সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার নির্বাচনী বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী

ফাইল ছবি
আপডেটেড
১ জুন, ২০২৩ ১৫:৪২
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ১ জুন, ২০২৩ ১৫:০৭

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে আরেকটি উচ্চাভিলাষী বাজেট সংসদে উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে হাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশার মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী।

নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী সরকারি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন ৫ লাখ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ১০ শতাংশের সমান। তবে চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাজেটে মোট ঘাটতি ধরেছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার পর জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেট দেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট।

আকারের দিক থেকে এটিই দেশের বৃহত্তম বাজেট। চলতি বাজেটের তুলনায় এর আকার ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদে পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন করছেন। গত বছরের ৯ জুন তিনি ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

মুস্তফা কামাল ২০১৯ সালের ১৩ জুন তার প্রথম বাজেট (২০১৯-২০ অর্থবছর) উপস্থাপন করেছিলেন। ২০২০ সালের ১১ জুন উপস্থাপন করেন দ্বিতীয় বাজেট। ২০২১ সালের ৩ জুন উপস্থাপন করেন তৃতীয় বাজেট। গত বছরের ৯ জুন উপস্থাপন করেন তার চতুর্থ বাজেট। বৃহস্পতিবার দিতে যাচ্ছেন তার পঞ্চম বাজেট।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দিয়েছেন ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ করার কথা তুলে ধরছেন তিনি।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। তার আগের বাজেটের (২০২১-২২) শিরোনাম ছিল জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন ২০১৯ সালের ১৩ জুন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সেই বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পদযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের সময় এখন বাংলাদেশের’।

এই পাঁচ বাজেটের প্রথমটি বেশ অসুস্থ অবস্থায় দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতা শুরুর পর বারবার থেমে যাচ্ছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে ওই বাজেটের বাকি অংশ উপস্থাপন শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের তিনটি বাজেট করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকটের মধ্যে দিতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে। এবারও সেই সংকটের মধ্যেই আরেকটি বাজেট দিতে হচ্ছে তাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোট আর আইএমএফের শর্তের চাপ।

বৈশ্বিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। একদিকে স্বস্তি দিতে গিয়ে অন্য দিকে টান পড়ছে। প্রতি মুহূর্তে খেয়াল রাখতে হচ্ছে আইএমএফের শর্ত; যেন কোনো অবস্থাতেই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো আটকে না যায়। অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ ফের চড়ছে। এপ্রিলে এই সূচক ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মে মাসের তথ্য পাওয়া গেলে সেটা দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) গিয়ে পৌঁছতে পারে। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে ইতিমধ্যেই জোর রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

অর্থনীতিতে টানাপোড়েন, আইএমএফের নানা শর্ত আর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য পৌনে আট লাখ কোটি টাকার বড় বাজেট দিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন বাজেট। সে হিসাবে আগামী বাজেটের ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) বাস্তবায়ন করবে বর্তমান সরকার। আর নতুন সরকার বাস্তবায়ন করবে বাকি ছয় মাস জানুয়ারি থেকে জুন।

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই সোয়া বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারে। বাজারে ডলারের সংকট এখনও কাটেনি।

এমন সংকটকালেই টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। মূলত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা সাজিয়েছে সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। ফলে আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে। সে জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে উঠে। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমেছে।

এবারও ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। বিবিএস ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাব কষে বলেছে- এবার ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি বলছে ৫ শতাংশের কিছু বেশি হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে; কবে শেষ হবে- নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যুদ্ধের প্রভাব প্রতিনিয়ত পড়ছে অর্থনীতিতে। ডলারের দর বেড়েই চলেছে; ৮৬ টাকার ডলার হাতে গুনে ১০৯ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ডলারের এই উল্লম্ফনের নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির সব খাতেই পড়ছে।

এদিকে অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে যোগ হয়েছে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এসব সংকটের মধ্যেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। আর সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এবার জিডিপির মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেটি কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী সরকারি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন ৫ লাখ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ১০ শতাংশের সমান। তবে চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বাজেটে মোট ঘাটতি নির্ধারণ করেছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।

এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী অর্থ সংগ্রহের দুটি উৎস চিহ্নিত করেছেন। একই সঙ্গে কোন উৎস থেকে কত টাকা তিনি ঋণ করবেন, সেটিও স্পষ্ট করেছেন। বাজেটের সারসংক্ষেপ থেকে জানা গেছে, ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থমন্ত্রী মোট ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। এটি মোট ঘাটতি অর্থায়নের ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ পরিমাণ অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে তিনি ঋণ নিতে চান ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি, আর সঞ্চয়পত্র থেকে নেবেন ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা নেবেন বিদেশি ঋণ।

এদিকে প্রায় পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট থেকে অর্থমন্ত্রী খরচের দুটি খাত নির্ধারণ করেছেন। এর একটি হলো সরকারের আবর্তক ব্যয় বা পরিচালন ব্যয়। এর আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, যা মোট সরকারি ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং জিডিপির ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যটি হলো উন্নয়ন ব্যয়, যার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় মোট ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছর উন্নয়ন ব্যয়ের মোট আকারকেও দুভাবে নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ব্যয়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ এডিপির জন্য।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে সরকার ব্যয় করবে মোট ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির বড় অংশ ব্যয় করা হবে বিদ্যুতে, যার পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষিতে যাবে ১৭ হাজার কোটি, রপ্তানি ভর্তুকিতে যাবে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের ভর্তুকিতে ব্যয় হবে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা।

অন্যান্য বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরও সরকারের ব্যয়ের বড় অংশ যাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির খাতগুলোর ব্যয়ে। আগামী অর্থবছর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেট ব্যয়ের ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।


মোংলা বন্দরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গম খালাস শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ৬০ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন গমের খালাস গাতকলা রোববার মোংলা বন্দরে শুরু হয়েছে। পরীক্ষাগারে গুণগত মান যাচাই শেষে খালাস কার্যক্রম শুরু হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মোংলার সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান সরদার জানান, জাহাজটি গত শুক্রবার বিকেলে মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় নোঙর করে। চালান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় এবং মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গম খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মোট আমদানি করা গমের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন মোংলা খাদ্য গুদামে সংরক্ষণ করা হবে। বাকি অংশ খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহীতে পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, জাহাজটি আকারে বড় এবং গভীর ড্রাফট থাকায় ফেয়ারওয়ে থেকেই খালাস কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে নগদ ক্রয় চুক্তির আওতায় গমের এ চালান এসেছে।

মোংলা বন্দরে এ ধরনের বৃহৎ গমের চালান এই প্রথমবার সরাসরি এসেছে। এর আগে গমের চালান চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে মোংলায় পৌঁছাত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র জি-টু-জি ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশ মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করবে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটি চালানে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৬ মেট্রিক টন গম বাংলাদেশে পৌঁছেছে।


ইসলামী ব্যাংকিং খাত শক্তিশালীভাবে গড়তে ভালো নিরীক্ষা প্রয়োজন: গভর্নর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলতে ভালো হিসাবরক্ষণ, সুশাসন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম প্রয়োজন।

তিনি বলেন, উচ্চমানের নিরীক্ষা মানদণ্ড অনুসরণ করা প্রচলিত ও ইসলামী-উভয় ধরনের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতির জন্য ভালো হিসাবরক্ষণ, সুশাসন এবং নিরীক্ষা প্রয়োজন।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ফিন্যান্স সামিট-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়নে কাজ করছে এবং তারা সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে চায়।

তিনি বলেন, ‘দেশে ইসলামী ব্যাংকিংকে শক্তিশালী করতে ভালো হিসাবরক্ষণ, সুশাসন ও প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়নে কাজ করছে এবং আমরা সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে চাই।’

গভর্নর আরও বলেন, ‘ভালো নিরীক্ষা বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে।’

তিনি স্বীকার করেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকিং খাত একটি অস্থির সময় পার করেছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, খাতটি কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী এবং এখনো বাজারে অনেক খাতের তুলনায় ভালো করছে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ইসলামী অর্থনীতি ভালো করছে। বাংলাদেশে আমরা আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম যদি অস্থির সময় না আসত। তবুও আমরা খাতটির প্রতি আস্থা রাখি এবং আমানতকারীরাও ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন।’

আহসান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাসে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ব্যাংকটি ভালোভাবে চলছে এবং সবচেয়ে বড় গ্রাহকভিত্তিক রয়েছে, তবে অনিয়ম এখনো বড় উদ্বেগের বিষয়।

তিনি উল্লেখ করেন, একটি একক পরিবারের মাধ্যমে আইবিবিএল থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল, যা ব্যাংকটির সম্পদের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে।

‘এই উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়ার পরও মানুষ আইবিবিএলের ওপর আস্থা রেখেছে’- উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আইবিবিএল তীব্র তারল্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু এখন তা কাটিয়ে উঠেছে। এমনকি এ বছর ইসলামী ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা এই শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত।

তিনি আরও বলেন, ‘তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।’

‘আমরা আশা করি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়িত্বশীল ও প্রতিনিধিত্বমূলক হবেন।’

খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে গভর্নর বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং একটি সুশৃঙ্খল, সুশাসিত ও টেকসই পথে এগিয়ে যাক।


শেয়ারবাজারে লেনদেন ও মূল্যসূচক বেড়েছে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে গেছে।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতনের তালিকায় রয়েছে বেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে বাজারটিতে মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে সিএসইতে টানা ১১ কার্যদিবস মূল্যসূচক কমলো।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৩টির। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৮টি শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৫৭টির দাম কমেছে এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৫১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৭টির দাম কমেছে এবং ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ৯৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে গেছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৮৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার। ৯ কোটি ২৮ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট এলায়েন্স পোর্ট।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮২টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।


পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে ডিবিসিসিআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ডাচ্-বাংলা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিবিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই), বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশি মেলার আয়োজন, বিটুবিসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

বৈঠকে ডিবিসিসিআইয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন মামুন, প্রথম সহ-সভাপতি মো. শহিদ আলম, পরিচালক মো. সায়েম ফারুকী, পরিচালক শাহ্ মো. রাফকাত আফসার ও পরিচালক আবদুল হাকিম সুমন।

এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা ও সম্ভাবনাকে জোরদার করতে সরকার সবসময়ই বেসরকারি খাতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলে মন্তব্য করেন।


ইউপি ইস্যুতে কাস্টমস বন্ড ব্যবস্থাপনা সিস্টেম ব্যবহারে বাধ্যতামূলক হচ্ছে: এনবিআর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্ড ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে কাঁচামাল ব্যবহার অনুমতি (ইউপি) ইস্যু প্রক্রিয়ায় ‘কাস্টমস বন্ড ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (সিবিএমএস)’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর জানায়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার সিবিএমএস এর মাধ্যমে তিনটি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে ২৪টি মডিউলের সাহায্যে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে ইউপি মডিউল চালু থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো ম্যানুয়ালি ইউপি গ্রহণ করছে। সফটওয়্যারটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক না হওয়ায় ১০ মাস পরও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে সিবিএমএস-এ প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সংশোধন করে এটিকে আরও ব্যবহারবান্ধব করা হয়েছে বলে এনবিআর জানিয়েছে।

রোববার এনবিআর আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ শীর্ষক আলোচনায় গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, অ্যাক্সেসরিজ, টেক্সটাইল এবং লেদারগুডস খাতের শীর্ষ সংগঠন-বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি(বিজেএপিএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন(বিটিএমএ) এবং বাংলাদেশ লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (এলএফএমইএবি)-এর প্রতিনিধিরা বিডিডব্লিউসি ইস্যু সংক্রান্ত সেবায় সিবিএমএস বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে একমত হন। আলোচনায় আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সকল ইউপি সেবা সিবিএমএস-এর মাধ্যমে গ্রহণ ও প্রদানের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ বিষয়ে এনবিআর শিগগিরই একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করবে।

এনবিআরের মতে, সিবিএমএস বাধ্যতামূলক হলে সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, দ্রুততা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, বন্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে ও কম খরচে সেবা পাবে, কাঁচামালের ইনপুট-আউটপুট হিসাব স্বয়ংক্রিয় হবে, ম্যানুয়াল কাগজপত্র জমার জটিলতা দূর হবে এবং বন্ড সংক্রান্ত বিবাদ কমে আসবে।

এনবিআর জানিয়েছে, বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশনের আওতায় এলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। ধাপে ধাপে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সকল কার্যক্রম পূর্ণ অটোমেশনে আনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।


সাড়ে চার মাসে প্রবাসী আয় সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বরের ১৫ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫২ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)।

রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরেও প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। মাসের ১৫ দিনে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের নভেম্বরের ১৫ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল ১২৩ কোটি ৭০ হাজার ডলার।

চলতি অর্থবছরের শুরুর চার মাসের মধ্যে জুলাইয়ে এসেছিল ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার; আগস্টে এসেছে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার; সেপ্টেম্বর মাসে এসেছিল ২৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার এবং অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। প্রতি মাসেই আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে।

চলতি বছরের চার মাস ১৫ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১১.৬৭ বিলিয়ন ডলার, বা এক হাজার ১৬৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ১৪.৭০ শতাংশ বেশি। আগের বছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

চলতি নভেম্বর মাসের ১৫ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১০০ কোটি ডলার এবং দেশে ব্যবসারত বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার।


লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ৩০ বছরের পিপিপি চুক্তি সই কাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) কাল সোমবার ডেনমার্কভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় সমন্বিত লজিস্টিকস কোম্পানি মায়ের্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বিভির সঙ্গে ৩০ বছরের অপারেশন-চুক্তি (কেপিআইর ভিত্তিতে বর্ধিতকরণসহ) সই করছে।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) কাঠামোর আওতায় লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) নির্মাণ, অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য এই কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চুক্তি সই অনুষ্ঠানটি রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গ্যান্ডলোসে হ্যানসেন এবং ঢাকায় ডেনমার্ক দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার।

সিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি (সিসিইএ) সিপিএ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে কনসেশন চুক্তির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের বন্দর খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এতে সরকারের মূলধনী ব্যয় কমবে।’

তিনি জানান, বন্দরটির মালিকানা থাকবে সিপিয়ের হাতে, তবে নির্মাণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে এপিএম টার্মিনালস ও তাদের স্থানীয় যৌথ উদ্যোগ-অংশীদার।

বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনাকারী এপিএম টার্মিনালস বিশ্বব্যাপী শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটরদের অন্যতম, এবং বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের তালিকায় বিশ্বের সেরা ২০টি বন্দরের মধ্যে ১০টিতেই তারা কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় বিস্তৃত অভিজ্ঞতার আলোকে এ প্রকল্প বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতকে এলডিসি-উত্তর সময়ে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতাসম্পন্ন অবস্থানে পৌঁছে দেবে।

নতুন সবুজ-নীতিনির্ভর বন্দরটি বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ আকারের কনটেইনারবাহী জাহাজ গ্রহণ করতে পারবে। এর ফলে পরিবহন ব্যয় কমবে এবং বৈশ্বিক বাজারে সরাসরি সংযোগ বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, এটি রাজস্ব ভাগাভাগিভিত্তিক কনসেশন হওয়ায় প্রকল্পটি সরকারের মূলধনী ব্যয় কমিয়ে বিদেশি মুদ্রায় স্থায়ী রাজস্ব তৈরি করবে। এছাড়া প্রথমবারের মতো সার্বক্ষণিক (২৪-৭) বন্দর পরিচালনা ও রাতের নৌযাত্রা সুবিধা চালু হবে।

চুক্তি অনুযায়ী এপিএম টার্মিনালস বিভি প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে আসবে যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় ইকুইটি বিনিয়োগ।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী হিসেবে এপিএম টার্মিনালসের আগমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং লজিস্টিকস, শিল্প ও সংশ্লিষ্ট খাতে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।

নতুন টার্মিনালটি বছরে ৮ লাখের বেশি টিইইউ সামাল দিতে সক্ষম হবে-যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি।

তিনি জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে টার্মিনালটি চালু হলে বর্তমান বন্দরের জট কমবে এবং দ্রুত বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

উচ্চ প্রবাহ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এলসিটি প্রকল্প সিপিয়ের রাজস্ব বাড়াবে। এছাড়া এপিএম টার্মিনালসের বিভিন্ন কর এবং সামুদ্রিক সেবা থেকে বাড়তি আয় হবে।

নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে সরাসরি ৫০০৭০০ জনের কর্মসংস্থান হবে, পাশাপাশি হাজারও পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে কনস্ট্রাকশন, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিংসহ বিভিন্ন খাতে।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশ মানদণ্ড প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে এবং শ্রমিকদের কল্যাণ বাড়বে।

উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো আধুনিক করবে এবং স্থানীয় প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

তিনি বলেন, দ্রুততর জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড, উন্নত কনটেইনার ডুয়েল টাইম কমানো, অপেক্ষার সময় হ্রাসের মাধ্যমে লজিস্টিকস ব্যয় কমে যাবে। ফলে বিশেষত রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাত ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।

এপিএম টার্মিনালসের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থানীয় প্রকৌশলী, কারিগরি কর্মী ও ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে, যা সামগ্রিক লজিস্টিকস খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

তিনি জানান, বছরে ৮ লাখের বেশি টিইইউ সক্ষমতা দেশের অভ্যন্তরীণ ডিপো, কোল্ড চেইন, শিল্পপার্ক এবং অন্যান্য করিডোরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াবে।

সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রকল্পটি শক্তি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু মানদণ্ড অনুসরণ করবে। এতে কার্বন নিঃসরণও কমবে।

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের এনডিসি লক্ষ্য অর্জন ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে।

পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জটিল প্রকল্প পরিচালনার ইতিবাচক বার্তা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে যাবে। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমবে, বিনিয়োগকারী বাড়বে এবং জ্বালানি, পরিবহন ও সামাজিক অবকাঠামোতেও নতুন পিপিপি প্রকল্প এগিয়ে যাবে।


সরকারের ঋণ ছাড়াল ২১ লাখ কোটি টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব আয়ের দুর্বল প্রবৃদ্ধি, উচ্চ উন্নয়ন ব্যয় এবং বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া ধারাবাহিক ঋণের কারণে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মোট সরকারি ঋণ ২১ ট্রিলিয়ন টাকা বা ২১ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। অর্থ বিভাগের সদ্য প্রকাশিত ঋণ বুলেটিন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২১.৪৪ ট্রিলিয়ন টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের ১৮.৮৯ ট্রিলিয়ন টাকার তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঋণের চাপ ভবিষ্যৎ বাজেট ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বুলেটিনের তথ্য বলছে, মোট ঋণের প্রায় ৪৪.২৭ শতাংশই বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৯.৪৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪.২০ ট্রিলিয়ন টাকা—মোট ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ, পাঁচ বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, যা ঋণ ব্যবস্থাপনায় নতুন হিসাবের ঝুঁকি তৈরি করছে।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের ১০.৭৬ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে ১১ শতাংশ বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ১১.৯৫ ট্রিলিয়ন টাকায়। ২০২১ সালে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৭.২২ ট্রিলিয়ন টাকা, যা তুলনামূলকভাবে ধীরগতির প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিলেও বৈদেশিক ঋণের তুলনায় বৃদ্ধির হার অনেক কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ ঋণ বৃদ্ধি ব্যাংকিং খাতে তারল্যচাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঋণের এই ধারা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন কোভিড-পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া বাজেট সহায়তা এবং বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের ওপর বড় ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋণ বৃদ্ধি সবসময় নেতিবাচক নয়, যদি তা উৎপাদনশীল খাতে সঠিকভাবে কাজে লাগে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করে। তবে ঋণের ব্যবহার অদক্ষতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং দুর্বল রাজস্ব কাঠামো দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান ঋণ-জিডিপি অনুপাত এখনো ঝুঁকির সীমা অতিক্রম করেনি বলে সরকার দাবি করলেও বিশ্লেষকদের মতে, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাছাই এবং দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি। নতুবা এর প্রভাব পড়তে পারে বাজেট ঘাটতি, মুদ্রা স্থিতিশীলতা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলায়।


চীনা বিনিয়োগে রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ার বড় সুযোগ দেখছেন সিইএএবি সভাপতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনা বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও শিল্প সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দ্রুতই রপ্তানিমুখী শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএএবি)-এর সভাপতি হান কুন। বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ এবং তৈরি পোশাকসহ মূল খাতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নকে শক্তিশালী করেছে।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে, যার ৫৪ শতাংশ চীনা কোম্পানির। ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭–২৮ গিগাওয়াটে, যা শিল্পায়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

হান কুন বলেন, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমব্যয়, উন্নত অবকাঠামো এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এখন রপ্তানিমুখী শিল্পকেন্দ্র হওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তিনি প্রস্তাবিত চীন–বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (এফটিএ) এই রূপান্তরের জন্য জরুরি বলে উল্লেখ করেন।

তার মতে, ট্যারিফ ও নীতি কাঠামো সমন্বিত হলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খাত বাংলাদেশে স্থানান্তর করে বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি করতে পারবে। চীনের বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৩০ শতাংশ, যার একটি অংশ বাংলাদেশে আসলে দেশের রপ্তানি সক্ষমতা আরও বাড়বে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, নীতিগত স্থিতিশীলতা ও অনুমানযোগ্যতা বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত। নীতি হঠাৎ পরিবর্তন হলে বড় প্রকল্পগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, যা বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

হান জানান, বর্তমানে সিইএএবির প্রায় ২৫০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের অর্ধেক অবকাঠামো এবং প্রায় ৩০ শতাংশ আরএমজি ও টেক্সটাইল খাতে। এসব প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং রপ্তানিমুখী সাপ্লাই চেইন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ভবিষ্যতের সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাত ছাড়াও নতুন শক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি, লজিস্টিকস ও উৎপাদন খাতে চীনা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী

তিনি বলেন, “সঠিক নীতিগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম রপ্তানি ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সব উপাদানই ধারণ করে।”


বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

বিসিআই’র কর্মশালায় বক্তারা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বলে এক কর্মশালায় মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

রাজধানীর বিসিআই বোর্ডরুমে ‘ডব্লিউটিও রুলস এন্ড ট্রেড চ্যালেঞ্জেস ফর বাংলাদেশ এবং এনসিউরিং ফেয়ার কম্পিটিশন ইন বিজনেস : বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ এন্ড গ্লোবাল ইনসাইটস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তারা শনিবার এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এ কর্মশালার আয়োজন করে।

বিসিআই পরিচালক ড. দেলোয়ার হোসেন রাজার সভাপতিত্ব কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক ও ট্রেইনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক ও এফবিসিসিআই’র সাবেক প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাসের। বিসিআই’র সদস্য ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৬ জন প্রতিনিধি এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ড. দেলোয়ার হোসেন রাজা বলেন, দেশের শিল্পায়ন, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আইন ও নীতিমালা বিষয়ে বিসিআই নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ আয়োজন করছে। আজকের এই কর্মশালা সেই ধারাবাহিকতার অংশ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিসিআই পরিচালক মো. জাহাঙ্গির আলম বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। বিচক্ষণতা, সুশাসন, দক্ষতা এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতা নির্ভর ব্যবসায়িক পরিবেশই ভবিষ্যতের শক্তিশালী বাংলাদেশ নির্মাণে সহায়ক হবে।

উদ্বোধনী পর্বের পর প্রথম সেশনে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাসের ‘এনসিউরিং ফেয়ার কম্পিটিশন ইন বিজনেস’ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তিনি ন্যায্য প্রতিযোগিতা, বাজারে প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহার রোধ, অযৌক্তিক মূল্য-অনুশীলন, কার্টেল ও অ্যান্টি-কম্পিটিটিভ আচরণ প্রতিরোধ, সুশাসন এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে প্রতিযোগিতা আইন, বাজার পর্যবেক্ষণ ও নৈতিক ব্যবসায়িক আচরণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি গ্রাহকের সক্রিয় ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

দ্বিতীয় সেশনে ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ‘ডব্লিউটিও রুলস এন্ড ট্রেড চ্যালেঞ্জেস ফর বাংলাদেশ’ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি ডব্লিউটিওর গুডস, সার্ভিসেস এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান এবং এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে এসব রুলস বাংলাদেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা তুলে ধরেন।

কর্মশালার শেষাংশে অংশগ্রহণকারীদের মতামত গ্রহণ করা হয় এবং বিসিআই পরিচালক ড. দেলোয়ার হোসেন রাজা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।


যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো আরও ৬১ হাজার টন গম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে নগদ ক্রয় চুক্তি নম্বর জে টুজি ওয়ান এর অধীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬০ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন গম নিয়ে এম ভি উইকোটাটি নামের জাহাজটি মোংলা বন্দরের বহিঃনোঙরে পৌঁছেছে।

শনিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু করছে। এই চুক্তির আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে। এর প্রথম চালানে গত ২৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম এবং ৩ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে দ্বিতীয় চালানে ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম দেশে পৌঁছেছে। এটি আমদানিকৃত গমের তৃতীয় চালান।

চুক্তি মোতাবেক ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গমের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনটি চালানে মোট ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৬ মেট্রিক টন গম দেশে পৌঁছেছে।

জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


মালয়েশিয়ায় পেনাং রোডশোতে বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর সম্ভাবনা প্রদর্শন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী রোডশোতে বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধমান সেমিকন্ডাক্টর সক্ষমতা তুলে ধরেছে।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করা, বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং মালয়েশিয়ার সরকার, শিল্প ও শিক্ষা খাতের অংশীদারদের কাছে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালু চেইনে বাংলাদেশের উদীয়মান অবস্থান তুলে ধরার লক্ষ্যে এ রোডশো আয়োজন করা হয়।

শনিবার বাংলাদেশ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআইএ) ১১-১৩ নভেম্বর পেনাংয়ে ‘বিএসআইএ রোডশো ২০২৫’ আয়োজন করে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পেনাং রাজ্যের ডেপুটি চিফ মিনিস্টার জগদীপ সিং দেও প্রধান অতিথি হিসেবে গত ১১ নভেম্বর স্থানীয় একটি হোটেলে ‘বিএসআইএ রোডশো ২০২৫’-এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মনজুরুল করিম খান চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুস্তাফা হোসেন বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এবং মালয়েশিয়ার সাথে এ বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের সুযোগের একটি উপস্থাপনা তুলে করেন।

বাংলাদেশের ছয়টি সেমিকন্ডাক্টর শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের প্রতিষ্ঠানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

রোডশোর অংশ হিসেবে বিএসআইএ সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১২ থেকে ১৩ নভেম্বর পেনাং-এর একাধিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্প পরিদর্শন করেন।

এই আয়োজন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।


ব্যাংকিং কেবল টাকার লেনদেন নয় বিশ্বাস, সম্পর্ক ও আনন্দের বিনিময়

ব্যাংকিংয়ে আনন্দ ফিরিয়ে আনা জরুরি : ব্যাংকার রকিবুল হাসান সবুজ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

অর্থনীতির হিসাব-নিকাশের জগৎ সাধারণত নিরাবেগ। কিন্তু সেই গাণিতিক শুষ্কতায় প্রাণের স্পর্শ এনে দিয়েছেন ব্যাংকার রকিবুল হাসান সবুজ। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যাংকিং কেবল টাকার লেনদেন নয়; এটি বিশ্বাস, সম্পর্ক ও আনন্দের বিনিময়।

এনআরবিসি ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় বসে তিনি গড়ে তুলেছেন এক নতুন ধারার ব্যাংকিং-‘আনন্দময় ব্যাংকিং’। যেখানে কর্মী ও গ্রাহক উভয়েই অনুভব করেন, ব্যাংক মানেই কেবল হিসাব নয়, এটি এক আস্থা আর আনন্দময় লেনদেনের উৎসব। ২০২২ সালে এনআরবিসি ব্যাংক তাকে ‘সেরা পারফরমার’ হিসেবে সম্মানিত করে- যা শুধু তার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং ব্যাংকিংয়ে সৃজনশীলতার জয়গান হিসেবে ধরা দেয়।

এনআরবিসি ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক ও এরিয়া ইনচার্জ রকিবুল হাসান সবুজ ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্যাংকিংকে সহজ, আন্তরিক, মানবিক ও সৃজনশীলতার আঙ্গীকে ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কাজ করেছেন অনেক। কিছু কাজ ছাপিয়ে গেছে চারকোণা টেবিলের সীমানাকে।

ব্যাংকিংকে আনন্দ ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে রূপ দিয়েছেন, তার মূল দর্শন কী? এমন প্রশ্নের জবাবে রকিবুল হাসান সবুজ বলেন, ব্যাংকিংকে আমি কখনও শুধু সংখ্যার খেলা ভাবিনি। প্রতিটি লেনদেনের পেছনে আছে একজন মানুষ, তার স্বপ্ন, তার পরিশ্রম। আমার কাছে ব্যাংক মানে সেই মানুষদের বিশ্বাসের কেন্দ্র। তাই আমি চেয়েছি-গ্রাহক যখন ব্যাংকে আসেন, তখন যেন তিনি কোনো ‘প্রতিষ্ঠান’-এ নয়, বরং ‘বিশ্বাসের জায়গা’-য় আসছেন বলে অনুভব করেন। আমাদের ব্যাংকিং হতে হবে উপভোগ্য, হৃদয়স্পর্শী। এই ভাবনা থেকেই শুরু করেছি ‘আনন্দময় ব্যাংকিং’।

এই ব্যাংকার বলেন, আমার সবচেয়ে বড় চেষ্টা ছিল ব্যাংককে সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করা। যেমন করিমগঞ্জের প্রান্তিক বাঁশ-বেত কারিগরদের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা বসন্তের প্রথম দিনে ঋণ দিয়েছি। ওটা কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, ছিল এক ‘সম্মান’ শত বছরের ঐতিহ্যের প্রতি।

তিনি বলেন, বিজয় দিবসে আমরা আয়োজন করেছিলাম ‘অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতিক টাকার ইতিহাস’ শীর্ষক এক আয়োজন। যেখানে শিক্ষার্থীরা শিখেছে, অর্থনৈতিক সক্ষমতাও স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত।

ঈদের দিনে আমরা ব্যাংকারদের ঈদ বোনাসের অংশ জমিয়ে পথশিশু ও বৃদ্ধদের নতুন টাকার সেলামী দিই। দুর্গাপূজায় প্রতিটি গ্রাহককে লাল পদ্ম উপহার দিয়ে আমরা সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা ছড়িয়েছি বলে উল্লেখ করে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, এসব উদ্যোগের প্রতিটি ছিল আমাদের কাছে ‘লেনদেন নয়, সম্পর্ক গড়া’-র প্রক্রিয়া।

‘আনন্দময় ব্যাংকিং’ করতে গিয়ে বাঁধা এসেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকার সবুজ বলেন, অবশ্যই কিছু প্রশ্ন এসেছিল শুরুতে। কিন্তু যখন সহকর্মীরা দেখলেন-গ্রাহকদের মুখে হাসি, কর্মপরিবেশে উচ্ছ্বাস, সমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া-তখন সবাই একে নিজেদের উৎসব হিসেবে গ্রহণ করলেন। আজ ব্যাংকও আমাদের এসব উদ্যোগকে প্রশংসা করছে। আসলে, আমি সবসময় বলি-যদি উদ্দেশ্য ভালো হয়, তবে প্রতিটি উদ্যোগই তার পথ খুঁজে নেয়।

ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ফেরানো নিয়ে রকিবুল হাসান সবুজ বলেন, এখন আস্থা হারাচ্ছে মানুষ-প্রতিষ্ঠানের প্রতি, সম্পর্কের প্রতিও। এই সময়ে ব্যাংকগুলো যদি বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, তাহলে সমাজে এক নতুন ভারসাম্য তৈরি হবে। মানুষ তখন আবার বলবে, ‘ব্যাংক মানে নিরাপত্তা, ব্যাংকার মানে বিশ্বাস।’ এই আস্থা ফিরে আসাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমি মনে করি, পারস্পরিক মূল্যবোধের ব্যাংকিংই তার একমাত্র পথ।

নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে এই ব্যাংকার বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষেরই অর্থনৈতিক অস্তিত্ব আছে। ডিম বিক্রেতা, চা বিক্রেতা, রিকশাচালক-তাদের লেনদেনই তো স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া মানে শুধু টাকা জমা নয়, আত্মসম্মান জমা রাখা। যেদিন প্রথম এক ডিমওয়ালা নিজের নামে ব্যাংক হিসাব খুলল, তার চোখের উজ্জ্বলতা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে-ব্যাংক শুধু টাকা রাখার জায়গা নয়, এটি আস্থার জায়গা।

এনআরবিসি ব্যাংকের ‘সেরা পারফরমার’ নিয়ে রকিবুল হাসান সবুজ বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অনুপ্রেরণা। কিন্তু আমি এটিকে ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে দেখি না-এটি পুরো টিমের স্বীকৃতি। আমার সহকর্মীরা যে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও আনন্দ নিয়ে কাজ করে, এই পুরস্কার আসলে তাদেরই প্রাপ্য। আর ব্যাংকিংয়ে সৃজনশীল আনন্দ ফিরিয়ে আনার যে চেষ্টা করেছি, এটি হয়তো সেই যাত্রার এক সুন্দর স্বীকৃতি।


banner close