পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে। তারপরও বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। বাংলাদেশের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং অস্থির ডলারের বাজারকে সুস্থির করা। আর এ জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুল আলম।
বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই পরামর্শ দিয়েছেন মৃদুভাষী কিন্তু দৃঢ়চেতা মানুষ শামসুল আলম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?
বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন আছে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কোন রাখঢাক না করে যেটা প্রকৃত অবস্থা, সেটাই তুলে ধরেছেন। চ্যালেঞ্জটা আপনারা জানেন। এই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু বিশ্বব্যাপী সবার জন্য। এটা এখন কোনো একক দেশের বিষয় না। করোনাভাইরাস যেমন কোনো একক দেশের বিষয় ছিল না। সে রকম ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে দরদামের ক্ষেত্রে, পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রে। মূল্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে এই যুদ্ধের কারণে।
করোনার ধাক্কা সামলে যে সময় আমাদের মতো দেশগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। বেশ কিছু দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিছু কিছু দেশ অবশ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছিল। বার্তাসংস্থা রয়টার্স যেটা বলেছিল ১২টি দেশ যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারে শ্রীলঙ্কার মতো। এটা মাসখানেক আগের বিশ্লেষণ। সেই সময় রয়টার্সের সেই গবেষণায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে বলা হয়েছে স্থিতিশীল। সেই ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। তার পরে অবস্থাটা একটু পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী দরদামের কারণে। অন্যান্য দেশেও বেড়েছে, আমাদের দেশেও বেড়েছে।
সেই ঘটনা আপনারা শুনেছেন। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। আমেরিকার মতো একটি পরিপক্ব অর্থনীতিতে, যুক্তরাজ্যের মতো একটি মহাশক্তিধর পরিপক্ব অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্র সব কিছু মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি গত জানুয়ারি থেকেই একটু একটু করে বাড়ছিল। সেটা বাড়ছিল কারণ করোনাভাইরাসের পরে সব দেশেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ফলে চাহিদা বাড়ছিল। সে অবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগে।
এই যুদ্ধ আমাদের মহা সংকটে ফেলে দেয়। বিশেষ করে গমের ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু ৪০ শতাংশ গম ইউক্রেন থেকে আমদানি করতাম। সেই অবস্থায় মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি যেন আরেকটু বাড়া শুরু করল। সেই যুদ্ধের কারণে যেহেতু পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেল হঠাৎ করে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ল। বিশেষ করে দুগ্ধপণ্য, ভোগ্যপণ্য চিনি- খাদ্যপণ্য ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে গেল। সবই কিন্তু আন্তর্জাতিক পণ্য, যেটা আমরা আমদানি করি। সেই বাড়ার ফলে সর্বশেষ এসে আমরা বাজেটও ঘোষণা করলাম। তখনও আমরা মোটামুটি আশাবাদী ছিলাম যে, আমরা এগোচ্ছি মূল্যস্ফীতি বাড়া সত্ত্বেও। যদিও জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জুলাইতে এসে আবার একটু কমল, তখন ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই করোনাভাইরাসের মধ্যে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কিন্তু আমি বলব সহনশীল ছিল। কারণ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
আমি যেটা বলতে চাচ্ছি এরচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার ক্ষমতা নিয়েছিল। ব্যবস্থাপনা করছিল। তারপর সুন্দরভাবে আস্তে আস্তে মূল্যস্ফীতি কমে এল। অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়ল। সর্ব ক্ষেত্রেই আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম। এখনকার যে মূল্যস্ফীতি অবশ্যই এটা বেশি। এটাকে আমি কোনোভাবেই হালকা করে দেখছি না। আমি যেটা পত্রপত্রিকায় দেখলাম যে, আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ; আর সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ৯ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যদিও এটা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়নি।
ভারতেও তাজা শাকসবজি নিয়ে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ এই সেপ্টেম্বরে। আর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ বা ৯ দশমিক ৯। সেই অর্থে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি আমরা খুব বেশি খারাপ করে ফেলছি, বিষয়টি তা না। আমি তুলনাটা দিচ্ছি এই জন্য যে, এই পরিস্থিতি এখন সবাইকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নত দেশ হোক, ভারত হোক, ভারত তো এখন অনেক উচ্চ প্রশংসিত দেশ, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও যথেষ্ট সুনাম আছে আমরাও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এশিয়ান টাইগার কাব বা ব্যাঘ্র শাবক হিসেবে আমরা চিহ্নিত হয়েছি। এখন এই মূল্যস্ফীতিটা যদি আমরা ধরি। মূল্যস্ফীতির বাইরে কিন্তু অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এটা হলো স্বস্তির বিষয়।
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো নিয়ে কিছু বলবেন?
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ভালোই আছে বলা যায়। শুধু আমি নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সব দাতা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। আমাদের গত জুন পর্যন্ত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর যদি ম্যানুফ্যাকচারিং বলি, সেটাও ছিল এই জুনে ১২ শতাংশ। সেবা খাত বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। এতে বোঝা যায় অর্থনীতির যে সাধারণ গতিপ্রবাহ, কর্মকাণ্ড-ব্যবসা বাণিজ্য সবই কিন্তু এর মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনো যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হয়। যেটা প্রবৃদ্ধিকে আসলে আঘাত করে। যেমন- আমরা আমদানিকে যখন নিয়ন্ত্রণ করি, যদিও শিল্পপণ্য আমদানি আমরা বন্ধ করিনি বেশি মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ভোগ কমে যাবে। তো সামগ্রিক অর্থে ভোগ কমে গেলে অর্থনীতির যে গুণিতক ফলাফল প্রবৃদ্ধির ওপরে আঘাত আসবে। দ্বিতীয় হলো- মুদ্রা সরবরাহকে আমরা একটু নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আমরা রেপোর রেট বা নীতি সুদের হার বাড়িয়েছি। নীতি সুদ হার বাড়ানোর অর্থ হলো মুদ্রা সরবরাহকে টেনে ধরা। এর মানে হলো প্রবৃদ্ধি যেভাবে হওয়ার কথা কিছুটা হলেও একটু ধীরগতি হতে পারে। যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালোভাবে করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রবৃদ্ধিকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে।
সেই প্রবৃদ্ধিও এডিবি বলছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। যদিও আমাদের বাজেটে প্রাক্কলন ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আমার যেটা মনে হয়, এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের তো প্রায় এক কোয়ার্টার চলে গেল, হয়তো আমাদের প্রক্ষেপিত সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সেটা আসলে মনে হয় হবে না। তবে ৬ শতাংশের ওপরে যদি থাকে, সেটাও বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো পারফরম্যান্স হবে বলে আমি মনে করি।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
বিশ্বব্যাংক সব সময়ই একটু কনজারভেটিভ-রক্ষণশীল। বিশ্বব্যাংক যা বলেছে, প্রতিবারই বাংলাদেশে তার বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এবারও তাই হবে আশা করি। তবে আমি আবারও বলছি, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও সেটাকে আমি খুবই ভালো বলে মনে করি। এ কথা ঠিক যে, সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স কিছুটা কমেছে। তবে এক মাস দেখে কোনো কিছুর প্রভাব বলে দেয়া কঠিন। আমি বরং তিন মাসের হিসাবটা দিই, এটাই বেশি নির্ভরযোগ্য। অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রতি মাসের হিসাব নিয়ে কথা বলার চেয়ে কয়েক মাসের গড় নিয়ে কথা বললে বেশি সঠিকভাবে রিফ্লেক্ট করে।
সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমলেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর হিসাব করলে তিন মাসে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স ১৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তাই তিন মাসের ধারাটা যদি আমলে নিই তাহলে এখনই শঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমি মনে করি সামনে রেমিট্যান্স বাড়বে। আমাদের প্রচুর লোক বিভিন্ন দেশে গেছে গত অর্থবছরে; প্রায় ১০ লাখ লোক গিয়েছে। এর আগের বছর গিয়েছিল মাত্র সাড়ে ৩ লাখ। তাই রেমিট্যান্স বাড়বে, আর বাড়বেটা কারণ হলো- মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধের ফলে লাভবান হচ্ছে অস্ত্র যারা বিক্রি করে সেসব দেশ। দুই হলো যারা তেল বিক্রি করে। মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধে তারা লাভবান হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন প্রচুর কাজকর্ম শুরু হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। তারা বিলাসবহুল প্রাসাদ বানাচ্ছে। তার মানে আমাদের লেবার ফোর্সের কিন্তু ডিমান্ড থাকবে। গত বছর যেমন ১০ লাখ গিয়েছে, এবারও তাই যাবে। যাওয়ার হারটা কিন্তু বেশি। আর দুই হলো- চীন-আমেরিকার যুদ্ধের কারণে রপ্তানির অনেক চাহিদা আমাদের দিকে চলে আসছে। যদিও ব্যবসায়ীরা দুই-একজন বলছেন, তাদের অর্ডারগুলো কমে গেছে, আমার মনে হয় এটা হচ্ছে সাময়িক। রপ্তানি যদি আমরা প্রপার চ্যানেলে ধরি, রপ্তানি আয়টি এখনো অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছেনি।
কিন্তু অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যে কমছেই। ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
আমি সে আলোচনাতেই আসছিলাম। সেটা আমি বলছি, রেমিট্যান্স বাড়বে, এখনো ইতিবাচক গত বছরের তুলনায়। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। এটা ঠিক, আমাদের রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে, ৪ অক্টোবর ছিল ৩৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন। যেটা গত বছর এই সময়ে ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই অর্থে প্রায় ১০ বিলিয়ন কিন্তু কম। কিন্তু এই যে ৩৬ বিলিয়ন, এটাও আমাদের জন্য সন্তোষজনক। ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আর রপ্তানি আয়ের কথা বলছি, গত অর্থবছর প্রথম ৩ মাসে রপ্তানি বেড়েছিল ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এবার বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যদিও কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, আমাদের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। কিন্তু মোটা দাগে গত তিন মাসে আমাদের রপ্তানি কিন্তু ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
আর আমদানির উল্লম্ফন কিন্তু কমেছে। গত বছর প্রথম তিন মাসে আমদানি বেড়েছিল ৪৬ শতাংশ। আর এই বছর প্রথম দুই মাসে আমদানি বড়েছে ১৬ শতাংশ। যেহেতু আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছি। এটা একটি ভালো লক্ষণ, সরকার যে নীতি নিয়েছে, সেটা কার্যকর হচ্ছে। আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করছি, যাতে ডলারের চাহিদাটা কমে আসে। আমাদের সব নীতির লক্ষ্য হচ্ছে ফরেন এক্সচেঞ্জকে স্ট্যাবেল করা। আরেকটা হলো মূল্যস্ফীতিকে কিভাবে বাগে আনতে পারি। এর মধ্যেই আমাদের সব নীতি কিন্তু নিবন্ধিত। আমরা প্রবৃদ্ধি নিয়ে সত্যি কথা বলি, এই মুহূর্তে ভাবছি না এত।
প্রবৃদ্ধি মূল্যবান, এটাকে আমি অবহেলা করছি না। কিন্তু প্রায়োরিটি দিচ্ছি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারটাকে স্ট্যাবল করা। ডলার স্ট্যাবল না হলে আরো ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারটাকে স্ট্যাবল করতে প্রতি মুহূর্তে লক্ষ রাখছে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক, ফিন্যান্স ডিভিশন। বাংলাদেশ ব্যাংক তো নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে এখন। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের জন্য এখন মূল্যবান।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং ডলারের বাজারকে স্বাভাবিক করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। আপনি এ বিষয়ে কী ভাবছেন?
এটা আমি বলব অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আমার একটি পরামর্শ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এটা মনে হয়, এখন একটি বাস্তবতা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দেখুন যদি মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হয়। তাহলে আমানতের সুদের হার আপনি ৬ শতাংশ রাখেন কী করে? তার মানে এখন যদি একজন ব্যাংকে আমানত রাখে সে ৩ শতাংশ টাকা হারাবে। এটাতো সমর্থনযোগ্য না। এ ছাড়া ডলার স্ট্যাবল বা স্থিতিশীল করার জন্য আমি মনে করি ঋণের সুদের হার কিছুটা হলেও বাড়ানো দরকার। কারণ, কম থাকাতে সস্তায় পেয়ে যাচ্ছে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা। তাতে হচ্ছে কি? তারা সস্তায় পেয়ে বেশি বিনিয়োগ করলে সমস্যা। কিন্তু আমি তো চাচ্ছি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে। কাজেই সুদের হার বাড়ালে তখন তারা কম নেবে। তখন তারা কম ঋণ নিতে চাইবে, কারণ তখন কস্ট অব ক্যাপিটাল বেড়ে যাবে। যেহেতু এখন ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। এটা একটু কমানোর জন্য সুদের হার একটু বাড়ানো দরকার। এটা অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমার নিজের মূল্যায়ন।
কৃচ্ছ্রসাধন বা ব্যয় সংকোচন করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে কি না?
আমরা এখন প্রকল্প অনেক কম গ্রহণ করছি। আমরা আগে একটি একনেকে ১২ থেকে ১৪টি প্রকল্প বিচার-বিশ্লেষণ করতাম। সেটি এখন গড়ে নেমে এসেছে ৬টায়। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এখন সেগুলোই নিচ্ছি। যেগুলো অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান করবে, কৃষি উৎপাদনকে বাড়াবে, যেটা আমাদের পণ্য পরিবহনকে আরো সহজ করবে, যে প্রকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহকে আরো শক্তিশালী করবে- এগুলোতো প্রকল্প নিতেই হবে, এগুলোই নিচ্ছি আমরা। আর যেগুলো বিল্ডিং সাজানো, এখন তা না করলেও চলবে- সেগুলোকে আমরা কিন্তু পিছিয়ে রাখছি। এটা হবে যখন আমাদের অবস্থা স্বাভাবিক হবে, তখন হবে।
কিন্তু অনেক প্রকল্প আছে যাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হচ্ছে বিদেশ থেকে কেনাকাটা। যদি এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমাই, তাহলে বিদেশ থেকে কেনাকাটা কমে আসবে, আর তাতে ডলার কম লাগবে। কাজেই একটি হলো প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অনেক সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। আবার প্রকল্প কিন্তু নিচ্ছিও। সেই প্রকল্পগুলো নেয়া হচ্ছে- যেগুলো উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহায়তা করবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা আর মনে করিনা যে, নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করা দরকার আছে; এখন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার যে, আমরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব কি না। আমরা এখন অর্ধেকের কম বাতি জ্বালিয়ে অফিস করি। এসি ২৫-এ দিই। এভাবে দেশের সব নাগরিকের উচিত এই সাশ্রীয় কর্মসূচি যেন আমরা সবাই বাস্তবায়ন করি। দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিকেরই এই হিসাব করা উচিত বলে আমি মনে করি। এই সমস্য কোনো দলের না। এই সমস্যা পুরো দেশের। এটা বিশ্বের সমস্যা। কাজেই সবার উচিত নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে যে সাশ্রীয় কর্মসূচিগুলো আমরা নিয়েছি, সেটাকে সহযোগিতা করা।
রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় ছাড়া রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য আর কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
বৈদেশিক মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য রিজার্ভটাকে বাড়াতেই হবে। রিজার্ভ বাড়লে আমদানির ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছন্দে থাকি। শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত আর কিছুই আমদানি করতে পারছিল না। তো সে জন্য রিজার্ভটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে জন্য আমরা চাচ্ছি ডলার আনতে। এখন ডলার কিভাবে বাড়ে- বৈদেশিক সহায়তার কারণে, এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ)-এর কারণে। গত অর্থবছরে আমরা ভালো এফডিআই পেয়েছি; ৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। তার আগের বছর এসেছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন। চলতি অর্থবছরেও এফডিআইপ্রবাহ বেশ ভালো। আমরা এখন চেষ্টা করছি স্বল্প সুদে, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে। সেটা আইএমএফ হোক বিশ্বব্যাংক বা এডিবি হোক। এখন আমার মনে হয়, ইআরডিকেও (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) বিনিদ্র রজনী কাটানো উচিত।
যত বৈদেশিক মুদ্রা এখন সংগ্রহ করা যায়। আমরা স্বল্প সুদে ঋণ চাচ্ছি যেমন লাইবর প্লাস ওয়ান বা এক শতাংশের কম। আর পরিশোধের সময় হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ বছর। ঋণের ক্ষেত্রে জাপান তো কখনো সুদ নেয় না। সেটা মাপ করে দেয়; দিয়ে আবার বলে এটা আবার তোমরা খাটাও অন্য জায়গায়। ঋণটাকে এখন নেয়ার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সক্রিয়। তবে সেসব ক্ষেত্রে ঋণ নেব, যেগুলোর লাভ ফিরে আসবে। আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করব। ইআরডির উচিত এখন বিনিদ্র রজনী কাটানো ঋণ আনার জন্য। আমরা এখন একটি আরামদায়ক জায়গায় আছি। আমাদের মোট ঋণ আমাদের দেশ-বিদেশে মিলে দেশজ আয়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ মাত্র ১৪ শতাংশ। আমরা দুটো মিলে যেতে পারি প্রায় ৬৭ শতাংশে। নেওয়ার সক্ষমতা এখনও আমাদের আছে।
যেসব প্রকল্প আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে- এ রকম প্রকল্পে আমাদের ঋণ নিতে হবে। নেয়ার সুযোগ আছে। আমাদের এখন ডলার দরকার, সেটাও দরকার। আর উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখার তো চেষ্টা করতে হবে সার্বিকভাবে। পুঁজির যে আমাদের সংকট, সেটা কাটিয়ে উঠব তো আসলে ডলার পেলেই। কাজেই আমার পরামর্শ হবে, ঋণের বিষয়ে আমাদের নেগোসিয়েশনের জন্য আমাদের সর্বশক্তি বিনিয়োগ করা দরকার। এ বিষয়ে ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসা দরকার।
এ কথা ঠিক যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে আলোচনাটা আগের মতোই হয়, দেশে দুর্নীতি কমেনি। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?
দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। আবার দুর্নীতিকে এক দিনে কমানো সম্ভব না। এর গোড়া অনেক গভীরে পতিত। ছড়িয়ে আছে শিকড় সব জায়গায়। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে যতই আপনি শক্ত হবেন বা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবেন, আপনার জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়ে যাবে। এটা স্বাভাবিক, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটা দেখা গেছে।
একটি বিষয় দেখবেন দুর্নীতি বিষয়ে পদক্ষেপগুলো কিন্তু অনেক দৃশ্যমান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে দুদক ডেকেছে। একজন প্রাক্তন সেনাপতি এখনো জেলে আছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি এখনো জেলে। ব্যাংকের বেশ কিছু এমডি জেলে গেল। বহু সাজা হচ্ছে, হয়তো আরও হওয়া উচিত।
আমাদের দুর্নীতি তো সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। সরকারি চাকরিতে বেতন বাড়ানো হলো, কিন্তু দুর্নীতি কমল না। এটা আসলে একটি সামাজিক ব্যাধি। বেতন বাড়ানো-কমানোর সঙ্গে মনে হয় না দুর্নীতি যুক্ত আছে। না হলে বড়লোকেরা দুর্নীতি করে কেন। যারা বড়লোক তারা কেউ বউয়ের নামে কেউ শালার নামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনছে। ভালো সুশাসন হলে দুর্নীতি কমে আসবে, একদম নাই করে দিতে পারবেন না। এটা কোনো দেশই পারেনি। তবে মাত্রাটা অনেক কমিয়ে আনতে হবে। আমার দেশে এখন বড় সমস্যা আয় বৈষম্যের। নানানভাবে আমাদের দেশে এখন লুটপাট হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। যে যেখানে জড়িত আছে, সেখানে তাকে শাস্তি দিতে হবে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৪ জুলাই) পুঁজিবাজারে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১০৪ ও ১৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে ৬৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৬টি কোম্পানির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, বিচ হ্যাচারি, বিএটিবিসি, সী পার্ল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইসলামী ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রি, রহিমা ফুড ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার (১৪ জুলাই) ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
সোমবার (১৪ জুলাই) সিএসইতে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা কম। আগের দিন সিএসইতে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে মার্কিন ডলারের দাম টাকার তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ডলার কেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, যা বেশিরভাগ ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ১২০ টাকা দামের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম স্থির রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে।
তিনি বলেন, যদি ডলারের বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার যেন স্থির থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। আজ তা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার অধিকাংশ ব্যাংক প্রতি ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ১২৩ টাকারও বেশি।
চীনের রপ্তানি ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে গত জুন মাসে, যা পূর্বাভাসের চেয়েও ভালো ফলাফল। এ সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং পরস্পরের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমাতে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
চীনের শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুনে রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ব্লুমবার্গের করা সমীক্ষায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, একই মাসে চীনের আমদানিও ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটিও পূর্বাভাস দেওয়া ০.৩ শতাংশের চেয়ে ভালো।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) মন্দাভাব চলছিল। গত বছরের শেষ ছয় মাসে তা ৭১ শতাংশ কমে যায়। তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি–মার্চ) এফডিআই আসার হার বেড়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বাংলাদেশে নিট বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্ত-কোম্পানি ঋণ এবং শক্তিশালী ইক্যুইটি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১১৪.৩১ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায়ও নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৭৬.৩১ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে নিট এফডিআই ছিল ৪৯০.৪০ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, পুনঃবিনিয়োগকৃত আয়ের হার বছরে ২৪.৩১ শতাংশ হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও এই তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে নতুন মূলধন বিনিয়োগ এবং ঋণ প্রবাহ বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে চালিত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইক্যুইটি বিনিয়োগের প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ১৮৮.৪৩ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি।
একই সময়ে আন্ত-কোম্পানি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৬.৯৭ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের ২৫৩.৮০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি।
তবে, পুনঃবিনিয়োগকৃত নিট আয় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৯৪.৭১ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগে ছিল ২৫৭.২৬ মিলিয়ন ডলার।
প্রান্তিকটিতে মূলধন বহির্গমনও বেড়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বিদেশে মূলধন বহির্গমন হয়েছে ৭১১.৫৩ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৬৫১.১৯ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির বিষয়ে মতামত দিতে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে সরকার। গত ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বলা হয়, কমিটি এক মাসের মধ্যে মতামত দেবে।
এই সময়ের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে বর্তমান সরকারের তৎপরতার ফল বলছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সরকারের ভিশন ও বিডার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এই বছরের এফডিআই আসার পেছনে আমাদের ভূমিকা সামান্য। বিনিয়োগের ডিসিশন আগেই হয়েছিল। সম্ভবত প্রসেস একটু গতিশীল হয়েছে। যেমন, বিডা ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অনেক দ্রুত বৈদেশিক ঋণগুলোকে ভিন্নকরণ ও অনুমোদন করছে (স্ক্রুটিনি ও অ্যাপ্রুভ করছে)। ’
আর এ কারণেই বৈদেশিক বিনিয়োগের গতি বেড়েছে, বাড়ছে বিনিয়োগের পরিমাণ। গত সরকারের সময়ে এমন ছিল না।
বিডার চেয়ারম্যান উড়িয়ে দেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমছে-এমন ধারণা। দুই মাস আগে বৈদেশিক বিনিয়োগের তথ্য নিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদকে উল্লেখ করে একটি খবর প্রকাশিত হয়। গত শুক্রবার বৈদেশিক বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিত্র তুলে ধরে তিনি এ নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় মাস দুই আগে একটা কার্টুনসহ রিপোর্ট করা হলো, একই সময়কে ফ্রেম করে। পড়ে মনে হচ্ছে প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়া, সামিট আর প্রেজেন্টেশন করা ছাড়া আমরা কিছু করি না। আর তাই বিনিয়োগ ধ্বংস, অর্থনীতি ধ্বংস, দেশ ধ্বংস, ইত্যাদি। প্রভিশনাল বা প্রস্তাবিত ডেটা নিয়ে এরকম একটা নেগেটিভ রিপোর্ট করে পাবলিককে সেনসিটাইজ করাটা দুঃখজনক। এমনিতেই বাংলাদেশে ডেটা নিয়ে অনেক কনফিউশন। তার ওপর এইসব অপসাংবাদিকতা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আমার গত আট মাসে কয়েকজন দারুণ রিপোর্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তারা স্ট্রেইট কাট প্রশ্ন করেন। রিপোর্ট করার আগে বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করেন। অন্যরা তাদের মতো হলে খুব ভালো হতো। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্টোবর-মার্চ ছয় মাসের বৈদেশিক বিনিয়োগের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগের সরকারের সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে শুধু টাকার পরিমাণেই নয়, গুণগত মানেও বিনিয়োগ বেড়েছে। অক্টোবর-মার্চ সময়ে ইক্যুইটি, রি-ইনভেস্ট এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণ আনুপাতিক হারে বেড়েছে।
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মতে, আগের সরকারের সময়ে অস্থিতিশীল রাজস্ব নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে পরিকল্পনা ধীরে করতেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বড় সমস্যা ছিল। এসব বিষয়ে বিশেষ করে সরকারের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা হতো না। যার কারণে বিনিয়োগে গতি কমে যাচ্ছিল। নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারাও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে পাইপলাইনে থাকা বিনিয়োগগুলো দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিদেশে নতুন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় খুলনা থেকে পাট, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে।
ইপিবি আরও জানায়, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির কারণেও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ১৯ দশমিক ৮০ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এছাড়া কুচিয়া, কাঁকড়া, সবজি, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।
মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেখা যায়, খুলনা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জুলাইয়ে ৫১৭ কোটি ৬৮ লাখ, আগস্টে ৪৪৭ কোটি ৫৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৬০১ কোটি ৯৮ লাখ, অক্টোবরে ৫৬৬ কোটি ৯৬ লাখ, নভেম্বরে ৫২৩ কোটি ১৩ লাখ, ডিসেম্বরে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৪২৩ কোটি ৬৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ কোটি ৫২ লাখ, মার্চে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ, এপ্রিলে ৫৫০ কোটি ৮৭ লাখ, মে মাসে ৬১১ কোটি ৬৯ লাখ এবং ২০২৫ সালের জুনে ৪২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন।
খুলনা ইপিবির পরিচালক জিনাত আরা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সরকারি পাটকল ও চিংড়ি কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল।’
পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সম্প্রতি খুলনা সফর করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, খুলনা অঞ্চল পাট, চিংড়ি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তার আগের গৌরব ফিরে পাবে। সরকার বন্ধ থাকা পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে সেগুলো পুনরায় চালু করা যায়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুল বাকী বাসসকে বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন দেশে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চিংড়ি, পাট, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, খুলনায় মোট ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় ৩৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে পাট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও পাট ব্যবসায়ী শরীফ ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। খুলনায় এর বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকার দেশের পাট খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।
মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন (আঙ্কটাড) অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রো নিকিতা এএফপিকে জানিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ সত্ত্বেও ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ‘নীতিগত অনিশ্চয়তা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসের ইঙ্গিত, এইসব বিষয় ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে আঙ্কটাড।
নিকিতা বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো ৫ এপ্রিল শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পণ্যের মজুত করে ফেলায় আমদানির বড় এই বৃদ্ধিটি ঘটেছে।
আঙ্কটাডর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেবা বাণিজ্যই ছিল প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৫ শতাংশ বেড়েছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ২ শতাংশে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে উন্নত অর্থনীতি উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভালো করেছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে গ্লোবাল সাউথের পক্ষে থাকা প্রবণতাকে উল্টে দিয়েছে।’
এই পরিবর্তনের পেছনে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানিতে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে।’ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আমদানি দুই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প তার ব্যাপক শুল্ক আরোপের কারণ হিসাবে যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা উল্লেখ করেছেন, তা ‘গত চার প্রান্তিকে আরও গভীর হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তর ঘাটতি রয়েছে এবং চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাণিজ্য বিভাজনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে আঙ্কটাড জানিয়েছে এখনও স্থিতিস্থাপকতার লক্ষণ রয়ে গেছে। যদিও তা ‘নীতিগত স্পষ্টতা, ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সরবরাহ লাইনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে।
হঠাৎ করে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ ‘শুল্ক চিঠি’ প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (০৭ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত এসব চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
চিঠি প্রকাশের পরপরই এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা দেয় বড় ধস। ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, আর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কমে যায়।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকম-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত দরপতনের মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বাজারেও চাপ পড়ে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তার দাবি, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং তার শুল্কনীতির অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউএস ডলার ইনডেক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রা ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে এশিয়ার কিছু শেয়ারবাজারে সাময়িক চাঙাভাব দেখা গেছে, এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা উত্থান দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি শুধু বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিষ্পত্তিহীন পণ্য দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ বা ধ্বংসের মাধ্যমে সরানোর জন্য একটি ‘নিলাম কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ আদেশে গঠিত এ কমিটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ব্যতীত ফেলে রাখা সব পণ্য নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এক অফিস আদেশে জানান, নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুহুল আমিনসহ কাস্টম হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নিলাম শাখার উপ বা সহকারী কমিশনার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন মেনে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অখালাসকৃত, বাজেয়াপ্ত অথবা অনিষ্পন্ন পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়রোধই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই কমিটি দ্রুত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কন্টেইনার জট নিরসন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেয়ারট্রিপ ও মনিটরের যৌথ উদ্যোগে এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদকসহ মোট ৫ টি পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা, ইকোনমি ক্লাসে শ্রেষ্ঠ ইনফ্লাইট খাবার, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদক পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াও বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ও অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় যথাক্রমে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত শুল্কহার নির্ধারিত হবে ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। এ কারণেই আমাদের তাদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। এখনও শুল্কহার চূড়ান্ত হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী ৮ জুলাই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনা দুর্বল হতে পারে—এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২৫ বিলিয়ন ডলার, আর আমাদের মাত্র ৫ বিলিয়ন। এজন্য ভিয়েতনাম বেশি ছাড় পেয়েছে শুল্ক হারে।”
তিনি জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এবং তিন দিন আগে যাওয়ার পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে কাজ করছেন। ৮ জুলাইয়ের বৈঠকের পর বিষয়টি বোঝা যাবে, যা বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ৯ জুলাই ভোরে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ফলাফল যাই হোক, সরকার তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এ পর্যন্ত আমাদের যেসব বৈঠক হয়েছে, সবই ইতিবাচক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার ভোরে (বাংলাদেশ সময়) তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন—যা তিন মাস আগে প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ কম।
তবে এটি এখনো ভিয়েতনামের নতুন ২০ শতাংশ শুল্কহারের তুলনায় অনেক বেশি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম তাদের দেশে আমদানি হওয়া সব মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিগুলোতে ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও নতুন শুল্কহার আরোপ হয়েছে—মিয়ানমার ও লাওসের জন্য ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের জন্য ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার জন্য ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৩২ শতাংশ, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার জন্য ২৫ শতাংশ।
চিঠিগুলোতে ট্রাম্প সতর্ক করেন, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তাদের আমদানি শুল্ক বাড়ালে, তার প্রশাসন আরও বেশি হারে শুল্ক আরোপ করবে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিলেন তিনি, সেই তুলনায় এবার ২ শতাংশ কম। তবে রপ্তানি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় এটি অনেক বেশি। কারণ ভিয়েতনামের পণ্যে এই শুল্কারোপ হয়েছে ২০ শতাংশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। একই ধরনের চিঠি তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি পাঠিয়েছেন, যেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার উল্লেখ ছিল।
আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা ওই চিঠি থেকেই জানা গেছে।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আগ্রাসী এই শুল্কহার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার তা আরও বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যে ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যে বসবে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। এ ছাড়াও আরও কিছু চিঠি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছেন, যদি এই দেশগুলো তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শেষ মুহূর্তের আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তবে আপাতত ট্রাম্পের ঘোষণা চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও চিঠিতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমালে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প তার চিরাচরিত কৌশলেই চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরে সেগুলো ডাকযোগে পাঠাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এই চিঠিগুলো কোনো পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই এসব শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি বলে এপির প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিযোগী এই দুই দেশ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এর আগে ঘোষিত ৪৬ শতাংশ থেকে অনেক কম। এই ২০ শতাংশ শুল্ক আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ভিয়েতনাম তাদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এ কারণেই এই দেশটির ওপর কম শুল্কারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ।
শুল্ক বা ট্যারিফ হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা আমদানিকারককে দিতে হয়। এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি আমদানিকারকরা বাড়তি শুল্ক দিতে না চান, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।