সোনার ভরি ফের প্রায় লাখ টাকায় উঠেছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতি ভরি সোনা ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকায় বিক্রি হবে। ১০ দিনের ব্যবধানে ভরিতে এই মানের সোনার দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা বেড়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সোনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর। এর আগে ১৮ মার্চ মূল্যবান এই ধাতুর দাম টানা বাড়তে বাড়তে প্রতি ভরি ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকায় উঠেছিল। পরে অবশ্য তা কমে ৯৮ হাজার থেকে ৯৭ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
অন্যান্য মানের সোনার দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। বুধবার রাতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক ভূঁইয়া লিটন এই দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বলেছেন, বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে দেশের বাজারে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাজুস। সর্বশেষ ২৮ মে ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৪৯ টাকা কমানো হয়েছিল।
ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউসগুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও অর্থের হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে। এখন থেকে সব ব্রোকারেজ হাউসে ‘সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার’ চালুর নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে এ সফটওয়্যার চালুর নির্দেশ দিয়ে গত সোমবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে সংস্থাটি।
বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ও সিকিউরিটিজ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যে ব্যাক অফিস সফটওয়্যারে ব্যবহার করে, তাতে ব্যবহারকারীর দেয়া তথ্য পরিবর্তন করা বা মুছে ফেলা যায়। এ ধরনের কার্যকালাপের ফলে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানী হয়েছে এবং শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে। তাই পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্টেকহোল্ডার কোম্পানির এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সমন্বিত সফটওয়্যার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিএসইসির নির্দেশনায়।
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসংক্রান্ত গাইডলাইন দিয়ে প্যানেলভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সব ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে কমিশনের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং যে কোনো এক্সচেঞ্জের এ সংক্রান্ত গাইডলাইন পরিপালন করে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্যানেলভুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহ করা সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যেসব ব্রোকারেজ হাউস এরই মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছে, সেসব ব্রোকারেজ হাউসকে স্টক এক্সচেঞ্জের তৈরি করা নীতিমালা মেনে ওই সফটওয়্যারের বিপরীতে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সনদ নিতে হবে। এই সনদ না নিলে কোনো এক্সচেঞ্জের প্যানেলভুক্ত সফটওয়্যার ভেন্ডার থেকে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার কিনে ও ইনস্টল করে কমিশনের এসংক্রান্ত নির্দেশনা ও যেকোনো এক্সচেঞ্জের এসংক্রান্ত গাইডলাইন পরিপালন করতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ দৈবচয়ন ভিত্তিতে সরেজমিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের পর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোর সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করছে কি না তা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্দেশনার পাশাপাশি বিএসইসি থেকে ডিএসই, সিএসই এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- ডিএসই এবং সিএসইর ট্রেকহোল্ডার মার্জিন নীতিমালা অনুযায়ী পাওয়া ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জের মালিকানা শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্য লভ্যাংশ দেয়া স্থগিত থাকবে। যোগ্য বিনিয়োগকারীর (এলিজেবল ইনভেস্টর/কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর) আইপিও, আরপিও, কিউআইও সুবিধা স্থগিত থাকবে। নতুন শাখা অথবা ডিজিটাল বুথ খোলার সুবিধা স্থগিত থাকবে। এই নির্দেশনার মধ্যদিয়ে বিএসইসি এর আগে ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি জারি করা এসংক্রান্ত নির্দেশনা রহিত করেছে।
চলতি বছরের জুন শেষে পাঁচটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ আটটি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো হলো অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঘাটতির মুখে পড়েছে এবং ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১১ হাজার ৬৮২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়ে, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয়।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং আলাদা রাখতে হবে।
প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনিসংকেত, কারণ এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে, যা মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের সার্বিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা আটটি ব্যাংকের চেয়ে কম। মার্চ পর্যন্ত সার্বিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ২৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংক বলছে অর্থনীতিতে এখন বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার ফলে চলতি অর্থবছরে এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগে অবশ্য বিশ্বব্যাংক বলেছিল এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে অর্থনীতির বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন সংস্থাটির বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ ছাড়া রেমিট্যান্স কমে যাওয়া, কাঙ্ক্ষিত হারে রপ্তানি বৃদ্ধি না পাওয়া, রিজার্ভ দুর্বল হওয়ার মতো কয়েকটি কারণে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন ঘিরেও অর্থনীতি মন্থর হওয়ার শঙ্কা জানায় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রবৃদ্ধি নিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোও। তাদের প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ বছর গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যার মধ্যে সবচেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে ভারত। দাতা সংস্থাটি বলছে চলতি বছর দেশটি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তালিকায় অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে কম হবে বলেই মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধির শঙ্কা করা হচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে দেশ দুটিতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া মালদ্বীপের ৫ দশমিক ২, ভুটান ৪ শতাংশ এবং নেপালের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
এ সময় বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লায়ে সেক এ সময় চারটি কারণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করেন। বলেন, জ্বালানি তেলের বাড়তি দাম, টাকার বিপরীতে ডলারের উচ্চমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া ও দুর্বল মুদ্রানীতির কারণে দ্রব্যমূল্য এখন বাড়তির দিকে। এ সময় মূল্যস্ফীতি কমাতে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর মুদ্রানীতিই পারে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদহার ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেঁধে না দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দেয় বিশ্বব্যাংক।
সংস্থাটির এই কর্মকর্তা এ সময় অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে সংস্কারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। রাজস্ব সংস্কারের মাধ্যমে সরকারের আয় বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
গেল কয়েক বছরে জিডিপি বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য কমাতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের প্রশংসাও করেন বিশ্বব্যাংকের কর্তারা। তিনি বলেন, সংস্কারগুলো টেকসই করতে হবে, এ জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
এ সময় নির্বাচনকালীন অর্থনীতির ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল্লায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে নির্বাচনের সময় অর্থনীতি কিছুটা মন্থর হতে পারে। এ সময় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও কিছুটা কমে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংক কর্তারা।
তবে দাতা সংস্থাটির কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা এ দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার, তৈরি পোশাক খাতের দক্ষ জনশক্তি এবং দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরা এ দেশের অর্থনীতিকে আরও বেগবান করতে পারে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পরের অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলেও আশাবাদ জানায় বিশ্বব্যাংক।
এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে তালিকাভুক্ত ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে মার্জার বা একীভূতকরণের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যদিও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতি থাকায় এ অতালিকাভুক্ত কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন পূর্বে বাতিল করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আদালতের অনুমোদনকে অনুসরণ করে এবার সেই বিএসইসিই গত ১ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একীভুতকরণ প্রস্তাবে অনুমোদন দিল। এর আগে গত বছরের ২৮ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একীভুতকরণ স্কীমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন পায় কোম্পানিটি।
বিএসইসির অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম দৈনিক বাংলাকে বলেন, মার্জারের প্রস্তাব অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি কোম্পানিকে একটি স্কিম তৈরি করতে হয়। পরে সে স্কিম অনুসারে শেয়ারহোল্ডার, হাইকোর্ট ও কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজও একটি স্কিম তৈরি করে তাতে শেয়ারহোল্ডার ও হাইকোর্টের অনুমোদন পাওয়ার পর বিএসইসির অনুমোদনের জন্য আবেদন জানায়। কমিশন তাদের তৈরি করা স্কীম অনুসারে একীভুতকরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এখন এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের বিপরীতের প্লেসমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানি দুটি একীভুত হবে।
এর আগে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সংক্রান্ত একীভুতকরণ খসড়া স্কিমে অনুমোদন নেয়া হয়। পরে ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানিটি জানায়, তারা এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডার, হাইকোর্ট ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে একীভুতকরণ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। সে অনুসারে কোম্পানিটি এরই মধ্যে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিয়েছে। পরে হাকোর্টেরও সম্মতি নেয় কোম্পানিটি। এখন বিএসইসির অনুমোদন পাওয়ায় কোম্পানিটি সকল বিধি অনুসরণ করে এ একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে।
সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতি থাকায় ২০২০ সালে এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করে দেয় বিএসইসি। এবার সেই কোম্পানিটিকেই তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির সঙ্গে একীভূতকরণের সম্মতি দিল সংস্থাটি। তথ্য অনুসারে, এসএফ টেক্সটাইলের সব দায় ও সম্পদ অধিগ্রহণের মাধ্যমে ফার কেমিক্যালের সঙ্গে একীভূত করা হবে।
জানা গেছে, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রডাকশন ইউনিট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফার কেমিক্যালের নিজস্ব জমিতে অবস্থিত। কোম্পানিটি ২০১৬ সাল থেকে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ৪২ হাজার ২৫০ স্পিন্ডল কটন, ভিসকস ও সিভিসি ইয়ার্ন স্পিনিং উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এসএফ টেক্সটাইলের।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান (কচি) ও সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী।
বৈঠকে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প, এর সম্ভাবনা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের রূপকল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গভীর প্রভাব এবং এই প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ দেশগুলোতে ব্যাপক মুল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে এবং ইউরোপ ও আমেরিকার মতো প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোতে পোশাকের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। কারণ, ভোক্তারা পোশাকের চেয়ে খাদ্য এবং জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে এবং পোশাক খাতে রপ্তানি কমে যাওয়া দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর সরাসরি প্রভাব রাখছে।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান শিল্পের এই সংকটময় ও চ্যালেঞ্জময় পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বৈশ্বিক বাজারে শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারের নীতি- সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বিশ্বব্যাপী উচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যান-মেইড ফাইবার-ভিত্তিক পোশাকসহ নন-কটন পণ্যগুলোতে যাওয়ার মাধ্যমে পণ্য বৈচিত্র্যকরণের ওপর শিল্প ক্রমবর্ধমানভাবে যে গুরুত্ব প্রদান করছে, তা তুলে ধরেন এবং নীতি-সহায়তার মাধ্যমে পণ্য বৈচিত্র্যকরণকে উৎসাহিত করা এবং সহজতর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া ফারুক হাসান পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিল্পের প্রতিশ্রুতি, বিশেষ রিসাইক্লিংয়ে সক্ষমতা তৈরি এবং সার্কুলার অর্থনীতি গ্রহণে শিল্পের প্রচেষ্টাগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মধ্যে রিসাইক্লিং এবং সার্কুলারটির প্রসারের জন্য সরকারি নীতি-সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল পোশাকশিল্পের জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে সহজতর এবং দ্রুততর সেবা প্রদানেরও অনুরোধ জানিয়েছে।
ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশি আয় বা রেমিট্যান্সের বিপরীতে কোনো ধরনের উৎসে কর না কাটার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ। গত রোববার দেশের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংককে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের এক নির্দেশনায় ২০২৩ এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং বাবদ পাওয়া রেমিট্যান্সের ওপর উৎসে কর আদায় করতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। অনেকে ধারণা করেন, ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। এ নিয়ে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তাই বিষয়টি স্পষ্ট করতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়, আয়কর আইন ২০২৩ এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী, আইটি ফ্রি ল্যান্সিং খাত থেকে কোনো উৎসে কর কাটা যাবে না।
দেশে এখন বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পোষা প্রাণীর খাবার ও লালন-পালন করার বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। এর বাজার প্রতি বছর ২০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে। তবে পোষা প্রাণীর খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য- সবই আমদানি করতে হয়।
গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিসটার মতে, ২০২৮ সালে পোষা প্রাণীর খাবারের বাজার নয় দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ৩০৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৮ লাখ ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ১০৯ টাকা ধরে)
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘরে পোষা প্রাণী রাখা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও পোষা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল ভাবনার কারণে দেশে পোষা প্রাণীর খাবার ও এর আনুষঙ্গিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
পোষা প্রাণীর প্রতি পরিবারের সদস্যের মতো আচরণ করা মানুষজন তাদের নিজের মতো পোষা প্রাণীকেও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন দেয়ার চেষ্টা করেন। দেশের মানুষের পরিবর্তিত জীবনধারা ও আয় বৃদ্ধির কারণে পোষা প্রাণীর যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে।
রাজধানীর গুলশানের বাসিন্দা সাদিয়া ইসলামের কথাই ধরা যাক- তার পোষা প্রাণীর জন্য আছে একটি লিটার বক্স, খাবারের বাটি ও আলাদা একটি ঘর। তিনি বলেন, আমার দুটি বিড়ালের দেখাশোনা ও চিকিৎসার জন্য আমাকে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হয়।
এদিকে একটি পোষা কুকুরের মালিক সাকিব খান জানান, প্রতি মাসে তার খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো।
ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত প্রসূন চৌধুরীর লালমাটিয়ার বাসায় তার সঙ্গী হিসেবে আছে একটি পোষা কুকুর।
এই ৩ জনের মতো আরও অনেকে আছেন যারা বিড়াল, কুকুর, খরগোশ ও পাখির মতো পোষা প্রাণীগুলোকে তাদের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মতো যত্ন নেন।
প্রায় এক দশক আগে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো পোষা প্রাণী যত্নে সচেতনতা বৃদ্ধি ও রাস্তা থেকে অসুস্থ প্রাণী উদ্ধার কাজ শুরুর পর থেকে রাজধানীজুড়ে পোষা প্রাণী উদ্ধারকর্মী ও প্রাণী দত্তক নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা হঠাৎ করে বাড়তে থাকে।
প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির হার আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে।
পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান পেট জোন বিডির মালিক জুবায়ের মাহমুদ বলেন, বিশেষ করে করোনা মহামারিতে লকডাউনের সময় পোষা প্রাণীর খাবার, আনুষঙ্গিক পণ্য ও ওষুধের চাহিদা বেড়ে যায়। তিনি জানান, ২০১৯ সালে প্রতি মাসে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
মহামারির আগে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২ লাখ গ্রাহক ছিল, বর্তমানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখে।
মিউ মিউ শপ বিডির প্রধান নির্বাহী সামসুদ্দৌহা রিয়াদ বলেন, ২০১৭ সালে তিনি ও তার এক বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করেন। যখন তারা দেখলেন যে বাজার বাড়ছে, তখন তারা আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে ব্যবসা চালাতে শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বর্তমান মাসিক বিক্রির পরিস্থিতিকে শুরুর সময়ের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে বিক্রি প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে।
পোষা প্রাণী ডট কমের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্যের তালিকায় বিড়ালের খাবার, খেলনা ও অন্যান্য পণ্য। ২০১৭ সালের তুলনায় এগুলোর বিক্রি ৭০-৮০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থ্রিএস ইমপেক্স ২০০০ সালে ব্যবসা শুরুর সময় মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার খাবার ও পণ্য বিক্রি করত।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এখন বিক্রি বেড়ে প্রায় দুই কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, পোষা প্রাণীর প্রতি মানুষের যত্নশীলতা দিন দিন বাড়ছে। এ সব পণ্যের বাজারও বড় হচ্ছে। তবে তা এখনো সংগঠিতভাবে হচ্ছে না।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন হয়েছে। এদিন ডিএসইর লেনদেন আগের কার্যদিবসের (বুধবার) চেয়ে কমেছে। ক্রেতার চাপ বেশি হওয়ায় এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান বেশি হয়েছে।
এদিন লেনদেনে দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। এই খাতের ৫৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪৭টি বা ৮২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। যেখানে সব খাত মিলিয়ে ৮৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
ডিএসইতে গতকাল সোমবার ৪৬৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন হয়েছিল ৫৩১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭২ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। ডিএসইএস সূচক দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৬০ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএস-৩০ সূচক ১ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৪ দশমিক ৬২ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮৭টি এবং কমেছে ৫৮টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ১৩৭টির।
এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে এসেছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, সোনালী পেপারের ১৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচের ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, জেমিনি সি ফুডের ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, লার্ফাজহোলসিমের ১১ কোটি ২ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশনের ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিডের ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং এমবি ফার্মার ৬ দশমিক ১০ শতাংশের শেয়ারদর বেড়েছে।
জুট স্পিনার্স, শ্যামপুর সুগার, জিল বাংলা সুগার, মেঘনা পেট, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, অ্যাপেক্স ফুড, অ্যাপেক্স স্পিনিং, অ্যাপেক্স ট্যানারি, ইমাম বাটন ও নাভানা ফার্মা।
কমার শীর্ষে উঠে এসেছে জুট স্পিনার্সের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। কমার শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে শ্যামপুর সুগারের ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, জিল বাংলা সুগারের ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, মেঘনা পেটের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, অ্যাপেক্স ফুডের ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ, অ্যাপেক্স ট্যানারির ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, ইমাম বাটনের ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও নাভানা ফার্মার ২ দশমিক ৫৩ শতাংশের শেয়ারদর বেড়েছে।
অন্যদিকে, অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস রোববার যেখানে লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৬ দশমিক ২৮ পয়েন্টে।
সিএসসিএক্স সূচক ৩ দশমিক ১৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৫২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৯ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬৬ দশমিক ৮২ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই৫০ সূচক দশমিক ৪৮ পয়েন্ট এবং সিএসই ৩০ সূচক দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩০৫ দশমিক ৫২ শতাংশ পয়েন্টে এবং ১৩ হাজার ৩৫৫ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্টে।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৪৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৫২টি এবং কমেছে ৩৪টির। শেয়ারদর পরিবর্তন হয়নি ৫৯টির। এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসা ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর ড্যাফোডিল কম্পিউটাসের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং ফুডের ৫৯ লাখ টাকা, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৩৫ লাখ টাকা, ইবনে সিনার ৩৫ লাখ টাকা, এইচআর টেক্সের ২৩ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ২১ লাখ টাকা, আরডি ফুডের ১৫ লাখ টাকা এবং ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো ১০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
দেশে ভোক্তা পর্যায়ে আবারও বাড়ানো হয়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। ৭৯ টাকা বাড়িয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৩৬৩ টাকা করা হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হবে নতুন এ দাম।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তাপর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম এক হাজার ১৪০ টাকা থেকে ১৪৪ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ২৮৪ টাকা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে সাড়ে পাঁচ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে।
এর মধ্যে ৫.৫ কেজির দাম বাড়িয়ে ৬২৫ টাকা, ১২.৫ কেজি ১৪২০ টাকা, ১৫ কেজি ১৭০৪ টাকা, ১৬ কেজি ১৮১৮ টাকা, ১৮ কেজি ২০৪৫ টাকা, ২০ কেজি ২২৭২ টাকা, ২২ কেজি ২৫০০ টাকা, ২৫ কেজি ২৮৪০ টাকা, ৩০ কেজি ৩৪০৮ টাকা, ৩৩ কেজি ৩৭৪৯ টাকা, ৩৫ কেজি ৩৯৭৬ টাকা এবং ৪৫ কেজির দাম ৫১১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্যপ্রতি কেজি ১১৩ টাকা ৬১ পয়সা সমন্বয় করা হয়েছে। এছাড়া রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহকৃত বেসরকারি এলপিজির ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্যপ্রতি কেজি ১০৯ টাকা ৭৯ পয়সা সমন্বয় করা হয়েছে। এছাড়া ভোক্তাপর্যায়ে অটোগ্যাসের দাম মূসকসহ প্রতি লিটারের মূল্য ৬২ টাকা ৫৪ পয়সা সমন্বয় করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক।
রোববার দুপুরে ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ভবনে এ সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন আবদৌলায়ে সেক। একই সঙ্গে বৈশ্বিক কারণে সৃষ্ট রিজার্ভের সাময়িক সমস্যাও বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের এই কান্ট্রি ডিরেক্টর করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সমস্যার মধ্যেও বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেককে স্বাগত জানান উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বাংলাদেশে বিগত ১৪ বছরে অর্জিত অর্থনৈতিক অগ্রগতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন তিনি। অব্যাহত সহযোগিতার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বড় ধস নেমেছে সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৪১ মাসের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন প্রবাসী আয়। দেশের চলমান ডলার সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্সের এই ধসকে অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদ ভাবছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মাসে দেশের বাইরে থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে মোট রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, যা তার ঠিক আগের মাস অর্থাৎ আগস্টে ছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলার। এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ২৫ কোটি ডলার। এ ছাড়াও আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মোট প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ৪১ মাসের তথ্য বলছে, গত মাসেই সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
করোনা মহামারির একেবারে শুরুর দিকে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা ও কর্মহীনতার কারণে রেমিট্যান্সে তলানিতে নেমে আসে। ২০২০ সালে এপ্রিলে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। যদিও ওই মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়লেও থেমে থাকেনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে বর্তমানে যখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়াসহ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ডলার সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে ঠিক এমন সময়ে রেমিট্যান্স কমে যাওয়াকে আশঙ্কার চোখে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
গত সোমবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন রেমিট্যান্স নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে পারলে চাপ কমবে রিজার্ভে। পাশাপাশি কেটে যাবে অর্থনৈতিক সংকট। তবে সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসের প্রবাসী আয় তার মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য সেদিন আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যে পরিমাণ কর্মী বিদেশে যাচ্ছে সেই হিসাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে না বরং কমছে। এ জন্য তিনি দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের কাছে রেমিট্যান্স বাড়াতে পরামর্শও চেয়েছিলেন। কদিন পরেই তার সেই শঙ্কা আরও বাড়ল।
রেমিট্যান্সের এই ধসের কারণ খুঁজতে দৈনিক বাংলার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের সাবেক রিসার্চ ফেলো ওয়াজিদ হাসান শাহর কাছে। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলারের দাম বেঁধে দেয়ার ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা কমেছে।
‘আপনি যদি হুন্ডি করে পাঠালে ১২০ টাকা দর পান, তাহলে কেন ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়ে ১০ টাকা কম নেবেন’ প্রশ্ন তোলেন ওয়াজিদ হাসান। এ জন্য তার পরামর্শ- ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
তাতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়বে কি না এমন প্রশ্নে তার উত্তর ‘কয়েকদিন হয়তো কিছুটা বাড়বে, তারপর বাজারই ঠিক করবে ডলারের দাম কত হওয়া উচিত।’
এ ছাড়াও রপ্তানির বিপরীতে ডলার ঠিকমতো দেশে আসছে কি না তা নিয়ে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শও দেন এই অর্থনীতিবিদ। তবে রেমিট্যান্সে সরকারের দেয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনাকে সাধুবাদ জানান তিনি।
চলতি অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে অবশ্য রেমিট্যান্স নিয়ে স্বস্তি ছিল। সে মাসে বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। তবে সে চিত্র পাল্টে যায় পরের মাস থেকেই। আগস্টে রেমিট্যান্স কমে দাঁড়ায় ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। পরের মাস সেপ্টেম্বরে যা আরও কমে দাঁড়াল ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে।
সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আনায় শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪ কোটি ১৩ লাখ ডলার। এছাড়া ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
আর রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ডলার।
তবে সরকারি-বেসরকারি খাতের মোট সাতটি ব্যাংকের মাধ্যমে এ মাসে কোনো রেমিট্যান্স আসতে দেখা যায়নি।
নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রির অপরাধে বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী, বেশি মূল্যে ডলার বিক্রির অপরাধে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে জরিমানা করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বেশি দামে ডলার বিক্রি করার অভিযোগে বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সেপ্টেম্বরে মাসে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এসব ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধানকে জরিমানা করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
ট্রেজারি বিভাগ ব্যাংকের টাকা ও ডলারের চাহিদা-জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংকে ট্রেজারি বিভাগের প্রধান পদে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ডলার বেচাকেনায় কারসাজির সঙ্গে জড়িত ১০ ব্যাংকের মধ্যে প্রচলিত ধারার ৭টি ও ইসলামি ধারার ৩টি ব্যাংক রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছিলেন, বেশি দামে ডলার বিক্রির জন্য এসব ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (৭) ধারা অনুযায়ী, এ অপরাধে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে। যদি আইনের একই ধারার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রথম দিনের পর প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা যায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত মার্চের পর থেকে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে সংকট আরও প্রকট হয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ শুরু করেন। তবে কিছু ব্যাংক ডলারের নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ থেকে ৬ টাকা বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করছে বলে অভিযোগ ওঠে। কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের জরিমানার কবলে পড়তে হলো।
অক্টোবরে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বাড়বে। নতুন ঋণের ক্ষেত্রে আগামী অক্টোবর মাসে ‘স্মার্ট’ (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার হবে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে এই সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। তার আগের দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই হার ছিল একই ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
অক্টোবরে বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। অর্থাৎ এ মাসে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)।
ট্রেজারি বিলের সুদ হারের ছয় মাসের গড় করে বাংলাদেশ ব্যাংক অক্টোবর মাসের এই স্মার্ট রেট হিসাব করেছে, যা শনিবার রাতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে এই ‘স্মার্ট’ সুদহার করিডর চালু করা হয়।
অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই সুদহার ছিল একই, ৭ দমিক ১০ শতাংশ। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ‘স্মার্ট’ সুদহার বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১৪। অক্টোবরে তা আরও বেড়ে হবে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিমাসের ১ তারিখে আগের মাসের ‘স্মার্ট’রেট জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই হার সে মাসে দেয়া নতুন ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ওই মাসের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য এই সুদহার কার্যকর থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, সুদহার বাড়ায় মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা কিছুটা সহজ হবে। আর নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর অনেক ব্যাংকেই আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার সাধারণ ঋণের চেয়ে ১ শতাংশ কম হেবে। সে ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ হবে। তাতে অক্টোবরে নেয়া এ খাতের ঋণের সুদহার আগামী ছয় মাসের জন্য হবে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
অবশ্য কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাত এবং ব্যক্তিগত ঋণ ও গাড়ি কেনার মতো ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক আরো এক শতাংশ সুপারভিশন চার্জ যোগ করতে পারবে। তবে তা বছরে একবারের বেশি হবে না। এর মানে এসব ক্ষেত্রে সুদের হার হবে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২৮ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের সুদহার প্রকাশ করছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারিতে ‘স্মার্ট’ সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর পর প্রতি মাসেই একটু একটু করে বেড়ে মে মাসে এই সুদহার বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন মাসে এই সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।