চলতি বছরের জুলাই মাসে ‘ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড’ চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত বিদেশি কার্ড প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমাতে ও ডলার সাশ্রয়ে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর এ কার্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এর উদ্বোধন করবেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
প্রাথমিকভাবে ৮টি ব্যাংক নিয়ে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ডের পাইলটিং কার্যক্রম চলবে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। দেশের মধ্যেও এ কার্ড দিয়ে লেনদেন করা যাবে। দেশ থেকে ভারতে গেলে ভ্রমণকারীর ১২ হাজার ডলারের ভ্রমণ কোটার সমপরিমাণ অর্থ তিনি রুপিতে কেনাকাটা করতে পারবেন। এতে মুদ্রার বিনিময়ে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হবে না। কার্ডে লেনদেনে প্রায় ৬ শতাংশ অপচয় কমবে। এতে ডলারও বাঁচবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আগামী ১ নভেম্বর ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক কার্ডের জন্য যেসব সেবা দেবে, তা হবে সাশ্রয়ী। এ কারণে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহার হলে গ্রাহকের খরচ কমবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক কার্ড স্কিমগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতাও হবে। আপাতত অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এটি চালু হবে, পরে টাকা-রুপি কার্ড চালু করা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি ওই সময় জানান, দেশে ভিসা, মাস্টার বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড আছে। দেশের নিজস্ব কার্ড ছিল না। ইউজার ছিল রেস্ট্রিকটেড। টাকার পরিবর্তে এ কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে বলে মনে করি।
অন্যান্য দেশেও তাদের নিজস্ব কার্ডব্যবস্থা রয়েছে। ভারত রুপি পে, পাকিস্তান পাক পে, শ্রীলঙ্কা লঙ্কা পে এবং সৌদি আরব মাডা জাতীয় কার্ড স্কিমের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে। এতে স্থানীয় কার্ড মার্কেটে জাতীয় কার্ড স্কিমের ওপর নির্ভরযোগ্যতা বেড়েছে ওইসব দেশের। আইপিএসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে তারা।
গত জুলাই পর্যন্ত দেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩ কোটি ২৬ লাখ, ২২ লাখ ৬৮ হাজার এবং ৪৪ লাখ ৯ হাজারে। ডেবিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, ক্রেডিট কার্ডে ২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা এবং প্রিপেইড কার্ডে ২৯৯ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন বেড়েছে। এই মাসে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের মাস জুলাইয়ে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। তবে গ্রাহক সংখ্যা ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৫ থেকে কমে ২৩ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৭ তে নেমে এসেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল, যা ছিল একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি। এর আগে কখনোই এক মাসে এত টাকা লেনদেন হয়নি। এর আগে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল গত মার্চ মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। হাতের মোবাইল ফোনই এখন ব্যাংক। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠেছে সব ধরনের লেনদেনের অপরিহার্য মাধ্যম। এসব লেনদেনের হিসাব খুলতে কোথাও যেতে হয় না। গ্রাহক নিজেই অনায়াসে নিজের হিসাব খুলে লেনদেন করতে পারছেন। মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকিট কেনাসহ কত সেবা যে মিলছে, তা এক দমে বলা খুবই কঠিন। সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইলে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেন হয় যথাক্রমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। তার আগের মাস অক্টোবরে এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় এক লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে লাখ কোটি টাকার নিচে- ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এভাবেই বাংলাদেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
তবে গ্রাহক সংখ্যা কিছুটা কমেছে। জুলাইয়ে মোবাইল লেনদেনে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৫। আগস্টে তা কমে ২৩ কোটি ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৭ এ দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে, এটা বলা যায়।
বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে খুব সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।
এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম না। এর ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের লেনদেনে। বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ (৬.৫৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের এই উল্লম্ফনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) অবস্থানকারী প্রবাসীরা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সে ‘চমক’ অব্যাহত রয়েছে; সেইসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেও প্রবাসী আয় বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার রেমিট্যান্স প্রবাহের দেশভিত্তিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আরব আমিরাত থেকে ১০৩ কোটি ২২ লাখ (১.০৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমিরাত থেকে ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
এই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯২ কোটি ৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। হিসাব বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষস্থানে ছিল যে দেশ, সেই সৌদি আরব থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৮৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮১ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ডলার; বেড়েছে ৫ শতাংশ।
তবে এই তিন মাসে যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ খানিকটা কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার। কমেছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের মতোই এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে আরিব আমিরাত থেকে। দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে যথাক্রমে সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য।
হিসাব করে দেখা যায়, এই তিন মাসের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ১৬ শতাংশ এসেছে আমিরাত থেকে। ১৪ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা শুরু হয় বাংলাদেশে। ওই বছরে মাত্র ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই রেমিট্যান্স দুই হাজার গুণের বেশি বেড়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
গত অর্থবছরের আগে পঞ্চাশ বছরে প্রতিবারই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদিকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
শুধু তাই নয়, রেমিট্যান্স আহরণের তালিকায় সৌদি আরব নেমে যায় চতুর্থ স্থানে। দ্বিতীয় স্থান বহাল রেখেছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র; তৃতীয় ছিল যুক্তরাজ্য।
গত অর্থবছরে সৌদি আরবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রেমিট্যান্স আসে আমিরাত থেকে। ওই অর্থবছরে সৌদি থেকে ২৭৪ কোটি ১৫ লাখ (২.৭৪ বিলিয়ন) ডলার আসে। আমিরাত থেকে আসে ৪৬০ কোটি (৪.৬ বিলিয়ন) ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ (২.৯৬ বিলিয়ন) ডলার আসে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ কম, ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ (৩.০৩ বিলিয়ন)। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে যথাক্রমে ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩.৫২ বিলিয়ন) ও ২০৮ কোটি ৪ লাখ ডলার।
তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) সৌদি থেকে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ (৪.৫৪ বিলিয়ন) ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। আমিরাত থেকে এসেছিল অর্ধেকেরও কম, ২০৭ কোটি ১৮ লাখ (২.০৭ বিলিয়ন) ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৩৪৩ কোটি ৮৪ লাখ (৩.৪৩ বিলিয়ন) ও ২০৩ কোটি ৯২ (২.৩ বিলিয়ন) লাখ ডলার।
ওই দুই অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের উৎস ছিল আরব আমিরাত। দ্বিতীয় ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের পাঁচ ভাগের এক ভাগই এসেছিল আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরবের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল আরব আমিরাত থেকে; যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি এসেছিল ৫৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ৬৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি এসেছিল যুক্তরাজ্যের চেয়ে।
গত অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে রেমিট্যান্স কম এসেছিল ২৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে আমিরাত থেকে বেড়েছিল ৫১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমেছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। তবে যুক্তরাজ্য থেকে বেড়েছিল ৩৪ দশমিক ২৬ শতাংশ।
আরব আমিরাত মূলত পাথুরে মরুভূমি, উপকূলীয় সমভূমি এবং পাহাড়ের মিশ্র পরিবেশে গঠিত দেশ। তবে দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল মরুভূমি। তেলশিল্পের কারণে এখানকার অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী এবং জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
ফেডারেশনের অর্থনীতি প্রধানত আবুধাবির উৎপাদিত তেলের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে দুবাইয়ের অর্থনীতি ব্যবসা ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি আরব আমিরাত তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটি পর্যটনশিল্প এবং পণ্য উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছে।
আরব আমিরাতে আছে অনেক দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন। বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চ অট্টালিকা ‘বুর্জ খলিফা’ দুবাই শহরেই। প্রশস্ত রাস্তা ও সুপার হাইওয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে আমিরাতের। পারস্য উপসাগরের কূলে ৫ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ।
পামগাছের মতো দেখতে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম ‘পাম জুমেইরা’। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর চতুর্থ ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
এছাড়া বড় বড় অবকাঠামো তৈরি গোটা দেশজুড়ে। সে সব অবকাঠামোয় বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করছেন। এ সব কারণে চাঙা অর্থনীতির এই দেশটিতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ভালো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। সেখান থেকে বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে চার কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে বাংলাদেশে। কৃষকরা ধীরে ধীরে দেশীয় জাত থেকে সরে এসে উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানোর কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। সরকারি তথ্যে বিষয়টি জানা গেছে। উৎপাদন বাড়ায় চাল আমদানি গত অর্থবছরে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকরা চার কোটি ছয় লাখ টন চাল পেয়েছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় চার দশমিক এক শতাংশ বেশি। শুষ্ক মৌসুমে বোরোর ফলন বেশি হওয়ায় গত মে থেকে জুনে বোরো আবাদ থেকে কৃষকরা পেয়েছেন প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ টন ধান।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ওয়ায়েস কবিরের মতে, ‘এর অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা আধুনিক জাতের ধান চাষে ঝুঁকছেন। তারা উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবাদি জমিও বেড়েছে।’ কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উৎপাদন বাড়ায় চাল আমদানির দরকার পড়েনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মজুত থাকায় চালের দাম তেমন বাড়েনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, চাল আমদানি না হওয়ার অন্যতম কারণ গম আমদানি বেড়েছে। ফলে চালের চাহিদা কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি। গমের আমদানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭১ শতাংশ বেড়ে ৬৬ লাখ টন হয়। চালের উৎপাদন প্রাক্কলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ফেলো এম আসাদুজ্জামান। তার প্রশ্ন- সরবরাহ যদি সত্যিই পর্যাপ্ত থাকে তাহলে চালের দাম বেড়েছে কেন?
তিনি আরও বলেন, যতটা উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে আসলে ততটা বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির অর্থ সরবরাহে ঘাটতি। গত অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির বড় অংশ ছিল চাল। বিবিএস বলছে, গত অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের বছর ছিল আট দশমিক ৭১ শতাংশ। এম আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর বারবার বন্যার কারণে আমান চাষ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাল আমদানি করতে হবে। নভেম্বরের শুরুতেই তা বোঝা যাবে। তাই সরকারকে আগামী মাসে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানিয়েছে, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে আউশ ও আমন আবাদ ও উৎপাদন কমে যেতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, চলতি মৌসুমে আমন চাষের জমির পরিমাণ কমে ৫৭ দশমিক ৩৫ লাখ হেক্টর হয়েছে। তা আগে ছিল ৫৭ দশমিক ৫০ লাখ হেক্টর। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছর সামগ্রিকভাবে আমন চাল উৎপাদন হতে পারে এক কোটি ৫৫ লাখ টন থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টন। বন্যার কারণে কৃষকদের দেরিতে চারা রোপণ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বোরো ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের হাতে উৎপাদন উপকরণ, বিশেষ করে সার নিশ্চিত করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে না।
‘শেরপুর-নেত্রকোনায় চলমান বন্যায় আমনের ক্ষতি হবে। তা পুষিয়ে উঠা সম্ভব না’, উল্লেখ করে ওয়ায়েস কবির বলেন, ‘চাল আমদানি করতে হবে কি হবে না তা নির্ভর করবে আমন ফসলের ওপর। আসন্ন বোরোর উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভর করবে সরকারের সার ব্যবস্থাপনার ওপর।’ বোরোর ভালো ফলন নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মুগদাপাড়া থানাধীন মুগদা ও মান্ডা এলকায়।
এই দুই অঞ্চল ঘুরে বুধাবার দেখা যায় এখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা দরে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলের প্রায় সব দোকানে এই দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, তাদের স্থানীয় কমিটি ভেঙে যাওয়ায় যে যার মতো দাম নির্ধারণ করে মাংস বিক্রি করছেন।
শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান কিংবা মিরপুরের উজ্জ্বলের স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস বিক্রির ঘটনা চলতি বছরের শুরুতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বমহলে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। তখন অবশ্য তাদেরকে এই স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করার জন্য অন্য ব্যবসায়ীদের থেকে বিভিন্ন ধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল হত্যার হুমকি। এতে এক পর্যায়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলাও করেছিলেন খলিলুর রহমান।
গত মার্চের শেষের দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই দুই ব্যবসায়ী। তখন শুধু ওই দুইজন ব্যবসায়ী দাম কমিয়ে গরুর মাংস বিক্রি করলেও এবার পুরো দুটি অঞ্চলের সব ব্যবসায়ী স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলের কেউ স্বল্পমূল্যে বিক্রি করায় হুমকির শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মুগদা ও মান্ডা অঞ্চলের সব গরুর মাংস বিক্রির দোকানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মুগদা অঞ্চলের প্রায় সব ব্যবসায়ী ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর মান্ডা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন দরে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ সাইনবোর্ডে উল্লিখিত দামের চেয়েও কম দরে বিক্রি করছেন।
মুগদা বাজারের স্থানীয় ক্রেতা লিয়াকদ আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) এ অঞ্চলে ৬৫০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। তিন-চার দিন আগে এখানেই ৬২০-৬৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দর কষাকষির মাধ্যমে অনেকে ৬০০ টাকায়ও কিনতে পেরেছেন।’
তবে মান্ডা এলাকায় ছাতার মজসিদ সংলগ্ন দোকানে মাংস কিনতে আসা আবু তৈয়ব নামে একজন জানান, ‘এ অঞ্চলে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গরুর মাংস ৬০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। যদিও দুই-এক দিন ধরে কেউ কেউ ৬৫০ টাকা লিখে সাইনবোর্ড ঝুলাচ্ছেন। তবে দর কষাকষি করে নিলে এখনো ৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।’
মান্ডা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মোকলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় কমিটি ভেঙে গেছে। সে জন্য আমরা এখন নিজেদের মতো করে দর নির্ধারণ করে মাংস বিক্রি করছি। রিকশাচালক থেকে শুরু করে সর্বশ্রেণির মানুষ এখন গরুর মাংস কিনতে পারছেন। এখনো পর্যন্ত কোনো মহলের হুমকির শিকার হতে হয়নি।’
অন্য ব্যবসায়ীরা ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি করেও ভালো লাভ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে, আপনারা এত কম দরে কীভাবে বিক্রি করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে লোকসানে বিক্রি করছি। এখন কে কত কমে বিক্রি করে কাস্টমারদের মন জয় করতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে।’
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না থাকলে গরুর মাংসের দাম সব সময় ৬০০ টাকার মধ্যে রাখা সম্ভব। সরকারের উচিত যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজারের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া। তাহলে দেশে যে পরিমাণ গরুর সরবরাহ রয়েছে, তা দিয়ে ন্যায্যমূল্যে সর্বশ্রেণির মানুষকে মাংস খাওয়ানো সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেন, ‘নীতিনির্ধারক হিসেবে সরকার যখন মাংসের দাম উন্মুক্ত করে রাখে তখন একটা পক্ষ সিন্ডিকেট করে জনগণের টাকা লুট করে। সিন্ডিকেট কোনো অবস্থায় মাংসের দাম কমতে দিতে চায় না।’
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘গরুর মাংসের একটা যৌক্তিক দাম থাকা দরকার। তবে, দাম বেঁধে দেওয়ার পর সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো থাকাও জরুরি। না হলে সেই দাম কার্যকর হবে না।’
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারেও প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। আর চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের ঘোষিত মানববন্ধন কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছেন তারা। তবে বিনিয়োগকারীরা তাদের ঘোষণায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন। এখন তারা বিএসইসিকে বাজার সংস্কারে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাজার স্থিতিশীলতার জন্য সংস্থাটির কাছে চাওয়া হয়েছে ‘রোডম্যাপ’। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল পুঁজিবাজার সংস্কারে সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিএসইসি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধারাবাহিক দরপতনে ফুঁসে ওঠা বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ গতকালও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে এদিন তারা বিএসইসিকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। এ জন্য তারা আগামী রোববার পর্যন্ত সংস্থাটিকে হোমওয়ার্ক করার জন্য সময় দিয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে বিএসইসিকে বাজার স্থিতিশীলতায় স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করে তা বিনিয়োগকারীদের কাছে জানাতে বলা হয়েছে। রোববারের মধ্যে বিএসইসি ‘রোডম্যাপ’ না দিলে আগামী সোমবার কমিশন ভবনের সামনে বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মোহাম্মদ মুন্না বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিএসইসির দিকে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাই। তবে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি থেকে আমরা সরে আসিনি। এ দাবিতে অনড় রয়েছি। এ মুহূর্তে আমরা বাজার স্থিতিশীলতায় বিএসইসির কাছে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ‘রোডম্যাপ’ চাচ্ছি। এ জন্য বিএসইসিকে হোমওয়ার্ক করার জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত সময় দিতে চাই।’
মানববন্ধনে উপস্থিত থাকা আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আগামী রোববারের মধ্যে বিএসইসির কাছে বাজার স্থিতিশীলতায় ‘রোডম্যাপ’ চাওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে তারা (বিএসইসি) গ্রহণযোগ্য ‘রোডম্যাপ’ দিতে ব্যর্থ হলে আগামী সোমবার মতিঝিল থেকে দলে দলে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি ভবনের সামনে জড়ো হবেন। তারা (বিনিয়োগকারীরা) আন্দোলনের মাধ্যমে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ নিশ্চিত করবেন।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেওয়া সিকিউরিটিজগুলোর বেশির ভাগ দর হারিয়েছে। মাত্র ৫৩ প্রতিষ্ঠানের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৮৮টি সিকিউরিটিজের দর। আর ৫৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল। এতে এক্সচেঞ্জটির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই দশমিক ৮১ শতাংশ বা ৪৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৩৫ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটির অন্যান্য সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ২ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৯৪২ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এক্সচেঞ্জটিতে মাত্র ৩৬৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এক দিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন ৫ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৩৮৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আর চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসে এ মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
একদিকে ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলো বাজার মূলধন হাজার হাজার হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফুঁসে উঠছেন বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। এতে একপ্রকার কঠিন সময় পার করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান গতকাল বিএসইসির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একটি স্বচ্ছ, গতিশীল, বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীবান্ধব পুঁজিবাজার তৈরি করতে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও আলোচনা করে যাচ্ছে। এমন উদ্বিগ্ন, উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে গতকাল সংস্থাটির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে বাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।
বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের ১৭টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পরে আরও কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যপরিধি বাড়াতে পারবে বিএসইসি। টাস্কফোর্সকে তাদের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে যৌক্তিক সময়ে টাস্কফোর্স তাদের সুপারিশ বিএসইসিতে জমা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিএসইসি।
অ্যাপ ও অনলাইনে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সীমিত করে রাখা এসব ব্যাংকে লেনদেন করতে না পেরে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করেও গ্রাহকরা কোনো সমাধান পাননি। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক-এফএসআইবিতে টাকা তুলতে গেলে তাদের বলা হয়েছে, যার যে শাখায় অ্যাকাউন্ট, তাকে সেই শাখায় গিয়ে টাকা তুলতে হবে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হওয়ার তথ্য দিয়েছেন।
মূলত এসব ব্যাংকের কাছে নগদ টাকা না থাকায় গ্রাহকদের এই ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে, যা স্বীকার করেছেন ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারাও। সাধারণ আমানত, মেয়াদি আমানত, বেতনের টাকা, সঞ্চয়- কোনো ধরনের হিসাব থেকেই চাহিদামতো টাকা তুলতে অথবা অনলাইনে অন্য ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়েও স্থানান্তর করতে পারেননি গ্রাহকরা। গত সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকগুলোর এমন কার্যকলাপে হতাশা ও আস্থাহীনতায় ভুগছেন গ্রাহকরা, যারা তাদের জমানো টাকার নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন।
এমন একজন ভুক্তভোগী বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। গত সপ্তাহে ঢাকার মতিঝিলের দিলকুশায় এফএসআইবির শাখায় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে চেক দিয়ে এক লাখ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ক্যাশ কাউন্টার থেকে তাকে বলা হয়, ২০ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবে না।
কেন দিতে পারবে না, সাইদুরের সেই প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে বলেন, নগদ টাকার সংকট চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও তারা টাকা পাচ্ছেন না। তাই শাখার হাতে যে পরিমাণ টাকা আছে, তা-ই সবাইকে একটু একটু করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। হতাশ সাইদুর বাধ্য হয়েই ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফিরে আসেন।
তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার টাকা আমিই তুলতে পারছি না, এর চেয়ে হতাশার আর কিছু হয়! ব্যাংকের যে এ অবস্থা, অথবা কোনো সমস্যা, তা তো আগে থেকে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়নি। পুরো অবস্থাটা অদ্ভুত লেগেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘আমি ২০ হাজার টাকার কিছু বেশি টাকার চেক ক্যাশ কাউন্টারে দিই। তারা চেকটি ধরে কাজ করতে করতেই আমার দিকে না তাকিয়েই বলেন, হবে না। এখান থেকে আপনাকে টাকা দেওয়া যাবে না।
‘কেন, কী হইছে? আমি জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা যেখানে, সেখান থেকে টাকা তুলতে হবে, আমরা দিতে পারব না।’
তারপর কী হলো- জানতে চাইলে ওই গ্রাহক বলেন, ‘আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, আমার অ্যাকাউন্ট যদি দিনাজপুর হয়, তাহলে আমাকে সেখানেই যেতে হবে? উত্তর এল- আমাদের কিছু করার নেই, আপনারটা আপনাকেই একটু ব্যবস্থা করে নিতে হবে।’
ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখে আগে কখনও পড়েছেন কি না, জানতে চাইলে ওই গ্রাহক বলেন, ‘মনে পড়ে না।’
তারল্য সংকট রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও। গ্রাহকরা গিয়ে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে মুখ কালো করে ফিরছেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘দুর্বল’ ব্যাংকগুলোর মালিকানায় ব্যাপক অনিয়ম, পরিচালনায় সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে, যা নিয়ে দীর্ঘদিন করে কথা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের পছন্দের গভর্নরকে অপসারণ করে সেখানে বসানো হয় অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে। তিনি ব্যাংক খাতে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে এর জন্য সময়ও চেয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আস্থাহীনতা বা শঙ্কা থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে ব্যাংকগুলো যেন খালি করে না ফেলে এবং সেই সঙ্গে আরও কিছু ‘কৌশলগত’ কারণে গ্রাহকের দিনপ্রতি সর্বোচ্চ টাকা তোলার সীমা বেঁধে দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ দেশের ব্যাংকিং খাত সচল রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নগদ তুলতে পেরেছেন বলে তথ্য রয়েছে। ব্যাংকটির দিলকুশা প্রিন্সিপাল শাখা থেকে কিছু কিছু গ্রাহক তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা পেয়েছেন, যদিও তা ৪ লাখ টাকার নিচে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুজন সেনা কর্মকর্তা এক লাখ টাকার চেক নিয়ে এলে তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যাংকটির দিলকুশার প্রিন্সিপাল শাখার ম্যানেজার মো. মোতাল্লেবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘তারল্য সংকট রয়েছে। তাই আমরা গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে পারছি না। আগামী সপ্তাহে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।’
ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ করমার্শিয়াল ব্যাংকেও একই অবস্থা। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেশি নগদ দিতে পারছে না তারা।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার শফিকুল আলমকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন ২০ হাজার টাকার বেশি টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে। এটা আগামী সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মেহেদী হাসান সইকৃত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিত্যপণ্য সামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ ব্যবস্থা তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- পুলিশ সুপার (এসপি), জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি, কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দুজন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক।
এ কমিটির কার্যাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, আড়ত, গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ ও সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যান্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করবে এবং পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারকি করবে। টাস্কফোর্স উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ে যাতে দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে তা নিশ্চিত করবে এবং অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে।
টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলে নির্ধারিত নম্বর ও ই-মেইলে এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠাবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন সংকলন ও পর্যালোচনা করে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠাবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে।
অব্যাহত দরপতনের ধারাবাহিকতায় আজ রোববার নতুন সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও বড় দরপতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। এক দিনেই সূচক দেড় শতাংশের বেশি কমে গিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ- নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজার পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না।
এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সামনে এবং মতিঝিলে হওয়া পৃথক মানববন্ধন থেকে নিজেদের পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম অনুসারে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে অনড় রয়েছেন বলে জানান বিনিয়োগকারীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যৌথ বাহিনী মোতায়েন করায় এদিন বিএসইসি ভবনের সামনে মানববন্ধন বেশি সময় দীর্ঘায়িত হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হলেও এদিন পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ না করায় আজ দুপুর ১২টার দিকে কমিশন ভবনের সামনে জড়ো হন একদল বিনিয়োগকারী।
একপর্যায়ে তারা বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে অনড় রয়েছেন বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান। এদিন বিকেল ৪টার দিকে দিলকুশা এলাকায় মানববন্ধন করেন বিনিয়োগকারীদের আরেকটি দল। তারা তাদের পূর্বঘোষিত আল্টিমেটাম অনুসারে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এদিন প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া সিকিউরিটিজগুলোর বেশির ভাগ দর হারিয়েছে।
এতে এক্সচেঞ্জটির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই প্রায় ৮৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে ডিএসইর প্রধান এই সূচকটি গত মঙ্গলবার এক দিনে সর্বোচ্চ ১৩২ পয়েন্ট পতন হয়।
আজ এক্সচেঞ্জটির অন্যান্য সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ৩০ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৭ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৯৬৪ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে মাত্র ৩৬৮ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বর্তমান কমিশনে আস্থা না থাকায় অব্যাহত দরপতন হচ্ছে। আস্থা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিকল্প নেই। তাই বিনিয়োগকারীদের এখন একটাই দাবি বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করতে হবে। এখানে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে সবার মাঝে আস্থার সঞ্চয় করতে হবে।
তবে বিএসইসি বলছে, বিনিয়োগকারীদের দাবিগুলো শোনা হয়েছে। শিগগিরই টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করা হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ কাজে লাগানো হবে।
আজ দুপুরে বিএসইসি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন শুরু করেন একদল বিনিয়োগকারী। সে সময় বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তারা বৈঠকে বসেন। তবে বৈঠকে সন্তুষ্ট হতে না পারায় পুনরায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন তারা।
পরে পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিনিয়োগকারী বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে আমাদের এক দফা দাবিতে এখনো অনড় আছি।’
বিকেলে মতিঝিলে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ছিল নতুন কমিশনের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার গতিশীল হবে। কিন্তু বিএসইসি চেয়ারম্যান না বুঝে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই এখন তার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। তাই বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা খুবই জরুরি। এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি পদত্যাগ না করলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেব।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকে দাবিগুলো এবং পরামর্শ শোনা হয়েছে। পরবর্তী সময় টাস্কফোর্স গঠনসহ যেসব সংস্কার করা হবে, সেখানে তাদের পরামর্শ কাজে লাগানো হবে। বিএসইসি একটি সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠান। এ কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সরকার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।’
এর আগে গত বুধবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসইর পুরোনো ভবন এবং বিকালে ইউনূস সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। সেদিন ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরের দিন বৃহস্পতিবার বিএসইসির সামনে বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় আন্দোলনকারীরা।
তবে এই সময়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের কোনো খবর না পাওয়ায় রোববার আবারও মাঠে নামেন তারা।
শেয়ারবাজারে দরপতন দিনকে দিন বাড়ছেই। আর বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পাল্লাই ভারী হয়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্যসূচকের যেমন বড় পতন হয়েছে, তেমনি বড় অঙ্কে বাজার মূলধন কমেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২০০ পয়েন্ট। বাজারটিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার থেকে প্রায় ছয়গুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে গড় লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি শেয়ারবাজারের অষ্টম সপ্তাহ। এর আগে আরও সাতটি সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে লেনদেন হওয়া আট সপ্তাহের মধ্যে সাত সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে।
সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সপ্তাহেও দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে।
গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের সপ্তম সপ্তাহে ডিএসইতে মাত্র ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ৩৪৯টির। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকে অন্তর্বর্তী সরকারে অষ্টম সপ্তাহেও। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৫৭টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩১টির। আর ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৫ দশমিক ৮১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১৭৬ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের ছয় সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৮৮ পয়েন্ট। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া আট সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৪৬০ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৭৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৪০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সবকটি প্রধান মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৫৩ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, ইবনে সিনা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম এবং সোনালি আঁশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দাম কমে গিয়েছিল শাক-সবজির। তবে এই অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাত দেখিয়ে আগের চেয়েও বেড়ে যায় বিভিন্ন সবজির দাম। এখন কোনো কারণ ছাড়াই ঊর্ধ্বমুখী দাম কাঁচাবাজারের প্রায় সব পণ্যের। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। ফলে ব্যাগ নিয়ে বাজারে ঢুকে হিমশিম খেতে দেখা যায় সীমিত আয়ের ক্রেতাদের। বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে বা আদৌ কারও নিয়ন্ত্রণে আছে কি না এই প্রশ্ন রেখে কেনাকাটায় কাটছাঁট করে চলে যাচ্ছেন তারা।
শুধু সবজিই নয়, প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ডিম, মুরগি, মাছের দামও। আর আগে থেকেই উচ্চমূল্যে অবস্থান করছে গরু ও খাসির মাংস। এখন নাগালের মধ্যে নেই আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো পণ্যও। আজ শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় নিত্যপণ্যের এই চিত্র।
আকাশচুম্বী সবজির বাজার
আজকের বাজারে প্রায় সব সবজির দামই বেড়েছে বড় অঙ্কে। ভারতীয় টমেটো ১৭০ টাকা, দেশি গাজর ১৪০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০-১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৬০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৬০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় গেলে দেখা যায় আজ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। ৮০ টাকা বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। গত সপ্তাহে এই বাজারে কাঁচা মরিচের সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে ভারতীয় টমেটো, দেশি গাজর, করলা, পেঁপে, মুলা, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের। ২০ টাকা করে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে চিচিঙ্গা, শসা, উচ্ছে, কাঁকরোল, পটল, ধুন্দল, কচুর লতি ও কচুরমুখীর।
ঝিঙার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। আর কেজিতে ৪০ টাকা করে দাম বেড়েছে সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন ও বরবটির। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে আগের মতোই।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাজারে বন্যার পরের প্রভাব পড়েছে, তাই দাম বেশি। আমরা মোকামে গিয়ে আগের মতো দাম পাই না। আগে যদি পাঁচ জায়গায় মাল বিক্রি হতো, এখন হয় দুই জায়গায়। ওই দুই জায়গায়ই সব ব্যবসায়ী যায়। এতে তখন মাল নেওয়ার জন্য একেক ব্যবসায়ী একেক দাম বলে। তখনই দামটা বেড়ে যায়। আমরাও বুঝি যে ক্রেতাদের সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের আর কী করার আছে? যেরকম কেনা সেভাবেই আমাদের বিক্রি করতে হয়।’
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শেখ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাজারে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। এই দায় আসলে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও। তারা ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারা যদি ঠিকভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করত, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো বলে আমার মনে হয়।’
বেসরকারি চাকরিজীবী এস এম মুহিদ বলেন, আগের সরকারও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই, এই সরকারও পারছে না। তবে এই সরকার এসেছে বেশি দিন হয়নি। তাদের সময় দিলে হয়তো অবস্থা ঠিক হবে। এদিকে নজর দিতে হবে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন সায়রা খানম। তিনি বলেন, ‘বাজারের যে অবস্থা তাতে ঢাকা শহরে থাকতে পারব কি না চিন্তায় আছি। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণই নাই। অনেকের কাছে থেকে অনেক আশ্বাস পেয়েছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে, কিন্তু এখনো সবকিছুর অত্যধিক দাম। জানি না এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে কি না।’
বাজারে উচ্চমূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও চায়না আদার। আর নতুন আসা ভারতীয় আদা পাওয়া যাচ্ছে কম দামেই। গতকাল আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১০-১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও বড় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১৫-১২০ টাকা করে। লাল ও সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০-১৬০ দরে বিক্রি হয়।
ডিম, ব্রয়লার ও কক মুরগির দাম বাড়ছেই
বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৬০-১৬৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৬০ টাকা দরে ডজন বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৭ টাকা, কক মুরগি ২৪৫-২৫৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-২৯৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা করে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৭ টাকা। কক মুরগির দাম বেড়েছে ৭ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫-১০ টাকা।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে ডিমের সংকট, এ কারণে দাম বেড়ে গিয়েছে।
এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।
এ ছাড়া আজ বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-২২০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, কৈ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৮০০ টাকা, শিং ৫০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০-১২০০ টাকা, কাজলী মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলেন, বাজারে মাছের দাম অত্যধিক। দাম আর কমছে না।
স্থিতিশীল মুদিপণ্যের দাম
এদিকে মুদি দোকানে প্রায় অপরিবর্তিত আছে বেশির ভাগ পণ্যের দাম। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪০ টাকা, মাষকলাই ডাল ২০০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় ছোট মুগ ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, খেসারির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন কমিশনের অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত, অযৌক্তিক বক্তব্য, অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ভুল পথে সংস্কারের উদ্যোগ, আগের কমিশনের জারি করা ভুল নীতির প্রয়োগ, সতর্কতা ছাড়াই কতগুলো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর, বড় অঙ্কের জরিমানা আরোপ, স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অদক্ষতার পরিচয়- এমন বেশ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এতে টানা কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে দরপতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন একদল বিনিয়োগকারী।
আগের দুদিন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসইসি ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে মানববন্ধন করেন পুঁজি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ওই দলটি। দিনশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগে আগামী শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তালা খুলে দেন বিক্ষোভকারী বিনিয়োগকারীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কমিশন ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় বিএসইসি ভবনের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সংস্থার চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা। বিনিয়োগকারীদের অবস্থানের কারণে বিএসইসি ভবনের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়। আইনশৃঙ্খলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা তাদের দাবি নিয়ে কথা বলেন। তারা এক দফা এক দাবি বিএসইসি চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে বলে জানান। একপর্যায়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক আটকে দেন বিনিয়োগকারীরা। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় তারা সড়ক ছেড়ে পাশে অবস্থান করেন। আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএসইসি ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাশেদ মাকসুদকে পদত্যাগের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।
এ সময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বৈঠকের আহ্বান জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তবে তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, বিএসইসি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছেন তারা। তাই চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে বিএসইসিতে নিয়োগ পাওয়া ১২৭ জন ‘ছাত্রলীগ’ কর্মী উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ করতে হবে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
গতকাল বুধবার সকালে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ এবং বিকেলে ইউনূস সেন্টারের সামনে ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালসের নামের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বিক্ষোভ করা হয়। সে দিনই বিএসইসির উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মতিঝিলে জমায়েত হন বিনিয়োগকারীরা। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় বিএসইসির উদ্দেশে লংমার্চ কর্মসূচির সময়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। তবে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে আগের দিনের মতো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক বিনিয়োগকারী লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএসইসি কার্যলয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
বিএসইসির সামনে বিক্ষোভকালে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসি চেয়ারম্যান না বুঝে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যে কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা খুবই জরুরি। বিনিয়োগকারীদের এখন একটাই দাবি, বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।’
এদিকে টানা কয়েক দিনের দরপতনে পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে ২০০ পয়েন্টের বেশি। অবশ্য আজ আন্দোলনের মুখে শেষ মুহূর্তে সূচক সামান্য বেড়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে এ দিন লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ২০৯টির, কমেছে ১৩৮টির এবং আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৫০টির। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৬২ পয়েন্টে। এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনে ছিল ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গতকালের এই লেনদেন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সবচেয়ে কম লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সম্প্রতি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্য থেকে মমিনুল ইসলাম পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ডিএসইর বোর্ড সভায় পর্ষদ সদস্যদের সম্মতিতে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। মমিনুল ইসলাম ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছিলেন।
ডিএসইর জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কৌশলগত, প্রযুক্তিগত, পুঁজিবাজার ব্যবসা, পণ্য, প্রক্রিয়া এবং বিধি-বিধান সম্পর্কে পঁচিশ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে মমিনুল ইসলামের। এ ছাড়া জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি কাঠামো এবং সহযোগিতার বিষয়ে রয়েছে তার কাজ করার দক্ষতা। বিজনেস ট্রান্সফরমেশন, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, লিন ম্যানেজমেন্ট, অপারেশনাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং সার্ভিস কোয়ালিটির অভিযোজনসহ সিক্স সিগমা ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে। একই সঙ্গে তার রয়েছে শিক্ষা জীবনে অসামান্য কৃতিত্ব।
মমিনুল ইসলাম সিলিংক অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি কৌশলগত আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা, বিনিয়োগ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত রূপান্তরে কাজ করে। মমিনুল ইসলাম ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বকনিষ্ঠ (৩৫ বছর বয়সে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন৷ তিনি জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ তার আগে তিনি আগস্ট ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এপ্রিল ২০০৬ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত অপারেশন ও প্রযুক্তি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷
এ ছাড়া তিনি অক্টোবর ২০০৫ থেকে মার্চ ২০০৬ পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে হেড অব অপারেশনাল রিস্ক, প্রকল্প এবং বিসিপি এবং রিইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিস কোয়ালিটি প্রধান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মে ২০০১ থেকে অক্টোবর ২০০৫ পর্যন্ত আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে, রিইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রজেক্টস, জানুয়ারি ২০০০ থেকে মে ২০০১ পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে রেমিট্যান্স বিভাগে অফিসার হিসেবে কাজ করেন। মমিনুল ইসলাম ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
ডিএসই জানায়, মমিনুল ইসলামের রয়েছে নেতৃত্ব, গ্রাহককেন্দ্রিকতা, কৌশলগত যোগ্যতা, যোগাযোগে দক্ষতা, সততা ও উত্তম নাগরিকত্ব। আর্থিক খাতের সাথে প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক এবং আইনি কাঠামো, টিম উন্নয়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অপারেশনাল এক্সিলেন্স ও স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনায় তার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও তার রয়েছে অনন্য ভূমিকা। তিনি ২০২৩ সালে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটস- এশিয়া প্যাসিফিক এর চেয়ারম্যান, ২০২০-২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা ‘অদম্য ফাউন্ডেশন’-এর ভাইস চেয়ারম্যান।
অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে বুধবার। অব্যাহত এই দরপতনে হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী (আনরিয়েলাইজড) লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অদক্ষ নেতৃত্বের জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে ফুঁসে উঠেছে তারা। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা চেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে বিনিয়োগকারীদের ব্যানারে কয়েকটি সংগঠন।
সরজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরাতন ভবনের সামনে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী। এতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করার সুপারিশ জানায়। আর দুপুর তিনটার দিকে মতিঝিলের ইউনূস সেন্টারের সামনে সমবেত হয়ে ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালস’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে অপর আরেক দল বিনিয়োগকারী। এতে তারা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ও অদক্ষ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি জানানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনার কামনা করেন। এ সময় বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে কমিশনের গেটে তালা ঝুলানোর হুঁশিয়ারিও দেয় তারা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩০ পয়েন্টের ওপরে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।
বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে গত মঙ্গলবার ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটিই কোনো একক শেয়ারে কারসাজির অপরাধে বড় জরিমানা ছিল। এই জরিমানার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল লেনদেন শুরু হওয়ার আগেও বিষয়টি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এতে লেনদেনের শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে এক প্রকার বড় দরপতনের মধ্যেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনশেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মানববন্ধনের বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দর পতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, তা হলো বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। একই সঙ্গে আমরা সরকারের কাছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ বাদ দিয়ে একটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনের দাবি জানাচ্ছি। আর সদস্যভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালস’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয় মিন্টু নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের কোনো অর্জন নেই। তিনি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেও ছিলেন না। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি ছিলেন। সেখান থেকেও তার চাকরি চলে গেছে অদক্ষতার কারণে। উনার মতো লোককে কীভাবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান করা হয়?’
খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগকারীদের মারার জন্য যা করার দরকার, ঠিক তা-ই করা হচ্ছে। তিনি (খন্দকার রাশেদ মাকসুদ) চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা যত মূলধন হারিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা জানাতে হবে।’
এদিকে বুধবার প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ঢালাও দরপতন হলেও এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী আঁশ, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম এবং ইবনে সিনা।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।