বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে আরেকটি বড় বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহালের মধ্যেই ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে বাজারের আগুনে চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি থেকে কিছুটা রেহাই দিতে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ৩ লাখ টাকা থেকে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম, তাদের কোনো কর দিতে হবে না। তবে করপোরেট করে হাত দেননি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল; কর আগের মতোই থাকছে। বিদ্যমান করপোরেট কর হিসেবে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৭ শতাংশ করই অপরিবর্তিত থাকছে।
বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বয়স্ক ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা; বিধবা ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন।
বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও ‘স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে’ যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তিনি তার এবারের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছেন। আর বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে দেশের অর্থনীতি যখন নানামুখী চাপের মধ্যে, সেই সময় নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণাকে ‘উচ্চাভিলাষী’ বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তারা। বলেছেন, অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সাফ বলে দিয়েছেন, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘পূরণ হবে না’। দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আমদানি কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি খুব একটা যে হবে, সেটা আশা করা ঠিক না। এ বছর বলা হচ্ছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে। আমার বিবেচনায় সেটাও কমে হয়তো ৫-এর ঘরে চলে আসবে। আগামী বছর যে খুব একটা ব্যতিক্রম কিছু হবে তা মনে হয় না। তাহলে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কোন জাদুবলে আসবে। এটা অসম্ভব; অবাস্তব লক্ষ্য। অতি আশাবাদের বদলে বাস্তবতা ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য ধরাই উচিত ছিল সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘গড় মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৯ শতাংশ। সেই মূল্যস্ফীতি কীভাবে ৬ শতাংশে নেমে আসবে- এটাও আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে প্রধান গুরুত্বে রেখে সরকারকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।’
প্রস্তাবিত বাজেটের ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার এই অঙ্ক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
গত বছর বাজেট দিতে গিয়ে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়’ প্রত্যাবর্তনের সংকল্প করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় পরিবর্তিত বিশ্ববাজার, জ্বালানি ও ডলারসংকট এবং মূল্যস্ফীতি তার সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটা মধুর হতে দেয়নি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে হাঁটতে হয়েছে কৃচ্ছ্রের পথে। তার ওপর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি আনার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে আর্থিক খাতের নানামুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে।
সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বছরে এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের বছরে জনতুষ্টির খুব বেশি সুযোগ রাখার পথ মুস্তফা কামালের সামনে নেই। তার পরও স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছানোর নির্বাচনী স্লোগানটিকেই তিনি বাজেটে ফিরিয়ে এনেছেন। তার এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে; বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সবার দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা, টেকসই নগরায়ণসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।”
২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বাজেটগুলোতে উন্নয়ন খাত বরাবরই বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় সেই ধারায় কিছুটা ছেদ পড়ে। পরিবর্তিত বাস্তবতায় এবার বিশ্বের অনেক দেশে মন্দার ঝুঁকি থাকলেও বাজেটের আকার বাড়িয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মুস্তফা কামাল।
৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে এবার উন্নয়ন ব্যয় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় (ঋণ, অগ্রিম ও দেনা পরিশোধ, খাদ্য হিসাব ও কাঠামোগত সমন্বয় বাদে) ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা যাবে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ২০ শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ের আরও প্রায় ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হয়ে, যার পরিমাণ অন্তত ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করলে বেড়ে যায় আমদানি। তাতে সরকারের জমানো ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়। রপ্তানি বাড়লেও আমদানির মতো অতটা না বাড়ায় এবং রেমিট্যান্সের গতি ধীর হয়ে আসায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য আর জ্বালানির দাম বাড়তে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় ডলার বাঁচাতে সরকার বিলাসপণ্য আমদানিতে লাগাম দেয়ার পাশাপাশি কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে শুরু করে।
রাজস্ব আহরণে এনবিআর বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রায় ৬৬ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন।
তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন কামাল। ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৬ শতাংশের বেশি। টাকার ওই অঙ্ক মোট বাজেটের ৫৬ দশমিক ৪৪ শতাংশের মতো।
গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা করা হয়।
আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ, ব্যয় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী অর্থায়নের দেশি-বিদেশি উৎস অনুসন্ধান হবে রাজস্ব খাতের নীতি-কৌশল। রাজস্ব আহরণে সব সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণসহ অন্যান্য সংস্কারের মাধ্যমে কর নেট সম্প্রসারণ, কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ, স্বয়ংক্রিয় ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মূল্য সংযোজন কর আদায় সহায়ক ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস স্থাপন ও সম্প্রসারণ, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, কর প্রশাসনের অটোমেশন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কর রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হবে।’
২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধনে তা ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদের সামনে তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে রেকর্ড ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান।
সাধারণত ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে রেখে বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা হয়। তবে টাকা জোগানোর চাপ থাকায় কয়েক বছর ধরেই তা সম্ভব হচ্ছে না। বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর।
তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ করে ওই ঘাটতি তিনি মেটাবেন। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে বাজেটে।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রাক্কলনের ভিত্তিতে অর্থবছর শেষে তা ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হবে বলে সরকার ধারণা করছে। তার পরও অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, তার নতুন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।
নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৬৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে বাজেট প্রস্তাবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, সংশোধনে তা সামান্য কমিয়ে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা করা হয়, যদিও মার্চ পর্যন্ত সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। মঙ্গলবার রাজধানীর পূর্বাচলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর কোনো অধিকার নেই। তিনি সতর্ক করেছেন, যদি মূল্য পরিবর্তন ঘটানো হয়, সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে, গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।
তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৭ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম ১৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অন্য এক অনুষ্ঠানে বলেছেন বলেছেন, আসবাবপত্র শিল্পের বিকাশ এবং রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের আসবাবপত্র শিল্পে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ শিল্পের উন্নয়নে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। দেশের সম্পদ ও সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দ্রুততম সময়ে বৈশ্বিক আসবাবপত্র বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার ২০তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকার অর্থনীতিতে ‘বুদবুদ’ তৈরি করেছিল, যা কর্মসংস্থান না করলেও ব্যাংকের শাখা ও কিছু অফিস বাড়িয়েছিল। সঙ্গত কারণেই বর্তমান সরকারকে সংকোচনমূলক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। না হলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াত না।
তিনি বলেন, ফার্নিচারের কার্যকরী ও নান্দনিক বৈশিষ্ট্য (ফাংশনাল ও এসথেটিক অ্যাট্রিবিউট) নেই, প্রয়োজনীয় উদ্ভাবনও হচ্ছে না। সরকার নীতিগতভাবে যতটা আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, তা করছে। ব্যবসায়ীদের উচিত উদ্ভাবন বাড়ানো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ফার্নিচার শিল্পের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে কাজ করছে। এই শিল্পে নান্দনিকতা ও রুচির বহিঃপ্রকাশ রয়েছে- তা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফার্নিচারের দামের কারণে নয়, উদ্ভাবনের অভাবে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আমাদের উচিত ফার্নিচার শিল্পে উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়ানো। আমরা কিছু দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যা এই শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
বিএফআইওএর চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ এবং বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. কে এম আখতারুজ্জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এবারের মেলায় ৪৮টি শীর্ষস্থানীয় ফার্নিচার কোম্পানি অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা সর্বাধুনিক নকশা ও পণ্যের প্রদর্শনী করবে ২৭৮টি স্টলে।
বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের গুলনকশা (হল-১), পুষ্পগুচ্ছ (হল-২) এবং রাজদর্শন (হল-৩) হলে পাঁচ দিনের এই মেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ‘আমার দেশ, আমার আশা—দেশীয় ফার্নিচারে সাজাবো বাসা’ স্লোগানে আয়োজিত এই মেলা দেশের ফার্নিচার শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন।
চীনের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বড় ধাক্কা খেয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
দ্য ইকোনোমিকস টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর গত ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে বাজারটি। পত্রিকাটি জানিয়েছে, এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার মূল্য মাত্র ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে ঝড়ের গতিতে কমেছে; যা এখন রেকর্ড।
কয়েনগ্লাসের ২৪ ঘণ্টার তথ্য উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্রিপ্টো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিকুইডেশন ইভেন্ট’-এ ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ উধাও হয়ে গেছে; যা ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসায়ীকে প্রভাবিত করেছে। গত ১০ অক্টোবর এক ঘণ্টারও কম সময়ের ট্রেডিংয়ের মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পজিশন বিক্রি হয়ে গেছে।
কয়েনমার্কেটক্যাপের তথ্য দেখায়, ১১ অক্টোবর দুপুর ১২.৪২ মিনিটে বিটকয়েনের মান ৮.০৫% কমে ১,১১,৫৪২.৯১ ডলারে দাঁড়িয়েছে; যার বাজার মূলধন ২.২২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ট্রেডিং ভলিউম ১৮৩.৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইথেরিয়াম ১১ শতাংশ পতনের পর প্রায় ৩,৮৭৮ ডলার এ ট্রেড করছিল। প্রধান অল্টকয়েন যেমন- এএক্সপি, ডজকয়েন, এবং কার্ডানো, ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যহ্রাসে পড়ে; যা ব্যবসায়ীরা এক ধরনের লিভারেজড লিকুইডেশন বা ধার নিয়ে করা ট্রেডের ধস হিসাবে বর্ণনা করেছে।
কয়েনগ্লাসের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লিভারেজড পজিশন বন্ধ হয়ে গেছে; যা ক্রিপ্টো ট্রেডিং ইতিহাসে একদিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় লিকুইডেশন ইভেন্ট। প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ট্রেডারের পজিশন জোরপূর্বক বন্ধ হয়েছে, যার বেশিরভাগই বিটকয়েন ও ইথেরিয়ামে লং পজিশন ছিল।
বিজনেস অ্যাম ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ক্রিপ্টো বাজারের ব্র্যান্ড স্ট্রেংথ ইনডেক্সের সমতুল্য ওপেন ইন্টারেস্ট রাতারাতি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এটি সিস্টেম থেকে দ্রুত অনুমানমূলক লিভারেজ অপসারণের ইঙ্গিত।
আফ্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল পারেরা বলেন, ‘ব্যর্থতার পরিবর্তে একটি তরলতা-চালিত রিসেট ছিল এটি। বিক্রি যান্ত্রিক ছিল। ব্লকচেইনের মৌলিক বিষয়গুলির সঙ্গে এর খুব একটা সম্পর্ক ছিল না এবং ম্যাক্রো প্যানিকের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
ইনভেস্কোর ইটিএফ (ETF) প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান ক্রিস মেলর বলেছেন, ‘এটি অযৌক্তিক আচরণ ছিল না। বিটকয়েন এখন উচ্চ-ব্যাটা ম্যাক্রো অ্যাসেটের মতো আচরণ করছে। এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি, মুদ্রাস্ফীতি তথ্য এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকেতের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এটি ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিণতির লক্ষণ, অপূর্ণতার নয়।’
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে গোটা বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এর ফলে শুধু শেয়ার বাজার নয়, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ছয় টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৯৫ টাকায়। এত দিন যা ১৮৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভোজ্যতেল পরিশোধন ও উৎপাদনকারী কোম্পানিদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এই দাম আজ থেকে কার্যকর হবে।
নতুন দাম অনুসারে আজ থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৭৭ টাকায়। এটি আজ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। অর্থাৎ খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বেড়েছে।
এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪৫ টাকা; আগে যা ছিল ৯২০ টাকা। সে হিসাবে সয়াবিনের পাঁচ লিটারের বোতলে দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।
খোলা পাম তেলের দামও লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম হয়েছে ১৬৩ টাকা। এটি আগে ছিল ১৫০ টাকা।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুনরায় বৈঠক হয়। বৈঠকে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ হয়। তবে এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনো অনুমোদন দেয়নি। তার আগেই ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী একটি কোম্পানির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম বাড়ার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে গত এপ্রিল মাসে সর্বশেষ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছিল। এছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা এবং বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৯২২ টাকা করা হয়। অবশ্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এসে খোলা পাম তেলের দাম লিটারে ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়।
আগস্টেই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তবে তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের মাত্র এক টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়। এরপর গত ২২ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে কবে বা কত বাড়ানো হবে, সেই বিষয়ে ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপর আজ পুনরায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ দামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে স্বর্ণ। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণে বাড়ানো হয়েছে চার হাজার ৬১৮ টাকা। ফলে এখন এক ভরি স্বর্ণ কিনতে গুনতে হবে দুই লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। আজ থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
গতকাল সোমবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম হয় দুই লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা। এখন আবার দাম বাড়ানোর ফলে সেই রেকর্ড ভেঙে গেলো।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণে ৪ হাজার ৬১৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে ৪ হাজার ৪০৯ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে৩ হাজার ৬৭৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণে ৩ হাজার ২১৯ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণে ৬ হাজার ৯০৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে ৬ হাজার ৫৯০ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৪ টাকা।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে ৫ হাজার ৬৫৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণে ৪ হাজার ৮২৯ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪২ হাজার ৩০১ টাকা। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে।
স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি রূপার দামও বাড়ানো রয়েছে। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপার দাম ১ হাজার ২২৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২০৫ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৯১৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ১ হাজার ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপার দাম ৭৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি সম্প্রসারণে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (মিডা)।
সোমবার দেশের সুনীল অর্থনীতি খাতের সরকারি সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ, মেরি কালচার, একুয়াকালচার এবং শতভাগ রপ্তানিমুখী সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম অগ্রসরের জন্য বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা আলোচনা করা হয়।
মিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে মৎস্য আহরণ, মেরিকালচার, শতভাগ রপ্তানিমুখী সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, অ্যাকুয়াকালচার ও সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কার্যক্রম অগ্রসরের জন্য একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মিডার নির্বাহী সদস্য কমোডর তানজিম ফারুক সভায় বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। নির্বাহী সদস্য মো. সরোয়ার আলম সময়োপযোগী নীতিগত সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘কৌশলগত অবস্থানের কারণে মহেশখালীর অপার সম্ভাবনা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে এটি এখন যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শের পর আমরা শিল্পায়ন, জ্বালানি ও গভীর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণকে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে যুক্ত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিডা গঠনের উদ্দেশ্য হলো এসব উন্নয়ন কার্যক্রমকে সমন্বয় ও গতিশীল করা। তবে মূল চালিকা শক্তি হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো। সোমবারের আলোচনায় আমরা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে গুরুত্ব দিয়েছি- বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগ সহযোগিতা প্রদান এবং ব্লু ইকোনমির নির্দিষ্ট উপখাতগুলোতে বিনিয়োগবান্ধব ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা।’
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন রমজান মাসে বাজারে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা থাকায় আমদানিকারকদের ডলার সংকট নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলসহ রমজানে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের নির্ধারিত চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এই পণ্যগুলো রমজানের পরও বাজারে বিক্রি করা যাবে।
গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন রমজানসংক্রান্ত পণ্য আমদানিতে কোনো জটিলতা বা বিলম্ব না ঘটে। প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তবে ডলার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে সেই প্রক্রিয়া চালু থাকবে বলেও জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রায়ই ডলার সরবরাহ করতে হতো। এখন ব্যাংকগুলোর নিজস্ব রিজার্ভ পর্যাপ্ত থাকায় গভর্নর প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন।’
এর আগে, গত ২২ সেপ্টেম্বর নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের শীর্ষ ২০ আমদানিকারকের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে আমদানিকারকদের শুল্কজনিত সমস্যার সমাধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন গভর্নর।
সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল, নাবিল গ্রুপ, নিউজিল্যান্ড ডেইরি ও ডেলটা অ্যাগ্রো ফুডসহ শীর্ষ আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘সরকার ইতোমধ্যে রমজানে ব্যবহৃত প্রধান ভোগ্যপণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এতে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত পণ্য আনতে উৎসাহিত হয়েছেন। ফলে এবার রোজায় বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দামে স্বস্তি আসবে।’
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা ইলেকটিক্স সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১২৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। রোববার প্রকাশিত কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি ।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডেসকোর শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ১৫ পয়সা। ডেসকোর মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪। সে হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছে ১২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা ৪৪ হাজার ৮৮২ টাকা।
নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছর শেষে ডেসকোর শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৩৩ পয়সা, শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৯৩ পয়সা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু কোম্পানির চলতি বছরে লোকসান হয়েছে এবং অবণ্ঠিত পুঞ্জীভূত মুনাফা ঋণাত্মক, তাই পরিচালনা পর্ষদ এ বছর কোনো লভ্যাংশ সুপারিশ করতে পারেনি।
টানা তিন বছর ধরে লোকসানে রয়েছে ডেসকো। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১২ টাকা ৭২ পয়সা। সে হিসেবে নিট লোকসান হয় ৫০৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানি শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১৩ টাকা ৬১ পয়সা। সে হিসাবে নিট লোকসান হয় ৫৪১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
কোম্পানির মূল্য-সংবেদনশীল তথ্যের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত শনিবার ডেসকোর পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ৩০ জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদিত হয়। সভায় ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য রেকর্ড ডেট রাখা হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর।
প্রায় এক মাসের স্থিতিশীলতা ভেঙে আবারও বেড়েছে এশিয়ার স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। ইউরোপে আগেভাগে শীত শুরু হওয়া এবং ইউক্রেনের গ্যাস অবকাঠামোয় রাশিয়ার হামলার প্রভাবেই এই জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর: রয়টার্স ও মার্কেট স্ক্রিনার।
শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় নভেম্বরে সরবরাহের জন্য গত সপ্তাহে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির গড় মূল্য ছিল ১১ ডলার, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০ ডলার ৬০ সেন্ট। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ ডলার ২০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এফজিইর গ্যাস ও এলএনজি সাপ্লাই অ্যানালিটিকস বিভাগের পরিচালক সিয়ামাক আদিবি বলেন, ‘ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে, কারণ অক্টোবরের শুরুতেই ঠাণ্ডা আবহাওয়া দেখা দিয়েছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারে এলএনজির দামও ঊর্ধ্বমুখী।’
তিনি আরও জানান, ‘ইউরোপে গ্যাস মজুত বাড়ানোর গতি কমলেও রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল থেকে সরবরাহ উচ্চমাত্রায় রয়েছে। তবে এশিয়ার বাজারে চাহিদা এখনো তুলনামূলক কম। মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার বাজারেও মৌসুমি প্রভাবে চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ফলে চলতি শীত মৌসুমে এলএনজির দিকনির্দেশনা নির্ভর করবে ইউরোপের ওপর।’
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে নভেম্বরে সরবরাহের জন্য এলএনজির গড় মূল্য ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১০ ডলার ৩৩ সেন্ট, যা নেদারল্যান্ডসের টিটিএফ ফিউচার সরবরাহ চুক্তির তুলনায় ৬৩ সেন্ট কম।
অন্যদিকে, আর্গাস এলএনজির মূল্য নির্ধারণ করেছে ১০ ডলার ৩৬ সেন্ট এবং স্পার্ক কমোডিটিস ১০ ডলার ৩০ সেন্ট প্রতি এমএমবিটিইউ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের আটলান্টিক এলএনজির ব্যবস্থাপক এলি ব্লেকওয়ে জানান, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলায় প্রায় ৩০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ব্যাহত হয়েছে। তা ছাড়া অক্টোবরেই ইউরোপে শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস মজুত থেকে উত্তোলন শুরু হয়েছে, যা দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি কম। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখতে শীত মৌসুমে ইউরোপকে তুলনামূলক বেশি দামে এলএনজি আমদানি করতে হতে পারে।’
তবে আইসিআইএসের সিনিয়র এলএনজি বিশ্লেষক অ্যালেক্স ফ্রোলি মনে করেন, সেপ্টেম্বরে চীনের এলএনজি আমদানি হ্রাস এবং মিসরের দুর্বল চাহিদা ইউরোপীয় বাজারের দামের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে।
অন্যদিকে স্পার্ক কমোডিটিসের বিশ্লেষক ম্যাক্স গ্লেন-ডোয়েপেল জানান, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে রপ্তানির প্রণোদনা এখনো বেশি, কারণ উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সরবরাহের তুলনায় ইউরোপীয় বাজারে মূল্য সুবিধা বেশি।’
এদিকে এলএনজির পরিবহন খরচও কিছুটা কমেছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত আটলান্টিক রুটে পরিবহন ব্যয় কমে দৈনিক ২২ হাজার ডলার, আর প্রশান্ত মহাসাগরীয় রুটে তা স্থির হয়েছে ২৪ হাজার ডলারে।
শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বেসরকারি খাতের পুঁজি, উদ্ভাবন ও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে আইসিসি বাংলাদেশের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংলাপে ইউনিসেফের প্রাইভেট ফান্ডরেইজিং ও পার্টনারশিপস বিভাগের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি এ আহ্বান জানান।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ ও ইউনিসেফের মধ্যে আয়োজিত এ সংলাপে শিশুদের অধিকার রক্ষা, টেকসই উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণে বেসরকারি খাতের ভূমিকা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হয়। রোববার আইসিসি বাংলাদেশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিসি বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের বাংলাদেশ অধ্যায় হিসেবে আইসিসি বাংলাদেশ দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা ও নৈতিক কর্পোরেট চর্চা প্রচারে নিরলসভাবে কাজ করছে, যা জাতীয় অগ্রাধিকার ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও জানান, ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আইসিসি বাংলাদেশ নিয়মিত সহযোগিতা করে আসছে। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের কার্যক্রমে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেয় সংস্থাটি। পরে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শিশুদের জন্য চিকিৎসা, খাদ্য ও মানবিক সহায়তায় ইউনিসেফ প্যালেস্টাইনের কার্যক্রমে তিন কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে।
সংলাপে ইউনিসেফের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও সহযোগিতাকে কাজে লাগানো জরুরি। ব্যবসায়ী সমাজকে একত্রিত করে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা আইসিসি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এ. কে. আজাদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার বিদ্যা অমৃত খান, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের এমডি ফজলুল হক, উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, সায়হাম কটন মিলসের এমডি প্রকৌশলী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, আইসিসি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমানসহ ইউনিসেফ ও আইসিসি বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ইউনিসেফ প্রতিনিধি দল বৈঠকে বলেন, বেসরকারি খাত শুধু অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমেই নয়, তাদের প্রভাব, প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শিশু অধিকার, লিঙ্গ সমতা ও তরুণদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সভা শেষে আইসিসি বাংলাদেশ ও ইউনিসেফ ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য একটি যৌথ রোডম্যাপ প্রণয়নে সম্মত হয়। এই রোডম্যাপের মূল লক্ষ্য হবে করপোরেট সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, নীতিগত সংলাপ জোরদার এবং শিশু ও তরুণদের কল্যাণে সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। এটি ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বাক্ষরিত আইসিসি বাংলাদেশ–ইউনিসেফ সমঝোতা স্মারকের আওতায় পরিচালিত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি অপারেটরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, তিন টার্মিনালের মধ্যে পানগাঁও ছেড়ে দিতে কিছুটা সময় নেওয়া হবে।
এছাড়া নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) অক্টোবরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, সেটারও কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপার্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আলোচনা শুরু হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক ইস্যু আছে, ভৌগোলিক ইস্যু আছে। আমরা মনে করি, সেটা বড় কোনো বিষয় হবে না। শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে এখানে সমস্যা হবে কেন?
চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও যেটা নেই, আমরা তা করছি, বন্দরের মধ্যে কন্টেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি গেট আছে, এর মধ্যে স্ক্যানিং মেশিন আছে মাত্র ৬টি। তার মধ্যে আবার ৩-৪টি নষ্ট থাকে। এভাবে বন্দর চলতে পারে না। এজন্য আমরা বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়াতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে যাবে।
‘ব্যবসায়ীরা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন, এরপরও বন্দর কি ছেড়ে দেওয়া হবে?’— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, তারা আগে এমন নানা কথা বলেন, কিন্তু পরে পরিস্থিতি দেখে আর কথা বলেন না।
‘বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, এজন্য খরচ বাড়ানো হবে, এটা বহন করতে পারবেন কি না’—এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, সেবার মান বাড়ানো হলে, দ্রুত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে বন্দরে অযথা জাহাজ বসিয়ে রাখা হ্রাসের মাধ্যমে ড্যামারেজ কমিয়ে আনতে পারলে বাড়তি খরচ দিতে কোনো সমস্যা হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একই দেশে দুই ধরনের পতাকার অস্তিত্ব রয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারি টাকায় কেনা পণ্য শুধু দেশের পতাকাবাহী জাহাজ বহন করতে পারবে। সরকার মালিকানাধীন জাহাজ বোঝাতে সরকারি পতাকাবাহী জাহাজের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে দেশের বেসরকারি জাহাজ কোন দেশের পতাকা বহন করে?
মূল প্রবন্ধে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়দী সাত্তার বলেন, দেশে জাহাজভাঙা শিল্প ও ছোট জাহাজ নির্মাণ খাত বড় জাহাজ নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। জাহাজ রপ্তানির জন্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ আছে। এগুলো ঠিক মতো সরবরাহ করতে পারলে কার্যাদেশ আরও বাড়বে। এজন্য প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে জাহাজ নির্মাণশিল্প উপযোগী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নির্ভর করে জাহাজ নির্মাণশিল্প। বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য এখন ইতিবাচক রয়েছে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে জাহাজ নির্মাণশিল্প দুই বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করা সম্ভব।
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী শিল্পের দিকে যেতে হবে। জাহাজ নির্মাণশিল্প সেই শিল্প যা শুধু তৈরি পোশাক নির্ভর শিল্পের বাইরে টেকসই শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন। বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা না করা পর্যন্ত এ ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম।
এতে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক, বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের
সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বিজিপিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ, বেপজার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভিরসহ ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের যখন সমস্যা হয়েছিলো তখন আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক করতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করব না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দর বাঁচাতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে। আমরা কি গোলাম? কলুর বলদ? অন্তর্বর্তীকালীন কেন ট্যারিফ বাড়াবে? আর কোনো টাকা বন্দরের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। এনসিটির পর একটি পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়েছিল, সেটি দিয়ে দিয়েছেন!
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। এ দেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার। বন্দর আমাদের কাছে নেই। আমাদের চুষে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করছে। আমদানি খরচ বাড়লে রপ্তানি খরচ বাড়বে। সব শিপিং এজেন্টদের সমভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব চিটাগাং চেম্বারের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পরবর্তীতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। ইইউ-এর সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনার সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাণিজ্যিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পরবর্তীতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে চায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার বলেন, সম্পর্কোন্নয়নে বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে উভয় পক্ষেরই সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ আছে।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসটিয়াগা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিয়ান ব্রিক্স মুলার, ফ্রান্স দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রেডরিক ইনজা, জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন এনজা ক্রিস্টেন, ইতালি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ফ্রেডরিকো জামপ্রেল্লি, সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ইভা স্মেডব্রেগ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ ডেলিগেশনের ট্রেড অ্যাডভাইজার আবু সাইদ বেলাল উপস্থিত ছিলেন।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার পুঁজিবাজারে সূচকের বড় পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন সামান্য বাড়লেও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার ডিএসই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২০২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩৪ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১১৪ ও ১৯৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১২ কোটি টাকার লেনদেন বেড়েছে। আগের দিন ডিএসইতে ৫৩০ কোটি ১৮ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
রোববার ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৭টি কোম্পানির, কমেছে ৩১১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হলো, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, প্রগতি লাইফ, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, সিমটেক ইন্ডাস্ট্রি, রূপালি লাইফ, ডোমিনেজ, রবি, সোনালি পেপার, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ও রহিমা ফুড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৮৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ১৪৭টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির কোম্পানির শেয়ার দর।
রোববার সিএসইতে ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ১২ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে। আগের দিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২২ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।