দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতির পারদ ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও নিম্নমুখী। সাত মাস পর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গত সেপ্টেম্বরে।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সবদিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ ভালোই পড়েছে। এ থেকে আমরা কমে মুক্ত হব- সেটাই এখন সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা।’
বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন মঞ্জুর হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?
আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সবদিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। বিশ্বের অর্থনীতির জন্য। এখানে রাশিয়া একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ একদিকে হয়ে এমন একটি পর্যায়ে যাচ্ছে, যার ফলে দিন দিন সমস্যাগুলো বাড়ছে; নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। তাতে সারা বিশ্ব এর দ্বারা এফেক্টেড হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তো এ থেকে আমরা ব্যতিক্রম নই। কারণ একটা হচ্ছে, যে জ্বালানি তেলের উৎসগুলো অনেকটাই সেই সব দেশের ওপর নির্ভর করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আবার কিছুটা কমছে, আবার বাড়ছে। তেলের একটি অনিশ্চয়তা আছে।
দ্বিতীয়ত আছে খাদ্যসংকটের একটি বিষয়। যেহেতু আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। তৃতীয়ত হচ্ছে, আমাদের রপ্তানির বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। সেসব দেশে এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে; অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। তারা হয়তো এখন তাদের কস্ট অব লিভিং কমাতে চাইবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অবস্থা যা, আমাদের অবস্থাও তা। তবে আমরা যেহেতু একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু অভিঘাতটা আমাদের ওপর অনেক বেশি হবে অন্যান্য দেশের চাইতে।
এটি হচ্ছে মূলত প্রথম কথা; আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে আমরাও কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জ্বালানি তেলকে সাশ্রয় করতে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছি। দেশের অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। উৎপাদনব্যবস্থা অনেকটা কমে গেছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার যে অবস্থায় আমরা এসছিলাম গত কয়েক বছরে। বিদ্যুতে নিরবচ্ছিন্ন ছিলাম, সেখানে ব্যাঘাত ঘটেছে। এগুলো সবই কিন্তু দেশের উৎপাদনব্যবস্থার ওপর একটি প্রভাব ফেলছে। তাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধি সেটার ওপর আঘাত আসছে।
সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে। সেটি কি আদৌ অর্জন করা সম্ভব হবে?
এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে এই লক্ষ্য আসলে অর্জন করা খুবই কঠিন। বিশ্বব্যাংক বলেন বা আইএমএফ বলেন, তারা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ সেটা আগের থেকে কমিয়ে এনেছে। আমাদের ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা ছিল, এখন সবাই বলছে ৬ শতাংশ, এমনকি আরও কমও হতে পারে। এই সবকিছুর সঙ্গে যেটা সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য অ্যাডজাস্ট করেছে। এ ছাড়া অন্য যেসব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি একটা খারাপ পর্যায়ে আছে। সেটা আগস্টে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, সেপ্টেম্বরে এটা ৯-এর ওপরে ৯ দশমিক ১ হয়েছে। কিন্তু যেটা আমরা অনেকবার বলেছি। আমাদের গবেষণায়ও দেখেছি যে, মূল্যস্ফীতি এটাকে বলি আমরা হেডলাইনি ইনফ্লেশন। এটা গড়, এটা সবার ওপর কিন্তু ইনফ্লেশনটা হয়। প্রত্যেক ক্যাটাগরির মানুষের ওপর ইনফ্লেশনের প্রভাব আলাদা। দরিদ্র শ্রেণির লোকদের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিন্তু অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষ হয়তো ১২ শতাংশ ফিল করছে। আমি হয়তো ৯ শতাংশ করছি; আরেকজন হয়তো ৭ শতাংশ ফিল করছে। কারণ এটা কনজামশন বাস্কেটের ওপর নির্ভর করে আপনি কোন জিনিসগুলো খাচ্ছেন, সেই জিনিসগুলোর দাম কেমন বেড়েছে। সেই হিসাবে এক ধরনের আঘাত তো আছেই। দ্বিতীয় হচ্ছে যে করোনাভাইরাস-পরবর্তী যেই ধরনের রিকভারির কথা ছিল; যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল। বিশেষ করে কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেগুলো কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
অর্থনীতির ব্যবসা-বাণিজ্য যেগুলোর মধ্যে আমরা একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। যেহেতু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় বেড়েছে; তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরেও প্রভাব পড়েছে। তৃতীয় আরেকটি জিনিস আমাদের সবকিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার, ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার। ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার একটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিতে একটি বড় প্রভাব পড়েছে। আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ডলারের যে ব্যবস্থাপনা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। তারা আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেছে না তারা কী করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদিও পুরোপুরি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের হাতে। যেহেতু আমাদের একটি বড় অংশ ফাটকাবাজারিতে লিপ্ত হয়ে যাই; আমাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যাকানিজমগুলো এতটা শক্তিশালী না। সেদিক থেকে পুরোপুরি যদি আমরা মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিই ফল আরও খারাপ হবে। কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করছিল। সেটা আরও খারাপ হয়েছে। তারা তিনটি রেট প্রপোজ করেছে। একটি রেমিটারদের জন্য, একটি এক্সপোর্টারদের জন্য আর একটি ইম্পোর্টারদের জন্য। আরও একটি আছে সাধারণ মানুষের জন্য। এখন এ ধরনের মাল্টিপোল এক্সচেঞ্জ রেট পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। এ ছাড়া ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে এটা আসলে ভালো ভূমিকা রাখে না। একটি বিনিময় হারে অবশ্যই আসতে হবে। আর এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ব্যাংককে খুব স্ট্রংলি নিতে হবে।
এটা খুব দুঃখজনক হলেও সতি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকে অতীতেও দেখা গেছে। পলিসি রেটখ্যাত সুদের হার ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারপর এক্সচেঞ্জ রেট কীভাবে হবে সেটাও ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারা হচ্ছে এন্ড ইউজার, আর এই ইউজারের ওপর যদি আমি ছেড়ে দিই পলিসি মেকিং তার ফলাফল কখনো ভালো হয় না। আমি আশা করব যে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সঠিক এবং শক্ত অবস্থান নেবে। যেটা সঠিক হওয়া দরকার, সেটাই নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলবে। কিন্তু আমাদের একটি ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট লাগবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কি ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সঠিক কাজটি করছে না? কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে?
আমি তো বললাম যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতার অভাব আছে। আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি যে, মুদ্রা সংকট যখন তৈরি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে ব্যবস্থাপনা করে আসছে। বিশেষ করে ৪, ৫, ১০ বছর ধরে সেটা তো তারা মেইনটেইন করতে পারবে না। ক্রাইসিস না থাকলে এই ধরনের এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করা যেতে পারে। এতদিন তো প্রায় ফিক্সড ছিল। আসলে এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সময়ে সময়ে ছাড় দেয়া দরকার ছিল। সেটা না করার ফলে যখন ক্রাইসিস দেখা গেল, রিজার্ভকে ধরে রাখার কথা এল, তখন এক্সচেঞ্জ রেটকে এই লেভেলের ডেপ্রিসিয়েট না করে তাদের উপায় ছিল না। এখন করার পরও দেখা গেল মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংক যা রেট বলছে, সেই রেট ফলো হচ্ছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভাইজরি যে কন্ট্রোল ব্যাংকগুলোর ওপরে সেটার দুর্বলতা দেখা গেল। অনেক ব্যাংক বাড়তি মুনাফা করেছে এই এক্সচেঞ্জ রেট দিয়ে। ইভেন মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ওপর কোনো কন্ট্রোল আছে বলে আমার মনে হয় না।
এটি অনেক দিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্য। একটি সংকটের মুখে তাদের পক্ষে এটি ব্যবস্থাপনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ফলে প্রপার এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্ট করা, প্রপার মনিটরি পলিসি ফর্মুলেশনের জন্য যে সক্ষমতা দরকার সেটা নতুন করে তো আর এখন বিল্ডআপ করা যাবে না। এখন দরকার হচ্ছে তারা প্রয়োজনে যাদের কাছ থেকে সাজেশন নেয়া দরকার বা তাদের নিজেদের যে এক্সপার্টেজ আছে সেগুলো ডেভেলপ করে, আমি মনে করি সেন্ট্রাল ব্যাংকের নিজ যোগ্যতায় নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি ব্যাংকারদের ওপর একদমই ছেড়ে দেয়া উচিত না। তাতে করে হিতে বিপরীত হবে আসলে। আমরা এই মুহূর্তে দেখছি, ব্যবসায়ীদের চাপে হোক, যেকোনো কারণেই হোক, সুদের হার আসলে যেভাবে ফিক্স করে রাখা হয়েছে, সেটা আসলে কোনোভাবেই ডিজায়ারেবল না। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির অবস্থা খারাপ। দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার সুদের হারকে ফিক্সড করে বিনিয়োগকে সুবিধা দিয়ে কার লাভ হবে।
জনগণ যখন খারাপ অবস্থায় থাকে, মূল্যস্ফীতি যখন বেশি থাকে, তখন এমপ্লয়মেন্ট রেটও বাড়তে থাকে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফিন্যান্স ডিভিশনের একটি ভূমিকা থাকা উচিত, এক্সপার্টদেরও ভূমিকা থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে যে, আমাদের এক্সপার্টদের মধ্যে অপিনিয়নগুলো এত বিভেদমূলক এবং এতভাবে তারা দ্বিমত পোষণ করেন যে, তাদের মতামত নিয়েও যে সেন্ট্রাল ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পথে চলতে পারবে, সেটা নিয়েও সমস্য। তর পরও আমি মনে করি ডায়লগটা হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ডায়লগ করা, সেখান থেকে তারা যেটা ভালো মনে করে সেটা তারা নিতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোনো অর্থনীতিবিদের কথার ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার তো কোনো দরকার নেই।
সরকার বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে। সেটা কি সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারটা (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গেল। এই কোয়ার্টার দেখে বলা খুব কঠিন যে, বাংলাদেশে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কী হবে। আমি মনে করি যে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির প্রক্ষেপণ আরও রিভিশন হবে। তারা ছয় মাস পর বলবে যে আরও কমে যাবে, নয় মাস পর বলতে পারে অন্য কথা। আমাদের এক কোয়ার্টার পার হয়েছে, সেটার ভিত্তিতে আমাদের বলা হয়েছে যে এই তিন মাসের মতো করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশের মতো। কিন্তু আমরা এই অবস্থায় চলতে পারব কি না, সেটা নির্ভর করছে অনেক কিছুর ওপর।
তবে আমি মনে করি, এই মুহূর্তে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হবে, সেটার দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে আমরা সহনীয় রাখতে পারি, সেটা নিয়েই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি কাজ করা উচিত। আমার মনে হয়, এটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাজারে গেলে দেখতে পাই যে, জিনিসপত্রের মূল্য কীভাবে আকাশচুম্বী ধারণ করছে, সেদিক থেকে সরকারের অনেকগুলো করণীয় আছে। একটি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কমানো বা সহনীয় করার জন্য পলিসিগত কিছু দ্রুত করা দরকার। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যেগুলো নিয়েছে সুদের হার বাড়ানো, ইম্পোর্ট কিছুটা কমানো, এর বাইরে ফিসক্যাল কিছু মেজার আছে। যেমন- জনগণকে সহায়তা দেয়া। বর্তমানে এক কোটি লোককে ১৫ টাকা দরে চাল দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো। যেটাকে আমরা বলি ফিসক্যাল ট্রান্সফার; এ ছাড়া ওপেন মার্কেট সেলস আরও বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে যেটা দেয়া হয়, সেটা যথেষ্ট না। সেটা যদি আরও বেশি আকারে বাড়ানো হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ আরও বেশি আকারে মূল্যস্ফীতির আঘাতটিকে সয়ে যেতে পারবে।
দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে- যাদের ফিক্সড সেলারি, তাদের কাছ থেকে কিন্তু দাবি আসা শুরু হয়েছে যেন তাদের বেতনটা বাড়ানো হয় এবং সেটা হয়তো করতে হতে পারে সামনে। যাদের একটি স্থির আয় আছে বা নিম্ন আয় আছে, তাদের পক্ষে কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে মোকাবিলা করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কাজগুলো করতে গেলে সরকারের কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাবে। ব্যয় যদি বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে জিডিপি গ্রোথ হয়তো আরেকটু কম হতে পারে। সেটাও মন্দ হয় না। যদি আমাদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশও প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলেও ভালো বলে আমি মনে করি। একদিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর পলিসিগত পদক্ষেপগুলো যথাযথ হওয়া দরকার, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি যাতে সাধারণ জনগণকে বিপদে ফেলতে না পারে সরকারের দায়িত্ব সাধারণ জনগণকে সহায়তা দেয়া। সেটা পণ্য দিয়েও হতে পারে অথবা টাকা দিয়েও হতে পারে।
আরেকটি হচ্ছে যাদের সেলারি ফিক্সড তাদের সেলারি রিভাইস করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের বাজেট বেড়ে যাবে। অন্যান্য খাতে ব্যয় কমাতে পারে। এটি একটি জটিল পরিস্থিতি, ম্যানেজ করার মতো, ব্যালান্স করার মতো ক্যাপাসিটি সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটুকু আছে আমরা জানি না। এতদিন আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমিকস স্টাবিলিটি খুব ভালো ছিল। ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হয়নি। আগে এ রকম কোনো বৈশ্বিক সংকটের মোকাবিলা আমরা করিনি। এই ধরনের সংকট মোকাবিলার জন্য সব ধরনের ব্যালান্স করে আমরা এগোতে পারি কি না। সেটা এখন দেখার বিষয়।
নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগের মতো যদি দেশে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়, তাহলে এই সংকটের সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?
সেই আশঙ্কা আছে। তবে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় একটি রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। যাতে আমরা সবাই মিলে একভাবে সেটা মোকাবিলা করতে পারি। জনগণের যাতে ক্ষতি না হয়। জনগণের কল্যাণ যাতে ব্যাহত না হয়, সবার এ বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। এমন কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ এখন নেয়া ঠিক হবে না ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের’ মতো অবস্থা হয়। সেদিক থেকে সরকার এবং বিরোধী দল যারা আছে আমাদের আশা থাকবে তারা কিছু জাতীয় ইস্যুতে একমত হয়ে এই সময়টা পার করবেন, যাতে সব ধরনের একটি স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। কীভাবে এই সময়টা পার করা যায়, কারণ আমরা একটি বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে আছি। আবার যদি দেশীয় সংকট তৈরি হয়, সেটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ক্ষতিকর হবে।
ডলারসংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আমি মনে করি এই সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু আলোচনার বিষয়টি পুরোপুরি অনুপস্থিত। আলোচনা করতে তো অসুবিধা নেই। সিদ্ধান্ত আপনারাই নেন। আপনি আলোচনার টেবিলে সবাইকে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আলোচন করেন। কারণ সংকটকালীন সময়টা সাধারণ সময় থেকে আলাদা। সুতরাং সেই সময়টাকে ম্যানেজ করতে হলে দূরদর্শিতার সঙ্গে করতে হবে।
আমাদের দেশে রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের দেশে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের মতো গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের যে রিসোর্স আছেন। সেন্ট্রাল ব্যাংকে যদি না থাকে বাইরে যারা আছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। তাই বলে শুধু ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতি সিদ্ধান্ত নেয়াটা যৌক্তিক না। পার্সোনালি যদি কারও সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে সেটা যথেষ্ট নয়। মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত, আসলে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে। যেখানে মতপার্থক্য থাকবে, সেখানে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এটা হচ্ছে এক দিকের কথা। এর বাইরে আমরা যে সমস্যাগুলো দেখছি, আমাদের আমদানি বাড়ছে আবার কমছে- এগুলো নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির ওপরে। আমরা একটিমাত্র পণ্য রপ্তানি করি, সেটাও পশ্চিমাদের সঙ্গে। পশ্চিমারা কিন্তু একটি যুদ্ধের মধ্যে আছে। সেটা হয়তো তারা সামাল দিতে পারবে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি ধসে যাবে যদি আমাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মার্কেট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি, প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি।
সামনের দিনগুলো কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?
সামনের দিনগুলো কেমন হবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ওপরে। যুদ্ধ যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে চলে যায়, তাহলে তো কথাই নেই। খুবই অবস্থা খারাপ। আর এটা বর্তমান অবস্থায় যদি লিংগার করতে থাকে এবং সামনে শীত আসছে সামনে ইউরোপকে যদি রাশিয়া গ্যাস তেল বন্ধ করে দেয়, সেখানে ইউরোপে একটি সংকট তৈরি হতে পারে। এই সংকটের চাপ কিন্তু আমাদের দিকে লাগবে। পোশাক রপ্তানির একটি বড় মার্কেট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ওপেক বলছে, তেলের দাম কমিয়ে দেবে। তেলেন দাম বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি খুব একটি আশাবাদী হওয়ার মতো অবস্থা দেখছি না।
আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। এই যে আপনি অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, সংকট বা চাপের কথাগুলো বলছেন। এগুলো মোকাবিলা করতে এই মুহূর্তে আমাদের কী কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?
আমাদের মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের ওপর। এ অবস্থায় বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে নয়-ছয় সুদের হার থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। দুটিই বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকঋণের সুদের হার যেটা এখন ৯ শতাংশ বেঁধে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেটা ১২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর আমানতের সুদের হার যেটা ৬ শতাংশ আছে, সেটা ৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমি সরাসরি বলতে চাই, নয়-ছয় সুদের হার থেকে বারো-নয় সুদের হার বেঁধে দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরামর্শ বলেন আর দাবিই বলেন- এ বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপন করছি।
এখানে একটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে যে, নয়-ছয় সুদের হার তো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে করা হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তখনকার পেক্ষাপট আর এখনকার পেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ শতাংশের নিচে। আর এখন ৯ শতাংশের ওপর।
এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রীকে আগে বলা হয়েছিল সুদের হার নয়-ছয় থাকলে ভালো হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যদি এটা বোঝানো যায় যে, এটা বাড়ালেও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং বড় অংশে দেশের জন্য ভালো হবে। তাহলে নিশ্চয় সেটা উনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী তো এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন না, ওনার বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বা যারা পলিসি মেকার আছেন, তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তগুলো যাতে তথ্যনির্ভর হয়, তখন ওনাকে বোঝানো গেলে তাহলে ওনার পক্ষে হয়তো সিদ্ধান্ত ভালোভাবে দেয়া সম্ভব হবে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী হয়তো এ ধরনের একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জায়গাটা চিন্তা করবেন এবং অবশ্যই একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।
এখানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আরও একটি অনুরোধ করব। এই কঠিন সংকট মোকাবিলার জন্য তিনি একটি হাই প্রোফাইল কমিটি তৈরি করবেন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে। এটা মন্ত্রিপর্যায়ে হতে পারে, সচিব পর্যায়ে হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সেখানে থাকতে পারেন, ব্যবসায়ীরা থাকতে পারেন। এটি হয়তো ভালো কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হতে পারে। সেটা যদি হয় আরও ভালো হবে। সেই কমিটির পরামর্শে সংকট মোকাবিলায় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বসতে পারেন। কারণ তারা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে যদি দেশের অবস্থা খারাপ করে ফেলে তাহলে তো সমস্যা আরও বাড়বে। এই জায়গাগুলোতে তো কাজ আছেই। আমরা অর্থনীতিবিদরা তো শুধু বলতে পারি কী করতে হবে, দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে। সিদ্ধান্তটাও সরকারকেই নিতে হবে।
দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আবারও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সারাদিনে পর্যায়ক্রমে এই স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৪১৯ মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় আমদানির প্রথম চালানটি বন্দরে এসে পৌঁছায়।
বেসরকারি বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাঈনুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ বিরতির পর সীমিত পরিসরে আমদানির অনুমতি মেলার পরপরই ভারতীয় ট্রাকযোগে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। সোনামসজিদ উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক সমীর চন্দ্র ঘোষ জানান, সোমবার নতুন করে ১০ জন ব্যবসায়ীকে ২৭টি আইপি বা ইমপোর্ট পারমিটের বিপরীতে ২৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে রবিবার দুজন আমদানিকারক প্রথম চালানে ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এনেছিলেন। উল্লেখ্য, এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
দেশের বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী, তখন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় ক্রেতা, বিক্রেতা ও সাধারণ ভোক্তারা। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, এই আমদানি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম দ্রুত কমে আসবে। নতুন দেশীয় পেঁয়াজ পুরোদমে বাজারে না আসা পর্যন্ত আমদানি চালু রাখার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মোবাইল ফোন খাতে নিরাপত্তা ও বৈধতা নিশ্চিত করতে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) বাস্তবায়ন এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট খাতের সুষ্ঠু বিকাশে সুষম কর-কাঠামো প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি)।
সংগঠনটির দাবি, এ ব্যবস্থা চালু হলে সরকার প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব পাবে, দেশে বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ ও তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
স্থানীয় মোবাইলশিল্পের বর্তমান চিত্র ও প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরে এমআইওবির সভাপতি জাকারিয়া শহীদ জানান, বর্তমানে দেশে ১৮টি মোবাইল সংযোজন ও উৎপাদন কারখানা গড়ে উঠেছে, যেখানে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীশ্রমিক। কারখানাগুলো ১৫ লাখ স্মার্টফোন ও ২৫ লাখ ফিচার ফোন প্রতি মাসে উৎপাদন করতে পারে। অবৈধ বা গ্রে মার্কেটের কারণে সরকার বছরে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। গ্রে-মার্কেটের আকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা, যা স্থানীয় শিল্পের ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতাকে অব্যবহৃত রাখছে। এনইআইআর বাস্তবায়িত হলে এই অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।
এমআইওবির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এনইআইআর চালু হলে ফোনের দাম বাড়বে- এমন প্রচার একটি বিশেষ মহলের স্বার্থরক্ষার জন্য ছড়ানো হচ্ছে। বরং গ্রে-মার্কেট বন্ধ হলে দেশে হাই-অ্যান্ড ফোন উৎপাদন সম্ভব হবে এবং গ্রাহকরা বর্তমানের চেয়ে কম দামে ভালো মানের ফোন পাবেন।’
মোবাইলশিল্পে সিন্ডিকেট ও নতুন করে কর আরোপের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেও দাবি করেছে এমআইওবি। তাদের দাবি, ১৮টি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি প্রমাণ করে এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার, এখানে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। এছাড়া মোবাইল আমদানিতে ৫৭ শতাংশ শুল্ক ২০১৯ সাল থেকেই চালু রয়েছে, বর্তমান সরকার নতুন কোনো কর আরোপ করেনি।
এমআইওবির মতে, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এছাড়া বৈধ রিফারবিশ বা পুরোনো ফোন বেচাকেনায় কোনো বাধা থাকবে না। ফলে এনইআইআর দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য একটি জাতীয় ঢাল হিসেবে কাজ করবে।
পুঁজিবাজারে তথ্যের স্বচ্ছতা, বিশ্লেষণ এবং নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কার্যকর ব্যবহার ভবিষ্যতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিআইসিএমের মাল্টিপারপাস হলে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ)-এর সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই এসেন্সিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিএমজেএফ ও বিআইসিএম।
বিআইসিএম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সম্প্রতি পুঁজিবাজারের পাঁচটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক একীভূত হয়েছে এবং আরও নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসান প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে এআই ব্যবহারের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু এসব প্রতিষ্ঠান নয়, পুঁজিবাজার সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য বিশ্লেষণে এআই আগামী দিনে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’ তিনি মনে করেন, প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ ব্যবস্থা বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিআইসিএমের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইসিএমের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) নাজমুছ সালেহীন।
সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান সময়ে এআই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যার ব্যবহার বিশ্বব্যাপী দ্রুত বাড়ছে। শেয়ারবাজারেও এ প্রযুক্তির প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে, ফলে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন সময়ের দাবি বলে’ তিনি মত দেন।
সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, ‘সংগঠনের সদস্যদের পেশাগত মান উন্নয়নে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিআইসিএমের সহযোগিতায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে, যা সাংবাদিকদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে।’
দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন, বিআইসিএমের প্রভাষক ইমরান মাহমুদ ও গৌরব রায়।
পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএসইসি ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ খসড়া আইপিও রুলসের বিষয়ে কথা বলেন। নতুন রুলসের মাধ্যমে আইপিও সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের আধুনিকীকরণ ও শক্তিশালীকরণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নতুন রুলসের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী কোম্পানিগুলো ন্যায্য প্রাইসিং ও ভ্যালুয়েশনের নিশ্চয়তা পাবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিসহ রাষ্ট্র মালিকানাধীন লাভজনক মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা মোতাবেক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলোকে জানানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এর বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে।’
বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও মো. সাইফুদ্দিন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাজেদা খাতুন, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের উপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ মোহাম্মদ কিবরিয়া, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মোহাম্মদ শামীম রানা, সিনোভিয়া ফার্মা পিএলসির চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) গোলাম রব্বানী আকন্দ, নেভিয়ান লাইফ সায়েন্স পিএলসি (নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেড)-এর ভারপ্রাপ্ত চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও), কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাহমুদা সুলতানা, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব বিমল চন্দ্র রায় ও উপমহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আবদুল্লাহ আল মামুন, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক হাসান মাহমুদ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর এসপিও মকবুল হাসান, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এসপিও মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবের রহমান চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে নতুন এই বর্ধিত মূল্য কার্যকর হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ ভোক্তাদের এখন থেকে তেল কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
রবিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে তেলের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয়। নতুন নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হবে ১৯৫ টাকা। এছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫৫ টাকা। অন্যদিকে, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয়েছে প্রতি লিটার ১৭৬ টাকা।
ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই নতুন মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির নতুন ধাপ রোববার (৭ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে মোট ৬০ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ভারতীয় ট্রাকগুলো বন্দর এলাকায় প্রবেশ করে। আমদানিকৃত পেঁয়াজের মধ্যে মেসার্স গৌড় ইন্টারন্যাশনাল ৩০ টন এবং ওয়েলকাম ট্রেডার্স আরও ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
পানামা পোর্টের ম্যানেজার মো. মাইনুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো কোনো জটিলতা ছাড়াই বন্দর এলাকায় প্রবেশ করেছে এবং আনলোডিং কার্যক্রম দ্রুতগতিতে চলছে। তিনি বলেন, আমদানিকারকরা নিয়মিত এলসি খুললে প্রতিদিনই পেঁয়াজ আনা সম্ভব হবে।
বন্দরের আমদানিকারক ও শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন পর পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এদিকে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, নিয়মিত আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম শিগগিরেই আরও স্থিতিশীল হবে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যৌথ উদ্যোগে গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আইনজীবী ও ব্যবসায়ী অংশীদারদের সঙ্গে ধারাবাহিক পরামর্শ সভার পর এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি, আইন বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারিক রোডম্যাপের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ইউএনডিপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব আদালত দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক বিরোধ ও স্থগিত বাণিজ্যিক মামলার দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা দূর করবে এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পথ প্রশস্ত করবে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং বিলম্বজনিত অর্থনৈতিক ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি উল্লেখ করেন, বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা বিচার ব্যবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাবে এবং বিশ্বকে বার্তা দেবে যে বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।
তিনি আইনজীবী সমাজ ও বিচার-সম্পর্কিত সব অংশীজনকে সততা, শৃঙ্খলা ও দক্ষতার সঙ্গে বাণিজ্যিক আদালত আইন বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা একটি অপরিহার্য ভবিষ্যতমুখী সংস্কার, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব বাংলাদেশির জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। এসব আদালত বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করবে, বাণিজ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা গভীর করবে এবং এর ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, যথাসময়ে স্বচ্ছ বিরোধ নিষ্পত্তি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। বাণিজ্যিক আদালত কার্যকর করা আকাঙ্ক্ষাকে কর্মে রূপান্তরের একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা জোরদার করে।
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, ‘মুক্ত, স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য বিরোধ নিষ্পত্তি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে, বাংলাদেশকে একটি বিশ্বস্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। প্রতিশ্রুতিকে কর্মে রূপান্তরিত করে, ব্যবসাকে জোরদার করে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে এমন একটি বিচার ব্যবস্থার জন্য সুইডেন এই অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বাণিজ্যিক আদালতের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক আদালত বাংলাদেশকে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পবকে বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রধান মূল্যবোধ এবং আমরা বিচার বিভাগ সংস্কারে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানাই। বাণিজ্যিক আদালত কার্যকর করা একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ, যা বিলম্ব কমায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায়। অস্ট্রেলিয়া গর্বের সঙ্গে এসব সংস্কারকে সমর্থন করছে এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের প্যানেলে ছিলেন ব্যারিস্টার মারগুব কবির, ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, উপসচিব, ইউএনডিপি কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজর ওয়াইস প্যারে এবং ইউএনডিপি ডিজিটালাইজেশন স্পেশালিস্ট ক্রিস ডেকার।
তারা দীর্ঘদিনের মামলার জট, ভঙ্গুর আইনি কাঠামো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) জন্য প্রবেশাধিকারের প্রতিবন্ধকতা এবং অবকাঠামোগত চাহিদা নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপির সিনিয়র অ্যাডভাইজর রোমানা শভাইগার।
সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী বিচার বিভাগের জাতীয় অগ্রাধিকারের অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক আদালত কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাণিজ্যিক আদালত কার্যকর করা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিচার বিভাগকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বাংলাদেশের সামগ্রিক পারচেজিং ম্যানেজার্স’ ইনডেক্স (পিএমআই) নভেম্বর মাসে ৫৪ দশমিক শূন্যতে দাঁড়িয়েছে। যা অক্টোবরের তুলনায় ৭.৮ পয়েন্ট কম। পিএমআই হ্রাস পেলেও এটি এখনো সম্প্রসারণ পর্যায়ে রয়েছে। নভেম্বর মাসের পিএমআই ফলাফলে দেখা গেছে, কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবাসহ সব প্রধান অর্থনৈতিক খাতে সম্প্রসারণের গতি ধীর হয়েছে। এই ফলাফল দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও গতি কিছুটা মন্থর হয়েছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) যৌথভাবে নভেম্বর মাসের এ পিএমআই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পিএমআই উদ্যোগটি দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের তাৎক্ষণিক ও নির্ভুল চিত্র তুলে ধরার একটি অগ্রণী পদক্ষেপ, যা ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা এবং সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্টের (এসআইপিএমএম) কারিগরি সহযোগিতায় তৈরি করা হয়।
নভেম্বরের পিএমআই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে কৃষি খাত টানা তৃতীয় মাসের মতো সম্প্রসারণে থাকলেও এর গতি কিছুটা কমেছে। নতুন ব্যবসা, কর্মসংস্থান এবং ইনপুট ব্যয়ের উপসূচকে ধীরগতির সম্প্রসারণ দেখা গেলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম উপসূচকে দ্রুততর সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে। অর্ডার ব্যাকলগ উপসূচকে ধীর সংকোচন দেখা যায়।
উৎপাদন খাত টানা ১৫তম মাসের মতো সম্প্রসারণ বজায় রেখেছে, তবে হার ছিল তুলনামূলক কম। নতুন অর্ডার, রপ্তানি অর্ডার, উৎপাদন, ইনপুট ক্রয়, সমাপ্ত পণ্য, আমদানি, ইনপুট মূল্য, কর্মসংস্থান ও সাপ্লায়ার ডেলিভারি সব উপসূচকই সম্প্রসারণে ছিল। তবে অর্ডার ব্যাকলগ উপসূচকে দ্রুততর সংকোচন রেকর্ড হয়েছে।
নির্মাণ খাত টানা তৃতীয় মাসের মতো সম্প্রসারণ ধরে রাখলেও গতি কমেছে। নির্মাণ কার্যক্রম, কর্মসংস্থান ও ইনপুট খরচ- সব উপসূচকেই সম্প্রসারণ দেখা গেছে। তবে অর্ডার ব্যাকলগ উপসূচকে দ্রুত সংকোচন এবং নতুন ব্যবসা উপসূচক সংকোচন পর্যায়ে ফিরে এসেছে।
সেবা খাত টানা ১৪তম মাসের মতো সম্প্রসারণে থাকলেও প্রবৃদ্ধি ছিল মন্থর। কর্মসংস্থান ও ইনপুট ব্যয়ের উপসূচকে সম্প্রসারণ রেকর্ড হলেও নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও অর্ডার ব্যাকলগ উপসূচকগুলো সংকোচনে ফিরে গেছে।
ভবিষ্যৎ ব্যবসা অনুভূতি সূচকে কৃষি, নির্মাণ ও সেবা খাতে দ্রুততর সম্প্রসারণ প্রত্যাশা দেখা গেলেও উৎপাদন খাতে ধীরগতির সম্প্রসারণ রেকর্ড হয়েছে।
পিএমআই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, নভেম্বর পিএমআই দেখায় যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের গতি দুর্বল হয়েছে। বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস, রপ্তানি প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পতন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে বিনিয়োগ স্থগিত রাখার প্রবণতার অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
যদিও বার্ষিক রপ্তানি কমা সত্ত্বেও মাসওয়ারি প্রবৃদ্ধি এবং কৃষি খাতে ধারাবাহিক ফসল সংগ্রহ সামগ্রিক সম্প্রসারণ বজায় রাখতে সহায়তা করেছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে উৎপাদন খাত ব্যতীত অন্যান্য সব খাতেই ভবিষ্যৎ ব্যবসার দ্রুততর সম্প্রসারণ প্রত্যাশা দেখা গেছে।
সূত্র : বাসস
বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম প্রতি মাসে সমন্বয় করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে ভোক্তা পর্যায়ে সমন্বয় করা দামে এলপিজি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ আছে। ভোক্তাদের ভাষ্য, ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়ও বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় এলপিজি।
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ডিসেম্বরের জন্য দাম ঘোষণা করেছে বিইআরসি। এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ টাকা। গত নভেম্বর মাসে দাম ছিল ১ হাজার ২১৫ টাকা। সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে।
এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে। ঢাকা থেকে পৌনে তিন শ কিলোমিটার দূরের দ্বীপজেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভায় থাকেন কেয়া হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি মাসেই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দিতে হয়। সবশেষ নভেম্বরে ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। বাসায় পৌঁছাতে বাড়তি খরচ করতে হয় আরও ৫০ টাকা।
বিইআরসি তার আইনি দায়িত্ব পালন করছে না। আইনে যেসব ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার প্রয়োগ করে না। ভোক্তাস্বার্থও সংরক্ষিত হচ্ছে না।
ঢাকার কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদও বললেন, অভিন্ন কথা। তাঁর ভাষ্য, নভেম্বরে ১২ কেজির এলপিজি কিনেছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। আর বাসায় পৌঁছানোর জন্য দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। এ মাসে দাম বাড়ার পর আরও ৫০ টাকা খরচ বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
অবশ্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কামরুন্নেছা রুহী বলেন, গত মাসে ১২ কেজির এলপিজি তিনি কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। অর্থাৎ কামরুন্নেছার চেয়ে ফয়সালকে দেড় শ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। টানা দুই বছর দাম নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ ছিল পরিবেশক ও এলপিজি কোম্পানির মধ্যে। বিইআরসি পরিবেশক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে কোম্পানির সরবরাহ করত না। এ অভিযোগের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণের সূত্রে পরিবর্তন এনে কোম্পানি পর্যায়ে আরও কিছু খরচ যুক্ত করা হয়। এরপর কোম্পানি থেকে বাড়তি দামে সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সারা দেশে এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক সমিতির সভাপতি সেলিম খান বলেন, পরিবেশক পর্যন্ত দাম এখন ঠিকই আছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে খুচরা বিক্রেতারা বেশি নিচ্ছেন। এটি বন্ধে ভোক্তা অধিকারের অভিযান চালানো উচিত।
নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রির জন্য বাজার নজরদারির সামর্থ্য নেই বিইআরসির। বিভিন্ন সময় তারা জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে নজরদারির অনুরোধ করেছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরও মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে।
লাইসেন্স না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, জানুয়ারির মধ্যে সব পরিবেশককে বিইআরসির লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। এরপর খুচরা বিক্রেতাদের লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। এতে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে।
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাট) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা ৪১ পয়সা। গত মাসে তা ছিল ১০১ টাকা ২৪ পয়সা; অর্থাৎ এ মাসে দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা ১৭ পয়সা।
সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অধিকাংশ ভোক্তা অবশ্য এর নাগাল পায় না। বাজারে চাহিদার ৯৯ শতাংশের বেশি এলপিজি সরবরাহ করে বেসরকারি খাত।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসি তার আইনি দায়িত্ব পালন করছে না। আইনে যেসব ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার প্রয়োগ করে না। ভোক্তা স্বার্থও সংরক্ষিত হচ্ছে না। এ কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে বর্তমান কমিশনের অপসারণ দাবি করেছে ক্যাব।
মূল্যস্ফীতি ও নতুন শুল্কের চাপের পরেও চলতি উৎসব মৌসুমে বিক্রি বেড়েছে আমেরিকায়। অ্যাডোবি অ্যানালাইটিকস বলছে, ক্রেতারা অনলাইনে এবার ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার খরচ করেছেন, যা গত বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অবশ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি হিসাব করলে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে কম।
ছুটির মধ্যেও তীব্র চাপ সামলাতে হচ্ছে মার্কিন ডাক পরিষেবা, লস অ্যাঞ্জেলেস সেন্টারের কর্মীদের। প্রতি ঘণ্টায় দশ হাজার পার্সেল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্মীরা। সংস্থাটির ডিস্ট্রিবিউশন অপারেশনের সিনিয়র ম্যানেজার জর্জ ব্যাংকস বলেন, ‘প্রতিটি মেশিন ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার পার্সেল প্রক্রিয়া করতে সক্ষম।’
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন ক্রেতারা আগের চেয়ে বেশি সচেতন। তারা এমন দোকান খুঁজছেন যেখানে তুলনামূলক কম দামে পণ্য পাওয়া যায়। এতে বেড়েছে অনলাইনে কেনাকাটা এবং চাপের মুখে রয়েছে বড় ব্র্যান্ডগুলো।
ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষক ম্যারি এপনার বলেন, ‘এ বছর অন্য যেকোনো ব্ল্যাক ফ্রাইডে উইকএন্ডের চেয়ে আলাদা। শুল্কবৃদ্ধির ফলে ব্র্যান্ডগুলো খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তাই বেশিরভাগ ক্রেতাই এখন অনলাইনে ঝুঁকছে।’
অ্যাডোবি অ্যানালিটিক্সের তথ্য বলছে, ব্ল্যাক ফ্র্যাকাইডেতে যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে কেনাকাটা গত বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। অফারের তথ্য খুঁজতে ও পণ্যের দাম তুলনা করতে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করেছেন অনেক ক্রেতা।
ম্যারি এপনার বলেন, ‘ভোক্তারা এবার সবচেয়ে বেশি খুঁজছিল কীভাবে একটি ফ্রি গিফট পাওয়া যাবে, বা ফাইন্যান্সিং নেওয়া, বা পরে মূল্য পরিশোধ করা। তাই এই সব পয়েন্টই বছরের বাকি সময়ে গ্রাহককে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।’
মার্কিন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের পূর্বাভাস বলছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি বাড়বে ৩ দশমিক ৭ থেকে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এতে মোট বিক্রির পরিমাণ বেড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা জোরদারে ইউক্রেনের মানবিক উদ্যোগ ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া লজিস্টিক হাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার, ইউক্রেন ও সুইডেনের দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে এ সহায়তা গ্রহণ করে। ডব্লিউএফপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই সূর্যমুখী তেল সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনে উৎপাদিত হয়েছে এবং এর ক্রয় ও পরিবহনসহ মোট ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের ব্যয় বহন করেছে সুইডেন সরকার। রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় ডব্লিউএফপি ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার কাজে এই সহায়তা ব্যবহার করা হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফিজুর রহমান, রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের পরিচালক এ. কে. এম. মহিউদ্দিন কায়েস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ওলেক্সান্দ্র পলিশচুক, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে শারলে। ফ্রান্সও ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির সহযোগী।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মোস্তফিজুর রহমান বলেন, সুইডেন ও ইউক্রেনের এই সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি এটিকে মানবিকতা, সহমর্মিতা এবং বৈশ্বিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গা ত্রাণ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, এই যৌথ উদ্যোগ মানবিকতার ওপর অভিন্ন বিশ্বাসকে তুলে ধরছে, যা বাংলাদেশ, ইউক্রেন, সুইডেন, ফ্রান্স ও ডব্লিউএফপিকে একই প্ল্যাটফর্মে এনেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিউদ্দিন কায়েস বলেন, এই সহায়তা কেবল মানবিক উদ্যোগ নয়, বরং রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সংহতির প্রকাশ।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. পলিশচুক বলেন, সুইডেন ও অন্যান্য অংশীদারদের সমর্থন ছাড়া এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও ডব্লিউএফপির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন রাখা জরুরি এবং এই সহায়তা দেখায় যে আন্তর্জাতিক সংহতি কথার বাইরে গিয়ে বাস্তব পদক্ষেপে রূপ নিতে পারে।
ডব্লিউএফপির সিমোন পার্চমেন্ট বলেন, ইউক্রেন ও সুইডেনের এই সহায়তা বৈশ্বিক একতার শক্তিশালী উদাহরণ এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলোরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ডব্লিউএফপির খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে রোহিঙ্গারা ই-ভাউচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মাসে ১২ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করেন। ১৯টি ই-ভাউচার আউটলেট থেকে তারা চাল, ডাল, তাজা শাকসবজি, মাছ, মুরগি এবং স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী নিতে পারেন। এই ব্যবস্থায় স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষক ও উৎপাদকরাও সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, টিসিবির মাধ্যমে দেশীয় চিনি বিক্রি শুরু হয়েছে এবং তা চলমান থাকবে। বিদেশ থেকে চিনি আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। দেশের চিনিকলে জমে থাকা চিনি আগে বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, শুধু ভর্তুকি দিয়ে চিনিকল চালানো সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শনিবার নাটোরের উত্তরা গণভবন সংস্কার কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর শিল্প উপদেষ্টা নাটোর সুগার মিলস লিমিটেড পরিদর্শন করেন।
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, চিনিকলগুলো দেশের চাহিদার অল্প একটি অংশ পূরণ করতে সক্ষম। তাই চিনিকলের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) রাশিদুল হাসান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, নাটোর সুগার মিলস লিমিটেডের এমডি মো. আখলাছুর রহমানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে ৭ ডিসেম্বর থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদান করা হবে। প্রতিদিন ৫০টি করে আইপি (আমদানি অনুমতি) ইস্যু করা হবে। প্রত্যেকটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি যে সকল আমদানিকারক রপ্তানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই কেবল আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় খুচরা বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর জন্য সরবরাহ ঘাটতিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামের এই ঊর্ধ্বগতি বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, উত্তরার হজ ক্যাম্প বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজের বাড়তি দামের খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাবনার ভালো মানের পুরোনো পেঁয়াজ এক পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। খুচরা কিনলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৬০ টাকা। তবে ১৪০ টাকা দরেও পেঁয়াজ মিলছে।
কারওয়ান বাজারে দু-একটি দোকানে আগাম পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজির দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা নীরব মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে। প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাবে। তিনি জানান, এ সময়ে প্রতি বছরই পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তাই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি।
মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট ও উত্তরার হজ ক্যাম্প বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, তাদের এক কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়ছে ১৪০-১৪৮ টাকা।