এ এস এম সাদ
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধি যখন নেতিবাচক, তখন বিপরীত চিত্র দেখা গেছে দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়া রেমিট্যান্স প্রবাহে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যেসব বিদেশি কাজ করেন, তারা গত অর্থবছরে ২৩ শতাংশ বেশি অর্থ নিজ দেশে পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে কর্মরত বিদেশিরা ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ নিজ দেশে পাঠান। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। আর এই টাকা পাঠানোর দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ভারতীয়রা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত অর্থবছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স গেছে ভারতে, যা দেশের বাইরে যাওয়া রেমিট্যান্সের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এই রেমিট্যান্সের অঙ্ক বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে অনেক কম। এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর রেমিট্যান্স আকারে ভারতে যায় ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের বরাত দিয়ে ওসব খবরে এটাও বলা হয় যে, রেমিট্যান্স আয়ে ভারতের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ তথ্য ভুল বলে দাবি করা হয়। বছর চারেক আগে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেশটির তৎকালীন হাইকমিশনার বর্তমানে পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, পিউ রিসার্চের ওয়েবসাইটে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে এ তথ্য উঠেছিল, যা পুরোপুরি ভুল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বেশ কয়েকটি খাতে অনেক ভারতীয় নাগরিক কাজ করেন। এ কারণেই প্রতি বছর ভারতেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্সে যায়।
রেমিট্যান্স পাঠানোয় দ্বিতীয় স্থানে আছে থাইল্যান্ডের নাগরিকরা। তারা ৮৭ লাখ ডলার দেশে পাঠায়। এরপরেই চীনের অবস্থান। চীনে যায় ৮৫ লাখ ডলার। জাপানে ৫৩ লাখ আর শ্রীলঙ্কায় ৫০ লাখ ডলার পাঠান দেশ দুটির নাগরিকরা।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয়। বিপুলসংখ্যক বিদেশি বিশেষত আফ্রিকানরা এ দেশে অবৈধভাবে বসবাস করেন। তাদের বড় অংশই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান। আবার ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বৈধভাবে বসবাসকারীরাও কর ফাঁকি দিতে তাদের আয়ের একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠান।
বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা জানে না কেউ
কতসংখ্যক বিদেশি কর্মী বৈধভাবে বাংলাদেশ কাজ করছেন তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। যেই সংস্থায় এ তথ্য থাকার কথা সেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলছে, দেশে কাজ করা বিদেশিদের সঠিক হিসাব নেই তাদের কাছে। তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্যের বরাতে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯৭ হাজার ৬৯৫ নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
২০২০ সালে প্রকাশিত টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ৪৪টি দেশের প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার নাগরিক এ দেশে কাজ করেন।
সংস্থাটির মতে, সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করেন তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো খাতে বিদেশি কর্মীরা কাজ করেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে যারা এ দেশে কাজ করেন তাদের ২০ শতাংশ আয়কর দেয়া লাগে। তাই কর ফাঁকি দিতে অনেকেই টুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করেন। তিনি বলেন, নিবন্ধনের মাধ্যমেই দেশে কাজ করতে দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। আর এই দায়িত্ব নিতে হবে বিডাকেই।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) ৪৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তরা। রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
বুধবার (০২ জুলাই) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, পোশাক খাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্ল্যাস্টিক পণ্যে ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ প্রবদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে পাটজাত পণ্যে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ, কাচজাত পণ্যে ৩৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কারখানাগুলোতে ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি এবং মাসের শেষে এনবিআরের শাটডাউনে দুইদিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে জুন মাসে রপ্তানি আয় সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।
মে মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছিল ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।
ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কেজিতে কমল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। চলতি জুলাইয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা। গত মাসে দাম ছিল ১ হাজার ৪০৩ টাকা। অর্থাৎ জুলাইয়ে ১২ কেজিতে দাম কমেছে ৩৯ টাকা।
বুধবার (০২ জুলাই) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ নতুন দাম ঘোষণা করেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন দর কার্যকর হয়েছে।
সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে বাজারে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ আছে। এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে।
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাট) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৩ টাকা ৬৪ পয়সা। গত মাসে তা ছিল ১১৬ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ এ মাসে দাম কেজিতে কমেছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে।
সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটোগ্যাস) দাম প্রতি লিটার ৬২ টাকা ৪৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মাসে তা ছিল ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। আমদানিকারক কোম্পানির চালান (ইনভয়েস) মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।
বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বৈঠক শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরই সিদ্ধান্ত নেবে, কারা এটি পরিচালনা করবে। তবে দরপত্র ডাকা হবে না। এটা হবে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে এবং ছয় মাসের জন্য। আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
টার্মিনালটি ১৭ বছর ধরে দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে এনসিটি পরিচালনাকারী সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ জুলাই।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুলাই থেকে নৌবাহিনীকে এই টার্মিনাল পরিচালনার ভার দেওয়া হতে পারে। বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনী আগামী ছয় মাস টার্মিনালটি পরিচালনা করবে।
এই টার্মিনালে জেটি আছে পাঁচটি। এই পাঁচ জেটিতে চারটি সমুদ্রগ্রামী জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী একটি জাহাজ ভিড়তে পারে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল। জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, স্থানান্তরসহ নানা কাজ হয় এই টার্মিনালে।
নৌবাহিনীকে পরিচালনার ভার দেওয়ার আগে গত ১৮ জুন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় টার্মিনালটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ জন্য মাসে ৭ কোটি করে ৬ মাসের জন্য ৪২ কোটি টাকা খরচের সরকারি অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছিল বন্দর। তবে বন্দর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
গত শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বন্দর কর্মকর্তাদের বৈঠকে বন্দরের সহায়তায় নৌবাহিনীর মাধ্যমে টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বন্দর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সেই বৈঠক হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী নভেম্বর মাসে চুক্তি হবে।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এই টার্মিনালে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। সেই চুক্তির আগপর্যন্ত টার্মিনালের পরিচালনার ভার থাকতে পারে নৌবাহিনীর হাতে।
আমদানি করা প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আগামী ৭ জুলাই এনবিআর ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ আমদানিকারকরা।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন বাজেটে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লিপ কেয়ার, ফেস ক্রিম, পাউডারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দাম কম হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে দাম। এতে বাজারে বাড়ছে অবৈধ পথে আসা প্রসাধনীর সরবরাহ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’
সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের উপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।
এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
সাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা (misdeclaration) ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’
চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’
এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।
মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।
স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।
গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।
পুঁজিবাজারে চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে সবকটি সূচকের উত্থান হয়েছে, বেড়েছে লেনদেন এবং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৫ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০০ কোম্পানির মধ্যে ২৯৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৪৬ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২২০ কোম্পানির মধ্যে ১৫৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৭ কোম্পানির ২৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সারাদিনে ডিএসইতে ৪১৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩৭২ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইন্দো বাংলা ফার্মাসিটিক্যালস এবং ৫ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ভ্যানগার্ড এএমএল রুপালি ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- লাভেলো আইসক্রিম, স্কয়ার ফার্মা, ব্রাক ব্যাংক, সী পার্ল, বিচ হ্যাচারি, ইন্দো বাংলা ফার্মা, বিএটিবিসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ফাইন ফুডস ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২৩৩ কোম্পানির মধ্যে ১২১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৭৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২৯ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রি এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
দেশের বাজারে ১৪ জুন স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছিল ২ হাজার ১৯২ টাকা। তবে আবার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ দাম কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম কমানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় নতুন করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ১৪ জুন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছিল। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল দেশে স্বর্ণের দাম ভরিতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বেড়েছিল। তখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা। দেশের বাজারে সেটিই ছিল এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।
বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গতকাল বুধবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকায় বিক্রি হয় এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২ টাকা।
দেশের বাজারে গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০২ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ২ হাজার ১৯২ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ১০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৮০৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ হাজার ৫২৮ টাকা দাম বেড়েছে। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সমূহ সম্ভাবনার প্রত্যাশা নিয়ে দেশে চালু হলো গুগল পে। ২৪ জুন মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে প্রযুক্তিগত সেবাটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডক্টর আহসান এইচ মনসুর। ভিসা ও মাস্টারকার্ডের সহযোগিতায় প্রথমবারের মত গুগলের সেবাটি পরিচালনা করবে সিটি ব্যাংক পিএলসি। চলুন, গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাটির সুবিধা ও ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
গুগল পে কি
বিশ্ব নন্দিত টেক জায়ান্ট গুগলের স্পর্শবিহীন লেনদেন ব্যবস্থার নাম গুগল পে। লেনদেনে ব্যবহারযোগ্য কার্ডের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণের জন্য গুগলের রয়েছে একটি ডিজিটাল মানিব্যাগ। এটি গুগল ওয়ালেট নামে পরিচিত। এই ওয়ালেটে কার্ড সংযুক্ত করে গুগল পে-এর মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ উপায়ে লেনদেন করা যায়। এর জন্য সাথে প্লাস্টিক কার্ড বহনের প্রয়োজন পড়ে না; একটি স্মার্টফোন আর নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট। এভাবে ঘরে বসে কিংবা বাইরে চলাচলে সর্বাবস্থানে যে কোনও সময় সব ধরনের আর্থিক লেনদেন করা সম্ভব।
গুগল পে’র সুবিধাসমূহ
- গুগলের এই পেমেন্ট সিস্টেমে রয়েছে উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি। এটি গ্রাহকের তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কোনও রকম ডাটা হ্যাক বা তথ্য চুরির আশঙ্কা নেই।
- নগদ অর্থ বা কার্ড বহনের ক্ষেত্রে প্রায় সময় তা ছিনতাইয়ের ভয় থাকে। এছাড়া অসাবধানতায় হারিয়ে যাওয়ারও ভয় থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও কাগুজে টাকা বা প্লাস্টিক কার্ড বহনের প্রয়োজন নেই বিধায় সেগুলো হারানোরও ভয় নেই।
- দেশে ও বিদেশে পস বা পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) টার্মিনালে অর্থ পরিশোধের জন্য শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ফোন স্পর্শ করলেই হবে। তবে পস টার্মিনালটি অবশ্যই এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) সমর্থিত হতে হবে।
এই সেবা গ্রহণের জন্য গুগলকে কোনও ফি দিতে হবে না।
- লেনদেনের মাধ্যম যেহেতু সম্পূর্ণ ডিজিটাল, তাই এর জন্য ব্যাংকে যাওয়ার দরকার নেই।
- চিরাচরিত ব্যাংকিং ট্রান্সফার সিস্টেমগুলোর তুলনায় গুগল পে’তে ফান্ড ট্রান্সফার অধিক দ্রুত গতির।
- গুগল পে’র আওতার মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের মত যাবতীয় ইউটিলিটি বিল এবং মোবাইল রিচার্জ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
- এতে আছে বিভিন্ন উপলক্ষে ক্যাশব্যাক এবং ব্যবহারের উপর রিওয়ার্ড পয়েন্টের সুবিধা। এই পয়েন্টগুলো সেবার ব্যবহারকে আরও লাভজনক করে তোলে।
- গুগল পে’র কিউআর কোড ফিচারটি ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীদের লেনদেনকে আরও সুবিধাজনক করে তুলবে। একদিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে সহজে ও দ্রুত পেমেন্ট নেওয়া যাবে, অন্যদিকে হিসাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
গুগল পে-এর ব্যবহার পদ্ধতি
- প্রথমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল প্লে থেকে গুগল পে অ্যাপটি ইন্স্টল করে নিতে হবে।
- এরপর অ্যাপ ওপেন করে গুগল অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে হবে।
- অতঃপর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যাদি নির্ভুলভাবে সংযুক্ত করতে হবে।
- সবশেষে কাজ হচ্ছে একটি গোপন পিন এবং বায়োমেট্রিক সুরক্ষা সেট করা।
- এভাবে সেটাপ সংক্রান্ত ধাপগুলো সম্পন্ন হলে সিস্টেমটি লেনদেনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কম সময়ে লেনদেনের জন্য কিউআর কোড সেট করে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া এর জন্য ফোন নাম্বারও ব্যবহার করা যায়।
শেষাংশ
বাংলাদেশে গুগল পে-এর এই যাত্রা দেশের ভবিষ্যতমুখী আর্থিক পরিমণ্ডল গঠনে এক বিশাল পদক্ষেপ। প্রযুক্তির এই সূচনালগ্নে প্রথম দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সাথে রয়েছে সিটি ব্যাংক। পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যাংক যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আরও প্রসারিত ও সহজলভ্য হবে গুগল পে। সর্বসাকূল্যে, এই নিরাপদ, দ্রুত গতি, ও ঝামেলাবিহীন লেনদেন ব্যবস্থায় রচিত হলো উন্নত জীবনধারায় মাইলফলক।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অঞ্চলে প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হয়েছে। গত রোববার বিকাল ৪টায় শুরু হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ চট্টগ্রাম থেকে এক কোটি ১২ লাখ লিটার পরিশোধিত ডিজেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মণি লাল দাশ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিপিসির জ্বালানি বিপণনকারী অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপোর মূল স্থাপনার ট্যাংকগুলো থেকে গোদনাইল ডিপোতে প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্যাংকে এই জ্বালানি তেল পাম্প করা হচ্ছে।
মণি লাল দাশ বলেন, প্রথমবারের মতো পাইপলাইনে বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল নেওয়া শুরু হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির গোদনাইল ডিপোর ট্যাংকে তেল নেওয়া হয়। গত সোমবার বেলা ১১টা থেকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম তাদের ডিজেল পাঠাচ্ছে। মেঘনার তেল পাঠানো শেষ হলে যমুনা অয়েল তাদের প্রয়োজনীয় তেল পাঠানো শুরু করবে।
পাইপলাইনটিতে ঘণ্টায় ৩২০ মেট্রিক টন জ্বালানি পাঠানোর সক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘণ্টায় ২৮০ টনের মতো পাঠানো হচ্ছে।
বিপিসির নবগঠিত পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপিএলসি) ও প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এই জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি তদারকি করছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গনমাধ্যমকে বলেন, রোববার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রাম থেকে গোদনাইল ডিপোতে পাইপলাইনে তেল পাঠানো শুরু হয়। গত সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পদ্মা অয়েলের গোদনাইল ডিপোতে ৬৬ লাখ লিটার ডিজেল পাঠানো হয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জ্বালানি পরিবহনের সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়সহ দ্রুততম সময়ে তেল পৌঁছানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত আড়াইশো কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুমোদন পায়। শুরুতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল। কিন্তু কাজ শুরু করতেই ২০২০ সাল লেগে যায়। পরে প্রথম দফায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
বিপিসির এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়।
বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ২৭ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পাইপে পরিবহন শুরু হলে বছরে সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের নথিতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর প্রকল্প থেকে ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, ফুয়েল, বিদ্যুৎ বিল, জমির ভাড়াসহ আরও কিছু খাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। এতে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা। আগামী ১৬ বছরের মধ্যে প্রকল্পের বিনিয়োগ উঠে আসবে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা বছরে ৬৫ লাখ টন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরবরাহ করা হয়েছে ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ।
বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহৃত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। ব্যয় আর ভোগান্তি কমাতেই এ পাইপলাইন তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার।
‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম – সাবপ্রোগ্রাম ২’ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এই ঋণ বাজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
গতকাল সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং এআইআইবির পক্ষে রজত মিশ্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। রজত মিশ্র এআইআইবির পাবলিক সেক্টর (রিজিয়ন ১) ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফান্ডস (গ্লোবাল) ক্লায়েন্টস বিভাগের অ্যাক্টিং চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও পরিচালক।
এই ৪০ কোটি ডলারের ঋণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যয় করা হবে।
অর্থ বিভাগ পরিচালিত এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য তিনটি: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অভিযোজনমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা।
এ উদ্যোগ সরকারের জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নে জলবায়ু সংবেদনশীলতা সংযোজনের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঋণের মেয়াদ ৩৫ বছর, যার মধ্যে প্রথম ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। এ ঋণ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটভিত্তিক সুদ এবং একটি পরিবর্তনশীল স্প্রেডে নির্ধারিত, যেখানে ফ্রন্ট-এন্ড ফি ০.২৫ শতাংশ; যা এআইআইবির প্রচলিত শর্তানুসারে নির্ধারিত হয়েছে।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সচেতন নীতিগত সংস্কারের পথ সুগম হবে।
চলতি (জুন) মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এসময়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার।
এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। সদ্যবিদায়ী মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।