বাংলাদেশসহ ৩১টি দেশের ব্যাংক ও ব্রোকারেজকে রাশিয়ার মুদ্রা বাজারে লেনদেনের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার; একই সঙ্গে লেনদেন করা যাবে ডেরিভেটিভস মার্কেটেও। ঢাকায় রুশ দূতাবাস এ সব দেশকে ‘বন্ধুপ্রতিম ও নিরপেক্ষ’ বলে উল্লেখ করেছে।
শনিবার ঢাকায় রুশ দূতাবাস দেশটির সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এবিষয়ক ঘোষণায় দেশগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো- আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম, মিশর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাতার, চীন, কিউবা, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মঙ্গোলিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বৃহস্পতিবার এসংক্রান্ত নথিতে সই করেন। এর ফলে ৩১ দেশের ব্যাংক ও ব্রোকাররা রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে।
ডেরিভেটিভ এক ধরনের আর্থিক চুক্তি যা দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে হয়ে থাকে। কিছুটা জটিল ধরনের এ চুক্তি-ডেরিভেটিভ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট বাজারে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সম্পদ লেনদেন করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ডেরিভেটিভ হিসেবে প্রচলিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে মুদ্রা, স্টক, বন্ড, পণ্য, সুদের হার ও বাজার সূচক। ডেরিভেটিভ চুক্তির মান এ সব সম্পদের দামের পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। ডেরিভেটিভের রকমফের হিসেবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় এ চারটিকে- ফিউচার, ফরওয়ার্ড, সোয়াপ ও অপশন।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। ডলারের মাধ্যমে লেনদেন করার সব ধরনের উপায় বন্ধ দেশটির। এতে আর্থিকভাবে চাপে পড়েছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত ও চীনসহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালালেও মুদ্রা লেনদেনে জটিলতার মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে বেশ কয়েক বছর থেকে রুবল দিয়ে লেনদেনকে প্রাধান্য দিচ্ছে মস্কো, যা যুদ্ধের পর একমাত্র মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার উৎপাদিত তেল ও গ্যাস কিনতে রুবলে মূল্য পরিশোধের নিয়ম চালু করেন। এরপর থেকে রুবলে লেনদেন বাড়ছেও।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন রুবল ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। মুদ্রা চাঙ্গা করতে দেশটি সুদের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতিও চাপে রয়েছে, দুর্বল হয়েছে দেশটির মুদ্রা রুবল।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কোনো ব্যাংক রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমতি দিতে পারে। তবে এখনো অন্য কোনো দেশে এমন কোনো ব্যবসা করছে না বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। আর দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করতে চাইলে রুবলে নস্ট্রো হিসাব খোলার অনুমতি নিতে হবে। এরপর কেস-টু–কেস ভিত্তিতে অনুমোদন নিতে হবে।
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেনের ৯০ শতাংশের বেশি মার্কিন ডলারে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরো, পাউন্ড, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও কানাডিয়ান ডলারে কিছু লেনদেন হয়ে থাকে। এর বাইরে ভারতের সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় গত ১১ জুলাই থেকে টাকা-রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুপিতে রপ্তানি আয় থাকলেই কেবল রুপিতে আমদানি করা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীতে সর্বোচ্চ ভ্যাট পরিশোধকারী পাঁচ প্রতিষ্ঠান পেয়েছে সম্মাননা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো চট্টগ্রামে উৎপাদন খাতে দ্য কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড, ব্যবসা খাতে এসকরপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, সেবা খাতে সেনা হোটেল, কক্সবাজার সেবা খাতে সাইমন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড এবং বান্দরবান জেলায় সেবা খাতে ভেনাস রিসোর্ট অ্যান্ড কফি হাউস।
আজ রোববার চট্টগ্রামের রেডিসন বে ব্লুর মেজবান হলে অয়োজিত ভ্যাট দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন এনবিআর সদস্য ড. এস এম হুমাযূন কবীর।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, কর কমিশনার মো. শাহাদাত হোসেন সিকদার, চেম্বার পেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এম এ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাইলে সাইমন বিচ রিসোর্টের এমডি মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, সম্মাননা প্রদান করায় এনবিআর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই। হোটেল হলো সিজনাল বিজনেস। তাই বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিত। তিনি বলেন, অটোমেশনের কারণে ভ্যাট প্রদান এখন সহজ হয়েছে। আরও সহজ করতে হবে। মিরসরাইয়ে ইকোনমিক জোন হচ্ছে। আমরা বিনিয়োগ করছি। ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আনতে ভ্যাট নিয়ে ভাবতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে চেম্বার নেতা অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, কক্সবাজারে হোটেলে খাওয়ার পর একটিতে ১৫ শতাংশ, অন্যটিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। তিনি এর কারণ জানতে চান। একই বিষয়ে কাজল বড়ুয়া বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাট প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দিলে আইনি-সহয়তা সম্পর্কে জানতে পারবে বলে জানান।
কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান বলেন, ভ্যাট দিয়ে আমার কি লাভ? এর উত্তরে ভ্যাট বিভাগ কি উদ্যোগ নেবে, কিংবা পুরস্কার অটোমেটিক জানার কোনো কার্যক্রম নেয়া হবে কি না জানতে চান। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ভ্যাট কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, সমন্বিত ভ্যাট ও ট্যাক্স সফটওয়্যারের বিষয়টি এনবিআর বিবেচনায় নিতে পারে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বন্ড কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৬২৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ৪ হাজার ৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এবার বেশি আদায় হয়েছে ৬১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। চট্টগ্রামে ইএফডির সংখ্যা ২ হাজার ১২৭টি।
পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভারত থেকে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ভারতে বাংলাদেশ দূতবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আজ চিঠি পাঠিয়েছে। এছাড়া দেশে যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটারিং করার জন্য সকল জেলা প্রশাসক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। তবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে সেখান থেকে বাংলাদেশে ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। এখন এই পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ রোববার বলেন, ‘ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই সেখান থেকে আমদানির জন্য ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়। এই পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিভাবে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ানো যায়, সে চেস্টা চলছে। একইসঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত থাকবে।’ দেশের সর্বত্র যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
দেশের মানুষ কষ্ট পায় এমন কিছু করা ঠিক হবে না উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানান। সরকারের এই জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘কেবল সরকার সব ঠিক করে দেবে এমন ভাবাটা ঠিক নয়। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে দেশের জনগনের জন্যই ব্যবসা।’
তিনি বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল আর দেশে একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেল! এটা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়।’
রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট দিবসের সেমিনারে তপন কান্তি ঘোষ তার বক্তব্যে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা বাড়ে কীভাবে- এমন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যিনি একদিন আগে ১২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করলেন, পরদিন কীভাবে সেটার দাম ২০০ টাকা হয়ে গেলো? দাম বাড়তে তো সময় লাগার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় কোনো নৈতিকতা দেখালেন না।’
তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি হলেই অনেক ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিয়ে থাকেন। গতকাল হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে গেছে। এটা অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ নয়।’
এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ ধরে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয় ডলারসংকট। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই যেহেতু নিয়ন্ত্রণ হয় মার্কিন ডলার দিয়ে তাই যুদ্ধের অজুহাতে বাড়তে থাকে অতি প্রয়োজনীয় এ মুদ্রাটির চাহিদা। করোনা মহামারিপরবর্তী বাংলাদেশেও বেড়ে যায় আমদানি, যার সুবাদে দেশে চাহিদা বাড়ে মার্কিন ডলারের। ডলারের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় বিক্রি করতে হয়েছে ডলার। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে।
তবে ডলারসংকট কিংবা রিজার্ভ কমে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে গভর্নর হিসেবে আবদুর রউফ তালুকদারের নিয়োগের পরই অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে নেওয়া হয় বেশ কিছু পদক্ষেপ। এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশনা দেয় ব্যাংকগুলোকে। সেসব পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, আমদানি ও রপ্তানির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে তাদের নেওয়া পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, গেল চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমে হয়েছে ৩৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের চার মাসের হিসাবে শতকরা বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও সার আমদানির প্রভাবে যা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১৮২ কোটি ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতি কমার কারণ হিসাবে বড় অবদান রেখেছে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানির হিসেবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে মোট আমদানি হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। যা এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে ছিল ২ হাজার ৫৫১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চার মাসে আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, একই সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় এসেছে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। যা তার আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ছিল ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানিতে বড় কোনো প্রবৃদ্ধি না হলেও বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাড়ানো গেলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কোনো আমদানিকারক যেন পণ্যের বাড়তি দাম দেখিয়ে আমদানি করতে না পারে সেদিকেও রয়েছে কঠোর নজরদারি। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাংককে আমরা সতর্কতার সঙ্গে আমদানির ঋণপত্র খুলতে বলেছি। আমদানিতে যেন কোনোভাবেই কোনো মিথ্যা তথ্য না আসে সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে।’ শুধু তাই নয়- আমদানির আড়ালে যেন কোনোভাবেই অর্থ পাচার না হয় সেদিকেও তাদের নজরদারি রয়েছে। ‘বর্তমানে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে, এ ছাড়া বাড়তি প্রাইস মনে হলে তা সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ জন্য আমদানি কিছুটা কমে এসেছে’ বলেও জানান তিনি। আমদানি কমানোর প্রবণতা অব্যাহত থাকবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ভুল দামে আমদানি করতে দেব না, আমার মনে হয় এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ঘাটতি কমে আসবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ছিল ১ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে। করোনা মহামারি প্রথম বছরে বাণিজ্য ঘাটতি সব রেকর্ড ভেঙে ছাড়িয়ে যায় ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলারের ঘর। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হয় বাণিজ্য ঘাটতি। যা চলতি অর্থবছর শেষে আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তবে তার প্রভাবে যেন আমদানি কমে না আসে সেদিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। অর্থনীতিবিদ ও দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ-আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন এফসিএ বলেন, ‘রিজার্ভের কথা চিন্তা করে আমদানি কমিয়ে আনতে হবে, সেটা ধীরে ধীরে হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা আমদানি করতে না পারলে রপ্তানিও কমে আসবে।’ তবে তার পরামর্শ আমদানির আড়ালে যেন অর্থ পাচার না হয় সেদিকে আরও নজরদারি বাড়াবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে অর্ডার দেওয়া পণ্য না নেওয়া কিংবা অর্থ পরিশোধ না করার শর্ত দিয়েছে তৈরি পোশাকের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিবৃতিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ববাণিজ্যের ধরন এখন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। মানবাধিকার এবং পরিবেশের বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক বিষয়ও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু বাণিজ্যের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, সে কারণে বাণিজ্যনীতি-সংক্রান্ত যে কোনো পরিবর্তনই উদ্বেগের।
তিনি বলেন, বিজিএমইএর একটি সদস্য কারখানার বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে এলসির একটি অনুলিপি তাদের নজরে এসেছে। এলসিতে ক্রেতার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া কোনো দেশ, অঞ্চল বা দলের সঙ্গে লেনদেন করব না। কোনো ধরনের বিলম্ব, অপারগতা কিংবা তথ্য প্রকাশের দায়ও নেব না।’ এ কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয়। এটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং কোনো দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ নয়। সুতরাং, একে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে– এভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতি এবং প্রটোকল থাকতেই পারে। তবে একটি এলসি কপি দাপ্তরিক কোনো ঘোষণা নয়। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক মিশন কিংবা সরকারি উৎস বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জাতীয় তথ্য পায়নি বিজিএমইএ।
ফারুক হাসান জানান, শ্রমিকদের অধিকার এবং তাদের কল্যাণ বিজিএমইএর কাছে সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয়। পাশাপাশি ব্র্যান্ড, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন এবং তাদের সহায়তায়ও বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছেন তারা। উৎপাদন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দায়িত্বশীল করতে আরো অনেক উদ্যোগ বিজিএমইএর পরিকল্পনায় রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্মারক বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্মারকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পদক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য নেওয়া হয়নি। বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মাত্র।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এলসির ধারা অন্তর্ভুক্তিকে আমরা সমর্থন করি না। এটি বাণিজ্য নীতিমালার লঙ্ঘন। এ ধরনের শর্ত দেওয়ায় ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র না-ও খুলতে পারে। কেননা, তৈরি পোশাক রপ্তানির পর অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। এ ঘটনায় উদ্যোক্তারা টেনশনে পড়তে পারেন। তবে ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি বিশ্বের সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, সেহেতু অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের শর্ত হয়তো কেউ কেউ দিচ্ছে।
তিনি বিবৃতিতে বলেন, আমরা অতীতে একই ধরনের উদাহরণ দেখেছি একজন ক্রেতার কাছ থেকে একটি এলসি ক্লজ উদ্ধৃত করার জন্য এটিকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে সাধারণীকরণ করার জন্য এবং সত্যের এই ধরনের ভুল উপস্থাপনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি। বিজিএমইএ তার সদস্যদেরকে, যারা উল্লিখিত এই ধরনের ধারাসহ এলসি প্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এবং যদি এই ধারাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের জন্য উল্লেখ করা থাকে তবে একটি স্পষ্টীকরণের অনুরোধ জানাচ্ছে। যদি ধারাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের পক্ষে জারি করা এলসিতে উপস্থিত হয়, তবে এটি নৈতিকতা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা আমাদের সদস্য কারখানাগুলিকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে এই ধরনের ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পর্যালোচনা/পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রমনীতি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তাদের অর্ডার দেওয়া পণ্য নেবে না কিংবা অর্থ পরিশোধ করবে না– এমন শর্ত যুক্ত করে বাংলাদেশের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ঋণপত্র বা এলসি দিয়েছে সে দেশের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। পণ্য জাহাজীকরণের পরও যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলেও অর্থ দেবে না ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে শর্ত দেওয়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনিক গ্রুপ ও নতুন ভিশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীর মেয়ে নাদিহা আলী (৩৭) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিমানবন্দরের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। নাদিহা আলী মো. নূর আলী ও সেলিনা আলী দম্পতির দ্বিতীয় কন্যা। যুক্তরাষ্ট্রে জানাজার পর তার দাফন সেখানেই সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
নাদিহার মৃত্যুতে পদ্মা ব্যাংক ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান এবং দৈনিক বাংলার প্রকাশক ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, 'এই বেদনাবিধুর ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি এবং নিজের কন্যা হারানোর ব্যাথা অনুভব করছি।'
এছাড়া, ইউনিক গ্রুপের এক বার্তায় নাদিহা আলীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। বার্তায় মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
রিজার্ভ নিয়ে এবার সুখবর দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ডিসেম্বর মাসে দেশের রিজার্ভ কমবে না, বরং কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক।
গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন।
রিজার্ভ না কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্র উল্লেখ করেছেন, বিদেশি ঋণ ও সহায়তার বড় অঙ্ক আসবে ডিসেম্বরে। জানা গেছে, চলতি ডিসেম্বরেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সহায়তা ও ঋণ বাবদ ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই প্রতিদিনের ডলার বিক্রির চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পুরো পৃথিবীতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লে দাম বাড়তে থাকে প্রায় সব ধরনের পণ্যের। পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে থাকলে প্রয়োজন পড়ে বাড়তি আমদানির। সে সময় থেকেই আমদানির চাপ সামাল দিতে ডলারের সংকট তৈরি হয়। যদিও সে চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় ডলার বিক্রি করেছে। তাতে একসময়ের ৪৮ বিলিয়ন ডলারে থাকা রিজার্ভ কমে এখন ২৫ বিলিয়নের ঘরে এসেছে।
সম্প্রতি ডলারের দাম দুই দফায় কমানো হয়েছে। বিদেশ থেকেও ভালো রেমিট্যান্স আসছে। তারপরও হুন্ডিসহ নানা কারণে অস্থিরতা কমছে না ডলারের বাজারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রিজার্ভ শক্তিশালী হলে ডলারের বাজারের অস্থিরতাও কিছুটা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসে এডিবি থেকে রিজার্ভে বাজেট-সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যুক্ত হবে। এ ছাড়াও ডিসেম্বরের ১২ তারিখ আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাব সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদন পেতে পারে। সে দিন অনুমোদন পেলে পরদিনই তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পাবে আরও ৬৮ কোটি ডলার। সব মিলে ১০৮ কোটি ডলার বা এক বিলিয়নের খানিকটা বেশি অর্থ যোগ হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে। আর এতেই রিজার্ভ কমার পরিবর্তে বরং কিছুটা বাড়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন ছয় থেকে আট কোটি ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের প্রয়োজনে জ্বালানি ও রাসায়নিক সার কেনার জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। জানা যায়, এ কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বিক্রি করতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৫ ডিসেম্বর দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে। তবে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এ জন্য এডিবি ও আইএমএফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ বর্তমান সময় বিবেচনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ঢাকা সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বদর আই আলবদরের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার রাজধানীর লে মেরিডিয়েন হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দূরদর্শী নেতার মধ্যে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমিন আহমেদ, চেয়ারম্যান, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা, হাসান আহমেদ, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা এবং মি. কস্তাস, জেনারেল ম্যানেজার, হোটেল লে মেরিডিয়েন ঢাকা।
বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ প্রকাশ করে সৌদি আরব থেকে ৩১ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করে। তারা সৌদি আরবের বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত দেশে চেইন হোটেল, উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক অঞ্চল, জ্বালানি এবং রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেক্টরে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জেনারেল ইলেকট্রিক, ম্যারিয়ট, কোহলবার্গ ক্রাভিস রবার্টস- কেকেআর, নেব্রাস পাওয়ার (কাতার), এলআইসি ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য বিশ্বখ্যাত সংস্থার সঙ্গে তার অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বাণিজ্য রয়েছে।
সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো চেইন হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বাংলাদেশে বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্ভাব্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- ম্যারিয়ট হোটেল প্রকল্প, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, হেইলিবেরি স্কুল এবং অন্যান্য বড় মাপের অবকাঠামো প্রকল্প।
বৈঠকে বদর আই আলবদর ড. সরাফাতকে সম্ভাব্য অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সৌদি আরবে আরও বাণিজ্য সহযোগিতা এবং সম্প্রসারণকে সহজতর করার লক্ষ্যে বিশ্বকাপ মৌসুমে আসন্ন এক্সপো ২০৩০ ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে কৌশল নির্ধারণ এবং প্রকল্পগুলো প্রদর্শন করতে উভয় পক্ষই পারস্পরিকভাবে সম্মত হয়েছে। ড. সরাফাত এ অঞ্চলে হোটেল এবং অবকাঠামোগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে সৌদি কোম্পানিগুলির সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক ব্যবসা করাকে একটি সুযোগ বলে মনে করেন।
বৈঠকটি বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অংশীদারত্বের ক্ষেত্র তৈরি করে, যা উভয় দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বস্তুটিতে নেই কোনো সোনার চিহ্ন। গুণেও নেই স্বর্ণের বাহার। তবে দামে সোনার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের এই মশলা। ছাড়িয়ে গিয়েছে রুপাকেও। ভারত মশলার দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই বিদেশে মশলার ব্যবসার জন্য বিখ্যাত দেশটি। সেই মশলার সাম্রাজ্যে অন্যতম অবদান রয়েছে কাশ্মীরের। কথা হচ্ছে কেশর নিয়ে। একগুচ্ছ সরু সুতোর মতো লাল বস্তুটিকে দেখলে মশলা বলে মনেই হয় না। অথচ স্বাদে ও গন্ধে রান্নায় তার কদরই আলাদা।
বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মণ্ডা-মিঠাই, হেঁশেলে কেশরের ব্যবহার অনেক পুরোনো। যত দিন গেছে, দর আরও বাড়িয়ে ফেলেছে এই মশলা। ভালো রান্নায় কেশর না হলে যেন চলেই না।
সাধারণের সাধ্যাতীত কেশর। কারণ এর দাম আকাশছোঁয়া। এক কেজি কেশরের দাম প্রায় দেড় লাখ রুপি। তাই সব রান্নায় ইচ্ছা থাকলেও কেশর ব্যবহার করা যায় না।
দামের কারণে কেশরকে ‘লাল সোনা’ বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ একে ‘সোনার মশলা’ বলেও উল্লেখ করেন। কেশর কিনতে গিয়ে পকেটে ছ্যাঁকা লাগে মধ্যবিত্ত পরিবারের।
কেন এত দাম কেশরের? দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল কেশরের উৎপাদন ভূমি। কাশ্মীরের প্যামপোর শহরকে ‘কেশরের শহর’ বলা হয়ে থাকে। মূলত সেখানেই কেশর উৎপাদনকারী গাছের চাষ হয়।
ক্রোকাস গাছ থেকে কেশর পাওয়া যায়। এই গাছে বেগুনি রঙের যে ফুল ফোটে, তার গর্ভদণ্ডগুলোই কেশর। সরু সুতোর মতো সেই কেশর পেতে ব্যবসায়ীদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।
এক কিলোগ্রাম কেশর পেতে দুই থেকে তিন লাখ ক্রোকাস ফুল লাগে। উৎপাদন প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। সারা বছর ফুল মেলে না। তাই নানা কারণে কেশরের দাম বেড়েছে।
শুধু রান্নায় স্বাদ নয়, কেশরের স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কেশরের ক্রোসিন আর ক্রোসেটিন নামক দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। মানসিক অবসাদও কমায়। নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তে শর্করার পরিমাণও।
সম্প্রতি কাশ্মীরে কেশরের উৎপাদন কমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগে একটি মৌসুমে তিন থেকে পাঁচবার গাছে ফুল হতো। তা থেকে অনেক কেশর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন মৌসুমে মাত্র দুই থেকে তিনবার ফুল ফোটে।
আবহাওয়ার পরিবর্তনকেই কেশরের উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অনিয়ন্ত্রিত বৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি এবং অত্যধিক গরম এই উৎপাদনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, কাশ্মীরে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের ধরন বদলেছে। ১০ বছর আগেও যে সময়ে যে পরিমাণে তুষারপাত বা বৃষ্টি হতো, এখন তা হয় না। যা কেশর ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে।
পাশাপাশি, নাগরিক সভ্যতার বিকাশও কেশর উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী। কেশরের খেতে ক্রমে ঢুকে পড়ছে নগর। খেত একটু একটু করে কমে আসছে। তার ফলেও আগের চেয়ে উৎপাদন কমেছে বলে দাবি।
পাহাড়ের বুকে কেশর ফোটাতে অত্যন্ত যত্ন এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। পরিশ্রম অনুযায়ী চাহিদা কম এই মশলার। দামের কারণেই অনেকে তা কিনতে চান না। তাই কেশর ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেছেন, দেশের মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্য বাড়ছে। আর এই আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
আইসিডিডিআর,বির ৬৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার বিনায়ক সেন খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৫০। শহরাঞ্চলে গিনি সহগের মান শূন্য দশমিক ৫৪ আর গ্রামাঞ্চলে তা শূন্য দশমিক ৪৫। একই সঙ্গে দেশে ভোগের ক্ষেত্রেও অসমতা বেড়েছে। ২০২২ সালে দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভোগ অসমতার ক্ষেত্রে গিনি সহগ ছিল শূন্য দশমিক ৩৩৪; শহরাঞ্চলে যা ছিল শূন্য দশমিক ৩৫৬ আর গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে যা ছিল শূন্য দশমিক ২৯১।
গিনি সহগের মান শূন্য হলে বোঝা যায়, সমাজে চূড়ান্ত সমতা আছে। ১ হলে বোঝা যায় চূড়ান্ত অসমতা আছে; শূন্য দশমিক ৫০ অতিক্রম করলে বোঝা যায়, দেশে উচ্চ অসমতা আছে। অর্থাৎ দেশে এখন উচ্চ অসমতা বিরাজ করছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশে বর্তমানে যে সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে, তা ঠিক এই অসমতা মোকাবিলা করার মতো নয়, অর্থাৎ বৈষম্যে তার তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না বলে মন্তব্য করেন বিনায়ক সেন।
তিনি ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের সূত্রে বলেন, তখন দেশের ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ছিল। তথ্যে দেখা যায়, গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে এ নিয়ে বড় ব্যবধান আছে; গ্রামাঞ্চলের ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকলেও শহরাঞ্চলের মাত্র ১০ দশমিক ১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আছে, যদিও শহরাঞ্চলে অসমতা বেশি।
বিনায়ক সেন আরও বলেন, বৈষম্য বাড়ছে- সাধারণভাবে এই কথার অর্থ হলো ধনী আরও ধনী হচ্ছে আর দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে অসমতার প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। তাঁর ভাষ্য, দেশে দরিদ্র ও অদরিদ্র উভয় শ্রেণির মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, কিন্তু অদরিদ্র শ্রেণির উন্নতির হার বেশি।
সেমিনারে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য প্রবণতা এবং নিয়ামকসমূহ: সাম্প্রতিক প্রমাণ থেকে অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন সংঘাত দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এর আগে গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিনায়ক সেন দারিদ্র্যের প্রধান কারণগুলো তুলে ধরেন এবং তা থেকে উত্তরণে বেশ কিছু নীতিগত প্রস্তাব তুলে ধরেন। স্মার্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, টেকসই প্রবৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সেসব নীতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন তিনি।
বিনায়ক সেন উপস্থাপনায় দেখান, সরকারি ব্যয় বাড়লেও কর-জিডিপির অনুপাত কমে যাচ্ছে। ২০০০-০১ সালে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০১০-১১ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, সে বছর জিডিপির অনুপাতে সরকারি ব্যয় ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ছিল ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, কিন্তু সরকারি ব্যয়-জিডিপির অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ কারণে সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস।
টানা ১৫ বার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন পুরান ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী মো. কাউছ মিয়া। দেশের অনেক বড় ব্যবসায়ীকে পেছনে ফেলে এবার তিনি সেরা করদাতা হয়েছেন। কাউছ মিয়া হাকিমপুরী জর্দা প্রস্তুতকারী কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। ২০২২-২৩ করবর্ষে ‘ব্যবসায়ী’ শ্রেণিতে এই ব্যবসায়ী সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন।
চলতি বছর ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে মো. কাউছ মিয়ার পাশাপাশি গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মুর্তজা, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আশরাফুল আলম ও চেয়ারম্যান এস এম শাসছুল আলম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলমকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছে।
গত বছর সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে মো. কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়েছিল। চলতি বছরে ব্যক্তি, কোম্পানি ও অন্যান্য ক্যাটাগরিসহ মোট ১৪১ জনকে সেরা করদাতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ অধিশাখা-২ (কর)-এর সিনিয়র সহকারী সচিব নুসরাত জাহান নিসুর সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে মুজিববর্ষের সেরা করদাতা হিসেবেও বিশেষ সম্মাননা পান কাউছ মিয়া। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের সময় শীর্ষ করদাতা হয়েছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে কাউছ মিয়া দেশে ব্যবসায়ী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন। গত ৬১ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন তিনি। প্রথম কর দেন ১৯৫৮ সালে।
চাঁদপুর জেলার রাজরাজেশ্বর গ্রামে (ব্রিটিশ আমলের ত্রিপুরা) ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কাউছ মিয়া। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদি দোকান চালু করেন।
পরে ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। এরপর ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে তার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা।
২০১৯ সালে এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে “ফ্রি” হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাব-নিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম।’
জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২২-২৩ করবর্ষের জন্য খেলোয়াড়সহ সেরা করদাতা মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে ব্যক্তি ৭৬ জন, কোম্পানি ৫৪টি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১১ জন। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত সরকারি গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ১০ ডিসেম্বর জাতীয় ভ্যাট দিবসে সেরা করদাতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড দেবে এনবিআর। ২০১৬ সাল থেকে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা দিয়ে আসছে এনবিআর।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার একটি বন্ড অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৮৯০তম কমিশন সভায় এ বন্ডটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আলোচ্য বন্ডটির বৈশিষ্ট্য হবে মুদারাবা ফ্লোটিং রেট, নন-কনভার্টিবেল, আনসিকিউরিড সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। এর প্রধান বেশিষ্ট্য হবে নন-কনভার্টিবেল, অর্থাৎ এ বন্ডের কোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তরিত হবে না। বন্ডটির কুপন রেট তথা সুদ হার হবে ৬ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে। এটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হবে। এর প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য হবে ১০ লাখ টাকা। এ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ব্যাংকটি তার টিয়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করবে।
আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ডিবিএইচ ফিন্যান্স। আর এর অ্যারেঞ্জারের হিসেবে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বন্ডটিকে স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত হওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের মে মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ব্যাংকটি জানিয়েছিল, তাদের পর্ষদ সভায় নন-কনভার্টিবেল, আনসিকিউরিড, ফুললি রিডিমেবল ফ্লোটিং রেটবিশিষ্ট ‘এসজেআইবিএল থার্ড মুদারাবা সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড’ ইস্যুর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এ বন্ড ইস্যু করে ব্যাসেল-থ্রি এর অধীনে থাকা তাদের ব্যাংকের টিয়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করা হবে। বন্ডটির মেয়াদকাল হবে ৭ বছর, যা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে। সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে নীতিমাল অনুসরণ করে এ বন্ডটি ইস্যু করার কথা জানানো হয় তখন। এরই মধ্যে এ বন্ড ইস্যুর জন্য বিএসইসির অনুমোদন পেল এসজেআইবিএল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত করেনি ব্যাংকটি।
বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। রিকোভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (আরঅ্যান্ডআর) ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থ বছরে ২৫ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব ছিল, যা এখন বাড়িয়ে ৫০ কোটি ডলার করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে সরকার।
অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থছাড় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিপিসি কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, অর্থ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে ইআরডি। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের চিঠিতে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এটা খুবই উৎসাহজনক বিষয় যে, দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসিতে টার্গেট করা প্রায় সব সংস্কার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে। জাতীয় ট্যারিফ নীতি গ্রহণ, এই চালান পদ্ধতির বাস্তবায়ন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা, সুরক্ষিত লেনদেন আইন প্রণয়ন এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ- এর মধ্যে কয়েকটি।
‘দেশকে টেকসই উন্নয়নের ধারায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ এসব সংস্কার। দ্বিতীয় ডিপিসিতে টার্গেট করা সংস্কারের মধ্যে মাত্র কয়েকটির কাজ সম্পন্ন হওয়া বাকি থাকলেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডিপিসিতে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়িত সংস্কার পদক্ষেপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
‘অর্থ বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় যে, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা না থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গ্লোবাল ক্যাম্পেইনের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রেখেছে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি সাসটেইনেবল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই একটি স্থিতিস্থাপক ও টেকসই ভবিষ্যৎ; এবং এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় আরঅ্যান্ডআর ডিপিসির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল আলোচনা এবং অর্থছাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।’
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং রিজার্ভ সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর সঙ্গে ৪০ কোটি ডলার করে মোট ৮০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
চলতি মাসে দুই সংস্থার সঙ্গে এ-সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।
কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনৈতিক সংকট এবং টিকা কিনতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তার ওপর জোর দেয়। পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের বাজেট সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ হয়েছে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেয়েছে ১.৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার। তার আগের তিন বছর যথাক্রমে বাজেট সহায়তার পরিমাণ ছিল ২.৫৯ বিলিয়ন, ১.০৯ বিলিয়ন এবং ১ বিলিয়ন ডলার।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হতে পারে, যার পরিমাণ ৬৮১ মিলিয়ন ডলার। দুটো প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হতে পারে ১১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর এডিবি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া একই দিনে আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
উভয় ঋণ প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ অর্থ প্রাপ্তি বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে স্বস্তি আনবে। এর মাধ্যমে আমদানি বিল পরিশোধ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসার অর্থ পাঠাতে প্রয়োজনীয় ডলারের ঘাটতি মেটাবে।