বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
১৪ কার্তিক ১৪৩২

আগামী দুই অর্থবছর সহনীয় সীমায় থাকবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ

ছবি: সংগৃহীত
ইউএনবি
প্রকাশিত
ইউএনবি
প্রকাশিত : ২৪ মে, ২০২৪ ২১:১৮

অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলার সরকারের প্রচেষ্টার কারণে আগামী দুই অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সহনীয় সীমার মধ্যে থাকবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং তারল্য সংকট রোধে ঋণ পরিষেবার বাধ্যবাধকতাগুলোর ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে জানানো হয়, ‘বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়লেও অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলতে সরকারের প্রচেষ্টার কারণে বিষয়টি সহনীয় সীমার মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

নথিতে উল্লেখ করা হয়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। দেশের বৈদেশিক ঋণে রেয়াতি ও অ-রেয়াতি উভয় ঋণ রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদপূর্তিরও বিভিন্ন সময়কাল রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের 'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)' শীর্ষক নথিতে উল্লেখ রয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে সরকার বৈদেশিক ঋণের মূল পরিশোধে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছিল এবং গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল পরিশোধ ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শেষে এটি আরও বেড়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।

বৈদেশিক ঋণ মুদ্রা মিশ্রণ

নথিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের বেশিরভাগই মার্কিন ডলারে মূল্যায়িত হয়, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট বৈদেশিক ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মুদ্রার মধ্যে রয়েছে জাপানি ইয়েন, যা মোট বৈদেশিক ঋণের ২১ শতাংশ এবং ইউরোর ক্ষেত্রে যা প্রায় ১৫ শতাংশ। অবশিষ্ট বৈদেশিক ঋণ অন্যান্য মুদ্রায় যেমন চীনা আরএমবি ও ব্রিটিশ পাউন্ডে মূল্যায়িত হয়।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের মুদ্রা মিশ্রণ সরকারের জন্য একটি মূল বিবেচ্য বিষয়। কারণ বিনিময় হারের ওঠানামা ঋণ পরিশোধের ব্যয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

আনুষঙ্গিক ও এসওই দায়বদ্ধতা

২০২৩ সালের মার্চ শেষে বাংলাদেশে বকেয়া গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন টাকা। চলতি ২০২৩ অর্থবছরে সরকার ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজগুলোকে ৩৬০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন টাকার নতুন সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে। এই গ্যারান্টি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ বিমান, বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ, সার উৎপাদনকেন্দ্র এবং টিসিবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছিল।

মধ্যমেয়াদে (২০২৫-২৬ অর্থবছর) সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টির সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রক্রিয়াটি সহজতর করতে গ্যারান্টির জন্য বিদ্যমান নির্দেশিকাগুলো সংশোধন করার পরিকল্পনা করেছে।

২০২২ সালের জুন শেষে বাংলাদেশে এসওই'র মোট দায়বদ্ধতার পরিমাণ ৪ হাজার ৩১৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন টাকা, যা দেশের জিডিপির ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যা ২০২১ সালের জুনে রেকর্ড করা ৩ হাজার ৭৭৬ দশমিক ০৯ বিলিয়ন টাকার তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি প্রতিনিধিত্ব করে।

এছাড়াও ২০২২ সালের জুন শেষে এসওইতে সরকারি ঋণের বকেয়া ভারসাম্য ছিল ৪ হাজার ১৮০ দশমিক ২২ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ৩ হাজার ৫৩৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন টাকা।


সহজে বহনযোগ্য বিশুদ্ধ মধু – ‘হ্যানি স্যাচেট’ বাজারে আনলো ‘কৃষি’

আপডেটেড ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:০২

বাংলাদেশের উদীয়মান নিরাপদ খাদ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ‘কৃষি’ মধু খাওয়ার চিরাচরিত ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করল। সম্প্রতি একটি আকর্ষণীয় আয়োজনের মাধ্যমে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিল ‘হ্যানি স্যাচেট’—একটি অভিনব মধু প্যাকেজিং যা মধু উপভোগকে করবে আরও সহজ ও ঝামেলামুক্ত।

অনুষ্ঠানে ‘কৃষি’ তাদের মিশন ও দীর্ঘ যাত্রার গল্প তুলে ধরে। কয়েক বছর ধরে তারা দেশের গ্রামীণ মানুষ, কৃষক ও মাটিকে শহরবাসীর নিকট পৌঁছে দিতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন করে আসছে। তাদের লক্ষ্য—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, একজন মানুষ যেন প্রতিটি মুহূর্তে গ্রামবাংলার নিরাপদ কৃষি পণ্যের স্বাদ উপভোগ করতে পারে। এজন্য তারা গ্রামীণ উপকরণ দিয়ে পুষ্টিকর খাবার তৈরি করছে, যা আধুনিক মানুষের প্রয়োজন ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে সাজানো।

এই উদ্ভাবনী যাত্রায় নতুন সংযোজন ‘হ্যানি স্যাচেট’। বোতল বা জটিল প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজন নেই—ছোট্ট এই স্যাচেট সহজে ব্যাগে বা টিফিনবক্সে রাখা যায়, যা যে কোনো সময়ে নিরাপদ মধু খাওয়ার সুযোগ করে দেয়। নতুন এই প্রোডাক্টের ফলে মধু হবে দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ, সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী ও স্বাস্থ্যকর।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইসমাইল, অতীশ দিপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মিহির লাল সাহা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমডি. কাইয়ুম হোসেনসহ দেশসেরা কয়েকজন অধ্যাপক, ডাক্তার ও পুষ্টিবিদ। তাঁরা হ্যানি স্যাচেটের সম্ভাবনা ও এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের মধু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আরোও উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ মইনুল আনোয়ার। তার বক্তব্যে তিনি বলেন আমাদের সকলের নিয়মিত মধু খেতে হবে। কিন্তু সেটা যেন ভেজাল না হয়। তিনি আরোও উল্লেখ করেন ভেজাল মধু পরিক্ষার জন্য সমাজে প্রচলিত আগুন পরীক্ষা, পানি পরীক্ষা কিংবা পিপড়া পরীক্ষা বিজ্ঞানসম্মত নয়, সম্পূর্ণ ভুয়া।

ইভেন্টের সমাপ্তি ঘোষণা করতে গিয়েই কৃষি জানিয়েছে—‘হ্যানি স্যাচেট’ শুধু একটি পণ্য নয়, এটি আমাদের খাওয়ার অভ্যাসে এক নতুন জীবনধারা নিয়ে আসবে। এই নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি তার মিশন অব্যাহত রেখেছে—সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য পৌঁছে দেওয়া। প্রোডাক্ট ও মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্রেতাদের কৃষি'র ওয়েবসাইটে ভিজিট করার আহ্বান জানানো হয়।


কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ বিকাশে পিকেএসএফ-এর বিশেষ উদ্যোগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে পিকেএসএফ।
মঙ্গলবার পিকেএসএফ-এর পরিচালনা পর্ষদের ২৬২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পিকেএসএফএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ড. সহিদ আকতার হোসাইন, নূরুন নাহার, ফারজানা চৌধুরী, ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম, লীলা রশিদ এবং পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
সভায় জানানো হয়, দেশের মোট কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য অংশ কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পে হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে, ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ খাতের প্রসারে চলতি অর্থবছরে পিকেএসএফ মোট ৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এ অর্থের সঙ্গে নিজস্ব তহবিল ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তহবিল যোগ করে সহযোগী সংস্থাগুলো প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।


বৈশ্বিক নতুন অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ আবশ্যক

ডিসিসিআইয়ের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, পরিবর্তনশীল তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ক্রমশ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অধিক হারে মনোনিবেশ করা জরুরি।

এছাড়া দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ, বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি শিক্ষা ও শিল্প খাতের সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।

সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট মানবসম্পদ উন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী বলেন, প্রশিক্ষণ প্রদানে নিয়োজিত সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সেই সঙ্গে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে সকল স্তরের সচেতনতার অভাবের বিষয়টিও পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এনএসডিএ নিজের আইনগত কাঠামো, ভৌত ও প্রশাসনিক অবকাঠামোর ওপর নজর দিলেও বর্তমানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণের ওপর বেশি মনোযোগী হয়েছে।

নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, জাপানে ১ লাখ দক্ষ বাংলাদেশি প্রেরণের লক্ষ্যে সরকারি ও শিক্ষা খাতের সহায়তায় জাপানি ভাষা শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ করে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কেবল প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয় বরং উৎপাদন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শ্রমবাজারে গভীর ও মৌলিক রূপান্তর এনেছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আমাদের শিল্প ও সেবা খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

তিনি জানান, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য মতে আগামী পাঁচ বছরে বর্তমান চাকরির বাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বদলে যাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ কোটি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলেও একই সময়ে ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্মার্ট মানবসম্পদই হবে বাংলাদেশের একমাত্র হাতিয়ার। তবে তাদের প্রযুক্তিনির্ভর নতুন যুগের কর্মসংস্থানে নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, কারিগরি শিক্ষার ওপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ এবং শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, এটুআই ও ইউএনডিপির ২০১৯ সালের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্য ও কৃষি, ফার্নিচার, পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতে প্রায় ৫৩ লাখ ৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের কর্মরত মানবসম্পদকে প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের ওপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করতে হবে।

তিনি সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমের যুগোপযোগীকরণের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এছাড়া দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিতের ওপর জোরারোপ করেন নিয়াজ আসাদুল্লাহ।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব (আইসিটি ডিভিশন) মোহাম্মদ সাইফুল হাসান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামস রহমান, দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবির) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ট্রান্সকম গ্রুপের করপোরেট মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান এম সাব্বির আলী, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর রিজিওনাল সিনিয়র ম্যানেজার খান মোহাম্মদ শফিকুল আলম, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী এবং ব্রেইন স্টেশন ২৩-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবীর অংশগ্রহণ করেন।

হাইটেক পার্কগুলোতে একক ও যৌথ বিনিয়োগের জন্য দেশীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ সাইফুল হাসান।

অধ্যাপক ড. শামস রহমান বলেন, শিল্প খাতের চাহিদার নিরিখে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা-শিল্প খাতের সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি।

আইসিএমএবি সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের মাত্র ২০ শতাংশ তাদের দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি পেয়ে থাকে এবং প্রায় ২ মিলিয়ন শিক্ষার্থী বেকার রয়েছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় কারিগরিশিক্ষার ওপর জোরারোপ ও সমাজের সকল স্তরের মানসিকতা পরিবর্তনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

তথ্যপ্রযুক্তি ও অটোমেশনের ফলে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে উদ্যোক্তাদের আরও সচেতনতা বাড়ানো, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নজরদারির জন্য একটি আলাদা জাতীয় কাউন্সিল স্থাপনের প্রস্তাব করেন এম সাব্বির আলী।

খান মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা কারিকুলামের যুগোপযোগীকরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাসরুর আলী বলেন, গ্রাম ও শহরের বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষামানে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তর থেকেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাই শিক্ষার সকল স্তরে মান নিশ্চিত করা জরুরি।

রাইসুল কবীর বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও মানসম্মত কাজের চাহিদা বাড়ছে। এর কারণে কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে ভবিষ্যতের চাহিদার নিরিক্ষে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ খাতের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।

মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ প্রেরণের ওপর জোরারোপ করেন। যার মাধ্যমে আরও বেশি হারে রেমিট্যান্স আহরণ সম্ভব, সেই সঙ্গে কারিগরিশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

এছাড়া ডিসিসিআই পরিচালক মোহাম্মদ জমশের আলী, স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মীর শাহরুক ইসলাম প্রমুখ মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।


বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে অস্থায়ী গুদাম বানাবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে ‘রাব হল’ বা অস্থায়ী গুদাম স্থাপনে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিজিএমইএ সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও সচল রাখার স্বার্থে ‘জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা এ গুদাম প্রস্তুত করবে।

বিজিএমইএ বলেছে, গত ১৮ অক্টোবর বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে আমদানি শেডটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে পোশাক শিল্পের আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, তৃতীয় টার্মিনালে (যা বর্তমানে পণ্য সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত নয়) দ্রুত সময়ের মধ্যে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ‘রাব হল’ স্থাপন করা হবে।

ইতোমধ্যে বিজিএমইএ এই ‘রাব হল’ স্থাপনের জন্য একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

গত ২০ অক্টোবর বিজিএমইএ ও নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নেতারা বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

সেই বৈঠকে কার্গো ভিলেজের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং আমদানি পণ্যের সুরক্ষায় অস্থায়ী গুদাম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিজিএমইএ বলেছে, এই যৌথ উদ্যোগ আমদানি পণ্যের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রেখে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেবে।

গত ১৮ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে লাগা আগুন ওইদিন রাত ৯টায় নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিমান চলাচল শুরু হয়। তবে পুরোপুরি নেভাতে লেগে যায় ২৭ ঘণ্টা।

ওই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবি।

আগুনের ঘটনার পর শাহজালালে পণ্য আমদানি প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটছে এবং পণ্যের খালাসে বেশি সময় লাগছে। সেই জটিলতা নিরসনের জন্যই অস্থায়ী এ গুদামের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


মার্কিন-চীন বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতিতে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাণিজ্য ডেস্ক

এশিয়ার শেয়ারবাজারে সোমবার ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন। আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ায় বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যবিরোধ প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ‘কার্যত টেবিলের বাইরে।’ তার ভাষায়, ‘শুল্ক এড়ানো হবে।’ তিনি আরও জানান, চীন বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিলম্বিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ সয়াবিন ক্রয় করতে সম্মত হয়েছে।

অন্যদিকে, চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফেং বলেন, উভয় দেশ শুল্ক, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং ফেন্টানাইল সহযোগিতার বিষয়ে ‘প্রাথমিক ঐকমত্যে’ পৌঁছেছে। আলোচনাকে তিনি ‘স্পষ্ট, গভীর ও গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।

এই অগ্রগতির ফলে আসন্ন আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠকের পথ সুগম হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর এটি হবে দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ।

আলোচনার ইতিবাচক প্রভাব সোমবার সকালে এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ারবাজারে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার প্রায় দুই শতাংশ করে বেড়েছে এবং উভয়ই সাম্প্রতিক সময়ের মাইলফলক ছুঁয়েছে। হংকং, সাংহাই ও তাইপেইর বাজারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করেছে।

গত শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে শক্তিশালী লেনদেন সমাপ্তির পর এশিয়ার বাজারেও ইতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতি তথ্য ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কমানোর পথে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভূমিকা রেখেছে।

গত রোববার কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (চীন) একটি চুক্তি করতে চায়, আমরাও চুক্তি করতে চাই।’ তিনি বর্তমানে পাঁচ দিনের এশিয়া সফরে রয়েছেন, যার অন্তর্ভুক্ত মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রতিটি সফরেই বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির খবরে বৈশ্বিক বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তামার ভবিষ্যৎমূল্য বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী শিল্প ও নির্মাণখাতে চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত কয়েকমাস ধরে দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দেয়, যা ওয়াশিংটন ‘অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল।

তবে সর্বশেষ অগ্রগতি উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্টের ভাষায়, ‘চুক্তির কাঠামো অনুযায়ী চীন এক বছরের জন্য তার বিরল মৃত্তিকা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখবে, এরপর পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অগ্রগতি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য নয়, বরং পুরো এশীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে।


চার মাসে মোংলায় নোঙর করেছে ২৫৫টি বিদেশি জাহাজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১১৭ দিনে ২৫৫টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোমবার মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ) জানিয়েছে, মোট জাহাজের মধ্যে ১৮টি জাহাজ ১০ হাজার ৬০৮টি টিইইউ কন্টেইনার বহন করেছে এবং ১০টি জাহাজ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩ হাজার ২৫৩টি গাড়ি আমদানি করেছে।

এমপিএ উপপরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ মাকরুজ্জামান বলেন, গত ১ জুলাই থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বন্দরে মোট ৪৭ লাখ টন পণ্য পরিচালনা করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ মোংলা বন্দরে জাহাজের আগমন বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

মাকরুজ্জামান জানান, বর্তমানে, সার, ক্লিংকার, এলপিজি, কয়লা এবং পাথর বহনকারী ২২৭টি বিদেশি জাহাজ বন্দরের জেটি ও স্থায়ী নোঙ্গরস্থলে নোঙর করে আছে। এর মধ্যে রয়েছে হারবাড়িয়া, বেস ক্রিক, সুন্দরী কোটা এবং মুরিং বোয়া।

তিনি বলেন, মোংলা বন্দর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আমদানি-রপ্তানি সহজতর করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, সিমেন্টের কাঁচামাল, সার, অটোমোবাইল, যন্ত্রপাতি, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তৈলবীজ এবং এলপিজি। অন্যদিকে রপ্তানির মধ্যে রয়েছে মাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, মাটির টাইলস, রেশম কাপড় এবং অন্যান্য সাধারণ পণ্য।

তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ আমদানিকারকরা এই সুবিধা ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীদের স্বাগত জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, বন্দরের ধারণক্ষমতার ৪০ শতাংশ এখনও উপলব্ধ রয়েছে এবং এ বছর বন্দর ব্যবহারের জন্য কোনো কর বাড়ানো হয়নি।


দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ

বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের তেলমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের তেলমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পিআইডি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সফররত পাকিস্তানের তেলমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য, টেক্সটাইল ও পাট, এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের সঙ্গে উপদেষ্টার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎকালে দুই পক্ষ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। বিদ্যমান বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং নতুন বিনিয়োগ ক্ষেত্র চিহ্নিত করার উপায়ও আলোচনা করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়েছে।

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে এবং এখন সময় এসেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও সমমানের উন্নয়নের দিকে নেওয়ার।

তিনি উল্লেখ করেন, দেড় দশকেরও বেশি সময়ের স্থবিরতার পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) পুনরায় চালু করা হয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। উপদেষ্টা বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করার এবং বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন।

পাকিস্তানের মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। তিনি উন্নত বাণিজ্য সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য পাকিস্তানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সাক্ষাৎকালে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার এবং বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।


হালাল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে পাকিস্থানের সাথে বিএসটিআই’র সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিনোদন প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জাতীয় মান প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন এর সাথে পাকিস্তানের হালাল বিষয়ক সংস্থা- পাকিস্তান হালাল অথরিটি (পিএইচএ) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। জাতীয় মান প্রণয়নে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে এ সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পাকিস্তানের যৌথ অর্থনেতিক কমিশনের ৯ম বৈঠকে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।

বাংলাদেশের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এনডিসি ও পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশে নিয়োজিত পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান হায়দার সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে বিএসটিআই অনুমোদিত হালাল পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করা যাবে। বিএসটিআইয়ের হালাল সনদ থাকলে তা পাকিস্তানে বিনা পরীক্ষণে প্রবেশ করবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের হালাল অথরিটি (পিএইচএ) এর সনদ থাকলে তা বাংলাদেশেও বিনা পরীক্ষণে প্রবেশ করবে। এটি উভয় দেশের মধ্য বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার একটি প্রচেষ্টা। এর ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে হালাল পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্যের পথ সুগম করবে এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।

অনুষ্ঠানে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া সার্ককে আরো পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। এই বৈঠকে দুই দেশের জনগণের সম্পর্কেরও উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশা করেন।।

আলী পারভেজ মালিক বলেন, বিএসটিআইয়ের সঙ্গে হালাল পণ্য বিষয়ক একটা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যেখানে বলা হয় বিএসটিআই অনুমোদিত যে কোনো হালাল পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করা যাবে এবং পাকিস্তান তা গ্রহণ করবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পিএইচএ যে হালাল সনদ প্রদান করবে তা বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।


১৩ শতাংশ পোশাক শ্রমিক এখনো বর্ধিত মজুরি পুরোপুরি পাননি: গবেষণা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের তৈরি পোশাক খাতে সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, শ্রমিকদের প্রায় ১৩ শতাংশ এখনো বর্ধিত মজুরি সম্পূর্ণভাবে পাচ্ছেন না। তাদের কেউ আংশিকভাবে বাড়তি মজুরি পেয়েছেন, আবার কেউ একেবারেই পাননি।
গবেষণাটি ২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে তৈরি হয়। এতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলার ৬০টি পোশাক কারখানার ২৪০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ‘ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন: বাস্তব অবস্থা ও শ্রমিকদের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। মন্ডিয়াল এফএনভির সহায়তায় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আওয়াজ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার।
সরকার ২০২৩ সালে তৈরি পোশাক খাতের প্রবেশ পর্যায়ের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করে, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, জরিপে দেখা গেছে—প্রায় ৮৭ শতাংশ শ্রমিক নতুন কাঠামো অনুযায়ী সম্পূর্ণ বর্ধিত মজুরি পাচ্ছেন। বাকি ১৩ শতাংশের মধ্যে ৮ শতাংশ আংশিকভাবে এবং ৫ শতাংশ এখনো সংশোধিত গ্রেড অনুযায়ী মজুরি পাননি।
তিনি আরও জানান, জরিপে অন্তর্ভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে নিট, ওভেন ও কম্পোজিট ইউনিট ছিল, যা খাতটির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানে সাবেক শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সামাদ আল আজাদ এবং সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এ কে এম নাসিমসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, যেসব কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন বা সংগঠন আছে, সেখানে বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকরের পর ৩১ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত কাজের (ওভারটাইম) বেতন ১ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত দেরিতে পেয়েছেন। ৫২ শতাংশ শ্রমিক কাজের চাপ ও উৎপাদন টার্গেট বৃদ্ধিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ২২ শতাংশ চাকরির অনিশ্চয়তা, ১৪ শতাংশ অনিয়মিত বেতন এবং ১১ শতাংশ গ্রেড নির্ধারণ ও পদোন্নতি নিয়ে বিভ্রান্তির কথা জানিয়েছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ শতাংশ শ্রমিক ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিক জানিয়েছেন এটি কার্যকর হয়েছে, তবে ১৩ শতাংশ এখনো ইনক্রিমেন্ট পাননি।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, গবেষণায় যেসব কারখানায় অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত কি না- তা স্পষ্ট নয়। তার দাবি, রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকরা মাস শেষে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন।
তিনি প্রস্তাব করেন, প্রতি পাঁচ বছর পর বড় মজুরি বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রতিবছর মজুরি পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে শ্রমিক আন্দোলন ও উৎপাদনে বিঘ্ন না ঘটে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কোনো সদস্য কারখানা বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়নি। কিছু কারখানা হয়তো আংশিকভাবে মজুরি দিয়েছে। তবে যেসব কারখানা সদস্যভুক্ত নয়, সেগুলোর তদারকি সরকারের দায়িত্ব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশ প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরান রামজুথন বলেন, সময়মতো ও পূর্ণ বেতন প্রদান শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার। এটি না হলে শুধু শ্রমিক নয়, দেশের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অনিয়ম রোধে পরিদর্শন ও তদারকি জোরদার করতে হবে, ফলাফল প্রকাশ করতে হবে এবং নিয়মিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও দায়িত্বশীল ক্রয়নীতি অনুসরণ করা জরুরি।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বলেন, মজুরি গেজেটে পরিষ্কার নির্দেশনার অভাবে অনেক মালিক ইচ্ছামতো গ্রেড নির্ধারণ করছেন, ফলে শ্রমিকরা বৈধ বেতন বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বড় কারখানাগুলো আরও প্রসারিত হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক উৎপাদন ও রপ্তানি আয় দুই-ই বৃদ্ধি পাচ্ছে।


লালমনিরহাটে খড়ের দামে কৃষকের মুখে হাসি, খামারিরা বিপাকে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লালমনিরহাটে সম্প্রতি ধানের খড়ের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটলেও গবাদিপশু খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। মৌসুম শেষে ধান ও খড় ঘরে তোলার পর অবশিষ্ট খড় সংরক্ষণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে ভালো লাভ করছেন কৃষকরা।
তবে খামারিদের অভিযোগ, খড়ের এই অস্বাভাবিক দামের কারণে গবাদিপশুর খাবার জোগাড়ে এখন অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, বর্তমানে ১০০ আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, আর ১ হাজার আঁটির দাম দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিছুদিন আগেও প্রতি আঁটির দাম ছিল মাত্র ৩ থেকে ৪ টাকা। খামারিদের আশঙ্কা, কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতি আঁটির দাম ৯–১০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। শুধু খড় নয়, ভুসি, চালের গুঁড়া ও অন্যান্য পশুখাদ্যের দামও বেড়ে গেছে, ফলে গবাদিপশু পালন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ধানের খড় গরুর অন্যতম প্রধান খাদ্য উপাদান। সাধারণত খড় কেটে ভুসি ও চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়, যা তাদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাই খামারিরা সারা বছর খড় সংরক্ষণ করে রাখেন। কিন্তু সাম্প্রতিক খড়ের সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে খাদ্য জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আবু সালাম আলী বলেন, “আমার গোয়ালে দুটি বাছুর ও একটি গরু আছে। আগে প্রতি আঁটি খড় ২–৩ টাকায় পেতাম, এখন বাজারে ৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খড়ের এমন দামে গরু পালন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে, বিক্রিও করতে পারছি না।”
তিস্তা পাড়ের কৃষক আব্দুল ইসলাম বলেন, “গত দুই–তিন মৌসুমে খড়ের সংকট বেড়েছে। আগে হাতে ধান মাড়াই হতো, তাই খড় অক্ষত থাকত। এখন আধুনিক যন্ত্রে ধান মাড়াই ও আকস্মিক বন্যার কারণে অনেক খড় নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মাংস ও দুধ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে।”
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিন বিঘা জমি থেকে তিনি ৩ হাজার ৬০০ আঁটি খড় সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করেছেন।
“প্রতি আঁটি ৬ টাকায় বিক্রি করেছি, মোট পেয়েছি প্রায় ২১ হাজার ৬০০ টাকা। ধানের পাশাপাশি খড়ের ভালো দাম পেয়ে বেশ সন্তুষ্ট,” বলেন তিনি।
বড়বাড়ী বাজারের খুচরা খড় বিক্রেতা ইব্রাহিম আলী জানান, “মৌসুমে গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে প্রতি আঁটি খড় ২–৩ টাকায় কিনি। এখন বাজারে দাম বেড়ে বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। এই ব্যবসায় এখন সন্তোষজনক আয় করছি।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “খড়ের দাম বেড়ে কৃষকরা লাভবান হলেও খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন। উন্নতমানের ঘাস চাষ ও খড় সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে খামারিরা খরচ কমাতে পারবেন। এতে গবাদিপশুর পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি দুধ ও মাংস উৎপাদনও বাড়বে।”


রেকর্ড উচ্চতায় ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার সূচক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে পূর্বাভাসের তুলনায় কম। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার আরো অন্তত দুই দফায় কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে পূর্বাভাসের তুলনায় কম। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার আরো অন্তত দুই দফায় কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী মনোভাব দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিনে ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান শেয়ারবাজার সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড উচ্চতায়। খবর এপি।

সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিন শুক্রবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৬ হাজার ৭৯১ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে, যা চলতি মাসের শুরুতে গড়া রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৪৭২ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ বেড়ে স্থির হয়েছে ৪৭ হাজার ২০৭ দশমিক ১২ পয়েন্টে। আর নাসডাক কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২০৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। তিনটি সূচকই রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি তথ্য বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক। পণ্যের দাম এখনো বেশি হলেও বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। এটি ফেডারেল রিজার্ভের জন্যও ইতিবাচক সংকেত। কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সুদহার কমিয়ে কর্মসংস্থান খাতে নতুন গতি আনতে পারে।

ফেড চলতি বছর প্রথমবারের মতো সুদহার কমিয়েছিল গত মাসে। তবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দ্রুত সুদহার কমানো হলে মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ মূল্যস্ফীতি তথ্য প্রকাশের পর পুঁজিবাজারে ফেডের ধারাবাহিক সুদহার কমানোর প্রত্যাশা আরো জোরালো হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, পরবর্তী দুই বৈঠকেই ফেড সুদহার কমবে, যার একটি অনুষ্ঠিত হবে চলতি সপ্তাহে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জেকবসেন বলেন, ‘এ মুহূর্তে ফেড কর্মকর্তারা মূল্যস্ফীতির চেয়ে শ্রমবাজার নিয়ে বেশি চিন্তিত। কোনো বড় পরিবর্তন না ঘটলে তাদের মনোভাব এখনই বদলানোর সম্ভাবনা কম।’

এদিকে এপ্রিলের নিম্নমুখী পর্যায় থেকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এর মধ্যে বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। দ্রুত এ উত্থান নিয়ে কিছু বিশ্লেষক শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে শেয়ারদর কোম্পানির মুনাফার তুলনায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ যোগ করেছিল।

সাম্প্রতিক অস্থিরতার পরও শেয়ারবাজার প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ব্যাংকগুলো বলছে, এসব চাপ ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফল, যা পুরো খাতের স্থিতিশীলতায় বড় প্রভাব ফেলবে না। এদিকে চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকটি দুই দেশের বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কোম্পানিগুলোর মুনাফা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এসেছে। এ ইতিবাচক ফলাফলও শেয়ারবাজারের উত্থানে ভূমিকা রেখেছে।

ফোর্ড মোটরের শেয়ারদর বেড়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা বিশ্লেষকদের অনুমানের চেয়ে বেশি এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পুরো বছরের আর্থিক ফলাফল ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত পূর্বাভাসের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি রয়েছে।

ইন্টেলের শেয়ারদর বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। কোম্পানিটি বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মুনাফা করেছে। প্রধান নির্বাহী লিপ–বু ট্যান বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতের দ্রুত সম্প্রসারণ কম্পিউটিংয়ের চাহিদা বাড়াচ্ছে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করছে।’

গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের শেয়ারদর বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এআই কোম্পানি অ্যানথ্রপিক জানিয়েছে, তারা গুগলের ক্লাউড প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এতে অ্যালফাবেটের বাজারমূল্য আরো বেড়েছে।

প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মুনাফাও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এসেছে, যদিও কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জন মোলার বলেছেন, ‘চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও কঠিন ভোক্তা বাজারের মধ্যেও আমরা স্থিতিশীল থাকতে পেরেছি। এ কারণেই আমাদের শেয়ারদর বেড়েছে দশমিক ৯ শতাংশ।’

সাপ্তাহিক লেনদেনের শেষদিনে ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার সূচকের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারেও সূচক বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৫ আর জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

বন্ডবাজারে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি। ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ইল্ড বৃহস্পতিবারের ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশে।

এছাড়া শুক্রবার প্রকাশিত মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের ভবিষ্যৎ মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশা এখনো মিশ্র অবস্থায় রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রত্যাশাই ভবিষ্যতে বাস্তব মূল্যস্ফীতির গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।


দুদকের রিমান্ডে আরামিট পিএলসির ৩ কর্মকর্তা

আপডেটেড ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আরামিট পিএলসির তিন কর্মকর্তা- মো. আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও উৎপল পালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম।

তিনি জানান, ঢাকা-১ এর উপসহকারী পরিচালক মো. সজীব আহমেদের তদন্তাধীন মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে রিমান্ড কার্যকরের জন্য দুদক প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দুদক আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দুদক জানায়, আসামি মো. আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও উৎপল পাল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার এবং সেখানে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তারা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যোগসাজশে নিজেদের নামে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসিসহ একাধিক ব্যাংক থেকে ভুয়া ঋণ গ্রহণ করে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন।

দুদক আরও জানায়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঋণের নামে আত্মসাতকৃত বিপুল অর্থ বিদেশে পাচারের বিস্তারিত তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।


পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও নগর অঞ্চল উন্নয়নে ৩০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শহর ও নগরের সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ২০২৭ সালে বাংলাদেশে ক্লাস্টার টাউন পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন এবং নগর অঞ্চল উন্নয়নের দুটি পৃথক প্রকল্পে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা বাসসকে জানান, ম্যানিলা-ভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থাটির ২০২৭ সালে ক্লাস্টার টাউনস ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পাইপলাইনে রয়েছে।

উপকূলীয় ২২টি শহরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)।

প্রকল্পটির প্রধান লক্ষ্য হলো: পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, স্যানিটেশন এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর নজর দেওয়া। বর্তমানে উপকূলীয় ২২টি শহরের পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নিয়ে একটি সমীক্ষা চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সমীক্ষায় পানির উৎস, পরিশোধন সুবিধা, বিতরণ নেটওয়ার্ক এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা বিবেচনা করা হচ্ছে।’

এ ছাড়া ২০২৭ সালে ৩য় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশকে আরও ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে এডিবি।

এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ ও অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ সিটি রিজিয়ন (এমসিআর) এবং রাজশাহী সিটি রিজিয়নকে(আরসিআর) ৩য় সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে অর্থনৈতিক কাউন্টার-ম্যাগনেট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

ইআরডি কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের আওতায় টেকসই আরবান ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যার মধ্যে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান অন্তর্ভুক্ত থাকবে, নাগরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো- যেমন: সড়ক, বাস টার্মিনাল, কমিউনিটি মার্কেট ও কাঁচাবাজার উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থা এবং পৌর প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীলতা, অংশগ্রহণমূলক নগর পরিকল্পনা ও টেকসই সেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে এমসিআর ও আরসিআর-এর জন্য সমন্বিত সিটি রিজিয়ন পরিকল্পনা (সিসিআরপি) এবং সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন নির্দেশিকা প্রণয়নেও সহায়তা দেওয়া হবে। এতে আঞ্চলিক সংযোগ, উৎপাদনশীল সংযোগ বাড়ানো, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো অতিরিক্ত থিম্যাটিক স্তর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এডিবির অর্থায়নে পটুয়াখালী পৌরসভা ও খুলনার চালনা পৌরসভায় প্রকল্প পরিদর্শনের সময় বাসসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেছেন, সিটি রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটি প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ। তবে, আমরা ইতোমধ্যে এলজিইডির সঙ্গে পরবর্তী ধাপের প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। প্রকল্পের ভৌগোলিক এলাকা এবং উপ-প্রকল্পগুলো নিয়ে এখনও সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার এডিবি গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ২.৫২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে এবং ২.০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী এডিবির বর্তমান প্রকল্প পোর্টফোলিও প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার, যার বিপরীতে ৫১টি প্রকল্প চলমান আছে।

১৯৭৩ সাল থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশকে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে এডিবি।


banner close