বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আবার ঢালাও দরপতন হলো দেশের শেয়ারবাজারে। স্বল্প মূলধনি কিছু কোম্পানির শেয়ারদর লাফ দিলেও গত কয়েক মাসে লাফিয়ে বাড়ছিল এমন কোম্পানিগুলো দর হারানোয় সূচকের বড় পতন হলো। সূচকের এই পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল তুমুল আলোচিত ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানি- যেগুলো গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সূচক বৃদ্ধিতে ছিল প্রধান ভূমিকায়। সেই সঙ্গে বড় মূলধনি কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের দরপতনও এতে ভূমিকা রেখেছে ।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ১৫ পয়েন্টের পর দ্বিতীয় কর্মদিবসে সূচক কমল ৬৫ পয়েন্ট। কিছুটা কমল লেনদেনও। বড় পতনের এই দিনে কেবল ২৫টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ১৫৩টির আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৮২টি কোম্পানির, সেগুলোর সিংহভাগই লেনদেন হচ্ছে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসে। লেনদেনও কিছুটা কমেছে। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ২৯৭ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৪৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা কম। রোববার হাতবদল হয়েছিল ১ হাজার ৩৪৩ কোটি ১২ লাখ ৪ হাজার টাকা।
এদিন পতনে থাকা কোম্পানিগুলোর দর এক দিনেই এতটা কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের সিইও সুমন দাস দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘স্বল্প মূলধনির দর বাড়ছে, এর দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত, বিএসইসি থেকে পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে, যেটা করার পরিকল্পনা করছে কোম্পানিগুলো। যার কারণে ওই দিকে ধাবিত করছে। আর দ্বিতীয়ত, এসব শেয়ারের দর বাড়ানো সহজ হয়, ফলে যারা ওমুক ভাই, তমুক ভাই ফলো করেন, তারা এসব শেয়ারের পেছনে দৌড়ান, এতেই দর বাড়ে।’
তিনি বলেন, ‘বাজারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দিতে হবে। ফ্লোর প্রাইস বা বিভিন্ন সময় যে ২ বা ৫ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন ছিল না। সে সময় যদি পড়ত, একটা সময় গিয়ে মানুষ ঠিকই বুঝতে পারত এবং বিনিয়োগে ফিরে আসত। তবে এখন যদি ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয় তাহলে হয়তো আবার মার্কেট ডাউন ট্রেন্ডে চলে যেতে পারে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেগুলো তরতর করে বেড়েছিল, সেগুলো তো কমবে। আবার যেগুলো কারণ ছাড়াই কমে যাবে সেগুলো বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক।’
নানা গুজব-গুঞ্জনে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল, সেগুলোর পতনও হয়েছে সবচেয়ে বেশি। লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণার কারণে মূল্যসীমা না থাকা দুই কোম্পানি দর হারিয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। কিছুদিন ধরে লাফাচ্ছিল এমন চারটি কোম্পানি দর হারিয়েছে ৯ শতাংশের বেশি। আরও চারটি কোম্পানি দর হারিয়েছে ৮ শতাংশ করে, তিনটি দর হারিয়েছে ৭ শতাংশ করে। আটটি কোম্পানির দর কমেছে ৬ শতাংশের বেশি, ১৩টি কোম্পানির দর কমেছে ৫ শতাংশের বেশি, আরও ৮টির কমেছে ৪ শতাংশের বেশি।
বিপরীতে যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার মধ্যে কেবল দুটি করে কোম্পানি আছে, যাদের দর যথাক্রমে ৮, ৭, ৫ ও ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। চারটি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি ও ৭টি দর বেড়েছে ১ শতাংশের বেশি। শীর্ষ দশে থাকা ১০টি কোম্পানির সাতটিই স্বল্প মূলধনি। এর মধ্যে একটির দর ১৬ কর্মদিবসে ১৭৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে হয়েছে ৩৯২ টাকা ৩০ পয়সা।
সূচক পতনে বেশি প্রভাব ওরিয়ন গ্রুপ ও বেক্সিমকোর: তবে দরবৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা কম থাকায় এগুলো সূচকে প্রভাব বিস্তার করতে পারে কমই। সূচকের বড় পতন হয়েছে মূলত বেক্সিমকো লিমিটেড, ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানি, বড় মূলধনি বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জ সিমেন্ট, হঠাৎ করে লাফাতে থাকা সি পার্ল, জেএমআই হসপিটাল, আইসিবি ও সোনালী পেপারের দরপতনে। বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩.৪৪ শতাংশ দরপতনে ৭.৭৪ পয়েন্ট সূচক কমেছে। ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানির মধ্যে বিকন ফার্মা ৫.১ পয়েন্ট, ওরিয়ন ফার্মা ৩.৪৮ পয়েন্ট, কোহিনূর কেমিক্যালস ১.৭৫ পয়েন্ট এবং ওরিয়ন ইনফিউশন সূচক কমিয়েছে ১.৪৩ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে এই পাঁচটি কোম্পানিই সূচক ফেলেছে ১৯.৫০ পয়েন্ট।
ওরিয়নের চার কোম্পানির চিত্র: এই গ্রুপের চারটি কোম্পানিই ওষুধ ও রসায়ন খাতের। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মূলধনি ওরিয়ন ফার্মা দর হারিয়েছে ৫.৫১ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১৩৪ টাকা ৩০ পয়সা। ৭ টাকা ৪০ পয়সা কমে দর দাঁড়িয়েছে ১২৬ টাকা ৯০ পয়সায়। গত ২০ কর্মদিবসে এটি কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর। গত ১৫ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১১৬ টাকা ২০ পয়সা, পরে বাড়তে বাড়তে উঠে যায় ১৫৬ টাকা ৫০ পয়সা। শেয়ারদর তরতর করে বাড়তে থাকার সময় লেনদেনও হয়েছে ব্যাপক। এমনও দিন গেছে এক দিনে আড়াই শ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা এখন নেমে এসেছে ৫০ কোটির ঘরে। গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির দর ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.৩৬ শতাংশ দর হারিয়েছে স্বল্প মূলধনি কোহিনূর কেমিক্যালস। আগের দিন দর ছিল ৬৩৭ টাকা। ৩৪ টাকা ২০ পয়সা কমে দর দাঁড়িয়েছে ৬০৩ টাকা ৪০ পয়সা। গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। সম্প্রতি উঠে যায় ৭৫৭ টাকা ৪০ পয়সায়। এই দরে যারা কিনেছেন, তাদের এখন শেয়ারপ্রতি ১৫০ টাকা হারিয়ে গেছে। এই গ্রুপের সবচেয়ে আলোচিত কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন দর হারিয়েছে ৩.৬৮ শতাংশ বা ৩৪ টাকা ৯০ পয়সা। আগের দিন দর ছিল ৯৪৭ টাকা ৯০ পয়সা, দিন শেষে দর হারিয়েছে ৯১৩ টাকা। গত ছয় মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১২ গুণেরও বেশি বেড়ে এক হাজার টাকা ছুঁয়ে পরে নামতে শুরু করেছে। গত মে-জুন মাসেও দর ছিল ৮০ টাকার নিচে, রোববার দর এক হাজার টাকা ছুঁয়ে কমে। গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। এভাবে অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধির নেপথ্যে কী, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, এই দর বৃদ্ধির নেপথ্যে কোনো কারসাজি আছে কি না। গ্রুপের অপর কোম্পানি বিকন ফার্মা দর হারিয়েছে ৩.১৯ শতাংশ বা ১১ টাকা। আগের দিন দর ছিল ৩৪৪ টাকা ৬০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। দিনের একপর্যায়ে দর নেমে এসেছিল ২২১ টাকায়। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৪০ টাকা ৬০ পয়সা। বাড়তে বাড়তে তা সম্প্রতি উঠে যায় ৩৯৩ টাকা পর্যন্ত। গত তিন বছর ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ব্যাপকহারে লাফাচ্ছে। তিন বছর আগেও ২০ টাকার ঘরে লেনদেন হচ্ছিল শেয়ারদর। এভাবে লাফাতে থাকলেও কোম্পানির ব্যাপক আর্থিক উন্নতি হয়েছে- এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
বেক্সিমকোর চার কোম্পানি ও বন্ডের দরে যা হলো: এই গ্রুপের পাঁচ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বেক্সিমকো লিমিটেড ৩.৪৪ শতাংশ বা ৪ টাকা ৪০ পয়সা দর হারিয়েছে। আগের দিন দর ছিল ১২৭ টাকা ৮০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২৩ টাকা ৪০ পয়সায়। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর অনেকটাই কমেছে। এর আগে এক বছরে বেড়েছে ব্যাপক হারে। ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার সময় শেয়ারদর ১৩ টাকার ঘরে থাকলেও গত বছর দর ১৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার পাশাপাশি তাদের ব্যবসাও বেড়েছে। তবে গত নভেম্বর থেকে টানা দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা বড় লোকসানে আছেন। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ১১৪ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে দর ১৪৬ টাকা হয়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা হারিয়ে যাওয়া টাকা ফিরে পাওয়ার আশা করেছিলেন, তবে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দর আবার নিম্নমুখী হয়ে যাওয়ায় সে আশা আর পূরণ হয়নি।
ওরিয়ন গ্রুপের মতো এই গ্রুপের সব কোম্পানি দর হারায়নি। বেক্সিমকো ফার্মার দর এদিন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ১.৩১ শতাংশ বা ২ টাকা ১০ পয়সা বেড়েছে। আগের দিন দর ছিল ১৬০ টাকা ২০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৬২ টাকা ৩০ পয়সা। এই কোম্পানিটির দর গত দুই বছরে অনেকটাই বেড়েছে। ৯০ টাকার কম থেকে বাড়তে বাড়তে গত বছর ২৩৯ টাকা ৪০ পয়সায় উঠে যায়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর থেকে ক্রমাগত দর হারাচ্ছে। গ্রুপের আরেক কোম্পানি আইএফআইসি ব্যাংক ফ্লোর প্রাইস থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। ১০ পয়সা দর হারিয়ে শেয়ারদর এখন ১১ টাকা ৯০ পয়সা। কমতে পারবে বড়জোর আর ৪০ পয়সা। ব্যাংক খাতের যে কোম্পানিটি গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে, তার মধ্যে আছে এটি। গত বছরের নভম্বেরের তৃতীয় সপ্তাহে দর ওঠে ২১ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
আরেক কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকস ৯০ পয়সা বা ১.৮১ শতাংশ দর হারিয়েছে। আগের দিন দর ছিল ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪৮ টাকা ৭০ পয়সা। গত এক বছরে গ্রুপের একমাত্র কোম্পানি হিসেবে শেয়ারদর অনেকটাই বেড়েছে। এই সময়ে ২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে দর ৫৮ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত উঠে যায়। এই গ্রুপের গ্রিন সুকুক বন্ড দর হারিয়েছে ১ টাকা। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের বন্ডের দর আগের দিন ছিল ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা, বর্তমান দর ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা।
লাফিয়ে উত্থান, ধপাস করে পতন: ৫ কোটির স্বল্পমূলধনি কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুডস। গত জুলাইয়ের ২৮ তারিখেও কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ১৬৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গতকাল পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১৪ টাকা ৯০ পয়সায়। আজকে লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে দরপতন বা বৃদ্ধির সীমা না থাকায় এক দিনেই কমেছে ১৩.৬৯ শতাংশ বা ৪৩ টাকা ১০ পয়সা। বিশ্বের অন্য বাজারে না ঘটলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ ঘোষণার পরে দর সমন্বয় হতে দেখা যায়। তবে ঘোষিত ২০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ২ টাকার বিপরীতে এই পতনকে শুধু দর সংশোধন বলার উপায় নেই। একই অবস্থা ফারইস্ট নিটিংয়ের। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশের বিপরীতে এক দিনেই দর কমেছে ১৩.০৪ শতাংশ বা ৩ টাকা। ২৮ জুলাইয়ে ১৭ টাকায় লেনদেনের পর তরতর করে শেয়ারদর বেড়ে ২৯ আগস্ট ২৪ টাকা ৫০ পয়সা লেনদেন হয়। এরপর ওঠানামার মধ্যে থাকলেও গতকাল পর্যন্ত ২৩ টাকায় শেয়ার হাতবদল হয়েছে। একেবারে কম না হলেও ৫৭ কোটি টাকার মূলধনি কোম্পানি বিডি কম। ১২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছে শেয়ারদর। ওই দিন ৩২ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি ১২ অক্টোবর ৭৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। সেখান থেকে তিন কর্মদিবসে কমে আজকে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫৮ টাকা ৯০ পয়সায়। ৩ অক্টোবর নাভানা সিএনজির শেয়ার ২৬ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেনের পর হু হু করে দর বেড়ে বৃহস্পতিবার ৩৫ টাকা ৮০ পয়সায় ঠেকে। এরপর দুই দিনেই কমে দর দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ২০ পয়সায়। আজকে দর কমেছে একদিনে যতটুকু সম্ভব ততটুকু বা ৯.৫৫ শতাংশ। স্বল্পমূলধনি অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের দর ২৮ জুলাইয় ছিল ১২৮ টাকা ৩০ পয়সা। ৩০ আগস্ট ১৬৪ টাকা ৩০ পয়সায় উঠেছিল। এরপর দরপতন হলেও ১২ অক্টোবর শেয়ার বেচাকেনা হয় ১৫৫ টাকা ৩০ পয়সায়। সেখান থেকে কয়েক দিনেই শেয়ারদর কমে আজ ১৩৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এতে ১৪ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.১৯ শতাংশ দর কমেছে। আরেক স্বল্পমূলধনি আজিজ পাইপসও দর ধরে রাখতে পারেনি। ১২ সেপ্টেম্বর ৯৬ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারদর ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ১৪০ টাকা ২০ পয়সায় ঠেকে। এরপর কয়েকদিনেই দর কমেছে ২৫ টাকার মতো। সোমবার ১১ টাকা ৫০ পয়সা কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা। এ ছাড়াও লাফিয়ে লাফিয়ে দর বাড়ার পরে ব্যাপকহারে দর কমেছে ফার কেমিক্যাল, পেনিনসুলা চিটাগং, আফতাব অটোমোবাইলস, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, মুন্নু সিরামিকস ও সি-পার্লের মতো কোম্পানির।
শীর্ষ ৫ খাত যেমন: লেনদেনের শীর্ষে ওষুধ ও রসায়ন খাত। সর্বোচ্চ ২০০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৬.২৭ শতাংশ। খাতটিতে ৩টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। আর ১০টির লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত দরে। আর দরপতন হয়েছে ১৭টির। প্রকৌশল খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ৬টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৫টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। দরপতন হয়েছে ২১টির। তৃতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। ১টির দরবৃদ্ধি, ৮টির দরপতন ও আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৪টি কোম্পানির। চতুর্থ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সেবা ও আবাসন খাতে। খাতের সবকটি বা ৪টির লেনদেনই হয়েছে দরপতনে। হাতবদল হয়েছে ১১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ১০৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা লেনদেন করে তালিকার পঞ্চম স্থানে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাত। ৩টির দরবৃদ্ধি, ১টির অপরিবর্তিত দরে ও ২টির লেনদেন হয়েছে দরপতনে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (১৪ জুলাই) পুঁজিবাজারে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কমেছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১১০৪ ও ১৯০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১০০ কোটি টাকা কম। আগের দিন ডিএসইতে ৬৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
সোমবার (১৪ জুলাই) ডিএসইতে ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫৬টি কোম্পানির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, খান ব্রাদার্স, বিচ হ্যাচারি, বিএটিবিসি, সী পার্ল, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইসলামী ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রি, রহিমা ফুড ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই সোমবার (১৪ জুলাই) ২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৮টির, কমেছে ৯৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর।
সোমবার (১৪ জুলাই) সিএসইতে ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা কম। আগের দিন সিএসইতে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছিল।
প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার ফলে মার্কিন ডলারের দাম টাকার তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।
এই ডলার কেনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ১২১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে, যা বেশিরভাগ ব্যাংকের দেওয়া প্রায় ১২০ টাকা দামের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম স্থির রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে।
তিনি বলেন, যদি ডলারের বিনিময় হার টাকার তুলনায় বেড়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক একইভাবে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে।
তিনি আরও বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার যেন স্থির থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, রোববার প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। আজ তা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার অধিকাংশ ব্যাংক প্রতি ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এক সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ১২৩ টাকারও বেশি।
চীনের রপ্তানি ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে গত জুন মাসে, যা পূর্বাভাসের চেয়েও ভালো ফলাফল। এ সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং পরস্পরের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক কমাতে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
চীনের শুল্ক প্রশাসনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুনে রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৮ শতাংশ বেড়েছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে ব্লুমবার্গের করা সমীক্ষায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, একই মাসে চীনের আমদানিও ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটিও পূর্বাভাস দেওয়া ০.৩ শতাংশের চেয়ে ভালো।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) মন্দাভাব চলছিল। গত বছরের শেষ ছয় মাসে তা ৭১ শতাংশ কমে যায়। তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি–মার্চ) এফডিআই আসার হার বেড়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বাংলাদেশে নিট বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্ত-কোম্পানি ঋণ এবং শক্তিশালী ইক্যুইটি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম তিন মাসে নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১১৪.৩১ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায়ও নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৭৬.৩১ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে নিট এফডিআই ছিল ৪৯০.৪০ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, পুনঃবিনিয়োগকৃত আয়ের হার বছরে ২৪.৩১ শতাংশ হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও এই তীব্র বৃদ্ধি ঘটেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে নতুন মূলধন বিনিয়োগ এবং ঋণ প্রবাহ বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে চালিত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইক্যুইটি বিনিয়োগের প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ১৮৮.৪৩ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি।
একই সময়ে আন্ত-কোম্পানি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৬.৯৭ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের ২৫৩.৮০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি।
তবে, পুনঃবিনিয়োগকৃত নিট আয় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৯৪.৭১ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগে ছিল ২৫৭.২৬ মিলিয়ন ডলার।
প্রান্তিকটিতে মূলধন বহির্গমনও বেড়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বিদেশে মূলধন বহির্গমন হয়েছে ৭১১.৫৩ মিলিয়ন ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ৬৫১.১৯ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধির বিষয়ে মতামত দিতে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে সরকার। গত ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বলা হয়, কমিটি এক মাসের মধ্যে মতামত দেবে।
এই সময়ের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে বর্তমান সরকারের তৎপরতার ফল বলছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সরকারের ভিশন ও বিডার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, এই বছরের এফডিআই আসার পেছনে আমাদের ভূমিকা সামান্য। বিনিয়োগের ডিসিশন আগেই হয়েছিল। সম্ভবত প্রসেস একটু গতিশীল হয়েছে। যেমন, বিডা ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অনেক দ্রুত বৈদেশিক ঋণগুলোকে ভিন্নকরণ ও অনুমোদন করছে (স্ক্রুটিনি ও অ্যাপ্রুভ করছে)। ’
আর এ কারণেই বৈদেশিক বিনিয়োগের গতি বেড়েছে, বাড়ছে বিনিয়োগের পরিমাণ। গত সরকারের সময়ে এমন ছিল না।
বিডার চেয়ারম্যান উড়িয়ে দেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমছে-এমন ধারণা। দুই মাস আগে বৈদেশিক বিনিয়োগের তথ্য নিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদকে উল্লেখ করে একটি খবর প্রকাশিত হয়। গত শুক্রবার বৈদেশিক বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিত্র তুলে ধরে তিনি এ নিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় মাস দুই আগে একটা কার্টুনসহ রিপোর্ট করা হলো, একই সময়কে ফ্রেম করে। পড়ে মনে হচ্ছে প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়া, সামিট আর প্রেজেন্টেশন করা ছাড়া আমরা কিছু করি না। আর তাই বিনিয়োগ ধ্বংস, অর্থনীতি ধ্বংস, দেশ ধ্বংস, ইত্যাদি। প্রভিশনাল বা প্রস্তাবিত ডেটা নিয়ে এরকম একটা নেগেটিভ রিপোর্ট করে পাবলিককে সেনসিটাইজ করাটা দুঃখজনক। এমনিতেই বাংলাদেশে ডেটা নিয়ে অনেক কনফিউশন। তার ওপর এইসব অপসাংবাদিকতা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আমার গত আট মাসে কয়েকজন দারুণ রিপোর্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তারা স্ট্রেইট কাট প্রশ্ন করেন। রিপোর্ট করার আগে বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করেন। অন্যরা তাদের মতো হলে খুব ভালো হতো। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্টোবর-মার্চ ছয় মাসের বৈদেশিক বিনিয়োগের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আগের সরকারের সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে শুধু টাকার পরিমাণেই নয়, গুণগত মানেও বিনিয়োগ বেড়েছে। অক্টোবর-মার্চ সময়ে ইক্যুইটি, রি-ইনভেস্ট এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণ আনুপাতিক হারে বেড়েছে।
বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের মতে, আগের সরকারের সময়ে অস্থিতিশীল রাজস্ব নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে পরিকল্পনা ধীরে করতেন। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বড় সমস্যা ছিল। এসব বিষয়ে বিশেষ করে সরকারের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা হতো না। যার কারণে বিনিয়োগে গতি কমে যাচ্ছিল। নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারাও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। এর ফলে পাইপলাইনে থাকা বিনিয়োগগুলো দ্রুত গতিসম্পন্ন হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সবজি ও ফলমূল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেওয়া তথ্যমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিদেশে নতুন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় খুলনা থেকে পাট, পাটজাত পণ্য এবং চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে।
ইপিবি আরও জানায়, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির কারণেও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে একই সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১৩ হাজার ১৯ দশমিক ৮০ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এছাড়া কুচিয়া, কাঁকড়া, সবজি, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও বেড়েছে।
মাসভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেখা যায়, খুলনা অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জুলাইয়ে ৫১৭ কোটি ৬৮ লাখ, আগস্টে ৪৪৭ কোটি ৫৩ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৬০১ কোটি ৯৮ লাখ, অক্টোবরে ৫৬৬ কোটি ৯৬ লাখ, নভেম্বরে ৫২৩ কোটি ১৩ লাখ, ডিসেম্বরে ৪৫৭ কোটি ৩৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৪২৩ কোটি ৬৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ কোটি ৫২ লাখ, মার্চে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ, এপ্রিলে ৫৫০ কোটি ৮৭ লাখ, মে মাসে ৬১১ কোটি ৬৯ লাখ এবং ২০২৫ সালের জুনে ৪২৯ কোটি ১১ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন।
খুলনা ইপিবির পরিচালক জিনাত আরা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সরকারি পাটকল ও চিংড়ি কারখানা বন্ধসহ নানা কারণে খুলনা অঞ্চলের রপ্তানি কমে গিয়েছিল।’
পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সম্প্রতি খুলনা সফর করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, খুলনা অঞ্চল পাট, চিংড়ি ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে তার আগের গৌরব ফিরে পাবে। সরকার বন্ধ থাকা পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে সেগুলো পুনরায় চালু করা যায়।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. আবদুল বাকী বাসসকে বলেন, ‘খুলনার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন দেশে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে চিংড়ি, পাট, পাটজাত পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, খুলনায় মোট ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন ও বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় ৩৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে পাট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাট অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএ)-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও পাট ব্যবসায়ী শরীফ ফজলুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। খুলনায় এর বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে তিনি অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকার দেশের পাট খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরীক্ষক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আর্থিক প্রতিবেদন ও নিরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা যখন একটি দেশের ব্যবসা পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পান, তখন তারা সেই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসি’র ভূমিকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, ঢাকাস্থ বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সৌলেমানে কুলিবালি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, দেশীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীর আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন স্বচ্ছভাবে এবং যথাযথ তথ্যসহ উপস্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, একটি সুদৃঢ়, সহনশীল ও ভবিষ্যতমুখী আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ব্যাংকে রিস্ক-বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করা হবে।
মূল প্রবন্ধে এফআরসি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করছে যা আর্থিক প্রতিবেদন, নিরীক্ষা, মূল্যায়ন এবং সঠিক মানদণ্ডে সততা, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, এফআরসি চায় সব পক্ষ যেন পূর্ণ প্রকাশসহ সত্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে, যাতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকৃত ও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব—আয়কর ও ভ্যাট—সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভুয়া বা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদনই কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর প্রধান হাতিয়ার।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন (আঙ্কটাড) অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রো নিকিতা এএফপিকে জানিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ সত্ত্বেও ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে ‘নীতিগত অনিশ্চয়তা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসের ইঙ্গিত, এইসব বিষয় ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে আঙ্কটাড।
নিকিতা বলেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো ৫ এপ্রিল শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পণ্যের মজুত করে ফেলায় আমদানির বড় এই বৃদ্ধিটি ঘটেছে।
আঙ্কটাডর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেবা বাণিজ্যই ছিল প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১.৫ শতাংশ বেড়েছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ২ শতাংশে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে উন্নত অর্থনীতি উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভালো করেছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে গ্লোবাল সাউথের পক্ষে থাকা প্রবণতাকে উল্টে দিয়েছে।’
এই পরিবর্তনের পেছনে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রপ্তানিতে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ভূমিকা রেখেছে।’ তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আমদানি দুই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ট্রাম্প তার ব্যাপক শুল্ক আরোপের কারণ হিসাবে যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা উল্লেখ করেছেন, তা ‘গত চার প্রান্তিকে আরও গভীর হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহত্তর ঘাটতি রয়েছে এবং চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাণিজ্য বিভাজনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে আঙ্কটাড জানিয়েছে এখনও স্থিতিস্থাপকতার লক্ষণ রয়ে গেছে। যদিও তা ‘নীতিগত স্পষ্টতা, ভূ-অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সরবরাহ লাইনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে।
হঠাৎ করে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একগুচ্ছ ‘শুল্ক চিঠি’ প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার (০৭ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রকাশিত এসব চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে।
চিঠি প্রকাশের পরপরই এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দেখা দেয় বড় ধস। ডাও জোন্স সূচক পড়ে যায় ৪২২ পয়েন্ট, আর নাসডাক ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক যথাক্রমে ০.৯ শতাংশ ও ০.৮ শতাংশ কমে যায়।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকম-এর মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়। কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার ৭ শতাংশ পর্যন্ত দরপতনের মুখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।
শুল্ক ঘোষণার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বাজারেও চাপ পড়ে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের হার বেড়ে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশে দাঁড়ায়।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তার দাবি, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং তার শুল্কনীতির অযৌক্তিক সমালোচনা করছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইউএস ডলার ইনডেক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এর ফলে জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি প্রধান মুদ্রা ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে।
তবে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে এশিয়ার কিছু শেয়ারবাজারে সাময়িক চাঙাভাব দেখা গেছে, এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও কিছুটা উত্থান দেখা দিতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি শুধু বাণিজ্য সম্পর্কেই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভারসাম্যেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিষ্পত্তিহীন পণ্য দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ বা ধ্বংসের মাধ্যমে সরানোর জন্য একটি ‘নিলাম কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশেষ আদেশে গঠিত এ কমিটি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহন ব্যতীত ফেলে রাখা সব পণ্য নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ শফিউদ্দিন এক অফিস আদেশে জানান, নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভূঁঞা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. রুহুল আমিনসহ কাস্টম হাউসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নিলাম শাখার উপ বা সহকারী কমিশনার।
অফিস আদেশে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন মেনে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অখালাসকৃত, বাজেয়াপ্ত অথবা অনিষ্পন্ন পণ্য দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়রোধই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। এই কমিটি দ্রুত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কন্টেইনার জট নিরসন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পণ্যের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেয়ারট্রিপ ও মনিটরের যৌথ উদ্যোগে এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার-২০২৪ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদকসহ মোট ৫ টি পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দীর্ঘ দূরত্বের আন্তর্জাতিক পথে ফ্লাইট পরিচালনা, ইকোনমি ক্লাসে শ্রেষ্ঠ ইনফ্লাইট খাবার, বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পদক পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়াও বেস্ট ইম্প্রুভড এয়ারলাইন্স ও অভ্যন্তরীণ পথে ফ্লাইট পরিচালনায় যথাক্রমে সিলভার ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত শুল্কহার নির্ধারিত হবে ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। এ কারণেই আমাদের তাদের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। এখনও শুল্কহার চূড়ান্ত হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী ৮ জুলাই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনা দুর্বল হতে পারে—এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১২৫ বিলিয়ন ডলার, আর আমাদের মাত্র ৫ বিলিয়ন। এজন্য ভিয়েতনাম বেশি ছাড় পেয়েছে শুল্ক হারে।”
তিনি জানান, বাণিজ্য উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন এবং তিন দিন আগে যাওয়ার পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে কাজ করছেন। ৮ জুলাইয়ের বৈঠকের পর বিষয়টি বোঝা যাবে, যা বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ৯ জুলাই ভোরে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ফলাফল যাই হোক, সরকার তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এ পর্যন্ত আমাদের যেসব বৈঠক হয়েছে, সবই ইতিবাচক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার ভোরে (বাংলাদেশ সময়) তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন—যা তিন মাস আগে প্রস্তাবিত ৩৭ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ কম।
তবে এটি এখনো ভিয়েতনামের নতুন ২০ শতাংশ শুল্কহারের তুলনায় অনেক বেশি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম তাদের দেশে আমদানি হওয়া সব মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ট্রাম্পের পাঠানো চিঠিগুলোতে ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও নতুন শুল্কহার আরোপ হয়েছে—মিয়ানমার ও লাওসের জন্য ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের জন্য ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার জন্য ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৩২ শতাংশ, এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার জন্য ২৫ শতাংশ।
চিঠিগুলোতে ট্রাম্প সতর্ক করেন, কোনো দেশ পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তাদের আমদানি শুল্ক বাড়ালে, তার প্রশাসন আরও বেশি হারে শুল্ক আরোপ করবে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করেছিলেন তিনি, সেই তুলনায় এবার ২ শতাংশ কম। তবে রপ্তানি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় এটি অনেক বেশি। কারণ ভিয়েতনামের পণ্যে এই শুল্কারোপ হয়েছে ২০ শতাংশ।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) নিজের ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এ সম্পর্কিত একটি চিঠিও প্রকাশ করেন ট্রাম্প। একই ধরনের চিঠি তিনি অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি পাঠিয়েছেন, যেখানে তাদের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার উল্লেখ ছিল।
আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা ওই চিঠি থেকেই জানা গেছে।
এর আগে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আগ্রাসী এই শুল্কহার কার্যকর করার আগে সময় দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। এরপর বাড়তি এই শুল্ক কার্যকরের আগে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে সোমবার তা আরও বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যে শুল্ক হবে ৪০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, সার্বিয়ার পণ্যে ৩৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ৩০ শতাংশ এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার পণ্যে বসবে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক। এ ছাড়াও আরও কিছু চিঠি আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
যেসব দেশের ওপর শুল্কারোপ করেছেন, যদি এই দেশগুলো তাদের পক্ষ থেকে পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আরও শুল্ক চাপাবে বলেও সতর্ক করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে।’
অন্যদিকে, বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল শেষ মুহূর্তের আলোচনা চালিয়ে যেতে এখনও ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তবে আপাতত ট্রাম্পের ঘোষণা চূড়ান্ত বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।
যদিও চিঠিতে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কমালে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা যেতে পারে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’
ট্রাম্প তার চিরাচরিত কৌশলেই চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পরে সেগুলো ডাকযোগে পাঠাবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এই চিঠিগুলো কোনো পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তি নয়, বরং ট্রাম্প নিজেই এসব শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি বলে এপির প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এপির তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গেই পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে আংশিক চুক্তি হয়েছে, আর ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি শিগগিরই হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সরাসরি প্রতিযোগী এই দুই দেশ।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এর আগে ঘোষিত ৪৬ শতাংশ থেকে অনেক কম। এই ২০ শতাংশ শুল্ক আগামী ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
ভিয়েতনাম তাদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কোনো শুল্ক আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— এ কারণেই এই দেশটির ওপর কম শুল্কারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এদিকে সরকারি হিসাবমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বাংলাদেশ।
শুল্ক বা ট্যারিফ হলো আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা আমদানিকারককে দিতে হয়। এতে বিদেশি পণ্যের দাম বাড়ে, ফলে সেগুলো স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি আমদানিকারকরা বাড়তি শুল্ক দিতে না চান, তবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের বাধ্য হয়ে দাম কমাতে হতে পারে।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ।