আসছে কোরবানির ঈদ। প্রিয় প্রাণীকে কোরবানি করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন অনেকে। এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা।
আজ সোমবার সচিবালয়ে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর উপস্থিতিতে নতুন মূল্য ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন মজুমদার।
গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়ানো হলো। সেই সঙ্গে প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জানান, এবারের ঈদে খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর ঢাকার মধ্যে কোরবানি গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৫-৪৮ টাকা।
আর খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১২-১৪ টাকা।
শ্রমিকদের অসন্তোষের মুখে বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ ছিল আশুলিয়ার প্রায় ২১৯ কারখানা। তবে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় আজ অধিকাংশ কারখানাই খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে শুরু হয়েছে উৎপাদন। শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।
শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো কারখানায় অস্থিরতা দেখা যায়নি। এমনকি সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। পরিস্থিতি আজ অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ৮৬টি কারখানার বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ বন্ধ ৮৬টি কারখনার মধ্যে ৫০টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা বাকি ১৩৩ কারখানার মধ্যে ১২০টি কারখানা চালু হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া কারখানার সংখ্যা ১৩টি ও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ আছে ৩৬টি। এসব কারখানাগুলোতেও দ্রুত উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। আজ শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজি ও মুরগির বাজার চড়া রয়েছে। সরবরাহ বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ।আজ শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, বলছেন বিক্রেতারা। কচুরমুখীর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা,পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং গাজর ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলু কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১৮০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সরবরাহ বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে পাঁচ কেজি সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। এরপর এই পোশাকশিল্পই দেশের অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে কেবল গত বছরই ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ঢাকা। বিশ্বে পোশাক রপ্তানির দিক দিয়ে বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন।
তবে গত জুলাই ও আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের চাকা থমকে যায়। শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে আন্দোলন শেষ হলেও এখনো এই খাতে অস্থিরতা রয়ে গেছে। পোশাকশ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কারণে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস সংকটের কারণেও কমেছে উৎপাদন।
বাংলাদেশে এই অস্থিরতার সুযোগে ভারতের পোশাকশিল্প লাভবান হতে পারবে? এমন প্রশ্ন অনেকের। এ বিষয়টি এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
সাময়িকীটি বলেছে, ভারত হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তুলা উৎপাদানকারী দেশ। এসব তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করে তারা। তবে ভারতে অনেক তুলা উৎপাদন হলেও তৈরি পোশাক খাতের দিক দিয়ে দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।
তবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে তারা নতুন করে ৫৪ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়েছে। নয়াদিল্লির বাইরের আরেকটি গ্রুপ জানিয়েছে, গত আগস্টে তারা স্প্যানিশ ফ্যাশন ফার্ম জারার কাছ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি অর্ডার পেয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে এখনই টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই বলে জানিয়েছেন শিল্প বিশ্লেষক মেহেদি মাহবুব। তিনি বলেছেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে সেটি চলে যাবে। ইতোমধ্যে শ্রমিকরা কারখানায় ফিরেছেন এবং উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া পোশাক খাতে যেসব প্রতিযোগী আছে তাদের চেয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন দিকে এগিয়ে আছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো কম মজুরিসম্পন্ন শ্রমিক। এমনকি বাংলাদেশের পোশাককেই ইউরোপের বাজারগুলো প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক থাকলেও আশাবাদী অবস্থানে আছে। আরেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে পোশাকশিল্পে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই।
তিনি বলেন, ভারতে ইলেকট্রনিকের মতো মূলধন নির্ভর খাতের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পোশাকশিল্পের মতো শ্রমিকনির্ভর খাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশের আম রপ্তানিতে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশকে তাদের ‘ওয়ান কান্ট্রি, ওয়ান প্রোডাক্ট’ (ওসিইপি) প্রকল্পের অধীনে আম রপ্তানিতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটির প্রতিনিধিরা আজ বুধবার রাজধানীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ফসল রপ্তানিকে আরও বহুমুখীকরণ ও সম্প্রসারণের বিষয়ে আগ্রহ দেখান।
এর জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আম ছাড়াও আমরা প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন করি, যা রপ্তানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় এফএওকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।’
ড. জিয়াওকুন শির নেতৃত্বাধীন দলটি সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষির উন্নয়ন ও কৃষিতে প্রযুক্তিগত পরামর্শ, সহায়তা এবং কৃষি পণ্যের রপ্তানি আরও বহুমুখী করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এফএও দলকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এফএও বাংলাদেশের অনেক খাতে সহায়তা করেছে এবং আমি আশা করি এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৩টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এফএওর সহায়তা প্রয়োজন।’
উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে এফএও প্রতিনিধি জিয়াওকুন বলেন, ‘এফএও সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং আমরা আরও বীজ, কৃষিপ্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত ও পরামর্শ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুষ্টি, উদ্যোক্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তর প্রকল্পে (পার্টনার) এফএওর সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে জিয়াওকুন আরও বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে এফএও ১৮টি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।
সাক্ষাতের সময় এফএও প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের কৃষি খাতের হালনাগাদ তথ্য পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর সঙ্গে উপদেষ্টা তার সম্মতি প্রদান করেন।
এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং এফএও দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য মিসর বিকল্প উৎস হতে পারে। পাশাপাশি মিসরের বাজারে ক্যানসারের ওষুধের বেশ চাহিদা রয়েছে, যার সুযোগ বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা নিতে পারেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিসরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এদ্দিন আহমেদ ফাহমি এসব কথা বলেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সেশন আয়োজনের পাশাপাশি দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন আশরাফ আহমেদ।
মিসরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এদ্দিন আহমেদ ফাহমি বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হলেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮০.৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মিসর হতে পেট্রোকেমিক্যাল এবং সার আমদানির জন্য বাংলাদেশের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, মিসরীয় তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন খাতে তার দেশের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পখাতে ক্রমাগত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং মিসরের বাজারে ক্যানসারের ওষুধের বেশ চাহিদা রয়েছে, যার সুযোগ বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা গ্রহণ করতে পারে।
তিনি বলেন, সুয়েজ খাল ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অধিকাংশ পণ্য ইউরোপসহ সমগ্র পৃথিবীতে রপ্তানি হচ্ছে, তবে মিসরকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট হাব’ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে আফ্রিকার বাজারে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য মিশর বিকল্প উৎস হতে পারে বলে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের হিমায়িত খাদ্য, চিংড়ি এবং সুস্বাদু আম ইউরোপসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হচ্ছে, যা মিশরেও রপ্তানি করা যেতে পারে। বাংলাদেশ হতে তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, সিরামিক, ওষুধ প্রভৃতি পণ্য বেশি হারে আমদানির জন্য মিশরের উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সেই সঙ্গে বিশেষ করে বাংলাদেশের নদীভিত্তিক পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে মিসরের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ওপর জোরারোপ করেন আশরাফ আহমেদ।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী এবং বাংলাদেশস্থ মিশর দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন সোহেলা মাহরিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
টানা ছয় কার্যদিবস দরপতন হওয়ার পর মঙ্গলবার দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সবখাত মিলে ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৫৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ৩১ কোটি ৩৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রামীণফোন, এনআরবি ব্যাংক, কনফিডেন্স সিমেন্ট, আইএফআইসি ব্যাংক, সোনালী আঁশ, লিব্রা ইনফিউশন এবং ইবনে সিনা।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বিনিময় হারের ঝুঁকিসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে ডলার ঋণ করতে কম উৎসাহী হলেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ানোয় তিন মাসে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ সামগ্রিকভাবে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন শেষে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার। মার্চ শেষে এ ঋণ ছিল ২০.৩ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত নয় মাসে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সময়ে মিডিয়াম ও লং টার্ম লোন খুব বেশি কমেনি। আমরা বৈদেশিক মুদ্রায় খুব বেশি টার্ম লোন (মেয়াদি ঋণ) ইস্যু হতেও দেখছি না। এক্সচেঞ্জ রেটে অনিশ্চয়তা এর একটা কারণ হতে পারে।
তবে ব্যাংক খাতে এখন কিছু স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাহিদা তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন পর্যন্ত তিন মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮২ মিলিয়ন ডলার কমে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৯.১৭ বিলিয়ন ডলারে। অবশ্য সেপ্টেম্বরের তুলনায় এই ঋণ ৩২৩ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে জুন শেষে।
এপ্রিল-জুনে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমলেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রায় ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রায় দেড় বছর ধরে কমার ধারায় থাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ জুন প্রান্তিকে বেড়েছে। ২০২২ সাল শেষে এর বকেয়া ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের জুন মাস শেষে ১১.৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। মার্চ প্রান্তিকে এর বকেয়া ছিল ১১.০৪ বিলিয়ন ডলার।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকগুলো এখন আগের তুলনায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের এক্সপোজার কমিয়ে আনছে।
‘এ ছাড়া গ্রাহকদের মধ্যেও বিদেশি ঋণ নেওয়ায় একটা দ্বিধা কাজ করছে। এসব কারণে মধ্যমেয়াদে আমরা এই ঋণ কমতে দেখছি,’ বলেন তিনি।
জুন প্রান্তিকে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ কেন বেড়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনীতি দিন দিন বড় হচ্ছে। অর্থনীতি যত বড় হবে, সেই সঙ্গে ডলার ঋণও বাড়বে। আমাদের বিনিময় হার এখনো স্থির হয়নি। ফলে এখন যারা বায়ার্স ক্রেডিট বা অন্য মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিচ্ছে, তারা আগামী ৫-৬ মাসের বিনিময় হার ধারণা ঋণ নিয়েছে।’
এ ছাড়া ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র (এলসি) খোলাও কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি। ‘ফলে গত তিন মাসে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ায়, যা দেশের ইতিহাসে এক দিনে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন। এরপর থেকে ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসার ইঙ্গিত দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ডলারের দাম কেমন হবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের মধ্যে শঙ্কা রয়ে গেছে।
সর্বশেষ আগস্টে ডলারের দাম আরও ৩ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত দুই বছরে টাকার মান প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। ‘অর্থাৎ ডলারে ঋণ পরিশোধের জন্য একজন গ্রাহককে অনেক বেশি পেমেন্ট করতে হয়েছে। হয়তো তিনি যখন লোন নিয়েছিল তখন ৮৫ টাকার বিনিময়ে ডলার পাওয়া যেত, অথচ পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখেছে ডলারের রেট ১১০ টাকায় উঠে গেছে,’ বলেন তিনি।
ভবিষ্যতে ডলারের দাম ওঠানামা করার এ শঙ্কাও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে বলে মন্তব্য করেন ওই ব্যাংকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন বলেন, ‘গত দুই বছরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যে পতন হয়েছে, তার একটি কারণ স্বল্পমেয়াদি কমে যাওয়া। তবে এখন সে চাপ ধীরে ধীরে কমছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন সময়ও দেখেছি যখন প্রতি মাসে ব্যবসায়ীরা ৭০০-৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছেন। সে হিসাবে বেসরকারি খাতের সার্বিক বিদেশি ঋণ ২৭৫ বিদেশি মিলিয়ন ডলার বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২০.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের একই দিনে এই রিজার্ভ ছিল ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে গেছে।
মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের দাম কমানোর জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক মাসের (৮ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর) কার্যাবলি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়েছে, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিমের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দপ্তরগুলোর বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ করণীয় এবং সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় করা হয়। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে বর্তমান সরকার।
প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে একাধিক সভার কথা উল্লেখ করে কার্যাবলিতে বলা হয়, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। তাছাড়া লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত তিন সিটি করপোরেশন এলাকায় স্লটার হাউস নির্মাণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ায় প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোও সম্ভব হয়েছে।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ১৮৮ টন দানাদার পশুখাদ্য, ৬৫ টন খড় ও ৯৬ টন সাইলেজ ও ৪৫ হাজার উন্নত জাতের ঘাসের কাটিং বিতরণ করা হয়েছে। জরুরি ওষুধ সরবরাহ ও টিকা দেওয়াসহ প্রায় ২০ হাজার গবাদিপশু এবং ২ লাখের বেশি হাঁস-মুরগির চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে উপদ্রুত এলাকায় পশু খাদ্য কেনার জন্য ৫১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
দেশের মানুষ যাতে সুলভ মূল্যে ইলিশ খেতে পারে সে জন্য রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইলিশ পাচার রোধ ও মূল্য সহনশীল রাখার জন্য আড়তদার, ট্রলার মালিকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সভা করা হয়। তাছাড়া ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করে সুলভ মূল্যে ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধ্বান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের দাবি, সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় মাঠ পর্যায়ে এখনো এর সুফল পাওয়া যায়নি। রপ্তানি বন্ধের পরও এ বছর ইলিশের দাম বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি।
কার্যাবলিভিত্তিক প্রতিবেদনে আগস্ট মাসে সম্পন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে আরও বলা হয়, মাঠ পর্যায়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ নিয়ে কর্মসূচি পরিচালনাকারী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। মৎস্য ও গবাদি পশুর জাত রক্ষা এবং যারা এই কাজের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন সেসব প্রান্তিক খামারিদের সমস্যা ও তা উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে এনজিওদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও তথ্য দিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কার্যাবলিতে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরগুলোর পদোন্নতিসহ পদায়নের কার্যক্রম গতিশীল করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের ২৫ জন কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সমাপ্ত ও চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে উত্থাপিত দাবিগুলো বিবেচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বন্যা দুর্গতদের সহায়তার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধীন দফতর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ (৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮৪) টাকার চেক প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হয়।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ২০২৪-২৫ কর বছরের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম আপডেট করা হয়েছে। আজ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমটি করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, করদাতাবান্ধব, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কর ব্যবস্থাপনা গড়তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে আয়কর আইন, ২০২৩ এবং অর্থ আইন, ২০২৪-এর আলোকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ২০২৪-২৫ কর বছরের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য ই-রিটার্ন সিস্টেম আপগ্রেডেশনের কাজ শেষ হয়েছে।
আগামীকাল থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমটি করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ই-রিটার্ন সিস্টেম আপগ্রেডেশন ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা নিজে রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট নিতে পারবেন। এছাড়াও অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে কর পরিশোধ, রিটার্ন দাখিলের তাৎক্ষণিক প্রমাণ প্রাপ্তি, আয়কর পরিশোধ সনদ ও টিআইএন সনদপ্রাপ্তি, পূর্ববর্তী কর বছরের দাখিল করা ই-রিটার্নের কপি, রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ প্রিন্ট বা ডাউনলোডের সুবিধা পাওয়া যাবে। এ সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করতে টিআইএন ও করদাতার নিজ নামে বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা নিজের রিটার্ন তৈরি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল অথবা অফলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রিন্ট নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২১ সালে ই-সিস্টেম চালু করার পর ২০২১-২২ করবছরে ৬১ হাজার ৪৯১ জন, ২০২২-২৩ করবছরে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮১ জন ও ২০২৩-২৪ কর বছরে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৭ জন করদাতা ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা আগামীকাল থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে (www.etaxnbr.gov.bd) নিজের তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সহজেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ২০২৪-২৫ কর বছরের ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ হাজার ১০৭ কোটি ডলার। পণ্য ও সেবা- উভয় খাত মিলিয়েই এ তথ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি অর্থবছরের জন্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ ধরা হচ্ছে। তবে তিনি নিজে থেকে রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা হবে যুক্তিসংগত। এবার রপ্তানি আয় আগের থেকে কমবে না, বরং বেশি হবে। আর রপ্তানি নিয়ে কিছু তথ্যগত বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। তথ্য সংগ্রহ করার যেসব ব্যবস্থা আছে, আমরা সবগুলো চালু রাখব। সবার তথ্য সমন্বয় করে সত্য চিত্র দেব। একেক দপ্তর একেক রকম তথ্য দেবে, তা হবে না। কিছুটা পার্থক্য থাকে, এটা স্বীকার করতে হবে। বিরাট অসংগতি দূর করা হবে।’
রপ্তানির ক্ষেত্রে কর, শুল্ক ইত্যাদি বিষয়ক যেসব বাধা আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রপ্তানি যেন বহুমুখীকরণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি মোটামুটি ভালো হবে। পরিপ্রেক্ষিত বদলেছে। ফলে আগের থেকে রপ্তানি কমবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের জন্য বিশেষ বাণিজ্যসুবিধা জিএসপি সুবিধা পাওয়া বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘জিএসপি সুবিধা দেওয়ার জন্য তাদেরকে বলা হয়েছে। আমরা আবার চেষ্টা করব। আশা করি, সব দিক থেকে তারা আমাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি রাখবে।’
আগামী বছরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা জানুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা। তবে তিনি বলেন, এটা জানুয়ারির ১ তারিখে শুরু হবে না। হবে দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিকে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিমউদ্দিন ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা
১২.৪ শতাংশ: বাণিজ্য উপদেষ্টা
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১২.৪০ শতাংশ ধরা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অবস্থার প্রেক্ষিতটা পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে এবার রপ্তানি আয় আগের থেকে কমবে না। বরং আগের থেকে বেশি হবে। আমেরিকাও সবদিক থেকে ইতিবাচক দৃষ্টি রাখবে।’ রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ১৪৬তম বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের ৫৯তম পরিচালনা পর্ষদ সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রক্ষেপণ কী- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা রিয়েলাইজড করেছি, এটা (রপ্তানি প্রবৃদ্ধি) মোটামুটি ভালো হবে। অবস্থার প্রেক্ষিতটা চেঞ্জ হয়েছে, অতএব আগের থেকে কমবে না, আগের থেকে বেশি হবে।’ চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কত হতে পারে- সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এবার রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২.৪ শতাংশ।
দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সূচক কমলেও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৭৯ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের ডিএসইএক্স সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৭২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৫ হাজার ৮০৪ পয়েন্ট। এ ছাড়া গত সপ্তাহে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১২৫ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গত সপ্তাহে প্রায় ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ২৪১ পয়েন্ট।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৪১৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ৩১১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৮টির দর। এ ছাড়া লেনদেন হয়নি ১৮টির। গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, রবি আজিয়াটা, ইউসিবি ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। আর বস্ত্র খাতের দখলে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ইতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল বিবিধ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জীবন বীমা খাত। এ তিন খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ১, দশমিক ১ ও দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে নেতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল কাগজ, ভ্রমণ ও মিউচুয়াল ফান্ড খাত। এসব খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৮, ৫ দশমিক ১ ও ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৬ হাজার ৫২০ পয়েন্ট। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে ৯ হাজার ৮৭৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৯ হাজার ৯৫৫ পয়েন্ট।
সিএসইতে গত সপ্তাহে ৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ২৭৪ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ২২১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির বাজারদর।
পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবুও খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পণ্য। দেশে আলু এবং পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজারমূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে দিয়েছে।
এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনা মোতাবেক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এর একদিন পরে আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আগের মতো ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আলুও আগের মতো ৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ, আলু কিনে এনে মালিবাগের স্থানীয় মুদির দোকানে বিক্রি করেন মোরশেদ আলম নামের এক বিক্রেতা। বাজারে এসবের দাম বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আজও সেই দামই চলছে। পেঁয়াজ ও আলুতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার তা শুনেছি কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ আমি বেশি দামেই পাইকারি বাজার থেকে কিনে এনেছি। যে পরিমাণ মাল এনেছি এটা আরও ৩/৪ দিন চলবে আমার দোকানে। এটা শেষ হলে ফের মাল আনব, তখন যদি কম দামে পাই তাহলেই কম দামে বিক্রি করব।’
মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস করেন রবিউল রহমান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বাজারে এসে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজও কিনেছেন। বাজারে এই দুই পণ্য বাড়তি দাম বিষয়ে তিনি বলেন, আজ অনেক দিন ধরে ১২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। সেই আলু কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই দুইটি পণ্যের যদি এতটা দাম হয় তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কঠিন হয়ে যায়। সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের দাম নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
এদিকে রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা আলু পেঁয়াজের দাম বিষয়ে বলেন, ‘আজ সকালেই আমি পাইকারি বাজার থেকে আলু পেঁয়াজ কিনে এনেছি। পাল্লা হিসেবে (৫ কেজি) কিনে সব খরচ বাদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ১১০ টাকা। এখন পরিবহন করে নিয়ে আসার পর খুচরা ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। একই ভাবে আলুর পাল্লা পড়েছে ৫৫ টাকা এখন আমার দোকানে খুচরা বিক্রি করছি ৬০ টাকায় প্রতি কেজি। আজকে এগুলোর কেনা দাম আগের মতো ছিল, বাজারে যখন কম দামে কিনতে পারবো তখন খুচরা বাজারেও আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারব।’
বেড়েছে চাল, মুরগি ও ডিমের দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে চাল, মুরগি ও ডিমের দাম। আগের দামেই বিক্রির হচ্ছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। আজ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরু চালের দাম তেমন না বাড়লেও কেজিতে প্রায় ২ টাকা বেড়েছে মোটা চালের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। সরু চালের কেজি মিলছে ৭০ টাকার ওপরে। বন্যায় ত্রাণ হিসেবে মোটা চালে বিতরণে চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১৭০ টাকা। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। আলু ৬০ আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। তবে অন্যান্য সবজির মিলছে গড়ে ৫০ টাকার মধ্যে।
কমেছে গরুর মাংসের দাম
বাজারে কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগেও গরুর মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী হালিম চৌধুরী বলেন, দাম বেশি থাকার কারণে মাংস বিক্রি খুব কম ছিল। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ী দাম কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।
দাম কমেনি ইলিশের
মৌসুমের মাঝামাঝি এসে বাজারে ইলিশের সরবরাহও বেশ বেড়েছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি দাম। ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজির কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায়। কমবেশি ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। আর ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেনা যাচ্ছে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকায়। ছোট ইলিশের কেজি ৬০০ টাকা।
দেশে নিত্যপণ্যের বাজার গত কয়েক বছর ধরেই অস্থিতিশীল। এর মধ্যে চাল, পেঁয়াজ, আলু, কাঁচামরিচের দাম সিন্ডিকেট গড়ে বাড়ানোর অভিযোগ উঠছে অহরহ। তবে জুলাই বিপ্লব, আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেহাল অবস্থা, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে বাজার ছিল একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। এ ছাড়াও বন্যার আঘাতেও বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। গুদামভরা পণ্য থাকলেও অজুহাতের পর অজুহাত দিয়ে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট। বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশে আলু ও পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজার মূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনাক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে এই শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে, যা এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। উপরন্তু দেশের পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কীটনাশক, আলু ও পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করেছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক বিশ্লেষণপূর্বক কর ছাড়ের মাধ্যমে উল্লিখিত পণ্যগুলোর আমদানি সহজ করে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রযোজ্য ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কীটনাশক আমদানিতে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, তুলে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ভ্যাট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে পেঁয়াজ, আলু, সার ও কীটনাশকের মতো নিত্যপণ্যের শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দেন। ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনা অনুসারে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাস্ব বোর্ড এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আরও জানায়, আলু ও পেঁয়াজ অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয়। আমদানি শুল্ক কম থাকলে দেশীয় উৎপাদনের ওপর প্রযোজ্য প্রতিরক্ষণ হ্রাস পায়। তাই কৃষককে আলু ও পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে উল্লিখিত শুল্ক ছাড় চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। সরকার আশা করছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমে ভোক্তাদের স্বস্তি দেবে।