বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে আরেকটি বড় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহালের মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে বাজারের আগুনে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি থেকে কিছুটা রেহাই দিতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৩ লাখ টাকা থেকে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না। তবে করপোরেট করে হাত দেননি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল; কর আগের মতোই থাকছে। বিদ্যমান করপোরেট কর হিসেবে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৭ শতাংশ করই অপরিবর্তিত থাকছে।
বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বয়স্ক ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা; বিধবা ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন।
বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি তার এবারের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছেন। আর বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে দেশের অর্থনীতি যখন নানামুখী চাপের মধ্যে, সেই সময় নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তারা। বলেছেন, অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সাফ বলে দিয়েছেন, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘পূরণ হবে না’। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে, সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে। আমার বিবেচনায় সেটাও কমে হয়তো ৫-এর ঘরে চলে আসবে। আগামী বছর যে খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তা মনে হয় না। তাহলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন জাদুবলে আসবে। এটা অসম্ভব; অবাস্তব লক্ষ্য। অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘গড় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৯ শতাংশ। সেই মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশে নেমে আসবে- এটাও আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।’
প্রস্তাবিত বাজেটের ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় পরিবর্তিত বিশ্ববাজার, জ্বালানি ও ডলারসংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটা মধুর হতে দেয়নি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।
সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বছরে এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের বছরে জনতুষ্টির খুব বেশি সুযোগ রাখার পথ মুস্তফা কামালের সামনে নেই। তার পরও স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছানোর নির্বাচনী স্লোগানটিকেই তিনি বাজেটে ফিরিয়ে এনেছেন। তার এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।”
২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় সেই ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় এবার বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মুস্তফা কামাল।
৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করলে বেড়ে যায় আমদানি। তাতে সরকারের জমানো ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়। রপ্তানি বাড়লেও আমদানির মতো অতটা না বাড়ায় এবং রেমিট্যান্সের গতি ধীর হয়ে আসায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য আর জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ডলার বাঁচাতে সরকার বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম দেয়ার পাশাপাশি কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে শুরু করে।
রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।
তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক ৪৪ শতাংশের মতো।
গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।
আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণসহ অন্যান্য সংস্কারের মাধ্যমে কর নেট সম্প্রসারণ, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহায়ক ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন ও সম্প্রসারণ, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, কর প্রশাসনের অটোমেশন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হবে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।
সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা জোগানোর চাপ থাকায় কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।
তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রাক্কলনের ভিত্তিতে অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে বলে সরকার ধারণা করছে। তার পরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।
নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
কোভিড-১৯ অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া ও শিখন ফলের মানোন্নয়নে বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে ব্যয়ের জন্য ৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গতকাল শনিবার বিশ্বব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড শুক্রবার (ওয়াশিংটন সময়) বাংলাদেশের জন্য এ অর্থের অনুমোদন দেয়। ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন’ (এলএআইএসই) প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালে এ অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ।
কোভিড-১৯ অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, সশরীরে ও অনলাইন পাঠদানের মিশ্র পদ্ধতির (বেল্ডেড লার্নিং) প্রাপ্যতা নিশ্চিতে, শিখনফলের মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার হার কমিয়ে আনতে এ অর্থ ব্যয় করতে পারবে বাংলাদেশ সরকার।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান কার্যালয়ের প্রধান আবদোলায়ে সেক বলেছেন, নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা আনতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোয় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ চলাকালে দীর্ঘমেয়াদে স্কুল বন্ধ থাকায় অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তিনি আরও বলেন, দরিদ্র পরিবারের মেয়েশিশুদের বিরাট অংশ স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবসময় পাশে থাকবে।
শ্রীলঙ্কাকে দেয়া সেই ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের পুরোটাই ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার ঋণের শেষ কিস্তির ৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, শ্রীলঙ্কা শেষ কিস্তির ৫০ মিলিয়ন ডলার ও ঋণের সুদ বাবদ ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বৃহস্পতিবার রাতে পরিশোধ করেছে।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তার আগে ১৭ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে ৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল দেশটি।
শ্রীলঙ্কা এমন সময়ে ঋণ পরিশোধ করল, যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে, ফলে রিজার্ভ কমছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
চরম আর্থিক সংকটে পড়ে রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের কাছে ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সে সময় শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছিল; রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল।
সংকট কাটিয়ে এখন শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। শোধ করে দিচ্ছে সেই ঋণ। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার শেষ কিস্তি পরিশোধ করেছে দেশটি।
চুক্তি অনুযায়ী, ঋণের বিপরীতে শ্রীলঙ্কা লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) পাশাপাশি বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ প্রদান করার কথা ছিল। সেই সুদের অর্থও পরিশোধ করেছে দেশটি।
যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কম, তারা বিপদে পড়লে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ নেয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। তবে শ্রীলঙ্কার ওই মুহূর্তে সেটি ছিল না।
ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ কমতে কমতে একেবারে তলানিতে নেমে এসেছিল। দুই সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভও ছিল না।
সংকট মেটাতে বন্ধুপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতির কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার জন্য আলোচনা করছে।
আইএমএফের বেইল আউটের জন্য অপরিহার্য হলো বহিরাগত ঋণ পুনর্গঠন করা, যা সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। দেশটির মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার দেশটির মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমেছে।
পর্যটন ও রেমিট্যান্স থেকে আসা ডলারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। বিষয়টি ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে আইএমএফের বেইল আউট পেতে দেশটিকে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরোপিত ভিসা বিধিনিষেধ সেদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘বাণিজ্যের সঙ্গে এই ভিসা বিধিনিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেয়নি। সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও যুক্তরাজ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি।’
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তৃতীয় আন্তর্জাতিক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রধান বিরোধী দল সহিংসতা করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ শুরু করার ঘোষণা দেয়।
প্রসঙ্গটি টেনে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ ভায়োলেন্স (সহিংসতা)। ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের (বিরোধী দল) নামও আছে।’
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা সংবিধান মেনে নির্বাচন করব। আমাদের নির্বাচন কমিশন শতভাগ স্বাধীন। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও সেটাই চাই।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রণীত যুক্তরাজ্যের নতুন রপ্তানি পরিকল্পে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের কাছে লিখিত চিঠিতে এই অনুরোধ জানান তিনি।
সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্য পরিকল্প বা ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) তৈরি করেছে যুক্তরাজ্য। এই পরিকল্পের সঙ্গে আগের ব্যবস্থার পার্থক্য নেই। এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো যে শুল্ককাঠামোর অধীন যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত সেই কাঠামো বজায় থাকবে। অর্থাৎ সেই সময় পর্যন্ত বিদ্যমান শুল্ককাঠামোর অধীন বা বিনা শুল্কে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা যাবে।
বিজিএমএ সভাপতি ফারুক হাসান চিঠিতে বলেছেন, ‘আগের অনুরোধের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে বলতে চাই, এই উত্তরণকালের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হোক।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মহামারির কারণে আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প ও বৈশ্বিক ফ্যাশনশিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
নিজের বক্তব্যের সপক্ষে আরও কিছু কারণ তুলে ধরেন ফারুক হাসান। যেমন মহামারি-পরবর্তী বাজারের অস্থিরতা, ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের ধরন ও উৎস পরিবর্তন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে যে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার রাশ টানতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তাতে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া সঠিক বিনিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধা পুনর্বিন্যাস করে নিজেদের প্রস্তুত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
সময় বৃদ্ধির অনুরোধ ছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য তৈরি এই পরিকল্পের আরও কিছু দিক সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ চাওয়া হয় চিঠিতে। এই পরিকল্পের বর্ধিত কাঠামোয় বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হবে, কিন্তু কীভাবে তা নির্ধারণ করা হবে এবং বিজিএমইএ কীভাবে সেই তথ্য পাবে, চিঠিতে সেই প্রশ্ন তোলা হয়।
এ ছাড়া জিএসপির সঙ্গে নতুন পরিকল্পের কী পার্থক্য, বিশেষ করে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদির বিষয়ে নতুন এই পরিকল্প কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে বিশদভাবে জানতে চেয়েছে বিজিএমইএ।
যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানির গন্তব্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন বা ৫০২ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
চিঠিতে বিজিএমইএ আরও বলেছে, তৈরি পোশাকশিল্পে বেশ কিছু ব্রিটিশ বিনিয়োগ এসেছে, যারা বেশ সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিজিএমইএ মনে করে, ডিসিটিএসের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও নিবিড় হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের নিরাপত্তা, মঙ্গল ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ২০২টি লিড স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানা আছে, যাদের মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি পোশাক খাতের বিভিন্ন বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন।
এ ছাড়া চিঠিতে আরও বলা হয়, শ্রমিকদের কল্যাণ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। আশা করা হচ্ছে, এবার শ্রমিকদের মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। তারপর পণ্য রপ্তানিতে বিভিন্ন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা। তবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরও যুক্তরাজ্য ও কানাডায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশের পোশাক খাত। আগস্ট মাসের শেষ দিকে এই ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির সাড়ে ১৬ শতাংশের গন্তব্য এই তিন দেশ।
নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এ পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিলে, তা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিলেও তাতে সাড়া না দিয়ে গত অর্থবছরে ডেভেলপমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে গেছে। তাই এবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে গতকাল প্রথম দিনের আলোচনায় ছিলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গেও আলোচনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকের এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডেভেলপমেন্ট ব্যবস্থায় নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারের ঋণ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
তিনি জানান, চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব নীতি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলো জানাতে দেশের অর্থনীতিবিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম দিনে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ ও ডলারের বিনিময় হারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তাকে জানানো হয়েছে। এসব পদক্ষেপের বিষয়ে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মেজবাউল হক আরও বলেন, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বিশেষ করে দুটো বিষয়ে নজর দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরামর্শ দিয়েছেন। তা হলো- হাই পাওয়ার মানি সৃষ্টি করে সরকারকে ঋণ না দেয়া। এ প্রক্রিয়াটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিলে হাই পাওয়ার মানি সৃষ্টি হয়, তা সরকারকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার কথাও বলেছেন। সে বিষয়টি প্রয়োজন হলে আগামী মুদ্রানীতিতে আনা হবে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে বলেও স্বীকার করেন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ডলারের বিনিময় হারে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পণ্যমূল্যে সেটার প্রভাব পড়েছে। যেহেতু আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। এ ছাড়া গত অর্থবছর সরকারের ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী ছিল। অনেকটাই নতুন টাকা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা হিট করেছে। এটি বন্ধ করেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে সরকারকে কোনো ঋণ দেয়া হচ্ছে না। ফলে সরকারকে ব্যাংকিং সিস্টেম থেকেই ঋণ নিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। অথচ সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল- তা ৬ শতাংশের নিচে রাখা হবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই ব্যর্থতার দায়ভার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরই বর্তায়। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম কাজ।
বাংলাদেশের কৃষিখাতভিত্তিক উন্নয়ন এবং পানি ব্যবস্থাপনা খাতে নতুন করে ১০৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় এক হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে গত বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা খাতে এডিবি বিভিন্ন সময় আরও ঋণ দিয়ে থাকলেও এবার বৃহৎ পরিসরে পানি এবং কৃষি খাতে ঋণ দিচ্ছে। জলবায়ু সংকট সামাল দিতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এ ঋণ দিচ্ছে আর্থিক সংস্থাটি।
এডিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৪২টি জেলায় এই ঋণ বণ্টন করা হবে এবং এর মাধ্যমে এসব জেলার বাসিন্দারা সরাসরি উপকারভোগীর তালিকায় আসবে। এর ফলে জেলাগুলোর ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমির ৭৭ শতাংশ মানুষের বন্যা ও খরার ক্ষতি প্রশমনের সুবিধা, সেচ সুবিধা এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত হবে।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এ ঋণের অর্থে নতুন করে ১০৫টি পানি ব্যবস্থাপনা স্থাপনার উন্নয়ন এবং পুরোনো ২৩০টিকে আগের তুলনায় শক্তিশালী করে তোলা হবে।
এ ছাড়া এই ঋণের অর্থে জরুরি ভিত্তিতে কক্সবাজারের বাঁকখালী রাবার বাগানের উন্নয়নসহ ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে এডিবির জ্যেষ্ঠ পানি ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক ওলিভিয়ার দিরিউ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী গ্রামে বাস করে এবং এরা প্রায় সবাই কমবেশি কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। পরিকল্পিত পানি ব্যবস্থাপনার অভাব এবং জলবায়ু সংকটের কারণে এদের জীবন সংকটাপন্ন। এডিবির এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
বিশেষ করে সেচ সুবিধা ও কৃষি উন্নয়নের ফলে এসব এলাকার ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সরাসরি সুবিধা ভোগ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
এডিবির পাশাপাশি এ প্রকল্পে আরও অর্থায়ন করছে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইআইইডি), নেদারল্যান্ডসের সরকার এবং বাংলাদেশের সরকার। প্রকল্পে আইআইইডি থেকে ৪২ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার, কারিগরি সহায়তাসহ নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে ১৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ৫৮ দশমিক ২২ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা হচ্ছে।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিবির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৮টি। মূলত এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নে এডিবি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
নানা অনিয়ম, সময়মতো গ্রাহকের অর্থ ফেরত না দেয়া ও কয়েকটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে দেশে কার্যরত নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের আস্থা কমছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলে মোট আমানতকারী ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬ জন, যা চলতি বছরের জুন শেষে কমে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে খাতটিতে সার্বিক আমানতকারী কমেছে ১ লাখ ২ হাজার ১৩৫ জন। এ সময়ে পুরুষ আমানতকারী কমেছে ৮০ হাজার ২৯১ জন এবং নারী আমানতকারী কমেছে ৩০ হাজার ৩৮৪ জন। সব মিলিয়ে ৯ মাসে মোট ব্যক্তি আমানতকারী হিসাব কমেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭৫টি। একই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার ৫৪০টি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারির কারণে গ্রাহকের আস্থা হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছেন না। বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যে কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তোলার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান খুবই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনার পর গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এ খাতে আমানত প্রবাহ কমতে থাকে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আমানতের পরিমাণ কমে ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর একই বছরের ডিসেম্বর শেষে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এ বছরের শুরুতে আমানত আবার কমে যায়। গত মার্চ শেষে আমানত কমে ৪৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় নামে। জুন শেষে যা আবার বেড়ে ৪৪ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে মোট আমানতকারী হিসাব ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯টি। গত মার্চ শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৫৫৪টি। তবে সবচেয়ে বেশি আমানতকারী কমেছে গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসে। ওই সময়ে খাতটিতে ব্যক্তি আমানতকারী কমে প্রায় ৫১ হাজার ৬৪২ জন হয়েছে। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে কমে হয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ২৭ জন। আর সর্বশেষ এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে কমেছে ২০ হাজার ৯২৬ জন। তবে ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা কমলেও সার্বিকভাবে গত ৯ মাসে আমানত বেড়েছে এ খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে বর্তমানে ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৩০৮টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে শহরে ২৮৬ ও গ্রামীণ এলাকায় ২৬টি শাখা রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত ও ঋণের হিসাব আছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ২৬৭টি। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রংপুর এবং ময়মনসিংহ বিভাগে আর্থিক খাতের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চট্টগ্রামে ৯ শতাংশ, রাজশাহীতে দশমিক ১৯ শতাংশ এবং সিলেটে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ আমানত কমেছে।
পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গত ছয় মাসে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে এ খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে আর্থিক খাতে ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।
তবে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের কারণে এ খাতে খেলাপি ঋণও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সর্বশেষ মার্চ পর্যন্ত হিসাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা এ খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশ। মার্চ শেষে দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৬টিতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশের বেশি। এদের মধ্যে ৬টির অবস্থা বেশ নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৮০ থেকে ৯৯ দশমিক ৬২ শতাংশ পর্যন্ত। তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ অপরিবর্তিত আছে, কমেছে ৬টিতে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমার্শিয়াল কনস্যুলার জন ফে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরেন। বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পরামর্শও দেন তিনি।
জন এ সময় বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট পাঁচটি খাতে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান। খাতগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ দূর করতে পারলে এই পাঁচ খাতে বড় বিনিয়োগ আসবে। পাঁচটি খাতের মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক অবকাঠামো। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৪ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রয়েছে। তবে এ দেশে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, যা কয়েক গুণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন জন ফে। বলেন, চড়া ট্যারিফ যার মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া বাড়তি লজিস্টিক খরচের কথাও তুলে ধরেন তিনি। মোটাদাগে ব্যবসা সহজীকরণ প্রক্রিয়াকে বেগবান করতেও তাগিদ দেন তিনি। এ ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে দুই দেশের এক হয়ে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। এর সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে জন বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যের ইতিবাচক উন্নয়নে তারা পাশে থাকবে।
চার শর্ত বেঁধে দিয়ে নতুন করে আরও ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে পারবে এক কোটি পিস করে ডিম। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নতুন করে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। ডিম আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চিস গ্যালারি, পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট, মেসার্স রিপা এন্টারপ্রাইজ, এস এম করপোরেশন, বিডিএস করপোরেশন ও মেসার্স জুনুর ট্রেডার্স।
বাজারে ডিমের দাম বাড়ার প্রবণতা রোধে গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু ডিমের উৎপাদক এবং বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা তা না মানায় এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানের পরও ডিমের দাম না কমায় আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।
তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, বাজার মনিটরিং করে যদি দেখা যায় ৪ কোটি ডিম আমদানির পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না, তাহলে আরও আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে।
ডিম আমদানিতে নতুন করে বেঁধে দেয়া চার শর্ত হচ্ছে- ১. এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু-মুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। ২. আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে। ৩. নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না। ৪. সরকারের অন্যান্য বিধি-বিধান প্রতিপালন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ডিমের দাম নির্ধারণের সময় জানিয়েছিল, বর্তমানে খামারে ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা হচ্ছে। সে কারণে খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য ১২ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে খুচরা পর্যায়ে এই দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি প্রদান করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, যতক্ষণ খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম ১২ টাকায় নিশ্চিত করা না যাচ্ছে, সে পর্যন্ত ডিম আমদানির অনুমতির এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি বলেন, আরও ডিম আমদানি হতে পারে এমন আশ্বাসের কারণে অনেক আমদানিকারক ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা ৪ কোটি।
ভোর থেকে রিকশা চালিয়ে দুপুরে পরিবারের জন্য বাজার করতে এসেছেন আব্দুর রহিম মিয়া। সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় হাড়ভাঙা পরিশ্রমে তার হাতে এসেছে ৪৩০ টাকা। তা দিয়ে এখন পাঁচজনের সংসারের বাজার করতে হবে। কাঁচাবাজার, পেঁয়াজের বাজারসহ কয়েকটি দোকানে ছোটাছুটি করেও বেশ কিছুক্ষণ কিছু কিনতে পারলেন না। বিষণ্ন মনে জানালেন, ‘এহন কিনতে হইব চাল, আলু, ডাল, ডিম আবার সবজি, আফনেই কন কেমনে কিনি?’ প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে তার জীবনযুদ্ধ শুরু। যদিও সেই কষ্ট ততটা গায়ে লাগে না, যতটা নিত্যপণ্যের দাম শুনলে লাগে।
সংসারে তার স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে ছোট দুই মেয়ে আর এক ছেলে। জানালেন, পাঁচজনের সংসারের জন্য খাবার কিনতে বড্ড কষ্ট হয়। তার আক্ষেপ, আগে অন্তত আলু আর ডিম কিনে খাওয়ার উপায় ছিল, এখন তাও নেই। বাসা ভাড়া, খাবার খরচ, বাচ্চাদের পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ নানা খরচ কীভাবে সামলান- এমন প্রশ্নে দুশ্চিন্তার সঙ্গে চোখের কোনায় কিছুটা জল তার।
“কেমনে যে বাইচ্চা আছি ভাই, খালি আমার খোদাই জানে’, চাল কিনলে ডাল কেনা যায় না, ডাল কিনলে ডিম কেনা যায় না, এমনে হামাগো বাইচ্চা থাকা, এইডারে জীবন কয় না রে ভাই।”
রহিম মিয়ার কষ্টের কথা শোনার পর বাজারে গিয়ে অতি প্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দাম কমেছে কি না তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল সরকারের নানামুখী উদ্যোগ-অভিযান চললেও পরিস্থিতি রয়েছে সেই একই রকম। কয়েক দিন আগে সরকার বাধ্য হয়ে তিনটি পণ্যে দাম নির্ধারণ করে দেয়। যে তিনটি পণ্যই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। তবে বাজারের ব্যবসায়ীদের কেউই সরকারের বেঁধে দেয়া দামের তোয়াক্কা করছে না। আলুর ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া দাম ৩৫ টাকা, রাজধানীর অন্তত পাঁচটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। কোথায় ৪৫ কিংবা ৪৮-এ পাওয়া গেলেও তার মান খানিকটা খারাপ। দেশি পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সরকার সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রির কথা বললেও রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় যেগুলো পাওয়া যায় তা মানসম্মত নয় বলে জানালেন ক্রেতারা।
মহাখালী বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার তৌহিদুল ইসলাম। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করতেই ক্ষোভ ঝাড়লেন সরকারের ওপর। ‘কোনো জিনিসের দামে নিয়ন্ত্রণ নাই, সরকার দাম বেঁধে দিয়ে বইসা থাকলে তো দাম কমবে না।’ তিনি জানালেন, ‘মাছ, মাংস, সবজি, ডিম, তেল কোনো কিছুই এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নেই। একটা সময় গরিব মানুষ পাঙাশ, তেলাপিয়া মাছ কিনতে পারত, এখন এগুলোর দামও অনেক বেশি।’
পেঁয়াজ, আলু কিংবা ডিম কেন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মিরপুরের ব্যবসায়ী মো. হানিফ জানালেন, পাইকারি বাজারেই দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বলেন, ‘আমরা কী করব বলেন। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, সামান্য লাভে বিক্রি করি, এখন মানুষ খালি আমগোরে কয়, আমরা কই যামু’- এমন অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে তিনি জানালেন আড়তে আলুর সংকটের কথা। আলু স্টোর থেকে বিক্রিও কমে গেছে বলে জানালেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
এদিকে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে ডিমের দামে, মোটাদাগে নতুন করে উল্লম্ফন নেই। তবে ভারত থেকে আমদানির খবরে কোথাও কোথাও পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা কমার খবর এলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব এখনো দৃশ্যমান নয়। গতকাল বুধবারও কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫০ কিংবা ৫২ টাকা দরেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ডিম।
পেঁয়াজের ক্ষেত্রে কেন দাম কমছে না জানতে রাজধানীর শীর্ষ পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমদানীকৃত পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ ৫৭ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও কয়েক কিলোমিটার দূরের মিরপুর, গুলশান, বনানী, মহাখালীতে খুচরা বাজারে এসে তা হয়ে যাচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত দাম নেয়ায় তাদেরও দোষারোপ করা হচ্ছে। সরকারকে তারা তাগিদ দেন খুচরা পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের।
এদিকে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল রংপুরের কয়েকটি কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালিয়ে নানা রকমের অনিয়ম পান অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্তারা। এ সময় সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, স্টোরে বেশি দিন রাখার ক্ষেত্রে খরচ এক হলেও কিছু ব্যবসায়ী বাড়তি দাম নিচ্ছেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘যারা অসৎ উপায়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে, ১৭ কোটি মানুষকে জিম্মি করে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না।’
পরে দৈনিক বাংলা থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে তারা। বলেন, বাজার স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলতে থাকবে। সরকার বেঁধে দেয়া দর যতদিন পর্যন্ত কার্যকর না হবে, ততদিন অভিযান চলবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
খুচরা ব্যবসায়ীরা কারও নিয়ন্ত্রণে নেই: হাজি মো. মাজেদ
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা কেন সরকারের বেঁধে দেয়া দামের তোয়াক্কা করছেন না- এ প্রশ্নের উত্তরে ঢাকার শীর্ষ পাইকারি শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মাজেদ এ জন্য ছোট থেকে বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীদের দায় রয়েছে বলে স্বীকার করেন। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের সমন্বয় বাড়াতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মাজেদ মনে করেন, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সততা থাকলে সরকারের দাম কার্যকর করা সম্ভব। গতকাল শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ৫৭ থেকে ৬০ টাকা, অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের পাইকারি দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। তিনি জানান, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কেন খুচরা বাজারে প্রভাব নেই?- এমন প্রশ্নে তার উত্তর, তাদের অতিলাভের মাশুল দিতে হচ্ছে সবাইকে। হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজের দাম কোনোভাবেই ১০০ টাকা হওয়ার কথা নয়। এখানে সরকারের এজেন্সিগুলোর তদারকি বাড়াতে হবে।
অনেকেই ইচ্ছা করে আলু বিক্রি করছে না: মোশাররফ হোসেন
মুন্সীগঞ্জসহ কয়েক জায়গায় এ বছর আলু উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে, তবে সেই সুযোগে একটা অসাধু চক্র দাম বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ হিমাগার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গত বছর দাম কম ছিল, অনেকেই আলু কিনে লোকসান করেছে, যার প্রভাবে এ বছর বাজার চড়া। তবে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে যেতে লাভের ব্যবধান অনেক বেশি বলেও দৈনিক বাংলাকে জানান তিনি। সরকারের বেঁধে দেয়া দামকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এতে অতিমুনাফার চিন্তা থেকে বের হয়ে আসবেন ব্যবসায়ীরা। মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে আলুর সংকট না থাকলেও এখন ভয়ে অনেকেই বিক্রি করছে না বলে জানান তিনি। এসব ব্যবসায়ীর চাপে রাখার পরামর্শ দেন মোশাররফ। বলেন, অনেকে জমি থেকে আলু ওঠার সময় কিনে রাখেন, যারা পরবর্তী সময়ে সুবিধা বুঝে তা বিক্রি করেন। সেই সব মৌসুমি ব্যবসায়ী এবার বেশি লাভ করতে চাইছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তবে ঢালাওভাবে সিন্ডিকেট হচ্ছে তা সত্যি নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে হাজার হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন, সিন্ডিকেট করার উপায় নেই।
তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে সরকার বেঁধে দেয়া দামেই আলু বিক্রি হচ্ছে, তবে খুচরা পর্যায়ে গিয়ে তা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কোথায় যাচ্ছে, তা বোধগম্য নয় বলেও তিনি জানান। পরামর্শ দেন, হিমাগার মালিকদের সঙ্গে সরকারের কর্তারা বসে যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সরকার প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিদরে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলারের দর, রিজার্ভের হিসাবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (বিএবি) আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে বিএবির সাথে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান, ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফত উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সেইসাথে প্রতিটি ব্যাংকে যেন কর্পোরেট গভর্ন্যান্স আরও শক্তিশালী হয়, সেই বিষয়ে নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
ব্যাংকগুলো যাতে ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা না করে, সে জন্য ব্যাংকমালিকদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জবাবে ব্যাংকমালিকেরা বলেছেন, ডলারের দাম কিছুটা বাড়ানো হলে তাতে সংকট কমতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নেয় তা ব্যাংকের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করতে হয়। তাই ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথা বলতেই হবে। অনেকেই বলেন, ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না। আবার অনেক ব্যাংক বাফেদার বেঁধে দেওয়া দর মানছে না। অনেক ব্যাংকে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ দেখা যাচ্ছে। আবার কিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্ধারিত মেয়াদের আগেই পদত্যাগ করছেন। এজন্য ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের উপর জোর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার এই বিষয়ে বলা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ধরনের পদক্ষেপে সহযোগিতা করা হবে বলে বিএবির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তাদের কোনো দাবি ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হযেছে। ফলে এখানে তাদের দাবি থাকার সুযোগ নেই।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ঋণের সুদহার নির্ধারণ, ডলারের বিনিময় দর, রিজার্ভের হিসাবায়নসহ বেশকিছু খাতে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ব্যাংকগুলো এখনো সঠিকভাবে এসব বিষয় পরিপালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যাংকখাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি নিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে চড়তে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। ৯ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কিছুটা কমার কারণে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে বলে আশার কথা শুনিয়েছে এডিবি।
বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংস্করণ প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। সেখানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।
এর আগে গত জুলাইয়ে প্রকাশিত আউটলুকেও এডিবি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছিল।
অর্থাৎ গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে (২০২৪ সালের জুন শেষে) বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
গত অর্থবছরের মতো চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সে কারণেই গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল।
‘কিন্তু এবার পেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়েছে।
এতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমবে। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করবে।’
বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি বেড়েছে। আগস্টে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ।
আগের মাস অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
আগস্ট মাসে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্টে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
আর ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্টে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ১ জুন বাজেট ঘোষণার পর থেকেই দেশের সব অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা বলে আসছে, বাজারের যে অবস্থা তাতে সরকারের এই আশা কখনোই পূরণ হবে না।
প্রতিবেদনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সমালোচনামূলক সংস্কারের অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কাঠামোগত সংস্কারের মধ্যে জনসাধারণের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, অভ্যন্তরীণ সম্পদের সংহতি বৃদ্ধি করা, সরবরাহের উন্নতি ঘটানো ও আর্থিক খাতকে আরও দৃঢ় করার বিষয় ছিল। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও মাঝারি মেয়াদে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ।’
সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়ায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস ধানমন্ডি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তাকে মোট ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ডিএসইতে এ সিকিউরিটিজ হাউসটির ট্রেক নম্বর-৯৮। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সম্প্রতি বিএসইসি এ জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।
তথ্য অনুসারে, ধানমন্ডি সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আরিফ ইসলাম খানকে ২ লাখ টাকা এবং হেড অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস মো. কবিরুল ইসলাম ও আইটি ইনচার্জ মো. রুবেল হোসেন সজীবকে এক লাখ টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তথ্য মতে, ধানমন্ডি সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) প্রবিধানমালা-২০২০-এর বিধি ৫(খ); সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস-২০২০-এর রুলস ১৭(৪); সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯-এর সেকশন ১৮; মার্জিন রুলস-১৯৯৯-এর রুলস ৩(১) ও ৩(২); সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯-এর সেকশন ১৬(ক); সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস-২০২০-এর রুলস ৬(১) ও ৬(৫); বিএসইসির ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জারি করা নির্দেশনা; সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা-২০০০-এর বিধি ১১ এবং সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা-২০০০-এর দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি ১ লঙ্ঘন করার প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি।
এসব আইন লঙ্ঘন করায় ধানমন্ডি সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে উপরোক্ত আইনের লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. আরিফ ইসলাম খানের বিরুদ্ধে একইভাবে মার্জিন রুলস-১৯৯৯-এর রুলস ৩(১) ও ৩(২); সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯-এর সেকশন ১৬(ক); সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস-২০২০-এর রুলস ৬(১) ও ৬(৫); বিএসইসির ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জারি করা নির্দেশনা; সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা-২০০০-এর বিধি ১১ এবং সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা-২০০০-এর দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি ১ লঙ্ঘন করার প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি। তাই এই কর্মকর্তাকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে কমিশন।
এ ছাড়া হেড অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্স মো. কবিরুল ইসলামকে ৯টি এবং আইটি ইনচার্জ মো. রুবেল হোসেন সজীবকে ৩টি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এক লাখ টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিষয়টি জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান খানকে ফোন দেয়া হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।