বাজারে এখনো চড়া মাছের দাম। অধিকাংশ মাছের দাম তেমন একটা কমেনি। আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বিক্রেতাদের দাবি, গরমের কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে, বাজারে নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে বরাবরের মতোই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ মাছ। এর মধ্যে রুই ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতলা ৩২০ টাকা, কালবাউশ ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাবদা ৫৪০ টাকা ও ইলিশ মাছ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারও রয়েছে গত সপ্তাহের মতোই। বাজারে প্রতি পিস ফুলকপির দাম ৬০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধা কপির দাম ৬০ টাকা ও প্রতি পিস লাউয়ের দাম ৪০ টাকা। এ ছাড়া, প্রতি কেজি গাজর ৭০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা ও পটল ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘সরবরাহ কমে যাওয়ার জিনিসপত্রের দাম একটু বাড়তি। গরম কমলে সামনে দাম কিছুটা কমতে পারে।’
সবজির এমন দামে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। একজন চাকরিজীবী বলেন, ‘আমাদের স্বল্প বেতনে প্রতিদিন মাছ বা মাংস খাওয়া যায় না। কিন্তু সবজির দামও যদি এমন বাড়তি যায়, তাহলে এটা খাওয়াও কমিয়ে দিতে হবে।’
বাজারে মুরগির মাংসের দামও আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়, লেয়ার ৩৪০ টাকায় ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
রমজান সামনে রেখে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, মটর ডাল ও খেজুরের আমদানি বেড়েছে। যেহেতু এসব পণ্যের চাহিদা রমজানে বেশি থাকে তাই বেশি পরিমাণে আমদানি করতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে খঋণপত্র (এলসি) খোলা অনেকটাই বেড়েছে বলে জানানা সংশ্লিষ্টরা।
আমদানির তথ্য বলছে, এ সময় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সয়াবিন তেল আমদানি ৩৬ শতাংশ, চিনি ১১ শতাংশ, মসুর ডাল ৮৭ শতাংশ, ছোলা ২৭ শতাংশ, মটর ডাল ২৯৪ শতাংশ ও খেজুরের আমদানি ২৩১ শতাংশ বেড়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রমজান মাস শুরু হতে পারে।
রমজানে তেল ও চিনির চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। তাই শীর্ষ গ্রুপগুলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এ দুই মাসেই তেল ও চিনির এলসি খোলাও বাড়িয়েছে। তাছাড়া আগে থেকেই রমজানের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য প্রচুর পরিমাণে ত্রয় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধারা নভেম্বর-ডিসেম্বরেও থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ পণ্য আগে আনা হলেও অবশিষ্ট যা বাকি রয়েছে, তা রোজা শুরু হওয়ার এক মাস আগপর্যন্ত আসতে থাকবে। তবে সেপ্টেম্বরেই রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা হয়েছে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মোট ৬.২৯ বিলিয়ন ডলার ও অক্টোবরে ৫.৬৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৫ টন সয়াবিন তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪ টন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৭২ টনের চিনি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪৬ টন। অন্যান্য নিত্যপণ্যের আমদানিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৫০ হাজার ৩৫৫ টনের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৬,৯১২ টন। ছোলার এলসি ৪২ হাজার ৮৯১ টন থেকে বেড়ে ৫৪ হাজার ৫১৬ টনে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর এ দুই মাসে ১০ হাজার ১৬৫ টন খেজুরের এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৬৩ টন। চলতি বছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১০ টন মটর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪১ হাজার ৮১৫ টন।
আমদানিকারকরা বলেন, ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট না থাকায় এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে এক ধরনের ডলার সংকট দেখা দেয়। ফলে আমদানি সীমিত হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই সমস্যা এখন সমাধান হয়েছে। তাছাড়া এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন রাখারও বাধ্যবাধকতা নেই। রমজানে ভোগ্য পণ্য আমদানি নির্বিঘ্ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসি মার্জিনে ছাড় দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
শনিবার দুপুরে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুবই চমৎকার। বাণিজ্য বৃদ্ধি দুদেশের বিদ্যমান সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ভুটানের সঙ্গে একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে উল্লেখ করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী।
কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ভুটানের জন্য বরাদ্দ করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেরিং তোবগে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরইমধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভুটান সরকার বায়োডাইভারসিটি নগর গেলেফু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত এই নগরটি ভুটানের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত ও টেকসই অবকাঠামো তৈরি করা হবে। গেলেফু নগর নির্মাণে প্রচুর নির্মাণ উপকরণ প্রয়োজন হবে উল্লেখ করে তিনি এ সময় নির্মাণ উপকরণগুলো বাংলাদেশ থেকে আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতে ভুটান সরকারের আগ্রহের কথা জানান।
বাংলাদেশি পর্যটকদের ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পর্যটকদের জন্য যেখানে ভুটান সরকার প্রতিরাত অবস্থানের জন্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ) একশ ডলার নির্ধারণ করেছে সেখানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটকদের জন্য তা মাত্র পনের ডলার বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় তিনি এ সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশিদের ভুটান ভ্রমণে আগ্রহী করতে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভুটানের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য বাড়ানোর মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো মজবুত ভিত্তি পাবে।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন বাংলাদেশ-ভুটান সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এ সময় তিনি দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও বেশি বাণিজ্য সফর ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের ঔষধ, সিরামিক পণ্য, তৈরি পোশাক, নির্মাণ উপকরণ তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য আকার বৃদ্ধির সুযোগ নেওয়ার জন্য ভুটান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে ভুটানের ফরেন অ্যাফেয়ার্স ও এক্সটার্নাল ট্রেড মিনিস্টার ডি এন ধুনগায়েল, ইন্ডাস্ট্রি, কমার্স অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টার লায়েন পো নামগায়েল দর্জি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এর আগে শেরিং তোবগে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শনিবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান।
সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ড্রুক এয়ারের একটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (এইচএসআইএ) তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
বিমা আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে যে ধারা ও উপধারা সংযোজন করা হয়েছে- সেগুলোকে পরিপালন করে বিমা শিল্প নিয়ন্ত্রণে দরকার দক্ষ ও চৌকস কর্তৃপক্ষ। এ কারণে সবার আগে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সংস্কার দরকার বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা। বিমা খাতের উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বিমা আইন-২০১০ সংশোধনী ও বিমা খাত সংস্কারের বিষয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিমা বিষয়ক বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএর সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। আলোচনায় অংশ নেন বিআইপিডির মহাসচিব কাজী মো. মোরতুজা আলী ও অর্থকাগজ পত্রিকার সম্পাদক প্রণব মজুমদার। মতবিনিময় সভার আয়োজক ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডির সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু এতে সভাপতিত্ব করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিমা খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ। তারা বিমা আইন ২০১০-এর সংশোধনী ছাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। লাইফ বিমা খাতের যেসব কোম্পানি তহবিল তছরুপ হয়েছে তা উদ্ধার, গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ, তহবিল তছরুপে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নন-লাইফ বিমা খাতেও অবৈধ কমিশন বন্ধ ও দক্ষ জনবল তৈরিতেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
বক্তারা আরও বলেন, বিমা আইন ২০১০ প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এর মধ্যেই কি কারণে সংশোধনীর প্রয়োজন হলো- সেটিও স্পষ্ট নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হয় ২০১০ সালে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো চলছে প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে। যাদের বেশিরভাগেরই বিমা বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বিমা আইন-২০১০ এর যথাযথ প্রয়োগ হয়েছে কি না- আইন সংশোধনের আগে সে বিষয়টি আরও ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধে বিমা আইন সংশোধনীর পর্যালোচনায় সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, বিমা আইন-২০১০-এ ১৬০টি ধারা আছে এবং প্রতিটি ধারায় কম-বেশি একাধিক উপধারা আছে। আইডিআরএ কর্তৃক আনা সংশোধনী প্রস্তাবে মূল ১৬০টি ধারার মধ্যে ৯৯টি মূল ধারা অপরিবর্তিত রেখেছে। কিন্তু সেগুলোর উপধারাগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকি ৬১টি ধারার উপধারাসহ তাদের পরির্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ১৬০টি ধারার মধ্যে কয়েকটি বিলুপ্ত বা বাতিলের প্রস্তাব করেছে। অধিকন্তু ৬৪ নতুন ধারা, উপধারাসহ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে সচিবালয় থেকে লিয়েন করে উপসচিব, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লিয়েনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের দায়িত্ব পালন করাচ্ছে, যেকোন সময় তারা বদলি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএসইসির মতো করে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হয়নি। যদিও এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের বয়স ১৫ বছর হয়েছে।
আইডিআরএর এই সদস্য বলেন, বিমা আইনের আনা সংশোধনী প্রস্তাবে যে ধারা ও উপধারার সংযোজন করা হয়েছে- সেগুলোকে পরিপালন করে বিমা শিল্প নিয়ন্ত্রণে যে দক্ষ ও চৌকস কর্তৃপক্ষ হওয়া দরকার, সে জন্য আইডিআরএর সংস্কার সবার আগে দরকার। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুধু যে বিমা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ বা কন্ট্রোল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে তা কিন্তু নয়। যেহেতু বিমা খাত অনুন্নত এবং অবহেলিত, জনগণ বিমা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বিমার জ্ঞান নেই- তাই এই শিল্পের বিকাশে নিয়ন্ত্রণের পাশাপশি উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে বিমা উন্নয়নে কোনো ধরণের প্রস্তাব করা হয়নি।
তিনি বলেন, যে দেশের বিমা শিল্প যত উন্নত সে দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ। সেহেতু বিমা শিল্পকে উন্নত করতে হবে। বিমার সুফল প্রতিটি নাগরিক যাতে পেতে পারে সে জন্য বিমাকে সর্বজনীন করতে হবে এবং এটাকে রিটেইল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এই কর্মকাণ্ডে বিমাকারীর যে ভূমিকা আছে, একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষেরও ভূমিকা থাকতে হবে। আইন প্রণীত হতে হবে জনবান্ধব।
বাংলাদেশে চীনা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অধীনে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা আগামী দশকে নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেখানে শিল্প খাতের বৈচিত্র্য, উৎপাদন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারকে চীনে আরও বিস্তৃত করা অগ্রাধিকার পাবে।
চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)-এর সভাপতি হান কুন বলেন, বিআরআইর পরবর্তী ধাপ টেকসই কার্যক্রম, যৌথ অর্থায়ন এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ বিআরআই শুধু চীন-অর্থায়িত উদ্যোগ নয়, বরং এটি একটি যৌথ বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হান বলেন, বিআরআই নিয়ে এখনও ভুল ধারণা রয়েছে, বিশেষ করে একটা ধারণা যে, সব বড় প্রকল্প চীন এককভাবে অর্থায়ন করে। তিনি বলেন, ‘এটি ভুল ধারণা। বিআরআই একটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কাঠামো। এটি একমুখী উদ্যোগ নয়, যেখানে শুধু চীন ব্যয় করে, বরং এটি পারস্পরিক সুবিধাভিত্তিক উদ্যোগ। যেখানে উভয় সরকার, বেসরকারি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা জড়িত।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়েছে, ফলে একক কোনো দেশের পক্ষে সব প্রকল্পে অর্থায়ন করা বাস্তবসম্মত নয়।
হান বলেন, ‘বর্তমানে চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী হলেও সকল দেশের সব প্রকল্পে অর্থায়ন করা সম্ভব নয়। টেকসইতার জন্য বিনিয়োগ ভাগাভাগি হতে হবে, সুবিধা ভাগাভাগি হতে হবে এবং প্রকল্প নির্বাচন বাস্তবসম্মত হতে হবে।’
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালে বিআরআই-এ যোগ দেয়। এরপর থেকে সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টানেল এবং সড়ক অবকাঠামোসহ বড় প্রকল্পগুলো বিভিন্ন ধরনের চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রেয়াতমূলক ঋণ, বাণিজ্যিক ঋণ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ।
হান কুন বলেন, ‘সহযোগিতা শুধু নির্মাণ ও চুক্তিভিত্তিক কাজে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এতে শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক মডেলও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। চীনের অর্থনীতিতে সাংস্কৃতিক শিল্প -যেমন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন সিরিজ, মিডিয়া বিনিময় ইতোমধ্যেই বড় ভূমিকা পালন করছে। এগুলো বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে।’
হান বলেন, ‘চীনের নতুন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে এবং উভয় পক্ষ কার্যকরভাবে সহযোগিতা করলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। সিইএবির ভূমিকা হলো দুদেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা এবং আরও বহুমাত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।’
আগামী দশকের বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতায় শিল্প বৈচিত্র্য, উৎপাদন প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকা সীমিত হলেও সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে-যেমন চীনের বাজারে বাংলাদেশের আম প্রবেশের অনুমোদন।
তিনি বলেন, ‘আগামী বছর কাঁঠালসহ আরও কিছু পণ্য অনুমোদন পেতে পারে। তবে আমাদের আরও রপ্তানিযোগ্য পণ্য চিহ্নিত করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল এবং পানিসম্পদ ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থার মতো অবকাঠামো সহযোগিতা ধীরে ধীরে আরও আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হবে।
বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিআরআই সহযোগিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে হান বলেন, প্ল্যাটফর্মটি ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুফল দিয়েছে এবং উভয় দেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরও বিকশিত হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীন বিআরআই সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হতে থাকবে এবং আরও কার্যকর হবে। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় খাতের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।’
বিআরআই-এর পরবর্তী ধাপকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন,‘বিআরআই কেবল চীন অন্যদের সহায়তা করছে তা-নয়, এটি যৌথ ও টেকসই উন্নয়ন গড়ে তোলার কাঠামো, যেখানে উভয় দেশই উপকৃত হয়।’
সরকারি পর্যায়ের (জি-টু-জি) প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দুদেশের অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় বড় প্রকল্পগুলোতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। তিনি বলেন, ‘একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাংলাদেশে অনুমোদন পায়, এরপর তা চীনে যায়; চীন থেকে ফিরে আবার বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরের অনুমোদন নিতে হয়। এ কারণে জি-টু-জি প্রকল্পের সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়।’
তিনি প্রস্তাব দেন, সময়সীমা বদ্ধ কাজের প্রক্রিয়া বা সেবা আবেদনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা উচিত। এতে দক্ষতা দ্বিগুণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জাহাজ রপ্তানিতে আবার গতি ফিরেছে। চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড সংযুক্ত আরব আমিরাতে একসঙ্গে তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট জাহাজ রপ্তানি করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনটি জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় জাহাজ নির্মাণ কারখানাটির সামনে কর্ণফুলী নদীর তীরে ‘মায়ায়’আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই তিনটি জাহাজ হস্তান্তর করা হয়। জাহাজ তিনটির নাম মায়া, এমি ও মুনা। তিনটি জাহাজই ল্যান্ডিং ক্রাফট। তিনটিরই দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার, প্রস্থ ১৬ মিটার এবং ড্রাফট ৩ মিটার। আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি বুরো ভেরিতাসের মানদণ্ড অনুযায়ী নির্মিত এবং ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। প্রায় ৭০০ বর্গমিটার ক্লিয়ার ডেক স্পেস থাকায় ভারি যন্ত্রপাতি ও বাল্ক কার্গো পরিবহনে উপযোগী।
জাহাজগুলোতে রয়েছে দুটি ইয়ানমার মূল ইঞ্জিন, ইলেকট্রো-হাইড্রোলিক র্যাম্প উইঞ্চ, ২৪ মিলিমিটার স্টিল ওয়্যার রোপ, উন্নত অ্যাঙ্করিং ও হাইড্রোলিক স্টিয়ারিং ব্যবস্থা। নেভিগেশনের জন্য ইনস্টল করা হয়েছে সিমরাড এস৩০০৯ ইকো সাউন্ডার, ফুরুনো জিপি-৩৯ জিপিএস, নেভিট্রন এনটি-৮৮৮৬ অটোপাইলট, রাডার ও আন্তর্জাতিক মানের কমিউনিকেশন সরঞ্জাম। এ নিয়ে চলতি বছর ছয়টি জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি করছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। বছরের শুরুতে ‘রায়ান’নামে একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং জুলাই মাসে ‘খালিদ’ ও ‘ঘায়া’ নামে দুটি টাগবোট রপ্তানি করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর এবার ৩৯তম জাহাজ রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়েস্টার্ন মেরিন সূত্র জানায়, মারওয়ানের সঙ্গে করা চুক্তিতে মোট আটটি জাহাজ রয়েছে- দুটি টাগবোট, চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং দুটি অয়েল ট্যাংকার। এর মধ্যে চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ও দুটি টাগবোট চলতি বছরই রফতানি করা হচ্ছে। বাকি দুটি অয়েল ট্যাংকার ২০২৬ সালের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। জাহাজ নির্মাণযাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১১টি দেশে বিভিন্ন ধরনের ৩৬টি জাহাজ রপ্তানি করেছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। যার বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মারওয়ান শিপিংয়ের কাছে প্রথম জাহাজ রপ্তানি করা হয় ২০১৭ সালে।
জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আল হমোদি বলেন, দুই দেশের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করবে। আশা করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও জাহাজ আরব আমিরাতে রপ্তানি হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক আবদুর রহিম খান ও ওয়েস্টার্ন মেরিনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েস্টার্ন মেরিনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, জাহাজ নির্মাণ একটি শ্রমঘন ও উচ্চ প্রযুক্তির ভারি শিল্প। জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা সম্ভব।
ওয়েস্টার্ন মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, দেশে এই শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বরাদ্দ। পুঁজি পেলে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং দেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে জাহাজনির্মাণ শিল্প খাত।
গ্রাহকের সব সেবা অনলাইনে দেওয়ার লক্ষ্যে ই-সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করল বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এখন থেকে বিএসটিআইয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেওয়ার সহজীকরণের জন্য এ সফটওয়্যারের উদ্বোধন করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব (অ. দা.) নুরুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সফটওয়্যারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক ফেরদৌস আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিটিএফ প্রকল্পের ডেপুটি চিফ ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, অরেঞ্জ বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল কবির, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রকল্পের আর্থিক ও অরেঞ্জ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
এ ই-সার্ভিস সিস্টেমের মাধ্যমে একজন সেবাগ্রহীতা পণ্যের মানসনদ (সিএম লাইসেন্স), ছাড়পত্র, হালাল সার্টিফিকেট, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস সার্টিফিকেট, মেট্রোলজি লাইসেন্স, পণ্যের মোড়কজাত সনদ, পণ্য পরীক্ষণ প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মান (বিডিএস) নিতে পারবেন।
এই সিস্টেম ব্যবহার করে একজন সেবাগ্রহীতা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে আবেদন দাখিল, পরিদর্শন নোটিশ, টেস্ট ফি দেওয়া, অ্যাপ্লিকেশন ট্যাকিং করতে পারবেন একই সঙ্গে বিএসটিআই কর্মকর্তারা আবেদনপত্র যাচাই, পরিদর্শন প্রতিবেদন স্যাম্পল কালেকশন নোটিফিকেশন, টেস্ট রিপোর্ট, লাইসেন্সের প্রস্তাব ও সর্বোপরি লাইসেন্স ফি গ্রহণ সাপেক্ষে লাইসেন্স দিতে পারবেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান সম্প্রতি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার সিএসই’র বর্তমান ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিত তুলে ধরেন। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে কমোডিটি প্ল্যাটফর্ম চালুকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ কমোডিটি ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে ক্রুড পাম অয়েল (অপরিশোধিত পাম তেল) আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সিএসই কমোডিটি প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যতে ক্রুড পাম অয়েলের ফিউচারস চালু করার আশা করছে।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট বিশেষ করে কমোডিটি মার্কেটের ডেভেলপমেন্টের জন্য সহযোগিতা প্রদান, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যের আদান প্রদান, ব্যবসায়িক উন্নয়নে কাজ করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় মালয়েশিয়া হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হাজওয়ান বিন হাসনল, সিএসই পরিচালক মোহাম্মদ আখতার পারভেজ, মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম, চিফ রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, সিএফএ, জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মনিরুল হক এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশগামী সব রুটের এয়ার টিকিট এখন থেকে আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহার করে কেনা যাবে। বুধবার এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত করা এবং যাত্রীদের সহজ, ঝামেলাহীন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে আন্তর্জাতিক কার্ড শুধু বিদেশে ব্যয়ের জন্য ব্যবহার করা যেত। ফলে অনেক যাত্রী দেশে বসে সাশ্রয়ী দামে টিকিট কিনতে সমস্যায় পড়তেন।
নতুন নীতিমালার ফলে বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি নাগরিকরা ঢাকা-সিঙ্গাপুর, ঢাকা-দুবাইসহ সব আন্তর্জাতিক রুটের টিকিট অনায়াসে আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। টিকিট বিক্রির অর্থ অবশ্যই অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যেন বৈদেশিক মুদ্রা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাহিত হয়।
এছাড়া ভ্রমণ বরাদ্দের আওতায় ইস্যুকৃত আন্তর্জাতিক কার্ডে টিকিট কেনায় ব্যবহৃত অর্থ পুনরায় রিফিল করা যাবে—তবে সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন এডি ব্যাংক নিশ্চিত করবে যে টিকিট বিক্রির পুরো অর্থ দেশে জমা হয়েছে।
দেশে কার্যরত বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোও তাদের টিকিট বিক্রির বিপরীতে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা এডি ব্যাংকে পরিচালিত হিসেবেই জমা করবে। ব্যয় বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ তারা বৈধভাবে প্যারেন্ট অফিসে পাঠাতে পারবে।
শিল্প-সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল টিকিটিং ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। একই সঙ্গে দেশি ও বিদেশি টিকিট মূল্যের বৈষম্য কমাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনকে আরও স্বচ্ছ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করবে।
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে দেশের মোবাইল বাজারে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ। সংগঠনের দাবি, দেশের মোট ব্যবসায়ীর ৬০–৭০ শতাংশকে কার্যত প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে একটি চক্র।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চান না তারা। এক বছর নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন সংগঠনটির নেতারা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিজনেস ফোরামের সভাপতি আরিফুর রহমান, শাহ আলম বোখারীসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে প্রেস কনফারেন্স ভণ্ডুল করতে বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক পিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বলেন, মঙ্গলবার রাত ৩টায় শুধু এ সংবাদ সম্মেলন ঠেকানোর উদ্দেশ্যে তাকে আটক করা হয়। তাদের দাবি, কিছু ব্র্যান্ড ও বাজারনিয়ন্ত্রক স্বার্থগোষ্ঠী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় সেই সিন্ডিকেটই আমাদের সাধারণ সম্পাদককে টার্গেট করেছে। মোবাইল ব্যবসায়ীরা এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চান না, বরং এক বছরের সময় নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করার দাবি জানান।
আরিফুর রহমান বলেন, ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী বৈধভাবে আনা মোবাইল সেট বাজারে বিক্রির সুযোগ সীমিত হলে লাখো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এনইআইআর সিস্টেম চালুর ফলে সম্ভাব্য ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি মোবাইলের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দিনমজুর, রিকশাচালক, দর্জি, নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, গ্রে মার্কেটে কম দামে ভালো কনফিগারেশনের ফোন পাওয়ায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, এআইনির্ভর ভবিষ্যতের যুগে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেলে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। মাত্র ১৮ জনের লাইসেন্সের মাধ্যমে পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংগঠনের অভিযোগ, দেশের মোবাইল বাজার বর্তমানে মাত্র ১৮ জন লাইসেন্সধারীর হাতে কেন্দ্রীভূত। তাদের দাবি, ২০ কোটি মানুষের দেশে মোবাইল ব্যবসার লাইসেন্স এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তির হাতে থাকা অযৌক্তিক। বাজারের ভারসাম্য ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে লাইসেন্স সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজারে উন্নীত করতে হবে।
এসময় হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সিন্ডিকেটের প্রভাবে এনইআইআর বাস্তবায়নের এ সিদ্ধান্ত সরাসরি কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের দাবি, জনগণ ক্ষুব্ধ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। নেতারা সতর্ক করে বলেন, জনগণকে উত্তেজিত করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, প্রয়োজন হলে তারা গণআন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
রুলস হওয়ার আগেই দেশের পুঁজিবাজারের সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস, ২০২৫’ শীর্ষক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক সমস্যা আছে, যে কারণে ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে রুলস হওয়ার আগেই সমাধান খুঁজতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে ক্যাপিটাল মার্কেট জানালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি এস এস গোলাম সামদানী ভূইয়া, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধি ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের মার্কেটের পরিধি বাড়াতে ভালো ও নতুন নতুন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে। আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের সমস্যাকালীন দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের হাতেও রুলসের জন্য অনেক সময় কিছু করার থাকে না। তাই দরজা-জানালা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য রুলস করার আগেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা উচিত।
তিনি বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়াতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এই জায়গায় কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাই ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার মতো করেই রুলস তৈরি করতে হবে।
দেশের স্পিনিং বা সুতা উৎপাদন খাত রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের তিন শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ।
গাটপ গত মঙ্গলবার এক জরুরি বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বস্ত্র ও পোশাকশিল্প খাতে চলমান বিভিন্ন সংকট, বিশেষ করে স্পিনিং খাতে চরম দুরবস্থা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
দেশের স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বৈঠকে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, অবিলম্বে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে দেশের স্পিনিং খাত যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে পড়তে পারে। এতে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি দেশের প্রধান রপ্তানি খাত বস্ত্র ও পোশাকশিল্প বিদেশি বাজার ও কাঁচামালের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, যা খাতটির জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে খাতটিকে রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া সরকারের সদ্য জারি করা ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদের (টিসিসি) যৌথ সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে সংগঠনগুলো অধ্যাদেশটি প্রত্যাখ্যান করে এবং সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো টিসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবিলম্বে সংশোধনের আহ্বান জানায়।
বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যাতে দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাত বড় ধরনের সংকটে না পড়ে।
চীন, সৌদি আরব, মরক্কো ও কাফকো থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ৭০ হাজার টন ইউরিয়া, ১ লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি এবং ৩০ হাজার টন টিএনপি সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি ৫২ হাজার ২৮০ টাকা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জন্য সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো নিউট্রিয়েন্টস কম্পানি থেকে ৯ম লটের ৪০ হাজার টন বাঙ্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ২৮০ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৯৬.৪১ মার্কিন ডলার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জন্য কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ থেকে ৯ম লটের ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার কিনতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৩০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৮৯.০০ মার্কিন ডলার।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চীনের ব্যানিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেড এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৭ম লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এই সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৭১৩.৭৫ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১১তম ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার কিনতে ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৭১৩.০০ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’আদেন এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১২তম (ঐচ্ছিক-১ম) লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৩৫০ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারে দাম পড়বে ৭১৩.০০ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বিএডিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ১৩তম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৯০ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৫১৬.০০ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (১ম সংশোধিত)-শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ-৫, লট-১ (সাতক্ষীরা (১০০০০ মেট্রিক টন))-এর অধীন ১টি সাইটে গোডাউন নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮১২ টাকা। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালক (উপসচিব) জিনাত আরা আহমেদ বলেছেন, সরকারি সহায়তা ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ করা গেলে দেশের চিংড়ি খাত আগামী বছরগুলোতে ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
মঙ্গলবার খুলনা শহরের ফিশারিজ ট্রেনিং শ্রিম্প টাওয়ারে আয়োজিত ‘বাগদা ও ভেনামি চিংড়ি থেকে বৈচিত্র্যময় মূল্য সংযোজন পণ্য উৎপাদনবিষয়ক’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কর্মশালায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং চিংড়ি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
জিনাত আরা আহমেদ জানান, সরকার সম্প্রতি ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাগদা চিংড়ির প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হার গড়ে ৫০০ কেজি হলেও ভান্নামেই চাষে প্রতি হেক্টরে ১৫,০০০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব।
বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএফএফইএ-এর সহসভাপতি শেখ কামরুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিপিসির সহকারী পরিচালক পলাশ কুমার ঘোষ।
উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি আরও বলেন, চিংড়ি ও মৎস্য খাত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিমুখী শিল্প এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশ্বাস দেন, ইপিবি চিংড়ি খাতের উন্নয়ন ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে বলা হয়, চিংড়ি শিল্পে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ যুক্ত, যার অধিকাংশই নারী। একসময় চিংড়ি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং উচ্চফলনশীল ভেনামি চাষের অনুমোদন দীর্ঘদিন বিলম্বিত হওয়ায় উৎপাদন পিছিয়ে পড়ে- যদিও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে চাষের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট অঞ্চলের হিমায়িত মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার কর্মকর্তা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, হ্যাচারি কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অংশীজন এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।