শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
৩০ কার্তিক ১৪৩২

নয়-ছয় থেকে বারো-নয় করা উচিত

মঞ্জুর হোসেন
আবদুর রহিম
প্রকাশিত
আবদুর রহিম
প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৩২

দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতির পারদ ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও নিম্নমুখী। সাত মাস পর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গত সেপ্টেম্বরে।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সবদিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ ভালোই পড়েছে। এ থেকে আমরা কমে মুক্ত হব- সেটাই এখন সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা।’

বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন মঞ্জুর হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?

আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সবদিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। বিশ্বের অর্থনীতির জন্য। এখানে রাশিয়া একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ একদিকে হয়ে এমন একটি পর্যায়ে যাচ্ছে, যার ফলে দিন দিন সমস্যাগুলো বাড়ছে; নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। তাতে সারা বিশ্ব এর দ্বারা এফেক্টেড হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তো এ থেকে আমরা ব্যতিক্রম নই। কারণ একটা হচ্ছে, যে জ্বালানি তেলের উৎসগুলো অনেকটাই সেই সব দেশের ওপর নির্ভর করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আবার কিছুটা কমছে, আবার বাড়ছে। তেলের একটি অনিশ্চয়তা আছে।

দ্বিতীয়ত আছে খাদ্যসংকটের একটি বিষয়। যেহেতু আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। তৃতীয়ত হচ্ছে, আমাদের রপ্তানির বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। সেসব দেশে এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে; অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। তারা হয়তো এখন তাদের কস্ট অব লিভিং কমাতে চাইবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অবস্থা যা, আমাদের অবস্থাও তা। তবে আমরা যেহেতু একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু অভিঘাতটা আমাদের ওপর অনেক বেশি হবে অন্যান্য দেশের চাইতে।

এটি হচ্ছে মূলত প্রথম কথা; আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে আমরাও কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জ্বালানি তেলকে সাশ্রয় করতে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছি। দেশের অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। উৎপাদনব্যবস্থা অনেকটা কমে গেছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার যে অবস্থায় আমরা এসছিলাম গত কয়েক বছরে। বিদ্যুতে নিরবচ্ছিন্ন ছিলাম, সেখানে ব্যাঘাত ঘটেছে। এগুলো সবই কিন্তু দেশের উৎপাদনব্যবস্থার ওপর একটি প্রভাব ফেলছে। তাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধি সেটার ওপর আঘাত আসছে।

সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে। সেটি কি আদৌ অর্জন করা সম্ভব হবে?

এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে এই লক্ষ্য আসলে অর্জন করা খুবই কঠিন। বিশ্বব্যাংক বলেন বা আইএমএফ বলেন, তারা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ সেটা আগের থেকে কমিয়ে এনেছে। আমাদের ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা ছিল, এখন সবাই বলছে ৬ শতাংশ, এমনকি আরও কমও হতে পারে। এই সবকিছুর সঙ্গে যেটা সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য অ্যাডজাস্ট করেছে। এ ছাড়া অন্য যেসব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি একটা খারাপ পর্যায়ে আছে। সেটা আগস্টে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, সেপ্টেম্বরে এটা ৯-এর ওপরে ৯ দশমিক ১ হয়েছে। কিন্তু যেটা আমরা অনেকবার বলেছি। আমাদের গবেষণায়ও দেখেছি যে, মূল্যস্ফীতি এটাকে বলি আমরা হেডলাইনি ইনফ্লেশন। এটা গড়, এটা সবার ওপর কিন্তু ইনফ্লেশনটা হয়। প্রত্যেক ক্যাটাগরির মানুষের ওপর ইনফ্লেশনের প্রভাব আলাদা। দরিদ্র শ্রেণির লোকদের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিন্তু অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষ হয়তো ১২ শতাংশ ফিল করছে। আমি হয়তো ৯ শতাংশ করছি; আরেকজন হয়তো ৭ শতাংশ ফিল করছে। কারণ এটা কনজামশন বাস্কেটের ওপর নির্ভর করে আপনি কোন জিনিসগুলো খাচ্ছেন, সেই জিনিসগুলোর দাম কেমন বেড়েছে। সেই হিসাবে এক ধরনের আঘাত তো আছেই। দ্বিতীয় হচ্ছে যে করোনাভাইরাস-পরবর্তী যেই ধরনের রিকভারির কথা ছিল; যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল। বিশেষ করে কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেগুলো কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না।

অর্থনীতির ব্যবসা-বাণিজ্য যেগুলোর মধ্যে আমরা একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। যেহেতু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় বেড়েছে; তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরেও প্রভাব পড়েছে। তৃতীয় আরেকটি জিনিস আমাদের সবকিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার, ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার। ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার একটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিতে একটি বড় প্রভাব পড়েছে। আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ডলারের যে ব্যবস্থাপনা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। তারা আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেছে না তারা কী করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদিও পুরোপুরি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের হাতে। যেহেতু আমাদের একটি বড় অংশ ফাটকাবাজারিতে লিপ্ত হয়ে যাই; আমাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যাকানিজমগুলো এতটা শক্তিশালী না। সেদিক থেকে পুরোপুরি যদি আমরা মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিই ফল আরও খারাপ হবে। কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করছিল। সেটা আরও খারাপ হয়েছে। তারা তিনটি রেট প্রপোজ করেছে। একটি রেমিটারদের জন্য, একটি এক্সপোর্টারদের জন্য আর একটি ইম্পোর্টারদের জন্য। আরও একটি আছে সাধারণ মানুষের জন্য। এখন এ ধরনের মাল্টিপোল এক্সচেঞ্জ রেট পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। এ ছাড়া ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে এটা আসলে ভালো ভূমিকা রাখে না। একটি বিনিময় হারে অবশ্যই আসতে হবে। আর এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ব্যাংককে খুব স্ট্রংলি নিতে হবে।

এটা খুব দুঃখজনক হলেও সতি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকে অতীতেও দেখা গেছে। পলিসি রেটখ্যাত সুদের হার ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারপর এক্সচেঞ্জ রেট কীভাবে হবে সেটাও ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারা হচ্ছে এন্ড ইউজার, আর এই ইউজারের ওপর যদি আমি ছেড়ে দিই পলিসি মেকিং তার ফলাফল কখনো ভালো হয় না। আমি আশা করব যে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সঠিক এবং শক্ত অবস্থান নেবে। যেটা সঠিক হওয়া দরকার, সেটাই নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলবে। কিন্তু আমাদের একটি ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কি ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সঠিক কাজটি করছে না? কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

আমি তো বললাম যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতার অভাব আছে। আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি যে, মুদ্রা সংকট যখন তৈরি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে ব্যবস্থাপনা করে আসছে। বিশেষ করে ৪, ৫, ১০ বছর ধরে সেটা তো তারা মেইনটেইন করতে পারবে না। ক্রাইসিস না থাকলে এই ধরনের এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করা যেতে পারে। এতদিন তো প্রায় ফিক্সড ছিল। আসলে এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সময়ে সময়ে ছাড় দেয়া দরকার ছিল। সেটা না করার ফলে যখন ক্রাইসিস দেখা গেল, রিজার্ভকে ধরে রাখার কথা এল, তখন এক্সচেঞ্জ রেটকে এই লেভেলের ডেপ্রিসিয়েট না করে তাদের উপায় ছিল না। এখন করার পরও দেখা গেল মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংক যা রেট বলছে, সেই রেট ফলো হচ্ছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভাইজরি যে কন্ট্রোল ব্যাংকগুলোর ওপরে সেটার দুর্বলতা দেখা গেল। অনেক ব্যাংক বাড়তি মুনাফা করেছে এই এক্সচেঞ্জ রেট দিয়ে। ইভেন মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ওপর কোনো কন্ট্রোল আছে বলে আমার মনে হয় না।

এটি অনেক দিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্য। একটি সংকটের মুখে তাদের পক্ষে এটি ব্যবস্থাপনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ফলে প্রপার এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্ট করা, প্রপার মনিটরি পলিসি ফর্মুলেশনের জন্য যে সক্ষমতা দরকার সেটা নতুন করে তো আর এখন বিল্ডআপ করা যাবে না। এখন দরকার হচ্ছে তারা প্রয়োজনে যাদের কাছ থেকে সাজেশন নেয়া দরকার বা তাদের নিজেদের যে এক্সপার্টেজ আছে সেগুলো ডেভেলপ করে, আমি মনে করি সেন্ট্রাল ব্যাংকের নিজ যোগ্যতায় নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি ব্যাংকারদের ওপর একদমই ছেড়ে দেয়া উচিত না। তাতে করে হিতে বিপরীত হবে আসলে। আমরা এই মুহূর্তে দেখছি, ব্যবসায়ীদের চাপে হোক, যেকোনো কারণেই হোক, সুদের হার আসলে যেভাবে ফিক্স করে রাখা হয়েছে, সেটা আসলে কোনোভাবেই ডিজায়ারেবল না। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির অবস্থা খারাপ। দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার সুদের হারকে ফিক্সড করে বিনিয়োগকে সুবিধা দিয়ে কার লাভ হবে।

জনগণ যখন খারাপ অবস্থায় থাকে, মূল্যস্ফীতি যখন বেশি থাকে, তখন এমপ্লয়মেন্ট রেটও বাড়তে থাকে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফিন্যান্স ডিভিশনের একটি ভূমিকা থাকা উচিত, এক্সপার্টদেরও ভূমিকা থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে যে, আমাদের এক্সপার্টদের মধ্যে অপিনিয়নগুলো এত বিভেদমূলক এবং এতভাবে তারা দ্বিমত পোষণ করেন যে, তাদের মতামত নিয়েও যে সেন্ট্রাল ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পথে চলতে পারবে, সেটা নিয়েও সমস্য। তর পরও আমি মনে করি ডায়লগটা হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ডায়লগ করা, সেখান থেকে তারা যেটা ভালো মনে করে সেটা তারা নিতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোনো অর্থনীতিবিদের কথার ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার তো কোনো দরকার নেই।

সরকার বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে। সেটা কি সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারটা (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গেল। এই কোয়ার্টার দেখে বলা খুব কঠিন যে, বাংলাদেশে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কী হবে। আমি মনে করি যে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির প্রক্ষেপণ আরও রিভিশন হবে। তারা ছয় মাস পর বলবে যে আরও কমে যাবে, নয় মাস পর বলতে পারে অন্য কথা। আমাদের এক কোয়ার্টার পার হয়েছে, সেটার ভিত্তিতে আমাদের বলা হয়েছে যে এই তিন মাসের মতো করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশের মতো। কিন্তু আমরা এই অবস্থায় চলতে পারব কি না, সেটা নির্ভর করছে অনেক কিছুর ওপর।

তবে আমি মনে করি, এই মুহূর্তে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হবে, সেটার দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে আমরা সহনীয় রাখতে পারি, সেটা নিয়েই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি কাজ করা উচিত। আমার মনে হয়, এটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাজারে গেলে দেখতে পাই যে, জিনিসপত্রের মূল্য কীভাবে আকাশচুম্বী ধারণ করছে, সেদিক থেকে সরকারের অনেকগুলো করণীয় আছে। একটি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কমানো বা সহনীয় করার জন্য পলিসিগত কিছু দ্রুত করা দরকার। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যেগুলো নিয়েছে সুদের হার বাড়ানো, ইম্পোর্ট কিছুটা কমানো, এর বাইরে ফিসক্যাল কিছু মেজার আছে। যেমন- জনগণকে সহায়তা দেয়া। বর্তমানে এক কোটি লোককে ১৫ টাকা দরে চাল দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো। যেটাকে আমরা বলি ফিসক্যাল ট্রান্সফার; এ ছাড়া ওপেন মার্কেট সেলস আরও বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে যেটা দেয়া হয়, সেটা যথেষ্ট না। সেটা যদি আরও বেশি আকারে বাড়ানো হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ আরও বেশি আকারে মূল্যস্ফীতির আঘাতটিকে সয়ে যেতে পারবে।

দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে- যাদের ফিক্সড সেলারি, তাদের কাছ থেকে কিন্তু দাবি আসা শুরু হয়েছে যেন তাদের বেতনটা বাড়ানো হয় এবং সেটা হয়তো করতে হতে পারে সামনে। যাদের একটি স্থির আয় আছে বা নিম্ন আয় আছে, তাদের পক্ষে কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে মোকাবিলা করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কাজগুলো করতে গেলে সরকারের কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাবে। ব্যয় যদি বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে জিডিপি গ্রোথ হয়তো আরেকটু কম হতে পারে। সেটাও মন্দ হয় না। যদি আমাদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশও প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলেও ভালো বলে আমি মনে করি। একদিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর পলিসিগত পদক্ষেপগুলো যথাযথ হওয়া দরকার, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি যাতে সাধারণ জনগণকে বিপদে ফেলতে না পারে সরকারের দায়িত্ব সাধারণ জনগণকে সহায়তা দেয়া। সেটা পণ্য দিয়েও হতে পারে অথবা টাকা দিয়েও হতে পারে।

আরেকটি হচ্ছে যাদের সেলারি ফিক্সড তাদের সেলারি রিভাইস করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের বাজেট বেড়ে যাবে। অন্যান্য খাতে ব্যয় কমাতে পারে। এটি একটি জটিল পরিস্থিতি, ম্যানেজ করার মতো, ব্যালান্স করার মতো ক্যাপাসিটি সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটুকু আছে আমরা জানি না। এতদিন আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমিকস স্টাবিলিটি খুব ভালো ছিল। ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হয়নি। আগে এ রকম কোনো বৈশ্বিক সংকটের মোকাবিলা আমরা করিনি। এই ধরনের সংকট মোকাবিলার জন্য সব ধরনের ব্যালান্স করে আমরা এগোতে পারি কি না। সেটা এখন দেখার বিষয়।


নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগের মতো যদি দেশে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়, তাহলে এই সংকটের সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?

সেই আশঙ্কা আছে। তবে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় একটি রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। যাতে আমরা সবাই মিলে একভাবে সেটা মোকাবিলা করতে পারি। জনগণের যাতে ক্ষতি না হয়। জনগণের কল্যাণ যাতে ব্যাহত না হয়, সবার এ বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। এমন কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ এখন নেয়া ঠিক হবে না ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের’ মতো অবস্থা হয়। সেদিক থেকে সরকার এবং বিরোধী দল যারা আছে আমাদের আশা থাকবে তারা কিছু জাতীয় ইস্যুতে একমত হয়ে এই সময়টা পার করবেন, যাতে সব ধরনের একটি স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। কীভাবে এই সময়টা পার করা যায়, কারণ আমরা একটি বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে আছি। আবার যদি দেশীয় সংকট তৈরি হয়, সেটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ক্ষতিকর হবে।

ডলারসংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আমি মনে করি এই সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু আলোচনার বিষয়টি পুরোপুরি অনুপস্থিত। আলোচনা করতে তো অসুবিধা নেই। সিদ্ধান্ত আপনারাই নেন। আপনি আলোচনার টেবিলে সবাইকে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আলোচন করেন। কারণ সংকটকালীন সময়টা সাধারণ সময় থেকে আলাদা। সুতরাং সেই সময়টাকে ম্যানেজ করতে হলে দূরদর্শিতার সঙ্গে করতে হবে।

আমাদের দেশে রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের দেশে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের মতো গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের যে রিসোর্স আছেন। সেন্ট্রাল ব্যাংকে যদি না থাকে বাইরে যারা আছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। তাই বলে শুধু ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতি সিদ্ধান্ত নেয়াটা যৌক্তিক না। পার্সোনালি যদি কারও সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে সেটা যথেষ্ট নয়। মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত, আসলে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে। যেখানে মতপার্থক্য থাকবে, সেখানে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এটা হচ্ছে এক দিকের কথা। এর বাইরে আমরা যে সমস্যাগুলো দেখছি, আমাদের আমদানি বাড়ছে আবার কমছে- এগুলো নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির ওপরে। আমরা একটিমাত্র পণ্য রপ্তানি করি, সেটাও পশ্চিমাদের সঙ্গে। পশ্চিমারা কিন্তু একটি যুদ্ধের মধ্যে আছে। সেটা হয়তো তারা সামাল দিতে পারবে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি ধসে যাবে যদি আমাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মার্কেট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি, প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি।

সামনের দিনগুলো কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?

সামনের দিনগুলো কেমন হবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ওপরে। যুদ্ধ যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে চলে যায়, তাহলে তো কথাই নেই। খুবই অবস্থা খারাপ। আর এটা বর্তমান অবস্থায় যদি লিংগার করতে থাকে এবং সামনে শীত আসছে সামনে ইউরোপকে যদি রাশিয়া গ্যাস তেল বন্ধ করে দেয়, সেখানে ইউরোপে একটি সংকট তৈরি হতে পারে। এই সংকটের চাপ কিন্তু আমাদের দিকে লাগবে। পোশাক রপ্তানির একটি বড় মার্কেট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ওপেক বলছে, তেলের দাম কমিয়ে দেবে। তেলেন দাম বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি খুব একটি আশাবাদী হওয়ার মতো অবস্থা দেখছি না।

আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। এই যে আপনি অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, সংকট বা চাপের কথাগুলো বলছেন। এগুলো মোকাবিলা করতে এই মুহূর্তে আমাদের কী কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের ওপর। এ অবস্থায় বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে নয়-ছয় সুদের হার থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। দুটিই বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকঋণের সুদের হার যেটা এখন ৯ শতাংশ বেঁধে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেটা ১২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর আমানতের সুদের হার যেটা ৬ শতাংশ আছে, সেটা ৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমি সরাসরি বলতে চাই, নয়-ছয় সুদের হার থেকে বারো-নয় সুদের হার বেঁধে দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরামর্শ বলেন আর দাবিই বলেন- এ বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপন করছি।

এখানে একটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে যে, নয়-ছয় সুদের হার তো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে করা হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তখনকার পেক্ষাপট আর এখনকার পেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ শতাংশের নিচে। আর এখন ৯ শতাংশের ওপর।

এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রীকে আগে বলা হয়েছিল সুদের হার নয়-ছয় থাকলে ভালো হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যদি এটা বোঝানো যায় যে, এটা বাড়ালেও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং বড় অংশে দেশের জন্য ভালো হবে। তাহলে নিশ্চয় সেটা উনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী তো এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন না, ওনার বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বা যারা পলিসি মেকার আছেন, তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তগুলো যাতে তথ্যনির্ভর হয়, তখন ওনাকে বোঝানো গেলে তাহলে ওনার পক্ষে হয়তো সিদ্ধান্ত ভালোভাবে দেয়া সম্ভব হবে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী হয়তো এ ধরনের একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জায়গাটা চিন্তা করবেন এবং অবশ্যই একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।

এখানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আরও একটি অনুরোধ করব। এই কঠিন সংকট মোকাবিলার জন্য তিনি একটি হাই প্রোফাইল কমিটি তৈরি করবেন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে। এটা মন্ত্রিপর্যায়ে হতে পারে, সচিব পর্যায়ে হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সেখানে থাকতে পারেন, ব্যবসায়ীরা থাকতে পারেন। এটি হয়তো ভালো কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হতে পারে। সেটা যদি হয় আরও ভালো হবে। সেই কমিটির পরামর্শে সংকট মোকাবিলায় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বসতে পারেন। কারণ তারা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে যদি দেশের অবস্থা খারাপ করে ফেলে তাহলে তো সমস্যা আরও বাড়বে। এই জায়গাগুলোতে তো কাজ আছেই। আমরা অর্থনীতিবিদরা তো শুধু বলতে পারি কী করতে হবে, দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে। সিদ্ধান্তটাও সরকারকেই নিতে হবে।


বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বুধবার সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি। ছবি: পিআইডি
আপডেটেড ১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২২:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি। বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জাপানকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার আখ্যায়িত করে বলেন, ইপিএর সফল আলোচনা এবং বিমানবন্দর অবকাঠামো খাতে জাপানি কনসোর্টিয়াম (সুমিটোমো)-এর আগ্রহ আমাদের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল ও মজবুত করবে।

জাপানের সঙ্গে ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) মধ্যস্থতা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় বাণিজ্য উপদেষ্টা তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ইপিএ চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা জাপানের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপানি কনসোর্টিয়াম (সুমিটোমো) বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের অপারেশনস ও মেইনটেনেন্স কাজ করতে আগ্রহী।

দ্রুততম সময়ে তারা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। ইপিএ চুক্তি স্বাক্ষর, বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পে জাপানের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা, মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা- এ সবই দুদেশের মধ্যে গতিশীল অংশীদারিত্বের নিদর্শন।

এ সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান, জাপান দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও হেড অব ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাফেয়ার্স কারাসাওয়া শিনজু এবং জাপানের সুমিটোমো করপোরেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার হিরোনরি ইয়ামানাকা উপস্থিত ছিলেন।


রমজান-নির্বাচন উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার পবিত্র রমজান ও জাতীয় নির্বাচন প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। উভয় ঘটনাই নিত্যপণ্যের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য আগেভাগে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের তাগিদ দিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যবসায়ী নেতারা।

বুধবার মতিঝিলে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান।

এফবিসিসিআই প্রশাসক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও পবিত্র রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য রোজায় ব্যবহৃত পণ্য আমদানি অবাধ করার জন্য এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে। এখন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চাঁদাবাজি যেন কারণ না হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

কোনো পক্ষের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ন না হয় এবং খাদ্যে ভেজাল না মেশে—এ জন্য এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম সঠিক, স্বাভাবিক ও সহজলভ্য রাখতে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আচরণেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে।

পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে কোনো সমস্যা হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ চলছে।

তিনি বলেন, যখন তেলের দাম বাড়ে, তখন বাজারে তেল পাওয়া যায় না; মিলগুলোতেও মজুত থাকে না। তখন বিশেষ ‘ডিও লেটার’-এর মাধ্যমে তেল বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে যায়, যারা পরে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে এই ডিও ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।

টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম বলেন, দেশে বছরে ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশ সরবরাহ করে তিনটি কোম্পানি। রমজান মাসে বাড়তি চাহিদা পূরণে সরকারকে ভোজ্যতেল আমদানিতে জোর দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এর প্রভাব পড়ে সরবরাহে। এ জন্য মিলগুলোতে গ্যাস সরবরাহে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানির খরচও বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, পণ্য আমদানি বাড়ালেও লাইটার জাহাজের স্বল্পতার কারণে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।

শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীরা সবকিছু শোষণ করছে। পণ্যে তিন টাকার মোড়ক লাগিয়ে ৪০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। একই সঙ্গে ফড়িয়া ও দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে। পুলিশ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে অনেক সময় সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। এ অবস্থা রেখে শুধু সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

স্বতন্ত্র বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচনের সময়ে বাজারে অতিরিক্ত টাকা সরবরাহ বাড়ে, যার ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়। রমজানেও একই অবস্থা হয়। ফলে এ দুটি বিষয় মিলেই বাজার অস্থিতিশীল করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই ভোট ও রমজানে যাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ে রয়েছে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো নিয়মে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের পরামর্শ দেন এই বাজার বিশ্লেষক।


আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত সরকারের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সরকার বুধবার আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি চুক্তির আওতায় সরকারের সঙ্গে সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয়াদি-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ৩৭তম সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ কর্তৃক উপস্থাপিত প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়, যাতে ২০০৬ সালের সরকারি ক্রয় আইনের ৬৮ ধারা এবং সরকারি ক্রয় বিধিমালা ২০২৫-এর প্রাসঙ্গিক বিধান অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি ভিত্তিতে সরকারের সঙ্গে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে এলএনজি কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তাব করা হয়।

দিনের অর্থনৈতিকবিষয়ক কমিটির সভায় বাণিজ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জ্বালানি এবং নৌপরিবহনসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের মোট চারটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

কমিটি নীতিগতভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী নিলামের মাধ্যমে ক্রয়কৃত পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো মোটরযান মুক্তির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে একটি ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য নীতিগত অনুমোদনও দেওয়া হয়।

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস বিভির মধ্যে ‘পিপিপি মডেলে চট্টগ্রাম বন্দরে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল স্থাপন ও পরিচালনা’ প্রকল্পের জন্য কনসেশন চুক্তির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রকল্পটি ৪৮ বছর মেয়াদে নকশা, নির্মাণ, অর্থায়ন, পরিচালনা ও হস্তান্তর (ডিবিএফওটি) কাঠামোর অধীনে বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে মূল কনসেশন সময় থাকবে ৩৩ বছর এবং অতিরিক্ত ১৫ বছরের সম্প্রসারণকাল।


বিশেষ সুবিধা নিয়ে আবার স্টকে এলো অপো এ৬ প্রো!

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

বৈশ্বিক স্মার্ট ডিভাইস ব্র্যান্ড অপো-এর নতুন ফোন অপো এ৬ প্রো এখন আবার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে; ডিভাইসটি প্রথম পর্যায়ে ক্রেতাদের বিপুল সাড়া পেয়েছে। ডিভাইসটির প্রথম ব্যাচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিক্রি হয়ে যায়, যা বাংলাদেশে অপোর সাম্প্রতিক ইতিহাসে দ্রুততম প্রি-অর্ডার সেলআউটগুলোর মধ্যে অন্যতম।
অপো এ৬ প্রোর বিপুল চাহিদা ও আবারো বাজারে সহজলভ্যতা উদযাপন করতে বিশেষ অফার নিয়ে আসা হয়েছে। ক্রেতারা এখন তাদের প্রিয় ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ চরিত্রের নাম কমেন্ট করে একটি বিশেষ ব্যাকপ্যাক জেতার সুযোগ পাচ্ছেন।
এই সেগমেন্টে বেশকিছু শীর্ষস্থানীয় উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে অপো এ৬ প্রো। এর আইপি৬৯ রেটিং সহ আন্ডারওয়াটার ভিডিওগ্রাফি সক্ষমতা ব্যবহারকারীদেরকে বৃষ্টি, পানি বা আউটডোর অ্যাডভেঞ্চারে নিখুঁত ও প্রাণবন্ত ভিডিও রেকর্ড করার সুযোগ দেয়। এরকম সুরক্ষা এই সেগমেন্টের ফোনে খুব কমই দেখা যায়, যা এ৬ প্রোকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও এক্সপ্লোরারদের জন্য সত্যিকারের যথার্থ ডিভাইস করে তুলেছে।
ডিভাইসটিতে সুবিশাল ৭০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে; সারাদিন স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল এমন ব্যবহারকারীদের জন্য অসাধারণ সহনশীলতা প্রদান করে এটি। এর ৮০ ওয়াট সুপারভুক ফাস্ট চার্জিংয়ের মাধ্যমে ডিভাইসটি কম সময়ে চার্জ হয়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করে। পাশাপাশি, এর রিভার্স চার্জিং প্রযুক্তি এ৬ প্রোকে একটি পোর্টেবল পাওয়ার সোর্সে পরিণত করে, যা ব্যবহারকারীদের অন্যান্য ডিভাইস চার্জ করতে সক্ষম করে তোলে।
দীর্ঘ ব্যবহারের সময় সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে, অপো এতে এর সুপারকুল ভিসি সিস্টেম ব্যবহার করেছে। এই সর্বাধুনিক ভ্যাপর চেম্বার কুলিং গেমিং, ভিডিও রেকর্ডিং বা মাল্টিটাস্কিং করার সময় দক্ষতার সাথে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এটি ফোনটিকে ঠাণ্ডা ও রেসপনসিভ রাখে, যা ভারি ব্যবহারের সময়ও ব্যবহারকারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
সীমিত সময়ের জন্য অপো এ৬ প্রো’র (৮ জিবি + ২৫৬ জিবি) মূল্য এখন মাত্র ৩৪,৯৯০ টাকা। অপো ব্র্যান্ড শপ, পার্টনার রিটেইল আউটলেট থেকে ক্রেতারা ডিভাইসটি কিনতে পারবেন। আরও বিস্তারিত জানতে ফেসবুক পেজ


বাংলাদেশ থেকে উচ্চমূল্যের ফ্যাশনেবল পোশাক আমদানিতে আগ্রহী জাপানি ক্রেতারা

বিজিএমইএ এবং জেটিআইএর বৈঠক
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাপানি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে উচ্চমূল্যের ফ্যাশনেবল পোশাক আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

গত সোমবার বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে জাপান টেক্সটাইল ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটিআইএ) একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানানো হয়।

জেটিআইএ প্রতিনিধিদলে ছিলেন- এমএন ইন্টার-ফ্যাশন লিমিটেডের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তোশিনা কাওয়াই, কোওয়া কোম্পানি লিমিটেডের লাইফস্টাইল বিজনেস ডিভিশনের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস সেকশনের ইসেই নোজাওয়া, তোয়োশিমা অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ওভারসিজ অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার শিঙ্গো ইগামী, জাপান টেক্সটাইলস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নোরিহিরো কোমিয়া এবং এআইটি কর্পোরেশনের ওসাকা সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট নম্বর-২ সেকশন-২ এর ম্যানেজার মিনামি কোজিরো

সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান (বাবলু), সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা, পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, পরিচালক ফাহিমা আক্তার, পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম, পরিচালক রুমানা রশীদ এবং পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল।

বিজিএমইএ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে জাপানে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিতে উভয় পক্ষ কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন কৌশলগতভাবে বাজার বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় বাজার।

তিনি বলেন, পোশাক শিল্প এখন মৌলিক কটনভিত্তিক পণ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সিনথেটিক ফেব্রিক্স এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ভিত্তিক পোশাকে স্থানান্তরের মাধ্যমে পণ্যের অফারকে উচ্চমূল্যের বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তিনি জাপানি ক্রেতাদের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পোশাক সোর্সিং বাড়ানোর আহ্বান জানান।

বৈঠকে জেটিআইএ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

তারা বলেন, উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জাপানের ক্রেতারা এখন উচ্চমূল্যের এবং ফ্যাশনেবল পণ্যের জন্য বাংলাদেশকে একটি সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে আস্থায় নিয়েছে।

আলোচনায় সাপ্লাই চেইনকে আরও মসৃণ ও দ্রুততর করার উপায়গুলো গুরুত্বসহকারে উঠে আসে। জেটিআইএ প্রতিনিধিদল উল্লেখ করেন, জাপানি ক্রেতারা সংক্ষিপ্ত লিড টাইমের মধ্যে পণ্য আমদানির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। লিড টাইম হ্রাসের সুবিধার্থে, তারা বাংলাদেশের কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন।

বিজিএমইএ নেতারা জাপানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য জেটিআইএ প্রতিনিধিদলের সহযোগিতা কামনা করেন। এর জবাবে প্রতিনিধিদলটি জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই জাপান সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজার প্রবণতা সংক্রান্ত তথ্য ও গবেষণা শেয়ার করা জন্যও প্রতিনিধিদলটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বৈঠকে পোশাক রপ্তানিতে মার্কিন শুল্কের প্রভাব, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এর সম্ভাব্য প্রভাবসহ পোশাক শিল্পসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষ আলোচনা করেন।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, উত্তরণের পরেও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য জেটিআইএর মাধ্যমে জাপান সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, এই সুবিধাটি ইপিএ অথবা পিটিএর মতো একটি পারস্পরিকভাবে লাভজনক কাঠামোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে।

বৈঠকে উভয় পক্ষই পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং জাপানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।


রমজান উপলক্ষে ১০ পণ্যের এলসিতে নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন রাখার নির্দেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১০টি পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর—এই ১০টি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নগদ মার্জিন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে হবে। এ নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এবং ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। তাই আমদানি সহজীকরণের মাধ্যমে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখা ও মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর আগে রমজান মৌসুমে কিছু ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের নির্দেশনা ছিল। পরে আমদানি পরিস্থিতি ও বাজারের চাহিদা বিবেচনায় ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সেই হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়, যা সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সংশ্লিষ্ট আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ব্যাংক কম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।


বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া আশা প্রকাশ করেছে, পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর মাধ্যমে দুদেশের জন্যে তা বাস্তব সুফল বয়ে আনবে।

মঙ্গলবার প্রাপ্ত এক বার্তায় জানানো হয়, সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম)-এর জোহর শাখার চেয়ারম্যান সাউ সেওং হো এবং অন্য কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এতে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনায় করেন। এতে শিল্পখাতে সহযোগিতা, যৌথ উদ্যোগ ও ব্যবসায়িক সংযোগ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

হাইকমিশনার আগামী ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ‘গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো ২০২৫’-এ অংশ নিতে এফএমএম-কে আমন্ত্রণ জানান।

তিনি বলেন, এই আয়োজন দুই দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এফএমএম নেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা শিগগিরই ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনার কথাও জানান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এফএমএমের ভাইস চেয়ারম্যান জেরার্ড স্যাঙ্কার, চ্যান চি মেং, কমিটির সদস্য মাইকেল লক ও জেসন, বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার মোসাম্মৎ শাহানারা মোনিকা এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি (বাণিজ্য) প্রণব কুমার ঘোষ।


এলডিসি উত্তরণের জন্য স্থিতিশীল নীতি সহায়তা চায় তৈরি পোশাক খাত

জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠক 
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে স্বাধীন মূল্যায়নে ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মিশন, ইউএন-ওএইচআরএলএলএস-এর সঙ্গে পোশাক খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর এক কৌশলগত পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান পোশাক শিল্পের পক্ষ থেকে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উত্তরণ-পরবর্তী ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও সহায়তার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি সহযোগিতামূলক নীতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

গত সোমবার গুলশানে ইউএন হাউজে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল এন্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ)-এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) এর পরিচালক হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ, সাবেক পরিচালক শরীফ জহির এবং বিজিএমইয়ের সাবেক পরিচালক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এফটিএ অ্যান্ড পিটিএর চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতার বিষয় তুলে ধরে এলডিসি-উত্তর ঝুঁকি মোকাবিলায় নীতি সংস্কার ও লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে অংশীদারিত্বমূলক, শিল্প-বান্ধব নীতি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার দ্বৈত সংকটে পড়েছে। তিনি জানান, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে আরও এক দফা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে-ক্যাপটিভ পাওয়ারের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ও শিল্প ব্যবহারে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ-যা উৎপাদন সক্ষমতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, রপ্তানি খাত মারাত্মক লজিস্টিকস চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দীর্ঘদিনের বিলম্ব ও অদক্ষতার পরও চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৫ সালের অক্টোবরে শুল্ক ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া সড়ক পরিবহনে অতিরিক্ত সময় লাগায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তদুপরি, ২০২৩ সালে ৫৬ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ২০২৪ সালে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করা এবং নগদ সহায়তা ৬০ শতাংশ কমিয়ে বিকল্প সহায়তা না দেওয়ায় খাতটি আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় পড়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কয়েকটি দুর্বল দিক তুলে ধরেন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসা, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে থাকা, জিডিপির তুলনায় কর আদায়ের হার মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বিপিএম৬ অনুযায়ী)।

তিনি বর্তমান রাজনৈতিক রূপান্তর, বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা, জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়া এবং ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি’ বাস্তবায়নে সমন্বয় ঘাটতির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করেন, পণ্যের বৈচিত্র্যহীনতা ও আমদানিনির্ভর কাঁচামালের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।

সভায় রপ্তানিকারকরা সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি অগ্রাধিকারমূলক সুপারিশ পেশ করেন, যাতে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীল ও সমন্বিত নীতি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।


স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য স্থিতিশীল নীতিগত সহায়তার আহ্বান পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক (RMG) খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির জন্য জাতিসংঘের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় (UN-OHRLLS)-এর একটি সফররত মিশনের মধ্যে আজ ঢাকায় একটি কৌশলগত পরামর্শসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি ও স্বাধীন মূল্যায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অধিবেশনে তৈরি পোশাক শিল্পের নেতারা নীতিগত সহায়তা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শিল্প-বান্ধব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বিজিএমইএ (BGMEA) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের স্নাতকোত্তর পর্বে (graduation period) টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহযোগিতামূলক, পূর্বাভাসযোগ্য ও স্থিতিশীল নীতিগত পরিবেশ অপরিহার্য।”

সভাটি গুলশানের জাতিসংঘ হাউসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ছাড়াও বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি ফজলুল শামীম এহসান, বিটিএমএ পরিচালক ও বিটিটিএলএমইএ চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ, প্রাক্তন পরিচালক শরীফ জহির এবং এফটিএ ও পিটিএ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পোশাক শিল্প ক্রমবর্ধমান পরিচালন ব্যয়, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার চাপে রয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্যাসের দাম ২৮৬% বেড়েছে, এরপর ২০২৫ সালের এপ্রিলে আবারও ৪০% (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ও ৩৩.৩৩% (শিল্প ব্যবহারের জন্য) বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা উৎপাদন সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

তিনি আরও বলেন, রপ্তানি খাত লজিস্টিক সংকটে ভুগছে—চট্টগ্রাম বন্দরে পরিচালনাগত অদক্ষতা ও বিলম্ব থাকা সত্ত্বেও ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৪১% শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘ পরিবহন সময় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে শিল্পকে।

তিনি জানান, ২০২৩ সালে ৫৬% ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ২০২৪ সালে বার্ষিক বৃদ্ধি ৫% থেকে ৯%-এ উন্নীত করা, এবং বিকল্প সহায়তা ব্যবস্থা ছাড়া নগদ প্রণোদনা ৬০% হ্রাস—এই তিনটি বিষয় মিলেই শিল্পে আর্থিক চাপ তৈরি করেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতাগুলোর দিকেও আলোকপাত করেন। তাঁর মতে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর, মুদ্রাস্ফীতি ৮% এর ওপরে, কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৬.৬% এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপিএম৬ অনুসারে ২৭.৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা, জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্রেতাদের অর্ডার হ্রাস এবং মসৃণ পরিবর্তন কৌশল (Smooth Transition Strategy - STS) বাস্তবায়নে সমন্বয়ের অভাব আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি।”

এছাড়া, সীমিত পণ্য বৈচিত্র্য ও আমদানি করা কাঁচামালের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

বৈঠকে রপ্তানিকারকরা সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী অগ্রাধিকারের সুপারিশ দেন।

স্বল্পমেয়াদী সুপারিশগুলো হলো: WTO নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিকল্প প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করা; ব্যাংক সুদের হার কমানো;

তরলতার চাপ কমাতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (EDF) পুনঃস্থাপন; নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা; বন্দর ও কাস্টমস প্রক্রিয়ায় অদক্ষতা দূর করা।

তারা আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের GSP+ সুবিধা দ্রুত সুরক্ষিত করা এবং স্নাতকোত্তর পর বাজারে প্রবেশাধিকার ধরে রাখতে FTA ও EPDA আলোচনার গতি বাড়ানো প্রয়োজন।

মধ্যমেয়াদী প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে: ব্যাংকিং খাতে শাসনব্যবস্থা জোরদার করা ও খেলাপি ঋণ হ্রাস; গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়ন; শিল্পভিত্তি শক্তিশালী করতে দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

খাত সংশ্লিষ্টরা আরও আহ্বান জানান, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ, ডিকার্বনাইজেশন বিনিয়োগে সহায়তা এবং প্রযুক্তি ও বৃত্তাকার অর্থনীতি চর্চায় নীতি-সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।

সভাপতি মাহমুদ হাসান খান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্নাতকোত্তর পর সকল উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন বছরের মসৃণ পরিবর্তনকালীন সময় প্রদান করা উচিত।”

তিনি আরও আহ্বান জানান, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেন স্বল্প সুদে অর্থায়ন, মিশ্র অর্থায়ন (blended finance) ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে—যাতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে পারে।


সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বাজারে আবারো লিটারপ্রতি ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) দাম ৯ টাকা ২৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। গড় এলসি মূল্য, ইনবন্ড, এক্সবন্ড ও ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর এই সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। গড় এলসি মূল্য, ইনবন্ড ও এক্সবন্ড খরচ এবং ডলারের বিনিময় হার বাড়ার কারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বছরের শেষদিকে এসে আবারো বাড়তে পারে তেলের দাম।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানায়, গত ২৭ জুলাই তেলের মূল্য সমন্বয় সভায় ৩ আগস্ট থেকে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৮৯ টাকা দরে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে নানা অসংগতি, ডলারের মূল্য বাড়ার কারণে এলসিতে প্রভাব পড়তে শুরু করে।

নভেম্বরে শুরুর দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিনে খরচ পড়ে ১ হাজার ৬২ ডলার, পাম তেলে যা ১ হাজার ৩৭। ফলে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার সুপারিশ করে সংস্থাটি।

সুপারিশে প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৬০ পয়সা দরে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম সুপার তেলের মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। যেখানে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকার বদলে ৯ টাকা ২৭ পয়সা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯৮ টাকা ২৭ পয়সা এবং ৮ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে খোলা ১ লিটার সয়াবিন ১৭৭ টাকা ৮৫ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক বছরে দেশের বাজারে ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ।


একনেক সভায় ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকার ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন । ছবি : পিআইডি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৭ হাজার ১৫০ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর পুরো অর্থায়ন আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন ৮টি, সংশোধিত ২টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির ২টি প্রকল্প রয়েছে।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— মানিকগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প; কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওর এলাকার ক্ষুদ্রসেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প; গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন; চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুরে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প; ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প; নড়াইল–কালিয়া মহাসড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ (৪র্থ মেয়াদ বৃদ্ধি) প্রকল্প এবং বিসিক শিল্প পার্ক, টাঙ্গাইল (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি অসমাপ্ত কর্মসূচির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে।

সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।


৮ বছর পর ভারত থেকে হিলি বন্দর দিয়ে আপেল আমদানি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় আট বছর পর ভারত থেকে আবার আপেল আমদানি শুরু করা হয়েছে।

গত রোববার রাতে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, প্রায় ৮ বছর ধরে ভারত থেকে বৈধপথে আপেল আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দেশের বাজারে আপেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি উভয় দেশের আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সমঝোতা বৈঠকের পর রোববার বিকেল থেকে হিলি দিয়ে ভারত থেকে আপেল আমদানি শুরু করা হয়েছে। কাশ্মির থেকে এসব আপেল আমদানি করেছে চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাজা আজমির ট্রেডিং।

সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, রোববার বিকেল ৫টায় ভারত থেকে আপেল বোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। প্রথম দিন এক ট্রাকে ৩০ টন আপেল আমদানি করা হয়েছে। কাস্টমস বিভাগের যাচাই-বাছাই শেষে সন্ধ্যায় পর এসব আপেল খালাস কার্যক্রম শুরু হয়।

হিলি স্থলবন্দরের শ্রমিক সদ্দার নিজাম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন পর আপেল আমদানি শুরু হওয়ায় খুশি বন্দরের শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। আমদানি বাড়াতে এনবিআরের সহযোগিতা চেয়েছেন ব্যবসায়ী শ্রমিক প্রতিনিধিরা।

আমদানিকারক আলহাজ এম এ আবছার আলী বলেন, দীর্ঘদিন পর প্রাইম এন্টারপ্রাইজ সিএন্ডএফের মাধ্যমে ভারতের মালদার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই ট্রের্ডাস কাশ্মির থেকে এসব আপেল রপ্তানি করেছেন।

আমদানিকৃত আপেলের বাজার ও দাম ভালো পেলে আরও বেশি পরিমাণ আমদানি করা সম্ভব হবে। এ জন্য উভয় দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কাস্টমস বিভাগের সৎ ইচ্ছার প্রয়োজন। অবৈধ পথে প্রতিদিন ভারত থেকে আপেল দেশে প্রবেশ করছে। এক্ষেত্রে উভয় দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দর কাস্টমস বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা এম আর জামান বাঁধন বলেন, দীর্ঘদিন পর এই বন্দর দিয়ে আপেল আমদানি শুরু হয়েছে। প্রতি টন আপেল ৭০০ ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। আপেল যেহেতু কাঁচাপণ্য, তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আজ সোমবার আরও কয়েক ট্রাক আপেল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করবে।


এ বছর আমন মৌসুমে ৭ লাখ টন ধান-চাল কিনবে সরকার

বেড়েছে ক্রয়মূল্য
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ৭ লাখ টন ধান ও চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং ৫০ হাজার টন ধান। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে এই সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়ে চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর আমন মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৫০ টাকা, আতপ চাল ৪৯ টাকা এবং ধান ৩৪ টাকা দরে কিনবে।
খাদ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ধান ও চালের সংগ্রহমূল্য বাড়ানো হয়েছে। গত বছর প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৪৭ টাকা, আতপ চাল ৪৬ টাকা এবং ধান ৩৩ টাকা দরে কেনা হয়েছিল।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমন ধানের উৎপাদন খরচ কম। এই সময় বৃষ্টি থাকে, সেচের খরচ কম হয়। এরপরও অন্যান্য বিবেচনায় দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করছি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’
এ সময় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ করা হচ্ছে, পাশাপাশি সিদ্ধ চাল আমদানি করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পুরো খাদ্য প্যাকেজ নিয়ন্ত্রণে আনার। বেসরকারি খাত গম, চাল আমদানি করছে, যেটা বাজারের সরবরাহ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখছে। সার্বিকভাবে খাদ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক। আমরা যাওয়ার আগে আরও ভালো পরিস্থিতি রেখে যাব আশা করি।’
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় ৫৫ লাখ পরিবারকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া টিসিবি এবং ওএমএসের মাধ্যমে ২ কোটি ৪৫ লাখ পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এছাড়া জেলে পরিবারকে যে ভিজিএফ দেওয়া হয়, সেখানে একটু বাড়ানো যায় কি না, সেটি ভাবছি আমরা।’


banner close