মৌসুমী ইসলাম
দেশের ব্যাংকিং খাতে একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেও ‘নাবিল গ্রুপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত নথিপত্র ও জামানত ছাড়াই প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে তিনটি ব্যাংক। তিনটি ব্যাংকই একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ যত টাকা ঋণ দেয়া যায়, তার সীমাও লঙ্ঘন করেছে।
এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা।
রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপের ওয়েবসাইটে গ্রুপটির ১৭টি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ থাকলেও তাদের পণ্য হিসেবে দেয়া আছে চাল, আটা, ময়দা, সুজি, ডাল ও পশুখাদ্য।
ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, সম্পূর্ণ নতুন এই গ্রাহককে দেয়া এই ঋণ ঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ, বড় অঙ্কের এই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ঠিকমতো জামানত রাখা হয়নি। প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই করা হয়নি। ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা আছে কি না, তাও দেখা হয়নি। অনুমোদন দেয়ার সময় যে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, পরের বোর্ডসভায় তাও শিথিল করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, এই ঋণ ওই সব ব্যাংকের পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ হতে পারে।
ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কতটা উদার ছিল, তা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। এতে তুলে ধরা হয়, ঋণ নেয়া গ্রুপটির একটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ঋণ আছে সাড়ে আট লাখ টাকা। ঋণের টাকা ব্যবহারের সক্ষমতা আছে কি না, তা যাচাই না করেই ওই কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ।
স্পষ্টতই অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কিছু বলা হচ্ছে না। তবে নাবিল গ্রুপ দাবি করেছে, তারা নিয়ম মেনেই ঋণ পেয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেছেন, বিস্তারিত জেনে পরে জানাবেন।
কোন ব্যাংক কত দিল
সব মিলিয়ে তিন ব্যাংকের কাছে গ্রুপটির ঋণের পরিমাণ (ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পরিভাষায় বিনিয়োগ) ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা চলতি বছরের ২১ মার্চ নাবিল ফিড মিলস ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেয়। ব্যাংকটির গুলশান শাখায় নাবিল গ্রেইন ক্রপসের নামে অনুমোদন দেয়া হয় ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক গ্রুপটিকে দিচ্ছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোনে এসএমএস এবং হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ দিলেও তিনি উত্তর দেননি।
গত ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৪৬তম বোর্ডসভায় নাবিল নব ফুড এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাবিল ফিড মিলস ও শিমুল এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়।
এর আগে ৩০ মে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮১তম বোর্ডসভায় গুলশান শাখা থেকে নাবিল নব ফুড এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাবিল ফিড মিলস ও শিমুল এন্টারপ্রাইজের নামে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ৪৫০ কোটি এবং নন-ফান্ডেড (ঋণপত্র বা এলসি ও ব্যাংক গ্যারান্টি) ৬৭০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগসীমা নতুনভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন খাতে এই টাকা ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে জানতে এসআইবিএলের এমডি জাফর আলমকে ফোন দিলে শাফায়াত নামে অন্য এক কর্মকর্তা ফোনটি ধরেন। তিনি জাফর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী বা পিএস বলে পরিচয় দেন। এমডির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার ব্যস্ত।’
পর্যাপ্ত নথি, জামানত ছাড়াই উদার হস্তে ঋণ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন একটি প্রতিষ্ঠানকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়া হলেও পর্যাপ্ত নথি নেই। এতে উল্লেখ করা হয়, অধিকাংশ ঋণেই কোনো ধরনের জামানত রাখা হয়নি। এই ঋণের অর্থ কোথায় ব্যবহার হবে তাও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া নতুন একটি গ্রুপকে এত টাকা ঋণ দেয়া হলেও তার পর্যাপ্ত নথি সংরক্ষণ করা হয়নি।
গ্রুপের একটি কোম্পানিকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে, কিন্তু সর্বশেষ সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্ট অনুসারে এর আগে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ওই কোম্পানির ঋণ আছে মাত্র সাড়ে আট লাখ টাকা। ফলে এই পরিমাণ অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে কি না, তাও যাচাই করা হয়নি।
এই ঋণ ব্যাংকের পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ কি না, সেই সন্দেহ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে।
বিশেষ নিরীক্ষাটির সুপারিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, এত বড় অঙ্কের ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত নেয়া হয়নি। তিন মাসে এলসি কমিশন মাত্র দশমিক ১৫ শতাংশ। গ্যারান্টির ক্ষেত্রে নাবিল ফার্মের করপোরেট গ্যারান্টি নেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৪৮১তম বোর্ড মিটিংয়ে এই ঋণ অনুমোদন দেয়া হলেও বোর্ডের ৪৮২ এবং ৪৮৩তম সভায় শর্ত শিথিল করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির ক্ষেত্রে সব পরিচালক এবং তাদের স্বামী বা স্ত্রীর গ্যারান্টি ছিল। কিন্তু তা শিথিল করে শুধু পরিচালকদের গ্যারান্টি রাখা হয়।
আমানত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বলা হয়, নিজ নামে অথবা রেফারেন্সে অন্যদের নামে প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি এবং পরবর্তী সময়ে আমানত ৬০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে, কিন্তু পরে তা শিথিল করে বলা হয়, পর্যাপ্ত আমানত রাখতে হবে। এই পর্যাপ্তের কোনো ব্যাখা দেয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, একটি নতুন ঋণের ক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা হলো তাও জানা জরুরি। এ ছাড়া গ্রাহক বেনামে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান কি না, সেটিও যাচাই করতে হবে। কোন বিবেচনায় নতুন একজন গ্রাহককে তিন ব্যাংক এত বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে, তা যাচাই করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে ফোর্সড (বাধ্যতামূলক) ঋণ আদায় অগ্রগতি অবহিত করা, কোন বিবেচনায় এই ঋণ দেয়া হলো তার ব্যাখা এবং বিস্তারিত কাগজপত্র জমা দেয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে ৯৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে এই ঋণে ২৩০ কোটি টাকা জামানত হওয়ার কথা। ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত অথবা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। এক জায়গায় বলা আছে, কৃষিপণ্য আমদানি ও বিপণনের জন্য এই অর্থ ব্যবহার হবে, কিন্তু সর্বশেষ সিআইবি প্রতিবেদন অনুসারে বিভিন্ন ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের এক্সপোজার মাত্র সাড়ে আট লাখ টাকা।
প্রকল্প ঋণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গ্রাহক একেবারে নতুন। ফলে সম্পূর্ণ নতুন একজন গ্রাহককে বাণিজ্যের জন্য এই পরিমাণ ঋণ দেয়া হলো। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের বড় ব্যবসা পরিচালনার দক্ষতা এবং অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়েছে কি না, তা যাচাই করা দরকার।
নাবিল ফিড মিলসের নামে নতুন করে ৭০০ কোটি টাকাসহ মোট ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা, কিন্তু নাবিল গ্রেইন ক্রপস কোনো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহ, এটিও গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। ফলে একক কোনো গ্রুপকে ঋণ দেয়া সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে, এটি তার লঙ্ঘন।
একক প্রতিষ্ঠানের ঋণসীমা লঙ্ঘন
কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ কোনো কোম্পানি বা গ্রুপকে দিতে পারবে না। এই ঋণ ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড উভয় মিলেই। এ ক্ষেত্রে ফান্ডেড বা সরাসরি ঋণ হবে ১৫ শতাংশ, যা বড় ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আগে সুদসহ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ।
নন-ফান্ডেড ঋণে রপ্তানি খাতের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার ঋণকে ৫০ টাকা এবং বিদ্যুৎ খাতের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার ঋণকে ২৫ টাকা হিসাবে গণনা করতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এমন নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এপ্রিল থেকে কার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়।
গত জুন শেষে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মোট মূলধনের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এর ২৫ শতাংশ হিসাবে ব্যাংকটি একটি গ্রুপকে সর্বোচ্চ দিতে পারে ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। কিন্তু তারা দিচ্ছে এর চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি।
একই সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ছিল ৩ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যাংকটি নাবিল গ্রুপকে সর্বোচ্চ ঋণ দিতে পারবে ৯৩০ কোটি টাকার মতো। তারা ২৭০ কোটি টাকা বেশি দিচ্ছে।
জুন শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ছিল ৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যাংকটি গ্রুপটিকে ঋণ দিতে পারে সর্বোচ্চ ৮১৪ কোটি টাকা। তারা বেশি দিচ্ছে ২৯৬ কোটি টাকা।
নাবিল গ্রুপের ব্যবসা কী
নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মো. জাহান বক্স মণ্ডল। এর পরিচালক ইসরাত জাহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এবং উপপরিচালক মো. মামুনুর রশীদ।
নাবিল গ্রুপের ওয়েবসাইটে গ্রুপটির ১৭টি প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাবিল নব ফুড, ফ্লাওয়ার মিল, ফিড মিল, অটো রাইস মিল, ডাল মিল, কনজ্যুমার প্রোডাক্টস, নাবিল ফার্ম, ক্যাটল ফার্ম এবং নাবিল ট্রান্সপোর্ট।
ওয়েবসাইটে গ্রুপের পণ্য হিসেবে কেবল ছয়টির কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো চাল, আটা, ময়দা, সুজি, ডাল ও পশুখাদ্য।
গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই।’
জামানত ছাড়া ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শতভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান আমরা। এখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ করেন। নিয়মের মধ্যেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ ছাড় করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি তদন্ত করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে সব ঠিক আছে।’
একক ঋণসীমা মানার বিষয়ে প্রশ্ন করলে এমডির দাবি, ‘অবশ্যই, নিয়ম মেনেই তিন ব্যাংক ঋণ দিয়েছে।’
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
দুদিন পর ১ জুন থেকে বাজারে আসবে ১০০০, ৫০ এবং ২০ টাকা মূল্যমানের নতুন ডিজাইন এবং সিরিজের নোট। ইতোমধ্যে নতুন নোটের ছবি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, দিয়েছে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নিয়ে সম্যক ধারণা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত ১০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটটির আকার হবে ১৬০ মিমি x ৭০ মিমি। নোটটি ১০০ শতাংশ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং জলছাপ হিসাবে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ, ইংরেজিতে ‘1000’ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম। নোটটিতে বেগুনি রঙের আধিক্য রয়েছে।
এছাড়া ১০০০ টাকা নোটের সম্মুখভাগের বামপাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং মাঝে প্রতিশ্রুত বাক্য ও মূল্যমান (এক হাজার টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা’র ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ওপরে বাঁদিকে নোটের মূল্যমান ‘১০০০’, ডানকোণে ‘1000’ ও নিচে ডানকোণে ‘৳১০০০’ মুদ্রিত রয়েছে।
নোটের পেছনভাগের ডিজাইন হিসেবে জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি, উপরে বামকোণে মূল্যমান ‘১০০০’, ডানকোণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নিচে ডানকোণ এবং বামকোণে মূল্যমান ‘1000’ মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ডানপাশে উলম্বভাবে ‘1000’ মুদ্রিত রয়েছে।
১০০০ টাকার নোটটিতে মোট ১৩ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। নোটটির সম্মুখভাগে বামপাশে ৫ মিমি চওড়া নিরাপত্তা সুতায় যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং ‘১০০০ টাকা’ খচিত আছে। নোটটি নাড়াচাড়া করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম অংশের নিরাপত্তা সুতার রং লাল হতে সবুজ রঙে পরিবর্তিত হয় এবং ‘১০০০ টাকা’ অংশে একটি উজ্জ্বল রংধনু বার উপর থেকে নিচে উঠানামা করে।
এছাড়া, নোটের ডানদিকে কোণায় মুদ্রিত মূল্যমান ‘1000’ রং পরিবর্তনশীল উন্নতমানের নিরাপত্তা কালি দ্বারা মুদ্রিত; যাতে নোটটি নাড়াচাড়া করলে এর রং ম্যাজেন্টা থেকে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয়
এবং মূল্যমানের ভেতরে কোনাকুনিভাবে মুদ্রিত ‘১০০০’ লেখাটি দৃশ্যমান হয়।
পাশাপাশি, নোটের সম্মুখভাগের পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা ইউভি ফ্লুরুসিন ম্যাজেন্টা কালি দ্বারা মুদ্রিত যা ইউভি ডিটেক্টর মেশিনে দেখা যায়।
নোটটিতে গভর্নর স্বাক্ষরের ডানপাশে স্বচ্ছ ছবি হিসেবে একটি প্যাটার্ন মুদ্রিত রয়েছে; যা আলোর বিপরীতে ধরলে ‘১০০০' লেখা দৃশ্যমান হবে। এছাড়া, নোটের সম্মুখভাগের বাঁদিকে ‘BANGLADESH BANK' লেখার নিচে মাইক্রোপ্রিন্ট হিসেবে উলম্বভাবে ‘BANGLADESH BANK' মুদ্রিত রয়েছে। পাশাপাশি নোটের পেছনভাগে বামদিকের উপরে ‘১০০০' এবং নিচে ‘1000' লেখার ব্যাকগ্রাউন্ডে 'BANGLADESH BANK এবং এর নিচে 'ONE THOUSAND TAKA' পুনঃপুন মুদ্রিত রয়েছে; যা শুধু Magnifying Glass দ্বারা দেখা যাবে।
ব্যাংক নোটটিতে অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হিসেবে অসমতল ছাপা (সম্মুখভাগে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি, 'বাংলাদেশ ব্যাংক' লেখা, গ্যারান্টি ক্লজ, বাংলা ও ইংরেজি মূল্যমান, আড়াআড়িভাবে ৬টি সমান্তরাল লাইন, পেছনভাগে জাতীয় সংসদ ভবন এর ছবি, “BANGLADESH BANK', 'ONE THOUSAND TAKA' লেখা ইত্যাদি ইন্টাগ্লিও কালিতে মুদ্রিত), লুকানো ছাপা (সম্মুখভাগের নিচে মূল্যমান 1000), Iridescent Stripe (পেছনভাগে উলম্বভাবে হালকা সোনালী রংয়ে ‘BANGLADESH BANK' লেখা) দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে ৬টি বৃত্ত রয়েছে।
৫০ টাকার নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত ৫০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০ মিমি x ৬০ মিমি। নোটটি ১০০ শতাংশ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ, ‘50' এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম রয়েছে। নোটটিতে গাঢ় বাদামী রঙের আধিক্য রয়েছে।
ব্যাংক নোটটির সম্মুখভাগের বামপাশে আহসান মঞ্জিল, ঢাকা এর ছবি এবং মাঝখানে 'প্রতিশ্রুত বাক্য' (Guarantee clause) ও মূল্যমান (পঞ্চাশ টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা'র ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের উপরে বামদিকে মূল্যমান ‘৫০’, ডানকোণে ‘50’ও নিচে ডানকোণে ‘৳৫০' মুদ্রিত রয়েছে। নোটের পেছনভাগে জলছাপ এলাকার ডানপাশে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এর বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'সংগ্রাম' মুদ্রিত রয়েছে। নোটের উপরে বামকোণে মূল্যমান ‘৫০’ ও ডানকোণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নিচে ডানকোণ এবং বামকোণে মূল্যমান ‘50' মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ডানপাশে উলম্বভাবে ‘50' মুদ্রিত রয়েছে।
নোটটিতে মোট ৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। নোটটির সম্মুখভাগে বামপাশে ২ মিমি চওড়া নিরাপত্তা সুতা সংযোজন করা হয়েছে যাতে ‘৫০ পঞ্চাশ টাকা' খচিত রয়েছে। নোটটি নাড়াচাড়া (Tilt) করলে নিরাপত্তা সুতার রং লাল হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয়। নোটটিতে গভর্নর স্বাক্ষরের ডানপাশে See Through image হিসেবে একটি প্যাটার্ন মুদ্রিত রয়েছে; যা আলোর বিপরীতে ধরলে ‘৫০’ লেখা দৃশ্যমান হবে।
এছাড়া নোটের সম্মুখভাগে আহসান মঞ্জিল, ঢাকা-লেখাটির উভয়পাশে Microprint হিসেবে ‘BANGLADESH BANK এবং পেছনভাগের বামদিকের উপরে ‘৫০' ও নিচে ‘50' লেখার ব্যাকগ্রাউন্ডে Microprint হিসেবে যথাক্রমে ‘50 TAKA' এবং 'BANGLADESH BANK' মুদ্রিত রয়েছে।
ব্যাংক নোটটিতে অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হিসেবে অসমতল ছাপা (সম্মুখভাগের আহসান মঞ্জিল এর ছবি, 'বাংলাদেশ ব্যাংক, গ্যারান্টি ক্লজ, বাংলা ও ইংরেজিতে মূল্যমান, আড়াআড়িভাবে ৬টি সমান্তরাল লাইন ইত্যাদি ইন্টাগ্লিও কালিতে মুদ্রিত), লুকানো ছাপা (সম্মুখভাগের নিচে মূল্যমান 50), দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে ২টি বৃত্ত রয়েছে।
২০ টাকার নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্বাক্ষরিত ২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটটির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৭ মিমি x ৬০ মিমি। নোটটি ১০০ শতাংশ কটন কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে 'রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর মুখ', '20' এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম' রয়েছে। নোটটিতে সবুজ রঙের আধিক্য রয়েছে।
ব্যাংক নোটটির সম্মুখভাগের বামপাশে ঐতিহাসিক স্থাপনা কান্তজিউ মন্দির, দিনাজপুর এর ছবি এবং নোটের মাঝখানে ‘প্রতিশ্রুত বাক্য (Guarantee clause) ও মূল্যমান (বিশ টাকা) মুদ্রিত রয়েছে। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা ও কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলা'র ছবি মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের উপরে বামদিকে মূল্যমান ‘২০’,ডানকোণে ‘20’ ও নিচে ডানকোণে ‘৳২০' মুদ্রিত রয়েছে।
নোটের পেছন ভাগে জলছাপ এলাকার ডানপাশে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, নওগাঁ এর ছবি মুদ্রিত রয়েছে। নোটের উপরে বামকোণে মূল্যমান ‘২০’ ও ডানকোণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম' এবং নিচে ডানকোণে মূল্যমান '20' মুদ্রিত রয়েছে। এছাড়া, নোটের ডানপাশে উলম্বভাবে ‘20' মুদ্রিত রয়েছে।
নোটটিতে মোট ৫ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়েছে। নোটটির সম্মুখভাগে বামপাশে ২ মিমি চওড়া নিরাপত্তা সুতা সংযোজন করা হয়েছে যাতে ‘৳২০ বিশ টাকা' খচিত রয়েছে। নোটটি নাড়াচাড়া (Tilt) করলে নিরাপত্তা সুতার রং লাল হতে সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয়।
নোটটিতে গভর্নর স্বাক্ষরের ডানপাশে See Through image হিসেবে একটি প্যাটার্ন মুদ্রিত রয়েছে; যা আলোর বিপরীতে ধরলে ‘২০’ লেখা দৃশ্যমান হবে। এছাড়া, নোটের সম্মুখভাগের ডানদিকে এবং পেছন ভাগের বামদিকের গ্লিউইশ প্যাটার্নের ভিতরের অংশে Microprint হিসেবে উলম্বভাবে ‘BANGLADESH BANK' মুদ্রিত রয়েছে।
জাপান ও বাংলাদেশ একটি চুক্তিপত্র বিনিময় করেছে, যার অধীনে টোকিও বাজেট সহায়তা, রেলপথ উন্নয়ন এবং অনুদান হিসেবে বাংলাদেশকে মোট ১ দশমিক ০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করবে।
মোট অর্থের মধ্যে, জাপান ৪১৮ মিলিয়ন ডলার ডেভেলপমেন্ট পলিসি ঋণ হিসেবে দেবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের তৃতীয় দিনে শুক্রবার এই চুক্তি পত্র বিনিময় হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসস’কে এ তথ্য জানান।
এ ছাড়াও, টোকিও ৬৪১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুটকে ডুয়েল-গেজ ডাবল রেললাইন হিসেবে উন্নীত করার জন্য এবং আরও ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে স্কলারশিপের জন্য।
বিভিন্ন দেশের ওপর ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি আটকে দিয়েছেন দেশটির এক আদালত। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির ওপর আদালতের এই রায়কে একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড রায় দিয়েছে, জরুরি যে আইনের অজুহাত দেখিয়ে হোয়াইট হাউস এই শুল্ক আরোপ করেছে সেই আইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে একচেটিয়াভাবে বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে শুল্ক বসানোর এখতিয়ার দেয় না।
ম্যানহাটন-ভিত্তিক এই আদালত আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের একচেটিয়া ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। এক্ষেত্রে মার্কিন অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য প্রেসিডেন্টের হাতে যে ক্ষমতা, কংগ্রেসের ক্ষমতা তার চেয়ে বেশি।
একইসঙ্গে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ট্রাম্প প্রশাসন পৃথকভাবে যে শুল্ক আরোপ করেছিল সেটাও স্থগিত করেছে আদালত। তখন হোয়াইট হাউজ বলেছিলো, অগ্রহণযোগ্য মাদক প্রবাহ ও অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোই এই শুল্ক আরোপের প্রধান কারণ।
এদিকে, আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। আদালতের এই রায়ের পর হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কুশ দেশাই এক বিবৃতিতে বলেন, কোনো জাতীয় জরুরি অবস্থা কীভাবে যথাযথভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নির্ধারণ করা অনির্বাচিত বিচারকদের কাজ নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আর ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিটি নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সব সংকট মোকাবিলা ও আমেরিকান মহত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিকারক পাঁচটি ক্ষুদ্র ব্যবসার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেছিল রাজনৈতিক সংস্থা লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার। যে দেশগুলো থেকে তারা পণ্য আমদানি করে, ওই দেশগুলোর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই মামলাই হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত ‘লিবারেশন ডে’ট্যারিফের বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের কোনো আইনি চ্যালেঞ্জ। এই মামলাটি ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আরও ছয়টি মামলা চলছে। এগুলো করেছে ১৩টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য এবং আরও অনেক ছোট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
সর্বশেষ রায়ে তিন বিচারকের প্যানেল থেকে বলা হয়েছে, ট্যারিফ বা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট’ (আইইইপিএ)-এর দোহাই দিলেও ওই আইন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একচেটিয়াভাবে এই ধরনের বিস্তৃত ট্যারিফ আরোপের ক্ষমতা দেয় না।
বিচারকরা লিখেছেন, আইইইপিএ আইনে শুল্ক আরোপের বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত ‘বিশ্বব্যাপী ও প্রতিশোধমূলক শুল্ক আদেশগুলো’ সেই ক্ষমতার পরিধিকে ছাড়িয়ে গেছে। ট্রাফিকিং ট্যারিফ ব্যর্থ, কারণ এগুলো আদেশে উল্লিখিত হুমকির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যারিফ ঘোষণার পর থেকে বিশ্ববাজারে টালমাটাল পরিস্থিতি দেখা দেয়। যদিও এরপর ওই ঘোষণা পুনর্বিবেচনা করা হয় এবং কিছু শর্ত তুলে নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দর কষাকষিও করে হোয়াইট হাউস।
তবে আদালত বৃহস্পতিবার এই রায় দেওয়ার পর সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচকে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে, যা প্রায় দেড় শতাংশ। আর অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স ২০০ সূচকেও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
মার্কিন শেয়ার বাজারেও এই রায়ের প্রভাব পড়েছে। ভবিষ্যতে সম্পদ কেনা-বেচা করা যাবে এ সংক্রান্ত শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে, ইয়েন ও সুইস ফ্রাঁর মতো মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন জাতির উদ্দেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন।
পূর্ব-রেকর্ড করা বাজেট ভাষণটি ওই দিন বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হবে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ছাড়া জাতীয় বাজেটের ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোকে বিটিভি থেকে ফিড গ্রহণ করে বাজেট ভাষণটি একই সঙ্গে সম্প্রচার করার অনুরোধ করা হয়।
এর আগে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সভায় জানানো হয়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
স্বাধীনতার পর এই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে: স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে সোমবার (২ জুন) বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
সূত্রটি জানিয়েছে, বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস হলো- এবার প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে অনেক কম হবে।
সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন চলছে সূচকের উত্থানে। এই সময়ে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২০ পয়েন্ট। বাকি দুটি সূচকের মধ্যে শরিয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ৬ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২১১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৭৯টির কমেছে এবং ৭৮টির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রথম ঘণ্টায় ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি টাকার বেশি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক বেড়েছে ১১ পয়েন্ট।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৮১টি কোম্পানির মধ্যে ৪১টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, ৩২টির কমেছে এবং ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় মোট লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) স্বায়ত্তশাসিত ও বিশেষায়িত একটি বিভাগে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রবিবার (২৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দেওয়া সাম্প্রতিক বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন সংস্কার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি দূর করতে সরকার পুনরায় ব্যাখ্যা দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজস্ব নীতিকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থেকে পৃথক করার যে কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (ট্যাক্সেশন) ক্যাডারের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
এ বিষয়ে এনবিআর, রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটি এবং অন্যান্য প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় একদিকে যেমন এনবিআরকে আরও শক্তিশালী করা হবে, অন্যদিকে রাজস্ব নীতির জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধন কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত অধ্যাদেশটি বলবৎ করা হবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকার আশা করে, এই ঘোষণার মাধ্যমে কর, শুল্ক ও মূসক বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের সব ধরনের উদ্বেগ দূর হবে এবং সকল রাজস্ব অফিস পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে রাজস্ব আহরণ ও সেবা কার্যক্রমে ফিরে যাবে।’