বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
১৭ বৈশাখ ১৪৩২

মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম কমাতে সুদের হার বাড়ানো উচিত

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম
আবদুর রহিম
প্রকাশিত
আবদুর রহিম
প্রকাশিত : ৮ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৩২

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে। তারপরও বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। বাংলাদেশের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং অস্থির ডলারের বাজারকে সুস্থির করা। আর এ জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুল আলম।

বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই পরামর্শ দিয়েছেন মৃদুভাষী কিন্তু দৃঢ়চেতা মানুষ শামসুল আলম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি?

বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন আছে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কোন রাখঢাক না করে যেটা প্রকৃত অবস্থা, সেটাই তুলে ধরেছেন। চ্যালেঞ্জটা আপনারা জানেন। এই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু বিশ্বব্যাপী সবার জন্য। এটা এখন কোনো একক দেশের বিষয় না। করোনাভাইরাস যেমন কোনো একক দেশের বিষয় ছিল না। সে রকম ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে দরদামের ক্ষেত্রে, পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রে। মূল্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে এই যুদ্ধের কারণে।

করোনার ধাক্কা সামলে যে সময় আমাদের মতো দেশগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। বেশ কিছু দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিছু কিছু দেশ অবশ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছিল। বার্তাসংস্থা রয়টার্স যেটা বলেছিল ১২টি দেশ যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারে শ্রীলঙ্কার মতো। এটা মাসখানেক আগের বিশ্লেষণ। সেই সময় রয়টার্সের সেই গবেষণায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে বলা হয়েছে স্থিতিশীল। সেই ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ছিল না। তার পরে অবস্থাটা একটু পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী দরদামের কারণে। অন্যান্য দেশেও বেড়েছে, আমাদের দেশেও বেড়েছে।

সেই ঘটনা আপনারা শুনেছেন। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। আমেরিকার মতো একটি পরিপক্ব অর্থনীতিতে, যুক্তরাজ্যের মতো একটি মহাশক্তিধর পরিপক্ব অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্র সব কিছু মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি গত জানুয়ারি থেকেই একটু একটু করে বাড়ছিল। সেটা বাড়ছিল কারণ করোনাভাইরাসের পরে সব দেশেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ফলে চাহিদা বাড়ছিল। সে অবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগে।

এই যুদ্ধ আমাদের মহা সংকটে ফেলে দেয়। বিশেষ করে গমের ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু ৪০ শতাংশ গম ইউক্রেন থেকে আমদানি করতাম। সেই অবস্থায় মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি যেন আরেকটু বাড়া শুরু করল। সেই যুদ্ধের কারণে যেহেতু পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেল হঠাৎ করে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ল। বিশেষ করে দুগ্ধপণ্য, ভোগ্যপণ্য চিনি- খাদ্যপণ্য ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে গেল। সবই কিন্তু আন্তর্জাতিক পণ্য, যেটা আমরা আমদানি করি। সেই বাড়ার ফলে সর্বশেষ এসে আমরা বাজেটও ঘোষণা করলাম। তখনও আমরা মোটামুটি আশাবাদী ছিলাম যে, আমরা এগোচ্ছি মূল্যস্ফীতি বাড়া সত্ত্বেও। যদিও জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জুলাইতে এসে আবার একটু কমল, তখন ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এই করোনাভাইরাসের মধ্যে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কিন্তু আমি বলব সহনশীল ছিল। কারণ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আমি যেটা বলতে চাচ্ছি এরচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার ক্ষমতা নিয়েছিল। ব্যবস্থাপনা করছিল। তারপর সুন্দরভাবে আস্তে আস্তে মূল্যস্ফীতি কমে এল। অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়ল। সর্ব ক্ষেত্রেই আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম। এখনকার যে মূল্যস্ফীতি অবশ্যই এটা বেশি। এটাকে আমি কোনোভাবেই হালকা করে দেখছি না। আমি যেটা পত্রপত্রিকায় দেখলাম যে, আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ; আর সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ৯ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যদিও এটা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়নি।

ভারতেও তাজা শাকসবজি নিয়ে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ এই সেপ্টেম্বরে। আর খাদ্যের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ বা ৯ দশমিক ৯। সেই অর্থে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি আমরা খুব বেশি খারাপ করে ফেলছি, বিষয়টি তা না। আমি তুলনাটা দিচ্ছি এই জন্য যে, এই পরিস্থিতি এখন সবাইকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নত দেশ হোক, ভারত হোক, ভারত তো এখন অনেক উচ্চ প্রশংসিত দেশ, উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও যথেষ্ট সুনাম আছে আমরাও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এশিয়ান টাইগার কাব বা ব্যাঘ্র শাবক হিসেবে আমরা চিহ্নিত হয়েছি। এখন এই মূল্যস্ফীতিটা যদি আমরা ধরি। মূল্যস্ফীতির বাইরে কিন্তু অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এটা হলো স্বস্তির বিষয়।

অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো নিয়ে কিছু বলবেন?

অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ভালোই আছে বলা যায়। শুধু আমি নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সব দাতা সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। আমাদের গত জুন পর্যন্ত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। আর যদি ম্যানুফ্যাকচারিং বলি, সেটাও ছিল এই জুনে ১২ শতাংশ। সেবা খাত বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। এতে বোঝা যায় অর্থনীতির যে সাধারণ গতিপ্রবাহ, কর্মকাণ্ড-ব্যবসা বাণিজ্য সবই কিন্তু এর মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনো যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। যদিও এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে হয়। যেটা প্রবৃদ্ধিকে আসলে আঘাত করে। যেমন- আমরা আমদানিকে যখন নিয়ন্ত্রণ করি, যদিও শিল্পপণ্য আমদানি আমরা বন্ধ করিনি বেশি মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ভোগ কমে যাবে। তো সামগ্রিক অর্থে ভোগ কমে গেলে অর্থনীতির যে গুণিতক ফলাফল প্রবৃদ্ধির ওপরে আঘাত আসবে। দ্বিতীয় হলো- মুদ্রা সরবরাহকে আমরা একটু নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আমরা রেপোর রেট বা নীতি সুদের হার বাড়িয়েছি। নীতি সুদ হার বাড়ানোর অর্থ হলো মুদ্রা সরবরাহকে টেনে ধরা। এর মানে হলো প্রবৃদ্ধি যেভাবে হওয়ার কথা কিছুটা হলেও একটু ধীরগতি হতে পারে। যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালোভাবে করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রবৃদ্ধিকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে।

সেই প্রবৃদ্ধিও এডিবি বলছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। যদিও আমাদের বাজেটে প্রাক্কলন ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আমার যেটা মনে হয়, এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের তো প্রায় এক কোয়ার্টার চলে গেল, হয়তো আমাদের প্রক্ষেপিত সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সেটা আসলে মনে হয় হবে না। তবে ৬ শতাংশের ওপরে যদি থাকে, সেটাও বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো পারফরম্যান্স হবে বলে আমি মনে করি।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

বিশ্বব্যাংক সব সময়ই একটু কনজারভেটিভ-রক্ষণশীল। বিশ্বব্যাংক যা বলেছে, প্রতিবারই বাংলাদেশে তার বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এবারও তাই হবে আশা করি। তবে আমি আবারও বলছি, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও সেটাকে আমি খুবই ভালো বলে মনে করি। এ কথা ঠিক যে, সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স কিছুটা কমেছে। তবে এক মাস দেখে কোনো কিছুর প্রভাব বলে দেয়া কঠিন। আমি বরং তিন মাসের হিসাবটা দিই, এটাই বেশি নির্ভরযোগ্য। অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রতি মাসের হিসাব নিয়ে কথা বলার চেয়ে কয়েক মাসের গড় নিয়ে কথা বললে বেশি সঠিকভাবে রিফ্লেক্ট করে।

সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমলেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর হিসাব করলে তিন মাসে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স ১৯ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তাই তিন মাসের ধারাটা যদি আমলে নিই তাহলে এখনই শঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমি মনে করি সামনে রেমিট্যান্স বাড়বে। আমাদের প্রচুর লোক বিভিন্ন দেশে গেছে গত অর্থবছরে; প্রায় ১০ লাখ লোক গিয়েছে। এর আগের বছর গিয়েছিল মাত্র সাড়ে ৩ লাখ। তাই রেমিট্যান্স বাড়বে, আর বাড়বেটা কারণ হলো- মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধের ফলে লাভবান হচ্ছে অস্ত্র যারা বিক্রি করে সেসব দেশ। দুই হলো যারা তেল বিক্রি করে। মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধে তারা লাভবান হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন প্রচুর কাজকর্ম শুরু হয়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। তারা বিলাসবহুল প্রাসাদ বানাচ্ছে। তার মানে আমাদের লেবার ফোর্সের কিন্তু ডিমান্ড থাকবে। গত বছর যেমন ১০ লাখ গিয়েছে, এবারও তাই যাবে। যাওয়ার হারটা কিন্তু বেশি। আর দুই হলো- চীন-আমেরিকার যুদ্ধের কারণে রপ্তানির অনেক চাহিদা আমাদের দিকে চলে আসছে। যদিও ব্যবসায়ীরা দুই-একজন বলছেন, তাদের অর্ডারগুলো কমে গেছে, আমার মনে হয় এটা হচ্ছে সাময়িক। রপ্তানি যদি আমরা প্রপার চ্যানেলে ধরি, রপ্তানি আয়টি এখনো অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছেনি।

কিন্তু অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ যে কমছেই। ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

আমি সে আলোচনাতেই আসছিলাম। সেটা আমি বলছি, রেমিট্যান্স বাড়বে, এখনো ইতিবাচক গত বছরের তুলনায়। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। এটা ঠিক, আমাদের রিজার্ভ চাপের মধ্যে আছে, ৪ অক্টোবর ছিল ৩৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন। যেটা গত বছর এই সময়ে ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই অর্থে প্রায় ১০ বিলিয়ন কিন্তু কম। কিন্তু এই যে ৩৬ বিলিয়ন, এটাও আমাদের জন্য সন্তোষজনক। ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। আর রপ্তানি আয়ের কথা বলছি, গত অর্থবছর প্রথম ৩ মাসে রপ্তানি বেড়েছিল ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এবার বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যদিও কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, আমাদের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। কিন্তু মোটা দাগে গত তিন মাসে আমাদের রপ্তানি কিন্তু ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

আর আমদানির উল্লম্ফন কিন্তু কমেছে। গত বছর প্রথম তিন মাসে আমদানি বেড়েছিল ৪৬ শতাংশ। আর এই বছর প্রথম দুই মাসে আমদানি বড়েছে ১৬ শতাংশ। যেহেতু আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছি। এটা একটি ভালো লক্ষণ, সরকার যে নীতি নিয়েছে, সেটা কার্যকর হচ্ছে। আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করছি, যাতে ডলারের চাহিদাটা কমে আসে। আমাদের সব নীতির লক্ষ্য হচ্ছে ফরেন এক্সচেঞ্জকে স্ট্যাবেল করা। আরেকটা হলো মূল্যস্ফীতিকে কিভাবে বাগে আনতে পারি। এর মধ্যেই আমাদের সব নীতি কিন্তু নিবন্ধিত। আমরা প্রবৃদ্ধি নিয়ে সত্যি কথা বলি, এই মুহূর্তে ভাবছি না এত।

প্রবৃদ্ধি মূল্যবান, এটাকে আমি অবহেলা করছি না। কিন্তু প্রায়োরিটি দিচ্ছি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারটাকে স্ট্যাবল করা। ডলার স্ট্যাবল না হলে আরো ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারটাকে স্ট্যাবল করতে প্রতি মুহূর্তে লক্ষ রাখছে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক, ফিন্যান্স ডিভিশন। বাংলাদেশ ব্যাংক তো নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে এখন। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের জন্য এখন মূল্যবান।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং ডলারের বাজারকে স্বাভাবিক করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। আপনি এ বিষয়ে কী ভাবছেন?

এটা আমি বলব অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আমার একটি পরামর্শ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এটা মনে হয়, এখন একটি বাস্তবতা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দেখুন যদি মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হয়। তাহলে আমানতের সুদের হার আপনি ৬ শতাংশ রাখেন কী করে? তার মানে এখন যদি একজন ব্যাংকে আমানত রাখে সে ৩ শতাংশ টাকা হারাবে। এটাতো সমর্থনযোগ্য না। এ ছাড়া ডলার স্ট্যাবল বা স্থিতিশীল করার জন্য আমি মনে করি ঋণের সুদের হার কিছুটা হলেও বাড়ানো দরকার। কারণ, কম থাকাতে সস্তায় পেয়ে যাচ্ছে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা। তাতে হচ্ছে কি? তারা সস্তায় পেয়ে বেশি বিনিয়োগ করলে সমস্যা। কিন্তু আমি তো চাচ্ছি চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে। কাজেই সুদের হার বাড়ালে তখন তারা কম নেবে। তখন তারা কম ঋণ নিতে চাইবে, কারণ তখন কস্ট অব ক্যাপিটাল বেড়ে যাবে। যেহেতু এখন ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। এটা একটু কমানোর জন্য সুদের হার একটু বাড়ানো দরকার। এটা অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমার নিজের মূল্যায়ন।

কৃচ্ছ্রসাধন বা ব্যয় সংকোচন করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে আছে কি না?

আমরা এখন প্রকল্প অনেক কম গ্রহণ করছি। আমরা আগে একটি একনেকে ১২ থেকে ১৪টি প্রকল্প বিচার-বিশ্লেষণ করতাম। সেটি এখন গড়ে নেমে এসেছে ৬টায়। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এখন সেগুলোই নিচ্ছি। যেগুলো অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান করবে, কৃষি উৎপাদনকে বাড়াবে, যেটা আমাদের পণ্য পরিবহনকে আরো সহজ করবে, যে প্রকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহকে আরো শক্তিশালী করবে- এগুলোতো প্রকল্প নিতেই হবে, এগুলোই নিচ্ছি আমরা। আর যেগুলো বিল্ডিং সাজানো, এখন তা না করলেও চলবে- সেগুলোকে আমরা কিন্তু পিছিয়ে রাখছি। এটা হবে যখন আমাদের অবস্থা স্বাভাবিক হবে, তখন হবে।

কিন্তু অনেক প্রকল্প আছে যাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হচ্ছে বিদেশ থেকে কেনাকাটা। যদি এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমাই, তাহলে বিদেশ থেকে কেনাকাটা কমে আসবে, আর তাতে ডলার কম লাগবে। কাজেই একটি হলো প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অনেক সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। আবার প্রকল্প কিন্তু নিচ্ছিও। সেই প্রকল্পগুলো নেয়া হচ্ছে- যেগুলো উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহায়তা করবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা আর মনে করিনা যে, নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করা দরকার আছে; এখন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার যে, আমরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব কি না। আমরা এখন অর্ধেকের কম বাতি জ্বালিয়ে অফিস করি। এসি ২৫-এ দিই। এভাবে দেশের সব নাগরিকের উচিত এই সাশ্রীয় কর্মসূচি যেন আমরা সবাই বাস্তবায়ন করি। দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিকেরই এই হিসাব করা উচিত বলে আমি মনে করি। এই সমস্য কোনো দলের না। এই সমস্যা পুরো দেশের। এটা বিশ্বের সমস্যা। কাজেই সবার উচিত নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে যে সাশ্রীয় কর্মসূচিগুলো আমরা নিয়েছি, সেটাকে সহযোগিতা করা।

রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় ছাড়া রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য আর কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

বৈদেশিক মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য রিজার্ভটাকে বাড়াতেই হবে। রিজার্ভ বাড়লে আমদানির ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছন্দে থাকি। শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত আর কিছুই আমদানি করতে পারছিল না। তো সে জন্য রিজার্ভটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে জন্য আমরা চাচ্ছি ডলার আনতে। এখন ডলার কিভাবে বাড়ে- বৈদেশিক সহায়তার কারণে, এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ)-এর কারণে। গত অর্থবছরে আমরা ভালো এফডিআই পেয়েছি; ৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। তার আগের বছর এসেছিল ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন। চলতি অর্থবছরেও এফডিআইপ্রবাহ বেশ ভালো। আমরা এখন চেষ্টা করছি স্বল্প সুদে, সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিতে। সেটা আইএমএফ হোক বিশ্বব্যাংক বা এডিবি হোক। এখন আমার মনে হয়, ইআরডিকেও (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) বিনিদ্র রজনী কাটানো উচিত।

যত বৈদেশিক মুদ্রা এখন সংগ্রহ করা যায়। আমরা স্বল্প সুদে ঋণ চাচ্ছি যেমন লাইবর প্লাস ওয়ান বা এক শতাংশের কম। আর পরিশোধের সময় হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ বছর। ঋণের ক্ষেত্রে জাপান তো কখনো সুদ নেয় না। সেটা মাপ করে দেয়; দিয়ে আবার বলে এটা আবার তোমরা খাটাও অন্য জায়গায়। ঋণটাকে এখন নেয়ার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সক্রিয়। তবে সেসব ক্ষেত্রে ঋণ নেব, যেগুলোর লাভ ফিরে আসবে। আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করব। ইআরডির উচিত এখন বিনিদ্র রজনী কাটানো ঋণ আনার জন্য। আমরা এখন একটি আরামদায়ক জায়গায় আছি। আমাদের মোট ঋণ আমাদের দেশ-বিদেশে মিলে দেশজ আয়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ মাত্র ১৪ শতাংশ। আমরা দুটো মিলে যেতে পারি প্রায় ৬৭ শতাংশে। নেওয়ার সক্ষমতা এখনও আমাদের আছে।

যেসব প্রকল্প আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে- এ রকম প্রকল্পে আমাদের ঋণ নিতে হবে। নেয়ার সুযোগ আছে। আমাদের এখন ডলার দরকার, সেটাও দরকার। আর উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখার তো চেষ্টা করতে হবে সার্বিকভাবে। পুঁজির যে আমাদের সংকট, সেটা কাটিয়ে উঠব তো আসলে ডলার পেলেই। কাজেই আমার পরামর্শ হবে, ঋণের বিষয়ে আমাদের নেগোসিয়েশনের জন্য আমাদের সর্বশক্তি বিনিয়োগ করা দরকার। এ বিষয়ে ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসা দরকার।

এ কথা ঠিক যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে আলোচনাটা আগের মতোই হয়, দেশে দুর্নীতি কমেনি। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?

দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। আবার দুর্নীতিকে এক দিনে কমানো সম্ভব না। এর গোড়া অনেক গভীরে পতিত। ছড়িয়ে আছে শিকড় সব জায়গায়। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধে যতই আপনি শক্ত হবেন বা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবেন, আপনার জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়ে যাবে। এটা স্বাভাবিক, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটা দেখা গেছে।

একটি বিষয় দেখবেন দুর্নীতি বিষয়ে পদক্ষেপগুলো কিন্তু অনেক দৃশ্যমান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে দুদক ডেকেছে। একজন প্রাক্তন সেনাপতি এখনো জেলে আছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি এখনো জেলে। ব্যাংকের বেশ কিছু এমডি জেলে গেল। বহু সাজা হচ্ছে, হয়তো আরও হওয়া উচিত।

আমাদের দুর্নীতি তো সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। সরকারি চাকরিতে বেতন বাড়ানো হলো, কিন্তু দুর্নীতি কমল না। এটা আসলে একটি সামাজিক ব্যাধি। বেতন বাড়ানো-কমানোর সঙ্গে মনে হয় না দুর্নীতি যুক্ত আছে। না হলে বড়লোকেরা দুর্নীতি করে কেন। যারা বড়লোক তারা কেউ বউয়ের নামে কেউ শালার নামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনছে। ভালো সুশাসন হলে দুর্নীতি কমে আসবে, একদম নাই করে দিতে পারবেন না। এটা কোনো দেশই পারেনি। তবে মাত্রাটা অনেক কমিয়ে আনতে হবে। আমার দেশে এখন বড় সমস্যা আয় বৈষম্যের। নানানভাবে আমাদের দেশে এখন লুটপাট হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে হবে। যে যেখানে জড়িত আছে, সেখানে তাকে শাস্তি দিতে হবে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান।


আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

বাংলাদেশের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় করতে সময় নিলেও শ্রীলঙ্কার ঋণের কিস্তি ছাড় করতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সংস্থাটির প্রাথমিক বা কর্মী পর্যায়ের চুক্তি হয়েছে।

ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ মূল্যায়ন শেষে আইএমএফ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করায় এই চুক্তি হয়েছে। এখন আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন হলে পঞ্চম কিস্তির ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে শ্রীলঙ্কা।

এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার কিস্তি পাওয়া নিয়ে দেশটির আইএমএফ মিশনপ্রধান ইভান পাপাজর্জিও একটি বিবৃতিও দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার তা আইএমএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ শেষ বা তৃতীয় কিস্তির অর্থ পেয়েছে ২০২৪ সালের জুন মাসে। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু তখন তা পাওয়া যায়নি। জুন মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একত্রে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পর্কে আইএমএফ বলেছে, কর্মসূচির অধীনে যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে শ্রীলঙ্কা সামগ্রিকভাবে ভালো করেছে। দেশটি জিডিপি সংকোচনের ধারা থেকে বেরিয়ে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে। রাজস্ব আহরণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও কাঠামোগত সংস্কারের যে রূপরেখা করা হয়েছিল, সেগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। ঋণ পুনর্গঠন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কর্মসূচির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, শ্রীলঙ্কা সরকার তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।

২০২২ সালে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সেই সংকটের জেরে দেশটিতে সরকারের পতন হয়। এরপর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। তার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে দেশটি। সেই চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত চার কিস্তিতে অর্থ পেয়েছে দেশটি। এখন তারা পঞ্চম কিস্তির অপেক্ষায়, যার প্রাথমিক অনুমোদন তারা পেয়ে গেল।

এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে আসে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। কিন্তু ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক চুক্তি করেনি আইএমএফ।

এরপর ৯ এপ্রিল ট্রাম্প তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেন। তারপর এই প্রাথমিক চুক্তি হলো। যদিও আইএমএফ বলছে, বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে।

ট্রাম্পের শুল্কের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হলে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ ও আইএমএফ পরিস্থিতি বুঝে কাজ করবে। অর্থাৎ শুল্কের কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিরূপণ করে নীতি প্রণয়ন করবে শ্রীলঙ্কা।

প্রাথমিক চুক্তিতে আইএমএফ আরও বলেছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, করছাড় হ্রাস ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সহায়তায় আরও শক্তিশালী কর্মসূচি নিতে হবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। তারা মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে শ্রীলঙ্কার পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেশটির প্রায় তিন লাখ মানুষ এই খাতে কাজ করে।

এদিকে গত শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। গত বছরের অক্টোবর মাসেও তারা একই পূর্বাভাস দিয়েছিল। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ শতাংশ।

ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে যোগ দেওয়া শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিদল ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিবৃতিতে বলেছেন, শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চলবে।

শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও আইএমএফের ঋণচুক্তি চলমান আছে। আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি।

সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। ঢাকা ছাড়ার আগে আইএমএফের মিশন ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, এ বিষয়ে আরও আলোচনা চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে। সে বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে। সামগ্রিকভাবে এই ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে আছে বাংলাদেশ।


বাংলাদেশকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দুই প্রকল্পে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। চাকরি সৃষ্টি, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করার লক্ষ্যে এ ঋণ দেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে একটি আর্থিক চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারও উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশকে দেওয়া আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে দুটি প্রধান প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘স্ট্রেন্থেনিং সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর ইম্প্রুভড রেজিলিয়েন্স, ইনক্লুশন, অ্যান্ড টার্গেটিং (এসএসপিআইআরআইটি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ সরাসরি নগদ অর্থ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবে। এই প্রকল্পে যুব, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, ক্ষুদ্রঋণ এবং পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।

অপর প্রকল্পটি হলো- বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। এই প্রকল্পে ৬৫ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বে-টার্মিনাল গভীর সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে বন্দরের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা বাড়বে এবং পরিবহন খরচ ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই বন্দরের উন্নয়ন বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার করবে এবং প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। মাদার ভ্যাসেলের মতো বড় জাহাজ আসতে সুবিধা তৈরি হওয়ায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। এ ছাড়াও প্রকল্পটি নারী উদ্যোক্তা এবং বন্দর পরিচালনায় নারী কর্মীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল মার্টিন বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে থাকতে হলে বাংলাদেশকে তার জনসংখ্যার জন্য, বিশেষ করে প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশকারী প্রায় ২০ লাখ যুবকের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এই আর্থিক প্যাকেজটি বাণিজ্য ও রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সবচেয়ে দুর্বলদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উত্তরণে ও চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একটি গেম-চেঞ্জার হবে।

ইআরডি শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং দেশের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা অর্জনে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো দেশের জলবায়ু স্থিতিশীলতা এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।


সবজির দামে অস্বস্তি, কমেছে মুরগির দাম

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে উপস্থিতি কমেছে শীতের সবজির। গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহও মন্দ নয়। তবে শীতের স্বস্তি গরমের শুরুতেই উবে গেছে বাজার থেকে। রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহে সব সবজির দাম ছিল গড়পড়তা ৬০ টাকার মধ্যে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে সবজির দাম। বাজারভেদে বেশ কিছু সবজিতে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তে দেখা গেছে গতকাল। গতকাল বিভিন্ন বাজারে মুরগির দাম কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। পেঁয়াজের পাল্লা গত সপ্তাহে দফায় দফায় বেড়ে ৩০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলার পর গতকাল একটু নেমেছে। গতকাল পেঁয়াজের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকার আশপাশে দেখা গেছে। আলুর দাম আগের মতোই। কোথাও কোথাও পরিমাণে বেশি কিনলে কিছু সম্মানী করছিলেন বিক্রেতারা। মাছের বাজারে দাম বেড়েছে আগেই, সেই দামেই স্থিতিশীল ছিল গতকাল। মুদিপণ্যেও দামের খুব একটা হেরফের দেখা যায়নি। তবে ভরা মৌসুমেও চালের দাম আগেই বেড়ে ক্রেতাদের অস্বস্তির জায়গায় পৌঁছেছে।

গতকাল শুক্রবার মিরপুর, তালতলা, শেওড়াপাড়া ও মহাখালীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম প্রায় সব জায়গাতেই বেড়েছে। বাজারে সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া সজনে আরও বেড়ে ১৪০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, কাঁচা আম ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস, লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকায় এবং কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহব্যাপী মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৬০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৬৩০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২৭০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমলেও তা এখনো কিছুটা চড়া। দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে এবং তা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। শিং মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের দামও আগের মতোই রয়েছে।

গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। এক ডজন লাল ডিম ১২৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায় এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত মুদি দোকানের পণ্যের দাম

গতকাল মুদি বাজারে দেখা গেছে, কয়েকটি পণ্য বাদে সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকের বাজারে প্রতি কেজি ছোট মুসরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাশকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০-৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২০ টাকা, খোলা চিনি ১১৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল প্রতি কেজিতে ছোট মুসরের ডালের দাম কমেছে ৫ টাকা, বুটের ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা। আর প্রতি কেজিতে কাজু বাদামের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।


প্রবাসী আয়ে সন্তোষজনক গতি শক্তিশালী রিজার্ভের পথে দেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    # এপ্রিলের ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪০.৭০% # দেশে মোট রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। সর্বশেষ মার্চ মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই মাসে ৩২৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। রেমিট্যান্সের এ গতিধারা চলতি এপ্রিল মাসেও অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখন দেশের মোট রিজার্ভ বেড়ে প্রায় ২৭ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ধীরে ধীরে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। আর রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপরও চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২৩ টাকার মধ্যে আটকে রয়েছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে অনেক পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর কাছে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে পারছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত, ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে অথবা বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই কেবল রিজার্ভ বাড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভের এই মজবুত অবস্থান রেমিট্যান্সে ভর করে এগিয়ে চলছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৩ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকার বেশি। আর গত বছরের এপ্রিলের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রায় ৫৭ কোটি ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। শতকরা হিসাবে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এ নিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে দেশে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একইস সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫২৮ কোটি ডলারের বেশি বা ২৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একদিকে হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে, অন্যদিকে বন্ধ হয়েছে অর্থপাচার। এছাড়া খোলা বাজার এবং ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের একই দাম পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতেই প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। তবে আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৩৯ কোটি ডলার। এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে জানানো হয়। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের ‘বিপিএম-৬’ পরিমাপ অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বের হয়।


এস আলমের ১১ একর সম্পত্তি নিলামে তুলছে ইসলামী ব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আদায়ে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কারখানা-গুদামসহ প্রায় ১১ একর সম্পত্তি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা এস আলমের এসব সম্পদ নিলামে কিনতে আগ্রহীদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার বিনিয়োগ গ্রাহক এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাছান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের কাছ থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত লভ্যাংশসহ ব্যাংকের খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এ কারণে আদায়কাল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচ আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩এর ১২ (৩) ধারা মোতাবেক ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের বন্ধকী রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধানের দেওয়া এ বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তি অনুসারে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর মৌজায় ১০ দশমিক ৯৩ একর জায়গা এবং এসব জায়গার উপর কারখানা-গুদাম ও ভবনসহ পুরো স্থাপনা নিলামে তোলার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চের ৩৭৪৬ নম্বর, ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মের ৮০৫৭ নম্বর এবং ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের ৩৩২৭ নম্বর রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তিবদ্ধ সম্পদ আছে।

উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি ব্যাংক খাতে সুনামের সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়া ইসলামী ব্যাংক গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘দখলে’ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির সিংহভাগ মালিকানায় তাদের নিয়ন্ত্রিত ছিল। ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করে পাচারের অভিযোগ আছে এস আলমের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার এসে ব্যাংকটিকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে। এখন ইসলামী ব্যাংক সেই এস আলম গ্রুপের কাছ থেকেই ঋণের নামে হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে।


আম রপ্তানির নতুন আশা চীনে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    # চীনে ফল পাঠাতে প্রতি কেজিতে ভাড়া দিতে হয় ৭০-৮৫ টাকা, যা বর্তমান গন্তব্যগুলোর চেয়ে অনেক কম।

আম উৎপাদনে শীর্ষ দশে থাকলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর প্রধান কারণ আকাশপথে পণ্য পরিবহনের অস্বাভাবিক উচ্চ ব্যয়—যা প্রতিযোগীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই চড়া ব্যয়ই ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো থেকে ছিটকে দিচ্ছে।

তবে সম্প্রতি আম রপ্তানি নিয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুণগত মান ঠিক রেখে আম উৎপাদন করতে পারলে কম পরিবহন ব্যয়ের সুবাদে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার হয়ে উঠতে পারে চীন।

রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি ফল পাঠাতে ইউরোপে ৩৫০-৩৮০ টাকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ২০০-২২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।

অন্যদিকে চীনে ফল পাঠাতে ভাড়া দিতে হয় আরও কম, কেজিতে ৭০-৮৫ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মনে করেন, আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ ‘প্রস্তুত’।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আম অন্যান্য দেশের তুলনায় গুণগত মানে ও স্বাদে ভালো। চীনের বাজারে এটা আমাদের এগিয়ে রাখবে।’

আরিফুর আরও বলেন, চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে আমের জন্য স্পেশাল কার্গো দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি চীনে আম রপ্তানি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে।

‘চীনের প্রতিনিধিদল কয়েক দফায় আমাদের দেশে এসেছে। তারা অনেক ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছে। এর সঙ্গে তারা কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি চীনে আম রপ্তানি নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে,’ বলেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩২১ টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ১০০ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই রপ্তানি কমছে।

বাংলাদেশ থেকে গত বছর ২১টি দেশে আম রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইতালি ও সিঙ্গাপুরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ রয়েছে। যদিও এর আগের অর্থবছরে ৩৬টি দেশে আম রপ্তানি হয়।

এনএইচবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী ও আম রপ্তানিকারক নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া ১৯৯১ সাল থেকে আম রপ্তানি করছেন। গত বছর তিনি সুইডেন ও ইউরোপে আম পাঠিয়েছেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, গত বছর প্যাকেজিং ও বিমান ভাড়া মিলে কেজিতে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। গতবার অস্বাভাবিক ভাড়ার কারণে রপ্তানিকারক ও যারা কিনেছিলেন, সবাই লোকসান দিয়েছেন।

নাজমুল বলেন, ‘আম রপ্তানি নিয়ে আমাদের কোনো সমন্বিত কৌশল নেই। প্যাকিং হাউস করা হয়েছে শ্যামপুরে, পণ্য পাঠাতে হয় বিমানবন্দর থেকে। অথচ দুটো একই জায়গায় হওয়া প্রয়োজন ছিল। এতে খরচ কমত। আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে পিছিয়ে। আমাদের প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে।’

আম রপ্তানিকারক ও গ্লোবাল ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো আম রপ্তানিতে আলাদা কার্গো ফ্লাইট ব্যবহার করে, অথচ বাংলাদেশ নির্ভর করে যাত্রীবাহী বিমানের ওপর।

ফলে ইউরোপে প্রতি কেজিতে আমাদের প্রায় ১.৫০ ডলার পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। জিএসপি থেকে কিছুটা সুবিধা পেলেও আমাদের স্থানীয় আমের দাম তুলনামূলক বেশি। স্বাদে হয়তো আমরা এগিয়ে, কিন্তু গুণমানের ধারাবাহিকতায় ওরা আমাদের থেকে অনেকটা সুশৃঙ্খল। এখানেই আমরা পিছিয়ে আছি।’

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে আম রপ্তানি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ঢাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে চীনও।

রপ্তানিকারক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীন বছরে প্রায় ৪ লাখ টন আম আমদানি করে। মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন থেকে বেশি আম আমদানি করে চীন। তারা বলছেন, চীনে আম রপ্তানি করলে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের তুলনায় খরচ কম পড়বে। তবে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আম রপ্তানিতে টিকে থাকতে পারবে কি না সেটা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

২০ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চীনের মানুষ বাংলাদেশি আম পছন্দ করে’ বলে বৃহৎ পরিসরে আম রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

চীন বছরে প্রায় ৪ লাখ টন আম আমদানি করে। মূলত থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন থেকে বেশি আম আমদানি করে দেশটি। রপ্তানিকারক ও কর্মকর্তারা মনে করেন, গুণগত মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

নাজমুল ভূঁইয়া বলেন, ‘চীনে নতুন বাজার তৈরি হয়েছে, এটা নিয়ে আমি আশাবাদী। তবে টিকে থাকতে হলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কারণ আমরা যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব, তারা আমাদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, চীন থেকে যেসব কার্গো বিমান পণ্য নিয়ে আসে, সেগুলো অনেক সময় খালি ফেরত যায়। এ কারণে চীনে রপ্তানিতে বিমান ভাড়া কম পড়বে।

‘এসব রিটার্ন ফ্লাইট পুরোটা ব্লক করা গেলে খরচ আরও কমে আসবে। হয়তো কেজিতে ৫০-৬০ টাকায় নেমে আসবে,’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে চীন-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মের মহাসচিব অ্যালেক্স ওয়াং বাংলাদেশি আমের প্রতি চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ম্যাঙ্গো হারভেস্টিংয়ের সময় চীনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাগান ও প্যাকেজিং কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। ইতোমধ্যে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’

শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল এপি প্রশিক্ষক অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ বলেন, চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের গাইডলাইন অনুযায়ী আম রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে ৩০টি শর্ত পূরণ করতে হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের আমে চীনের জন্য ২১টি কোয়ারেন্টিইন পেস্ট শনাক্ত করা হয়েছে। রপ্তানির ক্ষেত্রে আমকে এসব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ‘পরিবহন-পূর্ব পরিদর্শনে প্রতি ব্যাচের ২ শতাংশ বা ৬০০টি আম—যেটি বেশি হয়—টেস্ট করতে হবে, এবং এর মধ্যে সন্দেহজনক ৬০টি আম কেটে পরীক্ষা করতে হবে। কোনো কোয়ারেন্টিন পেস্ট পাওয়া গেলে পুরো ব্যাচ বাতিল করা হবে।’

অধ্যাপক ফারুক বলেন, শুধু চীনের ক্ষেত্রে নয়, বরং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্যই গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (গ্যাপ) কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘গ্যাপ অনুসরণ করে রপ্তানির জন্য আম উৎপাদন করলে বা গ্যাপ সার্টিফিকেট থাকলে চীনের শর্ত মানা কঠিন হবে না।’

তিনি আরও বলেন, কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাড়তি সুবিধা দেয়। যেমন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে চীনের ডুরিয়ান চুক্তি কিংবা আমের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের চুক্তি বাংলাদেশের জন্য মডেল হতে পারে। ‘চীনের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তি করলে বাজারে প্রবেশ অনেকটাই সহজ হবে।’


যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় ১০৩ শতাংশ বেড়েছে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশটি থেকে জুলাই-মার্চ সময়ে ৩৯৪ কোটি ৬১ লাখ (৩.৯৪ বিলিয়ন) ডলার এসেছে, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এই রেমিট্যান্সের গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। শতাংশ হিসাবে বেড়েছে ১০৩ শতাংশের বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ (১.৯৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্যে উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ২ হাজার ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ (২১.৭৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ের ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের চেয়ে অনেক কম বাংলাদেশি অবস্থান করেন আমেরিকায়।

‘রেমিট্যান্স মানেই সৌদি থেকে আসে’ সবার মুখে মুখে ছিল এতদিন। কিন্তু গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ঘটে ব্যতিক্রম; ওই অর্থ বছরে সৌদিকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সেটাও উল্টে গেছে। এখন সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এতদিন প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই।

চলতি অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। সৌদি আরবের প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে এই নয় মাসে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব থেকে এসেছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিটেন্স বেড়েছে ১০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে গত অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল যে দেশ থেকে, সেই আরব আমিরাত থেকে এই নয় মাসে কমেছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।

সৌদি আরব থেকে অবশ্য ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। মালয়েশিয়া থেকে আরও বেশি বেড়েছে, ৫৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাজ্য থেকে বেড়েছে ১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিটেন্সে যে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে তা মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই হয়েছে।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহের চিত্র পাল্টে যায়। প্রতি মাসেই বেশি প্রবাসী আয় আসছে দেশটি থেকে।

প্রবাসী আয় সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা মোট ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। একক মাসের হিসাবে যা রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো মাসে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৩৮ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২৯ কোটি ১০ লাখ ডলার।

হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও প্রবাসী আয় আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তার বলেন, প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ প্রবাসী আয় প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহের পর তা এক জায়গা থেকে গন্তব্য দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠান যে দেশ থেকে এসব আয় পাঠাচ্ছে, সেসব দেশে থেকে প্রবাসী আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়া মানে দেশটি থেকে প্রকৃত প্রবাসী আয় বেড়েছে হয়তো তেমন নয়। অন্যান্য দেশের আয়ও প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে। এ কারণে পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বড় প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে কাগজে-কলমে।’

অন্য কারণও বলেছেন অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রথমত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিও এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিল; মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশটির মানুষের পাশাপাশি সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদেরও খরচ বেড়েছিল।’ ‘সে কারণে সেখানকার প্রবাসীরা দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে কম টাকা পাঠিয়েছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কমে স্বাভাবিক হয়েছে; ২ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। তাই এখন আমাদের প্রবাসীরা বেশি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন।’


ঋণের কিস্তি ছাড়ের সমঝোতা হয়নি, সিদ্ধান্ত জুনে: আইএমএফ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে এ দফার পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সমঝোতা হয়নি বাংলাদেশের। ফলে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত জানায়নি সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। আইএমএফ বলেছে, এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে আগামী জুনের শেষ দিকে।

দুই সপ্তাহের পর্যালোচনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার আইএমএফ আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান (তিনি মিশনপ্রধান) ক্রিস পাপাজর্জিওসহ অন্য ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এ বৈঠক হবে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল।

পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।

করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।

ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।

মিশনটি ৬ এপ্রিল থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইত্যাদি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৬ ও ১৬ এপ্রিল এ মিশন বৈঠক করেছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও।

এর আগেও কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফ মিশন এসেছিল। মিশন শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি ‘স্টাফ লেবেল’ চুক্তি হয়েছিল। এটি আসলে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ। এবার এ ধরনের স্টাফ লেবেল চুক্তি হয়নি বলে জানা গেছে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের বেলায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আশা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।


ঢাকায় লেনদেন চলছে উত্থানে, চট্টগ্রামে পতন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।

লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।

এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।

সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।

দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।

দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।


প্রবাসী আয়ে চমক অব্যাহত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের পরও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ১২ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৫ কোটি (১.০৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এর মধ্যে ১ থেকে ৫ এপ্রিল ৫ দিনে এসেছে ১১ কোটি ৯২ লাখ ডলার; প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এই পাঁচ দিন ছিল সরকারি ছুটি। ঈদের পর ব্যাংক-বিমা, অফিস-আদালত শুরু হয় ৬ এপ্রিল থেকে। সে হিসাবে বলা যায়, এপ্রিল মাস শুরু হয়েছে আসলে ৬ এপ্রিল থেকেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার ১২ এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ৬ থেকে ১২ এপ্রিল- এই সাত দিনেই (এক সপ্তাহ) ৯৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। টাকার হিসাবে যা ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।

মাসের বাকি ১৮ দিনে (১৩ থেকে ৩০ এপ্রিল) এ হারে এলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ (৩.৪৫ বিলিয়ন) ডলার, যা হবে নতুন রেকর্ড।

গত মার্চ মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ আট লাখ ডলার।

অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে রেমিট্যান্স। প্রতিবারই দুই ঈদকে উপলক্ষ করে প্রবাসীরা দেশে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। তারপর কমে যায়; কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনে মোট ১০৫ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার (১.০৫ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।

প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১২ দিনে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ১২ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল) ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার (২২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে; যা হবে আরেকটি রেকর্ড।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল অর্থ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল।

তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছি তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) আট মাসেই (আগস্ট-মার্চ) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।

২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।

চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।


যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সমাধানে আশাবাদী বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাণিজ্য সম্ভাবনার সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ইস্যু সমাধানের ব্যাপারে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত আছেন এবং আমরাও উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করছি।’

বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

মতবিনিময় সভায় বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন এবং বলেছেন, বিভিন্ন দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো অনুকূল বাণিজ্য শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশে পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অর্থ উপদেষ্টা আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন।

তারা ইউএসটিআরসহ সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং আরো নির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।

বশির বলেন, তাদের সফর শেষে তিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘তখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আরো স্পষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করব এবং ইনশাআল্লাহ, প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাণিজ্য সম্ভাবনার সমন্বয়ে এই সমস্যার সমাধান করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ভুল অর্থনৈতিক নীতির দিকে যাব না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পশু খাদ্য ও সয়াবিন তেলের দাম এবং শুল্ক সঠিকভাবে পরিচালনার পাশাপাশি কিছু অবকাঠামো সুবিধার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা পণ্যের প্রতিযোগিতা ও মান বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গতিশীল নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ‘ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের তথ্য অনুযায়ী সাধারণ মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমছে এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে তা ৬ শতাংশের কাছাকাছি নামবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বশির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল শুল্ক ও অশুল্ক কাঠামোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানবে এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউএসটিআরের কাছে চিঠি পাঠানোর পরও এখন পর্যন্ত তারা কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া পায়নি।

তবে তিনি আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সরকার তাদের যুক্তি দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হবে।

শেখ বশির বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নন বরং আরো কিছু রপ্তানি আদেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, প্রতিযোগী বাজার চীন এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১শ’ শতাংশের বেশি শুল্কের সম্মুখীন।

তিনি আরো বলেন, দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের মালিকরা আত্মবিশ্বাসী যে এর কোনও নেতিবাচক প্রভাব তাদের ওপর পড়বে না।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বশির বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমি বাণিজ্য সংযুক্তি চাই এবং দেশের বাণিজ্যিক ভিত্তিকে আরো বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন এবং পাকিস্তান এই তিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা নিজেদের স্বার্থে সবার সঙ্গে বাণিজ্য করব।’

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বিকল্প খুঁজছে না বরং বিষয়টি বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এতে অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকার ‘ব্যবসায়িক খরচ’ যুক্ত হতে পারে, তবে এই বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা তিনি পেয়েছেন। বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং উন্নত করার জন্য তিনি নতুন দায়িত্বে (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) কাজ করছেন।

বশির বলেন, সরকার যেমন বাজার বৈচিত্র্যকরণ ও সরবরাহ চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, তেমনি অতিরিক্ত খরচও শূন্য বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

চালের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকলে থাকায় এবং ধানের সম্ভাব্য বাম্পার ফলনের কারণে চালের দাম স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশাবাদী।

ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বশির বলেন, সরকার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয় এবং ব্যাংক ঋণ কমে আসে। তিনি বলেন, সরকারকে বর্তমানে ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক ছাড়ের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আশা করছি ভোজ্যতেলের দাম আবার স্থিতিশীল হবে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে কখন হবে তা বলা যাচ্ছে না।’


দোদুল্যমান সূচকে লেনদেন চলছে পুঁজিবাজারে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়লেও সূচকের দশা দোদুল্যমান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার (১৬ এপ্রিল) লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ পয়েন্ট।

বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএসের অবস্থান শূন্যের নিচে এবং ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ১ পয়েন্ট।

লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৯, কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সার্বিক সূচক কমেছে ২ পয়েন্ট।

লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৫ কোম্পানির মধ্যে ৫৭ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫২ কোম্পানি এবং দাম অপরিবর্তিত আছে ১৬ কোম্পানির।

সিএসইতে লেনদেনের প্রথমার্ধে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ওপর শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।


পতনের ধাক্কা দিয়ে শুরু পুঁজিবাজারের প্রথম কার্যদিবস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতেই পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার, কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (১৩ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ পয়েন্ট।

বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ার ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট।

দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৯ কোম্পানি এবং দর অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকার বাজারে মোট শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

একইভাবে সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট।

লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৮ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৬৭ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।


banner close