এবারের বাজেটকে সুচিন্তিত, জনকল্যাণমুখী ও সাহসী বলে মন্তব্য করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
সংগঠনের সভাপতি খলিলুর রহমান সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অর্থমন্ত্রী ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব, সুশাসন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সদিচ্ছায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এ বাজেট বাস্তবায়ন সহায়ক হতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়মিত কর প্রদান করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব প্রদান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু বিশ্ব অর্থনীতিতে রপ্তানি বাণিজ্য মন্দা, তাই দেশের বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রদানে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে তার জন্য সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ঘাটতি মোকাবিলায় বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার দাবি জানাই।’
যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনিক গ্রুপ ও নতুন ভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীর মেয়ে নাদিহা আলী (৩৭) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিমানবন্দরের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। নাদিহা আলী মো. নূর আলী ও সেলিনা আলী দম্পতির দ্বিতীয় কন্যা। যুক্তরাষ্ট্রে জানাজার পর তার দাফন সেখানেই সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
ইউনিক গ্রুপের এক বার্তায় নাদিহা আলীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। বার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
যতবারই এ দেশে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ততবারই দেখা গেছে একশ্রেণির মানুষ হইহই, রইরই, গেল গেল সব গেল, শিক্ষা গেল, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গেল- এমন সব কথা বলে রাস্তায় মিছিল, সভা-সমাবেশ, সেমিনার করে আসছে। চলতি বছরে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার আগে এবং পরেও চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেওয়ার নানা উদ্যোগ দেখা গেছে। কোথাও অভিভাবকরা, কোথাও শিক্ষকরা, কোথাও বা বিশেষজ্ঞ নামেও নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। নতুন এ শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আগামী নতুন বছরে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার, ধর্মীয় উন্মাদনা, মিথ্যাচার ইত্যাদি ছড়িয়ে দিয়ে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক তথা গোটা জাতিকেই যেন জাগিয়ে তোলা হচ্ছে, বলার চেষ্টা হচ্ছে আপনারা কেন ঘুমিয়ে আছেন, প্রতিবাদ করুণ ইত্যাদি ইত্যাদি। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও অনেকে শিক্ষাক্রমকে অপপ্রচারের শিখণ্ডী বানাতে মাঠে নেমে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন সব আজগুবি কথা প্রচার করা হচ্ছে যা উচ্চারণ করাও শোভনীয় নয়।
শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হতেই পারে; কিন্তু সেটি পাঠ্য বিষয়ের বিভিন্ন সূচি ধরে ধরে গঠনমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করেই সাধারণত করা হয়ে থাকে। সেসবের চেষ্টা দেখি না। যা কিছু বলা হয়, তা গড়ে হরিবোল বললেও যেন কম বলা হবে। এভাবে তো কোনো শিক্ষাক্রমকে মূল্যায়ন করা যায় না। শিক্ষাক্রম হচ্ছে শিক্ষার দর্শন, হৃদপিণ্ড যা একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞই বোঝেন। যেমন- একজন হার্ট স্পেশালিস্ট ডাক্তার মানুষের হৃদপিণ্ড সম্পর্কে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষাশেষে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন; কিন্তু আমাদের এখানে পাঠ্যবই নিয়ে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে অনেকেই মাঠে নেমে পড়েন। অনেকের গাইড বইয়ের ব্যবসা লাটে ওঠার আশঙ্কা থেকে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে ঘৃতাহুতি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। আবার অনেক শিক্ষক নিজেদের লাভালাভ হিসাব করেও এর বিপক্ষে অবস্থান নেন। বর্তমান শিক্ষাক্রম নিয়ে কোনো কোনো শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পাঠদানের পরিবর্তে বই ছুড়ে মেরে শিক্ষামন্ত্রীকে গালাগাল করছেন এমন কথাও আমি শুনতে পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে গোটা বিষয়টাই আমার কাছে খুব বেশি অবাক হওয়ার মতো নয়। কারণ ’৭২ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন থেকে হালের নতুন শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাক্রম নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের নানা অবস্থান আমার দেখা বিষয়, বোঝারও বিষয়। স্পষ্টই বুঝতে পারি যে শিক্ষাক্রম নিয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের বক্তব্যে থাকে গঠনমূলক সমালোচনা। বাকি যারা উঠেপড়ে সমালোচনা করেন তাদের নানান জনের নানা উদ্দেশ্য, স্বার্থ, অজ্ঞতা এবং দায়িত্ব এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটি কোনোকালেই জাতীয় শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাক্রম দ্বারা গঠিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। ফলে শিক্ষাব্যবস্থাই নানা অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত থেকেছে চিরকালই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শুরুতেই প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন। শিক্ষাকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্বের মধ্যে নিয়ে আসেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ’৮০ সালের মধ্যেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এরপর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে আসা। কিন্তু কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার পরই নানা গোষ্ঠী নানা অপবাদে এমন একটি শিক্ষানীতিকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল যারা এর ভেতরের দর্শনটি বুঝতে অক্ষম ছিল। তাদেরই উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সফল হলো ’৭৫-এর পর। দেশে তখন থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন ধারার ও নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে যার মতো করে গড়ে তোলা শুরু করেছে। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এমন হালচাল হলে সেই জাতি কোনোভাবেই শিক্ষার দর্শন দ্বারা গঠিত হতে পারে না। আমরাও সে কারণে হতে পারিনি। আমাদের মধ্যে এতসব বিভাজন সৃষ্টির মূলেই হচ্ছে ‘নামে শিক্ষাব্যবস্থা, বাস্তবে ব্যবসা-বাণিজ্য আর অদক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির অব্যবস্থা’। সেটিই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভেতরের আসল রূপ। আমাদের কোনো স্তরেই শিক্ষাক্রম ঠিক নেই। যে যার মতো করে প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ছে, বই-পুস্তক ঠাসা আর পরীক্ষার জাঁতাকলে শিক্ষার্থীদের পিষ্ট করার এক ভয়ংকর তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থায় জাতির কয়েকটি প্রজন্মও তেমনি কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সত্যিকার দক্ষ, জীবন, কর্ম, জ্ঞান ও সৃজনশীলতায় বেড়ে ওঠা শিক্ষিত মানব গড়ে তুলতে আমরা পেরেছি বলে দাবি করতে পারব না। কারণ শিক্ষার দর্শনই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। শিক্ষার দর্শন হচ্ছে কি পড়ব বা পড়াব, কেন পড়ব বা পড়াব, পড়ার অর্জনটা কী হবে বা হবে না- সেটি হাতেনাতে দেখতে পাওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা কি দাবি করতে পারব যে আমাদের এ ৫ দশকের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা যুগোপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পেরেছি? যদি পারতাম তাহলে প্রতিবছর হাজার হাজার ধনী ঘরের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে কেন? একবারও কি আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি? আমাদের করণীয় কী সেগুলো সম্পর্কে কতজনই বা আমরা অবহিত? কিন্তু যখনই দেশে শিক্ষায় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই বিরোধিতাটা প্রবলভাবেই আসে, বিরোধিতাটা যদি গঠনমূলক হতো তাহলে আপত্তির কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু গোটা বিরোধিতাটাই যখন ব্যঙ্গাত্মক, বিদ্রূপাত্মক এবং নানা ধরনের শ্লেষ, মনগড়া, ধর্মকে মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে, তখন বুঝতেই হবে এত বছরের আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে যারা বের হয়ে এসেছেন তাদের বেশির ভাগেরই শিখনফল ব্যঙ্গবিদ্রূপ, তামাশা, অপরাজনীতি ও বিভ্রান্ত করতে যতটা ‘পারদর্শিতা’ অর্জন করেছে, নীতি-নৈতিকতা, যুক্তিবাদী জ্ঞানবিজ্ঞানে দক্ষ ও সৃজনশীল মানুষরূপে গড়ে উঠতে অক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। কারণ সেই শিক্ষাক্রমটাই এতদিনকার শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে যুক্ত করা হয়নি। একটা উদাহরণ দিই। শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়ে ছোট দেশ হলেও নানাভাবে তারা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে গেছে। দেশের প্রায় শতভাগ মানুষই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। সে কারণেই লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গেল বছর তাদের দেশে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিল। এমনকি সরকারপ্রধানের প্রাসাদও দখল করেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে কেউ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কিছুই ধ্বংস করেনি। এর মানে কী? আমরা কি এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেও কোনো ফল বের করতে পারব? এ ধরনের ঘটনা যদি বাংলাদেশে ঘটত তাহলে কি হতো? ভাঙচুর, লুটপাট, মারামারি, কাটাকাটি, কি না হতো? শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের মধ্যে এই পার্থক্যটি টানার কারণ হচ্ছে সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ কিছু নীতি-নৈতিকতা, যুক্তি ও বিবেকবোধ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেসবের চর্চা কোথায়? এখানেই বোঝা যায় শিক্ষাক্রমের পার্থক্যের মধ্যেই ভিন্ন জাতি গঠনের কারণ নিহিত থাকার।
বর্তমানে যেই শিক্ষাক্রম সরকার স্কুলপর্যায়ে প্রবর্তন করেছে সেটিকে এক কথায় জীবন, কর্ম ও জ্ঞানমুখী জনশক্তি তৈরি করার আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। আমাদের আগের সৃজনশীলব্যবস্থা কিছু কিছু সফলতা দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। পরীক্ষা আর মুখস্থবিদ্যার পুরাতন পদ্ধতির মধ্যেই আমাদের শিক্ষার্থীরা আটকে ছিল। শিক্ষার্থীরা শেষ বিচারে পরীক্ষার্থীই থেকেছে। পরীক্ষার জন্য তাদের গাইডবই ক্রয় করতে আর টিউটরের কাছে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীদের ওপর মুখস্থবিদ্যার চাপ জগদ্দল পাথরের মতো চেপেছিল। গতানুগতিক শিক্ষায় বিশ্বাসী শিক্ষক ও অভিভাবকরা যুগযুগ ধরে এমনটি দেখে এসেছেন, শিখে এসেছেন। তারা জিপিএ-৫ পাওয়ায় সন্তানের ‘উজ্জ্বল’ ভবিষ্যৎ দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে কয়জন সেই ভবিষ্যতের মালিক হতে পেরেছেন ? আমাদের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাও ছিল গতানুগতিক। শ্রেণিপাঠ, মুখস্তবিদ্যা আদায় করা, পরীক্ষার মূল্যায়নও সেভাবে নির্ধারণ করা হতো। আর এর জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর পাঠ্যবইয়ের চেয়ে গাইডবই, শ্রেণিপাঠের চেয়ে কোচিং সেন্টার বা শিক্ষকের বাড়ি বাড়ি কোচিং নেওয়ার দৌড়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। এটি কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীর জ্ঞান, জীবন ও শিক্ষার মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে না। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা এখন পৃথিবীর বেশির ভাগ রাষ্ট্রেই অচল হয়ে গেছে। আমরা যুগযুগ ধরে সেটাকেই নানা নামে অব্যাহত রেখেছি। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তাদের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা সেভাবে গড়ে উঠছে না। অথচ দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গড়ে উঠেছে। প্রতিবছরই পাবলিক পরীক্ষায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী নেই এমন খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং শিক্ষকতার পেশায় নিজেদের যুক্ত রাখার প্রবণতায় বিরাট ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদের একটা বিরাট অংশই আধুনিক শিক্ষাক্রমের সঙ্গে পরিচিত নন। ফলে করোনাকালে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষাক্রম বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু করোনাকাল আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে আগের বোধ, বিশ্বাস আর অভ্যস্ততার মধ্যে গুটিয়ে থাকলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে টিকে থাকা যাবে না। পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতায় আসতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম কেবলই প্রবর্তিত হয়েছে, হচ্ছে। এর পরিমার্জন, পরিবর্ধন এবং উন্নততর করার আবশ্যকতা থাকতেই পারে; কিন্তু এটিকে বাতিল করে আগের মুখস্থ বিদ্যা এবং গাইডবই, টিউশননির্ভর শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার যারা দাবি করেন তাদের উদ্দেশ্য শিক্ষা নয়, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা হতে পারে। যে শিক্ষকরা সেখানে ফিরে যেতে চান, তারাও একই দোষে দোষী। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে; কিন্তু প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করা প্রতিটি শিক্ষকেরই দায়িত্ব। কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না যে আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের অনেক শিক্ষকেরই পঠনপাঠনের নিয়মিত অভ্যাস নেই। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে নিজেকে আপডেট রাখা ও শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতার অভাব রয়েছে। অথচ শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ এবং নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী হাতেকলমে শেখন, মূল্যায়ন এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমেই যুগের সঙ্গে যেমন তাল মেলাতে পারেন, শিক্ষার্থীদেরও গড়ে তুলতে অবদান রাখতে পারেন। অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করা নয় বরং সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়া, আস্থা রাখা এবং তাদের জীবন, কর্ম ও জ্ঞান দক্ষতায় গড়ে তোলার শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রতি আস্থাশীল হতেই হবে। অপপ্রচার, গুজব, ব্যঙ্গবিদ্রূপ শিক্ষার সঙ্গে যায় না, জীবনের সঙ্গেও নয়। এটাই শিক্ষার দর্শন।
লেখক: ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
রিজার্ভ নিয়ে এবার সুখবর দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ডিসেম্বর মাসে দেশের রিজার্ভ কমবে না, বরং কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।
গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন।
রিজার্ভ না কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন, বিদেশি ঋণ ও সহায়তার বড় অঙ্ক আসবে ডিসেম্বরে। জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বরেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সহায়তা ও ঋণ বাবদ ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই প্রতিদিনের ডলার বিক্রির চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পুরো পৃথিবীতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লে দাম বাড়তে থাকে প্রায় সব ধরনের পণ্যের। পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে থাকলে প্রয়োজন পড়ে বাড়তি আমদানির। সে সময় থেকেই আমদানির চাপ সামাল দিতে ডলারের সংকট তৈরি হয়। যদিও সে চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় ডলার বিক্রি করেছে। তাতে একসময়ের ৪৮ বিলিয়ন ডলারে থাকা রিজার্ভ কমে এখন ২৫ বিলিয়নের ঘরে এসেছে।
সম্প্রতি ডলারের দাম দুই দফায় কমানো হয়েছে। বিদেশ থেকেও ভালো রেমিট্যান্স আসছে। তারপরও হুন্ডিসহ নানা কারণে অস্থিরতা কমছে না ডলারের বাজারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রিজার্ভ শক্তিশালী হলে ডলারের বাজারের অস্থিরতাও কিছুটা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসে এডিবি থেকে রিজার্ভে বাজেট-সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যুক্ত হবে। এ ছাড়াও ডিসেম্বরের ১২ তারিখ আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাব সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদন পেতে পারে। সে দিন অনুমোদন পেলে পরদিনই তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পাবে আরও ৬৮ কোটি ডলার। সব মিলে ১০৮ কোটি ডলার বা এক বিলিয়নের খানিকটা বেশি অর্থ যোগ হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে। আর এতেই রিজার্ভ কমার পরিবর্তে বরং কিছুটা বাড়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন ছয় থেকে আট কোটি ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের প্রয়োজনে জ্বালানি ও রাসায়নিক সার কেনার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। জানা যায়, এ কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বিক্রি করতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৫ ডিসেম্বর দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে। তবে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এ জন্য এডিবি ও আইএমএফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বর্তমান সময় বিবেচনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ঢাকা সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বদর আই আলবদরের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার রাজধানীর লে মেরিডিয়েন হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দূরদর্শী নেতার মধ্যে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমিন আহমেদ, চেয়ারম্যান, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা, হাসান আহমেদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা এবং মি. কস্তাস, জেনারেল ম্যানেজার, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা।
বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ প্রকাশ করে সৌদি আরব থেকে ৩১ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে। তারা সৌদি আরবের বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত দেশে চেইন হোটেল, উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক অঞ্চল, জ্বালানি এবং রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেক্টরে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জেনারেল ইলেকট্রিক, ম্যারিয়ট, কোহলবার্গ ক্রাভিস রবার্টস- কেকেআর, নেব্রাস পাওয়ার (কাতার), এলআইসি ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য বিশ্বখ্যাত সংস্থার সঙ্গে তার অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্য রয়েছে।
সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো চেইন হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বাংলাদেশে বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্ভাব্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- ম্যারিয়ট হোটেল প্রকল্প, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, হেইলিবেরি স্কুল এবং অন্যান্য বড় মাপের অবকাঠামো প্রকল্প।
বৈঠকে বদর আই আলবদর ড. সরাফাতকে সম্ভাব্য অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সৌদি আরবে আরও বাণিজ্য সহযোগিতা এবং সম্প্রসারণকে সহজতর করার লক্ষ্যে বিশ্বকাপ মৌসুমে আসন্ন এক্সপো ২০৩০ ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে কৌশল নির্ধারণ এবং প্রকল্পগুলো প্রদর্শন করতে উভয় পক্ষই পারস্পরিকভাবে সম্মত হয়েছে। ড. সরাফাত এ অঞ্চলে হোটেল এবং অবকাঠামোগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে সৌদি কোম্পানিগুলির সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক ব্যবসা করাকে একটি সুযোগ বলে মনে করেন।
বৈঠকটি বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারত্বের ক্ষেত্র তৈরি করে, যা উভয় দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বস্তুটিতে নেই কোনো সোনার চিহ্ন। গুণেও নেই স্বর্ণের বাহার। তবে দামে সোনার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের এই মশলা। ছাড়িয়ে গিয়েছে রুপাকেও। ভারত মশলার দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই বিদেশে মশলার ব্যবসার জন্য বিখ্যাত দেশটি। সেই মশলার সাম্রাজ্যে অন্যতম অবদান রয়েছে কাশ্মীরের। কথা হচ্ছে কেশর নিয়ে। একগুচ্ছ সরু সুতোর মতো লাল বস্তুটিকে দেখলে মশলা বলে মনেই হয় না। অথচ স্বাদে ও গন্ধে রান্নায় তার কদরই আলাদা।
বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মণ্ডা-মিঠাই, হেঁশেলে কেশরের ব্যবহার অনেক পুরোনো। যত দিন গেছে, দর আরও বাড়িয়ে ফেলেছে এই মশলা। ভালো রান্নায় কেশর না হলে যেন চলেই না।
সাধারণের সাধ্যাতীত কেশর। কারণ এর দাম আকাশছোঁয়া। এক কেজি কেশরের দাম প্রায় দেড় লাখ রুপি। তাই সব রান্নায় ইচ্ছা থাকলেও কেশর ব্যবহার করা যায় না।
দামের কারণে কেশরকে ‘লাল সোনা’ বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে ‘সোনার মশলা’ বলেও উল্লেখ করেন। কেশর কিনতে গিয়ে পকেটে ছ্যাঁকা লাগে মধ্যবিত্ত পরিবারের।
কেন এত দাম কেশরের? দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল কেশরের উৎপাদন ভূমি। কাশ্মীরের প্যামপোর শহরকে ‘কেশরের শহর’ বলা হয়ে থাকে। মূলত সেখানেই কেশর উৎপাদনকারী গাছের চাষ হয়।
ক্রোকাস গাছ থেকে কেশর পাওয়া যায়। এই গাছে বেগুনি রঙের যে ফুল ফোটে, তার গর্ভদণ্ডগুলোই কেশর। সরু সুতোর মতো সেই কেশর পেতে ব্যবসায়ীদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।
এক কিলোগ্রাম কেশর পেতে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুল লাগে। উৎপাদন প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। সারা বছর ফুল মেলে না। তাই নানা কারণে কেশরের দাম বেড়েছে।
শুধু রান্নায় স্বাদ নয়, কেশরের স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কেশরের ক্রোসিন আর ক্রোসেটিন নামক দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। মানসিক অবসাদও কমায়। নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে শর্করার পরিমাণও।
সম্প্রতি কাশ্মীরে কেশরের উৎপাদন কমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগে একটি মৌসুমে তিন থেকে পাঁচবার গাছে ফুল হতো। তা থেকে অনেক কেশর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মৌসুমে মাত্র দুই থেকে তিনবার ফুল ফোটে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনকেই কেশরের উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অনিয়ন্ত্রিত বৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি এবং অত্যধিক গরম এই উৎপাদনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, কাশ্মীরে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের ধরন বদলেছে। ১০ বছর আগেও যে সময়ে যে পরিমাণে তুষারপাত বা বৃষ্টি হতো, এখন তা হয় না। যা কেশর ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে।
পাশাপাশি, নাগরিক সভ্যতার বিকাশও কেশর উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী। কেশরের খেতে ক্রমে ঢুকে পড়ছে নগর। খেত একটু একটু করে কমে আসছে। তার ফলেও আগের চেয়ে উৎপাদন কমেছে বলে দাবি।
পাহাড়ের বুকে কেশর ফোটাতে অত্যন্ত যত্ন এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। পরিশ্রম অনুযায়ী চাহিদা কম এই মশলার। দামের কারণেই অনেকে তা কিনতে চান না। তাই কেশর ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেছেন, দেশের মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্য বাড়ছে। আর এই আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
আইসিডিডিআর,বির ৬৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার বিনায়ক সেন খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৫০। শহরাঞ্চলে গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৫৪ আর গ্রামাঞ্চলে তা শূন্য দশমিক ৪৫। একই সঙ্গে দেশে ভোগের ক্ষেত্রেও অসমতা বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভোগ অসমতার ক্ষেত্রে গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৩৩৪; শহরাঞ্চলে যা ছিল শূন্য দশমিক ৩৫৬ আর গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে যা ছিল শূন্য দশমিক ২৯১।
গিনি সহগের মান শূন্য হলে বোঝা যায়, সমাজে চূড়ান্ত সমতা আছে। ১ হলে বোঝা যায় চূড়ান্ত অসমতা আছে; শূন্য দশমিক ৫০ অতিক্রম করলে বোঝা যায়, দেশে উচ্চ অসমতা আছে। অর্থাৎ দেশে এখন উচ্চ অসমতা বিরাজ করছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশে বর্তমানে যে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে, তা ঠিক এই অসমতা মোকাবিলা করার মতো নয়, অর্থাৎ বৈষম্যে তার তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না বলে মন্তব্য করেন বিনায়ক সেন।
তিনি ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের সূত্রে বলেন, তখন দেশের ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ছিল। তথ্যে দেখা যায়, গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে এ নিয়ে বড় ব্যবধান আছে; গ্রামাঞ্চলের ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকলেও শহরাঞ্চলের মাত্র ১০ দশমিক ১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আছে, যদিও শহরাঞ্চলে অসমতা বেশি।
বিনায়ক সেন আরও বলেন, বৈষম্য বাড়ছে- সাধারণভাবে এই কথার অর্থ হলো ধনী আরও ধনী হচ্ছে আর দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে অসমতার প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। তাঁর ভাষ্য, দেশে দরিদ্র ও অদরিদ্র উভয় শ্রেণির মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, কিন্তু অদরিদ্র শ্রেণির উন্নতির হার বেশি।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা এবং নিয়ামকসমূহ: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন সংঘাত দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এর আগে গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিনায়ক সেন দারিদ্র্যের প্রধান কারণগুলো তুলে ধরেন এবং তা থেকে উত্তরণে বেশ কিছু নীতিগত প্রস্তাব তুলে ধরেন। স্মার্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সেসব নীতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন তিনি।
বিনায়ক সেন উপস্থাপনায় দেখান, সরকারি ব্যয় বাড়লেও কর-জিডিপির অনুপাত কমে যাচ্ছে। ২০০০-০১ সালে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০১০-১১ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, সে বছর জিডিপির অনুপাতে সরকারি ব্যয় ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, কিন্তু সরকারি ব্যয়-জিডিপির অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস।
টানা ১৫ বার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন পুরান ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী মো. কাউছ মিয়া। দেশের অনেক বড় ব্যবসায়ীকে পেছনে ফেলে এবার তিনি সেরা করদাতা হয়েছেন। কাউছ মিয়া হাকিমপুরী জর্দা প্রস্তুতকারী কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। ২০২২-২৩ করবর্ষে ‘ব্যবসায়ী’ শ্রেণিতে এই ব্যবসায়ী সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন।
চলতি বছর ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে মো. কাউছ মিয়ার পাশাপাশি গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মুর্তজা, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল আলম ও চেয়ারম্যান এস এম শাসছুল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলমকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছে।
গত বছর সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে মো. কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছিল। চলতি বছরে ব্যক্তি, কোম্পানি ও অন্যান্য ক্যাটাগরিসহ মোট ১৪১ জনকে সেরা করদাতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ অধিশাখা-২ (কর)-এর সিনিয়র সহকারী সচিব নুসরাত জাহান নিসুর সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মুজিববর্ষের সেরা করদাতা হিসেবেও বিশেষ সম্মাননা পান কাউছ মিয়া। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের সময় শীর্ষ করদাতা হয়েছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে কাউছ মিয়া দেশে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন। গত ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন তিনি। প্রথম কর দেন ১৯৫৮ সালে।
চাঁদপুর জেলার রাজরাজেশ্বর গ্রামে (ব্রিটিশ আমলের ত্রিপুরা) ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কাউছ মিয়া। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদি দোকান চালু করেন।
পরে ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। এরপর ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে তার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা।
২০১৯ সালে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে “ফ্রি” হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম।’
জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২২-২৩ করবর্ষের জন্য খেলোয়াড়সহ সেরা করদাতা মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে ব্যক্তি ৭৬ জন, কোম্পানি ৫৪টি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১১ জন। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত সরকারি গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ১০ ডিসেম্বর জাতীয় ভ্যাট দিবসে সেরা করদাতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড দেবে এনবিআর। ২০১৬ সাল থেকে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা দিয়ে আসছে এনবিআর।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার একটি বন্ড অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৮৯০তম কমিশন সভায় এ বন্ডটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আলোচ্য বন্ডটির বৈশিষ্ট্য হবে মুদারাবা ফ্লোটিং রেট, নন-কনভার্টিবেল, আনসিকিউরিড সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। এর প্রধান বেশিষ্ট্য হবে নন-কনভার্টিবেল, অর্থাৎ এ বন্ডের কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে না। বন্ডটির কুপন রেট তথা সুদ হার হবে ৬ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে। এটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে। এর প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য হবে ১০ লাখ টাকা। এ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ব্যাংকটি তার টিয়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করবে।
আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ডিবিএইচ ফিন্যান্স। আর এর অ্যারেঞ্জারের হিসেবে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বন্ডটিকে স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত হওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের মে মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ব্যাংকটি জানিয়েছিল, তাদের পর্ষদ সভায় নন-কনভার্টিবেল, আনসিকিউরিড, ফুললি রিডিমেবল ফ্লোটিং রেটবিশিষ্ট ‘এসজেআইবিএল থার্ড মুদারাবা সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড’ ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ বন্ড ইস্যু করে ব্যাসেল-থ্রি এর অধীনে থাকা তাদের ব্যাংকের টিয়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করা হবে। বন্ডটির মেয়াদকাল হবে ৭ বছর, যা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে। সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে নীতিমাল অনুসরণ করে এ বন্ডটি ইস্যু করার কথা জানানো হয় তখন। এরই মধ্যে এ বন্ড ইস্যুর জন্য বিএসইসির অনুমোদন পেল এসজেআইবিএল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত করেনি ব্যাংকটি।
বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। রিকোভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (আরঅ্যান্ডআর) ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থ বছরে ২৫ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব ছিল, যা এখন বাড়িয়ে ৫০ কোটি ডলার করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থছাড় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিপিসি কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, অর্থ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে ইআরডি। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের চিঠিতে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এটা খুবই উৎসাহজনক বিষয় যে, দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসিতে টার্গেট করা প্রায় সব সংস্কার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে। জাতীয় ট্যারিফ নীতি গ্রহণ, এই চালান পদ্ধতির বাস্তবায়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা, সুরক্ষিত লেনদেন আইন প্রণয়ন এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ- এর মধ্যে কয়েকটি।
‘দেশকে টেকসই উন্নয়নের ধারায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ এসব সংস্কার। দ্বিতীয় ডিপিসিতে টার্গেট করা সংস্কারের মধ্যে মাত্র কয়েকটির কাজ সম্পন্ন হওয়া বাকি থাকলেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডিপিসিতে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত সংস্কার পদক্ষেপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
‘অর্থ বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় যে, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রেখেছে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি সাসটেইনেবল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই একটি স্থিতিস্থাপক ও টেকসই ভবিষ্যৎ; এবং এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল আলোচনা এবং অর্থছাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।’
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং রিজার্ভ সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর সঙ্গে ৪০ কোটি ডলার করে মোট ৮০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
চলতি মাসে দুই সংস্থার সঙ্গে এ-সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।
কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনৈতিক সংকট এবং টিকা কিনতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার ওপর জোর দেয়। পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের বাজেট সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ হয়েছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেয়েছে ১.৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার। তার আগের তিন বছর যথাক্রমে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল ২.৫৯ বিলিয়ন, ১.০৯ বিলিয়ন এবং ১ বিলিয়ন ডলার।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হতে পারে, যার পরিমাণ ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। দুটো প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হতে পারে ১১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর এডিবি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া একই দিনে আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
উভয় ঋণ প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ অর্থ প্রাপ্তি বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে স্বস্তি আনবে। এর মাধ্যমে আমদানি বিল পরিশোধ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসার অর্থ পাঠাতে প্রয়োজনীয় ডলারের ঘাটতি মেটাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবটি আগামী সপ্তাহে সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে।
বোর্ড সভার সময়সূচি অনুসারে, আগামী ১২ ডিসেম্বর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন বা ৬৮ দশমিক ১০ কোটি ডলার অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা আছে সেগুলো হলো—অনুচ্ছেদ ৪ পরামর্শ ও বর্ধিত ঋণ সুবিধা, বর্ধিত তহবিল সুবিধা এবং স্থিতিস্থাপকতা ও স্থায়িত্ব সুবিধার পর্যালোচনা।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে আইএমএফ নির্ধারিত ছয়টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বাংলাদেশ দুটি অর্জন করতে পারেনি।
গত অক্টোবরে আইএমএফ দল দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফর করে। এরপর তারা ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করে বোর্ডের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আশাবাদী যে আইএমএফ বোর্ড সভায় দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাবটি অনুমোদিত হবে। তারা আইএমএফকে ঋণের দুটি শর্ত পূরণে বাংলাদেশের অপারগতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব ইতোমধ্যে আইএমএফ বোর্ডে তোলা হয়েছে, তাই অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ যে ঋণ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, তা দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিনের খরচ চালানো যাবে।
বাংলাদেশ যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি সেগুলোর একটি হলো গত জুন শেষে ন্যূনতম ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রাখা।
জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্যের দাম পরিশোধে সরকারকে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছিল বলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার কমেছে।
ন্যূনতম কর-রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা যায়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা কর-রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজন ছিল। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তিন লাখ ২৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা কম।
আইএমএফ রিভিউ টিমের সঙ্গে গত ১৯ অক্টোবর বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আইএমএফ দল বাংলাদেশের কাঠামোগত সংস্কারের প্রচেষ্টায় সন্তুষ্ট। ঋণের জন্য আইএমএফ যে ছয়টি শর্ত বেঁধে দিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ চারটি পূরণ করতে পেরেছে। আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির জন্য আর কোনো শর্ত যোগ করছে না। হক বলেন, এ শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বাজারের ওপর ভিত্তি করে একক বিনিময় হার, মুদ্রানীতির আধুনিকীকরণ, ঝুঁকি-ভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আইএমএফ পদক্ষেপ ও এগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্তরে উন্নীতকরণ এবং বাজার ভিত্তিক কর রাজস্ব ও সুদের হার সংগ্রহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ রিজার্ভ ও রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি বর্ণনা করেছি। গৃহীত পদক্ষেপ এবং চলমান প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করেছি। তারা এর মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮শতাংশের নিচে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো হবে।’
গত ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। বাকিগুলো আরও পাঁচ দফায় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শীতের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সরবরাহ বাড়ায় প্রতি বছরের মতো এবারও কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম। যদিও এখনো তা ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসেনি বলেই অভিযোগ অনেকের। সেই সঙ্গে বাজারে এখন আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গরুর মাংসের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ার বিষয়টি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রিয় এই মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংসের প্রভাবে কমেছে মাছ, মুরগি এমনকি ডিমের দামও। বাজারে এমন স্বস্তির মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসার খবর জানাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
সরকারি এই সংস্থার হিসাবে নভেম্বর মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ সদ্য শেষ হওয়া মাসে কোনো পণ্য কিনতে গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে ক্রেতাদের। এর আগের মাস অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে নেওয়া হয় নীতি সুদহার বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয় ডিসেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নভেম্বরের হিসাবে দেখা যায়, শুধু খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর আগের মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। হিসাবে খানিকটা কমলেও এখনো সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা বেশি। এ ছাড়া নভেম্বরে খাদ্যবর্হিভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গত মাসের হিসাবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষের আয় শহরের তুলনায় কম হলেও মূল্যস্ফীতি কেন বেশি তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন রয়েছে। অক্টোবর মাসেও শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বেশি লক্ষ করা যায়। নভেম্বরে শুধু শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ, বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে যা ছিল ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বাড়তি দামে অনেক পণ্য কিনতে হচ্ছে। বিবিএসের হিসাবে আরও বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলে শুধু খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা শহরে ছিল ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি শহর ও গ্রাম দুই জায়গাতেই ছিল অনেকটা সহনীয়।
সদ্যসমাপ্ত নভেম্বর মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজারেরও বেশি। এ সময়ে দেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। তবে এসব বিওর মধ্যে নতুন করে কতগুলো খোলা হয়েছে এবং কতগুলো বন্ধ হওয়া হিসাব চালু করা হয়েছে, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার-বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বাড়া-কমা, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংখ্যা দিয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে নাকি কমবে এমন ভবিষ্যৎ বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে পুঁজিবাজারে যেসব বিও হিসাব বেড়েছে, সেগুলো নতুন করে খোলা হয়েছে, নাকি বন্ধ হওয়া হিসাবই পুনরায় চালু করা হয়েছে। যদি বন্ধ হওয়া হিসাব চালুর সংখ্যা বাড়েও, তাতে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কেননা, এসব হিসাব দিয়ে দীর্ঘদিন লেনদেন করা হয়নি বলেই বন্ধ করা হয়েছিল। তাই ফ্লোর প্রাইসের এ বাজারে তাদের হিসাব পুনরায় চালু হলেও লেনদেন বাড়বে, এমন প্রত্যাশা করাটা বাঞ্ছনীয় হবে না।
একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে না দেয়া পর্যন্ত লেনদেন বাড়ার সম্ভাবনা দেখছি না। তবে বর্তমান সংকটের মধ্যেও বিওর সংখ্যা বাড়াটা একটি ভালো দিক। বাজারের স্বার্থে অবিলম্বে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া উচিত। তাহলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও লেনদেন উভয়ই বাড়বে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুসারে, অক্টোবর মাসের শেষ দিনে পুঁজিবাজারে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৬টি। নভেম্বর শেষে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৪টিতে। অর্থাৎ নভেম্বর মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বা বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৫৭৮টি।
নভেম্বর মাসে দেশে অবস্থানকারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৩৯৪টি। আলোচিত মাসটি শেষে দেশি বিও হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৫টিতে। অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭১টিতে। তবে নভেম্বর শেষে বিদেশে অবস্থানকারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১৬টি। অক্টোবর শেষে বিদেশি বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৫০৫টি। নভেম্বর শেষে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪৮৯টিতে।
নভেম্বর শেষে পুরুষ বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৮টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ১৯৯টিতে। অক্টোবর শেষে এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৮০১টিতে। আর নভেম্বর মাসে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ৯৮০টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৪৫৫টিতে। অক্টোবর শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৫টিতে।
নভেম্বর মাসে কোম্পানি বিও হিসাব বেড়েছে ২০০টি। আলোচ্য মাসটি শেষে কোম্পানি বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৯৭০টিতে। অক্টোবর শেষে যা ছিল ১৬ হাজার ৭৭০টিতে।