রোববার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

জানুয়ারিতে আমিরাত থেকে ৪৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২২:১৪

জানুয়ারিতে ৪৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। সৌদি আরব থেকে এসেছে তিন ভাগের এক- ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

শুধু জানুয়ারি নয়, গত কয়েক মাস ধরেই সৌদি আরবের চেয়ে আমিরাত থেকে বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসছে। অথচ বরাবরই সৌদি আরবে অবস্থানকারী প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে আসছেন।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩৭৬ কোটি ৫৩ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। আরব আমিরাত থেকে এসেছিল ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ কম, ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ (৩.০৩ বিলিয়ন)।

তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) অর্থবছরে সৌদি থেকে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ (৪.৫৪ বিলিয়ন) ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। আমিরাত থেকে এসেছিল অর্ধেকেরও কম, ২০৭ কোটি ১৮ লাখ (২.০৭ বিলিয়ন) ডলার।

ওই দুই অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের উৎস ছিল আরব আমিরাত। দ্বিতীয় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র।

কিন্তু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই দুই দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষে চলে এসেছে আমিরাত। এই অর্থবছরে প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশটিতে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা এই সাত মাসে আসা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ১৯ শতাংশ।

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন দেশে থেকে মোট ১২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।

এই সাত মাসে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

হিসাব বলছে, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সৌদি আরবের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে আরব আমিরাত থেকে; শতাংশ হিসাবে বেশি এসেছে প্রায় ৫২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি এসেছে ৮৪ শতাংশ। ৫১ শতাংশ বেশি এসেছে যুক্তরাজ্যের চেয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার দেশভিত্তিক রেমিট্যান্সের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে আরব আমিরাত থেকে। দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাজ্য। শীর্ষ থেকে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে সৌদি আরব।

গত দুই অর্থবছরে দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, প্রবাসীরা যেখানে টাকা বেশি পাবেন, সেখান থেকেই পাঠাবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে গত দুই বছরে আরব আমিরাতে আমাদের অনেক লোক গেছেন কাজের জন্য। তারা কাজ করছে; রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনের আভাস গত অর্থবছরেই পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার (৩.০৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

প্রথমবারের মতো আমিরাত থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। গত অর্থবছরে তিনটি দেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। বাকি দুটি দেশ ছিল- সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরের কয়েক মাসেও শীর্ষে ছিল আমিরাত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোনো কোনো মাসে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল আরব আমিরাত থেকে।

যেমন ২০২২ সালের মার্চ মাসে আরব আমিরাত থেকে ৩০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ৩০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আর সৌদি আরব থেকে এসেছিল ২৮ কোটি ৩ লাখ ডলার।

২০২৩ সালের জানুয়ারি এবং ২০২২ সালের মে মাসেও সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল আরব আমিরাত থেকে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর আগে একক মাসের হিসাবে আমিরাত থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে, ৪৪ কোটি ২৯ লাখ ডলার। সেই রেকর্ড ভেঙে জানুয়ারিতে ৪৪ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার রেমিট্যান্স এসেছে আমিরাত থেকে।


বাজার মূলধন কমল ১৩ হাজার কোটি টাকা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে দরপতন দিনকে দিন বাড়ছেই। আর বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পাল্লাই ভারী হয়েছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্যসূচকের যেমন বড় পতন হয়েছে, তেমনি বড় অঙ্কে বাজার মূলধন কমেছে।

গত সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে। প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২০০ পয়েন্ট। বাজারটিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার থেকে প্রায় ছয়গুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে গড় লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।

দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি শেয়ারবাজারের অষ্টম সপ্তাহ। এর আগে আরও সাতটি সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে লেনদেন হওয়া আট সপ্তাহের মধ্যে সাত সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে।

সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সপ্তাহেও দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকে।

গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের সপ্তম সপ্তাহে ডিএসইতে মাত্র ৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ৩৪৯টির। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকে অন্তর্বর্তী সরকারে অষ্টম সপ্তাহেও। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৫৭টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩১টির। আর ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৫ দশমিক ৮১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমেছে। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ১৭৬ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯৬ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের ছয় সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৮৮ পয়েন্ট। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া আট সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সব মিলিয়ে কমেছে ৪৬০ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৭৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৪০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৩ শতাংশ।

সবকটি প্রধান মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৫৩ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, ইবনে সিনা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম এবং সোনালি আঁশ।


নিয়ন্ত্রণহীন কাঁচাবাজার, প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ডিম-মুরগির দামও

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দাম কমে গিয়েছিল শাক-সবজির। তবে এই অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাত দেখিয়ে আগের চেয়েও বেড়ে যায় বিভিন্ন সবজির দাম। এখন কোনো কারণ ছাড়াই ঊর্ধ্বমুখী দাম কাঁচাবাজারের প্রায় সব পণ্যের। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। ফলে ব্যাগ নিয়ে বাজারে ঢুকে হিমশিম খেতে দেখা যায় সীমিত আয়ের ক্রেতাদের। বাজার কে নিয়ন্ত্রণ করছে বা আদৌ কারও নিয়ন্ত্রণে আছে কি না এই প্রশ্ন রেখে কেনাকাটায় কাটছাঁট করে চলে যাচ্ছেন তারা।

শুধু সবজিই নয়, প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে ডিম, মুরগি, মাছের দামও। আর আগে থেকেই উচ্চমূল্যে অবস্থান করছে গরু ও খাসির মাংস। এখন নাগালের মধ্যে নেই আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো পণ্যও। আজ শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় নিত্যপণ্যের এই চিত্র।

আকাশচুম্বী সবজির বাজার

আজকের বাজারে প্রায় সব সবজির দামই বেড়েছে বড় অঙ্কে। ভারতীয় টমেটো ১৭০ টাকা, দেশি গাজর ১৪০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০-১৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৬০ টাকা, শসা ৮০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৬০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।

গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় গেলে দেখা যায় আজ সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। ৮০ টাকা বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। গত সপ্তাহে এই বাজারে কাঁচা মরিচের সর্বোচ্চ দাম ছিল প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে ভারতীয় টমেটো, দেশি গাজর, করলা, পেঁপে, মুলা, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও লাউয়ের। ২০ টাকা করে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে চিচিঙ্গা, শসা, উচ্ছে, কাঁকরোল, পটল, ধুন্দল, কচুর লতি ও কচুরমুখীর।

ঝিঙার দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। আর কেজিতে ৪০ টাকা করে দাম বেড়েছে সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন ও বরবটির। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে আগের মতোই।

সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাজারে বন্যার পরের প্রভাব পড়েছে, তাই দাম বেশি। আমরা মোকামে গিয়ে আগের মতো দাম পাই না। আগে যদি পাঁচ জায়গায় মাল বিক্রি হতো, এখন হয় দুই জায়গায়। ওই দুই জায়গায়ই সব ব্যবসায়ী যায়। এতে তখন মাল নেওয়ার জন্য একেক ব্যবসায়ী একেক দাম বলে। তখনই দামটা বেড়ে যায়। আমরাও বুঝি যে ক্রেতাদের সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের আর কী করার আছে? যেরকম কেনা সেভাবেই আমাদের বিক্রি করতে হয়।’

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শেখ মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাজারে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। এই দায় আসলে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও। তারা ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারা যদি ঠিকভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করত, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো বলে আমার মনে হয়।’

বেসরকারি চাকরিজীবী এস এম মুহিদ বলেন, আগের সরকারও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নাই, এই সরকারও পারছে না। তবে এই সরকার এসেছে বেশি দিন হয়নি। তাদের সময় দিলে হয়তো অবস্থা ঠিক হবে। এদিকে নজর দিতে হবে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন সায়রা খানম। তিনি বলেন, ‘বাজারের যে অবস্থা তাতে ঢাকা শহরে থাকতে পারব কি না চিন্তায় আছি। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণই নাই। অনেকের কাছে থেকে অনেক আশ্বাস পেয়েছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে, কিন্তু এখনো সবকিছুর অত্যধিক দাম। জানি না এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে কি না।’

বাজারে উচ্চমূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও চায়না আদার। আর নতুন আসা ভারতীয় আদা পাওয়া যাচ্ছে কম দামেই। গতকাল আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১০-১২০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১১০ টাকা ও বড় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১৫-১২০ টাকা করে। লাল ও সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০-১৬০ দরে বিক্রি হয়।

ডিম, ব্রয়লার ও কক মুরগির দাম বাড়ছেই

বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম ১৬০-১৬৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৬০ টাকা দরে ডজন বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৯০-১৯৭ টাকা, কক মুরগি ২৪৫-২৫৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০-২৯৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা করে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৭ টাকা। কক মুরগির দাম বেড়েছে ৭ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া প্রতি কেজিতে লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫-১০ টাকা।

ডিমের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে ডিমের সংকট, এ কারণে দাম বেড়ে গিয়েছে।

এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে।

এ ছাড়া আজ বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-২২০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, কৈ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৮০০ টাকা, শিং ৫০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০-১২০০ টাকা, কাজলী মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলেন, বাজারে মাছের দাম অত্যধিক। দাম আর কমছে না।

স্থিতিশীল মুদিপণ্যের দাম

এদিকে মুদি দোকানে প্রায় অপরিবর্তিত আছে বেশির ভাগ পণ্যের দাম। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪০ টাকা, মাষকলাই ডাল ২০০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় ছোট মুগ ডালের দাম কমেছে ১০ টাকা, খেসারির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা।


বিএসইসিতে তালা ঝুলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মানববন্ধন

শনিবারের মধ্যে চেয়ারম্যানকে পদত্যাগে আলটিমেটাম
ফাইল ছবি
আপডেটেড ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ২১:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন কমিশনের অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত, অযৌক্তিক বক্তব্য, অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ভুল পথে সংস্কারের উদ্যোগ, আগের কমিশনের জারি করা ভুল নীতির প্রয়োগ, সতর্কতা ছাড়াই কতগুলো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর, বড় অঙ্কের জরিমানা আরোপ, স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে অদক্ষতার পরিচয়- এমন বেশ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এতে টানা কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে দরপতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন একদল বিনিয়োগকারী।

আগের দুদিন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসইসি ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে মানববন্ধন করেন পুঁজি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ওই দলটি। দিনশেষে সন্ধ‍্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত‍্যাগে আগামী শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তালা খুলে দেন বিক্ষোভকারী বিনিয়োগকারীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কমিশন ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় বিএসইসি ভবনের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সংস্থার চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা। বিনিয়োগকারীদের অবস্থানের কারণে বিএসইসি ভবনের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়। আইনশৃঙ্খলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা তাদের দাবি নিয়ে কথা বলেন। তারা এক দফা এক দাবি বিএসইসি চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে বলে জানান। একপর্যায়ে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক আটকে দেন বিনিয়োগকারীরা। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় তারা সড়ক ছেড়ে পাশে অবস্থান করেন। আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিএসইসি ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সন্ধ‍্যা সাড়ে ৬টায় রাশেদ মাকসুদকে পদত‍্যাগের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে চলে যান বিক্ষোভকারীরা।

এ সময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বৈঠকের আহ্বান জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তবে তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, বিএসইসি চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছেন তারা। তাই চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে জালিয়াতির মাধ্যমে বিএসইসিতে নিয়োগ পাওয়া ১২৭ জন ‘ছাত্রলীগ’ কর্মী উল্লেখ করে তাদের পদত্যাগ করতে হবে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।

গতকাল বুধবার সকালে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ এবং বিকেলে ইউনূস সেন্টারের সামনে ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালসের নামের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে বিক্ষোভ করা হয়। সে দিনই বিএসইসির উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মতিঝিলে জমায়েত হন বিনিয়োগকারীরা। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় বিএসইসির উদ্দেশে লংমার্চ কর্মসূচির সময়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। তবে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে আগের দিনের মতো মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক বিনিয়োগকারী লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএসইসি কার্যলয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

বিএসইসির সামনে বিক্ষোভকালে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসি চেয়ারম্যান না বুঝে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যে কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা খুবই জরুরি। বিনিয়োগকারীদের এখন একটাই দাবি, বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।’

এদিকে টানা কয়েক দিনের দরপতনে পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে ২০০ পয়েন্টের বেশি। অবশ্য আজ আন্দোলনের মুখে শেষ মুহূর্তে সূচক সামান্য বেড়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে এ দিন লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ২০৯টির, কমেছে ১৩৮টির এবং আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৫০টির। এতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৬২ পয়েন্টে। এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হয়েছে ৩১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা আগের দিনে ছিল ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১২৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। গতকালের এই লেনদেন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সবচেয়ে কম লেনদেন।


ডিএসইর চেয়ারম্যান হলেন মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সম্প্রতি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্য থেকে মমিনুল ইসলাম পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ডিএসইর বোর্ড সভায় পর্ষদ সদস্যদের সম্মতিতে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। মমিনুল ইসলাম ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ছিলেন।

ডিএসইর জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কৌশলগত, প্রযুক্তিগত, পুঁজিবাজার ব্যবসা, পণ্য, প্রক্রিয়া এবং বিধি-বিধান সম্পর্কে পঁচিশ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে মমিনুল ইসলামের। এ ছাড়া জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি কাঠামো এবং সহযোগিতার বিষয়ে রয়েছে তার কাজ করার দক্ষতা। বিজনেস ট্রান্সফরমেশন, বিজনেস প্রসেস ম্যানেজমেন্ট, লিন ম্যানেজমেন্ট, অপারেশনাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং সার্ভিস কোয়ালিটির অভিযোজনসহ সিক্স সিগমা ব্ল্যাক বেল্ট রয়েছে। একই সঙ্গে তার রয়েছে শিক্ষা জীবনে অসামান্য কৃতিত্ব।

মমিনুল ইসলাম সিলিংক অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি কৌশলগত আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা, বিনিয়োগ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং কৌশলগত রূপান্তরে কাজ করে। মমিনুল ইসলাম ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বকনিষ্ঠ (৩৫ বছর বয়সে) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন৷ তিনি জানুয়ারি ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ তার আগে তিনি আগস্ট ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এপ্রিল ২০০৬ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত অপারেশন ও প্রযুক্তি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷

এ ছাড়া তিনি অক্টোবর ২০০৫ থেকে মার্চ ২০০৬ পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে হেড অব অপারেশনাল রিস্ক, প্রকল্প এবং বিসিপি এবং রিইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিস কোয়ালিটি প্রধান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মে ২০০১ থেকে অক্টোবর ২০০৫ পর্যন্ত আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে, রিইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রজেক্টস, জানুয়ারি ২০০০ থেকে মে ২০০১ পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে রেমিট্যান্স বিভাগে অফিসার হিসেবে কাজ করেন। মমিনুল ইসলাম ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

ডিএসই জানায়, মমিনুল ইসলামের রয়েছে নেতৃত্ব, গ্রাহককেন্দ্রিকতা, কৌশলগত যোগ্যতা, যোগাযোগে দক্ষতা, সততা ও উত্তম নাগরিকত্ব। আর্থিক খাতের সাথে প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক এবং আইনি কাঠামো, টিম উন্নয়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অপারেশনাল এক্সিলেন্স ও স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনায় তার রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও তার রয়েছে অনন্য ভূমিকা। তিনি ২০২৩ সালে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটস- এশিয়া প্যাসিফিক এর চেয়ারম্যান, ২০২০-২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি দাতব্য সংস্থা ‘অদম্য ফাউন্ডেশন’-এর ভাইস চেয়ারম্যান।


অব্যাহত দরপতনে ফুঁসে উঠছেন বিনিয়োগকারীরা

বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনের অবস্থান কর্মসূচি
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে গত দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে বুধবার। অব্যাহত এই দরপতনে হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী (আনরিয়েলাইজড) লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অদক্ষ নেতৃত্বের জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে ফুঁসে উঠেছে তারা। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা চেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে বিনিয়োগকারীদের ব্যানারে কয়েকটি সংগঠন।

সরজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরাতন ভবনের সামনে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী। এতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করার সুপারিশ জানায়। আর দুপুর তিনটার দিকে মতিঝিলের ইউনূস সেন্টারের সামনে সমবেত হয়ে ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালস’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে অপর আরেক দল বিনিয়োগকারী। এতে তারা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ও অদক্ষ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি জানানোর পাশাপাশি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনার কামনা করেন। এ সময় বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে কমিশনের গেটে তালা ঝুলানোর হুঁশিয়ারিও দেয় তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩০ পয়েন্টের ওপরে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।

বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে গত মঙ্গলবার ৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এটিই কোনো একক শেয়ারে কারসাজির অপরাধে বড় জরিমানা ছিল। এই জরিমানার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল লেনদেন শুরু হওয়ার আগেও বিষয়টি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এতে লেনদেনের শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই দরপতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে এক প্রকার বড় দরপতনের মধ্যেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনশেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২১৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মানববন্ধনের বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দর পতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, তা হলো বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। একই সঙ্গে আমরা সরকারের কাছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ বাদ দিয়ে একটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনের দাবি জানাচ্ছি। আর সদস্যভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’

‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনালস’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয় মিন্টু নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের কোনো অর্জন নেই। তিনি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বেও ছিলেন না। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি ছিলেন। সেখান থেকেও তার চাকরি চলে গেছে অদক্ষতার কারণে। উনার মতো লোককে কীভাবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান করা হয়?’

খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগকারীদের মারার জন্য যা করার দরকার, ঠিক তা-ই করা হচ্ছে। তিনি (খন্দকার রাশেদ মাকসুদ) চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা যত মূলধন হারিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকনির্দেশনা জানাতে হবে।’

এদিকে বুধবার প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে ঢালাও দরপতন হলেও এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২০ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সোনালী আঁশ, ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, এডিএন টেলিকম এবং ইবনে সিনা।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩০৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৭টির এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।


সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করবেন ইউরোপ প্রবাসী ব্যবসায়ীরা

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউরোপপ্রবাসী ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশে ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি, সেবা খাতসহ মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে চান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং ইউরোপ-বাংলাদেশ ফেডারেশন অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইবিএফসিআই) ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের আলোচনা সভায় এ আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে জিএসপি, ইবিএসহ বিভিন্ন বাণিজ্য-সুবিধা দিচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভবিষ্যতেও তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। নতুন বাংলাদেশে আরও বেশি ইউরোপীয় বিনিয়োগ আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প, পুঁজিবাজার, কৃষি ও অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করতে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ ইউরোপের বিনিয়োগকারীদের আহ্বানও জানান।

প্রতিনিধিদলের প্রধান ও ইবিএফসিআইয়ের সভাপতি ওয়ালি তসর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের প্রবাসী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আগ্রহ বেড়েছে।

মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় বাণিজ্য চুক্তি সই ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করা হয়। শুধু প্রবাসী বাংলাদেশি ভোক্তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ইউরোপের মূল বাজারে জায়গা করে নেওয়ার জন্য পণ্য বহুমুখীকরণ, প্যাকেজিং, বাজারজাতকরণ, বিপণন কৌশল উন্নয়নসহ প্রচারণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শও দেন তারা। এর পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ও ভিসা জটিলতা সহজীকরণে ব্যবসায়ী নেতারা আহ্বান জানান।

উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, ইবিএফসিআইয়ের অনির্বাহী পরিচালক, ব্যবসায়ী নেতা, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. আলমগীর, আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান মো. জাফর ইকবাল, এনডিসি ও অন্যান্য কর্মকর্তা সভায় উপস্থিত ছিলেন।


লাল তালিকামুক্ত হলো পাকিস্তানি সব পণ্য

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। নিরাপত্তার অজুহাতে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা সব পণ্য লাল তালিকাভুক্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পরিবর্তনের ফলে গুঞ্জন ছিল ফের স্বাভাবিক হতে পারে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি কার্যক্রম। সেই গুঞ্জনই অবশেষে সত্যে রূপান্তরিত হলো। পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত লাল তালিকা থেকে মুক্ত হয়েছে দেশটির সব ধরনের পণ্য।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। ওই সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনার বাংলাদেশের সঙ্গে স্তিমিত হয়ে পড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক জোরালো করার আহ্বান জানান।

সেই সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তান এখন আবার বাণিজ্য শুরু করতে আগ্রহী।

এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. আবদুল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের রেড লেন থেকে মুক্ত করা হয়েছে। শুধু পাকিস্তানের পণ্য এ রেড লেনে ছিল। ন্যাশনাল সিলেক্টিভিটি ক্রাইটেরিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এ পণ্যগুলোকে রেড লেন থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ পণ্যে কঠোরতা রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতির পথে হাঁটছে এনবিআর। এতে করে দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে কোনোরকম জটিলতা থাকবে না।

এতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য চালান ন্যাশনাল ক্রাইটেরিয়ার বহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তা ছাড়া লোকাল ক্রাইটেরিয়ার আওতায় সময়ে সময়ে ঝুঁকি বিবেচনায় ওই দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য ভিত্তিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট চালু রাখার বিষয়ে কাস্টমস হাউজগুলো প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

এনবিআররের এমন সিদ্ধান্তে দেশের বাণিজ্যে নতুন মাইলফলক তৈরি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে দাপ্তরিক যে জটিলতা আছে, তা কেটে গেলে দেশে উৎপাদনমুখী কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে। দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে পাকিস্তানি তুলা, সুতা ও কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। পাকিস্তানি শিশুখাদ্য, জুস, কাটলারি ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানা গেছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি পণ্য লাল তালিকাভুক্ত হলেও দেশটির জুস, কাপড়, শিশুখাদ্য, ফ্যানসহ বিভিন্ন রকমের পণ্যের বড় বাজার রয়েছে এখানে। এবার সব পণ্য লাল তালিকামুক্ত হওয়ায় এসব পণ্যের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের বাজার তৈরি হবে। বিশেষ করে তুলার মত কাঁচামালের বিকল্প বাজার তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশে চামড়া, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে পাকিস্তানিদের বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। পাকিস্তানের সরকারি তথ্যমতে, ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি পণ্য। আর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ ডলারের পণ্য।


৬৭৩ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরে সৌদিআরব, মরক্কো ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে এক লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৭৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া, ৪০ হাজার টন ডিএপি এবং ৩০ হাজার টন টিএসপি সার রয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে এ প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ‘আজ (বুধবার) ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির ষষ্ঠ সভা হয়। বৈঠকে ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপিত ও আলোচিত হয় এবং সবকয়টি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের জ্বালানি ও সারের চাহিদা মেটাতে আজকে সভায় কিছু প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কৃষি কাজের জন্য কোনো সারের অভাব হবে না। চাহিদা মেটাতে ও মজুত বাড়াতে সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের জ্বালানির দরকার সেটা আমরা নিশ্চিত করব। সারের ক্ষেত্রে আমাদের যত রকমের সোর্স আছে সবদিক থেকে চেষ্টা করা হবে। আর আমাদের কাফকো আছে, ঘোড়াসাল সার কারখানাতেও ভালো উৎপাদন হচ্ছে।’

তাহলে কি দেশে জ্বালানির সংকট ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশের জ্বালানির যে সংকট আছে সেটাকে আমরা মিনিমাইজ করছি। যাতে ব্যবসা বাণিজ্যটাকে সচল রাখা যায়।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সৌদি আরবের কৃষি পুষ্টি কোম্পানি সাবিক দ্বিতীয় লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন বান্ধ গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৬৭ লাখ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৪৬ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) বাংলাদেশের কাছ থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৩৫ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ওসিপি এস. এ মরক্কো এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ওসিপি এস. এ মরক্কো থেকে ৬ষ্ঠ লটের ৩০ মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৪১৫ মার্কিন ডলার। আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা আদেন এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১০ম লটের ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৭৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৫৮১ মার্কিন ডলার।

এছাড়া সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১ম প্যাকেজের লট-০২ (নেত্রকোনা (১০০০০ মে.টন), ময়মনসিংহ (২৫০০০ মে.টন))-এর ২টি সাইটের নির্মাণ কাজসমূহ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম)-তে বাস্তবায়নের জন্য ক্রয়ের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।


এ যেন সোনার ডিম, যার এক পিস ১৫ টাকা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২ অক্টোবর, ২০২৪ ১৬:৩১
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তার কোনো তোয়াক্কাই করছেন না ব্যবসায়ীরা। সরকারের ঠিক করে দেওয়া দামে প্রতি পিস ডিমের দাম হয় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। অথচ বাজারে এর চিত্র একেবারেই আলাদা। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। আর ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। দাম নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ তো আছেই। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আবার পড়তে হয় বিক্রেতাদের রোষানলে। তাদের সাফ কথা, ‘নিলে নেন, না নিলে সামনে হাঁটেন।’

আজ বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা আলাপ করে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা অফিসে বসে একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যেখানে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাদের দাবি, দেশের বাজারে মুরগির খাদ্যের প্রচুর দাম। তাছাড়া অতিরিক্ত গরমের জন্য খামারে ডিমের উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে। আর সরবরাহ কমায় ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তবে বাজারে আসা ভোক্তাদেরও পাল্টা প্রশ্ন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি পিস ডিম আমদানি খরচসহ ৭ টাকা দাম পড়লেও বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিম কেন প্রতি পিস ১৪/১৫ টাকা হবে?

ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিমের দাম নিয়ে ভোক্তা মহলে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘ব্যর্থ’ বলেও সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, ডিমের বাজারে এখনও শক্ত একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। আওয়ামী লীগের পতন হলেও বর্তমান সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তা না হলে সরকার দাম নির্ধারণের ১৫ দিন চলে গেলেও কেন এখনও ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না?

ডিমের দাম প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থী বলেন, সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অনেক আগেই। যেখানে সরকার নির্ধারিত দাম হওয়ার কথা প্রতি পিস ১০/১১ টাকা, সেখানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা করে। এক হালি ডিম নিয়েছি ৬০ টাকায়। আমরা তো চেয়েছিলাম একটা নতুন সরকার এলে বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সবকিছুর একটা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেবে। এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন নেই।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শুনেছিলাম ইন্ডিয়া থেকে কিছু ডিম বাংলাদেশে আনা হয়েছে, সেটা কি এখন আসছে না? যতটুকু জানি সেই ডিমের আমদানি খরচসহ প্রতি পিসের দাম পড়েছিল ৭ টাকা করে। সেটি যদি ১০ টাকা করেও বিক্রি হয়, তারপরও তো ভোক্তারা লাভবান হতো। কিন্তু সেটি কেন করা হচ্ছে না? কারও স্বার্থে কি সেই উদ্যোগ আটকে আছে?

আরেক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০/৩৫ টাকা হালি, সেটা এখন ৬০ টাকা। এগুলো দেখার কি কেউ আছে? কেউই নাই।

এদিকে ডিমের দাম নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, আমরা সাধারণ বিক্রেতা। দাম নিয়ে আমাদের সঙ্গে কিছু বলে লাভ নেই। আমরা ডিম কিনে আনি, এরপর বিক্রি করি। আমরা যদি কমে কিনে আনতে পারি, তাহলে কমে বিক্রি করতে আপত্তি নেই। আমাদের দিন শেষে ২/৪ টাকা লাভ থাকলেই হলো।

রফিক মিয়া নামের এক বিক্রেতা বলেন, শুনেছিলাম কিছুদিন আগে সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে কিনতে গিয়ে দেখি উল্টো বেড়ে গেছে। আড়তদাররা বলছে বাজারে ডিমের সংকট আছে। জানি না হঠাৎ করে কেন সংকট তৈরি হলো। তবে আমাদের যদি বেশি দামে কিনে আনতে হয়, তাহলে তো সে অনুযায়ী একটু বাড়িয়েই বিক্রি করতে হবে।

মনসুর আলী নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতি পিস ডিম ১৩ টাকায় কিনেছি, এর সঙ্গে আছে পরিবহন খরচ। এছাড়াও প্রতিনিয়তই বেশ কিছু ডিম নষ্ট হয়। এসব হিসাব করেই আমাদের বিক্রি করতে হয়। অতিরিক্ত গরমের জন্য খামারে ডিমের উৎপাদনও কমে গেছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। এ কারণে বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা পর্যায়েও ডিমের দাম বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।


আবারও বাড়লো এলপিজির দাম

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২ অক্টোবর, ২০২৪ ১৬:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোক্তা পর্যায়ে আবারও বাড়লো এলপিজির দাম। ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়ে পরপর চার মাস এলপিজির দাম বাড়লো। আজ বুধবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ ঘোষণা দিয়েছে। আজ সন্ধ্যা থেকে এই দাম কার্যকর হবে।

ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১২১ টাকা ৩২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা বেসরকারি এলপিজির মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১১৭ টাকায় ৪৯ পয়সায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া অটোগ্যাসের মূল্য প্রতি লিটার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬ টাকা ৮৪ পয়সা।

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪২১ টাকা নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। আগস্ট মাসের জন্য ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম জুলাই মাসের তুলনায় ১১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগের মাসে এ দাম বাড়ানো হয়েছিল ৩ টাকা। সে সময় ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৩৬৬ টাকা।


বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছেই

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ২ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দুই সেশনে বাড়ার পর গতকাল মঙ্গলবারও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত, ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পর গাজার সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় অস্থির হয়ে উঠেছে তেলের বাজার।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে আগামী ডিসেম্বর মাসের জন্য বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩ সেন্ট বেড়ে ৭১ দশমিক ৮৩ ডলারে উঠেছে। এ ছাড়া নভেম্বর মাসের চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক ডব্লিউটিআইয়ের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১ সেন্ট বেড়ে ৬৮ দশমিক ২৮ ডলারে উঠেছে।

এর আগে, সোমবার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম নভেম্বরের সরবরাহ চুক্তিতে আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার ১২ সেন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাড়ে। প্রতি ব্যারেলের মূল্য পৌঁছায় ৭৩ ডলার ১০ সেন্টে। ডিসেম্বরের সরবরাহ চুক্তিতে ব্রেন্টের দাম বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১ ডলার শূন্য ৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয় ৭২ ডলার ৫৮ সেন্টে। অন্যদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের তুলনায় ৯৩ সেন্ট বা ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়ে; ব্যারেলপ্রতি মূল্য স্থির হয়েছে ৬৯ ডলার ১১ সেন্টে।

এদিকে বিদায়ী সেপ্টেম্বরে ব্রেন্ট ফিউচারের দাম ৯ শতাংশ কমেছে। এ নিয়ে টানা তিন মাস ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমে। ২০২২ সালের নভেম্বরের পর আর কোনো মাসে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এতটা কমেনি। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে- এক বছরের মধ্যে কোনো প্রান্তিকে এটাই ব্রেন্ট ক্রুডের সর্বোচ্চ মূল্যহ্রাস। একইভাবে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম গত মাসে ৭ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ১৬ শতাংশ কমেছে।

এর আগে, গত শুক্রবারও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে গত সপ্তাহজুড়ে তেলের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে অপরিশোধিত ব্রেন্টের দাম কমেছে ৩ শতাংশের মতো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম কমেছে ৫ শতাংশের মতো।


জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ২.৯ শতাংশ বেড়েছে

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩.১৮ বিলিয়ন বা ৩১৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ২.৮৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার।

অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম মাস জুলাইয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২.৯ শতাংশ বেড়ে ৩.৮২ বিলিয়ন হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩.৭১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

ওভেন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৭২ বিলিয়ন ডলারে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘অর্থবছরের প্রথম মাসে ইতিবাচক সূচনা হওয়া ভালো লক্ষণ। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমরা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত।’

‘সাভার ও আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ২০ দিনের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পোশাক খাত সমস্যায় পড়েছে। রপ্তানিকারকদের যেমন আকাশপথে পণ্য পাঠাতে হয়, তেমনি অতিরিক্ত চার্জও বহন করতে হয়’, বলে জানান ব্যবসায়ী নেতা।

আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দিক সম্পর্কে মন্তব্য করতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আসন্ন মৌসুমের কাজের আদেশ নিয়ে খুব টেনশনে আছি। কারণ সাম্প্রতিক শ্রমিকদের অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ক্রেতারা ধীরে ধীরে কাজের আদেশ দিচ্ছেন।’

‘রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচকভাবে ধরে রাখতে সরকারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, শ্রমিক অসন্তোষ চলতে থাকলে ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যেতে পারে। তাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সবাইকে শিল্পের স্বার্থে কাজ করতে হবে।’ যোগ করেন ফজলে শামীম এহসান।

রপ্তানির বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জুলাই মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি মন্থর। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও বেশি প্রবৃদ্ধি দরকার। রপ্তানি মন্দার জন্য দেশীয় কারণের চেয়ে বৈশ্বিক কারণ বেশি দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সেখানে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে আরও খারাপ করেছে। এর ফলে আমাদের পণ্যের চাহিদা কমছে।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি শিল্পের উৎপাদনকে ব্যাহত করেছে। দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে স্বল্প মেয়াদে শিল্প কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, বলে জানান এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ও শ্রমিক অসন্তোষ দূর করার প্রতি জোর দিয়েছেন। অন্যথায়, দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮০.২ মিলিয়ন ডলার। এখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.২ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ২০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ১৬.৫ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৮.৭ শতাংশ বেশি।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় ৪.৫ শতাংশ বেড়ে ৯৮.৪ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের আয় ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫৯ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশেষায়িত টেক্সটাইল সেক্টর ২৬.৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১.৭ শতাংশ।


খেজুর আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিনের দাবি ব্যাংকের

রমজানে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা
ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মুসলমানপ্রধান দেশগুলোতে খেজুরের চাহিদা তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ৯০ শতাংশের বেশি মুসলমানের এই দেশে ১২ মাসই কম-বেশি খেজুরের চাহিদা থাকে। তবে ইফতারে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ এই পণ্যটির চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায় পবিত্র রমজান মাসে। আসন্ন রমজান শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শুরুতেই। এরই মধ্যে পণ্যটি আমদানিতে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে রমজানকে সামনে রেখে পণ্যটি আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তারা। একাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খেজুর আমদানি করতে কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক নগদ শতভাগ এলসি মার্জিন চাচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এতে আসন্ন রমজানে বাজারে খেজুরের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সাধারণত কিছু পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ওই পণ্য দেশে আসার পর বিল পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়, যা এলসি মার্জিন হিসেবে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের একটি অংশ ব্যাংকগুলোর কাছে জমা দিতে হয়। বিগত বছরগুলোতে রমজানের আগে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি সহজীকরণের লক্ষ্যে কিছু পণ্যে সংরক্ষিতব্য নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে খেজুরের চাহিদা বিবেচনায় এ পণ্যটিতে নগদে এলসি মার্জিনে শিথিলতার সুবিধা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে রমজান মাসকে সামনে রেখে খেজুর আমদানিতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অন্যূন ১০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও পণ্যটি আমদানিতে এলসি মার্জিন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে এরই মধ্যে ২০২৫ সালের রমজানের চাহিদা বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা পণ্যটির আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক এলসি খুলে শতভাগ নগদ দাবি করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খেজুর আমদানি করা একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এ বছর রমজান মাস উপলক্ষে খেজুর আমদানি করতে কোনো কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক নগদ ১০০ শতাংশ মার্জিন ছাড়া আমদানি-এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে শতভাগ নগদে কোনোভাবেই জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির জোগান অপর্যাপ্ত থাকবে বলে মনে করছি। এতে আসন্ন রমজানে বাজারে খেজুরের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে পণ্যটির দাম।

অপর এক ব্যবসায়ী গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যান্য বছরের মতো খেজুরের চাহিদা বিবেচনায় পণ্যটির আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ নগদ মার্জিনে এলসি খোলার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা অতীব জরুরি। অন্যথায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ দেশে সিয়াম সাধনার মাসে সর্বসাধারণের জন্য পণ্যটি ক্রয় করা কষ্টকর হতে পারে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে খেজুরসহ মোট আটটি পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত নগদ মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় ওই নির্দেশনায়। এ বছরের মার্চ মাসে রমজান শুরু হয়। তাই পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে রমজানের দুই মাস আগে এলসি মার্জিনে শিথলতার সুযোগ পাওয়া যথাযথ সময়ে হয়নি বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা।

তাদের মতে, রমজানের অন্তত ৫-৬ মাস আগেই এমন ঘোষণা আসা উচিত। কেননা পণ্যটির চাহিদা বিবেচনায় অনেক আগেই আমদানি করে হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখতে হয় তাদের। আগামী রমজান মাসের জন্য এখনই যদি সরকার থেকে সাপোর্ট পাওয়া না যায় তাহলে পণ্যটির সরবরাহ এবং দাম নিয়ন্ত্রণ কঠিন হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

আমদানিকারকরা আরও জানিয়েছেন, দেশে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটাই আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চল থেকে। ২৫ থেকে ৩০ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। সারা বছর খেজুরের যে চাহিদা থাকে, এর চেয়ে তিন থেকে চার গুণ চাহিদা বেড়ে যায় রমজানে। ওই এক মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন খেজুরের দরকার হয়। সেই চাহিদা মেটাতে পাঁচ-ছয় মাস আগে থেকেই খেজুর আমদানি করে হিমাগারে মজুত করতে হয়। তাই এখনই যদি এলসি খুলতে সৃষ্ট সমস্যা দূর করা সম্ভব না হয়, তাহলে আগামী রমজানে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।


banner close