আগস্ট মাসে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ানো হয়েছে।
আজ রোববার (৪ আগস্ট) বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজ সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে, জুলাই মাসের জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৩৬৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জি টু জি (সরকারের টু সরকার) পদ্ধতির মাধ্যমে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল এবং চার লাখ টন গম আমদানি করবে সরকার। এ চাল ও গম আমদানির সময় ৪২ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিকবিষয়ক সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল ও গম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই না কোনো ক্রমেই খাদ্য ঘাটতি পড়ুক। ইমেডিয়েট দরকার নেই। কিন্তু আমাদের স্টকে রাখার জন্য ২ লাখ টন চাল ও ৪ লাখ টন গম আমদানি করার জন্য অ্যাপ্রোজ করেছি।
বৈঠক সূত্র জানা যায়, বৈঠকে খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চাল ও গম আমদানির সময়সীমা ১৫ দিন নির্ধারণ করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ সময়সীমা ছিল ৪২ দিন। অর্থাৎ দরপত্রের বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে চাল বা গম সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে সময় কমিয়ে ১৫ দিন করা হলো। এ জন্য জিটুজি ভিত্তিতে চাল ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ মোতাবেক আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সময় হ্রাস করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানি করা হয়। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) এবং পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুসরণে প্রয়োজনের সময়ে রপ্তানিকারক দেশ থেকে জিটুজি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয় এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্রয়োজনের সময়ে সর্বোচ্চ ২ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ এর (১)(ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১৯ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সভায় জিটুজি ভিত্তিতে গম কেনার নীতিগত অনুমোদন এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ মোতাবেক আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রয় প্রক্রিয়ায় সময় হ্রাস করার প্রস্তাবেও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানি করা হয়। sরাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) এবং পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুসরণে রপ্তানিকারক দেশ থেকে জিটুজি ভিত্তিতে ৪ লাখ মেট্রিক টন গম ক্রয় এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ এর (১)(ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ হতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের খাদ্য হিসাবের সংক্ষিপ্তসার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ মেট্রিক টন গম অর্থাৎ সাড়ে ১০ লাখ টন চাল-গম আমদানির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ১১ লাখ মেট্রিক টন, এতে মোট ব্যয় হয়েছিল ৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। আমদানির বিপরীতে চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১৯ লাখ ২৩ হাজার চাল সংগ্রহ করা হবে। এর পাশাপাশি গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ এ সংগ্রহে সরকারের খরচ হবে ৮ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৯ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।
ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি আগস্ট মাসে ২৮ শতাংশ কমে গেছে। এ মাসে বাংলাদেশে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ৯৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এ তথ্য দিয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিক্ষোভ ও সংঘাতের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আরও গভীর হওয়ায় আগস্ট মাসে ভারতের রপ্তানি কমে গেছে।
এদিকে ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ক্রিসিল বলেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ভারতের বাণিজ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেনি। তবে দেশটিতে অস্থিরতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা ভারতের কিছু রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আয় ও চলতি মূলধন ঘাটতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশ এসব শিল্পের জন্য চাহিদার অথবা উৎপাদনের কেন্দ্র।
রপ্তানি আদেশ কমায় ভারতের টেক্সটাইল শিল্পেও প্রভাব পড়েছে। ভারতের টেক্সটাইল শিল্প বাংলাদেশে কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তুলা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগস্ট মাসে ভারতের তুলা রপ্তানি প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ওই মাস পর্যন্ত রপ্তানির পরিমাণ ছিল বার্ষিক ১০০ কোটি ডলার, গত বছরের আগস্টে যা ছিল বার্ষিক ১১১ কোটি ডলার। বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশে পোশাকের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার মধ্যে ভারতের তুলা রপ্তানি পড়ে গেছে।
বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ভারতের বস্ত্রশিল্পে। এই শিল্প বাংলাদেশে কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য পাঠায় পোশাকশিল্পে ব্যবহারের জন্য। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে যে কিছু বিদেশি ক্রেতা পোশাক কেনার বিষয়ে দেশটির বস্ত্র কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বাংলাদেশে সুতা রপ্তানিতে পতনের ধারা শুরু হয়েছে।
ক্রিসিল বলছে, শিল্প অথবা খাত রপ্তানি আয়ের ওপর কতটা নির্ভরশীল, প্রভাবের মাত্রা তার ওপর নির্ভর করবে। ভারতের করপোরেট জগতের ঋণমানের ওপর অতি নিকটে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে না। এই বিষয় এবং বাংলাদেশি টাকার মান কী দাঁড়ায়, সেদিকে নজর রাখা দরকার হবে বলে জানায় ক্রিসিল।
প্রতিষ্ঠানটির ধারণা, বাংলাদেশের ঘটনাবলি তুলাজাত সুতা, বিদ্যুৎ, পাদুকা, সফট লাগেজ এবং দ্রুত বিক্রয় হয়, এমন পণ্যের ওপর ছোটখাটো প্রভাব রাখবে। তবে জাহাজভাঙা শিল্প, পাট এবং তৈরি পোশাকশিল্প এর ফলে সুবিধা পাবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। গত অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানির ২ দশমিক ৫ শতাংশ গেছে বাংলাদেশে, আর আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ এসেছে প্রতিবেশী দেশটি থেকে। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ছিল তুলা ও তুলাজাত সুতা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি। অন্যদিকে ভোজ্যতেল, সামুদ্রিক পণ্য ও পোশাক ছিল আমদানির তালিকায়।
ক্রিসিল বলছে, ভারতীয় কোম্পানিগুলোর পরিচালন মুনাফা বাংলাদেশের কারণে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ, তুলা– সুতা থেকে লাভের হার খুব বেশি নয়। তবে দ্রুত বিক্রয় হওয়া পণ্যের উৎপাদক ও সফট লাগেজ খাতের ওপর প্রভাব বেশি হবে। এর কারণ, এসব কোম্পানির উৎপাদনব্যবস্থা বাংলাদেশেই অবস্থিত।
ক্রিসিলের তৈরি করা এক নোটে বলা হয়েছে, এসব কারখানা সংকটের শুরুর দিকে পরিচালন সমস্যার মধ্যে পড়েছিল। বেশির ভাগই অবশ্য আবার উৎপাদনে ফিরে গেছে। তবে কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো ও কাঁচামালের সরবরাহ বজায় রাখা এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য প্রকল্পে নিয়োজিত প্রকৌশল, পণ্য কেনাকাটা ও নির্মাণ খাতের কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড শুরু বিলম্ব হতে পারে। এর কারণ হিসেবে ক্রিসিল বলছে, এসব কোম্পানির কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এক মাসের বেশি আগে ভারতে চলে গেছে।
রাজধানীতে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে কাঁচামরিচের কেজি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের এমন দাম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন ১০০-১১০ টাকা। আধা কেজি নিলে দাম রাখা হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং এক কেজি নিলে দাম রাখা হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা।
দুদিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১৮০ টাকা বেড়েছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাহিদার চেয়ে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কম। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকেই বেশি দামে কাঁচামরিচ কিনতে হচ্ছে। এতে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
এদিকে, মরিচ চাষিরা বলছেন, এর আগে খরায় গাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এরপর গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টিতে মরিচ পচে নষ্ট হয়েছে। এখন বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি করলেও ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারা।
সেগুনবাগিচায় সবজি বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, শনি-রোববার মরিচ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। সোমবার পাইকারিই গেছে ২৬০ টাকা, আমরা বিক্রি করেছি ৩০০ টাকা। আজ পাইকারি ৩০০ টাকা আমরা ৩৬০ টাকা বিক্রি করছি।
কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। ভারত থেকেও মরিচের আমদানি কম হচ্ছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও কাঁচা মরিচ কম।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয় গতরাতে। আর খুচরায় তা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, মৌসুমে মরিচের এমন দামে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় কিনেছেন তারা। এখন দাম বাড়ায় অনেকে অল্প পরিমাণে মরিচ কিনছেন। ৫০/১০০ গ্রাম মরিচ কিনতে দেখা গেছে অনেককে।
সামাদ নামে একজন ক্রেতা বলেন, এখন ২৫০ গ্রাম মরিচ কিনতেই লাগছে ৮০ টাকা। এটা সবার সাধ্যের মধ্যে নেই। একটু বৃষ্টি হলেই মরিচের দামে এমন অবস্থা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, দুদিন আগে শুক্রবার ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মরিচের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া গতকাল দিন-রাত বৃষ্টি হয়েছে। এ অজুহাতে আড়তে কাঁচামরিচ কম এসেছে। এ কারণেই কাঁচামরিচের কেজি ৪০০ টাকা ছুঁয়েছে।
তবে কাঁচামরিচের এমন দামে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারে কার্যকর তদরকি না থাকায় মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা বৃষ্টির অজুহাতে কাঁচামরিচের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু কাঁচামরিচ নয়, বাজারে সব ধরনের সবজিও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে ক্রেতাদের এমন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। বাজারে একাধিক সবজির কেজি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না।
বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা। ১০০ টাকার (কেজি) ওপরে বিক্রি হচ্ছে বরবটিও। বিক্রেতারা বরবটির কেজি চাচ্ছেন ১০০-১২০ টাকা।
এছাড়া পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে। চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা কেজি। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। আলুর কেজি ৬০ টাকা। পেঁয়াজের কেজি ১১০-১২০ টাকা। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। আদার কেজি ২৪০-২৭০ টাকা। কাঁচ কলার হালি ৪০-৫০ টাকা।
অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বৃষ্টির কারণে গত দুদিন কিছু কিছু সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। সবজির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। চিচিঙ্গা, করলা, পটোল, ধুন্দলের দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। তবে সব থেকে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। এক লাফে কাঁচামরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় কাঁচামরিচের। ইতোমধ্যে অনেক কাঁচামরিচ পচে গেছে। অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আবার বৃষ্টির কারণে বাজারে মরিচ কম আসছে। সবকিছু মিলেই মরিচের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবারও ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু আড়ত থেকে আজ যে দামে কিনেছি তাতে ২৫০ গ্রাম ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করার উপায় নেই। তবে আধা কেজি, এক কেজি নিলে ১০-২০ টাকা কম রাখা যাবে।
কাঁচামরিচের দামের বিষয়ে প্রায় একই কথা বলেন রামপুরার ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে কাঁচামরিচ খুব কম এসেছে। ভোর রাতে আড়তে মোকাম করতে গিয়ে ভালো কাঁচামরিচ খুব একটা খুঁজে পাইনি। আড়তে কাঁচামরিচ কম এসেছে। ভালো মালের দামও বেশি।
তিনি বলেন, আড়তে যে দাম নিয়েছে তাতে ফ্রেশ কাঁচামরিচ আজ কেউ ১০০ টাকার নিচে ২৫০ গ্রাম বিক্রি করতে পারবেন না। তবে বোটা পচা, মান খারাপ এমন কাঁচামরিচ হয়তো কেউ কেউ কিছুটা কমে বিক্রি করতে পারেন। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা কাজী সদরুল হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেও ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ৫০ টাকায় কিনেছি। কিন্তু আজ কেউ ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না। শুধু কাঁচামরিচ নয়, বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে এলে তেমন কিছুই কেনা যায় না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আজ রোববার থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম। সাশ্রয়ী মূল্যে সারা দেশের এক কোটি পরিবারকে দেওয়া হবে চাল, ভোজ্যতেল ও মসুর ডাল। গতকাল শনিবার টিসিবির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এক কোটি পরিবার সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলার টিসিবির নিজস্ব ডিলারের দোকান বা তাদের নির্দিষ্ট স্থায়ী স্থাপনা থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল, ১০০ টাকা লিটার দরে ২ লিটার ভোজ্যতেল ও ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল কিনতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ও তাদের নির্ধারিত তারিখ ও সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। কার্ডধারী ভোক্তা সাধারণ নির্ধারিত ডিলারদের কাছ থেকে ভর্তূকি মূল্যে পণ্যগুলো (চাল, ভোজ্যতেল ও ডাল) ক্রয় করতে পারবেন।
পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করেছে ভারত। প্রতি টন পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫৫০ ডলার মূল্যের যে শর্ত ছিল, দেশটির সরকার তা প্রত্যাহার করেছে। পাশাপাশি কমানো হয়েছে রপ্তানি শুল্ক। গুরুত্বপূর্ণ পেঁয়াজ উৎপাদন অঞ্চল মহারাষ্ট্র রাজ্যে নির্বাচনের আগে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপরে থাকা কঠোর শর্ত শিথিল করা হলো। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড গতকাল শুক্রবার পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য বা ‘মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস’– সংক্রান্ত শর্ত বাতিল করার সিদ্ধান্ত জানায়। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বের কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়। ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এখন যেকোনো দামে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন।
এদিকে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপ করা ৪০ শতাংশ শুল্ক অর্ধেক করে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের সূত্রে পিটিআই এ খবর দিয়ে বলেছে যে হ্রাসকৃত শুল্ক গতকাল শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ভারত একসময় পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে চলতি বছরের মে মাসে রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য ৫৫০ ডলারে নির্ধারণ করে দেয়। এ ছাড়া রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির সরকার।
ভারতের এই দুই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য ছিল দেশটি থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করা। দিল্লির এই পদক্ষেপ ভারত থেকে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমাতে সাহায্য করে। ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, কেবল জুন মাসেই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি ৫০ শতাংশেরর বেশি পড়ে গেছে। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১৭ হাজার টন। ভারতে এপ্রিল থেকে অর্থবছর শুরু হয়।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারত। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী থাকেন। কারণ, প্রতিবেশী দেশটি থেকে দ্রুত পণ্য আনা যায় এবং বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের চেয়ে বেশি। সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষিরা লাভবান হবেন। কারণ তারা স্থানীয় বাজারের তুলনায় বেশি দামে বিশ্ববাজারে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, মহারাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পেঁয়াজচাষিদের এই সুবিধা দেওয়া হলো। মহারাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকা। পেঁয়াজ রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে এ রাজ্যের চাষিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, দিল্লি পেঁয়াজ রপ্তানির শর্ত কঠোর করার পর মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজচাষিরা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন। তবে দেশটির সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকার বাজারে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থাকা বিধিনিষেধ শিথিল করতে চায়নি।
দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সূচক ও লেনদেন দুটিই নিম্নমুখী ছিল। আলোচ্য সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক সামান্য কমেছে। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের ডিএসইএক্স সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৫ হাজার ৭২৯ পয়েন্ট। এ ছাড়া গত সপ্তাহে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১১৪ পয়েন্ট। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গত সপ্তাহে প্রায় ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ২২৯ পয়েন্ট।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৪১২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০৭টির, কমেছে ২৭১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির দর। এ ছাড়া লেনদেন হয়নি ১৬টির।
গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্র্যাক ব্যাংক, কনফিডেন্স সিমেন্ট, গ্রামীণফোন ও ইউসিবির শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩ হাজার ২২১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়েছে ব্যাংক খাত। ১০ দশমিক ৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এ ছাড়া ৯ দশমিক ৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। আর বস্ত্র খাতের দখলে ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে পাট, কাগজ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে। এ তিন খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৯, ৫ দশমিক ৭ ও ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে নেতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল সেবা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জীবন বীমা খাত। এই তিন খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৫, ৪ ও ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ১৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৬ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে ৯ হাজার ৭৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৯ হাজার ৮৭৬ পয়েন্টে।
সিএসইতে গত সপ্তাহে ৩৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ৭২ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯টির, কমেছে ২৪২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১২টির বাজারদর।
শ্রমিকদের অসন্তোষের মুখে বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ ছিল আশুলিয়ার প্রায় ২১৯ কারখানা। তবে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় আজ অধিকাংশ কারখানাই খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে শুরু হয়েছে উৎপাদন। শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।
শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো কারখানায় অস্থিরতা দেখা যায়নি। এমনকি সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। পরিস্থিতি আজ অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ৮৬টি কারখানার বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আজ বন্ধ ৮৬টি কারখনার মধ্যে ৫০টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা বাকি ১৩৩ কারখানার মধ্যে ১২০টি কারখানা চালু হয়েছে। বর্তমানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়া কারখানার সংখ্যা ১৩টি ও অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ আছে ৩৬টি। এসব কারখানাগুলোতেও দ্রুত উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। আজ শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজি ও মুরগির বাজার চড়া রয়েছে। সরবরাহ বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ।আজ শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে সব ধরনের সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, বলছেন বিক্রেতারা। কচুরমুখীর কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা,পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং গাজর ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলু কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১৮০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সরবরাহ বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা এবং কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে পাঁচ কেজি সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। এরপর এই পোশাকশিল্পই দেশের অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে কেবল গত বছরই ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ঢাকা। বিশ্বে পোশাক রপ্তানির দিক দিয়ে বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন।
তবে গত জুলাই ও আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের চাকা থমকে যায়। শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে আন্দোলন শেষ হলেও এখনো এই খাতে অস্থিরতা রয়ে গেছে। পোশাকশ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কারণে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস সংকটের কারণেও কমেছে উৎপাদন।
বাংলাদেশে এই অস্থিরতার সুযোগে ভারতের পোশাকশিল্প লাভবান হতে পারবে? এমন প্রশ্ন অনেকের। এ বিষয়টি এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করেছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট।
সাময়িকীটি বলেছে, ভারত হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তুলা উৎপাদানকারী দেশ। এসব তুলা বাংলাদেশে রপ্তানি করে তারা। তবে ভারতে অনেক তুলা উৎপাদন হলেও তৈরি পোশাক খাতের দিক দিয়ে দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে।
তবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে তারা নতুন করে ৫৪ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়েছে। নয়াদিল্লির বাইরের আরেকটি গ্রুপ জানিয়েছে, গত আগস্টে তারা স্প্যানিশ ফ্যাশন ফার্ম জারার কাছ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি অর্ডার পেয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে এখনই টেক্কা দেওয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই বলে জানিয়েছেন শিল্প বিশ্লেষক মেহেদি মাহবুব। তিনি বলেছেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে সেটি চলে যাবে। ইতোমধ্যে শ্রমিকরা কারখানায় ফিরেছেন এবং উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া পোশাক খাতে যেসব প্রতিযোগী আছে তাদের চেয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন দিকে এগিয়ে আছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো কম মজুরিসম্পন্ন শ্রমিক। এমনকি বাংলাদেশের পোশাককেই ইউরোপের বাজারগুলো প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক থাকলেও আশাবাদী অবস্থানে আছে। আরেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে পোশাকশিল্পে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা ভারতের নেই।
তিনি বলেন, ভারতে ইলেকট্রনিকের মতো মূলধন নির্ভর খাতের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পোশাকশিল্পের মতো শ্রমিকনির্ভর খাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতের পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশের আম রপ্তানিতে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশকে তাদের ‘ওয়ান কান্ট্রি, ওয়ান প্রোডাক্ট’ (ওসিইপি) প্রকল্পের অধীনে আম রপ্তানিতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটির প্রতিনিধিরা আজ বুধবার রাজধানীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ফসল রপ্তানিকে আরও বহুমুখীকরণ ও সম্প্রসারণের বিষয়ে আগ্রহ দেখান।
এর জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আম ছাড়াও আমরা প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন করি, যা রপ্তানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় এফএওকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।’
ড. জিয়াওকুন শির নেতৃত্বাধীন দলটি সচিবালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষির উন্নয়ন ও কৃষিতে প্রযুক্তিগত পরামর্শ, সহায়তা এবং কৃষি পণ্যের রপ্তানি আরও বহুমুখী করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এফএও দলকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এফএও বাংলাদেশের অনেক খাতে সহায়তা করেছে এবং আমি আশা করি এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৩টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এফএওর সহায়তা প্রয়োজন।’
উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে এফএও প্রতিনিধি জিয়াওকুন বলেন, ‘এফএও সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং আমরা আরও বীজ, কৃষিপ্রযুক্তি, প্রযুক্তিগত ও পরামর্শ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পুষ্টি, উদ্যোক্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তর প্রকল্পে (পার্টনার) এফএওর সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে জিয়াওকুন আরও বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে এফএও ১৮টি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।
সাক্ষাতের সময় এফএও প্রতিনিধিরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের কৃষি খাতের হালনাগাদ তথ্য পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর সঙ্গে উপদেষ্টা তার সম্মতি প্রদান করেন।
এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং এফএও দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য মিসর বিকল্প উৎস হতে পারে। পাশাপাশি মিসরের বাজারে ক্যানসারের ওষুধের বেশ চাহিদা রয়েছে, যার সুযোগ বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা নিতে পারেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিসরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এদ্দিন আহমেদ ফাহমি এসব কথা বলেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সেশন আয়োজনের পাশাপাশি দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন আশরাফ আহমেদ।
মিসরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এদ্দিন আহমেদ ফাহমি বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হলেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮০.৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মিসর হতে পেট্রোকেমিক্যাল এবং সার আমদানির জন্য বাংলাদেশের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, মিসরীয় তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন খাতে তার দেশের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পখাতে ক্রমাগত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং মিসরের বাজারে ক্যানসারের ওষুধের বেশ চাহিদা রয়েছে, যার সুযোগ বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা গ্রহণ করতে পারে।
তিনি বলেন, সুয়েজ খাল ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অধিকাংশ পণ্য ইউরোপসহ সমগ্র পৃথিবীতে রপ্তানি হচ্ছে, তবে মিসরকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট হাব’ হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে আফ্রিকার বাজারে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য মিশর বিকল্প উৎস হতে পারে বলে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের হিমায়িত খাদ্য, চিংড়ি এবং সুস্বাদু আম ইউরোপসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হচ্ছে, যা মিশরেও রপ্তানি করা যেতে পারে। বাংলাদেশ হতে তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, সিরামিক, ওষুধ প্রভৃতি পণ্য বেশি হারে আমদানির জন্য মিশরের উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সেই সঙ্গে বিশেষ করে বাংলাদেশের নদীভিত্তিক পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে মিসরের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ওপর জোরারোপ করেন আশরাফ আহমেদ।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী এবং বাংলাদেশস্থ মিশর দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন সোহেলা মাহরিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
টানা ছয় কার্যদিবস দরপতন হওয়ার পর মঙ্গলবার দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সবখাত মিলে ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৫৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের ৩১ কোটি ৩৯ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রামীণফোন, এনআরবি ব্যাংক, কনফিডেন্স সিমেন্ট, আইএফআইসি ব্যাংক, সোনালী আঁশ, লিব্রা ইনফিউশন এবং ইবনে সিনা।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
বিনিময় হারের ঝুঁকিসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে ডলার ঋণ করতে কম উৎসাহী হলেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ানোয় তিন মাসে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ সামগ্রিকভাবে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন শেষে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০.৫৭ বিলিয়ন ডলার। মার্চ শেষে এ ঋণ ছিল ২০.৩ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত নয় মাসে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সময়ে মিডিয়াম ও লং টার্ম লোন খুব বেশি কমেনি। আমরা বৈদেশিক মুদ্রায় খুব বেশি টার্ম লোন (মেয়াদি ঋণ) ইস্যু হতেও দেখছি না। এক্সচেঞ্জ রেটে অনিশ্চয়তা এর একটা কারণ হতে পারে।
তবে ব্যাংক খাতে এখন কিছু স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাহিদা তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন পর্যন্ত তিন মাসে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮২ মিলিয়ন ডলার কমে বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৯.১৭ বিলিয়ন ডলারে। অবশ্য সেপ্টেম্বরের তুলনায় এই ঋণ ৩২৩ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে জুন শেষে।
এপ্রিল-জুনে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমলেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রায় ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রায় দেড় বছর ধরে কমার ধারায় থাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ জুন প্রান্তিকে বেড়েছে। ২০২২ সাল শেষে এর বকেয়া ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের জুন মাস শেষে ১১.৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। মার্চ প্রান্তিকে এর বকেয়া ছিল ১১.০৪ বিলিয়ন ডলার।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকগুলো এখন আগের তুলনায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের এক্সপোজার কমিয়ে আনছে।
‘এ ছাড়া গ্রাহকদের মধ্যেও বিদেশি ঋণ নেওয়ায় একটা দ্বিধা কাজ করছে। এসব কারণে মধ্যমেয়াদে আমরা এই ঋণ কমতে দেখছি,’ বলেন তিনি।
জুন প্রান্তিকে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ কেন বেড়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনীতি দিন দিন বড় হচ্ছে। অর্থনীতি যত বড় হবে, সেই সঙ্গে ডলার ঋণও বাড়বে। আমাদের বিনিময় হার এখনো স্থির হয়নি। ফলে এখন যারা বায়ার্স ক্রেডিট বা অন্য মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিচ্ছে, তারা আগামী ৫-৬ মাসের বিনিময় হার ধারণা ঋণ নিয়েছে।’
এ ছাড়া ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র (এলসি) খোলাও কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি। ‘ফলে গত তিন মাসে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ায়, যা দেশের ইতিহাসে এক দিনে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন। এরপর থেকে ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসার ইঙ্গিত দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ডলারের দাম কেমন হবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের মধ্যে শঙ্কা রয়ে গেছে।
সর্বশেষ আগস্টে ডলারের দাম আরও ৩ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত দুই বছরে টাকার মান প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। ‘অর্থাৎ ডলারে ঋণ পরিশোধের জন্য একজন গ্রাহককে অনেক বেশি পেমেন্ট করতে হয়েছে। হয়তো তিনি যখন লোন নিয়েছিল তখন ৮৫ টাকার বিনিময়ে ডলার পাওয়া যেত, অথচ পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখেছে ডলারের রেট ১১০ টাকায় উঠে গেছে,’ বলেন তিনি।
ভবিষ্যতে ডলারের দাম ওঠানামা করার এ শঙ্কাও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে বলে মন্তব্য করেন ওই ব্যাংকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন বলেন, ‘গত দুই বছরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যে পতন হয়েছে, তার একটি কারণ স্বল্পমেয়াদি কমে যাওয়া। তবে এখন সে চাপ ধীরে ধীরে কমছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন সময়ও দেখেছি যখন প্রতি মাসে ব্যবসায়ীরা ৭০০-৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছেন। সে হিসাবে বেসরকারি খাতের সার্বিক বিদেশি ঋণ ২৭৫ বিদেশি মিলিয়ন ডলার বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২০.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের একই দিনে এই রিজার্ভ ছিল ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে গেছে।