরও বলেন, কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি বাড়ছে না
চালের সরবরাহ বাড়াতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অগ্রিম আয়করও ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি সপ্তাহে বলা হয়, বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো, ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চক্রটি মজুদ চাল বেশি দামে বিক্রির জন্য আমদানি করছে না। আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে অন্যদেরও। তাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা চলছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৫৭ টন। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ৪৮ টন চাল আমদানি হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে সরকারের নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে সাধারণত ১১ লাখ টন চাল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। বাকি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য আরও ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ লাগবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকিজ রিসোর্সেসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আকিজ এসেনসিয়ালসের কর্মকর্তা এস এম রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, যে বছরই হাওরে বন্যা হয় অথবা আগাম বন্যায় ধান নষ্ট হয়ে যায়, ওই বছরই ধান-চালের সংকট সৃষ্টি হয়। গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি ১০ থেকে ১৮ লাখ মেট্ৰিক টন পর্যন্ত চাল আমদানি করতে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখন পর্যন্ত এক কেজি চালও আমদানি করতে পারেনি। শুল্ক কমানোর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি করেনি। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববাজারে এখন চালের দর অনেক বেশি। ভারত থেকে আমদানি করলে চালের দর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পড়বে। এ জন্য আমদানিতে আগ্রহ কম।
তিনি আরও বলেন, ডলার সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানির জন্য এলসি করলে এখনও খরচ বেশি পড়ে। ভারত থেকে যদি সাশ্রয়ী মূল্যে সরু চাল আমদানি করা যায় তাহলে দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। মিয়ানমার বা ফিলিপাইনের চাল আমাদের দেশের মানুষ খেতে অভ্যস্ত নয়। সরকার আজ যদি ভারত থেকে এক লাখ মেট্ৰিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, কাল প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমে যাবে। চালের দাম পুরোপুরি মজুতের ওপর নির্ভর করে। মজুদ থাকলে চালের দাম কমবে, না থাকলে রাতারাতি বেড়ে যাবে।
যেভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ হয়
রাহাদুজ্জামান রাজীব বলেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে একটা চেইন অব কমান্ড কাজ করে তৃণমূল থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত। দাম বৃদ্ধির জন্য এককভাবে কাউকে দোষ দেওয়া যায় না। চালের দাম প্রোডাক্ট চেইন ও পর্যাপ্ত মজুতের ওপর নির্ভর করে। যেমন- মিনিকেটের দাম অক্টোবর মাসে প্রতি বস্তা ছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। চলতি মাসে সেটার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এটার কারণ মিনিকেট চাল যে ধান থেকে হয় সেটার দাম বেড়ে গেছে। প্রতি মণের দাম ছিল (৩৭ কেজি) ১ হাজার ৫৬০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ টাকা। এ কারণে ধানের দাম বেড়ে গেলে চালের দাম বাড়ে।
তিনি বলেন, মিলার ও আড়তদারদের দোষ হচ্ছে আজকে ধানের দাম বাড়লে তারা আজকে থেকেই চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা ১৫ বা ২০ দিন পরে বাড়াতে পারত। তারা মজুতের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। বাংলাদেশের ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় মূলত যশোর, নওগাঁ ও বগুড়া থেকে। মোটা চালের নিয়ন্ত্রণ হয় ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও হাওর এলাকা থেকে। চালের বাজার থেকে ধানের বাজারের সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ৫০ জন ব্যবসায়ী। সারা দেশে চালের পাইকার আছে এক হাজার ৭০০ জন, যারা সরাসরি মিল থেকে চাল কিনে।
রাহাদুজ্জামান রাজীব আরও বলেন, ধানের সাপ্লাই চেইন হচ্ছে- কৃষকরা ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বিভিন্ন সাপ্লাইয়ারের কাছে বিক্রি করে, আর সাপ্লাইয়ররা বিভিন্ন মিলারের কাছে ধান বিক্রি করে। স্থানীয় কিছু ফড়িয়া ও সাপ্লাইয়ার ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়ে ধান কিনে বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রাখে। দাম বাড়লে ধান বিক্রি করে দেয়। মুজুদদাররা যে দামে ধান বিক্রি করে মিলাররা সে হিসাবে চালের দাম নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, সরকার সব সময় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মিলার ও আড়তদারদের ওপর দোষ চাপায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, জরিমানা করে। কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়ায় ধানের ব্যবসায়ীরা। এদের সঙ্গে মিলারদেরও কিছু যোগসাজশ থাকে। এজন্য চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ধানের দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সরু চালের দাম আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিনিকেট ও কাটারি চালের ধানটা পর্যাপ্ত নেই, এগুলো বোরো মৌসুমে হয়। চলতি আমন মৌসুমে মোটা ও মাজারি মানের চালের ধান উৎপাদন হয়। আগামী কিছুদিনের মধ্যে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম কমবে। যদি সরকার আমদানি করতে না পারে, মে মাসের আগে সরু চালের দাম কমবে না।
তিনি বলেন, ঢাকায় চালের বড় আড়তের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ী কলাপট্টি, জুরাইন, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ১০, ১১, গাজীপুরের টঙ্গী বাজার, সাভারের নামা বাজার, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, চিটাগাং রোড। এ ছাড়া চট্টগ্রামে চাকতাই ও পাহাড়তলী থেকে চাল সরবরাহ হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা বদ অভ্যাস হলো, আন্তর্জাতিক বাজার এ পণ্যের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে তাদের মজুদ থেকে বাড়তি দাম কার্যকর করে। কিন্তু তা এক মাস পরে কার্যকর করা যেত। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সুযোগ সবসময় নেই। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এক বস্তা (৫০ বস্তা) চালের দামে পার্থক্য হয়ে যায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে চালের দামের অস্থিরতার পেছনে নিজেদের দায় অস্বীকার করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সোহেল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মাহবুবুর রহমান সোহেল বলেন, কয়েক বছর ধরে চালের বাজারে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আসার পর দাম অস্থিতিশীল হচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে আসার পর মাঝারি মানের মিলাররা তাদের সঙ্গে পেরে উঠে না। বড় কোম্পানিগুলো ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। আগে চালের দাম প্রতি বস্তায় বাড়তো ১০ থেকে ২০ পয়সা, এখন বাড়ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এটা হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে। এ ছাড়া দামের অস্থিরতার পেছেনে ধান মজুদদারদেরও দায় আছে। তারা সুযোগ সন্ধানে থাকে। তারা জানে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে দামেই হোক ধান ক্রয় করবে।
মজুদ কমছে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এক চিঠি দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, জরুরিভিত্তিতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) সম্প্রতি চালের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ কম। মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করার পর ভারতীয় চালের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। আর থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়ে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।
সরকারি হিসাবে, নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে ১১ লাখ টন চালের কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বাড়তি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে।
ধান ও চালের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ
মজুদ বাড়াতে সরকার বাজার থেকে প্রতি কেজি সেদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও ধান ৩৩ টাকা দরে কিনবে। এ ছাড়া ৪৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কিনবে সরকার। গত বুধবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গমের যতটুকু মজুদ আছে ও যতটুকু আমদানি দরকার, তারচেয়ে কিছুটা বেশি আমদানি ও সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা ধান ও চাল সংগ্রহের দাম ঠিক করে দিয়েছি। সেটা যেন ভোক্তা ও কৃষকদের জন্য যৌক্তিক হয়। আমরা একটা দাম ঠিক করব আর বাজারে এর থেকে বেশি ব্যবধানে বিক্রি হবে- এমন যেন না হয়। এমনটা হলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিতে পারে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোরও তাগিদ দেন অর্থ উপদেষ্টা। সরকার আসন্ন আমন মৌসুমে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, সাড়ে ৫ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চাল কিনবে। সেদ্ধ চাল ও ধান কেনা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৭ নভেম্বর থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত।
এদিকে বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৭ কোটি টাকা।
বিশ্ববাজার পরিস্থিতি
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছর আগের তুলনায় এখন চালের দাম ১১ শতাংশ কম। বিগত এক মাসে তা ৪ থেকে ৫ শতাংশ কমেছে। কিন্তু তারপরও আমদানি করতে গেলে খরচ অনেক পড়বে। কমিশন বলছে, থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়বে ৬৬ টাকা কেজি। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করলে দেশে দাম পড়বে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করতে গেলে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫৪ টাকা। এর সঙ্গে শুল্ক-কর ও অন্যান্য খরচ যোগ করে দাম পড়বে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাল খুবই সংবেদনশীল পণ্য। সরকার চাইলেও অনেক সময় হুট করে আমদানি সম্ভব হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও কারসাজি ঠেকাতে সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন দরিদ্র মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ব্যাপকভাবে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এ জন্য টাকার প্রয়োজন হলে অন্য খাতে খরচ কমাতে হবে।
চালসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে যাতে ধান আবাদ বেশি হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
গত সপ্তাহে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিদায়ী সপ্তাহে শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আর সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ০ দশমিক ৯৭ শতাংশ বা ৬ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
সমাপ্ত সপ্তাহে বেড়েছে ডিএসইর সবকটি সূচকও। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১১৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সপ্তাহ শেষে সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে।
এ ছাড়া, ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ৪৩ দশমিক ০১ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সূচকের উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এদিকে, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫৪টি কোম্পানির, কমেছে ১১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের শীর্ষে ওরিয়ন ফার্মা
বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৯৪ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সমাপ্ত সপ্তাহে কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তাতে লেনদেনের শীর্ষে জায়গা নিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ওরিয়ন ফার্মার অবদান ২ দশমিক ৯২ শতাংশ।
লেনদেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের সপ্তাহজুড়ে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে আসা ইসলামী ব্যাংকের বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট নিটিং, মিডল্যান্ড ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেমস, বেক্সিমকো ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক এবং লাভেলো আইসক্রিম।
ওরিয়ন ফার্মার ৮৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন
ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) ওরিয়ন ফার্মার সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ৪৪ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ২১ পয়সায় (উদ্বৃত্ত পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া)।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩ টাকা ৬২ পয়সা। ৩০ জুন ২০২৩ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকা ১৫ পয়সায়।
২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওরিয়ন ফার্মার অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩৪ কোটি টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৯৩৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ১৩ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলসের দর বেড়েছে ২২%
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের গত সপ্তাহে শেয়ারদর বেড়েছে ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানিটির সমাপনী শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সমাপ্ত ২০২৩-২৪ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৫৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৫১ টাকা ৯৩ পয়সায়।
এর আগে ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২ টাকা ৯৯ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৫৭ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩৮ টাকা ২১ পয়সা।
এনভয় টেক্সটাইলসের পর্ষদ ২০২১-২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা করেছে। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৯৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৫৬ পয়সা। ৩০ জুন ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৩৮ টাকা ২১ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৩৭ টাকা ৭৯ পয়সা।
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এনভয় টেক্সটাইলসের অনুমোদিত মূলধন ৪৭৫ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৪০৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৩০ টাকা ৭০ পয়সা ও ৫০ টাকা ১০ পয়সা।
গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের শেয়ারদর বেড়েছে ৪২ শতাংশ
সমাপ্ত সপ্তাহে (৩ নভেম্বর-৭ নভেম্বর) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানির মধ্যে ২৫৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী সপ্তাহে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের শেয়ারদর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির সমাপনী মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ১০ পয়সা।
দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারদর বেড়েছে ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ায় তালিকার তৃতীয়স্থানে অবস্থান করেছে আফতাব অটো।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক, আরামিট সিমেন্ট, এনভয় টেক্সটাইল, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ওরিয়ন ফার্মা, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস এবং ফু-ওয়াং ফুডস।
টানা দরপতনের সঙ্গে বড় ধরনের লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সর্বনিম্ন লেনদেন হওয়ার পর আজ সোমবার লেনদেন আরও তলানিতে নেমেছে।
আওয়ামী লীগ তথা হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন, অর্থাৎ ৪ আগস্ট শেয়ারবাজারে এর থেকে কম লেনদেন হয়েছিল। লেনদেন খরা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। তবে বাজারটিতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। তবে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে আবার দরপতন দেখা দেয়। সেই পতনের ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেনদেন খরা। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সব থেকে কম লেনদেন হলো। এই লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের প্রথম তিন ঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। তবে ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় লেনদেনের শেষ দিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে লেনদেন খরার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশি প্রতিষ্ঠান। সে সঙ্গে মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৯০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেনে খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ড্রাগন সোয়েটারের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১১ কোটি ৫৪ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনআরবি ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, জেনেক্স ইনফোসিস, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সাইফ পাওয়ার টেক, ফাইন ফুডস, স্যালভো কেমিক্যাল এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯০টির এবং ৪৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
দরপতনের সঙ্গে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একক কোনো কার্যদিবসে এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। এমনকি গত চার মাসের মধ্যেও যা সবচেয়ে কম।
আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন, অর্থাৎ গত ৪ আগস্ট শেয়ারবাজারে এরচেয়েও কম লেনদেন হয়েছিল। এদিকে, লেনদেন খরার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে পতন হয়েছে মূল্যসূচকেরও। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সিএসইতেও কমেছে মূল্যসূচক। তবে এ বাজারটিতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
তবে সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে নেওয়ার পর ফের শুরু হয় দরপতন। পতনের সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেনদেন খরা। রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে গত চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সবচেয়ে কম লেনদেন হলো। এই লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া দরপতনের ধারা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে লেনদেনের শেষ দিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের পতন কিছুটা কম হয়েছে। অবশ্য এরপরও দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় রয়েছে প্রায় তিনগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৮১ পয়েন্টে নেমেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেনেক্স ইনফোসিস, আইসিবি, গোল্ডেন সন, ফাইন ফুড, লাভেলো আইসক্রিম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং ড্রাগন সোয়েটার। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৩টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১২৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে যা হয়েছিল ১৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির রাজস্ব আয় কমেছে ১৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মূলত আলোচিত অর্থবছরে ডিএসইর মোট লেনদেন হ্রাস পাওয়া এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি ও ট্রেনিং একাডেমিক ফি বাবদ আয় কমায় এক্সচেঞ্জটির সার্বিক আয় কমে গেছে। এ সময়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ডিএসইর নিট মুনাফাতেও ভাটা পড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএসইতে মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। আগের অর্থবছরে এ লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৪১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আলোচিত অর্থবছরের মোট লেনদেন থেকে ডিএসই কমিশন ফি বাবদ ৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা আয় করেছে। যেখানে আগের অর্থবছরে এই আয় হয়েছিল ৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে এক্সচেঞ্জটির লেনদেন কমায় ফি বাবদ আয়ও কমেছে ১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ২১ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪২টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে লিংস্টিং ফি আদায় করেছে ডিএসই। এসব কোম্পানি থেকে আলোচ্য অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটির আয় হয়েছে ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে ২৩২টি কোম্পানি থেকে ঢাকার এই পুঁজিবাজারের আয় হয়েছিল ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ডিএসইর লিংস্টিং ফি বাবদ আয় বেড়েছে ৯৮ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আলোচিত অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটির ডেটা বিক্রি ও অন্যান্য আয় ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৪ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে এ আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে ডিএসইর লাইসেন্স নবায়ন ফি এবং ট্রেনিং একাডেমিক আয় কিছুটা কমে যথাক্রমে ৩ কোটি ৭৩ লাখ এবং ৪০ লাখ টাকা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই আয় হয়েছিল যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৬ লাখ এবং ৫৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএসই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে। যদিও এ সময়ে এক্সচেঞ্জটিতে কর্মীসংখ্যা কমানো হয়েছে। আলোচ্য অর্থবছরে ৩৫২ জন কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে এক্সচেঞ্জটির মোট ব্যয় হয়েছে ৪৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে যেখানে ৩৬১ জন কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে ডিএসইর ব্যয় হয়েছিল ৪৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ৯ জন কর্মী কমানো সত্ত্বেও বেতন-ভাতা পরিশোধ বাবদ ডিএসইর ব্যয় বেড়েছে ৬১ লাখ টাকা। আলোচ্য অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্ত খাতে এক্সচেঞ্জটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে। এ খাতে ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই খাতে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। সে হিসেবে সর্বশেষ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ডিএসইর ব্যয় বেড়েছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে দীর্ঘ কয়েক বছরের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছর এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে কিছুটা ভালো সময় পার হয়েছে। এই দুই অর্থবছরে বাজারের লেনদেনের পরিমাণ যেমন ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। তেমনি বিনিয়োগকারীদের মুখেও ভালো মুনাফা পাওয়ায় হাসির ঝলক ছিলে। যদিও অভিযোগ রয়েছে, আলোচিত দুই অর্থবছরে পুঁজিবাজারকে কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা হয়েছিল। এ জন্যই এই সময়কার উত্থান বাজারে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরবর্তী বছরগুলোতে লেনদেন ক্রমহ্রাস পাওয়ায় বাজার সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসগুলোসহ তাদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জেরও আয় কমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একদিকে লেনদেন খরায় আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য হারে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ডিএসইর মুনাফায় ভাটা পড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৬১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে এ মুনাফা হয়েছিল ৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির নিট মুনাফা কমেছে ২৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
ডিএসই- সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে পূর্বের অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরেও অর্ধেকের বেশি সময় ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপিত ছিল। এ কারণে বাজারের লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে ধারাবাহিকভাবে বেশির ভাগ সিকিউরিটিজের দরপতন হতে থাকে। এতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে দ্বিধায় পড়ে যায়। ফলে অর্থবছরের বাকি অংশেও লেনদেন তেমন একটা হয়নি। তাই কমিশন বাবদ পুঁজিবাজার থেকে এক্সচেঞ্জটির আয় কমে গিয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, ‘আমাদের আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে লেনদেনের কমিশন থেকে প্রাপ্ত মাশুল বা আয়। কিন্তু গত অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় কমে গেছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমাদের বড় একটা ব্যয় করতে হয়েছে। এ কারণে গত অর্থবছরে সার্বিকভাবে ডিএসইর আয় ও মুনাফা-দুটোই কমেছে।’
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ডিএসইর পর্ষদ। এ হিসাবে ৫৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার বেশি লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন করতে হবে। ফলে লভ্যাংশ বণ্টনের পর আলোচিত অর্থবছরের অর্জিত মুনাফার মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ডিএসইর পুঞ্জীভূত মুনাফা তহবিলে যুক্ত হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসই তার শেয়ারহোল্ডারদের ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে মোট ৭২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বণ্টন করেছে। সে হিসেবে আলোচিত অর্থবছরে অর্জিত ৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মুনাফা থেকে ৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা পুঞ্জীভূত মুনাফা তহবিলে যোগ হয়েছিল।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, আয় ও মুনাফা কমার পাশাপাশি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি অনুপাতে বাজার মূলধনের রেশিও কমেছে ডিএসইর। আলোচিত অর্থবছরে জিডিপি অনুপাতে ডিএসইর বাজার মূলধন রেশিও কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশে। আগের অর্থবছর শেষে এ রেশিও ছিল ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। টাকার পরিমাণে সর্বশেষ অর্থবছর শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ২০০ কোটি। আগের অর্থবছর শেষে যা ছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ অর্থবছরে ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমার পাশাপাশি জিডিপি অনুপাতে বাজার মূলধনের রেশিও কমেছে ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, শ্যালককে নিয়ে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ কারসাজি চক্র গড়ে তুলেছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের। যিনি শেয়ারবাজারে হিরু নামে পরিচিত। তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। কারসাজির প্রমাণ মেলায় হিরু ও পরিবারের সদস্যদের প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বৃহস্পতিবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৩৪তম কমিশন সভায় এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, কারসাজির মূলহোতা হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান এবং হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে মোট ১৩৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় তাদের এ জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছে, ফরচুন সুজ-এর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় আবুল খায়ের ওরফে হিরুকে ১১ কোটি টাকা জরিমান করা হয়েছে। এ ছাড়া হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১৫ কোটি, হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, বোন কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি এবং ভাই সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সাজিদ মাতবরকে ১ কোটি ৬০ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ কোটি ১৫ লাখ, কনিকা আফরোজকে ২ কোটি ৯০ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৮৪ লাখ এবং আবুল কালাম মাতবরকে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ, মোনার্ক হোল্ডিংকে ১ লাখ এবং সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় হিরুকে ১ লাখ টাকা, আবুল কালাম মতবরকে ১ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, কাজী ফরিদ হাসানকে ৩৫ লাখ এবং কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জরিমানার কবলে আরও যারা
বিএসইসির কমিশন সভায় আনোয়ার সিকিউরিজিটকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি (যা পরবর্তীতে পূরণ হয়েছে) রাখার দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় সোনালী পেপারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র পরিচালক ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২০ লাখ টাকা করে জারিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার অর্থ ব্যক্তিগত দায় হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। আর প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে কারসাজি করায় মাহফুজা আক্তারকে ১০ লাখ টাকা এবং দেওয়ান সালেহিন মাহমুদকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের মূল ব্যবসার বাইরে বিনিয়োগ করার প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মোনার্ক মার্ট এবং সফটাভিন লিমিটেড-এ বিনিয়োগ করা অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংয়ের হিসাবে ফেরত আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ অর্থ ফেরত আনতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অবশেষে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে দেশের শেয়ারবাজারে। চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে লেনদেন বেড়ে পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)-ও দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশি প্রতিষ্ঠান। তার আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই লেনদেন অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু শেষ ঘণ্টার লেনদেনে দাম বাড়ার তালিকা থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমে। অবশ্য এরপরও দাম বাড়ার তালিকায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২০১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯১৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১০২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ৯ কার্যদিবস পর ডিএসইতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৩০ কোটি ৫২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমারেল্ড অয়েলের ১২ কোটি ২৭ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- টেকনো ড্রাগস, অগ্নি সিস্টেম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, ফারইস্ট নিটিং, যমুনা অয়েল, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
এদিন সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৪টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
টানা তৃতীয় কার্যদিবসে বুধবার দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এদিন প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ও বাছাইকৃত ৩০ কোম্পানির সূচক বেড়েছে। তবে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ সিকিউরিটিজের দরপতন হয়েছে। কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) এদিন সূচক বেড়েছে। বিরপীতে বেশিরভাগ সিকিউরিটিজের দরপনত ও লেনদেন কমেছে। এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দাম কমার তালিকয় নাম লেখায় বেশি প্রতিষ্ঠান। তার আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কার্যদিবসে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল পুঁজিবাজারের বেশিরভাগ সিকিউরিটিজ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু শেষ দেড় ঘণ্টার লেনদেনে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়ালে দাম বাড়ার তালিকা থেকে বেশি কিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে বড় হয় দাম কমার তালিকা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৩৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য বেশিরভাগ শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হলেও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসইএক্স সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে নেমে গেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৩১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ই-জেনারেশনের ৯ কোটি ৪৫ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আইসিবি, ড্রাগন সোয়েটার, অগ্নি সিস্টেম এবং গ্রামীণফোন।
অন্যদিকে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গতকাল ৪২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৬৪৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৪টির, কমেছে ১১১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির কোম্পানির শেয়ারদর। সিএসইতে ৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ১ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। আগের দিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাত। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে এই খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৮ শতাংশ। ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আলোচ্য সপ্তাহে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ লেনদেন করে খাতভিত্তিক লেনদেনের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফার্মা খাতের শেয়ার। আর খাদ্য খাতে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
খাতভিত্তিক লেনদেনর তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাতে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ৭ শতাংশ, বিবিধ খাতের ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে ২ দমমিক ৯০ শতাংশ, যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ, পাট খাতে ২ দশমিক ২০ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ২ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ, সেবা খাতে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, পেপার খাতে ০ দশমিক ৮০ শতাংশ, সিরামিক খাতের ৩ শতাংশ এবং ট্যানারি খাতে ০ দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।
কিছুতেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
ডিএসইতে দরপতনের পাল্লা ভারী হলেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে প্রধান মূল্যসূচক সামান্য বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। তার আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই লেনদেন অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় লেনদেনের দুই ঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু এরপর বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৪৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৫ প্রতিষ্ঠানের। এ ছাড়া ৭২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৮৫ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯১১ পয়েন্টে নেমে গেছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমে আবার তিনশ কোটি টাকার ঘরে নেমে গেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৭৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৮ কোটি এক লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমারেল্ড অয়েলের ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, অগ্নি সিস্টেম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং আইসিবি।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
দেশে ভোজ্যতেলের প্রায় ৯০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে মূলত সয়াবিন ও পামঅয়েলই বেশি আমদানি হয়। দেশে বর্তমানে ভোজ্যতেলের বাজারে ১১টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ আমদানি করা ভোজ্যতেলের বাজারের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রায় ২৫ লাখ সাত হাজার টন সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করা হয়। এর ৮০ শতাংশই এই চার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে। মাত্র ১০ বছর আগে এই চার প্রতিষ্ঠান সম্মিলিতভাবে ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় এক চতুর্থাংশ পূরণ করত। বাজারে তাদের সম্মিলিত অংশীদারত্ব এখন বেড়ে তিনগুণ হয়েছে।
দেশে ভোজ্যতেলের বেশিরভাগ যোগান আসে আমদানি করা সয়াবিন ও পামঅয়েল থেকে। বাকিটা সরিষা, সানফ্লাওয়ার অয়েল, রাইস ব্র্যান অয়েলসহ অন্যান্য উৎস থেকে আসে। এই বিকল্পগুলো থেকে সম্মিলিতভাবে বছরজুড়ে তেল পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন। গত ২ বছর দেশে সরিষার তেলের উৎপাদন দুইগুণ বেড়েছে। সরিষা ও সয়াবিন তেলের দাম প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তারা সরিষা তেল ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হচ্ছে।
গত এক দশকে দেশে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ কমেছে। বিশ্ববাজারে দামের অস্থিতিশীলতা ও সরকারের নীতির কারণে অনেকে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ২০০৮ ও ২০১২ সালে বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলের দামের অস্থিরতার কারণে অনেক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীর ব্যাপক ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমদানি খরচের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য করলে সমস্যার শুরু হয়। ফলে ৩২টি দেশীয় ভোজ্যতেল প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টিই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নূরজাহান গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, ইলিয়াছ ব্রাদার্স ও মোস্তফা গ্রুপসহ অর্ধ ডজনেরও বেশি প্রধান ভোজ্যতেল প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শিল্পে বিপর্যয় দেখা দেয়। ঋণখেলাপি ও অন্যান্য কারণে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টি কে গ্রুপের সিনিয়র বিপণন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেই। সরকারের সংস্থাগুলো সার্বক্ষণিক বাজার নজরদারিতে রাখছে। সরকারি নীতির কারণে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমরা খোলা বাজার থেকে তেল কিনি। সেখানে সকালে এক দাম এবং বিকেলে আরেক দাম। কিন্তু নানা সময় সরকার আমাদের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করে। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেলের ব্যবসা থেকে সরে গেছে।
ভোজ্যতেলের বাজারে টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের বড় ভূমিকা আছে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সরে যাওয়ার সুযোগে এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অবস্থান শক্ত করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল), বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস, স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস, সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোব, ডেল্টা এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজসহ কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান বাজারে এলেও তারা এখনও বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজার মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। শীর্ষ ব্যবসায়ীরা পণ্যের দামকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যা ক্রেতাদের স্বার্থকে প্রভাবিত করে।
ক্যাব সভাপতির মতে, সব প্রতিষ্ঠান বাজারে অংশীদারত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করলে ক্রেতারাও উপকৃত হবেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে ক্রেতার স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা জরুরি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বর্তমানে ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা। আর পাম তেলের লিটারপ্রতি দাম ১৬২-১৬৩ টাকা। সেখানে বাজারে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৬৫-১৬৭ টাকা। গত এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম ১১ শতাংশ ও পাম তেলের দাম সাড়ে ১১ শতাংশ বেড়েছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশেও পণ্যটির দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় ২০২১ সাল থেকে থেকে। ২০২২ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায় বিশ্বাবাজারে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২১ সালে গড়ে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৩৮৫ ডলার দরে। ২০২২ সালে প্রতি টনের গড় দাম ছিল ১ হাজার ৬৬৭ ডলারে। চলতি বছরের অক্টোবরে টন প্রতি সয়াবিন তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫ ডলার। একইভাবে ২০২১ সালে পাম তেলের গড় দাম ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ১৩১ ডলার। ২০২২ সালে একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ১ হাজার ২৭৬ ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরে টনপ্রতি পাম তেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে হয়েছে ১ হাজার ৭৭ ডলার।
গত দুই দশকে দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৩০ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, পাম ও সয়াবিন তেল পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে আমদানি হয়। অপরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করা সয়াবিন তেল স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের পর বাজারজাত করা হয়। তবে দেশের বাজারে ব্যবহার ও আমদানি বেশি হয় প্রধানত পরিশোধিত পাম অয়েল। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়। আর ১৩ লাখ টন পাম তেল আমদানির ৯০ শতাংশই আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকি ১০ শতাংশ আমদানি হয় মালয়েশিয়া থেকে।