দেশে এখন বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পোষা প্রাণীর খাবার ও লালন-পালন করার বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। এর বাজার প্রতি বছর ২০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে। তবে পোষা প্রাণীর খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য- সবই আমদানি করতে হয়।
গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিসটার মতে, ২০২৮ সালে পোষা প্রাণীর খাবারের বাজার নয় দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে ৩০৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৮ লাখ ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪১৪ কোটি টাকা (প্রতি ডলার সমান ১০৯ টাকা ধরে)
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘরে পোষা প্রাণী রাখা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও পোষা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল ভাবনার কারণে দেশে পোষা প্রাণীর খাবার ও এর আনুষঙ্গিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
পোষা প্রাণীর প্রতি পরিবারের সদস্যের মতো আচরণ করা মানুষজন তাদের নিজের মতো পোষা প্রাণীকেও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন দেয়ার চেষ্টা করেন। দেশের মানুষের পরিবর্তিত জীবনধারা ও আয় বৃদ্ধির কারণে পোষা প্রাণীর যত্নের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে।
রাজধানীর গুলশানের বাসিন্দা সাদিয়া ইসলামের কথাই ধরা যাক- তার পোষা প্রাণীর জন্য আছে একটি লিটার বক্স, খাবারের বাটি ও আলাদা একটি ঘর। তিনি বলেন, আমার দুটি বিড়ালের দেখাশোনা ও চিকিৎসার জন্য আমাকে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হয়।
এদিকে একটি পোষা কুকুরের মালিক সাকিব খান জানান, প্রতি মাসে তার খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো।
ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত প্রসূন চৌধুরীর লালমাটিয়ার বাসায় তার সঙ্গী হিসেবে আছে একটি পোষা কুকুর।
এই ৩ জনের মতো আরও অনেকে আছেন যারা বিড়াল, কুকুর, খরগোশ ও পাখির মতো পোষা প্রাণীগুলোকে তাদের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মতো যত্ন নেন।
প্রায় এক দশক আগে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো পোষা প্রাণী যত্নে সচেতনতা বৃদ্ধি ও রাস্তা থেকে অসুস্থ প্রাণী উদ্ধার কাজ শুরুর পর থেকে রাজধানীজুড়ে পোষা প্রাণী উদ্ধারকর্মী ও প্রাণী দত্তক নেয়া ব্যক্তির সংখ্যা হঠাৎ করে বাড়তে থাকে।
প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির হার আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে।
পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান পেট জোন বিডির মালিক জুবায়ের মাহমুদ বলেন, বিশেষ করে করোনা মহামারিতে লকডাউনের সময় পোষা প্রাণীর খাবার, আনুষঙ্গিক পণ্য ও ওষুধের চাহিদা বেড়ে যায়। তিনি জানান, ২০১৯ সালে প্রতি মাসে পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
মহামারির আগে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২ লাখ গ্রাহক ছিল, বর্তমানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখে।
মিউ মিউ শপ বিডির প্রধান নির্বাহী সামসুদ্দৌহা রিয়াদ বলেন, ২০১৭ সালে তিনি ও তার এক বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করেন। যখন তারা দেখলেন যে বাজার বাড়ছে, তখন তারা আরও পেশাদারিত্ব নিয়ে ব্যবসা চালাতে শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বর্তমান মাসিক বিক্রির পরিস্থিতিকে শুরুর সময়ের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে বিক্রি প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে।
পোষা প্রাণী ডট কমের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্যের তালিকায় বিড়ালের খাবার, খেলনা ও অন্যান্য পণ্য। ২০১৭ সালের তুলনায় এগুলোর বিক্রি ৭০-৮০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পোষা প্রাণীর খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থ্রিএস ইমপেক্স ২০০০ সালে ব্যবসা শুরুর সময় মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার খাবার ও পণ্য বিক্রি করত।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, এখন বিক্রি বেড়ে প্রায় দুই কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, পোষা প্রাণীর প্রতি মানুষের যত্নশীলতা দিন দিন বাড়ছে। এ সব পণ্যের বাজারও বড় হচ্ছে। তবে তা এখনো সংগঠিতভাবে হচ্ছে না।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর মহাসমাবেশ বানচাল হওয়ার এক দিন পর গত ২৯ অক্টোবর থেকে দফায় দফায় অবরোধ ও হরতাল দেয়া শুরু করেছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক খাতে ২০ দিনের হরতাল ও অবরোধের (২৯ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর) আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (প্রতিদিন ৬৫০০ কোটি টাকা)। হরতাল-অবরোধের কারণে দিনে ৬৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছি।’
হরতাল-অবরোধের প্রচার-প্রচারণা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে পুরোপুরি ব্যাহত করতে ব্যর্থ হলেও, এই অস্থিরতা পরিবহন খাতকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে এবং পণ্য পরিবহনকে ব্যাহত করেছে; যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধীরা রাস্তায় অবস্থানের আশ্রয় নিয়েছে।
পরিবহন মালিকরা জানান, এ খাতের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৬১ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২০ দিনের হরতাল-অবরোধে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা।
ক্ষতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধের ফলে আর্থিক ক্ষতি বহুমাত্রিক এবং আপনি এটি শুধু আর্থিক পরিসংখ্যানে হিসাব করতে পারবেন না।’
‘রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী দল ও বৈশ্বিক ক্রেতারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারপর তারা তাদের ক্রয়াদেশ এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো আরও সুরক্ষিত ও স্থিতিশীল এলাকায় সরিয়ে নেয়।’
থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘যখন একটি বড় বৈশ্বিক ক্রেতা একটি দেশ থেকে অর্ডার স্থানান্তর করে, তখন ছোট ক্রেতারাও তাদের অনুসরণ করে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, একটি ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বৈশ্বিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি সেক্টরে স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রয়োজন। কারণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে আর্থিক লাভ বা ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই আর্থিক লাভের জন্য বিনিয়োগের জায়গা সন্ধান করে। তারা নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে।
বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পরিবহন খাতে। দূরপাল্লার আন্তজেলা বাসগুলো স্টেশনে অলস বসে আছে। অগ্নিসংযোগের ভয়ে সিটি বাসগুলোকে কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এতে অনেক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী বেতনহীন হয়ে পড়েছেন।
মহাখালী আন্তনগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গাড়ি ছেড়ে যায়। হরতাল-অবরোধের কারণে তা এখন দিনে ১০০-তে নেমে এসেছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, সপ্তাহে মাত্র দুই দিন বাস চালানোর ফলে শ্রমিকদের মজুরি ও জ্বালানি খরচ মেটানো আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ফলে ব্যবসার মালিকরা বাস পরিচালনার খরচ ও ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করে। মালিক ও শ্রমিকরা মিলে প্রতিদিন ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা আয় করেন, গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই আয় ৩২ দশমিক ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে হরতাল-অবরোধের কারণে রাজধানীতে বাস চলাচলের জন্য দৈনিক ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
মাহবুবুর বলেন, সাধারণ পরিস্থিতিতে সারা দেশে প্রায় ২ লাখ দূরপাল্লার বাস ট্রিপে প্রত্যেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করে, যার ফলে দেশব্যাপী দৈনিক ২০০ কোটি টাকা আয় হতো।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল পর্যন্ত সারা দেশে ২২৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা শুধু অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করে। ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার বলেন, একটি গাড়িতে আগুন দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘটনাস্থল থেকে বা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থেকে তথ্য পায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে অগ্নিসংযোগের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তবে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমকে সেগুলো জানানো হয়নি।
যেসব ঘটনার তথ্য জানানো হয় না, সে ক্ষেত্রে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলে। অর্থাৎ, পরিবহন কর্মচারীরা নিজেরাই বা যাত্রী ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখার উপসহকারী পরিচালক বলেন, এ ক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
শাহজাহান সিকদার বলেন, গত এক মাসে ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ২১৭টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ও সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে সম্প্রতি গ্রুপ ও স্বাস্থ্য বিমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকার সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের গ্রুপ বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা সুবিধার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম মনিরুল আলম তপন এবং সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির, গ্রুপ বিমা বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম রানা এবং এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. কামরুল হাসান ও সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইনচার্জ (অবলিখন/পুনর্বিমা/দাবি) জহিরুল হক, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (হিসাব) এনামুল গণি চৌধুরী এবং কোম্পানির উপসচিব ফারুক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) সঙ্গে প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় দেশের অন্যতম কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার, হোম ও পারসোনাল কেয়ার পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইবি লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে রিমার্ক এইচবি লিমিটেডের করপোরেট অফিসে বিটাকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং রিমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আম্বিয়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় বিটাকের মহাপরিচালক আনওয়ার হোসাইন, পরিচালক ড. সাঈদ মো. আহসানুল করিম, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মো. মামুনুর রশিদসহ রিমার্কের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড সম্প্রতি সিমপাইসার মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান কমার্স প্লেক্স লিমিটেডের সঙ্গে একটি রেমিট্যান্স পরিষেবা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যাংক এশিয়া টাওয়ারে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শাফিউজ্জামানের উপস্থিতিতে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ইকবাল হোছাইন এবং কমার্স প্লেক্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির পাশা চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এন এম মাহফুজ, হেড অব গ্রুপ ট্রেজারি আরিকুল আরেফিন, ফরেন রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধান গোলাম গাফফার ইমতিয়াজ চৌধুরী এবং কমার্স প্লেক্স লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার কামিল কামরান শেখ, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সানজানা ফরিদ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির নির্বাহী কমিটির ৮৬৫তম সভা গত বুধবার ব্যাংকের করপোরেট প্রধান কার্যালয়ের পর্ষদ সভাকক্ষে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আক্কাচ উদ্দিন মোল্লা। সভায় বিভিন্ন খাতে অর্থায়ন এবং ব্যাংকিং সম্পর্কিত বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের পরিচালক ও কমিটির সদস্যরা ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি, মহিউদ্দিন আহমেদ এবং খন্দকার শাকিব আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ এবং কোম্পানি সচিব মো. আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন রাজীব পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) মহাব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেছেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে তিনি একই ব্যাংকে আইসিটি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (ইনচার্জ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০২ সালে আইআইসিটি, বুয়েটে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময় তিনি ২০০৯ সালে জনতা ব্যাংক পিএলসিতে প্রিন্সিপাল অফিসার (এইচএমই) হিসেবে তার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি ২০১২ সালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদান করেন। তিনি বরিশাল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (ইনচার্জ), হেড অব আইসিটি, হেড অব রেমিট্যান্স, চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার (সিআইএসও) এবং সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে মো. মামুনুর রশীদ পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) মহাব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেছেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে তিনি একই ব্যাংকে আইসিটি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০২ সালে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে তার চাকরি জীবন শুরু করেন। বিজ্ঞপ্তি
চলতি বছর বসবাসের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয় বহুল শহরের তালিকায় একসঙ্গে শীর্ষস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, এর পরই রয়েছে সুইজারল্যান্ডের আরেক শহর জেনিভা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) চলতি বছরে তাদের জরিপের ফল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে। তালিকায় বিভিন্ন দেশের ১৭৩টি শহরের নাম উঠে এসেছে।
ইআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় ২০০টির বেশি পণ্য ও সেবার মূল্য বিবেচনায় বছরের হিসেবে এবার মূল্য বেড়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছরের রেকর্ড ৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে এটি কিছুটা কম হলেও ২০১৭-২১ সালের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতার চেয়ে এটা বেশি। সে কারণে ইআইইউ বলছে, বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকট এখনো শেষ হয়নি।
গত ১১ বছরে ৯ বার বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের এ তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করল সিঙ্গাপুর। যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে সেখানে পরিবহন খরচ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া সেখানে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পণ্যদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, মুদিপণ্য ও অ্যালকোহল।
অন্যদিকে জুরিখে মুদিপণ্য, গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী ও চিত্তবিনোদনের ব্যয় সবচেয়ে বেশি। জেনিভা ও নিউইয়র্ক একসঙ্গে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে হংকং, ষষ্ঠ স্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। এ ছাড়া তালিকায় ফ্রান্সের প্যারিস (সপ্তম), ডেনমার্কের কোপেনহেগেন (অষ্টম), ইসরায়েলের তেল আবিব (নবম) ও যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো (দশম) স্থানে রয়েছে।
তালিকায় নিচের দিকের ১০টি শহরের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স (১৬৩তম), ভারতের চেন্নাই (১৬৪তম), নাইজেরিয়া লাগোস (১৬৫তম), ভারতের আহমেদাবাদ (১৬৬তম), জাম্বিয়ার লুসাকা (১৬৭তম), তিউনিসিয়ার তিউনিস (১৬৮তম), উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৬৯তম), পাকিস্তানের করাচি (১৭০তম), লিবিয়ার ত্রিপোলি (১৭১), ইরানের তেহরান (১৭২) ও সিরিয়া দামেস্ক (১৭৩তম)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য এলাকার চেয়ে গড়ে এশিয়ায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছে ইআইইউ।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আর্থিক খাতে শক্তিশালী জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত না হলে টেকসই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি ও সুশাসন’ বিষয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান ও সিইও শুভাশীষ বসু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের বিজনেস অ্যান্ড গভর্নমেন্ট স্কুলের একাডেমিক প্রোগ্রাম লিডার ইয়ানকা মোজেস।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়ের পাশাপাশি এর পরিবেশগত, সামাজিক ও নৈতিক দিকগুলোও দেখতে হবে। প্রতিবেদনে দেখানো কোম্পানির টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই পরিমাপযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হয়েছে। এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতের বিকল্প নেই। দুর্নীতি কমানোর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবেশগত ও সামাজিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে।
অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশে টেকসই ধারণাটা বেশি দিনের না হলেও আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন টেকসই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছি। দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ আছে; ঘাটতি আছে প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই রিপোর্টিং-পদ্ধতিতে, প্রশ্ন আছে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও। সে জন্য আমাদের দক্ষ নেতৃত্ব ও নিরীক্ষকদের মাধ্যমে সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমন্বিত টেকসই রিপোর্টিং-প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।’
ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বলেন, ‘পুরো আর্থিক ব্যবস্থাকেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে পেশাগত নিরীক্ষকদের বড় ভূমিকা আছে। তারা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই টেকসই প্রক্রিয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।’
মূল প্রবন্ধে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের একাডেমিক প্রোগ্রাম লিডার ইয়ানকা মোজেস বলেন, করপোরেট খাতে সুশাসন ও জবাবদিহির দুর্বলতা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের হার বাড়ছে। যেমন নিউজিল্যান্ডে অস্ত্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় মাদক খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করা হয়। বেশি কার্বন নিঃসরণ করে, এমন কোম্পানিতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনেক দেশ বেশি সুদহার নির্ধারণ করছে। এসব কারণে বিশ্বে টেকসই বিনিয়োগ সম্পদের (সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্ট এসেট) পরিমাণ বাড়ছে।
নিরীক্ষকদের উদ্দেশে ইয়ানকা মোজেস আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে টেকসই ও জবাবদিহিনির্ভর পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ সময় রানা প্লাজা দুর্ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ও মুনাফার চিত্রের পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠান এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে কি না, সেটাও প্রতিবেদন তৈরির সময় দেখতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে আইসিএবি সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই যেন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে চলে, সে লক্ষ্যে সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদরা কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই প্রতিবেদন তৈরির ধরনেও অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মধ্য কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার জায়গা এখন নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম বা উচ্চমূল্যস্ফীতি। কেন দফায় দফায় দাম বাড়ছে তা নিয়ে যখন সবাই উদ্বিগ্ন, তখন দেশের বৃহৎ চেইন সুপারশপ ‘স্বপ্ন’র প্রধান নির্বাহী সাব্বির হাসান নাসির দৈনিক বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, কৃষক, উৎপাদক, আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা দোকান পর্যন্ত সর্বত্রই সমন্বিত নীতিমালার অভাব। তিনি আরও বলেন, জবাবদিহি বাড়াতে হলে পুরো প্রক্রিয়াকে উন্নত বিশ্বের আদলে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। এ জন্য দেশের সুপারশপগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার সুলতান আহমেদ ।
বাংলাদেশের মতো কম আয়ের দেশে সুপারশপের ভবিষ্যৎ কী?
সাব্বির হাসান নাসির : বাংলাদেশে সুপারশপের ব্যবসা ‘আগোরা’র হাত দিয়ে শুরু হয়। শুরুতে খুব এলিট ক্লাসের গ্রাহকরা শুধু এখানে কেনাকাটা করতে আসতেন । ঢাকার অভিজাত এলাকায় ছিল তাঁদের আউটলেট । এরপর ‘স্বপ্ন’সহ অন্যান্য কিছু ব্র্যান্ড ‘সুপারশপ ফর অল’ এ ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১২ সালের দিকে এটা বিস্তৃত হতে শুরু করে, তখনো পুরো মার্কেটের শূন্য দশমিক তিন শতাংশ ছিল সুপারশপের দখলে, যা এখন ২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পুরো মার্কেটে যত বেচা-বিক্রি হয়, তার মাত্র ২ শতাংশ এখন সুপারশপের হাতে। অন্যান্য দেশের কথা যদি বলি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এর মার্কেট শেয়ার ৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৩ শতাংশ, ফাস্ট ওয়ার্ল্ডে ৬০/৭০ শতাংশ, কোথাও কোথাও ৮০/৯০ শতাংশ। উন্নত বিশ্বে এত বেশি হওয়ার পেছনে একটা কারণ মাথাপিছু আয়। মাথাপিছু আয় যত বাড়ে সুপারশপের পরিধি তত বাড়ে। কারণ গ্রাহকের কাছে তখন স্বাস্থ্য সচেতনতা, বাজারের পরিবেশ ও সময়ের দাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে সরকারের স্বদিচ্ছা। সরকার যদি আসলেই চায় মডার্ন ট্রেড গড়ে তুলতে, যেখানে জবাবদিহি থাকবে, তাহলে সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে ব্যাংক, প্রাইভেট ইক্যুইটি ও প্রাইভেট সেক্টরের অংশগ্রহণ। অর্থাৎ বড় বিনিয়োগকারীদের এ খাতে এগিয়ে আসা। আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বাড়ছে, এখন প্রশ্ন আসবে সরকার সত্যিকার অর্থেই চায় কি না মডার্ন ট্রেডের বিকাশ হোক। আমরা যদি মাথাপিছু আয় ভারতের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে আমাদের বাজারের অন্তত ৫/৬ শতাংশ শেয়ার থাকার কথা ছিল সুপারশপের দখলে। এখানেই প্রশ্ন আসে, সরকার কি সত্যিকার অর্থেই চায় এই সেক্টরের উন্নয়ন করতে? আমার কাছে মনে হয় না তারা সেটা চায় ।
কেন আপনার মনে হচ্ছে সরকার চায় না?
সাব্বির হাসান নাসির: কারণটা খুব পরিষ্কার। যদি তারা সত্যিকার অর্থেই চাইত তাহলে শুধু সুপারশপের ওপর ৫% হারে ভ্যাটের ব্যারিয়ার দিয়ে রাখত না। বাইরে থেকে কিছু কিনলে আপনার কোনো ভ্যাট নেই অথচ সুপারশপ থেকে নিলে ৫ শতাংশ ভ্যাট। আমাদের এই ৫% ভ্যাট অনেক ক্ষেত্রেই ডিসকাউন্ট দিতে হয়, যা প্রফিট মার্জিনকে অনেক নাজুক করে দেয়। যদি সরকার চাইত তাহলে আমাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করত, এভাবে বৈষম্য করত না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কেন সরকার এটা করছে না? সে প্রশ্নের উত্তরে আমার কাছে যেটা মনে হয়, তা হচ্ছে সরকার একপ্রকার ভয় পায় যে, ইনফরমাল বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সুপারশপের প্রসার বাড়লে সেটা না উচ্ছেদ হয়ে যায়। সেখানে যে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে, তা বন্ধ হয়ে যায় কি না। আবার সরকার এটাও ভাবতে পারে যে, সুপারশপ তো বড়লোকদের বাজার, এখানে যাঁরা বাজার করেন ৫ শতাংশ ভ্যাট তাদের কাছে কোনো বিষয়ই না। সুপারশপ এখন আর সাধারণের বিলাসিতা নয়। একটা নারীর নিরাপদ বাজার, মধ্যবিত্তের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সম্ভার। আমি মনে করি, সরকারের এখন ভাবা উচিত ১৮ বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রিতে জবাবদিহি আনা গেলে মূল্যস্ফীতি সহজেই কন্ট্রোল করা সম্ভব। এ ছাড়া, ফুড সেফটি নিশ্চিত করতে চাইলে সুপারশপের বিকল্প নেই। খোলাবাজারে আপনি সহজে কাউকে ধরতে পারছেন না, এখানে তো চার-পাঁচজন রিটেইল কোম্পানিকে জবাবদিহিতায় আনতে পারছেন। আবার যদি ভ্যালু চেইনের স্বচ্ছতার প্রশ্ন আসে, তাহলে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অনেক বেশি সহজ। পুরো পৃথিবীতে এ কারণেই সুপারশপ ব্যবস্থা এত জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, এটা একধরনের সভ্যতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকও। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেখানে যেতে পারছি না। বড় কোম্পানিগুলোকে দেখুন তারাও খুব বেশি আসছে না এখানে বিনিয়োগ করতে। তারা ভাবছে এখানে লাভ করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। আবার ব্যাংকগুলোও অনেক ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে না এ খাতে ঋণ দিতে।
অনেক গ্রাহকের এমনকি ভোক্তা অধিদপ্তরেরও অভিযোগ রয়েছে সুপারশপে দাম বেশি। আপনি বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে পারে সুপারস্টোর, কীভাবে?
সাব্বির হাসান নাসির: এটা ওনাদের ভুল ধারণা। আমি বলব প্রাইসিং কীভাবে হয়, কীভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ে তা না জেনেই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। মনে করেন, পেঁয়াজ কিংবা আলু যা নিয়ে এখন খুব আলোচনা হচ্ছে। আমরা কখনই পাইনি এসব চাষ করে কৃষক খুব লাভ করেছে। আবার যারা খুচরা ব্যবসা করছে তারাও এটা করে বাড়ি-গাড়ি করছে তাও নয়। তাহলে বাড়তি দাম যাচ্ছে কোথায়? রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নে প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে। বাজারে আমাদের শেয়ার মাত্র ২ শতাংশ, তাহলে আমরা কীভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারি? সরকারের উচিত ভ্যালু চেইনের সব স্টেকহোল্ডারদের তথ্য নিয়ে, ডেটা নিয়ে কাজ করে সমন্বিত নীতিমালা তৈরি করা।
আপনি বলছিলেন মূল্যস্ফীতি কমানোর কথাও- সেটা কীভাবে?
সাব্বির হাসান নাসির: আপনি দেখবেন আমরা প্রচুর মূল্যছাড় দিই। আমরা যেহেতু একটা বড় অ্যামাউন্ট একসঙ্গে কিনি তাই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা বার্গেনিং করে কিছুটা কমে কিনতে পারি। আমাদের মডার্ন ট্রেডের শেয়ার এখনো অনেক কম। এই সীমিত শেয়ার নিয়েও আমরা যেসব ছাড় দিচ্ছি, তা অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই বাজার থেকে অনেক অনেক কম। আমাদের শেয়ার আরও বাড়লে বাজার ব্যবস্থার ওপর আমাদের ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো।
গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে, সুপারশপে ফ্রেশ পণ্য পাওয়া যায় না। সেটা কেন?
সাব্বির হাসান নাসির: আমাদের অধিকাংশ কৃষিপণ্য আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই কিনে থাকি। তবে আমরা ফ্রেশ রাখার জন্য কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। এ জন্য বাজারের মতো হয়তো ফ্রেশ মনে হয় না। এ ছাড়া মাংসের মধ্যে দেখবেন আমরা কোনো ওয়াটারিং করি না, যেটা বাজারে পাবেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করি ফ্রেশ রাখার জন্য।
আপনি ভ্যাট বৈষম্যের কথা বলছিলেন, এখনো ইসিআর মেশিন সব ব্যবসায়ীকে দেয়া সম্ভব হয়নি। তাহলে ভ্যাটের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা কীভাবে আসবে?
সাব্বির হাসান নাসির: দেখুন ইসিআর মেশিন প্রজেক্ট বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এনবিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে সব ব্যবসায়ীর কাছে এটা পৌঁছে দিতে। সত্যি বলতে এ কাজটা সহজ নয়, বেশ কঠিন। আমি বহু আগেই বলেছিলাম এত ঝামেলা না করে উৎপাদন পর্যায়ে সরাসরি ৫% ভ্যাট বসিয়ে দিতে। কিন্তু এনবিআর তা করেনি। এটা করতে পারলে ভ্যাট আদায় নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকত না। আদায় কয়েকশ গুণ বেড়ে যেত, স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হতো। ইন্ডিয়াতে এ ব্যবস্থা জিএসটিতে রয়েছে।
স্বপ্নের সফলতা আসে আপনার হাত ধরে, গ্রাহকদের উদ্দেশে কী বলবেন?
সাব্বির হাসান নাসির: আমরা স্বপ্ন করেছি মূলত মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে। আমরা এটা অনুভব করি মধ্যবিত্ত মানুষ এখন বেশ কষ্টে রয়েছে। তাদের কষ্ট কীভাবে লাঘব করা যায়, সেটা সবসময় আমাদের ভাবনায় থাকে। আমরা গ্রাহকদের সেন্টিমেন্ট বোঝার চেষ্টা করি, তারা কী ধরনের পণ্য কিংবা অফার প্রত্যাশা করেন, তা নিয়ে ভাবি। এ জন্য দেখবেন স্বপ্নের ডিসকাউন্ট অফার সবচেয়ে বেশি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমাদের মতো কম দামে আপনি খোলাবাজারে অনেক পণ্য পাবেন না। শুধু তাই না, আমরা প্রতিটি কাস্টমারের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা পণ্যের কোয়ালিটি নিয়ে বিন্দুমাত্র কম্প্রোমাইজ করি না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে স্বপ্ন। তাই বলব, স্বপ্নের সঙ্গে থাকুন। এটা আপনাদের প্রতিষ্ঠান। নিজেদের ভেবে স্বপ্নে কেনাকাটা করুন, পরামর্শ দিয়ে স্টোর ম্যানেজমেন্টকে আরও গ্রাহকমুখী ও নির্ভুল করতে সাহায্য করুন। স্বপ্ন নিয়ে বাঁচুন।
দেশে রেমিট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে চলমান ডলারসংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিদেশে আয় করে নিজের অথবা পরিবারের কারও নামে এফসি অ্যাকাউন্ট খুলে সে দেশের মুদ্রা রাখা যাবে দেশের ব্যাংকে। শুধু তাই নয়, আমানতের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় সর্বোচ্চ প্রায় ৯% সুদ পাওয়া যাবে। ফরেন এক্সেচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট (এফইপিডি) থেকে জারি করা এক সার্কুলারে বুধবার এমনটি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত কয়েক মাস ধরে আলোচনায় রয়েছে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়টি। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রেকর্ড পরিমাণ কর্মী বিদেশে গেলেও সে তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে না। অনেক ক্ষেত্রেই শোনা যায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে অবৈধ হুন্ডিতে পাঠাতে উৎসাহ বাড়ছে প্রবাসীদের। আবার অনেক প্রবাসীর অভিযোগ, আমানত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকেই বিদেশে তাদের অর্জিত অর্থ জমা রাখছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন এ নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি গভর্নর বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন। নতুন নিয়মে প্রবাসী, দেশি-বিদেশি এমনকি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানও ডলার কিংবা পাউন্ডসহ অন্য ফরেন কারেন্সিতে আমানত জমা করতে পারবেন দেশের ব্যাংকে। জমার বিপরীতে মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদও পাওয়া যাবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই উদ্যোগকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পর্যাপ্ত মুনাফার নিশ্চয়তা প্রদান এবং দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের মননশীল চিন্তার প্রতিফলন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিন মাস থেকে ১ বছর মেয়াদি আমানতের ওপর রেফারেন্স রেট + ১.৫০%, ১ থেকে ৩ বছরের জন্য রেফারেন্স রেট + ২.২৫%, ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য রেফারেন্স রেট + ৩.২৫% হারে সুদ পাবে গ্রাহকরা।
বর্তমানে ডলারের বেঞ্চমার্ক রেট হিসেবে ব্যবহৃত এসওএফআর রয়েছে ৫.৩৫%। সে হিসাবে কোনো গ্রাহক ৩ বছর মেয়াদে ডিপোজিট করলে সুদ পাবে প্রায় ৮.৬০%। গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট কারেন্সিতে সুদ পেমেন্ট করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন সুবিধা অনুযায়ী কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি চাইলে তার নিজের অথবা পরিবারের অন্য কারও নামে এফসি অ্যাকাউন্ট খুলে ফরেন কারেন্সি জমা করতে পারবেন। মেয়াদ শেষে সুদসহ জমা থাকা ফরেন কারেন্সি দেশে ব্যবহার করা যাবে বা চাইলে বিদেশেও নিয়ে যাওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গেল সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বাইরে থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৩ কোটি ডলার, যা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে আশার কথা, পরের মাস অক্টোবরে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক উত্থান দেখা গেছে। অক্টোবর মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। সব মিলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৬৮৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
লন্ডনের রিজেন্ট লেক ব্যানক্যুইট হলে গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রবাসী ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইউকেবিসিসিআই) সঙ্গে এফবিসিসিআইর এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদার, সম্ভাবনাময় খাতসমূহ চিহ্নিত করা এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করবে এফবিসিসিআই ও ইউকেবিসিসিআই।
দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে উল্লেখ করে মাহবুবুল আলম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারী তো বটেই, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারেন।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘একজন বিদেশি হিসেবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তিনি ১০ বছর ধরে কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। কোনো বিনিয়োগকারী চাইলে যেকোনো সময় তার আয় অথবা লভ্যাংশ একসঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ ধরনের সুবিধা নেই। কাজেই আপনারা আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। এতে বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি নিজে এবং দেশ উপকৃত হবে। সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে, দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।’
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে এফবিসিসিআই প্রবাসী ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআইর সহসভাপতি শমী কায়সার, ইউকে-বিসিসিআইর সভাপতি এম জি গোলাম মিয়া, এফবিসিসিআই পরিচালকরা এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে পাঁচ তারকা হোটেল লো মেরিডিয়ানের মালিকানাধীন কোম্পানি বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের কাট অব প্রাইস ৩৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ থেকে ৩০ শতাংশ কম দরে সাধারণ বিনিয়োগাকারীদের কাছে আইপিওতে শেয়ার ইস্যু করবে কোম্পানিটি।
কাট অব প্রাইস নির্ধারণে গত ২০ নভেম্বর বিকাল ৪টা থেকে ২৩ নভেম্বর বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোম্পানিটির বিডিং (নিলাম) অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে ৮৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা করে দর প্রস্তাব করে। আর সর্বনিম্ন ২০ টাকা করে একজন দর প্রস্তাব করে। ফলে সর্বোচ্চ দর ৩৫ টাকায় কোম্পানিটির কাট অব প্রাইস নির্ধারিত হয়। এর থেকে ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট বা ২৪ টাকায় আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ইস্যু করবে কোম্পানিটি।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিও অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেস্ট হোল্ডিংস পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ৩৫০ কোটি টাকা তুলবে। এ টাকা দিয়ে কোম্পানিটি বিল্ডিং এবং অন্যান্য সিভিল ওয়ার্ক, স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ, দায় পরিশোধ এবং আইপিওর খরচ খাতে ব্যয় করবে।
৩০ জুন, ২০২৩ সময়কালের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ২৪ পয়সা। বিগত ৫ বছরের গড় হারে ইপিএস হয়েছে ৯৫ পয়সা। পুনঃমূল্যায়নসহ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫৬ টাকা ৩৪ পয়সায়। পুনঃমূল্যায়ন ছাড়া যা দাঁড়ায় ৩২ টাকা ২৬ পয়সা।
কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেড এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (রিহ্যাব) প্রশাসক নিয়োগ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংগঠনটিতে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌস।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে রিহ্যাবের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাণিজ্য সংগঠন আইন অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। প্রশাসক যথাসময়ে রিহ্যাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। তারপর নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন তিনি।
রিহ্যাবের বর্তমান কমিটির মেয়াদ গত মাসে শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই কমিটির মেয়াদ পাঁচ মাস বৃদ্ধি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে মামলা করেন রিহ্যাবের এক সদস্য। উচ্চ আদালত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরে ১৩ নভেম্বর চেম্বার জজ আদালত নির্দেশ দেন, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আইন অনুযায়ী বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।