রোববার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আনতে অর্থমন্ত্রী শোনালেন আশার কথা

আপডেটেড
২ জুন, ২০২৩ ০০:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২ জুন, ২০২৩ ০০:০০

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে আরেকটি বড় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহালের মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে বাজারের আগুনে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি থেকে কিছুটা রেহাই দিতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৩ লাখ টাকা থেকে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না। তবে করপোরেট করে হাত দেননি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল; কর আগের মতোই থাকছে। বিদ্যমান করপোরেট কর হিসেবে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৭ শতাংশ করই অপরিবর্তিত থাকছে।

বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বয়স্ক ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা; বিধবা ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন।

বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি তার এবারের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছেন। আর বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে দেশের অর্থনীতি যখন নানামুখী চাপের মধ্যে, সেই সময় নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তারা। বলেছেন, অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সাফ বলে দিয়েছেন, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘পূরণ হবে না’। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে, সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে। আমার বিবেচনায় সেটাও কমে হয়তো ৫-এর ঘরে চলে আসবে। আগামী বছর যে খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তা মনে হয় না। তাহলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন জাদুবলে আসবে। এটা অসম্ভব; অবাস্তব লক্ষ্য। অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।’

তিনি বলেন, ‘গড় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৯ শতাংশ। সেই মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশে নেমে আসবে- এটাও আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।’

প্রস্তাবিত বাজেটের ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় পরিবর্তিত বিশ্ববাজার, জ্বালানি ও ডলারসংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটা মধুর হতে দেয়নি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।

সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বছরে এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের বছরে জনতুষ্টির খুব বেশি সুযোগ রাখার পথ মুস্তফা কামালের সামনে নেই। তার পরও স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছানোর নির্বাচনী স্লোগানটিকেই তিনি বাজেটে ফিরিয়ে এনেছেন। তার এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।”

২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় সেই ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় এবার বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মুস্তফা কামাল।

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের ‍সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করলে বেড়ে যায় আমদানি। তাতে সরকারের জমানো ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়। রপ্তানি বাড়লেও আমদানির মতো অতটা না বাড়ায় এবং রেমিট্যান্সের গতি ধীর হয়ে আসায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য আর জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ডলার বাঁচাতে সরকার বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম দেয়ার পাশাপাশি কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে শুরু করে।

রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।

তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক ৪৪ শতাংশের মতো।

গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।

আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণসহ অন্যান্য সংস্কারের মাধ্যমে কর নেট সম্প্রসারণ, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহায়ক ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন ও সম্প্রসারণ, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, কর প্রশাসনের অটোমেশন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হবে।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।

সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা জোগানোর চাপ থাকায় কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।

তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রাক্কলনের ভিত্তিতে অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে বলে সরকার ধারণা করছে। তার পরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।

নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।


শেয়ারবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীরা ‘পুঁজি রক্ষার’ দাবিতে আন্দোলনে নামার পর শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের গতি। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পরিমাণও কিছুটা কমে আসছে।

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই মূল্যসূচক বাড়লো।

এর আগে শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতন দেখা দিলে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে সোমবার মতিঝিলে সমাবেশের ডাক দেন বিনিয়োগকারীরা। সমাবেশের ডাক দেওয়ার পর রোববার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। বিনিয়োগকারীদের সামাবেশের দিন অর্থাৎ সোমবারও ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। পরের কার্যদিবস মঙ্গলবার দাম কমার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাড়ে মূল্যসূচক।

বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২০৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৯টির। এছাড়া ৬৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস ডিএসইতে চারশ কোটি টাকার বেশ লেনদেন হলো।

এই লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। এছাড়া ১২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অগ্নি সিস্টেমস। ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিচ হ্যাচারি, গ্রামীণফোন, কোহিনুর কেমিক্যাল, সেন্ট্রাল ফার্মা, ম্যারিকো বাংলাদেশ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।


ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রোডম্যাপ বাস্তবায়ন জরুরি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আজ ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশন মাল্টিপারপাস হলে ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির ৮ম সভায় সভাপতিত্ব করেন, এসময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। ছবি: পিআইডি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রোডম্যাপ বাস্তবায়ন জরুরি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের দক্ষতা ও প্রতিযোগী মনোভাব তৈরি করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার বিয়াম ফাউন্ডেশন মাল্টিপারপাস হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ন্যাশনাল ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির (এনটিএফসি) ৮ম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সভায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হতে যাচ্ছি। এই গ্র্যাজুয়েশনের কারণে সামনে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ওপর বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আসবে।

তিনি আরও বলেন, এতে আমাদের অর্থনীতিতে যে ধাক্কাটা আসবে, তা থেকে পরিত্রাণের নিয়ামক হচ্ছে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ কারণে দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমাদের সময় আছে। আমি মনে করি, এটা দীর্ঘ সময়। আমি মনে করি, যদি আমরা ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হই, তবে আমাদের ওয়ার্কিং গ্রুপগুলো একসঙ্গে কাজ করলে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা সম্ভব।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ করতে হবে। আমরা সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়াতে চাই।

সভায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব সেতু বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব ), বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই আইয়ের প্রশাসক, স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ)সহ কমিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্টের মূল উদ্দেশ্য বাণিজ্য উদারীকরণের স্বার্থে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত বিধি-বিধান ও কর্মপদ্ধতি পর্যালোচনা করে আমদানী ও রপ্তানি পণ্যের প্রসার ও চলাচল ত্বরান্বিত করা।

ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্টের আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে ৩টি (এ, বি, সি) ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এ ক্যাটাগরির ২১টি কার্যক্রমের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নোটিফিকেশন ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ডব্লিউটিও-তে পাঠানো হয়। বি ক্যাটাগরির ১৮টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের ভিন্ন ভিন্ন সময়সীমা নির্ধারিত ছিল।

বি ক্যাটাগরি কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নোটিফিকেশন ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ডব্লিউটিও-তে প্রেরণ করা হয়। সি ক্যাটাগরির ১৫টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের সর্বশেষ সময়সীমা ২০৩০ সালের ৩০ জুন। ইতোমধ্যে সি ক্যাটাগরির ৫টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন ডব্লিউটিও-তে পাঠানো হয়েছে। অবশিষ্ট ১০টি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


টানা চার মাসে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের বেশি

জানুয়ারিতে ৪৪৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ১০:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। টানা চার মাস ধরে ৪ বিলিয়ন মানে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ৪৪৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি।

পরিসংখ্যান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল সোমবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, হিমায়িত খাদ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্লাস্টিক পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমেছে; কিন্তু রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি যেহেতু তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে, সেহেতু এই খাতের রপ্তানির ওপরই নির্ভর করে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি। এই খাতে জানুয়ারি মাসের রপ্তানিতে ৫ দশমিক ৫৭ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিও এর কাছাকাছিই রয়েছে।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে গত জুলাই ও আগস্টে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছিল। সেপ্টেম্বরে অবশ্য ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়; রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৮৬ কোটি ডলার। অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে ৪১৩ ও ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তার মধ্যে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অক্টোবরে ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও নভেম্বরে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। আর ডিসেম্বরে ৪১১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। শুধু জানুয়ারিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৬৬ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এদিকে রপ্তানিতে আবার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে চলে এসেছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৬৭ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। জানুয়ারিতে ৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে ৬৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া শুধু জানুয়ারিতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ডলারের, যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে পৌনে ৫ শতাংশ কম।

জানুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছে ৫.৭০ শতাংশ

সদ্যবিদায়ী জানুয়ারি মাসে দেশে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। বছরের ব্যবধানে যা বেড়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪১৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্যে ২৪ দশমিক ২২ শতাংশ, চামড়ায় ৮ দশমিক ০৮ শতাংশ, প্রক্রিয়াজাত পণ্যে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, কৃষিজাত পণ্যে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, হিমায়িত পণ্যে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর পাটজাত পণ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।


বাণিজ্য মেলায় শেষ দিনে ছিল উপচে পড়া ভিড়

‘আন্তর্জাতিক বলা হলেও মেলায় বাইরের তেমন কেউ আসে না’ * এ বছর ৩৯টি দেশি-বিদেশি স্টল বেড়েছে
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা যায়। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

মাসব্যাপী চলা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষ দিন শুক্রবার পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার পড়ায় সকাল থেকেই মেলায় ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। দুপুরের পর মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তীব্র ভিড় দেখা যায়।

এদিকে মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন পণ্যে ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে কোনো কোনো স্টল। সেসব পণ্যও বিক্রি হচ্ছে দেদার।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, মেলার শেষের দিকে বেচাকেনা বাড়লেও, খুব একটা লাভের মুখ তারা দেখছেন না। তারা মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি।

বিশেষ করে গৃহস্থালির নানা পণ্য, খাবার, ইলেকট্রনিকস, ক্রোকারিজসহ সব পণ্যে নানা অফার থাকায় সবাই কিছু না কিছু কিনে বাড়ি ফিরছেন।

মেলায় পরিবার নিয়ে আসা এক ক্রেতা বলেন, আগারগাঁওয়ে যখন মেলা হতো তখন ব্যাপারটাই অন্যরকম ছিল। এখানেও খারাপ না। তবে বিদেশি স্টলের সংখ্যা বাড়ানো গেলে আরও বেশি মানুষ আসবে বলে আমি মনে করি।

গত ১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন। মাসব্যাপী আয়োজন শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন শুক্রবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তবে শেষ দিন মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মেলা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজন করা হতো। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা আয়োজন করা হয়নি। আর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে আয়োজন করা হয়।

এদিকে ঢাকা বাণিজ্য মেলাকে ‘আন্তর্জাতিক’ বলা হলেও বাইরের ‘তেমন কেউ’ এতে অংশগ্রহণ করে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

শুক্রবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা যদিও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলি, তবে এখানে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারী তেমন কেউ আসেন না। যারা আসেন তারা মনোহরি পণ্য নিয়ে আসেন।’

বশিরউদ্দীন বলেন, আসলে মাসব্যপী একটি মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আসা খুব একটা সহজ নয়। দেশে যেসব আন্তর্জাতিক মেলা হচ্ছে, সেগুলো তিন অথবা চার দিনের। সেগুলোয় তারা অংশগ্রহণ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি গ্র‍্যাজুয়েট হতে যাচ্ছি। এই গ্র‍্যাজুয়েটের কারণে সামনে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ওপর নানা নিয়ম আসবে।’

উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিকভাবে মনোযোগী হন। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমলে আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। তাই সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য শিল্প ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বৈচিত্র্যময় আয়োজন করতে হবে। আর নীতিসহায়তার জন্য সরকার সব সময় কাজ করছে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রহিম খান এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান।

মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান হয় বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে।

মেলার অংশগ্রহণকারী ২২টি সেরা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১ম পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২য় পুরস্কার ও ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩য় পুরস্কার প্রদান করা হয়।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় ৩৪৩টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বছরের মেলায় ৩০৪টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে ৫টি দেশের ৯টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ছিল।

মেলায় বস্ত্র, ফার্নিচার, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, মেশিনারিজ, কসমেটিক্স, গৃহসজ্জা, খেলনা, স্টেশনারিজ, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পসহ নানাবিধ পণ্য প্রদর্শিত হয়েছে।


শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়েছে

শুল্ক বৃদ্ধির আমদানিকৃত ফলের দাম বেড়েছে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ ১১:১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে আমদানিকৃত ফলের দামে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের পর দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই অনেকে আমদানিকৃত ফল বাদ দিয়েছিলেন তাদের ক্রয় তালিকা থেকে।

গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুকনো ও টাটকা ফল আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করেছে।

আপেল, আঙুর ও তরমুজের মতো কিছু টাটকা ফল ও জুসের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির শর্ত পূরণের জন্য রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা হিসেবে।

প্রায় দুই বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। এমন সময়ে শুল্ক বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতারা বলছেন, আপেল, কমলা, মালটা, আঙুরের মতো ফল কিনতে গেলে আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। যে কারণে তাদের আগের চেয়ে আরও কম পরিমাণে কিনতে হচ্ছে মাসের খরচ মেলাতে।

কারওয়ান বাজারে আসা এক ক্রেতা নাজনীন আখতার বলেন, ‘আগে যে পরিমাণে ফল কিনতে পারতাম, এখন আর সেটা পারি না। এখন যে অবস্থা হচ্ছে, সামনে হয়তো আর এসব বিদেশি ফল খেতে পারব বলে মনে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘১০ দিন আগে মাঝারি আকারের কমলার কিনেছি প্রতি কেজি ২৬০ টাকা করে, যা এখন ২৯০ টাকা। ২৯০ টাকা কেজির আপেলের দামও বেড়ে হয়েছে ৩২০ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘২ কেজি কমলা ও ২ কেজি আপেল কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দের কেজি করে নিতে হলো।’

ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে শুল্ক কমাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নাজনীন। ফল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এর আগে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমদানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পাইকারি বিক্রি আরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমেছে।

কারওয়ান বাজারের দোকান মালিক মোহাম্মদ সাগর মিয়া বলেন, ‘খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ফলে ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে, কিছু ফলের দাম কেজিতে ২৫ টাকারও বেশি বেড়েছে।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে কালো আঙুর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৫০০ টাকায় কিনতাম, এখন কিনি ৫৩০ টাকায়। ছোট ডালিম ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮০ টাকা হয়েছে। ২৭০-২৮০ টাকার নাশপতি পাইকারি বাজারে ২৮৮ টাকা হয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, তারা এক মাস আগে সরকারের কাছে নিয়ন্ত্রক শুল্ক প্রত্যাহার ও অগ্রিম আয়কর কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রমজান শুরুর আগেই এই শুল্ক কমানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। কারণ, রোজায় মানুষ ফল খায় বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত দুই বছর ধরে মানুষ ফল কম কিনছে। এখন আবার শুল্ক বাড়লো। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা তো আরও সমস্যায় পড়বে।’

এলসি খোলার তথ্য থেকে জানা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় জুলাই-নভেম্বরে বাংলাদেশে ফল আমদানি সাড়ে ৮ শতাংশ কমে ১০৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে এলসির নিষ্পত্তির পরিমাণও কমেছে।

রমজান মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তারা সতর্ক করেছে, অন্যথায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর আর্থিক সংকট আরও তীব্র হবে।


মিয়ানমার থেকে এলো ২২ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

জি টু জি ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকে থেকে ২২ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি গোল্ডেন স্টার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। ছবি: ইউএনবি

জি টু জি ভিত্তিতে মিয়ানমার থেকে থেকে ২২ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি গোল্ডেন স্টার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

আজ শুক্রবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত চালের প্রথম চালান। জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা সংগ্রহপূর্বক ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে। এজন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এরআগে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৪ জানুয়ারি খাদ্য অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের (টিসিপি) মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল খালেক ও টিসিপির চেয়ারম্যান সৈয়দ রাফিউ বশির শাহ নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই চাল আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে আসতে শুরু করবে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে এই সমঝোতা স্মারক এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।


টানা চার কার্যদিবস দরপতন, লেনদেন ৪০৬ কোটি টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের চার কার্যদিবসেই মূল্যসূচক কমল। আর চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৮ কার্যদিবসেই মূল্যসূচক কমেছে।

এমন টানা দরপতন হলেও ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে পাঁচ কার্যদিবস পর ৪০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে এ বাজারটিতে মূল্যসূচক কিছুটা বেড়েছে। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস দরপতনের পর বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

কিন্তু সকাল ১১টার পর থেকে বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের সঙ্গে মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮২টির এবং ৬৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৪২ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৫১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে মুন্নু ফেব্রিক্সের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৮১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ১৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, আফতাব অটোমোবাইল, ফু-ওয়াং সিরামিক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম এবং ফু-ওয়াং ফুড।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।


সরকার পতনের পর ইপিজেডে বিনিয়োগ কমলেও বাড়ছে রপ্তানি

২০২৪ সালের শেষ ৬ মাসে ইপিজেড বহির্ভূত অঞ্চলে এফডিআই কমেছে ৭১%, ইপিজেডে যা ২২.৩৩% হ্রাস * ইপিজেডে রপ্তানি বেড়েছে ২২.৪১%, বহির্ভূত অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ১২.৮৪%
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও তুলনামূলক ভালো করেছে রপ্তানি খাত। বিশেষ করে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ইপিজেড অঞ্চলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশকি ৪১ শতাংশ। যেখানে ইপিজেডের বাইরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

সোমবার রাজধানীর গ্রিনরোডে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিয়াউর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের শেষ ৬ মাসে ইপিজেডের শিল্প কারখানা থেকে ৪১২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে এ রপ্তানি হয়েছিল ৩৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। পটপরিবর্তনের পর বিদেশি বিনিয়োগের বাজার ইপিজেডে তুলনামূলক ভালো রয়েছে জানিয়ে আবুল কাশেম জিয়াউর রহমান বলেন, ‘গত বছরের শেষ ৬ মাসে ইপিজেডের বাইরে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে ৭১ শতাংশ। তবে এসময়ে ইপিজেডে এফডিআই কমেছে মাত্র ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইপিজেডে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এ বিনিয়োগ এসেছিল ১৬ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বিনিয়োগের এই নিম্নমুখিতা কেবল রাজনৈতিক পটপরিবর্তরের জন্য নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও এ জন্য অনেকটা দায়ী।’

তবে আগামীতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প সরকার এসেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এতে চীনের শিল্প-কারখানাগুলো বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হবে। যেখানে বাংলাদেশ সবার ওপরে আছে। একটি চীনা কোম্পানি এরই মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।’ বেপজার নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ইপিজেডগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। এ বিষয়ে আমরা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। বর্তমানে বেপজার আটটি ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এরই মধ্যে নবম জোন হিসেবে চট্টগ্রামের মিসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। এছাড়া যশোর ও পটুয়াখালীতে আরো দুটি জোনের কাজ চলছে। এগুলো শেষ হলে ইপিজিডের বিনিয়োগ আরও বাড়বে। ’

সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বেপজার সার্বিক বিষয়ে অবহিত করেন সংস্থার বিনিয়োগ উন্নয়নবিষয়ক সদস্য মো. আশরাফুল কবীর। তিনি তার প্রেজেন্টেশনে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিনিয়োগ চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে গত অর্থবছরে দেশে মোট এফডিআই এসেছে ১৪৬ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যার মধ্যে শুধু বেপজার অধীনে থাকা জোনগুলোতে বিনিয়োগ হয়েছে ৪২ কাটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার, যা মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের ২৯ শতাংশ। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মোট রপ্তানির মধ্যে ১৬ শতাংশ রপ্তানিই হয়েছে বেপজাধীন ৮টি ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে। শুধু এ বছরেই নয়, ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছরই বেপজা দেশের মোট রপ্তানির ১৫-২০ শতাংশ অবদান রাখছে।’

তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেপজাধীন জোনগুলোতে সর্বমোট বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ৬ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এই অঞ্চলসমূহ থেকে মোট রপ্তানি হয়েছে ১১৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বেপজার ইপিজেডগুলোতে ৩৮টি দেশ থেকে বিনিয়োগ এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছে চীন থেকে। চীনের মোট ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে ইপিজেডে। এরপর বিনিয়োগ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ৬১টি, জাপানের ২৯টি, ভারতের ১৯টি, যুক্তরাজ্যের ১৯টি, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি ও শ্রীলঙ্কার ৭টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো অন্যান্য দেশের।

বর্তমানে আটটি ইপিজেড ও বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪৪৯ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ২৫৮টি, যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ৪৯টি ও শতভাগ দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১৪২টি। ইপিজেডসমূহে উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- তাঁবু ও তাঁবুর সরঞ্জাম, যাই - সাইকেল, কসমেটিক্স, হলিউড মাস্ক, ক্যাম্পিং ফার্নিচার, গন্ধ শ্যাফট, উইগ ও ফ্যাশন চুলসহ আরও বিভিন্ন ধরণের পণ্য। অনুষ্ঠানে বেপজার প্রকৌশল বিষয়ক সদস্য মো. ইমতিয়াজ হোসেন, অর্থ বিষয়ক সদস্য আ ন ম ফয়জুল হকসহ বেপজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেপজার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আবু সাঈদ মো. আনোয়ার পারভেজ।


পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফেরাল ১২ লাখ বিনিয়োগকারী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গেল আট বছরে পুঁজিবাজার থেকে ১২ লাখ বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে পুঁজিবাজারে অর্থ লগ্নিকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট কমতে কমতে চলতি বছরে এসে অবস্থান করছে সর্বনিম্নে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি, যা ২০২৪ সালে কমে হয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২। এতে করে আট বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৭ জন বিনিয়োগকারী হারিয়েছে পুঁজিবাজার।

২০২৩ সালে বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ৯০ হাজারেও বেশি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় তারা বাজারে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছেন। অনেকে মার্জিন ঋণের খপ্পরে ফোর্স সেলের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে ছেড়েছেন বাজার।

পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারী তারেক মাহমুদ বলেন, প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাচ্ছেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী আসার মূল আগ্রহ আর্থিক লাভের জন্য। কিন্তু লাগাতার লোকসান হওয়ায় এখন আর কেউ ভরসা পাচ্ছেন না।

মার্জিন ঋণ প্রসঙ্গে আরেক বিনিয়োগকারী আলতাফ হোসেন বলেন, বাজারে আগ্রহ ছিল বলেই অনেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু দেদারসে শেয়ারের দাম কমতে থাকায় মার্জিন ঋণের খপ্পরে পড়েন তারা। একদিকে মাঝারি বা খারাপ মানের শেয়ারের দাম কমায় টান পড়ছে ঋণের টাকায়, অন্যদিকে ফোর্স সেল হওয়ায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভালো শেয়ারও। এতে করে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

ব্রোকারেজ হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায়, নেই সেই চিরচেনা কর্মচাঞ্চল্য। শাখা পরিচালকরা বলেন, আগে শেয়ার বেচাকেনায় গমগম করতো হাউসগুলো। শুধু হাউসে না, অনেক প্রবাসী বিনিয়োগকারীও মুঠোফোনে যুক্ত থাকতেন, বেচাকেনা করতেন শেয়ারের।

ব্রোকারেজ হাউসের করুণ দশা প্রসঙ্গে গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ লিটন বলেন, নতুন করে আর কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না। সবাই চাচ্ছেন বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে। অনেকে লোকসান দিয়ে হলেও বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। যারা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাজার ছাড়ছেন, তাদের আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে পুরো বাজার স্থায়ী ধসের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা করেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের বাজার বিমুখতা প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত বিএসইসির টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীরা বাজারে লেনদেনে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। অনেক বিও অ্যাকাউন্ট বহুদিন ধরে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। অনেকে আবার অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে বাজার থেকে চলে গেছেন। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ভরসা কমে গেছে।

বিনিয়োগকারীদের অনেকের অভিযোগ কমিশন কারসাজিকারীদের গণহারে জরিমানা করায় বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। গত বছর আগস্টে নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২০ কোটি টাকার ওপর জরিমানা করেছে। এরমধ্যে শুধু বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

বাজারে বিএসইসির করা জরিমানার প্রভাব প্রসঙ্গে হেলাল বলেন, 'এখন যা জরিমানা হচ্ছে তার বেশিরভাগই আগের কমিশনের। কারসাজির ৯৮ শতাংশ বিচার তারা করেননি, যা বর্তমান কমিশনকে এসে করতে হচ্ছে। অপরাধীদের সাজা না দিলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে না।'

ডিএসইসির লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু বিও অ্যাকাউন্ট না গত এক বছরে ডিএসইসির প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি। এর বাইরে ঢাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।


ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা

আপডেটেড ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ০০:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবগুলো সূচক বিদায়ী সপ্তাহে বেড়েছে। এর ফলে টাকার অঙ্কে লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সব সূচকের উত্থানেও টাকার অঙ্কে লেনদেন কমেছে।

সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩২.৬১ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬৬.৫৩ পয়েন্টে।

অন্য সূচকগুলোর মধ্যে- ডিএসই-৩০ সূচক ১৮.৭৭ পয়েন্ট বা ০.৯৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯১৩.০৪ পয়েন্টে।

ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১.২১ পয়েন্ট বা ০.৯৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৬১.৮৫ পয়েন্টে।

এ ছাড়া ডিএসএমইএক্স সূচক ৩০.১৩ পয়েন্ট বা ২.৮৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৪.৩২ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে।

এর মধ্যে দর বেড়েছে ২০১টি, কমেছে ১৫০টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭১ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৪৬ বার হাতবদল হয়।

টাকার অঙ্কে যার বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮৯০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার।

অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ৯.১৫ শতাংশ।

বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকায়।

অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা বা ০.৫৬ শতাংশ।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৭.১৪ পয়েন্ট বা ০.৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৪৯.০৫ পয়েন্টে।

সিএসইর অন্য সূচক সিএসসিএক্স ৬৯.০৫ পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯৭.৩৯ পয়েন্টে।

অন্য দুটি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১১.২৯ পয়েন্ট বা ১.০৩ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৫.০১ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- ১ হাজার ১০৭.৬৫ পয়েন্টে এবং ৯৩৯.৬০ পয়েন্টে।

এ ছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ১১৮.২০ পয়েন্ট বা ১.০০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৭৭.৭১ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে।

এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টি, কমেছে ১১৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির।

সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮ টাকার।

আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৪ টাকার।

অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৫ টাকা বা ৭৪.৩০ শতাংশ।

১৫ খাতে মুনাফায় বিনিয়োগকারীরা

বিদায়ী সপ্তাহে (১৯-২৩ জানুয়ারি’২৫) শেয়ারবাজারের ১৫ খাত থেকে মুনাফা পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা। কারণ আলোচ্য সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক রিটার্নে দর বেড়েছে ১৫ খাতে। এর ফলে এই ১৯ খাতের মুনাফা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। একই সময়ে সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে ৫ খাতে। এর ফলে এই ৫ খাতে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। এই খাতে বিদায়ী সপ্তাহে দর বেড়েছে ৫.০০ শতাংশ। ৩.৬০ শতাংশ দর বেড়ে সাপ্তাহিক রিটার্ন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। একই সময়ে ৩.৪০ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান সিরামিকস খাত।

সাপ্তাহিক রিটার্নে অন্য ১৪ খাতের মধ্যে- সেবা ও আবাসন খাতে ২.৯০ শতাংশ, কাগজ ও প্রকাশনা খাতে ২.৮০ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২.৮০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ০.৮০ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ০.৮০ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ০.৮০ শতাংশ, প্রকৌশল প্রযুক্তি কাতে ০.৬০ শতাংশ, বিবিধ খাতে ০.৪০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ০.৩০ শতাংশ, জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে ০.৩০ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ০.২০ শতাংশ এবং পাট খাতে ০.১০ শতাংশ দর বেড়েছে।

ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) পিই রেশিও (সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত) কমেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশেও কমেছে ০.০১ পয়েন্ট বা ০.১০ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ৯.৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৩৭ পয়েন্ট।

খাতভিত্তিক হিসাবে পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে ৬.৬ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১৩.৫ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ৩৩৩.২ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৯.২ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ২৭.৭ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৩.৯ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫.৭ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৯ পয়েন্ট, আইটি খাতে ২০.৭ পয়েন্ট, পাট খাতে ৪৬.২ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ৩৩.১ পয়েন্ট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৫.১ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ৩৬.৬ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১১.৬ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১০.৩ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২৮.৩ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৬৭.৭ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১৩.৪ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৪.৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

আগের সপ্তাহে খাতভিত্তিক পিই রেশিও ছিল- ব্যাংক খাতে ৬.৬ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতে ১৩.৫ পয়েন্ট, সিরামিকস খাতে ৩২৩.৩ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতে ১৯.০ পয়েন্ট, আর্থিক খাতে ২৭.৪ পয়েন্ট, খাদ্য খাতে ১৪.১ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫.৫ পয়েন্ট, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৫ পয়েন্ট, আইটি খাতে ১৯.৬ পয়েন্ট, পাট খাতে ৪৬.৪ পয়েন্ট, বিবিধ খাতে ৩৩ পয়েন্ট, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৫.২ পয়েন্ট, কাগজ খাতে ৩৫.৫ পয়েন্ট, ওষুধ খাতে ১১.৫ পয়েন্ট, সেবা-আবাসন খাতে ১০.০ পয়েন্ট, ট্যানারি খাতে ২৮.১ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৬৫.২ পয়েন্ট, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ১৩.২ পয়েন্ট ও বস্ত্র খাতে ১৪.৩ পয়েন্ট।

ব্লক মার্কেটে ১০ কোম্পানির ৯১ কোটি টাকার বেশি লেনদেন

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১০ কোম্পানির।

কোম্পানিগুলো হলো- এডিএন টেলিকম, এসিআই, কহিনুর কেমিক্যাল, লাভেলো আইস্ক্রিম, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বিচ হ্যাচারি, এক্সপ্রেস ইন্স্যরেন্স, স্কয়ার ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ওয়ান।

আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে এই ১০ কোম্পানির মোট ৯১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে এডিএন টেলিকমের সবচেয়ে বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির ২৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১০৪ টাকা ৪০ পয়সা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসিআই লিমিটেডের ১৮ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৪৯ টাকা ৪০ পয়সা।

তৃতীয় সর্বোচ্চ কোহিনুর কেমিক্যালের ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৫৬১ টাকা ২০ পয়সা।

সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য ৭টি কোম্পানির মধ্যে- লাভেলো আইস্ক্রিমের ৭ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বিচ হ্যাচারির ৪ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৪ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, স্কয়ার ফার্মার ৩ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রিলায়েন্স ওয়ানের ২ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।


সংকটে ধুঁকছে সিমেন্টশিল্প

রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সরকারি প্রকল্প বন্ধ থাকায় বিক্রি কমেছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে দেশে সিমেন্ট বিক্রি কমেছে।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সরকারি প্রকল্প বন্ধ থাকায় গত বছর দেশে সিমেন্ট বিক্রি কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা একই উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, এসব কারণে নির্মাণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বড় প্রকল্পগুলো বন্ধ থাকায় সিমেন্টশিল্পে মন্দা বেড়েছে।

প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সিমেন্টশিল্প আগেও সংকট মোকাবিলা করেছে। আশা করছি, আগামীতে এই শিল্পের পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা আছে।’

তার মতে, একদিকে সিমেন্টের চাহিদা কমছে। অন্যদিকে, এর উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের হেড অব বিজনেস মো. মশিউর রহমান ডালিম বলেন, সাধারণত দেশের সিমেন্টের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ে ও বাকি ৪০ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোয় ব্যবহার করা হয়।

তবে, পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন তা হতাশাজনক। এখন ব্যক্তিপর্যায়ে সিমেন্টের ব্যবহার ৯০ শতাংশেরও বেশি।

তিনি মনে করেন, মূলত সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্প অনুমোদনে দেরি হওয়ায় সিমেন্টশিল্পের এই করুণ অবস্থা।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রকল্পগুলো প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাচ্ছে না। এতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। ব্যক্তিপর্যায়ে নির্মাণ প্রকল্পগুলোও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, দেশের ৪২ সিমেন্ট কারখানায় মোট ৮৪ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয়।

মশিউর রহমান ডালিম জানান, প্রতি মাসে সিমেন্ট বিক্রি ৩৪ লাখ টনে নেমে এসেছে। ফলে সক্ষমতার মাত্র ৪৫ শতাংশ নিয়ে এ শিল্প চালু আছে।

সিমেন্ট বিক্রির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সাধারণত নয় থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকে। গত বছর প্রায় এক দশমিক দুই শতাংশ বিক্রি কমেছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন কঠিন পরিস্থিতিতে আছি। প্রায় ১০ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদনে নিয়োজিত মানুষ এখন মাত্র এক লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন করছেন। মন্দা সত্ত্বেও কর্মী ছাঁটাই করিনি।’

কাঁচামাল আমদানি শুল্কের অসামঞ্জস্যতা এই শিল্পের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মশিউর রহমান ডালিম আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্লিংকারের দাম টনপ্রতি ৪৪ ডলার হলেও সরকার প্রতি টন ৬২ ডলারের ভিত্তিতে আমদানি শুল্ক হিসাব করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এই বৈষম্যের ফলে টনপ্রতি অতিরিক্ত খরচ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। চুনাপাথরের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় খরচ আরও বেড়েছে।’

সাধারণত শীতে সিমেন্ট বিক্রি বেড়ে গেলেও চলতি শীতে তা হয়নি।

সিমেন্টের চাহিদা কমে যাওয়া ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক নির্মাণ খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফ্রেশ সিমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশেদ আলম সিমেন্টের চাহিদা কমে যাওয়ায় এই খাতে মারাত্মক সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে উৎপাদনকারীরা সিমেন্টের দাম কমপক্ষে ১৫ শতাংশ কমাতে বাধ্য হয়েছেন।’

তিনি মনে করেন, উৎপাদকরা সিমেন্ট বিক্রিতে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করায় এর দাম কমেছে। ২০১০ সাল থেকে গড়ে আট শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হলেও ২০২২ সাল থেকে তা কমছে।

এই খাতের চলমান অনিশ্চয়তার জন্য নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন তিনি। এ কারণে ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তার মতে, 'বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ টাকা খরচ বা নতুন প্রকল্প শুরু করতে দ্বিধাগ্রস্তে আছেন।’

নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে ও বড় আকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করেন।

যখন উন্নয়ন প্রকল্প চালু হবে এবং মানুষ ভবন নির্মাণে আস্থা ফিরে পাবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই সিমেন্টের চাহিদা বাড়বে। তত দিন পর্যন্ত সিমেন্ট ও নির্মাণ খাত স্থবির থাকার আশঙ্কা আছে।


ওষুধ-রেস্তোরাঁ-পোশাকসহ ৭ পণ্য-সেবায় ভ্যাট কমল

আপডেটেড ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ ২১:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশেষে ওষুধ, রেস্তোরাঁ, পোশাক ও মোবাইল সেবাসহ বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর আরোপিত শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট কমালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মোট ৭ রকম পণ্য ও সেবার ওপর ৯ ধরনের ছাড় দিয়ে বুধবার ৪টি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

করছাড় পাওয়া খাতের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, মোবাইল সিম ও ইন্টারনেট সংস্থা (আইএসপি), নন-এসি হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও পোশাক। এর মধ্যে মোবাইল সিম কার্ড ও আইএসপি সেবার ওপর পৃথক এবং পোশাকের ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্র্যান্ড ও নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরের পোশাকের ক্ষেত্রে আলাদা ভ্যাটহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সী গণমাধ্যমে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আজ (বুধবার) থেকেই তা কার্যকর হবে।’

বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ভিত মজবুত করার লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি সরকার ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে। সেখানে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্কের হার পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এতে ফুঁসে ওঠে নাগরিক সমাজ। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল-আমিন শেখ জানান, ‘পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও অংশীজনদের অনুরোধ বিবেচনায় বৃহত্তর জনস্বার্থে কিছু পণ্য ও সেবায় বিদ্যমান ভ্যাটের হার, উৎসে ভ্যাট কর্তনের হার এবং সম্পূরক শুল্কের হার কমিয়ে এনে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। ভবিষ্যতেও বৃহত্তর জনস্বার্থে করছাড় দেওয়া হবে।’

এনবিআর জানিয়েছে, সব জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা সেবাকে আরও সহজতর করার লক্ষ্যে ওষুধ শিল্পের ওপর ব্যবসায়িক পর্যায়ে বাড়ানো ভ্যাটের হার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে আগের মতোই ২ দশমিক ৪ শতাংশ রাখা হয়েছে, যা এর আগের আদেশে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল। এনবিআর আশা করছে, ওষুধের ওপর অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করায় ওষুধ শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশ বজায় থাকবে এবং সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের দাম বাড়বে না। মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, ২৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতোই ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট সংস্থা (আইএসপি) সেবার ওপর নতুন আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে আইএসপিতে কোনো সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে না। দেশের চলমান ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও আধুনিক আইটি জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম বির্নিমাণ এবং অনলাইনভিত্তিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ছাড় দিয়েছে এনবিআর। সংস্থার প্রত্যাশা, মোবাইল ফোন এবং আইএসপি সেবার ওপর নতুন আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করায় এই দুই খাতে ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধি পাবে না।

এনবিআর আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভমূল্যে রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণের সুবিধার্থে থ্রি-স্টার, ফোর-স্টার এবং ফাইভ স্টার হোটেল ছাড়া অন্য সকল রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, ১৫ শতাংশের পরিবর্তে আগের মতোই ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থাকবে। অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ফলে সাধারণ জনগণ আগের দামেই এসব রেস্তোরাঁর খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়াও নন এসি হোটেল এবং মিষ্টান্ন ভান্ডারে আরোপ করা ১৫ শতাংশ থাকছে না। আগের মতোই তা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জনস্বার্থে মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ সেবায় বাড়ানো ভ্যাটের হার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আগের মতো ১০ শতাংশ ভ্যাট রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ফলে এ সংশ্লিষ্ট সেবামূল্য বৃদ্ধি পাবে না বলে মনে করে এনবিআর।

একই বিবেচনায় তৈরি পোশাক বিক্রির ওপর অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাকের ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। আর নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরের পোশাকের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। ফলে এসব খাতের ভ্যাটও আগের মতো অপরিবর্তিত থাকছে। এতে খরচও বাড়বে না। এর আগে যেসব খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন খাতে শুল্ক ও করছাড়ের বিষয়ে তুলে ধরে এনবিআর জানিয়েছে, দেশের আপামর জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে গত কয়েক মাসে এনবিআর ভোজ্য তেল, চিনি, আলু, ডিম, পেয়াজ, চাল, খেজুর এবং কীটনাশকের ওপর আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম করের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে করছাড় প্রদান করেছে।

বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পুস্তকের সহজলভ্যতা, আধুনিক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ই-বুক সেবায় স্থানীয় সরবরাহ ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। আর যানজট নিরসনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় দ্রুতগামী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব মেট্রোরেল সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও হজ যাত্রীদের খরচ কমানোর লক্ষ্যে এনবিআর হজ টিকিটের ওপর আরোপযোগ্য আবগারি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।


সূচকের বড় লাফ, লেনদেন বেড়েছে ৫৯ কোটি টাকা

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৫,১৯৫ পয়েন্টে উঠেছে * লেনদেন হয়েছে ৪২৬ কোটি টাকা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে বাজারটিতে। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই উভয় শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়ল। তবে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।

এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে দুই হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৬০ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। এমন পতনের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেনের শুরুতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিলেও লেনদেনের শেষদিকে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। ফলে টানা পাঁচ কার্যদিবস কমার পর মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে।

এ পরিস্থিতিতে সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে। ফলে মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির এবং ৭১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৫৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, আফতাব অটোমোবাইল, এডিএন টেলিকম, কোহিনূর কেমিক্যাল, ফাইন ফুডস এবং মুন্নু ফেব্রিক্স।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬১টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা।


banner close