পুঁজিবাজারের জন্য গত সপ্তাহের লেনদেন বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাজারে বড় অঙ্কের ফান্ড প্রবেশ করেছে যা বাজারের গতি ফেরাতে কাজে আসবে। তবে তিনি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধান করে বলেন, ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কোনো বাজারেই ঋণ করে ব্যবসা করার ফল ভালো হয় না। পুঁজিবাজারের বর্তমান নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুলতান আহমেদ।
গত সপ্তাহের লেনদেন নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্টি জানিয়েছেন, আপনার অভিমত কী?
: দেখুন, অনেকদিন ধরেই পুঁজিবাজারে ঝিমিয়ে ধরা পরিস্থিতি ছিল। গত সপ্তাহে লেনদেনটা একটু ভালো হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ বাজারে বেশকিছু নতুন ফান্ড প্রবেশ করেছে। আরো নতুন নতুন ফান্ড আসবে বলে বিভিন্নভাবে শোনা যাচ্ছে। তা যদি সত্যি হয় তাহলে এটা বাজারের জন্য বেশ ইতিবাচক হবে বলেই মনে হচ্ছে।
নতুন ফান্ডের ধরন কেমন? অর্থাৎ কোন ধরনের বিনিয়োগকারী এ সব ফান্ড নিয়ে আসছে?
: এটা পরিষ্কার করে বলা যায় না ফান্ডগুলো কোথা থেকে আসছে। তবে বড় বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক এমনকি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকেও তা আসছে বলে শুনতে পাচ্ছি। হাউসগুলোতেও ভালো লেনদেন হতে শুরু করেছে। এখন এ সব ফান্ড যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তবেই তা টেকসই বাজারের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে। সবাই চায় বাজার ভালো হোক। তবে ভালো হওয়ার সংজ্ঞাটা একেক জনের জন্য একেক রকম। যার কাছে যে শেয়ার আছে সেটা বাড়লেই তার কাছে মনে হবে বাজার ভালো হয়েছে। আবার আমরা যারা ব্রোকার হাউসের প্রতিনিধি আমাদের কাছে ভালো লেনদেন মানেই বাজার ভালো। তবে সামগ্রিকভাবে সবপক্ষের ইতিবাচক অংশগ্রহণ হলেই তাকে টেকসই বাজার বলা যায়। আমার মনে হয় ভালো লেনদেন আগামী কয়েক সপ্তাহ থাকলে বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে। ছোট বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হবে।
এই সময়ে কেন ইতিবাচক আশা করছেন?
: দেখুন এখন বছরের না শুরুর সময় না শেষ। আবার কোনো ব্যাংকিং ক্লোজিংয়েরও সময় নয় এখন। অন্যদিকে এখন লভ্যাংশ দেয়ার মৌসুম। অনেক কোম্পানি এখন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। সে সব শেয়ার কিনতেও অনেকে নতুন তহবিল প্রবেশ করাচ্ছেন। তবে তার মধ্যেও সাবধানী আচরণ করার বিকল্প নেই। কোনো কোম্পানির দাম বাড়তে দেখলেই নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করেন অনেকে। এটা পরিপক্ব আচরণ নয়। পুঁজিবাজার মানে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা, সেটা আমাদের বাজারে কম হয়। সবাই চলন্ত গাড়িতে উঠতে চায়, এটা চিন্তা করে না সেখানে দুর্ঘটনার চান্সও বেশি। চলন্ত গাড়ি মানে যে শেয়ারের দাম বাড়ছে সেটাই সবাই কিনতে চায়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগই শুধু ক্যাপিটাল গেইন খুঁজে বেড়ায়। আবার অনেকেই দেখে কোনটার বেশি লেনদেন হচ্ছে, এটাও ঠিক নয়। যখন যার লেনদেন ভালো হচ্ছে সব ওখানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যা মোটেই কাম্য নয়। এটা আমাদের বাজারেই দেখা যায়। বিশ্বের অন্য কোনো বাজারে এমন না বুঝে গুজবে শেয়ার কেনার নজির নেই। আমার পরামর্শ হচ্ছে যে সব শেয়ার দিনের পর দিন এক জায়গায় পড়ে আছে সেখানে বিনিয়োগ করুন। দেরিতে হলেও সেখান থেকে নিশ্চিত লাভ পাওয়ার আশা করা যায়। যেটা এরই মধ্যে ৪০/৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে সেটা কেনা মানে নিশ্চিত ঝুঁকিতে প্রবেশ করা। দুঃখজনক হলেও আমাদের বাজারে সেভাবেই বেশির ভাগ কেনাবেচা হচ্ছে।
তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের করণীয় কী?
: জেনেবুঝে আসতে হবে। গুজবে কান দেয়া যাবে না। অনেকে বলেন, ভালো শেয়ারের দাম বাড়ে না। এটাও অনেক সময় সত্যি। তবে তারপরও নিজের বিনিয়োগ আগে সুরক্ষিত রাখতে হবে। একটু লাভ পেলে অনেকেই ঋণ নিয়ে আরো শেয়ার কেনেন। আমি বলব এটাও ঠিক নয়, ঋণ নিয়ে কোনো বাজারেই বিনিয়োগ করা উচিত নয়। এর ফলাফল প্রায় সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক হয়। এমনও হয় বেশি লোকসান হয়েছে বিধায় সেই বিনিয়োগকারী আর ব্রোকার হাউসের সঙ্গে যোগাযোগও করেন না। তখন আরো বড় বিপদে পড়তে হয় দুপক্ষকেই।
বর্তমান বাজারে বেশির ভাগ শেয়ারের লেনদেন হচ্ছে না, বিনিয়োগকারীরা যাবে কোথায়?
: এটা অবশ্যই সত্যি। ২০০-র অধিক শেয়ার এখনো ফ্লোর প্রাইসের কারণে আটকে আছে। তাতে অনেক বিনিয়োগ সেখানে ঝুলে আছে। আমি মনে করি এ ব্যাপারে দ্রুত একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তবে ইদানীং অনেক কোম্পানি ফ্লোর থেকে বের হয়ে আসছে। ভালো লেনদেন থাকলে এটা অব্যাহত থাকবে।
স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের সময়সীমা বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের ৯৮৯তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর কমিশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সভায় বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান পর্যালোচনা করে এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, নিউ ইরা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, কবির সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং এনবিএল ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
এছাড়া, যেসব স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার এখনো বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান কমিশনে দাখিল করেনি। তাদেরকে অবশ্যই আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যথাযথ ও বোর্ড অনুমোদিত অ্যাকশন প্ল্যান কমিশনে জমা দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান দাখিল না করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বল্প আয়ের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে ১৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ সহায়তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে নারী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ওপর।
রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্পের আওতায় এই অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে সারাদেশে আরও প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার যুবকের জন্য কর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর আগে এ প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ (অ্যাপ্রেন্টিসশিপ), উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রঋণের সুযোগসহ একটি সমন্বিত সেবা প্যাকেজ পাবেন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থান ও ব্যবসা সম্প্রসারণের বাধাগুলো অতিক্রম করতে পারবেন।
এ প্রকল্পের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে মানসম্মত শিশুযত্ন (চাইল্ডকেয়ার) সেবার সুযোগ সৃষ্টি। পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল জীবিকাভিত্তিক কার্যক্রম চালু করা হবে, যাতে জনগোষ্ঠী জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক গেইল মার্টিন বলেন, ‘একটি ভালো চাকরি একটি জীবন, একটি পরিবার ও একটি সমাজকে বদলে দিতে পারে। অথচ প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করা বহু বাংলাদেশি তরুণ কাজের সুযোগ পায় না। পাশাপাশি দেশে কাজের মান, দক্ষতার ঘাটতি ও পেশাগত অমিলের মতো চ্যালেঞ্জও রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অতিরিক্ত অর্থায়ন স্বল্পআয়ের পরিবারের আরও বেশি যুবক-যুবতী, বিশেষ করে নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের জন্য বাজারভিত্তিক দক্ষতা, প্রয়োজনীয় সম্পদ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা তাদের ভালো কর্মসংস্থান ও জীবিকার পথ সুগম করবে।’
এই অর্থায়নের ফলে প্রকল্পটির কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক সীমা ছাড়িয়ে গ্রামীণ এলাকাতেও সম্প্রসারিত হবে, যাতে সারাদেশের প্রান্তিক যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা পেতে পারেন।
এ ছাড়া নারীদের জন্য মানসম্মত ও সাশ্রয়ী ঘরভিত্তিক শিশুযত্ন সেবার একটি পাইলট কার্যক্রম চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে নারীদের প্রশিক্ষণ ও প্রারম্ভিক অনুদান দেওয়া হবে। শিশুযত্ন সেবার চাহিদা ও সরবরাহ—উভয় দিক বিবেচনায় নিয়ে এসব উদ্যোগ নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বাড়াবে এবং পরিচর্যা খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও বিকাশও উন্নত হবে।
নারীদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়ন বাড়াতে জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। অতিরিক্ত অর্থায়নের আওতায় চাকরির মধ্যস্থতা কার্যক্রম জোরদার করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে চাকরি মেলা আয়োজন, সম্ভাব্য নিয়োগদাতাদের সঙ্গে প্রার্থীদের সংযুক্ত করা এবং বিপণন ও চুক্তি আলোচনায় সহায়তা প্রদান।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সামাজিক সুরক্ষা অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, ‘রেইজ প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে আমরা কার্যকর উদ্যোগগুলো আরও সম্প্রসারণ, ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ বাড়ানো এবং মানসম্মত শিশুযত্নের মতো উদ্ভাবনী সমাধান চালু করতে পারব—যার ফলে আরও বেশি যুবক ও নারী তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সহনশীল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।’
প্রকল্পটি ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা শিক্ষানবিশদের ৮০ শতাংশের বেশি তিন মাসের মধ্যেই কর্মসংস্থান পেয়েছেন। পাশাপাশি তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আয় বৃদ্ধি ও উন্নত ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা জানিয়েছেন।
২০২১ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে রেইজ প্রকল্প কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে পুনরুদ্ধার ঋণ ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিয়েছে, ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসীকে পুনঃএকত্রীকরণ সহায়তার জন্য নিবন্ধন করেছে এবং ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি উপকারভোগীকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা প্রদান করেছে। যাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী।
এই অতিরিক্ত অর্থায়নের ফলে রেইজ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াল ৩৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের জন্য খেজুরের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে বড় ধরনের শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে যে, খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৪০ শতাংশ কমানো হয়েছে। মূলত রমজানে এই অতিপ্রয়োজনীয় ফলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখাই এই পদক্ষেপের প্রধান লক্ষ্য।
এনবিআর-এর নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি বা আমদানি শুল্ক আগের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে এখন থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিশেষ সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। জনগণের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে ২৩ ডিসেম্বর এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
শুল্ক হ্রাসের পাশাপাশি আমদানিকারকদের জন্য করের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় বহাল রাখা হয়েছে। বিগত বাজেটে খেজুরসহ সব ধরনের ফল আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল, যা চলতি বছরেও কার্যকর থাকছে। এর ফলে খেজুর আমদানিতে অগ্রিম আয়করের ওপর ৫০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মনে করছে, আমদানি শুল্ক এবং অগ্রিম আয়করে এই উল্লেখযোগ্য ছাড়ের ইতিবাচক প্রভাব খুব দ্রুতই বাজারে পরিলক্ষিত হবে। শুল্ক কমানোর ফলে আসন্ন রমজানে বাজারে খেজুরের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তারা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে খেজুর কিনতে পারবেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের বেসরকারি খাতের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালার সংষ্কার, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসন ও অটোমেশন প্রবর্তন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ প্রাপ্তির পাশাপাশি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, শিল্প খাতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীলের মাধ্যমে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ও ঐকমত্যের আহ্ববান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সংগঠনের ৬৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, প্রাক্তন সভাপতিবৃন্দ, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতিবৃন্দ, প্রাক্তন সহ-সভাপতিবৃন্দ, প্রাক্তন পরিচালকবৃন্দ, সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যোগদান করেন।
৬৪তম সাধারণ সভার ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকট, শুল্ক হার বৃদ্ধি, সহায়ক রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি, স্থবির বিনিয়োগ, দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি, আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশের অস্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনীতি বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারিখাতের স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং নীতি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি বছর জুড়ে ৩১টি খাতভিত্তিক সেমিনার, নীতি সংলাপ, কর্মশালা ও ফোকাস গ্রুপ আলোচনার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আয়োজন করেছে ঢাকা চেম্বার।
তিনি আরও বলেন, নীতিনির্ধারক, গবেষক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তার লক্ষ্যে প্রথমবারের মত ‘অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক (ইপিআই)’-এর প্রবর্তন করেছে ডিসিসিআই, যা উৎপাদন ও সেবা খাতে ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন পরিমাপ করবে।
ডিসিসিআই’র এ সাধারণ সভার মুক্ত আলোচনা পর্বে ঢাকা চেম্বার প্রাক্তন সভাপতি আফতাব উল ইসলাম, এফসিএ, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, প্রাক্তন পরিচালক ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, প্রাক্তন পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান ও আলহাজ্ব মোহাম্মদ সারফুদ্দিন এবং মেসার্স ব্রান্ড বাংলা’র সত্ত্বাধিকারী রাজু আহমেদ মামুন প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। সাধারণ সভাটি সঞ্চালনা করেন ডিসিসিআই’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ড. এ কে এম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়।
এই সমঝোতার আওতায় দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর আশপাশ এলাকার অগ্নিদুর্ঘটনায় দ্রুত সাড়া প্রদান করার লক্ষ্যে এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অভ্যন্তরে একটি স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশনের ন্যায় সার্বক্ষণিক জনবল ও গাড়ি-পাম্প মোতায়েন থাকবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বিভিন্ন পদের ১৩ জন সদস্য গাড়ি-পাম্প ও সাজ-সরঞ্জামসহ এখানে অবস্থান করবেন।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে যুগ্ম পরিচালক মো. রিয়াদ ফারজান্দ (এইচআরডি-১) সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. নিয়ামুল কবির, সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. ফারুক হাওলাদার, মো. জবদুল ইসলামসহ ব্যাংকের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মো. মামুনুর রশিদ, সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
গাজীপুরে তৈরি পোশাক কারখানার পরিত্যাক্ত ঝুট ও তুলা ঘিরে গড়ে উঠেছে শতকোটি টাকার বাজার। দেশে ও বিদেশে নানা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এসব পরিত্যাক্ত ঝুট ও তুলা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর মহানগর ও জেলাতে এক হাজারের বেশি গার্মেন্টস কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টন পরিত্যাক্ত ঝুট ও তুলা উৎপাদিত হচ্ছে। এসব ঝুট ও তুলা ক্রয়-বিক্রয় ও প্রক্রিয়া কাজে জড়িত রয়েছে শত শত ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার শ্রমিক।
গাজীপুরের টঙ্গীর মিলবাজার, মাঝুখান, কালিয়াকৈরের পূর্ব চান্দরা, আমবাগ, ও শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় পরিত্যাক্ত ঝুট ও তুলা প্রক্রিয়া এবং ক্রয়-বিক্রয়ের সবচেয়ে বড় বাজার গড়ে উঠেছে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঝুট ও তুলার বাজার রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এসব বাজার ঝুট পল্লী নামে পরিচিত।
টঙ্গীর মিলগেট ঝুট ও তুলার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবু সাকের বাসসকে জানান, প্রতিদিন আনুমানিক ২ থেকে ৩ হাজার টন ঝুট ও তুলা টঙ্গীর মিল বাজারেই ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। পরিত্যাক্ত এসব ঝুট ও তুলা স্থানীয় স্পিনিং মিল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া ভারত, চীন, তুরস্ক, হংকং ও যুক্তরাষ্ট্রেও পরিত্যাক্ত ঝুট ও তুলা রপ্তানি হচ্ছে।
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকায় পরিত্যক্ত ঝুট থেকে রিসাইক্লিং (পুণব্যবহারযোগ্য) তুলা ও সুতা দিয়ে ম্যাট্রেস, গাড়ির সিট, তোশক, বালিশ, কুশন, পুতুল, মপ, ডাস্টার, কার্পেট ব্যাকিং, শপিং ব্যাগ ও ফ্লোর ম্যাটসহ নানাবিধ নিত্যব্যবহার্য পণ্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে।
নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় রিসাইক্লিং তুলা ও সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে তুলনামূলক কম মূল্যের বিছানার চাদর, গামছা ও লুঙ্গি। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে শিপইয়ার্ড ও শিল্প কারখানায় ওয়াইপিং র্যাগ তৈরি ও রপ্তানিযোগ্য ঝুট প্রসেসিং কারখানা।
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পরিত্যাক্ত গার্মেন্টস ঝুট ও তুলার রপ্তানি গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে এবং এর প্রধান গন্তব্য দেশ হচ্ছে ভারত, চীন, তুরস্ক, হংকং, যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমুহে।
ইপিবি প্রদত্ত তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পরিত্যাক্ত গার্মেন্টস ঝুট ও তুলা থেকে রপ্তানি আয় আসে প্রায় ৪১১.১২ মিলিয়ন টাকা।
ঝুট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা আবু সাকের বলেন, গাজীপুর হচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের বৃহত্তম কেন্দ্রগুলোর একটি। তাই এখানে তৈরি পোশাকের উৎপাদন ও সংশ্লিষ্ট ঝুট ও তুলার বর্জ্য খুব বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
তিনি বলেন, যদি স্থানীয়ভাবে আধুনিক রিসাইক্লিং ব্যবস্থা বাড়ানো হয় তাহলে এই খাতে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন বা তারও বেশি রপ্তানি আয় করা সম্ভব।
তৈরি পোশাক শিল্প ও এই শিল্পের পরিত্যাক্ত ঝুট ও তুলা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রের মতে, অপরিকল্পিত গুদামজাত প্রক্রিয়ার ফলে মাঝেমধ্যেই ঝুট ও তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনাগুলো এই খাতের জন্য বড় ধরণের হুমকি। এছাড়া প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠীর এই খাতে অনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যদি উল্লেখিত সমস্যাগুলো দূরীকরণে এই খাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায় তাহলে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশে পরিত্যক্ত ঝুট ও তুলার বাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সূত্র : বাসস
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) ২০২৫-২৭ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে পোলট্রি পেশাজীবী পরিষদ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। নির্বাচনে ৫৩৫ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসাইন চৌধুরী। আর মহাসচিব পদে ৫০৭ ভোট পেয়ে কোয়ালিটি ব্রিডার্স লিমিটেডের পরিচালক মো. সাফির রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।
সহ-সভাপতি হিসেবে ডায়মন্ড অ্যাড লিমিটেডের সিইও মো. আসাদুজ্জামান এবং খান এগ্রো ফিড প্রডাক্টের প্রোপ্রাইটর মো. সৈয়দুল হক খান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া এ নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে এনার্জি টেকনোলোজির প্রোপাইটর মোস্তফা জাহান, যুগ্ম মহাসচিব পদে মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ও অঞ্জন মজুমদার, প্রচার সম্পাদক পদে শফিকুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে গাজী নূর আহাম্মাদ নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাহী সদস্য হিসেবে এ নির্বাচানে জয়ী হয়েছেন শাহ ফাহাদ হাবিব, মিজানুর রহমান মিন্টু, রাশিদ আহামাদ, মোহাম্মদ জহির উদ্দিন, খায়রুল বাসার সাগর, ফয়েজ রাজা চৌধুরী, মো. সালাউদ্দিন মুন্সী, মো. সোলেমান কবীর, মো, ইমরান হোসাইন ও নাবিল আহামেদ।
গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) মতিঝিল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম-কমিউনিটি সেন্টারে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ৫৭৪ জন ভোট দেন।
নবনির্বাচিত সভাপতি মোশারফ হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘খামারিদের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে সেই আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা কাজ করে যেতে চাই। পোলট্রি খাতকে আরও কীভাবে সমৃদ্ধ করতে পারি সে লক্ষ্যেও আমরা কাজ করে যাব। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে পোলট্রিশিল্পকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় সেটিও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন দেশের পোলট্রি খাতের উন্নয়ন, সুরক্ষা ও টেকসই বিকাশে নিবেদিত একটি শীর্ষস্থানীয় সংগঠন। যেখানে খামারি, উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং আধুনিক প্রযুক্তি, সুষ্ঠু নীতিমালা ও মানসম্মত উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পের অগ্রগতিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়েছে, যা আগামী দুই বছর পোলট্রি খাতের দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার ( ২৩ ডিসেম্বর) ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৩০ হাজার ৪৮২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১ হাজার ৬৮৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
একনেক চেয়ারপারসন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন প্রকল্প ১৪টি, সংশোধিত প্রকল্প ৫টি এবং মেয়াদ বৃদ্ধি প্রকল্প ৩টি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, খাদ্য এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানিসম্পদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় অনুমোদিত ২২টি প্রকল্প হলো: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প। ১. ‘কর্ণফুলী টানেল (আনোয়ারা) থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের গাছবাড়িয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক (জেড-১০৪০) উন্নয়ন’ প্রকল্প, ২. ‘দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি (স্থলবন্দর)-ডুগডুগি ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ক (এন-৫২১) যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিদ্যমান সরু/জরাজীর্ণ কালভার্টগুলো পুনর্নির্মাণ এবং বাজার অংশে রিজিডপেভমেন্ট ও ড্রেন নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ৩. ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জস্থ আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৮টি ১৫ তলা ভবনে ৬৭২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৫টি প্রকল্প-১. ‘ঢাকা ওয়াসা প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা একাডেমি স্থাপন’ প্রকল্প, ২. ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, ৩. ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন (সিআরএএলইপি)’ প্রকল্প, ৪. ‘পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প, ৫. ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প: ১. ‘মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্ট (কমফ্লোট ওয়েস্ট)-এর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ২. ‘সাভারে আর্মি ইনস্টিটিউট অব ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র পুনর্নির্মাণ কোনাবাড়ি, গাজীপুর (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিচার্জ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স নার্সিং অ্যাডুকেশন অ্যান্ড রিচার্জ (এনআইএএনইআর)’ প্রকল্প।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প: ১. ‘হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ প্রকল্প, ২. ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প: ১. ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কর্ণফুলী এবং সংযুক্ত নদীগুলোর (কাচালং, রাইখিয়ং ও শলকনদী) টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প, ২. ‘গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন’ প্রকল্প, ৩. ‘সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকার উন্নয়ন এবং বন্যা ও সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ প্রকল্প, ৪. ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনহ্যান্সমেন্ট’ প্রকল্প।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ‘দারুল আরকাম ইসলামী শিক্ষা পরিচালনা ও সুসংহতকরণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৫০ কোটি টাকার কম ব্যয় সংবলিত ১০টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সভায় অবহিত করা হয়।
সূত্র : বাসস
দেশের বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে বর্তমানে আতপ চালের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই চাল আমদানির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববাজারে চীনের ব্যাপক কেনাকাটার ফলে চালের দাম কিছুটা বাড়লেও এবারের আমদানিতে গতবারের তুলনায় কিছুটা কম দাম পাওয়া গেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে কমিটি। পাশাপাশি তুষ থেকে উৎপাদিত প্রচুর পরিমাণ রাইস ব্র্যান অয়েল বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কৃষিখাতকে শক্তিশালী করতে এবং সারের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে মরক্কো থেকে ৯০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির পাশাপাশি আরও ৪০ হাজার মেট্রিক টন সার আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা জানান, সারের বর্তমান বাজারদর সরকারের অনুকূলে রয়েছে।
শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে এই সভায়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) নতুন ভবনের জন্য ১০৫ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে ময়মনসিংহে ১৯টি সাবস্টেশন বিতরণের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। উপদেষ্টা জানান, অস্ট্রেলীয় সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে কাজ শুরু না করলে অনুমতি বাতিলের ঝুঁকি থাকায় দ্রুত এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই এই ক্রয়ের মূল লক্ষ্য।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে আয়কর ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় করদাতাদের যাবতীয় ব্যাংকিং তথ্য সরাসরি সংযুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে আয়কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে এনবিআর। গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘আয়কর রিটার্ন দাখিল সাপোর্টিং বুথ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করতে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপস চালু করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমেই করদাতারা তাদের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্যের ভিত্তিতে সহজেই রিটার্ন পূরণ ও জমা দিতে পারবেন। তিনি উল্লেখ করেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তথ্যের কারচুপি একটি বড় বাধা। ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় ব্যাংকিং তথ্য যুক্ত হলে তথ্য গোপন করার সুযোগ থাকবে না, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ডিআরইউ-এর এই অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া যতো বেশি জনপ্রিয় হবে, ততোই সাধারণ মানুষের হয়রানি কমবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি আরও গতিশীল হবে। উল্লেখ্য, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর কাঠামোর আমূল সংস্কার ও অটোমেশনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, যার অংশ হিসেবেই এনবিআর এই নতুন উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছে।
আমদানিপ্রধান দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাড়ছে রপ্তানি বাণিজ্য। চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ৪২৯টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। দেশি কোম্পানির বিস্কুট, আসবাব, প্লাস্টিকের পাইপসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে আমদানিও।
রপ্তানি-আমদানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য এসেছে শ্রমিকদের মধ্যে। হিলি কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে ৪২৯টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭৬২ মেট্রিক টন দেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে। একই সময় আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৩৮৪টি ট্রাকে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন পণ্য। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই বন্দরে ভারত থেকে ৮ হাজার ৪৮৭টি ট্রাকে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ২৬৫ কোটি টাকা।
হিলি স্থলবন্দর সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে হিলি বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি শূন্যের কোঠায় ছিল। চলতি অর্থ বছরে অনেক দেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
পাশাপাশি গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে এই বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্ম ব্যস্ততা বেড়েছে বন্দর কেন্দ্রীক সব শ্রমিকদের।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক নূর ইসলাম বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানিও বেড়েছে। গত বছর প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করত। চলতি বছর গত ১২ আগস্ট থেকে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে। এ বছর একই সময় সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৬০টি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে। আমরা সবাই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক থাকলে বন্দরের সব পেশাজীবী মানুষ উপকৃত হয়।’
হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘হিলি বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। এতে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এর আগে এই বন্দর দিয়ে তেমন কোনো পণ্য রপ্তানি হতো না। বর্তমান আমরা রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামীতে ভারতে আরও বেশি দেশি পণ্য রপ্তানি হবে।’
হিলি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক অতিশ কুমার শ্যানাল বলেন, ‘এই বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। ভারতে রপ্তানি হওয়া পণ্যবাহী ট্রাকপ্রতি ওজন ফি ১৪৬ টাকা এবং এন্ট্রি ফি ১৬৮ টাকা নেওয়া হয়।’
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘হিলি স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। অন্য অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছর এই বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় পণ্যের আমদানিও গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। ভারত থেকে কাঁচা পণ্য যেমন আদা, রসুন, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও মটরশুঁটি আমদানি হয়ে থাকে। যেহেতু এসব পণ্য পচনশীল, তাই আমরা কাস্টমসের সব কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করে থাকি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘আমদানি-রপ্তানি সহজ করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দেশের সব বন্দর ও বিমানবন্দরে দ্রুত রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) চালু করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রথম জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে ক্যাশলেস জেলা হিসেবে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন থাকা জরুরি। প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বণিক সমিতি, চেম্বার প্রতিনিধি, বন্দর, কাস্টমস, শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও তপশিলি ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
গভর্নর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ এ অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। তবে এ সম্ভাবনাকে পূর্ণ রূপ দিতে আর্থিক খাতের সুদৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অব্যবহৃত ফান্ড এ অঞ্চলের উপর্যুক্ত গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে প্রত্যেক ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে গেস্ট অব অনার ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় বিষয়ক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বৃদ্ধির ধারা বিজয়ের মাসেও অব্যাহত রয়েছে। চলতি (ডিসেম্বর) মাসের প্রথম ২০ দিনে দেশে এসেছে প্রায় ২১৭ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয়। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে ২৬ হাজার ৪৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই মাসে তিন বিলিয়ন ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলছে, ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৯ কোটি ডলার বেশি এসেছে। গত বছরের ওই সময়ে এসেছিল ১৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫২১ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০৯ কোটি ডলার বেশি। তখন এসেছিল ১ হাজার ৩১২ কোটি ১০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত বছর শুধু রমজানের ঈদ কেন্দ্র করেই এক মাসে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণে বিভিন্ন প্রণোদনা, বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ওপর উৎসাহ বাড়ানো এবং এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সক্রিয় ভূমিকা উল্লেখ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মাসভিত্তিক প্রবাসী আয় ছিল- জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার ও নভেম্বরে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল, যা ছিল ওই অর্থবছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।