চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর, স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্ক মিলে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা বিগত করবর্ষের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। গত করবর্ষের ৯ মাসে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব হলো- ৯ মাসে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ১ লাখ ৭০২ কোটি ৩৯ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা আয় হয়েছে। তবে এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আয় কিছুটা পিছিয়ে আছে। ৯ মাসে যে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ করবর্ষের ৯ মাসে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণ ছিল ৬৭ হাজার ৩৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চলতি করবর্ষের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ২৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২১ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে আয়কর আহরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। গত করবর্ষের ৯ মাসের ৭১ হাজার ২২৭ কোটি ২২ লাখ টাকার আয়কর রাজস্ব আয় এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও আয়করের মত মূসক আহরণের ক্ষেত্রেও উল্লেখ করার মতো প্রবৃদ্ধি এসেছে। প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত করবর্ষের ৯ মাসে মূসক রাজস্ব আয় ছিল ৮৬ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, চলতি করবর্ষে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।
দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সূচক কমলেও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৭৯ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের ডিএসইএক্স সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৭২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৫ হাজার ৮০৪ পয়েন্ট। এ ছাড়া গত সপ্তাহে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১২৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গত সপ্তাহে প্রায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ২৪১ পয়েন্ট।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৪১৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ৩১১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৮টির দর। এ ছাড়া লেনদেন হয়নি ১৮টির। গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি আজিয়াটা, ইউসিবি ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। আর বস্ত্র খাতের দখলে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ইতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল বিবিধ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জীবন বীমা খাত। এ তিন খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ১, দশমিক ১ ও দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে নেতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল কাগজ, ভ্রমণ ও মিউচুয়াল ফান্ড খাত। এসব খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮, ৫ দশমিক ১ ও ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৬ হাজার ৫২০ পয়েন্ট। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে ৯ হাজার ৮৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৯ হাজার ৯৫৫ পয়েন্ট।
সিএসইতে গত সপ্তাহে ৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ২৭৪ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ২২১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির বাজারদর।
পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবুও খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য। দেশে আলু এবং পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজারমূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে দিয়েছে।
এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনা মোতাবেক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এর একদিন পরে আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আগের মতো ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আলুও আগের মতো ৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ, আলু কিনে এনে মালিবাগের স্থানীয় মুদির দোকানে বিক্রি করেন মোরশেদ আলম নামের এক বিক্রেতা। বাজারে এসবের দাম বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আজও সেই দামই চলছে। পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার তা শুনেছি কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ আমি বেশি দামেই পাইকারি বাজার থেকে কিনে এনেছি। যে পরিমাণ মাল এনেছি এটা আরও ৩/৪ দিন চলবে আমার দোকানে। এটা শেষ হলে ফের মাল আনব, তখন যদি কম দামে পাই তাহলেই কম দামে বিক্রি করব।’
মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস করেন রবিউল রহমান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাজারে এসে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজও কিনেছেন। বাজারে এই দুই পণ্য বাড়তি দাম বিষয়ে তিনি বলেন, আজ অনেক দিন ধরে ১২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। সেই আলু কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুইটি পণ্যের যদি এতটা দাম হয় তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কঠিন হয়ে যায়। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের দাম নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা আলু পেঁয়াজের দাম বিষয়ে বলেন, ‘আজ সকালেই আমি পাইকারি বাজার থেকে আলু পেঁয়াজ কিনে এনেছি। পাল্লা হিসেবে (৫ কেজি) কিনে সব খরচ বাদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ১১০ টাকা। এখন পরিবহন করে নিয়ে আসার পর খুচরা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। একই ভাবে আলুর পাল্লা পড়েছে ৫৫ টাকা এখন আমার দোকানে খুচরা বিক্রি করছি ৬০ টাকায় প্রতি কেজি। আজকে এগুলোর কেনা দাম আগের মতো ছিল, বাজারে যখন কম দামে কিনতে পারবো তখন খুচরা বাজারেও আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারব।’
বেড়েছে চাল, মুরগি ও ডিমের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে চাল, মুরগি ও ডিমের দাম। আগের দামেই বিক্রির হচ্ছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরু চালের দাম তেমন না বাড়লেও কেজিতে প্রায় ২ টাকা বেড়েছে মোটা চালের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। সরু চালের কেজি মিলছে ৭০ টাকার ওপরে। বন্যায় ত্রাণ হিসেবে মোটা চালে বিতরণে চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। আলু ৬০ আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। তবে অন্যান্য সবজির মিলছে গড়ে ৫০ টাকার মধ্যে।
কমেছে গরুর মাংসের দাম
বাজারে কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগেও গরুর মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী হালিম চৌধুরী বলেন, দাম বেশি থাকার কারণে মাংস বিক্রি খুব কম ছিল। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ী দাম কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।
দাম কমেনি ইলিশের
মৌসুমের মাঝামাঝি এসে বাজারে ইলিশের সরবরাহও বেশ বেড়েছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি দাম। ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজির কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায়। কমবেশি ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। আর ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেনা যাচ্ছে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায়। ছোট ইলিশের কেজি ৬০০ টাকা।
দেশে নিত্যপণ্যের বাজার গত কয়েক বছর ধরেই অস্থিতিশীল। এর মধ্যে চাল, পেঁয়াজ, আলু, কাঁচামরিচের দাম সিন্ডিকেট গড়ে বাড়ানোর অভিযোগ উঠছে অহরহ। তবে জুলাই বিপ্লব, আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল অবস্থা, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে বাজার ছিল একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। এ ছাড়াও বন্যার আঘাতেও বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। গুদামভরা পণ্য থাকলেও অজুহাতের পর অজুহাত দিয়ে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট। বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশে আলু ও পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজার মূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে এই শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে, যা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। উপরন্তু দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীটনাশক, আলু ও পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক বিশ্লেষণপূর্বক কর ছাড়ের মাধ্যমে উল্লিখিত পণ্যগুলোর আমদানি সহজ করে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রযোজ্য ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কীটনাশক আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, তুলে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ভ্যাট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে পেঁয়াজ, আলু, সার ও কীটনাশকের মতো নিত্যপণ্যের শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দেন। ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনা অনুসারে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাস্ব বোর্ড এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আরও জানায়, আলু ও পেঁয়াজ অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয়। আমদানি শুল্ক কম থাকলে দেশীয় উৎপাদনের ওপর প্রযোজ্য প্রতিরক্ষণ হ্রাস পায়। তাই কৃষককে আলু ও পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে উল্লিখিত শুল্ক ছাড় চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। সরকার আশা করছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমে ভোক্তাদের স্বস্তি দেবে।
টানা আন্দোলন ও কারখানা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধে নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় ১৬৭ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে এসব কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল বুধবার বিকেলে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে বিজিএমইএ, গার্মেন্ট মালিক, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেন মালিকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আজ থেকে সাভার, আশুলিয়াসহ অন্যান্য এলাকায় পোশাক কারখানা খোলা হবে। বুধবার নিরাপত্তা শঙ্কা ১৬৭টি কারখানা বন্ধ ছিল। যদিও এ আন্দোলনে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বহিরাগতদের হামলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারখানা এলাকায় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ফের গার্মেন্ট চালু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।’ তিনি বলেন, ‘এখন সেনাবাহিনী, গার্মেন্ট পুলিশ গোয়েন্দারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেছেন। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।’
পোশাক কারখানায় যারা ঝামেলা করছেন তারা বহিরাগত জানিয়ে খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা খুবই কম। বহিরাগত কারা হামলা চালাচ্ছে তাদের চেনে না বিজিএমইএ। এদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মাসের শুরুতে কারখানায় ঝামেলা হলেও বেতন দিতে দেরি হবে না।’ ঘটনা সূত্রে জানা জায়, গতকাল সকালে বকেয়া বেতন ও চাকরি স্থায়ীসহ নানা দাবিতে সাভার ও গাজীপুরের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে এই কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়। কারখানা মালিকরা জানিয়েছেন, এসব বিক্ষোভে জড়িতরা শ্রমিক নয়, তারা চাকরিপ্রত্যাশী। সকালে সাভার-আশুলিয়া-ইপিজেড এলাকায় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে, কর্তৃপক্ষ একের পর এক কারখানায় ছুটি দিয়ে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধরা চালু কারখানাগুলোর সামনে গিয়ে বিক্ষোভ ও ইট পাটকেল ছোড়ে। এতে নিরাপত্তা শঙ্কায় ছোট-বড় ৫০টিরও বেশি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গাজীপুরের টঙ্গী, শ্রীপুর, রাজেন্দ্রপুর, ভোগড়া বাইপাস এলাকার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শিল্প পুলিশের আশ্বাসে মহাসড়ক ছেড়ে যান তারা। ছুটি দেওয়া হয় ৭০টি কারখানায়। এসব এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ নিয়োজিত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘প্রতিদিন কারখানায় শ্রমিক ঢুকছে; কিন্তু বহিরাগতরা এসে ঝামেলা করছে। পুলিশ নিজেই আছে অস্থিরতার মধ্যে। আজকের ওসি জানে না কালকে কোথায় বদলি হবে। আর্মির হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই। আবার পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ক্ষমতা থাকলেও তারা বর্তমানে দুর্বল। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে বুধবার রাত থেকে যৌথ অভিযান শুরু হবে।’
উল্লেখ্য, চাকরি এবং নিয়োগে নারী-পুরুষের সমান অধিকারসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরে গতকাল বুধবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। জানা গেছে, সকালে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেন পোশাক শ্রমিকরা। কারখানাগুলোতেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল। তবে হঠাৎ টঙ্গী বিসিক, ভোগরা বাইপাস, বাঘের বাজার ও মাওনা এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা জড়ো হতে শুরু করেন। সেখানে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী ও শিল্পপুলিশের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অনেক শ্রমিক উৎপাদন বন্ধ রেখে অন্য কারখানার সামনে গিয়ে কারখানা বন্ধ করতে ইট-পাটকেল মারতে থাকেন। পরে সেসব কারখানাও ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিকরা বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে নেমে অবরোধ করে রাখেন। সকাল ১০টার দিকে আব্দুল্লাহ্পুর-বাইপাইল সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলেও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। এতে করে সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ি, মুজারমিল, জিরানীবাজারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চাকরিপ্রার্থী ও বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া চক্রবর্তী এলাকার নরবান কমটেক্স কারখানার সামনে শত শত শ্রমিক বিক্ষোভ করে রাস্তা বন্ধ করে দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশের সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
আজ বুধবার বিজিএমইএ, গার্মেন্টস মালিক, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেন মালিকরা।
সভায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে ১৬৭ টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। যদিও এ আন্দোলনে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বহিরাগতদের হামলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারখানা এলাকায় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ফের গার্মেন্টস চালু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।
তিনি বলেন, এখন সেনাবাহিনী, গার্মেন্টস পুলিশ গোয়েন্দারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেছেন। তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই কাল থেকে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।
আগামীকাল সোমবার থেকে চলতি মাস সেপ্টেম্বরের জন্য তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। আজ রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে খেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌদি আরামকো ঘোষিত সেপ্টেম্বর (২০২৪) মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী এই মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সমন্বয় সম্পর্কে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশনা সোমবার বিকেল ৩টায় ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত ৪ আগস্ট ভোক্তা পর্যায়ে আগস্ট মাসের জন্য ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম জুলাই মাসের তুলনায় ১১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগের মাসে এই দাম বাড়ানো হয়েছিল ৩ টাকা। সেসময় ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৩৬৬ টাকা।
তবে গত জুন ও মে মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম যথাক্রমে ৩০ টাকা ও ৪৯ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৩৬৩ টাকা ও ১ হাজার ৩৯৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া গত এপ্রিলেও প্রতিটি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছিল ৪০ টাকা। প্রতিটি ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার ওই মাসে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪৪২ টাকায়। এর আগে টানা ৮ মাস বাড়ানো হয়েছিল এলপিজির দাম।
গত মার্চ মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৮২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৭৪ টাকা ও জানুয়ারিতে ২৯ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এদিকে, গত আগস্ট মাসে এলপিজির পাশাপাশি অটোগ্যাসের দামও বাড়িয়েছিল বিইআরসি। আগস্টে অটোগ্যাসের দাম জুলাইয়ের তুলনায় মূসকসহ ৫১ পয়সা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৬৩ টাকা ২১ পয়সা। আর জুলাইতে অটোগ্যাসের দাম জুনের তুলনায় মূসকসহ ১৭ পয়সা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ টাকা ৭০ পয়সা।
তবে জুন, মে ও এপ্রিলে অটোগ্যাসের দাম কমিয়েছিল সংস্থাটি। জুন, মে ও এপ্রিলে ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার যথাক্রমে ৬২ টাকা ৫৩ পয়সা, ৬৩ টাকা ৯২ পয়সা ও ৬৬ টাকা ২১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এর আগে মার্চ মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ৬৮ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি মাসে মূসকসহ দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল যথাক্রমে ৬৭ টাকা ৬৮ পয়সা ও ৬৫ টাকা ৬৭ পয়সা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ৫ দফা কমেছিল এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম। বিপরীতে বেড়েছে ৭ দফা। গত বছরের জানুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, জুন ও জুলাই মাসে কমেছিল এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম। আর দাম বেড়েছিল ফেব্রুয়ারি, মে, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে।
সংবিধান নতুন করে লেখা হবে না কি সংশোধন হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী ধারাবাহিক বৈঠক শেষে বিষয়টি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ছাত্রদের আহ্বানে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর চার দিনের মাথায় ১২ আগস্ট বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আলোচনার বাইরে রয়ে যায়। গতকাল এমন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের রূপরেখা, নির্বাচনের রূপরেখাসহ নানা বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরে। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সংবিধানের কাঠামোগত সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনাসহ নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
এ বৈঠকে হেফাজতে ইসলাম ও ৬টি ইসলামী দলের নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি না থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাশাপাশি একটা যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারগুলো করে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে বলেছেন।
এ বৈঠক সম্পর্কে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ হয়েছে। সরকারের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের রূপরেখা, নির্বাচন, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কী হবে তা জানতে চেয়েছে। দ্রুতই আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, সংস্কারের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সরকারের মেয়াদ ঠিক হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের প্রস্তাবনা ভিত্তিতেই রূপরেখা দেওয়া হবে। একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা হবে।
গতকাল শনিবার বিকেল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বৈঠকে দলগুলো তাদের প্রস্তাবনা ও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। সংবিধান ইস্যুতেও মতামত দেয় দলগুলো।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পার্টি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না- এমন প্রস্তাব দেয়। তা ছাড়া গণতান্ত্রিক সরকার যেসব সংস্কার করতে পারে না সেইসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দেয় দলটি।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংবিধান সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা, ক্ষমতার ভারসাম্যসহ ২১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে গণফোরাম। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাসহ ৮৩টি প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)।
এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ১২ দফা সুপারিশ করেছে ১২ দলীয় জোট। জোটটির নেতারা বলেন, এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সাহসিকতার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিরাজমান সংকট সমাধানে সময় লাগবে। সরকারকে এই সময় দিতে দেশবাসী ও রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুত আছে। এ সময় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিও জানান নেতারা।
গত ১২ আগস্ট বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ যেসব দল ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছিল, তাদের এবারের বৈঠকে ডাকা হয়নি। আমন্ত্রণ পায়নি গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি, জাতীয়বাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট ও বাংলাদেশ জাসদ ডাক পেয়েছে।
গতকাল বিকেল ৩টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় প্রথমে খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশসহ ৭টি ইসলামী দলের প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। খেলাফত মজলিশের নেতৃত্ব দেন দলটির আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ও মুনতাসীর আলী। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নেতৃত্ব দেন মাওলানা ইউসুফ আশরাফ। প্রতিনিধিদলে থাকবেন মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা জালাল উদ্দিন। পরে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) পক্ষে নেতৃত্ব দেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ। তার প্রতিনিধিদলে ছিলেন ড. রেদোয়ান আহমেদ, নেয়ামূল বশির, নুরুল আলম তালুকদার ও আওরঙ্গজেব বেলাল।
এরপর বিকেল ৫টায় মতবিনিময় সভায় জাতীয়বাদী সমমনা জোট থেকে নেতৃত্বে দেন এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তার প্রতিনিধিদলে থাকবেন জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের এ টি এম গোলাম মওলা চৌধুরী, এনডিপির আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকি, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ জাসদ ও ১২ দলীয় জোটের বৈঠক হয়। ১২ দলীয় জোটের নেতৃত্বে দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। তার প্রতিনিধিদলে ছিলেন জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, লেবার পার্টির একাংশের ফারুক রহমান, জাগপা একাংশের তাসমিয়া প্রধান, কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের শাহ আহমেদ বাদল। বাংলাদেশ জাসদের নেতৃত্ব দেন শরীফ নুরুল আম্বিয়া। তার প্রতিনিধিদলে থাকবেন নাজমুল হক প্রধান, মুশতাক হোসেন, আবদুল কাদের হাওলাদার, কাজী সদরুল হক।
সন্ধ্যা ৭টায় গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির বৈঠক করে। জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তার প্রতিনিধিদলে ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী, মজিবুর রহমান চুন্নু, মাশরুর মওলা ও সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। আর গণফোরামের নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন। তার প্রতিনিধিদলে থাকবেন মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, এস এম আলতাফ হোসেন, মিজানুর রহমান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিব উদ্দিন আবদুল কাদের ও মোশতাক আহমেদ।
এদিকে বৈঠক থেকে বের হয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু অবহিত করেন। এ সময় ইসলামী দলগুলোর একজন মুখপাত্র বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে অযৌক্তিক সময় নষ্ট করবে না অন্তর্বর্তী সরকার।
এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আসন্ন দুর্গাপূজায় কেউ যাতে নৈরাজ্য করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ইসলামী দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
নেতারা জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানানো হয়। তারা আরও জানান, সংলাপে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য নিশ্চিত করা, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ সাংবিধানিক বেশ কিছু সংস্কারের দাবিও উপস্থাপন করেছেন নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৭ প্রস্তাব বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের
বিকেল ৩টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের পক্ষ থেকে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সাত দফা উপস্থাপন করেন।
এগুলো হচ্ছে:
১. প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
ক. নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কার: জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগকারীদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। সে জন্য আসনভিত্তিক বিজয়ী সংসদ সদস্যদের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।
খ. নির্বাচনবিধি-সংক্রান্ত সংস্কার: প্রার্থীদের নিজস্ব প্রচারণার পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করা। যোগ্য সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
২. সাংবিধানিক সংস্কার:
ক. বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একচ্ছত্র ক্ষমতা স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়। তাই এ ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।
খ. দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা বন্ধ করা।
গ. প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের বিধান করা।
ঘ. সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা।
৩. বিচার ব্যবস্থা: বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা। বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখার স্বার্থে বিচারপতি নিয়োগ ও বিয়োগের জন্য জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।
৪. শিক্ষা ব্যবস্থা: শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা সংযোজন করা।
৫. পুলিশ ও প্রশাসন: পুলিশ ও প্রশাসনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের ব্যবহারের পথ বন্ধ করা।
৬.কোরআন সুন্নাহবিরোধী আইন/নীতি প্রণয়ন না করা।
৭. হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ও আলেম ওলামা এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে দায়ের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা।
অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার মৌখিক সম্মতি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার সহায়তার অনুরোধে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বর্তমানে বকেয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি বিল পরিশোধের জন্য এ দুই বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেতে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
এখন পর্যন্ত মূলত প্রকল্প ঋণের অর্থায়নকারী জাপানও বাজেট সহায়তার জন্য সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে ২.৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার জন্য উইশ লিস্ট প্রস্তুত করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ইতোমধ্যেই সম্মত হওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়াও সরকার সংস্থাটি থেকে আরও তিন বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ (এআইআইবি) অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকেও ঋণ চাইছে বাংলাদেশ।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাইসারের ঢাকা সফরে মৌখিকভাবে সম্মতি দেওয়া ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং নতুন অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভার অন্য উপদেষ্টারা দেশের জরুরি অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এসব প্রতিনিধিরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বিদেশি বকেয়া মেটাতে এবং রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে বিদেশি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠছেন। সরকারের প্রস্তাবে সংস্থাগুলোও বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রত্যাশিত বাজেট সহায়তা পাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে সরকারি আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধ করার পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা হবে, বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি বিল নিয়ে বিদেশি সরবরাহকারীদের চাপে রয়েছে জ্বালানি বিভাগ। বিলম্বের কারণে ভারত কয়েকবার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ২১ আগস্ট বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেকের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি খাতে এখনো ২.২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া আছে। আমরা এটি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুরোধ করেছি।’
এর আগে ১৩ আগস্ট অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদও আবদুলায়ে সেকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেখানেও বাজেট সমর্থন নিয়েও আলোচনা হয়েছিল।
বৈঠকের পর সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য আমি বিশ্বব্যাংকের কাছে ব্যাপক সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাদের সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছে।’
১৯ আগস্ট ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির সঙ্গে সাক্ষাতের পর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এতদিন পর্যন্ত জাপান মূলত প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে। আমরা এখন তাদের কাছে বাজেট সমর্থন চেয়েছি এবং তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।’
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন চিফ ক্রিস পাপাজর্জিও এবং আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের সঙ্গে জুমে বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেও আইএমএফ থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির অধীনে ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে ২.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি।
পাকিস্তান সম্প্রতি আইএমএফ থেকে সাত বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্রোগ্রাম পেয়েছে। তাই বাংলাদেশও সংস্থাটি থেকে অতিরিক্ত তিন বিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
বিবিসির সঙ্গে সাম্প্রতিক এক আলাপচারিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আইএমএফ থেকে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর আগামী অক্টোবরে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় আইএমএফের সঙ্গে এ সম্ভাব্য নতুন ঋণ নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছেন। তার আগে অক্টোবরে আইএমএফের একটি পর্যালোচনা মিশনের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে, সেখানে বিষয়টি আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দুই সপ্তাহ দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হলেও তৃতীয় সপ্তাহে এসে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন পৌনে ৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১০০ পয়েন্টের বেশি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দুই সপ্তাহ বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে দরপতনের পাল্লা ভারী হয়। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম লেখায়, তার দ্বিগুণের বেশির স্থান হয় দাম কমার তালিকায়। একই অবস্থা দেখা যায় দ্বিতীয় সপ্তাহেও। অবশ্য প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে দরপতনের মাত্রা বড় হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে, তার ১১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয় দাম কমার তালিকায়।
তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললো। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, তার তিনগুণের বেশি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। ফলে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে দেশে কারফিউ জারি করে তিনদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট থেকে আবার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেওয়া হয়। ফলে শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু হয়। হাসিনা সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়। চারদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট।
হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এরই মধ্যে তিন সপ্তাহ শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৯৩টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টির। এ ছাড়া ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সপ্তাহে ১০৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ২৭৮টির। এছাড়া ১৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে মাত্র ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয় দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমে ৩৫৭টির, ৫টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। দাম কমার তুলনায় দাম বাড়ার তালিকায় তিনগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ১০৪ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২০৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ২০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ২২ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহেও বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচক বেড়েছে ৩৪ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৮৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬২৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৬৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার। প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রেনেটা, ব্র্যাক ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা এবং যমুনা ব্যাংক।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ মার্চ থেকে শুরু করেছে সরকার। সে হিসেবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হচ্ছে। এবার ষষ্ঠ দফায় সেপ্টেম্বরের জন্য ঘোষিত দামে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমেছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। পেট্রল ও অকটেনের দাম কমেছে ৬ টাকা। জ্বালানি তেলের নতুন দাম ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর আগে আগস্ট মাসে জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত ছিল।
জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে আজ শনিবার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা। কেরোসিনের দাম ১০৬ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা।
জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের সূত্র নির্ধারণ করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, দেশে ব্যবহৃত অকটেন ও পেট্রল ব্যক্তিগত যানবাহনে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিলাসদ্রব্য (লাক্সারি আইটেম) হিসেবে সব সময় ডিজেলের চেয়ে অকটেন ও পেট্রলের দাম বেশি রাখা হয়।
জ্বালানি তেলের মধ্যে উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করে বিপিসি। আর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
দেশে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) সুবাতাস লেগেছে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত এ আয়ের প্রবাহে আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগস্ট মাসের প্রথম ২৮ দিনে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে জুলাই মাসে গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রবাসী আয় পাঠানো বন্ধ রাখার ঘোষণায় কমেছিল রেমিট্যান্সের প্রবাহ। সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবাসীরা সরকার পতন ছাড়া প্রবাসী আয় দেশে পাঠাবেন বলেও বিভিন্ন গ্রুপ পোস্টে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে আওয়ামী সরকার পতনের পরে প্রবাসী আয় এখন ক্রমান্বয়েই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চলতি আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত দেশে ২০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। যা দেশি মুদ্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের একই সময়ে ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। সেই হিসাবে চলতি বছর একই সময়ে ৬৪ কোটি ডলার বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।
এদিকে গত জুলাই মাসে ১৯১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
এর আগে সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। তবে গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে গত ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর আগস্ট মাসের শুরুতে দেশে সহিংসতা দেখা দেয়। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন। আরও তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
এদিকে গত জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জুনে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল, তা ছিল একক মাসের হিসাবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
চলতি সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের মাছ ও মুরগির দাম বেড়েছে। আজ শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগিও কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা এবং সাদা লেয়ার কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২১০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৯০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে, সপ্তাহ ব্যবধানে স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুনের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকায়, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা ও শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং গাজর ১৬০ টাকা। লেবুর হালি ১৫ থেকে ৩০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৮০ টাকা কমে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা ও ডাটা শাকের আঁটি ২০ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা দরে এবং আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে সোনার দাম। এখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা কিনতে গুনতে হচ্ছে এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪২ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিটি মুদ্রার দাম ১০ হাজার টাকা করে বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এতদিন ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বাড়ার কারণে এ দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ দাম আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ১৯২০-২০২০’ এবং ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ১৯৭১-২০২১’ শীর্ষক স্মারক স্বর্ণ মুদ্রার দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ২২ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা ১০ গ্রাম ওজনের ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ১৯২০-২০২০’ এবং ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ১৯৭১-২০২১’ শীর্ষক স্মারক স্বর্ণ মুদ্রা (বাক্সসহ) প্রতিটির বিক্রয়মূল্য এক লাখ ১৫ হাজার হাজার টাকায় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে, ১৬ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, যা ১৮ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছিল। এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে ১১টি স্মারক রৌপ্যমুদ্রা (ফাইন সিলভার) রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ‘রজতজয়ন্তী-১৯৯৬’, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রজতজয়ন্তী-১৯৯৬’, ‘বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন-১৯৯৮’, ‘বাংলাদেশের ৪০তম বিজয়বার্ষিকী’, ‘বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বৎসর’, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী-২০১১’, ‘আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ-বাংলাদেশ ২০১১’, ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শতবর্ষ ১৯১৩-২০১৩’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ’, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ১৯৭১-২০২১’ এবং ‘বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি’র মুদ্রা রয়েছে। এসব রূপার স্মারক মুদ্রার ওজন ২০ গ্রাম থেকে ৩১ দশমিক ৪৭ গ্রাম। এসব স্মারক রৌপ্য মুদ্রার দাম ছয় হাজার টাকা।
এদিকে ২৫ আগস্ট সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস), যা ২৬ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। ওই মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪২ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ২২ হাজার ১২২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক লাখ চার হাজার ৬৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা ৮৬ হাজার ৫৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।