এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের পুঁজিবাজারে সর্বনিম্ন দরসীমা বা ফ্লোর প্রাইস দেয়া রয়েছে। প্রতিটি শেয়ারে বেধে দেয়া ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজার ধীরে ধীরে শ্যালো মার্কেটে রূপ নিয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সহ-সভাপতি ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আহমেদ রশিদ লালী।
তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে বলেও জানান তিনি। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুলতান আহমেদ। যার বিস্তারিত নিচে তুলে ধরা হলো-
গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে লেনদেন বাড়ছে, এটা টেকশই হবে কি?
: এটা নির্ভর করবে বাজারসংশ্লিষ্টদের আচরণের ওপর। মনে রাখতে হবে লেনদেন ভালো মানেই বাজার ইতিবাচক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে লেনদেনটা কতদিন ভালো থাকবে তা হয়ত আরো কিছুদিন পর বোঝা যাবে। আমাদের বাজারে লেনদেন কমতে কমতে এখন শ্যালো মার্কেটে রূপ নিয়েছে। এখানে লিস্টেট কোম্পানি ৪০০ এর ওপরে। অথচ দেখুন এখন লেনদেন হচ্ছে মাত্র দেড়শ মতো কোম্পানির। বাকি প্রায় ২৫০টি কোম্পানির কোনো লেনদেন নেই। এতে বিনিয়োগকারীদের বাধ্য করা হচ্ছে দুর্বল শেয়ার কিনতে। হয়তো বলবেন কে বাধ্য করছে? যখন কারো হাতে বিনিয়োগযোগ্য কোনো অর্থ থাকে সে কোনো না কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চাইবে- এটাই স্বাভাবিক। বড় কোম্পানিগুলো যখন একটা জায়গায় মাসের পর মাস আটকে রয়েছে তখন যেসব শেয়ারের মুভমেন্ট হচ্ছে সেগুলোই কিনবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এতে তাকে অনেকটা বাধ্য করা হচ্ছে দুর্বল শেয়ার কিনতে।
তাহলে এখন কী করা উচিত?
: বিনিয়োগকারীদের মুক্ত করতে হবে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাদের হাত-পা বেঁধে একদিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই বাজারে আরও অনেক বেশি ট্রেড হওয়ার কথা প্রতিদিন। অথচ হচ্ছে মাত্র ৪শ’ থেকে ৬শ’ কোটি টাকা। এটা খুবই দুঃখজনক। এখান থেকে সবাইকে মুক্ত করতে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এখন এটা তুলে দেয়ার কথা অনেকেই বলছেন আবার কমিশন ভাবছে বিপরীতটা। আমি মনে করি এ বিষয়ে সবার মতামত নেয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ বাজারসংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে বসতে হবে। তাদের মতামত শুনতে হবে। সিনিয়র সাংবাদিক যারা পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করেন তাদের, যারা বাজার নিয়ে গবেষণা করে তাদের রাখা যেতে পারে এমনকি যারা পুঁজিবাজারের স্টেক হোল্ডার রয়েছেন তাদের নিয়েও বসতে পারে কমিশন। সবার মতামত নিয়ে কমিশন একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন আসছে, এ সময় পুঁজিবাজার ভালো রাখা জরুরি। অন্যথায় সাধারণ মানুষের কাছে পুঁজিবাজার নিয়ে একটা ভুল ম্যাসেজ যেতে পারে।
তাহলে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার সময় এখন?
: আমি বলছি না এখন কিংবা একবারে সব শেয়ারের ফ্লোর তুলতে হবে। তবে আমি বলবো ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু্ নেই। কী হতে পারে বলেন? আমার মনে হয় ফ্লোর তুলে দিলে এক সপ্তাহ বাজারটা একটু নেতিবাচক থাকবে। তারপর আবারও ক্রেতা তৈরি হবে এতে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এটা নিয়ে এত দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলেই আমি মনে করি। এখন ডিভেডেন্ড দেয়ার সময় যাচ্ছে। এমনও করা যায়, যেসব কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড দেবে অর্থাৎ দশ শতাংশের বেশি দেবে তাদের ফ্লোর থেকে বের করে দেয়া যেতে পারে। এভাবে বিভিন্ন কৌশল আনা যেতে পারে। একবারেই সব তুলতে হবে তা নয়। তবে আমার অনুরোধ থাকবে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক তা যে দ্রুত হয়। এত লম্বা সময় ধরে ফ্লোর দিয়ে রাখা কোনো সুস্থ বাজারের লক্ষণ হতে পারে না। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল একটা ম্যাসেজ যাচ্ছে। তারা ভাবছে তাদের বিনিয়োগ আটকে রয়েছে। দেশি বিনিয়োগকারীরাও এখন ধৈর্য হারাচ্ছে। এ জন্যই বললাম সবাইকে নিয়ে বসে ব্রেইন স্টোর্মিং করে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। যেটা সবার জন্য ইতিবাচক হবে।
অনেকেই বলেন, ফ্লোর তুলে দিলে বড় ধরনের পতন হতে পারে। আপনি কী মনে করেন?
: এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। যেটা বললাম একটু পতন হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বরং তখন আত্মবিশ্বাস বাড়বে এতে লেনদেন ভালো হবে। তবে হ্যাঁ, যাতে তাৎক্ষণিক বড় কোনো পতন না হয় সেই পলিসি বের করতে হবে। ইনডেক্স পতন হলে আটকানোর জন্য বড় বিনিয়োগকারীদের সাথে বসে একটা গাইডলাইন তৈরি করা যেতে পারে। প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসতে হবে। আমার তো মনে হয় বাজার পতন হলে অটো সাপোর্ট আসবে। এর আগেও আমরা দেখেছি বাজারে পতন হয়েছে আবার তা ঠিক হয়ে গেছে। যখন ভালো শেয়ারের দাম কিছুটা কমবে তখন তা কেনার জন্য বিনিয়োগকারীর অভাব হবে না।
বিনিয়োগকারীরা কী চাচ্ছে এখন?
: সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাথে আমার প্রতিনিয়ত কথা হচ্ছে। তারা প্রায় সবাই এখন আটকে আছে। ভালো ভালো শেয়ার হাতে নিয়ে বসে আছে কিন্তু বিক্রি করতে পারছে না। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিতে শুধু ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো আর অন্য বিনিয়োগকারীদের রয়েছে আরোও প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা। যে টাকাগুলোর কোনো রুলিং হচ্ছে না। এগুলো বের হলে তা রুলিং হবে যার প্রভাবে বাজার ভালো হবে, এটা ধরেই নেয়া যায়। আর যদি কমিশন এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে আমার মনে হয়, দিন যত যাবে পরিস্থিতি ততই খারাপ হতে পারে। আমার জানা মতে, অনেকেই এখন অপেক্ষা করছে ফ্লোর তুলে দিলে বাজারে তারা বিনিয়োগ করবে। শুধু কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার জন্য অনেক বিনিয়োগকারী অপেক্ষায় রয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৫ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। শস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন খাতে বেশ ঋণ নিয়েছেন কৃষকরা। আলোচিত সময় কৃষকের ঋণ পরিশোধও সন্তোষজনক। এ সময় আগের নেয়া ঋণ কৃষক ফেরত দিয়েছেন ৫ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপ্রত্যাশিত ক্ষতি ছাড়া ঋণের কিস্তি কৃষকের বকেয়া থাকে না। যার কারণে এ খাতে বিতরণ করা ঋণের খেলাপির হার অনেক কম, কিছু ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। যেখানে বৃহৎ শিল্প গ্রুপের বড় ঋণে খেলাপির হার কয়েক গুণ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিতরণ করা মোট কৃষিঋণের স্থিতি ৫৩ হাজার ২৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বকেয়া। সার্বিকভাবে কৃষি খাতে ঋণখেলাপির হার ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৩ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। এই দুই মাসে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮৫৩ কোটি টাকা। এর পরই রয়েছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটি এ সময়ে বিতরণ করেছে ৪৮৮ কোটি টাকার ঋণ। এ ছাড়া বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৩৯৭ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক ৩৫৩ কোটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক ২২৩ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষিঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।
কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃষিঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষি কাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয়, তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) ও ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ ও প্রাণিসম্পদ খাতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কেন্দ্র করে গত রোববার পতন হলেও সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স উত্থানে ফিরেছে। এদিন কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান বেশি হয়। উত্থানের পেছনে তিনটি খাত ভূমিকা রেখেছে। এগুলো হলো- বিমা, আইটি ও খাদ্য আনুষঙ্গিক খাত। তবে এ দিন ডিএসইর লেনদেন আরও মন্দায় তলিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে গত রোববার সূচকসহ লেনদেনে পতন হয়েছে। তবে গতকাল ডিএসইএক্স বাড়লেও লেনদেন কমেছে।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে লেনদেন মন্দা। পরবর্তী সময়ে লেনদেন বাড়ে। এতে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। সেই লেনদেন ফের মন্দায় পড়ে। সোমবার লেনদেন অর্ধেকের (চার শ কোটি টাকা) নিচে নেমে এসেছে। লেনদেন মন্দার প্রধান কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। এটাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তারা আরও বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততোই যেন দেশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। এর পরই প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
লেনদেন মন্দা হলেও বিমার চাপে সূচক বেড়েছে জানিয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, টানা উত্থানের পর বিমা খাতে তিন দিন পতন স্বাভাবিক। এটা কালেকশন হিসেবে দেখছি। এই কালেকশনের পর ফের গতকাল বিমার বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপ রয়েছে। এসব পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ে।
ডিএসইতে অনেক দিন ধরেই বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরের উত্থান দাপটের পর গত তিন কার্যদিবস পতন ছিল। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। কিন্তু সোমবার বিমার অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর উত্থানে কিছুটা স্বস্তি পেল তারা। এ দিন বিমার সাথে আইটি ও খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতও ভালো করেছে। এই দুই খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
সোমবার ৪৪১ কোটি ২৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন হয়েছিল ৫০০ কোটি ৭৪ টাকার শেয়ার। ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮২ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। ডিএসইএক্স সূচক দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৫ দশমিক ৩০ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮২টির এবং কমেছে ৬২টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১৫৬টির। এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর বিডি কমের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, জেমিনি সী ফুডের ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, সোনালী পেপারের ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
আবারও ডলারের দর বাড়িয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো। এবার সব ক্ষেত্রেই ৫০ পয়সা করে বাড়ানো হয়েছে ডলারের দর। সোমবার থেকে নতুন এই বিনিময় হার কার্যকর হচ্ছে।
বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক সভায় ডলারের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত হয়।
সোমবার থেকে ব্যাংকগুলো ১১০ টাকায় ডলার কিনে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা, আর আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন হার অনুসারে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তিরা প্রতি ডলারে ১১০ টাকা পাবেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলারপ্রতি ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নেবে। ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বিল বেশি হওয়ায় দেশের রিজার্ভ কমে গেছে। তাই গত দেড় বছর ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েই চলছে। এর আগে গত ৩১ আগস্ট ডলারের দর বাড়ানো হয়। সেবার পণ্য বা সেবা রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কেনায় ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা, আমদানির জন্য নির্ধারণ করা হয় ১১০ টাকা।
এদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটেও ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার এই বাজারে ১১৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকায় ডলার কেনাবেচা হচ্ছে।
গত রোববার দেশের পাঁচটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে গভর্নর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডলারের বাজার বা বিদেশি মুদ্রার বাজার সম্পর্কে নীতিগত কোনো পরিবর্তন আনবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন যেভাবে ডলার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। তবে সময়ে সময়ে ডলারের দামে যেভাবে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সেই ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। সেই বৈঠকের পর রোববার আবার ডলারের দর বাড়ানো হলো।
গত বছরের মার্চে দেশে মার্কিন ডলারের যে সংকট শুরু হয়েছিল, তা এখনো কাটেনি। অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পণ্য আমদানিতে তারা চাহিদামতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। কয়েক দিন আগে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। এছাড়া অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেবা দিয়ে যে আয় ও মুনাফা করেছে, তা-ও নিজ দেশে নিতে পারছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়।
পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন। তবে এবিবি ও বাফেদার এই সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই মানেনি ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক এই দুই সংগঠনের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে। এজন্য কয়েক দফায় কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সিএমএসএমই (অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি) ও ভোক্তা ঋণে আরোপিত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ বা তদারকিবাবদ অর্থ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। একই সঙ্গে যে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব থেকে এই অর্থ ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দোকান মালিকদের এই সংগঠন।
রাজধানীর মগবাজারে রোববার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ক্ষুদ্র মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ সংগঠনটির অন্য নেতারা।
হেলাল উদ্দিন বলেন, সিএমএসএমই ও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে সুদহারের অতিরিক্ত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ আদায় করা হচ্ছে। বছরে তা একবার আদায় করার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়নি। এমনকি আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ব্যাংক হিসাব থেকে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঋণখেলাপি বেড়ে যাবে, যা ব্যবসায়ীদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
হেলাল উদ্দিন আরো বলেন, ৭৫ কোটি টাকা ঋণসীমা পর্যন্ত সিএমএসএমই খাত ধরা হয়। কোনো ব্যবসায়ী যদি এই পরিমাণ টাকা ঋণ নেন, তাহলে ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ কর্তন করা হলে ৭৫ লাখ টাকা চলে যায়। করোনা মহামারি ও তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রায় চার বছর ধরে বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ক্রোকারিজ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনির হোসেন। তিনি বলেন, ৫০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে তাঁর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মাশুল কেটে নেওয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
গত সাড়ে তিন বছরে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন, অনেক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়েছেন বলে জানান হেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে সিএমএসএমই খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়েছে। সুদের হার আরেক দফা বাড়ানো হবে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ অবস্থায় সুপারভিশন চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হেলাল উদ্দিনের দাবি, এর মধ্যে যাদের কাছ থেকে এই মাশুল নেয়া হয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে তা ফিরিয়ে দেয়া হোক। তা না হলে সিএমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীরা জীবন-জীবিকার স্বার্থে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, তদারকি সেই অর্থে কিছু করা হয় না। ফলে এই তদারকি মাশুল নেয়ার অর্থ হয় না। বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই মাশুল নেয়া হচ্ছে না, কিন্তু ছোটদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে।
দোকান মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাউস অ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাইয়ুম তালুকদার, বাংলাদেশ ঘড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন, বাংলাদেশ বাইসাইকেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কেমিক্যাল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নেছার উদ্দিন মোল্লা, বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আজমল হোসেন, বাংলাদেশ গ্লাস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন আলমগীর, বাংলাদেশ টাইলস ডিলারস অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন, বাংলাদেশ জামদানি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার আগরওয়ালা, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো, বাংলাদেশ চশমাশিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আজাদ, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অন্যজন মজুমদার, বাংলাদেশ আয়রন স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নাসিরুল্লাহ, বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মাইনুর রহমান, বাংলাদেশ বুটিক হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি শরিকুন্নাহার, বাংলাদেশ পাদুকা ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি শাহীন খান ও বাংলাদেশ বিড়িশিল্প মালিক সমিতির প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম।
অবৈধ হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে কম আসছে। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে (১ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে এই ২২ দিনে এসেছে ১১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। প্রতিদিনে এসেছে ৫২৫ কোটি টাকা; কিন্তু হুন্ডিতে এক ডলারের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। ফলে দফায় দফায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ানোর পরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে না, উল্টো কমছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি (১.৯৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ৬৯৪ কোটি টাকা। চলতি মাসের ২২ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, মাসের বাকি ৮ দিনে সেই হারে এলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে গিয়ে ঠেকবে। সে হিসাবে আগস্টের চেয়েও সেপ্টেম্বরে কম রেমিট্যান্স আসবে। আর সেটা হবে দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর বাড়ায় সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডি আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভয়-আতঙ্কে রোববার কার্ব মার্কেটে ডলার বেচাকেনা বন্ধই ছিল বলা যায়। খুবই গোপনে দু-একটি লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে, প্রতি ডলার ১১৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস ধরে খোলাবাজারে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ যা পাওয়া যায়, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তার চেয়েও ৫/৬ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সে কারণেই সবাই হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।
গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন (২২০ কোটি) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রেমিট্যান্সপ্রবাহে ধসের কারণে রিজার্ভও কমছেই।
গত ৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমে আসে ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, রোববার আইএমএফের বিপিএম ৬ হিসাবে রিজার্ভ আরও কমে ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে। গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম ৬ পদ্ধতি অসুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। সবশেষ গত জুলাই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানের ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে চার মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশসহ ৩১টি দেশের ব্যাংক ও ব্রোকারেজকে রাশিয়ার মুদ্রা বাজারে লেনদেনের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার; একই সঙ্গে লেনদেন করা যাবে ডেরিভেটিভস মার্কেটেও। ঢাকায় রুশ দূতাবাস এ সব দেশকে ‘বন্ধুপ্রতিম ও নিরপেক্ষ’ বলে উল্লেখ করেছে।
শনিবার ঢাকায় রুশ দূতাবাস দেশটির সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এবিষয়ক ঘোষণায় দেশগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাতার, চীন, কিউবা, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বৃহস্পতিবার এসংক্রান্ত নথিতে সই করেন। এর ফলে ৩১ দেশের ব্যাংক ও ব্রোকাররা রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে।
ডেরিভেটিভ এক ধরনের আর্থিক চুক্তি যা দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে হয়ে থাকে। কিছুটা জটিল ধরনের এ চুক্তি-ডেরিভেটিভ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট বাজারে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সম্পদ লেনদেন করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ডেরিভেটিভ হিসেবে প্রচলিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুদ্রা, স্টক, বন্ড, পণ্য, সুদের হার ও বাজার সূচক। ডেরিভেটিভ চুক্তির মান এ সব সম্পদের দামের পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। ডেরিভেটিভের রকমফের হিসেবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় এ চারটিকে- ফিউচার, ফরওয়ার্ড, সোয়াপ ও অপশন।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করার সব ধরনের উপায় বন্ধ দেশটির। এতে আর্থিকভাবে চাপে পড়েছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত ও চীনসহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালালেও মুদ্রা লেনদেনে জটিলতার মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে বেশ কয়েক বছর থেকে রুবল দিয়ে লেনদেনকে প্রাধান্য দিচ্ছে মস্কো, যা যুদ্ধের পর একমাত্র মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার উৎপাদিত তেল ও গ্যাস কিনতে রুবলে মূল্য পরিশোধের নিয়ম চালু করেন। এরপর থেকে রুবলে লেনদেন বাড়ছেও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন রুবল ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। মুদ্রা চাঙ্গা করতে দেশটি সুদের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতিও চাপে রয়েছে, দুর্বল হয়েছে দেশটির মুদ্রা রুবল।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কোনো ব্যাংক রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমতি দিতে পারে। তবে এখনো অন্য কোনো দেশে এমন কোনো ব্যবসা করছে না বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। আর দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করতে চাইলে রুবলে নস্ট্রো হিসাব খোলার অনুমতি নিতে হবে। এরপর কেস-টু–কেস ভিত্তিতে অনুমোদন নিতে হবে।
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি মার্কিন ডলারে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরো, পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও কানাডিয়ান ডলারে কিছু লেনদেন হয়ে থাকে। এর বাইরে ভারতের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় গত ১১ জুলাই থেকে টাকা-রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুপিতে রপ্তানি আয় থাকলেই কেবল রুপিতে আমদানি করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এতে রোববার বড় দরপতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এদিন লেনদেনেও মন্দাভাব ছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসইর লেনদেন কমে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে রয়েছে। এর প্রধান কারণ আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। এটাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তারা বলছেন, দেশে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন। এরপরই গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
বড় পতন প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। তবে এটা সাময়িক। ঠিক হয়ে যাবে।’
বিমা খাতের ধস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় আছে। সেই বিমাতেও গত কয়েক কার্যদিবস পতন চলছে। এটা আসলে পতন না, এটা কালেকশন। দর সমন্বয় হলে ফিরে আসবে বিমা খাত।’
বিমা খাতে মূল্য সংশোধন চলছে জানিয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, টানা উত্থানের পর এ ধরনের পতন স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপ রয়েছে। এসব পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ে।
ডিএসইতে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরের উত্থান দাপটের পর গত তিন কার্যদিবস ধরে টানা পতন চলছে। বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর গত তিন কার্যদিবস গড়ে প্রায় ৮১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারর কমেছে। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
রোববার ৫০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৭৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮০ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৯ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৫ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৩৬ দশমিক ৮৫ পয়েন্টে ও ১ হাজার ৩৫৮ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১২টি এবং কমেছে ১৪৮টির। শেয়ার দর পরিবর্তন হয়নি ১৫০টির।
এদিন লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারদর। কোম্পানিটির ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। এরপর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বেশি ছিল। এতে শীর্ষের দ্বিতীয়তে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, বিডি কমের ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্সের ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা, জেমিনি সি ফুডের ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ১৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রিপালিক ইন্স্যুরেন্সের ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সর ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অনিয়মিত বর্ষা, রপ্তানিতে ধাক্কাসহ নানা কারণ দেখিয়ে চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছেঁটেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এ বছরের জন্য ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশাতেই অনড়। গত শুক্রবার অর্থনীতি নিয়ে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত আগস্টের রিপোর্ট বলছে, ব্যাংকে ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি, করপোরেট সংস্থাগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতিতে গতি আনতে সাহায্য করবে। তবে চিন্তা বিষয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চড়া দাম ও বৃষ্টির ঘাটতি নিয়ে। তার ওপরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভূ-রাজনৈতিক দোলাচলের প্রভাব ও বিশ্ব বাজারে শেয়ারের দাম সংশোধন বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিনিয়োগে ধাক্কা দিতে পারে। যদিও ভারতে সে রকম প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত এপ্রিল থেকে জুনে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে ভারত। দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া, বিক্রি ও সংস্থাগুলোর লগ্নিই এর কারণ। তবে বিশ্ব বাজারে ফের মাথা তুলে অপরিশোধিত তেলের দাম পৌঁছেছে ব্যারেলে ৯৪ ডলারের কাছাকাছি, যা চিন্তায় রাখছে ভারতের মতো রপ্তানিনির্ভর দেশকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে, তার ওপরে বৃষ্টির ঘাটতি ফসলের জোগান কমিয়ে তার দাম বাড়াতে পারে। এমনিতেই গত মাসে যার প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্য এবং রবিশস্যের ওপরে। সেই দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
এ ছাড়া শেয়ার বাজারের দোলাচলে চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা। যার প্রভাবে এ সপ্তাহে চার দিনই সূচক পড়েছে। তবে নির্মাণ শিল্পের মাথা তোলা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়া, সরকারের মূলধনী ব্যয়, জিডিপি এর সাপেক্ষে রপ্তানির অংশীদারি বৃদ্ধি কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে অর্থনীতিকে। সব মিলিয়ে তাই চলতি বছরে ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে ভারত।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৮ সালে ৮০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। এ অর্থ তোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানিটির কারখানার জন্য নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন করা এবং ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করা। এ অর্থ ব্যয়ে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটিকে আইপিও-পরবর্তী এক বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ব্যয় সম্পন্ন করতে পারেনি আমান কটন। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কোম্পানির আইপিও তহবিলের প্রায় ৯০ শতাংশই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। আর ওই অব্যবহৃত অর্থ তিনটি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে কোম্পানিটি।
তথ্য অনুসারে, গত আগস্ট শেষে কোম্পানির আইপিও তহবিল থেকে মোট ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা উত্তোলিত মোট তহবিলের মাত্র ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত তহবিলের ৮৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ ৭১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কিছু কোম্পানি আছে যারা বাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যবহার না করে বছরের পর বছর ফেলে রাখে। এতে আলটিমেটলি বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমার মনে হয়, যেসব কোম্পানি এভাবে বাজার থেকে টাকা নিয়ে সময়মতো ব্যবহার করতে পারে না, সেখানে ব্যবস্থাপনা পর্ষদে সমস্যা আছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে যাদের হাতে বেশি শেয়ার আছে তাদের দু-একজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত বিএসইসির।’
আইপিও অনুমোদনকালের প্রসপেক্টাস অনুসারে, আমান কটন ফাইব্রাসের উত্তোলিত অর্থ কেবল নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন এবং ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করার কথা ছিল। তখন এ তহবিলের মোট অর্থের মধ্যে ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানির নতুন যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপনে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। আর ১০ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কোম্পানির ঋণ পরিশোধ ও বাকি ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও খরচ খাতে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
কোম্পানির ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিও তহবিল ব্যয়ে সময় বাড়ানো হয়। এ সময় এ তহবিল ব্যবহারের জন্য সময় দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট করার পাশাপাশি ব্যয় পরিকল্পনায়ও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। কোম্পানিটি তার ঋণ পরিশোধে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৫ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এবং ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ৬৩৫ টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে বরাদ্দ নির্ধারণ করে।
এরপর কোম্পানিটি আইপিও তহবিল ব্যবহারের জন্য আরও একবার সময় বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে কোম্পানির ১৬তম এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে এ তহবিল ব্যবহারের সময় ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সম্প্রতি এ দফার নির্ধাতির সময় শেষ হওয়ায় কোম্পানিটি তহবিল ব্যবহারের জন্য নতুন করে আরও একবার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দফায় কোম্পানিটি আইপিও তহবিল ব্যবহারের জন্য ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসন্ন ১৮তম এজিএমে এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়া হবে।
সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, গত আগস্ট শেষে আইপিও তহবিল থেকে ঋণ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবহার সম্পন্ন করেছে কোম্পানিটি। এ ছাড়া আইপিও খরচ খাতের অর্থ থেকে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যবহার করেছে, যা এ খাতের জন্য বরাদ্দকৃত মোট অর্থের ৯৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কিন্তু কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত যন্ত্রাংশ ক্রয় ও প্রতিস্থাপন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের এক টাকাও ব্যয় করেনি।
কোম্পানির নিরীক্ষক জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোম্পানিটি আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে কোনো আমদানি কিংবা নির্মাণকাজ করেনি। তবে এ সময় পর্যন্ত কোম্পানিটি তহবিলের অব্যবহৃত অর্থসহ সুদ বাবদ অর্জিত টাকা যোগ করে মোট ৭৩ কোটি টাকা তিনটি ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছে। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ৩৮ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ১৫ কোটি টাকা এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিতে ২০ কোটি টাকা এফডিআর করেছে।
আইপিওর অর্থ ব্যবহার নিয়ে কোম্পানি সচিব শরিফুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।
২০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের কোম্পানি আমান কটন ফাইব্রাসের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১০০ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারসংখ্যা ১০ কোটি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকের হাতে ৪৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ৩৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে হয়েছে। কোম্পানির শেয়ারদর গত এক বছরের মধ্যে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩০ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ারদর ২৬ টাকা ৫০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে।
কোম্পানিটি এখনো ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশের ঘোষণা দেয়নি। ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডাররা ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন। এর আগের হিসাব বছরে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। এর আগে তালিকাভুক্তির পর প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।
পুঁজিবাজারের জন্য গত সপ্তাহের লেনদেন বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাজারে বড় অঙ্কের ফান্ড প্রবেশ করেছে যা বাজারের গতি ফেরাতে কাজে আসবে। তবে তিনি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধান করে বলেন, ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কোনো বাজারেই ঋণ করে ব্যবসা করার ফল ভালো হয় না। পুঁজিবাজারের বর্তমান নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুলতান আহমেদ।
গত সপ্তাহের লেনদেন নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্টি জানিয়েছেন, আপনার অভিমত কী?
: দেখুন, অনেকদিন ধরেই পুঁজিবাজারে ঝিমিয়ে ধরা পরিস্থিতি ছিল। গত সপ্তাহে লেনদেনটা একটু ভালো হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ বাজারে বেশকিছু নতুন ফান্ড প্রবেশ করেছে। আরো নতুন নতুন ফান্ড আসবে বলে বিভিন্নভাবে শোনা যাচ্ছে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে এটা বাজারের জন্য বেশ ইতিবাচক হবে বলেই মনে হচ্ছে।
নতুন ফান্ডের ধরন কেমন? অর্থাৎ কোন ধরনের বিনিয়োগকারী এ সব ফান্ড নিয়ে আসছে?
: এটা পরিষ্কার করে বলা যায় না ফান্ডগুলো কোথা থেকে আসছে। তবে বড় বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক এমনকি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকেও তা আসছে বলে শুনতে পাচ্ছি। হাউসগুলোতেও ভালো লেনদেন হতে শুরু করেছে। এখন এ সব ফান্ড যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তবেই তা টেকসই বাজারের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে। সবাই চায় বাজার ভালো হোক। তবে ভালো হওয়ার সংজ্ঞাটা একেক জনের জন্য একেক রকম। যার কাছে যে শেয়ার আছে সেটা বাড়লেই তার কাছে মনে হবে বাজার ভালো হয়েছে। আবার আমরা যারা ব্রোকার হাউসের প্রতিনিধি আমাদের কাছে ভালো লেনদেন মানেই বাজার ভালো। তবে সামগ্রিকভাবে সবপক্ষের ইতিবাচক অংশগ্রহণ হলেই তাকে টেকসই বাজার বলা যায়। আমার মনে হয় ভালো লেনদেন আগামী কয়েক সপ্তাহ থাকলে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে। ছোট বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হবে।
এই সময়ে কেন ইতিবাচক আশা করছেন?
: দেখুন এখন বছরের না শুরুর সময় না শেষ। আবার কোনো ব্যাংকিং ক্লোজিংয়েরও সময় নয় এখন। অন্যদিকে এখন লভ্যাংশ দেয়ার মৌসুম। অনেক কোম্পানি এখন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। সে সব শেয়ার কিনতেও অনেকে নতুন তহবিল প্রবেশ করাচ্ছেন। তবে তার মধ্যেও সাবধানী আচরণ করার বিকল্প নেই। কোনো কোম্পানির দাম বাড়তে দেখলেই নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করেন অনেকে। এটা পরিপক্ব আচরণ নয়। পুঁজিবাজার মানে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা, সেটা আমাদের বাজারে কম হয়। সবাই চলন্ত গাড়িতে উঠতে চায়, এটা চিন্তা করে না সেখানে দুর্ঘটনার চান্সও বেশি। চলন্ত গাড়ি মানে যে শেয়ারের দাম বাড়ছে সেটাই সবাই কিনতে চায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগই শুধু ক্যাপিটাল গেইন খুঁজে বেড়ায়। আবার অনেকেই দেখে কোনটার বেশি লেনদেন হচ্ছে, এটাও ঠিক নয়। যখন যার লেনদেন ভালো হচ্ছে সব ওখানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যা মোটেই কাম্য নয়। এটা আমাদের বাজারেই দেখা যায়। বিশ্বের অন্য কোনো বাজারে এমন না বুঝে গুজবে শেয়ার কেনার নজির নেই। আমার পরামর্শ হচ্ছে যে সব শেয়ার দিনের পর দিন এক জায়গায় পড়ে আছে সেখানে বিনিয়োগ করুন। দেরিতে হলেও সেখান থেকে নিশ্চিত লাভ পাওয়ার আশা করা যায়। যেটা এরই মধ্যে ৪০/৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে সেটা কেনা মানে নিশ্চিত ঝুঁকিতে প্রবেশ করা। দুঃখজনক হলেও আমাদের বাজারে সেভাবেই বেশির ভাগ কেনাবেচা হচ্ছে।
তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করণীয় কী?
: জেনেবুঝে আসতে হবে। গুজবে কান দেয়া যাবে না। অনেকে বলেন, ভালো শেয়ারের দাম বাড়ে না। এটাও অনেক সময় সত্যি। তবে তারপরও নিজের বিনিয়োগ আগে সুরক্ষিত রাখতে হবে। একটু লাভ পেলে অনেকেই ঋণ নিয়ে আরো শেয়ার কেনেন। আমি বলব এটাও ঠিক নয়, ঋণ নিয়ে কোনো বাজারেই বিনিয়োগ করা উচিত নয়। এর ফলাফল প্রায় সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক হয়। এমনও হয় বেশি লোকসান হয়েছে বিধায় সেই বিনিয়োগকারী আর ব্রোকার হাউসের সঙ্গে যোগাযোগও করেন না। তখন আরো বড় বিপদে পড়তে হয় দুপক্ষকেই।
বর্তমান বাজারে বেশির ভাগ শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না, বিনিয়োগকারীরা যাবে কোথায়?
: এটা অবশ্যই সত্যি। ২০০-র অধিক শেয়ার এখনো ফ্লোর প্রাইসের কারণে আটকে আছে। তাতে অনেক বিনিয়োগ সেখানে ঝুলে আছে। আমি মনে করি এ ব্যাপারে দ্রুত একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তবে ইদানীং অনেক কোম্পানি ফ্লোর থেকে বের হয়ে আসছে। ভালো লেনদেন থাকলে এটা অব্যাহত থাকবে।
কোভিড-১৯ অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া ও শিখন ফলের মানোন্নয়নে বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে ব্যয়ের জন্য ৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গতকাল শনিবার বিশ্বব্যাংকের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড শুক্রবার (ওয়াশিংটন সময়) বাংলাদেশের জন্য এ অর্থের অনুমোদন দেয়। ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন’ (এলএআইএসই) প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালে এ অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ।
কোভিড-১৯ অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, সশরীরে ও অনলাইন পাঠদানের মিশ্র পদ্ধতির (বেল্ডেড লার্নিং) প্রাপ্যতা নিশ্চিতে, শিখনফলের মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার হার কমিয়ে আনতে এ অর্থ ব্যয় করতে পারবে বাংলাদেশ সরকার।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান কার্যালয়ের প্রধান আবদোলায়ে সেক বলেছেন, নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা আনতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোয় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ চলাকালে দীর্ঘমেয়াদে স্কুল বন্ধ থাকায় অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
তিনি আরও বলেন, দরিদ্র পরিবারের মেয়েশিশুদের বিরাট অংশ স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সবসময় পাশে থাকবে।
শ্রীলঙ্কাকে দেয়া সেই ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের পুরোটাই ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার ঋণের শেষ কিস্তির ৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, শ্রীলঙ্কা শেষ কিস্তির ৫০ মিলিয়ন ডলার ও ঋণের সুদ বাবদ ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বৃহস্পতিবার রাতে পরিশোধ করেছে।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ফেরত দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তার আগে ১৭ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে ৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল দেশটি।
শ্রীলঙ্কা এমন সময়ে ঋণ পরিশোধ করল, যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে, ফলে রিজার্ভ কমছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।
চরম আর্থিক সংকটে পড়ে রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসায় দুই বছর আগে বাংলাদেশের কাছে ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সে সময় শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছিল; রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল।
সংকট কাটিয়ে এখন শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। শোধ করে দিচ্ছে সেই ঋণ। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার শেষ কিস্তি পরিশোধ করেছে দেশটি।
চুক্তি অনুযায়ী, ঋণের বিপরীতে শ্রীলঙ্কা লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) পাশাপাশি বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ প্রদান করার কথা ছিল। সেই সুদের অর্থও পরিশোধ করেছে দেশটি।
যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কম, তারা বিপদে পড়লে কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ নেয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। তবে শ্রীলঙ্কার ওই মুহূর্তে সেটি ছিল না।
ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ায় শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ কমতে কমতে একেবারে তলানিতে নেমে এসেছিল। দুই সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভও ছিল না।
সংকট মেটাতে বন্ধুপ্রতিম দেশ বাংলাদেশের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতির কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার জন্য আলোচনা করছে।
আইএমএফের বেইল আউটের জন্য অপরিহার্য হলো বহিরাগত ঋণ পুনর্গঠন করা, যা সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। দেশটির মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। দুই বছরের মধ্যে প্রথমবার দেশটির মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমেছে।
পর্যটন ও রেমিট্যান্স থেকে আসা ডলারের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। বিষয়টি ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে আইএমএফের বেইল আউট পেতে দেশটিকে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরোপিত ভিসা বিধিনিষেধ সেদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘বাণিজ্যের সঙ্গে এই ভিসা বিধিনিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেয়নি। সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা ও যুক্তরাজ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, যেটা যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি।’
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তৃতীয় আন্তর্জাতিক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রধান বিরোধী দল সহিংসতা করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ শুরু করার ঘোষণা দেয়।
প্রসঙ্গটি টেনে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ ভায়োলেন্স (সহিংসতা)। ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের (বিরোধী দল) নামও আছে।’
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা সংবিধান মেনে নির্বাচন করব। আমাদের নির্বাচন কমিশন শতভাগ স্বাধীন। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও সেটাই চাই।’